0 %

Thanks a lot for being with us!
We are re-constructing our website!
Sorry for this temporary inconvenience
We are coming to you with a fresh look and design from 1 January 2022!
Till then! Stay connected!

পরিচয় পর্ব-৩১০

পরিচয়(পর্ব-৩১০)
(সিজন-১১: আত্মার সাক্ষাৎ)
ভয়ে মাইশা মোবাইলে গান ছেড়ে কানে ইয়ারফোন দিয়ে ঘুমোলো । তবে জার্নি করে ক্লান্ত থাকায় বেশ গভীর ঘুম দিয়েছিলো বলে তেমন কিছু টের পায় নি মাইশা । বাকিদেরও একই হাল । বেশ লম্বা একটা ঘুম ঘুমিয়েছে সবাই । তবে ব্যাতিক্রম আবিরের ক্ষেত্রে । স্বভাবমতোই সকালে উঠেছে । ফজরের নামাজ বাসায়ই পড়লো, যেহেতু মসজিদ অনেক দূরে, তার ওপর এতো সকালে ভ্যান পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ । তবে ঝিকানার ভয় আবির পায় না । শুধু আবির কেনো, কোন প্রকৃত মুসলমানই এসব গাঁজাখুরি কোথায় বিশ্বাস করবে না । নামাজ শেষে আবির একটু জানালার পাশে দাঁড়ালো । এই জানালাটা দিয়ে নদীর আসা সেই শাখাটি দেখা যায় । রাতের অন্ধকারে খুব একটা বেশিদূর পর্যন্ত দেখা যায় নি । এখন সকালের হালকা আলো ফুটেছে । সেই আলোয় নদীর শাখাটি দেখলো আবির । এই দালানটা থেকে প্রায় দেড়শ মিটার দূরে ছোট নদীর পাড় । সেখান থেকে নদীটি আরও প্রায় দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত যেয়ে ডানে বাক নিয়েছে । এখানে দাঁড়িয়ে গভীরতা আন্দাজ করাটা সম্ভব না । আর নদীটির চারপাশে শুধুই গাছপালায় ঘেরা, এই জঙ্গলের মধ্যে মানুষ থাকে বলে মনে হয় না । সকালে জগিং করার অভ্যাস আবিরের । ভাবলো অভ্যাসটা নষ্ট করা ঠিক হবে না । তাই নিচে নামলো । নদীটার পাড়েই যেতে ইচ্ছে হলো ওর । গেলো সেদিকে । ভালো লাগলো । সকালের ঠাণ্ডা হাওয়া, আর এরকম নির্জন একটা জায়গা, এই দুটো আবিরের মনকে স্বতঃস্ফূর্ত করতে যথেষ্ট । নদীর পাড়ের কাছাকাছি আসতেই গভীরতা বোঝার চেষ্টা করলো আবির । খুব একটা বেশি গভীর বলে মনে হয় না । আরও এমন মনে হচ্ছে, যেনো মাটি কেটে নদীর পানি এদিকে আনা হয়েছে । যদিও এর অনেক কারণই হতে পারে, হয়তো এখানে আগে মাছ চাষ হলো । নদীর পাড় হাটা হলে আবির পেছন দিকটায় গেলো । পুরো ফাকা মাঠ । যতদুর চোখ যায়, শুধু মাঠ আর মাঠ । আবির একটু এগোলো, ওপাড়ের কিছু দেখা যায় কিনা দেখতে । বর্ষার সময়টা, মাটি ভেজা । ভেজা মাটিতে খালি পায়ে হাটার মজাই আলাদা । তাই আবির খালি পায়েই হাটতে লাগলো । অনেক দূর পর্যন্ত হাটার পর আবির অনেক দূরে ছোটো ছোটো গ্রাম দেখতে পেলো । গ্রামের আগে একটা খালও আছে । তবে সেটা কি খাল নাকি ওই নদীরই শাখা, তা বলা মুশকিল । আবির আবার পেছনের দিকে হাটা শুরু করলো । আন্দাজ করে দেখলো, সে বাড়িটা থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে চলে এসেছে । এখান থেকে রজব মোল্লার বাড়িটাই অনেক ছোটো দেখা যাচ্ছে । খালি পায়ে হাটতে হাটতে আবিরের পায়ে হঠাৎ কি যেন একটা আটকালো । মাথা ঝুঁকিয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে দেখলো, একটা পেন্সিল ব্যাটারি । কোম্পানিটা অচেনা, লেখা হারুন ব্যাটারি । ব্যাটারিটা অস্বাভাবিকভাবে প্রচুর হালকা । ভেতরে কিছু আছে বলে মনে হয় না । নাড়িভুঁড়ি কেউ বের করে ফেলেছে বোধ হয় । একটু অবাক হলো আবির, এই এলাকায় কেউ থাকেই না, তার