পরিচয় পর্ব-৩৪৬
পরিচয়(পর্ব-৩৪৬)
(সিজন-১২-ওয়াদা)
(সিজন-১২-ওয়াদা)
দরজায় নক করতেই বেড়িয়ে এলো বছর সত্তরের এক বৃদ্ধ লোক । নক করেছে আবির । আবিরের সাথে দ্বীপ ওরফে সিরাজ নামে যাকে চেনে গ্রামবাসী । বয়স্ক লোকটার নাম হাদিউজ্জামান । হাদি গত ত্রিশ বছর ধরে আফজাল খানের বাসায় ভৃত্যের কাজ করে এরকমটাই খবর দ্বীপের কাছ থেকে পেয়েছে আবির । হাদির চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে ঘুমিয়ে পড়েছিলো এবং এতো রাতে তার ঘরের দরজায় নক করায় সে ভয় পেয়ে গেছে । দ্বীপকে দেখে জিজ্ঞেস করলো, “অ কি সিরাজ! এতো রাইতা কি দরকার! আর এনি কেঠায়?” দ্বীপ বলল, “চাচা, ভয় পাইয়েন না । উনি একজন বিজনেস ম্যান ।” পরিচয় গোপন রাখলো আবির । আবির বলল, “উমম, সময় থাকে যদি আপনার সাথে একটু কথা বলতে পারি?” হাদি বলল, “কও! তয় যা কওয়ার এইহান থেইকাই কও! আমার ঘরে যারে তারে আমি ঢুকতে দেই না!” আবির বলল, “ঠিক আছে চাচা, সমস্যা নাই । আমি আপনার সাথেই কথা বলবো ।” হাদি বলল, “তাড়াতাড়ি কইবা যা কওয়ার! আমার ঘুমাইতে হইবো! সকালে ম্যালা কাম!” আবির বলল, “জি বেশি সময় নেবো না । বলছিলাম যে, আপনি কি ৫০ বছর পার করেছেন জীবনের?” হাদি বলল, “হ, তয় ঠিক কইরা কতো বছর বয়স তা কইতে পারি না । আমগোর সময় অতো তারিখ দেইখা মনে রাখা টাখা হইতো না ।” আবির বলল, “সমস্যা নেই চাচা, আপনার বয়স পঞ্চাশের বেশি হলেই হলো । আপনি কি করেন? মানে আয়ের উৎস কি আপনার?” হাদি বলল, “এই যে, আমগোর এলাকার মাথা, আফজাল খানের বাড়িত কাম করি!” আবির বলল, “ওহ! এজন্যই আপনি বলছিলেন সকালে অনেক কাজ আছে আপনার । বড় বড় বাড়িতে বড় বড় কাজ লেগেই থাকে কিনা । আচ্ছা চাচা, মাস শেষে কতো করে পান আপনি?” হাদি বলল, “পাই, খারাপ না, দশ হাজার কইরা দেয় ।” আবির হেসে উঠলো । জিজ্ঞেস করলো, “এতো কম!” হাদি বলল, “কম ক্যান হইবো । হের বাড়িত একেক কামের লাইগা একেক মানুষ । আমি আছি ঘর মোছনের লাইগা । এই ঘর মোছনের লাইগাই মাসে মাসে দশ হাজার নেই । এইডা কি কম?” আবির বলল, “ও, তাহলে তো আপনার কাজ আহামরি কঠিন কিছুই না । অল্প একটা কাজ ।” লোকটা হেসে বলল, “এহ! আপনে কইরা দেইখেন! এতো বড় বাড়ি, একদিনে মুইছবার গেলে পাছার চামড়া শুকাইয়া হাড্ডি বাইর হইয়া যাইবেনে!” আবির বলল, “আচ্ছা যাই হোক । আমরা খুজছি এমন কোনো বৃদ্ধকে, যাকে আমরা সারাজীবন আরাম আয়েশে রাখবো । বিনিময়ে তাকে কিছুই করতে হবে না ।” হাদি বলল, “অ্যাঁ! এইডা আবার কি জিনিস! এইরকম কিছু কি আদৌ হয়!” আবির বলল, “হ্যাঁ হয়! হবে না কেনো । প্রতি বছর আমরা একজন করে বয়স্ক লোককে নিয়ে যাই আমাদের সাথে । তাদের সকল খায়েশ পূরণ করি । একটা দোতলা ফ্ল্যাটও দেয়া হয় তার নামে । এমনকি সে যখনই যে পরিমাণ টাকা চাবে তাকে তাই দেয়া হবে ।” হাদি বলল, “এহ! কি কোন এগুলা! এগুলা বিশ্বাসই হইতে চায় না! আসলেই কি সত্যি?” আবির বলল, আপনার মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষদের কাছে এগুলো অবিশ্বাস্য লাগবে সেটাই স্বাভাবিক । কিন্তু হ্যাঁ, এগুলো সত্যি । আপনার স্বপ্নের জীবন যদি পেতে চান, তাহলে এখুনি বলুন । হাদি জিজ্ঞেস করলো, “কোন প্রমাণ আছে আপনার কাছে?” আবির নেট থেকে নামানো কিছু বয়স্ক মানুষের ছবি দেখিয়ে বলল, “এই যে দ্যাখেন! ইনি অস্ট্রেলিয়ার একজন নাগরিক । তাকে আমরা বাংলাদেশে এনে এরকম সেবা দিচ্ছি । তিনি কত সুখে আছেন তার মুখের হাসিটা দেখে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন ।” এরকম আরও নানা ছবি দেখিয়ে লোকটাকে লোভ দেখালো আবির । শেষে পকেট থেকে পাঁচ হাজার টাকা বের করে দিয়ে বলল, “সবচেয়ে বড় প্রমাণ এটা । ওই বাড়িতে একমাসের অর্ধেক টাকা আমি আপনাকে এক দিনে দিনে আপনার কোন পরিশ্রম ছাড়াই ।” আসলে টাকাটা সকালে আবির আফজাল খানের কাছেই পেয়েছে । হাদি লোকটা কিন্তু লালসার ফাঁদে পা দিয়েছে তা বুঝতে পারলো আবির । এবার আর বেশি কিছু বলা ঠিক হবে না । বেশি অবাস্তব কথা বললে লোকটার সন্দেহ হতে পারে । আবির এরপর বলল, “ভোর ৫টা ৫৫ মিনিটে আপনার বাড়ির সামনে একটা গাড়ি আসবে । রাজি থাকলে চলে যাবেন, না থাকলে থেকে যাবেন । আপনার ইচ্ছা ।” বলে চলে গেলো আবির । আবির একটু দূরে যাওয়ার পর দ্বীপ হাদির কানে কানে বলল, “আমার চাচারেও নিয়া গেছিলো গত বছর, চাচা এখন সেই খুশি । চার পাঁচটা মাইয়া নিয়া ঢাকা শহরে ফুর্তি করে । তুমিও পারলে চইলা যাইও ।” বলে চলে গেলো দ্বীপ ।
মসজিদে ফিরে এরকম করার কারণ আবিরের কাছে জানতে চাইলো সবাই । থাকার জায়গা না থাকায় ওরা মসজিদের স্টোর রুমে কিছুদিন থাকবে সিদ্ধান্ত নেয়া হলো । আবির বলল, “গ্রামের মানুষ হওয়ায় আধুনিক কিছু সম্পর্কে তার ধারণা নেই । আর কুসংস্কারে তো এরা সবসময় বিশ্বাস রাখে । আর দ্বীপ বলল আফজাল খানের কুকর্মের সাথেও এর অনেক অবদান আছে । বাহিরে কেবল ঘর মোছে বললেও ভেতরে ভেতরে অনেক কিছু করে দেয় । তো একে লোভ দেখালাম, ৫টা ৫৫ মিনিটে একজন পুলিশ আসবে, অপুর সাহায্যে ওই পুলিশকে আমি ঠিক করে রেখেছি । সে একে ঢাকায় নিয়ে যাবে । এর পরিবারে আর কেউ না থাকায় এ যদি যেতেও চায় তবে পরিবারের টান একে বাঁধা দেবে না । সুতরাং বলা যায়, এর যাওয়ার সম্ভবনাই বেশি । যদি চলে যায়, উপায় করে এর জায়গায় আমাকে কাজে ঢুকতে হবে ।” নিশান জিজ্ঞেস করলো, “আর যদি না যায়?” আবির বলল, “তাহলে জোর করেই নিয়ে যাওয়া হবে ।”
আগামী পর্বেঃ
আফজাল খানে ছেলে, নয়ন ছিলো রুমে । নয়নের রুমে যেয়ে ঘ্রর মোছা শুরু করলো আবির । নয়ন ফোনে কার সাথে কথা বলছিলো । কথপথন এমন, নয়নের ম্যাথের জন্য একজন টিচার খুব দরকার, তাই সে তার বন্ধুর কাছে জিজ্ঞেস করছে তার পরিচিত কোনো ম্যাথ টিচার আছে কিনা ।
মসজিদে ফিরে এরকম করার কারণ আবিরের কাছে জানতে চাইলো সবাই । থাকার জায়গা না থাকায় ওরা মসজিদের স্টোর রুমে কিছুদিন থাকবে সিদ্ধান্ত নেয়া হলো । আবির বলল, “গ্রামের মানুষ হওয়ায় আধুনিক কিছু সম্পর্কে তার ধারণা নেই । আর কুসংস্কারে তো এরা সবসময় বিশ্বাস রাখে । আর দ্বীপ বলল আফজাল খানের কুকর্মের সাথেও এর অনেক অবদান আছে । বাহিরে কেবল ঘর মোছে বললেও ভেতরে ভেতরে অনেক কিছু করে দেয় । তো একে লোভ দেখালাম, ৫টা ৫৫ মিনিটে একজন পুলিশ আসবে, অপুর সাহায্যে ওই পুলিশকে আমি ঠিক করে রেখেছি । সে একে ঢাকায় নিয়ে যাবে । এর পরিবারে আর কেউ না থাকায় এ যদি যেতেও চায় তবে পরিবারের টান একে বাঁধা দেবে না । সুতরাং বলা যায়, এর যাওয়ার সম্ভবনাই বেশি । যদি চলে যায়, উপায় করে এর জায়গায় আমাকে কাজে ঢুকতে হবে ।” নিশান জিজ্ঞেস করলো, “আর যদি না যায়?” আবির বলল, “তাহলে জোর করেই নিয়ে যাওয়া হবে ।”
আগামী পর্বেঃ
আফজাল খানে ছেলে, নয়ন ছিলো রুমে । নয়নের রুমে যেয়ে ঘ্রর মোছা শুরু করলো আবির । নয়ন ফোনে কার সাথে কথা বলছিলো । কথপথন এমন, নয়নের ম্যাথের জন্য একজন টিচার খুব দরকার, তাই সে তার বন্ধুর কাছে জিজ্ঞেস করছে তার পরিচিত কোনো ম্যাথ টিচার আছে কিনা ।