0 %

Thanks a lot for being with us!
We are re-constructing our website!
Sorry for this temporary inconvenience
We are coming to you with a fresh look and design from 1 January 2022!
Till then! Stay connected!

পরিচয় পর্ব-৩৩৭

পরিচয়(পর্ব-৩৩৭)
(সিজন-১২-ওয়াদা)
২ মাস পরের কথা । হালকা পেট ফুলেছে চয়নিকার । কষ্ট আগের মতো তেমন গভীর না থাকলেও কষ্ট যে বিদায় নিয়েছে তাও নয় । তবে হ্যাঁ, আজ একটা খুশির দিন । আজ সাবিতের চোখের ব্যান্ডের খোলা হবে এবং প্রায় আড়াই মাস পর দুই চোখেই দেখতে পাবে সাবিত । হাসপাতালেই সবাই এখন । সাবিত যে কেবিনে রয়েছে সেই কেবিনে । ধীরে ধীরে সাবিতের চোখের ব্যান্ডেজ খুলছেন ডাক্তার । তারপর ব্যান্ডেজ খোলা শেষে ডাক্তার জিজ্ঞেস করলেন, “এবার ধীরে ধীরে চোখ মেলে একটু তাকান!” সাবিত ধীরে ধীরে চোখ খুলতে লাগলো । মাইশা অয়নকে বলল, “এতোদিন বাংলা সিনেমায় দেখেছি, আজ সামনাসামনি দেখলাম ।” ডাক্তারও ওদের ইয়ার্কির সাথে তাল মিলিয়ে বলল, “হ্যাঁ, আমিও তো সেজন্য বাংলা সিনেমার ডাইলোগের মতোই বলেছি!” সাবিত আশেপাশে চোখ মেলে তাকিয়ে বলল, “চুনি আমি দেখতে পাচ্ছি! ডাক্তার সাহেব! আমি দেখতে পাচ্ছি! অয়ন আমি দেখতে পাচ্ছি! নিশান! আমি দেখতে পাচ্ছি! মাইশা! আমি দেখতে পাচ্ছি!” চয়নিকা বলল, “শুরু হলো, এরও চোখের বাঁধন খোলার পর বাংলা সিনেমার ডাইলোগ বলা ।”
জেলে একা একা বসেছিলো আবির । পকেট থেকে সেই লকেটটা বার করলো, যার ভেতরে আছে মেমোরি কার্ড । এটা ওর অতীত মনে করিয়ে দেয় । জেলে একটা গুন্ডা আছে, সে সকলকে ধরে তাদের সাথে নির্মম আচরণ করে । এ পর্যন্ত তার পাল্লায় পড়ে নি আবির, কিন্তু জেলে পরিচিত হওয়া কিছু লোক আবিরকে সেই লোক সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছে । আবির হঠাৎ খেয়াল করলো, সামনে থেকে একটা বিশ্রী চেহারার এক লোক ওর দিকেই আসছে । মনে মনে ধরেই নিলো, এটাই তবে সেই গুন্ডা । আবিরের কাছে এসেই সে একটা অশ্রাব্য গালি দিয়ে বলল, “কিরে! নাম কি তর?” আবির নাম বলল না । একটা তিখন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো গুন্ডাটার দিকে । গুন্ডাটা জিজ্ঞেস করলো, “তরে কিছু জিগাইছি!” আবির বলল, “আমার নাম জেনে আপনার কি কাজ তা জানতে পারি?” লোকটা আবিরের পেট চেপে ধরে আবিরের পীঠ দেয়ালে লাগিয়ে বলল, “সাহস হয় ক্যামনে আমার মুখের ওপর কথা কওয়ার?” আবির পেটে ব্যাথা পাওয়ায় হালকা চেচিয়ে উঠলো । আশেপাশের অন্যান্য কয়েদি আর হাজতিরা আবিরের এই অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে গেলো । কিন্তু আবির তখন ওর হাত দিয়ে গুন্ডার গলা ধরে একটা আছাড় মারলো । তারপর ওকে বলল, “তুই যদি গুন্ডা হস, তাহলে আমি তোর বাপ! মাথায় রাখিস!” লোকটা আবিরের কথা শুনে প্রচণ্ড রেগে গেলো । উঠে দাড়িয়ে আবিরকে আঘাতের উদ্দেশ্যে এগিয়ে এলে আবিরের হাতে থাকা লকেটের একটা ধারালো অংশ দিয়ে লোকটার হাত কেটে দিলো । লোকটার হাতের লম্বা একটা অংশ দিয়ে রক্ত পড়তে লাগলো । লোকটা হাত চেপে রক্ত পড়া বন্ধ করার চেষ্টা করতে করতে সেখান থেকে চলে যেতে যেতে বলতে লাগলো, “দেখে নেবো তোকে আমি! দেখে নেবো!”
ঘরে ফিরে এসেছে সবাই । চয়নিকার বাচ্চার কথা শুনলো সাবিত । যখনই চয়নিকা বলতে গেলো, “আমি চেয়েছিলাম বাচ্চাটা আবোর্ট……” চয়নিকার কথা শেষ হতে না দিয়েই সাবিত বলেছিলো, “দ্বিতীয়বার ভুলেও এ কথা ভাববে না! এই বাচ্চাটার কি দোষ! আর তাছাড়া যদি এটা আবিরেরই বাচ্চা হয় তাহলে?” চয়নিকা কিছু বলল না ।
