0 %

Thanks a lot for being with us!
We are re-constructing our website!
Sorry for this temporary inconvenience
We are coming to you with a fresh look and design from 1 January 2022!
Till then! Stay connected!

পরিচয় পর্ব-৩৫৮

পরিচয়(পর্ব-৩৫৮)
(সিজন-১২-ওয়াদা)
“কি হয়েছে! তোমরা ঠিক আছো তো!” মাইশাকে কে সাথে নিয়ে ছুটে এলো চয়নিকা । ওদের সব খবর আগেই জানিয়েছে সাবিত । আবির চয়নিকার কাধে হাত রেখে বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ, আমরা সবাই ঠিক আছি, কিন্তু আমাদের একজন স্যার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ।” চয়নিকা জিজ্ঞেস করলো, “স্যার?” আবির বলল, “হ্যাঁ, আমি যে অনাথ আশ্রমে পড়েছি, সেখানকার এক স্যার ।” চয়নিকা জিজ্ঞেস করলো, “উনি কি করতে এসেছিলেন?” আবির বলল, “সব বলবো! এখন আগে উনাকে সুস্থ হতে দাও আর আমাদের বাড়ি ফিরতে দাও!” চয়নিকা কিছু বলল না । আবির জিজ্ঞেস করলো, “রাব্বি কোথায়?” চয়নিকা হালকা রাগ দেখিয়ে বলল, “ওর কথা আমাকে জিজ্ঞেস করবে না!” আবির রেগে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “জিজ্ঞেস করবো না মানে কি চুনি! ও ছোটো একটা বাচ্চা! ও কি আর এসব বোঝে! বাসায় ওকে একা রেখে এসেছো!” মাইশা বলল, “ভাইয়া টেনশন করবেন না, আমি রাব্বিকে পাশের বাসায় দিয়ে এসেছি ।” আবির আর কিছু বলল না । এমন সময় এক ডাক্তারের সাথে দেখা আবিরের, এই ডাক্তারই আবির আর রাব্বির ডিনএনএ টেস্ট করিয়েছেন । ডাক্তার আবিরকে দেখে জিজ্ঞেস করলো, “একি! আপনারা দেখি হসপিটালেই, আমিই আপনাদের কল করবো ভাবছিলাম ।” আবির জিজ্ঞেস করলো, “কেনো ডাক্তার, কি হয়েছে?” ডাক্তার বলল, “আপনি আর আপনার স্ত্রি একটু আমাদের চেম্বারে আসুন ।” চয়নিকা আর আবির একবার দুজন দুজনের দিকে কৌতূহলযুক্ত চেহারায় তাকালো, তারপর একসাথে ডাক্তারের চেম্বারের দিকে যেতে লাগলো ।
“আসবো?” ডাক্তারের চেম্বারের সামনে এসে বলল আবির । ডাক্তার বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ! আসুন ।” আবির আর চয়নিকা ভেতরে গেলো । তারপর ডাক্তার ওদের বসতে বললে ওরা বসলো । আবির জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে ডাক্তার?” ডাক্তার বলল, “শুরুতেই আপনাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেই, কারণ এই কয়েকদিনে আপনাদের পরিবারে মনে হয় অনেক ঝামেলা হয়েছে এটার জন্য, কিন্তু আসলে ভুলটা আমার, ঠিক আমারও না, প্রিন্টিং মিস্টেক এর কারণে এক জনের টেস্টের নামের জায়গায় আরেকজনের টেস্ট এর নাম উঠেছে ।” আবির জিজ্ঞেস করলো, “মানে?” ডাক্তার বলল, “আসলে রাব্বি আপনারই সন্তান, আর যে টেস্ট রেজাল্টটা আপনাদের দিয়েছি, ওটা অন্য একজনের ডিএনএ টেস্ট এর ।” বলে ডাক্তার আবির আর চয়নিকার হাতে একটা ফাইল দিয়ে বলল, “এই যে, এটাই হচ্ছে আপনাদের আসল টেস্ট রেজাল্ট ।” চয়নিকা আর রাব্বির চেহারায় হাসি ফুটে উঠলো । আবির চয়নিকাকে বলল, “দেখেছো! আমি তোমাকে বলেছিলাম চিন্তা না করতে!”
