0 %

Thanks a lot for being with us!
We are re-constructing our website!
Sorry for this temporary inconvenience
We are coming to you with a fresh look and design from 1 January 2022!
Till then! Stay connected!

পরিচয় ৩০৭

পরিচয়(পর্ব-৩০৭)
(সিজন-১১: আত্মার সাক্ষাৎ)
তারপর লোকটা বাস থেকে নেমে গেলো ।
সন্ধ্যার আগ দিয়ে সবাই পৌঁছে গেলো পাবনার বেড়া বাসস্ট্যান্ডে । সেখানে নেমে মোটরচালিত ভ্যানে উঠে ওরা রওনা হল সাবিত ভাইয়ের দাদু বাড়ির দিকে । প্রায় আধ ঘণ্টার রাস্তা পেড়িয়ে গেলো ওরা । পথে নজরে এলো সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা বাংলাদেশের প্রকৃতি । কখনো ধান ক্ষেত, কখনো ব্যাস্ত বাজার, কখনো পুকুরে জাল ফেলে মাছ ধরা মাঝি, ইত্যাদি । তবে ওরা যে গ্রামে গেলো, তার নাম ঝিকানা । কথিত আছে, দাস প্রথা যখন ছিলো, তখন থেকে এই এলাকায় এক ঝি বা দাসি ছিলো যে ছিলো কানা । কানা বলে তাকে কেউ কিনতে চাইতো না । এই গ্রামে তখন এক জমিদার ছিলো । সে শুধু ঝি কিনতো, আর তাদের দিয়ে ঘরের কাজ করাতো । সে এই কানা ঝিকে কেনে । কিন্তু পড়ে সে জানতে পারে জমিদার নাকি এই কানা ঝিকে দেখে প্রাণ খুলে হাসতে পারে, সে জন্য একে কাজে রেখেছে । এলাকায় সে কথা ছড়িয়ে পড়ে । যে-ই এই কানা ঝিকে দেখে, সেই হাসাহাসি শুরু করে । পড়ে সেই কানা ঝি অপমান সহ্য করতে না পেরে একদিন জমিদার বাড়িতে আগুন লাগিয়ে পালানোর বদলে নিজেও জমিদার বাড়ি ঢুকে যায় । পোড়া লাশের মধ্য থেকে জমিদারের এক চোখ ছিলো না আর সে চোখ পাওয়া গিয়েছিলো পুড়ে যাওয়া সেই কানা ঝি এর হাতে থেকে কাটাচামচের আগায় । আসতে আসতে এই গল্পই সবাইকে বলছিলো সাবিত । আবির আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো, জনবসতি নেই বললেই চলে । সাবিতকে জিজ্ঞেস করলো, “ভাই, এখানে কি লোকজন নেই নাকি?” সাবিত বলল, “আছে, কিন্তু হাতে গোনা অল্প কজন । শেষ দু বছর আগে শুনেছিলাম, ১৫ জন এগ্রামে আছে শুনেছিলাম আমার দাদাই, আর তার চাকরসহ । আমার দাদার খালাতো ভাইকে আমি দাদাই বলে ডাকি ।” বড় একটা বাড়ির সামনে দাঁড়ালো ওদের ভ্যান । সত্যি! দোতলা বড় বাড়ি! গল্পে যেমন পড়া হয়, মুভিতে যেমন দেখা হয়, সেরকম, জমিদার বাড়ির মতো । বাড়ির পেছন দিকটায় যতদুর চোখ যায় মাঠ । ডানে একটা নদীর শাখা এসে শেষ হয়েছে । আর বামে গাছপালার বাগান । নিশান জিজ্ঞেস করলো, “খালু! এটাই কি সেই জমিদার বাড়ি যেটার ব্যাপারে বলছিলে?” সাবিত হালকা হেসে বলল, “আরে না না! ওই যে নদীর শাখা এসে শেষ হয়েছে, এখানেই জমিদার বাড়ি ছিলো । আজ থেকে প্রায় পঁচিশ বছর আগেও ছিলো, পড়ে নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে ।” আবির জিজ্ঞেস করলো, “কিন্ত এতো সুন্দর জায়গা! কেউ থাকে না কেনো?” সাবিত বলল, “সে না হয় পড়ে বলব, এখানে বাচ্চা আছে, শুনলে ওরা ভয় পাবে ।” সে সময় দোতলায় একটা লোক এসে দাঁড়ালো । চেহারায় বার্ধ্যক্যের ছাপ দেখেই বোঝা যাচ্ছে ইনি সাবিতের দাদাই । দাদাই ওদের দেখে দন্তহীন মুখে হালকা হেসে চাকরকে ডেকে বলল, “এই