0 %

Thanks a lot for being with us!
We are re-constructing our website!
Sorry for this temporary inconvenience
We are coming to you with a fresh look and design from 1 January 2022!
Till then! Stay connected!

Baba

Baba
×
বাবা(পর্ব-১)

ফজরের আজান শেষ হলো । ঘুম থেকে উঠে পড়ল ৪২ বছর বয়সী লোকটা । অজু করে নামাজটা পড়ল । তারপর মোনাজাত । মনে মনেই দোয়া করলো, "হে আল্লাহ! আপনি আমায় আরও বেশি কর্মঠ হবার তৌফিক দান করুন। আমি যেন আমার পরিবারের সবাইকে খুশি রাখতে পারি । আমার স্ত্রী সন্তানদের ওপরেও আপনি রহমত দান করুন। ওরাও যেন সব সময় হাসিখুশি থাকতে পারে, আমি যেন ওদের সব চাওয়া পূরণ করতে পরি ।" এছাড়াও পরিবারের ভালোর জন্য আরও অনেক কিছু চেয়ে মোনাজাত সম্পন্ন করলো লোকটা । তারপর স্ত্রীর গায়ের কাথাটা আরেকটু উপরে তুলে দিয়ে দোয়া পড়ে স্ত্রীর কপালে ফু দিল । লোকটার স্ত্রীর নাম পুষ্পিতা । পুষ্পিতা একজন গৃহিণী । বিছানার পাশেই রাখা টি টেবিলের ওপর পানির গ্লাসের নিচে রেখে গেলো ৩০০০ টাকা । তার মেয়ের নতুন কোচিং নাকি দিয়েছে তার অগ্রীম বেতন । তারপর লোকটা গেল তার বড় ছেলে অনিকের কাছে । অনিক এক বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ছাত্র । এবছর ওর চতুর্থ ও শেষ বর্ষ চলছে । লোকটা অনিকের কপালেও ফু দিলো দোয়া পড়ে । মাথার কাছে ২০০ টাকাও রেখে দিলো । এবার লোকটা গেল তার মেয়ের রুমে । মেয়ে তার নবম শ্রেণীর ছাত্রী । নাম আরশি । লোকটা মেয়ের কপালেও দোয়া পড়ে ফু দিল । মেয়েটার মাথার কাছে ১০০ টাকা রেখে গেলো । এরপর লোকটা পাশের রুমে আরেক ছেলের কাছে গেলো । এই ছেলে আরশির বড়, অনিকের ছোট । নাম অর্ক । অর্ক গত বছর এইচএসসি দিয়েছে, কিন্তু তেমন ভালো রেজাল্ট হয় নি ওর । তাই কোন সরকারি ভার্সিটিতে তো সুযোগ হলো না, বাবার টাকার অভাবে বেসরকারি ভার্সিটিতেও ভর্তি হতে পারলো না । এক ভাইকে পড়াতে গিয়েই হিমশিম খেতে হয়, অন্যজনকে পড়াতে আরও কষ্ট । তবুও বাবা চেয়েছিল পড়াতে, কিন্তু ওদের মা রাজি হয়নি এতো টাকা খরচ করতে । তবু ভাগ্যক্রমে অর্ক একটা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ফ্রি তে রেডিও জকি হবার ট্রেনিং এর সুযোগ পেয়েছে । এখন সেটাই করছে । ট্রেনিং শেষ হলে রেডিও জকি হবার সুযোগ পাবে । লোকটা অর্কর গায়েও দোয়া পড়ে ফু দিল । অর্কর মাথার কাছেও লোকটা ৫০০টাকা দিয়ে গেলো । তারপর লোকটা খাবার টেবিলে যেয়ে বসলো । গতকাল সন্ধ্যায় বুয়ার বানানো একটা রুটি হাতে নিলো । শক্ত হয়ে গেছে রুটিটা । পাতিলে মুরগির মাংসের তরকারি । খেলো না লোকটা । খেলে যদি আবার ছেলেমেয়েদের কম পড়ে যায় না । লোকটা পানিতে চিনি মিশিয়ে শিরা বানিয়ে তাই দিয়ে শক্ত রুটিটা খেল । তারপর গায়ে শার্ট-প্যান্ট ইঙ্ক করে পড়ে চলে গেলো বাইরে । মোটরসাইকেলটা স্টার্ট করতে গিয়ে দেখল চলছে না । দু-তিন বার লাথি মারার পরও চলল না । গত সপ্তাহেও একই কাণ্ড ঘটেছিলো । লোকটার অবাক হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই । অগত্যা মোটরসাইকেলটা রেখে হাঁটা ধরল লোকটা । বাসস্ট্যান্ড বেশি দূরে না । মিনিট পাঁচেকের রাস্তা । লোকটা বাসস্ট্যান্ডের সামনে এসে দাঁড়ালো । খানিক পড়েই ভিড়ে ভরা একটা লোকাল বাস এলো । লোকটা দেরি না করে কোনোরকমে উঠে দাঁড়িয়ে গেলো লোকটা যেখানে দাঁড়িয়ে তার পাশের সিটেই বসে লাল শাড়ি পড়া এক মহিলা । মহিলাটার সমস্যা যেন না হয় তাই লোকটা একটু দূরত্ব বজায় রাখারই চেষ্টা করছিলেন । এমন সময় বাসটা হঠাৎ এমনভাবে ব্রেক করলো লোকটা মহিলার গায়ের সাথে ধাক্কা খেয়েই গেলো । মহিলাটা তখন রেগে গিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “সমস্যা কি আপনার! আমার সাথে এভাবে ধাক্কা খাচ্ছেন কেন বারবার! মানে মেয়ে দেখলেই গা ঘেঁষতে ইচ্ছে করে না?” লোকটা বলল, “আমি ইচ্ছে করে করিনি । বাসটা এমনভাবে ব্রেক……………।” লাল শাড়ি পড়া মহিলাটা লোকটাকে কথা শেষ করতে না দিয়েই বলে উঠলো, “আরে! এখন কি আপনি আমাকে মিথ্যা বলবেন! দেখুন! আমি যদি এখনই কেস ঠুকে দেই না! নারি নির্যাতন মামলা দিয়ে দেবো কিন্তু একদম!” মহিলাটা তখন লোকটার চারপাশে থাকা কিছু পুরুষের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, “কি ব্যাপার! আপনারা চুপ করে থাকবেন নাকি! চোখের সামনে নারী নির্যাতন দেখে কিছু বলবেন না?” লোকটার ডান পাশে থাকা মাঝ বয়সী এক লোক বলল, “কি ভাই, সমস্যা কি, গনপিটুনি কখনো খান নি বুঝি!” লোকটার ডানে থাকা বয়স্ক এক লোক বলল, “আজ একটু খেয়ে দেখবেন কেমন লাগে?” লোকটার পেছনে থাকা আরেকজন টিনেজার ছেলে বলল, “আমার বাবা কিন্তু পুলিশ, সোজা বাবার কাছে বিচার দিয়ে দেবো ।”লোকটা অবাক হয়ে গেলো । কি বলবে ঠিক বুঝতে পারছিল না । এমন সময় লাল শাড়ি পড়া মহিলার পেছনের সিটে এক বেশ সুন্দরী টিনেজার মেয়ে তখন লাল শাড়ি পড়া মহিলাটাকে বলল, “কি সমস্যা কি আন্টি আপনার? আমি কিন্তু এখান থেকে দেখেছি লোকটা আপনার যেন কোন সমস্যা না হয় এজন্য আরও দূরে দূরে সরে দাঁড়াবার চেষ্টা করছেন । আর আপনি উনাকে মিথ্যা নারী নির্যাতন মামলায় পুলিশের কাছে তুলে দেবার চিন্তা করছেন?” লাল শাড়ি পড়া মহিলাটা রেগে গিয়ে মেয়েটাকে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো এমন সময় মেয়েটার আশেপাশে থাকা অনেকেই বলে উঠলো, “হ্যাঁ!হ্যাঁ! আমরা দেখেছি!” মহিলাটা আর কিছু বলতে পারলো না । লোকটার ডান পাশে থাকা মাঝবয়সী লোকটা তখন বলল, “হ্যাঁ আসলেই, আমরা তো মজা করছিলাম । ” লোকটার বামে থাকা বয়স্ক লোকটা বলল, “আরে হ্যাঁ হ্যাঁ! মজা তো মজাই হয়, তাই রাগ করবেন না ।” লোকটার পেছনে থাকা টিনেজার ছেলেটা বলল, “আরে আঙ্কেল! আমার বাবার কথা আপনাকে বলছিলাম আর কি, যদি আপনার কোন দরকার হয় তবে বলবো তাই আর কি ।” লাল শাড়ি পড়া মহিলাটা বলল, “ও, মানলাম একটু বেশি বেশিই করেছি, কিন্তু ওই মেয়ের রূপ সুন্দর দেখে আপনারা যে কথা ঘুরিয়ে দিলেন, এটাও কি ঠিক!” লোকটা তখন লাল শাড়ি পড়া মহিলাটাকে বলল, “প্লিজ থামুন! এরা ওই মেয়ের রূপ দেখে কথা পাল্টে দিক বা রূপ না দেখে কথা পাল্টে দিক, ওরা মিথ্যে থেকে সত্য কথাটা বেছেছে এটাই সত্য । আর চেহারা দিয়ে কারো সৌন্দর্য প্রমানিত হয় না । আল্লাহ সবাইকে যা চেহারা দিয়েছেন, তাই সুন্দর, কিন্তু মনের দিক দিয়ে মেয়েটা আপনার থেকে হাজার গুণে সুন্দর ।” বলেই লোকটা টিনেজার মেয়েটার দিকে তাকিয়ে “থ্যাংকস ।” বলে বাস থেকে নেমে গেলো । বাসটা যাবার সময়ও মেয়েটা লোকটার দিকে জানালা দিয়ে অনেকক্ষণ তাকিয়েছিলো । হয়তো মেয়েটা লোকটার মাঝে নিজের বাবার প্রতিচ্ছবি খুঁজে পেয়েছিলো । লোকটা একটা ট্যাক্সি দাঁড় করিয়ে তাতে উঠে অফিসের দিকে রওনা হল । ট্যাক্সি ড্রাইভার হঠাৎ জিজ্ঞেস বলল, “ভাই, আপনের বাসের পাশেই তো আসিলাম, সবই শুনতেসিলাম । আপনে ম্যালা ভালা মানুষ । তা ভাই, আপনের নামডা কি?” লোকটা জিজ্ঞেস করলো, “কেন, আমার নাম শুনে কি করবেন?” ট্যাক্সি ড্রাইভার বলল, “না এমনেই আর কি । ভালা মানুষ পিরথিবিতে কয়জনই পাওয়া যায়, আর তাগো নাম কে না শুনতে চায় ।” লোকটা বলল, “আমি ভালো কি খারাপ, আমি জানি না, তবে নাম যেহেতু শুনতে চাইলেন, আমার নাম, আসাদুল্লাহ গালিব ।” বলেই লোকটা বাইরের দিকে মুখ বাড়িয়ে যানবাহনে ভরা এক ব্যাস্ত রাস্তার দৃশ্য দেখতে লাগলেন ।

আগামী পর্বেঃ
মোবাইলের অ্যালার্মটা বাজতেই ঘুম থেকে উঠে বসলো পুষ্পিতা । উঠে বসে আড়মোড়া ভাংছিল, এমন সময় গ্লাসের নিচে টাকা দেখে হুট করে যেন পুরো ঘুমটাই ভেঙ্গে গেলো পুষ্পিতার । টাকাটা হাতে নিয়ে একদম খুশি মনে দেখতে লাগলো । তারপর নিজেই নিজেকে বলতে লাগলো, “উফ! যাক! এমাসেও মেরে দিলাম! ভাগ্যিস সারাদিন বাসায় থাকে না, নাহলে তো বুঝেই যেতো আরশির কোচিং এর ব্যাপারে মিথ্যে কথা বলে টাকা মেরে দেই ।” “ও, এজন্যই তো বলি, তুমি এতো টাকা পাও কোথা থেকে!” হঠাৎ কণ্ঠটা শুনে পেছন ফিরে তাকিয়ে পুষ্পিতা দেখল আরশি দাঁড়িয়ে । আরশি মায়ের কাছে এগিয়ে আসতে আসতে বলল, “মা, ধান্দা করছো, ভালো । আমাকে একটু ভাগ দাও!”
×
বাবা(পর্ব-২)

মোবাইলের অ্যালার্মটা বাজতেই ঘুম থেকে উঠে বসলো পুষ্পিতা । উঠে বসে আড়মোড়া ভাংছিল, এমন সময় গ্লাসের নিচে টাকা দেখে হুট করে যেন পুরো ঘুমটাই ভেঙ্গে গেলো পুষ্পিতার । টাকাটা হাতে নিয়ে একদম খুশি মনে দেখতে লাগলো । তারপর নিজেই নিজেকে বলতে লাগলো, “উফ! যাক! এমাসেও মেরে দিলাম! ভাগ্যিস সারাদিন বাসায় থাকে না, নাহলে তো বুঝেই যেতো আরশির কোচিং এর ব্যাপারে মিথ্যে কথা বলে টাকা মেরে দেই ।” “ও, এজন্যই তো বলি, তুমি এতো টাকা পাও কোথা থেকে!” হঠাৎ কণ্ঠটা শুনে পেছন ফিরে তাকিয়ে পুষ্পিতা দেখল আরশি দাঁড়িয়ে । আরশি মায়ের কাছে এগিয়ে আসতে আসতে বলল, “মা, ধান্দা করছো, ভালো । আমাকে একটু ভাগ দাও!” পুষ্পিতা বলল, “তোর সাহস তো কম না, মায়ের সাথে এভাবে কথা বলে?” আরশি বলল, “আহা, কি যে বলো না মা, টাকা দিবা, নাকি আমি আব্বুকে সব বলে দেবো?” পুষ্পিতা বলল, “চড় খাবি কিন্তু!” আরশি বলল, “আচ্ছা যাই, বাবা এলে আজ বলতে হবে আমি এক্সট্রা কোন কোচিং-ই শুরু করিনি!” আরশি রুম থেকে চলে আসতে যাবে এমন সময় পুষ্পিতা বলে উঠলো, “আচ্ছা আয়, নিয়ে যা অর্ধেক ।” আরশি দাঁড়িয়ে মুচকি হাসল ।
ফোনটা বেজে উঠলো অনিকের । স্ক্রিনে নাম ভাসছে, বাবু । অনিক ফোন কানে নিতেই ফোনের ওপাশ থেকে ওর গার্লফ্রেন্ড পপি বলল, “এই! তোমার কাণ্ডজ্ঞান নাই! আসতে বলেছি কয়টায় তোমাকে! ৮টায় আসতে বলেছি এখন ৮টা ১৫বাজে!” অনিকের চোখ থেকে হুট করে ঘুমটা চলে গেলো । তারপর বলল, “এইতো বেবি, আমি এখনই আসছি!” বলে বিছানা থেকে উঠে ফোনটা কেটে গায়ে একটা শার্ট দিতে দিতে অনিক জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকাল । দেখলো, বাবার মোটর সাইকেলটা আছে । অনিক মুচকি হেসে তারপর প্যান্ট পড়তে পড়তে মনে মনে বলল, “যাক, গতকাল রাতে মোটরসাইকেলের ব্যাটারির তার খুলে দিয়েছিলাম, তাই আজ মোটরসাইকেলটা আছে । নইলে গার্লফ্রেন্ডটা হাতছাড়া হতো ।”
রাতে রেডিও শুনতে শুনতে ঘুমিয়েছিল অর্ক এখন হঠাৎ একটা হাই বিটের রক গান বেজে ওঠায় ঘুম ভেঙ্গে গেলো ওর । উঠে বসে ইয়ারফোনটা পাশে রেখে রেডিও অফ করে মাথার কাছে তাকিয়ে দেখল ৫০০টাকা । অর্ক মনে মনে বলল, “উফ, বাবাও না, শুধু শুধু এতো টাকা দিয়ে গেলো । আমার ৫০ হলেই তো দিন চলে যায় । কিন্তু বাবাকে সে কথা কে বোঝায়!” বলেই বিছানা থেকে উঠে পড়লো অর্ক ।
বলেই বিছানা থেকে উঠে পড়লো অর্ক । তারপর টেবিলে গেলো । নাস্তা করে ট্রেনিং এর ওখানে যাবে । টেবিলে দেখা হল মা আর ছোট বোন আরশির সাথে । আর আরশি খাচ্ছে, আর বুয়া রুটি বানিয়ে দিয়ে যাচ্ছে । অর্ককে দেখে বুয়া বলল, “বাইয়া! আপনে তো আলু ভাজি দিয়া পরোটা পছন্দ করেন, কিন্তু আইজকা আলু নাই বেশি, তাই মুরগীর মাংসের ঝোল দিয়াই খান ।” অর্ক বলল, “সমস্যা নেই খালা, হয়ে যাবে এতে ।” বুয়ার নাম চামেলি । একটু নরম গলায় বলল, “না বাইয়া, আসলে আপনি পরতেকদিন খান তো, তাই ।” চামেলির কথা শুনে পুষ্পিতা হালকা রাগ দেখিয়ে বলল, “এএহ! জমিদার! এই তোর এতো বেশি লাগে কেন হ্যাঁ? আয় রোজগারের খোঁজ নেই, জমিদারি ভাব শুধু, বাপের হোটেলে কতদিন খাবি? আর যে সুন্দর রেজাল্ট করেছিস, এতে তো ভালো কোন চাকরি পাবি না জানা কথা । আমার অনিককে দ্যাখ, কি সুন্দর মেডিকেল কলেজে পড়ে পড়াশুনা করছে! এ বছরেই তো শেষ, তারপর দেখিস, চাকরীর জন্য সব খুঁজবে তোর ভাইকে । একটু শেখ ভাইয়ের থেকে ।” অর্ক কিছু বলে না । চুপচাপ খেতে থাকে । এরকম কথা অনেক শুনেছে, শুনতে শুনতে গা সওয়া হয়ে গেছে । চাইলে অনেক কিছুই বলতে পারে, ওর মা যে ওর পড়াশুনার জন্য টাকা খরচ করতে চায়নি চাইলেই সে টপিক অর্ক তুলতে পারে, কিন্তু তোলে না । কারণ এতে কেমন যেন স্বার্থপরের মতো মনে হয় । ওর ভাইয়ের ভালো হলে ওরও ভালো লাগবে, এ কথা তুললে হয়তো সে ভালোলাগার অপমান করা হবে, তাই অর্ক তোলে না এ কথা । হঠাৎ ভাইয়ের কথা মনে করতেই তাকিয়ে দেখল, টেবিলে ভাই নেই । আরশিকে জিজ্ঞেস করলো, “কীরে ভাই কোথায়?” আরশি বলল, “গেছে হয়তো ভার্সিটির কাজে, ভাই তো আর তোমার মতো অকর্মা না!” অর্ক রেগে গেলো একটু । বলল, “দ্যাখ! আমি তোকে আগেও কিন্তু বলেছি! আমার সাথে এভাবে কথা বলবি না!” আরশিও রেগে গিয়ে বলল, “তো কীভাবে বলব? ক্লাসে যখন সবাই জিজ্ঞেস করলো তোর বড় দুই ভাই কি করে, যখন অনিক ভাইয়ার কথা বলি, সবাই কি সুন্দর প্রসংসা করে, আর যখন তোমার কথা বলতে না চেয়ে বাধ্য হয়ে বলতে হয়, তখন সবাই হাসাহাসি করে । কেন? আমার কি ইগো বলে কিছু নেই?” অর্ক চুপ করে খাবার টেবিল থেকে চলে গেলো । কিছু বলল না । পুষ্পিতা হালকা রাগ করে আরশিকে বলল, “তোকেও বলি, ভাইয়ের সাথে কেউ এমন করে? যাই হোক, এভাবে বলা কিন্তু ঠিক না ।” আরশি হালকা হেসে বলল, “তো কোনটা ঠিক? মেয়ের কোচিং-এর মিথ্যা কথা বলে স্বামীর কাছ থেকে টাকা আদায় করা ।” পুষ্পিতা কিছু বলতে পারলো না । লজ্জা পেয়ে খেতে লাগলো ।

আগামী পর্বেঃ
পপি বলল, “আরে মোটরসাইকেলের সাইজ দেখেছো? একে তো নিজের না, তার ওপর মোটরসাইকেল পুরনো স্টাইলের । এই মোটরসাইকেলে বসতেও তো আমার ইগোতে লাগে নাকি?” অনিক মনে মনে কষ্ট পেতে লাগলো । কেন এরকম বাবা পেলো ও! ছেলেমেয়েদের একটুও খোঁজ রাখে না!
…………………………………
জাহিদ বলল, “আপনি নাকি টাকা ধার নিয়েছিলেন?” গালিব বলল, “ও, আসলে আমার বড় ছেলে একটা আইফোন আবদার করেছিলো ।” জাহিদ বলল, “বাহ, আপনার মোবাইল নষ্ট, আপনারই তো মোবাইল দরকার ।” গালিব হালকা হেসে বলল, “কি যে বলেন না এটা সমস্যা করলেও চলে দারুণ ।” জাহিদ বলল, “আমার কাছে লুকোনোর কিছুই নেই গালিব সাহেব প্রতিটা বাবাই ছেলেমেয়ে আর বউয়ের ইচ্ছা পূরণের পথটা আগে খোঁজে ।”
×
বাবা(পর্ব-৩)

লজ্জা পেয়ে খেতে লাগলো ।
“আসবো স্যার?” অফিসের বসে রুমের কাছে এসে কথাটা বলল গালিব । অফিসের বস গাম্ভীর্যের সাথে বলল, “হুম গালিব সাহেব, আসেন আসেন ।” গালিব ভেতরে গেলো । অফিসের বস বলল, “আজ আপনার অফিস কয়টায়?” গালিব বলল, “৯টায় স্যার!” “আর আপনি এসেছেন কয়টায়?” বসের কথা শুনে ঘড়ির কাটার দিকে তাকাল গালিব । ৯টা ৩০বাজে । গালিব মনে মনে বলল, “এতোটা তো দেরি হবার কথা না!” বস বলল, “কি ভাবছেন? অজুহাত খুঁজছেন? নাকি আরেকটু লেট করতে চেয়েছিলেন তা পারলেন না দেখে আফসোস করছেন?” গালিব মাথা নিচু করে বলল, “আসলে স্যার, মোটরসাইকেলটা চলছিলো না । তার ওপর বাসেও একটু ঝামেলা হয়েছিলো, সেজন্য দেরি হয়ে গেলো ।” অফিসের বস এবার উঁচু গলায় বলল, “তাই বলে এতো দেরি! দশ পনেরো মিনিট হলেও মানতাম, কিন্তু আপনি তো পুরো আধ ঘণ্টা দেরি করে ফেলেছেন!” গালিব বলল, “সরি স্যার আর হবে না । এরপর থেকে আমি সঠিক সময়েই আসবো ।” বস বলল, “আমি কোন কথা শুনতে চাই না । আমি আপনাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করলাম!” গালিব বসের দিকে তাকাল । বুকটা হঠাৎ কষ্টে ছ্যাঁত করে উঠলো । এমন সময় অফিসের এক চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী এসে ঘড়ির ব্যাটারি চেঞ্জ করতে লাগলো । অফিসের বস আর গালিব সেদিকে তাকাল । বস জিজ্ঞেস করলো, “কি ব্যাপার? কি করছ?” চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী বলল, “স্যার, ব্যাটারি শেষ হইয়া ঘড়ি থাইমা আছিলো তো, খেয়াল করেন নাই?” অফিসের বসের ভ্রু কুচকে গেলো । তারপর পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখল, ৯টা সাত বাজে । গালিব জিজ্ঞেস করলো, “কয়টা বাজে স্যার?” অফিসের বস গলা খাখরে বলল, “৯টা ৭ ।” গালিব একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো । অফিসের বস একটু পর স্বাভাবিক গলায় বলল, “সাত মিনিট লেটও কিন্তু কম কিছু না, ঠিক আছে যান, পরে যেন এমন আর না হয় ।” গালিব অফিসের বসকে সালাম জানিয়ে নিজের কাজের ডেস্কে চলে গেলো ।
“সরি বেবি! দেরি হয়ে গেলো ।” বলতে বলতে মোটরসাইকেল থেকে নেমে সামনে দাড়িয়ে থাকা গার্লফ্রেন্ডের কাছে গেলো অনিক । পপির চেহারায় প্রচণ্ড রাগ দৃশ্যমান । অনিক পপির সামনে দাড়িয়ে কান ধরে বলল, “এই নাও কান ধরলাম, আর কখনো দেরি করবো না, খুশি?” পপি এবার মুখ খুলল । মেজাজ নিয়ে বিরক্ত কণ্ঠে বলল, “আর কত অনিক, একে তো দেরি করেছো, তার ওপর দশ মিনিটের রাস্তা আসতে লাগিয়ে দিয়েছো বিশ মিনিট কেন?” অনিক বলল, “ইয়ে মানে, বাবার মোটর সাইকেলটা পুরনো হয়ে গেছে তো, মাঝে মাঝেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো । তাই আর কি ।” পপি বলল, “তাই তো, আর কি পারো, বাবার মোটর সাইকেল! আরে মোটরসাইকেলের সাইজ দেখেছো? একে তো নিজের না, তার ওপর মোটরসাইকেল পুরনো স্টাইলের । এই মোটরসাইকেলে বসতেও তো আমার ইগোতে লাগে নাকি?” অনিক একটু সাইডে তাকাল । দুইজন বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড একটা লেটেস্ট মডেলের মোটরসাইকেলের ওপর বসে আছে । বয়ফ্রেন্ড তার গার্লফ্রেন্ডকে বলছে, “সি বেবি! আমার বাবা কালই আমাকে কিনে দিয়েছে! দারুণ না?” গার্লফ্রেন্ডটা বলল, “ওয়াও! তোমার বাবাতো তোমাকে অনেক ভালোবাসে!” অনিক চোখ ফিরিয়ে পপির দিকে তাকিয়ে দেখল পপিও কথা শুনেছে । চেহারায় মেজাজের ভাব । অনিককে, “শেখো কিছু! আর পারলে শিখিয়ো!” বলে সামনের দিকে হাটা ধরল । অনিক মনে মনে কষ্ট পেতে লাগলো । সাথে আফসোস করতে লাগলো । কেন এরকম বাবা পেলো ও! ফালতু বাবা! ছেলেমেয়েদের একটুও খোঁজ রাখে না! তারপর পপিকে মানানোর জন্য পপির কাছে গেলো ।
“কি ব্যাপার গালিব ভাই, কেমন আছেন?” হঠাৎ পাশের ডেস্কের জাহিদ বলে উঠলো গালিবকে । জাহিদ গালিবেরই কলিগ । একসাথে উনারা প্রতিদিনই কাজ করে । গালিব বলল, “এইতো ভাই, আছি আলহামদুলিল্লাহ, আপনি কেমন আছেন?” জাহিদ বলল, “এইতো ভাই আছি । দিনকাল যাচ্ছে কেমন?” গালিব বলল, “এইতো অফিসে আসা, বাসায় যাওয়া, এরই মধ্যে আলহামদুলিল্লাহ ভালোই দিন যাচ্ছে । আপনার কেমন যাচ্ছে?” জাহিদ বলল, “কেমন আর, অফিসে কাজের চাপ, বাসায় বউয়ের চাপ । ছেলেমেয়েদের আবদার তো আছেই । ভালো কথা, সেদিন পরশ ভাই ফোন করেছিলেন, আপনাকে কলে পান নি মনে হয় সেজন্য ।” গালিব জিজ্ঞেস করলো, “ও হ্যাঁ, আসলে আমার মোবাইলটাও মাঝে মাঝে সমস্যা করে তো ।” জাহিদ বলল, “ও, আপনি নাকি টাকা ধার নিয়েছিলেন উনার কাছে থেকে হাজার পঞ্চাশ, সেটার কথাই বলছিলেন ।” গালিব বলল, “ও, আসলে আমার বড় ছেলে একটা আইফোন আবদার করেছিলো । সেটার জন্য নিয়েছিলাম ।” জাহিদ বলল, “বাহ, আপনার মোবাইল নষ্ট, আপনারই তো মোবাইল দরকার ।” গালিব হালকা হেসে বলল, “কি যে বলেন না, বেশি দিন হয় নি কিনেছি, আর অতো দামি মোবাইল দিয়ে আমি কি করবো । এটা সমস্যা করলেও চলে দারুণ ।” জাহিদ হালকা হেসে বলল, “আমি আপনার কলিগ তো, আমি জানি । বছর সাত হল এই মোবাইল আপনি ব্যবহার করছেন । আর কিনতে চাইলেও হয়তো আর্থিক সমস্যার কারণে পারছেন না ।” গালিব বলল, “না না, তা কেন বলছেন, চাইলেই কিনতে………।” গালিবের কথা শেষ করতে না দিয়েই জাহিদ বলল, “আমার কাছে লুকোনোর কিছুই নেই গালিব সাহেব, ভুলে যাবেন না, আপনার মতো আমিও একজন বাবা, আর প্রতিটা বাবাই ছেলেমেয়ে আর বউয়ের ইচ্ছা পূরণের পথটা আগে খোঁজে ।” গালিব কিছুক্ষণ অন্যমনস্ক হয়ে গেলো । হয়তো এটাই সত্যি, হয়তো এটাই জীবন ।

আগামী পর্বেঃ
অর্ক বলল, “ইয়ো ব্রো! হোয়াটস আপ!” রাফিদের মুখে হাসি নেই । বলল, “বাসায় জেনে গেছে আমি আর জে হবার ট্রেনিং নিচ্ছি ।” অর্ক জিজ্ঞেস করলি, “এখন কি করবি তুই?”
“ট্রেইনার এলে উনার সাথে কথা বলে চলে যাবার জন্য ।”
“আর তোর আরজে হবার স্বপ্ন?”
জবাবে অর্কর দিয়ে ছলছল চোখে তাকিয়ে ঠোঁটে হালকা কষ্ট মাখা হাসি নিয়ে রাফিদ বলল, “স্বপ্ন আমাদের হয় না রে, স্বপ্ন হয় মা বাবার । আমরা অন্যের স্বপ্ন পূরণ করি ।”
×
বাবা(পর্ব-৪)

হয়তো এটাই সত্যি, হয়তো এটাই জীবন ।
“ইয়ো ব্রো! হোয়াটস আপ!” ট্রেনিং সেন্টারে এসে বন্ধু রাফিদকে বলল অর্ক । রাফিদের মুখে হাসি নেই । দেখেই বোঝা যাচ্ছে মুড অফ । অর্ক জিসানের পাশে বসে কাধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো, “কিরে ভাই, ঠিক আছিস?” জিসান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হতাশার সহিত বলল, “বাসায় জেনে গেছে আমি আর জে হবার ট্রেনিং নিচ্ছি ।” অর্ক ভ্রু-কুচকে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কি! কীভাবে জানলো?”
“তোকে তো আগেই বলেছিলাম, আমি খারাপ রেজাল্ট করেছি দেখে বাসার সবাই আমার ওপর রেগে আছে । কিন্তু আমায় তো রোজগার করা শিখতে হবে । আরজে হওয়া আমার একটা স্বপ্ন ছিল, কিন্তু বাসার কেউ মেনে নেয় নি, আমি বিদেশ যাওয়ার ট্রেনিং নিচ্ছি বলে টাকা নিয়ে এখানে এসেছি, কিন্তু একদিন শেষ ক্লাসে বাবা আমার ওপর সন্দেহ করে আমার পিছু নিয়ে এখানে এসেছিলো । পড়ে সব বলতে হয়েছে ।” অর্কর মন খারাপ হয়ে গেলো । এখানে যারা ছিল তাদের মধ্যে রাফিদ ওর সবচেয়ে ক্লোজ ছিল । কারণ রাফিদ আর ওর কষ্ট একই । দুজনেই খারাপ রেজাল্ট করেছে, দুজনেরই ইচ্ছে আরজে হবার । শুধু পার্থক্য অর্ক লটারির মাধ্যমে সুযোগ পেয়েছে, আর রাফিদ মিথ্যে কথা বলে টাকা নিয়ে এ কাজ করছে । আরেকটা পার্থক্য আছে, সেটা হল, রাফিদের পরিবারের কেউ চায় না ও আরজে হোক, বাধা দেয় । আর অর্কর পরিবারের বাবা ছাড়া অন্যরা ওর এই স্বপ্নে অমত দিলেও বাধা দেয় না । খোঁচা দিয়ে কথা বলে শুধু । আর অর্কর বাবা ওকে অনেক সাপোর্ট করে । অর্ক জিজ্ঞেস করলি, “এখন কি করবি তুই?”
“জানি না রে! আমি কিচ্ছু জানি না!” বলল রাফিদ ।
“আজ এলি করে?” জিজ্ঞেস করলো অর্ক ।
“ট্রেইনার এলে উনার সাথে কথা বলে চলে যাবার জন্য ।”
“আর তোর আরজে হবার স্বপ্ন?” জিজ্ঞেস করলো অর্ক ।
জবাবে অর্কর দিয়ে ছলছল চোখে তাকিয়ে ঠোঁটে হালকা কষ্ট মাখা হাসি নিয়ে রাফিদ বলল, “স্বপ্ন আমাদের হয় না রে, স্বপ্ন হয় মা বাবার । তোর মা সাপোর্ট না করলেও বাধা দেয় না, আর বাবার পুরো সাপোর্ট পাস তুই । কিন্তু আমি মা বাবা কারও সাপোর্ট তো পাই-ই না, বরং বাধার সম্মুখীন হই । আমাদের মতো ছেলেদের স্বপ্ন বলতে কিছু নেই রে । আমরা অন্যের স্বপ্ন পূরণ করি ।” বলতে বলতে রাফিদের দু চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো । অর্ক কি বলবে বুঝতে পারলো না ।
“কীরে, কি অবস্থা?” স্কুলে যেয়ে বান্ধবী লিলির পাশে বসে কথাটা বলল আরশি । লিলি বলল, “আছি বন্ধু ভালো । আবার অনেক ভালোও বলতে পারিস ।” আরশি জিজ্ঞেস করলো, “কেন রে, কি হয়েছে?” লিলি হালকা হেসে বলল, আজ বাসায় যাবার সময় তোকে আমার বাসায় নিয়ে যাবো, তখন দেখিস । আরশি হালকা হেসে, “ঠিক আছে!” বললেও মনে মনে ভাবতে লাগলো কি এমন দেখাবে যার জন্য বাসায় নিয়ে যাওয়া লাগবে?
দুপুর ২টার দিকের কথা । নিজের রুমে পাশের বাসার ময়না ভাবির সাথে গল্প করছিলো পুষ্পিতা । কথার মাঝে ময়না বলল, “ওই দাখেন ভাবি, আপনার সাথে কথা বলতে বলতে কখন যে দুপুর ২টা বেজে গেছে, টেরই পেলাম না । যাই ঘরে যাই, রান্না বান্না শেষ করে এসেছি, ছেলেমেয়ে আসবে স্কুল থেকে, ওদের খেতে দিতে হবে ।” পুষ্পিতা বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ, তা তো অবশ্যই । আমার বুয়া যে কি রান্না করছে কে জানে ।” রান্না ঘর থেকে চামেলি ঠোঁট বাকিয়ে ভেংচি কেটে মনে মনে বলল, “উমহ! ঢঙ!” ময়না উঠে দাড়িয়ে হালকা হেসে বলল, “সেটাই, আসলে আমরা গৃহিণী মানুষ কাজ করে খাই, আপনি তো গৃহিণী শুধু নামেই, কাজ তো বুয়াই করে, আপনার মতো কপাল ক জনেরই বা জোটে বলুন!” পুষ্পিতা মনে মনে খুশি হল না, কিন্তু খারাপ ভাবতে পারে তাই ইচ্ছের বিরুদ্ধে হালকা হেসে বলল, “হ্যাঁ, সেটাই ।” তারপর “আমি তাহলে আসি?” বলে ঘর থেকে বেরোতে লাগলো ময়না । পুষ্পিতা দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে, “আচ্ছা, আবার আসবেন ।” বলে দরজা লাগিয়ে ঘরে ঢুকে বিরক্তি নিয়ে বলল, “বা বা! মানুষের যেন কথা বলার কোন ঠিক ঠিকানা নেই । আরে আমি ঘরের কাজ করে গৃহিণী হই বা না করেই হই, তাতে ওর কি? যত্তসব!” বলে নিজের ঘরে চলে গেলো পুষ্পিতা ।
কাজের ফাকে জাহিদ এসে গালিবকে বলল, “কি ভাই, মিটিং ডেকেছে যে, বাসায় যেতেও দেরি হবে মনে হচ্ছে । আপনি কি এখানে থাকবেন?” গালিব জিজ্ঞেস করলো, “কেন, কোথায় যাবেন?” জাহিদ বলল, “না, অনেক্ষণ থাকতে হবে যখন, ভাবছি একটু হালকা কিছু খেয়েই আসি ।” গালিব বলল, “না আমার তো খিদে লাগে নি, তবে চলুন, ঘুরে আসি, এক কাপ চা-ই না হয় খেলাম ।” বলে জাহিদের সাথে রেস্টুরেন্টের দিকে যেতে লাগলো গালিব ।
“উফ বেবি!” অনেক টাইম পাস করলাম, কাল ভার্সিটি আছে আমার, কাল কিন্তু দেখা করতে পারবো না ।” পপিকে বলল অনিক । ওরা একটা পার্কে গাছের নিচে সিটে বসে দুজন দুজনের হাত ধরে, পপি অনিকের মাথায় হাত রেখে । পপি বলল, “কি খিদে পেয়েছে?” অনিক বলল, “হ্যাঁ বেবি, বাসায় যেয়ে খেতে হবে তো ।” পপি বলল, “চল না, আজ আমরা কোন রেস্টুরেন্টে খাই?” অনিক মনে মনে বলল, “মেয়েদের এক ঝামেলা! কখন কি আবদার করে বসে তার ঠিক নেই । ধুর! পকেটেও নেই টাকা । বাপকে তো আর গার্লফ্রেন্ডকে খাওয়াতে হবে বলে টাকা নেয়া যায় না!” পপি বলল, “কি হল বেবি! কি ভাবছো!” অনিক বলল, “না ভাবছি, আজ আমরা ছোটোখাটো কোন হোটেলে খাই ।” পপি জিজ্ঞেস করলো, “কেন?”

আগামী পর্বেঃ
বাড়ির পথে হাটা ধরল আরশি । ওর মনে খুব আফসোস হতে লাগলো । মনে মনে নিজেকে বলতে লাগলো, “কি অভাগা আমি! কি একটা পরিবারে জন্ম নিয়েছি! আমার বাবা আমাকে কিচ্ছু কিনে দেন না! ইশ! আমার বাবা-ও যদি ওর মতো হত! ফালতু একটা বাবা আমার ।”
…………………..
জাহিদ এগিয়ে এসে বলল, “কি হয়েছে?” গালিব বলল, “আমার মেয়েটা সেদিন এই জুতোটার ওর মাকে দেখাচ্ছিল । ওর নাকি খুব পছন্দ হয়েছে । তাই আমি ভাবছি এই জুতোটা নেবো ।”
×
বাবা(পর্ব-৫)

পপি জিজ্ঞেস করলো, “কেন?” অনিক বলল, “না, আসলে সবাই ভালোবাসায় দামি জিনিসের খোঁজ করে, বিলাসিতার খোঁজ করে, চল না, আমরা একটু কম দামি দোকানে যাই? উনারাও গরিব, আমাদের জন্য তাও না হয় ওই লোকগুলোর কিছু আয় হবে ।” পপির চোখ ছল ছল করতে লাগলো । হাসিমুখে বলল, “বাহ! তুমি এতো ভালো! ঠিক বলেছো তুমি । আমরা ইউনিক প্রেমিক প্রেমিকা হবো ।” অনিক খুশি হয়ে বলল, “এইতো! বুঝে গেছে আমার বেবিটা চল, ওদিকে একটা আছে না, ছোট দোকান, ওখানে খাই ।” বলে মনে মনে অনিক বলল, “যাক বাবা! টাকার প্যারা থেকে বাচলাম!” তারপর অনিক পপিকে নিয়ে যেতে লাগলো রাস্তার পাশে টিনের তৈরি এক কমদামি হোটেলে ।
রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া শেষ করে বেরোল গালিব আর জাহিদ । গালিব শুধু এক কাপ চা খেয়েছে আর কিছু না । রেস্টুরেন্টের গেইটের সামনে আসতেই হঠাৎ গালিব হোঁচট খেতে খেতে নিজেকে সামলে নিলো । খেয়াল করে দেখল, জুতোর তলা খুলে গেছে । জাহিদ খেয়াল করে বলল, “সাত বছর হয়ে গেছে, এখন তো নতুন একটা জুতো কিনুন!” গালিব হালকা হাসিমুখে বলল, “হ্যাঁ, এইতো কিনবো ভাবছিলাম ।” জাহিদ বলল, “চলুন, এখনই যাই, মিটিং এর তো এখনও দেরি আছে, আর তাছাড়া এই জুতো পড়ে মিটিং-এ গেলে বসও কিছু বলতে পারে ।” গালিব বলল, “হ্যাঁ আসলেই । চলেন যাই । কিন্তু দোকান কোনদিকে আছে?” জাহিদ বলল, “ওইতো, আসার সময় রাস্তায় যে একটা মুচির দোকান পড়ল, ওর পাশেই একটা গলি দিয়ে ঢুকলে একটা শপিং মল আছে । ওর দোতলা পুরোটাই জুতোর দোকান ।” গালিব বলল, “ঠিক আছে চলুন ।” জাহিদের সাথে জুতোর দোকানে গেলো গালিব । কালো কিনতে হবে, তবে ডিজানটা কি হবে তা পছন্দ করতে লাগলো । একটা পছন্দ হল গালিবের । কিন্তু দাম দেখে কপাল বেয়ে দাম ঝড়তে লাগলো । সাড়ে চার হাজার টাকা । জাহিদ জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে ভাই?” গালিব চাপা গলায় আমতা আমতা করে বলল, “ইয়ে মানে……দামটা……।” আর কথা বলতে পারলো না গালিব । জাহিদ বলল, “কি টাকা নেই কাছে?” জাহিদ বলল, “তা আছে, কিন্তু বড় ছেলের আইফোন কেনার জন্য অনেক ধার দেনা হয়েছে । সেসব শোধ করতে হবে, বেশি টাকা খরচ করে রিস্কটা নিতে ইচ্ছে করছে না ।” জাহিদ বলল, “আচ্ছা ভাই, আমি আছি না? টাকার সমস্যা হলে আমাকে বলবেন, আমি আছি তো । এখন এটা কিনুন ।” গালিব জাহিদের দিকে তাকাল । জাহিদ বলল, “আরে, কি দেখছেন, যান!” গালিব অবাক হয়ে গেলো । কত ভালো একজন্ন মানুষ ওর কলিগ । গালিব, “আমি আপনার মতো একজন মানুষকে কলিগ হিসেবে পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছি ।” জাহিদ বলল, “আরে, আর লজ্জা দিয়েন না ভাই, যান এবার ।” গালিব জুতোজোড়া নিয়ে ক্যাশকাউন্টারের দিকে যাচ্ছিলো, এমন সময় হঠাৎ কিছু একটার দিকে চোখ আটকে গেলো । গালিব দাড়িয়ে গেলো ।
“আয়, ভেতরে আয় ।” ঘরে রুমে এনে আরশিকে বলল লিলি । লিলি হা করে পুরো ঘর দেখে বলল, “ওয়াও! তোর ঘরটা কি সুন্দর!” লিলি বলল, “কেন শুধু আমার ঘর কেন, আমার পুরো বাড়িটাই সুন্দর ।” আরশি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগলো । বাড়ি দেখলেই বোঝা যায় কি বিলাসবহুল জীবনযাপন করে লিলি । ঘরের দেয়ালে তাকে গাছ লাগানো, এসি আছে রুমে, ডেস্কটপ আছে, আবার ল্যাপটপও আছে । আবার রুমে একটা বড় ৫৫ ইঞ্চি অ্যান্ড্রয়েড টিভি আছে । আরশি জিজ্ঞেস করলো, “কীরে, তদের ড্রইং রুমেও না একটা টিভি দেখলাম, আবার এখানেও টিভি?” আরশি বলল, “হ্যাঁ, আমাদের বাসার প্রত্যেকটা রুমে টিভি আছে । বোস তোকে দেখাই যা দেখাতে তোকে এনেছি ।” আরশি বিছানায় বসলো । লিলি আলমারি থেকে একটা বেশ সুন্দর দেখে বক্স বের করলো । তারপর বলল, “এই দ্যাখ, আমার বাবা এনেছে! মেকআপ বক্স! ব্র্যান্ডের মেকআপ বক্স!” লিলি একটু ধরতেই মেয়েটা বলে উঠলো, “এই! সাবধানে ধরিস ।” আরশি আর সেভাবে ধরলই না । লিলি মেকআপ বক্সটা খুলে দেখাতে লাগলো । শেষে বলল, “জানিস এর দাম কত!” আরশি জানতে চাইল, “কত?” লিলি বলল, “দেড় লাখ টাকা!” আরশির তো দাম শুনে মাথা ঘুরে গেলো । এমন সময় লিলির টেবিল থেকে একটা আওয়াজ এলো । ফোন বাজার আওয়াজ । লিলি এগিয়ে যেয়ে কল ধরল । কিছুক্ষণ কথা বলল । ততক্ষনে আরশি লিলির পাশে যেয়ে দাঁড়ালো । কথা শেষ হলে আরশি জিজ্ঞেস করলো, “কীরে, তোর আইফোনের স্ক্রিন সারলি কবে? গত পরশু না ভেঙ্গে গেলো?” লিলি বলল, “আরে, এটা নতুন আইফোন । আগেরটা ফেলে দিয়েছি ।” লিলি বলল, “কি! স্ক্রিন চেঞ্জ করলেই তো হত!” লিলি বলল, “ধুরু! কি সব যে বলিস না । রিয়েল স্ক্রিনে যেমন ফিল হয় ডুপ্লিকেট স্ক্রিনে সেই ফিল কি হবে? আর আমার বাবা আমার ক্ষেত্রে কখনো কম্প্রোমাইজ করেন না । সব কিনে দেন যা আমি চাই ।” আরশি মন খারাপ হয়ে গেলো । একটু পর বাড়ির কাজের লোক এতো বড় ট্রে তে করে দামি দামি সব খাবার নিয়ে এলো । অনেক রকম খাবার । লিলি বলল, “নে, একটু নাস্তা কর ।” খাওয়া দাওয়া করে লিলির সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে বাড়ির পথে হাটা ধরল আরশি । ওর মনে খুব আফসোস হতে লাগলো । মনে মনে নিজেকে বলতে লাগলো, “কি অভাগা আমি! কি একটা পরিবারে জন্ম নিয়েছি! আমার বাবা আমাকে কিচ্ছু কিনে দেন না! ইশ! আমার বাবা-ও যদি ওর মতো হত! ফালতু একটা বাবা আমার ।”
গালিবকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে গেলো জাহিদ । জিজ্ঞেস করলো, “আবার কি হয়েছে?” গালিব কিছু না বলেই মেয়েদের জুতোর শেলফের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো । তারপর লাল রঙের একটা খুব সুন্দর জুতো হাতে নিলো । জাহিদ এগিয়ে এসে বলল, “কি হয়েছে?” গালিব বলল, “আমার মেয়েটা সেদিন এই জুতোটার ওর মাকে দেখাচ্ছিল । ওর নাকি খুব পছন্দ হয়েছে । তাই আমি ভাবছি এই জুতোটা নেবো ।” জাহিদ বলল, “কিন্তু এর দামতো বেশি!” গালিব বলল, “কত? ছয় হাজার, তাও আমি নেবো ।” জাহিদ আবারও বলল, “আর আপনার জুতো?” গালিব একবার জুতোর দিকে তাকিয়ে বলল, “দাঁড়ান, এরও ব্যাবস্থা করছি আমি ।” বলে মেয়ের জুতোটা কিনে শপিং মল থেকে নেমে নিচের মুচির দোকানে যেয়ে যে পায়ের জুতোর তলি খুলি গেছে সেটি খুলে মুচির হাতে দিয়ে বলল, “ভাই, এটা একটু সেড়ে দিন তো ।” তারপর গালিব জাহিদের দিকে তাকিয়ে বলল, “এই যে সারিয়ে নিয়ে গেলাম, বাসায় যেয়ে একটু পালিশ করে নেবো, দেখবেন একদম নতুন হয়ে গেছে, মলে যেটা দেখলাম তার চেয়েও সুন্দর লাগবে, দেইখেন আপনি ।” জাহিদ নির্বাক হয়ে গেলো । কিছু বলতে চাইল, কিন্তু পারলো না ।

আগামী পর্বঃ
অর্ককে পুষ্পিতা বলল, “কীরে? তোর ভাই তো আসছে না?” অর্ক বলল, “কি জানি, আমি রুমে যেয়ে কল দিচ্ছি ।” পুষ্পিতা বলল, “না থাক? কারও সাথে পড়াশুনা, চাকরি বাকরি এসব নিয়ে আলোচনা করছে হয়তো, ডিস্টার্ব করা লাগবে না । তোর মতো ড্যাং ড্যাং করে আরজে ফারজে তো আর হতে যায় না!”
………………………………
দারোয়ান এসে জাহিদকে একটা মোবাইল দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “স্যার, এই ফোনডা কি আপনের?” জাহিদ বলল, “না আমার না, এটা তো গালিব সাহেবের মোবাইল ।” দারোয়ান বলল, “ও, কিপটা গালিব ভাই?”
×
বাবা(পর্ব-৬)

কিছু বলতে চাইল, কিন্তু পারলো না ।
বাসায় এসে ঘরের মেঝেতে ধুপ ধুপ আওয়াজ করে পা ফেলতে ফেলতে নিজের রুমে গেলো আরশি । পুষ্পিতা খাচ্ছিল, তাই কিছু জিজ্ঞেস করলো না কি হয়েছে । খানিক পর অর্কও ফিরে এলো । অর্ককে পুষ্পিতা বলল, “কীরে? তোর ভাই তো আসছে না?” অর্ক বলল, “কি জানি, আমি রুমে যেয়ে কল দিচ্ছি ।” পুষ্পিতা বলল, “না থাক? কারও সাথে পড়াশুনা, চাকরি বাকরি এসব নিয়ে আলোচনা করছে হয়তো, ডিস্টার্ব করা লাগবে না । তোর মতো ড্যাং ড্যাং করে আরজে ফারজে তো আর হতে যায় না!” অর্ক কিছু বলল না । নিজের রুমে চলে গেলো ।
এদিকে খাওয়া দাওয়া শেষে দোকান থেকে বের হল অনিক আর পপি । অনিক বলল, “তো, এবার তো বাসায় যেতে হবে বাবু, অনেক দেরি হয়ে গেলো ।” পপি বলল, “হ্যাঁ, চল, আমাকে বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে তারপর বাসায় যাও ।” অনিক বলল, “হ্যাঁ বাবু, চল ।”
মিটিং শেষে অফিস থেকে বের হল গালিব । সাথে জাহিদও । জাহিদ বলল, “ভাই, জুতোটা কিনলেই পারতেন, মেয়েরটা না হয় পরেই কিনতেন ।” গালিব বলল, “আরে, কিনবো কিনবো, আমিও কিনবো । এই ধার দেনার ব্যাপারটা থেকে একটু হালকা হই আগে, তারপর শিওর কিনবো ।” জাহিদ বলল, “আজ মোটরসাইকেল আনেন নি যে?” জাহিদ বলল, “আর বইলেন না ভাই, সকালে উঠে দেখি মোটরসাইকেলটা কাজ করছে না । তাই লোকাল বাসে চড়ে এলাম । তাও কত ঝামেলা ।”
“কেন? কি হয়েছে?” জিজ্ঞেস করলো জাহিদ ।
“থাক সেসব, পড়ে বলবো না হয়, এখন আমি আপনি দুজনেই ক্লান্ত, আপনি বাসায় যান তাহলে, আমি দেখি, বাস পাই কি না ।” বলে বিদায় নিয়ে বাসস্ট্যান্ড এর দিকে রওনা হল গালিব । আর জাহিদ নিজের মোটরসাইকেলে করে বাসার দিকে যেতে নিলো, এমন সময় দারোয়ান এসে ডাকলো তাকে । জাহিদ দাড়িয়ে গেলো । দারোয়ান এসে জাহিদকে একটা মোবাইল দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “স্যার, এই ফোনডা কি আপনের?” জাহিদ ফোনটা দেখলো । একটা বাটন মোবাইল । চিনতে ভুল হল না, গালিবের মোবাইল । জাহিদ বলল, “না আমার না, এটা তো গালিব সাহেবের মোবাইল ।” দারোয়ান বলল, “ও, কিপটা গালিব ভাই?” জাহিদ দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করলো, “কিপটা মানে?” দারোয়ান বলল, “আরে, উনার একই জামা কয় বছর ধইরা যে পড়ে, মোবাইলও তো দেখতাছি তাই, আমরাও ইশমার্ট ফোন চালাই, আর হেয় অফিসে কাম কইরাও এই কমদামি ফোন চালায়, তাইলেই কন, কিপটা না?” গালিব বলল, “আপনি তো একজন বাবা, না?” দারোয়ান বলল, “হ ।” জাহিদ আবার জিজ্ঞেস করলো, “আপনার ছেলে মেয়ে কতজন ।” দারোয়ান বলল, “আমার একখান মাইয়া ।” জাহিদ তখন বলল, “আপনি আর গালিব এক না, তাই তুলনাটা বোধ হয় করা উচিৎ না । তবে একজন বাবা হিসেবে আপনি বোধ এই মন্তব্যটা করে ঠিক করেন নি ।” দারোয়ান জিজ্ঞেস করলো, “মানে?” জাহিদ বলল, “না কিছু না । বলেছেন যখন, তখন আমার কথায় আপনি বুঝবেনও না । ফোনটা দিন, উনি মাত্রই বাসস্ট্যান্ড-এর ওদিকে গেছেন, উনাকে ফোনটা দিয়ে আসি, না পেলে উনার বাসায় যাওয়া লাগলেও আমি যাবো ।” বলে দারোয়ানের হাতে ফোনটা নিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে বাসস্ট্যান্ডের দিকে রওনা হল জাহিদ । কিন্তু বাসস্ট্যান্ডে এসে পেলেন না গালিবকে । অগত্যা রওনা হলেন বাসার দিকে । বাসা উনি চেনেন, একবার গিয়েও ছিলেন । খুব একটা বেশি দূরে তা না, আবার খুব একটা কাছেও না । ফোন অনেক কাজে লাগে, তাই উনি সেটা দিতে গালিবের বাসার দিকে রওনা হলেন ।
“হ্যাঁ বল, জ্যামে আছি, হ্যাঁ, আসছি ।” বলে ফোনটা পকেটে ঢোকাল অনিক । পপি জিজ্ঞেস করলো, “কে কল করেছিলো? তোমার মা?” অনিক বলল, “না, আমার ছোট ভাই, অর্ক ।” পপি জিজ্ঞেস করলো, “ও, কেন করেছে কল” অনিক বলল, “এইতো, বাসায় ফিরতে দেরি হল যে, তাই ।” পপি হালকা বিরক্ত নিয়ে বলল, “তুমি কি মিন করছো? আমি তোমার দেরি করিয়ে দিলাম?” অর্ক বলল, “আহা! না বেবি! আমি সেটা বলিনি । কেন, আমিও তো তাহলে তোমার দেরি করিয়ে দিলাম! তাই না বেবি!” পপির বিরক্তিভাব চলে গিয়ে একটা লাজুক হাসি ফুটে উঠলো । তারপর অনিকের পিঠে হালকা করে আদর করে মেরে বলল, “দুষ্টু!” অনিক বলল, “তুমিও ।” পপি জিজ্ঞেস করলো, “আমিও কি?” অনিক জবাব দিল, “দুষ্টু!” তারপর দুজনেই একটু ন্যাকামো মিশিয়ে হাসা শুরু করলো ।

আগামী পর্বেঃ
“আরে দোস্ত, তাও পাইতাম না, গতকাল রাতে বাপের মোটরসাইকেল সিস্টেম কইরা রাখসিলাম যেন বাপ চালায় নিয়া না যাইতে পারে ।” অনিকের কথা শুনে অনিকের বন্ধু হাসা তো দুরের কথা কেমন একটা ভয় নিয়ে একবার অনিকের দিকে, একবার অনিকের পেছনে তাকাচ্ছে । অনিক জিজ্ঞেস করলো, “কীরে? কি হয়েছে?” অনিক বন্ধুর দৃষ্টি অনুযায়ী পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখল, অনিকের বাবা, গালিব দাড়িয়ে পেছনে ।
×
বাবা(পর্ব-৭)

তারপর দুজনেই একটু ন্যাকামো মিশিয়ে হাসা শুরু করলো । কিছুক্ষণ পর পপির বাসা চলে এলে তাকে নামিয়ে দিয়ে বাসার দিকে রওনা দিল অনিক । বাসার প্রায় কাছাকাছি পৌঁছতেই অনিকের দেখা এক বন্ধুর সাথে । নাম তার মিজু । মিজু বলল, “কীরে মামা, কি খবর?” অনিক বলল, “বলিস না রে মামা, সেই পেরায় আছি । একে তো বাপে ট্যাকা দেয় না তেমন, তার ওপর গার্লফ্রেন্ড এই চায়, ওই চায় । মানে সেই প্যারা ।” মিজু বলল, “ধুর, কি যে কস । আমাগো তো গার্লফ্রেন্ড-ই নাই । তুই তো গার্লফ্রেন্ড পাইসোস, আবার বাপের বাইক পাইছোস, এরপর আর লাগে কি ।” অনিক বলল, “আরে দোস্ত, তাও পাইতাম না, গতকাল রাতে বাপের মোটরসাইকেল সিস্টেম কইরা রাখসিলাম যেন বাপ চালায় নিয়া না যাইতে পারে ।” অনিকের কথা শুনে অনিকের বন্ধু হাসা তো দুরের কথা কেমন একটা ভয় নিয়ে একবার অনিকের দিকে, একবার অনিকের পেছনে তাকাচ্ছে । অনিক জিজ্ঞেস করলো, “কীরে? কি হয়েছে?” অনিক বন্ধুর দৃষ্টি অনুযায়ী পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখল, অনিকের বাবা, গালিব দাড়িয়ে পেছনে । মিজু, “দোস্ত, আমি যাই!” বলে তাড়াতাড়ি করে সেখান থেকে চলে গেলো । গালিব কিছু বলার আগেই অনিক মেজাজ দেখিয়ে বলল, “জানি তো, জ্ঞান দিবা! কিন্তু কি বলো তো, বাপের দায়িত্ব তো পালন করতে পার না । জীবনে খালি ওই আইফোনই দিছো, যা একটু বন্ধুদের দেখাতে পারি, আর কি দিছো তুমি? ভাগ্যই খারাপ! এমন এক বাপের ঘরে জন্ম নিয়েছিলাম আমি ।” বলে মোটরসাইকেল নিয়ে ভেতরে চলে গেলো অনিক । গালিব অবাক দৃষ্টিতে ছেলের দিকে তাকিয়ে কথা শুনে সেভাবেই দাড়িয়ে রইল । মোটরসাইকেল না পেয়ে সারাদিন কি দুর্ভোগ ভোগ করেছে সব মনে করলো । লোকাল বাসে ভীড় ঠেলে ওঠা, এক অদ্ভুত মহিলার অদ্ভুত আচরণ, ভালো কিছুও ঘটেছে যদিও কিন্তু কথা হল মোটরসাইকেল থাকলে খারাপ কিছু হয়তো ঘটতো না ।
রাস্তার সাইডে মোড় নিতেই হঠাৎ মোটরসাইকেলটা খারাপ হয়ে গেলো জাহিদের । কয়েকবার চেষ্টা করেও হল না কাজ । ভাগ্য ভালো কাছেই একটা মোটরসাইকেলের দোকান ছিল । সেখানে নিয়ে গেলো মোটরসাইকেলটা । জাহিদ জিজ্ঞেস করলো, “ভাই কি সমস্যা হয়েছে?” দোকানদার বলল, “ইঞ্জিনে সমস্যা হইছে ।” জাহিদ জিজ্ঞেস করলো, “কতক্ষণ লাগতে পারে ভাই?” দোকানদার বলল, “সে তো আধ ঘণ্টা মতো লাইগবোই ।” জাহিদের অধৈর্য হয়ে পড়ল । বিরক্ত হয়ে বেঞ্চে বসল ।
বাসায় ঢুকে সোজা নিজের রুমে গেলো গালিব । পুষ্পিতা স্বামীকে দেখে জিজ্ঞেস করলো, “কি, এতো দেরি করলে কেন হ্যাঁ?” গালিব অফিসের জামা পাল্টে গোসলের জন্য গামছা নিতে নিতে জবাব দিল, “মিটিং ছিল আজ । আর…………।” বলতে গিয়ে থেমে গেলো গালিব । বড় ছেলের কুকর্মের কথা মাথায় চলে গেলো । পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “আর? আর কি?” গালিব একটু নিচু স্বরে জবাব দিল, “মোটরসাইকেলটা নষ্ট ছিল, তাই লোকাল বাসে এসেছি ।” পুষ্পিতা বলল, “হ্যাঁ, তা তো হবেই, তোমার মোটরসাইকেল না, কিপটের ধন পিঁপড়ায় খায় ।” বলে মোবাইলে ফেসবুকে মনোনিবেশ করলো পুষ্পিতা । গালিব বাথরুমে ঢুকতে গিয়ে একটু দাড়িয়ে মনে মনে বলল, “কি করে বলবো, পরিবারের কারও যেন কখনো অর্থাভাব না হয় তার জন্যই এটা করতে হয়, কি করে তোমাদের বোঝাবো, আমার আয় অনুযায়ী আমার এই ব্যয় মিতব্যায়িতা!” কিছুক্ষণ দাড়িয়ে বাথরুমে ঢুকল গালিব ।
“ভাই, হইয়া গেছে । ধরেন ।” আধ ঘণ্টা পর জাহিদকে বলল দোকানদার । জাহিদ টাকা দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে আবার রওনা হল গালিবের বাড়ি । খুব বেশি পথ বাকি নেই আর ।
এদিকে সেই সময়ের মধ্যে গালিবের গোসল খাওয়া-দাওয়া শেষ । মেয়ের জন্য যে জুতোটা এনেছিল, সেটা নিয়ে মেয়ের রুমের দিকে যাচ্ছিলো, সে সময় বাইরের রুমে অর্কর সাথে দেখা । অর্ক বাবাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো, “বাবা, কেমন আছো? ঠিক আছো তো, ফিরতে দেরি হল যে?” গালিব অর্কর গালে হাত রেখে বলল, “না রে, ঠিক আছি আমি । তুই ঠিক আছিস তো বাবা?” অর্ক বলল, “হ্যাঁ বাবা, ঠিক আছি ।” গালিব জিজ্ঞেস করলো, “ট্রেনিং কেমন চলছে তোর?” অর্ক বলল, “হ্যাঁ বাবা, ভালো চলছে । আর আমাকে এতো টাকা কেন দাও বলতো, আমার তো এতো টাকা লাগে না ।” অর্ক বলল, “লাগে রে, লাগে । হঠাৎ দেখবি একদিন লেগে যাবে । আচ্ছা, আরশি কোথায় রে?” অর্ক বলল, “আছে বোধ হয়, রুমেই ।” এমন সময় আরশি কি করতে যেন সে রুমে এলো । বাবাকে দেখে চেহারায় কেমন একটা ঘৃণার ভাব ফুটে উঠলো । গালিব তা বুঝতে পারলো না । “ওইতো আরশি!” বলে আরশির কাছে বক্স থেকে জুতো জোড়া বের করতে করতে এগিয়ে গেলো । অর্ক বাইরে যাচ্ছিলো । দরজাটা খুলতেই এসে দাঁড়ালো জাহিদ । গালিব জুতো নিয়ে মেয়ের কাছে যেয়ে জুতো জোড়া এগিয়ে দিয়ে যে-ই না বলতে যাবে, “দ্যাখ তুই না সেদিন পছন্দ করেছিলি, আমি কিন………………” কথা শেষ করার আগেই জুতোজোড়া হাত থেকে কেড়ে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিল প্রচণ্ড ক্ষোভের সাথে । অর্ক জাহিদকে কিছু বলার ঠিক আগ মুহূর্তেই এই ঘটনা ঘটলো, ফলে অর্ক আর জাহিদ দুজনেই গালিব আর আরশির দিকে তাকাল । জাহিদ তো হতভম্ব হয়ে গেলো । জুতো পড়ার শব্দ শুনে রুমে এলো অনিক আর পুষ্পিতাও । আরশি যতো পারা যায় রাগ নিয়ে বলল, “কিপটে! গরীব! ছেলেমেয়েদের ইচ্ছেপূরণ করতে না পারা বাপ একটা!” গালিব কথা শুনে কষ্টে কেপে উঠলো ।

আগামী পর্বেঃ
আরশি অনিককে বলল, “দেখেছো তো ভাইয়া, বাবা কি খারাপ! নিজের ছোট ছেলেকে বেশি দেয় সারাদিন তেল মেরে চলে বলে! অবশ্য জাত গোষ্ঠী যার খারাপ, তার স্বভাব এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক!” এবারে গালিব রেগে গেলো । চোখ বড় বড় করে আরশির দিকে তাকিয়ে ঠাস করে গালে একটা চড় মেরে দিল । অনিক ভয়ে পেয়ে একটু দূরে সরে গেলো । পুষ্পিতাও হালকা কেপে উঠলো ভয়ে । অর্ক যেমন দাড়িয়ে ছিল তেমনই দাড়িয়ে রইল । তবে ওর চেহারা দেখে বোঝা গেলো বাবার এই শাসনকে ও সাপোর্ট করেছে ।
×
বাবা(পর্ব-৮)

গালিব কথা শুনে কষ্টে কেপে উঠলো । আরশি আরও বলল, “সারাজীবন শুধু দারিদ্রতার সাথে কাটিয়েছি । কি পেয়েছি! কম দামি জামাকাপড়, কমদামি জিনিসপত্র, সেই এক ফাটা মোবাইল ৫ বছর ধরে ব্যাবহার করছি, কেন! মেকআপ সামগ্রীর কথা তো বাদই দিলাম, ওগুলো তো ভাগ্যে জুটবে না আমার । কিন্তু আর কিছু! না, সেগুলোও জুতবে না ভালো । আর এই জুতো, জুতো দিয়ে ভাব দেখাতে এসেছো! কি দেখাবো এ জুতো আমার বান্ধবীদের! কিভাবে দেখাবো! এরকম হাজার হাজার জুতো আমার বান্ধবীর বাবারা তাদের কিনে দিতে পারবে ।” এতোটুকু বলে জোরে জোরে হাফাতে লাগলো আরশি । গালিব তো পুরো মূর্তির মতো দাড়িয়ে আছেন । নড়তেও যেন উনার কষ্ট হচ্ছে । অর্ক আরশির কাছে যেয়ে তর্জনী আঙ্গুল উচিয়ে বলল, “মুখ সামলে কথা বল! ভুলে যাস না, উনি তোর বাবা হন!” আরশি বলল, “এই এই! কোন সাহসে বলছো তুমি এসব, মূর্খ কোথাকার! হবা তো আরজে-ই, ওই তো, বাচাল আর জ্ঞান দেয়া স্বভাবের । এরকম ভাই আর বাবা আছে এমন একটা ঘরে জন্ম নিয়ে আমি লজ্জিত!” মুখের ওপর কথাটা বলে দিল আরশি । কিছুক্ষণ চোখ বুজে কষ্টটাকে চেপে আবার বলল, “ঠিক আছে, আমাকে নিয়ে যা খুশি বল, কিন্তু এই মানুষটাকে নিয়ে না । সেই জন্ম থেকে নিজের দরকার পূরণ না করে আমাদের যতো দরকার সব পূরণ করেছে, এক মুহূর্তের জন্য আমাদের এটা ভাবতে দেন নি আমরা সেই মধ্যবিত্ত যাদের মাঝে মাঝে অর্থাভাব হলেও হাত পাতবার মুখ নেই । এই লোকটা আমাদের স্কুলে পড়িয়েছেন, আমাদের খাবার দিয়েছেন, আমাদের পরিধানের পোশাক দিয়েছেন, আর কি চাই তোর!” অনিক পেছনেই ছিল । এগিয়ে এসে বলল, “কি চাই মানে? আমাদের চাওয়া পাওয়া কি থাকতে পারে না?” অর্ক বলল, “কে বলেছে বাবা সেটা পূরণ করে না? ভাইয়া, বাবা তোমাকে আইফোন কিনে দিয়েছে! ভাবতে পারো তুমি!” অনিক বলল, “হ্যাঁ, একটা জিনিস কিনেছি সেটার খোটাই তো দেবে চিরকাল আমি জানি । আমাদের তো বিলাসিতার কোন ইচ্ছে নেই! আমাদের মতো আর মধ্যবিত্তরা যেন বিলাসিতার সাথে জীবন কাটাতে পারছে না!” অর্ক বলল, “বাবার অবস্থাটা তো বোঝ! সব মধ্যবিত্তর উপার্জনও একই ধরণের হয় না!” অনিক বলল, “এই তুই বাবার চামচামি করিস না তো! জানি তো, বাবার টাকার ওপর তোর লোভ আছে তাই চামচামি করিস । আর তাই তো বাবা-ও তোকে বেশি টাকা পয়সা দেয়!” পুষ্পিতা কিছু বলছে না । এমনিতেই আরশি রেগে আছে, তার ওপর যদি রাগের বশে মিথ্যে বলে স্বামীর কাছ থেকে টাকা আদায়ের কথাটা বলে ফেলে! তাই পুষ্পিতা কিছু বলছে না । আরশি অনিককে বলল, “দেখেছো তো ভাইয়া, বাবা কি খারাপ! নিজের ছোট ছেলেকে বেশি দেয় সারাদিন তেল মেরে চলে বলে! অবশ্য জাত গোষ্ঠী যার খারাপ, তার স্বভাব এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক!” এবারে গালিব রেগে গেলো । চোখ বড় বড় করে আরশির দিকে তাকিয়ে ঠাস করে গালে একটা চড় মেরে দিল । অনিক ভয়ে পেয়ে একটু দূরে সরে গেলো । পুষ্পিতাও হালকা কেপে উঠলো ভয়ে । অর্ক যেমন দাড়িয়ে ছিল তেমনই দাড়িয়ে রইল । তবে ওর চেহারা দেখে বোঝা গেলো বাবার এই শাসনকে ও সাপোর্ট করেছে । তারপর গালিব বলল, “অনেকক্ষণ ধরে তোর অনেক কথা সহ্য করছি । কেন রে? কেন? হ্যাঁ সত্যি আমি হয়তো তোর সব ইচ্ছে পূরণ করতে পারিনি! কিন্তু যতটুকু সম্ভব করেছি তো! অর্থ দিয়ে তোদের বিলাসিতা হয়তো আমি দিতে পারিনি, কিন্তু বাবা হিসেবে ভালোবাসাটাও কি কম ছিল আমার? কি লাভ বন্ধুদের দেখিয়ে বেড়িয়ে? কি লাভ? আমি বোধ হয় তোকে ঠিক মতো মানুষ করতে পারলাম না! আফসোস!” এতো কথা শোনার পরেও নির্জলের মতো আরশি বলল, “হ্যাঁ, তাই তো, আসল রূপটা দেখিয়ে দিলে তোমার, সত্যিই তো, মানুষ করতে পারো নি আমাদের, বানিয়েছো তো ভিখিরি! ভিখিরিরাও আমাদের চেয়ে অনেক ভালো থাকে!” বলে নিজের রুমে চলে গেলো আরশি, গিয়েই দরজা আটকে দিলো । পুষ্পিতা গালিবের ওপর হালকা রাগ করে, “মেয়েটাকে এভাবে না মারলেও পারতে!” বলে নিজের রুমে চলে গেলো । অনিকও কিছু না বলে নিজের রুমে গেলো । অর্কর তখন খেয়াল হল, দরজায় এক লোক দাড়িয়ে । অনিক লোকটার কাছে অর্থাৎ জাহিদের কাছে যেতেই জাহিদ বলল, “সরি, আমার বোধ হয় এই সময় এখানে থাকা উচিত হয় নি ।” বলে পকেট থেকে মোবাইল বের করে অর্কর হাতে দিয়ে বলল, “আমি তোমার বাবার অফিস কলিগ, তোমার বাবা ফোন ভুলে রেখে এসেছিলেন, সেটা দিতে এলাম আর কি ।” গালিব খেয়াল করেছে জাহিদ এসেছে, কিন্তু কিছু বলল না । অর্ক বলল, “আপনি অনেক কষ্ট করে মোবাইলটা দিতে এসেছেন এজন্য অনেক ধন্যবাদ, কিন্তু এখন আপনাকে ভেতরে আসতে বলবো, সে পরিস্থিতিটাও নেই বাসায় ।” জাহিদ বলল, “আরে না না, সমস্যা নাই । ইভেন আমি চলে যেতাম, কিন্তু মোবাইলটা দিতে হতো তাই দাড়িয়ে ছিলাম ।” তারপর বিদায় নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো জাহিদ । অর্ক বাবার কাছে যেয়ে বাবার কাধে হাত রেখে ডাকলো, “বাবা!” গালিব বলল, “আমাকে একটু একা থাকতে দে ।” অর্ক আর কিছু বলল না । নিজের ঘরে চলে গেলো ।

আগামী পর্বেঃ
কয়েকবার আরশির নাম ধরে ডাকলো, “আরশি! এই আরশি! আরশি!” অনেকক্ষণ হবার পরও যখন আরশি দরজা খুললো না, অনিক বাড়ির বাকিদের ডাকল । “মা! বাবা! অর্ক! একটু তাড়াতাড়ি এদিকে আসো!” অনিকের কণ্ঠ শুনে সবাই আরশির ঘরের সামনে গেলো । গালিব অনিকের সাথে দরজা ধাক্কা দিয়ে দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে দেখল, বিছানায় শুয়ে আছে আরশি । অর্ক পাশেই দাড়িয়ে ছিল । এমন সময় একটা ওষুধের প্যাকেট খুলে পেলো । খেয়াল করে দেখল, ঘুমের ওষুধের প্যাকেট ।
×
বাবা(পর্ব-৯)

নিজের ঘরে চলে গেলো ।
একটু পর আসরের আজান পড়লো । অনিক কি কারণে যেন বাইরের রুমে আসতেই খেয়াল করলো কার যেন ফোন বাজছে । অনিক চিনতে পারলো রিংটোনটা । আরশির ফোন বাজছে । অনিক আরশির রুমের দিকে গেলো । দরজা আটকানো । অনিক নিজেই নিজেকে বলল, “কি ব্যাপার, আরশি কি ঘুমিয়ে পড়েছে? ফোন ধরছে না কেন?” বলে অনিক দরজায় নক করলো । কয়েকবার আরশির নাম ধরে ডাকলো, “আরশি! এই আরশি! আরশি!” অনেকক্ষণ হবার পরও যখন আরশি দরজা খুললো না, অনিক বাড়ির বাকিদের ডাকল । “মা! বাবা! অর্ক! একটু তাড়াতাড়ি এদিকে আসো!” অনিকের কণ্ঠ শুনে সবাই আরশির ঘরের সামনে গেলো । পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে?” অনিক বলল, “দ্যাখো, আরশি দরজা খুলছে না!” পুষ্পিতা চমকে উঠলো । “হায় আল্লাহ! সে কি!” বলে সে-ও দরজায় নক করে ডাকতে লাগলো । অর্ক-ও নক করে ডাকতে লাগলো । গালিব, “দেখি, দরজা বোধ হয় ভাংতে হবে!” বলে যে-ই না দরজার দিকে এগিয়ে যাবে, সেই সময় পুষ্পিতা বলল, “না!” গালিব দাড়িয়ে গেলো । পুষ্পিতা বলল, “তোমার জন্য আমার মেয়ের আজ এই অবস্থা! তুমি শুধু আমার মেয়েটাকে না! আমার পরিবারকে অশান্তিতে রেখেছো! আর আজ আমার মেয়ের যদি কিছু হয়! আমি কিন্তু তোমাকে ডিভোর্স দেবো!” গালিব ভ্রু-কুচকে তাকাল পুষ্পিতার দিকে । অর্ক বলল, “এসব কি বলছো মা! এখন কি এসব কথা বলার সময়!” পুষ্পিতা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো, এমন সময় গালিব বলল, “এটা সত্য আমি ওকে শাসন করেছি! কিন্তু তার পাশাপাশি এটা মিথ্যে ওকে, এমনকি এই পরিবারকে আমি অশান্তিতে রেখেছি! ছেলেমেয়েকে আদর করা যেমন বাবার দায়িত্ব, তেমনি তারা ভুল করলে তার শাসন করা-ও বাবা মায়ের দায়িত্ব! মেয়েকে শাসন করেছি মানে এই না আমি ওকে ভালোবাসি না!” পুষ্পিতা আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো, কিন্তু গালিব বলল, “আর একটাও কথা না! পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করো! সময় নষ্ট করার সময় এটা না!” বলে গালিব এগিয়ে গেলো । “অনিক! ধাক্কা দে!” কথাটি বলার পর গালিব অনিকের সাথে দরজা ধাক্কা দিয়ে দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে দেখল, বিছানায় শুয়ে আছে আরশি । পুষ্পিতা, অনিক আর গালিব পাশে যেয়ে বসলো । সবাই মিলে ডাকতে লাগলো আরশিকে কিন্তু আরশি উঠলো না । অর্ক পাশেই দাড়িয়ে ছিল । এমন সময় একটা ওষুধের প্যাকেট খুজে পেলো । খেয়াল করে দেখল, ঘুমের ওষুধের প্যাকেট । অর্ক সেটা গালিবকে দেখিয়ে বলল, “বাবা! ঘুমের ওষুধ!” ৮টা ট্যাবলেট ছিল ওষুধের পাতায়, সব নেই । অর্থাৎ ৮টি ঘুমের ওষুধ-ই খেয়ে ফেলেছে আরশি । গালিব ভয় পেয়ে গেলো । পুষ্পিতা চমকে মুখের সামনে হাত দিল । অনিকও চমকে উঠলো । গালিব অর্ককে বলল, “অর্ক! অ্যাম্বুলেন্স ডাক!”
হাসপাতালে কেবিনে রাখা হয়েছে আরশিকে । ডাক্তার যা যা করার সেসব করেছেন । আরশির মুখে অক্সিজেন সিলিন্ডার, আর হাতে স্যালাইন । কেবিন থেকে বেড়োতেই ডাক্তারকে গালিব জিজ্ঞেস করলো, “ডাক্তার! আমার মেয়ে কেমন আছে?” ডাক্তার বলল, “হ্যাঁ ভালো, অন্তত আগের তুলনায় ভালো । তবে বোধ হয় ও খুব ডিপ্রেসড হয়ে আছে । তাই ওর শরীরও তেমন ভালো রেসপন্স করছে না । একটু খেয়াল রাখবেন ওর প্রতি ।” গালিব আর কিছু বলল না । পুষ্পিতা গালিবের কাছে এসে বলল, “দেখেছো! আজ তোমার জন্য মেয়ে আমার কি অবস্থার স্বীকার? এই তোমার মতো বাবার জন্যই তো সংসারে অভিশাপ লাগে!” অর্ক বলল, “মা এসব প্লিজ বোলো না, ভুল কেউ করলে সেটা আরশি করেছে, বাবা না!” পুষ্পিতা বলল, “বাপের চামচামি কম কর বুঝলি, যেদিন বাপ তোকেও টাকা দেবে না, সেদিন বুঝবি!” অনিক বলল, “আচ্ছা মা থামো এখন! যা বলার বাসায় যেয়ে বোলো, এটা একটা হাসপাতাল ভুলে যেও না!” একটু পর একজন নার্স এসে গালিবকে বলল, “আপনি আরশি নামক রোগীর বাবা?” গালিব বলল, “জি!” নার্স গালিবের হাতে দুটো কাগজ দিয়ে বলল, “এর একটায় আরশির জন্য ওষুধের নাম রয়েছে, অন্যটায় হাসপাতালের কেবিন বিল, ডাক্তারের বিল সহ কিছু বিল রয়েছে, সেগুলো একটু এখনই ক্যাশ কাউন্টারে জমা করে দেবেন ।” বলে নার্স চলে গেলো । গালিব কাগজ দেখল । বুঝতে পারলো একটা মোটা অঙ্কের টাকা খরচ হবে । মেয়ের জীবনের কাছে টাকা বড় নয়, কিন্তু মেয়ে হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ হওয়ার পর পরিবার সামলাবে কি করে গালিব? তাও অন্য সময় হলে পারা যেত, এখন তো আবার ধার দেনার ঝামেলাও আছে । গালিব দুশ্চিন্তায় হতাশ হয়ে পড়লো ।

আগামী পর্বেঃ
গালিব বলল, “গালিব বলল, “গতকাল তুই যেটা করেছিলি ওটা অন্যায় ছিল ।” আরশি বলল, “তোমার জন্য আমরা কষ্টে আছি! বিল গেটস ঠিকই বলেছিল গরীব হয়ে জন্মেছি সেটা বাবার দোষ, উনার এটাও যোগ করার দরকার ছিল বাবার এই দোষের জন্যই ছেলেমেয়েরা গরীব হয়ে মরে!”
…………………………………………
জাহিদ বলল, “ও একটু ভুল বলেছে । বিল গেটস এটা ঠিক বলেছেন গরীব হয়ে জন্ম নেয়া বাবার দোষ, কিন্তু বিল গেটস এর এটা অ্যাড করা উচিত ছিল সেই বাবা-ই ছেলেমেয়েদের যেন গরীব হয়ে কষ্ট না করতে হয় তার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যান!”
×
বাবা(পর্ব-১০)

গালিব দুশ্চিন্তায় হতাশ হয়ে পড়লো । অর্ক বাবার কাধে হাত রেখে বলল, “চিন্তা কোরো না বাবা, সব ঠিক হয়ে যাবে ।” গালিব কিছু বলল না । ছেলের হাতের ওপর হাত রেখে ওপর নিচ মাথা নাড়ল ।
সেদিন সারারাত জ্ঞান ফিরল না আরশির । হাসপাতালের কেবিনের সামনেই বসার জায়গায় সারারাত বসে ছিল গালিব । শুধু নামাজের সময় হলে হাসপাতালেরই নামাজের কক্ষে যেয়ে নামায পড়ে আর দুয়া করে আসতো । শুধু মাগরিব আর এশার ওয়াক্তটাই পড়েছে কারণ ঘটনা ঘটেছেই আসরের পর । সেটাও অর্ক আগেই পড়ে নিয়েছিলো । রাত ১১টার দিকে বাসায় চলে যায় অনিক আর পুষ্পিতা । অর্ক বাবার সাথে সারারাত থাকতে চেয়েছিলো, কিন্তু বাবার বলার কারণে সে-ও ১২টা ৩০ এর দিকে চলে এলো । বাড়ি ফিরতেই দেখলো পুষ্পিতা অনিককে বলছে, “এই, এসেছে, বাপের মাথায় ওঠা বানর । একে শাসন করার কথা তা করে, শাসন করে আমার মেয়েকে ।” অর্ক বলল, “মা, তুমি কি এটাই প্রমান করতে চাইছো আরশি বাবার সাথে যেটা করেছে সেটা ঠিক?” পুষ্পিতা বলল, “আমি কখন সে কথা বললাম? আমি শুধু এটা বলেছি তোর বাবার এভাবে আমার মেয়েকে মারা উচিত হয় নি! মেয়েটা আমার কত কষ্ট পেয়েছে!” অর্কও পাল্টা জবাব দিল, “কেন, আরশি বাবাকে যে কথাটা বলল, তাতে বুঝি বাবা কষ্ট পায় নি? আর গায়ে হাত তোলার ব্যাপারই যদি হয়, একজন বাবার হক আছে তার ছেলেমেয়েদের শাসন করার! সেটা যেমন তোমারও আছে, তেমনি বাবারও আছে!” পুষ্পিতা তখন হালকা রাগ করে অনিকের দিকে তাকিয়ে বলল, “দেখেছিস, কি হয়েছে এই ছেলে! মায়ের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তা-ও জানে না! বাপের প্রতি দরদ বেশি!” অনিক এতক্ষণ বিরক্তির সাথে শুনছিল, এখন সেই বিরক্তিভাব তার কথায়-ই প্রকাশ করে দিয়ে বলল, “আহ! থামো না তোমরা! এখন এসব কথা বাদ দিয়ে আরশির কথা চিন্তা করো!” অর্ক আর কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেলো ।পুষ্পিতা “যেমন বাপ! তেমন ছেলে!” বলতে বলতে নিজের রুমে চলে গেল । অনিকও আর দাঁড়িয়ে না থেকে নিজের রুমে গেলো । খানিক পর সবার ঘরের লাইট নিভে গেলো, সবাই ঘুমিয়ে গেলো ।
কিন্তু ওদিকে ঘুম নেই গালিবের । কেবিনের বাইরে থেকে কাজের জানালা দিয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে । কখন যে জ্ঞান ফিরবে মেয়ের, সেই প্রতীক্ষায় । ফজরের নামাজ পড়ে মেয়ের জন্য দুয়া করে হাসপাতালের নামাজের কক্ষ থেকে বেরোল গালিব । সারারাত ঘুম হয় নি । মাঝে একটু তন্দ্রার ভাব এলেও তাও কিছুক্ষণ পর ভেঙ্গে গিয়েছিলো । মেয়ের সব কথা মনে মনে করতে করতে যখন কেবিনের সামনে এলো, খেয়াল করলো মেয়ের জ্ঞান ফিরেছে, আশেপাশে তাকিয়ে কি যেন খুজছে । গালিব তাড়াতাড়ি করে ভেতরে গেলো । মেয়ের কাছে যেয়ে মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলল, “এখন কেমন আছিস মা!” আরশি অসুস্থ অবস্থায়ও যতোটুকু পারা যায় রাগ দেখিয়ে বলল, “তুমি কেন এসেছো! আমার মতো মেয়ের তো দরকার নেই তোমার না!” গালিব মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলল, “কে বলেছে? তুই তো আমার লক্ষি মেয়ে!” আরশি তখন বলল, “তো গতকাল আমাকে থাপ্পড় মেরেছিলে কেন?” গালিব বলল, “গতকাল তুই যেটা করেছিলি ওটা অন্যায় ছিল । তখন তোর জন্য ওটা ছিল শাসন । আর শাসন করেছি মানে এই না আমি তোকে ভালোবাসি না!” আরশি বলল, “না বাসো না তো, বাসলে থাপ্পড় দেবার আগে একবার ভাবতে কষ্টটা কোথায়!” গালিব বলল, “এখন এসব বাদ………” কথা শেস করতে না দিয়েই আরশি বলল, “না, কেন বাদ দেবো! তোমার জন্য আমরা কষ্টে আছি! বিল গেটস ঠিকই বলেছিল গরীব হয়ে জন্মেছি সেটা বাবার দোষ, উনার এটাও যোগ করার দরকার ছিল বাবার এই দোষের জন্যই ছেলেমেয়েরা গরীব হয়ে মরে!” গালিব কিছু বলল না । ভাবলো, মেয়ে এখন অসুস্থ, এখন কিছু বললে মেয়ে বেশি উত্তেজিত হয়ে যেতে পারে, এতে মেয়ের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে । তাই আর কিছু না বলে কেবিনের বাইরে আসতেই দেখল, গালিবের কলিগ জাহিদ দাঁড়িয়ে । হাতে অফিসের ব্যাগ । গালিব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “আরে! আপনি এখানে! তাও এতো সকালে!” জাহিদ বলল, “গতকাল রাতে আপনার ছোট ছেলেটা আমাকে সব জানালো । তখন তো আর আসা সম্ভব ছিল না, তাই এই সময় আপনি এখানে জেগে থাকবেন জেনেই আমি ভাবলাম অফিসে যাবার আগে একটু দেখা করে যাই । মেয়ে এখন কেমন আছে?” গালিব বলল, “জি, আল্লাহর রহমতে আলহামদুলিল্লাহ ভালো ।” “কিন্তু আপনি ভাল নেই ।” বলল জাহিদ । গালিব ব্যাপারটাকে পাত্তা না দিতে চাইলেও জাহিদ আবার বলে উঠলো, “সরি তবে ব্যাপারটাকে আড়ি পেতে শোনা ভাববেন না, বাইরে থেকে আপনার মেয়ের কথাটা এমনিতেই শোনা যাচ্ছিলো । ও একটু ভুল বলেছে । বিল গেটস এটা ঠিক বলেছেন গরীব হয়ে জন্ম নেয়া বাবার দোষ, কিন্তু বিল গেটস এর এটা অ্যাড করা উচিত ছিল সেই বাবা-ই ছেলেমেয়েদের যেন গরীব হয়ে কষ্ট না করতে হয় তার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যান!” গালিব হালকা হেসে বলল, “হয়তো, তবে মনে হয় আমার পরিশ্রম অনেক কম হয়ে গেছে । পরিবারের সবার চাহিদা আমি পূরণ করতে পারি না ।” জাহিদ বলল, “আপনার পরিশ্রম কম হয় নি, আপনার পরিবারের সদস্যের চাওয়া বেশি হয়ে গেছে । বাবার আয় বুঝে যে চাওয়ার ব্যাপারটা সেটা আপনার পরিবারে একমাত্র অর্ক ছাড়া আর কেউ বোঝে না । সরি, আপনার পারিবারিক ব্যাপার নিয়ে আমার কথা বলার অধিকার হয়তো নেই, তবু আপনার কলিগ তো, সবটা আমি জানি, তাই বলছি ।” গালিব আর কিছু বলল না । কাচের জানালা দিয়ে মেয়ের দিকে একবার তাকাল । মেয়ের চোখ বুজেছে ।

আগামী পর্বেঃ
গালিব বলল, “স্যার, আমি একটু বিপদে পড়েছি ।” বস জিজ্ঞেস করল, “বিপদ! তাই নাকি!” গালিব বলল, “জি, আসলে আমার টাকার…………।” গালিবের কথা শেষ না করতে দিয়েই অফিসের বস হালকা হেসে বলে উঠলো, “হ্যাঁ বুঝতেই পেরেছিলাম, আপনাদের মত লোকেদেরই তো টাকার সমস্যা হয় । তা বলি কি, গত মাসে আমাদের কোম্পানিরও একটু ক্ষতি হয়েছে ।
×
বাবা(পর্ব-১১)

মেয়ের চোখ বুজেছে । জাহিদ বলল, “আপনি পরিবারের একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ । তাই আপনার পক্ষে পরিবারের থেকে দূরে থাকা কষ্টকর, তবুও বলছি, আপনি যদি কখনও পরিবারের থেকে দূরে যান, আপনার পরিবারে আপনার মূল্য তখনই আপনার পরিবারের লোকজন টের পাবে ।” গালিব বলল, “হয়তোবা, তবে আমার দোয়া থাকবে, আমার পরিবারের লোকজন যেন ভালো থাকে । আমাকে নিয়ে ওরা কতোটা ভাবে তা আমি জানি না । তবে ওদের ছাড়া আমি থাকতে পারবো না । ওরা-ই যে আমার সব । ।” জাহিদ বলল, “তাই, আপনার পরিবারের লোকজন-ই কোনদিন যদি আপনাকে দূরে সরিয়ে দেয় তাহলে বাঁচতে পারবেন? আপনার পরিবারই তো ভেঙ্গে যাবে তখন!” গালিব বলল, “ঘুড়ির সুট ছিঁড়ে গেলেও নাটাই কিন্তু সুতো জড়িয়েই থাকে । কিছু সুতো ঘুড়ির সাথে চলে গেলেও বেশিরভাগটা কিন্তু নাটাইয়ের সাথেই থাকে । এই নাটাই হচ্ছি আমি, আর সুতো আমার পরিবার । ঘুড়ি হল সেই ভালোবাসা যা পরিবারের সাথে সুতোর টানে জড়িয়ে আছে । পরিবারের এই টান চলে যাক, বা ইচ্ছে করেই যদি এই ভালোবাসা দূরে কেউ সরিয়ে দেয়ও, নাটাইয়ের মতো আমাকে কিন্তু আমার পরিবারকে আগলে রাখতেই হবে ।” গালিবের যুক্তি শুনে জাহিদ কিছুক্ষণ চুপ রইলো । তারপর বলল, “যাই হোক, ভালো থাকবেন । আর নিজের খেয়ালও রাখবেন । অফিসে যাবেন না আজকে?” গালিব বলল, “জি, যাবো, আগে দেখি এখানকার কি অবস্থা হয় । ওদিকে বসের সাথেও একটু কথা বলতে হবে ।”
সকাল ৮টার দিকের কথা । হাসপাতালে এলো অর্ক । গালিব কেবিনের বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিল । অর্ক এসে বলল, “বাবা, কি অবস্থা?” গালিব বলল, “আলহামদুলিল্লাহ, ভালো রে । ভোরে জ্ঞান ফিরেছিলো, আবার ঘুমিয়েছে । ডাক্তার এসে দেখেও গিয়েছে, বলেছে ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে ।” অর্ক জিজ্ঞেস করল, “তুমি খেয়েছো?” গালিব কিছু বলল না । গতকাল রাতেও খাওয়া হয়নি, মেয়ের টেনশনে খাওয়ার কথা মনেই হয় নি । গালিব সরাসরি কিছু না বললেও বলল, “এই এখন অফিসে যাবো, তারপর খেয়ে নেবো ।” অর্ক বলল, “তুমি কিনে চা ছাড়া বেশি কিছু খাবে না জানি ।” বলে ব্যাগ থেকে একটা কেকের প্যাকেট বাবার হাতে দিয়ে বলল, “এটা নাও, খেয়ে পানি খেয়ে নিয়ো ।” গালিব সেটা নিয়ে ছেলের মাথায় হাত রেখে আদর করে বলল, “আচ্ছা বাবা । তুই খেয়েছিস?” অর্ক বলল, “হ্যাঁ বাবা, খেয়েই বেড়িয়েছি ।” গালিব বলল, “আজ তোর ট্রেনিং নেই?” অর্ক জবাব দিলো, “হ্যাঁ বাবা, মা একটু পর আসবে, তারপর আমি বেরবো ।”
“অনিক কি ভার্সিটি গিয়েছে?” জিজ্ঞেস করল গালিব ।
“না বোধ হয়, একটু পড়ে যাবে মনে হয় । তবে এখানে এখন আসবে না ।” বলল অর্ক ।
গালিব, “আচ্ছা, থাক তাহলে তুই । নইলে আমার দেরি হয়ে যাবে ।” বলে বেড়িয়ে পড়লো । অর্কও বলল, “সাবধানে যেও বাবা ।”
হাসপাতাল থেকে বাসা খুব বেশি দূরে না, কাজেই বেশি দেরি হল না । বাসায় গিয়ে পুষ্পিতার দেখা পেলো না গালিব । অনিককে নাস্তা করতে দেখল । আর চামেলিকে খাবার পরিবেশন করতে । চামেলি বলল, “খালু আইছেন! তাড়াতাড়ি তৈরি হইয়া আসেন, নাস্তা করবেন না!” গালিব বলল, “না খালা, আমার সময় নেই, দেরি হয়ে গেছে অনেক ।” বলে ঘরে যেয়ে তৈরি হয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো ।
“আসবো স্যার!” বসের রুমের সামনে এসে বলল গালিব । বস, “হুম আসেন আসেন ।” বললে ভেতরে ঢুকল গালিব । বস জিজ্ঞেস করল, “তা অফিসের কাজ কেমন চলছে?” গালিব বলল, “জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো ।” বস একটু হেসে বলল, “যাক, তাও ভালো । তা আজ তো দেরি করেন নি, আজ এখানে কি কাজ?” গালিব বলল, “স্যার, আমি একটু বিপদে পড়েছি ।” বস জিজ্ঞেস করল, “বিপদ! তাই নাকি!” গালিব বলল, “জি, আসলে আমার টাকার…………।” গালিবের কথা শেষ না করতে দিয়েই অফিসের বস হালকা হেসে বলে উঠলো, “হ্যাঁ বুঝতেই পেরেছিলাম, আপনাদের মত লোকেদেরই তো টাকার সমস্যা হয় । তা বলি কি, গত মাসে আমাদের কোম্পানিরও একটু ক্ষতি হয়েছে । না আপনার জন্য যে তা বলছি না, তবে ক্ষতি হয়েছে । তাই এই মাসে টাকা একটু বেশি ইনভেস্ট করতে হবে বেশি লাভ করতে গেলে । তো বুঝতেই পারছেন, আর যদি পার্সোনালি আমার কাছে টাকা চান, তাহলে আপনি তো জানেনই, আমি আবার টাকা বেশি খরচ করতে ভালোবাসি, মাস শেসে বেশ অল্পই বেচে থাকে হাতে সো বুঝতেই পারছেন!” গালিব কিছু বলতে পারল না । অবশ্য এর পর বলার মত কিছু থাকেও না । বস তখন বলল, “তবে একটা কাজ করতে পারেন ।” গালিব বসে দিকে তাকাল । বস বলল, “আপনি চাইলে ওভার টাইম করতে পারেন । তাতে বেতনটা পঞ্চাশ পারসেন্ট বেশি পাবেন ।” গালিব জিজ্ঞেস করল, “ওভারটাইম, কখন?” বস বলল, “এই এখন যেমন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত করছেন কাজ এরকম তো করবেনই, তার সাথে রাত ৯টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত আরও এক্সট্রা করবেন ।” গালিব একটু ভাবল । কষ্ট হবে, তবে বিনিময়ে পরিবার চালানোর অর্থটা তো পাওয়া যাবে । আর কোন কথা না বলেই গালিব বলল, “আমি কাল থেকেই করতে চাই ওভারটাইম!”

আগামী পর্বেঃ
জাহিদঃ “বুঝলেন গালিব সাহেব, আমার এক চাচাতো ভাই কি যে বিলাসবহুল জীবন যাপন করে । বিলাসিতা সত্ত্বেও জীবনে সুখ কখনও এলো না ।”
গালিবঃ “তাহলে এই বিলাসিতা দিয়ে কি লাভ যেখানে সুখই নেই ।”
……………………………
আরশিঃ “মা আমি জানি, তোমারও আমার মতো বিলাসবহুল জীবন-যাপন করতে ইচ্ছা করে । কিন্তু তোমাকেও বাবা সে জীবন দিতে পারে নি । তুমি বাবার কাছ থেকে ডিভোর্স নিয়ে নাও!”
×
বাবা(পর্ব-১২)

আর কোন কথা না বলেই গালিব বলল, “আমি কাল থেকেই করতে চাই ওভারটাইম!” অফিসের বস তখন বলল, “বাহ! খুব ভালো । তা কাল থেকেই কেন, আজ থেকেই করুন না!” গালিব বলল, “দেখুন, আসলে আজ আমার পারিবারিক একটু সমস্যা আছে । কাল থেকে ওভারটাইম করবো আমি ।” অফিসের বস বলল, “ঠিক আছে ।”
“জ্ঞান ফেরে নি?” আরশির পাশে বসে থাকা অর্কর কানে কথাটা আসতেই পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখল, মা দাঁড়িয়ে । জবাবে বলল, “এসেছিলো ভোরে । তারপর আবার ঘুমিয়েছে । এখনও ঘুম থেকে ওঠে নি ।” পুষ্পিতা, “সর, আমি বসি ।” বলে যে চেয়ারে অর্ক বসে ছিল সেখানে পুষ্পিতা বসলো । অর্ক পাশেই দাঁড়ালো । কিছুক্ষণ পর অর্ক বলল, “আমি এখন আসি তাহলে ।” পুষ্পিতা হালকা রাগ দেখিয়ে বলল, “হ্যাঁ তা-ই যা, বাইরে গিয়ে ফষ্টি কর যা!” অর্ক কিছু বলল না । বেড়িয়ে পড়লো ট্রেনিং এর উদ্দেশ্যে ।
“ও এসেছেন?” নিজের ডেস্কে বসতেই গালিবকে বলল জাহিদ । গালিব বলল, “জি এলাম ।” জাহিদ জিজ্ঞেস করল, “মেয়ের কি অবস্থা?” গালিব বলল, “আছে আর কি, যেরকম দেখে এলেন । তবে আপনি এতো সকালে গিয়েছিলেন যে? হাসপাতাল থেকে অফিস আসতে তো এতো সময়ও লাগে না?” জাহিদ বলল, “আর বলবেন না, সেদিন আপনাদের বাসায় যাবার সময় মোটরসাইকেলে সমস্যা হয়েছিল । ঠিক করিয়েছিলাম, কিন্তু তাও পড়ে বেশ সমস্যা করেছে । তাই একেবারে মোটরসাইকেল দেখিয়ে অফিসে আসবো বলে হাতে সময় নিয়ে বেড়িয়েছিলাম ।” গালিব বলল, “ও আচ্ছা ।” গালিবের অফিস নিয়ে একটু কথা বলা যাক । গালিব সানরাইজ কোম্পানিতে কাজ করে । এই কোম্পানির এটাই প্রধান অফিস নয়, এটি শাখা অফিস । এরই বসের সঙ্গে সকালে এবং সেদিন কথা বলেছিল গালিব যার নাম আকবর আলি । আর গালিব এই কোম্পানির কি লাভ কি লস কিংবা কাজ কেমন চলছে এসব কাজের তত্ত্বাবধানে থাকে । ওর কলিগ জাহিদ আবার বিভিন্ন পোস্টার ডিজাইন, ভিডিও মেকিং ইত্যাদি কাজ করে থাকে । কোম্পানি শুধু যে দেশের তা নয়, ইন্টারন্যাশনাল পর্যায়েও এর ভালো খ্যাতি । তাই দিন রাত চব্বিশ ঘণ্টা কোম্পানির সব কাজের হিসেব রাখতে হয় । সকালে কয়েকজন করে এই কাজ, আবার রাতে কয়েকজন করে । তবে রাতে কাজ করার লোক একটু কম । তাই হয়তো বস আকবর চেয়েছে গালিব যেন ওভারটাইম করে ।
ঘুম থেকে উঠতেই “মা!” বলে ডেকে উঠলো আরশি । পুষ্পিতা মেয়ের কাছে আরেকটু এগিয়ে এলো । মেয়ের হাত ধরে জিজ্ঞেস করল, “কেমন আছিস মা এখন?” আরশি বলল, “ভালো । তুমি?” পুষ্পিতা জবাব দিলো, “তুই ভালো থাকলে আমিও ভালো আছি সবসময় ।” আরশি জিজ্ঞেস করল, “ভাইয়া আসে নি?” পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করল, “কোন ভাইয়া?”
“দুজনের কথাই জিজ্ঞেস করলাম ।”
“এসেছিলো, তোর অর্ক ভাইয়া, ছিলো তো এতক্ষণ, এখন ফষ্টি করতে গেলো, আরজে হবে । আর তোর বড় ভাইয়া তো জানিস, কষ্ট করে পড়াশুনা করে, ভার্সিটি গিয়েছে মনে হয় ।” আরশি জিজ্ঞেস করলো, “আর বাবা?” পুষ্পিতা বলল, “কাজে গেছে । কাজ করবে না?” আরশির হালকা মন খারাপ হয়ে গেলো । আরশির চেহারা দেখে পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “কিরে, কি হয়েছে?” আরশি বলল, “বাবা এমন কেন? আমি অসুস্থ আর বাবার আজ চাকরীতে যাওয়াই লাগবে?” পুষ্পিতা বলল, “কেন যাবে না, না গেলে যে একদিনের বেতন কাটবে, পড়ে খাবি কি?” আরশি বলল, “কি এমন চাকরি করে যে একদিন কাজ না করলে বেতন কেটে নেবে বা কাটলেও আমরা খেতে পারবো না?” পুষ্পিতা বলল, “কি করবি বল । বাঁচতে তো হবে ।” পুষ্পিতা বলল, “না মা, বাচাটা বড় না, আমার বন্ধুরা কি বিলাসবহুল জীবন-যাপন করে । ফেসবুকে নামি-দামি রেস্টুরেন্টে যেয়ে ছবি পোস্ট করে । আমি যেতে পারি না টাকার অভাবে । কেন! কেন আমার বাবার ওদের মত টাকাওয়ালা হতে পারল না?” পুষ্পিতা কিছু বলল না । আরশি বলল, “মা আমি জানি, তোমারও আমার মতো বিলাসবহুল জীবন-যাপন করতে ইচ্ছা করে । কিন্তু তোমাকেও বাবা সে জীবন দিতে পারে নি । না?” পুষ্পিতা বলল, “কি আর করবো । কপালে ছিলো আমার ।” আরশি বলল, “একটা আইডিয়া দিচ্ছি । যদি মেনে চল, আমরা অনেক হ্যাপি থাকবো ।” পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “কি আইডিয়া?” আরশি বলল, “তুমি বাবার কাছ থেকে ডিভোর্স নিয়ে নাও!” পুষ্পিতা চমকে উঠলো । মেয়ে এসব কি বলে!
কাজের ফাকে মোবাইলে ফেসবুক চালাচ্ছিল জাহিদ । এমন সময় কার যেন ছবি দেখে গালিবকে বলল, “বুঝলেন গালিব সাহেব, আমার এক চাচাতো ভাই, ৫টা গার্মেন্টস এর মালিক । কি যে বিলাসবহুল জীবন যাপন করে । এই দেখুন, কক্সবাজার সিগাল হোটেলে গিয়েছে, তাই ছবি দিয়েছে ।” বলে গালিবকে ছবিগুলো দেখাল । গালিব বলল, “বাহ, ভালো তো । আল্লাহ দিয়েছে তাদের এই জীবন । শুক্রিয়া আদায় করা উচিত তাদের আল্লাহ তা’আলাকে ।” জাহিদ বলল, “তারা আল্লাহর শুক্রিয়া আদায় করবে! কি যে বলেন না । জুম্মার নামাজটাও পড়ে নাকি সন্দেহ । তাই তো বিলাসিতা সত্ত্বেও জীবনে সুখ কখনও এলো না । ৩টা বিয়ে করেছে, একটার সাথেও সম্পর্ক টেকে নি । সব বউয়ের সাথেই একটা করে বাচ্চা হয়েছে, বাচ্চাগুলোর ভবিষ্যৎ যে কি হবে আল্লাহই জানেন । ৩ নাম্বার বউয়ের সাথেও নাকি ছাড়াছাড়ি হবার কথা চলছে ।” গালিব বলল, “তাহলে এই বিলাসিতা দিয়ে কি লাভ যেখানে সুখই নেই ।”
“মা বিলাসী জীবন-যাপন না করলে এর সুখ তুমি পাবানা ।” মায়ের কাছে কোন জবাব না পেয়ে বলল আরশি । পুষ্পিতা কিছু বলল না ।

আগামী পর্বেঃ
গালিবঃ “সেটা বড় কথা না, আসলে আজ থেকে ওভারটাইম করবো । অফিসে রাত ৮টা থেকে ২টা পর্যন্ত কাজ করা শুরু করছি কাল থেকে ।”
পুষ্পিতাঃ “সব বুঝেছি! তুমি তো এখন আমি মরলেই খুশি! নতুন বিয়ে করতে পারবে! তাই তো টাকা জমাচ্ছো! বুঝি না আমি! এমনি এমনি এতো বড় হই নি আমি!”
×
বাবা(পর্ব-১৩)

পুষ্পিতা কিছু বলল না । আরশি আবার জিজ্ঞেস করলো, “কিছু বলো!” পুষ্পিতা বলল, “এখন এসব কথা বাদ দে, আগে সুস্থ হয়ে নে, পড়ে এগুলো নিয়ে কথা বলবো ।”
“আসলেই! এই সুখ দিয়ে কি লাভ!” গালিবের কথার জবাবে বলল জাহিদ । গালিব বলল, “তবে কি জানেন তো, মানুষ সুখ ছাড়াই কিন্তু এই বিলাসিতা খুজে বেড়ায় । বিলাসিতা যদি হীরে হয়, সুখ হচ্ছে আলো । আলো না থাকলে হীরে চমকাবে কি করে? তার চেয়ে না হয় রুপার ঝলকানিই ভালো, যেখানে বিলাসিতা কম, সুখ বেশি ।” জাহিদ বলল, “আপনি কথা কিন্তু খুব ভালো বলতে পারেন । যাই হোক, কোম্পানির লোগো নতুন করে ডিজাইন করতে হবে । দেখুন তো এটা বানিয়েছি, কেমন হয়েছে?” গালিব দেখে বলল, “বাহ! দারুন তো, আপনার মাথায় এরকম দারুন সব আইডিয়া কি করে যে আসে!”
ট্রেনিং শেষে সবাই চলে গেলো । অর্ক যে সময় বেরোতে যাবে, এমন সময় ট্রেইনার রাসেল ভাই অর্ককে বলল, “অর্ক একটু দাড়া! তোর সাথে কথা আছে ।” অর্ক রাসেল ভাই এর সামনে এসে দাঁড়ালো । রাসেল ভাই বলল, “শোন, তোর এই কাজে আগ্রহ অনেক, তোর ভয়েসও অনেক জোস, তোর জন্য যা ট্রেনিং হয়েছে তা ইনাফ । তুই এক কাজ কর, রেডিও মাস্তিতে একটা প্রোগ্রামের জন্য আরজে খুজছে । তুই সেখানে জয়েন কর ।” অর্কর ঠোটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো । বলল, “তাই! কবে থেকে?” রাসেল বলল, “তুই যে দিন ফ্রি থাকিস, আমাকে বলিস, আমিই তোকে নিয়ে যাবো । শুধু শিওর জানা তুই রাজি কি না । তাহলে আমি উনাদের জানিয়ে দেবো আর খোঁজ না করতে ।” অর্ক বলল, “রাজি না মানে! আমি এক পায়ে খাঁড়া!” রাসেল ভাই বলল, “ঠিক আছে । তাহলে ফ্রি টাইমে জানাইস । বেতন হয়তো দশ হাজার মতো পাবি মাসে । তবে প্রোগ্রাম যদি হিট হয়, তাহলে বেতন বাড়বে ।” অর্ক বলল, “রেডিও তো এখন কেউ শোনে না বললেই চলে । তবে ব্যাপার না, প্রথম চাকরীতেই ১০হাজার! এও কম কথা না!” রাসেল ভাই বলল, “কে বলেছে শোনে না? শোনে । আর তাছাড়াও এখন তো রেডিওগুলি ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করে, সেখান থেকেও ভাইরাল হয়ে যেয়ে পারিস । বলা যায় না । এনিওয়ে, আজকে পারবি?” অর্কর একটু মন খারাপ হয়ে গেলো । তারপরও হালকা হাসি ঠোটের কোণে রাখার চেষ্টা করে বলল, “আজ বাসায় একটু প্রবলেম আছে । কাল যাই?” রাসেল ভাই বলল, “হ্যাঁ, অবশ্যই । কাল আমিও ফ্রি আছি বেশ । কাল দেখা হবে তাহলে । আল্লাহ হাফেজ!” অর্কও “আল্লাহ হাফেজ” বলে বেড়িয়ে এলো । দুপুরে আরশির অবস্থা মোটামুটি ভালো হলে ডিসচার্জ করে দেয়া হয় আরশিকে । বাসায় এসে রেস্ট নিচ্ছিল । পাশে বসে মা । খাইয়ে দিচ্ছে । অর্ক বাসায় ফিরল । অনিক ফিরবে সন্ধ্যার আগে । বাসার সবাই জানে ক্লাস শেষে ল্যাবের কিছু কাজ করে তারপর ফিরবে, কিন্তু আসলে ও পপির সাথে সময় কাটিয়ে তারপর ফেরে । অর্ককে ঘরে ঢুকতে দেখে পুষ্পিতা একটা কাগজ নিয়ে যেয়ে অর্কর হাতে দিয়ে বলল, “শোন, ডিসচার্জ করার সময় এই কয়েকটা ওষুধ ডাক্তার এক্সট্রা দিয়েছে । আমি কেনার সময় পাই নি । তুই একটু কিনে আনতে পারবি?” অর্ক বলল, “আচ্ছা, আমি নিয়ে আসছি ।” বলে আবার বেড়িয়ে গেলো অর্ক ।
বিকেলের দিকের কথা । গালিব নিজের ঘরে কি যেন খুঁজছিল । পুষ্পিতা তা দেখে জিজ্ঞেস করলো, “কি খুঁজছ তুমি?” গালিব বলল, “আমার চশমাটা পাচ্ছি না ।” পুষ্পিতা বলল, “কেন, চশমা তো তুমি সবসময় খাটের পাশের টেবিলেই রাখো ।” গালিব বলল, “ওটা না, আরেকটা । ওটা আজকে ভেঙ্গে গেছে ।” পুষ্পিতা বলল, “ও, এক্সট্রাটাও তো ভেঙ্গেছিলে, মনে নেই?” গালিব পুষ্পিতার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “এক্সট্রাটা আবার কবে ভাংলাম?” পুষ্পিতা বলল, “মনে নেই, শেষ বছর তোমার ভাই এসেছিলো, তার ছোট মেয়েটা খেলার ছলে ভেঙ্গে ফেলল?” গালিব মাথায় হাত রেখে বলল, “ওহহো! ভুলেই গিয়েছিলাম ।” পুষ্পিতা বলল, “পড়ই তো কমদামী চশমা । একটা কিনলেই হয় ।” গালিব বলল, “সেটা বড় কথা না, আসলে আজ থেকে ওভারটাইম করবো । অফিসে রাত ৮টা থেকে ২টা পর্যন্ত কাজ করা শুরু করছি কাল থেকে ।” পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “কি? ওভারটাইম! কেন?” গালিব বলল, “দ্যাখো, পরিবারের অনেক টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে । এখন সেগুলোর জন্য টাকার দরকার । তাই আমি এটা করছি যেন বেশি বেতন পাই এবং পড়ে কোন অভাবের মুখোমুখি হতে না হয় ।” পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “বাহ! বা বা বা বাহ! খুব ভালো । পরিবারকে তো সময়ই দাও না, এখন আবার টাকার জন্য ওভারটাইম করতে যাচ্ছো । ভালো তো, ভালো না । আমার মুখ যে তোমায় আর দেখতে হবে না ।” গালিব ভ্রু কুঁচকে বলল, “এটা কি ধরণের কথা! তুমি বুঝতে পারছ না!” পুষ্পিতা বলল, “সব বুঝেছি! তুমি তো এখন আমি মরলেই খুশি! নতুন বিয়ে করতে পারবে! তাই তো টাকা জমাচ্ছো! বুঝি না আমি! এমনি এমনি এতো বড় হই নি আমি!” বলে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো পুষ্পিতা । গালিব ওকে থামাতে গেলেও পারল না । তারপর নিজেই নিজেকে বলল, “উফ! মেয়ে মানুশের এই একটাই সমস্যা, কোন কিছু পজিটিভলি যদি নেয় । যা করছি, সব তো ওদের জন্যই করছি আমি! একবার যদি ওরা বুঝত!” বলতে বলতে খাটের ওপর বসে পড়লো গালিব ।

আগামী পর্বেঃ
অনিক বলল, “বাবা, আমার হাজার তিন টাকা লাগবে ।” গালিব বলল, “এই গত সপ্তাহেও না হাজার দুই টাকা নিলি? কি যেন বই কেনা লাগবে বলে?” অনিক বলল, “হ্যাঁ, তো সেটা তো খরচ করে ফেলেছি না? বইও তো কিনেছি, দেখবা? আনবো?” গালিব বলল, “আরে না রে পাগল, সেটা তো বুঝেছি ।” অনিক মনে মনে বলল, “যাক বাবা! বাচলাম! সেই টাকা দিয়ে তো বই কিনিই নি । সেদিনের টাকা আর আজকের টাকা দিয়ে আমার অন্য একটা কাজ করতে হবে!”
×
বাবা(পর্ব-১৪)

বলতে বলতে খাটের ওপর বসে পড়লো গালিব ।
পরদিন সকালের কথা । রাতের বাসি রুটি খেয়ে অফিসের পথে রওনা হচ্ছিল গালিব । “বাবা!” গালিব দরজা দিয়ে বেরোতে যাচ্ছিল এমন সময় ছেলের ডাক শুনের পেছন ফিরে তাকাল গালিব । অনিক দাঁড়িয়ে । গালিবের কাছে এলো অনিক । গালিব জানতে চাইলো, “হ্যাঁ, বল ।” অনিক বলল, “বাবা, আমার হাজার তিন টাকা লাগবে ।” গালিব ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, “হাজার তিন! এতো টাকা দিয়ে কি করবি?” অনিক বিরক্ত হয়ে বলল, “উফফ বাবা! টাকা চাইলে তুমি এতো কৈফিয়ত চাও কেন বলতো?” গালিব ছেলে যেন রাগ না করে তাই হালকা হেসে বলল, “আরে না না, এই গত সপ্তাহেও না হাজার দুই টাকা নিলি? কি যেন বই কেনা লাগবে বলে?” অনিক বলল, “হ্যাঁ, তো সেটা তো খরচ করে ফেলেছি না? বইও তো কিনেছি, দেখবা? আনবো?” গালিব বলল, “আরে না রে পাগল, সেটা তো বুঝেছি ।” অনিক মনে মনে বলল, “যাক বাবা! বাচলাম! সেই টাকা দিয়ে তো বই কিনিই নি । সেদিনের টাকা আর আজকের টাকা দিয়ে আমার অন্য একটা কাজ করতে হবে!” গালিব জিজ্ঞেস করলো, “কি হল, কি ভাবছিস?” অনিক বলল, “না, কিছু না । ওই ভার্সিটির রিসার্চের কিছু কাজে টাকা লাগবে । সবাই তো ৫হাজার করে দিচ্ছে, আমি তো তোমার কষ্ট বলে ২হাজার কমিয়ে বলেছি ।” গালিব পকেট থেকে টাকা বের করতে করতে বলল, “সেকি! আমাকে বলবি না! আর পড়াশুনার ব্যাপারে কখনও টাকা নিয়ে চিন্তা করবি না ।” বলে পকেট থেকে পাচ হাজার টাকা বের করে অনিকের হাতে দিয়ে বলল, “নে, তুইও পাচ হাজারই দে । এরপর থেকে আর কখনও এরকম করবি না ।” অনিক খুশি হয়ে টাকা নিয়ে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ বাবা ।” গালিব হালকা হেসে বলল, “ওয়েলকাম ।” তারপর বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলো অফিসের উদ্দেশ্যে । অনিকের মোবাইলে কল এলো তখন । পপির কল । কল ধরে বলল, “হ্যাঁ বেবি!.........হ্যাঁ, তোমাকে তো রাত ঠিক ১২টায় উইশ করেছিলাম, দ্যাখো নি?...............অবশ্যই! তোমার বার্থডে আমি অনেক খরচা করে সেলিব্রেশন করবো!............হুম । ঠিক আছে বেবি, তাহলে পড়ে কথা হবে, আমি দেখি, কোন রেস্টুরেন্টে তোমার বার্থডে সেলিব্রেট করা যায়!...............ওকে বেবি, লাভ ইউ!” বলে কল কেটে নিজের রুমে চলে গেলো অনিক ।
“আরে জাহিদ ভাই! কি খবর?” গ্যারেজে মোটরসাইকেল রাখতে গিয়ে জাহিদ এলে তাকে বলল গালিব । জাহিদ জবাবে বলল, “এইতো আলহামদুলিল্লাহ ভালো, আপনি কেমন আছেন?” জাহিদ বলল, “জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো । চলুন, একসাথেই যাই ।” গালিব আর জাহিদ মোটরসাইকেল রেখে অফিসের দিকে যেতে লাগলো । “মেয়ের কি অবস্থা এখন?” জিজ্ঞেস করলো জাহিদ । জবাবে গালিব বলল, “এইতো আলহামদুলিল্লাহ ভালো । আপনার বাসার সবাই ভালো আছে তো?” জাহিদ বলল, “এইতো, আছে আলহামদুলিল্লাহ ভালো, শুধু ছোট ছেলেটার একটু জর এসেছে ।” গালিব বলল, “আল্লাহ! সুস্থ হয়ে যাক দোয়া করি ।” জাহিদ বলল, “হয়ে যাবে সুস্থ ইনশাআল্লাহ । সিজনাল জর তো ।” গালিব বলল, “হ্যাঁ, তা ঠিক বলেছেন ।” জাহিদ জিজ্ঞেস করলো, “ভালো কথা, শুনলাম আজ থেকে নাকি আপনি ওভারটাইম করছেন?” গালিব বলল, “হ্যাঁ । আসলে আপনি তো জানেনই, টাকার এমনিতেই সমস্যা, তার ওপর গতকাল মেয়েটার পেছনেও টাকা খরচ হল । এদিকে বড় ছেলের পড়াশুনার খরচ তো আছেই । এই যে আসার আগেও হাজার তিন টাকা নিলো কি রিসার্চের কাজে ।” জাহিদ বলল, “ও । ছেলেতো মেধাবী আপনার!” গালিব বলল, “হ্যাঁ, তা ঠিক বলেছেন । কিন্তু………।” বলতে গিয়ে থেমে গেলো গালিব । সেদিনের কথা মনে পড়লো । যেদিন অনিক গালিবের মোটরসাইকেল কায়দা করে নিয়ে গিয়েছিলো । গালিব হয়তো বলতে চেয়েছিলো ছেলে মানুষ হয় নি, কিন্তু আর বলল না । জাহিদ জিজ্ঞেস করলো, “কিন্তু কি?” গালিব হাসিমুখে বলল, “না কিছু না ।” তারপর দুজনের মাঝে আর কোন কথা হল না ।
ডাইনিং টেবিলে বসে নাস্তা করছিলো পুষ্পিতা আর আরশি । এমন সময় অর্ক এসে আরশিকে “কিরে, কেমন আছিস এখন?” বলতে বলতে চেয়ারে বসলো । আরশি বলল, “ভালো ।” অর্ক ইয়ার্কির ছলে জিজ্ঞেস করলো, “তাহলে স্কুলে যাস নি যে, দাড়া! তোর টিচারদের বলে দেবো তুই ক্লাস ফাকি দিচ্ছিস!” আরশি একটু বিরক্ত হয়ে বলল, “তোর সমস্যা কি তাতে! তুই তো ডাব্বা মেরেছিস পরীক্ষায় ।” অর্ক বলল, “আরে! এভাবে নিচ্ছিস কেন? আমি তো ইয়ার্কির ছলে বললাম!” আরশি বলল, “সবসময় সব ইয়ারকি কিন্তু ভালো লাগে না!” অর্ক বলল, “তা কেন লাগবে, তোর তো ভাল্লাগে বিটিএস!” আরশি বলল, “ওরা অন্তত তোর চেয়ে হ্যান্ডসাম আছে!” অর্ক আবার ইয়ার্কির ছলে বলল, “হ্যাঁ, তোর মতই কিউট তো!” বলে হেসে উঠলো । পুষ্পিতা বিরক্ত হয়ে বলল, “আরে থামবি তোরা! সাত সকালেই শুরু করে দিয়েছে ঝগড়াঝাটি!” অর্ক আর আরশি দুজন দুজনকে ভেংচি কেটে চুপ করে খেতে লাগলো ।

আগামী পর্বেঃ
“আরে দোস্ত কিছু তো সাজেস্ট কর! অন্তত বড় বড় মলে তো ওর বার্থডে সেলিব্রেশন করা সম্ভব না!” রিপন বলল, “সেইদিন গুলিস্তানে একটা কাগজ পাইসিলাম, একটা রেস্টুরেন্টে, তারা থার্টি পারসেন্ট ছাড় দেবে পুরো বিলের ওপর!” অনিক জিজ্ঞেস করলো, “তাই! নাম কি রে রেস্টুরেন্টের?” “ফুডপ্লাস!”
আকবর বলল, “আমরা একটা রেস্টুরেন্টের ফেস্টের গিফটের জন্য আমাদের কোম্পানির থেকে স্পন্সর করতে চাচ্ছি । তো সেজন্য আমি সন্ধ্যা ৬টার দিকে যাবো সেই রেস্টুরেন্টে । তো আমি চাই আপনিও আমার সাথে সেখানে যান ।” গালিব বলল, “কি নাম রেস্টুরেন্টের?” আকবর বলল, “ফুডপ্লাস ।”
×
বাবা(পর্ব-১৫)

অর্ক আর আরশি দুজন দুজনকে ভেংচি কেটে চুপ করে খেতে লাগলো ।
দুপুর সাড়ে ১২টা মতো হবে । গালিব তখন মনিটরে কি সব দেখে খাতায় নোট করছিলো, এমন সময় বস অর্থাৎ আকবরের যে পার্সোনাল অফিস বয়, সে এসে গালিবকে ডাকলো “স্যার!” গালিব লিখতে লিখতেই জিজ্ঞেস করলো, “হুম বলো ।” অফিস বয় বলল, “বড় স্যার আপনেরে ডাকতাছে । কি জানি কইবো ।” গালিব বলল, “আচ্ছা, আমি যাচ্ছি ।” গালিব আরও কিছুক্ষণ নোট করে উঠলো । জাহিদ জিজ্ঞেস করলো, “বস এখন আপনাকে কি বলতে পারে?” গালিব বলল, “কি জানি, দেখি কি বলে ।” বলে গালিব বসের রুমের দিকে রওনা হল ।
এদিকে বাসায় ছাদে দাঁড়িয়ে অনিক ওর বন্ধু রিপনের সাথে কথা বলছে । “আরে দোস্ত কিছু তো সাজেস্ট কর! অন্তত বড় বড় মলে তো ওর বার্থডে সেলিব্রেশন করা সম্ভব না!” রিপন বলল, “আচ্ছা ভাবতে দে । দাড়া ।” অনিক বলল, “এমন কিছু একটা কর যেন আমি সাত ৫ হাজারের মধ্যে সামলাইতে পারি আবার রেস্টুরেন্ট যেন ভালো হয় আর গার্লফ্রেন্ডও যেন খুশি হয় ।” রিপন বলল, “এই জন্য আমি এখনও রিলেশনে যাই নাই । একে এই গার্লফ্রেন্ড খালি বিলাসিতা চায়! আজিব! বুঝেও না আমরা কামাই করি না!” অনিক বলল, “হইছে থাম! এখন বল কিভাবে কি করবো ।” রিপন বলল, “এই দাড়া! সেইদিন গুলিস্তানে একটা কাগজ পাইসিলাম, একটা রেস্টুরেন্টে কি জানি ফেস্ট হবে, তার প্রোমোশনের জন্য ওরা ফেস্টের আগের সপ্তাহ মানে সেটা বোধ হয় গত পরশু থেকে শুরু হইছে, তারা থার্টি পারসেন্ট ছাড় দেবে পুরো বিলের ওপর!” অনিক খুশি হয়ে গেলো । জিজ্ঞেস করলো, “তাই! নাম কি রে রেস্টুরেন্টের?”
“আসবো স্যার?” আকবরের রুমের সামনে এসে বলল গালিব । আকবর বলল, “জি আসুন আসুন ।” গালিব ভেতরে গেলো । আকবর বসতে বললে গালিব বসলো । আকবর তখন বলল, “আপনাকে যে কারণে ডাকা, আসলে আমরা একটা রেস্টুরেন্টের ফেস্টের গিফটের জন্য আমাদের কোম্পানির থেকে স্পন্সর করতে চাচ্ছি । তো সেজন্য আমি সন্ধ্যা ৬টার দিকে যাবো সেই রেস্টুরেন্টে । বিভিন্ন ক্ষেত্রে হিসেবের দরকার হবে, বা বিভিন্ন বিষয় তদারকিও করতে হবে, তো আমি চাই আপনিও আমার সাথে সেখানে যান ।” গালিব বলল, “আমি? কিন্তু আমি যে আজ থেকে ওভারটাইম করছি?” আকবর বলল, “দেখুন, আপনি যে কাজ করেন সে কাজের জন্যই তো নিয়ে যাচ্ছি, আর তাছা আপনি তো ৮টা থেকে আবার অফিস করবেন, কাজ আমাদের আধ-এক ঘণ্টার মধ্যেই হয়ে যাবে । তবে আরেকটা কারণও আছে, রেস্টুরেন্টটা আপনার বাসার কাছেই আছে ।” গালিব বলল, “তাহলে তো ভালোই । কি নাম রেস্টুরেন্টের?” আকবর বলল, “ফুডপ্লাস ।”
“ফুডপ্লাস নাম দোস্ত! বাসার কাছেও আছে, ভালোই হাইফাই!” অনিকের প্রশ্নের জবাবে বলল রিপন । অনিক বলল, “যাক, তাহলে ফাইনাল! আজকে সন্ধ্যায় যাবো তাহলে!” রিপন বলল, “কিরে, আমরা যাবো না?” অনিক বলল, “হুট! বফ-গফের পার্সোনাল সময়ের মধ্যে অন্যদের আসতে হয় না জানিস না! ট্রিট দেবো যাহ!” রিপন বলল, “মনে থাকে যেন! রেকর্ড করা থাকলো ফোন কলটা!” অনিক বলল, “আচ্ছা বাবা! পাবি পাবি!” বলে ফোন রাখল অনিক ।
“উম… এরকম নাম তো কখনও শুনিই নি! তবে থাকতে পারে, ওসব রেস্টুরেন্টে মেস্টুরেন্টে যাই না তো, ঘর থাকতে ওসবের খাবার ভাল্লাগে না ।” আকবরকে বলল গালিব । আকবর বলল, “আমি খুব ভালো করেই জানি আপনি কেন যান না ।” গালিব জানতে চাইলো, “কেন স্যার?” আকবর হালকা হেসে বলল, “থাক সেসব, বাদ দিন । আজ আমি আপনাকে রেস্টুরেন্টের খাবার খাওয়াবো । দেখি আপনার কেমন লাগে ।” গালিব কেমন ইতস্তত বোধ করলো । কি বলবে বুঝতে পারল না । আকবর বলল, “আজকে তাড়াতাড়িই বাসায় যেয়েন ।” ভালো করে রেডি হয়ে তারপর আসবেন । গালিব, “আচ্ছা স্যার!” বলল । আকবর বলল, “ঠিক আছে, আসুন তাহলে ।” “আচ্ছা স্যার, আসসালামু আলাইকুম ।” বলে উঠে যেতে লাগলো গালিব । আকবর গালিবের সালামের জবাব দিলো ।
“আসবো স্যার?” রেডিও মাস্তির অফিসে যেয়ে এই রেডিওর মালিকের রুমে এসে বলল রাসেল । অর্কর ট্রেইনার । সাথে অর্কও ছিল । এই রেডিওর মালিক রাসেলেরই এক পরিচিত বড় ভাই নাম ইনান । ইনান বলল, “আরে রাসেল! আয় আয়! তুই আমাকে স্যার বলে ডাকা শুরু করলি কবে থেকে!” রাসেল অর্ককে নিয়ে ভেতরে ঢুকে বলল, “না, ভাই, তুমি এখন কাজে, তাই প্রফেশনালিটি মেইনটেইন করলাম আরকি ।” ইনান হো হো করে অট্টহাসি হেসে উঠলো । তারপর অর্ক আর রাসেলকে বসতে বলে বলল, “এখানে কোন প্রফেশনালিটির কিছু নাই, কোন প্যারা নাই, চিল । তুই নির্দ্বিধায় আমাকে ভাই এবং তুমি করে ডাকতে পারিস । এবার বল, চা না কফি?” রাসেল বলল, “না ভাই, এখন কিছু খাবো না । একটু দরকারে এসেছি ।” ইনান জিজ্ঞেস করলো, “হুম অবশ্যই বল?” রাসেল বলল, “ওই যে তুমি একবার বলসিলা না, একটা প্রোগ্রামের জন্য আরজে খুজতেছো?” ইনান বলল, “হ্যাঁ, গতকাল তো না-ও করে দিলি আর না খুঁজতে । তা এই কি সে?” শেষটায় অর্ককে ইশারা করে বলল ইনান ।

আগামী পর্বেঃ
“তো আমি তোমার ব্যাপারে বিবেচনা করে দেখলাম………।” বলে থেমে গেলো ইনান । অর্কর বুক কাপছে ধুক ধুক আওয়াজে । রাসেল জিজ্ঞেস করলো, “ভাই, কি ভেবে দেখলেন?” ইনান বলল, “তোমাকে এখন নেয়া উচিত হবে না ।” বেশ ভেঙ্গে পড়লো অর্ক । তারপর ইনান রাসেলকে উদ্দেশ্য করে বলল, “রাসেল, তোমার কাছে এটা আমি আশা করিনি ।”
×
বাবা(পর্ব-১৬)

শেষটায় অর্ককে ইশারা করে বলল ইনান । রাসেল বলল, “জি ভাই, ও আমার ট্রেনিং সেন্টারে পড়ার চান্স পেয়েছিলো । ওই তো, আপনাদের এই রেডিও মাস্তির ফ্রাইডে নাইট প্রোগ্রামে যে লাইভে কম্পিটিশনটা হতো সেটার মাধ্যমে ।” ইনান ভালো করে পরোখ করে দেখতে লাগলো অর্ককে । তারপর হুট করে বলে উঠলো, “তোমার প্যান্ট ছেঁড়া ।” অর্ক প্যান্টের দিকে তাকাল । কই, ছেঁড়া নেই তো । ইনান হালকা হেসে বলল, “মজা করলাম । ঠিক এভাবে হুট হাট কথার সময় কি জবাব তুমি আমাকে দাও, সেটা আমি দেখতে চাই । ধরো আমরা অন এয়ারে আছি, আর প্রোগ্রাম হচ্ছে একটা ।” অর্ক বলল, “আমি প্রস্তুত ।”
“তোমার নাম?” জিজ্ঞেস করলো ইনান ।
“অর্ক । অর্ক হাসান ।” বলল অর্ক ।
“আজকের এই প্রোগ্রামে এসে কেমন লাগছে?”
“যতোটা ভালো ভেবেছিলাম, তার চাইতেও বেশি ।”
“গুড । তো আমরা শুনেছি তুমি নাকি খুব ভালো গান গাইতে পারো?”
“টুক টাক অবসরে গান গাই, তবে আহামরি ভালো গাই যে এমনও না ।”
“তোমার গার্লফ্রেন্ড আছে।?”
“না ।”
“কেন?”
“আমি মনে করি সেটা আমার পার্সোনাল ব্যাপার, তবে তাও যদি জানতে চান এটুকুই বলবো, বাবার পকেটের টাকায় অন্যকে খাওয়ানো পছন্দ না আমার ।”
“যা বলার তা তো বলেই দিলে, পারসোনালিটির কি রইলো তাহলে?”
“টিজার টা দেখিয়েছি, মুভি বলাটা পসিবল না ।”
একটানা লোকটা অর্ককে প্রশ্ন করেই গেলো, অর্কও সেই সাথে জবাব দিয়েই গেলো । একটুও থামল না এবং একেকটা শব্দ চয়নও ছিল অসাধারন । এই মুহূর্তে এসে ইনান নিজেই থেমে গেলো । আর কি প্রশ্ন করবে খুজে পেল না । তারপর অর্ককে বলল, “ঠিক আছে, এবার তুমি আমাকে প্রশ্ন করবে, আর আমি জবাব দেবো । দেখি, তুমি আমাকে আটকাতে পারো কি না ।” অর্ক বলল, “আমি প্রস্তুত ।”
“আসসালামু আলাইকুম, শুভ সকাল ।” বলল অর্ক ।
“ওয়ালাইকুমুস সালাম, শুভ সকাল ।” জবাব দিলো ইনান ।
“শীতকালের এই শেষ হবার মুহূর্তে বসন্তের আগমনী বার্তার কাছাকাছি এই সময়ে এই অনুষ্ঠানে এসে এখন আপনার কেমন লাগছে ।”
“ভালো লাগছিল কিন্তু আরও ভালো লাগলো তোমার এই অসাধারণ শব্দচয়নের মাধ্যমে ।”
“ধন্যবাদ, তবে আপনার শব্দচয়নও প্রসংসার দাবিদার । আমরা শুনেছি আপনি এই রেডিও মাস্তির হেড । আপনি কতবছর ধরে এখানে কাজ করছেন?”
“সেটা প্রায় বছর তিন হবে ।”
“শুনেছি আপনি নাকি অনেক আগে অন্য এক রেডিও স্টেশনে আরজে ছিলেন, তো আরজে হবার শখ কি ছোটবেলা থেকেই নাকি হুট করে আসা?” “দুটোর একটাও নয় । আসলে আমার কোথাও চাকরি হচ্ছিলো না সে সময়, তখন আমি সিদ্ধান্ত নেই আমি যদি আরজে হতে পারি, তাহলে আমার পপুলারিটি বাড়তে পারে এবং সেই সাথে আমার কথা বলার দক্ষতাও বাড়তে পারে যা বিভিন্ন উপস্থাপনার কাজে আমাকে সহায়তা করবে । কিন্তু ভাগ্যের জোড়ে আমি একটা রেডিওর হেডই হয়ে গেলাম ।”
“ওয়াও! আজ অনেক দর্শক আপনাকে শুনছেন আপনার এই হেরে না যেয়ে অন্য কিছু করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার এই ঘটনা অনেকের জীবনে প্রভাব ফেলবে হয়তো । তাদেরকে পথ হারিয়ে গেলে নতুন বেড়িয়ে আসার অন্য পথ খুজে বের করার চেষ্টা করতে সাহায্য করবে ।”
একটানা প্রশ্ন করলো অর্ক, সাথে সাথে জবাবও দিলো ইনান বেশ দক্ষতার সাথে । তারও যে কথা বলার দারুণ স্কিল আছে, সেটা অর্ক বুঝল । ইনান বলেছিল অর্ক তাকে আটকাতে পারো কিনা, কিন্তু ইনান এখানেই থামিয়ে দিলো অর্ককে । তারপর কিছুক্ষণ কি যেন ভাবল । তারপর বলল, “তো আমি তোমার ব্যাপারে বিবেচনা করে দেখলাম………।” বলে থেমে গেলো ইনান । অর্কর বুক কাপছে ধুক ধুক আওয়াজে । রাসেল জিজ্ঞেস করলো, “ভাই, কি ভেবে দেখলেন?” ইনান বলল, “তোমাকে এখন নেয়া উচিত হবে না ।” বেশ ভেঙ্গে পড়লো অর্ক । তারপর ইনান রাসেলকে উদ্দেশ্য করে বলল, “রাসেল, তোমার কাছে এটা আমি আশা করিনি ।” রাসেল জিজ্ঞেস করলো, “কেন ভাই?” ইনান বলল, “আরে এরে তো আরও আগে আনা উচিৎ ছিল! এতো জোস কথা বলতে পারে! এক জায়গায়ও থামে নাই, আর উচ্চারণ তো মাশাআল্লাহ! এরে তো আরও আগে নেয়া উচিত ছিল!” তারপর একটু থেমে হালকা হেসে ইনান বলল, “সরি আমি একটু ভুল বলে ফেলসি, এখন নেয়া উচিৎ হবে না বলে, জাস্ট হালকা সাসপেন্স ক্রিয়েট করার জন্য । ইউ আর অলওয়েজ ওয়েলকাম টু আওয়ার রেডিও!” অর্ক বেশ খুশি হয়ে গেলো । বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ স্যার!” ইনান বলল, “আরে কিয়ের স্যার, আমারেও তুমি ইনানের মতো ভাই ডাইকো ।” অর্ক হালকা হাসলো । রাসেল বলল, “দেখছো ভাই! আর তুমি তো আমারে পচাইতে নিছিলা এখনই ।” ইনান বলল, “আচ্ছা, এখন প্রোগ্রামের ব্যাপারে কথা বলি । আমি একটা প্রোগ্রামের কথা ভাবসি, যেটা প্রতি বুধবার ও শুক্রবার রাত ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত চালানোর ইচ্ছা আছে । নাম হবে প্যারা নাই চিল । আর প্রোগ্রামের বিষয় হবে কেউ ডিপ্রেসড থাকলে সে কল করবে, এবং তার ডিপ্রেশনের কারণ শোনাবে । তোমার দায়িত্ব তার ডিপ্রেশন ভেঙ্গে দেয়া । পারবে?” অর্ক বলল, “জি ভাই! পারবো!” ইনান বলল, “সাব্বাস । তাহলে অ্যাডের জন্য তোমার ভয়েস আর দিয়ে যাও । স্ক্রিপ্ট তৈরি আছে ।” বলে রাসেলকে বলল, “তুই ওকে রেকর্ডিং স্টুডিওতে নিয়া যা, ওখানে সামিকে সব বলা আছে । ওর কাছেই স্ক্রিপ্ট আছে ।” রাসেল “আচ্ছা” বলে অর্ককে নিয়ে ইনানের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো রেকর্ডিং স্টুডিওতে । সেখানের দায়িত্বে থাকা সামির কাছ থেকে স্ক্রিপ্ট নিয়ে অ্যাডের বিজ্ঞাপনের জন্য অর্কর প্রয়োজনীয় অংশ রেকর্ড করে এলো ।

আগামী পর্বেঃ
জয়িতা বলল, “সরি রে, বাসায় যাওয়া হবে না । সন্ধ্যায় বাস, তখন আবার ফিরে যাবো । কিন্তু আম্মু আন্টির সাথে দেখা করতে চাইছে খুব!” আরশি বলল, “সন্ধ্যায়ই চলে যাবি, দেখা আর করবি কি ।” জয়িতা বলল, “আরে শোন, বাসের টিকেট যেখানে কেটেছি, তার পাশেই একটা রেস্টুরেন্ট আছে, ওখানে আয় বিকেলে, বাস আমাদের ৮টায় । তার আগে যতক্ষণ কথা বলা যায় বলবো!” আরশি জিজ্ঞেস করলো, “আমি তো শিওর আম্মুকে নিয়ে যাবো । রেস্টুরেন্টের নাম বল ।” জয়িতা বলল, “আরে, ফুডপ্লাস রেস্টুরেন্ট চিনিস না, ওটায় ।”
×
বাবা(পর্ব-১৭)

সেখানের দায়িত্বে থাকা সামির কাছ থেকে স্ক্রিপ্ট নিয়ে অ্যাডের বিজ্ঞাপনের জন্য অর্কর প্রয়োজনীয় অংশ রেকর্ড করে এলো ।
নিজের রুমে শুয়ে ছিল আরশি । কাগজ কেটে কি সব বানাচ্ছিলো । এমন সময় ওর মোবাইলে একটা কল এলো । নাম লেখা উঠলো, জয়িতা । জয়িতা আরশির বেশ পুরনো বন্ধু বছর ৩ হল এলাকা থেকে চলে গেছে । ওর পরিবারের সাথে জয়িতাদের পরিবারের বেশ খাতির ছিল । বিশেষ করে আরশির সাথে জয়িতার আর আরশির মা পুষ্পিতার সাথে জয়িতার মা-র । আগে তো এই জয়িতার মা, পাশের ময়না ভাবি আর পুষ্পিতা বেশ জমিয়ে আড্ডা দিতো । আরশি কল ধরে বলল, “হ্যালো জয়িতা, কেমন আছিস?” ফোনের ওপাশ থেকে আওয়াজ এলো, “এইতো, আলহামদুলিল্লাহ ভালো । বলতো আমি কোথায়?” আরশি জিজ্ঞেস করলো, “কোথায়?” “আরে আমি পল্লবপুরে!” আরশিরা যে এলাকায় থাকে তার নাম পল্লবপুর । আরশি খুশিতে উৎসাহের সাথে বলল, “তাই! কোথায় উঠেছিস?” জয়িতা বলল, “আরে, এখানে আমার একটা মামা ছিল না, উনার বাসায় । আমার সাথে আম্মুও এসছে ।” আরশি বলল, “তাই! আমাদের বাসায় কখন আসতেছিস বল!” জয়িতা বলল, “সরি রে, বাসায় যাওয়া হবে না । সন্ধ্যায় বাস, তখন আবার ফিরে যাবো । কিন্তু আম্মু আন্টির সাথে দেখা করতে চাইছে খুব!” আরশি বলল, “সন্ধ্যায়ই চলে যাবি, দেখা আর করবি কি ।” জয়িতা বলল, “আরে শোন, বাসের টিকেট যেখানে কেটেছি, তার পাশেই একটা রেস্টুরেন্ট আছে, ওখানে আয় বিকেলে, বাস আমাদের ৮টায় । তার আগে যতক্ষণ কথা বলা যায় বলবো!” আরশি জিজ্ঞেস করলো, “আমি তো শিওর আম্মুকে নিয়ে যাবো । রেস্টুরেন্টের নাম বল ।” জয়িতা বলল, “আরে, ফুডপ্লাস রেস্টুরেন্ট চিনিস না, ওটায় ।” আরশি বলল, “ঠিক আছে, আমরা সন্ধ্যা ৬টার দিকে যাবো সেখানে ।” তারপর আরও কিছুক্ষণ কথা বলে আরশি মা-কে কথাটা বলে বাইরের রুমে গেলো । সে সময় বেশ তৈরি হয়ে অনিক বেরোচ্ছিল তার বেবি পপির বার্থডে সেলিব্রেট করতে । তবে বাড়ির লোককে তো সেটা বলে যাবে না, তাই পুষ্পিতা যখন জিজ্ঞেস করলো, “কিরে কোথায় যাচ্ছিস?” তখন অনিক জবাব দিলো, “মা, ভার্সিটিতে আজকে প্রেজেন্টেশন আছে ।” পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “তো ফর্মাল ড্রেসে যাবি না, ক্যাজুয়াল পোশাকে কেন?” অনিক জবাব দিলো, “মা ওই জামাটা ইস্ত্রি করতে দিয়েছিলাম, দোকান থেকে নিয়ে যাবো ।” পুষ্পিতা আবার জিজ্ঞেস করলো, “দুপুরে খেয়ে যাবি না?” “না মা, ওখানে লাঞ্চ আছে!” বলতে বলতে সিড়ি দিয়ে নেমে গেলো অনিক । আরশি তখন মায়ের কাছ এসে বলল, “মা জানো! জয়িতা আর ওর মা এসেছে!” পুষ্পিতাও কথা শুনে বেশ খুশি হয়ে উঠলো । বলল, “তাই! কোথায় এসেছে?” আরশি বলল, “মা ওর যে মামা ছিল তার বাসায় ।” পুষ্পিতা বলল, “তো বাসায় আসতে বল!” আরশি বলল, “বললাম তো, ও বলল সন্ধ্যায়েই নাকি চলে যাবে । আর বলেছে, ফুডপ্লাস নামে রেস্টুরেন্টে দেখা করতে ।” পুষ্পিতা বলল, “আচ্ছা দাড়া, আমি ওর মাকে কল করছি ।” বলে মোবাইল হাতে নিয়ে জয়িতার মায়ের সাথে কথা বলতে লাগলো পুষ্পিতা ।
স্টুডিও থেকে বেড়িয়ে রাসেলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসার দিকে আসার সময় অর্কর দেখা রাফিদের সাথে । রাফিদের মুখে এখন আগের কষ্টটা না থাকলেও, তেমন যে সুখে নেই তাও বুঝা যাচ্ছে । অর্ক কাছে যেয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কিরে, কেমন আছিস?” “এইতো ভালো । তুই?” রাফিদ বলল, “এইতো! সেই লেভেলের ভালো আছি ।” অর্ক বলল, “কিন্তু তোর চেহারা তো সে কথা বলছে না ।” রাফিদ একটুও ইতস্তত বোধ না করে বলল, “চেহারায় না প্রকাশ পেলেও মেনে নিতে শিখেছি, এটাই কম কিসে?” অর্ক হালকা মুচকি হাসলো । কিছু বলল না । রাফিদ বলল, “তা, আরজে যে হয়ে গেলি, ট্রিট কখন পাচ্ছি?” অর্ক ভ্রু কুঁচকে রাফিদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “হোয়াট? তুই জানলি কি করে?” রাফিদ বলল, “আরে, সব খবর আসে আমার কাছে ।” অর্ক জিজ্ঞেস করলো, “আরে বলনা, কি করে জানলি?” রাফিদ বলল, “গতকাল রাতে কিছু কথা বলছিলাম রাসেল ভাই এর সাথে, তখন রাসেল ভাই বলেছিল তোকে আজ রেডিও মাস্তির এক প্রোগ্রামের হোস্ট করাতে নিয়ে যাবে । তা তোর যা ট্যালেন্ট, আমি আগেই বুঝে গেছি তোর হয়ে গেছে, আর এখনও বোধ হয় সেখান থেকেই ফিরছিলি ।” অর্ক হালকা হেসে বলল, “হ্যাঁ রে, আলহামদুলিল্লাহ, আমি অবশেষে চাকরি পেয়ে গেছি । এবার বল। কি ট্রিট নিবি?” রাফিদ বলল, “উহু, এখন না ।” অর্ক জিজ্ঞেস করলো, “তাহলে কখন?”
“আগে বেতন পা, তারপর সেই বেতনের টাকায় ট্রিট দিস ।” বলল রাফিদ ।
“কেন? আজ দিলে কি হবে?” বলল অর্ক ।
“দ্যাখ, তোকে তো আমি সেই স্কুল লাইফ থেকে চিনি । বাবার কষ্ট তোর চেয়ে বেশি আর ভালো কেউ বোধ হয় বোঝে না । এইতো আমিই, বাপের টাকায় ফুটানি করি । কি করবো, লোকে নইলে বলবে কিপটে । অথবা ভাববে বাপ টাকা দেয় না । সেটা বোঝে না বাপ দিতে পারে না সবক্ষেত্রে, তবু দেয় । আর তুই ব্যাপারটা কিভাবে যেন মেইন্টেইন করিস । হয়তো আমি ফুটানি শুরু করেছি দেখে এটা থেকে সরে আরতে পারছি না । আর তুই হয়তো শুরু থেকেই এসব আজাইরা কাজ পছন্দ করিস না বলে কেউ কিছু মনে করছে না । আমিও যদি তোর মতো বাবা মা-র কথা একটু ভাবতাম!” অর্ক কথাগুলো শুনে বলল, “আচ্ছা বাবা, হয়েছে । এখন তোকে ট্রিট দেই বাপের টাকায়, পড়ে যখন বেতন পাবো বাপকে না হয় টাকা দিয়ে দেবো । হ্যাপি?” রাফিদ বলল, “আচ্ছা, এতোই যখন জোর করছিস, দিস তাহলে?” অর্ক জিজ্ঞেস করলো, “বিকেলে ফ্রি আছিস?” রাফিদ বলল, “বিকেলে এক জায়গায় যাবো । সন্ধ্যার আগ দিয়ে আসবো ।” অর্ক বলল, “আচ্ছা, তাহলে আজ সন্ধ্যার আগ দিয়ে কোন এক রেস্টুরেন্টে আসিস । কোনটায় ভালো হয়?” রাফিদ বলল, “তুই-ই বল কোনটায় ।” অর্ক একটু ভেবে বলল, “ফুডপ্লাস-এ আসিস!”

আগামী পর্বেঃ
অর্ক বলল, “বাবা, আসলে আমার একটা ক্লোজ ফ্রেন্ড আছে, ও একটু ট্রিট চেয়েছে । আমি ওকে একটা রেস্টুরেন্টে আসতে বলেছি । যদি কিছু টাকা দিতে! বেশি না, ১০০ দিলেই চলবে ।” গালিব ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল, “ধুর! ১০০ তে হবে নাকি, ধর, ৫০০ রাখ । কোথায় যাস না তো, তাই বুঝিস না । হায়রে বোকা ছেলে আমার ।” বলেই অর্কর হাতে ৫০০টাকা দিলো গালিব । অর্ক বাবাকে বলল, “কেন বাবা, তুমিও তো কোথাও যাও না!”
×
বাবা(পর্ব-১৮)

অর্ক একটু ভেবে বলল, “ফুডপ্লাস-এ আসিস!” রাফিদ বলল, “ভালো বলেছিস । আমার বাবা তো আগে ওখানেই কাজ করতেন । ম্যানেজার ছিলেন । বাবার তত্ত্বাবধানেই ওই রেস্টুরেন্টে আলাদা একটা রুম বানানো হয়েছিলো, নাম ছিল বার্থডে জোন । অনেক সুন্দর সেটা ।” অর্ক জিজ্ঞেস করলো, “ও, সে বছর তোর জন্মদিনে যে পিক দিয়েছিলি?” রাফিদ বলল, “হ্যাঁ, তুই তো আসতে পারিস নি, কি গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলি ।” অর্ক বলল, “হ্যাঁ । আচ্ছা, থাক তাহলে, বিকেলে দেখা হবে ।” রাফিদ বলল, “আচ্ছা, তোকে তাহলে সেই বার্থডে জোনে নিয়ে যাবো আমি, দেখাবোনে কত সুন্দর ।” অর্ক বলল, “আচ্ছা ।” তারপর বিদায় নিয়ে বাসার পথে ফিরতে লাগলো অর্ক । বিকেলের দিকের কথা । রেডি হয়ে বেরোচ্ছে গালিব । আজ বেশ ভালোই জামাকাপড় পড়েছে । নিজের রুমেই ছিল সে । এমন সময় অর্ক এসে বলল, “বাবা, আসবো?” গালিব বলল, “আয় আয়, বলে আসা লাগে নাকি?” অর্ক বলল, “না তুমি রেডি হচ্ছিলে তো তাই ।” গালিব জুতো মোজা পড়ছিল । জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা ঠিক আছে, বল কি হয়েছে ।” অর্ক বলল, “বাবা, আমি, রেডিও মাস্তিতে আরজে হবার সুযোগ পেয়েছি!” কথা শুনে একবার ছেলের মুখের দিকে খুশি মনে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি করে জুতো বেধে উঠে দাঁড়িয়ে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বলল, “মাশাআল্লাহ! অনেক দূরে এগিয়ে যা বাবা ।” অর্ক বলল, “অবশ্যই বাবা, আল্লাহ তা’আলার রহমত আর তোমাদের দোয়া নিয়েই তো আমি এগিয়ে যাচ্ছি ।” গালিব আয়নায় দাঁড়িয়ে কোর্ট গায়ে দিয়ে টাই বাধতে বাধতে বলল, “তুই নিশ্চয় এ কথা বলতে আসিস নি?” অর্ক জিজ্ঞেস করলো, “তুমি কি করে বুঝলে?” গালিব বলল, “তুই যদি শুধু এই খবরটা দিতে আসতি, তাহলে তোর চেহারায় শুধু হাসি থাকতো । সংকোচটা থাকতো না । যদিও কিসের সংকোচ তোর সেটা কিন্তু বুঝতে পারছি না ।” অর্ক বলল, “বাবা, আসলে আমার একটা ক্লোজ ফ্রেন্ড আছে, ও একটু ট্রিট চেয়েছে । আমি ওকে একটা রেস্টুরেন্টে আসতে বলেছি । যদি কিছু টাকা দিতে! বেশি না, ১০০ দিলেই চলবে ।” গালিব ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল, “ধুর! ১০০ তে হবে নাকি, ধর, ৫০০ রাখ । কোথায় যাস না তো, তাই বুঝিস না । হায়রে বোকা ছেলে আমার ।” বলেই অর্কর হাতে ৫০০টাকা দিলো গালিব । অর্ক বাবাকে বলল, “কেন বাবা, তুমিও তো কোথাও যাও না!” গালিব কিছুক্ষণ ছেলের দিকে তাকাল । অর্ক আরও বলল, “জন্ম থেকে তুমি নিজের সব ইচ্ছা নিজের সব কিছু বিসর্জন দিয়ে আমাদের ইচ্ছা পুরণে অর্থ উপার্জন করে যাচ্ছো । নিজের ব্যাপারে প্রায় ভাবো না বললেই চলে । এই কোটটা বছর ৩ আগে আমি জোড় করে কিনতে বলেছিলাম বলে কিনেছিলে বাবা, নাহলে আজও দেখা যেতো একটা শার্ট পড়েই চলে যেতে । তাই তোমার কাছে খুব বেশি দরকার ছাড়া কিছু চাইতে কেমন যেনো লাগে বাবা!” গালিব হেসে উঠলো । তারপর বলল, “হায়রে! আমার সেই এইটুকু ছেলে কত বড় হয়ে গেছে, কত বড় বড় কথা বলছে । আচ্ছা, শোন, আমি নিজের ব্যাপারে ভাবি না কে বলেছে তোকে? এই যে, এই বাড়িতেই তো খাই নাকি? আর জামাকাপড়ও পড়ছি না পড়ে তো থাকছি না, তাই না?” অর্ক বলল, “আমি সেটার কথা বলছি না বাবা!” গালিব বলল, “তাহলে কিসের কথা ভাবছিস?” অর্ক বলল, “তোমার আরও যে চাহিদা সেগুলোর কথা বলছি ।” গালিব বলল, “আমার আর চাহিদা থাকলে না বলবো?” অর্ক বলল, “উফ বাবা! কি করে যে তোমাকে বোঝাই!” গালিব বলল, “কিচ্ছু বোঝানো লাগবে না, আর এতো পাকা হওয়াও লাগবে না । কষ্ট করে উপার্জন করি বলে কি ফকির নাকি যে তোকে টাকা দিতে পারবো না?” অর্ক বলল, “ইশ বাবা! আমি এটাও কিন্তু বলিনি!” গালিব বলল, “হয়েছে, যা তাহলে ।” অর্ক বলল, “তুমি আসবে কখন?” গালিব বলল, “এই আসবো, এসেই আবার চলে যাবো ।” অর্ক বলল, “হুম জানি তো, আজ থেকে নাকি ওভারটাইম করছো ।” গালিব বলল, “হুম । কেন?” অর্ক বলল, “না এমনি । আচ্ছা বাবা! আমি আয় করলে তোমার বোঝা কি আমি কমাতে পারবো?” গালিব ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল, “ওরে আল্লাহ! থামবি! কি সব বলে যাচ্ছিস তখন থেকে! যা বন্ধুকে ট্রিট দিতে যা!” অর্ক বলল, “আচ্ছা, যাচ্ছি ।” বলে চলে গেলো অর্ক । গালিব বলল, “হায়রে ছেলে আমার! পাগল একটা!” বলেই হালকা হেসে উঠলো গালিব ।
ফুডপ্লাস রেস্টুরেন্টের বার্থডে জোন । সেখানে অনিক আর রিপন পপির জন্মদিনের সেলিব্রেশনের জন্য বেলুন ফোলানোয় ব্যাস্ত । এমনি ইংরেজিতে হ্যাপি বার্থডে লেখাই থাকে, যার বার্থডে তার নামটা বলে দিলে রেস্টুরেন্ট থেকেই লাগিয়ে দেয় । সেটাই করেছে । পেছনে নিয়ন আলতে লেখা, “হ্যাপি বার্থডে পপি” রিপন বলল, “কিরে বন্ধু, তোর গফ কখন আসবে?” গালিব বলল, “ধুরু, ওরে আসতে বলছি সাড়ে ৬টায় । ওরে রুমে আনমু চোখ বাইধা ।” রিপন ঘড়ি দেখে বলল, “মাত্র ৫টা বাজে । বহুত দেরি ।” বলে একটা বেলুন ফোলাতে গিয়ে ফাটিয়ে ফেলল রিপন । অনিক বলল, “শালা! কথা না বইলা কাম কর!” রিপন আর কিছু বলল না ।

আগামী পর্বেঃ
জয়িতা তখন আরশির কাছে এসে বলল, “কিরে, কেমন আছিস?” আরশি বলল, “এইতো দোস্ত, ভালো, তুই তো আগের চেয়ে সুন্দর হইয়া গেছিস!” জয়িতা বলল, “যাহ! কি যে বলিস না, শোন, এই ফুডপ্লাস রেস্টুরেন্ট আসার কিন্তু একটা কারণ আছে!” আরশি জিজ্ঞেস করলো, “কি কারণ?”
×
বাবা(পর্ব-১৯)

রিপন আর কিছু বলল না ।
গালিব বেরচ্ছিল, মা মেয়ে তখন বাইরের রুমেই ছিল । রেডি হচ্ছিলো । গালিব ওদের কাছে যেয়ে বলল, “একি, তোমরা কোথাও যাচ্ছ নাকি?” পুষ্পিতা বলল, “হ্যাঁ, ওই জয়িতার আম্মু নাকি এসেছে, দেখা করতে চেয়েছে । তুমি যাও, চাবি ময়নার ভাবির বাসায় দিয়ে যাবো ।” আরশি বলল, “মা, ময়না আন্টিও তো যাচ্ছে ।” পুষ্পিতা বলল, “উনার স্বামী তো বাসায় থাকবে না!” গালিব বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে । টাকা লাগবে কি তোমাদের?” পুষ্পিতা একটু গলা খাখরে বলল, “দিলে তো ভালোই হয়, এখন দিবা কি না দিবা সেটা তোমার ইচ্ছা ।” গালিব পকেট থেকে হাজার তিন টাকা বের করে পুষ্পিতার হাতে দিয়ে বলল, “নাও এটা ।” পুষ্পিতা টাকা নিতে নিতে নিজেকে বলল, “না দিলেও চলতো । এর চেয়ে বহুত টাকা তোমার কাছ থেকে মেয়ের কোচিং নামে মারছি আমি ।” গালিব বলল, “আচ্ছা, আমি যাই তাহলে ।” বলে বেড়িয়ে পড়লো গালিব । পুষ্পিতা আরশিকে বলল, “তাড়াতাড়ি কর! তারপর ময়না ভাবিকে ডাকতে হবে । উনাকেও নাকি ডাকসে জয়িতার মা ।”
৫টা ৪০ এর দিকে ফুডপ্লাস রেস্টুরেন্টের সামনে পৌঁছে গেলো অর্ক । কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর এলো রাফিদ । রাফিদ আগেই বলেছিল ওর কাজ সাড়ে পাচটার দিকে শেষ হবে এবং আসতে ১০-১৫ মিনিট মতো লাগবে । অর্ক বলল, “কিরে, কাজ শেষ হল তাহলে?” রাফিদ বলল, “হ্যাঁ বন্ধু চল ভেতরে যাই ।” রাফিদ আর অর্ক ভেতরে গেলো । তারপর একদম ওপাশের তিনতলায় গিয়ে উঠলো ।
৫টা ৫০ এর দিকে রেস্টুরেন্টে পৌঁছে গেলো গালিব । এর মিনিট দশ পরেই হাজির হল ওর বস আকবর । আকবর বলল, “আমি আরও আগে এসেছি কিন্তু, গাড়ি পার্ক করতে গিয়ে দেরি হয়ে গেলো ।” গালিব ঠোটের কোণে হালকা হাসি নিয়ে বলল, “না স্যার, সমস্যা নেই ।” আকবর বলল, “বাহ! আজ তো আপনাকে দেখতে বেশ লাগছে, মনে হচ্ছে আপনিই আমার বস!” গালিব বলল, “কি যে বলেন না স্যার!” আকবর বলল, “চলুন, ভেতরে যাই ।” আকবর আর গালিব ভেতরে গেলো । তারপর রেস্টুরেন্টে একটা ভিআইপি গেস্ট রুমে গিয়ে বসলো ।
৬টা বাজতেই রেস্টুরেন্টে পৌঁছে গেলো পুষ্পিতা, ময়না, আর আরশি । ময়না জিজ্ঞেস করলো, “কিরে, জয়িতার মা বলল ওরা আগেই এসে পড়বে, তা কই?” পুষ্পিতা বলল, “সেটাই তো ভাবতেছি । এই আরশি, কল করতো জয়িতার মাকে!” আরশি কল করতে যাবে এমন সময় জয়িতা আর ওর মা হাজির । জয়িতার মা এসেই বলল, “আরে ভাবি! কেমন আছেন!” বলেই ময়না ভাবি আর পুষ্পিতা ভাবিকে জড়িয়ে ধরল । তারপর শুরু হল কত কথা! কতদিন পর দেখা!! শরীর কেমন আছে!! বাসার সবাই ভালো আছে তো!! আপনি তো শুকায় গেছেন!! ইত্যাদি ইত্যাদি । জয়িতা তখন আরশির কাছে এসে বলল, “কিরে, কেমন আছিস?” আরশি বলল, “এইতো দোস্ত, ভালো, তুই তো আগের চেয়ে সুন্দর হইয়া গেছিস!” জয়িতা বলল, “যাহ! কি যে বলিস না, শোন, এই ফুডপ্লাস রেস্টুরেন্ট আসার কিন্তু একটা কারণ আছে!” আরশি জিজ্ঞেস করলো, “কি কারণ?” জয়িতা বলল, “ভেতরে চল তারপর বলছি ।” তারপর জয়িতা মাকে ডেকে বলল, “মা! ভেতরে চলো!” জয়িতার মাও ভাবিদের বলল, “আরে! চল, তোমরা ভেতরে চলো!” এরা সবাইও ভেতরে যেয়ে দোতলায় বসলো ।
কিছুক্ষণ ভিআইপি রুমে বসে থাকার পর কোট প্যান্ট পড়া এক লোক এলো রুমে । তারা আসতেই গালিব আর আকবর উঠে দাঁড়ালো । উভয়ের মধ্যে সালাম বিনিময় এবং করমর্দন হল । লোকটার নাম কালাম আহমেদ । উনি এই ফুডপ্লাস রেস্টুরেন্টের মালিক । কালাম লোকটা এমনভাবে ভাই ভাই বলে আকবরের সাথে কথা বলছিলো, যেন উনারা পূর্ব পরিচিত । গালিব আন্দাজ করে একটু সন্দেহের সাথে তাকাল দুজনের দিকে । গালিবের সন্দেহ বুঝতে পেরে আকবর বলল, “আরে! আমি তো আগে এই রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার ছিলাম! তাই তো আমি স্পন্সরশীপ পেয়ে গেছি সহজেই!” গালিব এবার বুঝতে পেরে সন্দেহ মাখা মুখ বদলে হাসিমুখ প্রকাশ করলো ।
“আমার বাবার নাম আকবর আলি । জানিস তো!” অর্ককে বলল রাফিদ । আরও বলল, “উনার রাগ বেশি হলেও মানুষটা ভালো ।” অর্ক বলল, “ও, নামটা কোথায় যেন শুনেছি শুনেছি মনে হল! যাই হোক, তুই আমার কত ক্লোজ ফ্রেন্ড অথচ তোর ভেতরকার কথা, তোর ফ্যামিলির ব্যাপারে কিচ্ছুই জানি না আমি ।” রাফিদ বলল, “জানবি কি করে । আমিই বলিনি ।” অর্ক জিজ্ঞেস করলো, “তোর বাবা এখন কি করে?” রাফিদ বলল, “কি জানি কোম্পানির একটা শাখা অফিসের হেড । বাবার অফিসের ব্যাপারে বাসায় সেরকম কথাই বলেন না । তাই বাবা অফিসের কাজে কখন কোথায় যায়, কি করে, জানি না ।” অর্ক বলল, “ও ।” রাফিদ বলল, “আমার আর ২ বোন আছে । একজন আমার ১ বছরের বড়, অন্যজন আমার ৩ বছরের বড় । ১ বছরের বড় যে, তার নাম রিমি, আর ৩ বছরের বড় যে, তার নাম পপি!”
“হ্যাঁ বেবি কোথায় তুমি!” রাস্তায় দাঁড়িয়ে কলে অনিককে বলল পপি । অনিক বলল, “আচ্ছা শোনো, ২ মিনিট অপেক্ষা করো, আমি আসছি ।” বলে কল কেটে পপির কাছে গেলো অনিক ।

আগামী পর্বেঃ
“শোন! রেস্টুরেন্টে আমি হুদাই আসি নাই! কাজে আসছি ।” আরশিকে বলল জয়িতা । আরশি জিজ্ঞেস করলো, “কি কাজ রে?” জয়িতা বলল, “আমার মামার নাম কি জানিস?” আরশি জিজ্ঞেস করলো, “কি নাম?” জয়িতা বলল, “আকবর আলি!”
×
বাবা(পর্ব-২০)

বলে কল কেটে পপির কাছে গেলো অনিক ।
“হাই!” হঠাৎ ডাকটা শুনে চমকে পেছন ফিরে তাকিয়ে পপি দেখল, অনিক দাঁড়িয়ে । পপি অনিককে বলল, “তুমি কোথায় ছিলা?” অনিক বলল, “কেন, বললাম না, ফুডপ্লাস রেস্টুরেন্ট-এ?” পপি বলল, “বাহ! খুব ভালো । আমি তোমার জন্য এখনও রেস্টুরেন্টে গেলাম না আর তুমি আগেই এখানে দাঁড়িয়ে আছো ।” অনিক বলল, “হ্যাঁ, কারণ আমি-ই তোমাকে বলেছিলাম ভেতরে না যেতে । আর ভেতরে না নিয়ে যাওয়ার কারণ আমি একটা সারপ্রাইজ রেখেছি তোমার জন্য! এই রেস্টুরেন্টের জোস দেখতে বার্থডে জোনে ।” পপি হালকা হেসে বলল, “কি সুন্দর সারপ্রাইজ! আমার বাপ যখন ম্যানেজার ছিল তখন এটা বাবার দায়িত্বেই এই বার্থডে জোন বানানো হয়েছিলো । আমার আগেই দেখা শেষ ।” অনিক বলল, “আচ্ছা বাবা হয়েছে, এ কথা গতকালও বলেছ তোমার বাবা এখানকার ম্যানেজার ছিল । এ কথা আর বোলো না তো ।” পপি জিজ্ঞেস করলো, “কেন এ কথায় তোমার কি সমস্যা?” অনিক বলল, “একথা শুনলে কেন জানি মনে হয় যেন তোমার বাবা এখনও ম্যানেজার! আর হুট করে আমাদের ধরে ফেলল ।” পপি হেসে বলল, “ধুর তুমি হুদাই ভয় পাচ্ছো । চল যাই ।” অনিক “উহু! এভাবে না!” বলে পপির চোখ একটা কাপড় দিয়ে বেধে দিলো । পপি জিজ্ঞেস করলো, “আহ! কি করছ!” অনিক বলল, “তোমার চোখ ঢেকে দিচ্ছি । যতই রুমটা আগে দ্যাখো, ডেকোরেশনের আইডিয়াটা তো আমারই, না?” পপি বলল, “আচ্ছা, চলো ।” “শোন! রেস্টুরেন্টে আমি হুদাই আসি নাই! কাজে আসছি ।” আরশিকে বলল জয়িতা । আরশি জিজ্ঞেস করলো, “কি কাজ রে?” জয়িতা বলল, “আমার মামার নাম কি জানিস?” আরশি জিজ্ঞেস করলো, “কি নাম?” জয়িতা বলল, “আকবর আলি!” আরশি বলল, “আকবর আলি! কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে ।” জয়িতা বলল, “আরে চেনারই তো কথা! একটা জনপ্রিয় কোম্পানির শাখার হেড উনি । যাই হোক, উনার একটা বড় মেয়ে আছে । পপি নাম । সেই মেয়ে বুঝলি, একটা বয়ফ্রেন্ড জুটিয়েছে!” আরশি জিজ্ঞেস করলো, “হ্যাঁ, তো এর সাথে এখানে আসার কি সম্পর্ক?” জয়িতা বলল, “আরে! ওই মেয়ের আজ জন্মদিন! আর আজ তো ওই মেয়ে ওর বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে এখানে আসবে বলেছিল, আমি গতকাল রাতে পপি আপুর রুমে আড়ি পেতে শুনেছি!” আরশি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “বলিস কি তুই! তোর এই আড়ি পাতার স্বভাব হল কবে থেকে?” জয়িতা বলল, “ধুর, আর বলিস না, আমি লুকিয়ে লুকিয়ে একটা ছেলের সাথে কথা বলতাম এটা উনি টের পেয়েছে । পড়ে আম্মুকে বলে দিয়েছে । এজন্য আমি উনাকে হাতে-নাতে ধরবো ভাবছি ।” আরশি জিজ্ঞেস করল, “কিন্তু তুই দেখলে কি হবে? দেখাতে তো হবে ওর পরিবারের কাউকে!” জয়িতা দেঁতো হাসি হেসে বলল, “ওইতো বন্ধু! এমনি এমনি তো আসি নি! সুযোগ পেয়েছি বলেই তো এসেছি!” আরশি জিজ্ঞেস করল, “কি সুযোগ?”
ভিআইপি রুমে কাজ শেষে বেরোবে গালিব আর আকবর, তখন আকবর বলল, “গালিব ভাই, আপনাকে একটা জিনিস দেখাবো, দেখবেন?” গালিব জিজ্ঞেস করল, “কি?” আকবর বলল, “এই রেস্টুরেন্ট থেকে যাবার আগে আমি একটা জিনির বানিয়ে গিয়েছিলাম, বার্থডে জোন । সবাই ওটার বেশ প্রসংসা করেছিলো । চলুন, আপনাকে একটু দেখিয়ে আনি ।” গালিব যাবার জন্য সম্মত হল ।
ট্রিট খাওয়া শেষে রাফিদ অর্ককে বলল, “চল, তোকে এক জায়গায় নিয়ে যাই ।” অর্ক জিজ্ঞেস করল, “কোথায়?” রাফিদ বলল, “আমার বাবার বানানো সেই বিখ্যাত বার্থডে জোনে ।” অর্ক বলল, “আচ্ছা! অবশ্যই দেখবো । চল ।” রাফিদ আর অর্ক রওনা হল বার্থডে জোনের দিকে ।
জয়িতা বলল, “ওই আরশি আপুর বাবাও কি কাজে আজ এখানে এসেছে, উনাকে নিয়ে বার্থডে জোনের দিকে যাবো সেটা দেখবো এই বাহানায় । আর আমার কাজও সফল হবে । ভাগ্যিস উনি অফিসের কাজ বাসায় আলোচনা করেন না, তা’না হলে এ সুযোগ হতোই না!” আরশি বলল, “বাহ! কি বুদ্ধি রে তোর!” এমন সময় জয়িতা এই তলার দরজার দিকে দেখতে পেল ওর মামা আকবর আলিকে । জয়িতা বলল, “এই! ওই দ্যাখ আমার মামা! চল চল!” তারপর জয়িতা ওর মা-কে বলল, “মা! ওই যে মামা! চল!” জয়িতার মা-কে ময়না ভাবি জিজ্ঞেস করল, “কি কোথায় যাবেন?” জয়িতার মা বলল, “এইযে ভাবি, আমার ভাই একটা বার্থডে জোন বানিয়েছে এই রেস্টুরেন্টে, সেটা দেখতে মেয়ে বায়না ধরেছে । আপনারাও চলেন!” পুষ্পিতা বলল, “আরে না ভাবি, সমস্যা নেই, আপনি যান ।” জয়িতা বলল, “আরে চলেন তো! কিছুই হবে না ।” অগত্যা পুষ্পিতা, জয়িতা, ময়না, জয়িতার মা আর আরশি রওনা হল । প্রথমের ওদের উদ্দেশ্য আকবর আলির কাছে যাওয়া । সেখানে যেয়ে জয়িতা আরশির বাবাকে দেখতে পেল । বলে উঠলো, “আরে আঙ্কেল! আপনি!” পুষ্পিতা আর আরশিও দেখে অবাক । গালিব জিজ্ঞেস করল, “একই তোমরাও এখানে!” জয়িতার মা বলল, “ভাই, ভালো আছেন?” গালিব বলল, “জি ভাবি, আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি । আপনারা ভালো আছেন?” জয়িতার মা বলল, “আছি ভাই, আলহামদুলিল্লাহ ভালো ।” আকবর জয়িতার মাকে জিজ্ঞেস করল, “একি বোন, তুই উনাকে চিনিস?”

আগামি পর্বেঃ
কেক খাওয়া শেষে পপিকে জড়িয়ে ধরলো অনিক । ঠিক সেই সময় সেখানে এসে হাজির হল পরিবারের সবাই । অনিক আর পপি একটু রোম্যান্টিক হয়ে যাওয়ায় দুজনের চোখ বন্ধ ।
অনিকঃ আই লাভ ইউ!
পপিঃ আই লাভ ইউ টু জান!
×
বাবা(পর্ব-২১)

আকবর জয়িতার মাকে জিজ্ঞেস করল, “একি বোন, তুই উনাকে চিনিস?” জয়িতা বলল, “হ্যাঁ! চিনবো না কেন! উনি তো আমাদের প্রতিবেশী ছিলেন, তুমি তো কখনো এখানে বাসায় সেরকম আসো নি কাজের চাপে, বা আসলেও বেশিদিন থাকো নি ।” আকবর বলল, “বাহ! এরকম সম্পর্কের প্যাঁচে এভাবে যে পড়বো কোনোদিন ভাবিনি!” জয়িতা তখন মামার হাত ধরে বায়না ধরল, “মামা! কি বলেছিলে মনে আছে তো?” আকবর বলল, “হ্যাঁ রে হ্যাঁ, মনে আছে । চল । আপনারা সবাই-ও চলুন, না হয় আমি সবাইকে সেখানে ট্রিট দিলাম!” মনে মনে জয়িতা বলল, “জি মামা, ট্রিট রেডি, শুধু চলেন!” সিঁড়ি দিয়ে যাবার সময় ওদের দেখা অর্ক আর রাফিদের । অর্ক গালিবকে দেখে আর রাফিদ আকবরকে দেখে দুজনে একই সময় নিজেদের বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো, “বাবা তুমি এখানে!” তারপর রাফিদ আর অর্ক দুজনের দুজনের দিকে তাকিয়ে অবাক হল । গালিব আকবরকে বলল, “স্যার, আমার ছেলে, অর্ক ।” অর্ক আকবরকে সালাম দিল, “আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল ।” আকবর বলল, “ ওয়ালাইকুমুস সালাম । হ্যাঁ, চিনতে পেরেছি, ভবিষ্যৎ আরজে ।” গালিব জিজ্ঞেস করল, “আপনি চেনেন ওকে!” আকবর বলল, “না চিনিনা, কিন্তু ওর পাশে যাকে দেখছেন, ও আমার ছেলে, রাফিদ ।” রাফিদও গালিবকে সালাম জানাল । গালিব সালামের জবাব দিয়ে বলল, “এবার আমিও বেশ অবাক হচ্ছি, প্যাঁচ তো সত্যি একদম জব্বর প্যাঁচ!” মনে মনে জয়িতা বলল, “হ্যাঁ, এবার বার্থডে জোনে গেলে বিষ গেঁড়ো খুলে যাবে পুরো!” তারপর মামাকে অনুরোধ করে বলল, “মামা! চলো না এবার বার্থডে জোনে যাই!” আকবর আলি বলল, “হ্যাঁ চল চল! তুই তো একেবারে পাগল হয়ে গেছিস দেখছি সেখানে যাওয়ার জন্য!” জয়িতার মা তখন বলল, “হবে না আবার, এলাকার বিখ্যাত বার্থডে জোনের মধ্যে একটা, যা ওর মামা বানিয়েছে!” আকবর আলি বলল, “ঠিক আছে, চল তাহলে, সবাই একসাথে যাই!” পুষ্পিতা বলল, “ইশ! আমার বড় ছেলেটা আজ ভার্সিটিতে গেছে, ছেলে আমার কি কষ্টটাই না করছে । আজ এলে ওকেও নিয়ে যেতাম, ওর বাবা কোনোদিন যদি ওদের নিয়ে যায় এরকম যায়গায়!” জয়িতার মা বলল, “আরে ভাবি, চিন্তা কইরেন না, আমাদের জয়িতার বার্থডে এখানেই করবো! আপনাদের দাওয়াতও দেবো তখন ।” আকবর আলি বলল, “আমার বড় মেয়ে, পপিরও আজ জন্মদিন, ওরও জন্মদিনটা এখানে করার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু ওর আজ কি ভার্সিটির কাজ পড়ে গেছে ।” সিঁড়ি দিয়ে উঠে একটা লম্বা করিডোর । সেটা ধরে এগিয়ে গেলে একটা দেয়াল । নব্বই ডিগ্রি ডানে ঘুরে কিছুদুর এগিয়ে নব্বই ডিগ্রি ডানে ঘুরতেই দরজা বিহীন দেয়ালের ওপাশে বার্থডে জোন । ওরাও যাচ্ছিল সেদিকে । আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিল আগে থেকেই কারো জন্মদিন সেলিব্রেট হচ্ছে । অনিক আর পপি রয়েছে সেখানে, মনে ওদের ঢের আনন্দ, কিন্তু ওরা জানে না, একটু পর কি হতে চলেছে । কেক খাওয়া শেষে পপিকে জড়িয়ে ধরলো অনিক । ঠিক সেই সময় সেখানে এসে হাজির হল পরিবারের সবাই । অনিক আর পপি একটু রোম্যান্টিক হয়ে যাওয়ায় দুজনের চোখ বন্ধ । তাই কেউ টের পায় নি ওদের কর্মকাণ্ড দেখছে পরিবারের সবাই । আকবর আলি নিজের মেয়েকে দেখে অবাক হয়ে গেলো । রাফিদও ওর বোনকে দেখে হতবাক । গালিব, আরশি, জয়িতা আর অর্কও অনিককে দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো । জয়িতা মনে মনে শয়তানি হাসি হাসছে, কিন্তু আবার অবাকও হচ্ছে এই দেখে, পপির বয়ফ্রেন্ড ওরই বান্ধবীর ভাই । জয়িতার মা বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে । অনিক পপিকে বলে উঠলো, “আই লাভ ইউ পপি!” পপিও বলে উঠলো, “আই লাভ ইউ টু জান!” আকবর আলি তখন রেগে চেচিয়ে উঠলো, “পপি!” অনিক আর পপি চমকে কেপে উঠলো, তারপর সামনে তাকিয়ে ওরা অবাক! ওদের মনে একটাই প্রশ্ন, এরা এখানে কি করছে! আকবর আলি আর গালি তখন একই সাথে একজন পপিকে এবং অন্যজন অনিককে ধমকের স্বরে বলে উঠলো, “এসবের মানে কি!” এবার আকবর আলি আর গালিবও অবাক! দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে একই সময় আকবর আলি গালিবকে জিজ্ঞেস করল, “আপনার ছেলে!” আর গালিব আকবর আলিকে জিজ্ঞেস করল, “আপনার মেয়ে!” পপি ভয়ে কেদে দিল । গালিব অনিককে বলল, “এই মানুষ করেছি আমি তোকে! ছি! আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল! হায়রে! আমি তোকে এতগুলো টাকা দিলাম, ভাবলাম তুই ভালো কোন কাজ করতে যাচ্ছিস, আর তুই………!” আর কথা বলতে পারলো না গালিব । আরশির খুব লজ্জা হল ভাইয়ের প্রতি, কিন্তু পাশাপাশি ওর রাগ হল জয়িতার ওপর । সেই রাগ সে বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারলো না, রাগ দেখিয়ে বলেই দিল, “এই জয়িতা সব নষ্টের মুল! ও ইচ্ছে করে আমাদের এখানে আনিয়েছে, না আনলে সবাই হয়তো এভাবে কষ্ট পেত না!” জয়িতা তখন বলল, “ও, এখন তুই আমাকে দোষ দিচ্ছিস! আমি মনে হয় ওদের প্রেম ঘটিয়েছিলাম!” জয়িতার মা তখন রেগে গিয়ে আরশিকে বলল, “এই মেয়ে! সাহস কি করে হয় তোর আমার মেয়ের সাথে এভাবে কথা বলার!” পুষ্পিতাও রেগে গিয়ে জয়িতার মাকে বলল, “এই বেয়াদ্দপ মহিলা! আমার মেয়ে সত্যি বললেই তা ভুল হয়ে যায় না!” এক প্রকার মারামারি লেগে গেলো দুজনের মধ্যে । ময়না ভাবি একটু দুরেই দাঁড়িয়েছিলো । মনে মনে বলছিল, “আমি কিছু বলব না বাবা, কখন কোন ফ্যামিলি আমার সাহায্যে আসে, সম্পর্ক কারো সাথেই নষ্ট করার দরকার নেই, চুপচাপ তামাশা দেখি!” জয়িতার মা আর পুষ্পিতা ঝগড়া করার এক মুহূর্তে আকবর আলি চেচিয়ে উঠলো, “ব্যাস! অনেক হয়েছে!” পুষ্পিতা আর জয়িতার মা থামলো ।

আগামী পর্বেঃ
আকবর আলি পপির হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল, “আজ বাসায় চল! তোর কি করি আমি দ্যাখ!” পপি কান্না ছাড়া আর কিছু বলতে পারলো না । অনিক কেবল পপির দিকেই তাকিয়ে । সেখান থেকে বেরনোর আগে আকবর একবার গালিবের সামনে দাড়িয়ে গালিবকে বলল, “আজ রাতে আপনার অফিসে আসার দরকার নেই, কাল সকালে অফিস থেকে বরখাস্তের নোটিশটা নিয়ে যাবেন ।”
×
বাবা(পর্ব-২২)

পুষ্পিতা আর জয়িতার মা থামলো । আকবর আলি পপির কাছে এগিয়ে গেলো । ইতোমধ্যে ওদের চ্যাঁচামেচিতে আশেপাশে অনেক লোক জমে গেছে । পপি মাথা নিচু করে কাঁদছে । অনিক কিছু বলতে যাচ্ছিল, “আঙ্কেল! আমাদের কথাটা……!” কিন্তু সেটা শেষ করার আগেই আকবর আলি অনিকের গালে একটা ঠাস করে চড় লাগিয়ে দিল । তারপর বড় বড় চোখ করে অনিকের দিকে তাকিয়ে বলল, “তোর বাপের অফিসের বস আমি! মেপে কথা বলিস!” তারপর পপির হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল, “আজ বাসায় চল! তোর কি করি আমি দ্যাখ!” পপি কান্না ছাড়া আর কিছু বলতে পারলো না । অনিক কেবল পপির দিকেই তাকিয়ে । সেখান থেকে বেরনোর আগে আকবর একবার গালিবের সামনে দাড়িয়ে গালিবকে বলল, “আজ রাতে আপনার অফিসে আসার দরকার নেই, কাল সকালে অফিস থেকে বরখাস্তের নোটিশটা নিয়ে যাবেন ।” গালিব এবার আকাশ থেকে পড়লো । অর্ক এবার প্রতিবাদ করে উঠলো । “আপনি পারিবারিক ব্যাপারকে অফিসিয়াল ব্যাপারের সাথে কেন মিক্স করছেন!” আকবর আলি অর্ককে বলল “সেই কৈফিয়ত আমি তোকে দিতে বাধ্য নই!” তারপর রাফিদকে বলল, “তুইও বাড়ি চল! আর কোনোদিন যেন তোকে এই ছেলের সাথে মিশতে না দেখি ।” রাফিদ ফিসফিসিয়ে অর্ককে, “পড়ে কথা হবে ।” বলে চলে গেলো সেখান থেকে । আকবর আলি পপিকে নিয়ে চলে গেলো । জয়িতার মা, “হুহ! ছেলে পেলে মানুষ করতে পারে না আবার আসছে!” তারপর ময়না ভাবিকে বলল, “এই ময়না ভাবি, আসেন তো!” বলে ময়না ভাবিকে নিয়ে চলে গেলো জয়িতা আর জয়িতার মা । অর্ক ওর বাবাকে ধরে বলল, “বাবা, বাসায় চলো ।” গালিব একবার অনিকের দিকে তাকিয়ে বলল, “সেই ভালো, এমনিতেও অনেক অপমান হয়েছে এখানে ।” বলে গালিব আর অর্ক চলে গেলো । পুষ্পিতা তখন অনিককে বলল, “তোর বাবা যেমনই হোক, মানুষতো, এভাবে তাকে কষ্টটা না দিলেও পারতি!” অনিক কিছু বলল না । আরশি ওর মাকে নিয়ে চলে গেলো সেখান থেকে, অনিক মাটিতে বসে কাদতে শুরু করল ।
পপিকে গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো আকবর আলি । চলে যেতেই রাফিদ অন্যপাশ থেকে বেড়িয়ে অর্কর কাছে এল । রাফিদ জিজ্ঞেস করল, “দোস্ত, এতক্ষন যা হল, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না কি বলব! কিন্তু, আমি পারিবারিক ঝামেলা কখনো বন্ধুত্বের মাঝে আনবো না ।” অর্ক বলল, “আমিও সেটা আনবো না, কিন্তু তুই এখন বাসায় যা রে, নয়ত আঙ্কেল তোকে না দেখলে প্রচুর রাগ করবেন ।” রাফিদ বলল, “হ্যাঁ । তোর বাবা কোথায়?” অর্ক বলল, “বাবা খুব কষ্ট পেয়েছে ভাইয়ার এই আচরণে । তাই আগেই চলে গেছে ।” রাফিদ বলল, “আমার বাবা মোটেও কাজটা ঠিক করে নি! শোন তুই আমাকে জানাইস কি হল, আমিও দেখি, বাবার রাগ কমলে বাবাকে কিছু বলা যায় কিনা ।” অর্ক বলল, “সেসবের এখন কোন দরকার নেই, তুই যা ।” রাফিদ অর্কর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো ।
বাস একটু পরই ছেড়ে দেবে, জয়িতা বাসে উঠে গেছে । জয়িতার মা দরজার কাছে দাড়িয়ে ময়না ভাবির সাথে গল্প করছে । ঠিক গল্প না, সমালোচনা করছে । পুষ্পিতা আর আরশির । “দেখলেন তো ভাবি! কি খারাপ ওরা! কিভাবে আমার মেয়ের ওপর এভাবে মিথ্যা অপবাদটা দিল!” ময়না বলল, “হ্যাঁ ভাবি, ঠিকই বলেছেন, মানে, যাদের ছেলে এসব করে বেড়ায়, তাদের কাছ থেকে আর কি আশা করা যায় বলেন?” জয়িতার মা বলল, “আর আমাকে বলে বেয়াদ্দপ মহিলা, কত্ত বড় সাহস!” ময়না বলল, “আসলেই, আসল বেয়াদ্দপ তো উনিই!” জয়িতা রেগে ছিল খুব আরশি সব কথা ফাস করে দেয়ায় । একটু পর বাসের ইঞ্জিন চালু হল । জয়িতা জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে মাকে বলল, “মা! উঠে এসো! বাস ছাড়ছে তো!” জয়িতার মা ময়নার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসে উঠলো । একটু পরই বাস সেখান থেকে চলে গেলো ।
আরশি আর পুষ্পিতা রেস্টুরেন্ট থেকে বেরোতেই ময়না ভাবি ওদের কাছে এসে হাজির । পুষ্পিতা বলল, “আপনাকে আপন ভাবতাম, আর আপনি ওদের সাথে গেলেন চলে?” ময়না বলল, “হায় আল্লাহ! কি যে বলেন না ভাবি! আসলে উনাকে কিছু টাকা দেয়ার ছিল তো, তাই গিয়েছিলাম, আর বললামও তো, উনার মেয়ের এমন করা উচিত হয় নি ।” পুষ্পিতা বলল, “দেখেছেন তো, আমার মেয়ে সত্যি কথা বলায় কিভাবে রিয়েক্ট করল!” ময়না বলল, “যার ভাইয়ের মেয়ে এসব করে বেড়ায় তার কাছ থেকে আর কি আশা করা যায় বলেন?” পুষ্পিতা বলল, “একদম ঠিক! মানছি আমার ছেলে এসব করেছে, তার মানে এই না উনি অসভ্যতা করবে!” ময়না বলল, “হ্যাঁ ভাবি, আপনি উনাকে বেয়াদ্দপ বলেছেন, একদম পারফেক্ট কথা বলেছেন । এখন চলেন, বাসায় যাই, আপনার স্বামীও খুব রাগ করে আছে ।” পুষ্পিতা বলল, “হ্যাঁ চলেন, যাওয়া যাক ।” তারপর ওরা বাসার পথে রওনা হতে লাগলো । এদিকে ভেতরে মাটিতে বসে কাদতে থাকা অনিক হঠাৎ উঠে যা ডেকোরেশন করেছিলো, সব চিৎকার করতে করতে ছিড়ে ফেলল । তারপর মনের মাঝে গভীর রাগ নিয়ে বলল, “আমি পপিকে নিজের করেই ছাড়বো! যেভাবেই হোক ওকে আমি পাবোই, তার জন্য যদি আমাকে মরতেই হতে, তাও আমি করবো!” তারপর অনিকও সেখান থেকে চলে গেলো ।

আগামী পর্বেঃ
গালিব বলল, “রেজাল্ট খারাপ হলে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, এই পরীক্ষার ভুলগুলো আসছে পরীক্ষাগুলোতে শুধরে নিতে । তাহলে তুই-ই বল? তোর ভাই আমার কথা না বুঝলে কি করা উচিৎ?” অর্ক বলল, “ভাইয়ের এবারের ভুল পরের বার শুধরে নেয়া?” গালিব বলল, “ঠিক তাই ।” অর্ক জানতে চাইলো, “কিন্তু কিভাবে করবে সেটা?” গালিব বলল, “তোর ভাই যদি সত্যিই ওই মেয়েটাকে ভুলতে না পারে, তবে তোর ভাইয়ের সাথে ওই মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেবো ।
×
বাবা(পর্ব-২৩)

