0 %

Thanks a lot for being with us!
We are re-constructing our website!
Sorry for this temporary inconvenience
We are coming to you with a fresh look and design from 1 January 2022!
Till then! Stay connected!

পরিচয় পর্ব-৩৫৯

পরিচয়(পর্ব-৩৫৯)
(সিজন-১২-ওয়াদা)
“ভাই! সেসব বাদ দে! তুই তো ইচ্ছে করে কিছু করিস না!” বলল আবির । রাজ বলল, “কিন্তু আমার জন্য তোর অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেলো, তাই না? আমি খবরে দেখেছি! কত মানুষ মারা গেছে আমার জন্য!” আবির বলল, “ভাই থাম! তুই রেস্ট নে!” রাজ বলল, “হ্যাঁ, রেস্টই তো নেবো এখন, চিরনিদ্রায় শায়িত হবার সময় এসেছে এখন ।” আবির কাঁদতে কাঁদতে বলল, “প্লিজ! এভাবে কথা বলিস না!” তারপর একটু থেমে আবির জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা! তুই চয়নিকাকে চিনিস?” রাজ জিজ্ঞেস করলো, “চয়নিকা! কোন চয়নিকা?” আবির বলল, “যার গর্ভে অসময়ে তোর বাচ্চা জন্মেছিলো?” রাজ বলল, “হ্যাঁ, ওদের কথা আমিই তো তোকে বলেছিলাম!” আবির বলল, “হ্যাঁ! সেই চয়নিকাই আমার স্ত্রী, আর ওর গর্ভে জন্ম নেয়া সেই বাচ্চা নিশান! এতদিন যা সাথে তুই ছিলি!” রাজ কিছু বলতে পারলো না । আবির, “দাঁড়া! এক মিনিট!” বলে বাইরে এসে চয়নিকা আর নিশানকে নিয়ে ভেতরে গেলো আবির । আসতে আসতে চয়নিকাকে সবটা জানালো আবির । রাজের বেডের পাশে এসে দাঁড়িয়ে নিশানকে আবির বলল, “নিশান, উনি তোর আসল বাবা, আমি নই ।” নিশান কেবল, “জানি!” বলে রাজের হাত চেপে ধরল । রাজ বলল, “ভালো থাকিস বাবা! আবির তোকে অনেক খুশি রাখবে!” নিশান কিছু বলল না । রাজ চয়নিকার দিকে তাকালো । জিজ্ঞেস করলো, “কেমন আছো?” চয়নিকা বলল, “ভালো আছি ।” রাজ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতে বলল, “জীবনের শেষ মুহূর্তে এসে এভাবে সব কিছুর সাথে একবার দেখা হয়ে যাবে আমি ভাবতেই পারিনি!” বলে চোখ বন্ধ করলো রাজ । আবির বলল, “এসব উল্টাপাল্টা কথা বলা বাদ দে, আর দ্রুত সুস্থ হয়ে যা!” কিন্তু রাজের মুখ থেকে কোনো আওয়াজ এলো না । আবির রাজকে ধাক্কা দিয়ে ডাকলো, “রাজ! এই রাজ!” চয়নিকা আবিরকে ডাকলো, “আবির!” আবির জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে?” চয়নিকা কিছু বলল না, সে হার্টবিটের মনিটরের দিকে তাকিয়ে আছে । আবির তাকিয়ে দেখলো, আকাবাকা রেখাগুলো সমান হয়ে গেছে । অর্থাৎ, রাজ আর বেঁচে নেই । ব্যাপারটা বুঝতে পেরে নিশান কাঁদতে কাঁদতে বাইরে চলে এলো । চয়নিকার চোখ দিয়েও জল পড়া শুরু হলো । আবির চেয়ারের ওপর ধপ করে বসে পড়লো । মনে পড়তে থাকলো রাজের সাথে কাটানো সময়গুলোর কথা । সেই প্রথম রাজ এসেছিলো অনাথ আশ্রমে, আবিরের সাথে বন্ধুত্ব করেছিলো, কত ছাদের ওপর মজা করেছে, ক্লাসরুমে মজা করেছে, ছাদে যেয়ে সেই যে হলুদ পাখি গানটা গেয়েছে, ঝগড়াও হয়েছে । শেষে যেদিন যশোর থেকে ঢাকা ফিরে এলো আবির সেদিনও বৃষ্টিতে ভিজে কেদেছে রাজ । আর আজ সেই রাজ নেই ।
