পরিচয় পর্ব-৩৫৪
পরিচয়(পর্ব-৩৫৪)
(সিজন-১২-ওয়াদা)
(সিজন-১২-ওয়াদা)
সিসিটিভি ফুটেজ চেক করছে আবির আর রনি । মনিটরে দেখা যাচ্ছে, এই ক্যাফের সামনে সকালে এসেছে আফজাল খান । তারপর ক্যাফের সামনের একটা গলি দিয়ে ঢুকে গেছে সাথে তিনটা গুন্ডা নিয়ে । এরপর দু ঘন্টা কেটে যাবার পর আফজাল খান খালি হাতে ফিরে এলেও তার সাথে থাকা দুই গুন্ডা সাথে করে দুটি বস্তা ভর্তি কিছু একটা নিয়ে এলো । তারপর সেটা গাড়িতে তুলে চলে গেলো । আবির কাউন্টারের লোকটাকে জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা, ওই গলিতে কি আছে?” লোকটা বলল, “ওদিকে তেমন কিছু নেই, কিছু বাড়িঘর আছে সাধারণ মানুষের, একটা ছাপাখানা আছে, একটা সাইবার ক্যাফে আছে ।” আবির জিজ্ঞেস করলো, “এগুলোর মধ্যে কিছু কি নেই যা আপনার সন্দেহের তালিকায় পড়ে?” লোকটা বলল, “না, এরকম তো কিছু নেই, কিন্তু হ্যাঁ, ছাপাখানাটা যদ্দুর শুনেছি অবৈধভাবে বানানো । ওই ছাপাখানার কোন লাইসেন্স নেই ।” আবির ওপর নিচ মাথা নাড়লো । তারপর আবির রনিকে বলল, “আপনি এখানে আরও আগের ভিডিও ফুটেজগুলো চেক করুন, আমি ওদিক থেকে ঘুরে আসি ।” রনি জিজ্ঞেস করলো, “আপনি একা যাবেন?” আবির বলল, “হ্যাঁ, ভয়ের কিছু নেই ।” আবির গেলো সেই গলিটার ভেতর । ওপরের দিকে তাকালে পাশাপাশি বিল্ডিং । কোনোটাও ১০ তলার কম বলে মনে হয় না । একটু দূর যেতেই গলিটার শেষ প্রান্ত, যেখানে একটা দরজা । ওপরে লেখা, ইজাবেলা পাবলিকেশন । আবির নক করলো দরজায় । একটু পর এক লোক বেড়িয়ে এলো । জিজ্ঞেস করলো, “কি চাই?” আবির বলল, “আসলে আমি একজন লেখক, এই পাবলিকেশনে আমার একটা বই ছাপাতে চাই ।” লোকটা বলল, “এই ছাপাখানা এখন বন্ধ আছে ।” অথচ ভেতরে ছাপাখানার কল চলার আওয়াজ ঠিকই পাচ্ছে আবির । আবির লোকটাকে জিজ্ঞেস করলো, “তা কি করে হয়? আমি যে ছাপাখানার কল চলার আওয়াজ পাচ্ছি?” আবিরের করা প্রশ্নটা লোকটার বোধহয় শুনতে ভালো লাগলো না । মেজাজ তীক্ষ্ণ করে বলল, “কল ঠিক করা হচ্ছে! আপনাকে এতো কথার জবাব দেবার সময় আমার নেই ।” বলে লোকটা দরজা আটকে ভেতরে চলে গেলো । আবির এই ছাপাখানার ভেতরের কিছুই দেখতে পায় নি, কারণ দরজার ওপাশেই কালো পর্দা টাঙানো ছিলো । ফেরার সময় সাইবার ক্যাফেটা দেখতে পেলো আবির । সত্যি! এ যুগে এসেও আদৌ সাইবার ক্যাফে কেউ ব্যাবহার করে? তবু ভেতরে ঢুকলো আবির । না, আবিরের ভাবনার সাথে ভেতরের দৃশ্যপট ঠিক মিললো । তৎক্ষণাৎ আবিরের খেয়াল হলো, আবির ঢাকায় না, ময়মনসিংহে একটা মোটামুটি উন্নত একটা শহরে । এখানে সাইবার ক্যাফে ব্যাবহারের লোক পাওয়া অস্বাভাবিক না । দশ টাকায় এক ঘন্টার জন্য চালানো যায় একটা কম্পিউটার । একটায় বসলো আবির । আবিরের একটা ফেইক অ্যাকাউন্ট আছে ফেসবুকের, সেটায় ঢুকলো । তারপর আবার লগআউট করে চলে এলো । নিচে নামতেই আবির দেখলো, একটা বিল্ডিং থেকে কিছু লোক প্যাকেট ভর্তি করে কিছু একটা নিয়ে যাচ্ছে । আবির তাদের জিজ্ঞেস করলো, “এগুলো কি জিনিস?” লোকগুলোর একজন বলল, “এইগুলান মেয়াদউত্তীর্ণ হইয়া যাওয়া পণ্য । এইগুলান ফালায় দিতে যাইতাছি ।” লোকটা একটা জিনিস ভুল বলেছে । সেই পণ্যগুলো তারা ফেলে দিচ্ছে না, একটা ট্রাকে করে কোথাও নিয়ে যাচ্ছে । আবার হতেও পারে এগুলো ট্রাকে করে নিয়ে যেয়ে তারা ফেলে দেবে । সবই ঠিক আছে, কিন্তু একটাই প্রশ্ন । এইরকম একটা আবদ্ধ পরিবেশে এসব পণ্য এলোই কোত্থেকে বা কেনোই এলো? গলিতে তো আর কোন দোকানপাট নেই! তাহলে? আর এতো কিছুর সাথে আফজাল খানের সম্পর্ক আছে কি? ছাপাখানা সন্দেহের তালিকায় সবার ওপরে । কারণ একে ওটার লাইসেন্স নেই, তার ওপর মিথ্যা কথা বলিয়ে আবিরকে ঢুকতে দেয়া হয় নি । হতে পারে এখানে নকল টাকা উৎপাদনের কাজ চলে যা পড়ে বস্তায় ভরে নিয়ে যায় আফজাল খান । কিন্তু তা হলে তো তার গ্রামের লোকজনের কাছেও নকল টাকা হওয়ার কথা, তাও তো নেই । যাই হোক আবির ফিরে গেলো রনির কাছে । গিয়ে দেখলো, রনি যেনো আবিরের ফেরার জন্যই অপেক্ষা করছিলো । আবিরকে দেখেই রনি উঠে আবিরের কাছে এসে আবিরের হাত ধরে মনিটের সামনে নিয়ে যেয়ে বলল, “এটা দ্যাখো!” আবির দেখলো । এটা গতকাল সন্ধ্যার ফুটেজ । কিছু মহিলা গল্প করতে করতে ঢুকে গেলো গলিতে । দেখে মনে হয় গরিব । একটু পর কিছু পুরুষও, তাদের দেখে মনে হয় গরিব । আবার এদের মধ্যে কারও হাত নেই, কারও পা নেই । এরপর রনি আজ সকালের ফুটেজ দেখালো । সেখানে দেখা যাচ্ছে, আগেরদিনের সেই একই লোকজন সেখান থেকে বেরোচ্ছে । এভাবে বেশ কয়েক দিনের ফুটেজ ওই সময় একই রকম । রনি জিজ্ঞেস করলো, “এটা কি হতে পারে?” আবির বলল, “নকল ফকির!” রনি বলল, “হ্যাঁ! আমিও তাই ভাবছিলাম । তাহলে ওই আফজাল খান নকল ফকির দিয়ে ভিক্ষা করিয়ে এতো টাকা কামিয়েছে!” আবির বলল, “উহু, এটা হতে পারে না । কারণ কেবল নকল ফকির দিয়ে ভিক্ষা করিয়ে এতো টাকা কামানো সম্ভব বলে আমার মনে হয় না ।” রনি জিজ্ঞেস করলো, “তাহলে?” আবির রনির কথার জবাব দিতে যাবে, এমন সময় ক্যামের সামনে একটা গাড়ি এসে দাঁড়ালো । কাউন্টারের লোকটা সেই গাড়ির কাছে গেলো । ক্যাফের কিছু পণ্য এসেছে বোধ হয় । আবিরকে ট্রাকের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রনি জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে?” আবির কথার জবাব দিলো না । কারণ একটা জিনিস আবিরকে বেশ অবাক করেছে । ট্রাক থেকে নামানো পণ্য গুলোর প্যাকেট আবিরের দেখা একটু আগের সেই পণ্য গুলোর প্যাকেটের মতো লাগছে না!
আগামী পর্বেঃ
সাবিত জিজ্ঞেস করলো, “তোমার বাপরে তোমার পছন্দ হয়?” নয়ন জিজ্ঞেস করলো, “এ প্রশ্ন কেনো করছেন?” সাবিত হালকা হাসিমুখে বলল, “এমনি, এইযে তুমি যে কইলা তোমার বাপরে তোমার সন্দেহ হয় ।” নয়ন বলল, “না সন্দেহ তো বলিনি । প্রশ্ন জাগে শুধু ।”
আগামী পর্বেঃ
সাবিত জিজ্ঞেস করলো, “তোমার বাপরে তোমার পছন্দ হয়?” নয়ন জিজ্ঞেস করলো, “এ প্রশ্ন কেনো করছেন?” সাবিত হালকা হাসিমুখে বলল, “এমনি, এইযে তুমি যে কইলা তোমার বাপরে তোমার সন্দেহ হয় ।” নয়ন বলল, “না সন্দেহ তো বলিনি । প্রশ্ন জাগে শুধু ।”