তারপর অনিকও সেখান থেকে চলে গেলো ।
বাসায় এসে অর্ক বাবার কাছে যাবার জন্য বাবার রুমে গেলো কিন্তু দরজার কাছে আসতেই কপালে হাত দিয়ে বসে থাকা গালিব বলল, “আমাকে একটু একা থাকতে দে ।” অর্ক আর বাবাকে ডিস্টার্ব করলো না । অর্ক ড্রইং রুমে যেয়ে সোফায় বসলো । একটু পর পুষ্পিতা আর আরশি এলো ঘরে । পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “কিরে? কখন এলি তুই?”
“এইতো খুব বেশিক্ষণ হয় নি ।” জবাব দিল অর্ক ।
“তোর বাবা কোথায়?” জিজ্ঞেস করলো পুষ্পিতা ।
“ঘরেই, কিন্তু এখন বাবা একটু একা থাকতে চাইছে ।” বলল অর্ক ।
পুষ্পিতা আর কিছু বলল না । নিজের রুমে চলে গেলো । অর্ক তখন আরশিকে জিজ্ঞেস করলো, “ভাই কোথায় রে?” আরশি বলল, “ভাইয়া রেস্টুরেন্টেই ছিলো, আমরা ভাইকে একা রেখে এসছি ।”
“এটা কিন্তু ঠিক করিস নি তোরা! ভাই ভুল করেছে মানলাম, কিন্তু এখন যদি ভাই কিছু উল্টাপাল্টা করে বসে?” বলল অর্ক । আরশি একটু বিরক্ত হয়ে বলল, “তোমার এতো ভাইয়ের জন্য এতো দরদ ছিলো তো তুমিই থাকতা!” বলে নিজের রুমে চলে গেলো আরশি । অর্ক কিছু বলল না ।
এদিকে অনিক হতাশা নিয়ে ফুটপাত দিয়ে হেটে যাচ্ছিলো । চারপাশে গাড়ি চলার আওয়াজ, হর্নের আওয়াজ, লোকজনের আওয়াজ । এরই মদ্ধে দিয়ে হেটে যাচ্ছিলো অনিক । অনেকটা দূর আসার পর অনিক হঠাৎ একটা ১৫ তলা বিল্ডিং দেখতে পেলো ।
পুষ্পিতার রুমে যেয়ে অর্ক বলল, “মা, খাওয়া দাওয়া করবে না?” পুষ্পিতা বলল, “তোর এতো খিদা লাগলে খা না!” অর্ক কিছু বলল না । বাবার ঘরে এলো । দরজার সামনে এসে জিজ্ঞেস করলো, “বাবা, আসবো?” গালিব দুঃখের সময়টাতেও হালকা হাসবার চেষ্টা করে বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ! আয় ।” অর্ক বাবার পাশে যেয়ে বসলো । বলল, “আচ্ছা বাবা, সবাই পরীক্ষার আগে পড়াশোনা করে, কিন্তু পরীক্ষার পর আর পড়াশুনা করে না কেন?” গালিব জানতে চাইলো, “হঠাৎ এ কথা?”
“না এমনি । জবাবটা দাও ।”
“কেন আবার? পরীক্ষার আগে পড়ে ভালো রেজাল্টের জন্য, পরীক্ষা শেস হলে পড়ে কি লাভ, যা পরীক্ষা দিয়ে এসেছে তা তো আর পরিবর্তন হবে না ।” অর্ক বলল, “ঠিক তাই । তুমি আমাদের সবার খেয়াল রাখো । আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করো । এখন আমরা বড় হয়েছি । নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নেই, তোমরা বাঁধা দাও না । ভাইয়া এখন একটা ভুল করে ফেলেছে, কষ্ট পেয়ে তো আর ভাইয়া যা করেছে তা আর পরিবর্তন হবে না ।” গালিব তখন হালকা হেসে বলল, “আচ্ছা, রেজাল্ট যদি তোর কাছে মনে হয় ভুল এসেছে, তাহলে বোর্ড চ্যালেঞ্জ করে কেন?” অর্ক বলল, “যদি সংশোধন হয় আর রেজাল্ট আরও ভালো হয় তার জন্য ।” গালিব বলল, “ঠিক তাই, অনিক আমার বিপথে চলে গেছে, ওকে এখন ঠিক পথে আনা আমার জন্য চ্যালেঞ্জ ।” অর্ক জানতে চাইল, “কিন্তু বাবা, বোর্ড চ্যালেঞ্জ করেও তো সবসময় নাম্বার বাড়ে না, তাহলে, ভাইয়া কি ভালো হবে?” গালিব বলল, “আমি সেটাই ভাবছিলাম এতক্ষণ, তুই যে বললি, আমি কষ্টে আছি, তা না ।” অর্ক জিজ্ঞেস করলো, “ভাইয়া যদি তোমার কথা না বুঝতে চায়? তাহলে কি করবে?” গালিব বলল, “আচ্ছা, তুই বল, রেজাল্ট খারাপ হলে তুই কি করিস?” অর্ক বলল, “কাঁদি আর মায়ের ঝাড়ি খাই!” গালিব হালকা হাসলো । তারপর বলল, “আরে না, সেটার কথা বলছিনা । রেজাল্ট খারাপ হলে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, এই পরীক্ষার ভুলগুলো আসছে পরীক্ষাগুলোতে শুধরে নিতে । তাহলে তুই-ই বল? তোর ভাই আমার কথা না বুঝলে কি করা উচিৎ?” অর্ক বলল, “ভাইয়ের এবারের ভুল পরের বার শুধরে নেয়া?” গালিব বলল, “ঠিক তাই ।” অর্ক জানতে চাইলো, “কিন্তু কিভাবে করবে সেটা?” গালিব বলল, “তোর ভাই যদি সত্যিই ওই মেয়েটাকে ভুলতে না পারে, তবে তোর ভাইয়ের সাথে ওই মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেবো । এতে আগে ওদের যে ভুল ছিল, অবৈধ মেলামেশা, সেটা এবার শুধরে গিয়ে বৈধ হয়ে যাবে ।” অর্ক বলল, “বুঝলাম, কিন্তু ওই আপুর বাবা, মানে তোমার বস, এই সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন তো?” গালিব চুপ হয়ে গেলো । অর্ক কিছু বললও না আর বাবাকে । কারণ ও বুঝতে পেরেছে, এ প্রশ্নের জবাব ওর কাছেও নেই ।
রাতের কথা । মোবাইল চালাছিলো আরশি, এমন সময় ওকে ডাকলো পুষ্পিতা । “আরশি! এই আরশি!” আরশি “যাই মা!” বলে উঠে মায়ের কাছে গেলো । জিজ্ঞেস করলো, “কি হইছে, ডাকলা কেনো?” পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “অনিক আসে নাই এখনও?” আরশি জবাব দিল, “না ।” পুষ্পিতা বলল, “কয়টা বাজে দেখছিস!” আরশি দেখল, রাত সাড়ে ১১টা বাজে । পুষ্পিতা বলল, “ছেলে আমার কোথায় যে গেলো” আরশি বলল, “চলে আসবে মা! চিন্তা করো না ।” পুষ্পিতা বলল, “এমনি এমনি কি চিন্তা করছি! ছেলে আমার কতো কষ্টে আছে! যদি উল্টা পাল্টা কিছু করে বসে!” আরশি বলল, “যখন ছেলেকে একা রেখে আসলা তখন খেয়াল ছিলো না?” বলে আরশি সেখান থেকে চলে গেলো ।

আগামী পর্বেঃ
রাত ২টার দিকের কথা । ছেলের চিন্তায় ঘুম আসছে না পুষ্পিতার । গালিবেরও একই অবস্থা । একটা সময় হঠাৎ গালিব ড্রইং রুমে যেয়ে লাইট অন করে ড্রয়িং রুমের লাইট জালিয়ে সোফায় বসে পেপার পড়তে লাগলো । দরজা খুলতে দেখেই পুষ্পিতা বুঝল, গালিব ছেলের অপেক্ষায় বসে আছে । পুষ্পিতাও এক ঝুড়ি শাক নিয়ে সোফায় বসলো । গালিব পুষ্পিতাকে দেখে বলল, “ঘুম আসছে না তোমার খেয়াল করেছি, কিন্তু এখানে এলে যে?” পুষ্পিতা বলল, “তুমি যে কারণে এসেছো, আমিও সে কারণে এসেছি । শাক বাছাটা সময় পার করার জন্য ।”
×
বাবা(পর্ব-২৪)

বলে আরশি সেখান থেকে চলে গেলো । পুষ্পিতা বিছানা থেকে উঠে ড্রইং রুমে গেলো । গালিবকে ডাকল, “অনিকের বাবা! এই অনিকের বাবা! কোথায় তুমি?” অর্ক তখন এসে বলল, “বাবা বেড়িয়েছেন ।” পুষ্পিতা তখন রেগে গিয়ে বলল, “কি! তোর বাবার কি মন বলে কিছুই নেই! ছেলে তার ভুল করেছে ঠিকই! কিন্তু ছেলে তো তারই!” অর্ক বলল, “আহ মা! বাবা ভাইয়ারই খোঁজ করতে গেছে!” পুষ্পিতা বলল, “ও, তাও ভালো । আমাকে বলে যাই নি কেন?” অর্ক বলল, “বাবা-ও বেশ টেনশনে ছিল, তাই বলে নি ।” পুষ্পিতা বলল, “ও আচ্ছা । তুই খেয়েছিস?” অর্ক বলল, “না ।” পুষ্পিতা বলল, “তাহলে তখন জিজ্ঞেস করলি কেন আমাকে খাওয়ার কথা?” অর্ক বলল, “সবার কথা জিজ্ঞেস করছিলাম, খেয়েছে কিনা, আমি বলিনি আমি খাবো ।” পুষ্পিতা বলল, “ও, তাহলে চল । খাওয়া দাওয়া করে নেই । আরশিকে ডাক ।”
এদিকে রাস্তায় রাস্তায় সবাইকে ছবি দেখিয়ে দেখিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে অনিককে খুজে বেড়াচ্ছিল গালিব । খুজতে খুঁজতে হঠাৎ রাস্তার পাশে দারিয়ে হতাশ হয়ে গেলো । মনে মনে বলল, “ছেলে আমার গেলো কোথায়!”
খাওয়া দাওয়া শেষ করে পুষ্পিতা, অর্ক আর আরশি বসে ছিল ড্রয়িং রুমে । অনিক আর গালিবের অপেক্ষায় । একটু পর আরশি উঠে বলল, “আমার ঘুম পাচ্ছে । ঘুমোতে গেলাম ।” বলে আরশি নিজের রুমে চলে গেলো । আরশি চলে গেলে পুষ্পিতা বলে উঠলো, “হায়রে! আমার মেয়েটা যে দিন দিন কি হয়ে যাচ্ছে!” অর্ক মনে মনে বলল, “মেয়েকে মাথায় না তুলে বাবার মতো ছোটবেলা থেকেই যদি একটু শাসন করতে, তাহলেই আজ এমন হতো না ।” একটু পর দরজা খুলে গালিব ঢুকল ঘরে । পুষ্পিতা আর অর্ক উঠে গেলো বাবার কাছে । পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “কি হল! অনিককে পেলে?” গালিব বলল, “না ।” অর্ক চিন্তিত হয়ে বলে উঠলো, “ইশ! ভাই কোথায় যে গেলো!” গালিব বলল, “চিন্তা কোরো না । ২৪ ঘণ্টা দেখতে হবে, তাছাড়া উপায় নেই । ২৪ ঘণ্টা না হলে কেস করা যাবে না ।” পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “তুমি খাবে না?” গালিব বলল, “না, এখন খাওয়ার ইচ্ছে নেই ।” বলে গালিব নিজের রুমে চলে গেলো ।
রাত ২টার দিকের কথা । ছেলের চিন্তায় ঘুম আসছে না পুষ্পিতার । একবার এপাশ ফিরছে, একবার ওপাশ ফিরছে, তবুও যেন মন থেকে ছেলের চিন্তা যাচ্ছেই না । গালিবেরও একই অবস্থা । তবে গালিব ঘুমানোরও চেষ্টা করছে না, হেলান দিয়ে বসে আছে পুষ্পিতার পাশেই । অর্ক নিজের রুমে মোবাইলের ভাইয়ের সাথে পুরনো কিছু স্মৃতির ভিডিও দেখছে । আর মনে মনে প্রার্থনা করছে, “আল্লাহ! ভাই যেখানে থাকে, যেন ভালো থাকে ।”
একটা সময় হঠাৎ গালিবের ইচ্ছে হল, ড্রয়িং রুমে যেয়ে দরজা খোলা রেখে বসতে, ছেলে আসলে যেন ছেলেকে দরজা খোলবার অপেক্ষা না করতে হয় । তাই গালিব চলে গেলো ড্রইং রুমে । পুষ্পিতা ব্যাপারটা খেয়াল করে উঠে বসলো । সে-ও গেলো স্বামীর পিছু পিছু । আড়াল থেকে দেখল, গালিব ড্রইং রুমের লাইট অন করে ড্রয়িং রুমের লাইট জালিয়ে সোফায় বসে পেপার পড়তে লাগলো । দরজা খুলতে দেখেই পুষ্পিতা বুঝল, গালিব ছেলের অপেক্ষায় বসে আছে । পুষ্পিতাও এক ঝুড়ি শাক নিয়ে সোফায় বসলো । গালিব পুষ্পিতাকে দেখে বলল, “ঘুম আসছে না তোমার খেয়াল করেছি, কিন্তু এখানে এলে যে?” পুষ্পিতা বলল, “তুমি যে কারণে এসেছো, আমিও সে কারণে এসেছি । শাক বাছাটা সময় পার করার জন্য ।” গালিব কিছু বলল না । একটু পর হঠাৎ পুষ্পিতা বলল, “তোমার মনে আছে, ছোটবেলায় অনিক একবার তোমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো, তোমার আমার দেখা কি করে হয়েছে!” গালিব বলল, “থাকবে না আবার, বলেছিলাম তোমার মাকে আমি বৃষ্টির দেশ থেকে নিয়ে এসেছি । তারপর কি যে বায়না ধরলো বৃষ্টির দেশে যাওয়ার!”
“হ্যাঁ! তখন আমি বলেছিলাম তুই যা, সেখানে গেলে মা বাবাকে ছাড়া থাকতে হয়ে ।” বলল পুষ্পিতা ।
“তারপর সে কি কান্ন! বলেছিল তোমাদের ছাড়া আমি থাকতেই পারবো না!” বলল গালিব ।
“আর আজ ও আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, একটা মেয়ের জন্য ।” বলল পুষ্পিতা ।
গালিব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল ।
প্রায় ১ ঘণ্টা পরের কথা । ঘড়িতে সময় তখন আড়াইটা । গালিব খেয়াল করলো পুষ্পিতা ঝিমোচ্ছে । গালিব বলল, “অনিকের মা!” পুষ্পিতা তন্দ্রা ভেঙ্গে তাকাল গালিবের দিকে । গালিব বলল, “যাও ঘুমিয়ে পড়ো ।” পুষ্পিতা বলল, “তুমি ঘুমোবে না?” গালিব বলল, “হ্যাঁ চলো। আমিও ঘুমোবো ।” বলে দুজনে উঠে দরজা লাগিয়ে লাইট অফ করে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ল । রাত সাড়ে ৩টা । গালিব আর পুষ্পিতা ঘুমিয়েই গেছে । অর্কর তখনও ঘুম আসে নি । রাফিদের সাথে চ্যাটিং করছে । রাফিদের কাছে জানতে পারলো আকবর আলি তার মেয়েকে তার-ই ঘরে হাত পা বেধে রেখে দিয়েছে, এতে সে যেন কোথাও যেতেও না পারে, আবার উল্টোপাল্টা কিছু করতেও না পারে । এমন সময় অর্ক একটা গাড়ির আওয়াজ পেল । জীপ গাড়ির আওয়াজ । তারপরই হালকা কথাবার্তার আওয়াজ । কথাগুলো বোঝা না গেলেও কথা যে হচ্ছে, তা বোঝাই যাচ্ছে । গালিব জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখল, বিল্ডিং এর কেয়ার টেকার ওদের বাসার দিকেই ইশারা করে দেখাতেই পুলিশ বিল্ডিং-এ ঢুকে গেলো । অর্কর বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো । কোন খারাপ খবর না তো!

আগামী পর্বেঃ
একটু পর কলিংবেলের আওয়াজ । অর্ক দরজা খুলতেই সামনে থাকা ইনস্পেক্টর বলল, “তোমার বাবা মাকে একটু ডাকো ।” অর্ক বাবা মায়ের দরজায় যেয়ে নক করলো । একটু পর গালিব দরজা খুলল । পুষ্পিতা-ও উঠে পড়েছে । অর্ক বলল, “পুলিশ এসেছে! তোমাদের খুজছে!” পুষ্পিতা আর গালিব দৌড়ে ড্রইং রুমের দিকে গেলো । অর্কও গেলো সাথে । ইনস্পেক্টর তখন বলল, “ফুডপ্লাস রেস্টুরেন্টের রোড ধরে একটু এগিয়ে একটা ব্রিজের পাশে ১০তলা বিল্ডিং থেকে লাফ দিয়ে আপনাদের ছেলে আত্মহত্যা করেছে ।”
×
বাবা(পর্ব-২৫)

কোন খারাপ খবর না তো! অর্ক ড্রয়িং রুমের দিকে এগিয়ে আসতেই একটু পর কলিংবেলের আওয়াজ । অর্ক মনে মনে বলল, “আল্লাহ! সেই পুলিশ নাকি!” দরজার সামনে এসে উঁকি দিয়ে দেখল, সত্যিই সেই পুলিশ । অর্ক মনে মনে বলল, “আল্লাহ! কিছু যেন খারাপ না হয়!” দরজা খুলতেই সামনে থাকা ইনস্পেক্টর জিজ্ঞেস করলো, “এটা কি মিস্টার গালিবের বাড়ি?” অর্ক বলল, “জি!”
“তুমি কে?” জিজ্ঞেস করলো ইনস্পেক্টর ।
“আমি উনার ছোট ছেলে, অর্ক!” বলল অর্ক ।
“তোমার বাবা মাকে একটু ডাকো ।”
অর্ক বাবা মায়ের দরজায় যেয়ে নক করলো । ওর বাবা মা অনেকক্ষণ ঘুমহীন থেকে অবশেষে ঘুমিয়েছে, তাই অল্পক্ষণেই তারা গভীর ঘুমে নিমজ্জিত হয়ে গেছেন । দরজায় নক করতে করতে অর্ক ডাকছিলও, “মা! বাবা! মা! ওঠো!” নক করার আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙ্গে উঠে এলো আরশি । বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো, “সমস্যা কি তোমার? ঘুমাতে দিবা না?” অর্ক ওর কথার জবাব না দিয়ে দরজায় নক করতে লাগলো । আরশি, “যত্তসব” বলে রুমে ঢুকে গেলো । একটু পর গালিব দরজা খুলল । পুষ্পিতা-ও উঠে পড়েছে । অর্ক বলল, “পুলিশ এসেছে! তোমাদের খুজছে!” অর্ক আর পুষ্পিতা একই সাথে চিৎকার করে উঠলো, “কি!!” আরশি বিছানার দিকে যাচ্ছিলো, অর্কর কথা শুনে দাঁড়িয়ে গেলো । মনে মনে বলে উঠলো, “পুলিশ এতো রাতে! অনিক ভাইয়ার আসলেই কিছু হয়ে গেলো না তো!” পুষ্পিতা আর গালিব দৌড়ে ড্রইং রুমের দিকে গেলো । অর্কও গেলো সাথে । ইনস্পেক্টর তখন একটা ভাঙ্গা মোবাইল আর মানিব্যাগ গালিবের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “দেখুন তো, এগুলো চিনতে পারেন কিনা ।” গালিব আর পুষ্পিতা ভালো করে দেখলো জিনিস দুটো । চিনতে ভুল হল না । গালিবের কষ্টের উপার্জিত টাকায় ছেলের জন্য কেনা সেই আইফোন । আর মানিব্যাগটাও অনিকেরই । গালিব দুশ্চিন্তার সাথে বলল, “হ্যাঁ! এটা তো আমার ছেলে, অনিকের! অনিক কোথায়!” পুষ্পিতা কান্না মাখা স্বরে বলে উঠলো, “আমার ছেলের কিছু হয় নি তো!” ইনস্পেক্টর তখন বলল, “ফুডপ্লাস রেস্টুরেন্টের রোড ধরে একটু এগিয়ে একটা ব্রিজের পাশে ১০তলা বিল্ডিং থেকে লাফ দিয়ে আপনাদের ছেলে আত্মহত্যা করেছে ।” গালিব সোফায় বসে পড়লো । চখ দুটো ভয়ে আর কষ্টে বড় বড় হয়ে গেলো । মুখ কিঞ্চিৎ খোলা । শ্বাস আটকে যাবার মতো অবস্থা তাই মুখ দিয়ে শ্বাস নিচ্ছে । পুষ্পিতা কথা শুনেই জ্ঞান হারালো । অর্ক মাকে ধরে সোফায় শোয়ালো । আরশি একটা চেয়ার টেনে বসে কাঁদতে শুরু করলো । অর্কও মেঝেতে বসে কান্নাকাটি শুরু করলো । কিছুক্ষণ ইনস্পেক্টর কিছু বলল না । একটু পর ইনস্পেক্টর অর্ককে ডাকল । অর্ক উঠে চোখ মুছে কাছে এলো । ইনস্পেক্টর বলল, “শোনো, আমি লাশটা সাথে আনিনি কারণ আমি শিওর হতে এসেছিলাম আসলেই তোমার ভাই কিনা । শিওর হবার পর আমি অ্যাম্বুলেন্সে লাশটা আনতে বলেছি । প্রস্তুত থেকো লাশটা বাসায় তোলার জন্য ।” অর্ক কিছু বলতে পারলো না । অতীতের একটা স্মৃতিতে চলে গেলো ।
বছর ২ আগের ঘটনা । অর্ক তখন ছাদে দাঁড়িয়ে মোবাইল চালাচ্ছিলো । এমন সময় অনিক এসে বলেছিলো, “কিরে! কার সাথে কথা বলিস?”
“কার সাথে আবার, ফ্রেন্ডের সাথে!” জবাব দিয়েছিলো অর্ক ।
“ফ্রেন্ড? নাকি গার্লফ্রেন্ড?”
“ধুরু! কি সব যে বলো না! আমার ফ্রেন্ডলিস্টে মেয়ে ফ্রেন্ড-ই নাই, গার্লফ্রেন্ড তো দুরের কথা ।”
“আচ্ছা! গার্লফ্রেন্ড হলে ফ্যামিলির থেকে ওপরে স্থান দিস না”
“সে চিন্তা বাদ দাও, আমি সরাসরি বিয়ে করবো । এসব বিয়ের আগে প্রেম ট্রেম আমার ভালো লাগে না ।”
“কখন যে কে কি হয়ে যায়, তার কিন্তু ঠিক নেই বুঝলি!” বলেছিল অনিক ।
অতীত থেকে ফিরে এলো অর্ক । ওর ভাই বলেছিলো যা, তা আজ ওর ভাই-ই হয়ে গেলো! ইনস্পেক্টর অর্ককে আবার বলল, “কি, কথা কি শুনেছো?” অর্ক ওপর নিচ হালকা করে মাথা নাড়ল । ইনস্পেক্টর বলল, “আমি দুঃখিত, জানি তুমি কষ্টে আছো, কিন্তু ফ্যামিলির কারো সাপোর্ট না পেলে তো কিছু করা সম্ভব না ।” অর্ক কিছু বলল না ।
আধ ঘণ্টার মধ্যে অ্যাম্বুলেন্সে চলে এলো পুষ্পিতার গগনবিদারী চিৎকার । “আমার ছেলে কোথায় গেলো গো! আমার ছেলের কি হল গো! আমি ছেলেকে ছাড়া কেমনে বাঁচবো!” ময়না ভাবি এসেছে খবর শুনে । পুষ্পিতাকে যতোটা পারছে শান্তনা দিচ্ছে । গালিবও নিঃশব্দে কাঁদছে । আর আরশি সেই যে চেয়ারে বসে কাঁদছিল, এখনও সেখানে বসেই কাঁদছে । একটু পর ইনস্পেক্টর অর্ককে বলল চলো । অর্ক গেলো ইনস্পেক্টরের সাথে । অ্যাম্বুলেন্সের পেছনের পাল্লা খোলা হল । বের করা হল সাদা কাফনে মোড়ানো লাশ । অর্ক বলল, “একটু দেখি মুখটা?” ইনস্পেক্টর বলল, “ওপরে যেয়ে দেখো । এখন দেখলে প্রচণ্ড ভেঙ্গে পড়তে পারো ।” আরেকজন কনস্টেবল অর্কর হাতে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দিল যাতে ছিলো অনিকের পড়নের জামা কাপড় । ব্যাগটা আর খুলল না অর্ক । বাসায় নিয়ে যেয়ে লাশের বুকের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়লো পুষ্পিতা । গালিব কষ্ট সহ্য করতে না পেরে চোখ বন্ধ করে আরও কান্নাকাটি শুরু করে দিল । অর্ক ব্যাগটা আরশির একটু পাশেই রেখে মায়ের পাশে বসলো ।

আগামী পর্বেঃ
ইনস্পেক্টর বললেন, “আপনারা তাড়াতাড়ি চেহারা দেখে নিন । লাশটা আবার পোস্ট মর্টেম এর জন্য নিয়ে যেতে হবে ।” একজন পুলিশ লাশের মাথার কাছের কাফনের কাপড়ের গেড়ো খুলল । পুলিশ মুখের কাপড় সরাতে লাগলো । লাশের মুখ খোলা হলে আরশি আর অর্ক একসাথে চিৎকার করে উঠলো ।
×
বাবা(পর্ব-২৬)

অর্ক ব্যাগটা আরশির একটু পাশেই রেখে মায়ের পাশে বসলো । তারপর কান্নাকাটি শুরু করলো । আরশি তখন হঠাৎ ব্যাগটার দিকে তাকাল । জামাকাপড়গুলো ঠিক চেনা লাগছে না তো! ইনস্পেক্টর বললেন, “আপনারা তাড়াতাড়ি চেহারা দেখে নিন । লাশটা আবার পোস্ট মর্টেম এর জন্য নিয়ে যেতে হবে ।” একজন পুলিশ লাশের মাথার কাছের কাফনের কাপড়ের গেড়ো খুলল । সে সময় আরশি জামাকাপড়ের ব্যাগটা হাতে নিল । জামাকাপড় বের করার জন্য ব্যাগে হাত ঢোকালো । সে সময় পুলিশ মুখের কাপড় সরাতে লাগলো । আরশি জামাকাপড় হাতে নিলো, এটা তো ওর ভাই শেষ দিন পড়ে নি! লাশের মুখ খোলা হলে অর্ক খেয়াল করলো, এটা তো ওর ভাই না! তখন আরশি আর অর্ক একসাথে চিৎকার করে উঠলো, “এ আমাদের ভাই না!” ঘটনা দেখে চমকে উঠলো সবাই । মুখটা থেঁতলে গেলেও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিলো এটা ওর ভাই না । গালিব মনে মনে “আলহামদুলিল্লাহ!” বললেও কান্না থামলো না । পুষ্পিতা কান্না থামিয়ে দিল । ইনস্পেক্টর তখন আরেকজন পুলিশকে বলল, “তাহলে কি ওই ছেলেটা উনাদের অনিক?” অর্ক জিজ্ঞেস করলো, “কার কথা বলছেন আপনি?” ইনস্পেক্টর বলল, “না, যে বিল্ডিংএর নিচে এই ছেলেকে পাওয়া গেছে সেই বিল্ডিং এর ছাদে আরেকটা ছেলে ছুরিকাঘাতে আহত অবস্থায় পাওয়া গেছে । ঢাকা মেডিকেলে আছে সে । এই ছেলের মানিব্যাগ আর মোবাইল আপনাদের ছেলের সাথে মিলে যাওয়ায় ওই ছেলের কথা এই মুহূর্তে বলার আর প্রয়োজনবোধ করিনি ।” গালিব অর্ককে বলল, “অর্ক! চল আমার সাথে ।” পুষ্পিতা বলল, “আমিও যাবো!” গালিব বলল, “যাবে, তবে এখন না, আগে শিওর হয়ে আসি ।” বলে গালিব আর অর্ক মোটরসাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো । ঢাকা মেডিকেলে এসে জানতে পারলো এখনও অনিক ওটিতে আছে । একজন ডাক্তারকে গালিব জিজ্ঞেস করলো, “ডক্টর! আমার ছেলের কি হয়েছে যে ওটি তে নিয়ে আসা হয়েছে?” ডাক্তার বলল, “ভয় পাবেন না । আসলে উনার ডান হাতের বাহুতে কাচ দিয়ে কেউ আঘাত করেছে । তাই সেখানে দেখা হচ্ছে কোন কাচের টুকরো ঢুকে আছে কিনা এবং সেই সাথে ড্রেসিং করা হচ্ছে ।”
“আর কতক্ষণ লাগতে পারে ডক্টর?” জিজ্ঞেস করলো অর্ক ।
“ঘন্টাখানেক তো হল ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, খুব বেশিক্ষণ লাগবে বলে মনে হয় না । আধ ঘণ্টা মতো লাগতে পারে আর ।” বলে ডাক্তার চলে গেলো । গালিব আর অর্ক বসে পড়লো । বাইরে তখন ফজরের আজান শোনা গেলো । কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে গালিব অর্ককে বলল, “তুই থাক এখানে, আমি নামাজটা পড়ে আসি ।” অর্ক বসে রইল, গালিব গেলো মসজিদে নামাজ পড়তে । নামাজ শেষে আল্লাহর কাছে দোয়া করলো ছেলের জন্য । তারপর হাসপাতালে এসে দেখল, ওটির লাইট বন্ধ । অর্থাৎ অপারেশন শেষ । গালিব অর্ক করে ফোন করলো । “ হ্যাঁ কই তুই?” অর্ক জবাব দিল, “বাবা, লিফটের ৫ চেপে ৫০৫ নাম্বার কেবিনে এসো ।” গালিব গেলো । বিছানায় শুয়ে অনিক, পাশে অর্ক । ডান হাতের বাহুতে ব্যান্ডেজ করা । এখন ঘুমোচ্ছে । গালিব অনিকের মাথায় কিছুক্ষণ হাত বোলালো । তারপর অর্ককে জিজ্ঞেস করলো, “ডাক্তার কি বললেন?” অর্ক বলল, “ডাক্তার বললেন চিন্তার কিছু নেই, এখন ঘুমাবে, কারণ ঘুমের ওষুধ দেয় হয়েছে । আর ঘুম থেকে উঠলেই আমরা ভাইয়াকে নিয়ে যেতে পারবো ।” গালিব অর্ককে বলল, “তুই এখানে থেকে তিতলি বাসে করে যেতে পারবি না?” অর্ক বলল, “পারবো বাবা ।” গালিব পকেট থেকে টাকা বের করে অর্ককে দিয়ে বলল, “তুই চলে যা তাহলে । আমি ওর পাশে আছি ।” অর্ক না করলো না । বেরোনোর সময় অর্ক একবার বলল, “তোর মা আর আরশি আসতে চাইলে সকালের খাওয়া দাওয়া করে আসতে বলিস ।” অর্ক মাথা ডানে কাত করে চলে গেলো । গালিব ছেলের হাতটা দুত হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে ছেলের হাতে চুমু খেলো । তারপর কান্নামাখা স্বরে বলল, “আমাকে ক্ষমা করে দিস রে! আমি বোধ হয় আদর্শ বাবা হতে পারিনি!” বাড়ি পৌঁছে অর্ক দেখল, পুলিশ লাশ নিয়ে চলে গেছে, বাসায় আসা আসেপাশের প্রতিবেশীরাও চলে গেছে । দরজার কলিংবেল চাপতেই দরজা খুলল পুষ্পিতা । জিজ্ঞেস করলো, “কিরে! আমার ছেলে কেমন আছে!” অর্ক সবটা বলল । পুষ্পিতা বলল, “আমি যাবো ওর কাছে!”
“বাবা তোমাদের সকালের নাস্তা খেয়ে যেতে বলেছে ।” বলল অর্ক ।
“তোর বাবা এতো নিকৃষ্ট কেন! আমার ছেলের এই অবস্থা! আর আমাকে খেয়ে যেতে বলেছে!” হালকা রাগ নিয়ে বলল পুষ্পিতা ।
“বাবা তোমাদের খেয়ে যেতে বলেছে যেখানে উনি নিজে না খেয়ে বসে আছে! আর ভাইয়ের শারীরিক অবস্থাও এতোটা খারাপ না!” বলে নিজের রুমে চলে গেলো অর্ক । পুষ্পিতা দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে রইল ।

আগামী পর্বেঃ
“সেই লাশের পরিবারের লোকেদের পেয়েছেন?” জানতে চাইলো গালিব ।
“হ্যাঁ পেয়েছি । বুঝেছি আত্মহত্যা করেছে, তখনই ছাদে যেয়ে আপনার ছেলেকে সেখানেই পেলাম ।” বলল ইনস্পেক্টর ।
“সেখানেই পেলেন মানে!” জানতে চাইলো গালিব ।
“মানে একটাই কারণ আপাতত আমি দেখছি, এই ছেলেটাকে আপনার ছেলে হয়তো ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে!”
গালিব রেগে গিয়ে দাঁড়িয়ে যেয়ে বলল, “ইম্পসিবল! আমার ছেলে তখন নিজেই ডিপ্রেশনের ভেতর ছিল! আমার ছেলে কেন এসব করতে যাবে!”
×
বাবা(পর্ব-২৭)

পুষ্পিতা দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে রইল ।
সকালে ৭টার দিকে চামেলি এলে খাওয়া দাওয়া শেষে হাসপাতালের দিকে রওনা হল । গালিব সারারাত ঘুমোয় নি । তাই বেশ ঘুম ধরেছে । বেডেই মাথা নিচে করে প্রায় ঘুমিয়ে গেছে । সে সময় বাইরে দিয়ে একজন আরেকজনকে বলছিল, “ভাই, কয়টা বাজে?” অপরজন জবাব দিল, “৭টা ১৫!” ৭টা ১৫ শুনে উঠে পড়লো গালিব । বলে উঠলো, “আহ! ৭টা ১৫ বেজে গেছে! অফিস যেতে হবে তো!” বলে যেই উঠে দাড়াল, তখনই মনে পড়ে গেলো গতকালকের ঘটনা । তারপর আবার বসে পড়লো । ছেলে এখনও ঘুমিয়ে । এমন সময় রুমে ইনস্পেক্টর এলো রুমে । আবির উঠে দাড়ালো । বলল, “আসসালামু আলাইকুম!”
“আরে! বসুন বসুন! ওয়ালাইকুমুস সালাম!” বলে ইনস্পেক্টর ভেতরে এলো । কেবিনে আরেকটা চেয়ার টেনে গালিবের পাশে বসলো ইনস্পেক্টর । তারপর বলল, “ছেলের জ্ঞান ফেরেনি?” গালিব বলল, “জ্ঞান ফেরেনি বলতে, ঘুমোচ্ছে । ঘুমের ওষুধ দেয়া হয়েছে ।”
“যাক! আলহামদুলিল্লাহ । আসার সময় ডাক্তারের সাথেও কথা হল উনিও বললেন, বিপদের কিছুই নেই ।” বলল ইনস্পেক্টর ।
“আপনাকে অনেক ধন্যবাদ স্যার!”
“আরে না না! কি যে বলেন! বরঞ্চ আমিই দুঃখিত, সকালে ভুল বডি নিয়ে যাওয়ার জন্য!”
“সেই লাশের পরিবারের লোকেদের পেয়েছেন?” জানতে চাইলো গালিব ।
“হ্যাঁ পেয়েছি । বুঝেছি আত্মহত্যা করেছে, তখনই ছাদে যেয়ে আপনার ছেলেকে সেখানেই পেলাম ।” বলল ইনস্পেক্টর ।
“সেখানেই পেলেন মানে!” জানতে চাইলো গালিব ।
“মানে একটাই কারণ আপাতত আমি দেখছি, এই ছেলেটাকে আপনার ছেলে হয়তো ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে!”
গালিব রেগে গিয়ে দাঁড়িয়ে যেয়ে বলল, “ইম্পসিবল! আমার ছেলে তখন নিজেই ডিপ্রেশনের ভেতর ছিল! আমার ছেলে কেন এসব করতে যাবে!”
“আহা আপনি শান্ত হোন! আমি বলিনি করেছে! আমি বলেছি করতে পারে ।”
গালিব নিজেকে ঠাণ্ডা করে বসলো । তারপর বলল, “সরি ইনস্পেক্টর ।”
“না ঠিক আছে, এ কথা শুনলে যে কারোই রাগ উঠে যাবে । তবে এই সন্দেহটাকে আমি মানছি না, কারণ আপনার ছেলের হাত কেটে যাওয়া । ওই ছেলেক যদি ধাক্কাই দেয় আপনার ছেলে তবে আপনার ছেলের হাত কাটলো কি করে! নিজেকে বাচাতে নাটক সাজালেও এতো গভীরভাবে নিজের হাত কাটা এতো সোজা না ।” বলল ইনস্পেক্টর । গালিব বলল, “আর আমার ছেলের মানিব্যাগ আর মোবাইল তো এই লোকের কাছে পেয়েছেন! তাহলে ব্যাপারটা কি এমন হতে পারে না, যে আমার ছেলের মোবাইল আর মানিব্যাগ এই ছেলে চুরি করে এনেছে! তারপর তাকে ধরতে গিয়ে সেই বিল্ডিঙে ওঠা, কোনোক্রমে সেই চোর হয়তো আমার ছেলেকে কাচ দিয়ে আঘাত করেছে! তারপর……।” থেমে গেলো গালব ।
“এইখানেই তো সমস্যা! এটা আমিও ভেবেছিলাম, কিন্তু আপনার ছেলে কাচ দিয়ে আঘাত করার পর চোর তো পালিয়ে যাওয়ার কথা । ছাদ থেকে পড়বে কি করে? যদিও এটা যে আসল ঘটনা না তার আরও একটা কারণ আছে ।”
“কি কারণ?” জিজ্ঞেস করলো গালিব ।
ইনস্পেক্টর বলল, “ওই ছেলের পরিবারের লোকেদের কাছে জানতে পারি, ওর নাম সাকিব । ওর বাড়ি আসলে সিলেট । ও এক মেয়েকে পছন্দ করত সাবা নামের । সেই মেয়ে ঢাকায় এসে বিয়ে করেছে । তাই শুনে মেয়েটাকে খুজে সে-ও নাকি গতকাল ঢাকায় এসেছে । এখন মেয়েটাকে খুজে না পাওয়ার জন্য সে কি আত্মহত্যা করলো! কে জানি! কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যেখান থেকে ও লাফ দিয়েছে সেখানে আপনার ছেলে আর ওর কাছে আপনার ছেলের মোবাইল আর মানিব্যাগ কি করে গেলো!”
“কি যে হচ্ছে! আল্লাহই জানেন!” বলল গালিব ।
“আপনার ছেলের জ্ঞান ফিরলেই সবটা জানা যাবে ।” বলল ইনস্পেক্টর । সে সময় ভেতরে এলো পুষ্পিতা আর আরশি । ইনস্পেক্টর উঠে দাঁড়িয়ে পুষ্পিতাকে বলল, “আসসালামু আলাইকুম ভাবি! বসুন এখানে ।” পুষ্পিতা বসলো । তারপর ছেলের হাত ধরে কান্না শুরু করলো । গালিব আরশিকে, “তুইও বোস ।” বলে নিজের চেয়ারটা আরশিকে দিয়ে ইনস্পেক্টরকে বলল, “চলুন আমরা বাইরে যাই ।” ইনস্পেক্টর আর গালিব বাইরে গেলো ।
“আচ্ছা, এখন তাহলে আপনার ছেলে রেস্ট নিক, আমি না হয় পড়ে এক সময় আপনাদের বাসায় এসে সবটা জেনে নেবো ।” বলে ইনস্পেক্টর চলে গেলো । গালিব কেবিনের ফিরে আসতে যাবে এমন সময় গালিবের মোবাইলে একটা কল এলো । নাম ভেসে উঠলো বস । কল ধরতেই ওপাশ থেকে আকবর বলল, “কি মিস্টার গালিব! ঘুমোচ্ছেন? নাকি ছেলেকে শাসন করছেন?”
“স্যার, আমি এখন কিছু বলতে চাই না, আপনি কি জানতে বা কি বলতে কল করেছেন সেটা বলুন ।” বলল গালিব ।
আকবর হালকা হেসে বলল, “রিজাইন লেটার টা নিতে আসছেন তো?” গালিব বলল, “স্বচ্ছন্দে! আপনার মতো একজন বসের আন্ডারে চাকরি করার ইচ্ছেও আমার নেই । দরকার পড়লে আমি রিকশা চালিয়ে খাবো!” আকবর তখন অনেক রেগে গেলো, “তোর এত্তো বড় সাহস! বোকাচ………।” এমন সময় আর কোন আওয়াজ এলো না । গালিব দেখল, মোবাইল অফ হয়ে গেছে । মনে মনে বলল, “আরে! মোবাইলে তো অনেক চার্জ ছিল!” অবশ্য ব্যাপারটা নতুন না । গালিবের নষ্ট মোবাইল মাঝে মাঝেই এমন করে । হালকা হেসে গালিব নিজেই নিজেকে বলল, “যাক! নষ্ট মোবাইল ব্যাবহারের একটা উপকার পেলাম, আমার কানটা আরেকটু হলে অপবিত্র হয়ে যেতো ।” তারপর মোবাইল পকেটে ঢুকিয়ে কেবিনের দিকে গেলো ।

আগামী পর্বেঃ
ব্যাগ থেকে এক প্যাকেট মিষ্টি বের করলো গালিব । তারপর সেখান থেকে একটা মিষ্টি বের করে আকবর আলির দিকে এগিয়ে দিল । আকবর আলি মিষ্টি নিয়ে খেতে খেতে বলল, “এই প্রথম বরখাস্ত হওয়া কাউকে মিষ্টি খাওয়াতে দেখলাম!” গালিব তখন বলল, ”খুব শীঘ্রই আমার ছেলে আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চলেছে, আরও অবাক হবেন এই শুনে, সেটা আপনার সম্মতিতেই ।”
×
বাবা(পর্ব-২৮)

তারপর মোবাইল পকেটে ঢুকিয়ে কেবিনের দিকে গেলো ।
৯টা বাজার পাচ মিনিট আগেই অফিসে পৌঁছে গেলো গালিব । মোটর সাইকেল স্ট্যান্ডে এসে দেখল, জাহিদ দাঁড়িয়ে । “আসসালামু আলাইকুম! কেমন আছেন?” বলে মোটরসাইকেল রেখে চাবি নিয়ে সব কিছু নিতে লাগলো । জাহিদ বলল, “ওয়ালাইকুমুস সালাম, ভালো থাকি কি করে বলেন?”
“কেন কি হয়েছে?” জিজ্ঞেস করলো গালিব ।
“অফিস ঢুকতেই সবার কাছে আপনার ঘটনা শুনলাম । তাই তো ভাবলাম দাঁড়িয়ে থাকি, আপনি এলে একটু একাকী আপনার কথা শুনবো।” বলল জাহিদ ।
“ও । ভাগ্যে লেখা থাকলে হবে ।” বলল গালিব । জাহিদ হালকা বিরক্ত হয়ে বলল, “আরে ভাগ্য তো আমাদের কর্মফলেরই নমুনা! এখন কি আপনি সুইসাইড করতে করতে বলবেন, ভাগ্যে লেখা আছে যে আমি সুইসাইড করবো তাই আমাকে সুইসাইড করতেই হবে?” গালিব মাথা নিচু করলো । বলল, “সরি! কিন্তু আমি অনেক ক্লান্ত রে ভাই!” জাহিদ বলল, “গতকাল সারারাত এই কারণে ঘুম হয় নি, না?” গালিব বলল, “হ্যাঁ, ঘুম হয় নি ঠিকই, কিন্তু কারণটা অন্য ।” “কি?” জানতে চাইলো জাহিদ । গালিব সবটা খুলে বলল জাহিদকে । জাহিদ কিছুক্ষণ কথা শুনে চুপ । তারপর বলল, “আপনি শিওর গতকাল রাতেও খান নি, সকালেও খান নি, তাই না?” গালিব হালকা হেসে জাহিদের দিকে তাকিয়ে বলল, “জানেন, স্কুল জীবনে, কলেজ জীবনে, ভার্সিটি জীবনে কতো বন্ধু পেয়েছি, সব হয়তো এখন ভুলেই গেছে, কিন্তু আপনার মতো এতো ভালো ফ্রেন্ড আমি পাইনি! আমার কখন কি হয় সেটাও আপনি বুঝে যান!” জাহিদ বলল, “কারণ আমিও একজন বাবা!” গালিব বলল, “হুম! আসলেই! আমাদের জীবনটাই কেমন পানসে । কাজ করতে করতে আর পরিবার সামলাতে সামলাতেই যায়! ছেলে মেয়ে গুলো এতো বড় হয়েছে! অথচ ছেলেমানুষিগুলো এখনও যায় নি ।” জাহিদ বলল, “এই দেখুন! ৯টা বেজে গেছে! চলুন! আমিও দেরি করে ফেললাম, আপনার-ও দেরি করিয়ে দিলাম!” গালিব বলল, “ঠিক আছে, সমস্যা নেই । চলুন ।”
নিজের রুমে শুয়ে ছিল অর্ক । এমন সময় ওর মোবাইলে একটা কল এলো । রাসেল ভাই এর কল । “হ্যাঁ আসসালামু আলাইকুম ভাই! বলেন!” রাসেল বলল, “হ্যাঁ ওয়ালাইকুমুস সালাম! অর্ক! তুই কি বাসায়?” অর্ক বলল, “হ্যাঁ ভাই, বাসায় ।” রাসেল বলল, “আচ্ছা শোন, তোর যে প্রোগ্রামটা হবে সেটার ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে । আজ তো রবিবার, আগামী শুক্রবার থেকে প্রতি শুক্রবার রাত ৮টায় তোর প্রোগ্রাম হবে, তো এর জন্য তোর আগে অ্যাডটায় যে শীঘ্রই আসছে! অংশটা ছিল, সেখানে ডেট অ্যানাউন্স করা হবে । তাই তোর অডিও লাগবে । তুই কি এখন স্টুডিওতে আসতে পারবি?” অর্ক বলল, “না ভাই! সরি, আমার আসলে বাসায় একটা ঘটনা ঘটে গেছে ।” রাসেল জিজ্ঞেস করলো, “কি ঘটনা?” অর্ক সমস্তটা খুলে বলল । রাসেল বলল, “ও! আমি দুঃখিত এ সময় তোকে কল দিয়ে কথাগুলো বলার জন্য!” অর্ক বলল, “না ভাই, ঠিক আছে ।”
“আচ্ছা, শোন । তুই তাহলে এক কাজ করিস, মোবাইলেই রেকর্ড করে দিস, আমি তোকে ডাইলোগ আর এক্সপ্রেশন পাঠিয়ে দিচ্ছি ।” বলল রাসেল ।
“আচ্ছা ভাই। ঠিক আছে ।” বলল অর্ক ।
বসের রুমে ঢুকল গালিব । চেয়ারে বসে আকবর আলি । “আসবো মিস্টার আকবর আলি!” আকবর আলি হালকা হেসে বলল, “স্মার্ট ম্যান! চাকরি থেকে যাবার আগেই বসের নাম ধরে ডাকার অভ্যাস করছে! তা নাম ধরেই যখন ডাকলেন, অনুমতি না নিয়েই ঢুকে পড়তেন ।” গালিব বলল, “মাফ করবেন মিস্টার আকবর, অনুমতি না নিয়ে কিছু করে বসাটা আপনার কাজ আমার না । আপনি নিজের পারিবারিক ম্যাটার এর জন্য আমাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করছেন! আপনি আমাদের এই সানরাইজ কোম্পানির প্রধান অফিস থেকেও কোন অনুমতি নেন নি!” আকবর হাল্কা রেগে গিয়ে বলল, “আপনি কি আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন?” গালিব বলল, “না আপনি আমাকে ভয় পাচ্ছেন!” কিছুক্ষণ আকবর গালিবের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল । তারপর বলল, “ভেতরে এসে বসুন ।” গালিব ভেতরে যেয়ে বসলো । আকবর আলি তখন একটা কাগজ গালিবের হাতে দিয়ে বলল, “এই নিন মিস্টার গালিব! আপনার বরখাস্তনামা! ইউ আর ফায়ারড ফ্রম মাই অফিস!” গালিব হাসিমুখে সেটা হাতে নিয়ে বলল, “অনেক ধন্যবাদ মিস্টার আকবর আলি!” বলে ব্যাগ থেকে এক প্যাকেট মিষ্টি বের করলো গালিব । তারপর সেখান থেকে একটা মিষ্টি বের করে আকবর আলির দিকে এগিয়ে দিল । বলল, “নিন, একটু মিষ্টি মুখ করুন ।” আকবর আলি আবারও হেসে উঠলো । তারপর মিষ্টি নিয়ে খেতে খেতে বলল, “এই প্রথম বরখাস্ত হওয়া কাউকে মিষ্টি খাওয়াতে দেখলাম!” গালিব তখন বলল, “না, এটা আমি বরখাস্ত হয়ে যাবার মিষ্টি না । এটা বিয়ের মিষ্টি মিষ্টি ।” আকবর আলি আবার হেসে উঠলো, “বিয়ে! না মানে আপনার কাছে টাকা পয়সা আছে তো বিয়ে দেবার! নাকি আপনিই আবার বিয়ে করছেন?” গালিব হালকা হেসে বলল, “কি যে বলেন না, সবাই কি আপনার মতো চিন্তা ভাবনা পোষণ করে? যাই হোক, জানতে চাইলেনই যখন, তখন বলেই দেই, খুব শীঘ্রই আমার ছেলে আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চলেছে, আর আপনি হতে চলেছেন আমার ছেলের শ্বশুর! আরও অবাক হবেন এই শুনে, সেটা আপনার সম্মতিতেই!” আকবর আলি চোখ বড় বড় করলো । প্রচণ্ড রাগ ধরেছে তার!

আগামী পর্বেঃ
গালিব যে কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করতো, সেই কম্পিউটার টেবিলের ওপর ওর কিছু দরকারি জিনিসপত্র রাখা ছিল । সেগুলোই আনতে গিয়ে দেখল, পুরো অফিস ফাঁকা! গালিব অবাক হয়ে গেলো, কি ব্যাপার! সবাই গেলো কোথায় । সে সময় দারোয়ান বাইরে থেকে এসে গালিবের পাশ দিয়ে দৌড়ে আকবর আলির রুমে গেলো । গিয়ে চেচিয়ে বলল, “স্যার! অপিসের সব কম্মচারি বিক্ষোভ করতাছে! আপনি যতক্ষণ গালিবরে তার সম্মান পিরায় না দিবেন, ততোক্ষণ তারা কাজ কইরবে না!”
×
বাবা(পর্ব-২৯)

প্রচণ্ড রাগ ধরেছে তার! সেই রাগ বের করে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে দাড়িয়ে উচ্চস্বরে বলে উঠলো, “গেট লস্ট! আমার সামনে থেকে চলে যান! আপনার চেহারা যেন না দেখি!” গালিব আর কিছু না বলে মিষ্টির প্যাকেটটা টেবিলে রেখে বলল, “এটা রেখে গেলাম, বাড়ির সবাইকে খাইয়ে দিয়েন ।” আকবর আলি মিষ্টির প্যাকেটটা ছো মেরে ফেলে দিতে নিলেও তার আগেই সেটা হাতে নিলো আবির । তারপর বলল, “সো সরি মিস্টার আকবর আলি, আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম, কুকুকের পেটে ঘি হজম হয় না! আসি হ্যা?” বলে রুম থেকে বেরোল গালিব । আকবর আলি প্রচণ্ড রাগে ফুঁসতে লাগলো ।
গালিব যে কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করতো, সেই কম্পিউটার টেবিলের ওপর ওর কিছু দরকারি জিনিসপত্র রাখা ছিল । সেগুলোই আনতে গিয়ে দেখল, পুরো অফিস ফাঁকা! গালিব অবাক হয়ে গেলো, কি ব্যাপার! সবাই গেলো কোথায় । সে সময় দারোয়ান বাইরে থেকে এসে গালিবের পাশ দিয়ে দৌড়ে আকবর আলির রুমে গেলো । গিয়ে চেচিয়ে বলল, “স্যার! অপিসের সব কম্মচারি বিক্ষোভ করতাছে! আপনি যতক্ষণ গালিবরে তার সম্মান পিরায় না দিবেন, ততোক্ষণ তারা কাজ কইরবে না!” বসে রুম থেকে দারোয়ানের কথা শুনতে পেল গালিব । বাইরে যেয়ে দেখল আসলেই তাই! অফিসের সবাই পথ আটকে বিক্ষোভ করছে । আর নেতৃত্ব দিচ্ছে আর কেউ নাই, গালিবের কলিগ, জাহিদ । সবাই শ্লোগান দিচ্ছে, “অন্যায় অবিচার মানছি না, মানবো না! গালিবকে তার সম্মান দিতে হবে, দিতে হবে!” আবির কাছে গেলো । জাহিদকে বলল, “এসব কি হচ্ছে ভাই!” জাহিদ বলল, “আপনি হয় চুপচাপ এখানে দাঁড়ান নয়তো কোন কাজ থাকলে চলে যান, কিন্তু আমাদের বাঁধা দেবেন না!” গালিব বলল, “কিন্তু এটার কি কোন দরকার ছিল?” জাহিদ বলল, “ছিল কেন বলছেন, দরকার আছে!” গালিব বলল, “ ভাই প্লিজ! বাদ দেন না!” জাহিদ বলল, “পানিতে যখন নেমেই পড়েছি, সাঁতার তো তখন কাটতেই হবে, থামলে যে ডুবেই যাবো!” গালিব আর কিছু বলতে পারল না । উনারা শ্লোগান দিয়েই চললেন । কিছুক্ষণের মদ্ধে খবর পেয়ে সাংবাদিক এসে জড়ো হল । একে একে সকলের কাছে জানতে চাইলো, তাদের বিক্ষোভের কারণ জানতে চাইলো । তারা কথা বলল গালিবের সাথেও ।
অনিকের কেবিনে বসে পুশপিতা । আরশিকে কিছু টাকা দিয়ে বলল, “আরশি, যা তো, এক বোতল পানি কিনে আন । খুব পিপাসা পেয়েছে ।” আরশি টাকা নিয়ে দোকানে গেলো । দোকানে টিভি চলছিলো, টিভিতে খবর । লাইভ দেখাচ্ছে বিক্ষোভের সংবাদ, শ্লোগান দিয়েই চলেছে বিক্ষোভে অবস্থানরত সকলে । আর সেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে গালিবকে, এমনকি হেডলাইনেও গালিবের নাম লেখা, “পারিবারিক ঝামেলার জেরে অফিসের কর্মচারী গালিবকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করায় বিক্ষোভে নেমেছে অফিসের অন্যান্য কর্মচারীরা ।” আরশি পানি নিয়ে তাড়াতাড়ি গেলো পুষ্পিতার কাছে । কেবিনে একটা টিভি ছিল । পানির বোতল পুষ্পিতার হাতে দিয়ে সে রিমোট খুজতে লাগলো । পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করল, “কিরে! কি খুঁজছিস!” আরশি বলল, “এই টিভিটার রিমোট!” পুষ্পিতা বিরক্ত হয়ে বলল, “তোর ভাইয়ের এই অবস্থা, আর তোর টিভি দেখার শখ জেগেছে!” আরশি বলল, “আরে না মা!” রিমোট পেয়ে গেলো আরশি একটা টেবিলের ড্রয়ারে । টিভি অন করে মা-কে বলল, “এই দ্যাখো!” সেই লাইভ খবর এখনও চলছে । পুষ্পিতা বলল, “আল্লাহ! সব যেন ঠিক হয়ে যায়!”
“তাহলে! দেখা হচ্ছে আপনাদের সাথে! এই শুক্রবার শুধুমা……আরে! এই জায়গায় আগে সময় বলতে হবে! ধুর!” এক্সপ্রেশন দিয়ে বিজ্ঞাপনের রেকর্ড করছিল অর্ক এমন সময় ওর কাছে একটা কল এলো, রাফিদের কল, “দোস্ত! টিভিটা একটু ওপেন কর!” অর্ক টিভি অন করলো! তারপর সে-ও দেখতে লাগলো লাইভ খবর ।
এদিকে আকবর আলি অফিসে নিজের রুমে বসে টেনশন করছে । হাত পা কাঁপছে । সাথে শুধু দারোয়ান । আকবর আলি বলছে, “কি যে হবে! কি যে হবে! আমার চাকরিটা না চলে যায়! একটু বেশিই করে ফেলেছি মনে হয়!” দারোয়ান বলল, “স্যার, পানি খাবেন!” আকবর বলল, “তুমি এখানে কি করছো!” দারোয়ান হালকা হেসে বলল, “বলল, ”স্যার! আমি আপনের পক্ষে! বেতন বাড়াইয়া দিয়েন স্যার!” আকবর আলি বলল, “ওরে ধান্দাবাজ! ভাগ! আমারই চাকরি থাকে কিনা তাই নিয়া সন্দেহে আছি!”
বিক্ষোভের এক পর্যায়ে গাড়ি নিয়ে কেউ একজন হাজির হল । কেউ একজন । জাহিদ গালিবকে বলল, “আগের হেড তো গত সপ্তাহেই রিটায়ার্ড করেছে, নতুন হেড এসেছে, আশা করি উনি অনেক ভাল হবেন । গাড়িতে নতুন হেড এসেছেন ।” গালিব জিজ্ঞেস করলো, “নতুন হেড কে?” জাহিদ বলল, “আমাকে উনার আগমণের বার্তা সহ ফেসবুকে পোষ্ট করতে বলা হয়েছিলো । তখন আমি দেখেছিলাম, একজন তরুণী । নাম মালিহা জামান প্রীতি ।” গাড়ি থেকে বের হল সেই তরুণী, সানরাইজ কোম্পানির নতুন হেড । বোরখা পড়া, মাথায় হিজাব । তাকে দেখে অবাক হয়ে গেলো গালিব! একে গালিব আগেও দেখেছে!

আগামী পর্বেঃ
বডিগার্ড এসে বলল, “ম্যাম! ওই আকবর আলি পালিয়েছে! উনার রুমে টয়লেটের শিক ভেঙ্গে, আর দারোয়ান তাকে সাহায্য করেছে, আকবরকে তো ধরতে পারিনি, কিন্তু দারোয়ানকে ধরেছি ।” প্রীতি বলল, “একে বরখাস্তের নোটিশ দিয়ে বের করে দিন, আর আমি এখন আকবর আলির বাসায় যাবো ।” তারপর বডিগার্ড চলে গেলো । প্রীতি তখন সবাইকে বলল, “সবাই কাজে যান! আমি কথা দিচ্ছি! আকবর আলিকে খুজে আমি শাস্তি দেবোই!”
×
বাবা(পর্ব-৩০)

একে গালিব আগেও দেখেছে! বাসে সেই যে একবার একটা মেয়ে গালিবকে আরেকটা বাজে মহিলার হাত থেকে বাঁচিয়েছিল! কিন্তু এই মেয়েটা এতো বড়োলোক, তাহলে সেদিন লোকাল বাসে কি করছিলো! মেয়েটা সকলের সামনে এসে দাঁড়ালো । সাংবাদিকরা এগিয়ে এলে মেয়েটা বলল, “আপনারা প্লিজ পড়ে এলে ভালো হয়, এখন আমি উনাদের সাথে কথা বলতে চাই!” মেয়েটা অর্থাৎ প্রীতি সকলকে জিজ্ঞেস করলো, “আপনারা যার জন্য আন্দোলন করছেন তিনি কে?” সবাই ইশারা করে গালিবকে দেখিয়ে দিল । গালিব তো টেরই পায় নি । কারণ ও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে । মেয়েটাও গালিবকে দেখে অবাক! চিনতে পেরে বলে উঠলো, “আপনি! আপনি আমারই অফিসের একটা শাখা অফিসের কর্মচারী!” গালিব বলল, “জ…জি ম্যাম!” প্রীতি ওর পাশে থাকা আরেকজন, খুব সম্ভবত বডিগার্ডকে জিজ্ঞেস করলো, “মিস্টার আকবর আলি কোথায়?” বডিগার্ড বলল, “ম্যাম! ভেতরেই আছে মনে হয়!” প্রীতি বলল, “উনার ঘাড় ধরে এখানে নিয়ে এসো!” বডিগার্ড ভেতরে গেলো । প্রীতি তখন গালিবের কাছে এসে বলল, “আঙ্কেল, আপনি বলুন, কি হয়েছে ।” গালিব তারপর সমস্তটা খুলে বলল । প্রীতি বলল, “চিন্তা করবেন না আঙ্কেল, আপনার চাকরি কি করে যায়, তা আমি দেখি!” গালিব তখন বলল, “কিছু যদি মনে না করেন তবে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারি?” প্রীতি বলল, “সবাই আমাকে আপনি করে ডাকলেও আপনি আমাকে তুমি করে ডাকবেন আঙ্কেল! আর ভালো লাগলে নাম ধরে ডাকবেন ।” গালিব বলল, “ঠিক আছে । আপনি………তুমি সেদিন লোকাল বাসে কেন ছিলে!” প্রীতি হালকা হেসে বলল, “ও! আসলে সেদিন আমার গাড়ি খারাপ ছিল তাই লোকাল বাসেই যাচ্ছিলাম । আর তাছাড়া আভিজাত্যই যে লাগবে, এমন মেয়েও আমি না ।” গালিব আর কিছু বলল না, শুধু বুঝতে পারলো, মেয়েটা অনেক ভালো । একটু পর বডিগার্ড এসে বলল, “ম্যাম! ওই আকবর আলি পালিয়েছে! উনার রুমে টয়লেটের শিক ভেঙ্গে, আর দারোয়ান তাকে সাহায্য করেছে, আকবরকে তো ধরতে পারিনি, কিন্তু দারোয়ানকে ধরেছি ।” প্রীতি বলল, “একে বরখাস্তের নোটিশ দিয়ে বের করে দিন, আর আমি এখন আকবর আলির বাসায় যাবো ।” তারপর বডিগার্ড চলে গেলো । প্রীতি তখন সবাইকে বলল, “সবাই কাজে যান! আমি কথা দিচ্ছি! আকবর আলিকে খুজে আমি শাস্তি দেবোই!” তারপর প্রীতি গালিবকে বলল, “আঙ্কেল! আজকের জন্য আপনি এখানে কাজ করেন, কাল থেকে আপনি প্রধান অফিসে কাজ করবেন!” গালিব বলল, “না না! তার কোন দরকার………।” গালিবের কথা শেস না হতেই প্রীতি বলল, “আপনাকে বাবা ভেবে নিজে মেয়ের মতো আপনাকে বলছি, প্লিজ!” গালিব আর কিছু বলল না । হালকা ডানে মাথা কাত করে সম্মতি জানালো । সবাই কাজে চলে গেলো । শুধু দাড়িয়ে রইল গালিব আর জাহিদ । গালিব জাহিদকে জড়িয়ে ধরল । তারপর কাঁদতে কাঁদতে বলল, “আপনি সত্যি অনেক ভালো! আমার মন চাইছে না আপনাকে ছেড়ে ওই অফিসে যেতে!” জাহিদ বলল, “আরে ধুর! কি যে বলেন না! আপনাকে ছাড়তেও আমার মন চাইছে না, কিন্তু কাজের জন্য যেতে তো হবেই!” তারপর দুজনে কাজে ফিরে গেলো ।
দুপুরের দিকে অফিস শেষে হাসপাতালে এলো গালিব, সাথে জাহিদও এসেছে দেখা করতে । জাহিদ আসতেই পুষ্পিতা মাথায় কাপড় দিয়ে বলল, “আরে আসসালামু আলাইকুম ভাই! আসেন!” বলে নিজের চেয়ার ছেড়ে দিল জাহিদের জন্য । জাহিদ “না না! সমস্যা নেই! আপনি বসেন!” বলে দাড়িয়েই রইল । জাহিদ সাথে করে কিছু ফলমূল এনেছে । গালিব বলল, “উনাকে কতো করে মানা করলাম! অথচ উনি এগুলো আনলেনই!” পুষ্পিতা বলল, “আসলেই! ভাই আমাদের একদম পর-ই করে দিলো!” জাহিদ হালকা হেসে বলল, “পর তো করে দিলেন আপনারা, আপন ভাবলে তো এগুলো আনা নিয়ে কিছু বলতেন না!” গালিব পুষ্পিতাকে জিজ্ঞেস করলো, “অর্ক আসে নি?” পুষ্পিতা বলল, “হ্যাঁ, ও দুপুরের খাওয়া শেষ করে রওনা হয়েছে । আমাদের জন্যও খাবার আনতে বলেছি । চলে এলো বলে প্রায়!” এমন সময় ঢুকে পড়ল অর্ক । জাহিদ বলে উঠলো, “এই দ্যাখো! নাম নিতে নিতেই ছেলে হাজির!” অর্ক জাহিদকে দেখে বলল, “আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল! কেমন আছেন!” জাহিদ বলল, “ওয়ালাইকুমুস সালাম! এইতোহ আলহামদুলিল্লাহ ভালো, তুমি কেমন আছো?” অর্ক বলল, “আলহামদুলিল্লাহ ভালো!” বলে অর্ক খাবারগুলো পুষ্পিতার হাতে দিলো । অর্ক কিছু ওয়ান টাইম প্লেটও এনেছে খাওয়ার জন্য । গালিব জাহিদকে বলল, “আসেন! একসাথেই খাওয়া দাওয়া করি!” জাহিদ বলল, “আরে না না! আপনারা খাওয়া দাওয়া করেন, আমার যাওয়া লাগবে ।” পুষ্পিতা বলল, “আরে বসেন ভাই! খাওয়ার দাওয়া করে যান! কোনোদিনও বাসায় আসেন না!” পেছনের বসে থাকা আরশি বলল, “জি আঙ্কেল! খাওয়া দাওয়া করে যান!” অর্ক বলল, “জি আঙ্কেল! আমি এক্সট্রা প্লেটও এনেছি, যদি ভাইয়া জেগে যায় তার জন্য, আপনি তাতেই না হয় খেলেন!” জাহিদ বলল, “সবাই যখন এতো করে বলছেন, তাহলে ঠিক আছে । তবে বেশি না! বাড়িতে বউ আবার ভাত নিয়ে বসে থাকবে, সেটা পেটে না খেলে আমাকেই আর আস্ত রাখবে না ।” সবাই হেসে উঠলো জাহিদের কথা শুনে ।

আগামী পর্বেঃ
অনিক ১০তলা বিল্ডিং এর ছাদের দিকে তাকাল । সেখানে দুজন মারামারি করছে । একজনতো প্রায় রেলিং-এর কাছে ঝুঁকে গেছে প্রায় পড়ে যাবে এরকম অবস্থা । অনিক গেট খুলে ঢুকে লিফট বেয়ে ছাদে উঠলো । দেখলো, একটা ছেলেকে মারছে আরেকটা ছেলে! পাশেই আরেকটা মেয়ে বাহবা দিচ্ছে, “ওরে ছাদ থেইকা ফালায় দাও! মাইরা ফেলো!” আর যাকে মারা হচ্ছে সে বার বার বলছে, “মার! যতো পারিস মার! তবু আমি বলবো! নিতু আমার! ওকে আমি ভালোবাসি!”
×
বাবা(পর্ব-৩১)

সবাই হেসে উঠলো জাহিদের কথা শুনে । সবাই খাওয়া দাওয়া শুরু করতে না করতেই জ্ঞান ফিরে এলো অনিকের । মুখে “পপি! পপি!” ডাক । গালিব আর পুষ্পিতা খাবারের থালাটা টেবিলে রেখে অনিকের পাশে যেয়ে বসলো । গালিব বলল, “অনিক বাবা! ওঠ! আমি তোর বাবা!” পুষ্পিতা বলল, “ওঠ রে বাবা! আমি তোর মা! দ্যাখ! চোখ মেলে তাকা বাবা!” অনিক ধীরে ধীরে চোখ খুললো । “মা! বাবা! তোমরা!” পুষ্পিতা বলল, “তোর গার্লফ্রেন্ড তোকে ছেড়ে যেতে পারে, কিন্তু তোর মা বাবা তোকে কোনোদিনই ছেড়ে যেতে পারে না!” গালিব পুষ্পিতাকে বলল, “আহ অনিকের মা! এটা এসব বলার সময়! চুপ করো!” অনিক উঠে বসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো । তারপর কাঁদতে কাঁদতে বলল, “আ’ম সরি বাবা! আ’ম সরি! আমাকে মাফ করে দিয়ো বাবা!” গালিব ছেলের পীঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, “ঠিক আছে বাবা! চিন্তা করিস না! আমি কিছু মনে করিনি!” পুষ্পিতা বলল, “তুই কোথায় গিয়েছিলি বলতো এবার!” গালিব পুষ্পিতাকে বলল, “আহ! থামো তো! ছেলেকে আগে সুস্থ হতে দাও ।” পুষ্পিতা তখন হালকা রাগ করে উঠে যেয়ে খাওয়া দাওয়া শুরু করলো । গালিব অনিককে বলল, “খিদে পেয়েছে বাবা?” অনিক বলল, “হ্যাঁ বাব! পেয়েছে!” গালিব তখন নিজের প্লেটটা নিয়ে অনিককে বলল, “নে, আমি তোকে খাইয়ে দেই ।” তারপর গালিব নিজে না খেয়ে অনিককে খাইয়ে দিলো । খাওয়া দাওয়া শেষে জাহিদ সবার কাছ থেকে বিদায় নিলো । আর অনিককে বলল, “আঙ্কেল! ভালো থেকো!” অনিক বলল “আচ্ছা আঙ্কেল! আসসালামু আলাইকুম!” জাহিদ সালামের জবাব দিয়ে চলে গেলো । গালিব গেলো সাথে এগিয়ে দিতে ।
বিকেলে ছাড়া হল অনিককে । বাসায় এলো অনিক । রাতে ইনস্পেক্টর আসবে বলে জানিয়েছেন ইনস্পেক্টর । রাত ৮টা নাগাদ তিনি এলেন । সবাই তখন ড্রইং রুমে বসা । পুষ্পিতা কিছু নাস্তা এনে সামনে টি-টেবিলে রাখলো । ইনস্পেক্টর অনিককে জিজ্ঞেস করলো, “তুমি এখন কেমন আছো?”
“ভালো আছি আঙ্কেল, আলহামদুলিল্লাহ ।“ জবাব দিলো অনিক ।
“সেদিন কি হয়েছিলো, বলতে পারবে আমাদের?”
“জি পারবো ।” বলল অনিক ।
গতকাল রাতের কথা । অনিক সেই ব্রিজের কাছে দাড়িয়ে ১০তলা বিল্ডিং এর ছাদের দিকে তাকাল । খেয়াল করলো, সেখানে দুজন মারামারি করছে । একজনতো প্রায় রেলিং-এর কাছে ঝুঁকে গেছে প্রায় পড়ে যাবে এরকম অবস্থা । অনিক বিল্ডিং এর নিজে গেলো । আশেপাশে দারোয়ান বা কেয়ারটেকার কাউকেই দেখতে পেলো না । বোধ হয় তারা কোথাও গিয়েছে । অনিক টু-লেট লেখা দেখল, সেখানে বাড়িওয়ালার নাম্বার । কল করলো, কিন্তু পেলো না । অনিক তাই নিজের গেট খুলে ঢুকে গেলো । লিফট বেয়ে ছাদে উঠলো । দেখলো, একটা ছেলেকে মারছে আরেকটা ছেলে! পাশেই আরেকটা মেয়ে বাহবা দিচ্ছে, “ওরে ছাদ থেইকা ফালায় দাও! মাইরা ফেলো!” আর যাকে মারা হচ্ছে সে বার বার বলছে, “মার! যতো পারিস মার! তবু আমি বলবো! নিতু আমার! ওকে আমি ভালোবাসি!” অনিক যেয়ে যে ছেলেটাকে মারছে তাকে বাঁচাতে ওদের মাঝখানে ঢুকে ওদের ঠেকানোর চেষ্টা করতে করতে বলল, “আরে থামেন! কি করছেন আপনারা! ত থামেন!” যে মারছিলো, সেই ছেলেটা অনিককে, “সর!” বলে অনিককে ধাক্কা মেরে দূরে ফেলে দিলো । অনিক তখন, “দাঁড়ান! আমি পুলিশে কল করছি!” বলে মোবাইল নিলো হাতে । তবে রেকর্ডার অন করলো বুদ্ধি করে, কিছু অডিও রেকর্ড হলে পড়ে যদি কাজে লাগে! মেয়েটা যে ছেলেটা মারছিলো তাকে বলল, “এই! এই বদমাইশটা কোত্থেকে আইসা পুলিশ কল করতেছে!” ছেলেটা বলল, “ওর হাত থেইকা ফোন নিয়ে ফালায় দাও ছাদ থেইকা!” মেয়েটা অনিকের কাছ থেকে ফোন নিয়ে নিচে ফেলে দিলো । অনিক বলে উঠলো, “কি করলেন এটা!” মেয়েটা তখন “বেশ করেছি!” বলে উঠলো । অনিকের তখন খেয়াল হল পকেটে ওর মানিব্যাগ নেই! তারপর মনে পড়ল, ও যখন নিচে ছিল, তখন হয়ত মোবাইল বের করার সময় পকেট থেকে পড়ে গেছে । অনিক আবার ছেলেটাকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসতে নিলে মেয়েটা একটা কাচের টুকরা নিয়ে অনিক হাত কেটে দেয়! অনিক আর্তনাদ করে মাটিতে পড়ে যায় । পেছন ফিরে অনিক দেখে, যে মার খাচ্ছিলো তাকে যে মারছিলো সে ফেলে দিচ্ছে, অনিকের চোখের সামনে ফেলে দিলো ওকে । অবশিষ্ট যে ছেলেটা রইলো, সে মেয়েটাকে বলল, “চলো নিতু! পালাই!” নিতু নামের মেয়েটা তখন বলল, “কিন্তু উৎস! এই ছেলেটার কি করবা!” তখনই অনিক ছেলেটার নাম জানতে পারে, ওর নাম উৎস । অনিক তখন নিচে তাকিয়ে যে ছেলেটাকে ফেলে দেয়া হয়েছে তাকে দেখছিল । উৎস, “একে আমি দেখছি!” বলে অনিকের গলার চারপাশে হাত জড়িয়ে অনেকক্ষণ চাপ দিয়ে ধরে রাখতেই অনিক জ্ঞান হারায় ।

আগামী পর্বেঃ
নিজের রুমের দিকে যেতে গিয়ে ডাইনিং রুমের দিকে চোখ পড়তেই দেখলো, পপি টেবিলে বসে খাচ্ছে । চেহারা দেখা যাচ্ছে না, উলটো ঘুরে বসে আছে । আকবর আলি প্রচণ্ড রাগ নিয়ে চেচিয়ে উঠলো, “ওর হাত পা খুলে খেতে দিয়েছে কে!” পপি কিন্তু খেতেই লাগলো । আকবর আলি এবার, “দাড়া তোকে মজা দেখাচ্ছি!” বলে এগিয়ে গেলো মেয়ের দিকে । মেয়ের কাছাকাছি যেয়ে যে-ই হাত উঁচু করলো মেয়েকে মারার জন্য, এমন সময় মেয়ে ওর দিকে ঘুরে তাকাতেই রাফিদ থ! এটা ওর মেয়ে-ই না! এটা ওর অফিসের বস, প্রীতি!
×
বাবা(পর্ব-৩২)

বলে অনিকের গলার চারপাশে হাত জড়িয়ে অনেকক্ষণ চাপ দিয়ে ধরে রাখতেই অনিক জ্ঞান হারায় ।
অনিক এ পর্যন্ত বলে থেমে যায় । তারপর একটু থেমে বলে, “এরপর আমার আমার আর কিছুই মনে নাই । তারপর আমি নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করি ।” ইনস্পেক্টর বলল, “তোমার কাছে কিছু প্রমাণ আছে কি?” অনিক বলল, “ওই যে বললাম, মোবাইলের রেকর্ডার অন করেছিলাম, সেখানেই তিনজনের কণ্ঠ কিছুটা হলেও পাবেন । মোবাইলটা ভেঙ্গে গেছে দেখলাম, কিন্তু কম্পিউটারের সাথে কানেক্ট করলে পেয়ে যাবেন ।” ইনস্পেক্টর উঠে দাড়িয়ে বলল, “ঠিক আছে, আমি তাহলে মোবাইলটা নিয়ে যাচ্ছি, কাল পরশু দিয়ে যাবো । আর আমাকে সাহায্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ!” বলা ইনস্পেক্টর মোবাইলটা নিয়ে গালিবের সাথে আর অনিকের সাথে হ্যান্ডশেক করে চলে গেলো ।
রাতের কথা । ১০টা মতো বাজে । অনিক নিজের রুমে জানালার কাছে বসে ছিলো । তখন ঘরে এলো গালিব । দরজার কাছে এসে গালিব দরজায় নক করে বলল, “আসবো?” অনিক চোখ মুছলো । তারপর মুখে একটা মিথ্যে হাসি নিয়ে তাকাল বাবার দিকে । বলল, “হ্যাঁ বাবা, এসো ।” গালিব ভেতরে ঢুকল । ছেলে যে কাঁদছিল সেটা গালিব বুঝেছে, কিন্তু ছেলে বুঝতে দিলো না যে সে বুঝেছে । একটা চেয়ার টেনে ছেলের সামনে বসলো গালিব ।
“কেমন লাগছে এখন?” জিজ্ঞেস করলো গালিব ।
“ভালো বাবা, শুধু হাতে একটু ব্যাথা আছে ।” বলল অনিক ।
“আর মনে?”
অনিকের কাছ থেকে কোন জবাব এলো না । তবে অনিক অবাক হয়ে বাবার দিকে চেয়ে রইল অনেকক্ষণ ।
“দ্যাখ আমি বুঝতে পারছি, তুই একটা ভুল করেছিস । হ্যাঁ এই ভালোবাসাকে এই সমাজ অনেক ভালো চোখে দেখে হয়তো, কিন্তু আমার পার্সোনালি এটা পছন্দ না । পরিবারের কাছ থেকে যে শিক্ষা তুই পেয়েছিস সেটা তুই কাজে লাগাতে পারিস নি । কিন্তু ভুল যখন করেই ফেলেছিস, তখন সেটা শুধরানোর একটা উপায়ও আছে ।” বলল গালিব ।
“কি উপায় বাবা?”
“তার আগে এটা বল, তুই কি মেয়েটাকে অনেক ভালোবাসিস?”
“হ্যাঁ ।”
“তোর কি মনে হয় মেয়েটা তোর এবং এই পরিবারের জন্য ভালো হবে?”
“অবশ্যই হবে বাবা!”
“ঠিক আছে, তাহলে প্রস্তুত থাক । খুব শীঘ্রই তোর সাথে ওই মেয়েটার সাথে আমি তোর বিয়ে দেবো ।”
অনিকের মুখে হাসি ফুটে উঠলো । বলে উঠলো, “সত্যি!” গালিব ছেলের গালে হাত রেখে বলল, “হ্যাঁ! এটা তোর বাবা তোকে কথা দিলো ।” দরজার আড়ালে তখন দাড়িয়ে সব শুনছিলো পুষ্পিতা । কথাগুলো ওর ভালো লাগলো বলে মনে হল না ।
এদিকে রাত ৯টায় বাসায় এলো আকবর আলি । সারাদিন সে নিজেকে গায়েব করে রেখেছিল । রুমে ঢুকে কাউকে দেখতে পেলো না আকবর আলি । নিজের রুমের দিকে যেতে গিয়ে ডাইনিং রুমের দিকে চোখ পড়তেই দেখলো, পপি টেবিলে বসে খাচ্ছে । চেহারা দেখা যাচ্ছে না, উলটো ঘুরে বসে আছে । আকবর আলি প্রচণ্ড রাগ নিয়ে চেচিয়ে উঠলো, “ওর হাত পা খুলে খেতে দিয়েছে কে!” পপি কিন্তু খেতেই লাগলো । বাবার কথা শুনতে পায় নি এরকম একটা ভান ধরল । আকবর আলির চিৎকার শুনে সেখানে হাজির হল রাফিদ, আর আকবর আলির বউ, উমা । আকবর আলি রাফিদের গলা ধরে বলল, “তুই ছেড়েছিস ওকে না!” বলে রাফিদের গলা ধরেই ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো রাফিদকে । তারপর আকবর আলি পপিকে উদ্দেশ্য করে বলল, “এই! এদিকে আয়!” পপি আবারও না শোনার ভান ধরলো । আকবর আলি আবার চেচিয়ে উঠলো, “তোকে বলছি আয়!” পপি তাও কিছু বলল না । চেয়ারে বসে একটু নাচলো । আকবর আলি এবার, “দাড়া তোকে মজা দেখাচ্ছি!” বলে এগিয়ে গেলো মেয়ের দিকে । মেয়ের কাছাকাছি যেয়ে যে-ই হাত উঁচু করলো মেয়েকে মারার জন্য, এমন সময় মেয়ে ওর দিকে ঘুরে তাকাতেই রাফিদ থ! এটা ওর মেয়ে-ই না! এটা ওর অফিসের বস, প্রীতি! ওর মেয়ের পোশাক পড়ে বসে আছে । আকবর আলি এতোটাই চমকে গেছে যে হাত পা কাঁপতে শুরু করলো । চোখ দুটো বড়ো বড়ো হয়ে গেলো । প্রীতি আকবর আলিকে বলল, “কি হল? মারেন?” আকবর আলি নিশ্চুপ । প্রীতি আকবর আলির দিকে মুখ বাড়িয়ে বলল, “নিন, গাল এগিয়ে দিলাম, মারেন দেখি!” আকবর আলি তাও নিশ্চুপ । কেবলই ভয়ে কাঁপছে । প্রীতি তখন আবার চেয়ারে ফিরে গিয়ে বসে বলল, “আজ অফিসের বস বলে আপনি আমাকে মারলেন না, কিন্তু আমি যদি আপনার মেয়ে হতাম, তাহলে ঠিকই আপনি আমাকে মারতেন । তাই না!” আকবর আলি ডানে বামে মাথা নাড়লো । প্রীতি বলল, “সেই সকাল থেকে বসে আছি, আপনার অপেক্ষায় মেয়েকে জামাকাপড় তো ভালো ভালোই দেন, কিন্তু ভালোবাসা কেন দেন না? এবাবে কেন বেধে রেখেছিলেন ওকে!” আকবর আলি কাঁপতে কাঁপতেই বলল, “এ…এটা আমাদের পারিবারিক ব্যা……পার! আপনি আ…মার অফিসের বস! অফিস আর প…রিবার এক ক…করবেন না!” প্রীতি হেসে উঠে বলল, “ও তাই! গালিব আঙ্কেলের সময় সেটা খেয়াল ছিলো না?” আকবর আলি আবারও নিশ্চুপ । প্রীতি একটা কাগজ আকবর আলির মুখের দিকে ছুড়ে মেরে বলল, “এই নিন, আপনার বরখাস্তের নোটিশ!” বলে প্রীতি ঘর থেকে বেড়িয়ে যেতে যেতে উমা-কে বলল, “আন্টি! আপনার রান্না সুস্বাদু ছিল অনেক! স্বামী বাড়াবাড়ি করলে প্রতিবাদটাও যেনো সুস্বাদু হয়!” বলে চলে গেলো প্রীতি ।

আগামী পর্বেঃ
দরজায় কলিংবেলের আওয়াজ শুনে এগিয়ে এসে দরজা খুললো অর্ক । দরজা খুলতেই দেখলো, দাড়িয়ে আছে পপি । অর্ক অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “একি! আপনি গালিব আসতেই পপি গালিবের পা ধরে চেচিয়ে কান্নাকাটি শুরু করলো, “আঙ্কেল! আমাকে বাচান আঙ্কেল! আমার বাবা আমাকে মেরেই ফেলবে! আমার যাওয়ার আর কোন জায়গা নেই আঙ্কেল!”
×
বাবা(পর্ব-৩৩)

বলে চলে গেলো প্রীতি । প্রীতি যাবার একটু পর-ই আকবর আলি উমার চুল টেনে ধরলো । তারপর রাগ দেখিয়ে বলল, “তুই করেছিস এটা! না! তুই ডেকেছিস ওকে বাড়িতে! তোর সাহস হয় কি করে!” রাফিদ তখন আকবর আলিকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয় । তারপর বলল, “আজ পর্যন্ত তুমি আমার মায়ের ওপর অনেক অত্যাচার করেছো বাবা! আর না! তোমার অত্যাচারের দিন শেষ! আমিও আগের রাফিদ নই! আর মা-ও আগের মা নেই! তাই সাবধান বাবা!” উমা তখন বলল, “চাকরি কিন্তু হারিয়েছো তুমি! এই সংসারের জন্য কতো কিছু করেছি আমি অথচ কোন দাম পাই নি তোমার কাছ থেকে! আর না! ভালো চাও তো ভালো ভাবে থাকবে! নয়তো তোমাকে আমি ডিভোর্স দিতে বাধ্য হবো!” আকবর অবাক হয়ে গেলো । কিছুক্ষণ চুপ থেকে জিজ্ঞেস করলো, “পপি কোথায়?” উমা বলল, “যেখানে ওর যাবার কথা, সেখানে ওকে পাঠিয়ে দিয়েছি!” আকবর আলি জিজ্ঞেস করলো, “কোথায়?”
দরজায় কলিংবেলের আওয়াজ শুনে এগিয়ে এসে দরজা খুললো অর্ক । দরজা খুলতেই দেখলো, দাড়িয়ে আছে পপি । অর্ক অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “একি! আপনি?” পপির শরীরের অবস্থা নাজেহাল । এখানে ওখানে দড়ির দাগ । চুল উসকো খুসকো । পপি কাঁদতে কাঁদতে জবাব দিলো, “আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছি! আমার আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই! প্লিজ আমাকে এই বাসায় থাকতে দাও!” অর্ক কিছুক্ষণ চুপ করে দাড়িয়ে রইল । তারপর বলল, “ঠিক আছে, আপনি বসুন, আমি বাবাকে ডাকছি!” পপি বলল, “তোমার বাবা আমার ওপর রাগ করবেন না তো? আমাকে মারবেন না তো?” অর্ক বলল, “সব বাবাকে নিজের বাবার মতো ভাববেন না!” বলে চলে গেলো অর্ক । পপি ভেতরে এলো ঠিকই, কিন্তু বসলো না । একটু পর অর্কর কথা শুনে রুমে এলো গালিব । গালিব আসতেই পপি গালিবের পা ধরে চেচিয়ে কান্নাকাটি শুরু করলো, “আঙ্কেল! আমাকে বাচান আঙ্কেল! আমার বাবা আমাকে মেরেই ফেলবে! আঙ্কেল! আমাকে আপনার এখানে জায়গা দিন আঙ্কেল! আমাকে আপনার এখানে জায়গা দিন! আমার যাওয়ার আর কোন জায়গা নেই আঙ্কেল!” পপির চিৎকার শুনে রুমে হাজির হল পুষ্পিতা, আরশি আর অনিক । গালিব, “আহ! কি করছো তুমি! ওঠো! ওঠো!” বলে পা থেকে পপিকে ধরে দাড় করালো । অনিক পপিকে দেখে কান্না আর হাসি একসাথে মিশিয়ে ডেকে উঠলো, “পপি!” পপি অনিককে দেখেই “অনিক!” বলে দৌড়ে অনিকের কাছে গিয়ে অনিককে জড়িয়ে ধরল । পুষ্পিতা তো রেগেমেগে আগুন । প্রচণ্ড রাগ নিয়ে বলল, “ও! তোর বাপ আমাদের ক্ষতি করবে আর আমরা তোকে এখানে জায়গা দেবো?” পপি অনিককে ছেড়ে মাথা নিচু করে দাঁড়ালো । পুষ্পিতা বলল, “বেড়িয়ে যা আমাদের বাড়ি থেকে!” পপি বলল, “আন্টি! প্লিজ! আমার আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই! আমি কোথায় যাবো?” পুষ্পিতা বলল, “জাহান্নামে যা! তাতে আমাদের কি?” গালিব তখন বলল, “না!” পুষ্পিতা বলল, “কেন? তুমি কি একে বাসায় রাখবে?” গালিব বলল, “দ্যাখো, এতো রাতে মেয়েটা এসেছে, ওকে কি করে বের করে দেই বলতো? আর যা করেছে তা তো আকবর আলি করেছে, এই মেয়েটার কি দোষ বলো?” আরশি বলল, “কেন বাবা? এই মেয়েটাই তো ভাইয়ার সাথে প্রেম করেছে বলে এতো কিছু ঘটলো!” গালিব বলল, “ঠিক, এই মেয়েটা একটা দোষ করেছে, কিন্তু সেটা তো সে একা করে নি, তাই না? তোর ভাইয়ের সাথেই তো করেছে!” আরশি আর পুষ্পিতা কিছু বলল না । গালিব তখন পপিকে বলল, “আজকের রাতটা তুমি থাকো মা, কিন্তু হ্যাঁ! বিয়ে আগে তোমাদের একসাথে আমি আর দেখতে চাই না!” পপি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “বিয়ের আগে মানে?” গালিব বলল, “তোমাদের দুজনের বিয়ে হবে! আর সেটাও তোমার বাবার সম্মতিতে!” পপি জানতে চাইলো, “কি করে!” গালিব বলল, “সেটা আমার ওপর ছেড়ে দাও, তুমি আজ আরশির ঘরে………।” কথা শেষ হতে না হতেই আরশি বলে উঠলো, “অসম্ভব! আমার রুম আমি না কারো সাথে শেয়ার করতে পারবো, না কাউকে দিতে পারবো! এনাকে তো আরও না!” বলে আরশি রুমে চলে গেলো । গালিব বলল, “ঠিক আছে মা, তুমি আমাদের রুমে থেকো ।” পুষ্পিতা বলল, “অ্যাই শুনো! বেশি ঢং দেখাবানা! ওয়ি রুম ছাড়া আমার ঘুম আসে না!” বলে পুষ্পিতা-ও চলে গেলো । অর্ক তখন বলল, “বাবা, উনি না হয় আজকের জন্য ভাইয়ার রুমে থাকলেন, আর ভাইয়া আমার রুমে!” গালিব বলল, “হ্যাঁ, এটাও ভালো বুদ্ধি, অনিক, রাজি তো?” অনিক বলল, “ঠিক আছে বাবা!” গালিব পপিকে জিজ্ঞেস করলো, “তুমি কি খাওয়া দাওয়া করেছো?” পপি বলল, “জি বা…… সরি! আঙ্কেল!” গালিব হালকা হেসে বলল, “ঠিক আছে, ধীরে ধীরে অভ্যাস করে ফেলো ।” পপি বলল, “জি বাবা, আসার আগে মা খাইয়ে দিয়েছেন ।” গালিব বলল, “ঠিক আছে, তাহলে যাও, ঘুমোতে যাও, অনেক ক্লান্ত দেখাচ্ছে তোমাকে ।” তারপর যেই কথা সে অনুযায়ী সবাই রুমে গেলো ।

আগামী পর্বেঃ
পপির একা একা বসে থাকতে ভালো লাগছিলো না । রান্নাঘরের দিকে গেলো । চামেলি পপিকে দেখে বলে উঠলো, “ও বাবা! তুমি আবার কেডা!” পপি বলল, “জি, আমি অনিকের হবু বউ!” বলে চামেলি বলে উঠলো, “নাউজুবিল্লাহ! বিয়ার আগেই বউ স্বামীর বাড়ি! ছি ছি ছি!”
×
বাবা(পর্ব-৩৪)

তারপর যেই কথা সে অনুযায়ী সবাই রুমে গেলো ।
পরদিনের কথা । সোমবার আজ । সকাল হতেই কাজে বেড়িয়ে গেলো গালিব । অনিক ভার্সিটি । যাবার আগে পপির সাথে দেখা করেও গেছে । পুষ্পিতা নিজের ঘরে, আরশি গেছে স্কুলে । অর্কও নিজের ঘরে । চামেলি এসেছে, রান্নাঘরে কাজ করছে । পপির একা একা বসে থাকতে ভালো লাগছিলো না । রান্নাঘরের দিকে গেলো । চামেলি পপিকে দেখে বলে উঠলো, “ও বাবা! তুমি আবার কেডা!” পপি বলল, “জি, আমি অনিকের হবু বউ!” বলে চামেলি বলে উঠলো, “নাউজুবিল্লাহ! বিয়ার আগেই বউ স্বামীর বাড়ি! ছি ছি ছি!”
“জি, আসলে অনেক ঝামেলা হয়েছে!” বলল পপি ।
“ও আচ্ছা, তা রান্নাঘরে কি করতে আসা শুনি?” রুটি ভাজতে ভাজতে জিজ্ঞেস করলো চামেলি ।
“আপনি কি এ বাসায় কাজ করেন?”
“হ্যাঁ! তবে কাজ করি বইলা আমারে বুয়া ডাকবানা! খালাও ডাকবানা! আমারে বিউটিপুল বইলা ডাকবা!”
চামেলির কথা শুনে হালকা হাসলো পপি । বলল, “বাহ! আপনি অনেক মজার মানুষ তো!” চামেলি বলল, “হ! তোমারেও দেইখা ম্যালা ভালো লাগতেছে! কিন্তু জানো তো!” বলে পপির কানের কাছে এসে চামেলি হালকা ফিসফিসিয়ে বলল, “এই বাড়ির বউ! মানের তোমার হবু শাশুড়ি, একটা কামও করে না! খালি আমারে দিয়া কাজ করায়! আর গালিব ভাই! মানুষটা কতো ভালো, তাও খালি মানুষডার ওপর চিল্লায়!” পপি তখন বলল, “তাই! আমার বাসায় চিত্রটা উলটো, আমার মা কতো ভালো মানুষ, কতো কাজ করে, অথচ তবুও আমার মা-কে দাম দেয় না আমার বাবা । আমার বাবা খুব খারাপ! কিন্তু মা অনেক অনেক ভালো!” চামেলি বলল, “অ! দুই বাসায় দুই কাহিনী!” পপি বলল, “হ্যাঁ, আমার বাসায় বাবা খারাপ, আর অনিকের বাসায় বাবা ভালো ।”
এদিকে নিজের রুমে চাকরির টেনশনে এক হাত কোমরে আরেক হাত মাথায় রেখে পায়চারী করে টেনশন করতে করতে অবস্থা খারাপ আকবর আলির । এখন টাকা আয় করবে কি করে সেই নিয়েই চিন্তা । আকবর আলির নামে অনেক কুৎসা ইতোমধ্যে টিভিতে, ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে, সুতরাং আর কোথাও তাকে চাকরিও দেবে না কেউ । তবে শুধু যে এই চিন্তাই আকবর আলির মাথায় তা কিন্তু না, মনে মনে সে শুধু ভাবছে কি করে গালিবকে শায়েস্তা করা যায়! এমন সময় ডাইনিং রুম রাফিদের গলা শুনতে পেলো আকবর আলি । রাফিদ মা-কে বলল, “মা, আমি বাইরে গেলাম ।” রাফিদের মা, উমা জিজ্ঞেস করলো, “কোথায় যাচ্ছিস?” রাফিদ বলল, “কাজ খুঁজতে ।” এই কাজ খুঁজতে কথা শুনতেই আকবর আলি এগিয়ে গেলো ডাইনিং রুমের কাছাকাছি, তারপর আড়াল থেকে শুনতে লাগলো মা ছেলের কথোপকথন ।
“কাজ খুঁজতে? কোথায়?” জিজ্ঞেস করলো উমা ।
“মা, রাসেল ভাইয়ের সাথে কথা বললাম । উনি বললেন কোন রেডিও জকি হিসেবে যদি আমাকে কাজে নেয়া যায় ।” বলল রাফিদ ।
“তোর অনেক ইচ্ছে ছিল রেডিও জকি হবার বাবা! আমি জানি তুই ইনশাআল্লাহ পারবি!” ছেলের মাথায় হাত রেখে বলল উমা ।
আকবর আলি হাসিমুখে রুমে চলে গেলো । তারপর নিজেই নিজেকে বলল, “টাকার একটা ব্যাবস্থা তো হল! কি যে ভাগ্য! ছেলের যে কাজ আমার পছন্দ ছিল না, আজ সেই কাজেই তাকে পাঠালাম! কিন্তু এখন ওয়ি গালিব ব্যাটার কি করা যায়!” আবার পায়চারী করতে করতে বলল আকবর আলি । এমন সময় আবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো । নিজেই নিজেকে বলল, “পাইছি বুদ্ধি!”
এদিকে নতুন অফিসে গালিব কাজ করছে আজ । তবে ভালো লাগছে না ওর । কারণ এখানে সবাই অপরিচিত । তার ওপর গালিবের পাশের সিটটায় কেউ নেই । আগের অফিসে তাও মিস্টার জাহিদের সাথে কথা বলে সময় কাটাতো । বসে বসে কলিগ জাহিদের কথাই ভাবছিল গালিব এমন সময় একজন পিয়ন এলো গালিবের কাছে । বলল, “প্রীতি ম্যাম আপনাকে একটু ডাকছেন!” গালিব উঠে গেলো প্রীতির রুমে । দরজায় নক করতেই ভেতর থেকে প্রীতি বলল, “আসুন!” দরজা খুলে গালিব বলল, “আসবো ম্যাম?” প্রীতি হাসিমুখে বলল, “আরে আঙ্কেল! আসুন! আর আপনাকে বলেছিনা! আপনি আমাকে ম্যাম বলবেন না!” গালিব বলল, “কি করবো বলুন! যতোই হোক, আপনি অফিসের বস!” প্রীতি বলল, “আচ্ছা, আঙ্কেল! এবার বলি, এই অফিসে আমার চেয়ে বড় কেউই আমাকে ম্যাম বলেন না, বলেন আমার জুনিয়র যারা, আর বড় যারা তারা মিসেস প্রীতি বলেই ডাকেন, আপনার মুখ থেকে মিসেস টা বাদ দিয়ে শুনতে পারি! প্লিজ আঙ্কেল!” গালিব হালকা হেসে বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে প্রীতি ।” প্রীতি বলল, “যাক! ভালো লাগলো । এবার বলুন, নতুন অফিসে কেমন লাগছে?” গালিব বলল, “জি ভালোই!” প্রীতি বলল, “সত্যি? মন থেকে বলছেন?” গালিব বলল, “আসলে আগের অফিসে অনেক স্মৃতি তো, সেগুলোই মনে পড়ছে ।” প্রীতি তখন বলল, “সব স্মৃতি তো আপনাকে ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব না, একটা স্মৃতি আপনাকে ফিরিয়ে দিতে পারি ।” গালিব জিজ্ঞেস করলো, “কি?” কাকে যেন কল করে বলল, “উনাকে নিয়ে আসুন!” একটু পর দরজা খোলার আওয়াজ এলো । গালিব দরজার দিকে তাকাল ।

আগামী পর্বেঃ
গালিবের মোবাইলে কল এলো । গালিবের মায়ের কল! গালিবের মায়ের নাম কুলসুম আরা! কল ধরেই গালিব বলল, “আসসালামু আলাইকুম মা! কেমন আছো! পুষ্পিতার মোবাইলে গালিবের কল । গালিব বলল, “হ্যাঁ শোনো! মা আর বাবা আসছে কাল!” অস্থির অস্থির ভাব নিয়ে নিজের রুমের দিকে যেতে যেতে বলল, “আল্লাহ! আম্মা আর আব্বা আসতেছে! কি হবে এবার!” পপি আড়াল থেকে সব দেখছিলো । পুষ্পিতা চলে যেতেই চামেলিকে পপি জিজ্ঞেস করলো, “কে আসছে?” চামেলি বলল, “তোমার শাশুড়ির যম ।”
×
বাবা(পর্ব-৩৫)

গালিব দরজার দিকে তাকাল । ভেতরে এলো জাহিদ! গালিব তো অবাক! বলে উঠলো, “জাহিদ ভাই! আপনি!” জাহিদ বলল, “হ্যাঁ ভাই! মিসেস প্রীতি আপনার সাথে সাথে আমাকেও এনে দিলেন এখানে!” প্রীতি বলল, “আপনার পাশের সিটটা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন, সেখানে কেউ নেই, সেটাই আসলে জাহিদ সাহেবের জন্য ।” গালিব বলল, “প্রীতি, সত্যি বলছি, তুমি আমার জন্য যা করলে এটা আমি কোনোদিনও ভুলবো না!” প্রীতি বলল, “আহ আঙ্কেল! আমাকে আর লজ্জা দেবেন না!” এমন সময় পিয়ন এসে বলল, “ম্যাম, আমাদের পাবনার শাখা অফিসের হেড এসেছেন আপনার সাথে কথা বলবে বলে ।” প্রীতি জাহিদ আর গালিবকে বলল, “আঙ্কেল, যদি কিছু মনে না করেন…………” প্রীতির কথা শেষ হতে না হতেই গালিব বলল, “না না! ঠিক আছে, আর আমাদের তো কাজ করতে হবে, এখানে দাড়িয়ে থাকলে চলবে না! আমরা যাচ্ছি ।” বলে গালিব আর জাহিদ চলে গেলো ।
পরোটা বানাচ্ছিলো পপি । চামেলি বলল, “যাক, কাজ টাজ পারো দেখছি! আমি তো ভাবলাম কিছুই পারবে না!” পপি বলল, “না না, কাজ পারি । আসলে বাসায় আমাকে মা সবসময় বলতো, যেকোনো মুহূর্তের জন্য প্রস্তুত থাকতে । তারা তো সারাজীবন আমার সাথে থাকবেন না!” চামেলি বলল, “আহ! তুমি কতো ভালো মেয়ে!” পপি হাল্কা হেসে বলল, “না, আমি আসলে এতোটাও ভালো ছিলাম না । বাসায় বাবা-ই যেহেতু আয় করতো, তাই বাবাকে যতোটা পারতাম পাম দিয়ে চলতাম । টাকা পয়সা বেশি নেয়ার জন্য । এমনকি আমার বিলাসিতাও অনেক পছন্দ ছিল । কিন্তু সেদিন পুরো এক রাত আমি দড়ি বাঁধা অবস্থায় নিজেরই বাবার রুমে বন্দি থেকে কেমন যেন পাল্টে গেছি ।” এমন সময় ডাইনিং রুম থেকে আওয়াজ এলো, “চামেলি! দে নাস্তা দে!” পুষ্পিতার ডাক । চামেলি পপিকে জিজ্ঞেস করলো, “এই শোনো, পরটা কিন্তু সাইজ মতো হয় নাই! বকা-টকা দিলে তুমি খাইও আমারে খাওয়াইয়ো না!” পপি বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে!” বলে প্লেটে পরোটা আর বাটিতে মিষ্টি-কুমড়া আর ডিম মিশ্রিত ভাজি নিয়ে গেলো চামেলি । টেবিলে থালা রেখে রান্নাঘরে ফিরে আসতে যাবে, এমন সময় পুষ্পিতার ডাকে দাড়িয়ে গেলো । পুষ্পিতা পরোটা দেখে বলল, “একি! তোমার পরোটার এই সাইজ কেনো!” এক মুহূর্ত বিলম্ব না করে চামেলি বলল, “পপি আফা রান্না করছে!” পুষ্পিতা অবাক হয়ে আবার জিজ্ঞেস করলো, “কে রান্না করেছে!” কাঁপতে কাঁপতে চামেলি জবাব দিলো, “পপি আফা!”
কোম্পানির লোগোর নতুন ডিজাইন করা হবে, সেটারই কাজ করছে জাহিদ । একটা ডিজাইন বানিয়ে গালিবকে দেখালো জাহিদ । বলল, “দ্যাখেন তো কেমন হইছে?” গালিব দেখে বলল, “দারুণ হইছে ভাই! তবে নিচের অংশটা একটু কালো করলে মনে হয় আরও ভালো লাগবে!” জাহিদ বলল, “আচ্ছা দাঁড়ান! চেঞ্জ করতেছি ।” এমন সময় গালিবের মোবাইলে কল এলো । গালিবের মায়ের কল! গালিবের মায়ের নাম কুলসুম আরা! কল ধরেই গালিব বলল, “আসসালামু আলাইকুম মা! কেমন আছো!” কুলসুম ফোনের ওপাশ থেকে বলল, “আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর রহমতে ভালো আছি বাবা, তুই কেমন আছিস?” গালিব বলল, “আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি মা! বাবা কেমন আছেন?” গালিবের বাবার নাম শামসু শেখ । কুলসুম বলল, “তোর বাবার আর কি কাজ! সকালে গাছ থেকে একটা পাকা কাঁঠাল পেরে অর্ধেক খেয়েছে, এখন বাকি অর্ধেকটা খাচ্ছে!” গালিব বলল, “সেকি! বাবার না ডাইবেটিস! মিষ্টি কেন খাচ্ছে এতো!” পাশ থেকে হয়তো শামসু বলল, “কিচ্ছু হবে না রে! কিচ্ছু হবে না! তোর বাপ এখনও জোয়ান আছে! দৌড়ে ঢাকা চলে যেতে পারবে!” গালিব বলল, “হুম! বুঝলাম, এবার বলো, কিছু বলবে?” কুলসুম হালকা কষ্ট নিয়ে বলল, “শোন না, রাকিবের ছেলেমেয়েরা বড় হয়েছে, ছেলে আমার চাকরিটা হারিয়ে এখন সংসারে অভাব অনটন, বলে তো না, কিন্তু নাজমার সাথে প্রায়ই ঝগড়া করে, এ রুম থেকে শোনা যায় । বলছি কি, তোর বাসায় যতোটা দিন পারি থাকতে পারবো বাবা?” গালিব বলল, “এমা! এটা কি বলছো মা! থাকতে পারবে মানে কি! আমার বাড়ি মানে তো তোমাদেরই বাড়ি! এবার বলো, কবে আসছো?” কুলসুম বলল, “এইতো বাবা, কাল বা পরশু আসবো!” গালিব বলল, “ঠিক আছে! এসো তাহলে!”
পুষ্পিতা চামেলির মুখে পপির নাম শুনতেই সামনের থালাটা ছুড়ে ফেলে দিলো । তারপর বলল, “ওর হাতের রান্না আমি খাবো না!” বলে উঠে আসতে নেবে এমম সময় পুষ্পিতার মোবাইলে গালিবের কল । গালিব বলল, “হ্যাঁ শোনো! মা আর বাবা আসছে কাল! তোমাকে জানানো প্রয়োজন মনে করলাম তাই বললাম! এবার বল, কিছু বাজার করা লাগবে কিনা ।” কথা শুনেই পুস্পিতার মাথায় হাত! বলল, “না কিছু লাগবে না!” গালিব “আচ্ছা!” বলে ফোন রাখলো । পুষ্পিতার মাঝে কেমন টেনশন ঢুকে গেলো । অস্থির অস্থির ভাব নিয়ে নিজের রুমের দিকে যেতে যেতে বলল, “আল্লাহ! আম্মা আর আব্বা আসতেছে! কি হবে এবার!” পপি আড়াল থেকে সব দেখছিলো । পুষ্পিতা চলে যেতেই চামেলিকে পপি জিজ্ঞেস করলো, “কে আসছে?” চামেলি বলল, “তোমার শাশুড়ির যম ।” পপি জিজ্ঞেস করলো, “মানে?”

