0 %

Thanks a lot for being with us!
We are re-constructing our website!
Sorry for this temporary inconvenience
We are coming to you with a fresh look and design from 1 January 2022!
Till then! Stay connected!

লাভ ডট কম (পর্ব-১৩)

লাভ ডট কম (পর্ব-১৩)
চেহারা দেখে মনে হচ্ছে না ও রাজি নয় ।
পরদিন বিকেলের দিকে সোহান গেলো বুলুর বস্তিতে । সোহানের হল থেকে বেশি দূরে নয়, মোটর সাইকেল নিয়ে গেলে ৫ মিনিট মতো লাগে । বস্তিটা আর সব বস্তির মতোই, নোংরা, ঘরবাড়ি কোনোরকমে বানানো, ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কেউ সাইকেলের টায়ার নিয়ে লাঠি দিয়ে সেই টায়ার চালিয়ে খেলছে । সোহান বস্তিতে ঢুকেছে দেখে সবাই সোহানের দিকেই তাকিয়ে । বুলুকে জিজ্ঞেস করলে জানালো এ বস্তিতে সচরাচর বড় বাড়ির লোকেরা আসে না । কেউ এলে সোহানের মতোই এভাবে দ্যাখে । বস্তির এক কোণে বুলুর বাড়ি । টিনের । মোটর সাইকেল বুলুদের ঘরের ঠিক সামনেই রাখল বুলুর কোথায় । চুরি হবার ভয় আছে তো । ভেতরে ঢুকতেই বুলু বলল, “আম্মা, ভাইয়া আইছে । সোহানও ভেতরে ঢুকল । এক মহিলা মেঝেতে বসে কিছু করছিলো, খুব সম্ভবত কোন মশলা বাটছিল । সোহানকে ঢুকতে দেখেই মহিলা মাথায় ওড়না দিয়ে উঠে দাঁড়ালো । সোহান বলল, “আসসালামু আলাইকুম আনটি । কেমন আছেন?” বুলুর মা বেশ লজ্জার সাথে জবাব দিলো, “ভালো বাবা, তুমি ভালা আছো?”
- “জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি ।” বলল সোহান ।
- “তুমি ওরে কইছো পড়াইবা, তাই আমি আইজকা সকালে ওর স্কুলের গেছিলাম । ওর প্রিন্সিপ্যাল স্যার কইছে ওরে এহন কলেজে নেয়া যাইবো ।” বলল বুলুর মা ।
- “ও, তাহলে তো ভালোই হল ।” খুশি মনে জবাব দিলো সোহান ।
- “তুমি তাইলে ওরে পড়াও, আমি বাইরে যাই ।” বলেই বুলুর মা বাইরে চলে গেলো । সোহান চারপাশটা তাকিয়ে দেখল । এই ঘরেরই এক পাশে মাটির চুলা । একে তো ভেন্টিলেশন সিস্টেম ভালো না, তার ওপর ঘরের ভেতরেই রান্না । চুলোর পাশে পাটায় কিছু বেটে রাখা । দুর থেকে ঠিক দেখতে পারছিল না সোহান । টিনের দেয়াল ঘেঁষেই দড়ি টানিয়ে কাপড় ঝোলানো । একপাশে কোনোরকমে ২ জন শুতে পারবে এরকম সাইজের একটা চারপায়া । তার নিজের বইখাতা রাখা । রুমে আর কিছুই নেই, তবু মনে হচ্ছে যেন কতো কিছু দিয়ে রুমটা ভরা । রুমের সাইজের সাথে তুলনা করলে এমনটাই মনে হয় । বুলু সোহানকে বিছানায় বসাল । সোহান জিজ্ঞেস করলো, “আজ কি দিয়ে শুরু করবো?”
- “ম্যাথ করান ।” জবাব দিয়ে চারপায়ার নিচ থেকে একটা ম্যাথ খাতা আর বই বের করলো বুলু । সোহান বলল, “তাহলে শুরু করা যাক?”
