পরিচয় ৩০৩
পরিচয়(পর্ব-৩০৩)
(সিজন-১১; আত্মার সাক্ষাৎ)
(সিজন-১১; আত্মার সাক্ষাৎ)
সাবিত বলল, “আম্মা মারা গেছেন!” আবিরও বেশ ভেঙ্গে পড়লো কথাটা শুনে । সাবিত বলল, “বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে ।” কথা শুনে পাশে থাকা অয়ন আরও ভেঙ্গে পড়লো । কান্নাকাটির মাত্রা আরও বেড়ে গেলো । আবির চয়নিকার মা-র সাথে খুব একটা বেশিদিন থাকেও নি । বিয়ে হবার অল্পকিছুদিনের মাথায়ই চয়নিকার মা চলে গিয়েছিলো । তবুও আবিরের কষ্ট লাগলো । মূল কষ্টটা লাগলো এই ভেবে, এক দিনে তিনতিনটে মৃত্যু! সবাইকে সামলাবে কি করে আবির!
আবির বাড়িতে খবর দিলো । খবর শুনে কান্নাকাটিতে ভেঙ্গে পড়লো জরিনাও ।
দুপুরের দিকের কথা । নিশানের স্কুল শেষ হয়েছে । স্কুল বাসেই আসে নিশান, তবে আজ আবির এলো । নিশান এসে “বাবা!” বলে দৌড়ে এলো বাবার কাছে । আবির নিশানকে জড়িয়ে ধরলো । নিশান জিজ্ঞেস করল, “কি ব্যাপার বাবা? আজ তুমি এলে আমাকে নিতে? কিছু হয়েছে?” আবির ছেলের মুখের দিকে তাকালো । তারপর বলল সবটা । নিশানের মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো “না! এটা হতে পারে না! না! আমি বিশ্বাস করি না! আমার নানা, নানি! আমার খালামনি! না!” আবির বলল, “শান্ত হও বাবা! এটাই হয়েছে! কিছু করার নেই! এইটাই ভাগ্যে ছিলো!” নিশান কান্নাকাটি শুরু করে দিলো । আবিরও নিশানকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি শুরু করলো ।
সেদিন ওরা সবাই প্রায় না খেয়ে না ঘুমিয়ে হাসপাতালেই দিন কাটিয়েছে । আবির যদিও সবার খাবারের ব্যাবস্থা করেছিলো । জোড় করে খাওয়াতে চেয়েছিলো, নিশান ছাড়া আর কেউ খায় নি । সাবিতের বাবা মা-কেও জোড় করেছিলো । সাবিতের মা বলেছিলো, “বাবা! তোমাদের এই হাল! তোমরা কেউ খাচ্ছো না! আমরা কি করে খাই বলতো?”
পরদিন সকালে চয়নিকার মায়ের লাশ নিয়ে আসে সবাই । লাশগুলোর জানাজা পড়ানো হয় । সবার লাশ দেখে ভেঙ্গে পড়ে জীবিত সবাই । সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় চয়নিকার মায়ের লাশটা দেখে । পুরো শরীর ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে । চেহারা থেঁতলে গেছে । ঠিকমতো চেনা-ও যাচ্ছে না । নিশান ওর নানির জন্যই কাঁদল বেশি । কারণ ওর ছোটোবেলা থেকে অনেকগুলো বছর ওতো নানির কাছেই কাটিয়েছে ।
সন্ধ্যার দিকে বনানী পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় লাশ । সবাই বাড়িতে কান্নাকাটির রোল পড়ে যায় সেদিন । সেদিনও সবাই প্রায় খাওয়া দাওয়া, ঘুম বাদ দিয়ে বসে থাকে ।