আগামী পর্বেঃ
পপিঃ “তোমার মনে আছে, একবার তোমার মোটরসাইকেলের জন্য তোমার বাবাকে আমি খারাপ বলেছিলাম? ওই দিন আমি ভুল বলে ফেলেছিলাম! আমি জানলে সে কথা মোটেও বলতাম না! তোমার বাবার মতো মানুষ হয় না! উনি অনেক ভালো মানুষ!”
অনিকঃ “হুম, তা ভালো, কিন্তু একটু কিপটে ।”
পপি হালকা রাগ দেখিয়ে বলল, “শাট আপ অনিক! কে বলেছে তোমার বাবা কিপটে! নিজের জন্য না করে সব ছেলেমেয়ের জন্য করেন! উনার আর্থিক অবস্থাটাও তো বুঝতে হবে নাকি?” অনিক বলল, “আহ! কদিন থেকো বাসায়, তুমিও টের পাবে!” পপি এবার অনেক রাগ করে বলল, “নিজের বাবার নামে এভাবে কেউ বলে! ছি!”
×
বাবা(পর্ব-৩৬)

পপি জিজ্ঞেস করলো, “মানে?” চামেলি বলল, “তোমার শাশুড়ি তার শাশুড়িরে খুব ভয় পায়! দেইখো, এহন তো কিছুই করতেছে না, অনিকের দাদি আইলে সব গড় গড় কইরা করবেনে!” পপি জিজ্ঞেস করলো, “আন্টি, মানে মা যেমন মানুষ, উনি তো দাদির সাথেও খারাপ ব্যাবহার করে মনে হয়!” চামেলি বলল, “সে সাহস নাই এর! গালিব ভাইয়ের আম্মার ছোটবেলার বেস্ট ফেরেন্ড আছিলো তোমার শাশুড়ির মা, মানে অনিকের নানি! যদি শোনে পপি কিছু করছে, তাইলে উনি বাসায় আইসা তোমার শাশুড়িরে শাসন কইরা যাবেনে!” পপি হালকা হাসলো । চামেলি বলল, “দ্যাহো! কাম না কইরা তোমার লগে কথা বলতেছি! মাইঝাত প্লেটটা আছাড় মাইরা ফালায় দিছে! পেলাস্টিকের তো, তাই ফালাইসে! কাচের বা সিরামিকের হইলে সাহস পাইতো না!” বলে চামেলি ঝাড়ু আর ন্যাকড়া দিয়ে ময়লা তুলতে লাগলো ।
দুপুরের দিকের কথা । গালিবের অফিস শেষ । বাসার দিকে ফিরতে যাবে, এমন সময় কল এলো আকবর আলির । কল ধরতেই ওপাশ থেকে আকবর বলল, “হ্যালো আসসালামু আলাইকুম গালিব ভাই!”
“ওয়ালাইকুমুস সালাম!” সালামের জবাব দিলো গালিব ।
“কেমন আছেন ভাই?” জিজ্ঞেস করলো আকবর ।
“হেয়ালি না করে সরাসরি বলুন, কি বলবেন!”
“না আসলে, বলতেছিলাম কি, একটু দেখা করতে পারবেন?”
“কেন, জানতে পারি?”
“একটু কথা ছিলো! ফোনে এতোকিছু বলা সম্ভব না!”
গালিব একটু ভেবে জিজ্ঞেস করলো, “কখন কোথায়?” আকবর আলি জবাব দিলো, “ফুডপ্লাসে! আর এখনই!”
স্কুল থেকে বাসায় ফিরে সিঁড়ি বেয়ে বাসার দরজার কাছে আসতেই আরশি দেখলো, ওদের পাশের বাসার তোফায়েল আঙ্কেলরা চলে যাচ্ছেন । তোফায়েল আঙ্কেলের একটা ছেলে আছে আরশির বছর ৩ছোট । নাম সাদেক । সাদেককে ঘর থেকে বেরোতে দেখে আরশি জিজ্ঞেস করলো, “কিরে সাদেক, তোরা চলে যাচ্ছিস?” সাদেক বলল, “হ্যাঁ আপু! বাড়িওয়ালা শর্ত দিয়েছিলো না, ভাড়াটিয়া না পাওয়া পর্যন্ত আমরা যেতে পারবো না!” আরশি বলল, “ও! তার মানে তো ভাড়াটিয়া পেয়ে গেছে মনে হয়!” সাদেক বলল, “হ্যাঁ আপু, কালই নতুন ভাড়াটিয়া আসবে মনে হয় ।” আরশি বলল, “তোদের মিস করবো রে! আসিস বাসায়!” সাদেক, “আচ্ছা আপু!” বলে নিচে চলে গেলো । অনিকের সাথে ছাদে পপি । অনিক জিজ্ঞেস করলো, “তোমার বাবা এতো নিষ্ঠুর আচরণ কেন করলেন তোমার সাথে?” পপি বলল, “জানিনা, ছোটবেলা থেকে দেখেছি বাবা মায়ের ওপর অনেক অত্যাচার করেছেন, কিন্তু বাবা কখন ছেলেমেয়েদের গায়ে হাত তোলেন নি, এই প্রথম দেখলাম, আর তাও আমাকে তোমার সাথে রিলেশনশিপে দেখে । ঠিক কি কারণে সেটা বুঝতে পারলাম না ।”
“তোমার বাবা কি অন্য কারো সাথে তোমার বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছিলেন কি? যাতে ব্যর্থ হয়ে উনি এটা করতে পারেন?” জিজ্ঞেস করলো অনিক ।
“কি জানি, হয়তোবা ।” বলল পপি ।
“আচ্ছা, ঠিক আছে, সকালে খাওয়াদাওয়া করেছো?”
“হ্যাঁ, করেছি, তোমাদের বাসার বিউটিফুল অনেক ভালো!”
“বিউটিফুল মানে? চামেলি খালা?”
“হ্যাঁ! উনি আমাকে অনেক সাপোর্ট দিয়েছেন ।”
“ও আচ্ছা ।”
“অনিক, একটা কথা বলবো?”
“হ্যা বলো!”
“তোমার মনে আছে, একবার তোমার মোটরসাইকেলের জন্য তোমার বাবাকে আমি খারাপ বলেছিলাম?”
“হ্যাঁ মনে আছে তো, কেন?”
“ওই দিন আমি ভুল বলে ফেলেছিলাম! আমি জানলে সে কথা মোটেও বলতাম না! তোমার বাবার মতো মানুষ হয় না! উনি অনেক ভালো মানুষ!”
“হুম, তা ভালো, কিন্তু একটু কিপটে ।”
পপি হালকা রাগ দেখিয়ে বলল, “শাট আপ অনিক! কে বলেছে তোমার বাবা কিপটে! নিজের জন্য না করে সব ছেলেমেয়ের জন্য করেন! উনার আর্থিক অবস্থাটাও তো বুঝতে হবে নাকি?” অনিক বলল, “আহ! কদিন থেকো বাসায়, তুমিও টের পাবে!” পপি এবার অনেক রাগ করে বলল, “নিজের বাবার নামে এভাবে কেউ বলে! ছি!” বলে পপি নিচে চলে গেলো । অনিকও একটু পর নিচে চলে গেলো ।
“কিছু খাবার অর্ডার করি! নাকি!” ফুডপ্লাস রেস্টুরেন্টে বসে গালিবকে বলল আকবর । গালিব বলল, “থাক, এমনিতেও আমার এসব ফাস্টফুড পছন্দ না, তার ওপর একজন চাকরিহারা মানুষের পকেট থেকে টাকা খসাতে চাই না ।” আকবর মনে মনে রাগ করলেও তা প্রকাশ করলো না । একটু পর হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলো, “আমার মেয়ে কেমন আছে?” গালিব বলল, “আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে, মেয়ের যখন এতোই চিন্তা করেন, তখন মেয়েকে এরকম নির্মমভাবে অত্যাচার কেন করেছিলেন?” আকবর আলি কিছু বলল না । চুপ করে মাথা নিচু করলো । একটু পর গালিব বলল, “বাদ দিন! যা বলতে এসেছেন তা বলুন!” আকবর আলি তখন বলল, “ইয়ে, মানে ভাবছিলাম কি!” আবার আকবর আলি চুপ । গালিব জিজ্ঞেস করলো, “কি ভাবছিলেন?”
“ইয়ে মানে, আমি সম্মত ছিলাম না, কিন্তু এখন আমি রাজি!”
“সম্মত ছিলেন না, এখন রাজি, কিসে?”
“ওইযে আপনিও সেদিন বলছিলেন!”
“আমি বলছিলাম! কোন কথা বলছেন বলুন তো!”
“আরে বিয়ের কথা!”
“আপনি আবার বিয়ে করবেন একটা বউ থাকতেও!”
“আরে ধ্যাৎ! কি যাতা বলেন! আমার মেয়ে আর আপনার ছেলের বিয়ের ব্যাপারে আমি রাজি!”
গালিব তো কথা শুনে অবাক! এতো তাড়াতাড়ি রাজি হয়ে গেলো আকবর আলি!

আগামী পর্বেঃ
নিজের রুমে বসে পপি । ওর ভালো লাগছে না । মা আর রাফিদের কথা মনে পড়ছে খুব । জানালা দিয়ে নিচে তাকিয়ে দেখল, নতুন ভাড়াটিয়া আসছে । অনিকদের পাশের বাসায় সাদেকদের ছাড়া বাসায় আসছে । নতুন ভাড়াটিয়ার সোফাগুলো দেখে হালকা হাসলো । ওদের বাসার সোফার মতোই । একটু পর আলমারি দেখে হাসা বাদে অবাক হয়ে গেলো । এটা ওর রুমের আলমারিটা না! পপি অবাক হয়ে গেলো ।
×
বাবা(পর্ব-৩৭)

এতো তাড়াতাড়ি রাজি হয়ে গেলো আকবর আলি!
“আপনি কি সুস্থ?” জিজ্ঞেস করলো গালিব ।
“আহ! কি যে বলেন না! আমি ভেবে চিন্তে বলছি, এই বিয়েতে আমি মত দিচ্ছি ।” হালকা হেসে বলল আকবর আলি ।
গালিব হালকা হেসে বলল, “সেটাই তো সমস্যা, আপনিতো সুস্থ মস্তিষ্কে ভাবার মানুষ নন! নিশ্চয় এক পেছনে আপনার কোন খারাপ উদ্দেশ্য আছে!” আকবর আলি গালিবের কথা শুনে রেগে উঠলো ঠিকই, কিন্তু সে রাগ ভেতরেই চেপে রাখলো । গালিব বলল, “ঠিক আছে, আপনার মেয়েকে আমি তাহলে জানিয়ে দেবো যে আপনি রাজি হয়েছেন । কিন্তু হ্যাঁ, যদি আপনার সত্যি কোন বদ মতলব থেকে থাকে, তাহলে বলছি, সেটায় আপনি সফল হবেন না, আমার ছেলেকে, আমার বউমাকে আমি আপনার বদমতলব থেকে বাচাবো ইনশাআল্লাহ!” বলে উঠে চলে এলো গালিব । আকবর আলি মনে মনে বলল, “একবার তো বিয়েটা হতে দিন, প্রথম চমকটাতো আজ বিকেলেই পেয়ে যাবেন, বিয়ের পর না হয় বড় চমকটা দেবো!”
দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষে ড্রইং রুমে বসে খেলা দেখছিলো অর্ক, অনিক আর আরশি । আজ বাংলাদেশ আর অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ । তিন দিনের টি-টোয়েন্টি ম্যাচের প্রথম দিন । একটু আগে মোস্তাফিজ একটা ক্যাচ মিস করায় রেগে আছে অনিক । বলল, “কি রাগটা যে লাগে না! এই ক্যাচটা ধরলেই বাংলাদেশ জিতে যেতো!” আরশি বলল, “তুমি তো আবার মোস্তাফিজের ফ্যান, তাই রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক, আমার প্রিয় সাকিব আল হাসান যখন বোলিং করবে তখন দেখিস!” অর্ক বলল, “আহ! দুজনে থামবা! খেলাটা দেখতে দাও!” আরশি আর অনিক হেসে উঠলো । অনিক বলল, “তুই তো চুপ করতে বলবিই, কারণ তোর পছন্দের তাসকিন যে আজকে খেলতেছে না!” অনিক কিছু বলতে যাবে, এমন সময় সাকিব আর হাসানের করা বোলে ছক্কা মারল অস্ট্রেলিয়ার এক প্লেয়ার । অনিক তখন বলল, “একটু আগে কে জানি কি বলতেছিলো?” রান্নাঘর থেকে থালাবাসন মাজতে মাজতে চামেলি বলল, “কি হইলো, সাকিব খান আবার ছক্কা মারলো নাকি?” অনিক বলল, “বিউ.টিফুল! এটা সাকিব খান না! সাকিব আল হাসান! আর এখন বাংলাদেশ ব্যাটিং করছে না, বোলিং করছে, আর সাকিব আল হাসান ছক্কা মারে নি, ছক্কা খেয়েছে!” চামেলি বলল, “ও আইচ্ছা, আমি যতক্ষণ খেলা দেখতে না আমু ততোক্ষণ বাংলাদেশ খারাপই খেলতে থাইকবো!” অনিক বলল, “তাই নাকি?” “হ তাই!” বলে চামেলি ড্রইং রুমে এসে ওদের সাথে যুক্ত হল । আর একটু পড়েই সাকিব আল হাসানের বোলের আউট হয়ে গেলো একটু আগে ছক্কা মারা প্লেয়ার । সবাই অবাক হয়ে চামেলির দিকে তাকাল । চামেলি লজ্জা পেয়ে বলল, “এই যা! ইয়ার্কি করলাম, আর সত্যি হইয়া গেলো!”
নিজের রুমে বসে পপি । ওর ভালো লাগছে না । মা আর রাফিদের কথা মনে পড়ছে খুব । জানালা দিয়ে নিচে তাকিয়ে দেখল, নতুন ভাড়াটিয়া আসছে । অনিকদের পাশের বাসায় সাদেকদের ছাড়া বাসায় আসছে । নতুন ভাড়াটিয়ার সোফাগুলো দেখে হালকা হাসলো । ওদের বাসার সোফার মতোই । একটু পর আলমারি দেখে হাসা বাদে অবাক হয়ে গেলো । এটা ওর রুমের আলমারিটা না! পপি অবাক হয়ে গেলো । দৌড়ে ডাইনিং রুমে এসে দরজা খুললো । পপিকে দরজা খুলতে দেখে চামেলি, আরশি, অনিক আর অর্ক-ও দরজার দিকে তাকাল । পপি দেখল, দরজায় দাঁড়িয়ে ওর বাবা, আকবর আলি । পপিকে দেখে বোলে উঠলো, “কেমন আছিস মা?” সিড়ি দিয়ে অফিস থেকে ফিরে পাশের বাসায় আকবর আলিকে দেখে অবাক হয়ে গেলো গালিবও!
এদিকে পুষ্পিতা গেছে ময়না ভাবির বাসায় পরামর্শ নিতে কি করে শাশুড়ির হাত থেকে বাচা যায়!
“ভাবি! আমার শাশুড়িতো খুব ভালো, আমাকে কত্তো আদর করে! বাসায় আসলে উনিই কাজ কইরা দেয়, আসলে কপালে ছিল তাই পেয়েছি!” বলল ময়না ভাবি ।
“উহ! তোর কপালের গুষ্টি কিলাই!” মনে মনে বলল পুষ্পিতা ।
“আচ্ছা, আপনি শাশুড়ির সব কথা শুনতে যান কেন, আপনি একজন স্বাধীন মেয়ে!” বলল ময়না ভাবি ।
“আর স্বাধীন! আমার মা আমার শাশুড়ির বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো! শাশুড়ির কাছে মা গল্প করতো, আমার মেয়ে সব কাজ করে! এখন যদি আমি না করি, শাশুড়ি মা-কে বোলে দেয় তোর মেয়ে নাকি সব করে, কই কিছুই করে না তো! আর আমার মা আমাকে বকে!” বলল পুষ্পিতা ।
“হুম! এটাও তো অদ্ভুত বিষয়! আচ্ছা শোনেন ভাবি! ভালো একটা আইডিয়া দেই!” বলল ময়না ভাবি ।
“কি আইডিয়া?” জিজ্ঞেস করলো পুষ্পিতা ।
ময়না ভাবি বলল, “সিরিয়াল দ্যাখেন না! আপনার মা বাপকেও নিয়া আসেন বাড়িয়ে, সবাই কিছুদিন একসাথে থাকেন, তারপর একদিন কুটনামি কইরা আপনার মার মনে আপনার শাশুড়ির জন্য ঘৃণা তৈরি করেন যেভাবে পারেন!” পুষ্পিতা বলল, “ধুর! কি যে বলেন! আমি কেন কুটনামি করতে যাবো?” ময়না ভাবি বলল, “আরে ভাবি পারবেন পারবেন, নাইলে খাইটাই যান, ভাইবা দ্যাখেন কি করবেন ।” পুষ্পিতাও ভাবল, খাটাখাটির চেয়ে দুই বান্ধবীর মাঝে ঝগড়া তৈরি করাই বেশি ভালো হবে!

আগামী পর্বেঃ
গালিব বলল, “উনি তোদের বিয়েতে সম্মত হয়েছেন!” অনিক, পপি আর গালিব ছাড়া উপস্থিত সকলেই আনন্দে চেচিয়ে উঠলো, “ইয়ে!” গালিব মনে মনে বলল, “কিন্তু আমার বেতন এতো কম! তার ওপর ধার দেনা-ও পড়ে আছে, কি করে কি করবো আমি!”
……………………………..
পুষ্পিতা বলল, “মা, তাই আমি চাই, তুমি আর আব্বা কটা দিন থাকো!” লুনা বলল, “অ মাই মাই গো! হুদা কামে মিয়ার বাড়ি যাইয়া কি করুম!” পুষ্পিতা বলল, “আরে মা! তোমার বড় নাতি অনিকের বিয়ে! এজন্যই তো ডাকছি!” রুনা বলল, “অ মাই মাই গো! তাই নাকি! আইচ্ছা! তোর বাপের লগে কথা কই!”
×
বাবা(পর্ব-৩৮)

পুষ্পিতাও ভাবল, খাটাখাটির চেয়ে দুই বান্ধবীর মাঝে ঝগড়া তৈরি করাই বেশি ভালো হবে!
“কি ভাবি, কি ভাবতেছেন?” জিজ্ঞেস করলো ময়না ভাবি ।
“না, ভাবছি, কি করে করি!” বলল পুষ্পিতা ।
ময়না ভাবি পুষ্পিতাকে সাহস দিয়ে বলল, “সেইটা আমার ওপর ছাইড়া দেন ভাবি! দেইখেন, ক্যামনে আপনার শাশুড়ি আর আপনে মা, এই দুইজনের মাঝে প্যাঁচ লাগাই!” পুষ্পিতা হাসিমুখে বলল, “আপনি কতো বড় উপকারটা যে করলেন না ভাবি!” ময়না ভাবি বলল, “আরে! বিপদে তো বন্ধুই বন্ধুর, তাই না!” পুষ্পিতা বলল, “এক কাজ করি! চলেন, আমার মেয়ের সাথে আপনার ছেলের বিয়ের কথা ভাবি!” ময়নার মুখের হাসিটা থেমে গেলো । তারপর জোড় করে মুখে হাসি এনে বলল, “হ্যাঁ, ভেবে দেখি, আপনার ভাইয়ের সাথে কথা বোলে দেখি ।” তারপর মনে মনে বলল, “হ! তোমার মাইয়ার লগে আমার পোলার বিয়া দেই আর তখন তোমার মাইয়া আমারে ঘর থেইকা তাড়ানোর কুটনামি করুন না!”
সিঁড়ি দিয়ে উঠে দরজার সামনে দাড়িয়ে আকবর আলিকে গালিব জিজ্ঞেস করলো, “একি! আপনি!” ততোক্ষণে খেলা দেখা ছেড়ে দরজার সামনে উঠে এসে অর্ক, অনিক, চামেলি আর আরশি । আকবর আলি বলল, “কি ভাই, চমকে গেলেন না? সুন্দর সারপ্রাইজ! একটু আগেই দেখা হলো আর এখন দেখছেন আমি আপনার পাশের বাসায়! আসলে চাকরি নাই তো, ওই বাসায় বেশি ভাড়া পোষাইত না, তাই এই বাসায় আসলাম ।” আকবর বলল, “সে আপনি যা ইচ্ছা করুন, কিন্তু আমি আপনাকে আগেও বলেছি, এখনও বলছি, যদি আপনার সত্যি কোন বদ মতলব থেকে থাকে, তাহলে বলছি, সেটায় আপনি সফল হবেন না, আমার পরিবারকে আমি বাচাবো ইনশাআল্লাহ ।” আকবর আলি আর কিছু না বোলে চলে গেলো ভেতরে । পপি গালিবকে জিজ্ঞেস করলো, “আঙ্কেল, বাবার সাথে আপনার কখন দেখা হলো ।” গালিব বলল, “এইতো মা, একটু আগেই উনি ডাকলেন ।” পপি জিজ্ঞেস করলো, “কিসের জন্য?” গালিব হালকা হাসলো । অনিক জিজ্ঞেস করলো, “বাবা! কিসের জন্য ডেকেছেন?” গালিব বলল, “উনি তোদের বিয়েতে সম্মত হয়েছেন!” অনিক, পপি আর গালিব ছাড়া উপস্থিত সকলেই আনন্দে চেচিয়ে উঠলো, “ইয়ে!” অর্ক বলল, “আহা! এবার শিওর কব্জি ডুবিয়ে বিয়ে খাবো!” গালিব বলল, “নিশ্চয় খাবি ।” কিন্তু তারপর গালিব মনে মনে বলল, “কিন্তু আমার বেতন এতো কম! তার ওপর ধার দেনা-ও পড়ে আছে, কি করে কি করবো আমি!”
“হ্যালো মা!” ময়না ভাবির কথামতো ময়না ভাবির সামনেই নিজের মাকে কল দিলো পুষ্পিতা । পুষ্পিতার মায়ের নাম লুনা, আর বাবার নাম মিজান । কল ধরেই পুষ্পিতার মা, লুনা বলল, “অ মাই মাই গো! কেমন আছাও গো মা!” পুষ্পিতা বলল, “ভালো মা! তুমি কেমন আছো!” লুনা বলল, “আছি মা! ভালাই আলহামদুলিল্লাহ! তা আমার নাতিপুতি কেমন আছে!”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো মা! শোন না! একটা কথা ছিলো!” বলল পুষ্পিতা!
“অ মাই মাই গো! কিতা কইবি! ক!”
“মা, কাল তোমার বান্ধবি!..................”
“শাট আপ!!!” প্রচণ্ড রেগে বলল লুনা । এতো জোড়েই বলল যে ফোন লাউডস্পিকারে থাকায় সে আওয়াজ শুনে বুক কেপে উঠলো ময়না ভাবিরও ।
“আমার বান্ধবী মানে! আম্মা কইবি! আম্মা!” বলল লুনা ।
“আচ্ছা মা! উনি………” পুষ্পিতা বলতে গেলেও আবারও লুনা বলে উঠলো, “ক আম্মা!” পুষ্পিতা বলল, “আচ্ছা! আম্মা আর আব্বা আসতেছে!” লুনা বলল, “ও মা তাই! হুন! ভালো কইরা যত্ন করবি আমার বান্ধবীর! আমারে যেন কইতে না পারে আমি ওর কাছে তর যা প্রসংসা করছি তা মিথ্যা!” পুষ্পিতা হালকা বিরক্ত হয়ে বলল, “আহ মা! আমার কথাটা তো আগে শোনো!” লুনা বলল, “আচ্ছা ক!” পুষ্পিতা বলল, “মা, তাই আমি চাই, তুমি আর আব্বা কটা দিন থাকো!” লুনা বলল, “অ মাই মাই গো! হুদা কামে মিয়ার বাড়ি যাইয়া কি করুম!” পুষ্পিতা বলল, “আহ মা! আসো না!” লুনা বলল, “না! জামাইবাবার কষ্ট হইবো না! এমনেই রুম বেশি নাই, তার ওপর বান্ধবী আর বান্ধবীর জামাই আইতেছে! আমরা যাইয়া ভিড় বাড়ামু ক্যা! বিয়া টিয়া থাকলে হেইডা আলাদা কথা আছিলো ।” পুষ্পিতা ফোনটা একটু দূরে সরিয়ে ফিসফিসিয়ে ময়না ভাবিকে জিজ্ঞেস করলো, “ভাবি কি করবো এখন!” ময়না ভাবি বলল, “আরে বলে দেন না, যে অনিকের বিয়া! আপনে বলতেছিলেন না! গালিব ভাই অনিকের বিয়া নিয়া ভাবতেছে!” পুষ্পিতা সাত পাচ না ভেবেই বলল, “আরে মা! তোমার বড় নাতি অনিকের বিয়ে! এজন্যই তো ডাকছি!” রুনা বলল, “অ মাই মাই গো! তাই নাকি! আইচ্ছা! তোর বাপের লগে কথা কই!” তারপর আরও কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন কেটে দিলো পুষ্পিতা । তারপর ময়না ভাবিকে জিজ্ঞেস করলো, “ভাবি! বলে তো দিলাম! এখন কি হবে! বিয়েতে তে একেই আমার মত নেই! তার ওপর হলেই বিয়ের অনেক দেরি! আর ওই মেয়ের বাবা রাজি হবে কিনা তাও এক কথা!” ময়না বলল, “আরে! যা হইছে তা হইছে, এহন কি করবেন, তাই নিয়া ভাবেন!”

আগামী পর্বেঃ
ময়না ভাবির বাসা থেকে বাসায় এসে পুষ্পিতা দেখলো, ওদের পাশের বাসায় নতুন ভাড়াটে এসেছে । দরজায় দাঁড়িয়ে যে কাভার ভ্যানে মালামাল আনা হয়েছে তার ড্রাইভারকে ভাড়া দিচ্ছে নতুন ভাড়াটে । আরেকটু কাছে এগোতেই দেখলো, এ যে আকবর আলি! সেদিন রাতের কথা মনে পড়ে গেলো পুষ্পিতার । প্রচণ্ড রাগ ধরলো তার! এগিয়ে গেলো আকবর আলির কাছে! তারপর আকবরের গলা ধরে রাগ প্রকাশ করতে করতে বলতে লাগলো, “হারামজাদা! কুত্তার বাচ্চা! বদমাইশ!....................................।”
×
বাবা(পর্ব-৩৯)

ময়না বলল, “আরে! যা হইছে তা হইছে, এহন কি করবেন, তাই নিয়া ভাবেন!” পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “আপনিই বলেন তো! কি করি!” ময়না বলল, “শোনেন ভাবি, আপনার মেয়ের সাথে ছেলের বিয়েটা মাইনা নেন!” পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “মানলাম, কিন্তু ওই আকবর আলি মানবে তো?” ময়না ভাবি বলল, “দ্যাখেন কি হয়!” পুষ্পিতা তখন বলল, “আর বিয়ে হলেও তো কালই বিয়ে না, মা-কে কি বলবো তাহলে?” ময়না ভাবি বলল, “ভাইবেন কিছু একটা ।”
ময়না ভাবির বাসা থেকে বাসায় এসে পুষ্পিতা দেখলো, ওদের পাশের বাসায় নতুন ভাড়াটে এসেছে । দরজায় দাঁড়িয়ে যে কাভার ভ্যানে মালামাল আনা হয়েছে তার ড্রাইভারকে ভাড়া দিচ্ছে নতুন ভাড়াটে । আরেকটু কাছে এগোতেই দেখলো, এ যে আকবর আলি! সেদিন রাতের কথা মনে পড়ে গেলো পুষ্পিতার । প্রচণ্ড রাগ ধরলো তার! এগিয়ে গেলো আকবর আলির কাছে! তারপর আকবরের গলা ধরে রাগ প্রকাশ করতে করতে বলতে লাগলো, “হারামজাদা! কুত্তার বাচ্চা!
বদমাইশ!....................................।” মনে মনে যতো গালি দেয়ার দিলো! আর ঠিক সেই সময় কল্পনা থেকে ফিরে এলো পুষ্পিতা । আসলে এতক্ষণ সে আকবর আলিকে মারার ব্যাপারটা কল্পনা করছিলো । বাস্তবে তা তো সম্ভব না, কিন্তু দু’তিনটে কথা শোনানো যায়! কিন্তু এ মুহূর্তে সে কিছুই বলবে না । গালিব তাও বলেছে যে করে হোক আকবর আলিকে রাজি করাবে, এখন কথা শোনালে যদি রাজি না হয়! পুষ্পিতা কিছুই না বলে ঘরে ঢুকে গেলো ।
ঘরে যেয়ে দেখলো, গালিব মোবাইলে কার সাথে যেন কথা বলছে । “আচ্ছা! আচ্ছা, আব্বা, আল্লাহ হাফেজ!” পুষ্পিতা ভেতরে যেয়ে জিজ্ঞেস করল, “শশুড় আব্বা কল করেছিলো?” পুষ্পিতা বলল, “তোমার শশুর আব্বা না, আমার শশুড় আব্বা ।” পুষ্পিতা মনে মনে ভয় পেয়ে গেলো । বিয়ের কথা আবার জানিয়ে দিলো না তো! পুষ্পিতা গালিবের পাশে বসে জিজ্ঞেস করলো, “কি বলল?” গালিব বলল, “আব্বার বললেন কাল আসবেন!” পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করল, “আর কিছু বলে নি?” গালিব বলল, “না, আর কি বলতে যাবেন, তবে ভালোই হল, সবাই যখন আসছে, আমার মা বাবা, তোমার মা বাবা, বাড়িটা একদম ভরা ভরা লাগবে ।” পুষ্পিতা বলল, “হুম! আমার মা বাবা তো কদিনের জন্য আসছেন । আচ্ছা! রুম কি করবা!” গালিব বলল, “সে চিন্তা করার প্রয়োজন নেই, আমি সব ভেবে রেখেছি । আমি করছি আরেকটা চিন্তা!” পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “কি চিন্তা?” গালিব বলল, “না, সবাই যখন বাড়িতে আসছেন, সবার উপস্থিতিতে ছোটোখাটো একটা অনুষ্ঠান করে পপি আর অনিকের বিয়ে দিয়ে দেই ।” পুষ্পিতা তো অবাক! এটা তো সে ভাবতেই পারে নি! তাও জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা! ওই তোমার অফিসের বসটা দেখলাম পাশের বাসায় এসেছে! কেনো?” গালিব বলল, “কেনো আর, উনার চাকরি নেই, আগের বাসা বেশ ব্যায়বহুল ছিলো, তাই বাসা পালটালেন । তবে হ্যাঁ, এই বাসায় আসার কোন ফন্দি তো উনার আছেই! তবে একটা ভালো খবরও আছে!” পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করল, “কি খবর?” গালিব বলল, “আকবর আলি পপি আর অনিকের বিয়েতে রাজি হয়েছে!” পুষ্পিতার মন আনন্দে নেচে উঠলো । এ তো যেনো মেঘ না চাইতেই জল! পুষ্পিতা নিজের আনন্দ প্রকাশ করে বলেই ফেলল, “তাহলে কাল থেকেই বিয়ের আয়োজন শুরু করো!” গালিব অবাক হয় জিজ্ঞেস করল, “সেকি, তুমিও তো এই বিয়েতে রাজি ছিলে না!” পুষ্পিতা মনে মনে বলল, “ইশ! আস্তে ধীরে নিজেকে পাল্টানো দরকার ছিলো!” তারপর গালিবকে বলল, “আরে না! ময়না ভাবির বাসায় গিয়েছিলাম তো, উনি বোঝালো, ছেলের ভালোটা একটু বুঝতে ।” গালিব বলল, “যাক, ভালো হয়েছে যে তুমি বুঝতে পারলে ।”
বিকেলের কথা । নিজের রুমে মোবাইল চালাচ্ছিলো অর্ক । এমন সময় রাফিদের মেসেজ এলো । “কিরে ভাই! তোদের পাশের বাসায় আসলাম, অথচ একটু খোজ খবরও নিলি না!” অর্ক রিপ্লাই দিলো, “আরে না রে! ভাবলাম বাসার অনেক কাজ করছিস, ডিস্টার্ব না করি ।” রাফিদ রিপ্লাই দিল, “কাজ টাজ করে রেস্ট নেবো ভাবছি, চল ছাদে যাই! গল্প করি! যাবি?” অর্ক রিপ্লাই দিলো, “স্বচ্ছন্দে!” বলে অর্ক ছাদে গেলো । রাফিদ “ইয়ো ব্রো!” বলে অর্কর কাছে এসে অর্ককে জড়িয়ে ধরলো । অর্কও বলল, “ভাই! আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না আমার যে কি ভালো লাগতেছে!” রাফিদ বলল, “ভাইরে ভাই! আমিও! প্রথমে আব্বু যখন বাসা চেঞ্জের কথা বলল আমি তো সেই রাগ করছিলাম! আর আগের রাগ তো আব্বুর উপর ছিলোই! কিন্তু যখন দেখলাম তোদের পাশের বাসায় আমরা! তখন আমার চেহারা দেখলে তুই শিওর কাইন্দা দিতি!” অর্ক বলল, “হ্যাঁ দোস্ত! এখন মাঝে মাঝে ঘোরাঘুরি করার মতোও কাউকে পেলাম!” ওরা ছাদের একপাশে একটা বসায় জায়গায় যেয়ে বসলো ।

আগামী পর্বেঃ
এমন সময় আকবর আলি বলল, “মারে! রাফিদ কথা বলার সময় আমি শুনে ফেলেছি, মা রে! ভুল তো মানুষই করে, আমি কি আরেকটা সুযোগ পাওয়ার দাবি করতে পারি না মা? আয় মা! নয়তো পরের বার আমার লাশ দেখতে পাবি তুই!” পপি এবার বাবার কাছে যেয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে “বাবা!!” বলে চেচিয়ে কাদতে শুরু করলো ।
×
বাবা(পর্ব-৪০)

ওরা ছাদের একপাশে একটা বসায় জায়গায় যেয়ে বসলো ।
“আমার আপুর সাথে তোর ভাইয়ের বিয়া হইয়া গেলে তুই তো আমার আত্মীয় হইয়া যাবি!” বলল রাফিদ ।
“হ! সেইটা বড় কথা না, আমার কাছে তুই আত্মীয়র চেয়েও অনেক বড় কিছু, আমার ভাই তুই!” বলল অর্ক ।
“আমি একটা জিনিস বুঝতে পারছি না!”
“কি?”
“বাবা এতো তাড়াতাড়ি মেনে নিলেন কি করে! যেই বাবা এই কারণে নিজের মেয়েকে সারারাত হাত পা বেধে রেখেছিলেন!”
“কি জানি! হয়তো চাকরি হারানোর পর থেকে তোর বাবা একটু একটু করে নিজেকে পালটে নেবার চেষ্টা করছেন ।”
“হতে পারে! দোয়া করি সব যেনো ভালো হয় । কিছু খারাপ না হয় । বাবার ওপর ভরসা নেই!”
“কিন্তু আমার নিজের বাবার ওপর শতভাগ ভরসা আছে! আঙ্কেল যদি কিছু করতে চায়ও বাবা নিশ্চয় সামলে নিতে পারবে ।”
“ইনশাআল্লাহ, আমারও ভরসা আছে আঙ্কেলের ওপর ।”
পরদিন ছিলো মঙ্গলবার । সকালে গালিব অলরেডি অফিস চলে গেছে । অনিক ঘুমোচ্ছে এখনও পপির আজকে ভার্সিটি আছে । যেতে হবে । কিন্তু পপির জামাকাপড় তো ওই বাড়িতেই! তাই পপি অর্কর রুম এলো । নক করলো দরজায় । অর্ক দরজা খুলল । পপি জিজ্ঞেস করলো, “তোমার সাথে রাফিদের নাম্বার আছে না?” অর্ক বলল, “জি আপু আছে ।” পপি বলল, “একটু কল দাও না ভাইয়া! আমার ভার্সিটি আছে তো, আমার কিছু জিনিসপত্র ওকে একটু বলি দিয়ে যেতে ।” অর্ক বলল, “জি আপু, অবশ্যই, আসেন, ভেতরে আসেন ।” পপি অর্কর রুমে গেলো । অর্ক বলল, “বসেন আপু ।” পপি বসলো । অর্ক রাফিদকে কল করলো । “হ্যা দোস্ত! তুই কি বাসায়? আচ্ছা শোন তোর সাথে পপি আপু একটু কথা বলবেন । হ্যাঁ নে ।” বলে অর্ক ফোনটা পপির কাছে এগিয়ে দিলো । পপি কল কানে নিয়ে বলল, “হ্যাঁ রাফিদ! শোন, আমার যে ভার্সিটির খাতাটা, ওইটা, একটা কলম, আমার মোবাইল আর মোবাইল চার্জার, আমার ব্যাগ আর আমার লাল ওড়নাটা একটু দিয়ে যা ।” বলে কল কাটলো পপি । তারপর দরজার কাছে এসে দাড়ালো । একটু পর দরজা খোলার আওয়াজ । বুঝলো রাফিদ । তাই জুতো পড়ে সামনে এগোলো পপি । কিন্তু দরজা খুলতেই দেখলো এটা রাফিদ না! এটা ওর বাবা, আকবর আলি । তবে আকবর আলির হাতে কিছুই না, পেছনে রাফিদও খালি হাতে দাঁড়িয়ে আছে । পপি ফিরে আসতে নেবে এমন সময় আকবর আলি বলল, “মারে! রাফিদ কথা বলার সময় আমি শুনে ফেলেছি, তাই ওকে বললাম আমি তোর সাথে কথা বলবো । তুই নিশ্চয়ই শুনেছিস, আমি তোর বিয়ে মেনে নিয়েছি, তাহলে এখনও কেনো আমার ওপর রাগ করে আছিস মা?” পপি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো । আকবর আলি এবার কান্না করে দিলো, “মা রে, আমার বয়স হয়েছে মা! এই বয়সে আমাকে একা ফেলে রাখিস না!” পপিও কেদে দিলো । বাবার জন্য ওরও খারাপ লাগা শুরু করলো । অর্ককে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পুষ্পিতাও এগিয়ে এলো দরজার কাছে । দেখলো, এই কাহিনী । পপি কাঁদছে, আর আকবর আলিও কাঁদছে । আকবর আলি বলল, “মা রে! ভুল তো মানুষই করে, তোর বাবা হবার পাশাপাশি আমি তো একজন মানুষ রে মা! আমি কি আরেকটা সুযোগ পাওয়ার দাবি করতে পারি না মা?” পুষ্পিতা তখন একটু দরদমাখা কণ্ঠে বলল, “যাও মা! যাও । বাবা এতো করে বলছে, যাও ।” মনে মনে পুষ্পিতা বলল, “বাপের কাছে যা আর জাহান্নামে যা! কিন্তু এ বাড়ি থেকে আপাতত বিদায় হ! তোর বিয়ে মেনে নেয়া লাগতিছে বইলা, নাইলে ঘাড় ধাক্কা দিয়া বাইর কইরা দিতাম! এই বাড়িতেই তো আসবি, কটা দিন রেহাই দে অন্তত!” আকবর আলি এবার বলল, “আয় মা! নয়তো পরের বার আমার লাশ দেখতে পাবি তুই!” পপি এবার বাবার কাছে যেয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে “বাবা!!” বলে চেচিয়ে কাদতে শুরু করলো । আকবর আলিও কাদতে কাদতে বলল, “আমাকে ক্ষমা করে দিস মা!” পপি বলল, “না বাবা, সে কথা থাক!” পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা অর্ক মনে মনে বলল, “কিছু তো একটা গণ্ডগোল আছেই!” পুষ্পিতা মনে মনে “হুহ! ন্যাকা!” বলে ভেতরে চলে গেলো । আকবর আলি মনে মনে বলল, “তোর জন্য কষ্ট সত্যিই হচ্ছে! আমি বাবা হয়ে এমন ফালতু ফ্যামিলির সাথে তোর বিয়ে দিতে আমি রাজি না! তোকে আমি বিরাট বাড়িতে বিয়ে দেবো! আর তার জন্য তোর এই বিয়ে আমি তোর মাধ্যমেই ভাংবো!” অর্ক দরজা চাপিয়ে ভেতরে চলে গেলো ।

আগামী পর্বেঃ
রান্নাঘরে গিয়ে পুষ্পিতা হাতে আর জামায় একটু হলুদ গুড়ো লাগিয়ে নিলো । তারপর চামেলিকে বলল, “তুমি যাও! ঘর মোছো!” বলে রান্নাবান্নার কাজে হাত দিলো । একটু পর দরজা খুলবার আওয়াজ শুনে দৌড়ে এগিয়ে গেলো পুষ্পিতা । ময়না ভাবি আর কাছে এগোলো না । দরজার কাছে দাড়িয়েই দেখতে লাগলো । ঘরে এলো বয়স্ক তবে স্মার্ট দম্পতি, কুলসুম আর শামসু, গালিবের মা বাবা, পুষ্পিতার শাশুড়ি ।
×
বাবা(পর্ব-৪১)

অর্ক দরজা চাপিয়ে ভেতরে চলে গেলো ।
দুপুর ১২টার দিকের কথা । চামেলি রান্না করছিলো । পুষ্পিতার মাথায় টেনশন । কি করে যে কি হবে! একটু পর দরজায় নক । পুষ্পিতার বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো । শাশুড়ি বোধ হয় চলে এসেছে! পুষ্পিতা কাপাকাপা পায়ে এগিয়ে গিয়ে উকি দিয়ে দেখলো, ময়না ভাবি । দরজা খুলতেই ময়না ভাবি বলল, “ভাবি! চলে এলাম! আপনি ভয় পাচ্ছিলেন ভেবে একটু সাহস যোগাতে এলাম!” পুষ্পিতা বলল, “খুব ভালো করেছে ভাবি! আসেন ভেতরে আসেন ।” ময়না ভেতরে গেলো । দুজনে ডাইনিং টেবিলে বসলো । ময়না ভাবি জিজ্ঞেস করলো, “আপনার মা বাবা কখন আসবে আর আপনার শ্বশুর শাশুড়ি কখন আসবেন?” পুষ্পিতা বলল, “মা বাবা তো মাত্র রওনা দিয়েছে, আর শ্বশুর শাশুড়ি ভোর হতেই রওনা দিয়েছে, এই এলো বলে ।” ময়না ভাবি বলল, “ও আচ্ছা, আরশি তো স্কুলে গেছে, না?” “হ্যাঁ” পুষ্পিতা বলল । আরও নানান কথা বার্তা বলছিলো ময়না ভাবি আর পুষ্পিতা । রান্নাঘর থেকে চামেলি বলল, “উহ! কি যে বক বক করে! শ্বশুর শাশুড়ি আইলে তো ঠিকই কাজ করার ভান ধরবেনে!“ এর ঠিক ১০ মিনিটের মাথায় পুষ্পিতার মোবাইলে কল আসে । গালিব কল করেছে, “হ্যাঁ শোনো, মা বাবা এসে গেছেন । অর্ককে বলো একটু কষ্ট করে নিচে যেয়ে নিয়ে আসতে । কয়তলা বুঝতে পারবেন না না হলে ।” পুষ্পিতা কল কেটে অর্ককে ডাকলো, “অর্ক! এই অর্ক!” অর্ক আসে । জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে?” “তোর বাবা একটু নিচে যেতে বলছে! তোর দাদা দাদি এসেছে ।” অর্ক, “আচ্ছা ।” বলে নিচে গেলো । অর্ক বেড়িয়ে যেতেই পুষ্পিতা গেলো রান্নাঘরে । পেছন পেছন ময়না ভাবিও । রান্নাঘরে গিয়ে পুষ্পিতা হাতে আর জামায় একটু হলুদ গুড়ো লাগিয়ে নিলো । তারপর চামেলিকে বলল, “তুমি যাও! ঘর মোছো!” বলে রান্নাবান্নার কাজে হাত দিলো । একটু পর দরজা খুলবার আওয়াজ শুনে দৌড়ে এগিয়ে গেলো পুষ্পিতা । ময়না ভাবি আর কাছে এগোলো না । দরজার কাছে দাড়িয়েই দেখতে লাগলো । ঘরে এলো বয়স্ক তবে স্মার্ট দম্পতি, কুলসুম আর শামসু, গালিবের মা বাবা, পুষ্পিতার শাশুড়ি । তাদের দেখেই ভদ্রভাবে সালাম দিলো পুষ্পিতা, “আসসালামু আলাইকুম আম্মা আব্বা! কেমন আছেন?” কুলসুম বলল, “আছি মা, আলহামদুলিল্লাহ ভালো, তুমি কেমন আছো মা?” পুষ্পিতা বলল, “আমি আছি মা! সারাদিন কাজ করি, আমার আর ভালো লাগা খারাপ লাগা । এই যে, রান্নাই করছিলাম আপনাদের জন্য এতক্ষণ ।” ময়না ভাবি মনে মনে বলল, “ওরে আল্লাহ! কি অভিনয়!” শামসু বলল, “বউমা, বড় নাতি আর নাত্নি কি স্কুলে গেছে নাকি ।” পুষ্পিতা বলল, “হ্যাঁ আব্বা! আরশি স্কুলে আর অনিক ভার্সিটি গেছে । আপনারা আসেন! ভেতরে আসেন!” কুলসুম আর শামসু ভেতরে ঢুকে বসলো ।
এদিকে আকবর আলি তখন দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলো । উকি দিয়ে এতক্ষণ দেখছিলো গালিবের মা বাবা এসেছে । এই দেখে মনে মনে বলল, “যাক, এদের পরিবার আরও বড় হলে ঝামেলা করতে আরও সুবিধা হবে!”
ফ্রিজ থেকে শরবত বের করে কুলসুম আর শামসুকে দিলো পুষ্পিতা । বলল, “আপনাদের জন্য বানিয়ে রেখেছি, নিন খান!” কুলসুম আর শামসু শরবত খেলো । ঘর মুছতে থাকা চামেলি ঘটনা দেখে মনে মনে বলল, “এহ! কি যে মিথ্যুক! আমি বানাইয়া রাখলাম! আর ক্রেডিট নিলো নিজে ।” শামসু বলল, “বউমা, ঘরে কি প্যারাসিটামল আছে?” পুষ্পিতা বলল, “হ্যাঁ আব্বা আছে! কেন, মাথা ব্যাথা করছে!” শামসু বলল, “হ্যাঁ একটু তো করছে, যাও না একটু এনে দাও!” পুষ্পিতা মনে মনে বলল, “উহ! আইসাই শুরু বুড়া বুড়ির আবদার!” ওষুধ আর এক গ্লাস পানি এসে শামসুকে দিলো পুষ্পিতা ।
“আসবো?” প্রীতির রুমের সামনে এসে বলল গালিব । প্রীতি বলল, “জি আঙ্কেল! আসেন!” গালিব ভেতরে ঢুকল । “বসেন!” বলল প্রীতি । গালিব বসলো । গালিব বলল, “বলছিলাম কি, এই অফিসে কি ওভারটাইম করা যাবে?” প্রীতি জিজ্ঞেস্ক করলো, “ওভারটাইম! হ্যাঁ করা যায় তো । আপনি ওভারটাইম করতে চাচ্ছেন?” গালিব বলল, “হ্যাঁ আসলে পারিবারিক সমস্যা ছিলো তো কিছু, বেশি টাকার দরকার এখন ।” প্রীতি বলল, “ঠিক আছে আঙ্কেল, কবে থেকে করবেন?” গালিব বলল, “আজ হবে না, কাল থেকে করবো ভাবছি ।” প্রীতি বলল, “আচ্ছা, কাল থেকে তাহলে রাত ৮টা থেকে ২টা পর্যন্ত অফিসে থাকবেন । তবে হ্যাঁ!” গালিব বলল, “আরেকটা কথা, যদি কিছু মনে না করেন!” প্রীতি বলল, “আঙ্কেল! আমি কিছুই মনে করি না । আপনি নির্ভয়ে বলেন ।” গালিব জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা, ওভারটাইমের পর বেতন কেমন বৃদ্ধি পাবে?” প্রীতি বলল, “উম, এই অফিসে তো আপনার আগের অফিসের থেকে বেতন যেমন বেশি, ওভারটাইম করলে ওই অফিসে যেমন বেশি পেতেন, এই অফিসে তার চেয়েও বেশি পাবেন । মাসে মোট তিন গুণ বেতন পাবেন আপনি ।” গালিবের ঠোটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো । এই অফিসে বেতন পায় পঁচিশ হাজার টাকা । তিনগুণ করলে যা হয় পঁচাত্তর হাজার টাকা । এতে বেশ ভালোভাবেই সংসার চালানো যাবে । আর এখন ছেলের বিয়ের জন্য লোন নিলেও তা পড়ে সহজেই শোধ করা যাবে ।

আগামী পর্বেঃ
পুষ্পিতা রান্নাঘরেই মোবাইল চালাচ্ছিলো, আর চামেলি রান্না করছিলো । যখনই পুষ্পিতা টের পেলো কুলসুম আসছে, তখনই চামেলির হাতে মোবাইল দিয়ে সে রান্নায় হাত দিলো । কুলসুম বলল, “খালা একটু আমার সাথে এসো না! একটু আমাকে একটা কাজে সাহায্য করবে!” বলে চামেলিকে নিয়ে চলে গেলো কুলসুম । পুষ্পিতা বলে উঠলো। “মরণ! এখন এই রান্না কি করে করবো!”
×
বাবা(পর্ব-৪২)

আর এখন ছেলের বিয়ের জন্য লোন নিলেও তা পড়ে সহজেই শোধ করা যাবে ।
অফিস থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে ফিরবার পথে গালিব দেখলো আরশিকে, বাসার দিকে যাচ্ছে স্কুল শেষ করে । গালিব জিজ্ঞেস করল, “কিরে! আজ এতো দেরি হল যে?” আরশি বলল, “বাবা, হলো একটু, একটা বান্ধবীর বাসায় গিয়েছিলাম তো ।” গালিব বলল, “যাবি মোটরসাইকেলে?” আরশি হাসিমুখে বলল, “হ্যাঁ! যাবো!” তারপর আরশি মোটরসাইকেলের পেছন থেকে হেলমেট নিয়ে বাবার পেছনে বসে মোটরসাইকেলে করে বাসায় ফিরলো । তারপর ওপরে উঠলো । ঘরে ঢুকতেই আরশি দেখলো, কুলসুম আর শামসু, ওর দাদা দাদি । “দাদি!! দাদা!!” বলে খুশিতে দাদা আর দাদির কাছে যেয়ে তাদের জড়িয়ে ধরলো । কুলসুম বলল, “আমার নাত্নি! কেমন আছিস!” আরশি বলল, “একটু আগে যেমন ছিলাম, এখন আর চেয়ে দশগুণ বেশি ভালো ।” গালিব ওর মা বাবাকে সালাম দিল, “আসসালামু আলাইকুম মা, আসসালামু আলাইকুম বাবা!” কুলসুম আর শামসু সালামের জবাব দিলো । তারপর কুলসুম গালিবকে জিজ্ঞেস করল, “আহ! বাবা আমার! কতদিন পর তোকে দেখলাম!” গালিব বলল, “হ্যাঁ মা, আসোই তো না ।” শামসু বলল, “তোর অফিসের কি ঝামেলা হয়েছিলো দেখলাম সেদিন টিভিতে । এখন সব ঠিক আছে তো বাবা?” গালিব বলল, “হ্যাঁ বাবা, আল্লাহর রহমতে আগের অফিসের চেয়েও অনেক ভালো আছে সবকিছু ।” শামসু বলল, “যাক আলহামদুলিল্লাহ! যা ফ্রেশ হয়ে নে ।” গালিব, “আচ্ছা!” বলে রুমের দিকে গেলো । শামসু তখন নাত্নির চুলে আদর করে বলল, “আরশি মা! তুমিও যাও! গোসল করে নাও!” আরশি, “আচ্ছা দাদা!” বলে সে-ও গেলো নিজের রুমে । শামসু বলল, “এখন অনিক বাবা বাকি! ছেলেটা কখন যে আসবে ।” কুলসুম বলল, “যাই! দেখি বউমা রান্নাঘরে কি করে ।” পুষ্পিতা রান্নাঘরেই মোবাইল চালাচ্ছিলো, আর চামেলি রান্না করছিলো । যখনই পুষ্পিতা টের পেলো কুলসুম আসছে, তখনই চামেলির হাতে মোবাইল দিয়ে সে রান্নায় হাত দিলো । চামেলি মনে মনে রাগ দেখিয়ে বলল, “এহ! আমার রান্না! আর কেরেডিট নেয় নিজে!” কুলসুম রান্নাঘরে এসে বলল, “বউমা! আহারে, কি কষ্ট করছো, কোন সাহায্য লাগবে?” পুষ্পিতা বলল, “না মা! আমার কারও সাহায্য লাগে না মা, আমি একাই সব করতে পারি! আর আপনারা এসেছেন বলে কথা । আপনাদের দিয়ে কি করে কাজ করাই বলুন তো!” কুলসুম তখন চামেলিকে দেখে বলল, “তুমি কি এই বাসায় কাজ করো খালা?” চামেলি হাসি মুখে বলল, “জি খালাম্মা!” কুলসুম বলল, “ও আচ্ছা! তা খালা একটু আমার সাথে এসো না! একটু আমাকে একটা কাজে সাহায্য করবে!” পুষ্পিতা ভয় পেয়ে গেলো । এবার রান্না করবে কে! চামেলি, “জি আচ্ছা!” বলে যেতে নেবে, এমন সময় পুষ্পিতা বলল, “এই চামেলি! তোকে না কি করতে দিলাম!” চামেলি জিজ্ঞেস করল, “আমারে আবার কি করতে দিলেন!” পুষ্পিতা বলল, “আরে! কিছু পেঁয়াজ কাটতে বললাম না!” কুলসুম বলল, “আচ্ছা বউমা, তুমি একটু কেটে নিয়ো কষ্ট করে!” পুষ্পিতা বলল, “কিন্তু মা! ও সাহায্য করে বলেই তো আমি কাজ করি!” কুলসুম জিজ্ঞেস করল, “সেকি বউমা! একটু আগেই তো বললে তুমি কারো সাহায্য ছাড়াই কাজ করতে পারো!” পুষ্পিতা আমতা আমতা করে বলল, “ইয়ে!......মানে……না আসলে……এখন করছিলো……।” কুলসুম বলল, “ও আচ্ছা! ঠিক আছে, আমার কাজটা করে নিক, বেশিক্ষণ লাগবে না, রান্না তো করছোই, নিশ্চয় পেঁয়াজ না কেটে রান্না শুরু করো নি, এই পেয়াজ পরের জন্য কাটতে চেয়েছো, পড়ে কেটে দিলেও কিছু হবে না । এসো খালা!” বলে চামেলিকে নিয়ে চলে গেলো কুলসুম । পুষ্পিতা বলে উঠলো। “মরণ! এখন এই রান্না কি করে করবো!” যেতে যেতে চামেলিও মনে মনে বলল, “খুব ভালা হইছে! এহন বোঝেন, কাম করা কি কষ্টের, কেরেডিট যে নেন, আমি কতো কষ্ট করি বোঝেন!”
এদিকে ভার্সিটি থেকে একসাথে ফিরছিলো পপি আর অনিক । পপি বলল, “তোমাকে এতো করে বললাম বিয়ে যখন হচ্ছেই তখন বিয়ের আগে একসাথে থেকো না, আঙ্কেল দেখলে রাগ করবেন না!” অনিক বলল, “আচ্ছা বাবা! আজকের দিনটাই তো!” পপি বলল, “আজকের দিনটাই তো মানে? কাল আবার ডেকে বলবে আজকের দিনটাই তো!” অনিক বলল, “আচ্ছা, বাদ দাও এ কথা । অর্ক মেসেজ দিছিলো, বলল তুমি নাকি তোমাদের বাসায় চলে গেছো?” পপি বলল, “হ্যাঁ! বাবা-ই আমাকে নিয়ে গেলেন ।” অনিক বলল, “যাক, বিয়ের আগে সবার সাথে আবার সম্পর্ক ভালো হয়ে গেলো এটাই আলহামদুলিল্লাহ ।” পপি জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা, একটা কথা বলবো?” অনিক বলল, “বলো ।” পপি বলল, “আচ্ছা বিয়ে তো অনেক ব্যয়বহুল, তোমার কি মনে হয়, একা তোমার বাবার হাতে সবটা ছেড়ে দেয়া উচিৎ হবে?” অনিক জিজ্ঞেস করলো, “তো এখানে আমি আর কি করবো তুমিই বলো? আমার তো চাকরিও নেই?” পপি বলল, “তোমার তো এই সেমিস্টারই শেষ, তারপরই তো তুমি কোথাও চাকরীর জন্য জয়েন করবে । তো আর কটা দিন ধৈর্য ধরলে ভালো হতো বলে মনে হয় না তোমার?”

আগামী পর্বেঃ
বলে দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখলো, দাড়িয়ে আছে পুষ্পিতার বাবা মা, লুনা আর মিজান । লুনা অর্ককে দেখেই বলে উঠলো, “ও মাই মাই গো! আমার নাতি কত বড় হইয়া গেছে!” অর্ক হাসিমুখে সালাম দিলো, “আসসালামু আলাইকুম নানা নানী! আসেন!” লুনা আর মিজান ভেতরে ঢুকল । “দেন ব্যাগগুলো, আমি নিচ্ছি ।” বলে নানা নানীর কাছ থেকে ব্যাগ নিয়ে ভেতরে এসে দরজা আটকাতে যাবে, এমন সময় খেয়াল করলো রাফিদদের বাসার দরজা হালকা খোলা, আর সেখান থেকে কেউ সরে গেলো না?
×
বাবা(পর্ব-৪৩)

পপি বলল, “তোমার তো এই সেমিস্টারই শেষ, তারপরই তো তুমি কোথাও চাকরীর জন্য জয়েন করবে । তো আর কটা দিন ধৈর্য ধরলে ভালো হতো বলে মনে হয় না তোমার?” অনিক কিছুক্ষণ ভাবলো । তারপর বলল, “আচ্ছা, চলো বাসায় তারপর আমি ভেবে তোমাকে জানাচ্ছি ।” বিল্ডিঙের কাছাকাছি চলে এলো ওরা । সিড়ি বেয়ে ওপরে উঠলো । তারপর পপি গেলো পপির বাসায়, অনিক ওর বাসায় । ঘরে ঢুকতেই দেখলো, বসে আছেন দাদা শামসু । শামসু নাতিকে দেখে বলল, “এইতো! আমার বড় নাতি এসে গেছে!” অনিক দাদার সামনে যেয়ে দাদাকে সালাম দিলো, “আসসালামু আলাইকুম দাদা! কেমন আছেন?” শামসু বলল, “ভালো আছি বাবা!”
“দাদি কোথায়?” জিজ্ঞেস করল অনিক ।
“ওই, তোদের বাসায় যে কাজ করে ওই খালাকে নিয়ে রুমে গেলো, কি যেন কাজ করতে ।” বলল শামসু ।
“ও, আচ্ছা দাদা, আমি গোসলটা সেরে আসি?”
“হ্যাঁ অবশ্যই যা!” রুমে গেলো অনিক ।
বিকেলের দিকে সবাই একত্র হল ড্রইং রুমে । গালিব, পুষ্পিতা, আরশি, অনিক, অর্ক, কুলসুম আর শামসু । কুলসুম বারবার বাইরের দরজার দিকে তাকাচ্ছে আর বলছে, “ইশ! আমার বান্ধবী যে কখন আসবে!” পুষ্পিতা বলল, “আসবে আম্মা, আসবে! এই এলো বলে প্রায় ।” গালিব বলল, “আব্বা, কি খাবেন বলেন, সন্ধ্যায় আব্বা আম্মা আসলে উনাদের সাথে দেখা করে উনারাও কি খাবেন শুনে বাজারে যাবো ।” শামসু বলল, “আর যাই আনিস! আমার জন্য কাঁঠাল মাস্ট!” কুলসুম ধমক দিয়ে বলল, “চুপ! আইসাই কাঁঠাল! কত না কাঁঠাল খাইলা!” শামসু বলল, “আচ্ছা! সরি!” গালিব বলল, “বাবা! কাঁঠাল আনবো, তবে পড়ে, মা ঠিকই বলেছে, তোমার এতো কাঁঠাল খাওয়া ঠিক না ডায়বেটিস হবে ।” পুষ্পিতা বলল, “আরও কিছু বলা আছে আব্বা আম্মা, তবে সেটা আমার মা বাবা আসলে আপনাদের বলবো ।” কুলসুম বলল, “তোমরা না বললেও আমরা কিন্তু আন্দাজ করতে পারছি!” পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করল, “কি আম্মা?” কুলসুম বলল, “না থাক, আমিও এখন না বলি, নাইলে পড়ে সত্যি না হলে খারাপ লাগবে ।” সেই মুহূর্তেই দরজায় কলিংবেলের আওয়াজ । অর্ক, “আমি যাচ্ছি ।” বলে দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখলো, দাড়িয়ে আছে অর্ক, আরশি, অনিকের নানা নানী, গালিবের শশুর শাশুড়ি, পুষ্পিতার বাবা মা, লুনা আর মিজান । লুনা অর্ককে দেখেই বলে উঠলো, “ও মাই মাই গো! আমার নাতি কত বড় হইয়া গেছে!” অর্ক হাসিমুখে সালাম দিলো, “আসসালামু আলাইকুম নানা নানী! আসেন!” লুনা আর মিজান ভেতরে ঢুকল । “দেন ব্যাগগুলো, আমি নিচ্ছি ।” বলে নানা নানীর কাছ থেকে ব্যাগ নিয়ে ভেতরে এসে দরজা আটকাতে যাবে, এমন সময় খেয়াল করলো রাফিদদের বাসার দরজা হালকা খোলা, আর সেখান থেকে কেউ সরে গেলো না? কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে অর্ক দরজা লাগিয়ে দিল । কিছু হবে হয়তো ।
আসলে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে উঁকি দিয়ে দেখছিলো আকবর আলি । মনে মনে বলল, “আরেকটু হলেই তো ধরা পড়ে যেতাম! যাই হোক, ওদের পরিবারে দেখি চাঁদের হাট বসেছে, যাক, আমারই ভালো, বেশি লোক হলে ঝামেলা করতে সুবিধাই হবে!”
লুনাকে দেখেই উঠে দাঁড়িয়ে, “দোস্তো!!” বলে একটা আনন্দের চিৎকার করে এগিয়ে এসে লুনাকে জড়িয়ে ধরলো কুলসুম । লুনা বলল, “মাই মাই গো! আমার বান্ধবী তো এহনও নায়িকা নায়িকা আছে!” কুলসুম বলল, “দোস্তো! তুমিও কম না!” লুনাকে সালাম দিলো গালিব, “আসসালামু আলাইকুম আম্মা আব্বা, কেমন আছেন?” লুনা বলল, “আলহামদুলিল্লাহ বাবা!” গালিব শশুরকে জিজ্ঞেস করলো, “আপনি কেমন আছেন আব্বা?” গালিবের শ্বশুর মিজান অবাক হয়ে বলে উঠলো, “ডাব্বা! ডাব্বা মারছে কেডায়!” লুনা বলল, “ও মাই মাই গো! ডাব্বা না, আব্বা ডাকছে আমাগো জামাই বাবা!” মিজান বলল, “ও আচ্ছা! আলহামদুলিল্লাহ জামাইবাবা, ভালা আছি, তুমি ভালো আছো?” গালিব বলল, ”আছি আলহামদুলিল্লাহ ভালো ।” লুনা গালিবকে বলল, “তোমার শ্বশুর মশাই আবার কানে কম শুনতাছে ইদানিং ।” গালিব বলল, “ও আচ্ছা! সমস্যা নেই আম্মা ।” লুনাকে সালাম দিলো আরশি । লুনা সালামের জবাব দিয়ে বলল, “এইযে আমার ছোট নায়িকা!” আরশিকে জড়িয়ে ধরে আদর করলো লুনা । তারপর অনিকও সালাম জানালো নানিকে । সালামের জবাব দিয়ে লুনা বলল, “কি বাবা! বিয়ার পাত্রি কেমন পছন্দ হইছে?” গালিব অবাক হয়ে গেলো । জিজ্ঞেস করলো, “একি, আপনি জানলেন কি করে?” লুনা বলল, “ও মাই মাই গো! আমারে পুষ্পিতাই তো জানাইলো বাবা!” পুষ্পিতা বলল, “আসলে মা আসতে চাচ্ছিলো না, তাই কথা বলিয়ে এনেছি ।” কুলসুম জিজ্ঞেস করলো, “বিয়া! কার বিয়া!?” মিজান হঠাৎ ভয়ে ভয়ে বলল, “লিয়া! এই তোমরা লিয়ার কথা জাইনা গেলা ক্যামনে!” লুনা বলল, “আহ! লিয়া না, বিয়া! আর তুমি কোন লিয়ার কথা কইতাছো!” মিজান জিভ কেটে বলল, “না না! কোনো লিয়ার কথাই না!” লুনা মিজানকে, “হুম! পড়ে এইডার তদন্ত করতাছি!” বলে কুলসুমকে বলল, “অনিকের বিয়া! তোরে কয় নাই?” কুলসুম বলল, “না, বলেছিলো তোরা আসলে বলবে, তবে এইটা আমি আগেই আন্দাজ করছিলাম!” গালিব বলল, “যাক, তাহলে তো হয়েই গেলো ।” শামসু বলল, “আমাদের অনিক নাতি বড়ই হয়ে গেলো! বিয়ে করবে এখন! বাবা হবে! বাচ্চা কাচ্চা হবে!” অনিক লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করলো । আরশি অনিকের পাশে যেয়ে ইয়ার্কি করে বলল, “কিরে? লজ্জা পাচ্ছিস?” অনিক, “যাহ!” বলে নিজের রুমে চলে গেলো । বাকি সবাই হেসে উঠলো ।

আগামী পর্বেঃ
পুষ্পিতা বলল, “এইতো! এই ভয়টায় পাচ্ছিলাম! ভাগ্যিস মেয়েটা নাই! ও থাকলে তো আরও ঝামেলা হইতো!” অনিক হালকা রাগ করে বলল, “মা তুমি সবসময় পপিকে দোষ দাও কেন?” পুষ্পিতা রেগে গিয়ে বলল, “এই! তোর সাহস তো কম না! তুই আমার সাথে এভাবে কথা বলিস কোন সাহসে! জিভ টাইনা ছিড়া ফেলবো একদম!” অনিকও পাল্টা রেগে গিয়ে বলল, “হ্যাঁ, সেটাই করো! চাকু এনে দিচ্ছি খুন করো আমাকে!”
×
বাবা(পর্ব-৪৪)

বাকি সবাই হেসে উঠলো ।
রাতে সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে একসাথে খাওয়া দাওয়া করলো । কিন্তু এখন সমস্যা হল কে কোন রুমে থাকবে তাই নিয়ে । পুষ্পিতা বলল, “এইতো! এই ভয়টায় পাচ্ছিলাম! ভাগ্যিস মেয়েটা নাই! ও থাকলে তো আরও ঝামেলা হইতো!” অনিক হালকা রাগ করে বলল, “মা তুমি সবসময় পপিকে দোষ দাও কেন?” পুষ্পিতা রেগে গিয়ে বলল, “এই! তোর সাহস তো কম না! তুই আমার সাথে এভাবে কথা বলিস কোন সাহসে! জিভ টাইনা ছিড়া ফেলবো একদম!” অনিকও পাল্টা রেগে গিয়ে বলল, “হ্যাঁ, সেটাই করো! চাকু এনে দিচ্ছি খুন করো আমাকে!” গালিব অনিককে, “আহ অনিক! মায়ের সাথে কেউ এভাবে কথা বলে!” পপি গালিবকে বলল, “তোলো! আরও মাথায় তোলো! তোমার প্রশ্রয়েই এমন হচ্ছে ।” গালিব পপিকে বলল,”তুমিও কেন বার বার পপিকে দোষ দিচ্ছি বলোতো? ও তো একদিনের আশ্রিতা ছিল, চলেই তো গেছে নাকি?” পপি রাগ করে নিজের রুমে চলে গেলো । অনিকও, “অসহ্য!” বলে রাগ ঝেড়ে নিজের রুমে চলে গেলো । লুনা গালিবকে জিজ্ঞেস করলো, “অ মাই মাই গো! জামাইবাবা, পপি কেডা?” গালিব বলল, “আম্মা, পপিই অনিকের বউ হতে চলেছে ।” লুনা চোখ মুখ ইয়া বড় বড় করে মুখের সামনে হাত রেখে বলল, “অ মাই মাই মাই মাই মাই!!!! বিয়ার আগে বউ জামাইয়ের বাড়িত! নাউযুবিল্লাহ!” কুলসুম বলল, “সেইটাই তো! এইটা কি শুনি গালিব?” গালিব বলল, “আম্মা আর মা, দুজনে শান্ত হোন, অনেক ঘটনা ঘটেছিলো । সব আপনাদের বলবো । এখন আপনারা জার্নি করে এসেছেন, আপনাদের ঘুমের ব্যাবস্থা করি ।” মিজান বলে উঠলো, “লড়ি! কার লগে লড়বা জামাইবাবাজি! আমারে নিয়ো! আমি এককালে কুস্তি খেলতাম!” গালিব হালকা হেসে বলল, “আব্বা, লড়ি বলিনি, বলেছি করি । আপনাদের ঘুমের ব্যাবস্থা করি বলেছি ।” মিজান বলল, “ও আইচ্ছা ।” তারপর গালিব ভাবলো । তারপর বলল, “এক কাজ করি, অর্ক, তুই এ কদিন অনিকের রুমে থাক, আর আরশি তুই এ কদিন তোর মায়ের কাছে থাক । এ কদিন তোড় দাদা দাদি, নানা নানী তোদের রুমেই থাকুক ।” অর্ক জিজ্ঞেস করলো, “কিন্তু বাবা, তুমি কোথায় থাকবা?” গালিব হালকা হেসে বলল, “ধুর! আমার চিন্তা করিস না । আমার ঘুমাবার অনেক জায়গা আছে । সোফা, মেঝে, অনেক জায়গা আছে, আমাদের সমস্যা নেই ।” লুনা বলল, “সি সি বাবাজি! কি যে কও! তোমারে নিচে শোয়াইয়া আমরা ক্যাম্নে বিছানায় ঘুমামু?” গালিব বলল, “কোন সমস্যা নেই আম্মা আব্বা, আমার অভ্যেস আছে ।” লুনা “কিন্তু……।” বলতে গেলে থামিয়ে দিয়ে গালিব বললো ”কোনো কিন্তু না! আপনি না মায়ের বেস্ট ফ্রেন্ড, তাহলে কেন এমন করছেন? আমার সিদ্ধান্ত না মানলে কিন্তু খুব কষ্ট পাবো?” লুনা আর কিছু বলল না । যেমন কথা সেই অনুযায়ী সবাই যে যার রুমে চলে গেলো ।
পরদিন বুধবার । আজ অনিকের ভার্সিটি নেই । সকালে অফিস ইতোমধ্যে চলেও গেছে গালিব । এখন আরশি খাওয়া-দাওয়া করছে, স্কুলে যেতে হবে । অর্ক বা অনিক, কেউই এখনও ঘুম থেকে ওঠে নি । পুষ্পিতাও ওঠেনি । রান্না করছে চামেলি । এদিকে তাড়াতাড়ি উঠবার অভ্যেস থাকলেও জার্নি করে ক্লান্ত হওয়ায় আজ সকাল সকাল উঠতে পারে নি কুলসুম, শামসু আর মিজান । লুনা কিন্তু সাত সকালে উঠে সিরিয়াল দেখছে । কিছুক্ষণ পর অ্যাড হলে তাকিয়ে দেখল আরশিকে । কাছে যেয়ে নাত্নিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল, ”অ মাই মাই গো! আমার নাত্নি খাইতছে! ইশকুলে যাবে!” আরশিকে নানীকে চুমু খেয়ে বলল, “হ্যাঁ নানী! স্কুলে যাচ্ছি!” লুনা জিজ্ঞেস করলো, “যাইক! আলহামদুলিল্লাহ, অনেক বড় মানুষ হ! দোয়া করি । তোর মা তো রান্নাঘরে, না?” আরশি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “রান্নাঘরে? মা এখন রান্নাঘরে হতে যাবে কেনো?” লুনা ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো, “তাইলে রান্না করতাছে কেডা?” আরশি বলল, “কে আবার, আমাদের বিউটিফুল, চামেলি খালা!” লুনা অবাক হয়ে গেলো । রান্নাঘরে গেলো । দেখলো চামেলি রান্না করছে । জিজ্ঞেস করলো, “অ মাই মাই গো! খালা! পরত্যেক দিনই কি তুমি রান্না করো?” চামেলি মনে মনে হেসে বলল, “পাইছি! খালারে এবার সেই আকারে ফাসামু!” লুনা আবার জিজ্ঞেস করলো, “কি খালা! জবাবা দেও!” চামেলি বলল, “হ খালাম্মা! আমিই তো করি! ক্যান কি হইছে?” চামেলির প্রশ্নের জবাব না দিয়ে লুনা বলল, “আমার মাইয়া কোন কামই করে না?” চামেলি বলল, “না তো!”
“সকাল, বিকাল, রাইত সব রান্না তুমিই করো নাকি?” জিজ্ঞেস করলো লুনা ।
“জি খালাম্মা! এই বাড়ির সব কাম আমি করি! রান্না বান্না, ঘর গোছানো, কাপড় কাচা! থালাবাসন মাজা ।” বলল চামেলি ।
“তাইলে আমার মাইয়া কি করে!” হালকা রাগ দেখিয়ে বলল লুনা ।
চামেলি মনে মনে বলল, “বদ্দি চেতি গেছে!” তারপর বলল, “কি আর, আমি তো সারাদিন মোবাইলেই দেহি!” লুনা বলল, “আইজকা উঠুক! মাই মাই গো! এই করে আমার মাইয়া! আমার বান্ধবীর কাছে এতো গর্ব কইরা মাইয়ার প্রসংসা করছি! এহন যদি এইসব দ্যাহে তাইলে কি হইবো! আইজ ওর একদিন কি আমার একদিন!” সে সময় টিভিতে সিরিয়াল শুরু হওয়ার আওয়াজ এলো । “আয় হায়! আমার সিরিয়াল!” বলে চলে গেলো লুনা । চামেলি বলে উঠলো, “খালা উঠলেই খেলা হবে!”

আগামী পর্বেঃ
রান্নাঘরে মোবাইল চালাচ্ছিলো পুষ্পিতা । ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে হঠাৎ দেখলো একটা আইডি । নাম সাজ্জাদুল সাজু । মনের ভেতরটা হঠাৎ ঠাণ্ডা হয়ে গেলো পুষ্পিতার । এটা সেই ছেলেটা না! আইডিতে ঢুকল পুষ্পিতা । ছবি দেখে আরও ক্লিয়ার হয়ে গেলো সমস্তটা ওর কাছে । হ্যাঁ! এটা তো সেই সাজু! স্কুলের শেষ ৩বছর আর কলেজ লাইফের প্রথম ১ বছর মিলিয়ে মোট সাড়ে চার বছরের প্রেম যার সাথে ছিলো পুষ্পিতার!
×
বাবা(পর্ব-৪৫)

চামেলি বলে উঠলো, “খালা উঠলেই খেলা হবে!”
হঠাৎ মুখে এক মগ পানি পড়তেই ঘুম ভেঙ্গে উঠে পড়লো পুষ্পিতা । তাকিয়ে দেখলো, ওর মা, লুনা মগ হাতে দাড়িয়ে । পুষ্পিতা বুঝতে পারলো কি হয়েছে । সময়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো, সকাল ৯টা বেজে গেছে । লুনা রাগান্মিত স্বরে বলল, “কিরে! তুই কাম না কইরা ঘুমাইতেছোস! তুই পরত্যেকদিন এমন করোস না?” পুষ্পিতা নিজে নিজেকে বাঁচানোর জন্য আমতা আমতা করে বলল, “না মা! কে বলেছে! আমি প্রত্যেকদিন এমন করি না!” লুনা বলল, “অ তাই! আমারে তো খালা তাইলে মিথ্যা কইছে!” পুষ্পিতা অবাক । তবে এটা বুঝলো, খালা লুনাকে সব বলে দিয়েছে । লুনা বলল, “তাড়াতাড়ি ওঠ! যাইয়া কাম কর!” পুষ্পিতা উঠলো । ফ্রেশ হয়ে ছুটলো রান্নাঘরের দিকে ।
রান্নাঘরে পুষ্পিতাকে আসতে দেখে চামেলি মনে মনে বলল, “কি ব্যাপার! খেলা এতো তাড়াতাড়ি শ্যাষ!” পুষ্পিতা চামেলিকে কিছু বলতে যাবে রাগ নিয়ে এমন সময় লুনা এসে বলল, “খালারে কিছু কবি না! নিজে কর! আমি কিন্তু এই রুম থেইকা খেয়াল করমু!” পুষ্পিতা পেছন ফিরে বলল, “কই মা! খালাকে তো বলছিলাম বাজারে যেতে!” লুনা বলল, “আমারে বোকা পাইছোস! গতকালই জামাইবাবা মাগরিবের নামাজের পর আমার আর আমার বান্ধবীর কাছ থেইকা কি খামু শুইনা বাজার কইরা নিয়া আইলো!” পুষ্পিতা বলল, “না! আসলে হলুদগুড়ো শেষ! সেটা আনতেই পাঠাচ্ছি!” লুনা বলল, “অ!” বলে চলে গেলো টিভির রুমে । পুষ্পিতা ফিসফিসিয়ে চামেলিকে বলল, “খালা! তাড়াতাড়ি কোন তরকারি চুলায় দিয়া বাজারে যাও!” চামেলি বলল, “হলুদগুড়া তো আছেই!” পুষ্পিতা বলল, “আরে গাধী! মাকে তো বলে ফেলছি নাই আর তুমি বাজারে যাবা! মা ড্রইং রুমেই বসে! তোমাকে বাজারে যেতে না দেখলে সন্দেহ করবে!” চামেলি বলল, “অঅঅ!” পুষ্পিতা বলল, “হা করে দাঁড়িয়ে না থেকে কিছু একটা করো!” চামেলি কিছু কেটে রাখা আলু বেগুনসহ আরও কিছু চুলায় তুলে দিয়ে বাইরে গেলো । যাবার আগে পুষ্পিতাকে বলে গেলো যে, এগুলো এখন সেদ্ধ হবে, হতে হতেই চলে আসবে । আর বেরোতে বেরোতে চামেলি মনে মনে বলল, “আমাকে গাধী বলে! তুই গাধী! তোর চৌদ্দ গুষ্টি গাধী!” ড্রইং রুমে বসে থাকা লুনা বলল, “হুম! মাইয়া তাইলে সত্যিই কইছে! আমারে ফাঁকি দিতে পারতো না! আমি গোয়েন্দা বৌমা সিরিয়ালের ডেইলি দর্শক! আমি এইহানে গোয়েন্দা মা! যদিও বৌমা-ও ছিলাম এককালে!”
রান্নাঘরে মোবাইল চালাচ্ছিলো পুষ্পিতা । ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে হঠাৎ দেখলো একটা আইডি । নাম সাজ্জাদুল সাজু । মনের ভেতরটা হঠাৎ ঠাণ্ডা হয়ে গেলো পুষ্পিতার । এটা সেই ছেলেটা না! আইডিতে ঢুকল পুষ্পিতা । ছবি দেখে আরও ক্লিয়ার হয়ে গেলো সমস্তটা ওর কাছে । হ্যাঁ! এটা তো সেই সাজু! স্কুলের শেষ ৩বছর আর কলেজ লাইফের প্রথম ১ বছর মিলিয়ে মোট সাড়ে চার বছরের প্রেম যার সাথে ছিলো পুষ্পিতার!
“টিংটোং!” কলিংবেলের আওয়াজ । দরজা খুললো লুনা । দাঁড়িয়ে একটা মেয়ে । হাতে বাটি । মেয়েটা আর কেউ না, পপি । লুনাকে দেখেই সালাম দিলো । “আসসালামু আলাইকুম নানী! কেমন আছেন?” লুনা বলল, “অ মাই মাই গো! ওয়ালাইকুমুস সালাম! তুমি কেডা?” পপি বলল, “নানী, আমি পপি, এইতো, পাশেই থাকি, আমার নাম নিশ্চয় শুনেছেন!” লুনা একটু বলে করে বলল, “অ! তুমিই তাইলে আমার নাতি অনিকের হবু বউ?” লুনা জিজ্ঞেস করলো, “বিয়ার আগে এইহানে কি?” সেই সময় রুমের দিকে আসছিলো মিজান । কথা শুনে ছুটে এলো, “লিয়া! কই লিয়া! লিয়া আইছে!” লুনা বলল, “আরে আমার বয়রা জামাই! আমি লিয়া কই নাই! বিয়া কইছি! লিয়া রহস্য পরে খুজতাছি! আগে দ্যাখো! আমাগো নাতি, অনিকের বউ!” পপি সালাম দিয়ে বলল, “আসসালামু আলাইকুম নানা!” মিজান রেগে গিয়ে ধমক দিয়ে বলল, “হপ! কে কইছে আমি কানা! তোমার আমারে দেইখা কানা মনে হয়!” লুনা বিরক্ত হয়ে তখন বলল, “এই! তুমি যাও তো! রুমে যাও!” মিজান রুমে চলে গেলো । লুনা জিজ্ঞেস করলো, “এহন কও! কি দরকার!” পপি বলল, “না আসলে, হলুদগুড়ো শেষ তো, একটু হলুদগুড়ো লাগতো ।” লুনা বলল, “হলুদ গুড়া শেষ হইয়া গেছে! যাও যাও! হলুদগুড়া নাই!” পপি বলল, “কিন্তু অনিক যে বলল আছে!”
সাজুর টাইমলাইনে ছবিগুলো দেখে অবাক পুষ্পিতা । এতো স্মার্ট আর হ্যান্ডসাম! সেই যেন স্কুল লাইফের সাজু! চেহারা, পোশাক আশাক, সব স্টাইলিশ । তবে একটা ব্যাপার, আইডি সাজুর বউ, বাচ্চা কারও ছবি দেখলো না পুষ্পিতা । তবে কি সাজু আজও বিয়ে করে নি? আফসোস হল পুষ্পিতার । কি একটা আনস্মার্ট, কিপটা, খ্যাঁত জামাই কপালে জুটছে! পুষ্পিতা যখন সাজুর ছবিতে ডুবে আছে, সে সময় রান্নাঘর থেকে হলুদগুড়ো কৌটো নিয়ে চলে গেলো অনিক । গতকাল পুষ্পিতার সাথে ঝগড়া হওয়ায় সে-ও পুষ্পিতাকে কিছু বলল না । পুষ্পিতা হাসিমুখে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে দিলো সাজুকে ।
“আরে আমার নাতি জানবো ক্যামনে ও কি রান্নাঘরের খোজ খবর রাহে নাকি?” পপিকে বলল লুনা । একটু পর অনিককে হলুদগুড়ো ভরা হলুদগুড়োর কৌটো হাতে এদিকেই আসতে দেখে বলল, “ওইযে! ও নিয়ে আসছে!” লুনা পেছন ফিরে তাকালো । চোখ আর মুখ না চাইতেই বড় বড় হয়ে গেলো লুনার ।

আগামী পর্বেঃ
চিৎকার ছিলো এমন, “মিথ্যা কথা কেন কইলি!” আর সেটা দিয়েছে লুনা । লুনা হলুদগুড়োর কৌটো দেখিয়ে বলল, “এইডা আইলো কোত্থেইকা? তোর মোবাইল, দে!” পুষ্পিতা মোবাইল দিলো লুনাকে । লুনা বলল, “আইজকা থেইকা এই মোবাইল আমার কাছেই থাকবো! তর খালা ঘর মুছবো, আর আমার লগে কাপড় কাচবো! রান্নাবান্না, কাপড় কাচা তুই করবি!”
×
বাবা(পর্ব-৪৬)

চোখ আর মুখ না চাইতেই বড় বড় হয়ে গেলো লুনার । চলে গেলো রান্নাঘরের দিকে । আর অনিক পপিকে হলুদগুড়ো দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলো, “এখনই যদি শেষ হয়ে যায়, গায়ে হলুদের দিন কি হবে?” পপি হেসে বলল, “পাগল নাকি তুমি? এই হলুদ দিয়া কেউ গায়ে হলুদ করে নাকি?” অনিক আবার হেসে উঠলো । তারপর একটু থেমে বলল, “লাগলে আমাকে বোলো, আমি এনে দেবোনে ।” পপি বলল, “থ্যাংকস! কিন্তু লাগবে না । আমার ভাই এনে দিতে পারবে ।” এদিকে রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে লুনা দেখলো, পুষ্পিতা মোবাইল চালাচ্ছে । মনে মনে বলল, “দাড়া! এক্ষুনি হলুদগুড়ো দেখিয়ে তোর মোবাইল আমি কেড়ে নিচ্ছি!” বলে আবার লুনা অনিকের দিকে যেতে লাগলো । এদিকে অনিক পপিকে বলল, “হবে এইটুকুতে? নাকি আরও লাগবে?” পপি নিজের হলুদগুড়োর কৌটোর দিকে তাকিয়ে বলল, “ইয়া আল্লাহ! কথায় কথায় এতো দিয়ে দিয়েছো খেয়ালই করিনি!” অনিক বলল, “ঠিক আছে, নিয়ে যাও, সমস্যা নেই ।” পপি হলুদগুড়ো নিয়ে নিজের ঘরের দরজার কাছে যেয়ে দরজা খুলতে অনিক ডাকলো, “পপি!” পপি পেছন ফিরে তাকালো । অনিক বলল, “লাভ ইউ সো মাচ বেবি!” পপির চেহারায় না ফুটলো হাসি, না এলো কথা কোন রিপ্লাই । নিজের ঘরে ঢুকে দরজা আটকে দিলো । অনিক অবাক হলেও সে নিজের ঘরের দরজা লাগিয়ে পেছন ফিরে তাকাতেই নিজেই বুঝতে পারলো, পপি কেন এমন করেছে । পেছন দাড়িয়ে অনিকের নানী লুনা । লুনা বলল, “অ মাই মাই গো! অয় কি তোর বাচ্চা লাগে যে বেবি কইতাছোস?” অনিক বলল, “নানী! এখন এগুলোই বলে!” লুনা বলল, “আহা! এহন এইগুলাই কয়! আইচ্ছা বেবি কইস, আর ময়না টিয়া যাই কইস, বিয়ার আগে এইগুলা চলবো না! যা রুমে যা! আর হলুদগুড়ার কৌটা আমারে দে ।” অনিক লুনাকে হলুদগুড়োর কৌটোটা দিয়ে নিজের রুমের দিকে গেলো ।
রান্নাঘরে তখনও পুষ্পিতা মোবাইল চালাচ্ছে । এখনও ডুবে আছে পুরোনো ভালোবাসা সাজুর প্রোফাইলে । একটা দোটানায় পড়ে গেছে পুষ্পিতা । সাজুকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাবে কি পাঠাবে না সেটা নিয়ে । হাতটা বারবার সেন্ড ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট বাটনে যাচ্ছে, আবার একটু পর সেখান থেকে চলে আসছে । আবার সেখানে কাছাকাছি হাত নিয়ে যেতেই একটা চিৎকার শুনে পুষ্পিতার হাত কেঁপে উঠলো, ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট চলে গেলো সাজুর কাছে, আর মোবাইলটাও মেঝেতে পড়ে গেলো । চিৎকার ছিলো এমন, “মিথ্যা কথা কেন কইলি!” আর সেটা দিয়েছে লুনা । পুষ্পিতা নিচে তাকিয়ে দেখলো, সাজুর প্রোফাইল পিকচারটা স্ক্রিনে ভেসে আছে, মা দেখলে ঝগড়া আরও বাড়বে, তাই ভয়ে তাড়াতাড়ি মোবাইল তুলে ফোন লক করে দিলো । লুনা হলুদগুড়োর কৌটো দেখিয়ে বলল, “এইডা আইলো কোত্থেইকা?” পুষ্পিতা আমতা আমতা করে বলল, “ও! হলুদগুড়ো ছিল? আমি তো দেখিই নি!” লুনা বলল, “চালাকি করোস আমার লগে না? তোর সাহস তো কম হয় নাই মাই মাই গো? আমার অনিক নাতি আইসা হলুদগুঁড়া নিয়া গেলো, আর তুই নাকি খুইজা পাস না?” পুষ্পিতা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, “অনিক! ও হলুদগুড়ো নিয়ে কি করেছে?” লুনা বলল, “সেইটা বড় কথা না! তুই আগে তোর কথা ক!” পুষ্পিতা বলল, “মা! প্লিজ, থামো!” লুনা অবাক হয়ে গেলো । চোখ মুক বড় বড় হয়ে গেলো । বলল, “এতো বড় কথা তুই কইতে পারলি?” তারপর হাত পেতে বলল, “দে আমারে!” পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “কি?” লুনা বলল, “তোর মোবাইল, দে!” পুষ্পিতা জানতে চাইলো, তোমার মোবাইল আছে না! আবার আমার মোবাইল দিয়ে তুমি কি করবা?” লুনা বলল, “তোর জানার দরকার নাই! দে আমারে!” পুষ্পিতা মোবাইল দিলো লুনাকে । তারপর লুনা হলুদগুড়োর কৌটো একটা টেবিলের ওপর রেখে বলল, “আইজকা থেইকা এই মোবাইল আমার কাছেই থাকবো! তরে খালি রাইতে দিমু, আর ভোরে নিয়ে নিমু! মাঝে কল আইলে দিমু, তয় সেই সময়টুকুন আমার সামনে কথা কইতে হবে!” বলে মোবাইল নিয়ে যেতে গিয়ে আবার পেছন ফিরে তাকিয়ে বলল, “আইজকা থেইকা তর খালা ঘর মুছবো, আর আমার লগে কাপড় কাচবো! রান্নাবান্না, কাপড় কাচা তুই করবি!” বলে চলে গেলো লুনা । পুষ্পিতা রাগে মেঝেতে লাফাতে লাগলো আর বলতে লাগলো, ”হায়রে আমার কপাল!! কেমন যে লাগছে!”
মোবাইল নিয়ে আসতে আসতে লুনার দেখা কুলসুমের সাথে । বান্ধবীকে দেখেই বলল, “অ মাই মাই গো! বান্ধবী! তোমার ঘুম ভাংলো তাইলে?” কুলসুল বলল, “হ্যাঁ রে, গতকাল জার্নি করে আইসা এতো ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম! তোমার ভাই তো মাথাব্যাথা এখনও করছে বলল ।” লুনা বলল, “অ! প্যারাসিটামাল খাইবো নাকি ভাই?” কুলসুম বলল, “হ্যাঁ, সেটা তো দিয়ে এলাম । বললাম ভালো লাগলে খাইতে আইসো । তোমরা খেয়েছো নাকি?” কুলসুম বলল, “অ মাই মাই গো, আমি কি আমার বান্ধবীরে ছাড়া খাই কি কইরা!” কুলসুম বলল, “আচ্ছা! চলো দোস্তো খাই!” লুনা মিজানকে ডাকলো, “ওগো! কই গেলা! খাইতে হবে! আসো!” কুলসুম আর লুনা ডাইনিং টেবিলে বসলো । পুষ্পিতা সকালের নাস্তা পরিবেশন করছে । একটু পর মিজান ব্যাগ জামাকাপড়ের ব্যাগ নিয়ে এলো । লুনা জিজ্ঞেস করলো, “মাই মাই গো! ব্যাগ নিয়া যাও কই!” মিজান জিজ্ঞেস করলো, “লিয়া!” লুনা হালকা বিরক্ত হয়ে বলল, “ওরে আল্লাহ! লিয়া না, নিয়া!” মিজান বলল, “ক্যান! তুমিই না কইলা যাইতে হবে, আসো!” লুনা বলল, “যাইতে না! খাইতে কইছি! হায়রে!” বলে কপালে হাত ঠেকালো লুনা ।

আগামী পর্বেঃ
ছাদে বসে ছিলো মিজান আর শামসু । দুই বৃদ্ধ বসে গল্প করছিলো । সেই সময়েই ছাদে গেলো আকবর আলি । দুজনকে দেখতে পেয়ে ঠোঁটের কোণে হাঁসি চলে এলো তার, মনে মনে বলল, “ওহ নো! এ তো দেখি আমার সুযোগই আমার কাছে হাজির হচ্ছে! যাই, এনাদেই দিয়েই আমার মেয়ের বিয়ে ভাঙ্গার প্রথম চেষ্টা শুরু করি!”
×
বাবা(পর্ব-৪৭)

বলে কপালে হাত ঠেকালো লুনা । যাই হোক, ওরা খাওয়া দাওয়া শুরু করলো । একটু পর শামসু-ও এসে ওদের সাথে বসে সকালের নাস্তা সারলো । কুলসুম জিজ্ঞেস করলো, “বৌমা, তুমি, আমার নাতি নাত্নি, ওরা সবাই খেয়েছে?” পুষ্পিতা বলল, “আমি খাইনি, কিন্তু ওরা খেয়েছে ।” কুলসুম বলল, “এমা সেকি! বোসো! খাও!” পুষ্পিতা বলল, “না ঠিক আছে, খাওয়া দাওয়া শেষ করেন, তারপর খাবো ।” পুষ্পিতা যে কথাগুলো স্বাভাবিকভাবে বলছে, তা কিন্তু নয় । একটা বিরক্তি ভাব নিয়ে বলছে কথাগুলো ।
খাওয়া দাওয়া শেসে মিজান আর শামসু গেলো ছাদে । কুলসুম আর লুনা ড্রইংরুমে বসে মোবাইল চালাচ্ছে আর গল্প করছে ।
“মাই মাই গো! কুদ্দুসের মাইয়া কি সব ছবি দেয়! ছি ছি ছি!” বলল লুনা ।
“সেইটাই তো! কুদ্দুস কি দ্যাখে না এইসব?” বলল কুলসুম ।
“আল্লাহই জানে! এই! দেখো! একখান পোলা আবার কমেন্টও করছে! লিখছে, লুকিং গগিয়াস!”
“এটা গর্জিয়াস! মানে অনেক সুন্দর ।”
“আমি এক্কেরে শিওর হইয়া কইতে পারি! দেইখা নিয়ো, এই পোলার লগে কুদ্দুসের মাইয়া ভাইগা যাইবো!”
“কিন্তু কুদ্দুসের মেয়ে তো বিবাহিত! সেদিনই তো পোস্ট দিলো দেখলাম, মেরিড উইথ, ছেলের নামটা মনে নাই!”
“অ মাই মাই গো! বিয়া করা মাইয়া পালাইয়া যাইবো! ছি! আমার মাইয়ারেও তো এর ধারের কাছেরও কোন খারাপ জিনিস শিখাই নাই! মাইনষে কতো খারাপ হইয়া যাইতাছে!”
রান্নাঘর থেকে দুজনের কথা শুনছে, আর রাগ নিয়ে পুষ্পিতা বলছে, “হুহ! আমার মোবাইল কেড়ে নিয়ে দুই বান্ধবী ফেসবুকেরই গল্প করতেছে!” এদিকে চামেলি ঘর মুছছে আর মনে মনে বলছে, “আহা! এমন জীবন কয়জনই পায়! বুয়াগোর বেষ্ট আরামের জীবন পুরষ্কার যদি থাইকতো, সেইডা আমি পাইতাম!”
ছাদে বসে ছিলো মিজান আর শামসু । দুই বৃদ্ধ বসে গল্প করছিলো । সেই সময়েই ছাদে গেলো আকবর আলি । দুজনকে দেখতে পেয়ে ঠোঁটের কোণে হাঁসি চলে এলো তার, মনে মনে বলল, “ওহ নো! এ তো দেখি আমার সুযোগই আমার কাছে হাজির হচ্ছে! যাই, এনাদেই দিয়েই আমার মেয়ের বিয়ে ভাঙ্গার প্রথম চেষ্টা শুরু করি!” বলে আকবর আলি এগিয়ে গেলো । সালাম দিলো । “আসসালামু আলাইকুম চাচা!” শামসু জবাব দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “ওয়া আলাইকুমুস সালাম! কিছু বলবা বাবা?” আকবর আলি পাশেই আধভাঙ্গা চেয়ার টেনে বসে বলল, “না, এমনি । আপনাদের দেখলাম, তাই ভাবলাম একটু কথা বলি ।” মিজান জিজ্ঞেস করলো, “আপনে কেডা? আপনেরে তো চিনলাম না?” আকবর আলি হালকা হেসে বলল, “এখন চিনছেন না, কিন্তু খুব শীঘ্রই আমি আপনাদের অনেক আপন হতে চলেছি ।” শামসু জিজ্ঞেস করলো, “ঠিক বুঝলাম না!” আকবর আলি বলল, “সেকি! আপনাদের গালিব ভাই কিছু বলে নি?” শামসু বলল, “কই, না তো……………ও না! হ্যাঁ! আপনি কি পপির বাবা?” আকবর আলি বলল, “জি চাচা, আমি পপির বাবা!” মিজান জিজ্ঞেস করলো, “কি খাবা? পপি? এইডা আবার কি খাবার?” শামসু বলল, “আরে! খাবা না, বাবা! উনি আমাদের অনিকের হবু শশুরমশাই!” শামসু বলল, “ও! আপনেই তাইলে পাশের বাড়িত থাকেন!” আকবর আলি বলল, “জি চাচা, আপনাদেরকে দেখেছিলাম, এখানে আপনাদের দেখেই তাড়াহুড়ো করে চলে এলাম কথা বলতে ।” মিজান ধমক দিয়ে বলল, “হপ! আমরা বুড়ো হইছি তোরে কে কইছে? এহনও লিয়া আমারে দেখলে কইবেনে নায়ক রাজ্জাক!” শামসু আবার হালকা বিরক্তির সাথে বলল, “ওরে আমার বয়রা বেয়ান! বুড়ো না, উনি হুড়ো বলেছেন, তাড়াহুড়ো!” আকবর আলি জিজ্ঞেস করলো, “উনি মনে হয় একটু কানে কম শোনেন, না?” শামসু বলল, “হ্যাঁ, একটু না, অনেক কম শোনেন বলা যায় । না বুঝলে তো কিছুই বলে না, উল্টাপাল্টা বুঝলে রাগ করেন ।” আকবর আলি বলল, “আচ্ছা, সমস্যা নেই ।” মিজান বলল, “তা কও, তুমি কি কইতে আইছিলা?” আকবর আলি বলল, “এইতো, কথাবার্তা তো হচ্ছেই, তা আপনারা কি এই বিয়েতে রাজি?” শামসু বলল, “আমার ছেলের ওপর আমার ভরসা আছে, ও যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে আমি রাজি না হয়ে পারি না ।” আকবর আলি বলল, “না, তা ঠিক, গালিব ভাইয়ের ওপর সবাই ভরসা করে, কিন্তু সমস্যা কি, গালিব ভাই আবার একটু বেশি সৎ, সহজ সরল তো, উনি আবার কিছু সমস্যা গায়ে না মেখেই রাজি হয়ে যান ।” মিজান জিজ্ঞেস করলো, “সমস্যা, কিয়ের সমস্যা?” আকবর আলি মনে মনে বলল, “এবার লক্ষ্যের দিকে কথা ছোড়ার পালা ।” তারপর মিজান আর শামসুকে বলল, “আমার মেয়ে, খুব একটা ভালো না । জানি বাবা হয়ে এসব আপনাদের বলা ঠিক না, কিন্তু তাও বলছি । কারণ আমি চাই না, অন্যের বাড়িতে যেয়ে আমার মেয়ে খারাপ কিছু করুক ।” মিজান জিজ্ঞেস করলো, “কি সমস্যা?” আকবর আলি বলল, “আমার মেয়ে তো এসি ছাড়া ঘুমাতেই পারে না । তারপর ব্র্যান্ডের জামাকাপড়, মেকআপ, জুয়েলারি, অন্যান্য গ্যাজেটস, এগুলো ছাড়া তো ওর চলেই না । আর একেকটা জিনিস ও দুইমাসের বেশি ব্যাবহারও করে না । তাছাড়া প্রতিদিন ও ডায়েট মেইনটেইন করে চলে । আপনাদের বাড়িতে খাবার খেয়ে থাকতে পারবে কিনা! ওর জন্য আলাদা খাবার রান্না করতে না হয় আবার । আর তাছাড়াও আমার মেয়ের শুধু যে অনিকই বয়ফ্রেন্ড, তা কিন্তু না । এর আগেও ওর আরও ৪টা বয়ফ্রেন্ড ছিলো । একজন এখন বিসিএস ক্যাডার, আরেকজন পুলিশ অফিসার, আরেকজন এখন আর্মি অফিসার, আরেকটা ছেলে তো অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক । কোনদিন যে অনিককে ছেড়ে ওদের কাছে আবার ফিরে যাবে, আল্লাহই জানেন!” মিজান হয়তো সব কথা বুঝতে পারে নি, তাও ওর চেহারায় তেমন এক্সপ্রেশন দেখা যাচ্ছিলো না । কিন্তু শামসু সব শুনেছে । চেহারা দেখে মনে হচ্ছে, একটা চিন্তায় ঢুকে গেছে সে । আকবর আলি মনে মনে বলল, “টোপ কাজে দিয়েছে মনে হয়!”

আগামী পর্বেঃ
মাগরিবের নামাজ শেসে অফিসে ওভারনাইটের প্রথম দিনের জন্য তৈরি হচ্ছিলো গালিব । এমন সময় দরজায় এলো অনিক । গালিবকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো । গালিব ছেলের চোখের পানি মুছে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “আরে আরে! কাদছিস কেন?” অনিক কাঁদতে কাঁদতে বলল, “ছোটোবেলা থেকে তোমাকে কতো কষ্ট দিয়েছি! আমরা বলেছি তুমি কিপটে! আমরা অনেক ভুল করেছি তোমার সাথে বাবা! আমাকে ক্ষমা করে দিও!”
×
বাবা(পর্ব-৪৮)

আকবর আলি মনে মনে বলল, “টোপ কাজে দিয়েছে মনে হয়!” অনেকক্ষণ শামসু আর মিজানকে চুপ থাকতে দেখে বলল, “কি ব্যাপার? আপনারা কি ভাবছেন?” শামসু বলল, “না বাবা, আসলে তোমাকে কিছু বলতে মন চাইছে, কিন্তু ভাবছি তুমি আবার রাগ করো কিনা ।” আকবর আলি বলল, “না না! বলুন । কিছু মনে করার কি আছে?” তারপর মনে মনে আকবর আলি বলল, “নিশ্চয়ই আমার মেয়ের সাথে বিয়েটা ভেঙ্গে দেয়ার কথা বলবে! এটাই তো চেয়েছিলাম!” কিন্তু এরপর শামসু যা বলল, তা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো আকবর আলি । শামসু বলল, “শোন বাবা, তোমার মেয়ে যেমনই হোক, বাবা হিসেবে সবাই চায় তার মেয়ে ভালো থাকুক, ভালো জায়গায় যাক । এগুলো তোমাদের পারিবারিক সমস্যা, এগুলো আমাদের বলছো কেনো? তারপর বললে তোমার মেয়ে বিলাসিতা পছন্দ করে । এ কথা আমি মানতে পারছি না । কারণ আমি শুনেছি তোমার মেয়ে একদিন এ বাড়িতেও ছিলো, এমনকি সে কাজও পর্যন্ত করেছে । আর বয়ফ্রেন্ডের কথা বললে না? সবাই তোমার মেয়ের সাথে প্রেম করে বড় বড় জায়গায় চলে গেছে? তাহলে তোমার মেয়ে তো লাকি! তোমার মেয়ের সাথে আমার নাতির বিয়ে হলে আমার নাতিও নিশ্চয়ই ভালো বড় কোথাও চাকরি করতে পারবে, তাই না?” আকবর আলির তো মাথা হয়ে গেছে খারাপ! ভ্রু কুঁচকে হা করে তাকিয়ে আছে । একটু থেমে শামসু বলল, “যদি তুমি ভেবে থাকো, মেয়ে একটু বিপথে চলেই গেছে, তবে সেটা তোমার দোষ । মেয়ের দিকে ঠিক মতো খেয়াল রাখো নি । কারণ এই বয়সে ছেলেমেয়েদের প্রতি বাবা মায়েদের একটু বেশি খেয়াল রাখতে হয় । আর যখন সে ভুলটা করেইছে, তখন আমারও মনে হয়, বিয়ে দেয়াটাই খুব ভালো সমাধান ।” কথা শেসে উঠে দাড়িয়ে মিজানকে শামসু বলল, “চলেন, নিচে যাই ।” মিজান জিজ্ঞেস করলো, “বীচ! ঢাকা শহরে বীচ হইলো কবে?” শামসু বলল, “বীচ না! নিচ! নিচে চলুন, মানে ঘরে চলুন!” মিজান বলল, “অ আইচ্ছা! চলেন!” আকবর আলি বসেই রইল । একটু পর আধভাঙ্গা চেয়ারের পায়ার একটা অংশ ভেঙ্গে ধপাস করে পড়েও গেলো ।
অফিসে কাজ করছিলো গালিব । জাহিদ জিজ্ঞেস করলো, “আপনার বাসার কি খবর? শুনলাম আপনার আম্মা আব্বা এসেছেন?” গালিব বলল, “হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন । চলছে তো ভালোই । শ্বশুর শাশুড়িও এসেছেন ।” জাহিদ জিজ্ঞেস করলো, “সেকি! থাকার সমস্যা হচ্ছে না?” গালিব বলল, “না তা কেনো হবে?” জাহিদ একটু আশেপাশে তাকিয়ে তারপর গালিবের দিকে মুখ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো, “বলছিলাম কি, আরেকটা কথা শুনেছি, আকবর আলি নাকি আপনার বাসার পাশে এসে উঠেছেন?” গালিব বলল, “হ্যাঁ, সেটা সত্যি । এটা যখন শুনেছেন, আরেকটা কথাও বলি, ভেবেছিলাম আপনাকে পরে জানাবো সবটা । তা এখনই বলি । উনার মেয়ের সাথে আমার ছেলের বিয়েতেও উনি রাজি হয়েছে ।” জাহিদ বলল, “যাক! আলহামদুলিল্লাহ! কিন্তু ওই লোকের হঠাৎ করে আপনাদের পাশের বাসায় যেয়ে ওঠা, এমনকি এতো সহজেই বিয়েতে রাজি হয়ে যাওয়া, সবটাই কেমন অদ্ভুত লাগছে! এর পিছে উনার কোন ষড়যন্ত্র না থাকলেই হয় ।” গালিব বলল, “হ্যাঁ, আমারও সেরকমই মনে হচ্ছে । দোয়া করবেন, যেন সবটা ঠিকঠাক হয় ।”
সন্ধ্যার দিকে কথা । মাগরিবের নামাজ শেসে অফিসে ওভারনাইটের প্রথম দিনের জন্য তৈরি হচ্ছিলো গালিব । এমন সময় দরজায় এলো অনিক । বলল, “বাবা আসবো?” গালিব বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ! আয় ।” অনিক বলল, “বাবা, তুমি নাকি আজ থেকে ওভারনাইট করছো?”
“হ্যাঁ, কেনো?” জিজ্ঞেস করলো গালিব ।
“বাবা, তুমি কি বিয়ের জন্য এতো কষ্ট করছো?” জিজ্ঞেস করলো অনিক ।
“ওরে না রে! হ্যাঁ, একদিক থেকে সেটাও একটা কারণ, কিন্তু তাও, একটু বেশি আয় করতে পারলে ভরণপোষণ সহজ হয়ে যেতো ।”
এমন সময় অনিক গালিবকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো । গালিব ছেলের চোখের পানি মুছে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “আরে আরে! কাদছিস কেন?” অনিক কাঁদতে কাঁদতে বলল, “ছোটোবেলা থেকে তোমাকে কতো কষ্ট দিয়েছি! তুমি আমাদের জন্য কতো কিছু করেছো, টাকা না থাকলেও তুমি আমাদের সব দিয়েছো, অথচ কোনদিন কিছু না দিলে আমরা বলেছি তুমি কিপটে! আমরা অনেক ভুল করেছি তোমার সাথে বাবা! আমাকে ক্ষমা করে দিও!” গালিব বলল, “ওরে পাগল! এসব কিছুই না!’ তারপর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল, “শোন, এসব করি কিসের জন্য? তোদের মুখে হাসি দেখার জন্য । আর এখন যদি কাদিস, তাহলে কেমন হল?” অনিক হালকা হাসল । তারপর গালিব বলল, “এবার হাসিমুখে টেনশন ফ্রি হয়ে যা, রেস্ট নে । কাল থেকে তোর বিয়ের বাজার শুরু করবো ।” অনিক বলল, “সাবধানে যেও বাবা!” গালিব ছেলের মাথায় আদর করে বলল, “ঠিক আছে!” অনিক চলে গেলো । ছেলের বলা সেই “সাবধানে যেও বাবা” কথাটা গালিবের মনে একটা প্রশান্তি এনে দিলো । কটা পরিবারের ছেলেমেয়েরা এরকম বাবা-মাকে এরকম কথা বার্তা বলে? এই গালিবকেই তো একমাত্র অর্ক ছাড়া কেউ বলতো না । আজ অনিকও বলল । ভালো লাগলো গালিবের ।

আগামী পর্বেঃ
মোবাইলটা অপেন করতেই পুষ্পিতা দেখলো, সাজু ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করেছে । পুষ্পিতা অবাক হয়ে ভ্রু কুচকে ফোনের দিকে তাকালো । ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট গেলো কি করে? পুষ্পিতার বুঝতে পারলো, হাতের টাচ লেগে ভুলে চলে গেছে হয়তো । পুষ্পিতা আরও খেয়াল করলো, সাজু মেসেজও পাঠিয়েছে ।
×
বাবা(পর্ব-৪৯)

ভালো লাগলো গালিবের ।
রাত তখন ১০টা । নিজের রুমে পায়চারি করছিলো আকবর আলি । আর নিজেই নিজেকে বলছিলো, “না না না! কিছু একটা করতে হবে! আমি এই বিয়েতে রাজি হয়েছি ঠিকই! কিন্তু এমনভাবে বিয়েটা ভাঙতে হবে যেনো আমার মেয়ে কষ্ট না পায়! ও নিজেই যেনো বিয়েটা ভাংতে হবে কিন্তু কিভাবে!...........এইতো! পেয়েছি! তবে আকবর আলি! তোকে যে এর জন্য কাল সকালের অপেক্ষা করতে হবে! এখন তুই ঘুমা!” তারপর বিছানায় শুয়ে পড়লো আকবর আলি ।
রাতে পুষ্পিতা এসে বিছানায় বসলো । পাশেই মোবাইল চালাচ্ছিলো আরশি । পুষ্পিতা কোমরে হাত দিয়ে হালকা আর্তনাদ করলো, “ও বাবা গো! কোমরে কি ব্যাথাটাই না হল! এতো কাজ আমি জীবনেও করিনি!” আরশি জিজ্ঞেস করল, “মা, তুমি ঠিক আছো?” পুষ্পিতা হালকা বিরক্তের সাথে বলল, “না! আছি তো! আমিই তো এ বাড়িতে একা ঠিক আছি! তোরাই তো অসুস্থ! আমি একাই সুস্থ!” আরশি মনে মনে, “ভালোর জন্য জিজ্ঞেস করলাম তা ভালোর কোন দামই রইলো না দেখছি!” বলে আবার মোবাইলে মন দিলো । পুষ্পিতার খেয়াল হল, মোবাইল তো ওর মায়ের কাছে! ওর মা বলেছিলো মোবাইল রাতে দেবে! মনে পড়তেই পুষ্পিতা চলে গেলো মায়ের কাছে । দরজায় এসে নক করলো, “আসবো মা?” ভেতর থেকে লুনা বলল, “আয়!” ভেতরে লুনা আর কুলসুম । কুলসুমকে লুনা বলছিলো, “মাই মাই গো! দ্যাখো! আমাগো নাতাশা কি ছবি দিছে! এইগুলো কোন ছবি দেয়ার সাইজ হইলো?” পুষ্পিতা বলল, “মা! মোবাইলটা দাও!” লুনা টেবিলের দিকে ইশারা করে দেখিয়ে বলল, “ওইযে, ওইহানে আছে, নিয়া নে!” পুষ্পিতা টেবিল থেকে মোবাইল নিয়ে চলে গেলো । যেতে যেতে কুলসুমের জবাবটাও শুনলো, “তাই তো! মানে এরা ফেসবুকও চালাইতে পারে না!” বেড়িয়ে এসে পুষ্পিতা মনে মনে বলল, “দুই বুড়ি! এই বয়সে চুপচাপ থাকবে তা না! বইসা বইসা খালি ফেসবুক! এই বয়সে ফেসবুক চালায় আবার মানুষের পোস্ট দেখে সমালোচনা করে! যত্তসব ।” তারপর পুষ্পিতা নিজের রুমে চলে গেলো ।
ছাদে দাঁড়িয়ে অনিক আর পপি । অনিক বলল, “আজ বাবাকে বললাম তুমি যে কথাটা বললে সেটা । বাবা বললেন, কোন চিন্তা না করতে । জানো! সে কথা বলার সময় বাবার মুখে যে একটা হাসি দেখলাম না! সেটা দেখে খুব মায়া হল! বাবা কত কষ্ট করেন আমাদের জন্য! অথচ আমরা বাবাকে কত কষ্ট দেই!” পপি বলল, “হুম । আমিওতো তোমার বাবাকে কত কথা বলেছিলাম । মনে আছে? মোটরসাইকেল নষ্ট হয়েছিলো যে? আমি তোমার বাবার নামে কত কথা বলেছিলাম? তবে আজ বুঝতে পারছি, তোমার বাবা অনেক ভালো । তোমার ভাগ্যটাও অনেক ভালো যে এমন একটা বাবা পেয়েছো । আর আমার বাবা কেনো যে এমন! আল্লাহই জানেন!” অনিক জিজ্ঞেস করলো, “আঙ্কেল কি অন্য কোথাও চাকরির চেষ্টা করছে না?” পপি বলল, “না । কেনো যে করছে না, সেটাই বুঝতে পারছি না । আরেকটা অবাক করা কথা বলি! বাবা যে শুধু আমার বিয়েতে রাজি হয়েছে তা কিন্তু না! আমার ভাই, রাফিদ, ও আরযে হতে চেয়েছিলো বলে গোপনে ট্রেনিং নিচ্ছিলো । কিন্তু বাবা জানতে পারলে রেগে ওকে সেখান থেকে নিয়ে যায় । সেই বাবা রাফিদকে যখন ওর এক ভাই আরযে হিসেবে জব করার একটা সুযোগ দিলো, এই দুদিন আগে, বাবা-ও মেনে নিলেন, কেনো করলেন, আল্লাহই জানেন ।” অনিক বলল, “সত্যিই অদ্ভুত! তোমার বাবা আবার তোমার ভাইয়ের আয়ে খাওয়ার ধান্দা করছে না তো?” পপি বলল, “কি জানি, বাবার মাথায় কি যে ঘোরে! তবে এটা হলে বাবা খুব খারাপ করবে!” অনিক বলল, “হুম । দোয়া করি, তোমার বাবাকে আল্লাহ হেদায়েত দিক, একটা ভালো চাকরীও দিক ।” পপি বলল, “হুম । সেটাই ।”
মোবাইলটা অপেন করতেই পুষ্পিতা দেখলো, সাজু ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করেছে । পুষ্পিতা অবাক হয়ে ভ্রু কুচকে ফোনের দিকে তাকালো । ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট গেলো কি করে? পুষ্পিতার বুঝতে পারলো, হাতের টাচ লেগে ভুলে চলে গেছে হয়তো । পুষ্পিতা আরও খেয়াল করলো, সাজু মেসেজও পাঠিয়েছে । মেসেজ ওপেন করে দেখলো, সাজু লিখেছে, “প্রিয় পুষ্প! তুমি আজও যে আমায় মনে করলে দেখে ভালো লাগলো । তোমার সংসার আছে দেখে আমিও ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাতাম না । তবে ভয় পেয়ো না, আমার সংসার নেই । তোমাকে হারিয়ে আমি অন্য কাউকে বিয়ে না করার শপথ নিয়েছিলাম, আজও করিনি তাই । কেমন আছো? তোমার পরিবারের সবাই কেমন আছেন? আমরা কি ভালো বন্ধু হতে পারি না? আমি তোমাকে জোর করবো না । আমাদের সেই প্রেমময় জীবনের কথা খুব মনে পড়ে । আজও আমি তোমার দেয়া সেই ফুলটা দেখি আর কাঁদি । ফুলটা শুকিয়ে গেছে যদিও, ভালোবাসাটা শুকোয় নি । সব মেসেজ একসাথেই দিলাম আলাদা আলাদা করে দিতে দিতে যদি তুমি হুট করে ব্লক করে দাও তাহলে তো পুরো মনের কথাটাই শুনতে পারবে না আমার! ভালো লাগলে রিপ্লাই দিয়ো, নাহলে ব্লক । আফসোস নেই আমার । তবে হ্যাঁ, আজও আমি তোমাকে ভালোবেসে পুষ্পই ডেকেছি, পুষ্পিতা নয়, ভবিষ্যতেও ডাকবো ।” তারপর একটা সেন্টি খাওয়া ইমোজি দিয়েছে সাজু । চিঠি পড়ে অজান্তেই চোখে পানি চলে এলো পুষ্পিতার । পাশে বসে থাকা আরশির নজরে এলো ব্যাপারটা । মনে মনে বলল, “একি? মা কাঁদছে কেনো?”

আগামী পর্বেঃ
পর সাজু মেসেজ দিলো, “ফ্রি এবং একা আছো?” পুষ্পিতা লিখলো, “হ্যাঁ! ছাদে আছি!” একটু পরই কল বেজে উঠলো । সাজুর কল । পুষ্পিতার হ্রিদস্পন্দন আরও বেড়ে গেলো । কলটা ধরলো । স্ক্রিনে ভেসে উঠলো চিরচেনা সেই মুখটা! মুখে একটা হাসি ফুটে উঠলো । তারপর চিরচেনা সেই কণ্ঠ বলে উঠলো, “কেমন আছো?”
×
বাবা(পর্ব-৫০)

মনে মনে বলল, “একি? মা কাঁদছে কেনো?” আরশি একটা দোটানার মাঝে পড়ে গেলো । বলবে? নাকি বলবে না? শেসে ভাবলো, “না, বলেই দেখি!” বলে মা-কে জিজ্ঞেস করল, “মা! কাদছো কেনো?” পুষ্পিতা চমকে উঠলো হঠাৎ । মেয়ে যেনো না দেখতে পায়, সেজন্য ফোনের স্ক্রিন অফ করে দিলো । ইমোশনের মাঝে বাধা পাওয়ায় পুষ্পিতা রাগ হল বটে কিন্তু তবুও তা চেপে চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল, “কই! নাতো! চোখে কি একটা গিয়েছিলো, তাই আরকি ।” আরশি বলল, “না তো, চোখে কিছু পড়লে তুমি সাথে সাথে চোখ রগড়াতে! চোখ দিয়ে পানি তো কখন থেকে পড়ছে!” পুষ্পিতা এবারে রাগ না চেপে রাখতে পেরে প্রচণ্ড ধমকের স্বরে বলল, “এতো জানার কি দরকার তোর! পাকনা মেয়ে!” বলে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো । পুষ্পিতার চিৎকার শুনে পাশের রুম থেকে দৌড়ে এলো অনিক আর অর্ক । ততোক্ষণে রুম থেকে বেড়িয়ে গেছে পুষ্পিতা । অর্ক জিজ্ঞেস করল, “কিরে কি হয়েছে?” আরশি হালকা ভয় পেয়ে গিয়েছিলো । হালকা কম্পিত গলায় বলল, “বুঝতে পারলাম না! মায়ের চোখ থেকে জল পড়ছিলো, জিজ্ঞেস করলাম, বলল চোখে কি নাকি পড়েছে । কিন্তু আমি স্পষ্ট দেখেছি! চোখে কিছু পড়লে তো মানুষের হাত সরাসরি চোক রগড়াতে শুরু করে! কিন্তু মা তা করছিলো না! এটা মা-কে বলতেই আমাকে পাকনা মেয়ে বলে চলে গেলো ।” অর্ক জিজ্ঞেস করল, “সেকি! মা কোথায় এখন?” আরশি বলল, “জানি না । রুম থেকে মাত্রই বেড়িয়ে গেলো ।” অনিক বোনের পাশে বসে বোনের কাধে হাত রেখে বলল, “তুই ভয় পেয়েছিস নাকি?” আরশি বলল, “না, তবে একটু চমকে গিয়েছি ।” অনিক বলল, “ঠিক আছে, চিল । কিছু হবে না । মা অমনই ।“ আরশি জিজ্ঞেস করল, “কই বাবা তো এমন করে না? আজ পর্যন্ত বাবা কোনোদিন না গায়ে হাত তুলেছে, না বকেছে!” অর্ক বলল, “বাবা তো বাবা-ই, এটাই তো বাবার বৈশিষ্ট্য । আর মা তো অমনই । তার মানে এই না মা কম ভালোবাসেন । মায়ের রাগ একটু বেশি, এই যা ।”
এদিকে পুষ্পিতা এসেছে ছাদে । এখানে থেকে রাউটারের কানেকশন পাওয়া যায় ভালোই । মেসজের রিপ্লাই দিলো পুষ্পিতা । “সাজু! ভুলিনি তোমাকে । তোমাকে মিথ্যে বলবো না, সত্যি তোমাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠানোর সাহস আমার ছিলো না । ভাগ্যই পাঠিয়েছে । ভুল করে চলে গেছে । কিন্তু একবার যখন পাঠালাম, আর তোমাকে দূরে সরিয়ে দেবো না । তুমি তো বোঝোই, এখন আমি সংসারের চার দেয়ালে বন্দি! স্বামী, সংসার, ছেলে-মেয়ে, এসব নিয়ে থাকতে হয়! তাই প্লিজ, সমসময় মেসেজের রিপ্লাই না দিলে রাগ কোরো না! আর সব মেসেজ সব মেসেজ একসাথেই দিলাম আলাদা আলাদা করে দিতে দিতে যদি তুমি হুট করে আমার দেয়া জবাবের ওপর রাগ করে ব্লক করে দাও তাহলে তো পুরো মনের কথাটাই শুনতে পারবে না আমার!” পুষ্পিতা মেসেজটা পাঠানোর সাথে সাথেই ওপাশ থেকে মেসেজ সিন করলো সাজু । পুষ্পিতার বুকটা ধুক ধুক আওয়াজ করতে শুরু করলো । মনে একটা আকাঙ্ক্ষা! কি রিপ্লাই দিতে চলেছে সাজু! খানিক পর সাজু মেসেজ দিলো, “ফ্রি এবং একা আছো?” পুষ্পিতা লিখলো, “হ্যাঁ! ছাদে আছি!” একটু পরই কল বেজে উঠলো । সাজুর কল । পুষ্পিতার হ্রিদস্পন্দন আরও বেড়ে গেলো । কলটা ধরলো । স্ক্রিনে ভেসে উঠলো চিরচেনা সেই মুখটা! মুখে একটা হাসি ফুটে উঠলো । তারপর চিরচেনা সেই কণ্ঠ বলে উঠলো, “কেমন আছো?” পুষ্পিতা প্রায় কেদে দিলো । সাজু বুঝতে পারলো সেটা । বলল, “প্লিজ কেঁদো না! আমারও কান্না পাবে!” পুষ্পিতা নিজেকে সামলে নিলো । তারপর মুখে হাসি ফুটল । সাজু আবার জিজ্ঞেস করল, “কেমন আছো?” পুষ্পিতা বলল, “ভালো । তুমি?” সাজু বলল, “এতক্ষন টেনশনে ছিলাম । তুমি মেসেজের রিপ্লাই কেনো দিচ্ছো না তা ভেবে । জানো? সেই তখন থেকে অপেক্ষায় ছিলাম ফোন সামনে নিয়ে কখন রিপ্লাই দেবে । তাই তো তোমার রিপ্লাই পাবার সাথে সাথেই সিন করলাম । আর তোমার রিপ্লাই পড়ার পর থেকে অনেক ভালো আছি ।” পুষ্পিতা কিছু বলল না আবার কান্নাকাটি শুরু করল । সাজু বলল, “এই যে! তুমি আবার কান্নাকাটি শুরু করলে?” পুষ্পিতা হাসিমুখে চোখের পানি মুছে বলল, “ঠিক আছে আর কাঁদবো না । তোমার বাসার সবাই কেমন আছেন?” পুষ্পিতা আর সাজু গল্প করা শুরু করলো ।
রাত বাজে প্রায় বারোটা । মা এখনো আসছে না দেখে টেনশন হলো আরশির । অর্ক আর অনিকের রুমে গেলো । বলল, “ভাই! মা এখনো আসে নি!” অনিক জিজ্ঞেস করল, “দেখ, তোর রুম থেকে নানা-নানি বা দাদা-দাদির রুমে গেছে কিনা!” অর্ক বলল, “না না, ওদিকে গেলে আমরা মাকে দেখতে পেতাম ।” অনিক বলল, “তাহলে এদিক দিয়ে গেলে তো ড্রইং রুম । তাহলে কি মা বাইরে গেলো?” দরজা খোলা আর সামনে পুষ্পিতার জুতা না দেখে ওরা শিওর হয়ে গেলো ওদের মা বাইরে গেছে । এতো রাতে কোথায় যেতে পারে? অনিক দরজার দিকে তাকিয়ে একটা চাবি দেখে বলল, “গেটের চাবিও তো রেখে গেছে । তাহলে মনে হয় মা ছাদেই গেছে । চল দেখে আসি ।” অনিক, আরশি আর অর্ক ছাদে গেলো ।

আগামী পর্বেঃ
এমন সময় পুষ্পিতা চটি পড়ে হাটার আওয়াজ শুনলো । ভাবলো, অনিক বোধ হয় আবার এসেছে । কারণ অনিকের চটিতেও একই আওয়াজ হয় । প্রচণ্ড রাগ উঠলো পুষ্পিতার । ফোনটা আবার লক করে দিয়ে প্রায় থাপ্পর মারার মতো করে পেছন ফিরে থাপ্পড় মারতে গিয়েই থেমে গেলো । সামনে দাঁড়িয়ে গালিব ।
×
বাবা(পর্ব-৫১)

অনিক, আরশি আর অর্ক ছাদে গেলো ।
“মা!” ছাদে ডাকটা শুনেই তড়িঘড়ি করে মোবাইলটা লক করে পুষ্পিতা চমকে পেছন ফিরে তাকালো । অনিক ডেকেছিলো ডাকটা । পুষ্পিতা পেছন ফিরে তাকাতেই অনিক জিজ্ঞেস করল, “তুমি এতো রাতে ছাদে কি করছো?” পুষ্পিতা রাগান্বিত স্বরে জবাব দিলো, “তোর আর তোর পপির মতো প্রেম করে বেড়াচ্ছি না!” অনিক হালকা বিরক্ত হল । বলল, “মা! তুমি বাসায় ছিলে না তাই টেনশন হচ্ছিলো দেখে এলাম, আর তুমি এসব কি বলছো?” পুষ্পিতা বলল, “আমি একজন স্বাধীন নারী! আমার যা খুশি তাই করার অধিকার আছে! যা তোরা!” অর্ক কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো, কিন্তু পুষ্পিতা প্রায় চিৎকারের স্বরে বলল, “যা!” পুষ্পিতা আর অর্ক ভয় পেয়ে চলে গেলো, তবে অনিকের চোখে মায়ের প্রতি হালকা ক্ষোভও ছিলো ।
রাত প্রায় ৩টা । মা এখনো আসে নি । তাই টেনশন করছে আরশি । নিজেই নিজেকে বলল, “না! মা কি করছে ছাদে? লুকিয়ে লুকিয়ে একটু দেখে আসবো? না বাবা! থাক! যেভাবে চিৎকার করলো, আবার গেলে তো মেরেই ফেলবে!” বলে শুয়ে পড়লো পুষ্পিতা ।
অফিস থেকে বাসায় ফিরলো গালিব । এই সময় গেট বন্ধ থাকে দেখে আরেকটা গেটের চাবি সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলো । মোটর সাইকেল রেখে একটা হাসির আওয়াজ শুনে চমকে উঠলো হালকা । উপরের দিকে তাকিয়ে দেখলো, একটা মহিলা দাঁড়িয়ে ছাদে । হাতে মোবাইল নিয়ে কার সাথে যেনো কথা বলছে । কি বলছে তা বোঝা যা গেলেও কথা যে বলছে তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে । কণ্ঠ আর মোবাইলের আলোয় যেটুকু চেহারা দেখা যাচ্ছে তাতে গালিবের সন্দেহ হল । “এটা অর্কর মা না?” নিজেকে বলল গালিব । “একবার যেয়ে দেখি তো!” বলে গেট খুলে ভেতরে ঢুকে আবার গেট লাগিয়ে ছাদের দিকে গেলো ।
এদিকে ছাদে তখন পুষ্পিতা কথা বলছে সাজুর সাথে ।
“তুমি কিন্তু এখনো আগের মতই আছো!” বলল পুষ্পিতা ।
“তুমি খানিকটা বদলে গেছো যদিও, কিন্তু তুমি তো তুমিই!” বলল সাজু ।
“ও তাই নাকি?”
“হুম । আচ্ছা বাই দ্যা ওয়ে! তুমি কি এখনো ছাদে?”
“হ্যাঁ, কেনো তোমার সাথে কথা বলার মাঝে ছাদ থেকে গিয়েছি বলে কি মনে হয়েছে তোমার?”
“না, কল কেটে দিলে একবার, ভাবলাম বাসায় গিয়েছো । তা একটু আগে ক্যামেরায় চাঁদটা চলে আসায় বুঝলাম তুমি এখনো ছাদে ।”
“তাতে কি হয়েছে? তুমি আমার জন্য এখনো বিয়ে করো নি, আমার আমি তোমার জন্য একটা রাত ছাদে থাকতে পারবো না?”
“না না, ঠিক হচ্ছে না । তোমার স্বামী রাগ করবেন বোধ হয় ।”
“ধুর! সে তো অফিস করছে । ওভারনাইট না ছাই কি জানি । যদিও এতক্ষণে চলে আসার কথা ।”
“তাও, অনেক রাত হয়েছে, যাও!”
এমন সময় পুষ্পিতা চটি পড়ে হাটার আওয়াজ শুনলো । ভাবলো, অনিক বোধ হয় আবার এসেছে । কারণ অনিকের চটিতেও একই আওয়াজ হয় । প্রচণ্ড রাগ উঠলো পুষ্পিতার । ফোনটা আবার লক করে দিয়ে প্রায় থাপ্পর মারার মতো করে পেছন ফিরে থাপ্পড় মারতে গিয়েই থেমে গেলো । সামনে দাঁড়িয়ে গালিব । পুষ্পিতার এরকম আচরণ দেখে হালকা চমকেও উঠলো ।
“একি! কি হয়েছে? আর এতো রাতে তুমি ছাদে কি করছো?” বলল গালিব ।
ছেলেমেয়েদের ওপর না হয় রাগারাগি করেছে, কিন্তু স্বামীর ওপর তো আর রাগারাগি করা যায় না! পুষ্পিতা নিজেকে সামনে নিয়ে আমতা আমতা করে বলল, “ইয়ে! না! কিছু না!” গালিব বলল, “কিছু না তাহলে এতো রাতে ছাদে কি করছো?” আর কোন স্বামী হলে স্ত্রীর ওপর খুব রাগ করে কথা বলতো, কিন্তু গালিব শান্তগলায়, নম্রভাবে কথা বলছে, কারণ এটাই যে গালিবের বৈশিষ্ট্য । পুষ্পিতা বলল, “আরে না! আসলে সারাদিন মা ফোন কেড়ে নিয়ে রেখেছিলো । এখন দিলো । এক বান্ধবী কল করেছিলো, ওর সাথেই কথা বলছিলাম ।” গালিব হালকা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “তাই বলে এতো রাত পর্যন্ত! তিনটে বেজে গেছে! দেখেছো?” পুষ্পিতা একটু অভিনয় করলো, যেনো সে বুঝতেই পারে নি তিনটে বেজে গেছে, “সেকি! আল্লাহ! কি যে হলো এটা! আমি তো একটুও টের পাই নি!” গালিব স্ত্রীর কাধে হাত রেখে বলল, “ঠিক আছে, ব্যাপার না । চলো । আর যেনো এরকম না হয়! বেশি রাত জাগলে তো অসুস্থ হয়ে পড়বে!” পুষ্পিতা বলল, “হ্যাঁ ঠিক বলেছো! চলো ।” মনে মনে পুষ্পিতা বলল, “নিজে যে এতো রাত করে ঘরে এসেছে তা বলে না! আমি রাত জাগলেই সমস্যা!” সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে পুষ্পিতা গালিবকে জিজ্ঞেস করলো, “তুমি অনিকের চটি পড়ে আছো যে?” গালিব হালকা হেসে বলল, “ও! সিড়ি দিয়ে ওঠার সময় পায়ে পা লেগে এক জুতা একটু খুলে গিয়েছিলো । আবার লাগাতে আলসেমি লাগলো, তাই দুটো জুতো খুলেই দরজার সামনে অনিকের জুতোটা হাতের কাছে পেলাম, পড়ে উঠে গেলাম ।” পুষ্পিতা, “ও আচ্ছা বলে নামতে লাগলো ।” অনেকক্ষণ ধরে মেসেজ আসার টুইং টুইং আওয়াজ করছে, কিন্তু পুষ্পিতা কিছুই করছে না দেখে গালিব বলল, “তোমার বান্ধবী মেসেজ দিচ্ছে মনে হয়, রিপ্লাই দিচ্ছো না কেনো?” পুষ্পিতা বলল, “হ্যাঁ দিচ্ছি!” মনে মনে হালকা রাগ নিয়ে বলল, “তোর জন্যই তো পারতেছি না!” পুষ্পিতা একটু স্লো নামা শুরু করলো গালিবের থেকে একটু দূরে থাকার জন্য । তারপর দেখলো, সাজু মেসেজ দিয়েছে । “কাটলে কেনো!............কি হল!............আছো!............এই!” পুষ্পিতা মেসেজ দিলো, “আজ আর কথা বলা হবে না! পড়ে কথা হবে । টাটা!” সাজু রিপ্লাই দিলো, “ওকে! বাই পুষ্প বেবি ।” পুষ্পিতা মেসেজের একটা লাভ রিয়েক্ট দিয়ে নামতে লাগলো । হঠাৎ পুষ্পিতা ভাবতে লাগলো । একটু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে না তো?

আগামী পর্বেঃ
একটু পর দরজায় নক করবার আওয়াজ । কুলসুম অনিককে বলল, “অনিক! দেখ তো কে এলো!” লুনা বলল, “অ মাই মাই গো! কানের মদ্ধে দুইটা গুল্টু হান্দায় থুইসে, শুনবো কেমনে? আমিই দেখতাছি ।” বলে উঠে দাঁড়িয়ে মাথায় কাপড় দিতে দিতে গিয়ে দরজা খুলল লুনা । সামনে দাঁড়িয়ে আকবর আলি । লুনা বলল, “অ মাই মাই গো! আপনে কেডা?” আকবর আলি নম্রভাবে বলল, “খালাম্মা! আমি আকবর আলি!”
×
বাবা(পর্ব-৫২)

একটু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে না তো?
পরদিন বৃহস্পতিবার । ভোর হতেই অফিস গেছে গালিব, স্কুলে গেছে পুষ্পিতা । অর্ক এখনো ঘুমোচ্ছে । পুষ্পিতার মোবাইল সকাল থেকেই কেড়ে নিয়েছে ওর মা লুনা । রান্নাঘরে রান্না করছিলো পুষ্পিতা, থালাবাসন মাজছিলো চামেলী, ডাইনিং টেবিলে বসে পেপার পড়ছিলো মিজান, আর পাশে শামসুর সাথে কাঁঠাল খাচ্ছিলো, ড্রইং রুমে বসে টিভি সিরিয়াল দেখছিলো লুনা আর কুলসুম । কুলসুম লুনাকে বলল, “ইশ! এই শাশুড়িটা বউটার ওপর কি যে অত্যাচার করে!” রান্নাঘর থেকে সে কথা শুনে মনে মনে পুষ্পিতা বলল, “এহ! নিজে কি!” লুনা বলল, “হ্যাঁ! তা যা কইছো! তয় এর মা-ও ডা খুব ভালা! পুরাই আমার মতোন!” বলে খিকখিক করে হেসে উঠলো লুনা । রান্নাঘর থেকে পুষ্পিতা সে কথা শুনে বলল, “হায়রে! উলটা কথা বলায় আমার মা-ই সেরা!” পাশেই কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে মোবাইল চালাচ্ছিলো অনিক । একটু পর দরজায় নক করবার আওয়াজ । কুলসুম অনিককে বলল, “অনিক! দেখ তো কে এলো!” লুনা বলল, “অ মাই মাই গো! কানের মদ্ধে দুইটা গুল্টু হান্দায় থুইসে, শুনবো কেমনে? আমিই দেখতাছি ।” বলে উঠে দাঁড়িয়ে মাথায় কাপড় দিতে দিতে গিয়ে দরজা খুলল লুনা । সামনে দাঁড়িয়ে আকবর আলি । লুনা বলল, “অ মাই মাই গো! আপনে কেডা?” আকবর আলি নম্রভাবে বলল, “খালাম্মা! আমি আকবর আলি!” লুনা জিজ্ঞেস করলো, “মাই মাই গো! আপনে আকবর না জাহাঙ্গীর তাই দিয়া মুই কি করতাম? আপনে কি চান?” আকবর আলি বলল, “খালাম্মা! আসলে আপনাদের নাতি, অনিক, ওর সাথে আমার মেয়ের বিয়ে হতে চলেছে! শোনেন নি?” লুনা বলল, “ও হ! বিয়ার কথা তো হুনছি!” ডাইনিং টেবিল থেকে চমকে গিয়ে মিজান বলে উঠলো, “কি! লিয়ার কথা আমার বউ হুইনা ফেলছে!” পাশে বসা শামসু বলল, “আরে বয়রা বেয়ান! লিয়া না! বিয়া! বলছি কি, লিয়াটা কে বলুন তো?” মিজান গলা খাখরে বলল, “না না! সেইডা কিছু না!” এদিকে আকবর আলি বলল, “তা খালাম্মা! আসবো ভেতরে?” লুনা বলল, “হ আসো বাবা! আসো!” আকবর আলি ভেতরে ঢুকল । কুলসুম মাথায় কাপড় দিলো । জিজ্ঞেস করলো, “আসসালামু আলাইকুম! ভালো আছেন?” আকবর আলি বলল, “জি খালাম্মা, আপনি?” কুলসুম বলল, “জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি!” তারপর কুলসুম পুষ্পিতাকে বলল, “বউমা! নতুন বউয়ের বাবার জন্য কিছু চা নাস্তা নিয়ে এসো না!” রান্নাঘর থেকে পুষ্পিতা প্রচণ্ড রাগ নিয়ে মনে মনে বলল, “খালি আমাকে দিয়েই কাজ করায়! কি যে কষ্টে আছি আমি এ সংসারে! আমি সংসারে শুধু দিয়েই গেলাম! বদৌলতে কিছু পেলাম না!”
অফিসের কাজ করছিলো গালিব । অনেকক্ষণ প্রীতির রুম থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ শুনছিলো । জাহিদ গেছে কি একটা ডিজাইন দেখানোর জন্য । হয়তো ভালো লাগে নি তাই এমন করছে । কিন্তু প্রীতি তো এমন করে না! একটু পর জাহিদ এলে গালিব জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে?”
“আর বলবেন না! বস যে আজকাল কেনো এতো রেগে যাচ্ছে! আহামরি কিছুই না । লোগোর একপাশে একটু এডিট বাকি ছিলো তার জন্য ধরেছে । কিন্তু গতপরশু বড় একটা ভুল করেছিলাম, তাও কিছু বলে নি ।” গালিব কিছু বলল না । হাতে একটা কাগজ নিয়ে প্রীতির রুমের দিকে গেলো ।
আকবর আলি সোফায় বসলো । বউমাকে নাস্তা আনার কথা শোনায় ফর্মালিটির খাতিরে বলল, “আরে না না! ব্যাস্ত হবেন না । আমি তো আমার মেয়ের শশুর শাশুড়ির মা বাবার সাথে দেখা করতে এসেছি ।” লুনা বলল, “অ মাই মাই গো! খাড়ান! আমার আর কুলসুমের উনারে ডাইকা আনি ।” বলে লুনা গেলো মিজান আর শামসুকে ডাকতে । অনিকের কানে তখনও ইয়ারফোন, আর চোখ মোবাইলে । তাই টের পায় নি আকবর আলিকে । কুলসুম একটা কুসন ঢিল মারলো অনিকের দিকে । অনিক চমকে উঠে ইয়ারফোন খুলে আকবর আলিকে দেখে উঠে বসলো । কুলসুম বলল, “কিরে! তোর হবু শশুরমশাই এসেছেন আর তুই এভাবে শুয়ে আছিস!” অনিক ভদ্রভাবে বসে বলল, “আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল! কেমন আছেন?”
“আসবো?” প্রীতির রুমের সামনে এসে বলল গালিব । মাথায় হাত দিয়ে বসে ছিলো প্রীতি । চেহারায় দুশ্চিন্তা আর ক্লান্তির ছাপ । বলল, “ও আঙ্কেল! আসেন ।” গালিব ভেতরে গেলো । “বসেন!” প্রীতি বলতেই গালিব সামনের চেয়ারে বসলো । গালিব আনা কাগজটা সামনে দিয়ে বলল, “আমাদের কোম্পানির সাতক্ষীরার যে শাখা কোম্পানি আছে, সেখানে বেশ কয়েকমাস ধরে অনেক লস হচ্ছে । আমার মনে হয় ওদিকে বিজনেস প্ল্যানটা চেঞ্জ করা উচিত ।” কাগজটা দেখলো প্রীতি । তারপর ওপর নিচ মাথা নেড়ে বলল, “হুম! আমি ম্যানেজারকে দেখাবো ব্যাপারটা । আর কিছু বলবেন কি?” গালিব বলল, “তেমন কিছু না, যদি কিছু মনে না করো, তোমার রাগ………“ এই রাগ পর্যন্ত শুনেই প্রীতি বলল, “আপনি প্লিজ এখন যান!” গালিব আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো, কিন্তু প্রীতি আবার বলে উঠলো, “দয়া করে যান!” গালিব বাধ্য হল ফিরে আসতে ।
আকবর আলি বলল, “হ্যা বাবা, ভালো আছি, তুমি ভালো আছো?” অনিক বলল, “জি আঙ্কেল, আলহামদুলিল্লাহ ভালো । সরি আঙ্কেল, আসলে আমি টের পাইনি আপনি এসেছেন ।” আকবর আলি বলল, “না না! ঠিক আছে!” এরই মধ্যে ড্রইংরুমে এসে বসলো মিজান আর শামসু । আকবর আলি সালাম দিলো । “আসসালামু আলাইকুম চাচা!” মিজান সালামের জবাব দিলো । “ওয়ালাইকুমুস সালাম ।” শামসু জিজ্ঞেস করলো, “কি ব্যাপার? ভালো আছেন?” আকবর আলি বলল, “জি, আপনি?” শামসু বলল, “আছি, আল্লাহর রহমতে আলহামদুলিল্লাহ ভালোই ।” কুলসুম শামসুকে জিজ্ঞেস করলো, “একি! তুমি এনাকে চেনো?” শামসু বলল, “হ্যাঁ! খুব ভালো করে!” কথা শুনে হালকা ভয় পেলো আকবর আলি । গতকাল রাতের কথা মনে পড়ে গেলো ।

আগামী পর্বেঃ
রুমের কাছে এসে ভেতরে ওর বাবাকে দেখতে পেয়ে অবাক হয়ে যায় রাফিদ । তারপর উকি দিয়ে ঘটনা দেখতে দেখতে মনে মনে বলল, “বাবা কি করছে এখানে!” আকবর আলি পকেট থেকে এক হাজার টাকার নোট বের করে সেটা অনিকের শার্টের পকেটে রাখলো । তারপর আস্তে করে আলমারিটা আটকে দিয়ে বেড়িয়ে এলো ।
×
বাবা(পর্ব-৫৩)

গতকাল রাতের কথা মনে পড়ে গেলো । শামসু জিজ্ঞেস করলো, “হ্যাঁ বলো, কি যেনো বলবে?” আকবর আলি বলল, “না, এমনি । আপনাদের সাথে তো দেখা হলই, আমার মেয়ের হবু জামাইয়ের শশুর শাশুড়ির সাথে দেখা করতে এলাম ।” শামসু বলল, “ঠিক আছে, বলো ।“ আকবর আলি মনে মনে বলল, “ভাববেন না একই প্ল্যান আজকেও খাটাতে এসেছি, আজকে আমার প্ল্যান অন্য কিছু ।” একটু পর পুস্পিতা এসে চা, বিস্কুট, ফলমূল দিলো । আকবর আলি হাসিমুখের জিজ্ঞেস করলো, “আরে ভাবি! এগুলোর কি দরকার ছিলো!” পুষ্পিতা বলল, “না ঠিক আছে! ফর্মালিটি করার দরকার নাই খান ।” বলে চলে যেতে যেতে মনে মনে বলতে লাগলো, “শুরুতেই না করতে পারতি!”
এদিকে রান্নাঘরে কাজ করছিলো আকবর আলির বউ উমা । চুলায় থাকা তরকারিটা চামচ দিয়ে হালকা নেড়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে চুলার আঁচটা একটু কমিয়ে নিজের রুমে এলো উমা । স্বামী দেখতে না পেয়ে অবাক হলো । রাফিদের রুমে যেয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কিরে, তোর বাবা কই রে?” রাফিদ বলল, “বাইরে গেছে মনে হয়, কেনো?” উমা বলল, “উহু, বাইরে গেছে বলে তো মনে হয় না! কারণ মোবাইল বাসায় রেখে গেছে!” রাফিদ বলল, “ছাদে যেতে পারে!” উমা বলল, “সেটা হলে তো ভালো, কিন্তু যদি অন্য কিছু হয়?” রাফিদ বলল, “অর্কদের বাসায়?”
আকবর আলি বলল, “আহ! বলছিলাম কি, আপনাদের টয়লেটটা একটু ইউজ করতে পারি?” লুনা বলল, “অ মাই মাই গো! যাও বাজান! যাও!” আকবর আলি টয়লেটের দিকে গেলো । সেই সময় কলিংবেলের আওয়াজ । লুনা বলল, “আবার কেডা আইলো!” বলে উঠে যেয়ে দরজা খুলল । দাঁড়িয়ে রাফিদ । রাফিদ সালাম জানালো লুনাকে । “আসসালামু আলাইকুম নানি!” লুনা বলল, “ওয়ালাইকুমুস সালাম! তুমি কেডা বাবা?” রাফিদ বলল, “জি! আমি রাফিদ, আপনার নাতি, অর্কর বেস্ট ফ্রেন্ড, ওইযে, আপনি আর দাদি যেরকম, সেরকমই ।” লুনা হাসিমুখে বলল, “অ মাই মাই গো! তুমি তো দেহি সব জানো!” রাফিদ বলল, “জি! অর্ক সব বলে আমাকে । তবে হ্যাঁ! আমার আরও পরিচয় আছে । আমি আপনার বড় নাতি, মানে অনিক ভাইয়ার শ্যালক, আপনাদের হবু বউয়ের ছোট ভাই, আর যে আপনার বাসায় এসেছে, উনি আমার বাবা ।” লুনা হাসিমুখে, “অ মাই মাই গো! আসো আসো! ভেতরে আসো!” বলে রাফিদকে ঘরে ঢোকালো । কুলসুম, মিজান আর শামসুর সাথে পরিচয় হল রাফিদের । রাফিদও সবাইকে সালাম দিয়ে সবার সাথে কথাবার্তা বলল, সবার খোজ খবর নিলো । তারপর জিজ্ঞেস করলো, “অর্ক কোথায়?” পেছনে বসা অনিক বলল, “ওতো এখনও ঘুমোচ্ছে! রুমে আছে দেখো, ওরে মারতে মারতে ঘুম থেইকা তোলো তো! যাও!” রাফিদ হালকা হেসে বলল, “আচ্ছা ভাই!” রাফিদ যেতে যেতে অনিক বলল, “ও এখন আমার রুমে থাকছে! আমার রুমে যেও!”
আকবর আলি টয়লেটে না যেয়ে গেলো অনিকের রুমে । দরজার সামনে থাকা অনিক নামটা দেখেই বুঝলো এটা অনিকের রুমে । কিন্তু ঢুকতেই দাঁড়িয়ে গেলো । রুমে শুয়ে আছে অর্ক । কিন্তু ঘুমোচ্ছে । আকবর আলি বুঝলো, বাসায় মেহমান আসায় বোধ হয় এমনটা হয়েছে । আকবর আলি আস্তে করে রুমে ঢুকে আগে ভালো করে দেখে নিলো, আসলেই অর্ক ঘুমাচ্ছে কিনা । তারপর রুমের আলমারিটা খুলল । একটা শার্ট দেখতে পেলো । এই শার্টটা পড়েই অনিক সেদিন পপির জন্মদিন পালন করতে গিয়েছিলো । আকবর আলি বলল, “যাক! শার্টটা চিনতে পেরেছি, নাহলে বুঝতামই না কোনটা অনিকের শার্ট, আর কোনটা অর্কর ।” ঠিক সেই সময় রুমের কাছে এসে ভেতরে ওর বাবাকে দেখতে পেয়ে অবাক হয়ে যায় রাফিদ । তারপর উকি দিয়ে ঘটনা দেখতে দেখতে মনে মনে বলল, “বাবা কি করছে এখানে!” আকবর আলি পকেট থেকে এক হাজার টাকার নোট বের করে সেটা অনিকের শার্টের পকেটে রাখলো । তারপর আস্তে করে আলমারিটা আটকে দিয়ে বেড়িয়ে এলো । আকবর আলি বেরোনোর সময় রাফিদ পাশের খালি রুমে আড়াল হয়ে গিয়েছিলো, যেনো ওর বাবা ওকে না দেখে । তারপর ওর বাবা চলে যেতেই অর্ক রুমে ঢুকল । আলমারিটা খুলে শার্টটা হাতে নিলো । টাকাটা বের করে দেখতে লাগলো আর ভাবতে লাগলো, “কি ব্যাপার! বাবা কি ফন্দি আঁটছে? অনিক ভাইয়াকে চোর অপবাদ দেয়ার?” এদিকে আকবর আলি যেয়ে বসলো আবার আড্ডায় । তারপর আকবর আলি অনিককে বলল, “বাব! তুমি একটু রুমে যাবে? আমরা বড়রা একটু আলাদা কথা বলতে চাই!” অনিক, “জি আচ্ছা আঙ্কেল!” বলে চলে গেলো । এদিকে রাফিদ কি করবে ভেবে পাচ্ছিলো না । সে সময় কেউ আসছে টের পেয়ে তাড়াতাড়ি শার্টটা আলমারিতে ঢুকিয়ে আলমারি আটকে দিলো । কিন্তু টাকাটা রাখতে ভুলে গেলো । এখন আর টাকাটা রাখার সুযোগ নেই, না হলে ওর ওপর সন্দেহ করবে । রাফিদ যেয়ে অর্ককে ডাকতে লাগলো । “অর্ক! ওঠ দোস্ত! কিরে! ওঠ!” অনিক ঢুকলো রুমে । অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “এখনো ওঠে নাই! দাড়াও দ্যাখো! আমি কি করি!” বলে অনিক একটা কাগজের টুকরো নিয়ে অর্কর কানে সুড়সুড়ি দিলো । অর্ক কান চুলকোতে চুলকোতে উঠে বসে চেচিয়ে উঠলো, “সমস্যা কি তোমার!” অনিক বলল, “তোর সমস্যা কি! এতক্ষন ধরে ঘুমচ্ছিস কেনো! জানিস না আমার রুম এটা?” অর্ক বলল, “তো? নীতিমালা ছিলো নাকি এতক্ষন ঘুমোন যাবে না?” অর্ক আর অনিক ঝগড়া শুরু করলো । রাফিদ মনে মনে বলল, “টাকাটা আপাতত আমার কাছেই রাখি । বাবার ফন্দি বুঝতে পারলে কাজে লাগাবো না হয় তখন ।”

আগামী পর্বেঃ
আকবর আলি বলল, “না, আমার ১হাজার টাকার একটা নোট ছিলো পকেটে, খুজে পাচ্ছি না ।” শামসু বলল, “সেকি! বাইরে টাইরে পরলে তো খুজে পাওয়া মুশকিল!” আকবর আলি বলল, ““আপনি আর আপনার বুয়া আপনারা দুজন ছিলেন রান্নাঘরে, এখানে বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠরা, আর অর্ক ঘুমোচ্ছিলো! বাকি রইলো আমার হবু চোর জামাই! এরকম চোর জামাইয়ের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দেয়া উচিৎ না!”
×
বাবা(পর্ব-৫৪)

রাফিদ মনে মনে বলল, “টাকাটা আপাতত আমার কাছেই রাখি । বাবার ফন্দি বুঝতে পারলে কাজে লাগাবো না হয় তখন ।” অনিক অর্ককে বলল, “এই দ্যাখ, তোর বন্ধু কখন থেকে তোর খোজ করছে, আর তুই! এখনো ঘুমাচ্ছিস, অলস কোথাকার!” বলে অনিক বেড়িয়ে গেলো । রাফিদ অর্কর পাশে বসলো ।
“তুই! এই তোর জন্য যা হওয়ার হয়েছে!” বলল অর্ক ।
“এহ! আমি আবার কি করলাম?” রাফিদ ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো ।
“এই যে! তুই না আসলে কিছুই হইতো! শালা! তুই একটু বেশিক্ষণ ঘুমাইলে আমার বেশিক্ষণ ঘুমানো কোন ব্যাপারই ছিলো না! তুই বেশিক্ষণ ঘুমাস না, আর আমাকে এখন সবাই বলবে দ্যাখ তোর বন্ধু কতো তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠে আর তুই উঠিস না!”
অর্কর কথা শুনে হেসে উঠলো রাফিদ । তারপর বলল, “আচ্ছা ভাই! হইছে! এইবার বল, তোর দিনকাল কেমন যায় ।”
এদিকে আকবর আলি কথা বলার মাঝে হঠাৎ পকেটে হাত চলে দিলো । তারপর যতো পকেট আছে, সব পকেটে কি যেনো খুজতে লাগলো । শামসু জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে?” আকবর আলি বলল, “না, আমার ১হাজার টাকার একটা নোট ছিলো পকেটে, খুজে পাচ্ছি না ।” শামসু বলল, “সেকি! বাইরে টাইরে পরলে তো খুজে পাওয়া মুশকিল!” আকবর আলি বলল, “না না! বাইরে না! আপনার বাসায় আসার পরেও পকেটে ছিলো, আমার স্পষ্ট মনে আছে!” লুনা বলল, “অ মাই মাই গো! তাইলে কই যাইবো ট্যাকা?” আকবর আলি বলল, “টয়লেটে গিয়েছিলাম, সেখানেই পড়ে গেলো কিনা ।” ঠিক সেই সময় অনিক এলো রুমে । শামসু ওকে বলল, “অনিক বাবা! তোমার শশুরমশাই-এর ১০০০ টাকার নোট খুজে পাচ্ছে না, একটু দ্যাখো তো, কথায় গেলো!” আকবর আলি উঠে দাঁড়িয়ে খুজতে খুজতে বলল, “আমিও খুজছি! শোনো! আমার টাকার একপাশে একটা কলমের দাগ আছে!” অনিক “ঠিক আছে!” বলে খুজতে লাগলো । অনেকক্ষণ ধরে খুজলো, পেলো না । আরও খুজতে লাগলো ।
এদিকে অর্কর রুম থেকেও কথা স্পষ্ট শোনা যাচ্ছিলো । রাফিদও শুনেছে কথাটা । মনে মনে ভাবলো, “বাবাকে একটু অলৌকিক ক্ষমতা দেখানো যাক ।” রাফিদ অর্ককে, “আমি একটু আসছি!” বলে চলে গেলো অর্ক নিজেই নিজেকে বলল, “কি ব্যাপার! কি করছে ও?”
টয়লেট থেকে টাকা আছে কিনা খোজার অভিনয় করে বেড়িয়ে এলো আকবর আলি । তারপর মনে মনে বলল, “এবার যাই, চুরির অপবাদটা একটু দিয়েই আসি ।” বলে ড্রইং রুমে গেলো । আকবর আলি চলে যেতেই রাফিদ এসে টাকাটা কমোডের একপাশে একটা শুকনো জায়গায় রেখে এলো । আকবর আলি ড্রইং রুমে এসে রেগে গিয়ে বলল, “না না না! আমার মনে হয় আপনারা কেউ টাকাটা পেয়ে নিজের পকেটে রেখেছেন!” কুলসুম হালকা রেগে গিয়ে বলল, “এসব কি বলতেছেন আপনি? মাথা ঠিক আছে আপনার?” লুনাও রাগ দেখিয়ে বলল, “মাই মাইগো! আপনে দেহি আত্মীয়রেও বিশ্বাস করেন না!” মিজান বলল, “কি হইতাছে? সবাই রাইগা আছে ক্যান?” আকবর আলি চিৎকার করে বলল, “আপ্নারা আমার টাকা পকেটে ঢুকিয়েছেন!” রান্নাঘর থেকে তেড়ে বেড়িয়ে গেলো পুষ্পিতা । তাই দেখে চামেলি বলল, “আইজকা বাড়িত একখান সিরিয়াল দেখমু! লাইব সিরিয়াল!” বলে সে-ও বেড়িয়ে গেলো । পুষ্পিতা প্রচণ্ড রেগে বলল, “কখন থেকে আপনার অসভ্যতা সহ্য করছি! এসব কথা বলার আপনি কে?” আকবর আলিও পাল্টা রেগে জবাব দিলো, “কেনো! আপনাকে সন্দেহ করেছি নাকি আমি?” লুনা বলল, “ওমা! এর মইধ্যে আপনে সন্দেহও কইরা ফালাইছেন?” আকবর আলি বলল, “হ্যাঁ করেছি! আর আপনাদের বললে আপনারাও বুঝবেন কেন সন্দেহ করেছি!” পুষ্পিতা বলল, “বা!বা!বা!বা!বা! তা শুনি কাকে সন্দেহ করলেন আর কেনো সন্দেহ করলেন?” আকবর আলি বলল, “আপনি আর আপনার বুয়া………” চামেলি ভ্রু কুচকে বলল, “অ্যাঁই! আমি বুয়া না! আমি বিউটপুল!” আকবর আলি বলল, “যাই হোক! বিউটিফুল না ঘাসফুল! আপনারা দুজন ছিলেন রান্নাঘরে, এখানে বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠরা, আর অর্ক ঘুমোচ্ছিলো! বাকি রইলো আমার হবু চোর জামাই!” অনিক অবাক হয়ে গেলো । বলল, “এসব আপনি কি বলছেন!” আকবর আলি বলল, “এই! শাট আপ! একদম কথা বলবি না! এরকম চোর জামাইয়ের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দেয়া উচিৎ না!” শামসু বলল, “কি আজব, আপনি আন্দাজে এসব বলতে পারেন না!” আকবর আলি বলল, “আন্দাজে! আন্দাজে কেনো! আমি এক্ষুনি প্রমান করে দিচ্ছি! আসেন আমার সাথে!” বলে আকবর আলি সবাইকে নিয়ে অনিকের রুমে দিকে যেতে লাগলো । সেখানে যাবার পথেই টয়লেট নজরে পড়ে । দরজাটা খোলাই ছিলো । আকবর আলির ঠিক পেছনেই ছিলো লুনা । আকবর আলী টয়লেটের কাছে যখন ছিলো, লুনাও ছিলো সেখানে । টাকাটা দেখতে পেয়ে লুনা বলল, “অ মাই মাই গো! ওই যে ট্যাকা!” আকবর আলি দাঁড়িয়ে গেলো । তারপর টয়লেটে তাকিয়ে দেখলো, সত্যিই এক হাজার টাকার নোট পড়ে আছে । শামসু বলল, “কি? কিছু বলবেন?” আকবর আলি কাছে যেতে যেতে বলল, “না না! এটা আমার টাকা না! আমি একটু আগেও দেখা গেলাম!” আকবর আলি টাকা তুলে দেখল, কলমের কালির দাগ আছে, আর এটাই সেই টাকা, যেটা ও অনিকের পকেটে রেখে এসেছিলো । আকবর আলি মনে মনে বলল, “এটা কি করে সম্ভব!” পুষ্পিতা চেচিয়ে বলল, “কি! কই গেলো আপনার দেমাগ! বলেন এখন! উচু গলায় কথা বলেন!” আকবর আলি বলল, “আমি নিশ্চিত! অনিক সব দেখে ধরা পড়ার ভয়ে এখানে রেখে গেছে!” কুলসুম বলল, “ব্যাস! অনেক হইছে! আপনি এখন থামেন! লুনার পিছে আমি, আমার পিছে নাতি ছিলো আমার। ও কি করে এখানে রাখবে? আপনি টের পাওয়ার পর থেকে ও আমাদের সামনেই ছিলো ।” লুনা তখন হঠাৎ বলল, “একখান কথা! আমার ছুটো নাতি, অর্ক যে ঘুমাইতেছে, সেইডা আপনে জানলেন ক্যামনে?” এবার আকবর আলির মনে ভয় ঢুকলো ।

আগামী পর্বেঃ
গালিব বলল, “তুমি তোমার মা বাবা, কিংবা তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড, ওদের সাথেও চাইলে শেয়ার করতে পারো । হয়ত তোমার কাছে বাড়তি কষ্ট রাখার ব্যাগটা নেই, তুমি যাকে বলেছো তার কাছে হয়তো সেই ব্যাগ অর্থাৎ সমাধানটা আছে!” প্রীতি গালিবের মতো করে বলল, “থাক আঙ্কেল । সমস্যাটা একাই ব্যাগ খুজে ঢুকে যাবে ।” গালিব আর কিছু বলল না । উঠে বেড়িয়ে আসতে লাগলো । দরজার কাছে এসে ওর পকেট থেকে একটা দশ টাকার নোট ফেলে দিলো । প্রীতি বলল, “আঙ্কেল আপনার টাকা পড়ে গেছে!” গালিব প্রীতির দিকে তাকিয়ে, “থাক! টাকাটা আমার পকেট খুজে ঢুকে যাবে ।” বলে চলে গেলো ।
×
বাবা(পর্ব-৫৫)

এবার আকবর আলির মনে ভয় ঢুকলো । পুষ্পিতা বলল, “তাই তো! এটা জানলেন কি করে আপনি! নিশ্চয়ই আপনি আমার ছেলেকে চোর প্রমাণের জন্য কিছু একটা ষড়যন্ত্র করছিলেন! ব্যাটা ষড়যন্ত্রকারী!” আকবর আলি সফল হতে না পারায় রেগে গিয়ে বলল, “না! তেমন কিছুই না! এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম! জামাইয়ের রুমটা একটু দেখতে ইচ্ছে হলো! তাই ওর রুমে যেয়ে দেখি অর্ক ঘুমোচ্ছে! আপনারা কোন সাহসে আমাকে ষড়যন্ত্রকারী বলছেন!” শামসু বলল, “একটু আগে যখন অনিককে চোর জামাই বলছিলেন, সেটা বলার সাহস কোত্থেকে পেলেন তাহলে?” আকবর আলি এবার চুপ । মাথা নিচু করলো । শামসু বলল, “শোন বাছা, তুমি কেনো এগুলো করছো আমি জানি না, কখনো নিজের মেয়েকে ছোটো করছো, কখনো আমাদের ছেলেকে ছোটো করার চেষ্টা করছো, তবে উদ্দেশ্য যাই হোক, সেটা খারাপ হলে তো কোনোদিনই তুমি সফল হবেই না, বরঞ্চ যদি ভালোও হয়ে থাকে, তা করার জন্য তুমি যে এতো নিকৃষ্ট হয়েছো, এই নিকৃষ্টতার জন্যও তুমি সফল হবে না!” আকবর আলি আর কিছু না বলে বেড়িয়ে গেলো বাসা থেকে । পাশেই রুমে অর্ক আর রাফিদ । অর্ক সব শুনেছে, বেড়িয়ে আসতেও চেয়েছিলো, কিন্তু রাফিদ মানা করেছিলো । তাই ঝামেলা শেষে অর্ক জিজ্ঞেস করলো, “এবার তো বল, আমাকে যেতে মানা করলি কেনো?” রাফিদ তখন সবটা খুলে বলল অর্ককে । অর্ক বলল, “ভাই! তুই তো একখান জিনিয়াস!” রাফিদ বলল, “কিন্তু ভয় এখনও রয়েই গেছে । বিয়েটার কিন্তু এখনো অনেকদিন বাকি, বাবা এই বিয়ে ভাঙ্গার চেষ্টা কেনো করছেন আমি বুঝতে পারছি না!” অর্ক বলল, “তোর বাবা আসলেই অনেক সাংঘাতিক! এরকম যেনো না থাকে সেটাই দোয়া করি ।”
অফিসে কাজ করছিলো গালিব । এমন সময় একজন পিয়ন এসে বলল, “স্যার! আপনেরে প্রীতি ম্যাডাম ডাকতেছে!” গালিব, “ঠিক আছে” বলে প্রীতির রুমে গেলো । দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলল, “আসবো?” প্রীতির মুখে সেদিনের মতো দুশ্চিন্তা না থাকলেও চেহারা দেখে তেমন একটা যে খুশি, তা মনে হচ্ছে না । গালিবকে দেখে যে একটা নকল হাসি হাসলো, তা স্পষ্টই বোঝা গেলো । বলল, “জি আঙ্কেল! আসেন ।” গালিব এলো । প্রীতি বলল, “বসেন আঙ্কেল!” গালিব বসলো । প্রীতি বলল, “আসলে আঙ্কেল, সেদিন যে আপনার সাথে একটু অভদ্রতা করেছি, সেজন্য আপনাকে ডেকেছি, সরি আঙ্কেল! আমাকে ক্ষমা করে দেবেন!” গালিব বলল, “আরে না না! ঠিক আছে, ভুলটা আমারই ছিলো, তোমার মুড তখন এমনিতেই খারাপ ছিলো। কিছু না জিজ্ঞেস করাটাই বেটার ছিলো ।” প্রীতি বলল, “সরি আঙ্কেল, কিছু মনে করবেন না, এমনিতেও আমি কাউকে বলতে চাই না ।” গালিব বলল, “আচ্ছা আমরা ল্যাপটপ আমাদের ব্যাগে কেনো রাখি? পেন্সিল বক্সে কেনো রাখি না?” প্রীতি হেসে বলল, “সেটা কি করে সম্ভব? পেন্সিল বক্সে তো ল্যাপটপ আটবেই না!” গালিব বলল, “ঠিক তাই! তুমি অনেক ছোটো আমার তুলনায়, এতো ছোটো বয়সে এতো বড় একটা কোম্পানি চালাচ্ছো, এই চাপ তো আছেই, পরিবারেরও চাপ আছে, যদি চাপের পরিমান বেশি হয়ে যায়, তখন তোমার কষ্টটাও বেড়ে যায় ।” প্রীতি বলল, “তা বুঝতে পেরেছি আঙ্কেল, থ্যাঙ্ক ইউ আমাকে সাজেস্ট করার জন্য ।” গালিব বলল, “এটা ভেবো না আমি তোমাকে বলছি আমার সাথেই শেয়ার করতে, তুমি তোমার মা বাবা, কিংবা তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড, ওদের সাথেও চাইলে শেয়ার করতে পারো । হয়ত তোমার কাছে বাড়তি কষ্ট রাখার ব্যাগটা নেই, তুমি যাকে বলেছো তার কাছে হয়তো সেই ব্যাগ অর্থাৎ সমাধানটা আছে!” প্রীতি গালিবের মতো করে বলল, “থাক আঙ্কেল । সমস্যাটা একাই ব্যাগ খুজে ঢুকে যাবে ।” গালিব আর কিছু বলল না । উঠে বেড়িয়ে আসতে লাগলো । দরজার কাছে এসে ওর পকেট থেকে একটা দশ টাকার নোট ফেলে দিলো । প্রীতি বলল, “আঙ্কেল আপনার টাকা পড়ে গেছে!” গালিব টাকার দিকে তাকালো । তারপর প্রীতির দিকে তাকিয়ে, “থাক! টাকাটা আমার পকেট খুজে ঢুকে যাবে ।” বলে চলে গেলো । প্রীতি ভাবতে লাগলো ব্যাপারটা ।
এদিকে আকবর আলি নিজের রুমে কাজে ব্যর্থ হয়ে শুয়ে শুয়ে আফসোস করছিলো এমন সময় উমা এলো ওর রুমে । তারপর আকবর আলির সামনে এসে রাগ নিয়ে বলল, “তুমি কি করেছো এগুলো!” আকবর আলি একপাশ হয়ে শুয়ে বলল, “তুমি এতো মাথা ঘামাইয়ো না! নিজের চরকায় তেল দাও!” উমা রাগ প্রকাশ করতে টেবিলের ওপর থাকা একটা কাচের গ্লাস ফেলে দিলো । আকবর আলি চমকে উঠে বসলো । তারপর উমা বলল, “জবাব দাও আমাকে! কেনো এটা করেছো!” আকবর আলি উঠে দাঁড়িয়ে রাগান্বিতভাবে বলল, “এই! তোর সাহস বেশি হইছে না! মনে রাখিস! পিপীলিকার পাখা গজায় মরার আগ দিয়েই!” উমা বলল, “হ্যাঁ তাই তো! তুই নামক পিপীলিকার পাখাটা একটু বেশি বড় হয়ে গেছে! এখন কেটে ফেলতে হবে তোর পাখা!” আকবর আলি ভ্রু কুচকে বলল, “কিরে! তোর এতো বড় সাহস! আমার সাথে তুই তুকারি করে কথা বলিস!” উমা কাচের একটা টুকরা তুলে সেটা আকবর আলির গলায় ধরে বলল, “তুই করতে পারলে আমিও পারি! মনে রাখিস! আমি আর আগের উমা নেই! ভাগ্য ভালো তোকে ডিভোর্স দেই নি! একটা খারাপ বাবা তুই! আমার ছেলেমেয়েদের দিকে কু নজর দিবি তো তোর চোখ আমি তুলে ফেলবো!” আকবর আলি বলল, “আরে! আমার ছেলেমেয়েকে আমিও ভালোবাসি! তাই তো আমি এগুলো করছি!” উমা জানতে চাইলো, “তা কোন ভালোবাসার জন্য করছিস শুনি!”

আগামী পর্বেঃ
বিকেলে সবাইকে নিয়ে একসাথে বসলো গালিব । ড্রইং রুমে সবাই একত্র হলো । গালিব বলল, “হ্যাঁ! যে জন্য সবাইকে একসাথে করেছি সেটা এবার বলি ।” মিজান তখন বলল, “জামাইবাবা কি লিয়ার কথা জাইনা গেছো?” গালিব বলল, “না আব্বা! তাও না! কিন্তু একটা কথা বলুন তো, এই লিয়াটা কে?” আশেপাশে থাকা আরশি, অনিক আর অর্কও ইয়ার্কির সাথে জোড় করলো, “বলো না নানা! লিয়া কে!”
×
বাবা(পর্ব-৫৬)

উমা জানতে চাইলো, “তা কোন ভালোবাসার জন্য করছিস শুনি!” আকবর আলি বলল, “আরে আমার বন্ধু! সেলিম! ওর ছেলে রাফাতের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম! রাফাত কতো বড়লোক জানো? কোটি টাকার মালিক! আমার মেয়ে এক কথায় ও পুরো ঢাকা শহর কিনে দিতে পারবে আমার মেয়েকে!” উমা বলল, “তাই! আর ভালোবাসা?” আকবর বলল, “ধুরু! এ যুগে ওসব ভালোবাসা কেউ দেখে নাকি! দেখে শুধু টাকা! আমি সেলিমকে কথা দিয়েছিলাম! এখন কথা না রাখতে পারলে ওর সাথেও আমার সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে!” উমা বলল, “কিন্তু তুমি কথা রাখলে যে তোমার মেয়ের সাথে তোমার সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে!” আকবর আলি এবার কিছু বলতে পারলো না । উমা বলল, “বয়সের তাড়নায় আমাদের মেয়ে একটা অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে, ঠিক আছে, সে সম্পর্ককে বৈধ করার চেষ্টা চলছে । আর এখানে তুমি আরেকটা কান্ড ঘটাচ্ছো । একবার ভাবো তো! তোমার মেয়ের ওই তোমার বন্ধুর ছেলের সাথে বিয়ে হলো, তারপর তোমার মেয়ে অনিকের ভালোবাসা না পাওয়ার কষ্টে আত্মহনন করলো! কেমন লাগবে তোমার! আর তা যদি না হয়, এটাও তো হতে পারে, বিয়ের রাতে তোমার মেয়ে পালিয়ে অনিকের সাথে অন্য কোথাও বিয়ে করে ফেললো, তখন কেমন লাগবে তোমার?” আকবর এবারেও কিছু বলল না । উমা বলল, “তাই ভালোর জন্য বলছি, এই সম্পর্ক মেনে নাও । উল্টাপাল্টা কিছু করার চেষ্টা কোরো না!” বলে চলে গেলো উমা । উমা চলে যাবার পর আকবর বলল, “এতো সহজে তো আমি মানছি! আমার মেয়ের বিয়ের হবে রাফাতের সাথেই, ওই থার্ড ক্লাস অনিকের সাথে না!”
বিকেলে সবাইকে নিয়ে একসাথে বসলো গালিব । ড্রইং রুমে সবাই একত্র হলো । গালিব বলল, “হ্যাঁ! যে জন্য সবাইকে একসাথে করেছি সেটা এবার বলি ।” শামসু বলে উঠলো, “কি কাঁঠাল এনেছিস!” গালিব বলল, “আরে বাবা, না!” লুনা জিজ্ঞেস করলো, “মাই মাই গো! জামাইবাবা কি সোনা খুইজা পাইছো?” গালিব বলল, “না আম্মা!” কুলসুম জিজ্ঞেস করলো, “হ্যারে, ভালো বেতনের চাকরি পেয়েছিস নাকি?” গালিব বলল, “না মা! আমাকে কথা তো বলতে দাও!” মিজান তখন বলল, “জামাইবাবা কি লিয়ার কথা জাইনা গেছো?” গালিব বলল, “না আব্বা! তাও না! কিন্তু একটা কথা বলুন তো, এই লিয়াটা কে?” আশেপাশে থাকা আরশি, অনিক আর অর্কও ইয়ার্কির সাথে জোড় করলো, “বলো না নানা! লিয়া কে!” মিজান লজ্জায় মাথা নিচু করলো । বলল, “না থাইক, আমার বউ রাগ করবেনে ।” লুনা হালকা রাগ করে বলল, “অ মাই মাই গো! তোমার কি মনে হয়, আমি কি রাইগাই থাহি!” মিজান বলল, “আইচ্ছা, না রাগলে কই, লিয়া আছিলো আমার এককালের বান্ধবী ।” আরশি জিজ্ঞেস করলো, “ওমা তাই! তা হঠাৎ তার কথা এতো বলছো!” মিজান বলল, “কই! গলতাছি!” কুলসুম বলল, “ভাই গলছো না! আরশি মা বলছো বলেছে!” মিজান বলল, “ও আইচ্ছা! আমি কই কইলাম! তোমরাই তো খালি লিয়া লিয়া করো!” অর্ক বলল, “ডিয়ার নানা! ওটা লিয়া না বিয়া! তুমি কানে কম শোনো! আর লিয়াকে বিয়া ভাবো!” মিজান বলল, “হ! তাও ঠিক!” অর্ক বলল, “দেখো! আমি যে উলটো বললাম, তাও বুঝলে না!” সবাই হেসে উঠলো । পাশে দাঁড়িয়ে পুষ্পিতাই শুধু হাসছে না । ও বিরক্ত হচ্ছে । মনে মনে বলছে, “ঢং শুরু করছে পুরা পরিবার! উফ!” গালিব বলল, “আচ্ছা! এগুলা পড়ে! আগে আমি যা বলছি তা শোন!” আরশি বলল, “হ্যাঁ বাবা, বলো!” গালিব বলল, “আজ তো বৃহস্পতিবার, কাল শুক্রবার, আমি চাই তার পরের শুক্রবার আমার ছেলে অনিক আর পপির বিয়ে দিতে!” অর্ক আর আরশি, “ইয়ে!” বলে আনন্দে চেচিয়ে উঠলো । পুষ্পিতা বলল, “কি! এতো তাড়াতাড়ি!” গালিব বলল, “কোথায় তাড়াতাড়ি, এখনো তো অনেকদিন আছে ।” পুষ্পিতা মনে মনে বলল, “মা তো চলেই এসেছে! বিয়ে ভাঙ্গার একটা চেষ্টা করি!” গালিব বলল, “কি ব্যাপার! তোমার কি কোন দ্বিমত আছে?” পুষ্পিতা বলল, “না, দ্বিমত থাকবে কেনো, কিন্তু তোমার ছেলের বউয়ের বাপ সকালে যে কান্ডটাই না করলো! বাবা! দেখলে বুঝতা! এমন পরিবারের সাথে ছেলের বিয়ে দিতে আবার খারাপই লাগছে ।” গালিব ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো, “কি করেছেন উনি?” সবাই গালিবকে সবটা খুলে বলল । তারপর গালিব কিছুক্ষণ ভাবলো এবং হাসিমুখে বলল, “আমি জানতাম, উনি মন থেকে বিয়েটা মেনে নেন নি, বিয়ে ভাঙ্গার উনি অনেক চেষ্টা চালাবেন । কিন্তু বিয়ে কিছুতেই ভাংছে না । আর তুমি যদি পরিবারের কথা বলো, তাহলে আমাদের ছেলের উনাদের বাড়ি যাচ্ছে, উনাদের মেয়ে আমাদের বাসায় আসছে, সো, টেনশন নিও না । আল্লাহ ভরসা ।” পুষ্পিতা হাসিমুখে বাধ্য হয়ে মেনে নিলেও মনে মনে বলল, “এই লোকটা কি! এর কথার সাথে পারা যায় না! ধুর!” গালিব বলল, “আমার তো এখন সকাল রাত অফিস, বাসায় কেবল দুপুর আর বিকেলটাই সময় দিতে পারছি । সন্ধ্যার কিছুটা সময়ও আছে হাতে, তবুও আমি যেটুকু পারি করবো । তাই যেটুকু আমার পক্ষে সম্ভব না, সেটুকু আমি পুষ্পিতাকে বলতে চাই একটু পালন করতে । পারবে না?” পুষ্পিতা এবারেও বাধ্য হয়ে মেনে নিলো এবং মনে মনে বলল, “আমার শাশুড়িই কি কম ছিলো যে জামাইও এখন কাজ দেয়া শুরু করলো!” গালিব বলল, “তাহলে কাল থেকেই শুরু করা যাক বিয়ের জোগাড়?” পুষ্পিতা বাদে বাকি সকলে বলল, “ঠিক আছে!”

