পরিচয় পর্ব-৩৩৫
পরিচয়(পর্ব-৩৩৫)
(সিজন-১১: আত্মার সাক্ষাৎ)
(সিজন-১১: আত্মার সাক্ষাৎ)
“হায় আল্লাহ! এটা কি করলেন আবির!” জিজ্ঞেস করলো ওসি রুপম । আবির কিছু বলল না । ওর চোখে মুখে ক্রোধ । সেই ক্রোধের অনল বেরোচ্ছে আবিরের দ্রুত স্বাস নির্গমনের আওয়াজে । ওসি রুপম আশেপাশে থাকা পুলিশদের জিজ্ঞেস করলো, “তাড়াতাড়ি এদের হাসপাতালে নেবার ব্যাবস্থা করো!” আবির যেয়ে চয়নিকাকে জড়িয়ে ধরল । তারপর কপালে চুমু খেয়ে বলল, “ভয় পেয়ো না! আমি আছি তোমার সাথে!” ওসি রুপম বলল, “ভাই! আপনি যেটা করেছেন সেটা ঠিক হয়ে নি! এজন্য বলছি না যে ওরা ভুল করেছে আর এই শাস্তি ওদের বেশি হয়ে গেছে, এরা এখন মারা গেলে আপনাকে জেলে যেতে হবে! একজন মারা গেলে তাও কিছু একটা অজুহাত দিয়ে আপনাকে ছাড়ানো যেতো, কিন্তু চারজনকে খুন করলেন! জানিনা কি হবে এরপর!” আবির একটুও ভয় না পেয়ে বলল, “ঠিক করেছি আমি! একদম পারফেক্ট কাজ করেছি আমি! আমার পরিবারকে ওরা কষ্ট দিয়েছে! আমার স্ত্রীকে এতো বড় একটা কষ্ট দিয়ে গেলো ওরা! ওদের নিজ হাতে মারতে পেরে আমি খুশি! এর জন্য জেলে কেনো! আমাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করলেও আমি মাথা পেতে তা বরণ বরণ করে নেবো!” ওসি রুপম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “আমি আর কি বলবো! কিন্তু আমার কিছু বলার নেই । আদালতে এই কেইস ওঠার সময় আমাকে জবদিহিতার মুখোমুখি হতে হবে । তখন আপনার নামটাও নিতে হবে ।” আবির কিছু বলল না । সাবিত বলল, “আচ্ছা, যা হওয়ার হয়ে গেছে, এবার চলো আমার রেডি হই । ঢাকায় যেতে হবে আমাদের ।” ওসি রুপম বলল, “না, আবিরকে আমাদের সাথে থানায় যেতে হবে!” অয়ন জিজ্ঞেস করলো, “কেনো?” ওসি রুপম বলল, “আমি আদালতে সব যখন বলবো, তখন মাননীয় জজ আমাকে যদি বলেন আবিরকে কেনো আটকে রাখিনি তখন আমি কি বলবো? আমি নিজের সাধ্য মতো চেষ্টা করবো আবিরের জন্য কিছু করার কিন্তু এখন ওনাকে আমার সাথে যেতে হবে ।” চয়নিকা কাঁদতে কাঁদতে বলল, “না! ওকে নিয়ে যাবেন না প্লিজ! আপনারা এমন কেনো করছেন!” আবির চয়নিকাকে বলল, “চুনি! শান্ত হও! উনি উনার দায়িত্ব পালন করছেন! এখানে উনার কোন দোষ নেই ।” তারপর আবির মাইশা আর অয়নের কাছে যেয়ে বলল, “শোন! ঢাকা যেয়ে তোরা বিয়ে করে ফেলবি! আর অয়ন! তুই আমার কোম্পানিতে আমার অবর্তমানে সবটা সামলানোর দায়িত্ব নিবি! এতে তোদের বিয়েতে রোজগারের ব্যাপারটা বাধা হবে না । আর তুই কোন সমস্যায় পড়লে আমাকে জানাবি আমি তোকে পরামর্শ দেবো । মাইশা এলে পরিবারটা আরও বড় হবে ।” তারপর আবির সাবিতকে বলল, “ভাই! আপনার কাছে একটা অনুরোধ! আমি যে কদিন না থাকি আপনি আমার পরিবারের সাথে থাকুন! আর আপনি একটা ভালো চিকিৎসা করান! আপনার চেহারার প্লাস্টিক সার্জারি আর আপনার শরীরের হরমোনাল পরিবর্তনের বিষয়টা ।” সাবিত একটা হতাশার শ্বাস ফেলে বলল, “কি আর হবে! একটা চোখই তো থাকবে না তাও আমার! এক চোখে দুনিয়া দেখতে হবে ।” তখন একজন গ্রামবাসী এসে বলল, “বাইজান! আমি মজিদ! আমার তো একখান চোখই আছে । আর আমারে ডাক্তারে কইছে আমি আর বেশিদিন বাচুম না । আপনেরা আমার এতো বড় উপকার কইরলেন! আমি চাই আমাগো গেরামের পক্ষ থেইকা আপনাগো এই ছোটো উপকারডা করতে!” সাবিত বলল, “আরে না! ছি ছি! এ আপনি কি বলছেন!” মজিদ তখন বলল, “না কইরেন না বাইজান! আমার পরিবারেও কেউ নাই! এমনেই আমি একা!” মজিদ লোকটা তখন গ্রামবাসীকে বলল, “এই! তরা বাইজানরে কিছু কছ না ক্যান!” গ্রামবাসীরা সমস্বরে অনুরোধ করলো । ওসি রুপমও বলল, “ভাই! নিয়ে নেন উনারা যখন এতো করে বলছেন ।” অবশেষে সাবিত আর না করতে পারলো না । বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে । আমি নেবো আপনার চোখ ।” লোকটা অনেক খুশি হলো কথা শুনে । আবির ওসি রুপমকে বলল, “স্যার! চলুন!” ওসি রুপমকে, “জি চলুন ।” বলে নিয়ে যেতে লাগলো জীপের দিকে । যেতে যেতে আবির বারবার তাকালো ওর পরিবারের সবার দিকে । সবাই কাঁদছে । নিশান বলল, “আল্লাহ! মেক এভরিথিং নর্মাল এগেইন!” আবির গাড়িতে উঠলো । তারপর আবিরকে নিয়ে যাওয়া হলো জেলে ।
এরপর সাবিত, চয়নিকা, মাইশা আর অয়ন রজব মোল্লার বাড়িতে গিয়ে গোছাতে লাগলো সবকিছু । নিজের রুম গোছাতে গোছাতে জরিনার আনা জিনিসপত্রগুলো দেখে কান্না পেয়ে গেলো ওর । ইতোমধ্যে পুলিশের সাহায্যে জরিনার লাশ ওর গ্রামে পাঠানো হয়েছে ।
ওই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসতে আসতে রাত বারোটা বাজলো ওদের । আবিরের গাড়ি যে ড্রাইভার এনেছিলো তাকে ভোরে সাবিত জানিয়ে দিয়েছিলো আসতে আর সে কেবল এসেছে পৌঁছেছে । সাবিত জিজ্ঞেস করলো, “এতো দেরি কেনো করলেন আপনি!” লোকটা বলল, “সরি স্যার! আসলে যমুনা সেতুতে ফাটল ধরায় ওই রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ ।“ সাবিত বলল, “ও আচ্ছা ঠিক আছে । চলেন ।” গাড়িতে উঠে বসলো ওরা । অল্প কজন গ্রামবাসী ওদের শেষ মুহূর্তের আতিথেয়তার জন্য ওদের সাথে ছিলো । এমনকি আহারের ব্যাবস্থাও তারা করেছে । তারাই দাঁড়িয়ে আছে । তাদের হাতে কিছু টাকা দিয়ে রওনা হলো ঢাকার পথে । আসার পথে দেখলো, এই ঝিকানা গ্রাম আর নির্জন নেই । এই প্রথম সব গ্রামবাসী রাতের সৌন্দর্য দেখতে বের হয়েছে । আর ওদের আঘাত করতে আসবে না কোন মানুষরূপী ঝিকানা । সেই সাথে আর কাউকে খেতে হবে না ধোঁকা, আর কাউকে পেতে হবে না ভুয়া আত্মার সাক্ষাৎ ।
ওই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসতে আসতে রাত বারোটা বাজলো ওদের । আবিরের গাড়ি যে ড্রাইভার এনেছিলো তাকে ভোরে সাবিত জানিয়ে দিয়েছিলো আসতে আর সে কেবল এসেছে পৌঁছেছে । সাবিত জিজ্ঞেস করলো, “এতো দেরি কেনো করলেন আপনি!” লোকটা বলল, “সরি স্যার! আসলে যমুনা সেতুতে ফাটল ধরায় ওই রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ ।“ সাবিত বলল, “ও আচ্ছা ঠিক আছে । চলেন ।” গাড়িতে উঠে বসলো ওরা । অল্প কজন গ্রামবাসী ওদের শেষ মুহূর্তের আতিথেয়তার জন্য ওদের সাথে ছিলো । এমনকি আহারের ব্যাবস্থাও তারা করেছে । তারাই দাঁড়িয়ে আছে । তাদের হাতে কিছু টাকা দিয়ে রওনা হলো ঢাকার পথে । আসার পথে দেখলো, এই ঝিকানা গ্রাম আর নির্জন নেই । এই প্রথম সব গ্রামবাসী রাতের সৌন্দর্য দেখতে বের হয়েছে । আর ওদের আঘাত করতে আসবে না কোন মানুষরূপী ঝিকানা । সেই সাথে আর কাউকে খেতে হবে না ধোঁকা, আর কাউকে পেতে হবে না ভুয়া আত্মার সাক্ষাৎ ।