এরপর প্রায় সাড়ে সাত মাস পরের কথা । হঠাৎ পেটে ব্যাথা শুরু হয় চয়নিকার । অয়ন ঘরেই ছিলো । তাড়াতাড়ি ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলে চয়নিকা আর অয়নকে নিয়ে নিচে নামতে লাগলো । কল করে ডাকল মাইশাকেও আর খবরটা জানিয়ে দিয়ে হাসপাতালের দিকে আসতে বলল সাবিতকেও ।
জেলে এক লোকের সাথে কথা বলছিলো আবির । লোকটা আবিরকে বলল, “ওই শাকের গুন্ডার জামিন হইয়া গেছে ।” আবির জিজ্ঞেস করলো, “শাকের গুন্ডা বলতে, আমি যার হাত কেটে দিয়েছিলাম?” লোকটা বলল, “হ । বেআইনিভাবে জামিন নিছে অয় । তবে আপনে যা করছেন, তারপর আর আপনের সামনে আসার সাহস পায় নাই ।” আবির আর কিছু বলল না ।
এদিকে একটা ছেলে সন্তানের জন্ম দিলো চয়নিকা । সবাই খুশি হয়েও খুশি নয় । বাচ্চাটাকে নিয়ে আবিরের কাছেও গিয়েছিলো ওরা । আবির বলেছিলো, “জেল থেকে বের হই, তারপর ডিএনএ টেস্ট করবো আমরা ।”
এরপর কেটে গেলো প্রায় চার বছরের কিছু মাস বেশি দিন । আবিরের এই শাস্তির মেয়াদ আর মাত্র দুদিন আছেন । নিজের সবকিছু এখন থেকেই গোছানো শুরু করেছে আবির । ব্যাগই গোছাচ্ছিলো, এমন সময় একটা লোকের আওয়াজ শুনলো । সে চিৎকার করে বলছিলো, “আমি কিছু করি নাই! আমি নির্দোষ! আমারে মাফ কইরা দেন!” উঠে দাঁড়িয়ে আবির গেলো দেখতে কি হয়েছে । আবির দেখলো, জেলের সাদাকালো পোশাক পরিহিত এক লোককে জেলের ভেতর রেখে চলে গেলো পুলিশ । লোকটা পাগলের মতো মাটিতে হাতের থাবা ফেলতে ফেলতে বলতে লাগলো, “আমি কিছু করি নাই! আমি নির্দোষ! আমারে ছাইড়া দেন!” আবির কাছে যেয়ে লোকটাকে তুলল । জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে ভাই?” লোকটা আবিরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো আর কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো, “আমি কিছু করি নাই ভাই! আমি কিছু করি নাই!”
জেলের একপাশে বসে আবির আর সেই লোকটা । লোকটার নাম ওসামা । সে ময়মনসিংহের একটা গার্মেন্টস কর্মী । একটা ছোট মেয়ে আর বউ নিয়ে তার একটা ছোট সুখী সংসার ছিলো । গ্রামে বাবার রেখে যাওয়া অল্প একটু জমিতে তার বাড়ি । কিন্তু গ্রামের এক প্রভাবশালী ব্যাক্তি তার কাছ থেকে জমি দখলের চেষ্টা করে । সে দিতে চায় না । প্রতিবাদ করে । কিন্তু সেই প্রভাবশালী লোকটি ছিলো সাংঘাতিক । এই ওসামা লোকটার স্ত্রী আর কন্যাকে হত্যা করে অপবাদ দেয় এই ওসামা লোকটাই তার স্ত্রী আর মেয়েকে হত্যা করেছে । পড়ে ওসামা আসে জেলে, আর কায়দা করে জমি লুফে নেয় ওই প্রভাবশালী ব্যাক্তি । “ভাই! একখান ওয়াদা করবেন?” জিজ্ঞেস করলো ওসামা । আবির জিজ্ঞেস করলো, “কি ওয়াদা?” ওসামা লোকটা বলল, “আমি বাচি কি মরি আমি জানি না! তয় আপনে ওই বদমাইশগুলার শাস্তি দিবার পারবেন?” আবির বলল, “আমি শিওর বলতে পারছি না । তবে আমি চেষ্টা করবো ।” ওসামা লোকটার মন খারাপ হলো । সে কিছু বলল না । লোকটার চেহারা দেখে মায়া হলো আবিরের । মনে মনে ভাবলো, লোকটার সাহায্য করা উচিৎ । তার পরিবার বিপদে । তাই এক প্রকার জোড় করেই আবির লোকটাকে বলল, “ঠিক আছে, আমি ওয়াদা করলাম! ওই বদমাইশ লোককে আমি শাস্তি দেবোই ।” কথা শুনে ওসামা লোকটার মুখে হাসি ফুটলো ।

আগামী পর্বেঃ
আবির অয়নকে বলল, “বল কি বলবি ।” অয়ন বলল, “না, কোম্পানির ব্যাপারে আরকি!” আবির বলল, “উহু, সে ব্যাপারে তুই কথা বলবি না আমি জানি । কারণ সকালে একবার সে ব্যাপারে তোর আর আমার কথা হয়েছে ।” অয়ন কিছুক্ষণ চুপ করলো । তারপর বলল, “জেল থেকে আসার পর থেকে তোমাকে কেমন উদাসীন দেখছি । কোন সমস্যা হয়েছে কি?”