0 %

Thanks a lot for being with us!
We are re-constructing our website!
Sorry for this temporary inconvenience
We are coming to you with a fresh look and design from 1 January 2022!
Till then! Stay connected!

লাভ ডট কম (পর্ব-১২)

লাভ ডট কম (পর্ব-১২)
মিথ্যে অপবাদের শঙ্কা । সোহান জানে ওর কোন দোষ নেই, তবুও নিজের নিজের চুল টানতে লাগলো মনের দুঃখে । এখন সবাইকে বললেও কেউ বিশ্বাস করবে না । তবু, ইকবাল আর সাকিবকে একবার বলা যেতে পারে, কিন্তু সারাদিন অনেক চেষ্টা করেও সোহান কিছুতেই সাকিব আর ইকবালের খোঁজ পেলো না । রাইসাকে দেখেছিলো ভার্সিটির গেইটের ওখানে, কিন্তু রাইসা সোহানকে পাত্তা না দিয়ে চলে গেলো । বিকেলের দিকে সোহান সাকিব আর সুমিকে ক্যাফেতে একসাথে দেখল, সোহান কাছে এগিয়ে যেতেই সুমি সাকিবকে নিয়ে চলে গেলো । কিছু বলতে পর্যন্ত দিলো না । নিলয় আর হিমেলও পাত্তা দিচ্ছে না । ক্লাসের অন্যান্য টিচাররাও পাত্তা দিচ্ছে না । হলের কেয়ারটেকার, দারোয়ান, ক্যাফেটেরিয়ার দোকানদার কেউ না । শুধু বেচাকেনার খাতিরে সোহানের কাছে জিনিস বিক্রি করছে এই পর্যন্তই । এই প্রথম এরকম একটা বাজে জন্মদিন পার করলো সোহান ।
মাগরিবের সময় সোহান রমনা পার্কের দিকে যাবে ভাবছিল, সে সময় হলের সোহান ভার্সিটির সামনের পুকুরপাড়ের ওই পড়ে থাকা নারিকেল গাছের ডালের ওপর ঊর্মিকে দেখল সোহান । সোহান ধীরে ধীরে ঊর্মির কাছে গেলো । প্রায় কাছাকাছি এসে সোহান ডাকল, “ঊর্মি!” ঊর্মি মাথা ওঠাল । পেছন ফিরে যে-ই না দেখল সোহান দাড়িয়ে, সে-ই ও চলে যাবার জন্য পা বাড়াল । সোহান ঊর্মির হাত টেনে ধরল । ঊর্মি হাতে টান অনুভব করতেই সোহানের দিকে তাকিয়ে অন্য হাত দিয়ে সোহানকে চড় মারল । সোহান গালে হাত দিলো আর ঊর্মির হাত ছেড়ে দিলো । ঊর্মি আবার চলে যেতে লাগলো, সোহান বলল, “ঊর্মি, আমার কথা তো শোনো!” ঊর্মি আবার সোহানের দিকে ঘুরে দাড়িয়ে বলল, “কি শুনবো আমি! কি শুনবোটা কি! নিজেকে কি ভাবো তুমি! আমার এতো বড় ক্ষতি তুমি কীভাবে করলে?” সোহান জিজ্ঞেস করলো, “তোমার আমি কি ক্ষতি করলাম!”
- “ও! ভালো সাজা হচ্ছে না! নিজে যখন এরকম অ্যাবনর্মাল, তখন কেন আমাকে ভালবেসেছ তুমি?” রেগে গিয়ে বলল ঊর্মি ।
- “দ্যাখো ঊর্মি, আমি কিন্তু একবারও তোমাকে বলিনি আমি তোমাকে ভালোবাসি ।” বলল সোহান ।
- “আমার জীবনে এলে কেন? কিছু বোঝো না! কখন ভালোবাসা হয়! তুমি কি এটা বোঝো নি আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি!”
সোহান কিছু বলল না ।
ঊর্মি কিছুটা রাগ দমন করে বলল, “অবশ্য আমি কাকে কি বলছি! তোমার তো এসব বোঝার কথাও না । তুমি তো গে! সিঙ্গেল! রাবিশ! বুলশিট! জানোয়ারের বাচ্চা!”
- “ঊর্মি!” বলে চেঁচিয়ে ঊর্মির গালে এবার চড় বসাল সোহান । ঊর্মি গালে হাত রেখে কিছুক্ষণ সোহানের দিকে তাকিয়ে রইল । তারপর রেগে সোহানকে আরও কয়েকটা মেরে চেঁচিয়ে প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল, “আই হেইট ইউ সোহান! আই হেইট ইউ!” বলে চলে গেলো । সোহান ঊর্মির দিকে ততোক্ষণ তাকিয়ে রইল, যতক্ষণ ঊর্মিকে দেখা যায় । ঊর্মিকে আর পিছু ডাকার সাহস পেলো না সোহান । ঊর্মি দৃষ্টির বাইরে চলে গেলে সোহান এক দৌড় দিয়ে রুমে চলে আসে । তারপর ওর গল্প লেখার খাতা থেকে লাভ ডট কম গল্পটা যতোটুকু লিখেছিল, ততগুলো পেইজ ছিঁড়ে টয়লেটে ফ্ল্যাস করে দিলো । তারপর কমোডের ঢাকনাটা লাগিয়ে দিয়ে ওখানে বসেই কাঁদতে লাগলো ।
