0 %

Thanks a lot for being with us!
We are re-constructing our website!
Sorry for this temporary inconvenience
We are coming to you with a fresh look and design from 1 January 2022!
Till then! Stay connected!

পরিচয় পর্ব-৩৪৩

পরিচয়(পর্ব-৩৪৩)
(সিজন-১২-ওয়াদা)
“ভাই, এখানে আশেপাশে আর কোন মসজিদ আছে?” মসজিদ থেকে বেড়িয়ে এক রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলো আবির । রিকশাওয়ালা বলল, “হ ভাই, পাশের গেরামেই আছে , রিকশায় গেলে মিনিট পাঁচ লাগবো ।” আবির বলল, “চলেন যাই ।” দুটো রিকশা নিয়ে আবির, সাবিত, অয়ন আর নিশান রওনা হলো ।
ভাগ্য ভালো, সেই মসজিদে নামাজ ১টা ৪০-এ । তাই নামাজ মিস গেলো না ওদের । নামাজ পড়ে বেড়িয়ে সাবিত আবিরকে জিজ্ঞেস করলো, “আবির, তোর সাথে পড়ে যে লোকটা কথা বলল, সে-ই কি তবে মুয়াজ্জিন নাকি?” আবির বলল, “হতে পারে । কিন্তু মসজিদের মতো একটা পবিত্র জায়গা নিয়ে এরকম নোংরামি দেখে আমার ভাবনায় আর অতো কিছু ছিলোই না ।” নিশান জিজ্ঞেস করলো, “তাহলে এখন কি করবা বাবা?” আবির বলল, “কাজ তো ওই গ্রামেই, আর দেখা তো ওই সিরাজ নামের লোকের সাথেই করতে হবে । তো সেখানে ওই লোকের কাছে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই ।” অয়ন বলল, “ঠিক আছে ভাই! চলো!” ওরা আবার রওনা দিলো হস্তিনী গ্রামের উদ্দেশ্যে । পথে একটা রেস্টুরেন্ট দেখে দাঁড়িয়ে গেলো । আবির বলল, “দুপুরের খাওয়া দাওয়া এখান থেকে করে নেয়া যাক, না হলে বলা যায় না, ওই গ্রামে যেয়ে খাবার পাওয়া যাবে কিনা ।” ওরা রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করে আবার গ্রামের দিকে রওনা হলো ।
দুপুর ৩টা । এখন তো গ্রাম একদম ফাঁকা । কড়া রোদ, দোকানপাটও বন্ধ । রাস্তায় ১-২ জন লোক মাঝে মাঝে আসা যাওয়া করছে । অয়ন জিজ্ঞেস করলো, “কিভাবে খুজবা ওই সিরাজ নামের লোকটাকে?” আবির রাস্তার পাশে বসে সিগারেট খেতে থাকা এক লোককে জিজ্ঞেস করলো, “ভাই, এই জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন, সিরাজকে চেনেন?” লোকটা বলল, “হ চিনমু না ক্যান?” লোকটা ইশারা করে দেখিয়ে দিলো দূরে একটা টিনের ঘরের দিকে । ঘরটা মসজিদের পেছন দিয়ে একটা সরু রাস্তার দুপাশের পুকুরের মাঝে একটা মাটির রাস্তার পাশে অবস্থিত । নিশান বলল, “জায়গাটা অনেক সুন্দর! হোক টিনের ঘর, কিন্তু এতো সুন্দর জায়গাটা! আমরা শহরে ভেতরে ভালো পরিবেশে থাকি, আর বাহিরে নোংরা পরিবেশে । আর এখানে মানুষ ঘরে নোংরা বা যাই হোক, বাহিরে অনেক সুন্দর পরিবেশে থাকে ।” অয়ন বলল, “ঘরের সামনে মাটির রাস্তা, পেছনে পুকুর, সামনে পুকুর, এরকম বাড়ি থাকলে আমি তো পুকুর থেকে উঠতামই না!” আবির বলল, “হয়েছে, এবার থাম!” এসব নানা কথা বার্তা বলতে বলতে ওরা পৌঁছে গেলো, বাড়িটার সামনে । দরজায় নক করলো আবির । টিনের দরজাটা ঝনঝন করে উঠলো । ভেতর থেকে আওয়াজ এলো, “কে!” আবির বলল, “আমি, একজন পথিক । একটু কথা বলা যাবে ভাই?” লোকটা দরজা খুললো । সাবিতের ধারণাই ঠিক হলো । এটা সকালের লোকটাই । লোকটাকে দেখে কিন্তু মোটেও তেমন বয়স্ক মনে হয় না মনে হয়, যেনো আবিরেরও ছোট । লোকটা বেড়িয়ে এসে যা বলল, তা ছিলো আবিরের কল্পনার বাইরে । লোকটা বলে