শুরু হল সোহানের টিউশনি লাইফ । প্রতিদিন বিকেলে একটা সময় করে বস্তিতে যেয়ে বুলুকে পড়াত সোহান । শুধু বুলুই নয়, বুলুর সাথে সাথে আরও কয়েকজন বস্তির ছেলেমেয়েও বুলুর সাথে পড়া শুরু করলো । সোহানও সবার সাথে বস্তিতে বেশ মজা করতো । কোন কোন দিন না পড়িয়ে পুরো বস্তি ঘুরে বেড়াতো, ক্রিকেট খেলত । এদিকে ভার্সিটিতে তার ক্লাসে যাওয়া আর ক্যাফেটেরিয়াতে খাওয়া ছাড়া আর কোন কাজ ছিল না সোহানের । কিছুদিন পর অবশ্য ক্যাফেটেরিয়াতেও যাওয়া বাদ দিয়ে দেয়, ওখানে ছেলেমেয়ে সোহানের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে বসতো, সাথে ক্যাফেটেরিয়ার দোকানদাররাও সোহানকে পাত্তা দিত না । তাই সোহান বাইরের রেস্টুরেন্টে খাওয়াদাওয়া সেরে নিতো । ভার্সিটির কেউই আর সোহানের সাথে মিশতো না । পরবর্তীতে যারা-ই সোহানের হলে এসেছে, তারা-ই পরবর্তীতে অন্যান্যদের মুখে শুনেছে সোহানের কথা, তখনই হল ছেড়ে চলে গিয়েছে । এভাবে কষ্টের মাঝেই ভার্সিটিতে সময় কাটালেও সব কষ্ট আবার দুর হয়ে যেতো বস্তিতে সবার সাথে সময় কাটিয়ে । দুর থেকে সোহান ইকবালকে দেখতো, সাকিবকে দেখত, ওরা নিজেদের গার্লফ্রেন্ড নিয়ে বেশ আছে । বেশিরভাগ সময় সোহান দেখতো ঊর্মিকে । নতুন কাউকে পেয়েছে হয়তো । নতুন কারো সাথে বেশ আছে । সোহান কারো কাছে যেতে চাইলে সে চলে যেতো বা পাত্তা দিত না । তাই সোহানও কারো কাছে যাওয়া বন্ধ করে দেয় ।
কেটে যায় প্রায় সাড়ে তিন বছরেরও বেশি সময়ের কথা । ভার্সিটিতে সোহানের পড়াশুনা শেষ । ভালো একটা রেজাল্ট করেছে পরদিন সবার বিদায় । সোহানের প্ল্যান বিদায় অনুষ্ঠান শেষেই জিনিসপত্র নিয়ে বগুড়া গ্রামের বাড়ি চলে যাবে । অনুষ্ঠানের আগের দিন সকালেই মোটর সাইকেল আর ভারি কিছু জিনিস পত্র বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে সোহান । বিকেল থেকে রাত বস্তিতে সবার সাথেই থেকেছে । শেষ বারের মতো সবার সাথে দেখা করার জন্য । বুলু ক্লাস এইটে বৃত্তি পেয়েছে, এবছর এসএসসিতেও গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে । অন্যান্য ছেলেমেয়েরাও অনেক ভালো রেজাল্ট করেছে । আসবার সময় বুলু সোহানকে জড়িয়ে ধরে অনেক কাদল । অন্যান্যরাও সোহানের জন্য অনেক কাদলো সবাই মিলে টাকা জমিয়ে সোহানকে বেশ দামি একটা ঘড়িও গিফট করেছে ।