- “এ মামা! মামা!” সোহান চোখ খুলল । ঝাপসা দৃষ্টিতেই খেয়াল করলো, এ গতদিনের সেই ছেলেটা । টোকাই । সোহান উঠে বসলো । রাতে রমনা পার্কে এসে একাই বসেছিল সোহান । আজও কখন ঘুমিয়ে পড়েছে টের পায় নি । সোহান টোকাইটাকে জিজ্ঞেস করলো, “কিরে? কেমন আছিস?”
- “হ মামা, ভালো । আপনে কেমন আছেন?”
- “হুম, বেঁচে আছি, এই আলহামদুলিল্লাহ ।”
- “মামা কি নেশা টেশা করেন নাকি?” হালকা হেসে বলল টোকাই ছেলেটা । সোহান ছেলেটার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করলো । ছেলেটাকে যতোটা ভদ্র ভেবেছিলো, ততোটাও ভদ্র না । অবশ্য এ যুগে বস্তির টোকাই ভদ্র হবে এটা ভাবাই যায় না । সোহান ছেলেটাকে পাশে বসতে বলল । ছেলেটা সোহানের পাশে বসতেই সোহান প্রশ্ন করলো, “নাম কি?”
- “বুলু ।”
- “গ্রাম থেকে এসছিস?” প্রশ্ন করলো সোহান ।
- “হ মামা । কামের লাইগা আইছিলাম মায়ের লগে ।”
- “ও । কোন ক্লাসে পড়িস?” জিজ্ঞেস করলো সোহান ।
- “ক্লাস সেভেনে পড়ার কথা, তয় বাদ দিয়া দিছি পড়াশুনা ।”
- “কেন?” বুলুর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো সোহান ।
- “খরচ মেলা মামা ।” জবাব দিলো বুলু ।
- “কেন? সরকারী স্কুল আছে তো অনেক, সেখানেও তো পড়তে পারিস অল্প খরচে ।”
- “তাই-ই ছিলাম মামা, কিন্তু ক্লাসের পড়া দিয়া আর কতোই হয়, সব বাসার আলাদা টিচার রাখছে, আমার তো আর সেই পয়সা নাই মামা ।” বলল বুলু ।
সোহান আর কোন জবাব দিলো না । বুলু হঠাৎ সোহানকে প্রশ্ন করলো, “মামার কি মন খারাপ?” সোহান কিছুক্ষণ কোন জবাব দিলো না । ভাবল, এরকম সময় কারো সাথে যখন সোহান কিছু শেয়ার করতে পারছে না, তখন বুলুকে না হয় সবটা শেয়ার করা যায় । সবটা বলা শেষে সোহান বলল, “এই হল কাহিনী । এখন কেউ আমার কথাই শুনছে না । বিশ্বাস তো দুরের কথা ।”
- “আমি আপনেরে বিশ্বাস করি মামা । এই পার্কে কতো ভার্সিটির কতো পোলাপাইন আইছে, সব গার্ল ফ্রেন্ড নিয়া খালি ইটিস পিটিস করে । আমাগো দিকে তাকায়ও না । আর আপনে আমারে খাওয়ার লাইগা টাকা দিলেন । অন্তত আমি আপনারে বিশ্বাস করি ।”
সোহান কিছু বলল না । ছেলেটা আবার বলল, “আমার মায়ে একখান কথা কইতো । মানুষের মধ্যে এহন বিশ্বাস কেমন জানি । হাজারটা মানুষ যদি কয় সূর্য পশ্চিমে ওঠে, তাইলেও মানুষ কয় হেইডাই সঠিক । একজন যতোই সত্য কথা কউক, কেউ বিশ্বাস করে না । আর তাদের মধ্যে যদি সবচেয়ে কাছের মানুষও থাকে, তাইলে বলা যায় ওই আপন মানুষের ভালবাসায় কমতি ছিল ।”
সোহান আরেকবার ছেলেটার দিকে তাকাল । ভালো একটা কথা বলেছে । ছেলেটার মেধা আছে ভালো । সোহান বলল, “আমি যদি তোর প্রাইভেট টিউটর হই, তবে তুই আবার স্কুলে যাবি?” বুলু সোহানের দিকে তাকাল । চেহারা দেখে মনে হচ্ছে না ও রাজি নয় ।

আগামী পর্বেঃ
এমন সময় সোহান কার যেন আওয়াজ শুনতে পেলো । পুকুরটা থেকেই আসছে । কে যেন “হেল্প! হেল্প! করে সাহায্য চাইছে । আশেপাশে কেউ নেই বলে কেউ সাড়া দিচ্ছে না, তার ওপর প্রায় পানিতে ডুবে ডুবে চেচাচ্ছে বলে বেশি জোরে চেঁচাতেও পারছে না । সোহান্ন এগিয়ে গেলো পুকুর পাড়ের দিকে । হালকা আলোয় যা মনে হল, হিমেল । সোহান পানিতে ঝাঁপ দিলো ।