0 %

Thanks a lot for being with us!
We are re-constructing our website!
Sorry for this temporary inconvenience
We are coming to you with a fresh look and design from 1 January 2022!
Till then! Stay connected!

পরিচয় পর্ব-৩৪২

পরিচয়(পর্ব-৩৪২)
(সিজন-১২-ওয়াদা)
সকালের শিশির ভেজা ঘাস দেখা যাচ্ছে । সেই ঘাসের ওপর একটা রিকশা এসে থামল । রিকশাওয়ালা বলল, “হস্তিনী গেরাম এইডা । নাইমা পড়েন ।” আবির, অয়ন, নিশান আর সাবিত রিকশা থেকে নামলো । চারজনে মোট দুটো রিকশায় এসেছিলো । ভাড়াটা দিয়ে ওরা গ্রামের পথে হাটা ধরলো । আর পাঁচটা গ্রামের মতোই দেখতে এই গ্রামটা । সুন্দর সকালের সূর্য, গাছপালায় ঘেরা, আশেপাশে মাটির বা টিনের ঘর । তবে বেশ দূরে একটা বিরাট ৪ তলা দালান দেখা যাচ্ছে । এরকম একটা অজপাড়া গ্রামের প্রেক্ষাপটে বিল্ডিংটা বেমানান বটে, কিন্তু অস্বাভাবিক না । আবির আন্দাজ করতে পারলো, এটাই তবে সেই আফজাল খানের বাড়ি । আবির আশেপাশে তাকিয়ে কি যেনো খুজছিলো । তা দেখে সাবিত জিজ্ঞেস করলো, “কিরে আবির? কি খুঁজছিস?” আবির বলল, “মসজিদ । সেখানকার মুয়াজ্জিন, সিরাজ ভাইয়ের সাথে দেখা করতে হবে ।” সাবিত বলল, “এদিকে তো মনে হয় না মসজিদ আছে । থাকলে দেখা যেতো, কারণ আশেপাশে বাড়িগুলোর চেয়ে মসজিদ উঁচু হবার কথা ।” আবির বলল, “তাহলে হয়তো ওই চারতলা দালানের পেছনেই আছে ।” সাবিত বলল, “হ্যাঁ, সেটাই হবে । চল, ওদিকে যাই ।” গ্রামের পথ ধরে ওরা রওনা হলো ওদিকপানে । গ্রামের বাড়িগুলোর মাটির চুলোয় বসানো রান্নার দারুণ সুবাস ছড়িয়েছে আশেপাশে । আবিরের মনে পড়ে গেলো যশোরের কথা । সেখানে একবার এরকম পথ ধরে ওকে যেতে হয়েছিলো ওকে ।
অবশেষে ওদের ধারণাই সত্যি হলো । চার তলা বিন্ডিংটা পার হতেই ওরা দেখলো, এপাশে বাজার আর বাজারের মাঝেই মসজিদ । এখন দুপুরবেলা, তাই খুব একটা লোকজন বাইরে নেই । আর গ্রামের মানুষজন যা বাজারঘাট করার ভোরেই করে ফেলে । বাজারে তেমন একটা নেই পণ্য । তবুও লোকজন বসে আছে । সাবিত জিজ্ঞেস করলো, “যাবি কোথায় এখন?” আবির বলল, “মসজিদে । নামাজও পড়ে আসি, মসজিদের মুয়াজ্জিনের সাথেও দেখা করে আসি ।” আবির বাকিদের নিয়ে মসজিদের পথে পা বাড়ালো । কিছুদুর হাটার পরই মসজিদ থেকে আজানের আওয়াজ এলো । বুঝলো, নামাজ শুরু হওয়ার এখনও ঢের দেরি ।
মসজিদে দুজন লোক বসে কুরআন শরীফ পড়ছে, আর তিনজন তরুন বসে হাদিসের বই হাতে আলোচনা করছে কিছু একটা । আবির, নিশান, অয়ন আর সাবিত প্রথম কাতারে যেয়ে বসলো । নিশান মসজিদের আশেপাশে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে, সেই সুবাদে মাঝে মাঝে পেছন ফিরেও দেখছে । হঠাৎ সে খেয়াল করলো, ওরা যে প্রথম কাতারে বসেছে, তা মসজিদে উপস্থিত গ্রামবাসীদের বেশ অবাক করেছে । তারা কেমন যেনো অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে । নিশান অয়নকে ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “মামা, এরা সব এভাবে তাকিয়ে আছে কেনো?” অয়ন জবাব দিলো, “আরে! আমরা এলাকায় নতুন না, এজন্য । আর তাছাড়া আমাদের দেখে শহরের মানুষ বোঝাই যাচ্ছে, তাই এরা অবাক হচ্ছে গ্রামে শহরের মানুষ দেখে ।” নিশান আর কিছু বলল না । সামনে থাকা নামাজের সময়সূচীতে লেখা, যোহরের নামাজ ১টা ১৫মিনিটে । ১০ মিনিট কেটে যাবার পর এখন বাজে ১টা ১০ । মসজিদে আরও অনেক গ্রামবাসী