খোকন! দ্যাখ আইসা পড়ছে! ব্যাগপত্র তুইলা আন! যা!” অয়ন জিজ্ঞেস করলো, “ভাই! তোমার দাদাই এর নাম কি?” সাবিত বলল, “উনার নাম রজব মোল্লা ।” রজব মোল্লা আস্তে হাটে । তাই চাকর খোকনকে আগে পাঠিয়ে দিয়ে নিজেও ধীরে ধীরে নামতে শুরু করলো । চাকর এসে সালাম দিয়ে ব্যাগ নিয়ে যেতে লাগলো । আবির বলল, “আপনাকে সব নিয়ে কষ্ট করতে হবে না, আপনি একটা নিন, আমরা বাকিগুলো নিয়ে আপনার সাথে সাথে আসছি ।” খোকন বলল, “আইসেন! আপনেগো রুম দেখায় দেই!” আবির আর সাবিত ব্যাগ নিয়ে খোকনের পিছু পিছু গেলো । সাবিত আর আবিরের সাথে রজব মোল্লার সিঁড়িতেই দেখা হয়ে গেলো । দুজনেই সালাম দিলো রজবকে । সালামের জবাব দিয়ে রজব বলল, “ভালা আছাও বাবারা?” সাবিত বলল, “জি দাদাই, আপনি কেমন আছেন?” রজব বলল, “আছি আলহামদুলিল্লাহ!” সাবিত আবিরকে দেখিয়ে বলল, “দাদাই, এ আবির । আমার বউয়ের বোনের জামাই ও ।” রজব আবিরকে দেখে বলল, “তোমারে কেডায় না চেনে বাপ! তোমার কথা খবরের কাগজে পইড়াই দেইখছি! তা আমার সাবিত বাবার বউমারে তো আল্লাহ তুইলা নিয়া গেছে । তোমার বউমা কনে বাবা? লিয়ে আসো নাই?” আবির বলল, “দাদাই………আচ্ছা আমিও আপনাকে দাদাই বলেই ডাকি! ওরা বাইরেই আছে, যান দেখে পেয়ে যাবেন ।” রজব বলল, “এ আল্লাহ! বাইরে ক্যা? ভেতরে আইতে কও!” বলে রজব নিচে নেমে সবাই হাত নাড়িয়ে ইশারা করে ডাকলো, “বাজানরে! মারে! আসো তোমরা!” সবাই দাঁড়িয়ে প্রকৃতি আর আশপাশটা দেখেছিলো । রজবের কথা শুনে চলে এলো । সবার সাথে পরিচয় হল রজবের । তারপর বলল, “চলো! গেস্ট রুমে যাই! একলগে বইসা কথা করিগা!” গেস্ট রুমের দিকে গেলো সবাই । বিরাট বড় একটা রুম । বাড়ির প্রায় মাঝেই এর অবস্থান । সে রুমে চারপাশে কারুকার্য করা বিভিন্ন দেয়ালচিত্র, কিছু শোভাবর্ধনকারী আসবাবপত্র, আর মাঝে একটা টিটেবিলের চারপাশে বড় বড় চার সেট সোফা, একেক সোফায় ৫-৬ জন মতো অনায়াসে বসা যাবে এরকম বড় । রজব চাকরকে বলল, “যাও তো! মিতুরে দ্যাহো তো কনে গেলো!” সাবিত জিজ্ঞেস করলো, “দাদাই! মিতু কে?” রজব বলল, “একখান গেদি, বেচারি কোন জানি অনাথ আশ্রম থেইকা পলাইয়া এই গেরামে আইছে । তা বেচারি একা! আমার বাড়িত থাইকবার চাইলো, আমি ওরে আমার মাইয়ার মতো পাইলতেছি ।” তারপর রজব মোল্লা অয়নের দিকে ইশারা করে বলল, “ওইযে! বয়সে ওর মতোই হবে ।” মাইশা পাশেই বসে ছিলো । ফিসফিসিয়ে বলল, “বাসের লোকটা মনে হয় ঠিকই বলেছিলো!” অয়ন ঢোক গিলল ভয় পেয়ে । রজব তখন বলল, “আরেকখান কথা! রাইতে বাইরে টাইরে যাইও না! ঘরেই থাইকো ।” আবির জিজ্ঞেস করলো, “কেনো?” রজব বলল, “এলাকায় ঝিকানার আত্মা ঘুইরা বেড়ায়! চোখ তুইলা নিয়া যাইবো!” সবাই অবাক কথা শুনে শুধু সাবিত বাদে ।

আগামী পর্বেঃ
নামাজ শেষে ভ্যানে করে এসে আবির টাকা দিতে গিয়ে হঠাৎ গা-টা শিউরে উঠলো । দেখলো, ভ্যানওয়ালার এক চোখ নেই । ওঠার সময় আবির সেভাবে খেয়াল করে নি । লোকটাকে আবির টাকা দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “আপনিও কি ঝিকানার আক্রমণের শিকার?” লোকটা বলল, “হ ভাই! ঘরে যান! বেশি কথা কইয়েন না আর! রাইত ম্যালা হইছে!”