বাইরে এসে সবাইকে কথাটা জানালো আবির । সবাই কথা শুনে বেশ খুশি । অয়ন বলল, “আজ তো বাড়ি ফিরে পার্টি হবে!” আবির বলল, “সব হবে, কিন্তু স্যার এর কি অবস্থা?” নিশান বলল, “একটু আগে ডাক্তার এসেছিলো, সাবিত ভাই গেছে ডাক্তারের সাথে কথা বলতে ।” একটু মন মন খারাপ অবস্থায় সাবিত এলো । আবির কাছে যেয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে ভাই?” সাবিত বলল, “ডাক্তার বলল, উনার শরীরের কন্ডিশন ভালো না । উনার সুস্থতার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই । উনার পরিবারের লোকজনদেরও ডাকতে হবে ।” কথাটা শুনে ভেঙ্গে পড়লো আবির । তারপর সাবিতকে বলল, “ভেতরে কি যাওয়া যাবে, তাহলে আমি একটু যেতাম!” সাবিত বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ, যা ।” আবির ভেতরে গেলো । বিছানায় শুয়ে আছে রনি । পাশের মনিটরে হ্রিদস্পন্দন দেখা যাচ্ছে । আবির কাছে যেয়ে রনির পাশে একটা চেয়ারে বসে রনির হাতটা ধরে বলল, “স্যার, আমি জানি না আপনি আসলে কি করতে এসেছেন । আপনার কথাগুলো শুরু থেকেই কেমন সন্দেহজনক । কোন ছাত্রের কি করেছেন, তার প্রায়শ্চিত্ত করতে এসেছেন, ব্যাপারটা কেমন অদ্ভুত । যাই হোক, আপনি আমাদের জন্য জীবন হয়ে এসেছিলেন । আপনি আমাদের অনেক সাহায্য করেছেন! এমনকি আপনি আমার জীবনও বাঁচিয়েছেন! এই ঋণ আমি কোনদিনও শোধ করতে পারবো না!” কথাগুলো বলতে বলতে আবির কান্না করে দিলো । কেনো যেনো এই লোকটাকে আবিরের খুব চেনা মনে হচ্ছে! খুব চেনা! যেনো এই লোকটা আবিরের মেলায় হারিয়ে যাওয়া ভাই, বা অন্য কিছু । আবির তারপর বলল, “আমি আপনার নিকট অনেক কৃতজ্ঞ থাকবো স্যার ।” আবির চেয়ার থেকে উঠে রনির পাশ থেকে যেই চলে আস্তে নেবে, অমনি আবিরের ধরে রাখা রনির হাতটা আবিরকে টেনে ধরলো । আবির দাঁড়িয়ে গেলো । পেছন ফিরে তাকালো । বিছানায় শুয়ে থাকা রনি মুখ থেকে অক্সিজেনের মাস্কটা খুলে ফেললো । তারপর দুর্বলতার সাথে গান ধরলো, “সেই যে হলুদ পাখি! বসে জামরুল গাছের ডালে । করতো ডাকাডাকি, আমার শৈশবের সকালে! একদিন গেলো উরে, জানি না কোন সুদূরে । ফিরবে না সেকি ফিরবে না! ফিরবে না আর কোনোদিন!” আবিরের নিজের অজান্তেই মুখ থেকে একটা আওয়াজ বেরোলো, “রাজ!” আবির পেছনে ফিরে আবার বসলো । রনি মুখের অক্সিজেন মাস্কটা খুলে আবিরের হাতটা চেপে ধরে বলল, “হ্যাঁ ভাই, আমি রনি না, আমি রাজ ।” আবির জিজ্ঞেস করলো, “কিন্তু তুই কি জন্য এসেছিলি!” রাজ বলল, “তোকে আমি কষ্ট দিয়েছি, সেই কষ্টের কিছুটা হলেও প্রায়শ্চিত্ত করতে!” আবির জিজ্ঞেস করলো, “কষ্ট! কিসের কষ্ট!” রাজ বলল, “ওই যে, তোকে একবার কল করেছিলাম, তারপর কেমন বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনতে পেলাম, তারপর তুই আমাকে বললি, আমার জন্য তোর অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে, সেটারই প্রায়শ্চিত্ত করলাম ভাই! জানি না পারলাম কিনা, কিন্তু কিছুটা বোঝামুক্ত হলাম!” আবিরের মনে পড়লো সেদিনের কথা । রাজের কলের কারণে অল্পের জন্য ট্রেনের সামনে দিয়ে লাইন পার হতে পারে নি আবির আর হয়েছিলো বিস্ফোরণ ।

আগামী পর্বেঃ
নাবিলা কম্পিত পায়ে হেটে হেটে কফিনের বক্সটার কাছে গেলো । তারপর এক লোক কফিনের ঢাকনাটা খুলে কাফনের কাপড়টা সরিয়ে দিতেই বেড়িয়ে এলো রাজের চেহারাটা । নাবিলা একটা চিৎকার দিয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দিলো । আর আহাজারি করতে লাগলো, “এইডা হইতে পারে না!!! ও আল্লাহ! আমি এহন ক্যামনে বাচমু এরে ছাড়া!” তারপর নাবিলা আবিরের কাছে যেয়ে আবিরের গায়ে হাত দিয়ে আঘাত করতে করতে বলল, “তুই মারছোস ওরে! তুই মারছোস! প্রতিশোধ নিছোস তুই! প্রতিশোধ নিছোস!”