আগামী পর্বেঃ
ময়না ভাবি বলল, “শোনেন ভাবি! আপনার শাশুড়িকে কোনোরকমে বাধ্য করবেন একদিন রান্না করাতে, সেদিন আপনি সেই রান্না খেয়ে অসুস্থ হবার অভিনয় করবেন! আর একটা বিষের কৌটো আপনার শাশুড়ির রুমে রেখে আসবেন । পড়ে বলবেন, একটা ডাক্তার ম্যানেজ করবেন, যে বলবে আপনার বিষক্রিয়া হয়েছিলো, খাবারে কেউ বিষ মিশিয়েছিলো!”
…………………………………
গালিব জিজ্ঞেস করলো, “কিন্তু হঠাৎ করে এমন কি হয়ে গেলো যে তোমার জীবনে এখন অনেক কষ্ট?” প্রীতি আবার কাদলো । আবির বলল, “শান্ত হও । আল্লাহ ভরসা । যা সমস্যা, ঠিক হবে ইনশাআল্লাহ ।” প্রীতি বলল, “না, সেই সমস্যা ঠিক হবার নয় ।” গালিব জিজ্ঞেস করলো, “কেনো?”
×
বাবা(পর্ব-৫৭)

পুষ্পিতা বাদে বাকি সকলে বলল, “ঠিক আছে!”
রাতের কথা । পুষ্পিতা গেলো ময়না ভাবির বাসায় । বলল, “ভাবি! কিছু বুঝতে পারছি না! কি যে করি! বিয়েও নাকি সামনের শুক্রবার ।” ময়না বলল, “সে আপনি সময় নষ্ট কেনো করছেন ভাবি? কিছু একটা করেন!” পুষ্পিতা বলল, “আপনি না বলেছিলেন আমাকে সাহায্য করবেন!” ময়না বলল, “হুম! ভাবতে দিন!” বলে চোখ বন্ধ করে কি যেন ভাবতে শুরু করলো ময়না । পুষ্পিতা ভ্রু কুচকে ময়নার দিকে তাকালো । একটু পর হাসিমুখে চোখ খুলে ময়না বলল, “পাইছি!” পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “কি?” ময়না ভাবি বলল, “শোনেন ভাবি! আপনার শাশুড়িকে কোনোরকমে বাধ্য করবেন একদিন রান্না করাতে, সেদিন আপনি সেই রান্না খেয়ে অসুস্থ হবার অভিনয় করবেন! আর একটা বিষের কৌটো আপনার শাশুড়ির রুমে রেখে আসবেন । পড়ে বলবেন, একটা ডাক্তার ম্যানেজ করবেন, যে বলবে আপনার বিষক্রিয়া হয়েছিলো, খাবারে কেউ বিষ মিশিয়েছিলো!” পুষ্পিতা একটু ভেবে বলল, “বুদ্ধি তো ভালোই, কিন্তু আমি অসুস্থর অভিনয় কি করে করবো? আর বিষ খেয়ে মরবো না, এটাও কেমন হয়ে যায়না?” ময়না ভাবি আবার চিন্তায় ডুবে গেলো । তারপর আবার বলল, “পাইছি!” পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “কি?”
অফিসে কাজ করছিলো গালিব । গালিরের সাথে মাত্র তেরোজন ওভারনাইট করে । দুজন কথা বলছিলো, তাদের কথা কানে এলো গালিবের । একজন বলছিলো, “ভাই জানিস, আজকে বস বাসায়ই যায় নাই!” আরেকজন বলল, “তোর আগে জানি ভাই! আমি দেখলাম কাদছেন উনি! কি জন্য আল্লাহই জানেন!” প্রথমজন বলল, “হ্যাঁ! আমিও শুনেছি, উনার নাকি কি সব পারিবারিক ঝামেলা হয়েছে ।” গালিব একবার উঠতে নিলো, দেখতে চাইলো কি হয়েছে প্রীতির, কিন্তু আবার নিজেকে সামলে নিলো । কারণ প্রীতি নিজে থেকে না চাইলে তার কাছ থেকে তার পার্সোনাল ব্যাপার না জানাই ভালো । তাকে তার মতো থাকতে দেয়াই ভালো । গালিব আবার কাজে মনোযোগ দিলো । একটু পর পিয়ন এলো গালিবের কাছে । বলল, “স্যার, প্রীতি ম্যাম আপনেরে ডাকতেছে!”
“আপনি বিষের জায়গায় ঘুমের ওষুধ ব্যাবহার কইরেন, যেইটা খাইলে মানুষ মরার কাছাকাছি যায়, কিন্তু মরে না!” পুষ্পিতা বলল, “হুম! বুদ্ধি ভালো । কিন্তু………!” ময়না ভাবি জিজ্ঞেস করলো, “কিন্তু কি?” “না, ভয় লাগছে!” বলল পুষ্পিতা ।
“আরে! এতো ভয় পেলে হবে নাকি! আপনি পারবেন! আমি জানি!” বলল ময়না ভাবি ।
“না তাও! যদি অন্য কিছু ঘটে যায়!”
“আরে না! অন্য কিছু কি ঘটতে যাবে! কিছুই হবে না!”
“আচ্ছা, অন্য কোন বুদ্ধি নাই?” জানতে চাইলো পুষ্পিতা ।
“অন্য কিছু! উমম……। না, এখন তো কিছু মাথায় আসছে না, তবে আমি আপনাকে জানাবো, বউয়ের নাম মৌ সিরিয়ালের নতুন কুটনামি শুরু হচ্ছে! সেখান থেকে কিছু শিখতে পারলে আপনাকে জানাবো!”
“আচ্ছা ভাবি! তাহলে কালই করি এই কাজ?”
“হ্যাঁ! অবশ্যই! যতো তাড়াতাড়ি করবেন ততোই ভালো!” বলল ময়না ভাবি ।
“আসবো?” প্রীতির রুমের সামনে এসে বলল গালিব । প্রীতি চোখ মুছে আবার মিথ্যা হাসি এনে বলল, “জি আঙ্কেল আসেন!” গালিব এলো, তারপর প্রীতি বসতে বললে গালিব বসলোও । প্রীতি তখন দশ টাকার নোটটা গালিবকে দিয়ে বলল, “আঙ্কেল আপনার টাকা ।” গালিব টাকাটা নিলো । প্রীতি বলল, “আমি বুঝতে পেরেছি, টাকাটা আপনাকে আমি না দিলে সেটা আপনার মানিব্যাগে যেতো না ।” গালিব বলল, “যাক ভালো লাগলো ।” আজ আর গালিব নিজে থেকে কিছু জিজ্ঞেস করলো না । প্রীতি বলল, “আসলে সেদিনের সেই কষ্টটা আজ আরও বেশি করে আঘাত করছে আমাকে । তার ওপর আমার চাচার জোড়জবরদস্তিও আমাকে আঘাত করছে বেশ ।” গালিব জিজ্ঞেস করলো, “মানে?” প্রীতি বলল, “আমার খুব একটা ক্লোজ কোন বন্ধু নেই, যারা আছে, তাদের ওপরও বিশ্বাস নেই । আত্মীয় বলতে চাচা, সেতো আমার খারাপ চায় কেবল ।” গালিব বলল, “আমি ঠিক বুঝতে পারছি না তুমি কি বলতে চাইছো!” প্রীতি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “আমার জন্মের সময় আমার মা মারা যায়, তারপর থেকে আমার অনেক আদর যন্ত করে লালন পালন করেন আমার বাবা । সেদিন বাস থেকে আপনি যখন নেমে গিয়েছিলেন, তখন আমি আপনার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ছিলাম, আপনার মাঝে আমি আমাকে বাবাকে খুজে পাচ্ছিলাম । যাই হোক, আমার বাবা এই কোম্পানির মালিক হলেও অফিস চালাতেন বাবার বন্ধু । আমার বাবা মারা গিয়েছিলো আমি যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি । তারপর থেকে চাচার কাছে মানুষ হওয়া । বড় হয়ে চাকরি হবার সময় হল যখন, তখন আমার বাবার বন্ধু তাকে চাকরি দেবার কৃতজ্ঞতাস্বরূপ এই কোম্পানির দায়ভার আমার হাতে ন্যাস্ত করে উনি রিটায়ার্ড করেন ।” বলে থামলো প্রীতি । গালিব জিজ্ঞেস করলো, “কিন্তু হঠাৎ করে এমন কি হয়ে গেলো যে তোমার জীবনে এখন অনেক কষ্ট?” প্রীতি আবার কাদলো । আবির বলল, “শান্ত হও । আল্লাহ ভরসা । যা সমস্যা, ঠিক হবে ইনশাআল্লাহ ।” প্রীতি বলল, “না, সেই সমস্যা ঠিক হবার নয় ।” গালিব জিজ্ঞেস করলো, “কেনো?” প্রীতি বলল, “আমার চাচা আমাকে বিয়ে দিতে চান যার তার সাথে! তাদের কাছে আমার সমস্যাটা গোপন করে, বিয়ে দিতে চায় । কিন্তু আমি কাউকে ঠকাতে চাই না ।” গালিব আবার জিজ্ঞেস করলো, “কি সেই সমস্যা?” প্রীতি বলল, “জন্ম থেকে আমার শরীরে ইউট্রাস নেই, মানে আমি কখনো মা হতে পারবো না!” বলে আবার কেদে উঠলো প্রীতি ।

আগামী পর্বেঃ
রান্নাঘরে শাশুড়িকে টেনে নিয়ে এলো পুষ্পিতা । তারপর অনুরোধ করে বলল, “আম্মা! আপনার মনে আছে! আপনি যে শুটকি ভুনা করতেন! আর আমি কি মজা করে খেতাম আজকে একটু রান্না করুন না আম্মা! প্লিজ!”
………………………
চলে গেলো কুলসুমের রুমে । গিয়ে কুলসুমের ব্যাগ নিলো । ব্যাগের মধ্যে রাখলো সেই ঘুমের ওষুধের কৌটো । তারপর পুষ্পিতা আনন্দে চলে গেলো নিজের রুমে । মনে মনে বলল, “যাক! আজকে তো একটা ধাকামা হবেই!”
×
বাবা(পর্ব-৫৮)

বলে আবার কেদে উঠলো প্রীতি । গালিব কিছুক্ষণ চুপ থাকলো । একটু পর গালিব বলল, “জন্ম থেকে এই সমস্যা তোমার, মানে আল্লাহ তোমাকে এভাবেই পাঠিয়েছেন, তাহলে এতে কষ্ট পাওয়ার কি আছে? আল্লাহ যা করেন তা তো ভালোর জন্যই করেন তাই না!” প্রীতি চোখ মুছে বলল, “কিন্তু আঙ্কেল, সেটা আমি আপনি মানতে পারি, কিন্তু আর সবাই কি মানবে?” গালিব একটু ভেবে বলল, “হুম! সেটাই হচ্ছে আসল সমস্যা । তোমার কি কাউকে পছন্দ হয়? মানে তোমার পছন্দের কোন ছেলে, যে তোমাকে বিশ্বাস করতে পারে?” প্রীতি বলল, “আপনি কি বয়ফ্রেন্ডের কথা বলছেন?” গালিব বলল, “না না, আমার এটা পছন্দ না । যদিও এখন যেটা বলছি সেটাও পছন্দ না, এই যুগে স্কুলে তো সব ছেলেরই মেয়ে আর সব মেয়েরই ছেলে বন্ধু হয়, তো তোমার কি এরকম কেউ নেই যে তোমাকে অনেক ভরসা করে, এবং এই কথা শোনার পরও তোমাকে বিয়ে করবে এমন কেউ?” প্রীতি বলল, “না, আমার সেরকমও কেউ নেই ।” গালিব বলল, “ঠিক আছে । আমাকে ভাবতে দাও ।” প্রীতি বলল, “কি ভাববেন আপনি?”
“তোমার সমস্যার সমাধানটা সম্পর্কে ।” বলল গালিব ।
“আপনি সমাধান পেয়েও গেছেন?” অবাক হয়ে জানতে চাইলো প্রীতি ।
“হুম, তবে সেটা তোমার পছন্দ হবে কিনা ।” বলল গালিব ।
“কি সমাধান?” জানতে চাইলো প্রীতি ।
“কাল বলি?”
“ঠিক আছে আঙ্কেল । তবে আপনি সমাধান একটা পেয়েছেন তা জেনে খুশি হলাম ।” বলে হাসলো প্রীতি ।
ময়না ভাবির বাসা থেকে ফেরার সময় একটা ফার্মেসীর দোকানে গেলো পুষ্পিতা ।
“ভাই কড়া ঘুমের ওষুধ দিন তো!” বলল পুষ্পিতা ।
দোকানদার একটা ঘুমের ওষুধের কৌটো পুষ্পিতাকে দিলো । পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করল, “এটা কি বেশি খেলে মরার সম্ভাবনা আছে?” দোকানদার হালকা হেসে বলল, “ক্যান আফা? সুইসাইড কইরবেন নি?” পুষ্পিতা চোখ বড় বড় করে রাগান্বিত স্বরে বলল, “শাট আপ! যা বলছি তাই বলেন!”
“ওই আর কি, মরার কাছাকাছি, চিকিৎসা করাইলে সুস্থ হইয়ে যাইবেন ।” বলল দোকানদার ।
“দাম কত?” জানতে চাইলো পুষ্পিতা ।
“চল্লিশ ট্যাকা ।” বলল দোকানদার ।
পুষ্পিতা পঞ্চাশ টাকার নোট দিয়ে বেড়িয়ে আসতে নিলো, দোকানদার পিছু ডাকলো, “আফা ১০ ট্যাকা নিয়া যান!” পুষ্পিতা, “চা খাইয়েন ওইটা দিয়ে ।” বলে চলে গেলো ।
পরদিন সকালের কথা । আজ শুক্রবার । তাই সবাই বাসায় । রান্নাঘরে শাশুড়িকে টেনে নিয়ে এলো পুষ্পিতা । তারপর অনুরোধ করে বলল, “আম্মা! আপনার মনে আছে! আপনি যে শুটকি ভুনা করতেন! আর আমি কি মজা করে খেতাম!” কুলসুম বলতো, “হ্যাঁ! মনে থাকবে না আবার! কি মজা করে খেতে! এমনকি তুমি তো মাঝে মাঝে লুকিয়ে লুকিয়ে রান্নাঘরে যেয়ে নিয়ে নিয়ে খেতে ।” বলে হাসলো কুলসুম । কুলসুমের সাথে তাল মিলিয়ে পুষ্পিতাও হাসলো । তারপর একবাটি শুটকি, পেয়াজকুচি, আরও যেসব ময়মশলা দরকার, সেগুলো এগিয়ে দিয়ে পুষ্পিতা বলল, “আজকে একটু রান্না করুন না আম্মা! প্লিজ!” কুলসুম অবাক হতে হতে একটা হাসির মাধ্যমে নিজেকে সামনে বললো, “এইটুকু শুটকি তুমি খাবে কি, আর বাসার সবাই খাবে কি?” পুষ্পিতা বলল, “কেউ খাবে না! আমি একাই খাবো! প্লিজ আম্মা! না করবেন না!” কুলসুম বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে!” পুষ্পিতা কুলসুমকে জড়িয়ে ধরে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ আম্মা!” তারপর চামেলিকে, “এই! আম্মার কি কি লাগে সাহায্য করিস!” বলতে বলতে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো । তারপর চলে গেলো কুলসুমের রুমে । গিয়ে কুলসুমের ব্যাগ নিলো । ব্যাগের মধ্যে রাখলো সেই ঘুমের ওষুধের কৌটো । তারপর পুষ্পিতা আনন্দে চলে গেলো নিজের রুমে । মনে মনে বলল, “যাক! আজকে তো একটা ধাকামা হবেই!”
দরজায় কলিংবেলের আওয়াজ শুনে এগিয়ে এলো গালিব । দরজা খুলে দেখলো, আকবর আলি । হাতে একটা ফাকা বাটি নিয়ে দাড়িয়ে আছে । গালিব বলল, “আসসালামু আলাইকুম! কেমন আছেন?” আকবর আলি বলল, “ওয়ালাইকুমুস সালাম ভাই! কেমন আছে?” গালিব বলল, “আলহামদুলিল্লাহ ভালো, আপনি?” আকবর আলি বলল, “জি আলহামদুলিল্লাহ! ভালো ।” তারপর আকবর আলি হাতের বাটিটা গালিবের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “একটু ডাল হবে?”
“আহ! খুব ব্যাথা করছে রে!” অর্ককে বলল অনিক । অনিকের হাত ওরই পায়ের গোড়ালিতে । সেখানে একটা মৌমাছি কামড়েছে । অর্ক জিজ্ঞেস করলো, “চুন লাগিয়েছো একটু?” অনিক বলল, “হ্যাঁ! গতকাল নানির কাছ থেকে চুনের কৌটোটা এনে একটু চুন লাগিয়েছিলাম ।” অর্ক বলল, “ও আচ্ছা । তাও ভালো ।” অনিক বিছানা থেকে উঠলো । তারপর গামছা নিয়ে বাথরুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল, “যা গোসল কর । আমিও গোসলে যাই । আজকে তো আবার জুম্মাবার, নামাজ আছে ।” অর্ক বলল, “হ্যাঁ, সেটাই যাই আমি ।” বলে বেড়িয়ে গেলো অর্ক । এদিকে আকবর আলি আশেপাশে কাউকে না দেখতে পেয়ে ভেতরে ঢুকলো । অন্য দিকে যেতে গিয়ে হঠাৎ সে পথ দিয়ে অর্ককে আসতে দেখে সুযোগ বুঝে পাশের ফাঁকা রুমে তাড়াতাড়ি করে ঢুকে গেলো আকবর । সে রুমটা ছিলো কুলসুম আর শামসুর । শামসু গোসলে গিয়েছে । শাওয়ারের আওয়াজ হচ্ছে । আকবরের ধাক্কার কুলসুমের ব্যাগটা পড়ে গেলো । সেই সাথে ব্যাগ থেকে বেড়িয়ে গেলো সেই ঘুমের ঔষধের কৌটোটা ।

আগামী পর্বেঃ
পুষ্পিতাকে জিজ্ঞেস করল, “একি, তুমি এখনই খাচ্ছো যে, নামাজ পড়ে একসাথে খাবো না আমরা?” পুষ্পিতা বলল, “না, আসলে আম্মা শুটকি ভুনা করেছেন তো, সেটাই খাচ্ছিলাম, আম্মাকে বলেছিলাম আমি একাই খাবো। তাই আমি একাই খাচ্ছি পড়ে কেউ দেখে যেনো কষ্ট না পায় ।” গালিবের মুখে হাসি ফুটে উঠলো । পুরোনো স্মৃতি মনে পড়ে গেলো ওর । মায়ের হাতের শুটকি ভুনা ওরও বেশ পছন্দের । গালিব এগিয়ে এসে বলল, “এই! দাও না! আমিও একটু খাই!” পুষ্পিতার বুকটা ধরাস করে উঠলো, “সর্বনাশ! এ খেয়ে এর কিছু না হলে তখন আমার অভিনয় তো কোন কাজেই লাগবে না!”
×
বাবা(পর্ব-৫৯)

সেই সাথে ব্যাগ থেকে বেড়িয়ে গেলো সেই ঘুমের ঔষধের কৌটোটা । আকবর আলি মেঝেতে পড়ে যাওয়া জিনিসগুলো আবার ব্যাগে ভরতে লাগলো । সেই সময় আকবর আলির কানে আওয়াজ এলো, ডাইনিং রুমে একজন গান গাইছে । সেই সময় ঘুমের ওষুধের কৌটোটা মেঝে থেকে তুলে কেবল হাতে নিয়েছিলো আকবর আলি । গান শুনে দরজার কাছে যেয়ে উঁকি দিয়ে দেখতে লাগলো । পুষ্পিতা হাতে প্লেট ভরা গরম ভাত, আর তাতে শুটকি ভুনা নিয়ে এসেছে । আর পুষ্পিতা গান গাচ্ছে, “আজকে আমি শুটকি খাবো! ফিলিংস লাইক, দুবাই যাবো! লা লা লা লা!” আকবর আলি হাতে করে ঘুমের ওষুধটা নিয়েই দরজার কাছে এসেছিলো । সেটার দিকে তাকিয়ে আকবর আলি মনে মনে বলল, “এই মহিলাকে একটা মজা দেয়া যাক! সেদিন আমার সাথে খুব বড় গলায় কথা বলছিলো! এর পাতে ঘুমের ওষুধ মিশায়ে কৌটোটা অনিকের ঘরে রেখে আসি! এক ঢিলে দুই পাখি মরবে!” বলে আকবর আলি অপেক্ষা করলো সুযোগের আর সেই সাথে ওষুধগুলো গুড়ো করতে লাগলো একটা পেপারওয়েট দিয়ে। পুষ্পিতা “ওহ! লবন কম হয়েছে!” বলে লবন আনতে রান্নাঘর গেলো । সেই ফাকে আকবর আলি এসে প্লেটে ঘুমের ওষুধ ছিটিয়ে একটু মাখিয়ে দিতে দিতে বলল, “ফ্রিতে আমার হাতের ময়লাও খা!” তারপর আকবর আলি চলে গেলো অনিকের রুমে অনিকের টেবিলের বইয়ের চিপায় রেখে আসলো কৌটোটা । এদিকে ডাল নিয়ে গালিব দরজার কাছে এসে দেখলো, আকবর আলি নেই । গালিব ভ্রু কুচকে বললো, “কি ব্যাপার! কোথায় গেলেন?” এদিকে আকবর আলি বেড়িয়ে এলো রুম থেকে পুষ্পিতার পেছন থেকে আসায় কোনদিক থেকে এসেছে তা টের পেলো না পুষ্পিতা । কিন্তু আকবর আলিকে দেখে মেজাজ ওর হালকা বিগড়ে গেছে । আকবর আলি গালিবের কাছে এসে বলল, “এইতো আমি এদিকে!” গালিব বাটিটা হাতে দিয়ে বলল, “সরি ভাই, দেরি হয়ে গেলো একটু, আসলে ডালের ডিব্বাটা তাকের বেশি ভেতরে ছিলো তো!” আকবর আলি মনে মনে “যাক বাবা! ভাগ্য ভালো!” বলে গালিবকে বলল, “হ্যাঁ, তাই তো ভাবছিলাম! আপনি দেরি করছেন কেনো, এজন্য আপনাকে খুজতে ভেতরে গিয়েছিলাম ।” বলে ডালের বাটিটা হাতে নিলো । তারপর বলল, “আসি ।” আকবর আলি যাবার সময় পুষ্পিতা হালকা গরম মেজাজে বলে উঠলো, “সেদিন হলুদগুড়ো নিয়েছিলেন, সেটা ফেরত দিয়েন কিন্তু!” আকবর আলি হালকা হেসে বলল, “ঠিক আছে ভাবি!” বলে চলে গেলো । গালিব, “আবার আসিয়েন!” বলে দরজা লাগিয়ে দিলো । তারপর পুষ্পিতাকে জিজ্ঞেস করল, “একি, তুমি এখনই খাচ্ছো যে, নামাজ পড়ে একসাথে খাবো না আমরা?” পুষ্পিতা বলল, “না, আসলে আম্মা শুটকি ভুনা করেছেন তো, সেটাই খাচ্ছিলাম, আম্মাকে বলেছিলাম আমি একাই খাবো। তাই আমি একাই খাচ্ছি পড়ে কেউ দেখে যেনো কষ্ট না পায় ।” গালিবের মুখে হাসি ফুটে উঠলো । পুরোনো স্মৃতি মনে পড়ে গেলো ওর । মায়ের হাতের শুটকি ভুনা ওরও বেশ পছন্দের । গালিব এগিয়ে এসে বলল, “এই! দাও না! আমিও একটু খাই!” পুষ্পিতার বুকটা ধরাস করে উঠলো, “সর্বনাশ! এ খেয়ে এর কিছু না হলে তখন আমার অভিনয় তো কোন কাজেই লাগবে না!”
গোসল সেরে বাথরুম থেকে বেরোলো মিজান । লুনা তখন বাইরে থেকে এসে পান সাজাচ্ছে । এমন সময় সে কি যেনো খুঁজতে লাগলো । তারপর বলল, “ওহ হো! এই পুষ্পিতার বাপ! এল্লা চুনের কৌটাডা আইনা দেও না! অনিকের ঘরে আছে!” মিজান বলল, “আইচ্ছা দিতেছি ।” বলে মিজান গেলো অনিকের রুমে । অনিক তখন গোসল সেরে মাথা মুছতে মুছতে বেরোল । মিজানকে কি যেনো খুঁজতে দেখে জিজ্ঞেস করল, “কি খোজেন নানা?” মিজান বলল, “তোমার নানি ঘুমের কৌটা চাইলো!” অনিক হালকা হেসে বলল, “ঘুমের কৌটা না! আপনি ভুল শুনেছেন, নানি মনে হয় চুনের কৌটা চেয়েছেন ।” মিজান টেবিল থেকে সেই আকবরের রেখে যাওয়া ঘুমের ওষুধের কৌটাটা হাতে নিয়ে বলল, “না না! আইজকা ভুল শুনি নাই! এইযে ঘুমের ওষুধের কৌটা!” অনিক ভ্রু কুচকে তাকালো । বলল, “আরে! এটা আমার রুমের এলো কি করে?” মিজান বলল, “দেখছো! আমি সমসময় ভুল শুনি না!” অনিক বলল, “কিন্তু এইটা তো আমার রুমে থাকার কথা না, মায়ের হতে পারে, কিন্তু এই ঘরে কি করে এলো?” কিছুক্ষণ ভাবলো অনিক । তারপর বলল, “আচ্ছা। এক কাজ করেন ।” বলে চুনের কৌটোটাও মিজানের হাতে দিয়ে বলল, “এটা নিয়ে যান । দ্যাখেন, নানি কি চাচ্ছে, যদি ঘুমের ওষুধ নানি না চান, তাহলে পড়ে মাকে দিয়ে দিয়েন, নাহলে তো নানির লাগলোই ।” মিজান, “আইচ্ছা!” বলে চলে গেলো ।
গালিব এগিয়ে আসতেই খাবারের ওপর হাতে আর পুরো শরির দিয়ে ঢেকে ফেললো পুষ্পিতা । তারপর বলল, “এটা শুধু আমার একার!” গালিব বলল, “প্লিজ দাও না!” এবার পুষ্পিতা প্রায় রেগে গিয়ে বলল, “না! আমি যখন না বলছি তখন না!” গালিব অবাক হয়ে গেলো এবার । বলল, “আচ্ছা বাবা! ঠিক আছে! কিন্তু এতো রেগে যাচ্ছো কেনো?” পুষ্পিতা কিছু বলল না । গালিবও কিছু না বলে চলে গেলো । পুষ্পিতা মুখ দিয়ে দম ছেড়ে বলল, “উফ! বাঁচলাম! আরেকটু হলে প্ল্যানটা মাটি হইয়া যাইতো!”
এদিকে মিজানের হাত থেকে চুনের কৌটা নিয়ে একপাশে রেখে ঘুমের ওষুধের কৌটা নিয়ে লুনা বলল, “এইডা কই থেইকা নিয়া আইসো!” মিজান বলল, “তুমি না ঘুমের কৌটা চাইলা!” লুনা বলল, “ও মাই মাই গো! আমি চুনের কৌটা কইছি! আর ঘুমের কৌটা কি! আমি তো তাইলে কইতাম ঘুমের ওষুধের কৌটা!” মিজান বলল, “শ্বশুর? শ্বশুর না মইরা গেছে?” লুনা কপাল চাপড়ে বলল, “মাই মাই গো!” তারপর কৌটোটা মিজানের হাতে দিয়ে বলল, “যেইহানে পাইছো! সেইহানে রাইখা আসো যাই!” মিজান বলল, “এহনি……!” কথা শেষ হতে না হতেই লুনা বলে উঠলো, “হ এহনি! যাও!”

আগামী পর্বেঃ
মাথায় হাত দিয়ে বিছানার ওপর শুয়ে পড়লো পুষ্পিতা । মনে মনে বলল, “আমার শরীর এতো দুর্বল লাগছে কেনো!” ছটফট করতে করতে আশেপাশে তাকাচ্ছিলো সে । হঠাৎ দেখলো, ওর টেবিলের ওপর ঘুমের ওষুধটা । মনে মনে বলে উঠলো, “এটা আমার রুমে কি করে এলো!” পুষ্পিতা চাইছিলো সেটা ছুতে, কিন্তু পারলো না । দুর্বলতা শরীরকে নড়তে দিচ্ছে না ।
×
বাবা(পর্ব-৬০)

কথা শেষ হতে না হতেই লুনা বলে উঠলো, “হ এহনি! যাও!” মিজান ঘুমের ওষুধের কৌটোটা হাতে নিয়ে গেলো পুষ্পিতার রুমে । রেখে এলো পুষ্পিতার টেবিলের ওপর । এদিকে খাওয়া শেষ পুষ্পিতার কেমন দুর্বল লাগতে শুরু করল । মনে মনে বলল, “আহ! মাথাটা কেমন করছে! যাই, একটু শুয়ে থাকি ।” বলে পুষ্পিতা নিজের রুমে চলে গেলো ।
সবাই সময় হলে বেড়িয়ে গেলো জুম্মাহর নামাজের উদ্দেশ্যে । ঘরে শুধু লুনা, কুলসুম আর পুষ্পিতা । সবাই আলাদা আলাদা রুমে । একটু পর বাইরে থেকে ঘরে ফিরলো আরশি । মা-কে শুয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করল, “মা, ঘুমচ্ছো যে এই সময়?” পুষ্পিতা হালকা ভ্রু কুচকে বলল, “ঘুমাতে যাবো কেনো আমি? তোর এতক্ষণ লাগলো কেনো?” আরশি বলল, “আর বোলো না! রাস্তায় জ্যাম অনেক । সব নামাজে যাচ্ছিলো তো!” পুষ্পিতা বলল, “যা, গোসল করতে যা ।” আরশি গামছা আর জামা নিয়ে গোসলে গেলো । পুষ্পিতা শুয়েইএ আছে । কিন্তু এতো ঘুম ধরছে কেনো তা বুঝতে পারলো না । উঠে ডাইনিং রুম থেকে মোবাইলটা নিয়ে আবার রুমে এসে বসলো । হয়তো মোবাইল চালালে ঘুম ভাংতেও পারে । কিন্তু না । পুষ্পিতার আরও খারাপ লাগতে শুরু করেছে । মোবাইল চালাতেও অস্বস্থি লাগছে । মোবাইল রেখে আবার মাথায় হাত দিয়ে বিছানার ওপর শুয়ে পড়লো পুষ্পিতা । মনে মনে বলল, “আমার শরীর এতো দুর্বল লাগছে কেনো!” ছটফট করতে করতে আশেপাশে তাকাচ্ছিলো সে । হঠাৎ দেখলো, ওর টেবিলের ওপর ঘুমের ওষুধটা । মনে মনে বলে উঠলো, “এটা আমার রুমে কি করে এলো!” পুষ্পিতা চাইছিলো সেটা ছুতে, কিন্তু পারলো না । দুর্বলতা শরীরকে নড়তে দিচ্ছে না । পুষ্পিতা এবার চোখ আর খুলে রাখতে পারছে না । মনে মনে বলছে, “কি হচ্ছে আমার সাথে! কি হচ্ছে! ক……হচ্ছে……” ঘুমিয়ে গেলো পুষ্পিতা । গোসল সেরে বেড়িয়ে আরশি দেখলো, মা ঘুমিয়ে গেছে । গামছা দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বলল, “আজব! একটু আগেই মা বলল ঘুমোতে যাবে কেনো, আর এখন ঘুমিয়েই পড়েছে! যাই হোক, আজকে বেশি কাজ করেছে মনে হয় ।” বলে আরশি আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল আঁচড়াতে লাগলো । এমন সময় আয়নার আরশি একটা কৌটোর প্রতিফলন দেখতে পেলো, যা টেবিলের ওপর রাখা । আরশি আয়না থেকে চোখ সরিয়ে সেই কৌটোর দিকে তাকালো । কাছে এগিয়ে এসে হাতে নিয়ে দেখলো এটা ঘুমের ওষুধের কৌটো । আরশি চমকে গেলো । মা আবার এটা খেয়ে আত্মহত্যা করতে যায় নি তো! আরশি মা কে ডাকতে লাগলো, “মা! ও মা! ওঠো! মা! ওমা!” কিন্তু কোন কথা বলল না পুষ্পিতা । স্বাভাবিকভাবে ঘুমোলে কেউ কখনো এতো ডাকার পরও শুয়ে থাকতে পারে না ।
এদিকে লুনা এসেছে কুলসুমের রুমে । হাতে মোবাইল নিয়ে হাসতে হাসতে রুমে ঢুকল । তারপর বলল, “এই এই! তুমি শাবানার ইস্টোরিডা দেখছো!” কুলসুম বলল, “হ্যাঁ! দেখেছি! ছি ছি ছি! এভাবে কেউ ডে দেয় নাকি!” লুনা বলল, “সেইডাই তো! ছিছিছিছি! পিছে জামাই লুঙ্গি পইড়া শুইয়া আছে, আর এক কুত্তার বাচ্চা পালছে, সেইডা ভিডিও করতেছে!” কুলসুম বলল, “আরে, এদের রুচি আছে নাকি! জামাই শাড়ি পড়ে থাকলেও সামনে কুকুরের বাচ্চা রেখে ভিডিও করতো ।” এমন সময় কাদতে কাদতে রুমে এলো আরশি । বলল, “নানি! দাদি! আম্মু ঘুমের ওষুধ খেয়ে সুইসাইড করেছে!!” লুনা আর কুলসুম অবাক হয়ে গেলো । বলে উঠলো, “কি!” লুনা আর কুলসুম আরশির সাথে গেলো পুষ্পিতার রুমে । কুলসুম ডাকলো, “বউমা! ও বউমা! ওঠো! ও বউমা!” লুনাও ডাকলো, “ও পুষ্পিতা! ওঠ মা! তুই এমন ক্যান করলি মা!” কুলসুম তখন আরশিকে বলল, “যা তো! তোর পাশে বাসার আন্টি আর উনার মেয়েকে ডেকে আন!” আরশি গেলো । দরজায় কলিংবেল বাজাতেই দরজা খুলল পপি । পেছনেই ডাইনিং টেবিলের থালা খাবার এনে রাখছিলো উমা, আরশিকে দেখে দাঁড়িয়ে গেলো । পপি আরশিকে কাদতে দেখে জিজ্ঞেস করল, “একি আরশি! কি হয়েছে!” আরশি বলল, “ভাবি! আমার মা ঘুমের ওষুধ খেয়ে সুইসাইড করেছে! মরে নি এখনও, কিন্তু কি করবো কিছু বুঝতে পারছি না! বাসায় নানি আর দাদি ছাড়া কেউ নেই!” পপি ভয়ে চোখ মুখ বড় বড় করে বলে উঠলো, “কি!” তারপর, “চলো দেখি!’ বলে আরশির সাথে গেলো রুমে । উমা-ও এলো সাথে । পপি যেহেতু মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি বিষয়ে পড়াশোনা করেছে, তাই এ ব্যাপারে ওর ভালো ধারণা আছে । উমা এসে কুলসুম আর লুনাকে শান্তনা দিতে লাগলো, “সব ঠিক হয়ে যাবে! চিন্তা করবেন না!” কুলসুম কাদতে কাদতে বলল, “একটু আগেই কি সুস্থ ছিলো বউমা! আমার কাছে আবদার করে শুটকি ভুনা খেলো, আর কি থেকে কি হয় গেলো!” পপি ওষুধের কৌটোটা দেখে বলল, “এতে মৃত্যুঝুঁকি নেই! কিন্তু শরীর অনেক দুর্বল করে ফেলবে! আমি আসছি!” বলে পপি নিজের বাসায় এসে আবার পুষ্পিতার রুমে এলো । সার্জিক্যাল গ্লাভস এনে সাথে করে । সেটা হাতে পড়তে পড়তে পপি আরশিকে বলল, “যাও তো আরশি! একটা গামলা নিয়ে এসো!” আরশি একটা গামলা নিয়ে এলো । পপি পুষ্পিতার মুখে হাত ঢুকিয়ে বমি করালো । পেটের সব খাবার বেড়িয়ে গেলো পুষ্পিতার । তবে তৎক্ষণাৎ ঘুম ভাঙল না ।

আগামী পর্বেঃ
পপি বলল, “আন্টিকে এখনই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিৎ! ভালো ডাক্তারের সাজেশন পেলে আন্টির দুর্বলতা কাটতে পারে!” গালিব পুষ্পিতাকে কোলে তুলে নিচে নামলো । অ্যাম্বুলেন্স কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে । পুষ্পিতা অল্প খোলা চোখে সব দেখছে আর জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে । এমন সময় বিল্ডিং-এর সামনে রাস্তায় এক লোক হেটে যাবার সময় বলে উঠলো, “আরে! এটা তো সেই মহিলা!” অনিক জিজ্ঞেস করল, “আপনি কি এনাকে চেনেন?” লোকটা বলল, “হ্যাঁ, উনিই তো সেদিন আমার দোকান থেকে এক কৌটো ঘুমের ওষুধ নিয়ে গেলো!”
×
বাবা(পর্ব-৬১)

তবে তৎক্ষণাৎ ঘুম ভাঙল না । আরশি জিজ্ঞেস করলো, “আমার মা ঠিক হয়ে যাবে তো?” পপি আরশির মাথায় হাত রেখে “নিশ্চয়ই হবে” বলে শান্তনা দিয়ে বলল, “আমি আমার একজন ডক্টর স্যার এর সাথে কথা বলে আসছি!” বলে মোবাইলে কাউকে কল করতে করতে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো । ইতিমধ্যে নামাজ শেষে সবাই এলো বাসার । পপি কল করেছিলো, তবে সবাইকে দেখে কল কাটলো । পপিকে দেখে সবাই অবাক । অনিক কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো, “একি, তুমি এখানে?” পপি বলল, “তোমার মা ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন ।” গালিব ভয় পেয়ে চেচিয়ে উঠলো, “কি!” তারপর গেলো পপির রুমে । একে একে বাকিরাও । সবাই ডাকলো পপিকে । পপি সারা দেয় না, তবে হালকা । অনেকক্ষণ পর পপির জ্ঞান ফেরে । তবে পুরোপুরি না । চোখের পাতা খানিকটু খোলা, হালকা গোঙানির আওয়াজ । অনিক আরশিকে জিজ্ঞেস করল, “ডাক্তার ডেকেছিস?” আরশি বলল, “আমি তো জানি না কি করবো, তাই পপি আপু আর আন্টিকে নিয়ে এলাম, পপি আপু একটু দেখলেন, এখন উনি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে গেছেন ।” লুনা ঘুমের ওষুধের কৌটোটা সকলকে দেখালো । বলল, “এই যে, এইডা, এই ওষুধ খাইছে আমার মাইয়া!” অনিক ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল, “আরে! এটা তো সেই ওষুধটা, যেটা নানা আমার রুম থেকে নিয়ে গেলেন! কিন্তু এটা আমার টেবিলে কি করে এলো আমি নিজেও জানি না!” একটু পর পপি এলো রুমে । পপি বলল, “আন্টিকে এখনই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিৎ! ভালো ডাক্তারের সাজেশন পেলে আন্টির দুর্বলতা কাটতে পারে!” গালিব পুষ্পিতাকে কোলে তুলে নিচে নামলো । অ্যাম্বুলেন্স কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে । পুষ্পিতা অল্প খোলা চোখে সব দেখছে আর জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে । এমন সময় বিল্ডিং-এর সামনে রাস্তায় এক লোক হেটে যাবার সময় বলে উঠলো, “আরে! এটা তো সেই মহিলা!” অনিক জিজ্ঞেস করল, “আপনি কি এনাকে চেনেন?” লোকটা বলল, “হ্যাঁ, উনিই তো সেদিন আমার দোকান থেকে এক কৌটো ঘুমের ওষুধ নিয়ে গেলো!” গালিব আর কিছু বলল না । ময়না এলো একটু পর । এসে অভিনয় করা শুরু করলো । কান্নাকাটি করে পুষ্পিতার বুকের ওপর মাথা রেখে বলতে লাগলো, “ওরে আল্লাহ! এটা কি হলো! আল্লাহ! তুমি আমার ভাবি! আমার বোনটারে ঠিক কইরা দাও আল্লাহ!” সুযোগ বুঝে পুষ্পিতার কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল, “ভাবি! সেই এক্টিং হচ্ছে ভাবি! মনে হচ্ছে আপনি সত্যি সত্যি অসুস্থ!” গালিব ময়নাকে বলল, “ভাবি ভয়ের কিছু নাই, টেনশন কইরেন না, আর দুয়া কইরেন!” ময়না বলল, “হ্যাঁ তা তো অবশ্যই, তা তো অবশ্যই । দুয়া তো সবসময় করি ভাই!” একটু পর অ্যাম্বুলেন্স এসে হাজির হলো পুষ্পিতা তোলা হলো অ্যাম্বুলেন্সে । অ্যাম্বুলেন্সে উঠলো পপি আর অর্ক । গালিব অনিককে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে রওনা হলো আর আরশিকে বলল দাদা দাদি নানা নানিকে দেখে রাখতে ।
“কিরে? কি হয়েছে?” পাঞ্জাবি পাল্টাতে পাল্টাতে রাফিদকে জিজ্ঞেস করলো আকবর । রাফিদ বলল, “অর্কর মা নাকি ঘুমের ওষুধ খেয়ে সুইসাইডের চেষ্টা করেছে ।“ আকবর হালকা হেসে বলল, “ধুর, ওই মহিলা এসব কাজ করার মানুষই না । আমারে ভয় পায়! আর মৃত্যুরে ভয় পাবে না, এটা অসম্ভব! কেউ মনে হয় উনাকে ইচ্ছে করে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে ।” রাফিদ বলল, “কে রাখতে যাবে বাবা? আন্টির রুমেই তো ঘুমের ওষুধের কৌটো পাওয়া গেছে!” কথা শুনে প্রচণ্ড চমকে গেলো আকবর আলি । বলে উঠলো, “কি!”
হাসপাতালে ওয়ার্ডে স্যালাইন দিয়ে রাখা হল পুষ্পিতাকে । সাথে ডাক্তার আরও কিছু ওষুধ দিয়ে গেছে, বলেছে জ্ঞান ফিরলে হালকা কিছু খাওয়ানোর পর ওষুধগুলো খাওয়াতে । গালিব পপিকে বলল, “মা, তুমি যাও । বাসায় চলে যাও । খাওয়া দাওয়া না করে তুমি বসে আছো । তোমাকে অনেক কষ্ট দিচ্ছি আমরা!” পপি বলল, “ছি ছি আঙ্কেল! কি যে বলেন না! কষ্ট হতে যাবে কেনো? আর কিছুদিন পর তো আমি আপনাদের পরিবারেরই একজন হয়ে যাবো । পরিবারের জন্য কিছু করা মোটেও কষ্টের না । আর আমি মায়ের ঠিকমতো জ্ঞান ফেরা না পর্যন্ত যাচ্ছি না ।” গালিব একটা হতাশার শ্বাস ফেলে বলল, “ভেবেছিলাম আজকে ছুটি আছে, সবাইকে নিয়ে বিয়ের কেনাকাটা করতে যাবো । কিন্তু তা আর হলো কোথায়! কখন যে কি বিপদ আসে! আল্লাহ! সব যেনো ঠিকঠাক হয়ে যায়!” অনিক পপিকে বলল, “তুমি যাবে না ভালো কথা, কিন্তু খাওয়া দাওয়া করবে না?” পপি বলল, “পড়ে করবো ।” গালিব বলল, “না! না! তোমরা না খেয়ে থেকো না! শরীর খারাপ করবে!” তারপর পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে ওদের হাতে দিয়ে বলল, “যাও, তোমরা তিনজন যেয়ে ক্যান্টিন থেকে কিছু খেয়ে আসো ।” অর্ক জিজ্ঞেস করলো, “তুমি খাবে না বাবা?” গালিব বলল, “না, এখন না । পড়ে খাবো ।” অনিক বলল, “মায়ের জ্ঞান ফিরলে, তাই তো?” গালিব কিছু বলল না । হয়তো এটাই সত্যি ।

আগামী পর্বেঃ
জ্ঞান ফিরতেই পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “আমি……আমি ঘুমের……ও…ওশুধ খাই নি!” গালিব বলল, “আচ্ছা! এগুলো এখন বাদ দাও! এগুলো নিয়ে পড়ে কথা বলবো ।” পুষ্পিতা তাও বলতে চায়, জোড় করেই বলতে চায়, “খাইনি আমি! ও…ই কৌটো আ…আমার রুমে এলো কি করে?” অনিক বলল, “নানা এনে রেখেছে, আমার রুমে ছিলো, তার আগে কোথায় ছিলো, জানি না ।” পুষ্পিতা মনে মনে আফসোস করে বলল, “ধ্যাত! একে আমি এরকম অজ্ঞান হলাম কি করে তা বুঝতে পারছি না! তারওপর যখন হয়েই গেছে ঘুমের ওষুধের প্রভাবে তখন আমার প্ল্যানটা সাকসেসফুল করার একটা মোক্ষম সুযোগও মিস করলাম!”
×
বাবা(পর্ব-৬২)

হয়তো এটাই সত্যি ।
বিকেলের দিকে জ্ঞান ভালো মতো ফিরলো পুষ্পিতার । অর্ক বাসায় চলে গেছে আর আরশি এসেছে । পপি, অনিক আর গালিব তো আছেই । জ্ঞান ফিরতেই পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “আমি……আমি ঘুমের……ও…ওশুধ খাই নি!” গালিব বলল, “আচ্ছা! এগুলো এখন বাদ দাও! এগুলো নিয়ে পড়ে কথা বলবো ।” পুষ্পিতা তাও বলতে চায়, জোড় করেই বলতে চায়, “খাইনি আমি! ও…ই কৌটো আ…আমার রুমে এলো কি করে?” অনিক বলল, “নানা এনে রেখেছে, আমার রুমে ছিলো, তার আগে কোথায় ছিলো, জানি না ।” পুষ্পিতা মনে মনে আফসোস করে বলল, “ধ্যাত! একে আমি এরকম অজ্ঞান হলাম কি করে তা বুঝতে পারছি না! তারওপর যখন হয়েই গেছে ঘুমের ওষুধের প্রভাবে তখন আমার প্ল্যানটা সাকসেসফুল করার একটা মোক্ষম সুযোগও মিস করলাম!” গালিব বলল, “কি ভাবছো তুমি?” পুষ্পিতা কিছু বলল না । গালিব বলল, “রেস্ট নাও এখন, কাল সকালে আমরা বাসায় যাবো ।”
এদিকে উমার কাছে গিয়ে রাফিদ জিজ্ঞেস করলো, “মা, আজ কি বাবা কিছু করেছে?” উমা জিজ্ঞেস করলো, “কিছু করেছে মানে?” রাফিদ বলল, “না, বাবাকে তো খুব ভালো করেই চিনি, পাশের বাসার আন্টির এই অবস্থার জন্য বাবার হাত থাকতে পারে আমার ধারণা ।” উমা রাফিদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “তোর কেনো এমন মনে হয়?” রাফিদ বলল, “বাবা আমাকে জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে । সবটা শুনে শুরুতে হাসলো, শুধু তাই না, নিজে থেকেই আবার বলল, আন্টিকে কেউ খুন করতেও তো পারে । পরে যখন আমি বললাম, ঘুমের ওষুধের কৌটো আন্টির ঘরেই পাওয়া গেছে, তখন বাবার এতোটা অবাক হল, যেন দেখে মনে হলো আন্টির ঘরে ঘুমের ওষুধের কৌটো থাকার কথা না যা বাবা জানে ।” উমা কিছুক্ষণ ভাবলো । তারপর জিজ্ঞেস করলো, “তোর বাবা তো রুমেই আছে, না?”
সন্ধ্যা হয়ে গেছে । গালিব গেছে মাগরিবের নামাজ পড়তে, অনিক গেছে পপি আর আরশিকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসতে । এদিকে ময়না ভাবি এসে পুষ্পিতার সাথে দেখা করতে । এখন পুষ্পিতাকে কেবিনে আনা হয়েছে । রুমে পুষ্পিতা আর ময়না একা । পুষ্পিতা বলল, “ভাবি! আমি বুঝতে পারলাম না! ঘুমের ওষুধের কৌটো কি করে আমার রুমে এলো! তার সাথে আমিই বা কেনো ঘুমিয়ে গেলাম!” ময়না বলল, “ওহহো! আমি তো ভাবলাম আপনি অভিনয় করছেন! আল্লাহ! তেমন ক্ষতি যে হয় নি, সেটাই অনেক!” পুষ্পিতা বলল, “হয়ে যেতো! মরে যেতাম! তাও এই ফালতু সংসারে আমি আর থাকতাম না! যত্তসব!” ময়না জানতে চাইলো, “আপনার কি কাউকে সন্দেহ হয় ভাবি?” পুষ্পিতা বলল, “না না, আমার বাসায় একমাত্র আমিই আছি যে এসব করার চিন্তাভাবনা করি ।”
“তাহলে বাসার বাইরের কেউ, যে এসব করতে পছন্দ করলেও আপনাকে পছন্দ করে না?” জানতে চাইলো ময়না ।
পুষ্পিতা কিছুক্ষণ ভাবলো । তারপর ওর খেয়াল হলো, ও যখন খাচ্ছিলো, তখন আকবর আলি ওর পেছন থেকে সামনের দিকে এসেছিলো । আকবর রান্নাঘরে যাবার কথা বললেও ওদের রুমের দিকে যে যায় নি তা কে জানে? যতো যাই হোক, আকবর আলি যে খুব সৎ, এসব কাজ করার মতো মানুষ সে না বা সে যে পুষ্পিতাকে খুব একটা পছন্দ করে, এগুলোর কোনটাই তো না । তাহলে কি আকবর আলিই দায়ি?
“বলোতো তুমি কি করেছো?” আকবর আলির ঘরে এসে বলল উমা । আকবর আলি চেহারায় একটা নিষ্পাপ ভাব আনার চেষ্টা করে বলল, “আমি! আমি কি করতে যাবো?” উমা বলল, “ছেলের কাছ থেকে যা শুনেছি, আর ডালের ডিব্বায় ডালের ভিন্নতা সবটাই কিন্তু সন্দেহজনক । বলো কি করেছো তুমি? তুমি ওই বাড়ি ডাল আনতেই বা গিয়েছিলে কেনো?” আকবর আলি এবার রেগে গিয়ে বলল, “এই! আমি কিন্তু তোর স্বামী! জানিস না! স্বামীকে সম্মান দিয়ে কথা বলতে হয়? মুখ নামিয়ে কথা বল!” উমা বলল, “তুই মুখ নামিয়ে কথা বল! আর স্বামীকে সম্মান? সেটা কেবল গালিব ভাইয়ের মতো স্বামীদের করা যায়, গালিব ভাইয়ের মতো যেসব স্বামীর ঘরে মেয়েরা ভালো থাকে, সেখানেই মেয়েরা স্বামীদের সম্মান দেয় । আর তোর মতো স্বামীদের জন্য মেয়েদের কথাই যথেষ্ট । ভাবিস না ডিভোর্স নিতে আমার হাত কাঁপবে! এখন সে যুগ নেই যে ডিভোর্স নিলে মেয়েদের মানুষ অপমান করে! এখন আরও মেয়েরা ডিভোর্স নেয়া মানে সেই স্বামী নিশ্চয় মেয়ের সাথে অপব্যাবহার করেছে! তাই ভালো হয়ে যা!” বলে রুম থেকে চলে গেলো উমা । আকবর আলি প্রচণ্ড রাগে টেবিলের ওপর থাকা একটা শোপিস আছাড় মারলো । তারপর মনে মনে বলল, “আগে বিয়েটা ভাঙ্গি! তারপর এই উমার একটা ব্যাবস্থা করতে হবে! এই উমা আর রাফিদের বেশ পাখনা গজিয়েছে! এগুলো একটু ছেঁটে ফেলতে হবে!”

আগামী পর্বেঃ
পাশের বাসার রাফিদ ব্যাগ কাধে কোথায় যেন যাবার জন্য বেরোল । অনিক জিজ্ঞেস করলো, “কি খবর রাফিদ! “কোথাও যাচ্ছো?” রাফিদ বলল, “হ্যাঁ ভাই, একটা কাজ পেয়েছি! সেটা করতেই যাচ্ছি ।”
……………………………..
অর্ক গেলো রেডিও মাস্তির হেড, ইনান এর কাছে । দরজার কাছে এসে বলল, “আসবো স্যার?” ইনান হালকা হেসে বলল, “আরে এসো এসো!” অর্ক জিজ্ঞেস করলো, “রাসেল ভাই আসলেন না যে?” ইনান বলল, “রাসেল তো আসতে চেয়েছিলো, কিন্তু আরেকটা কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে । তাই আর আসতে পারলো না ।”
×
বাবা(পর্ব-৬৩)

সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা । রেডি হচ্ছে অর্ক । আজ ওর রেডিও মাস্তিতে প্যারা নাই চিল প্রোগ্রামে প্রথম দিন । তাই তাড়াতাড়িই যাবে । যাবার আগে হাসপাতালে মা বাবার সাথে দেখা করে যাবে । ড্রইং রুমে অর্ককে বিদায় জানাতে বসে আছে অর্কর দাদা দাদি, নানা নানি, অনিক আর আরশি । অর্ক গেলো । দাদা শামসুকে জড়িয়ে ধরে দোয়া চাইলো । শামসু বলল, “যা বাবা! অনেক বড় হ!” দাদি কুলসুমকে জড়িয়ে ধরে দোয়া যাইলো । কুলসুম বলল, “এই পথচলা তোর বীজ থেকে চারা হবার মতো, ইনশাআল্লাহ একদিন এই গাছ থেকে আমরা ইয়া বড় বড় ফল হতেও দেখবো!” অর্ক নানা মিজানকে জড়িয়ে ধরে দোয়া চাইলো । মিজান বলল, “যা বাপ! ম্যালা বড় হ! হকি খেইলা কাপ নিয়া আয়!” লুনা ভ্রু-কুঁচকে বলল, “ও মাই মাই গো! হকি খেলতে কই যাইতাছে!” মিজান বলল, “ও-ই তো সেদিন কইলো!” অনিক হেসে বলল, “নানা! ওটা হকি না! জকি! রেডিও জকি ।” মিজান বলল, “ও আইচ্ছা আইচ্ছা!” অর্ক নানি লুনাকেও জড়িয়ে ধরে দোয়া চাইলো । লুনা অর্কর মাথায় হাত দিয়ে আদর করতে করতে বলল, “আমাগো মুখ উজ্জ্বল কর! আর আমাগোও পারলে টিভিত নিয়া যাইস!” সবাই হাসল কথাটা শুনে । অর্ক অনিককে জড়িয়ে ধরে বলল, “ভাইয়া! আসি ।” অনিক বলল, “যা, তোর শো হিট হবে শিওর থাক!” অর্ক আরশির কাছে যেয়ে বলল, “গেলাম, তুই একটু আমার শো এর অনলাইন লাইভ লিঙ্ক শেয়ার করে তোর ফ্রেন্ডদের শুনতে বলিস ।” আরশি বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ! তা অনেক আগে করা হয়ে গেছে । তুমি এখন যাও!” অর্ক বেড়িয়ে গেলো । সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেলো ও । ঠিক সেই সময় পাশের বাসার রাফিদ ব্যাগ কাধে কোথায় যেন যাবার জন্য বেরোল । দরজায় ওকে বিদায় জানাতে দাঁড়িয়ে আছে উমা । অনিক রাফিদকে দেখে জিজ্ঞেস করলো, “কি খবর রাফিদ!” রাফিদ জুতা পড়তে পড়তে বলল, “এইতো ভাই ভালো । আপনি ভালো আছেন?” অনিক বলল, “এইতো, আলহামদুলিল্লাহ ভালো । কোথাও যাচ্ছো?” রাফিদ বলল, “হ্যাঁ ভাই, একটা কাজ পেয়েছি! সেটা করতেই যাচ্ছি ।” অনিক বলল, “যাক, আলহামদুলিল্লাহ । আরেকটু আগে বেরোলে অর্কর সাথেই যেতে পারতে!” রাফিদ হালকা আফসোস করে বলল, “ইশ! আমিও জানলে বেরোতাম ।” তারপর উমাকে, “গেলাম মা!” বলে নেমে গেলো রাফিদ ।
“মা!” বলে হাসপাতালে মাকে জড়িয়ে ধরলো অর্ক । তারপর বলল, “দোয়া কোরো মা!” পুষ্পিতা যে ছেলেকে নিয়ে খুব একটা ভাবছে না তা ওর চোখমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে । তবুও এক প্রকার জোড় করেই বলল, “হ্যাঁ যা!” অর্ক বাবাকেও জড়িয়ে ধরে বলল, “বাবা! তুমি আমাকে সবকিছুতে সাপোর্ট দিয়েছো! কোনদিনও তোমাদের ইচ্ছে আমার ওপর চাপাও নি তোমরা, আমি যা হতে চেয়েছিলাম, তোমরা আমাকে তাই হতে দিয়েছো । আজ আমি আমার সেই ইচ্ছে পূরণ করতে যাচ্ছি । এখান থেকে নিজেকে একটা ভালো পজিশনে নিয়ে যেতে বাবা! দো………।” বলার আগেই গালিব বলল, “সবসময় আছে বাবা! আলাদা করে চাইতে হবে না! যা!”অর্ক বেড়িয়ে গেলো । যাবার সময় ময়নাকেও বলে গেলো, “আন্টি আসি!” ময়না বলল, “তোমরা তো আমাদেরই ছেলে! তোমরা ভালো কোন পজিশনে গেলে আমরাই তো খুশী হবো, তাই না?” ৮টা বাজার আধঘণ্টা আগেই এসে পৌঁছল অর্ক । ভাবল রাসেল ভাই থাকবে ওর সাথে, কিন্তু না । রাসেল ছিলো না । অর্ক গেলো রেডিও মাস্তির হেড, ইনান এর কাছে । দরজার কাছে এসে বলল, “আসবো স্যার?” ইনান হালকা হেসে বলল, “আরে এসো এসো! এখনই স্যার বলা শুরু! যাক, ভালো একজন জকি পেলাম!” অর্ক সামনে এসে দাড়ালো । ইনান বলল, “তারপর, প্রিপারেশন কেমন?” অর্ক বলল, “আলহামদুলিল্লাহ ভালো স্যার!” ইনান বলল, “গুড! তোমার স্টুডিও রেডি! আশা করি রাসেল তোমাকে সব বুঝিয়ে দিয়েছে কি করতে হবে?” অর্ক বলল, “জি স্যার । উনি আমাকে সব বুঝিয়ে দিয়েছেন ।” ইনান বলল, “গুড!” তারপর কাকে যেনো কল করে বলল, ”হ্যাঁ লিমন, একটু এসো আমার রুমে ।” অর্ক জিজ্ঞেস করলো, “রাসেল ভাই আসলেন না যে?” ইনান বলল, “রাসেল তো আসতে চেয়েছিলো, কিন্তু আরেকটা কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে । তাই আর আসতে পারলো না ।” অর্ক হালকা হেসে বলল, “ও আচ্ছা!” একটু পর লিমন নামের লোকটা ঢুকল । জিজ্ঞেস করলো, “জি স্যার! বলেন ।” ইনান বলল, “যাও, ওকে স্টুডিওটা দেখিয়ে দিয়ে আসো আর বুঝিয়ে দিয়ে এসো ।” লিমন, “আচ্ছা” বলে অর্ককে নিয়ে গেলো । যাবার সময় ইনান বলল, “অল দা বেস্ট অর্ক!”
স্টুডিওতে অর্ককে সব বুঝিয়ে দিলো লিমন । তারপর ৮টা বাজতে যখন আর মাত্র দু মিনিট বাকি, তখন লিমন বেড়িয়ে গেলো । কানে হেডফোন আর সামনে ক্যামেরা নিয়ে রেডি হলো অর্ক । এই শো রেডিওর পাশাপাশি ফেসবুক আর ইউটিউব-এও সম্প্রচারিত হবে । ৮টা বাজতেই একটা বাটন চাপতে বলা হয়েছিলো অর্ককে । অর্ক সেটা করলো । স্টুডিওর বাইরে জলে উঠলো অন এয়ার লাইট । আর অর্ক বলল, “হ্যালো বাংলাদেশ! আসসালামু আলাইকুম! শুভসন্ধ্যা! আশা করি সকলেই ভালো আছেন! আর যারা ভালো নেই তারাও আশা করি আমাদের এই শো শুনে ভালো হয়ে যাবেন! সকলকে স্বাগতম জানাই আমাদের এই প্যারা নাই চিল শো এর প্রথম পর্বে! এখানে আমরা আপনাদের কষ্টের কথ শুনবো আর তারপর যেভাবে পারি আপনার মনটা ভালো চেষ্টা করবো! সো লাইফে যাই হয়ে যাক প্যারা নাই, চিল!” শুরু হলো অর্কর রেডিও প্রোগ্রাম, প্যারা নাই চিল ।

আগামী পর্বেঃ
অর্ক একটা কল ধরে বলল, “হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম, কে বলছেন?” ফোনের ওপাশ থেকে কোন আওয়াজ এলো না । অর্ক আবার বলল, “কে বলছেন?” এবারেও ওপাশ থেকে আওয়াজ নেই । অর্ক বলল, “আপনি কি আমাকে শুনতে পাচ্ছেন না? আমি কিন্তু দেখতে পাচ্ছি আপনি এখনও লাইনে আছেন ।” একটু পর ফোনের ওপাশ থেকে কান্নামাখা স্বরে একটা ছেলে বলল, “জি, পাচ্ছি! কিন্তু আপনি বুঝতে পারছেন, আমার এখন যা অবস্থা, গলা দিয়ে আওয়াজ সহজে বেরোচ্ছে না ভাই!”
×
বাবা(পর্ব-৬৪)
(স্পেশাল এপিসোড)

“ওকে! এখন তাহলে আমরা পরের কলটি নেবো!” বলে অর্ক একটা কল ধরে বলল, “হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম, কে বলছেন?” ফোনের ওপাশ থেকে কোন আওয়াজ এলো না । অর্ক আবার বলল, “কে বলছেন?” এবারেও ওপাশ থেকে আওয়াজ নেই । অর্ক বলল, “আপনি কি আমাকে শুনতে পাচ্ছেন না? আমি কিন্তু দেখতে পাচ্ছি আপনি এখনও লাইনে আছেন ।” একটু পর ফোনের ওপাশ থেকে কান্নামাখা স্বরে একটা ছেলে বলল, “জি, পাচ্ছি! কিন্তু আপনি বুঝতে পারছেন, আমার এখন যা অবস্থা, গলা দিয়ে আওয়াজ সহজে বেরোচ্ছে না ভাই!” অর্ক বলল, “শুরুতেই আমি দুঃখিত, আপনি যে কারণেই দুঃখে আছেন, আপনি এখন মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন । তবে আপনি যেহেতু আমাদের কল করেছেন, নিশ্চয়ই সেই কারণটা আমাদের জানাতেই কল করেছেন, তাহলে বলুন আপনার কথা, আমি আমার দিক থেকে যতোটা পারি করবো, আর তাছাড়াও আপনি তো জানেন, আপনার কথা শুনছে পুরো বাংলাদেশ, অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে বিদেশ থেকেও অনেকে শুনছেন আপনাকে, আপনার দুঃখের কথা এতোগুলো মানুষের সাথে শেয়ার করলে আপনার দুঃখ অনেকটা কমে যাবে । প্রাণ খুলে বলুন, আপনি কি বলতে চান!” লোকটা বলল, “আমি ফাহাদ । বয়স তেইশ । আমি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র । আমার মা একজন ফাইটার । ফাইটার কেনো বলছি, ছোটো বেলায় আমার বাবা মারা যান । তখন আমার পরিবারে আমার আর আমার ছোট বোনের দায়িত্ব নেন আমার মা । তিনি ছিলেন অশিক্ষিত, আহামরি তেমন কিছু করার ক্ষমতা ছিলো না তার । এলাকার এক হোস্টেলে থালাবাসন মাজার কাজ নেন, পরবর্তীতে বাড়ি বাড়ি যেয়ে কাজ করেন । সেই টাকায় আমাদের পড়ালেখা চালিয়ে আমাদের মানুষ করেন । তারই এই ফাইটের ফলে আজ আমি ঢাকা ভার্সিটির ছাত্র, আর আমার বোনও জেএসসি তে ৭৩ মেরিট পজিশনে জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্রী ।” অর্ক বলল, “বাহ! আপনার এই গল্প আমাদের অনেক লিসেনারদের জীবনে অনুপ্রেরণার জাগরণ ঘটাবে । কিন্তু এতো সুখ আপনাদের, হঠাৎ কি এমন হলো যে আপনি এতো দুঃখে আছেন, সেটাই জানতে চাই এবার ।” ফাহাদ ছেলেটা বলল, “ঢাকা ভার্সিটি এসে আমি সব পয়সাওয়ালা ছেলেমেয়েদের সাথে মেশা শুরু করি । ভাবতে থাকি, নিজের ক্লাস আর তাদের ক্লাস, কতটা তফাৎ! ভাবি, নিজেকে তাদের ক্লাসের পর্যায়ে নিয়ে যাবো । কিন্তু হায় আমার ভাগ্য! এই পরিবর্তন আমাকে এতোটা পরিবর্তন করবে আমি ভাবিনি!” অর্ক জিজ্ঞেস করলো, “কি সেই পরিবর্তন?” ফাহাদ বলল, “ভার্সিটিতে এক মেয়ের সাথে পরিচয় হয় আমার । তার নাম লিমা । বড়লোক বাড়ির মেয়ে । ওর কাছে আমি নিজের মা বাবার পরিচয় দিতাম না । এমনকি মা একবার ভার্সিটি এসেছিলো, আমি কোনোরকমে মাকে তাড়াতাড়ি ভার্সিটি থেকে বিদায় করে দিয়েছিলাম । লিমা দেখেছিলো মাকে, আমি লিমাকে বলেছিলাম ইনি আমাদের মেসের কাজের বুয়া ।” বলে আবার কান্নাকাটি করে উঠলো ফাহাদ । অর্ক এই মুহূর্তে ঠিক কি বলবে তা বুঝে উঠতে পারলো না । তাই নীরব রইলো । ফাহাদ নিজেকে সামলে বলল, “লিমার সাথে সেই প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টার থেকে আমার প্রেম । আমি টিউশনি করে টাকা পেতাম, আমার মা-ও আমাকে টাকা পাঠাতো । কিন্তু আমি মা-কে টাকা পাঠাতাম না । সব টাকার বেশিরভাগটাই আমি লিমার জন্য খরচ করতাম । আরেকটা বড় অংশ নিজের নিচু ক্লাসটা ঢেকে ফেলার জন্য খরচ করতাম ।” অর্ক তখন বলল, “এখানে আমি একটু আপনাকে থামাতে চাই, উচু ক্লাস, নিচু ক্লাস বলে কোন কিছু হয় না, মানুষ মানুষই, হোক সে গরীব, হোক সে বড়োলোক, হোক সে কালো, হোক সে ফর্সা । তবে হ্যাঁ, যে এরকম গরীব মানুষদের নিচু ক্লাস বলে, প্রকৃত অর্থে সে-ই নিচু ক্লাসের মানুষ । তবে যারা নিজেকে গরীব বলতে লজ্জা পায়, এতে লজ্জার কিছু নেই, মানুষ মাত্রই গরীব । কেউ মৃত্যুর পর কোটিপতি থাকে না, সবাই তখন লাশ । হ্যাঁ, এবার আপনি বলা শুরু করুন ।” ফাহাদ শুরু করলো । “গতকাল মা এসেছিলো । ঠিক সে সময় লিমা আসে আমার কাছে । একজন বুয়া কেনো আমার রুমে এ কথা বলে লিমা । কথা শুনে মা অবাক হয়ে যায় যায় । মা-ও বলে ওঠে, নিজের মাকে তুই বুয়া বলেছিস! লিমা যখন জানতে পারে উনি আমার মা, তখন লিমা আমার সাথে ব্রেকআপ করে । এটা জেনে আমি গরীব আর ওকে মিথ্যে বলেছি । সেই সাথে মা-ও আমার ওপর রাগ করে বাড়ি ফিরে যায় । আমার ছোটবোন আমাকে অনেক কথা-ও শুনিয়েছে । এখন তাদের কেউ আমার সাথে যোগাযোগ করছে না । লিমা-ও কোন খোঁজ নিচ্ছে না আমার! আমি আজ অসহায়! কি করবো আমি বুঝতে পারছি না! গতকাল থেকে এ পর্যন্ত অনেকবার আমি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছি । কিন্তু পারিনি । মনের কষ্টে রেডিও শুনতে শুনতে আপনাদের শোটা শুনলাম, ভাবলাম শেয়ার করি । যদি আমি কোন সাহায্য পাই!” বলে থামলো ফাহাদ । শুরু থেকেই অনেক কল নিয়েছে অর্ক । প্রায় সবগুলোই সমাধান করতে পেরেছে সে আর একজন সাধারণ মানুষও এটা পারতো । কিন্তু এখন এসে হালকা বিচলিত হলো সে । পারবে তো? এই রেডিও শো শুনছিলো সবাই । আরশি, অনিক, মিজান, লুনা কুলসুম, শামসু এরা একসাথে শুনছিলো শোটা । হাসপাতালে গালিব আর পুষ্পিতা শুনছিল । রেডিওর অন্যান্য কর্মীদের সাথে অর্কর স্টুডিওর পাশেই শোটা শুনছিল ইনান । অর্কর অনেক ফ্রেন্ডরাও শুনছিলো । সবার মনেই একই প্রশ্ন কিভাবে এর সমাধান দেবে অর্ক! সেই সাথে গল্পটা পৌঁছে গেলো সর্বস্তরের মানুষের হৃদয়ের গভীরে । অর্ক একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো । বলল, “সত্যি, ঘটনাটা অনেক হৃদয়বিদারক । তবে প্যারা নাই চিল আপনাকে সমাধান দেবে!” সবাই অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে বসে আছে, কি হতে চলেছে তার জন্য । এর পরের ৩ মিনিট অর্ক যা বলে গেলো, তা যেনো একদম জাদুর মতো ছিলো, অবশ্য সে কথাগুলোর বেশিরভাগই অর্ক শুনেছে ওর বাবা, গালিবের মুখ থেকে । “প্রথমত এখানে আপনার দোষ ছিলো, আপনি একজন ফাইটার মা, যিনি তার প্রায় সবটা দিয়ে লড়াই করে আপনাকে এই পজিশনে নিয়ে এসেছেন তাকে আপনি অনেক কষ্ট দিয়েছেন! তারপর নিজেকে নিচু ক্লাসের বলে লজ্জা পেয়ে আপনি নিজেকে উচু ক্লাসের খোলসে ঢাকতে চেয়েছেন । আপনি অনেক ভুল করেছেন এটা সত্য! কিন্তু আপনি সে ভুলটা বুঝতে পেরেছেন । একটা যন্ত্র নির্মাণে যখন হালকা ভুল হয়, তখন সেটা কাজ করে না, কিন্তু সেটা বুঝতে পেরে ঠিক করে ফেললে সেটা আবার চলতে শুরু করে । তখন ভুলটা আর ভুল মনে হয় না । ভুলটাই কি ছিলো তা মানুষ যন্ত্র চলার সফলতার ভিড়ে ভুলে যায় । তেমনি আপনি ভুল করে ভুল করেছেন, আর এখন সেই ভুল বুঝতে পেরে ঠিক করেছেন । তাই এখনও আপনার কাছে একটা সুযোগ আছে, নিজের ভুলটা শুধরে নেয়ার । আপনি যান! আপনার মায়ের কাছে যেভাবে পারেন! ক্ষমা চান! আল্লাহর কাছেও ক্ষমা চান নিজের কৃতকর্মের জন্য! বুক ফুলিয়ে মানুষের কাছে বলুন আপনার মায়ের গল্প! যা মোটেও কোন গরীবের গল্প না!” ফাহাদ জিজ্ঞেস করলো, “আমার মা আমাকে ক্ষমা করবেন তো?” অর্ক বলল, “দেখুন এই জায়গায় আপনি যদি গার্লফ্রেন্ডের কথা বলতেন, তাহলে আমি একদম শিওর হয়ে বলতাম, না । আর আপনি যেহেতু মায়ের কথা বললেন, ঠিক একই রকমভাবে শিওর হয়ে বললাম, হ্যাঁ! মা কখনো ছেলেমেয়ের ওপর রাগ করে থাকতে পারেন না! হয়তো তিনি এখন মোনাজাতে আল্লাহর কাছে আপনার হিদায়াতের জন্য প্রার্থনা করছেন! মায়ের সংজ্ঞা ভাষায় প্রকাশের ঊর্ধ্বে ।” ফাহাদ বলল, “আমি যাবো মায়ের কাছে!” অর্ক বলল, “এক্ষুনি বেড়িয়ে যান! যতো দ্রুত পারেন চলে যান মায়ের কাছে! ক্ষমা চান! আর নিজেকে এমন একটা ক্লাসে পরিণত করুন, যেন আপনার গার্লফ্রেন্ড আপনাকে নিয়ে ঈর্ষা করে!” ফাহাদ, “আপনাকে অনেক ধন্যবাদ!” বলে কল রেখে দিলো । অর্ক সময় দেখে বলল, “দর্শক, দেখতে দেখতে আমরা শো এর শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি, এখন বিদায় নিতে হবে আমাদের । সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আর মনে রাখুন, লাইফে কোন প্যারা নাই! চিল!” বলে একটা জ্ঞান ছেড়ে ইয়ারফোন খুলল অর্ক । অন এয়ারের লাইট অফ হয়ে গেলো । অর্ক বেড়িয়ে এসে দেখলো রেডিওর সব কর্মীরা দাঁড়িয়ে আছে, ইনানও । সবাই হাততালি দিচ্ছে অর্কর কর্মকাণ্ডকে স্বাগত জানিয়ে ।

আগামী পর্বেঃ
প্রীতি তখন বলল, “সেই বৃহস্পতিবার বলেছিলেন সমাধান কাল বলবেন, কিন্তু পরদিন যে শুক্রবার ছিলো আমার খেয়ালই ছিলো না! আজ শনিবার, এবার তো বলুন গালিব বলল ,”তুমি কি আমার ছেলের বউ হবে?”
…………………………
সাজু বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে । টাটা!” পুষ্পিতাও “বাই!” বলে বারান্দা থেকে বেরোনোর জন্য বারান্দার দরজার খুলতেই দেখলো দরজার কাছে অবাক দৃষ্টিতে দাড়িয়ে আরশি ।
×
বাবা(পর্ব-৬৫)

ইনান এগিয়ে এসে অর্ককে জড়িয়ে ধরলো । বলল, “ভাই! তুমি যে এভাবে লোকটার মন ভালো করে দিতে পারবা আমি তো ভাবতেই পারিনি!” অর্ক বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ ভাই!” উপস্থিত আরও সকলেও অর্কর প্রশংসা করলো ।
আসার পথে লোকাল বাসে অর্কর হুট করে দেখা রাফিদের । একসাথে পাশাপাশি বসলো দুজনে বাসে । অর্কর মুখে হাসি । রাফিদের মুখে তেমন একটা নেই । রাফিদ জিজ্ঞেস করলো, “কিরে? তুই এদিকে?” অর্ক জিজ্ঞেস করল, “তুই-ও তো এইদিকে ব্রো! ব্যাপার কি? হ্যাঁ?” রাফিদ বলল, “তোকে একটা ভালো খবর দিতাম! যদিও এখনও তেমন একটা ভালো না খবরটা আমার জন্য ।” অর্ক জিজ্ঞেস করলো, “কেনো? কি হয়েছে?” রাফিদ বলল, “রাসেল ভাই একটা কাজ দিয়েছিলেন, রেডিও তানপুরাতে, একটা ভুতের গল্প পড়ার শো । কিন্তু আমাদের দেশে এরকম অনেক শো আছে, তাই প্রথম দিনের রেসপন্স তেমন একটা ভালো আসে নি ।” অর্কর মন খারাপ হয়ে গেলো । রাফিদের কাধে হাত রেখে বলল, “ঠিক আছে, টেনশন করিস না, দেখিস, একদিন তুই অনেক পপুলার হয়ে যাবি ।” রাফিদ “হুমম ।” বলে জিজ্ঞেস করলো, “এবার বল, তুই কি করতে এসেছিলি?” অর্ক বলল, “ওই, রাসেল ভাই যে শোতে আমাকে নিয়েছিলেন, তোকে যে বলেছিলাম, ফুডপ্লাস-এ যে ট্রিট দিলাম । ওই শো এর প্রথম দিন ছিলো আজ!” রাফিদ খুশী হল শুনে । বলল, “ওয়াও! দুজনের এভাবে একই দিনে! তোর প্রোগ্রাম কয়টা থেকে কয়টা পর্যন্ত ছিলো?” অর্ক বলল, “আটটা থেকে ১০টা” অর্ক বলল, “আমারও! কি কাকতালীয় ব্যাপার!” অর্ক হাসল বটে, তবে মনে মনে একটা ভয় জন্মালো । কারণ ওর শো পপুলার হলে কেউ তো অর্কর শো শুনবে না! একসাথে দুটো শো শোনাও তো সম্ভব না!
বাসায় আসতেই সকলেই স্বাগত জানালো অর্ককে । সকলের মুখে অর্কর প্রশংসা । লুনা তো বলেই দিলো, “আমাগো জামাইবাবাজির মতো হইছে পোলাডা ।” ভিডিও কলে গালিব আর পুষ্পিতাও প্রশংসা করলো অর্কর ।
সকালের কথা । ফজরের নামাজের আগেই পুষ্পিতাকে বাসায় নিয়ে এলো গালিব । তারপর নামাজ কালাম শেষে রওনা হলো অফিসের দিকে । এদিকে পুষ্পিতা মোবাইল হাতে নিলো নিজের । আরশি এখনও ঘুমোচ্ছে । হাসপাতালে নিজের মোবাইল নিয়ে যাওয়া হয় নি । এখন দেখলো, সাজুর ম্যাসেজ । “আছো?” “পাওয়াই তো যায় না তোমাকে?” “কি হলো?” “শরীর ঠিক আছে তো?” ইত্যাদি ইত্যাদি । পুষ্পিতা দেখলো, সাজু এখনও অনলাইনে । মেসেজ দিলো, “হাসপাতালে ছিলাম, তাই রিপ্লাই দিতে পারিনি!” মেসেজ সেন্ট করতেই সাথে সাথে সিন করলো সাজু । তারপর কল দিলো । কলের আওয়াজে আরশি হালকা নড়ে উঠলো, কিন্তু ঘুম ভেঙ্গে উঠলো না । কলটা তাড়াতাড়ি কেটে দিলো পুষ্পিতা । তারপর চলে গেলো বারান্দায় । কল করলো সাজুকে । “হ্যালো!” “কি ব্যাপার! কি হয়েছিলো তোমার? শরীর খারাপ ছিলো নাকি? কি হয়েছিলো বলো!” অস্থিরতার সাথে জানতে চাইলো সাজু । পুষ্পিতা হালকা হেসে বলল, “আরে! এতো” অস্থির হয়েও না! তেমন কিছু হয় নি ।” সাজু জানতে চাইলো, “তেমন কিছু না মানে! বলো কি হয়েছিলো!” পুষ্পিতা বলল, “ধুর! বাদ দাও । তোমার কি খবর বলো!” সাজু বলল, “তোমাকে ছাড়া কি ভালো থাকা যায়?”
“ভাই! আপনেরে প্রীতি ম্যাম ডাকতেছে!” গালিবের কাছে এসে বলল পিয়ন । গালিব গেলো প্রীতির রুমে । দরজার করে দাড়িয়ে বলল, “আসবো?” প্রীতি বলল, “জি আঙ্কেল! আসেন!” প্রীতির ঠোঁটের কোণে হাসি । আজকের হাসিটা মিথ্যে মনে হচ্ছে না । গালিব যেয়ে চেয়ারে বসলো । জিজ্ঞেস করলো, “কি ব্যাপার? তুমি আজকে এতো খুশী যে?” প্রীতি বলল, “আর বইলেন না আঙ্কেল! গতকাল হুট করে আমার বন্ধু একটা রেডিও প্রোগ্রাম, কি যেন নাম? হ্যাঁ, প্যারা নাই চিল সেটার একটা রেকর্ড পাঠাল । সেখানে ফাহাদ নামের এক ছেলের গল্প বেশ ভাইরাল হয়েছে । ওই ছেলেটারই গল্প শুনে ভালো লাগলো ।” গালিব মুচকি হাসল । কারণ শো এর হোস্ট তো ওরই ছেলে । প্রীতি তখন বলল, “সেই বৃহস্পতিবার বলেছিলেন সমাধান কাল বলবেন, কিন্তু পরদিন যে শুক্রবার ছিলো আমার খেয়ালই ছিলো না! আজ শনিবার, এবার তো বলুন!” গালিব বলল, “এহ হে! আমার একটুও মনে নেই! তোমার জীবনের এই সমাধানটা যার মাধ্যমে করবো ভেবেছিলাম, তাকে বলতেই আমার খেয়াল নেই ।” প্রীতি একটু অবাক হল । ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, “মানে?” গালিব বলল, “আচ্ছা যাই হোক, যাকে বলতে চেয়েছিলাম, সে আমার কথা ফেলবে না আমি জানি, কিন্তু তুমি শুনবে কিনা সেটাই আগে জরুরী ।” প্রীতি জিজ্ঞেস করলো, “কি?” গালিব বলল, “গতকাল তুমি যে প্রোগ্রামের রেকর্ড শুনেছো, সেটার হোস্ট এর নাম জানো?” প্রীতি বলল, “না অল্প রেকর্ড ছিলো তো, সেই অংশে ওই হোস্ট নাম বলে নি । তবে হ্যাঁ, ছেলেটার কথা বলার ধরণ অনেক সুন্দর । আর অনেকটা আপনার মতোই কথা বলে!” গালিব বলল, “তা তো বলবেই, কারণ ও আমারই ছেলে, অর্ক ।” প্রীতি অনেক খুশী হলো কথাটা শুনে । বলল, “তাই! বাহ! আপনার ছেলে তো অনেক ভালো! একদিন অটোগ্রাফ নেবো আপনার ছেলের!” গালিব বলল, “আসল কথায় আসি ।” প্রীতি বলল, “জি আঙ্কেল বলেন!” গালিব বলল ,”তুমি কি আমার ছেলের বউ হবে?” প্রীতির মুখের হাসি চলে গেলো ।
“আচ্ছা! রাখছি এখন!” সাজুকে বলল পুষ্পিতা । সাজু জানতে চাইলো, “আমাদের কবে দেখা হবে?” পুষ্পিতা বলল, “খুব শীঘ্রই! আর তুমি বাসায়ই চলে আসো না?” সাজু জিজ্ঞেস করলো, “কেউ রাগ করবে না তো?” পুষ্পিতা বলল, “আরে না! কে রাগ করবে! একদিন চলে এসো!” সাজু বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে । টাটা!” পুষ্পিতাও “বাই!” বলে বারান্দা থেকে বেরোনোর জন্য বারান্দার দরজার খুলতেই দেখলো দরজার কাছে অবাক দৃষ্টিতে দাড়িয়ে আরশি । এতোক্ষন সে পুষ্পিতার কথা আড়াল থেকে শুনছিলো ।

আগামী পর্বেঃ
পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “তুই কি করছিস এখানে?” আরশি বলল, “তুমি কি করছো তাই বলো, সাজু কে?” পুষ্পিতা চমকে উঠলো । তাহলে আরশি সব শুনেছে! আরশি জিজ্ঞেস করলো, “মা বলো! সাজু কে?” পুষ্পিতা বলল, “কাউকে বলবি না তো?” আরশি বলল, “না, বলো!” পুষ্পিতা বলল, “আমার কলেজ লাইফের বয়ফ্রেন্ড ।”
×
বাবা(পর্ব-৬৬)

“কিন্তু আঙ্কেল, এতে আপনাদের কোন সমস্যা নেই তো?” জিজ্ঞেস করলো প্রীতি । গালিব বলল, “না, কোন সমস্যা নেই । আমি একজন নামাযী মানুষ, তাই আমি বিশ্বাস করি আল্লাহ তোমাকে যেহেতু এই সমস্যাটা দিয়েছেন, নিশ্চয়ই ভালোর জন্যই দিয়েছেন । আর তোমার অবগতির জন্য এটাও বলি, তোমার সাথে আমার ছেলের বিয়ে দিলে অফিসের সবাই আমাকে নিয়ে নানান কুকথা শোনাবে, যে নিজের বসকে নিজের ছেলের বউ বানিয়ে হাত করতে চাইছে । বা অন্য কিছু । তবু আমি এটা অনেক ভেবে চিনতে বলেছি । আর তোমার সিদ্ধান্ত চাইছি ।” প্রীতি একটু চিন্তায় ঢুকে গেলো । গালিব বলল, “এমন কোন কথা যদি তোমার মনে এসে থাকে, যেটা তুমি বলতে একটু অসস্থি বোধ করছো, যে আমি রাগ করতে, তা তুমি নির্ভয়ে বলতে পারো । আমি কিচ্ছু মনে করবো না ।” প্রীতি বলল, “না আঙ্কেল, সেরকম কিছুই না । আমাকে একটু সময় দেবেন ভাবার?” গালিব বলল, “হ্যাঁ অবশ্যই । তুমি তোমার মতো সময় নিয়ে ভেবে আমাকে তোমার সিদ্ধান্ত জানিয়ো । এই উপায় তোমার পছন্দ না হলে অন্য কিছু ভেবে দেখবো না হয় ।” প্রীতি “হুম!” ছাড়া আর কিছু বলল না ।
পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “তুই কি করছিস এখানে?” আরশি বলল, “তুমি কি করছো তাই বলো, সাজু কে?” পুষ্পিতা চমকে উঠলো । তাহলে আরশি সব শুনেছে! আরশি জিজ্ঞেস করলো, “মা বলো! সাজু কে?” পুষ্পিতা বলল, “কাউকে বলবি না তো?” আরশি বলল, “না, বলো!” পুষ্পিতা বলল, “আমার কলেজ লাইফের বয়ফ্রেন্ড ।” আরশি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, “তার সাথে এখন কি তোমার?” পুষ্পিতা রেগে গিয়ে বলল, “শোন! তুই আমার পেটে জন্মেছিস! আমি তোর পেটে জন্মাইনি, কথাটা মাথায় রাখিস! তাই বেশি বারাবারি করিস না!” আরশি বলল, “মা, তুমি কি এখনও সাজু ভালোবাসো?” এই প্রশ্নের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না পুষ্পিতা । মেয়ের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো । আরশি বলল, “বলো!” পুষ্পিতা বলল, “না না, এসব কি বলছিস!” আরশি বলল, “তোমাদের দুজনের প্রতি দুজনের ভাব আদানের প্রক্রিয়াতেই বোঝা যায়, তোমরা একে অপরকে ভালোবাসো । আর তুমিও উনাকে জিজ্ঞেস করছিলে, বিয়ে কবে করবে, মানে তোমাকে ভালোবেসে উনি আজও বিয়ে করেন নি ।” পুষ্পিতা এবার একটু আবেগপ্রবণ হয়ে গেলো । তারপর রুমে এসে বিছানায় বসে বলল, “হুম । কিন্তু ভালোবাসলেই কি, না বাসলেই কি । এখন তো এটা সম্ভব না!” আরশি বলল, “ও । কিন্তু তোমরা তো বন্ধুর মতো চাইলেই থাকতে পারো?” পুষ্পিতা বলল, “মাথা ঠিক আছে? লোকে কি বলবে?” আরশি বলল, “এক কাজ করো, আঙ্কেলকে কল দাও! বলো তুমি দেখা করবে!” পুষ্পিতা হ্যাঁ করে আরশির দিকে তাকালো । আরশি বলল, “আরে দাও না!” পুষ্পিতা কল করলো । কল ধরে সাজু জিজ্ঞেস করলো, “ঠিক আছো তুমি? আবার কল দিলে যে?” পুষ্পিতা বলল, “আরে না না, সেরকম কিছু না । দেখা করবো ভাবছি! তাই কল করলাম!” সাজু বলল, “সত্যি! কবে বলো!” আরশি ইশারা করে বলল, “আজকেই!” পুশপিতাও সাজুকে বলল, “আজকেই করবো । কখন?” আবারও আরশির ইশারায় জবাব দিলো পুষ্পিতা, “বিকেলে, স্টাইলা ক্যাফে তে ।” সাজু বলল, “ঠিক আছে! আমি আসবো । আমার তো এখনই যেতে ইচ্ছে করছে!” পুষ্পিতা বলছে । আচ্ছা দেখা হবে তাহলে! রাখছি!” সাজু বলল, “ঠিক আছে, বাই!” “বাই!” বলে কল কাটলো পুষ্পিতা । তারপর আরশিকে বলল, “তুই আমাকে দিয়ে এ কথা বলালি কেনো?” আরশি বলল, “আরে মা! চিল । আর তুমিই বলো, সাজু আঙ্কেলের সাথে দেখা করে তোমার ভালো লাগবে নাকি খারাপ?” পুষ্পিতা মনে মনে খুশীই ছিলো বেশ, ঠোঁটের কোণে এতক্ষণে হালকা হাসি ফুটেছে ।
অফিস থেকে আসার সময় গালিব জাহিদকে বলল, “ভাই, ছেলের বিয়ে দিচ্ছি সামনের সপ্তাহের শুক্রবার, আপনাকে পুরো পরিবারসহ দাওয়াত রইলো, আপনি অনেক ভালো বন্ধু বলে মুখে মুখেই দাওয়াত দিলাম । তবে হ্যাঁ, শীঘ্রই কার্ড নিয়ে হাজির হচ্ছি আপনার বাসায়!” জাহিদ বলল, “হ্যাঁ! অবশ্যই! আপনার ছেলে আমার পক্ষ থেকে শুভকামনা জানিয়ে দিয়েন! আর হ্যাঁ, আরেকটা জিনিসের মিষ্টি কিন্তু খাওয়াতে হবে!” গালিব জিজ্ঞেস করলো, “কিসের?” জাহিদ বলল, “এই যে, আপনার ছোট ছেলেটা এতো জনপ্রিয় হয়ে গেলো! গতকাল ফেসবুকে দেখছিলাম, আপনার ছেলেকে চিনতে একটুও ভুল হয় নি । ও তো এখন ভাইরাল পুরো! আরেকটা কথা মানতেই হবে, একদম আপনার মতোই হয়েছে আপনার ছেলে ।” গালিব মুচকি হাসল ।
দুপুরে বাসায় এসে গালিব সবাইকে বলল, কই বাসার সবাই! মা! বাবা! আম্মা! আব্বা! অনিকের মা! অনিক! অর্ক! আরশি! সবাই কই!“” গালিবের ডাক শুনে সবাই এলো ড্রইং রুমে । লুনা জিজ্ঞেস করলো, “মাই মাই গো! জামাইবাবা! কিতা হইছে?” গালিব বলল, “কিছু না আম্মা! আমরা এখন বিয়ের শপিং করতে যাবো!” আরশি সবাই খুশী হলো অর্ক বলল, “ইয়েস! আজ তো মজাই মজা!” আরশি আর পুষ্পিতা খুশী হলো না এই ডিসিশনে! গালিব বলল, “যান! সবাই রেডি হোন!” আরশি আর পুষ্পিতা রুমে গেলো । আর রাগ নিয়ে বিছানায় জোড়ে জোড়ে আঘাত করতে করতে বলল, “দেখেছিস! তোর বাপ এতো শয়তান! ইচ্ছে করে আজকেই নিয়ে যাচ্ছে! যেনো আমি সাজুর সাথে দেখা করতে না পারি!” আরশি ভ্রু কুঁচকে বলল, “ধুর! কি বলছো এসব! বাবা কি জানে নাকি এটা!” পুষ্পিতা বলল, “তাও ঠিক । কিন্তু আগে বলবে না! হুট করে শপিং-এ যাবার কথা বললে কি যাওয়া যায়?” আরশি বলল, “এতো টেনশন করছো কেনো? ভালোই তো হল, ওরা চলে গেলে আমরা সহজে যেতে পারবো সাজু আঙ্কেলের সাথে দেখা করতে!” পুষ্পিতা বলল, “কিন্তু ওরা গেলে আমাদেরও তো নিয়ে যাবে, তাই না?” আরশি পায়চারি করতে করতে বলল, “ভাবতে দাও ।” তারপর কিছুক্ষণ কি ভেবে বলল, “পেয়েছি!”