পরের দিন থেকে ধিরে ধিরে সবাই স্বাভাবিক হতে শুরু করে । তবুও ঘরে আপন মানুষগুলোর স্মৃতি প্রতিমুহূর্তেই ওদের কাদায় । এমনকি মাঝে মাঝে পুরনো স্মৃতি মনে পড়লেও কান্না চলে আসে । শুরু কটা দিন আবির সাবিত ভাইকে ওদের সাথে রাখে । বেশ ভেঙ্গে পড়েছে সাবিত । ওকে সামলানো ওর বয়স্ক মা বাবার জন্যেও কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে । প্রায় সপ্তাহখানেক মতো সাবিত থাকে ওদের সাথে । তারপর ফিরে যায় নিজের বাড়ি, মন দেয় নিজের জীবনে, মন দেয় নিজের কাজে ।
এভাবে কেটে যায় প্রায় ৪ মাস । আবির আর চয়নিকা এখন ওর বাবার বাসায়ই থাকে । আগের ভাড়া বাসা থেকে চলে আসে । মৃত্যুর পূর্বে চয়নিকার বাবা বাড়ির উইল করে গিয়েছিলো । সে অনুযায়ী ফ্ল্যাটের এক অংশ আবিরের, এক অংশ চয়নিকার, এক অংশ সাবিতের, এক অংশ আঁখির, এক অংশ অয়নের, এবং অবশিষ্ট অংশ চয়নিকা, অয়ন, আর আঁখির মায়ের । কিন্তু ওদের মায়ের অনুপস্থিতে সে অংশ অয়নকে দেয় ওরা । আর আঁখির অংশ পায় সাবিত । সাবিত নিতে চায় নি সে অংশ । কিন্তু আবির সাবিতকে এই বলে দিয়েছে, “ভাই! এটা তোমার প্রাপ্য! তোমাকে এটা নিতেই হবে! আর তাছাড়া তোমাকে এমনিতে ওই বাড়ি যেতে বললে তো যাবে না । এখন বাড়ি তোমার নামে হলে তুমি অন্তত আসবে! প্লিজ ভাই! এটা তোমার মৃত শ্বশুরের ইচ্ছে ছিলো ভাই! প্লিজ!” আবিরের জোড়াজুড়িতে রাজি হয় সাবিত ।
এক শুক্রবারের কথা । আজ ছুটি । তাই আবির, অয়ন, নিশান সবাই বাসায় । অয়ন গেমস খেলছে । নিশান অয়নকে বিরক্ত করছে । বারান্দায় বসে আবির আর চয়নিকা । চয়নিকা বলল, “চারমাস হয়ে গেলো ভয়াবহ দিনটার! এখনো ভাবলে আমার বুকটা ফেটে যায়!” আবির বলল, “হুম, আমারও অনেক খারাপ লাগে । আমাদের ওপর দিয়ে যে ঝড়টাই গেলো!” চয়নিকা চুপ হয়ে গেলো । আবির বলল, “বলছি কি, আমাদের একটু প্রশান্তির দরকার, এর জন্য ভালো হয় যদি আমরা কোথাও ঘুরে আসি । যদি তোমার আপত্তি না থাকে তবে কি এ ব্যাপারে কথা বলতে পারি?” চয়নিকা বলল, “কথা খারাপ বলো নি । অনেকদিন কোথাও ঘুরে আসা হয় না । পুরো পরিবার একসাথে ঘুরে আসলে ভালোই হবে!” আবির বলল, “হ্যাঁ! সেটাই । অয়ন, নিশান, ওদেরও ভালো লাগবে ।” চয়নিকা তখন হালকা লজ্জার আর কষ্টের সাথে বলল, “একটা কথা বলবো?” আবির জিজ্ঞেস করল, “হ্যাঁ বলো, কি বলবে?” চয়নিকা বলল, “বাবা মারা যাবার পর আমার ভাইয়ের সমস্ত দায়িত্ব তোমার ঘাড়ে এসে পড়লো!” আবির বলল, “আরে না! কি সব বলছো তুমি? এমনিতেই অয়ন এখন ম্যাচিউর হয়ে গেছে । আর তাছাড়া ও তো আমারও ভাই, তাই না?” চয়নিকা ওপর নিচ মাথা নাড়লো । আবির বলল, “এরকম কথা যেন আর কোনোদিন না শুনি!”
আগামী পর্বেঃ
আবির কল করলো সাবিতকে । “আসসালামু আলাইকুম ভাই! কেমন আছো?” সাবিত বলল, “এইতো, আছি আলহামদুলিল্লাহ । তুই?” সাবিতের কণ্ঠ শুনে মনে হল, হালকা চিন্তিত । আবির বলল, “জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো । কিছু হয়েছে?”