বস্তিতে ইমোশোনাল মুহূর্ত শেষে ভার্সিটির পথে রওনা হল সোহান । আজ তো সাথে মোটর সাইকেল নেই, তাই বাসেই গিয়েছিলো, বাসেই ফিরছে । ভার্সিটির গেইটের কাছে দারোয়ান সোহানের দিকে তাকাল । লোকটা সোহানের দিকে ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকাল । গত কয়েক বছর প্রতিদিন এই গেইটের কাছে সোহান এই লোকটার এই দৃষ্টির স্বিকার হয়েছে । কিছু না বলে ভেতরে ঢুকল সোহান । হলের দিকে যাচ্ছিলো, পুকুর পাড়ের পাশ দিয়ে । এমন সময় সোহান কার যেন আওয়াজ শুনতে পেলো । পুকুরটা থেকেই আসছে । কে যেন “হেল্প! হেল্প! করে সাহায্য চাইছে । আশেপাশে কেউ নেই বলে কেউ সাড়া দিচ্ছে না, তার ওপর প্রায় পানিতে ডুবে ডুবে চেচাচ্ছে বলে বেশি জোরে চেঁচাতেও পারছে না । সোহান্ন এগিয়ে গেলো পুকুর পাড়ের দিকে । হালকা আলোয় যা মনে হল, হিমেল । সোহান পানিতে ঝাঁপ দিলো । তুলে এনে বটগাছের নিচে রাখল । জ্ঞান হারিয়েছে । সোহান হিমেলকেও ইকবালের মতো উপুড় করে শুইয়ে মুখে কাঠি দিয়ে হ্যাঁ করিয়ে পথে চাপ দিয়ে পানি বের করলো । তারপর বুকে চাপ দিয়ে শ্বাস প্রশ্বাস চালু করার চেষ্টা করলো । এরপরও যখন শ্বাস এলো না, সোহান হিমেলের মুখে মুখ লাগিয়ে ফু দিয়ে শ্বাস প্রশ্বাস চালু করার চেষ্টা করলো । একটু পর হিমেল উঠে বসলো । সোহান জিজ্ঞেস করলো, “কিরে? ঠিক আছিস?” হিমেল বার কয়েক কেশে সোহানের দিকে তাকাল । সোহান জিজ্ঞেস করলো, “পুকুরে পড়েছিস কি করে? হিমেল সোহানের দিকেই তাকিয়ে । সোহান মাথা নিচু করে হতাশার দম ফেলে বলল, “বুঝেছি, আমি তুলেছি তো, তাই অনেক উল্টোপাল্টা কথা ভাবছিস হয়তো । ঠিক আছে, আমি যাই ।” বলেই সোহান্নন উঠে আসতে লাগলো কিছুদুর আসতেই হিমেল সোহানকে বলল, “কাল বিদায় না?” সোহান শুধু পেছন ফিরে তাকাল । হিমেল বলল, “সেখানে থাকিস, কথা আছে ।” সোহান আর কিছু বলল না । কিছুক্ষণ দাড়িয়ে নিজের হলে চলে গেলো ।

আগামী পর্বেঃ
“স্টুডেন্ট অফ দা ইয়ার হয়েছে, সাকিব!” সবাই সাকিবকে উৎসাহ দিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো । সাকিব দৌড়ে স্টেজে উঠলো । সার্টিফিকেট আর মাথায় স্কয়ার অ্যাকাডেমিক ক্যাপ পড়ে সুমির দিকে তাকাল । সোহানও হালকা হাসিমুখে উৎসাহ জানালো, কিন্তু মুখে চেঁচিয়ে কিছু বলল না । এরপর একে একে ছাত্রছাত্রীদের এই ভার্সিটিতে পড়ে নিজেদের অনুভুতির কথা প্রকাশের জন্য স্টেজে ডাকা হল । সবাই এলো একে একে । নিলয়, ইকবাল, জেসি, রাইসা, আরও অনেকে । শেষে বাকি শুধু হিমেল, আর সোহান । হিমেল আগে উঠলো । মাউথপিসটা হাতে নিয়ে বলল, “আমি ইচ্ছে করেই আলিয়া ম্যামকে বলেছি আমাকে যেন লাস্টের আগে আর সোহানকে সবার লাস্টে কথা বলার সুযোগ দেয়া হয় যাতে করে আমি আমার একটা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ কথা বেশি সময় নিয়ে বলতে পারি ।” সোহান হিমেলের দিকে তাকাল ।