আগামী পর্বেঃ
রাফিদ বারান্দায় গেলো । দেখলো, আরশি আর পুষ্পিতা যাচ্ছে কোথায় যেনো । তারপর মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো, আধ ঘণ্টা আগে অর্ক মেসেজ দিয়েছে, “দোস্ত! শপিং মলে আসছি! শপিং করতে!” রাফিদ মেসেজ করলো, “আন্টি আর তোর বোন এতো দেরি করে যাচ্ছে যে?” অর্ক অবাক হয়ে গেলো । তাহলে কি ওর মা মিথ্যে কথা বলেছে?
×
বাবা(পর্ব-৬৭)

সবাই শপিং মলে যাবার জন্য রেডি হয়ে এলো । গালিব ড্রইং রুমেই বসে টিভি দেখে অপেক্ষা করছিলো সকলের । একটু পর এলো সবাই । কিন্তু আরশি আর পুষ্পিতা এলো না । কুলসুম বলল, “একি, বউমা কোথায়?” গালিব বলল, “তাই তো, অনিকের মা কোথায় গেলো?” অর্ক বলল, “আমি দেখে আসছি ।” বলে পুষ্পিতার রুমে এলো অর্ক । এসে দেখলো বিছানায় শুয়ে আছে পুষ্পিতা আর আরশি পুষ্পিতার পায়ে মলম লাগিয়ে ম্যাসেজ করে দিচ্ছে । পুষ্পিতা গোঙাচ্ছে, “আহ! ও মা! পায়ে কি ব্যাথা গো!” অর্ক জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে?” আরশি বলল, “আর বলিস না! বাথরুমে পা পিছলে পড়ে গেছে । এখন তো হাটতেই পারছে না ।” অর্ক বলল, “সেকি! এরকম একটা ঘটনা ঘটেছে আর তুই জানাস নি! আমি এক্ষুনি সকলকে ডেকে আনছি!” বলে সবাইকে ডাকতে গেলো অর্ক । পুষ্পিতা গোঙানি থামিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কাজ করবে তো এই আইডিয়া?” আরশি বলল, “হ্যাঁ করবে!” একটু পর সবাই এলো আরশির রুমে । গালিব যেয়ে বসলো পুষ্পিতার পাশে । বলল, “আল্লাহ! এতো অসাবধান হয়ে কেনো চলাফেরা করো তুমি?” পুষ্পিতা বলল, “কি করি বলো! বাথরুমটা পিচ্ছিল হয়ে ছিলো!” অনিক বলল, “কি সুন্দর সবাই মজায় ছিলাম, শপিং-এ যাবো, তা সেটা আর হলো না!” আরশি বলল, “না না! তা কেনো! তোমরা যাও, আমি মায়ের কাছে আসছি ।” অর্ক ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, “তুই! তুই এ কথা বলছিস! যে তুই শপিং মলে গেলে আসার নামই করে না, সে এ কথা বলছে!” আরশি হালকা রাগ দেখিয়ে বলল, “শোন, তোর মতো মাকে আমি কম ভালোবাসি না! বুঝেছিস!” গালিব বলল, “না, আজ না যাওয়াই ভালো ।” লুনা বলল, “ও মাই মাই গো! জামাইবাবা! চলো, এই হারামজাদির লগেই ক্যান এতো কিছু হইতাছে, আল্লাহই জানেন! পাইকা গেছে বেশি! তাই এমন হইতাছে!” মিজান বলল, “ঠিক কইছো! চলো, আমরা হলে যাই! সিনিমা দেইখা আসি!” শামসু বলল, “আরে বয়রা বেয়ান! আমরা হলে না, মলে যাচ্ছি! শপিং মল!” মিজান হালকা হেসে বলল, “ও, হ! ওইই আরকি!” গালিব পুষ্পিতার হাত ধরে বলল, “তোমাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না ।” পুষ্পিতা হাসিমুখে, “সমস্যা নেই, যাও!” বললেও মনে মনে বিরক্তির সাথে বলল, “ন্যাকা ষষ্ঠী!” অবশেষে আরশি আর পুষ্পিতাকে বাসায় রেখেই চলে গেলো বাসার বাকি সবাই । আর সবাই চলে যেতেই আরশি আর পুষ্পিতা রেডি হয়ে রওনা হলো স্টাইলা ক্যাফেতে, সাজুর সাথে দেখ করতে ।
“হুম! এই শেরওয়ানীটা ভালো!” একটা শেরওয়ানী দেখতে দেখতে বলল অনিক । কালো শেরওয়ানী । সেটা দেখে লুনা বলল, “মাই মাই গো! কালা রঙ পইড়ো না বাপ! ভুতের নাহাল দেহাইবো!” কুলসুম বলল, “আসলেই! কালো পইড়ো না বাবা! হালকা রঙের কিছু দেখো!” গালিব পাশেই আরও কিছু শেরওয়ানী দেখছিলো, ওদের কথা শুনে এসে বলল, “মা, আম্মা! ছেলেমেয়েরা এখন অ্যাডাল্ট! ওরা নিজেদের পছন্দ নিজেরাই করুক না! আমরা নি হয় কিছু না বললাম!” অনিক বলল, “এইতো! বাবা একদম পারফেক্ট বলেছে!” তারপর কালো রঙের পাঞ্জাবিটা গালিবকে দেখিয়ে অনিক বলল, “বাবা এটা দারুণ না?” গালিব বলল, “হুম! অনেক সুন্দর!”
ল্যাপটপে কি কাজ করছিলো রাফিদ । একটু পর শরীরটা একটু ঝিমিয়ে উঠলে উঠে বারান্দায় গেলো । দেখলো, আরশি আর পুষ্পিতা যাচ্ছে কোথায় যেনো । রাফিদ কিছুক্ষণ দাড়িয়ে নিজের রুমে চলে গেলো । তারপর মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো, আধ ঘণ্টা আগে অর্ক মেসেজ দিয়েছে, “দোস্ত! শপিং মলে আসছি! শপিং করতে!” রাফিদ অবাক হয়ে গেলো । অর্ক এতো আগে শপিংমলে গেলে ওর মা আর বোন এতক্ষণ পড়ে কেনো যাচ্ছে? রাফিদ মেসেজ করলো, “আন্টি আর তোর বোন এতো দেরি করে যাচ্ছে যে?”
একটা সুন্দর দেখতে শাড়ি দেখছিলো গালিব । নীল রঙের শাড়িটা । অর্ক বাবাকে শাড়ি দেখেতে দেখে কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো, “কি বাবা? শাড়ি কার জন্য?” গালিব শাড়ি থেকে সরে গিয়ে বলল, “আরে! না না! কারোও জন্যই না, এমনিই দেখছিলাম!” অর্ক ইয়ার্কি করে বলল, “এমনিই না? শিওর মায়ের জন্য দেখছিলে তুমি!” গালিব বলল, “ঠিক ধরেছিস । তোর মা থাকলে কত কিছু পছন্দ করতো! এখন ওর পছন্দ না দেখে নিয়ে যাই কি করে!” অর্ক বলল, “তুমি এটাই নিয়ে যাও বাবা । আমি শিওর, মায়েরও তোমার পছন্দ করা শাড়ি পছন্দ হবে ।” সে সময় অর্কর মোবাইলে একটা নোটিফিকেশন এলো । রাফিদের মেসেজ । লিখেছে “আন্টি আর তোর বোন এতো দেরি করে যাচ্ছে যে?” অর্ক লেখা পড়ে হালকা চমকে গেলো । লিখলো, “মা আর আরশি তো আসেই নি, মায়ের পায়ে ব্যাথা ছিলো, তাই ।” রাফিদ লিখলো, “কই? আমি তো দেখলাম আন্টি আর তোর বোন নিচে নেমে কোথায় যেনো যাচ্ছে?” অর্ক অবাক হয়ে গেলো । তাহলে কি ওর মা মিথ্যে কথা বলেছে?
স্টাইলে ক্যাফেতে এলো পুষ্পিতা আর আরশি । আরশি বলল, “উনাকে কল করে দ্যাখো, কোথায় আছে ।” পুষ্পিতা কল করতে যাবে, এমন সময় একটা ছেলে এসে ডাকলো পুষ্পিতাকে, “পুষ্প!” পুষ্পিতা পেছন ফিরে তাকালো । ফর্সা, চুল স্টাইল করা, লম্বা, গেঞ্জির ওপর শার্টের বোতাম খুলে রাখা, স্কিনফিট জিন্সের প্যান্ট, ব্র্যান্ডের শু পড়া একটা ছেলে । হ্যাঁ! সাজু! এখনও যেনো ওর যৌবন বিদ্যমান । এতোদিন পর সাজুকে দেখে মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নিলো পুষ্পিতা, কিন্তু সেই সময় সাজু এসে পুষ্পিতাকে ধরে পড়ার হাত থেকে বাচালো । সেই মুহূর্তে একই ক্যাফেতে ছিলো আরেকজন লোক । রাফিদের বাবা, আকবর আলি । এই দৃশ্য দেখে মনে মনে বলল, “ও মাই গড! আমার সুযোগ দেখি আমার পেছন পেছন চলে আসে!” দেরি না করে তাড়াতাড়ি ছবি তুলে নিলো কয়েকটা ।

আগামী পর্বেঃ
আরশি পাচ হাজার টাকা দিয়ে খাবার অর্ডার করে খেতে খেতে মনে মনে ভাবছে, “এই আঙ্কেলের প্রতি মায়ের মনে যে একটা দুর্বলতা আছে তা আমি জানি! আঙ্কেল তো অনেক পয়সাওয়ালা! যদি এই আঙ্কেলের সাথে মায়ের বিয়ে হয়, তাহলে এই আঙ্কেল হবে আমার বাবা! আর এই পয়সাওয়ালা আঙ্কেলের মেয়ে হওয়া মানে!”
……………………………..
অর্ক পা বাড়ালো স্টাইলা ক্যাফের দিকে । পৌঁছে গেলো সেখানে । একটু দুরেই বসে পুষ্পিতা আর সাজু একে অপরের হাত ধরে । পেছনে আরশি খাচ্ছে আর হাতে বাকি টাকাগুলো দেখছে । আকবর আলি ছবি তুলছে সুযোগ বুঝে ।
×
বাবা(পর্ব-৬৮)

“বাবা, আমি একটু বাইরে যাবো?” গালিবকে বলল অর্ক । গালিব বলল, ”কি? এখন তুই কোথায় যাবি?” অর্ক বলল, “একটু দরকার আছে বাবা! প্লিজ যাই?” গালিব জিজ্ঞেস করলো, “কিন্তু তুই কিছু নিবি না?” অর্ক বলল, “তুমি আমার জন্য পছন্দ করে কিছু নিয়ো ।” বলে চলে এলো অর্ক । গালিব মনে মনে বলল, “হঠাৎ কি হলো অর্কর?” অনিক তখন গালিবকে নিয়ে গেলো অন্য দিকে, “বাবা এদিকে এসো!”
“সা…সা…” নাম বলতে গিয়েও একটা অজানা অস্থিরতার জন্য পুরো নামটা বলতে পারছিলো না পুষ্পিতা । সাজুই বলে দিলো, “সাজু! তোমার সাজু!” আরশি বলল, “মা, তোমরা কথা বলো, আমি বাইরে আছি!” সাজু বলল, “আরে! পরিচয় না হয়েই চলে যাচ্ছো?” আরশি বলল, “জি! আমি আরশি!” সাজু বলল, “নাইস টু মিট ইউ আরশি!” বলে হাত বাড়িয়ে দিলো সাজু । আরশি হ্যান্ডশেক করলো । তারপর সাজু পকেট থেকে পাচ হাজার টাকার নোট বের করে আরশির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “প্লিজ বাইরে যেয়ো না আরশি! তুমি এখানে যা খেতে ইচ্ছে হয় খাও!” টাকার পরিমান দেখেই তো আরশির চোখ ছানাবড়া! এই পরিমাণ টাকা তো ওর বাবা-ই ওর জন্য পুরো মাসে খরচ করে না!” সাজু ভাবল আরশি বোধ হয় লজ্জা পাচ্ছে । বলল, “আরে! লজ্জা পেয়ো না । নাও এটা! আফটার অল আমিও তো তোমার বাবার মতো, তাইনা?” আরশি নিলো টাকাটা, তারপর থ্যাংকস বলে একটু দুরে যেয়ে চেয়ারে বসলো । পুষ্পিতা আর সাজু পাশের টেবিলে বসলো । আকবর আলি দূর থেকে দেখে মনে মনে বলল, “হায়রে! এই দৃশ্য যদি আমি আমার মেয়েকে দেখাতে পারতাম! এমন একটা পরিবারে বিয়ে করতে যাচ্ছে, যে শাশুড়ি অন্য এক ছেলের সাথে প্রেম করে বেড়ায় ।”
গাড়ি নিয়ে বাসার দিকে আসতে আসতে রাফিদের সাথে কথা বলছিলো অর্ক ।
“কি! তাহলে আন্টি গেলো কি করে?” বলল রাফিদ ।
“সেটা তো আমারও প্রশ্ন! পায়ে ব্যাথার কারণে মা উঠতেই পারছিলো না, তাহলে এখন গেলো কোথায়?” বলল অর্ক ।
“দ্যাখ তোর পারিবারিক ব্যাপারে আমার কোন আগ্রহ নেই, কিন্তু যদি আমি আগে জানতাম তাহলে হয়তো আন্টির পিছু নিতাম ।”
“এভাবে কেনো বলছিস? কিছুদিন পর তোদের পরিবারের সাথে আমাদের পরিবারের একটা আত্মীয়তার বন্ধন তৈরি হবে, আর তাছাড়া তুই তো অনেক আগে থেকে আমার ভাই! সো চিল! এখন ব্যাপার ওইটা না । ব্যাপার হচ্ছে, মা আর আরশি কোথায় গেলো ।”
“উমম…! আন্টি আর আরশি যে রাস্তা দিয়ে গেছে, সে দিকে তো হসপিটাল নাই । সেদিকে হোটেল আর ক্যাফে বেশি আছে ।”
“তাহলে কি ক্যাফেতে গেছে?”
“হতে পারে, আমি শিওর না । তবে অন্য কারও বাসায়ও যেতে পারে ।”
“না না না, ওইদিকে আমাদের চেনা কোন আত্মীয় আছে বলে আমার অন্তত জানা নেই । আর আরশি জীবনেও ওর বান্ধবীর বাসায় মা বাবা কাউকেই নিয়ে যাবে না ।”
“তাহলে ক্যাফে ছাড়া আর কোন জায়গা মনে হচ্ছে না ।”
“আচ্ছা ওইদিকে কোন ক্যাফেটা বেশি পপুলার?” জিজ্ঞেস করলো অর্ক ।
“ফুডপ্লাস তো আছেই, যে কাহিনী হল বাপরে বাপ! যাই হোক, ইয়াঙ্গুন ক্যাফে আছে, জিলেনা ক্যাফে আছে, স্টাইলা ক্যাফে আছে, পিরানহা ক্যাফে আছে, আর…… এগুলোই বেশি পপুলার ।” বলল রাফিদ ।
“আচ্ছা, আমি রাখছি দোস্ত ।” বলে কল রেখে ড্রাইভারকে অর্ক বলল, “ফুডপ্লাসে চলুন ।”
“আচ্ছা, অর্ককে দেখছি না যে?” বলল শামসু । মিজান পাশে ছিলো, কথা শুনে ভয়ে ভয়ে বলে উঠলো, “মর্গ! ও আল্লাহ! শপিং মলেও মর্গ আছে! লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ!” শামসু বলল, “আরে আমার বয়রা বেয়ান! মর্গ না! অর্ক অর্ক! আমাদের নাতি ।” লুনা বলল, “ও মাই মাই গো! আমিও তো খেয়াল করি নাই! কই গেলো নাতি আমার?” একটু তফাতেই গালিব আর অনিক । শামসু যেয়ে জিজ্ঞেস করলো, “গালিব, অর্ক কোথায় রে?” গালিব বলল, “আর বোলো না বাব, হঠাৎ কি হলো, আর চলে গেলো । বলল কি নাকি কাজ আছে ।”
“তুমি জানো, আর সারারাত আমার ঘুম হবে না, শুধু তোমাকেই কল্পনা করবে আমার মন!” পুষ্পিতাকে বলল সাজু । পুষ্পিতা বলল, “তাই? যদি ঘুম ধরে?” সাজু বলল, “তাহলে স্বপ্নে দেখবো শুধু তুমি আর আমি! পৃথিবীতে আর কেউ নেই! আমরা দুজন ঘুরে বেড়াচ্ছি পৃথিবীর সকল সুন্দর সুন্দর স্থানে!” দুরে বসে কথা শোনা আকবর আলি বলল, “হায়রে ন্যাকামি!” আর পেছনে বসা আরশি পাচ হাজার টাকা দিয়ে খাবার অর্ডার করে খেতে খেতে মনে মনে ভাবছে, “এই আঙ্কেলের প্রতি মায়ের মনে যে একটা দুর্বলতা আছে তা আমি জানি! আঙ্কেল তো অনেক পয়সাওয়ালা! যদি এই আঙ্কেলের সাথে মায়ের বিয়ে হয়, তাহলে এই আঙ্কেল হবে আমার বাবা! আর এই পয়সাওয়ালা আঙ্কেলের মেয়ে হওয়া মানে!” আর কথা এগোতে পারলো না আরশি! ওর ভাবনা ওকে আটকে দিলো । একটা অজানা লালসায় ওর চোখ দুটো ছল ছল করে উঠলো ।
এদিকে অর্ক এই এলাকায় এসে খুজতে লাগলো আরশি আর পুষ্পিতাকে । ইয়াঙ্গুন, জিলেনা আর পিরানহা ক্যাফেতে খুজলো, পেলো না । রইলো বাকি একটা, স্টাইলা । অর্ক পা বাড়ালো স্টাইলা ক্যাফের দিকে । পৌঁছে গেলো সেখানে । একটু দুরেই বসে পুষ্পিতা আর সাজু একে অপরের হাত ধরে । পেছনে আরশি খাচ্ছে আর হাতে বাকি টাকাগুলো দেখছে । আকবর আলি ছবি তুলছে সুযোগ বুঝে, কিন্তু এখনও কিছুই চোখে পড়ে নি অর্ক ।

আগামী পর্বেঃ
ইনান বলল, “জানো! আমরা একটা স্পন্সর পেয়েছি! একটা জনপ্রিয়ি টিভি চ্যানেল থেকে মেইল এসেছে! ওর মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তোমার, ওই ফাহাদ আর তার মায়ের একটা ইন্টারভিউ নিয়ে তার ওপর একটা অনুষ্ঠান বানাতে চায়!” অর্ক বলল, “স্যার! আমি সত্যি এবার খুশিতে পাগল হয়ে যাবো!”
………………………………………….
“জি ভাই! বলেন!” কল ধরে বলল রাফিদ । রাসেল বলল, “গতকাল উনি তোমার শো এর পাশাপাশি অর্কর শো-ও শুনেছিলো । অর্কর বলার ভাবভঙ্গির কাছে তোমার বলার ভাবভঙ্গি উনার একদম ফালতু লেগেছে । সরাসরি তো এ কথা তোমাকে বলতে পারেন না, তাই তোমার শো বেশি ভিউয়ারশিপ পায় নি বলে তোমাকে বাদ দিয়ে দেবেন বলেছেন ।” কথা শুনে বেশ ভেঙ্গে পড়লো রাফিদ ।
×
বাবা(পর্ব-৬৯)

হঠাৎ অর্কর মোবাইলে একটা কল আসার অর্ক ক্যাফের বাইরে চলে গেলো । ইনানের কল । কল ধরতেই ইনান বলল, “হ্যাঁ অর্ক, কই তুমি?” অর্ক বলল, “ভাই আমি আছি আমার বাসার এইদিকেই । কেনো?”
“একটু এখনি স্টুডিওতে আসতে পারবি?”
“এখনই?” জিজ্ঞেস করলো অর্ক ।
“হ্যাঁ, কেনো? তুই কি ব্যস্ত?” জিজ্ঞেস করলো ইনান ।
“না ব্যস্ত না, আচ্ছা আমি আসছি ।”
“আচ্ছা আয় ।” বলে কল কেটে দিলো ইনান । অর্ক একটা ট্যাক্সি ধরে রওনা হলো বাসায় পথে ।
এদিকে খাওয়া দাওয়া শেষ করে আরশি মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখলো, ৬টা পনেরো বাজে । সাড়ে ৬টায় ওর বাবার ফেরার কথা বাসায় । উঠে এসে পুষ্পিতাকে বলল, “মা, যাওয়া উচিৎ ।” সাজু বলল, “সেকি এখনই! এই তো এলে কেবল তোমরা?” পুষ্পিতা বলল, “না আসলে বাসায় না গেলে সবাই টেনশন করবে তো ।” সাজু বলল, “কেনো, বাসায় বলে আসো নি তোমরা?” আরশি বলল, “আসলে আঙ্কেল মায়ের কিছু কাজ আছে, আর মা আমার নানা নানি, দাদা দাদির অনেক কেয়ার করে তো, উনাদের সময় সময় ওষুধ দিতে হয়, সেজন্য যেতে হবে ।” সাজু হাসিমুখে বলল, “ইশ! আমার পুষ্প আগের মতোই অনেক কেয়ারিং আছে এখনও! ঠিক আছে যাও তাহলে । কিন্তু আবার কবে দেখা হবে?” পুষ্পিতা বলল, “খুব শীঘ্রই হবে! আসছি!” তারপর আরশি আর পুষ্পিতা চলে এলো । ট্যাক্সিতে উঠতে উঠতে আরশি বলল, “কত দেরি হয়ে গেলো! এখন দোয়া করো কেউ যেনো বাসায় না আসে!” পুষ্পিতা বলল, “তোকে বলেছিলাম একটু সময়ের দিকে খেয়াল রাখতে!” আরশি হালকা রেগে গিয়ে বলল, “হ্যাঁ, আমিই সাহায্য করলাম, আর সব দোষ আমারই, তাই না?” পুষ্পিতা বলল, “আচ্ছা বাবা! ভুল হয়ে গেছে! সরি! এবার চুপচাপ চল ।”
আকবর আলিও ট্যাক্সি ধরে রওনা দিয়েছে । হাতে থাকা মোবাইলে ছবিগুলো দেখছে আর বলছে, “আজ তো ওই বাড়িতে একটা লঙ্কাকাণ্ড ঘটবেই! আর আজ আমার মেয়ের বিয়ে কেউ ভাংতে পারবে না!”
সন্ধ্যার পর রেডিও মাস্তির ভবনে এসে পৌঁছল অর্ক । ইনানের রুমে যেয়ে বলল, “আসবো স্যার?” ইনান বলল, “হ্যাঁ আসো!” অর্ক ভেতরে গেলো । ইনান বলল, “জানো! আমরা একটা স্পন্সর পেয়েছি!” অর্ক খুশিতে বলে উঠলো, “সত্যি!” ইনান বলল, “হ্যাঁ, আর উনারা যে পরিমাণ অর্থ দেবে তার আশি শতাংশ তুমি পাবে, বিশ শতাংশ পাবে রেডিও মাস্তি ।” অর্ক বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ স্যার!” ইনান বলল, “এবার বসো । কারণ এবারের কথা শুনলে তুমি খুশির ঠেলায় পড়েও যেতে পারো ।” অর্ক বসলো । ইনান বলল, “একটা জনপ্রিয়ি টিভি চ্যানেল থেকে মেইল এসেছে! ওর মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তোমার, ওই ফাহাদ আর তার মায়ের একটা ইন্টারভিউ নিয়ে তার ওপর একটা অনুষ্ঠান বানাতে চায়!” অর্ক বলল, “স্যার! আমি সত্যি এবার খুশিতে পাগল হয়ে যাবো!”
এদিকে রাফিদকে কল করেছে রাসেল । “জি ভাই! বলেন!” কল ধরে বলল রাফিদ । রাসেল বলল, “রাফিদ, গতসপ্তাহে তোমার প্রোগ্রাম কিন্তু তেমন একটা ভিউ পায় নি! আমি জানি, অর্কর শোটার কিছুটা প্রভাব তোমার শো এর ওপর পড়বে, কিন্তু তবুও, এই স্টেশনের মালিক চান তা সময় পাল্টাতে ।” রাফিদ বলল, “এটা কেমন কথা? সময় পালটালেই তো সব ঠিকঠাক হয়ে যায়!” রাসেল বলল, “জানি, কিন্তু উনি মানছেন না ।” রাফিদ জিজ্ঞেস করলো, “কেনো? কিসের জন্য মানছেন না উনি? একটা কারণ তো থাকা উচিৎ! হ্যাঁ, এমন যদি হতো, উনার রেডিওতে অনেক রকম শো দিয়ে ভরা থাকতো, যে আমার শো এর জন্য সময় দিতে পারছেন না, তাহলে মানা যেতো, কিন্তু কি সমস্যা উনার সময় বদলাতে?” রাসেল একটু আমতা আমতা করে বলল, “ইয়ে……রাফিদ! সত্যি কথাটা তোমার শুনতে খারাপ লাগতে পারে ।” রাফিদ বলল, “আমার খারাপ লাগার কোন কারণ নেই! বলেন আপনি, কি এমন হয়েছে?” রাসেল বলল, “গতকাল উনি তোমার শো এর পাশাপাশি অর্কর শো-ও শুনেছিলো । অর্কর বলার ভাবভঙ্গির কাছে তোমার বলার ভাবভঙ্গি উনার একদম ফালতু লেগেছে, আমার অনুরোধে তোমাকে উনি নিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু উনি হতাশ হয়েছেন । সরাসরি তো এ কথা তোমাকে বলতে পারেন না, তাই তোমার শো বেশি ভিউয়ারশিপ পায় নি বলে তোমাকে বাদ দিয়ে দেবেন বলেছেন ।” কথা শুনে বেশ ভেঙ্গে পড়লো রাফিদ । কিছুক্ষণ নিশ্চুপ । মনে অনেক ক্ষোভ জমতে লাগলো ওর । রাফিদ খুব ভালো গাইতো । কিন্তু গানের চেয়ে একজন ভালো বক্তা হবার প্রতিই বেশি আকর্ষণ ছিলো রাফিদের । ভেবেছিলো গান গাইতে পারলে ভালো বক্তা, ভালো উপস্থাপক কেনো হতে পারবে না? কিন্তু না, ওর ধারণা ভুল ছিলো । প্রচণ্ড রাগ মিশিয়ে রাফিদ রাফিদকে বলল, “উনাকে বলে দিয়েন, এই শো আমি আর জীবনেও করবো না!” বলে কল কেটে মোবাইল অফ করে দিলো রাফিদ ।
গাড়ি থেকে নেমে সিড়ি বেয়ে উঠছিল গালিব, অনিক, লুনা, মিজান, কুলসুম, শামসু । লুনা বলল, “মাই মাই গো! আইজকা ঘরে যাইয়া একখান ঘুম দিমু!” কুলসুম বলল, ”হ্যাঁ! একদম! সিরিয়ালগুলো সকালে দেখে নেয়া যাবে ।” মিজান বলল, “সিরিয়াল চাখে ক্যামনে?” শামসু জিজ্ঞেস করলো, “মানে?” মিজান বলল, “ওইযে, ভাবি কইলো, সিরিয়ালগুলা চাইখা নেয়া যাইবো?” শামসু বলল, “আরে আমার বয়রা বেয়ান! ও চেখে নেয়া যাবে বলে নি, বলেছে দেখে নেয়া যাবে!” মিজান বলল, “হ আইচ্ছা আইচ্ছা!” দরজার কাছে এসে গালিব দরজায় তালা দেখে অবাক হয়ে গেলো । গালিবের চেহারা দেখে অনিক জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে বাবা?” গালিব বলল, “দরজায় তালা কেনো?”
আর এদিকে আরশি আর পুষ্পিতা কেবল বিল্ডিং এর নিচে এসেছে ।

আগামী পর্বেঃ
গালিব বলল, “আচ্ছা, তোমরা ওপরে যাও, আমি ওষুধ নিয়ে আসছি ।” বলে যেই গালিব নামতে যাবে এমন সময় “ওষুধ আমার কাছেই আছে!” বলতে বলতে সিড়ি বেয়ে উঠে এলো আকবর আলি । পুষ্পিতা মনে মনে বলল, “এই লোক আবার কি ঝামেলা পাকাতে চায়?” আকবর আলি বলল, “কিভাবে ডাক্তারের কোলে যেয়ে পড়তে হয় সেটা দেখাতে এসেছি ।” কথা শুনে সবাই অবাক ।
×
বাবা(পর্ব-৭০)

“সর্বনাশ!” সিঁড়িতে যেয়ে আবার বেড়িয়ে এসে বলল আরশি । পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে?” আরশি বলল, “বাবারা তো এসে গেছে!” পুষ্পিতা ভয়ে চোখদুটো বড় বড় করে বলল, “সেকি! এখন কি হবে?” আরশি কিছু বলল না । পুষ্পিতা আবার বলল, “এই তোর জন্য সব হয়েছে! তুই কিছু না করলে কিছুই হতো না!” আরশি ভ্রু কুচকে বলল, “আহ! আমি তো তোমার ভালোর জন্যই করলাম, তোমার কি ভালো লাগে নি সাজু আঙ্কেলের সাথে দেখা করে?” পুষ্পিতা বলল, “আচ্ছা, এখন কি করবি সেটা ভাব!” আরশি কিছুক্ষণ ভাবলো । তারপর বলল, “পাইছি! এইখানে দাড়াও!” বলে আরশি বাইরে চলে গেলো । পুষ্পিতা ডাকলো, “কিরে কোথায় যাচ্ছিস!” কিন্তু আরশি কোনো সাড়া দিলো না । পুষ্পিতা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পায়চারী করতে করতে বলল, “কি হবে এবার?”
“আসসালামু আলাইকুম আন্টি, কেউ কি চাবি দিয়ে গেছে?” দরজায় নক করতেই উমা দরজা খুললে তাকে জিজ্ঞেস করলো অনিক । উমা বলল, “না তো বাবা, দিয়ে যায় নি তো!” লুনা বলল, “ও মাই মাই গো! মাইয়া আমার পায়ে ব্যাথা কইলো, আবার গেলো কই?” উমা বলল, “আপনারা আমাদের বাসায় আসুন না!” গালিব বলল, “না না ভাবি, আপনাদের আর ডিস্টার্ব না করি ।” উমা বলল, “আরে না ভাই, কিসের ডিস্টার্ব! আসেন!” ঠিক সেই সময় সিঁড়ি বেয়ে উঠতে লাগলো আরশি আর পুষ্পিতা । পুষ্পিতা আরশিকে ধরে ধরে তুলছে, আর বলছে, “সাবধানে!......হ্যাঁ!......ধীরে! ধীরে!.........হ্যাঁ!” আর পুষ্পিতা পায়ের ব্যাথায় গোঙাচ্ছে । গালিব এসে পুষ্পিতাকে ধরলো যেনো উঠতে সুবিধা হয় । তারপর জিজ্ঞেস করলো, “কোথায় গিয়েছিলে তোমরা?” পুষ্পিতা বলল, “পায়ের ব্যাথা একটু বেড়েছিলো! তাই একটু ডক্টরের কাছে গিয়েছিলাম ।” গালিব বলল, “দেখেছো! এজন্যই আমি আজ যেতে চাইনি! তো তুমি আমাকে কল দেবে না?” পুষ্পিতা বলল, “না ঠিক আছে, আমি তোমাদেরকে টেনশনে ফেলতে চাই নি ।” কুলসুম বলল, “তা কেনো বউমা? কল দিলেই তো আমার ছেলে চলে আসতো! আর এখন দ্যাখো, মেয়েসহ কতো কষ্ট হলো তোমার ।” পুষ্পিতা বলল, “আম্মা! আপনি যে আমাকে নিয়ে এতোটা ভাবেন, এতেই আমি ধন্য!” গালিব জিজ্ঞেস করলো, “ডাক্তার কি বলল, কোন প্রেসক্রিপশন দেয় নি?” আরশি একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে বলল, “এইযে প্রেসক্রিপশন ।” গালিব দেখলো, একটা নর্মাল কাগজে ওশুধ লেখা, আর ডাক্তারের সিলও দেয়া । জিজ্ঞেস করলো, “একি! ডাক্তার এতো সাধারণ কাগজে কেনো লিখেছে?” আরশি বলল, “আসলে আমার বান্ধবীর বোন ডাক্তার তো, তার কাছে গিয়েছিলাম, উনার কাছে অন্য কিছু ছিলো না ।” একটু আগে পুষ্পিতাকে একা রেখে আরশি গিয়েছিলো ওর বান্ধবী তমার কাছে । তমার বোন প্রমা আসলেই ডাক্তার । তমার বাসায় গিয়ে বলেছিলো, “দোস্ত! আমি না বাসায় না বলে বেড়িয়েছিলাম! এখন একটু ঝামেলা হচ্ছে দিতে! তোর বোনকে আমার মিথ্যে অসুস্থতার কথা বলিয়ে একটু প্রেসক্রিপশন আনিয়ে দে না রে! নাহলে আজ আর আমার নিস্তার নেই!” তমা বলেছিলো, “আচ্ছা দোস্ত! আয় ভেতরে আয়! কিন্তু কি অসুখের কথা বলবি?” আরশি বলেছিলো, “বাথরুমে পা পিছলে পড়ে যাবার কথা ।”
গালিব বলল, “আচ্ছা, তোমরা ওপরে যাও, আমি ওষুধ নিয়ে আসছি ।” বলে যেই গালিব নামতে যাবে এমন সময় “ওষুধ আমার কাছেই আছে!” বলতে বলতে সিড়ি বেয়ে উঠে এলো আকবর আলি । পুষ্পিতা মনে মনে বলল, “এই লোক আবার কি ঝামেলা পাকাতে চায়?” উমা দরজা থেকে এগিয়ে এসে আকবর আলির হাত ধরে টান দিয়ে বলল, “তুমি ঘরে এসো!” কিন্তু আকবর আলি সে হাত ঝাঁকি দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, “না! আজ আমি থামবো না! আজ আমাকে বলতেই হবে!” কথাবার্তা শুনে দরজার কাছে এগিয়ে এলো রাফিদ আর পপি । সিড়ি বেয়ে উঠে এলো অর্ক । কি হচ্ছে না হচ্ছে তা দেখে অবাক । তাই কিছু বললও না । শামসু বলল, “আপনি কি বলতে চান?” আকবর আলি বলল, “সেটাই, যা আমার বলা উচিত! আপনাদের এই মহামান্য মিসেস পুষ্পিতার আসল মুখোশটা দেখানো!” মিজান বলল, “গুলুকোজ খাওয়াইবা! কত্ত ভালা! দেও! এনার্জি নেই!” আকবর আলি বিরক্ত হয়ে হয়ে বলল, “এক্সকিউজমি চাচা! আমি গ্লুকোজ বলিনি, মুখোশ বলেছি! কিভাবে ডাক্তারের কোলে যেয়ে পড়তে হয় সেটা দেখাতে এসেছি ।” কথা শুনে সবাই অবাক । আরশি আর পুষ্পিতা ভয় পেয়ে গেলো । পুষ্পিতা মনে মনে বলল, “এই লোক সব কথা জানলো কি করে?” আরশি মনে মনে বলল, “সর্বনাশ! তবে কি এই লোকও স্টাইলা ক্যাফেতে ছিলো?” কুলসুম বলল, “খবরদার! আমার বউমার নামে আর একটাও উল্টাপাল্টা কথা বলবেন না! কি পেয়েছেন কি আপনি? যা নয় তাই বলে পার পেয়ে যাবেন? সহ্যেরও একটা সীমা আছে কিন্তু, আর নিজের অসভ্যতার সীমাটাও পাড় করবেন না!” আকবর আলি হেসে উঠে বলল, “আহ চাচি! কি যে বলেন না! উল্টাপাল্টা কেনো বলতে যাবো আমি? প্রমাণ ছাড়া আমি কিচ্ছু করি না! দাঁড়ান আপনাদের দেখাচ্ছি!” বলে মোবাইল পকেট থেকে বের করলো আকবর আলি । পুষ্পিতা মনে মনে ভয়ে ভয়ে বলল, “এবার কি হবে!” আরশি চেচিয়ে উঠলো, “এতো মিথ্যুক কেনো আপনি? এরকম মিথ্যে অভিযোগ আনার সাহস পান কোত্থেকে আপনি? আমার মায়ের সম্পর্কে আর একটাও বাজে কথা বলবেন না!” আকবর আলি বলল, “কে বাজে কথা বলছে, আর কে বলছে না তা এক্ষুনি প্রমান হয়ে যাবে ইঁচড়ে পাকা মেয়ে!” বলে আকবর আলি মোবাইলে তোলা ছবিগুলো বের করে তুলে ধরলো সবার দিকে । সবাই আকবর আলির মোবাইলের স্ক্রিনে তাকালো ।

আগামী পর্বেঃ
গালিব শাড়িটা দেখালো পুষ্পিতাকে । বলল, “দ্যাখো, এই শাড়িটা আমি কিনেছি । তোমার জন্য!” পুষ্পিতা দেখে বলল, “বাহ! অনেক সুন্দর!” গালিব বলল, “আমি চাই এই শাড়িটা তুমি অনিকের বিয়ের দিন পড়ো!”
………………………………………
“সারপ্রাইজ!” মোবাইলের ব্যাক ক্যামেরা দিয়ে একটা শাড়ি দেখালো সাজু । পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “কি ব্যাপার! এতো সুন্দর শাড়ি? বিয়ে করছো নাকি?” সাজু বলল, “কাম ওন! আমি কি বলেছি তাই? এট তোমার জন্য কিনেছি!” পুষ্পিতা বলল, “সত্যি! থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ!” সাজু বলল, “হা! আর তোমার ছেলের বিয়েতে এটা পড়া অবস্থায় তোমাকে দেখতে চাই!”
×
বাবা(পর্ব-৭১)

“কি দেখাচ্ছেন আপনি? স্ক্রিনে তো কিছুই নেই!” আকবর আলিকে বলল গালিব । আকবর আলি তো অবাক । ফোন নিজের হাতে নিয়ে দেখলো, মোবাইলের স্ক্রিন কালো হয়ে আছে । কয়েকবার অন করার ট্রাই করলো, কিন্তু হল না । নিজের ওপর নিজেই বিরক্ত হয়ে বলল, “আহ!!! মোবাইলটা বোধ হয় আবার গেছে!” গালিব বলল, “আমার স্ত্রীর সম্পর্কে আপনি কি বলতে চাইছিলেন আমি জানি না, কিন্তু যেটুকু বলেছেন তাতেই আমি প্রচুর রেগে গেছি । আমার মতো মানুষ যে কখনো রাগে না, সে মানুষ রেগে গেছি । ভেবে দেখুন! এই পরিস্থিতি কিন্তু খুব ভয়ানক হতে পারে!” বলে সবাইকে নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো । আকবর আলি কিছু বলতে চাইলো, পড়ে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, “কন্ট্রোল আকবর! কন্ট্রোল! প্রমাণ জোগাড় করতে হবে, তা না হলে এরা কিচ্ছু বিশ্বাস করবে না!” পপি আর রাফিদও নিজেদের রুমে চলে গেলো । উমা ঘরে যাবার সময় বলল, ”বাসায় আসো, দ্যাখো তোমার কি হয়!”
বিছানায় শুয়ে পুষ্পিতা, আর পাশে বসে আরশি । দুজনেই মোবাইল চালাচ্ছে । সেই সময় ঘরে এলো গালিব । আরশিকে বলল, “আরশি মা! একটু বাইরে যাবি? আমি একটু তোর মায়ের সাথে একা কথা বলতাম!” আরশি “ঠিক আছে ।” বলে চলে গেলো । পুষ্পিতা মনে মনে হালকা ভয় পেলো । গালিব কি তবে কিছু সন্দেহ করেছে? গালিব পুষ্পিতার পাশে বসে বলল, “অনিকের মা, আমি জানি আকবর আলির কথায় তোমার অনেক খারাপ লেগেছে! কিন্তু তুমি বিশ্বাস করো! ওই খারাপ লোকটার কথা আমি মোটেও বিশ্বাস করি না ।” পুষ্পিতা হালকা হাসবার চেষ্টা করে বলল, “আরে না না! আমি কিচ্ছু মনে করিনি!” গালিব তখন পেছন থেকে একটা ব্যাগ সামনে প্রকাশ্যে আনলো । এতক্ষণ ব্যাগটা দেখতে পায় নি পুষ্পিতা । পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “কি এটা?” গালিব বলল, “শাড়ি! দেখবে?” গালিব শাড়িটা দেখালো পুষ্পিতাকে । বলল, “দ্যাখো, এই শাড়িটা আমি কিনেছি । তোমার জন্য!” পুষ্পিতা দেখে বলল, “বাহ! অনেক সুন্দর!” গালিব বলল, “আমি চাই এই শাড়িটা তুমি অনিকের বিয়ের দিন পড়ো!” পুষ্পিতা বলল, “অবশ্যই পড়বো!” গালিব বলল, “তোমার মনে আছে? অনিকের যখন জন্ম হয়, সেদিন তুমি একটা শাড়ির বায়না করেছিলে?” পুষ্পিতা বলল, “হ্যাঁ! তারপর তুমি আমাকে না বলে আন্দাজে একটা শাড়ি এনেছিলে আর আমি প্রচুর রাগ করে আমার যতো নতুন শাড়ি ছিলো সব পুড়িয়ে দিয়েছিলাম!” গালিব বলল, “সেদিনও মন থেকে এনেছিলাম, আজও তাই! বার বার ভাঙ্গা জিনিস জোড়া লাগানো কষ্টকর! আশা করি এবার পছন্দ না হলেও তুমি ওরকম কিছু করবে না?” পুষ্পিতা শাড়িটা হাতে নিয়ে বলল, “ধুর! পছন্দ হবে না কেনো? অনেক পছন্দ হয়েছে!” গালিব বলল, “যাক! ভালো লাগলো!” পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “পায়ের কি অবস্থা?” পুষ্পিতা বলল, “ওষুধ খেয়ে মোটামুটি ভালো লাগছে ।’ গালিব পুষ্পিতার হাতে হাত রেখে বলল, “ঠিক আছে, রেস্ট নাও তাহলে ।”
“তুমি কেনো এরকম করছো?” প্রচণ্ড রাগ নিয়ে আকবর আলিকে বলল উমা । আকবর আলি বলল, “আরে বাবা! এবার আমি নিজে কিছু করিনি! করেছে তো ওই অনিকের মা!” উমা বলল, ”তাই? তা কি করেছেন উনি একটু শুনি?” আকবর আলি বলল, “আরে ওই মহিলা স্টাইলা ক্যাফেতে যেয়ে সাজু নামের এক ছেলের সাথে ডেটিং করছিলো! আবার ওই অনিকের ইঁচড়ে পাকা বোন, আরশি, সেও ওর মাকে সঙ্গ দিচ্ছিলো । শুধু তাই না, অনিকের মা উশটা খেয়ে পড়ে যাওয়ার সময় সাজু এসে যেই না কোলে ধরলো, দুজনে দুজনের দিকে যেভাবে তাকিয়ে ছিলো! ছি ছি ছি! কি যে বলবো! তিন বাচ্চার মা এখন প্রেম করে বেড়ায়!” উমা কথাগুলো শুনে একটু ভ্রু কুচকে ভাবনায় ডুবে গেলো । ভাবলো, আকবর আলি যদি সত্যি কথা বলে, তাহলে ব্যাপারটা কিন্তু সত্যি চিন্তার । আকবর আলি বলল, “তোমার কি মনে হয় এরকম বাড়িতে আমাদের মেয়ের বিয়ে দেয়া উচিৎ? বলা যায় না, ওর মা যদি ওই ছেলের সাথে পালিয়ে যায়, তাহলে কি একটা তামাশা হবে? ইতোমধ্যে বুধবার এঙ্গেজমেন্ট, বৃহস্পতিবার গায়ে হলুদ, শুক্রবার বিয়ে আর শনিবার বৌভাতের দাওয়াত দেয়া শেস সকলকে!” উমা কিছুক্ষণ ভেবে আকবর আলির দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি এমন একটা মানুষ, তোমার কোনো কথা বিশ্বাস করার আগে দুইশোবার ভাবা লাগে । কিন্তু এটা যদি সত্যি হয়, তাহলে ব্যাপারটা সত্যি ভালো হবে না!” আকবর আলি বলল, “আচ্ছা! আমার মোবাইলটা আগে ঠিক হতে দাও! তারপর দেখো! প্রমাণ সহ দেখাবো তোমাকে!”
রাত ১২টার কথা । সবাই ঘুমিয়ে গেছে । পুষ্পিতা মোবাইল চালাচ্ছে, পাশে আরশিও ঘুমিয়ে গেছে । হঠাৎ পুষ্পিতার মোবাইলে কল এলো সাজুর । আস্তে করে বারান্দায় গেলো পুস্পিতা যেনো আরশির ঘুম না ভেঙ্গে যায় । তারপর কল ধরলো । সাজু ক্যামেরার সামনে হাত দিয়ে রেখেছে । পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “কি হলো? তোমার চেহারা কই?” সাজু বলল, “তোমাকে একটা জিনিস দেখাবো ।” পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “কি?” “সারপ্রাইজ!” মোবাইলের ব্যাক ক্যামেরা দিয়ে একটা শাড়ি দেখালো সাজু । পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “কি ব্যাপার! এতো সুন্দর শাড়ি? বিয়ে করছো নাকি?” সাজু বলল, “কাম ওন! আমি কি বলেছি তাই? এট তোমার জন্য কিনেছি!” পুষ্পিতা বলল, “সত্যি! থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ!” সাজু বলল, “হা! আর তোমার ছেলের বিয়েতে এটা পড়া অবস্থায় তোমাকে দেখতে চাই!” পুষ্পিতার মুখের হাসিটা চলে গেলো ।এবার কি করবে? ইয়ার্কির ছলে বলল, “যদি না পড়ি?” সাজু বলল, “তাহলে আর কি? বুঝবো আমার জন্য তোমার মনে কোন জায়গা নেই!”

আগামী পর্বেঃ
আকবর আলি বলল, “দ্যাখ দ্যাখ! তোর জানের বন্ধু আর অর্ক, একই সময় প্রোগ্রাম হওয়ায় ও হিট হলো, আর তুই ফ্লপ ।” রাফিদ একটু ভ্রু কুচকে বলল, “এভাবে বোলো না! ও কি ইচ্ছে করে এমনটা করেছে নাকি?” আকবর আলি বলল, “ইচ্ছে করে করে নি, কিন্তু তোর শো একই সময়ে দেখে সময়টা-ও তো পাল্টাতে পারতো, তাই না? আর তোর খোঁজ কি নেয় ও? মনে তো হয় না । পপুলার হয়ে এখন আকাশে উড়ছে । জমিনে তোর মতো তুচ্ছ জীব এখন আর ওর নজরে পড়ে না ।”
×
বাবা(পর্ব-৭২)

“এমা ছি ছি! এভাবে কেনো বলছো? এখনও আমি তোমাকে ভালোবাসি । হ্যাঁ, হয়তো সেই ভালোবাসা আর সম্ভব না-ও হতে পারে, কিন্তু তবু, ভালোবাসি । যদি বলো, ভালো বন্ধু হিসেবে, তবে তাই-ই ।” সাজুকে বলল পুষ্পিতা । সাজু হালকা হাসিমুখে বলল, “ঠিক আছে, তাহলে এটা তোমার ছেলের বিয়ের দিন পড়ে এসো ।”
পরদিনের কথা । সেদিন রবিবার । সকাল হতেই আরশি গেলো কলেজে, অনিক ভার্সিটিতে । সেই সাথে অর্ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার পরীক্ষা দিতে গেছে ১বছর গ্যাপ দিয়ে । যাবার আগের সবার কাছ থেকে দোয়া নিয়ে গেছে । গালিব গেছে অফিসে । বাসায় মিজান, শামসু, কুলসুম, লুনা । রান্নাঘরে পুষ্পিতা রান্না করার ভান ধরে মোবাইল চালাচ্ছে আর রান্না করছে চামেলি । ড্রইংরুমে চারজন সিনিয়র বসে । মিজান বলল, “আহ, কেমন জানি ঘরডা ফাঁকাফাঁকা লাগতেছে! অন্যান্য দিন তাও অর্কডা ঘরে থাকতো, আইজকা সে-ও গেছে পরীক্ষা দিতে ।” শামসু বলল, “হুম । পরীক্ষা দিয়ে ছেলেটা যদি টেকে, তাহলে পড়াশুনাটা চালিয়ে যেতে পারবে ।” কুলসুম বলল, “হ্যাঁ, এতে করে ছেলেটা আল্লাহ না করুক, কোনদিন রেডিওর জবটা হারায় তাহলে যেনো বসে থাকতে না হয় ।” লুনা বলল, “হয়! পোলাডা এইবার ভালো জায়গায় যাউক । হুনছিলাম আমার মাইয়া নাকি ওরে বেসরকারি ভার্সিটিতে দিতে চায় নাই, আমার নাতি আমার মাইয়ার মুখে ঝামা ঘইশা দিক চান্স পাইয়া!”
এদিকে রাফিদ বেচারা নিজের ঘরে বসে নেটে চাকরির খোঁজ করছে । কোন একটা চাকরি যদি পাওয়া যায়! আকবর আলি চুপি চুপি ঘরে ঢুকল । দরজার দিকে পিঠ দিয়ে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে থাকায় রাফিদ বাবাকে দেখলো না । আকবর আলি এসে ল্যাপটপে দেখলো, ছেলে চাকরি খুজছে । আকবর আলি জানে অর্কর রেডিওতে সফলতার কথা । রাফিদের কথাটা এখনও জানে না যদিও । আকবর আলি বলে উঠলো, “কিরে?” অর্ক চমকে ল্যাপটপের লিড নামিয়ে পেছন ফিরে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “তুমি?” আকবর আলি বলল, “হ্যাঁ আমি! তোর বাপ! এতো চমকানোর কি আছে?” রাফিদ বলল, “না, চমকাবো কেনো । এমনি ।” আকবর আলি বলল, “চাকরি খুজছিস কেনো আবার?” রাফিদ বলল, “এমনি । যেনো বেশি আয় করতে পারি ।” আকবর আলি বলল, “আরজের চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছিস নাকি?’ রাফিদ হঠাৎ চমকে উঠে বলল, “না মানে……ইয়ে……হ্যাঁ । খুব একটা বেশি সাড়া ফেলেনি প্রোগ্রামটা । তাই আমাকে বাদ দিয়ে দিয়েছে ।” আকবর আলি বলল, “দ্যাখ দ্যাখ! তোর জানের বন্ধু আর অর্ক, একই সময় প্রোগ্রাম হওয়ায় ও হিট হলো, আর তুই ফ্লপ ।” রাফিদ একটু ভ্রু কুচকে বলল, “এভাবে বোলো না! ও কি ইচ্ছে করে এমনটা করেছে নাকি?” আকবর আলি বলল, “ইচ্ছে করে করে নি, কিন্তু তোর শো একই সময়ে দেখে সময়টা-ও তো পাল্টাতে পারতো, তাই না? আর তোর খোঁজ কি নেয় ও? মনে তো হয় না । পপুলার হয়ে এখন আকাশে উড়ছে । জমিনে তোর মতো তুচ্ছ জীব এখন আর ওর নজরে পড়ে না ।” বলে রুম থেকে চলে গেলো আকবর আলি । রাফিদ মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো ।
“আপনারে প্রীতি ম্যাম ডাইকছে!” গালিবকে বলল দারোয়ান । গালিব উঠে গেলো প্রীতির রুমে । দরজার সামনে এসে বলল, “আসবো?” প্রীতি বলল, “জি আঙ্কেল! আসেন!” গালিব ভেতরে গেলো । প্রীতি গালিবকে বসতে বললে গালিব বসলো । তারপর প্রীতি বলল, “আসলে আপনি গতকাল যে কথাটা বলেছিলেন, সেটা একটু ভাবলাম । আমার কোন আপত্তি নেই আপনার ছেলেকে বিয়ে করতে । কিন্তু অফিসের আর পাচটা লোক যদি আপনাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করে সেটা কি ভালো হবে? আর আপনার ছেলে কি রাজি হবে এই বিয়েতে?” গালিব বলল, “শেষ কথার জবাবটাই আগে দেই । হ্যাঁ, আমার ছেলে অবশ্যই রাজি হবে এই বিয়েতে, কারণ ও ওর বাবাকে, মানে আমাকে অনেক ভরসা করে । এরপর আসি অফিসের লোকেদের সমালোচনার দিকে । ওরা কি বলল না বলল, তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না । আসল সত্য ওদের জানার কোন দরকার নেই । আল্লাহ জানেন, এটাই অনেক । তবে হ্যাঁ, কোন ডিসিশন জোড় করে নিয়ো না, মন থেকে নিয়ো । তারপর বোলো । এমন না আমার ছেলের সাথে বিয়েতে আমি তোমাকে জোড় করছি, আমি তোমাকে সাজেশন দিলাম কেবল ।” প্রীতি হালকা হাসিমুখে বলল, “এমা ছি ছি! আপনি জোড় করেছেন কই? আসলে আমি কেবল একটু নার্ভাস ।” গালিব বলল, “তাহলে আজ থাক, নার্ভাসনেস কাটিয়ে যখন তুমি মন থেকে একটা ভীতিহীন ডিসিশন নিতে পারবে, সেদিন আমাকে বোলো ।“
দুপুরের দিকের কথা । ঘরে এসে কাধ থেকে ব্যাগটা রেখে সোফায় বসে জুতা খুলতে লাগলো গালিব । অন্যান্য সোফায় বাকিরাও ছিলো । অনিক ভার্সিটি থেকে কেবল এসে খাচ্ছে । পুষ্পিতাও ডাইনিং টেবিলে বসে মোবাইল চালাচ্ছে । আর আরশি নানির সাথে মোবাইলে কি যেনো কাজ করছে । ঠিক সেই সময় ঘরে ঢুকল অর্ক । মন মরা । মিজান জিজ্ঞেস করলো, “কি হইছে নানুভাই?” শামসু জিজ্ঞেস করলো, “দাদুভাই? কি হয়েছে?” কুলসুম জিজ্ঞেস করলো, “কি হলো দাদুভাই? পরীক্ষায় কি হলো?” লুনা বলল, “ও মাই মাই গো! কি হইলো নানুভাই? কিছু কও!” অর্ক চুপচাপ দাড়িয়েই আছে । ডাইনিং টেবিল থেকে পুষ্পিতা বলল, “কি আর হবে, চেহারা দেখেই তো বোঝা যাচ্ছে চান্স পায় নি । শুধু শুধু টাকা খরচ করে ফর্ম ফিল-আপ করলো! যত্তসব!” গালিব বলল, “কিরে? কিছু তো বল!” অর্ক বলল, “ভেবো না নাটকের মতো আমি হঠাৎ লাফিয়ে উঠে বলবো আমি টিকে গেছি । প্রথমত রেজাল্ট তো আজ না, দ্বিতীয়ত পড়াশুনা তো তেমন একটা করাও হয় না আমার, তাই আহামরি ভালো পরীক্ষা দেই নি ।”

আগামী পর্বেঃ
অর্ক গেলো রাফিদের কাছে । জিজ্ঞেস করলো, “কিরে? কেমন আছিস?” রাফিদ একবার অর্কর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে “ভালো!” বলে ছাদ থেকে নিচে নামতে পা বাড়ালো । ছাদের দরজার কাছে এসে রাফিদের পথ আটকে দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো, “তুই এমন করছিস কেনো! অদ্ভুত!” রাফিদ তখন অর্কর কলার টেনে ধরে হিংস্র কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠলো, “অদ্ভুত আচরণ তুই করিস!”
×
বাবা(পর্ব-৭৩)

“জানতাম! খুব ভালো করে জানতাম! ও দেবে ভালো পরীক্ষা! হুহ! তাহলে তো হয়েই যেতো ।” বলে উঠলো পুষ্পিতা । গালিব পুষ্পিতাকে বলল, “তুমি প্লিজ ছেলেটাকে আর কিছু বোলো না! এমনিতেই ক্লান্ত হয়ে এসেছে ও!” তারপর অর্ককে বলল, “যা বাবা, তুই ঘরে যা , জামা কাপড় পালটে হাতমুখ ধুয়ে রেস্ট নে । কি হল না হল তা নিয়ে চিন্তা করিস না ।” অর্ক নিজের রুমে চলে গেলো । কুলসুম পুষ্পিতাকে বলল, “তোকে এতো কথা বলতে কে বলেছে রে! একটু কি চুপ থাকতে পারিস না!” পুষ্পিতা কিছু না বলে চলে গেলো ।
সেদিন সন্ধ্যার কথা । রাফিদের বাসার দরজায় নক করলো অর্ক । দরজা খুলল পপি । অর্ক জিজ্ঞেস করলো, “আপু, রাফিদ আছে?” পপি বলল, “না তো, ও তো ছাদে গেছে ।” অর্ক, “আচ্ছা ঠিক আছে ।” বলে নিজের ছাদে গেলো । গিয়ে সিড়ি দিয়ে উঠতে উঠতেই গানের আওয়াজ শুনতে পেলো অর্ক । রাফিদের গানের আওয়াজ । ছাদের একপাশে দাঁড়িয়ে শুনতে লাগলো রাফিদের গান । হুট করে সামনে গেলে হয়তো রাফিদ গান থামিয়ে দিতে পারে । তাই অর্ক দাড়িয়ে রইলো । অর্ক গান গাচ্ছে, “অলিরও কথা শুনে বকুল হাসে……………।” রাফিদের গান গাওয়া শেষ হতেই অর্ক গেলো রাফিদের কাছে । জিজ্ঞেস করলো, “কিরে? কেমন আছিস?” রাফিদ একবার অর্কর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে “ভালো!” বলে ছাদ থেকে নিচে নামতে পা বাড়ালো । অর্ক জিজ্ঞেস করলো, ”কিরে? যাচ্ছিস কোথায়?” রাফিদ কোন জবাব দিলো না । অর্ক রাফিদকে আটকাতে দৌড় দিলো । তারপর ছাদের দরজার কাছে এসে রাফিদের পথ আটকে দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো, “তুই এমন করছিস কেনো! অদ্ভুত!” রাফিদ তখন অর্কর কলার টেনে ধরে হিংস্র কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠলো, “অদ্ভুত আচরণ তুই করিস!” বলে এক টানে অর্ককে আছাড় মেরে ফেলে দিলো ছাদের ওপর । তারপর ছাদ থেকে চলে গেলো রাফিদ । অর্ক অবাক হয়ে গেলো । নিজেই নিজেকে বলল, “কি ব্যাপার! ও এমন করছে কেনো?”
অনিকের ঘরে এলো গালিব । দরজায় নক করে জিজ্ঞেস করলো, “আসবো?” অনিক উঠে দাড়িয়ে বলল, “ছি ছি বাবা! আমার রুমে আসবে আবার এভাবে বলা লাগে নাকি?” গালিব বলল, “না বাবা, তুমি তো বড় হয়ে গেছো, এখন তোমার হয়ত অনেক প্রাইভেসি আছে ।” অনিক বলল, “না বাবা, আমি সবসময় তোমার কাছে ছোট অনিকই থাকবো ।” গালিব বলল, “যাই হোক, শুনতে আসলাম এঙ্গেজমেন্টের জন্য যে রিংটা বানাতে দিয়ে এসেছিলি, ওটা কি এনেছিলি পড়ে?” অনিক বলল, “হ্যাঁ বাবা, দোকানে গিয়েছিলাম, কিন্তু আর একদিন সময় চাইলো, কাল দেবে বলেছে ।” গালিব বলল, “যাক, আলহামদুলিল্লাহ ।” অনিক বলল, “তোমাকে কেমন চিন্তিত দেখাচ্ছে?” গালিব বলল, “হ্যাঁ, সে কথাই তোর সাথে একটু শেয়ার করতে এলাম ।” অনিক বলল, “হ্যাঁ বলো কি বলবে!” গালিব আর অনিক বিছানায় বসলো । তারপর গালিব অনিককে বলল, “আমাদের অফিসের যিনি বস, প্রীতি, তার একটু সমস্যা আছে । তিনি কখনও মা হতে পারবেন না । এর জন্য তাকে কেউ বিয়ে করতে চায় না । জন্ম থেকেই ওর এই সমস্যা । আর এখন এজন্য উনাকে কেউ বিয়ে করতে চাইছেন না, কেউ চাইলেও সে খুব একটা ভালো না । তাই উনি অনেক চিন্তায় আছেন ।” অনিক বলল, “কি যে বলবো বাবা! আল্লাহ দিয়েছে উনাকে এই সমস্যা, তাও মানুষ উনাকে অবহেলা করছে । আল্লাহ নিশ্চয়ই ভালোর জন্যই দিয়েছেন এই সমস্যা! আমাদের দেশের এরকম কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষগুলো কবে যে এগুলো থেকে বিশ্বাস সরাবে!” গালিব বলল, “আমি উনার সাথে অর্কর বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি ।” এবারের কথা শুনে অনিকের চেহারা দেখে মনে হলো না ও খুব একটা খুশি হয়েছে ।
এদিকে আরশি নিজের রুমে মোবাইল চালাচ্ছে, পুষ্পিতা বারান্দায় সাজুর সাথে কথা বলছে । আরশি মোবাইলে হিন্দি সিরিয়াল দেখছে । সেখানে একজন মহিলা আর একজন পুরুষের ডিভোর্স হয়ে যাচ্ছে । সেটা দেখে আরশি ভাবছে, “আরে! ডিভোর্স হওয়া কতো সহজ একটা জিনিস! আমার মা বাবার ডিভোর্স হলে! ইশ! মায়ের সাথে ওই সাজু আঙ্কেলের বিয়ে দিয়ে দিতাম! লোকে বলবে আমি উলটা পালটা ভাবছি । কই! এই যে! হিন্দি সিরিয়ালে তো হচ্ছে!”
“না মানে! ওই মেয়ের সাথে তুমি অর্কর বিয়ে দেবে! কথাটা ভেবে বলছো তো!” গালিব হালকা হেসে বলল, “এইটাই তো সমস্যা । সবাই বড়ো বড়ো নীতি কথা ঠিকই বলে, কিন্তু সেটা যখন নিজের বা আপন কারও উপর হয়, সেই নীতি নৈতিকতা উড়ে যায় ।” অনিক বলল, “না আসলে বাবা, এগুলা না ওই প্রবাদ বাক্যে বা গল্প, টিভি সিনেমা এগুলোতেই মানায় । বাস্তবে ব্যাপারটা……। না ছেলেমেয়েহীন সাংসারিক জীবন যখন কাটাবে অর্ক, তখন তোমার কি মনে হয়, অর্কর ভালো লাগবে ব্যাপারটা?” গালিব বলল, “আমি জানি আমি বললে অর্ক কিছুতেই মানা করবে না । কিন্তু তবু হঠাৎ মনে একটু কেমন লাগতে শুরু করলো, তাই তোর সাথে একটু শেয়ার করলাম ।” অনিক বলল, “আচ্ছা বাবা, আমাকে একটু সময় দাও! আমি ভেবে বলি!” গালিব, “আচ্ছা, ঠিক আছে ।” বলে নিজের রুমে চলে গেলো ।
এদিকে রাফিদ বাসায় না যেয়ে বাইরে গেছে । রাস্তার পাশ দিয়ে হাটছে আর মনে মনে নিজেই নিজের সাথে কথা বলছে । “হুহ! উচু জায়গায় চলে গেছে আর আমার খোঁজ নেয় না! মানুষ ঠিকই বলে! বন্ধুরা উচু জায়গায় চলে গেলে ভুলে যায়!” আবার একটু হাটতে হাটতে ভাবতে লাগলো, “আমি কি একটু বেশি ভাবছি!” এমন সময় রাস্তার পাশে একটা মেয়েকে দেখতে পেলো রাফিদ । মেয়েটাকে দেখে বেশ ভালো লাগলো ওর । এক মুহূর্তের জন্য তাকে পাওয়ার ইচ্ছা জাগলেও আবার সে চিন্তা মন থেকে সরিয়ে নিলো । তারপর নিজের বাসার দিকে ফিরতে লাগলো । মেয়েটা আর কেউ না, প্রীতি ।

আগামী পর্বেঃ
মোবাইল চালাতে চালাতে অন্য রুমের দিকে যাচ্ছিলো আরশি, ঠিক সেই সময় গালিবও এদিকেই আসছিলো । ভুলবশত আরশির সাথে ধাক্কা লাগে আরশির আর আরশির হাত থেকে মোবাইল পড়ে স্ক্রিন ভেঙ্গে গেলো । গালিব মোবাইলটা তুলে দিতে দিতে বলল, “সরি আরশি! ভুল হয়েছে গেছে রে!” আরশি বাবা ইট’স ওকে বলার বদলে ছোঁ মেরে হাত থেকে মোবাইলটা কেড়ে নিয়ে রাগান্বিত স্বরে বলল, “কি সমস্যা তোমার! জীবনে তো কিছু কিনে দাও নি! এখন কি যা দিয়েছো তাও ধংস করতে চাইছো! ফকির বাপ পেয়েছিলাম আমি একটা!”
×
বাবা(পর্ব-৭৪)

“হ্যাঁ বলো!” পপিকে কল করেছে অনিক, সেই কল ধরেই জবাবটা দিলো অনিক । অনিক নিজের রুমে বারান্দায় দাঁড়িয়ে, আর পপি একটা শার্টের বোতাম লাগাচ্ছে । অনিক জিজ্ঞেস করলো, “কেমন আছো?”
“এইতো আলহামদুলিল্লাহ ভালো । তুমি?” জিজ্ঞেস করলো পপি ।
“এইতো, আলহামদুলিল্লাহ ভালো । কি করো?”
“আর বোলো না! রাফিদের একটা শার্টের বোতার খুলে গেছে, মা সেটা দেখে আমাকে বলল একটু লাগিয়ে দিতে ।”
“ও আচ্ছা ।”
অনিকের গলা হালকা গম্ভীর শোনা যাচ্ছিলো, সেটা বুঝতে পেরে পপি জিজ্ঞেস করলো, “কোন কিছু নিয়ে টেনশনে আছো নাকি?”
“উম…হ্যাঁ । মূলত তোমাকে কলও করেছি সে কারণে ।” বলল অনিক ।
“ঠিক আছে! বলো ।”
“আমার বাবার অফিসের যিনি বস, প্রীতি……”
অনিকের কথা শেষ হতে না হতেই পপি বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ, চিনি উনাকে । আমার বাবাকে তো উত্তম মধ্যমও দিয়েছে ।”
“হ্যাঁ, উনার একটা সমস্যা আছে ।”
“তাই! বাবা শুনলে তো খুশিতে নাচতে শুরু করবেন ।”
“আরে বলতে তো দাও!”
“আচ্ছা বলো ।”
অনিক বলল, “উনি জন্মথেকেই উনার শরীরে একটা অঙ্গ মিসিং ছিলো । যার জন্য উনি জীবনে কোনোদিন মা হতে পারবেন না ।” কথা শুনে কষ্ট হলো পপির । বলল, “হায় আল্লাহ! এটা তো উনার জন্য অনেক কষ্টকর!” অনিক বলল, “হুমম । উনি কষ্টেই তো আছেন । উনাকে কেউ বিয়ে করতে চায় । যারা চায়, তারা ভালো না । কিন্তু আমার বাবা যখন এটা জানতে পারলেন, তখন উনাকে বলেছে উনার সাথে আমার ভাই অর্কর বিয়ে দেবেন ।” পপি বলল, “ও, এটাই কি তোমার সমস্যা ।” অনিক বলল, “না মানে, কেমন যেনো লাগছে না ব্যাপারটা” পপি শার্টটা একপাশে রেখে ভালো করে বসে বলল, “শোন, আঙ্কেল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কারণ মেয়েটাকে কেউ বিয়ে করতে চাইছে না এজন্য । একটা বিয়ে হওয়ার তো এমন কোন শর্ত নেই যে মেয়েটাকে মা হওয়ায় সক্ষম হতেই হবে!” অনিক বলল, “তারপরও, যখন ওদের বয়স হবে, তখন একাকীত্ব তো ওদের ঘিরে ধরবে । ছেলে মেয়ে ছাড়া জীবন ওদের জন্য কষ্টকর হয়ে যাবে না!” পপি বলল, “না । ইনশাআল্লাহ হবে না । আর না হয় ওরা দত্তক নেবে কাউকে! আরেকটা কথা শোন । আল্লাহ যদি না চান, তাহলে আমরা সবাই চাইলেও ওর বিয়ে প্রীতি নামের মেয়েটার সাথে হবে না । আর আল্লাহ যদি চান, তাহলে কেউ না চাইলেও ওদের বিয়ে হবে ।” অনিক বলল, “তা ঠিক । আরেকটা সমস্যা, মেয়েটা একটা অফিস সামলাচ্ছে, নিশ্চয় অর্কর চেয়ে বড়ো হবে!” পপি বলল, “তো কি হয়েছে? এরকমও কি কোন শর্ত আছে নাকি যে ছেলে ছোটো আর মেয়ে বড়ো হওয়া যাবে না?” অনিক এবার হালকা হেসে বলল, “যাক, তোমার কাছ থেকে এগুলো শুনে একটু ভরসা পেলাম । বাবা তাহলে কোন ভুল সিদ্ধান্ত নেন নি । আসলে বাবার মনেও হালকা ভয়ের সঞ্চার হয়েছিলো, তাই উনি আমার সাথে সবটা শেয়ার করেছিলেন ।” পপি বলল, “একদম নিশ্চিন্ত থাকো, আঙ্কেল কোন ভুল সিদ্ধান্ত নেন নি । বরঞ্চ আঙ্কেল একটা সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন । কারণ এর ফলে অনেকে বলতে পারে আঙ্কেল মেয়ের টাকা দেখে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, অথবা তোমার বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠরা কিংবা আন্টিই বারণ করতে পারেন । এতো কিছু ভেবেও আঙ্কেল যে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এজন্য আঙ্কেলকে স্যালুট জানাই!” অনিক বলল, “ঠিক আছে, আমি তাহলে বাবাকে বলে আসি বাবা ভুল সিদ্ধান্ত নেন নি ।” পপি বলল, “ঠিক আছে ।”
মোবাইল চালাতে চালাতে অন্য রুমের দিকে যাচ্ছিলো আরশি, ঠিক সেই সময় গালিবও এদিকেই আসছিলো । ভুলবশত আরশির সাথে ধাক্কা লাগে আরশির আর আরশির হাত থেকে মোবাইল পড়ে স্ক্রিন ভেঙ্গে গেলো । গালিব মোবাইলটা তুলে দিতে দিতে বলল, “সরি আরশি! ভুল হয়েছে গেছে রে!” আরশি বাবা ইট’স ওকে বলার বদলে ছোঁ মেরে হাত থেকে মোবাইলটা কেড়ে নিয়ে রাগান্বিত স্বরে বলল, “কি সমস্যা তোমার! জীবনে তো কিছু কিনে দাও নি! এখন কি যা দিয়েছো তাও ধংস করতে চাইছো!” গালিব অবাক হয়ে গেলো । ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস্ক করলো, “কি হয়েছে রে মা! তুই এমন করছিস কেনো!” আরশি আবার চেচিয়ে উঠলো, “এমন করছি কেনো! বোঝো না এমন করছি কেনো! ফকির বাপ পেয়েছিলাম আমি একটা!” আরশির চ্যাঁচামেচিতে ইতোমধ্যে সেখানে হাজির হয়ে গেছে অর্ক, অনিক, লুনা, কুলসুম, মিজান আর শামসু । পুষ্পিতা-ও চেচামেচির আওয়াজ শুনে কল রেখে বারান্দা থেকে চলে এলো । আরশির কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রেগে গিয়ে লুনা বলল, “মাই মাই গো আরশি! তুই এত্তো বেয়াদ্দপ হইছোস ক্যান! বাপের লগে কেউ এমনে কথা কয়!” আরশি বলল, “হ্যাঁ তাই তো! দোষ তো খালি আমারই! এই মহান আসাদুল্লাহ গালিব তো নিষ্পাপ! শিশু!” গালিব হতভম্ব হয়ে গেলো । কুলসুম এসে আরশির গালে ঠাস করে একটা চড় লাগিয়ে বসলো । তারপর বলল, “আমাদের যুগে ছেলেমেয়েদের মেরে হাড্ডিগুড্ডি এক করে দিতো! এই তোদের যুগে এসব হয় না বলে ছেলে মেয়েরা একদম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে!” আরশি এবার কাঁদতে কাঁদতে, “মারো! খুন করে ফেলো আমাকে! বেঁচে যাবা তো তোমরা তাহলে!” বলে সেখান থেকে তেড়ে নিজের রুমে চলে গেলো আরশি । মিজান পুষ্পিতাকে বলল, “ওই পুষ্পিতা! তোর মাইয়া জামাইবাবার লগে বদমাইশি কইরা গেলো তুই চুপচাপ খাড়ায় ছিলি ক্যান!” পুষ্পিতা “আচ্ছা আমি দেখছি ওর কি হয়েছে!” বলে নিজের ঘরে চলে গেলো । গালিবও নিজেকে সামলে বলল, “আম্মা, আব্বা, মা, বাবা, আপনারা ঘরে যান । অনেক রাত হয়েছে ।” ওরা চলে গেলো । গালিব অর্ক আর অনিককে বলল, “তোরাও যা ঘরে ।” অনিক বলল, “বাবা! তুমি ওকে মারলে না কেনো! একটা চড় লাগালেই ওর আক্কেল ফিরতো!” গালিব বলল, “হ্যাঁ, শাসন অবশ্যই করতাম ওকে । কিন্তু ও এমন এমন কথা বলল, আমি নিজেই আক্কেল হারিয়ে ফেলেছিলাম ।” অর্ক বলল, “ওকে আরও বেশি করে শাসন করা উচিৎ! এতো সামান্য কারণে কেউ রাগ করে!” গালিব বলল, “কেউ যখন কাউকে অপছন্দ করা শুরু করে, তখনই এরকম সামান্য কারণে রাগ করে । ও কি তবে আমাকে অপছন্দ করা শুরু করলো?”

আগামী পর্বেঃ
“কিরে! বাবার সাথে এরকম আচরণ কেনো করলি?” আরশি বলল, “হাটতে হাটতে ফেসবুক চালাচ্ছিলাম! দেখলাম আমার এক বান্ধবী আইফোন কিনেছে! গত বছরই একটা কিনেছিলো, এ বছর আরেকটা কিনেছে! এই যে সাজু আঙ্কেল প্রথম দেখায়ই পাচ হাজার টাকা দিলো, আর আমার বাবা! মাসে একশোও দেয় কিনা সন্দেহ!” পুষ্পিতা বলল, “আচ্ছা, তুই চাস কি বল আমাকে ।” আরশি বলল, “তোমার আর বাবার ডিভোর্স আর তারপর তোমার আর সাজু আঙ্কেলের বিয়ে!”
×
বাবা(পর্ব-৭৫)

“কিরে! বাবার সাথে এরকম আচরণ কেনো করলি?” রুমে এসে আরশিকে বলল পুষ্পিতা । আরশি বিছানায় বসে এক হাত দিয়ে চাদর মুঠি করে ধরে জোড়ে জোড়ে শ্বাস ফেলছিলো । রাগের বহিঃপ্রকাশ । পুষ্পিতা কাছে যেয়ে বলল, “এই কিরে? তুই এতো রেগে যাচ্ছিস কেনো?” আরশি তখন পুষ্পিতার দিকে তাকিয়ে এমন একটা কথা বলল, যে পুষ্পিতা থ হয়ে গেলো । “মা তুমি সাজু আঙ্কেলকে বিয়ে করবে?” পুষ্পিতা কিছুক্ষণ চুপ করে আরশির দিকে তাকিয়ে তারপর বলল, “মাথা ঠিক আছে তোর?” আরশি বলল, “একদম ঠিক আছে মা! বলো বিয়ে করবে কিনা?” পুষ্পিতা বলল, “এই তোর কি ভীমরতি ধরেছে? নাকি জীনে ধরেছে? এসব কি ধরণের কথাবার্তা?” আরশি বলল, “ও! বয়ফ্রেন্ডের সাথে ডেটিং করতে যাও সেটা খুব ভালো কথা, না?” পুষ্পিতা হালকা রেগে বলল, “এই তুই এসব কি বলছিস!” পুষ্পিতা মায়ের দিক থেকে চোখ সরিয়ে বলল, “বাদ দাও সেসব কথা!” পুষ্পিতা বলল, “তাহলে রেগে গেলি কেনো সেটা তো বল!” আরশি বলল, “হাটতে হাটতে ফেসবুক চালাচ্ছিলাম! দেখলাম আমার এক বান্ধবী আইফোন কিনেছে! গত বছরই একটা কিনেছিলো, এ বছর আরেকটা কিনেছে! ফেসবুক জুড়ে আমার বান্ধবীরা দামি দামি নতুন নতুন জিনিস কিনে পোস্ট দেয়! আর আমি নতুন কিছু অনেক কষ্টে কিনলেও কাউকে দেখাতে পারি না! কারণ ওরা ব্র্যান্ডের জিনিস কেনে! আর আমি কম দামি সস্তা!” পুষ্পিতা বলল, “তোর বাবা কোনোদিন তোদের কোন কিছুতে না করেছে? আর সে পারবে কি করে যদি অতো টাকা না থাকে তার কাছে?” আরশি বলল, “কেনো পারবে না! তাহলে বাবা হয়েছে কোন দুঃখে! এই যে সাজু আঙ্কেল প্রথম দেখায়ই পাচ হাজার টাকা দিলো, আর আমার বাবা! মাসে একশোও দেয় কিনা সন্দেহ!” পুষ্পিতা বলল, “তুই চাইলে তো দেয়ই!” আরশি বলল, “চাইতে হবে কেনো! সে দিতে পারে না! সাজু আঙ্কেলের কাছে কি আমি চেয়েছি!” পুষ্পিতা আর কিছু বলল না । কিছুক্ষণ চুপ থেকে জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা, তুই চাস কি বল আমাকে ।” আরশি বলল, “তোমার আর বাবার ডিভোর্স আর তারপর তোমার আর সাজু আঙ্কেলের বিয়ে!”
গালিব নিয়ে রুমে এলো অনিক আর অর্ক । গালিবকে ওরা বিছানায় বসালো । গালিব তখন ওদের বলল, “আচ্ছা বাবা? আমি কি তোদের কখনও ঠকিয়েছি? মানে তোদের ইচ্ছে কি কখনও অপূর্ণ রেখেছি আমি?” অর্ক বলল, “না বাবা! এটা কি বলছো তুমি! তুমি তো আরও নিজে না নিয়ে আমাদের দিয়েছো!” গালিব বলল, “তবু! আমি মনে হয় ভালো বাবা হতে পারিনি ।” অনিক বলল, “বাবা! এটা তুমি কি বলছো! তুমি আমার আইফোনের জন্য কত কিছু করেছো! আমি জানি তুমি আরশির জন্য এটা করছো । তুমি ওর জন্য ওর পছন্দের জুতোও এনেছো! ও তো কেবল দামি আর ব্র্যান্ডই বোঝে । কেউ ভালোবেসে কিছু আনলে সেটার মর্ম বোঝে না ।” গালিব একটা হতাশার শ্বাস ফেলে বলল, “ছোটোবেলায় তোদের প্রত্যেককে আমি শাসন করেছি । তবু মেয়েটা এমন যে কেনো হলো! আল্লাহই জানেন ।” অর্ক বলল, “এটা তোমার দোষ না বাবা! বয়সের দোষ ।” অনিক বলল, “হ্যাঁ বাবা, ঠিক তাই । বয়সের দোষে আমিও তো বখে গিয়েছিলাম । কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমি এখন ঠিক আছি ।” গালিব আবার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “আমার মেয়েটাও যেনো ঠিক হয়ে যায় ।” কিছুক্ষণ সবাই চুপ । তারপর অনিক বলল, “আচ্ছা বাবা! তুমি আর অর্কও যখন এখানে আছে তখন ওই ব্যাপারে একটু কথা বলি!” অর্ক জিজ্ঞেস করলো, “কোন ব্যাপারে?” অনিক বলল, “তোর বিয়ের ব্যাপারে ।” অর্ক ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, “আমার বিয়ে!”
“পাগল হয়েছিস! ছেলেমেয়েরা বাবা-মাকে একসাথে দেখতে চায়! আর তোর মাথায় কি ভুত ঢুকেছে রে!” আরশির কথা শুনে বলল পুষ্পিতা । আরশি বলল, “কেনো মা! অহরহ হচ্ছে তো পৃথিবীতে! হচ্ছে না!” পুষ্পিতা বলল, “হচ্ছে, কিন্তু সেটা তো কারণে! অকারণে না! সেখানে স্বামী বা স্ত্রী কেউ একজন খারাপ থাকে বা দুজনের মতবিরোধ হয় বলে ডিভোর্স হয় ।” আরশি বলল, “আমার বাবা তোমাকে বিলাসি জীবনযাপন দিতে পেরেছে?” পুষ্পিতা বলল, “এটা ডিভোর্স এর কোন কারণ হল!” আরশি আবার জিজ্ঞেস করলো, “আমার বাবা তোমাকে খরচা দেয়?” পুষ্পিতা বলল, “দেয় তো! দেয় না কে বলেছে! উনার সামর্থ্য মতো উনি দেন । হ্যাঁ সেটা কম বলে আমার খারাপ লাগে, কিন্তু কি আর করবো আমি!” আরশি বলল, “আমার বাবা তোমাকে সারাদিন খাটান! ঘরের কাজ সব তুমি করো!” পুষ্পিতা বলল, “ওরে! আমি খাটতে পারি না বলে উনি এতো স্বল্প আয়ের মানুষ হয়েও আমার জন্য কাজের বুয়া ঠিক করেছেন!” আরশি এবার কিছুক্ষণ ভেবে তারপর বলল, “তুমি সাজু আঙ্কেলকে ভালোবাসো কি বাসো না?” এবার পুষ্পিতা কিছু বলতে পারলো না ।
গালিব অর্ককে সবটা খুলে বলল । তারপর অনিক বলল, “আমি পপির সাথে সব শেয়ার করেছি বাবা । ও নিজেও এ ব্যাপারটাকে সাপোর্ট করেছে । বলেছে তুমি কোন ভুল করো নি ।” গালিব অর্ককে বলল, “তোর কোন সমস্যা নেই তো?” অর্ক বলল, “বাবা! তুমি আমার জীবনসঙ্গিনী হিসেবে কাউকে বেছে নিয়েছো, এটাই আমার জন্য অনেক । আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সে অনেক ভালো হবে ।” গালিব বলল, “যাক আলহামদুলিল্লাহ । অনিকের বিয়েটা হয়ে যাক, তারপর তোদের বিয়ের ব্যাপারে না হয় কথা বলা যাবে । এখন যা! অনেক রাত হয়ে গেছে!”

আগামী পর্বেঃ
আরশি বলল, “শুধু বলো তুমি সাজু আঙ্কেলকে বিয়ে করতে চাও কি না?” পুষ্পিতা বলল, “চাইলেও কি সেটা সম্ভব?” আরশি বলল, “সম্ভব! তুমি চাইলেই সেটা সম্ভব মা!” পুষ্পিতা চুপ হয়ে গেলো । আরশি জিজ্ঞেস করলো, “তাহলে বলো! বিয়েটা করতে চাও!” পুষ্পিতা নিশ্চুপ । আরশি আবার জিজ্ঞেস করলো, “কি হল মা! বলো!” পুষ্পিতা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “হ্যাঁ । আমি রাজি । সাজুকে আমি বিয়ে করবো ।”
×
বাবা(পর্ব-৭৬)

“কি! চুপ হয়ে গেলে তো? তার মানে এখনও সাজু আঙ্কেলকে তুমি ভালোবাসো ।” পুষ্পিতাকে বলল আরশি । পুষ্পিতা বলল, “ভালবাসলেই যে বিয়ে করতে হবে এমন তো কোন কথা নেই তাই না?” আরশি বলল, “না মা! কিন্তু তাকেই বিয়ে করতে হয় যাকে ভালোবাসা যায়! তুমি শুধু বলো তুমি সাজু আঙ্কেলকে বিয়ে করতে চাও কি না?” পুষ্পিতা বলল, “চাইলেও কি সেটা সম্ভব?” আরশি বলল, “সম্ভব! তুমি চাইলেই সেটা সম্ভব মা!” পুষ্পিতা চুপ হয়ে গেলো । আরশি জিজ্ঞেস করলো, “তাহলে বলো! বিয়েটা করতে চাও!” পুষ্পিতা নিশ্চুপ । আরশি আবার জিজ্ঞেস করলো, “কি হল মা! বলো!” পুষ্পিতা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “হ্যাঁ । আমি রাজি । সাজুকে আমি বিয়ে করবো ।” আরশির মুখে হাসি ফুটলো । তারপর বলল, “শোন তাহলে! আমি যা বলবো, কাল থেকে তাই তাই-ই করবে!” পুষ্পিতা জিজ্ঞেস্ক করলো, “কি?” পুষ্পিতা বলল, “বাবাকে এমন কিছু করতে বাধ্য করাতে হবে, যেনো বাবা তোমার সাথে উঁচু গলায় কথা বলে!” পুষ্পিতা হেসে বলল, “সেটা কোনোদিনও সম্ভব না । তোর বাবার রাগ আমি আজ পর্যন্ত কখনো অযথা দেখিনি ।” আরশি বলল, “চেষ্টা তো করি! কাল তুমি বাবাকে বলবে তোমাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতে । বাবার তো সকালে অফিস! অফিসে যাবার আগে ঘুরতে যাবার বায়না ধরবে । বাবাকে বলবে অফিস আজ না করতে । কিন্তু বাবা তো অফিসে যাবেই! তো তুমি বাবার সাথে এমনভাবে জেদ ধরবে, যেন বাবা তোমার ওপর রাগতে বাধ্য হয়! আর হ্যাঁ! তখন তুমি বাবার রাগ মোবাইলে রেকর্ড করবে!” পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “সেটা দিয়ে কাজ?” আরশি বলল, “সেটা কাজে লাগিয়েই তো ডিভোর্স কেস জিতবে তুমি!” পুষ্পিতা একটু ভেবে বলল, “এই! তোর মুখে ভালোই বুদ্ধি রে!” আরশি বলল, “হ্যাঁ! এখন দেরি না করে ঘুমাও! তাড়াতাড়ি উঠতে হবে । বাবাতো তাড়াতাড়ি উঠে অফিস চলে যায় ।” পুষ্পিতা “হ্যাঁ ঠিক বলেছিস!” বলে আরশির সাথে শুয়ে পড়লো ঘুমাবার উদ্দেশ্যে ।
পরদিনের কথা । আজ সোমবার । মা বাবা আর শ্বশুর শাশুড়ি আসার পর থেকে গালিব ড্রইংরুমে মেঝেতে রাতে ঘুমায় । ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে ডাইনিং টেবিলে নাস্তা করছিলো গালিব । এদিকে পুষ্পিতা অ্যালার্মের আওয়াজ শুনে উঠে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে লাফিয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়লো । তারপর ড্রইংরুমের দিকে আসতে আসতে মনে মনে বলল, “আল্লাহ! এখনও যেনো না যায়!” ড্রইং রুমের দিকে আসার আগেই দেখলো ডাইনিং রুমে গালিব । গালিব উল্টো ঘুরে বসে থাকায় পুষ্পিতাকে দেখতে পেলো না । পুষ্পিতা মনে মনে, “যাক! এখনও যায় নি!” বলে যেই এগোতে যাবে, তখনই মনে পড়লো, আরশি মোবাইলে রেকর্ড করতে বলেছিলো । পুষ্পিতা আবার গেলো নিজের রুমে । মোবাইল খুজলো, অনেক কষ্টে পেলো । তারপর সেটা নিয়ে আসতে আসতে রেকর্ডার অ্যাপ খুজতে লাগলো । খুজতে খুজতে নিজেই নিজেকে বলল, “প্রয়োজনের সময় একটা অ্যাপও খুঁজে পাওয়া যায় না!” তারপর অ্যাপটা ওপেন করে রেকর্ডার অন করে এলো ডাইনিং রুমে । গালিব তখন খাওয়া শেষ করে জুতো পড়ছে । পুষ্পিতা কাছে গিয়ে পাশে বসলো । গালিব হালকা হাসিমুখে বলল, “কি ব্যাপার! আজ এতো তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে পড়লে যে?” পুষ্পিতা বলল, “এমনি মন ভালো না ।” গালিব জিজ্ঞেস করলো, “সেকি কেন! শরীর খারাপ করে নি তো?” পুষ্পিতা বলল, “না তাও না ।” গালিব জিজ্ঞেস করলো, “তাহলে?” পুষ্পিতা বলল, “অনেকদিন কোথাও ঘুরতে যাই না! আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাও না!” গালিব বলল, “আচ্ছা, আজ অফিস থেকে আসি, তারপর যাবো ইনশাআল্লাহ ।” পুষ্পিতা বলল, “তখন তো অনেক দেরি হয়ে যায়! এখনই চলো!” গালিব বলল, “তা কি করে হয়! এখন আমার অফিস না । তুমিই বলো! নতুন অফিসে এসেছি অভার নাইট শুরু করেছি খুব একটা বেশি দিন তো হয় নি । এখন অফিস কামাই দিলে কি চলে?” পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “একটা দিন আমার জন্য বের করতে পারবে না!” গালিব বলল, “আহা! রাগ করছো কেনো! বললাম তো বিকেলে নিয়ে যাবো!” পুষ্পিতা মনে মনে বলল, “এই লোকের রাগ টাগ কিছুই নেই! মলিন স্বরে কথা বলছে একদম!” তারপর গালিবকে বলল, “না তা কেনো, রাগ করবো কেনো, তবে মনে আঘাত পেলাম । আমার চেয়ে তোমার অফিসটাই বেশি হয়ে গেলো!” গালিব বলল, “আচ্ছা বেশ! তাহলে চলো! আমার অফিসে! তোমাকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসি আর সবাই সাথে পরিচয় করিয়ে আসি ।” পুষ্পিতা বলল, “না বাবা! থাক! তুমি যাও!” গালিব বলল, “সেকি কেন! একটু আগেই তো ঘুরতে যাবে বলছিলে!” পুষ্পিতা, “না বাবা! বাদ দাও!” বলে নিজের রুমে চলে এলো । গালিব কিছু না বুঝতে পেরে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে অফিসের দিকে রওনা হলো । পুষ্পিতা নিজের রুমে যেতে যেতে মনে মনে বলল, “আমাকে অফিসে নিয়ে যেতো! কোনদিন যাই নি! কেমন দেখাতো আমাকে কে জানে! ওখানে বোধ হয় আরও সুন্দরী মহিলারা চাকরি করে!”
এদিকে রাফিদও যাচ্ছে চাকরির জন্য । ওর একটা বন্ধু ওকে একটা চাকরির খোঁজ দিয়েছে । সেখানে কেবল লেখা ছিলো অফিসের একজন কর্মচারী দরকার, বেতন মাসে বিশ হাজার । হাতছাড়া করলো না চাকরিটা রাফিদ । বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য । বাসে উঠতে যাবে এমন সময় দেখলো, গতকালকের সেই মেয়েটা অর্থাৎ প্রীতি, এই বাসেই উঠছে । রাফিদ এমন একটা জায়গায় বসলো, যেখানে দুটো সিটই ফাকা আছে । ওর মন চাচ্ছিলো প্রীতি যেনো ওর পাশেই বসে । ওর চাওয়া পূরণ হল । একটু পর প্রীতি ওর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো, “এক্সকিউজ মি! আমি কি এখানে বসতে পারি?”

আগামী পর্বেঃ
কি একটা কোথায় রাফিদ আর প্রীতি দুজনেই হেসে উঠলো । তারপর রাফিদ বলল, “আপনি কিন্তু ভালোই হাসাতে পারেন! শুনেছি যারা ভালো হাসাতে পারে, তাদের জীবনেই নাকি হাসির অভাব । আপনারও কি তাই?” কথাটা শুনে মুহূর্তের মধ্যে প্রীতির মুখের হাসি চলে গেলো । রাফিদও এটা দেখে ওর মুখের হাসি চলে গেলো । রাফিদ বলল, “আ’ম সো সরি যদি আমি আপনাকে কোনোভাবে কষ্ট দিয়ে ফেলি!”
×
বাবা(পর্ব-৭৭)

“জি বসুন!” প্রীতিকে বলল রাফিদ । প্রীতি রাফিদের পাশে এসে বসলো । প্রীতির নামটা জানতে ইচ্ছে করছে রাফিদের । কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে হঠাৎ প্রশ্ন করলো রাফিদ, “আপনি কি জব করতে যাচ্ছেন?” প্রীতি বলল, “জি, আসলে আমি নিজেই একটা কোম্পানির মালিক ।” রাফিদের চোখ অবাক হয়ে বড় বড় হয়ে গেলো । প্রীতি রাফিদের চাহনি দেখে হেসে উঠলো । তারপর নিজেকে সামলে বলল, “সরি সরি! আসলে আপনাকে দেখতে অনেক ফানি লাগছিলো যখন আপনি ওভাবে তাকিয়েছিলেন । যদিও আমি জানি আপনি কেনো ওভাবে তাকিয়েছিলেন ।” রাফিদ জিজ্ঞেস করলো, “বলুনতো কেনো?” প্রীতি বলল, “আপনি ভাবছিলেন কোম্পানির মালিক আবার লোকাল বাসে কি করে । আসলে আমার গাড়িতে বা ড্রাইভারের সমস্যা থাকলে আমি লোকাল বাসেই উঠে পড়ি । অভ্যাস আছে আমার ।” রাফিদ বলল, “ওয়াও! আপনি তো অনেক দারুণ একজন মানুষ!” প্রীতি বলল, “হ্যাঁ, অবশ্য প্রত্যেকটা মানুষকেই প্রত্যেকটা জিনিসের অভ্যাস করে রাখা দরকার । যেনো সে যেকোনো পরিস্থিতিতে প্রস্তুত থাকতে পারে ।” রাফিদ বলল, “হুম!” তারপর আবার দুজনে অনেকক্ষণ চুপ । তারপর প্রশ্নটা এলো প্রীতির কাছ থেকে । “আপনি কোথায় যাচ্ছেন?” রাফিদ বলল, “এইতো, জব খুজতে যাচ্ছি ।” প্রীতি ওপর নিচ মাথা নাড়লো । তারপর আবার দুজনে অনেকক্ষণ চুপ । রাফিদই এরপর সাহস করে বলল, “আমি রাফিদ!” প্রীতি রাফিদের দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি প্রীতি । পরিচয় হয়ে ভালো লাগলো ।” তারপর দুজনে নানান কথাবার্তা বলতে লাগলো ।
“আসবো?” রেডিও স্টেশনে গিয়ে ইনানের রুমের সামনে এসে বলল অর্ক । ইনান বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ! এসো এসো!” অর্ক যেয়ে ভেতরে বসলো । ইনান বলল, “কি জাদু করলে তুমি অর্ক! তোমার ভিডিও দেড় মিলিয়ন ভিউ ক্রস করে ফেলেছে! মানে আমি যে কি পরিমাণে খুশি তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না!” অর্কর মুখে হাসি ফুটলো । তারপর আশেপাশে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কই, ইন্টারভিউ নেবার কথা ছিলো না ওই লোকের সাথে আমার?” ইনান বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ! বোসো, ওই টিভি চ্যানেল থেকে গাড়ি আসবে তোমাকে নিতে । ওইখানকার স্টুডিওতে রেকর্ড হবে ।” অর্ক, “ও, আচ্ছা!” বলে বসে রইলো । একটু পর দারোয়ান এসে বলল, “স্যার! এই অর্ক ভাইরে নিয়া যাইতে আইছে টিভি থেইকা!” অর্ক উঠলো যাবার জন্য । ইনান অর্ককে শুভকামনা জানালো, “অল দ্যা বেস্ট!” অর্ক “থ্যাঙ্ক ইউ স্যার!” বলে চলে গেলো । গাড়িতে ও আর ড্রাইভার ছাড়া কেউ নেই । ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলো, “আর কেউ আসেন নি?” ড্রাইভার বলল, “নতুন নতুন এই পথে আইতেছো, এহন তোমার কদর হইলেও তা আহামরি হবেন না! যতো তুমি পপুলার হইবা, ততো তুমি কদর বেশি পাইবা ।” কথাটা অর্কর ইগোতে খানিক লাগলেও নিজেকে সামলে নিলো বাবার একটা কথা মনে করে । গালিব ওকে বলেছিলো, বিমানও আকাশে ওড়ার আগে মাটিতে লেগে থাকে । কিচ্ছুক্ষণ না দৌড়লে সে উড়তে পারে না । ঠিক তেমনি মানুষকেও উড়তে হলে কিছুদিন একটু মাটিতেই দৌড়তে হয় ।
কি একটা কোথায় রাফিদ আর প্রীতি দুজনেই হেসে উঠলো । তারপর রাফিদ বলল, “আপনি কিন্তু ভালোই হাসাতে পারেন! শুনেছি যারা ভালো হাসাতে পারে, তাদের জীবনেই নাকি হাসির অভাব । আপনারও কি তাই?” কথাটা শুনে মুহূর্তের মধ্যে প্রীতির মুখের হাসি চলে গেলো । রাফিদও এটা দেখে ওর মুখের হাসি চলে গেলো । রাফিদ বলল, “আ’ম সো সরি যদি আমি আপনাকে কোনোভাবে কষ্ট দিয়ে ফেলি!” প্রীতি ঠোঁটের কোণে হাসি এনে বলল, “ইট’স ওকে! বাই দ্যা ওয়ে, আপনি তো আপনার বাবার সম্পর্কে কিছু……।” প্রীতি কথা শেষ করতে না করতেই হেল্পার ডেকে উঠলো, “এ উত্তরা! উত্তরা!” রাফিদ বলল, “আমাকে এখন নামতে হবে!” প্রীতি বলল, “ও আচ্ছা! আল্লাহ হাফেজ!” রাফিদ ধীরে ধীরে নামতে লাগলো, ভেবেছিলো প্রীতি ওকে ফোন নাম্বার দেবে । কিন্তু যখন দিলো না, তখন প্রীতির কাছে যেয়ে বলল, “আমার নাম্বারটা রাখুন! লাগলে কল করবেন!” প্রীতি হাসিমুখে মোবাইলটা হাতে নিয়ে বলল, “ঠিক আছে, বলুন ।” রাফিদ ওর ফোন নাম্বার প্রীতিকে দিলো এবং প্রীতি সেটা মোবাইলে তুলে রাখলো । তারপর আবারও প্রীতির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো রাফিদ, নেমে গেলো বাস থেকে ।
এদিকে অর্ককে নিয়ে আসা হলো সেই স্টুডিওতে, যেখানে আবিরের ইন্টারভিউ নেয়া হবে । স্টুডিওতে এখন অন্যান্য ক্যামেরাম্যান, ডেকরেটর ইত্যাদি লোকজন ক্যামেরা ফিট করা, লাইট ঠিক করা, ডেকোরেশন করা ইত্যাদি কাজ করছে । মূল স্টেজে বসে আছে দুজন । একজন আবিরের প্রায় সমান-ই বলা চলে একটা ছেলে, আরেকজন মহিলা । অর্ক কাছে যেয়ে ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করলো, “আপনি কি ফাহাদ?” ছেলেটা হ্যাঁ করে অর্কর দিকে তাকিয়ে বলল, “হ্যাঁ, কিন্তু আপনি জানলেন কি করে?” অর্ক বলল, “আন্দাজ করেছি! তবে সত্যি হয়েছে দেখে ভালো লাগলো । আমি সেদিনের আরজে অর্ক ।” ফাহাদ লোকটার ঠোঁটের কোনে ইয়া বড় একটা হাসি ফুটে উঠলো । সে উঠে দাঁড়িয়ে অর্ককে জড়িয়ে ধরে বলল, “অনেক ধন্যবাদ ভাই! আপনাকে অনেক ধন্যবাদ! অনেক কৃতজ্ঞ আমি আপনার কাছে ।” অর্ক তারপর মহিলাটাকে সালাম দিয়ে বলল, “আসসালামু আলাইকুম আন্টি!” মহিলাটা বলল, “তোমারে আমি ধন্যবাদ দিয়া ছোট করমু না বাবা! তুমি এর চেয়েও বড় কিছু পাওয়ার যোগ্য! তুমি আমার ছেলের বিবেক ফিরায়া দিয়েছো! আল্লাহ তোমারে সুখী, সুস্থ, আনন্দ ভরা জীবন দিক দুয়া করি!” অর্ক বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ আন্টি!”