“না, তেমন কিছু না । কেনো?” বলল সাবিত ।
“না, তোমার গলা শুনে মনে হচ্ছে যেনো তুমি চিন্তিত!” বলল আবির।
সাবিত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “কি আর বলবো, মা বাবা আমাকে জোর করে বিয়ে দিতে চাইছেন ।”
আবির বাড়িতে খবর দিলো । খবর শুনে কান্নাকাটিতে ভেঙ্গে পড়লো জরিনাও ।
দুপুরের দিকের কথা । নিশানের স্কুল শেষ হয়েছে । স্কুল বাসেই আসে নিশান, তবে আজ আবির এলো । নিশান এসে “বাবা!” বলে দৌড়ে এলো বাবার কাছে । আবির নিশানকে জড়িয়ে ধরলো । নিশান জিজ্ঞেস করল, “কি ব্যাপার বাবা? আজ তুমি এলে আমাকে নিতে? কিছু হয়েছে?” আবির ছেলের মুখের দিকে তাকালো । তারপর বলল সবটা । নিশানের মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো “না! এটা হতে পারে না! না! আমি বিশ্বাস করি না! আমার নানা, নানি! আমার খালামনি! না!” আবির বলল, “শান্ত হও বাবা! এটাই হয়েছে! কিছু করার নেই! এইটাই ভাগ্যে ছিলো!” নিশান কান্নাকাটি শুরু করে দিলো । আবিরও নিশানকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি শুরু করলো ।
সেদিন ওরা সবাই প্রায় না খেয়ে না ঘুমিয়ে হাসপাতালেই দিন কাটিয়েছে । আবির যদিও সবার খাবারের ব্যাবস্থা করেছিলো । জোড় করে খাওয়াতে চেয়েছিলো, নিশান ছাড়া আর কেউ খায় নি । সাবিতের বাবা মা-কেও জোড় করেছিলো । সাবিতের মা বলেছিলো, “বাবা! তোমাদের এই হাল! তোমরা কেউ খাচ্ছো না! আমরা কি করে খাই বলতো?”
পরদিন সকালে চয়নিকার মায়ের লাশ নিয়ে আসে সবাই । লাশগুলোর জানাজা পড়ানো হয় । সবার লাশ দেখে ভেঙ্গে পড়ে জীবিত সবাই । সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় চয়নিকার মায়ের লাশটা দেখে । পুরো শরীর ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে । চেহারা থেঁতলে গেছে । ঠিকমতো চেনা-ও যাচ্ছে না । নিশান ওর নানির জন্যই কাঁদল বেশি । কারণ ওর ছোটোবেলা থেকে অনেকগুলো বছর ওতো নানির কাছেই কাটিয়েছে ।
সন্ধ্যার দিকে বনানী পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় লাশ । সবাই বাড়িতে কান্নাকাটির রোল পড়ে যায় সেদিন । সেদিনও সবাই প্রায় খাওয়া দাওয়া, ঘুম বাদ দিয়ে বসে থাকে ।
পরের দিন থেকে ধিরে ধিরে সবাই স্বাভাবিক হতে শুরু করে । তবুও ঘরে আপন মানুষগুলোর স্মৃতি প্রতিমুহূর্তেই ওদের কাদায় । এমনকি মাঝে মাঝে পুরনো স্মৃতি মনে পড়লেও কান্না চলে আসে । শুরু কটা দিন আবির সাবিত ভাইকে ওদের সাথে রাখে । বেশ ভেঙ্গে পড়েছে সাবিত । ওকে সামলানো ওর বয়স্ক মা বাবার জন্যেও কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে । প্রায় সপ্তাহখানেক মতো সাবিত থাকে ওদের সাথে । তারপর ফিরে যায় নিজের বাড়ি, মন দেয় নিজের জীবনে, মন দেয় নিজের কাজে ।
