0 %

Thanks a lot for being with us!
We are re-constructing our website!
Sorry for this temporary inconvenience
We are coming to you with a fresh look and design from 1 January 2022!
Till then! Stay connected!

পরিচয়-৩১৫

পরিচয়(পর্ব-৩১৫)
(সিজন-১১: আত্মার সাক্ষাৎ)
চয়নিকাও খুব খুশী আর উত্তেজিত হয়ে উঠলো ।
সন্ধ্যার দিকের কথা । ঘরেই মাগরিবের নামাজ পড়ছিলো আবির । আজ এমনিতে ক্লান্ত তো ছিলোই, তার ওপর আজ কেউ ভ্যান নিয়ে বেরোবে না । কারণ, আজ আমাবস্যা । আজ ঝিকানার দেখা পাবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি । আবির নামাজ পড়াকালীন রজব মোল্লা এসে বসেছে তা টের পায় নি আবির । নামাজ পড়ে উঠে লোকটাকে সালাম দিয়ে বলল, “আরে! আসসালামু আলাইকুম দাদাই! আপনি এসেছেন, টেরই পাই নি ।” রজব মোল্লা বলল, “না না, ঠিক আছে ।”
“কিছু বলতেন কি?” জায়নামাজ গুছিয়ে রাখতে রাখতে বলল আবির ।
“না না, তেমন কিছু না, এবি, কথাবার্তা কইতাম ।” বলল রজব মোল্লা ।
“জি বলুন ।” রজব মোল্লার পাশে বলে বলল আবির ।
“ঘুইরা ফিরা ভাল্লাগলো তো?”
“হ্যাঁ হ্যাঁ, মাশাআল্লাহ, গ্রামটাও সুন্দর, আর যেখানে ঘুরতে গিয়েছিলাম, সে নদীর পাড়েও দারুণ স্বাস্থ্যকর বাতাস ছিলো । এরকম বাতার ঢাকা শহরে পাওয়াই দুষ্কর ।"
“যাক, ভাল্লাগছে শুইনা আমারও ভাললাগলো । আর আমার বাড়িত তোমাগো কোন সমস্যা হইতাছে না তো?”
“আরে না দাদাই, সমস্যা কেনো হতে যাবে?”
“যাক । আইজকা রাইতে তোমাগো জন্য বিরানি পাকানোর ব্যাবস্থা করছি । আরেকখান কতা, হুনছোই, আইজকা আমাবস্যার রাইত । কেউ বাইরে বাইর হয় না এই রাইতে । ঝিকানা আইতে পারে । সবাইরে কইও ঘরের বাইরে বাইর না হইতে ।”
ঘরের মধ্যে বসে ছিলো সাবিত আর অয়ন । সাবিত ব্যাগ থেকে নিজের একটা টাই খুজছিলো । অয়ন পাশেই বসে ছিলো । অয়নকে জিজ্ঞেস করলো, “আমার টাই দেখেছিস কোনো?”
“টাই দিয়া তুমি কি করবা?” জিজ্ঞেস করলো অয়ন ।
“ঝিকানারে গিফট করবো ।” হালকা বিরক্ত হয়ে বলল সাবিত । তারপর বলল, “বল না! দেখেছিস নাকি! কালো রঙ-এর টাই?”
“উহু, দেখিনি, তোমার ব্যাগে তো আমি হাতই দেই নি!”
“তাহলে আমার ব্যাগের ওপরের জামাকাপড় নিচে আর নিচের জামাকাপড় ওপরে গেলো কি করে?”
“সেটা আমি কি করে বলবো?”
সাবিত কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে অয়নের দিকে তাকিয়ে ছিলো । তারপর ব্যাগে আবার টাই খুজতে খুজতে বলল, “তোর সাথে কথা বলাই উচিৎ না । কথার ভেতর আদব কায়দা নেই ।” অয়ন তখন বেশ রেগে গিয়ে বলল, “হ্যাঁ তাই তো! আমিই তো একাই খুব খারাপ! ইবলিশ আমি! আর তোমরা ধোয়া তুলসি পাতা! থাকো! তোমারাই ভালো থাকো! আমার ভালো থাকার দরকার নাই!” বলে রুম থেকে রাগ করে বেড়িয়ে গেলো । যাবার সময় দরজাটাও ধাম করে আটকিয়ে চলে গেলো । সাবিত কিছু না করলেও অয়নের আচরণে অবাক হয়ে গেলো ।
পাশের রুমেই মাইশা । চিৎকার মোবাইল চালাচ্ছিলো । ওর রুমের সামনে বারান্দার সাথে থাকা জানালা দিয়ে অয়নকে চলে যেতেও দেখলো । চেহারায় রাগ ছিলো অয়নের । দেখে নিজেকে বলল, “আল্লাহ! এই ছেলে অল্পেতে এতো কেনো যে রাগ করে! বিয়ের পর যে কি হবে আল্লাহই জানেন!” রুমে তখন মিতু ছিলো না । তাই সে বলে উঠলো, “এই মেয়েটা সারাদিন যে কোন হালে-ডালে ঘুরে বেড়ায়! আল্লাহই জানেন! আজকে তো এমনিতেও ঝিকানা আসার সম্ভাবনা নাকি বেশি ।”
