পরিচয় পর্ব-৩৪৪
পরিচয়(পর্ব-৩৪৪)
(সিজন-১২-ওয়াদা)
(সিজন-১২-ওয়াদা)
“আজ থেকে অনেক বছর আগের কথা । বাসা থেইকা আইসা আমি আসি এই ময়মনসিংহে । তুমি তো জানোই ভাই, আমি আগে নেশাখোর ছিলাম, মদ খাইয়া বেড়াইতাম । সেইখান থেইকা বাইর হইয়া আসার জন্য আমি একদম আল্লাহর পথে আইসা গেলাম । পাঁচওয়াক্ত নামাজ কালাম পড়া শুরু করলাম । কিন্তু পেট চালানো লাগবো তো, তাই এই মসজিদে টুকটাক কাজ করার কাজ নিলাম । মেঝে মোছা, সব ময়লা পরিষ্কার করা, গোছায় টোছায় রাখা ইত্যাদি । অবসরে আমি কোরআন আর হাদিস পড়তাম । আমার এতো পড়ার ইচ্ছা দেইখা এই মসজিদের এক ওস্তাদ আমাকে ফ্রিতে তার মাদ্রাসায় নিয়া নেন । সেইখানে লেখাপড়া চালাই, এরপর এই মসজিদেই আমার ঠিকানা হইয়া যায় একজন মুয়াজ্জিন হিসেবে । সব সুরা পারিনা, অল্প স্বল্প । তবে শেষের দিককার প্রায় সবই মুখস্ত । আল্লাহর রহমতে ওই খারাপ পথটা থেইকা আমি বাইর হইয়া আসি । নিজেরে নতুনভাবে চেনা শুরু করি । চাইছিলাম একবার ফিরা যাইতে, আমার পরিবাররে দেখাইতে যে আমি কতো পাল্টাইয়া গেছি, কিন্তু তখনই আমি পাই বিস্ফোরণের খবর । বুইঝা যাই, দুনিয়ায় আমি এহন এতিম । আমার কষ্ট টের পাইয়া আমার সাথে বিয়া দেন এলাকার এক মাইয়া, সালেহার । সেই এহন ভেতরে প্যারালাইজড । এইখানে এই মসজিদটা কিন্তু তখন আছিলো না । এই মসজিদ আছিলো আরও দূরে । তখন টিনের আছিলো । আর এই জায়গায় ছিলো আমার বাড়ি । আমার, আর সালেহার । আমাদের একখান পোলা হয়, নাম দেই সেলিম । সেলিম আমাদের পরিবারে শান্তি আনা শুরু করে । বউয়ের ইচ্ছায় ওরে মাদ্রাসায় পড়াই । কিন্তু একদিন হঠাৎ কইরা আমার সেলিম অসুস্থ হইয়া পড়ে । ডাক্তারের কাছে গেলে জানায় ব্রেইন টিউমার হইছে । কথা শুইনা আমার সালেহাও ভাইঙ্গা পড়ে । গরীবের সংসার, কি আর করতাম । ছেলে এক সপ্তাহের মাথায় মইরা যায় । বউ তখন অর্ধেক অসার হইয়া যায় । বউয়ের ইচ্ছায় আমি পোলারে কবর দেই বাড়ির সামনে ছোট উঠানে । বউ সেইখানে একখান গোলাপ ফুল গাছ লাগাইছিলো । প্রত্যেকদিন ও সেই গোলাপফুল গাছে পানি দিতো । এক পায়ে খোঁড়াইয়া খোঁড়াইয়া আর এক হাতে মগ নিয়া । কিন্তু যেদিন থেইকা এই এলাকায় আফজাল খান আসে, সেইদিন থেইকা শুরু হয় আমাদের দুঃখ । আফজাল খান আগে মানুষের ঘর বাড়ি কেড়ে বানায় নিজের বিরাট ৪ তলা বাড়ি । আমার এক বন্ধু আছিলো, ওসামা নামে । ওর বাড়িও কাড়ছিলো । ও বাড়ি দিতে চায় নাই বইলা ওরে মিথ্যা অপবাদে জেলে পাঠাইয়া মৃত্যুদণ্ডর শাস্তি দেওয়াইছে । পুরো পরিবারও শেষ কইরা দিছে ওর ।” আবির বলল, “হ্যাঁ, সেই ওসামা আমাকে বলেছিলো তোর কথা । বলেছিলো তোর সাথে দেখা করে আফজাল খানকে শাস্তি দিতে । সেজন্য আমার এখানে আসা ।” দ্বীপ বলল, “ফিরা যাও । আফজাল খান খুব সাংঘাতিক লোক । এখানে তুমি ওরে নিয়া ফাঁদ পাতবা, ঢাকায় তোমার পরিবারের সবাইরে ও খুন কইরা ফেলবো ।” আবির বলল, “সেসব নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না । এরপর কি হয়েছিলো বল তোর গল্প ।” দ্বীপ বলল, “আফজাল খান চাইছিলো, একটা মসজিদ বানাইতে ওর বাড়ির সামনেই, যেখানে আমার বাড়ি, সেইখানে । আমাকে বাধ্য করে ওরা ওই বাড়ি ছাড়তে । আমি এইখানে বউ নিয়া আসি । আমার বউ আসতেই চায় নাই, কষ্টে এতো কান্নাকাটি করছে, যে পুরাই প্যারালাইজড হইয়া গেছে । মসজিদ করার সময় ওরা আমার পোলার হাড্ডি পাইছিলো, সেই হাড্ডির ওপরেই সিমেন্ট দিয়া ভিত বানাইছে । আমি চুপচাপ দেখছি । কিছু করতে পারি নাই ।” এরপর দ্বীপ কাঁদতে কাঁদতে বলল, “আইজ ওই আফজাল খানে যেই জায়গায় দাঁড়ায়, ইমামের পেছনে, ঠিক ওই বরাবর নিচে আমার পোলার লাশ!” বলে কান্নাকাটি শুরু করলো দ্বীপ । আবির বেশ কষ্ট পেলো । অয়ন মসজিদটার দিকে তাকালো । বলল, “আল্লাহ! কি ভয়ানক!” সাবিত বলল, “ইচ্ছে করছে, এখুনি ওই আফজাল খানকে খুন করে আসি!” দ্বীপ বলল, “না ভাই! এইটা কইরেন না । আপনি তো কিছু করতে পারবেনই না, বরঞ্চ আপনার পরিবারের সবাইকে ওই আফজাল খান খুন করে ফেলবে!” সাবিত হালকা হেসে বলল, “আমার পরিবার? আছে বয়স্ক মা বাবা । তাদের হদিস এরা পাবে না । আর বউ বাচ্চা সব তো অলরেডি গন ।” দ্বীপ বলল, “আমি দুঃখিত ভাই!” সাবিত বলল, “না না, ইটস ওকে ।” আবির বলল, “দ্বীপ, তোর বড় ভাই হিসেবে আমি তোর কাছে একটা আবদার করবো । রাখবি?” দ্বীপ বলল, “হ ভাই বলো! কি আবদার করবা!” আবির বলল, “তুই ভাবিকে নিয়ে আমাদের কাজ শেষ হলে ঢাকায় যাবি! সেখানে ভাবির চিকিৎসা করাবো, আর তুই আমাদের সাথে সেখানে থাকবি!” দ্বীপ বলল, “না না, কি বলো এইগুলা । তোমাদের পরিবারে একটা বোঝা হয়ে যাবো নাকি ।” আবির বলল, “কিসের বোঝা! ছোট বেলায় তোর বাবা আমাকে যখন তার বাসায় নিয়ে যেয়ে লালন পালন করেছিলেন উনি কি আমাকে বোঝা মনে করেছিলেন? আর তোর মা বাবার কাছে আমি ঋণী । তাদের ঋণ আমি কিছুতেই শোধ করতে পারবো না । কিন্তু তোকে সাহায্য করে সেই ঋণের বোঝা সামান্যতম হলেও আমি কমাতে চাই । প্লিজ না করিস না!” নিশান বলল, “হ্যাঁ চাচ্চু! তুমি গেলে অনেক খুশি আমরা ।” দ্বীপ ভাবলো । তারপর বলল, “আচ্ছা, আগে তোমরা কাজ সারো, তারপর ভেবে দেখি, কি করা যায় ।”
আগামী পর্বেঃ
আসরের নামাজের পর মসজিদ থেকে বের হলো আফজাল খান । গাড়ির কাছে আসতেই সে দেখলো, ওর গাড়ির ড্রাইভার কাকে যেনো গাড়ির কাছ থেকে সরে যেতে বলছে । আর যাকে কথাগুলো বলছে, সে পাগলের মতো করে বলছে, “আমি যাবো না! এই আমি যাবো না! আমি বাবাকে দেখবো! আমি বাবাকে দেখবো!” আফজাল খান ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস্ক করলো, “কি হয়েছে?” আফজাল খানের কথা শুনেই পাগল লোকটা আফজাল খানের কাছে এগিয়ে এলো ।
আগামী পর্বেঃ
আসরের নামাজের পর মসজিদ থেকে বের হলো আফজাল খান । গাড়ির কাছে আসতেই সে দেখলো, ওর গাড়ির ড্রাইভার কাকে যেনো গাড়ির কাছ থেকে সরে যেতে বলছে । আর যাকে কথাগুলো বলছে, সে পাগলের মতো করে বলছে, “আমি যাবো না! এই আমি যাবো না! আমি বাবাকে দেখবো! আমি বাবাকে দেখবো!” আফজাল খান ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস্ক করলো, “কি হয়েছে?” আফজাল খানের কথা শুনেই পাগল লোকটা আফজাল খানের কাছে এগিয়ে এলো ।