উঠলো, “আবির ভাই!” আবির অবাক । কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করলো, “আপনি আমার নাম জানলেন কি করে?” অয়ন জিজ্ঞেস করলো, “আপনি কি তাহলে দ্যা ইনভেস্টিগেশন শো দেখতেন?” লোকটা বলল, “হ্যাঁ! দেখবো না কেনো! আমার ভাইয়ের শো বলে কথা!” আবির এবার কিছুটা আন্দাজ করতে পারলো এটা কে । বলে উঠলো, “দ্বীপ!” লোকটা ওপর নিচ মাথা নেড়ে কাঁদতে কাঁদতে আবিরকে জড়িয়ে ধরে বলল, “হ্যাঁ! আমি দ্বীপ! ইফাজ আর পায়েলের কুলাঙ্গার ছেলে! দ্বীপ!” আবির কান্না করে দিলো । বলল, “তোর বাবা আর মা এই দুনিয়ায় নেই রে!” দ্বীপ বলল, “জানি! সব জানি আমি! সেদিন খবরে আমি সব দেখছি! আর খালি কাঁদছি!” আবির দ্বীপকে শান্ত করালো । তারপর দ্বীপ নিজেকে কিছুটা কন্ট্রোল করে চোখের পানি মুছে বলল, “আমার ঘরে তো তেমন জায়গা নাই, বউ শুইয়া আছে । প্যারালাইজড । আমি একখান পাটি নিয়া আসি, বাইরে বসো!” আবির বলল, “ইটস ওকে! এখানে বসতে কোন আপত্তি নেই । কিন্তু ভাবি প্যারালাইজড মানে?” দ্বীপ বলল, “বলতেছি আগে বসার ব্যাবস্থা করি । বলে দ্বীপ ঘরে গেলো । নিশান জিজ্ঞেস করলো, “বাবা, কে উনি?” আবির বলল, “আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন ইফাজ আর পায়েল নামক দুজন দম্পতি আমাকে পালন করেছিলেন । পড়ে আমি তাদের ওপর জের করে পালিয়ে এসেছিলাম যদিও, তাদেরই ছেলে এটা, দ্বীপ । আমার এক বছরের ছোটো ।” অয়ন বলল, “ও! তাহলে সিরাজ ছদ্মনামের আড়ালে উনার আসল নাম দ্বীপ! আর এজন্যই উনি মসজিদে তোমার দিকে এমনভাবে তাকাচ্ছিলো, যে তোমাকে উনি চেনেন!” আবির বলল, “হ্যাঁ । আমারও হালকা চেনা চেনা লেগেছিলো, কিন্তু আমি এটা ভাবতেও পারিনি, ভাগ্য আমাকে এরকম একটা জায়গায় আনবে!” একটু পর দ্বীপ একটা পাটি নিয়ে এলো । সবাই বাইরে বসলো পাটির ওপর । মৃদু বাতাস বইছে । সূর্যটাও একটা মেঘের আড়ালে চলে যাওয়ায় এখন ছায়া চারিপাশে । বেশ মনোরম আবহাওয়া । দ্বীপ জিজ্ঞেস করলো, “খাওয়া দাওয়া করছো তোমরা?” আবির বলল, “হ্যাঁ আমরা খাওয়া দাওয়া করেছি ।” দ্বীপ তখন বলল, “তোমার সাথে এরা কারা ভাইয়া, চিনলাম না তো?” আবির সবার সাথে দ্বীপের পরিচয় করিয়ে দিলো । তারপর আবির জিজ্ঞেস করলো, “ওই মসজিদটার এরকম অদ্ভুত নিয়ম কেনো?” দ্বীপ বলল, “কি আর করার, ওই আফজাল খানে দিছে ।” আবির বলল, “তোরা কিছু বলতে পারিস না? ওই মসজিদে কাজ করা ছেড়ে দে না হলে! এইতো পাঁচ মিনিট দূরে একটা মসজিদ আছে, সেখানে যেতে পারিস তো!” দ্বীপ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “ইচ্ছা কইরা তো আর করি না, আবার বলা যায় ইচ্ছা কইরাই করি ।” আবির জিজ্ঞেস করলো, “মানে?” দ্বীপ বলল, “তাইলে শোনো, আমার গল্প ।”

আগামী পর্বেঃ
আমাদের একখান পোলা হয়, নাম দেই সেলিম । একদিন হঠাৎ কইরা আমার সেলিম অসুস্থ হইয়া পড়ে । ডাক্তারের কাছে গেলে জানায় ব্রেইন টিউমার হইছে । ছেলে এক সপ্তাহের মাথায় মইরা যায় । বউয়ের ইচ্ছায় আমি পোলারে কবর দেই বাড়ির সামনে ছোট উঠানে । আফজাল খান চাইছিলো, একটা মসজিদ বানাইতে ওর বাড়ির সামনেই, যেখানে আমার বাড়ি, সেইখানে । আমাকে বাধ্য করে ওরা ওই বাড়ি ছাড়তে । মসজিদ করার সময় ওরা আমার পোলার হাড্ডি পাইছিলো, সেই হাড্ডির ওপরেই সিমেন্ট দিয়া ভিত বানাইছে ।