সাবিত আর অয়নের রুমের অন্য পাশের রুমে থাকা চয়নিকা, নিশান আর জরিনা অয়নের চিৎকার শুনলো । নিশান দরজা খুলে উকি দিয়ে অয়নকে চলে যেতেও দেখলো । তারপর এসে মায়ের পাশে বসে বলল, “এই মামা যে কেনো এতো এরকম করে! কথায় কথায় শুধু রেগে যায়!” জরিনা বলল, “খালু যখন আছিলো, তখন একটু শাসন-টাসন করতো, পোলাটা এহন কারো কথাই শোনে না!” চয়নিকার এসব কথায় মনোযোগ নেই । সে শুধু ভাবছে কাল কি হবে । ইতোমধ্যে সে ওর মায়ের ছবি পাঠিয়ে দিয়েছে কাহরামানের দেয়া হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে । চয়নিকাকে ভাবনা থামলো জরিনার কথায় । “চুনি আপা! কিছু ভাবতেছেন নাকি?” চয়নিকা বলল, “না না তেমন কিছু না ।” জরিনা বলল, “ও, যাক । তাও ভালা । আমার না খুব ইচ্ছা! ঝিকানা কেমন সেইডা দেহার! আসলেই আছে, নাকি মাইনষে হুদাই ভয় পায় এইডা জানারও খুব ইচ্ছা ।” চয়নিকা এ কথাতেও কর্ণপাত করলো না । জিজ্ঞেস করলো, “আবির তো রুমেই আছে, না?” জরিনা বলল, “হ, আইজকা কেউ তো বাড়িত থেইকা বাইর হইবো না!” চয়নিকা উঠে বেড়িয়ে গেলো । নিশান জরিনাকে বলল, “জরিনা আপু! আমার মনে হয় মা কিছু একটা ভাবছে!” জরিনা বলল, “হ! আমিও তো তাই ভাবছি!”
বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো অয়ন । প্রচণ্ড রাগ ধরেছে ওর । বেরোতেই সামনে প্রায় একশো মিটার দূরে রাস্তায় বসে থাকা খোকন ডেকে উঠলো, “এ ঝিকানা! এ ঝিকানা! আয়! আয়! এদিকে আয়!” অয়ন তাকে পাত্তা না দিয়ে বিরক্ত হয়ে হাটা শুরু করলো বাগান আর মাঠের মাঝামাঝি পথটা ধরে । এদিকটায় দূরে জঙ্গল । জঙ্গলের ওপাড়ে কি তা সকালেই বোঝা যায় না, রাতে তো আরও না । অয়ন সেই জঙ্গলের পথ ধরে হাটতে হাটতে নিজে নিজেই বলতে লাগলো, “যাবো গা আমি! কেউ পছন্দ করে না আমাকে! আবির ভাইয়ের কাছ মাফ চাইলাম ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো! চুনি আপুও পছন্দ করে না! নিশান তো আমার জন্মগত শত্রু! মাইশাও ঝগড়া করে আমার সাথে! আর আজ সাবিত ভাইও! চলে যাবো অনেক দূর! ফিরবো না আর! দেখি, কে কি করে!” এসব বলতে বলতে অয়ন একটা রাস্তা পেলো। দুপাশে গাছ পালার মাঝে ঘাসের মাঝে একটা ঘাসহীন রাস্তা বাম দিক থেকে এসে ডানদিকে গিয়েছে । ডানে গেলে সেদিকে মাঠ । আর বামে? জানে না অয়ন । যেতে লাগলো । মনে ওর প্রচণ্ড রাগ । একটু দূর এগোতেই একটা ব্রিজ নজরে এলো ওর । সকালের সেই দোকানদারের কথা মনে পড়ে গেলো । তবে কি এটাই সেই ব্রিজ যেখানে সকালের সেই লোকটা ঝিকানাকে দেখেছিলো?
আবির আর রজব মোল্লা কথা বলার সময় দরজা খোলার শব্দে দুজনেই দরজার দিকে তাকালো । দাড়িয়ে চয়নিকা । “শোনো, কাল আমি এক জায়গায় যাবো!” আবিরের রুমে এসে বলল চয়নিকা । আবির জানতে চাইলো, “কোথায়?” চয়নিকা বলল, “পাশেরই এক গ্রামে আমার এক বান্ধবী থাকে । ওরই কাছে যাবো ।” আবিরের পাশেই রজব মোল্লা থাকায় আবির বলতে পারলো না, এখানে একটা বিপদের মাঝে আছে ওরা । শুধু বলল, “ঠিক আছে ।”

আগামী পর্বেঃ
পথ ধরে আসতেই যেখানে জঙ্গল শেষ, সেখানে একটা গ্রাম দেখলো অয়ন । অয়ন সামনের দিকে এগোতে লাগলো । এমন সময় অয়ন একটা অদ্ভুত আওয়াজ পেলো । কোন মেয়ে মানুষ যদি কাকের মতো কা কা করে, এরকম আওয়াজ । আওয়াজটা আসছে ঠিক অয়নের পেছন থেকে । অয়ন ঘামছে । সাহস করে ধীরে ধীরে পেছনের দিকে তাকাতেই অয়নের চোখ কপালে ওঠার মতো অবস্থা । এ যে ঝিকানা!