ওপর যারা থাকে, তাদের মধ্যে এই রজব মোল্লার বাসা ছাড়া এই ব্যাটারি কারো থাকার কথা না । কারণ সবাই বেশ গরীব । আর যদিওবা থেকেও থাকে, বা যদিও রজব মোল্লারই হয়, এখানে আসাটা একটু সন্দেহজনক । যাই হোক, আবার আসতেই পারে । আবির ব্যাটারিটা ফেলে দিয়ে রওনা হলো । সারা মাঠে এই ব্যাটারি ছাড়া অন্য কোন আবর্জনা নজরে এলো না আবিরের । আবির সেদিকে মন দিলো না । বাড়ির দিকে এগিয়ে চলল নিজেকে এই বলে, সবসময় গোয়েন্দাগিরি করতে করতে এখন যা দ্যাখে তাই-ই সন্দেহজনক মনে হয় । বাড়ির কাছে ফিরে আবির গেলো বাগানে । বাগানটা বেশ সুন্দর । বেশ অল্প কয়েক হাত দূরত্ব পর পরই বড় বড় আম গাছ, জাম গাছ, কাঁঠাল গাছ, পেয়ারা গাছ, এছাড়া সবজির বাগানও রয়েছে, করলা, পেপে, লাউ, পটল, মরিচ, বেগুন ইত্যাদি গাছও দেখতে পেলো আবির । এছাড়া একপাশে কিছু ফুল গাছও দেখলো । সব কিছু দেখা শেষে আবির রুমের দিকে ফিরলো । সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে বারান্দা দিয়ে নিজের রুমের দিকে হেটে যাবার পথে অয়ন বেড়িয়ে এলো । বলল, “ভাই! হেল্প করো না!” অয়ন পা দুটো একসাথে লাগিয়ে দাঁড়িয়ে কাঁপছে । আবির জিজ্ঞেস করলো, “কি হেল্প?” অয়ন বলল, “ভাই! সারারাত ঝিকানার ভয়ে টয়লেট যাইতে পারি নাই! একটু নিয়া চলো না!” আবির বলল, “চল ।” আবিরের মুখের ভঙ্গির কোনো পরিবর্তন হলো না । যেমন এতক্ষণ স্বাভাবিক ছিলো, তেমনই রইলো । অয়ন বুঝলো, ওর ওপর থেকে আবিরের রাগ যায় নি এখনো । এই গলিতেই ঠিক যে মাথায় আবির আর চয়নিকার রুম দেয়া হয়েছে, তার একদম অপর পাশে শেষ মাথা মাঠ আর বাগার যে কোণার দুপাশে, সেই কোণায় টয়লেট । আবির অয়নকে নিয়ে গেলো । কাজ সেরে বেড়িয়ে আসতেই আবির নিজের রুমের দিকে হাটা শুরু করলো । অয়নও এলো আবিরের পিছু পিছু । বলল, “ভাই!” আবির কিছু বলল না । অয়ন বলল, “ভাই! আমি খুব দুঃখিত গতকাল যা করেছি তার জন্য ভাই! আম সো সরি!” আবির কিছু বলল না । অয়ন পেছন থেকে আবিরের পা জড়িয়ে ধরলো । আবির “আরে! ছাড়!” বলে অয়নকে ফেলে দিলো । তারপর আবির রেগে গিয়ে বলল, “এতো ঢং করছিস কেনো এখন! যা তুই মাইশার কাছে! আমি তো তোদের দুজনের মাঝে ঝামেলা বাঁধাই, তাই না!” বলে আবির নিজের রুমে চলে গেলো । মাইশার রুম থেকে আবিরের আওয়াজ শুনে বেড়িয়ে এলো মিতু । জিজ্ঞেস বলে উঠলো, “কি হয়েছে?” আবির মিতুকে বলল, “সরি তোমার ঘুম ভেঙ্গে দিলাম!” মিতু বলল, “না ঠিক আছে, কিন্তু কি হয়েছে?” আবির বলল, “কিছুই না ।” বলে আবির নিজের রুমে চলে গেলো । মিতু কিছুক্ষণ অয়নের দিকে তাকিয়ে আবার রুমে ঢুকে গেলো । অয়ন মাটির ওপর বসে আফসোস করতে লাগলো ।

আগামী পর্বেঃ
অয়ন মাঠের দিকে তাকিয়ে মাঠটা দেখতে দেখতে আসছিলো এমন সময় ওর নজরে একটা দৃশ্য আটকালো । মাঠের মধ্য দিয়ে এক বয়স্ক মহিলা, বছর প্রায় একশোর কাছাকাছিই হবে, মাঠের এপাশ থেকে ওপাশ যাচ্ছে । এই দালানটা থেকে মহিলাটা প্রায় দুশো মিটার মতো দূরে । চেহারা স্পষ্ট দেখা না গেলেও এটা বোঝা গেলো, মহিলাটা কেমন অদ্ভুত আচরণ করছে । কখনো নাচছে, কখনো হাত পা ছড়িয়ে অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গি করছে, আবার কখনো এক পায়ে কুত কুত খেলছে, আর নানা অদ্ভুত আচরণ করতে করতে এপাশ থেকে ওপাশ যাচ্ছে । মনে হচ্ছে, যেনো মহিলাটা নেশা করেছে ।