0 %

Thanks a lot for being with us!
We are re-constructing our website!
Sorry for this temporary inconvenience
We are coming to you with a fresh look and design from 1 January 2022!
Till then! Stay connected!

পরিচয়-৩১৩

পরিচয়(পর্ব-৩১৩)
(সিজন-১১: আত্মার সাক্ষাৎ)
একটু পর ভ্যানওয়ালা দোকানে আসতেই সবাই তার দিকে তাকিয়ে রইলো । ভ্যানওয়ালা এটা দেখে হালকা চমকে গেলো বটে, তবে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, “ভ্যান প্রায় ঠিক হইয়ে গেছে, একটু পরই আমরা রওনা হমু ।” সাবিত লোকটাকে ওর পাশের ফাঁকা জায়গা দেখিয়ে বলল আপনে এখানে বসেন, চা খান একটু । লোকটা প্রথম প্রথম একটু সংকোচ বোধ করলেও পড়ে বসলো । দোকানদার তাকে চা দিলো । আবির জিজ্ঞেস করলো, “ঝিকানা কেমন দেখতে?” লোকটা চায়ে চুমুক দিতে গিয়ে কেশে উঠলো । তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে এক চোখটাই বড় করে তাকালো । ভয় পেয়েছে । হুট করে ঝিকানার চেহারাটা মনে পড়ে গেছে বোধ হয় । সাবিত জিজ্ঞেস করল, “প্লিজ! আমাদেরকে বলুন!” ভ্যানওয়ালা জিজ্ঞেস করলো, “ভয় পাইবেন না তো?” উপস্থিত সবাই বলল, “না ।” ভ্যানওয়ালা বলা শুরু করলো তার কাহিনী ।
এক আমাবস্যার রাত । আকাশে মেঘও ছিলো সেদিন । এমনিতেই রাতের বেলা এসব অজপাড়া গা অন্ধকার দিয়ে ভরা থাকে, তার ওপর আমাবস্যা এই অন্ধকারকে আরও যেনো বেশি ঘন করে দিয়েছে । বাইরে কেউ নেই, কিন্তু ভ্যানওয়ালাকে বেরোতেই হবে, কারণ তার মেয়ের বেজায় অসুখ । ভ্যান নিয়ে বেরোলো । হ্যারিকেনের আলোয় যতোটা দেখে পথ চলা যায় । বেশ ভালোই হাওয়া বইছে যদিও তা এখন ঝড়ো হাওয়ায় রূপ নেয় নি । তবে থেকে থেকে আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে । এমন সময় হঠাৎ ভ্যানওয়ালার মনে হলো ভ্যানের ওপরে কেউ উঠেছে । চলন্ত অবস্থায় পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো, কেউ নেই । তারপর সামনের দিকে তাকাতেই যা দেখলো, তা দেখে ভ্যানওয়ালার শরীর থেকে আত্মা বের হয়ে যাবার মতো অবস্থা । একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে এক চোখ নেই এবং কোটর দিয়ে রক্ত পড়ছে । পুরো শরীর কালো । এবং এক হাতে কাটাচামচ । লোকটা ভয়ে ভ্যান থেকে পড়ে গেলো । মনে মনে যতো দোয়া আছে পড়তে লাগলো । কিন্তু ঝিকানা তবু গেলো না । লোকটা মাটির ওপর পড়ে গেলো । চোখ বন্ধ করে রইলো । বাতার তখন আরও জোরে বইতে শুরু করলো । একটু পর বাতাস একটু কমলো । ভ্যানওয়ালা ভাবলো ঝিকানা চলে গেছে । এই ভেবে যেই না চোখ খুললো, অমনি ঝিকানা ভ্যানওয়ালার এক চোখে কাটাচামচ ঢুকিয়ে চোখ উপড়ে ফেললো । গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে উঠলো ভ্যানওয়ালা ।
এটুকু বলে থামলো ভ্যানওয়ালা । উপস্থিত সবাই তাকিয়ে আছে তার দিকে । একটু চায়ে চুমুক দিয়ে বলল, “ঝিকানার গায়ে একখান শাড়ি আছিলো, সাদা রঙের, কিন্তু ময়লা । আগেকার কালে যেইরকম মাইনষে বেলাউজ পড়তো না, তেমনি এরও বেলাউজ আছিলো না । মনে হইতেছিলো স্বাভাবিক মাইনষের মতোই । তয় আমার চোখ তুলার পর ঝিকানা যা করলো, সেইডা সাধারণ মাইনষের পক্ষে সম্ভবই না!” সাবিত জিজ্ঞেস করলো, “কি করেছে!” ভ্যানওয়ালা বলল, “আমি দেখলাম, ঝিকানার হাত খুইলা হাতে নিয়া হাইটা যাইতেছে! তারপর অন্ধকারের মধ্যে মিশা গেলোগা!” একটু পর এক লোক এসে ভ্যানওয়ালাকে বলল, “ও ভাই, আপনের ভ্যান ঠিক কইরে দিছি!” ভ্যানওয়ালা চায়ের কাপটা দিয়ে বলল, “আপনেরা আসেন । আমি ভ্যান নিয়া আসি ।” বলে চায়ের কাপটা রেখে চলে গেলো । সবাই ভাবতে লাগলো ব্যাপারটা নিয়ে ।