এভাবে কেটে যায় প্রায় ৪ মাস । আবির আর চয়নিকা এখন ওর বাবার বাসায়ই থাকে । আগের ভাড়া বাসা থেকে চলে আসে । মৃত্যুর পূর্বে চয়নিকার বাবা বাড়ির উইল করে গিয়েছিলো । সে অনুযায়ী ফ্ল্যাটের এক অংশ আবিরের, এক অংশ চয়নিকার, এক অংশ সাবিতের, এক অংশ আঁখির, এক অংশ অয়নের, এবং অবশিষ্ট অংশ চয়নিকা, অয়ন, আর আঁখির মায়ের । কিন্তু ওদের মায়ের অনুপস্থিতে সে অংশ অয়নকে দেয় ওরা । আর আঁখির অংশ পায় সাবিত । সাবিত নিতে চায় নি সে অংশ । কিন্তু আবির সাবিতকে এই বলে দিয়েছে, “ভাই! এটা তোমার প্রাপ্য! তোমাকে এটা নিতেই হবে! আর তাছাড়া তোমাকে এমনিতে ওই বাড়ি যেতে বললে তো যাবে না । এখন বাড়ি তোমার নামে হলে তুমি অন্তত আসবে! প্লিজ ভাই! এটা তোমার মৃত শ্বশুরের ইচ্ছে ছিলো ভাই! প্লিজ!” আবিরের জোড়াজুড়িতে রাজি হয় সাবিত ।
এক শুক্রবারের কথা । আজ ছুটি । তাই আবির, অয়ন, নিশান সবাই বাসায় । অয়ন গেমস খেলছে । নিশান অয়নকে বিরক্ত করছে । বারান্দায় বসে আবির আর চয়নিকা । চয়নিকা বলল, “চারমাস হয়ে গেলো ভয়াবহ দিনটার! এখনো ভাবলে আমার বুকটা ফেটে যায়!” আবির বলল, “হুম, আমারও অনেক খারাপ লাগে । আমাদের ওপর দিয়ে যে ঝড়টাই গেলো!” চয়নিকা চুপ হয়ে গেলো । আবির বলল, “বলছি কি, আমাদের একটু প্রশান্তির দরকার, এর জন্য ভালো হয় যদি আমরা কোথাও ঘুরে আসি । যদি তোমার আপত্তি না থাকে তবে কি এ ব্যাপারে কথা বলতে পারি?” চয়নিকা বলল, “কথা খারাপ বলো নি । অনেকদিন কোথাও ঘুরে আসা হয় না । পুরো পরিবার একসাথে ঘুরে আসলে ভালোই হবে!” আবির বলল, “হ্যাঁ! সেটাই । অয়ন, নিশান, ওদেরও ভালো লাগবে ।” চয়নিকা তখন হালকা লজ্জার আর কষ্টের সাথে বলল, “একটা কথা বলবো?” আবির জিজ্ঞেস করল, “হ্যাঁ বলো, কি বলবে?” চয়নিকা বলল, “বাবা মারা যাবার পর আমার ভাইয়ের সমস্ত দায়িত্ব তোমার ঘাড়ে এসে পড়লো!” আবির বলল, “আরে না! কি সব বলছো তুমি? এমনিতেই অয়ন এখন ম্যাচিউর হয়ে গেছে । আর তাছাড়া ও তো আমারও ভাই, তাই না?” চয়নিকা ওপর নিচ মাথা নাড়লো । আবির বলল, “এরকম কথা যেন আর কোনোদিন না শুনি!”
আগামী পর্বেঃ
আবির কল করলো সাবিতকে । “আসসালামু আলাইকুম ভাই! কেমন আছো?” সাবিত বলল, “এইতো, আছি আলহামদুলিল্লাহ । তুই?” সাবিতের কণ্ঠ শুনে মনে হল, হালকা চিন্তিত । আবির বলল, “জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো । কিছু হয়েছে?”
“না, তেমন কিছু না । কেনো?” বলল সাবিত ।
“না, তোমার গলা শুনে মনে হচ্ছে যেনো তুমি চিন্তিত!” বলল আবির।
সাবিত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “কি আর বলবো, মা বাবা আমাকে জোর করে বিয়ে দিতে চাইছেন ।”