ছোটো একটা ঘর । ঘরের এক পাশে একটা চারপায়া । অন্য কোণেই রান্নার চুলা, পাশে ট্যাপের নিচে থালাবাসন রাখা, সেগুলো মাজছে এক মহিলা । এমন সময় এক ছোট এক পিচ্চি এসে তাকে ডেকে বলল, “মা মা, বাইরে কারা যেনো এসেছে!” মহিলাটা জিজ্ঞেস করলো, “কারা?” পিচ্চিটা বলল, “চিনি নে, বড় একখান বাক্সে কি জানি নিয়া আসিছে!” মহিলাটা মাথায় ওড়নার কাপড় দিয়ে পিচ্চিটাকে বলল, “চল, আসতেছি!” তারপর বাইরে এসে মহিলা দেখলো, আবির, চয়নিকা, সাবিত, নিশান, আরও অনেকে যদিও কাউকেই মহিলাটা চিনতে পারছে না । পাশে কফিন দেখলো মহিলাটা । মহিলাটা জিজ্ঞেস করলো, “আপনেরা কারা?” আবির জিজ্ঞেস করলো, “আপনি কি রাজ স্যারএর স্ত্রী?” মহিলাটা বলল, “হ, ক্যান?” আবির জিজ্ঞেস করলো, “আপনি কি নাবিলা?” মহিলাটা বলল, “হ, আপনি ক্যামনে জানলেন ।“ আবির বলল, “নাবিলা! আমি আবির!” নাবিলা কিছুক্কণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো । তারপর হালক হাসিমুখে বলল, “আরে আসো আসো! ভেতরে আসো, রাজ তো প্রতিদিনই তোমার কথা কয়………।” নাবিলার কথা শেষ করতে না দিয়েই আবির বলল, “রাজ মারা গেছে!” নাবিলা আবার দাঁড়িয়ে গেলো । চুপ হয়ে গেলো । পেছন ফিরে আবিরের দিকে তাকালো । আবির অ্যাম্বুলেন্সের পাশে থাকা কফিনের দিকে তাকালো । নাবিলা কম্পিত পায়ে হেটে হেটে কফিনের বক্সটার কাছে গেলো । তারপর এক লোক কফিনের ঢাকনাটা খুলে কাফনের কাপড়টা সরিয়ে দিতেই বেড়িয়ে এলো রাজের চেহারাটা । নাবিলা একটা চিৎকার দিয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দিলো । আর আহাজারি করতে লাগলো, “এইডা হইতে পারে না!!! ও আল্লাহ! আমি এহন ক্যামনে বাচমু এরে ছাড়া!” তারপর নাবিলা আবিরের কাছে যেয়ে আবিরের গায়ে হাত দিয়ে আঘাত করতে করতে বলল, “তুই মারছোস ওরে! তুই মারছোস! প্রতিশোধ নিছোস তুই! প্রতিশোধ নিছোস!” আবির কিছু বলল না । চয়নিকা নাবিলাকে কাছে টেনে শান্তনা দিতে লাগলো ।
লাশ দাফন শেষ হলে আবির নাবিলার কাছে এসে কিছু টাকা দিয়ে বলল, “এই টাকাটা তুমি রাখো, তোমাদের কাজে লাগবে!” নাবিলা টাকা না নিয়ে আবিরের হাতে একটা ধাক্কা দিয়ে বলল, “তোদের টাকা আমার লাগবো না! আমার স্বামীরে কাইড়া নিয়া এহন টাকার গরম দেহাস না! যা! আমার বাড়ি থেইকা বাইর হইয়া যা!” বলে সবাইকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে দরজা আটকে দিলো নাবিলা । আবির বেশ কয়েকবার দরজা ধাক্কালেও দরজা খুললো না নাবিলা । ভেতরে ওর বাচ্চাটা ছিলো বলে নাবিলার কিছু উল্টাপাল্টা করে বসার ভয় করলো না ওরা । চয়নিকা জিজ্ঞেস করলো, “কি করবে এখন?” আবির বলল, “কি আর করবো, কিছু তো করার নেই । চলো, ফিরে যাই ।” সবাই ফিরতে লাগলো বাসার পথে ।

আগামী পর্বেঃ
আবির ওপর নিচ মাথা নেড়ে বলল, “হ্যাঁ, আমিও সেটাই মনে করি । আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ।” চয়নিকা জিজ্ঞেস করলো, “কি সিদ্ধান্ত?” আবির বলল, “যতোবারই আমি এসব গোয়েন্দাগিরি, এগুলোকে গোয়েন্দাগিরি বলে কিনা তা-ই আমি জানি না যদিও, কারণ যা ঘটে আমার ভাবার আগেই ঘটে যায় । যাই হোক, এসব কাজে আমি যতোবারই ঢুকেছি, একটা না একটা মৃত্যু দেখেছি । আগেরবার জরিনা আপু, এবার রাজ, আমি তাই আর এসব কাজে নিজেকে জড়াতে চাই না ।”