বাসায় ফিরতে ফিরতে বেজে গেলো দুপুর তিনটে । খোকন খাবার রেডি করে তখন থেকে বসে আছে । সবাই আসতেই খোকন ভ্যানের দিকে এগিয়ে এলো । জিজ্ঞেস করলো, “এতো দেরি হইলো যে আপনাগো!” রজব মোল্লা বলল সবটা ।
দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই নিজের রুমে । সাবিতের ইচ্ছে হলো এই ঝিকানার ব্যাপারে আবিরের সাথে কথা বলবে । তাই সে গেলো আবিরের রুমে । কিন্তু আবিরের রুমে এসে সে দেখলো, আবির কিছু তারকাটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে । সাবিত এসে একটা চেয়ার টেনে বসতে বসতে জিজ্ঞেস করল, “কিরে? রাজমিস্ত্রি হবার ইচ্ছে জাগলো নাকি ।” আবির হালকা হেসে বললো, “না না, তা কেনো ।“ সাবিত জিজ্ঞেস করলো, “তাহলে তারকাটা নিয়ে কি করিস?” আবির বলল, “এটা আমাদের ভ্যানের যে চাকা পামচার হয়েছিলো সেখানে পেয়েছি ।” সাবিত চমকে গেলো । চোখ বড় বড়ো আর মুখ হ্যাঁ হয়ে গেলো । বলে উঠলো, “বলিস কি তুই!!” আবির বলল, “ঠিকই বলছি । ভ্যান নিয়ে যাবার পর তোমরা চায়ের দোকানের দিকে যখন যাচ্ছিলে, আর রজব মোল্লা ফোনে কথা বলার জন্য যখন যাচ্ছিলো, তখন আমি সুযোগ বুঝে মাটিতে রুমার ফেলে দিয়ে তারকাটাগুলো তুলেছিলাম ।” সাবিত জিজ্ঞেস করলো, “তার মানে কেউ ইচ্ছে করে আমাদের ভ্যানের চাকা পামচার করিয়েছে?” আবির বলল, “এটার সম্ভাবনাই বেশি, তবে এটাই যে হবে তাও না ।” সাবিত জিজ্ঞেস করল, “কিন্তু এই তারকাটাগুলো নিয়ে এসে লাভ কি হলো?” আবির বলল, “জানি না । তবে কথায় আছে না, যেখানেই দ্যাখো ছাই, উড়াইয়া দেখো তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন । তাই নিজের কাছে রেখে দিচ্ছি । পড়ে যদি কোন কাজে লাগে ।” সাবিত বলল, “তুই কি এখানেও কোন গোয়েন্দাগিরি করবি নাকি?” আবির বলল, “কি জানি, লাগলে করতেও পারি । আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?” সাবিত বলল, “হ্যাঁ বল কি বলবি!” আবির জিজ্ঞেস করলো, “আপনার দাদাইয়ের ছেলে মেয়েকে কি আপনি দেখেছেন?” সাবিত বলল, “অনেক ছোটবেলায় দেখেছিলাম । ছেলেটাকে । মেয়েটাকে দেখিনি । ছেলেটাকে নাকি এখন বিদেশ পাঠিয়েছে । তবে বড় হবার পর দেখতে কেমন হয়েছে তা আর দেখিনি, আর মেয়েটাকেও দেখিনি । মেয়েটাকে জন্ম দিতে গিয়েই নাকি দাদাইয়ের স্ত্রী মারা গিয়েছিলেন ।” আবির বলল, “ও । আরেকটা কথা, আপনার দাদাই এখন কোন কাজ করেন না?” সাবিত বলল, “না, কাজ টাজ কিছু করেন না, তবে টাকার তো আর অভাব নেই, কাজ করে কি হবে ।” আবির বলল, “কি এমন পরিমাণ টাকা আছে উনার কাছে যে উনি এতো বড় বাড়িতে থাকেন?” আবিরের প্রশ্নে সাবিত একটু ঘাবড়ে গেলো ।

আগামী পর্বেঃ
এদিকে চয়নিকা বাসা থেকে সবার চোখের আড়াল হয়ে বের হয়ে মোবাইলে কল করলো সেই বাসে কারিশ্মা দেখানো লোকটাকে । কল করার একটু পর কল ধরে এক লোক কর্কশ কণ্ঠে বলল, “মুতলুওল! মুতলুওল! ভয় পাস না! এটা টার্কিশ ভাষা! এর অর্থ, খুশী থেকো!”
“আপনি কি আত্মার সাথে মানুষের সাক্ষাৎ করাতে পারেন?” জানতে চাইলো চয়নিকা ।
“এলবেত্তে! অবশ্যই! বলুন, কার সাথে দেখাকরতে চান!” জিজ্ঞেস করলো কাহরামান!