এসেছে । নিশান ভালো করে কান পেতে শুনতে পেলো, কিছু লোক বলছে, “এরা সামনের কাতারে ক্যা?” আবার কেউ কেউ বলছে, “এরা কি খান সায়েবের অতিথি নাহি!” মসজিদের ইমামও এসেছে ওদের সামনে দেখে অবাক । ইমাম সাবিতের কাছে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো, “ভাই, আপনেরা কি খান সায়েবের অতিথি?” সাবিত বলল, “না তো, কেনো?” ইমাম বলল, “তাইলে একটু পিছনে যাইয়া বসেন । আসলে খান সাহেব আর উনার চ্যালা প্যালার জন্য সামনের কাতার ফাঁকা থাকে ।” আবির ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, “এ আবার কেমন নিয়ম! মসজিদেও আপনারা দু নম্বরি শুরু করেছেন?” ইমাম বলল, “দ্যাহেন আমি আর কি করমু, খান সায়েবের নির্দেশ ।” আবির আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো, সাবিত থামিয়ে দিয়ে বলল, “আবির, বাদ দে । চল পিছিয়ে বসি ।” আবির, সাবিত, নিশান আর অয়ন পিছিয়ে বসলো । আবিরের পেছনেই একজন গ্রামবাসী বসে ছিলো । সে জিজ্ঞেস করলো, “ভাইজানরা কি গেরামে নতুন আইছেন?” আবির বলল, “জি ভাই ।” লোকটা বলল, “দেখছেন তো ভাইজান, দুনিয়াডা কি হইয়া গেছে, মসজিদের মতো পবিত্র জায়গায়ও নাকি দুইনাম্বারি করে । এই যে, এই খান সায়েবের জন্য একদম ইমামের পিছে জায়াগা ফাঁকা রাখে । আবার ওই খান সায়েবের আশেপাশে কোন গেরাম বাসীরে আপনে দেখতে পাইবেন না । হের লোকজনই দাড়ায় । আবার খান সায়েব না আসা পর্যন্ত নামাযও শুরু হয় না ।” আবির ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, “এগুলো সত্যি!” লোকটা বলল, “হ! একদম সত্যি!” আবির বলল, “আল্লাহ! তুমি এসব লোকজনদের হেদায়াত দান করো!” যোহরের নামাজের লোকটার কথার সত্যতা খুঁজে পেলো আবির । ১টা ২০ বেজে গেছে, অথচ এখনও ইমাম নামাজ শুরু করছে না । আবির ইমামকেই জিজ্ঞেস করলো, “কি ব্যাপার, আপনারা কি নামাজ শুরু করবেন না নাকি!” ইমাম কথার জবাব না দিয়ে আরেকজন লোককে পাঠিয়ে দিলো আবিরের সামনে । লোকটা আবিরকে দেখে প্রচুর চমকে গেলো । আবিরেরও লোকটার চেহারা কেমন চেনা চেনা লাগে । যাই হোক, আবির জিজ্ঞেস করলো, “আপনারা কি আফজাল খান না আসলে নামাজ শুরু করেন না?” সামনের লোকটা জিজ্ঞেস করলো, “ভাই, শোনেন আ……।” লোকটাকে কথা শেষ করতে না দিয়েই আবির জিজ্ঞেস করলো, “আমার কথার জবাব দেন!” লোকটা বলল, “জি । কি……।” লোকটার কথা শেষ করতে না দিয়েই আবির উঠে দাড়িয়ে, “আমি অন্য মসজিদে নামাজ পড়বো ।” বলে বেড়িয়ে গেলো । সাথে গেলো নিশান, অয়ন আর সাবিতও । বেরোনোর সময় আবির দেখলো । গাড়িতে করে নামছে সেই আফজাল খান । হাতে একটা লাঠি, মুখে মোছ, দাঁড়ি নেই, সাদা পাঞ্জাবী আর সাজা পায়জামা । অয়ন লোকটাকে দেখে বলল, “এহ, এইখান থেকে এইখানে আসে, আবার গাড়ি নিয়ে আসা লাগে!” আবির কিছু বলল না । তবে লোকটার দিকেই তাকিয়ে ছিলো বলে লোকটার আশেপাশে থাকা কারো দিকে আর নজর যায় নি আবিরের ।

আগামী পর্বেঃ
দরজায় নক করলো আবির । টিনের দরজাটা ঝনঝন করে উঠলো । ভেতর থেকে আওয়াজ এলো, “কে!” আবির বলল, “আমি, একজন পথিক । একটু কথা বলা যাবে ভাই?” লোকটা দরজা খুললো । সাবিতের ধারণাই ঠিক হলো । এটা সকালের লোকটাই । লোকটাকে দেখে কিন্তু মোটেও তেমন বয়স্ক মনে হয় না মনে হয়, যেনো আবিরেরও ছোট । লোকটা বেড়িয়ে এসে যা বলল, তা ছিলো আবিরের কল্পনার বাইরে । লোকটা বলে উঠলো, “আবির ভাই!” আবির অবাক ।