আগামী পর্বেঃ
রকি এগিয়ে এসে হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়ে হ্যান্ডশেক করে বলল, “হাই! আমি রকি! নাইস টু মিট ইউ!” অর্ক বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ স্যার!” রকি বলল, “তুমি তো মেকআপ করো নি! তাড়াতাড়ি মেকআপটা করে আসো! আর কি বলবে ভেবেছো?” অর্ক জিজ্ঞেস করলো, “কি বলবো মানে?” রকি বলল, “উফ! ওরা তোমাকে বলে নি মনে হয়! শোন, শোটা লাইভ হবে, আর তুমি শুরু করবে ।
×
বাবা(পর্ব-৭৮)

“ও মাই মাই গো! দোস্তো! দ্যাহো!” প্রায় ছুটতে ছুটতে মোবাইল হাতে নিয়ে কুলসুমের কাছে এলো লুনা । কুলসুম লুনার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “দোস্তো! কি হইছে!” কুলসুম মোবাইলটা লুনার হাতে দিয়ে বলল, “দ্যাহো দ্যাহো!” কুলসুম মোবাইলটা হাতে নিয়ে চোখ বড়ো বড়ো করে ফেলল । তারপর বলল, “ছি ছি ছি! এইসব কি পড়ে!” মোবাইলে এক বয়স্ক মহিলা, যে কিনা ওদের দুজনেরই বান্ধবী, সে হাতা কাটা গেঞ্জি পড়ে ফেসবুক-এ ছবি ছেড়েছে । লুনা বলল, “দেখছো! এইগুলা কিছু হইলো! এইসব ছবি ফেসবুকে দেয়!” কুলসুম বলল, “সেটাই তো! এটা ওর মেয়ে হলেও তো আমি ছি ছি করতাম! আর ও তো! ছি ছি ছি!” তারপর কুলসুম লুনার মোবাইলটা লুনা দিয়ে নিজের মোবাইলটা হাতে নিয়ে বলল, “দাঁড়া! ওর মতো মেয়েকে আর ফ্রেন্ডলিস্টে রাখবো না!” লুনা বলল, “হ! আমিও ওরে আনফেড়েন্ড কইরা দেই!” বলে লুনা আর কুলসুম দুজনেই ওদের বান্ধবীকে আনফ্রেন্ড করে দিলো । লুনা তখন কুলসুমকে জিজ্ঞেস করলো, “একখান কথা জিগাই! গতকাইল আরশি এমন করলো ক্যান?” কুলসুম জিজ্ঞেস করলো, “প্রেমট্রেমের ব্যাপার নাকি?” লুনা বলল, “মাই মাই গো! নাহ! প্রেম হইলে ও ফেসবুকে ইস্ট্যাটাস দিতো, ইন এ রিলেশনশিপ ।” কুলসুম বলল, “আরে না! গোপন প্রেম যদি হয়?” লুনা বলল, “তাইলে তাতে বাপের ওপর রাগ করার কি আছে?” কুলসুম ওপর নিচ মাথা নেড়ে বলল, “হুম! তাও একটা কথা! ওর ওপর নজর রাখা লাগবে!”
একটু ছোট একটা কোম্পানি । সেখানে এসে কোম্পানির প্রধানের রুমে নিয়ে যাওয়া হলো রাফিদকে । দরজায় দাঁড়িয়ে বলল, “আসবো স্যার?” ভেতরে লোকটা রাফিদের পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে বলল, “আসো ।” রাফিদ গেলো ভেতরে । লোকটা বলল, “বসো ।” রাফিদ চেয়ার টেনে বসলো । লোকটা জিজ্ঞেস করলো, “আপনার নাম?” রাফিদ বলল, “রাফিদ আকরাম ।“ লোকটা জিজ্ঞেস্ক করলো, “আপনার বয়স?” রাফিদ বলল, “২১ বছর ।” লোকটা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, “২১ বছর! মানে আপনি ভার্সিটি পড়ছেন?” রাফিদ বলল, “না আসলে, সরকারি ভার্সিটিতে চান্স পাইনি তো, তাই আর বেসরকারিতে ঢুকিনি ।” লোকটা তখন মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলো, “তার মানে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পাশ?” রাফিদ হালকা ইতস্তত বোধ করে বলল, “জ…জি স্যার!” লোকটা কিছুক্ষণ চুপ রইলো । তারপর হঠাৎ একটা অদ্ভুত কথা জিজ্ঞেস করলো, “চা খাবেন?” রাফিদ ভদ্রতার খাতিরে বলল, “না স্যার! ইটস ওকে!” লোকটা তখন বলল, “আরে খান খান!” বলে দারোয়ানকে ডাকল, “নিতাই! এই নিতাই!” নিতাই দারোয়ানের নাম । নিতাই এসে জিজ্ঞেস করলো, “জি স্যার! কন!” লোকটা বলল, “২কাপ রঙ চা আনো ।” নিতাই, “আচ্ছা স্যার” বলে চলে গেলো । লোকটা তখন জিজ্ঞেস করলো, “আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে?” রাফিদ বলল, “না স্যার নেই ।” লোকটা জিজ্ঞেস করলো, “আয় হায়! কি বলেন! বাঙালি ন্যাংটাকালেই গার্লফ্রেন্ড বানায়া ফেলে আর আপনে এখনও বইসা আছেন ক্যান?” রাফিদ অনেক ইতস্তত বোধ করে গলা খাখরে বলল, “ইয়ে……এমনি ।”
“আপনারা রেডি?” হঠাৎ একটা লোক এসে কথাটা জিজ্ঞেস করায় তার দিকে ঘুরে তাকালো অর্ক । জামা কাপড় আর চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে, এই অনুষ্ঠানের হোস্ট উনি । লোকটার নাম রকি । ফাহাদ-ই রকিকে দেখিয়ে দিলো অর্ক এসেছে । রকি এগিয়ে এসে হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়ে হ্যান্ডশেক করে বলল, “হাই! আমি রকি! নাইস টু মিট ইউ!” অর্ক বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ স্যার!” রকি বলল, “তুমি তো মেকআপ করো নি! তাড়াতাড়ি মেকআপটা করে আসো! আর কি বলবে ভেবেছো?” অর্ক জিজ্ঞেস করলো, “কি বলবো মানে?” রকি বলল, “উফ! ওরা তোমাকে বলে নি মনে হয়! শোন, শোটা লাইভ হবে, আর তুমি শুরু করবে । মানে ধরো এমন, শুভ সকাল, সালাম এগুলো জানিয়ে নিজের পরিচয় হোস্টরা যেভাবে দেয় সেভাবে দিয়ে তারপর না হয় বললে আমাকে দেখে অবাক হচ্ছে? আমি আসলে সেই অর্ক যাকে আপনারা রেডিওতে দেখেছেন, এগুলো একটু গুছিয়ে গুছিয়ে পড়ে আমার দিকে ক্যামেরা ঘুরবে, এবং আমি তারপর বাকিটুকু চালাবো । পারবে না?” অর্ক বলল, “জি স্যার, পারবো ।” রকি বলল, “ঠিক আছে যাও! ১১টার আগে চলে এসো! শো টিভিতে ১১টায় অন এয়ার হবে!” অর্ক ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, “মানে! শুটিং হবে না?” লোকটা একটা বিরক্তিসুচক “উফ!” আওয়াজ করে বলল, “তোমাকে কারা যে এখানে এনেছে! আচ্ছা যাই হোক! মেকআপ করতে করতে মনে মনে নিজের প্রিপারেশন নিয়ে নাও! শো লাইভ হবে!” তারপর অর্ককে এক লোক মেকআপ রুমের দিকে নিয়ে গেলো কিন্তু অর্কর মনে একটা চিন্তার জাগরণ ঘটলো ।
“স্যার! এইযে চা!” নিতাই এসে চা দিলো রাফিদ আর কোম্পানির প্রধানকে । নিতাই চলে যাচ্ছিলো, এমন সময় কোম্পানির প্রধান নিতাইকে ডাকল, “নিতাই! একটু শোনো তো!” নিতাই পেছন ফিরে তাকালো । লোকটা জিজ্ঞেস করলো, “তুমি যেনো কি পাশ নিতাই?” নিতাই বলল, “এইচএসসি পাশ স্যার!” এবার কথাটা রাফিদের ঠিক বুকে যেয়ে বিঁধল । লোকটা নিতাইকে যেতে বলে রাফিদের দিকে তাকিয়ে বলল, “সমস্যা নাই! আমাদের এখানেও এইচএসসি পাশে চাকরি আছে! এই যেমন দেখলেন ।” রাফিদ কিছুক্ষণ দাতে দাঁত চেপে বসে রইলো । তারপর এক নিমিষে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “যে কোম্পানির কমনসেন্স নেই যে বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্ল্যেখ করা থাকে, সে কোম্পানির যোগ্যতা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে । এরকম অশিক্ষিত কোম্পানিতে আমার চাকরি করবার ইচ্ছে নেই!” তারপর রাফিদ চায়ের কাপটা নিয়ে মেঝেতে ফেলে দিলো । তারপর “কুকুরের দেয়া খাদ্য না খাওয়াই ভালো, জলাতঙ্ক হতে পারে ।” বলে চলে গেলো । লোকটা রাগে ফোঁস ফোঁস করতে লাগলো ।

আগামী পর্বেঃ
একটা টিভির দোকানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেলো রাফিদ । টিভিতে অর্ক । রাফিদ মনে মনে বলল, “থাক! তুইই ভালো থাক! আমার কথা ভাবা লাগবে না তোর! লোকে ঠিকই বলে, বন্ধু বড় কোন জায়গায় চলে গেলে বন্ধুদের ভুলে যায়!”
…………………
গালিব গেলো প্রীতির রুমে । অফিসের দুজন কানাকানি করতে লাগলো । একজন আরেকজন বলল, “এই ওই লোকের এতো কি কাজ রে বসের সাথে? খালি উনারেই ডাকে?” আরেকজন বলল, “কি জানি ভাই! বুড়া মানুষ তো! ভীমরতি ধরছে নাকি!”
×
বাবা(পর্ব-৭৯)

“আসসালামু আলাইকুম! শুভ সকাল । শুরু হয়ে গেলো আপনাদের পছন্দের শো, স্পেশাল লাইভ । অবাক হচ্ছে আমাকে দেখে? অবাক হবেন না । শো এর হোস্ট বদলে যায় নি । কেবল আজকে আমি শুরু করলাম । আপনাদের প্রিয় হোস্ট এখনও এই প্রোগ্রামের হোস্টই আছেন, এবং আমি অর্ক, আপনার সকলের প্রিয় প্যারা নাই চিল অনুষ্ঠানের অর্ক ।” এই বলে লাইভ অনুষ্ঠান শুরু করলো অর্ক । এরপর ক্যামেরা ঘুরে গেলো শো এর প্রধান হোস্ট রকির কাছে ।
রাস্তা দিয়ে বুক ভরা কষ্ট নিয়ে হেটে হেটে বাসার পথে ফিরছিলো রাফিদ । বারবার কথাগুলো কানে বাজছে ওর । এমন সময় একটা টিভির দোকানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেলো রাফিদ । টিভিতে অর্ক । হোস্ট রকিকে জিজ্ঞেস করলো, “পরিবারের লোকজন সাধারণত তাদের ছেলেমেয়েদের এই পথে আসতে দেয় না । আপনার কি মত এটা নিয়ে?” অর্ক বলল, “এরকম কিছু আমার সাথে ঘটে নি । আমি আমার পরিবারের কাছ থেকে অনেক সাপোর্ট পেয়েছি । আমার বাবা সবসময় আমাকে সাপোর্ট করেছেন । আমার মা যদিও হালকা অমত দিয়েছেন কিন্তু তবু না করেন নি সরাসরি ।” রাফিদ আর দেখলো না । মনে মনে “থাক! তুইই ভালো থাক! আমার কথা ভাবা লাগবে না তোর! লোকে ঠিকই বলে, বন্ধু বড় কোন জায়গায় চলে গেলে বন্ধুদের ভুলে যায়!” বলতে বলতে বাসার পথে হাটা ধরলো । কিন্তু সেই সময়ই অর্ক বলল, “আরেকজন আছে আমার জীবনে যে আমাকে অনেক সাহস দিয়েছে, সে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড, আমার ভাই, রাফিদ । ও পাশে না থাকলে হয়তো এতোদুর আসার সাহস পেতাম না ।”
টিভিতে টকশো দেখছিলো বাড়ির সবাই । শুধু ছিলো না পুষ্পিতা । টিভিতে অর্ককে দেখে লুনা বলল, “মাই মাই গো! নাতি মোর মেকআপ দিছে!” কুলসুম বলল, “টিভিতে যারা যায় সবাই মেকআপ দেয় ।” লুনা বলল, “আহা! খালি আমিই দিতে পারলাম না!” আরশি বলল, “দাদি! আমি দিয়ে দেবোনে তোমাকে!” লুনা আরশির মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “এই না হইলে আমার নাত্নি!” তারপর একটু হাসলো লুনা । মিজান বলে উঠলো, “চাটনি! চাটনি পাইলা কই!” শামসু বলল, “আরে আমার বয়রা বেয়ান! চাটনি না! নাত্নি!” মিজান বলল, “ও আইচ্ছা আইচ্ছা! তা বউমা কই? বউমারে দেহি না?” শামসু বলল, “তাই তো! বউমা কোথায় গেছে!” আরশি বলল, “নানা, আম্মু একটু ময়না আন্টির বাসায় গেছে কি একটা কাজে ।” শামসু বলল, “ও, নিজের ছেলে এতো বড় একটা জায়গায় গেছে, তা না দেখে ও কি করে গেলো!” আরশি বলল, “উম…ওনাদের বাসায়ই দেখছে মনে হয় ।”
এদিকে পুষ্পিতা বসে আছে ময়না ভাবির বাসায় । ময়না বলল, “কি যে বলবো ভাবি! আমি আপনার ছেলের ইন্টারভিউটা দেখতে চাচ্ছিলাম! তা টিভিটাই নষ্ট । তাই ভাবলাম পড়ে ইউটিউব-এ দেখে নেবো না হয় ।” পুষ্পিতা বলল, “ধুরু! ওইসব আজাইরা জিনিস দেখে সময় পার করার সময় আমার নেই । নিজের জ্বালায়ই বাচি না!” ময়না জিজ্ঞেস করলো, “কেনো ভাবি? শাশুড়ি কি আবার জ্বালানো শুরু করেছে?” পুষ্পিতা বলল, “না না, অন্য ঝামেলা ।” ময়না জিজ্ঞেস করল, “সেকি! আবার কি নতুন ঝামেলা উদয় হলো আমার বোনটার?” পুষ্পিতা মনে মনে বলল, “একে বলবো? না বাবা! মহিলা মিচকা শয়তান! সবাইকে ছড়ায় বেড়াবে!” ময়না মনে মনে বলল, “উহ! দিনরাত খালি ঝামেলা আর ঝামেলাই এর জীবনে ।” তারপর পুষ্পিতা বলল, “না তেমন কিছু না, এই শরীর খারাপ একটু ।” ময়না বলল, “হায় আল্লাহ! কি বলেন! ওশুধ খাচ্ছেন তো? ডাক্তার দেখিয়েছেন? কোথায় ব্যাথা? এমন কেমন লাগছে?” পুষ্পিতা হালকা হেসে বলল, “আরে ভাবি! টেনশন কইরেন না! মোটামুটি ঠিক আছি আমি!” ময়না ভাবি ঠোঁটের কোণে হাসি রাখলেও মনে মনে বলল, “না! তুই অসুস্থই থাক! ঘরের মধ্যে শুইয়াই থাক!”
এদিকে টিভির প্রোগ্রাম শেষে অর্ককে রকি বলল, “ঠিক আছে, চলে যাও তুমি । তোমার বিকাশে টাকা পাঠিয়ে দেবো ।” অর্ক কিছু বলল না রকিকে । কিন্তু অর্ক ফাহাদ আর তার মায়ের কাছ থেকে বিদায়ে নিয়ে রওনা হলো বাসার পথে । কিন্তু অর্কর একটু খারাপ লাগলো । নিয়ে আসার সময় খাতির যত্ন না করলেও অন্তত গাড়ি করে নিয়ে এলো, আর চলে যাবার সময় কিচ্ছু দিলো না । লোকাল বাসে চেপেই চলে আসতে হলো অর্ককে ।
অফিসের কাজ করছিলো গালিব, এমন সময় পিয়ন এসে গালিবকে প্রীতির রুমে যেতে বলল । গালিব গেলো প্রীতির রুমে । অফিসের দুজন কানাকানি করতে লাগলো । একজন আরেকজন বলল, “এই ওই লোকের এতো কি কাজ রে বসের সাথে? খালি উনারেই ডাকে?” আরেকজন বলল, “কি জানি ভাই! বুড়া মানুষ তো! ভীমরতি ধরছে নাকি!” ওদের কথা কানে গেলো জাহিদের । উঠে দাঁড়িয়ে ধমক দিয়ে বলল, “আপনাদের কি কাজ নেই এসব উল্টাপাল্টা কথা বলছেন! চুপচাপ কাজ করেন!” লোকদুটো চুপ হয়ে গেলো ।
“আসবো?” দরজার সামনে এসে বলল গালিব । প্রীতি বলল, “জি আঙ্কেল আসেন ।” গালিব এলো এবং বসলো । জিজ্ঞেস করলো, “কেমন আছো এখন?” প্রীতি বলল, “জি আঙ্কেল, আলহামদুলিল্লাহ ভালো । আপনি?” গালিব বলল, “এইতো, আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি ।” প্রীতি জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা আঙ্কেল, আপনি কি আপনার ছেলেকে বলে দিয়েছেন বিয়ের ব্যাপারে?” গালিব বলল, “হ্যাঁ গতকাল বলেছি । কেনো?” প্রীতি বলল, “না আঙ্কেল আমি এখনও কেমন দোটানায় ভুগছি ।” গালিব বলল, “ঠিক আছে, সমস্যা নেই, তুমি তোমার মতো সময় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নাও ।” প্রীতি আর কিছু বলল না ।

আগামী পর্বেঃ
অর্ক দেখলো, কেউ ওর বিকাশ অ্যাকাউন্টে ১০০টাকা পাঠিয়েছে । অর্ক ভ্রু কুঁচকে মোবাইলের দিকে তাকালো । মনে মনে বলল, “এখন তো ওই শো তে যাবার জন্য আমাকে টাকা দেবার কথা! কিন্তু ১০০ টাকা মাত্র!” খারাপ লাগলো অর্কর । এর চেয়ে কিছু না দিলেও অনেক খুশি হতো অর্ক ।
…………………………
আকবর আলি জিজ্ঞেস করলো, “হইছিলো কি আমার মোবাইলে?” দোকানদার বলল, “একখান সার্কিট পুইরা গেছিলো । ওইটা ঠিক করার জন্য আপনার মোবাইল রেসেট দেয়া লাগছে । এর জন্য মোবাইলের ভেতরের সব পুরা ডিলিট হইয়া গেছে ।” আকবর আলির চোখ দুটো ইয়া বড় বড় হয়ে গেলো । বলে উঠলো, “কি!”
×
বাবা(পর্ব-৮০)

বাসায় আসতেই অর্ককে শুভেচ্ছা জানাতে লাগলো বাসার সবাই । মিজান বলল, “অনেক বড় হও ব্যাটা! আমাদের নাম উজ্জ্বল কইরা দিবা একদিন!” শামসু বলল, “আরও অনেক দূরে যাও দোয়া করি!” কুলসুম বলল, “খুশি থাকো বাবা! আরো সামনের দিকে এগিয়ে যাও!” লুনা বলল, “মাই মাই গো! আমার নাতি কতো বড় হইয়া গেছে! আরও বড়ো হও আর আমারেও একদিন নিয়া যাইও! ফিরিতে মেকআপ দিমুনে!” সবাই হেসে উঠলো । অর্ক হাসি থামিয়ে বলল, “আচ্ছা দাদি!”
বাসায় এসে সাথে করে নিয়া যাওয়া ফাইলগুলো টেবিলে ছুড়ে ফেলে শার্টের দুটো বোতাম খুলে বিছানার ওপর হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লো রাফিদ । তারপর মোবাইলটা হাতে নিলো । আসবার পথে কষ্টে মোবাইলে চোখ দেয়া হয় নি । সেই সময় দেখলো, ওর মেসেঞ্জারে অনেক বন্ধু ওকে একটা ভিডিও পাঠিয়েছে । প্রথম ভিডিওটা ওপেন করে দেখলো, অর্কর সেই বক্তব্য, যেখানে অর্ক রাফিদের কথা উল্যেখ করেছে । ভিডিও ক্লিপটা দেখে ভালো লাগলো রাফিদের । অর্ককে নিয়ে ওর মনে যেসব খারাপ ধারণা এসেছিলো সেগুলো দূর হয়ে গেলো । অর্ককে একটা মেসেজ দিলো, “দোস্ত! ফ্রি হলে মেসেঞ্জারে একটা মেসেজ দিয়ে ছাদে আসিস ।”
নিজের রুমে যেয়ে গোসল করে বেরোলো অর্ক । তয়লা দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে মোবাইলটা হাতে নিতেই রাফিদের মেসেজটা দেখলো । অর্ক ছাদের দিকে যেতে যেতে মোবাইলে আরেকটা নোটিফিকেশন দেখতে পেলো । সেখানে দেখলো, কেউ ওর বিকাশ অ্যাকাউন্টে ১০০টাকা পাঠিয়েছে । অর্ক ভ্রু কুঁচকে মোবাইলের দিকে তাকালো । মনে মনে বলল, “এখন তো ওই শো তে যাবার জন্য আমাকে টাকা দেবার কথা! কিন্তু ১০০ টাকা মাত্র!” খারাপ লাগলো অর্কর । এর চেয়ে কিছু না দিলেও অনেক খুশি হতো অর্ক । তবে যাই হোক, এটা ওর কামানো প্রথম টাকা । এটা নিজেকে বলে শান্তনা দিয়ে ছাদে গেলো ও । ছাদে দাঁড়িয়ে রাফিদ । অর্ক ডাকলো, “ইয়ো ব্রো! ডাকলি ক্যান?” রাফিদ এসে অর্ককে জড়িয়ে ধরে বলল, “আ’ম সো সরি ব্রো! তোরে আমি একটু বেশি কষ্ট দিয়া ফেলসি!” অর্ক রাফিদকে বলল, “আরে ভাই! চিল! প্রথমত আমি জানি না তুই ক্যান এমন করছিস, আর দ্বিতীয়ত আমার বাবা বলে, আপনজন বেশিদিন রাগ করে থাকতে পারে না । যে পারে, সে আপনই না । সো! ইট মিনস, তুই আমার ব্রো!” রাফিদ বলল, “কি হইছিলো শোন! আমা…” রাফিদকে থামিয়ে দিয়ে অর্ক বলল, “না প্লিজ! থাক! সব মিটে গেছে, এখন আর কিচ্ছু বলার দরকার নেই । তোর খবর বল ।” রাফিদ হালকা হেসে বলল, “আমার আর কি খবর । আমাকে ওর রেডিও শো থেকে বের করে দিতে চেয়েছিলো । তা আমি জানতে পেরে নিজে থেকেই চলে এসেছি ।” অর্ক চুপ হয়ে গেলো । তারপর মাথা নিচু করে বলল, “সরি ইয়ার! তুই এতো কষ্টে আছিস, অথচ আমি নিজের লাইফ নিয়ে ফুর্তি করে বেড়াচ্ছি!” রাফিদ হাসিমুখে বলল, “আরে না হুশ! তুই তো আর জানতি না!”
এদিকে মোবাইল রিপেয়ারিং সেন্টারে এলো আকবর আলি । দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলো, “কি ভাই! আমার মোবাইল কবে দিবেন?” দোকানদার বলল, ”আর দুইটা দিন দেন ভাই, ঠিক কইরা দিমু ।” আকবর আলি জিজ্ঞেস করলো, “হইছিলো কি আমার মোবাইলে?” দোকানদার বলল, “একখান সার্কিট পুইরা গেছিলো । ওইটা ঠিক করার জন্য আপনার মোবাইল রেসেট দেয়া লাগছে । এর জন্য মোবাইলের ভেতরের সব পুরা ডিলিট হইয়া গেছে ।” আকবর আলির চোখ দুটো ইয়া বড় বড় হয়ে গেলো । বলে উঠলো, “কি!” দোকানদার বলল, “হ । ক্যান ভাই?” আকবর আলি হালকা রাগ দেখিয়ে বলল, “সব ফরম্যাট করার আগে আমাকে বলবেন না!” দোকানদার বলল, “বইলা লাভ হইতো না ভাই । এমনেও ওইগুলা উদ্ধার হইতো না, অমনেও ওইগুলা উদ্ধার হইতো না ।” আকবর আলি বলল, “আরে তাইলে আর আমার মোবাইল সারিয়ে কি লাভ! আমার তো ওগুলোই দরকার ছিলো ।” দোকানদার বলল, “কিছু করার নাই ভাই ।” আকবর আলি হতাশ হয়ে চেয়ারে বসে পড়লো । লোকটা কিছুক্ষণ চুপ থেকে জিজ্ঞেস করলো, “যদি কিছু মনে না করেন, কি এতো ইম্পরট্যান্ট ছিলো আপনের মোবাইলে বলা যাইবো?” আকবর আলি বিরক্তির সাথে জিজ্ঞেস করলো, “আপনাকে বললে কি আমি ওগুলো ফেরত পাবো?” দোকানদার বলল, “না এমনি । ইন্টারনেটের কিছু হইলে আমি বাইর কইরা দিমুনে আপনে কইলে । একটু বিশ ত্রিশ ট্যাকা দিয়েন!” আকবর আলি বলল, “হাতির মাথা! মোবাইলে আমার গোপনে তোলা কিছু ভিডিও ছিলো! পারবা ওইগুলা ফেরত দিতে?” দোকানদার শুধু “ও আইচ্ছা!” বলে আবার নিজের কাজে লেগে পড়লো । আকবর আলি কিছুক্ষণ বসে থেকে চলে আসতে নেবে, এমন সময় দোকানদার জিজ্ঞেস করলো, “স্যার, যেইখান থেইকা ভিডিও করছেন, ওইখানে সিসি ক্যামেরা ছিলো না?” আকবর আলির এবার টনক নড়লো । তাই তো! স্টাইলা ক্যাফেতে তো সিসি ক্যামেরাই আছে! চাইলে তো ওখান থেকেই ভিডিও নেয়া যায়!

আগামী পর্বেঃ
ঘর থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছিলো আরশি । ওকে বেড়িয়ে যেতে দেখে গালিব ডাকলো, “দাড়া এই ভরদুপুরে কোথায় যাচ্ছিস!” আরশি মেজাজ দেখিয়ে বলল, “জাহান্নামে যাচ্ছি!” গালিব ওকে ধমক দিয়ে বলল, “আরশি! ভদ্রভাবে কথা বল! আমি তোকে ছোটবেলা থেকে এই শিক্ষা দিয়েছি!” আরশি গালিবের কাছে এসে বলল, “ও হ্যালো জ্ঞানদাতা! জ্ঞানগুলো আমাকে না দিয়ে যতো মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত আছে তাদের দেন! অন্তত তারা আপনার মতো ফকির হবে না আর তাদের ছেলেমেয়েও ভুক্তভোগী হবে না!” এবার গালিব ঠাস করে চড় লাগিয়ে দিলো আরশির গালে । আরশি রাগের বশে মেঝে থেকে একটা জুতো নিয়ে ছুঁড়ে মারলো গালিবের দিকে ।
×
বাবা(পর্ব-৮১)

“মা! কি ব্যাপার! সকালে কি হলো বললে না তো?” দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর ঘরে আসতেই পুষ্পিতাকে জিজ্ঞেস করলো আরশি । পুষ্পিতা বলল, “তোর বাবাকে এতো সহজে রাগানো যাবে না! এতো শক্ত তোর বাবা!” আরশি বলল, “না মা! রাগবে রাগবে!” পুষ্পিতা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, “আমার সাজুকে নিয়ে চিন্তার তোর চিন্তাই তো বেশি দেখছি! এতো সাজুকে নিয়ে ভাবছিস কেনো তুই! আর এতোই ওকে তোর পছন্দ হলে ওকে তোর বাবা না বানিয়ে জামাই বানিয়ে নে না!” পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “এই কথাটা বলতে তোমার কষ্ট লাগলো না মা?” পুষ্পিতা নিজের রাগ কন্ট্রোল করে মেয়ের দুই কাধে হাত রেখে বলল, “দ্যাখ! এখন আর সে পরিস্থিতি নেই যে ওকে আমি বিয়ে করবো । হ্যাঁ এটা সত্যি ওর প্রতি আমার একটা দুর্বলতা আমার এখনও আছে । কিন্তু তার মানে এই নয় সেই দুর্বলতাকে আমি বিয়েতে রুপ দেবো! আর তোর বাবা! আমাদের সাথে উনি কোন অন্যায় করেন নি! তাহলে কেনো উনাকে শাস্তি দেবো!” আরশি জিজ্ঞেস করলো, “করে নি বলছো? তোমাকে মাসে মাসে বেশি বেশি টাকা দিতো?” পুষ্পিতা বলল, “বেশি না দিক দিতো তো! আর তারপরও দরকার পড়লেও দিতো! উনি যদি বেশি বেতন পাওয়া কেউ হতেন তাহলে ঠিকই দিতেন!” আরশি বলল, “না! একজন স্বামী হিসেবে ওটা উনার কর্তব্য ছিলো তোমাকে টাকা দেয়া!” পুষ্পিতা এবার ধমকের স্বরে বলল, “তুই কিন্তু এবার লিমিট ক্রস করছিস! ভুলে যাস না তুই আর আমিও কিন্তু এক সময় উনার টাকা মিথ্যে বলে নিতাম, তোর কোচিং এর টাকা বলে নিতাম!” আরশি এবার রাগ করে বলল, “ঠিক আছে! তুমি না সাজু আঙ্কেলকে ডিজার্ভ করো না! বাবার মতো একটা জঘন্য থার্ডক্লাস মানুষকে তুমি ডিজার্ভ করো!” বলে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো আরশি । পুষ্পিতা ওকে থামাতে চাইলো, কিন্তু পারলো না । বিছানায় বসে মাথায় হাত দিয়ে নিজেই নিজেকে বলতে লাগলো, “হায় আল্লাহ! আমি এখন কি করবো!”
অফিস থেকে ফিরে ঘরে ঢুকে দরজার পাশে টুলে বসে জুতো খুলছিলো গালিব । ঠিক সেই সময় ঘর থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছিলো আরশি । ওকে বেড়িয়ে যেতে দেখে গালিব ডাকলো, “দাড়া!” আরশি দাঁড়াল । গালিব জিজ্ঞেস করলো, “এই ভরদুপুরে কোথায় যাচ্ছিস!” আরশি মেজাজ দেখিয়ে বলল, “জাহান্নামে যাচ্ছি!” গালিব এবার ওকে ধমক দিয়ে বলল, “আরশি! ভদ্রভাবে কথা বল! আমি তোকে ছোটবেলা থেকে এই শিক্ষা দিয়েছি!” আরশি গালিবের কাছে এসে বলল, “ও হ্যালো জ্ঞানদাতা! জ্ঞানগুলো আমাকে না দিয়ে যতো মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত আছে তাদের দেন! অন্তত তারা আপনার মতো ফকির হবে না আর তাদের ছেলেমেয়েও ভুক্তভোগী হবে না!” এবার গালিব ঠাস করে চড় লাগিয়ে দিলো আরশির গালে । ইতোমধ্যে চ্যাঁচামেচিতে সবাই আবার এখানে এসে উপস্থিত হয়ে গেলো । লুনা বলল, “ঠিক হইছে! ওরে আরও মারা উচিৎ!” এমনকি দরজা খোলা থাকায় পাশের বাসায় আওয়াজ যাওয়ায় দরজার কাছ এসে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো আকবর আলি, উমা, পপি আর রাফিদ । দরজা খুলে দেখার আগ্রহ প্রথম আকবর আলিরই ছিলো । আরশি রাগ নিয়ে বলতে যাচ্ছিলো, “তুমি কোন সাহসে……।” কিন্তু গালিব ওর কথা শেষ হবার আগেই আবার একটা থাপ্পড় দিয়ে বলল, “তুমি বাবাকে বলছিস সাহস দেখানোর কথা! তুই বাবাকে বলছিস এসব কথা! নিজেকে কতোটা নিচে নামিয়ে ফেলছিস তুই দেখেছিস! কি হয়েছে তোর? কিসের নেশা তোকে এতো নিচু বানাচ্ছে বল!” আরশি প্রচণ্ড রেগে ছিলো । কিছু জবাব না দিয়ে রাগের বশে মেঝে থেকে একটা জুতো নিয়ে ছুঁড়ে মারলো গালিবের দিকে । সেই আঘাতে চেয়ারে বসে পড়লো গালিব মেঝেতেও পড়তে নিতো, কিন্তু অনিক আর অর্ক, “বাবা!” বলে আর্তনাদ করে এগিয়ে এসে বাবাকে ঠেকালো । এবার পুষ্পিতা এসে আরশিকে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে বলল, “যথেষ্ট হয়েছে! বাবাকে সরি বল!” আরশি আবারও মেজাজ দেখিয়ে, “বলবো না সরি! মিস্টার গালিবকে বলো আমাকে সরি বলতে! নিজের ভালো টাকা ইনকাম না করে পরিবার বানানোর জন্য!” বলে বেড়িয়ে গেলো বাড়ি থেকে । পুষ্পিতা ঠেকাতে চাইলো আরশিকে কিন্তু আরশি চলে গেলো । পুষ্পিতা গালিবকে জিজ্ঞেস করলো, “তুমি ঠিক আছো?” গালিব কিছু বলল না । ও নির্বাক হয়ে গেছে । পাশের বাসার আকবর আলি তখন গালিবের পরিবারকে শুনিয়ে শুনিয়ে পপিকে বলল, “এই পরিবারকে বিয়ে করবি তুই না! এই ফালতু পরিবারকে! যেখানে দিন রাত ২৪ ঘন্টা শুধু ঝগড়া আর ঝগড়া!” পপি তখন বাবাকে বলল, “প্লিজ বাবা! এখন তুমি নতুন কোন তামাশা শুরু কোরো না!” আকবর আলি মেয়ের কথা না শুনে ঘরে থেকে বেড়িএয় গালিবদের ঘরের দরজার সামনে এসে বলল, “মিস্টার আসাদুল্লাহ গালিব! নিজের পরিবারকে ঠিক করুন তারপর আমার মেয়ের সাথে আপনার ছেলের বিয়ের চিন্তা করুন!” লুনা তখন আকবর আলিকে শুনিয়ে শুনিয়ে চামেলিকে বলল, “চামেলি? কাইলকাই ঘরে একখান নতুন ঝাড়ু আইছে না? এল্লা নিয়ায় তো । আর আইজকা মনে হয়ে আরেকখান কেনা লাগবো!” আকবর আলি হালকা হেসে বলল, “খালাম্মা! আপনি কি আমাকে হুমকি দিচ্ছেন ঝাঁটাপেটা করার! বয়স তো কম হয় নি, এগুলো আপনি বুঝবেন না!” গালিব তখন উঠে দাঁড়িয়ে চোখ বড় বড় করে আকবর আলির দিকে তাকিয়ে বজ্রকন্ঠে বলল, “মিস্টার আকবর আলি! প্লিজ আপনি এখন যান আর একটা কথাও বলবেন না! আমাকে আপনি বাধ্য করবেন না আরশির সাথে আমি যা করেছি তা আপনার সাথে করার!” কথা শুনে আকবর আলি হালকা ভয় পেলো, তাই আর কিছু না বলে চলে গেলো সেখান থেকে । তারপর পপির ওদের বাসার দরজা আটকে দিলো আর অনিক ওদের বাসার দরজা আটকে দিলো ।

আগামী পর্বেঃ
পুতুল চলে গেলো অন্য রুমে । তারপর একটা স্মার্ট ওয়াচ এনে আরশির সামনে হাজির করলো । সেটা দেখাতে দেখাতে বলল, “দ্যাখ! দ্যাখ! জোস না! আমার বাবা এটা জার্মানি থেকে আনিয়েছে! বাংলাদেশী টাকায় প্রায় সাড়ে নয় হাজার হবে!” একে আরশির মেজাজ খারাপ, তার ওপর এটা দেখে আরশির আরও মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো । হাতে নিয়ে ঘড়িটা জানালা দিয়ে ফেলে দিলো আরশি । পুতুলদের বাসা ছিলো আটতলায় । আর যে জানালা দিয়ে ফেলেছে সে জানালা দিয়ে সবসময় গাড়ি চলে ।
×
বাবা(পর্ব-৮২)

“কি করছিলে তুমি এটা বাবা!” আকবর আলিকে বলল পপি । আকবর আলি পপির দিকে তাকিয়ে বলল, “এই তুই এখন আরশির মতো আমার সাথে লাগিস না! আমি তোর বাবা! তোকে নিয়ে আমার চিন্তা হয় বলেই আমি এটা করেছি!” পপি হালকা হেসে উঠে বলল, “ও তাই না! আমার জন্য খুব চিন্তা হয়! সেজন্যই তো আমার হাত পা বেধে এক রাত ঘরে আটকে রেখেছিলে!” আকবর আলি বলল, “শোন! সেটা আলাদা কথা আর এটা আলাদা কথা! ওই পরিবার তোর জন্য ভালো হবে না মা! বুঝতে পারছিস না কেনো!” পপি বলল, “আমি অনিককে বিয়ে করবো বাবা! এর জন্য যেকোনো কিছু করতে আমি রাজি! আর আমার তো মনে হয় ওই পরিবারের চেয়ে আমাদের বাসায় তোমার তামাশাই বেশি চলে!” বলে পপি চলে গেলো । রাফিদও চলে গেলো নিজের রুমে । উমা আকবর আলিকে জিজ্ঞেস করলো, “তোমার প্রমাণ কোথায়?” আকবর আলি বলল, “খুব শীঘ্রই আমি তোমার সামনে প্রমাণ হাজির করাবো! শুধু তাই না, ওই নামে মাত্র সুন্দর পরিবারের একটা ফালতু রূপ আমি দেখাবোই!”
এদিকে আরশি গিয়ে উঠেছে ওর বান্ধবীর বাড়ি । ওর বান্ধবীর নাম পুতুল । পুতুলের বাবাও বেশ বড়লোক । আরশি চাইছিলো না এ বাড়িতে আসতে, কিন্তু উপায়ন্তর না পেয়ে চলেই এলো । তবে পুতুল এতো সহজে ওকে কি করে আসতে দিলো সেটাই সন্দেহ করতে লাগলো আরশি । পুতুলকে সবটা শেয়ার করতে যাচ্ছিলো, এমন সময় পুতুল বলল, “এক মিনিট! তোকে একটা জিনিস দেখাই!” বলে পুতুল চলে গেলো অন্য রুমে । তারপর একটা স্মার্ট ওয়াচ এনে আরশির সামনে হাজির করলো । সেটা দেখাতে দেখাতে বলল, “দ্যাখ! দ্যাখ! জোস না! আমার বাবা এটা জার্মানি থেকে আনিয়েছে! বাংলাদেশী টাকায় প্রায় সাড়ে নয় হাজার হবে!” এবার আরশি বুঝতে পারলো কেনো এতো সহজে ওদের বাসায় আসতে দিয়েছে পুতুল । পুতুল আসলে ওর স্মার্ট ওয়াচ দেখাতে চেয়েছিলো আরশিকে । কিন্তু একে আরশির মেজাজ খারাপ, তার ওপর এটা দেখে আরশির আরও মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো । হাতে নিয়ে ঘড়িটা জানালা দিয়ে ফেলে দিলো আরশি । পুতুলদের বাসা ছিলো আটতলায় । আর যে জানালা দিয়ে ফেলেছে সে জানালা দিয়ে সবসময় গাড়ি চলে । পুতুল রেগে গিয়ে, “কি করলি তুই এটা!” বলে নিচে গেলো ঘড়ি আনতে । কিন্তু নিচে এসে দেখলো, কোন একটা গাড়ির চাকার নিচে পড়ে ঘড়ির বেহাল অবস্থা । পুতুল প্রচুর রেগে গেলো । নিচ থেকে প্রচণ্ড রাগ নিয়ে ওপর উঠতে লাগলো । কিন্তু ঘরে এসে দেখলো, আরশি নেই ।
আরশি তখন ভয়ে ভয়ে রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে । পুতুল নিচে নামার পরপরই আরশি তাড়াতাড়ি করে লুকিয়ে নিচে নেমে পালিয়ে গেছে । এখন ও ভয়ে পাচ্ছে আর মনে মনে বলছে, “আল্লাহ! এটা আমি কি করলাম! এখন কি হবে! সাড়ে নয় হাজার টাকা! এ কি আজকের কথা!” এমন সময় কেউ একজন আরশির কাধে হাত রাখতেই চমকে পেছন ফিরে তাকালো আরশি ।
একটা রুমে একসাথে বসে লুনা, কুলসুম, মিজান আর শামসু । কুলসুম বলল, “ইশ! পরিবারে এখন ঝামেলা চলছে । হঠাৎ আরশি মেয়েটার এমন কি যে হয়ে গেলো!” কুলসুম বলল, “মাই মাই গো! আমরা এর মধ্যে আইয়া জামাইবাবার ওপর চাপ বাড়াইতাছি ।” মিজান বলল, “হ । বিয়াডা হইয়া গেলেই আমরা চইলা যামু ।” কুলসুম বলল, “এসব কি বলছেন ভাই! আর তুই-ই এসব কি বলছিস দোস্ত! তোরা কেনো চাপ বাড়াতে যাবি!” কুলসুম বলল, “তাও । আমাগো লাইগা জামাইবাবার খরচাপাতি বাইড়া যাইতেছে । জামাইবাবা কতো কষ্ট করে! এইডা যদি আরশিমা এল্লা বুইঝতো!” শামসু বলল, “মেয়েটা লোভের নেশায় পড়েছে । শুধু অন্যেরটা দেখে নিজেকে তাদের চেয়ে বেশি বড়ভাবে উপস্থাপন করার লালসা জেগেছে ওর মনে ।” কেউ কিছু বলল না আর ।
পেছন ফিরে তাকিয়ে আরশি দেখলো, সাজু দাঁড়িয়ে । সাজু জিজ্ঞেস করলো, “একি আরশি! তুমি এভাবে একা একা!” আরশি সাজুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো । সাজু জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে?” আরশি তখন সাজুর সাথে পুতুলের ঘড়ি ভাঙ্গার বিষয়টা শেয়ার করলো । সাজু বলল, “ও! এই কথা! আচ্ছা চলো । তোমাকে আমি একটা স্মার্টওয়াচ কিনে দেই । ওটা তুমি তোমার বন্ধুকে দিয়ে দিও ।” আরশি বলল, “আরে না না! এটা কি বলছেন আপনি!” সাজু বলল, “আরে না! চলো, আমি তোমার বাবার মতো না!” আরশি আর না করলো না । মনে মনে বলল, “দিচ্ছেই যখন! নেই! বাবাকে বললে দেবে তো না-ই, উল্টো আরও ধমক নেবে ।” আরশিকে নিয়ে সাজু গেলো ঘড়ির দোকানে । সেখানে যেয়ে আরশিকে দেখতে বলল কোনটা ওই মেয়ের ঘড়ি ছিলো । আরশি দেখলো একটা । হুবহু সেটার মতো না হলেও কিছুটা সেটার মতো । সেটা কিন্তু আরশি । সেই সাথে একটা ঘড়ি দেখে ভালো লাগলো আরশির । সাজু আরশি না চাইতেই আরশির ভালো লাগা ঘড়িটা আর মেয়েটার ঘড়িটা কিনে আরশিকে দিলো । আরশি বলল, “দুটোর কি দরকার ছিলো!” সাজু বলল, “চিল! বাবার কাছে কোন কিছু লজ্জা পাবে না ।” আরশি তখন হুট করে একটা প্রশ্ন করে বসলো, “আপনি কি এখনও আমার মাকে ভালোবাসেন?” সাজু একটু ইতস্তত করে বলল, “ম…মানে?” আরশি বলল, “আপনি কি এখনও আমার মাকে ভালোবাসেন?” সাজু ভিন্ন কিছু একটা বলতে গেলে আরশি তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “প্লিজ আপনি বলুন!” সাজু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “বাসি ।” আরশি তখন সাজুকে জিজ্ঞেস করলো, “আমার মা-কে বিয়ে করবেন?”

আগামী পর্বেঃ
পুতুলের বাবা বলল, “আপনার মেয়ে আমার মেয়ের সাড়ে নয় হাজার টাকার ঘড়ি ভেঙ্গেছে!” গালিব বলল, “আমি অত্যন্ত দুঃখিত! আপনি আমাকে কটা দিন সময় দিন! আমি হয় আপনাকে ঘড়িটা, না হয় টাকাটা ফিরিয়ে দেবো!” পুতুলের বাবা চোখ গরম করে তাকিয়ে উঁচু গলায় বলল, “আপনি আমাকে টাকার গরম দেখাচ্ছেন! আমি এখানে টাকা নিতে না! আপনার মেয়েকে শাস্তি দিতে এসেছি! ওই বজ্জাত মেয়ের চুলের মুঠি ধরে কয়েকটা থাপ্পড় মারলে তবেই আবার শান্তি!”
×
বাবা(পর্ব-৮৩)

রাত তখন ৮টা বাজে । কলিংবেলটা হঠাৎ বেজে উঠলো । গালিব এসে দরজা খুলতেই হনহনিয়ে ঘরে এলো একটা মেয়ে আর একটা লোক । মেয়েটা আর কেউ না, পুতুল । আর ওর সাথে থাকা লোকটা ওর বাবা । দুজনের চেহারাতেই রাগ । গালিব জিজ্ঞেস করলো, “একি আপনারা কারা! এভাবে ঘরে আসছেন কেনো?” পুতুল বলল, “আমি আপনার মেয়ে আরশি বান্ধবী! পুতুল! আর উনি আমার বাবা!” গালিব পুতুলের বাবাকে সালাম দিয়ে বলল, “ও! আসসালামু আলাইকুম ভাই! আসেন বসেন!” পুতুলের বাবা বলল, “বসতে আমি আসি নি! হিসাব চুকাতে এসেছি!” পাশের বাসার আকবর আলি তখন দরজায় দাঁড়িয়ে আওয়াজ শুনছিল আর মনে মনে বলছিলো, “মনে হয় পাশের বাসায় নতুন নাটক শুরু হয়েছে! আমার এন্ট্রি করা প্রয়োজন!” গালিব পুতুলের বাবাকে জিজ্ঞেস করলো, “মানে ঠিক বুঝলাম না!” ইতোমধ্যে অন্যান্য রুম থেকে ঘরের বাকি সদস্যরা এসে ভিড় জমালো । পুতুলের বাবা বলল, “আপনার মেয়ে আমার মেয়ের সাড়ে নয় হাজার টাকার ঘড়ি ভেঙ্গেছে!” কথা শুনে সবাই চোখ দুটো বড়ো বড়ো আর মুখগুলোও ইয়া বড় বড় হয়ে গেলো । লুনা বলে উঠলো, “ও মাই মাই গো! সাড়ে নয় হাজার ট্যাকা!” গালিব বলল, “আমি অত্যন্ত দুঃখিত! আপনি আমাকে কটা দিন সময় দিন! আমি হয় আপনাকে ঘড়িটা, না হয় টাকাটা ফিরিয়ে দেবো!” পুতুলের বাবা চোখ গরম করে তাকিয়ে উঁচু গলায় বলল, “আপনি আমাকে টাকার গরম দেখাচ্ছেন! আমি এখানে টাকা নিতে না! আপনার মেয়েকে শাস্তি দিতে এসেছি! ওই বজ্জাত মেয়ের চুলের মুঠি ধরে কয়েকটা থাপ্পড় মারলে তবেই আবার শান্তি!” এবার গালিবও হালকা রেগে গিয়ে বলল, “অনেক হয়েছে! এসব কি বলছেন আপনি! নিজের মেয়েকেও বুঝি এভাবে শাসন করেন!” পুতুলের বাবা বলল, “না! কারণ এটা আমার মেয়ে এমন কোনোদিনও করবে না!” গালিব বলল, “আর করলেও আপনি এসব করার সাহস করতেন না । কারণ এটা আপনার নিজের মেয়ে । আমি জানি না আপনি আমার মেয়ের সাথেও এমন করতেন কি করতেন না! কিন্তু প্লিজ! বিচার দিয়ে যাবার একটা ওয়ে আছে! এভাবে নিচু শ্রেণীর মন মানসিকতার মানুষের মতো কথা বলবেন না!” পাশের বাসার আকবর আলি তখন মনে মনে বলল, “মিস্টার গালিব আবার তার জ্ঞানের ঝুলি খুলে বসার আগেই আমি যাই!” বলে দরজা খুলে এলো গালিবদের বাসায় । দরজার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো, “একি কি হয়েছে? এতো চ্যাঁচামেচি কেনো?” পুষ্পিতা রেগে গিয়ে আকবর আলিকে বলল, “ওই ব্যাটা! মানুষের ঘরের ঝগড়া নিয়ে এতো ইন্টারেস্ট ক্যান আপনার মেয়ে মানুষের মতো?” আকবর আলি কি বলবে বুঝতে পারছিলো কিন্তু এ যাত্রায় ওর ভাগ্যটা বোধ হয় বেশ ভালো । কারণ তাকিয়ে দেখলো, পুতুলের বাবা আকবর আলির এক সময় অফিস কলিগ । পুতুলের বাবা আকবর আলিকে দেখে বলল, “আরে আকবর তুই এখানে!” আকবর আলি সুযোগ বুঝে বলল, “আরে ভাই! কেমন আছিস? তোর কণ্ঠ চিনেই তো এলাম!” পুতুলের বাবা বলল, “যাক গত পরশুই গুলিস্তানে দেখা হলো তোর সাথে, আজও হয়ে গেলো । তোর কি চাকরি টাকরি পেলি নাকি এখনও ফকিরই আছিস?” কথাটা শুনে বেশ কষ্ট পেলো আকবর আলি মনে মনে । রাগও ধরল । মনে মনে বলল, “ভেবেছিলাম তোকে নিয়ে এই পরিবারটাকে তামাশার পাত্র বানাবো । এখন তো মনে হচ্ছে তোকেই তামাশার পাত্র বানাতে হবে!” তারপর আকবর আলি পুতুলের বাবাকে বলল, “এইতো! খোঁজ করছি! কিন্তু হয়েছে কি এখানে?” পুতুল বলল, “আর বলিস না! এই লোকটার বজ্জাত মেয়ে আমার মেয়ের ঘড়ি ভেঙ্গেছে!” আকবর আলি বলল, “কোনটা গত পরশু কিনলি যে?” পুতুলের বাবা বলল, “আরে না না! ওটা তো কিনেছিলাম বাসার কাজের বুয়ার জন্য । এটা আমার মেয়ের! জার্মানি থেকে আনা! সাড়ে ন হাজার টাকার ঘড়ি!” এমন সময় দরজা থেকে আওয়াজ এলো । “পরিবর্তে আপনার জন্য এই দশ হাজার টাকার স্মার্ট ওয়াচটা দিলাম ।” সবাই দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো, আরশি দাঁড়িয়ে । সবাই ভ্রু কুঁচকে তাকালো । দশ হাজার টাকার ঘড়ি! এতো টাকা পাবে কোত্থেকে আরশি! আরশি রুমে ঢুকে পুতুলের দিকে হাত বাড়িয়ে ঘড়িটা দেখিয়ে বলল, “এই নে তোর ঘড়ি! তোর ওই জার্মানির ঘড়ির মতো হুবহু সেইম না, কিন্তু প্রায় পুরোপুরিই মিল আছে বলা যায় ।” আকবর আলি ঘড়িটা দেখে মনে মনে বলল, “আরে! এরকমই ঘড়ি তো কিনেছিলো গুলিস্তান থেকে!” পুতুলের বাবা আকবর আলি বুঝতে পেরে গেছে বুঝতে পেরে ইশারায় আকবর আলিকে চুপ করতে বললেও আকবর আলি ওকে তামাশার পাত্র বানাবার উদ্দেশ্যে ওর ইশারা না বোঝার ভান করে বলল, “হ্যাঁ এই ঘড়িটাই তো তুই কিনলি সেদিন গুলিস্তান থেকে সাড়ে চারশো টাকা দিয়ে ।” এবার পুতুল আর ওর বাবার মুখ চুপসে গেলো । পুতুলের বাবা তখন পুতুলকে, “এই পুতুল! নে তো আরশির হাত থেকে ঘড়িটা! আর বাসায় চল!” পুতুল আরশির হাত থেকে ঘড়িটা নেবার আগেই গালিব সেটা কেড়ে নিয়ে তারপর বলল, “না! আপনারা সাড়ে চারশো টাকা পাবেন । দশ হাজার টাকার ঘড়ি না!” আরশি বলল, “মিস্টার গালিব! এটা আমার ব্যাপার!” গালিব বলল, “আর সে ব্যাপারের বিচারটা আমার কাছে এসেছে! আর একটা কথাও বলবি না তুই!” গালিব এরপর রুমে যেয়ে সাড়ে চারশ টাকা এনে পুতুলের বাবার হাতে দিয়ে ধমকের স্বরে বলল, “এখন বেড়িয়ে যান এ বাড়ি থেকে!” পুতুল আর পুতুলের বাবা তাড়াতাড়ি করে চলে গেলো । আকবর আলি মনে মনে বলল, “হুহ! আমাকে ফকির বলার এটাই শাস্তি!”

আগামী পর্বেঃ
গালিব জিজ্ঞেস করলো, “তুই এই টাকা কোত্থেকে পেলি?” আরশি রাগ দেখিয়ে বলল, “দ্যাটস নান অফ ইয়োর বিজনেস মিস্টার আসাদুল্লাহ গালিব!” গালিব বলল, “অবশ্যই আমার জানার অধিকার আছে কারণ আমি তোর বাবা! বল এতো টাকা কে দিয়েছে তোকে?” আরশি বলল, “আমার বাবা দিয়েছে! আর তার নাম সাজু!” গালিব ভ্রু কুঁচকে তাকালো । আর পুষ্পিতার চেহারায় মারাত্মক ভয়ের ছাপ । মনে মনে সে আর্তনাদ করে উঠলো, “সর্বনাশ!”
×
বাবা(পর্ব-৮৪)

“তো, আমি যাই তাহলে?” বলল আকবর আলি । লুনা বলল, “যাও বাবাজি যাও! এমনে তো শুরুতে রাগ করছিলাম, তয় তোমার কামের লাইগা মন খুশি হইয়া গেলো ।” আকবর আলি হালকা হেসে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ খালাম্মা, এবং প্রয়োজনে ওর সাথে যেটা করলাম সেটা আপনাদের সাথেও করতে আমার একটুও কষ্ট হবে না ।” বলে চলে গেলো আকবর আলি । অনিক যেয়ে দরজাটা আটকে দিলো । কুলসুম দেখলো, আরশিও হাতে আরেকটা ঘড়ি পড়া । জিজ্ঞেস করলো, “একিরে! একে তো তুই ভাঙ্গা ঘড়ি ফেরত দিতে নাকি দশ হাজার খরচ করেছিস আর এখন দেখি তোর হাতেও আরেকটা ঘড়ি!” গালিব জিজ্ঞেস করলো, “তুই এই টাকা কোত্থেকে পেলি?” আরশি রাগ দেখিয়ে বলল, “দ্যাটস নান অফ ইয়োর বিজনেস মিস্টার আসাদুল্লাহ গালিব!” গালিব বলল, “অবশ্যই আমার জানার অধিকার আছে কারণ আমি তোর বাবা! বল এতো টাকা কে দিয়েছে তোকে?” আরশি বলল, “আমার বাবা দিয়েছে! আর তার নাম সাজু!” গালিব ভ্রু কুঁচকে তাকালো । আর পুষ্পিতার চেহারায় মারাত্মক ভয়ের ছাপ । মনে মনে সে আর্তনাদ করে উঠলো, “সর্বনাশ!” লুনা রেগে গিয়ে বলল, “মাই মাই গো! ওই হারামজাদী! এইসব কি কস? বাপ আবার দুইডা হয় নাকি?” আরশি বলল, “হ্যাঁ হয়! যখন নিজের বাবার চেয়ে অন্য কেউ বেশি আদর করে তখন সে আপন বাবার চেয়েও বেশি আপন হয়!” মিজান বলল, “কাফন বাবা! এইডা আবার কেডা?” লুনা বলল, “তুই আবার এইডা কিতা কও! ও আপন কইছে! কাফন না!” গালিব তখন আরশির চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “সত্যি আমি তোকে আদর করি না?” আরশি কোন জবাব দিলো না । গালিব আরও প্রশ্ন করতে লাগলো কিন্তু আরশির কাছ থেকে কোন জবাবা এলো না । “তোকে আমি কিছু দেই না? সত্যিই আমার চেয়েও তোর মনে হয় তোকে আর কেউ বেশি ভালোবাসে? সত্যি তোর মনে হয় তোর নিজের বাবার বিকল্পও আছে?” আরশি মনে মনে বলল, “একটু বেশিই করে ফেলতেছি মনে হয়! আমি বেশি করলে তো মা-ও কেস খাবে!” গালিব তখন ধমকের স্বরে বলল, “কিরে কথা বলিস না কেনো!” আরশি বলল, “না আসলে একটা আঙ্কেল, আমার অনেক ক্লোজ । উনি আমাকে দিয়েছেন ঘড়িটা । নাম তো বললামই, সাজু ।” অর্ক রেগে গিয়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো এমন সময় গালিব হাত দিয়ে ইশারা করে ওকে থামিয়ে তারপর আরশিকে বলল, “তোর ওই আঙ্কেলকে কালই আমার কাছে নিয়ে আসবি ।” বলে নিজের রুমে চলে গেলো বাকি সবাই । শুধু থেকে গেলো পুষ্পিতা আর আরশি । পুষ্পিতা আরশির কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলল, “কি করতে যাচ্ছিলি তুই! মাথা খারাপ হয়েছে! নিজের সাথে সাথে তুই তো আমাকেও বাঁশ দিতি আরেকটু হলে!” আরশি কিছু বলল, “পুষ্পিতা বলল, “চল রুমে চল!” পুষ্পিতা আর আরশি কথা বলার সময় অনিক আড়ালে দাঁড়িয়ে শুনছিল সবটা । পুষ্পিতা আর আরশি চলে যাবার পর আড়াল থেকে বেড়িয়ে এসে নিজে নিজেকে বলল, “কিসের কথা বলছিলো মা? এর সাথে কি মায়েরও যোগসুত্র আছে ।”
রাত ১১টা । স্টাইলে ক্যাফে এখন প্রায় ফাকা । অল্প কজন বসে । সে সময় সেখানে ঢুকলো আকবর আলি । রিসিপশনে থাকা লোকের কাছে গেলো আকবর আলি । লোকটা উঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো, “আসসালামু আলাইকুম স্যার, বলুন কি হেল্প করতে পারি?” আকবর আলি বলল, “আচ্ছা এই ক্যাফেতে যে সিসিটিভি ফুটেজগুলো আছে এগুলো কোথায় পাওয়া যাবে বলতে পারেন?” রিসিপশনের লোকটা বলল, “সরি স্যার! আসলে আমাদের এখানকার সিসিটিভি ফুটেজ কাউকে দেবার পারমিশন নেই কোন যুক্তিযুক্ত কারণ ছাড়া । এমনিতে আপনার কাছে যদি এর কোন কারণ থাকে তবে আপনি সেটা পেতে পারেন ।” আকবর আলি বলল, “জি আসলে, আমার মেয়ের শাশুড়ি এই ক্যাফেতে এসেছিলো গত শনিবারে । সেটার প্রমাণ দরকার আমার । কারণ এমন পরিবারে আমি আমার মেয়ের বিয়ে দিতে পারি না!” রিসিপশনের লোকটা বলল, ”সরি স্যার, এই কারণে আমি আপনাকে সিসিটিভি ফুটেজ শেয়ার করতে পারি না । আপনার কোন জিনিস চুরি হলে বা হারিয়ে গেলে আপনি সেটা পেতে পারেন ।” আকবর আলি তখন কথা বলতে বলতে হাজার দশ টাকা রিসিপশনের টেবিলের রাখলো, “আসলে হচ্ছে কি, মানে যদি একটু দিতেন আরকি ।” রিসিপশনের লোকটা তখন বলল, ”সরি স্যার । এটাও সম্ভব না । কারণ সিসিটিভি ফুটেজে আমাকে দেখা যাচ্ছে । এতে ক্যাফের মালিক আমার ওপর সন্দেহ করতে পারে ।” আকবর আলি রেগে গিয়ে মনে মনে একটা গালি দিয়ে চলে যেতে নিলো এমন সময় লোকটা আকবর আলিকে ডাকলো, “কিন্তু আরেকটা উপায়ে হতে পারে স্যার!”

আগামী পর্বেঃ
পুষ্পিতা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু তার আগেই সাজু কথা বলা শুরু করলো, “আসলে আমি ভুলেই গেছি, আমার লাইফে আমার কোন চাওয়া পূরণ হবার নয় । আর তুমি! তোমার মতো একজন মানুষকে আমি ডিজার্ভ করি না । সত্যি ডিজার্ভ করি না । আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো পুষ্প! সরি! পুষ্পিতা!” বলে কল কেটে দিলো সাজু । পুষ্পিতা আবার কল করলো সাজুকে কিন্তু সাজু কল ধরলো না ।
×
বাবা(পর্ব-৮৫)

“তোমার কি দরকার ছিলো এটা করার?” ভিডিও কলে সাজুকে বলল পুষ্পিতা । সাজু বলল, “আরে! মেয়েটা কাঁদছিল । আমি আর কি করতাম বলোতো?” পুষ্পিতা বলল, “কি করতে মানে? ঠাস ঠাস করে চড় লাগিয়ে দিতে দুটো!” সাজু বলল, “আহা! এভাবে বলছো কেনো? ছোট মানুষ, ভুল না হয় করেই ফেলেছে!” পুষ্পিতা বলল, “ভুল? মানুষ রাগের বশে ১টাকার লজেন্স ফেলে দিলেও কষ্ট লাগে । আর ও সাড়ে নয় হাজার টাকার ঘড়ি ভেঙ্গে ফেলেছে! শুধু তাই নয় কি সব আবোল তাবোল বকছে ও! বলছে তোমাকে আমাকে বিয়ে করতে! নিজের বাবার সাথেও খারাপ ব্যবহার করছে!” আরশি পাশে বসে থাকলেও কানে ইয়ারফোন থাকায় কিচ্ছু শুনতে পাচ্ছে না । সাজু বলল, “এই হ্যাঁ! বিয়ের কথা ও আমাকেও বলেছে ।” পুষ্পিতা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, “সত্যি কখন?” সাজু বলতে লাগলো সবটা ।
ঘড়ি কিনে দেবার পর আরশি জিজ্ঞেস করেছিলো, “আপনি কি এখনও আমার মাকে ভালোবাসেন?” সাজু ভিন্ন কিছু একটা বলতে গেলে আরশি তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেছিলো, “প্লিজ আপনি বলুন!” সাজু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেছিলো, “বাসি ।” আরশি তখন সাজুকে জিজ্ঞেস করেছিলো, “আমার মা-কে বিয়ে করবেন?” সাজু ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করেছিলো, “ধুর! এটাও কি এখন সম্ভব নাকি?” আরশি বলেছিল, “আপনি যদি চান আমি এখন থেকেই সেটার প্রস্তুতি নিতে রাজি!” সাজু বলল, “কিন্তু তোমার বাবার সাথে এটা অন্যায় হয়ে যাবে না?” আরশি বলেছিলো “কিসের অন্যায়? ফকির একটা! টাকা পয়সা নাই, যা আছে তাও দেয় না! আমাদের একটা টিপিক্যাল মধ্যবিত্ত জীবন-যাপন করালো! অথচ একটা বিলাসবহুল জীবন দিলো না ।” সাজু জিজ্ঞেস করেছিলো, “যদি সত্যিই সম্ভব হয় তোমার মাকে বিয়ে করা, তবে আমি আমার শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও সেটা করতে রাজি ।” আরশি তখন সাজুর হাতের ওপর হাত রেখে বলেছিলো, “আপনাকে আমি কথা দিলাম! আপনার আর আমার মায়ের বিয়ে আমি দেবোই!”
কথা শুনে হতবাক পুষ্পিতা । অবাক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো, “তুমি কি পাগল হয়েছো! মেয়েটাকে থামানোর বদলে তুমি আরও উসকে দিচ্ছো?” সাজু বলল, “না মানে…আমি মনে কথা গুলো আবেগে বলে দিয়েছি!” পুষ্পিতা বলল, “তুমি কি বাচ্চা সাজু! আমি বিবাহিতা! আমার একটা স্বামী ইতোমধ্যে আছে!” সাজু কিছু বলল না । চেহারায় ওর অনেক কষ্ট ফুটে উঠলো । একটা হতাশার শ্বাস ফেলে করুন কণ্ঠে বলল, “আসলে কথাটা যখন আরশির মুখ থেকে শুনলাম, মনে হলো বোধ হয়ে আমি আমার জীবনের যে পাওয়াটার জন্য মুখিয়ে ছিলাম, সে পাওয়াটা পাওয়ার একটা আশা আমি আবার পেয়েছি । কিন্তু আসলেই, এতোটা ওসব নিয়ে আমি ভেবেছি যে আমি ভুলেই গেছি তুমি অলরেডি বিবাহিতা ।” তারপর একটু থেমে কাঁদতে শুরু করলো সাজু । পুষ্পিতা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু তার আগেই সাজু কথা বলা শুরু করলো, “আসলে আমি ভুলেই গেছি, আমার লাইফে আমার কোন চাওয়া পূরণ হবার নয় । আর তুমি! তোমার মতো একজন মানুষকে আমি ডিজার্ভ করি না । সত্যি ডিজার্ভ করি না । আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো পুষ্প! সরি! পুষ্পিতা!” বলে কল কেটে দিলো সাজু । পুষ্পিতা আবার কল করলো সাজুকে কিন্তু সাজু কল ধরলো না । সাজুর সাথে কাটানো পুরোনো স্মৃতি আর একটু আগে যা ঘটে গেল সব মিলিয়ে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়লো পুষ্পিতা । খানিকক্ষণ পর সে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নাকাটি শুরু করলো । আর মনে মনে বলতে লাগলো, “এখন আমি কি করবো!”
আকবর আলি রিসিপশনের লোকটার কাছে এগিয়ে গেলো । রিসিপশনের লোকটা তখন বলল, “আপনি যদি চান, তাহলে আমি পেনড্রাইভে করে ভিডিও ফুটেজগুলো নিয়ে পড়ে আপনাকে দিয়ে আসতে পারি ।” আকবর আলি বলল, “সত্যি! তাহলে তো ভালোই হয়!” রিসিপশনের লোকটা তখন বলল, “জি । কাল সকালে এই ক্যাফের পেছনে গলিতে এই টাকা নিয়ে উপস্থিত থাকবেন, আমি আপনাকে পেনড্রাইভ দিয়ে আসবো ।” আকবর আলি বলল, “ঠিক আছে! শনিবার দুপুর আর বিকেলের ভিডিও!” সেই সাথে কোন টেবিলের ভিডিও সেটাও দেখিয়ে দিলো আকবর আলি । তারপর শান্তি মতো বেড়িয়ে এলো ক্যাফে থেকে ।

আগামী পর্বেঃ
গালিব লোকটাকে বলল, “আমার মেয়েকে আপনি সাহায্য করেছেন, অবশ্যই সেটা খুব ভালো একটা কাজ করেছেন । কিন্তু আমার মনে হয় এতোটা সাহায্য কেউ মন থেকে করে । আর যদি ধরি আপনি মন থেকেই করেছেন, দরকার নেই, ওর মা বাবা এখনও বেঁচে আছে ।” সাজু রাগ দেখিয়ে বলল, “আপনি কি ভাবেন আমি নিজের স্বার্থে এ কাজ করেছি?” গালিব বলল, “ঠিক একই ভাবেই আপনি আমার মেয়েটাকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাহায্য করে এমন বানাচ্ছেন যে আমার মেয়ে ভাবছে তার বাবা ফকির!”
×
বাবা(পর্ব-৮৬)

পরদিন ছিলো মঙ্গলবার । সকাল হতেই গালিব অফিসে, অনিক ভার্সিটি আর পুষ্পিতা স্কুলে বেড়িয়ে গেলো । আজ নাকি আরশির কি একটা কাজ আছে, তাই সাথে মাকে নিয়ে গেছে । আসলে পুষ্পিতার উদ্দেশ্য ভিন্ন । সে আসলে যাচ্ছে স্টাইলা ক্যাফেতে, সাজুর সাথে দেখা করতে ।
এদিকে আকবর আলি স্টাইলা ক্যাফের পেছনে দাঁড়িয়ে সেই লোকের যে ওকে পেনড্রাইভ দেবার কথা । এর আগে দোকানে গিয়েছিলো আকবর আলি, মোবাইল নাকি ঠিক হয়ে গেছে সেটা আনতে । মোবাইলে বিভিন্ন জিমেইল অ্যাকাউন্টেই লগ ইন করছিলো গালিব । একটু পরই এক লোক এলো, মুখে সানগ্লাস, আর মাস্ক পড়ে । হাতে তার পেনড্রাইভ । লোকটা আকবর আলিকে পেনড্রাইভ দিলো, আকবর আলি সেটা নিয়ে লোকটাকে টাকা দিলো । চোখে মুখে খুশির ছাপ আকবর আলির । পকেট থেকে ওটিজি ক্যাবলটা বের করে মোবাইলের সাথে পেনড্রাইভ কানেক্ট করে দেখলো, ভেতরে কিছুই নেই । আকবর আলি অবাক! মানে কি এর! জাস্ট একটা ছবি খুঁজে পেলো, সেখানে সাদা চুল মোছওয়ালা এক লোক তাকিয়ে আর লেখা কেইসা লাগা মেরে মাজাক । আকবর আলির প্রচণ্ড রাগ উঠতে লাগলো । স্টাইলে ক্যাফেতে ঢুকল । রিসিপশনের লোকটার কাছে যেয়ে রাগ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “ভিডিও দে নাইলে আমার টাকা দে!” রিসিপশনের লোকটা বলল, “কিসের টাকা স্যার? কিসের ভিডিও?” আকবর আলি কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো, কিন্তু তাকিয়ে দেখলো, আশেপাশে সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে । চুপ হয়ে গেলো সে । রিসিপশনের লোকটা আসলে ওকে ঠকিয়েছে । আকবর আলি রিসিপশনের টেবিলে হাত দিয়ে জোড়ে আঘাত করে বেড়িয়ে গেলো । ট্যাক্সি উঠে বাসার দিকে যাওয়া শুরু করলো ।
এদিকে বাড়িতে সাজানোর কাজ চলছে । কাল অনিক আর পপির এঙ্গেজমেন্ট । সেসব কাজের তদারকি করছে মিজান আর শামসু । বসে বসে কাজগুলো দেখছে কুলসুম আর লুনা । লুনা জিজ্ঞেস করলো, “মাই মাই গো! জামাইবাবা কাম করে, তাই থাইকতে পারলো না, আমার মাইয়াডার কি এমন কাম হইলো যে গেলো গা!” কুলসুম বলল, “আরে হবে হবে কিছু একটা কাজ । টেনশন করিস না । তোর আর আমার জামাই সামলে নেবে ।” লুনা হেসে উঠলো । কুলসুম জিজ্ঞেস করলো, “কিরে! হাসছিস যে?” লুনা বলল, “আমার জামাই আর কি কাম করে! বিয়া হুনতে লিয়া হোনে, হেয় আবার করবো কাম!” কুলসুম বলল, “আরে না! কি যে বলিস । ভাই মাশাআল্লাহ ভালোই কাজ করে ।” এমন সময় ময়না এলো “খালাম্মা!!” বলে নেকামি করতে করতে ঘরে আসতে আসতে । এসে লুনা আর কুলসুমের মাঝখানে বসে বলল, “আল্লাহ! খালাম্মা! আপনাদের যে কি সুন্দর লাগছে!” লুনা জিজ্ঞেস করলো, “মাই মাই গো! পাগল হইছো নাকি? আমরা আবার সুন্দর হইতে যামি ক্যা?” ময়না বলল, “না না খালাম্মা! অবশ্যই আপনাদের সেই সুন্দর লাগছে!” সেই সময় মিজান শামসুকে বলল, “বেয়ান সাব! বান্দর আইছে মনে হয়!” শামসু বলল, “আরে আমার বয়রা বেয়ান! বান্দর না বান্দর না, উনি সুন্দর বলেছেন ।” ময়না তখন কুলসুমকে বলল, “জানেন ভাবি! আমাদের অনিকের বিয়ে হচ্ছে! কতো খুশি যে হয়েছি! অনিকের মতো ছেলে হয়না!” আরও নানান কথা বার্তা বলতে লাগলো ময়না ।
এদিকে ট্যাক্সি করে বাসার দিকে ফেরার সময় হঠাৎ আকবর আলি দেখলো, পুষ্পিতা আরশিকে মাঝপথে রিকশা থেকে নামিয়ে একা একা অন্য পথে রওনা হয়েছে । সে পথটা স্টাইলা ক্যাফেতেই যায় । পুষ্পিতাকে দেখে আকবর আলি ড্রাইভাবকে বলল, “ড্রাইভার! গাড়ি ঘুরিয়ে ওই গাড়িটা ফলো করেন তো!”
“আচ্ছা খালাম্মা! আমি তাহলে যাই!” বলে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে এলো ময়না । ময়না চলে যেতেই লুনা বলল, “এই মাইয়া বেশি কতা কয়! বাঁচাল!” ময়না এদিকে নিচে নামতেই দেখা ওর আরেক ভাবির সাথে । তাকে দেখতেই সে ময়নাকে জিজ্ঞেস করলো, “আরে ভাবি কোথায় গিয়েছিলেন?” ময়না বলল, “আরে ভাবি! অনিকের বিয়ে না, কাল তো এঙ্গেজমেন্ট । তাই একটু দেখা করতে এসেছিলাম ।” ভাবি বলল, “ও । তা শুনলাম মেয়ের বাপ নাকি বিয়ে অনিকের সাথে দিতে চায় না? আবার অনিক কোন চাকরি বাকরি না করেই কি করে করে বিয়ে? বউ খাওয়াবে কি?” ময়না বলল, “আরে ভাবি! বইলেন না! অনিক কি ভালো ছেলে নাকি! প্রেম হয়েছিলো ভাবি প্রেম! ভাবা যায়! আসেন আসেন! আমার বাসায় আসেন! আপনাকে সবটা খুলে বলি ।” বলে ময়না ভাবি সাথে থাকা মহিলাকে নিয়ে তার বাসায় গেলো ।
স্টাইলা ক্যাফের সামনেই থামলো পুষ্পিতার রিকশা । পুষ্পিতা ক্যাফেতে যেতেই আকবর আলি ট্যাক্সি থেকে নেমে ট্যাক্সি ড্রাইভারকে ভাড়া দিয়ে ভেতরে গেলো ক্যাফের । একটা ফাকা টেবিলে বসে কারোও জন্য অপেক্ষা করছে পুষ্পিতা । আকবর আলি মনে মনে বলল, “তবে কি এই মহিলা আবার তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে এসেছে? আচ্ছা! তাহলে অপেক্ষা করেই দেখি ।” একটু তফাতেই আরেকটা টেবিলে বসলো আকবর আলি । কিছুক্ষণ পর ক্যাফেতে ঢুকলো সাজু । সাজুকে চিনতে ভুল হলো না আকবর আলি । চেহারায় বিরাট একটা হাসি ফুটে উঠলো । পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে শুরু করলো রেকর্ড করা আর মনে মনে বলল, “এই না হলে আমার ভাগ্য!”

আগামী পর্বেঃ
গালিব লোকটাকে বলল, “আমার মেয়েকে আপনি সাহায্য করেছেন, অবশ্যই সেটা খুব ভালো একটা কাজ করেছেন । কিন্তু আমার মনে হয় এতোটা সাহায্য কেউ মন থেকে করে । আর যদি ধরি আপনি মন থেকেই করেছেন, দরকার নেই, ওর মা বাবা এখনও বেঁচে আছে ।” সাজু রাগ দেখিয়ে বলল, “আপনি কি ভাবেন আমি নিজের স্বার্থে এ কাজ করেছি?” গালিব বলল, “ঠিক একই ভাবেই আপনি আমার মেয়েটাকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাহায্য করে এমন বানাচ্ছেন যে আমার মেয়ে ভাবছে তার বাবা ফকির!”
×
বাবা(পর্ব-৮৭)

“এখানে কেনো এসেছো? আর আমাকেই বা ডাকলে কেনো?” পুষ্পিতাকে জিজ্ঞেস করলো সাজু । পুষ্পিতা বলল, “তোমাকে সরি বলতে! প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও?” সাজু বলল, “না না, তুমি আমাকে সরি কেনো বলবে? সরি তো আমি তোমাকে বলবো । আমাকে ক্ষমা করে দাও । অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি । তোমাকে পাওয়ার চিন্তা হঠাৎ ভেবে ফেলেছি ।” পুষ্পিতা বলল, “দ্যাখো! তুমি হয়তো ভুল করেছো, কিন্তু সত্যি কথা বলতে তোমাকে আমিও পেতে চাই!” কথাটা শুনতেই সাজুর চেহারায় যে অভিমানের ছাপ ছিলো, তা চলে গেলো । এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো পুষ্পিতার দিকে । পুষ্পিতার হাত ধরে জিজ্ঞেস করলো, “সত্যি? সত্যি তুমি আমাকে ভালোবাসো?” পুষ্পিতা বলল, “হ্যাঁ, আমি তোমাকে ভালোবাসি ।” সাজু তারপর মাথা নিচু করে বলল, “হায়! কিসব যে ভাবছি আমি! তোমাকে পাওয়া নিয়ে একটু বেশিই ভাবছি বোধ হয় । কিন্তু সেটা তো সম্ভব নয় ।” পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “হ্যাঁ, আমিও জানি এটা সম্ভব নয় । কিন্তু আমার মেয়ে আমাকেও তোমার মতো বলেছে, ও চেষ্টা করবে আমার আর তোমার বিয়ে দেবার জন্য ।” সাজু বলল, “সত্যি! তাহলে মনে হয় তোমার মেয়ে কিছু একটা প্ল্যান করছে ।” পুষ্পিতা বলল, “ও প্ল্যান করেছে, আমি এমন কিছু একটা যেনো করি, যাতে ওর বাবা আমার ওপর রেগে যায় । আমি যেনো সেটা রেকর্ড করি আর ডিভোর্স-এর জন্য সেই রেকর্ড কারণ হিসেবে পেশ করতে পারি ।” সাজু বলল, “না না ছি ছি! এটা কেমন উপায়! আমাদের জন্য তোমার বর্তমান স্বামী কেনো ভুগবে!” পুষ্পিতা বলল, “সেটাই তো! এজন্যই তো ওকে আমি বকি । বাবার সাথে ঠিকঠাক মতো কথাও বলে না । শুধু ঝগড়া করে ।” সাজু কপালে হাত ঠেকিয়ে বলল, “আহ! কি যে করছে মেয়েটা!” পুষ্পিতা বলল, “আচ্ছা শোনো! আজকে তুমি একটু আমাদের বাসায় এসো । ওর বাবা তোমাকে ডেকেছে ।” সাজু পুষ্পিতার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “আমাকে! কেনো?” পুষ্পিতা বলল, “ওই যে, তুমি ওকে ঘড়ি কিনে দিয়েছো, সেজন্য ।” সাজু বলল, “ঠিক আছে, আমি তাহলে সন্ধ্যার দিকে আসবো ।” পুষ্পিতা বলল, “ঠিক আছে, সন্ধ্যার পর এসো । কিন্তু একটা কথা মনে রেখো! সেখানে না আমি তোমাকে চিনি, না তুমি আমাকে চেনো! তুমি শুধু আরশিকেই চেনো! আমি আরশিকেও সাবধান করে দিয়েছি ।” সাজু বলল, “ঠিক আছে, মনে থাকবে আমার ।” পাশে বসে থাকা আকবর আলি মনে মনে বলল, “হুম! তাহলে দেখা যায় আজ সন্ধ্যায়ই বাজি ফোটাতে হবে!”
সন্ধ্যার পরের কথা । ড্রইং রুমে বসে আছে গালিবের পরিবারের সবাই । সোফায় বসে গালিব, সামনের সোফায় আরশি আর সাজু । গালিব সাজুকে জিজ্ঞেস করলো, “আপনি আমার মেয়েকে এতো টাকা দামের ঘড়ি কিনে দিয়েছেন?” সাজু বলল, “হ্যাঁ ভাই । কেনো, আমি কি তাতে কোন দোষ করে ফেলেছি?” গালিব বলল, “না দোষ আপনি করেন নি । কিন্তু এভাবে এতো বড় একটা অঙ্কের টাকার জিনিস আপনি আমার মেয়েকে দিনে, আপনাকে আমরা কেউ চিনি না জানি না, কেবল আমার মেয়ে চেনে, ব্যাপারটা কেমন না’?” সাজু বলল, “দেখুন, আপনার মেয়ে আমাকে অনেক ভালো করে চেনে । এই পুশ……” পুষ্পিতা বলতে যাচ্চিলো সাজু কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, “পুষ্পল রোডের সামনেই ওর সাথে আমার পরিচয় হয়েছিলো । একবার মেয়েটা পথ হারিয়ে ফেলেছিলো তো ।” গালিব জিজ্ঞেস করলো, “এ কথা তো কখনো আমার মেয়ে বলে নি?” আরশি বলল, “বলি নি তো কি হয়েছে? তোমাদের তো আবার ঠিক ঠিকানা নাই, মেয়ে মরলেও তোমরা হয়তো মেয়েকেই মারবা যে তুই মরে কেনো গেলি! এখন তোর বাপ মায়ের যত্ন কে নেবে!” গালিব ভ্রু কুঁচকে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, “আরশি! এখন আমি তোর সাথে কথা বলছি না! বাইরের মানুষের সামনে নিজের মান সম্মান নষ্ট করিস না ।” গালিব লোকটাকে বলল, “আমার মেয়েকে আপনি সাহায্য করেছেন, অবশ্যই সেটা খুব ভালো একটা কাজ করেছেন । কিন্তু আমার মনে হয় না এতোটা সাহায্য কেউ মন থেকে করে । আর যদি ধরি আপনি মন থেকেই করেছেন, দরকার নেই, ওর মা বাবা এখনও বেঁচে আছে ।” সাজু রাগ দেখিয়ে বলল, “আপনি কি ভাবেন আমি নিজের স্বার্থে এ কাজ করেছি?” গালিব বলল, “ঠিক একই ভাবেই আপনি আমার মেয়েটাকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাহায্য করে এমন বানাচ্ছেন যে আমার মেয়ে ভাবছে তার বাবা ফকির!” সাজু জিজ্ঞেস করলো, “তো! আপনার মেয়ে এমন ভাবলে আমি কি করবো? কেমন বাবা হয়েছেন আপনি যে আপনার মেয়ে মানুষকে দেখে ভাবে নিজের বাবার চেয়ে সেই মানুষটা বেশি ভালো?” লুনা রেগে গিয়ে বলল, “থাবড়াই গালডা লাল কইরা দিমু! মাই মাই গো! এইসব কি কথা কও!” গালিব সাজুকে বলল, “আপনার কথাই প্রমাণ করে দিচ্ছে আপনি কেমন মানুষ । কোথায় আপনি আমার মেয়েকে বোঝাবেন বাবার সাথে এমন করতে হয় না, তা না করে আপনি আরও আমার মেয়েকে আমার বিপক্ষে উসকে দিচ্ছেন । কেনো বলুন তো?” সাজু বিরক্ত হয়ে আরশিকে বলল, “আরশি! তুমি আর তোমার পরিবার, একদম আকাশ পাতাল তফাৎ । তুমি এরকম একটা পরিবারে কি করে জন্ম নিলে আমি জানি না! তুমি এর চেয়ে অনেক গুণ ভালো পরিবার ডিজার্ভ করো!” ঠিক সেই সময় বাসার দরজা থেকে আওয়াজ এলো । “ও এই পরিবার ডিজার্ভ করে কি করেনা জানি না, তবে আপনি এরকম একটা পরিবার ডিজার্ভ করেন না!” কথাটা বলেছে আকবর আলি । কথাটা বলতে বলতে ভেতরে ঢুকলো সে ।

আগামী পর্বেঃ
সাজু আরশিকে বলল, “তুমি ঠিকই বলেছিলে! তোমার পরিবারের লোকজন শুধু ঝগড়াই করতে পারে!” গালিব বলল, “শাট আপ মিস্টার সাজু! শাট আপ! আর একটা বাজে কথা বলবেন না! আর এটা আমাদের পারিবারিক ব্যাপার । হতে পারে আপনার চোখের সামনেই ঝগড়াটা হয়েছে, কিন্তু আপনার সেখানে নাক না গলানোটাই আপনার জন্য ভালো হবে ।” তারপর গালিব ঘড়িদুটো নিয়ে সাজুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, “এগুলো দয়া করে নিয়ে যান!” সাজু সেখান থেকে বেড়িয়ে গেলো চোখে মুখে ওর রাগ দেখা গেলো ।
×
বাবা(পর্ব-৮৮)

কুলসুম জিজ্ঞেস করলো, “কি ব্যাপার! আমাদের বাসায় যারা আসে তাকেই কি আপনি চেনেন নাকি?” আকবর আলি বলল, “খালাম্মা! আগে যে এসেছিলো, তাকে আমি চিনতাম । আর এখন যে এসেছে, তাকে আপনার বউমার মাধ্যমে আমি চিনেছি ।” শামসু জিজ্ঞেস করলো, “কি বলছো স্পষ্ট করে বলো ।” আকবর আলি বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ! বলবো তো! দাঁড়ান, একটা জিনিস দেখাই আপনাদের ।” বলে মোবাইলটা হাতে নিয়ে একটা ভিডিও ওপেন করে সবার দিকে মেলে ধরলো আকবর আলি । সবাই আকবর আলির মোবাইলের দিকে তাকিয়ে । আকবর আলি জিজ্ঞেস করলো, “কি? বুঝতে পারছেন? কি করে আমি এই লোককে চিনলাম?” গালিব জিজ্ঞেস করলো, “আপনি কি দেখাচ্ছেন? এখানে তো কিছুই নেই?” আকবর আলি অবাক । কি ব্যাপার! মোবাইল নিজের দিকে ঘুড়িয়ে দেখলো, সত্যিই মোবাইলের স্ক্রিন কালো হয়ে গেলে । আকবর আলি নিজের ওপর রেগে গিয়ে নিজেই নিজেকে বলল, “হায় আল্লাহ! আবার গেছে মোবাইলটা!” লুনা বলল, “মাই মাই গো! বার বার আইসা ডিস্টার্ব কইরা যান! তয় এইবার একটা জিনিস বুঝলাম, আপনেও তাইলে বিশ্বাস করেন আমাগো পরিবার ভালা । তাইলের মাইয়ার বিয়া দিতে সমস্যা ক্যান করেন?” আকবর আলি বলল, “এই পরিবার ভালো, অবশ্যই ভালো, কিন্তু এই পরিবার গরীব । আমি আমার মেয়ের জন্য বড়লোক টাকা পয়সাওয়ালা ছেলে ঠিক করেছিলাম!” গালিব জিজ্ঞেস করলো, “কিন্তু সে পরিবার ভালো তো?” আকবর আলি বলল, “যতটুকু চিনি ততটুকু ভালো ।” গালিব আবারও বলল, “যতটুকু চেনেন বলতে এখনও সেই পরিবারকে পুরোপুরি আপনি চেনেন না । আর যদিও ধরি সেই পরিবার ভালো, সেই পরিবারে কি আপনার মেয়ে ভালো থাকবে? এই পুরনো ভালোবাসা তাকে কষ্ট দেবে না ভাবছেন? কিংবা আমার ছেলেকে আপনার মেয়ে যেভাবে ভালোবেসে, সেভাবে সেই ছেলেটাকে ভালোবাসতে পারবে?” আকবর আলি চুপ হয়ে গেলো । মিজান বলল, “কি হইলো? এহন কতা কই? হ্যাঁ?” আকবর আলি এবার মাথা তুলে বলল, “আমি অত শত জানি না, তবে হ্যাঁ, আপনাদের পরিবারে আরেকটা কারণ আছে, যার জন্য আমি আমার মেয়ের সাথে আপনাদের ছেলের বিয়ে দিতে চাই না । তবে সেটা প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত আমি বলবো না! ভালো থাকবেন! আল্লাহ হাফেজ!” বলে বেড়িয়ে গেলো আকবর আলি । সাজু আরশিকে বলল, “তুমি ঠিকই বলেছিলে! তোমার পরিবারের লোকজন শুধু ঝগড়াই করতে পারে!” গালিব বলল, “শাট আপ মিস্টার সাজু! শাট আপ! আর একটা বাজে কথা বলবেন না! আর এটা আমাদের পারিবারিক ব্যাপার । হতে পারে আপনার চোখের সামনেই ঝগড়াটা হয়েছে, কিন্তু আপনার সেখানে নাক না গলানোটাই আপনার জন্য ভালো হবে ।” তারপর গালিব ঘড়িদুটো নিয়ে সাজুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, “এগুলো দয়া করে নিয়ে যান!” সাজু সেখান থেকে বেড়িয়ে গেলো চোখে মুখে ওর রাগ দেখা গেলো । আরশিও রাগ করে চলে গেলো নিজের রুমে ।
“কি ঠিক করেছেন আপনি! যে একদিন যেতে না যেতেই আবার নষ্ট হয়ে গেলো!” দোকানদারকে বলল আকবর আলি । দোকানদার বলল, “স্যার! আমি কি করুম কন! পুরান মোবাইল চালাইতেছেন, নষ্ট তো বারবার হইবোই । আইচ্ছা, এমনেতে আমি এই কাম দুইশো লই, আপনে আমাকে একশো দিয়েন ।” আকবর আলি বলল, “কি! এক টাকাও পাবেন না! আগের বার টাকা দিয়েছি না?” দোকানদান আকবর আলির কাছে মোবাইল ফেরত দিয়ে বলল, “আইচ্ছা যান , তাইলে অন্য দোকানে যান । আর দুইশো টাকার কমে কোথাও ঠিক করাইতে পারলে বইলেন । আমি লুঙ্গি খুইলা রাস্তায় বাইর হমু ।” আকবর আলি একটু ভেবে চিন্তে বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে । ঠিক করে দেন । কিন্তু হ্যাঁ! এবার কিন্তু ভেতরের কোন ফাইল হারিয়ে যাওয়া চলবে না । আর কতদিন লাগবে ঠিক করতে?” দোকানদার জিজ্ঞেস করলো, “আপনার কবের মধ্যে লাগবো?” আকবর আলি বলল, “তিনদিনের মধ্যে দিতে পারবেন?” দোকানদার বলল, “এমনে তো আমার চার পাঁচ দিন লাগতো, আপনে যখন কইলেন, আমি জান দিয়ে তিনদিনের মইধ্যে কইরা দিমু । শুক্রবার সকালে আইসেন ।” আকবর আলি জিজ্ঞেস করলো, “শুক্রবার সকালে! তার আগে হবে না!” দোকানদার বলল, “না না, যেই দোকান থেইকা অর্ডার দিয়া এই পার্সগুলা আনি, ওই দোকান এইগুলা আমার দোকানে পাথাইলে ৫-৬ দিন লাগায় , তাই তো কইলাম ৫-৬ দিন লাগতো । আপনে জন্য আমি নিয়ে যাইয়া এই পার্স কিনা আনমুনে । তা আমার বৃহস্পতিবারের আগে সময় হইবোনা ।” আকবর আলি মনে মনে বলল, “শুক্রবার সকালেই তো বিয়ে ওদের! কাল এঙ্গেজমেন্ট আর পরশু গায়ে হলুদ! কবুল বলার আগেই মোবাইলটা পেতে হবে!” আকবর আলি দোকানদারকে বলল, “আচ্ছা বেশ । তবে শুক্রবার সকালেই কিন্তু! এর বেশি দেরি করবেন না!” দোকানদার বলল, “আইচ্ছা স্যার ।” আকবর আলি চলে এলো সেখান থেকে ।
এঙ্গেজমেন্টের রিং নিতে দোকানে এসেছে অর্ক আর রাফিদ । অর্ক জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা, তোর কি মনে হচ্ছে, তোর বাবা এই বিয়েটা ভাঙ্গার চেষ্টা করতে পারে?” রাফিদ বলল, “মনে করার কি আছে, বাবা তো চেষ্টা করেই যাচ্ছে । কিন্তু কি যে করছে তা-ই তো বুঝতে পারছি না!” রাফিদ বলল, “হুম । আল্লাহ আল্লাহ করে বিয়েটা ঠিকঠাকভাবে হলেই হয় ।”

আগামী পর্বেঃ
রাফিদ তখন সাউন্ড বক্সটা ছাড়লো, তারপর গানের তালে নাচ শুরু করলো পুরো পরিবার । এরপর অনিক আংটি নিয়ে সেটা পড়িয়ে দিলো পপির অনামিকা আঙ্গুলে । সবাই হাততালি দিলো ।
……………………………….
আরশি এসে বলল, “হাই আঙ্কেল!” সাজু বলল, “হাই আরশি! কেমন আছো?” আরশি বলল, “অনেক ভালো । শোনো! পরশু আমার ভাইয়ের বিয়ে, তুমি আসবে বিয়েতে ।”
×
বাবা(পর্ব-৮৯)

পরদিনের কথা । বুধবার আজ । সকাল থেকেই বাসায় উৎসবমুখর পরিবেশ । যদিও আজ এঙ্গেজমেন্ট বলে তেমন কাউকে ডাকা হয়নি । আত্মীয়রা কেউ কাল আসবে, কেউ আসবে পরশু বিয়ের দিন সকাল সকাল । অনিক আর পপিকে পাশাপাশি বসানো হয়েছে । দুজনকে সাজানোও হয়েছে বেশ সুন্দর করে । আশেপাশে কিছু ভাবিরা এসেছে যদিও, তার মধ্যে ময়না ভাবিও আছে । সে বলল, “আল্লাহ! আমাদের অনিক বাবা বিয়ে করছে ভাবা যায়! এইতো এইটুকু ছিলো! ন্যাংটা থাকতো দৌড়ে বেড়াতো মেঝে দিয়ে, কোলে তুললে হেগে মুতে একাকার ।” কথা শুনে পপি হাসি থামায় কে । হাসতে হাসতেই বলল, “সে কি অনিক! তুমি এগুলা করতা!” অনিক ময়নাকে বলল, “আন্টি প্লিজ! এগুলো আর বইলেন না!” ময়না বলল, “এই, কেনো বলবো না রে? আজকেই তো বলার দিন ।” লুনাও তাল মিলিয়ে বলল, “হ! আইজকাই তো কওয়ার দিন ।” অনিক বলল, “নানি! তুমি শুরু কোরো না আবার!” পাশেই দাঁড়িয়ে রাফিদ আর অর্ক । অর্ককে রাফিদ কানে কানে বলল, “দোস্ত! ওই আন্টি যা বলল, তার সব আমি তোর বিয়ের দিন তোর নাম লাগিয়ে তোর বউয়ের সামনে বলে বেড়াবো!” অর্ক বলল, “বলিস পারলে, ভাবিস না তাহলে তোর বিয়েতেও আমি ছেড়ে কথা বলবো ।” এদিকে কুলসুম পুষ্পিতাকে জিজ্ঞেস করলো, “গালিব কি আজও অফিসে গেছে?” পুস্পিতা বলল, “জি আম্মা । আসলে ও চায় না ছেলের বিয়েতে ও টাকার সংকটে পড়ুক ।” কুলসুম বলল, “এই তিনটে দিন না গেলেও হতো! ছেলের বিয়ে তো আর বার বার হবে না ।” পুষ্পিতা বলল, “আচ্ছা আম্মা, সমস্যা নেই । আর অনিকের এঙ্গেজমেন্ট এখনই হবে না, অনিকের বাবা এলে বিকেলে হবে ।” রাফিদ তখন সাউন্ড বক্সটা ছাড়লো, তারপর গানের তালে নাচ শুরু করলো পুরো পরিবার ।
“অ্যাঁই! মেয়ের এঙ্গেজমেন্ট হচ্ছে তুমি যাবে না?” আকবর আলির রুমে এসে জিজ্ঞেস করলো উমা । আকবর আলি বলল, “পরে যাবো । এঙ্গেজমেন্ট তো বিকেলে, তখন যাবো ।” উমা বলল, “কি সব প্রমাণ নাকি দেখাবে? কই সেসব?” আকবর আলি বলল, “সময় মতো সব দেখাবো ।” উমা বলল, “ঠিক আছে, যা খুশি করো । তবে আমার মেয়ের ক্ষতি হয় এমন কোন কিছু যেনো না হয়! মনে রেখো!” বলে রুম থেকে চলে গেলো উমা ।
বিকেলে সবাই এলো । আকবর আলিও এলো । পুষ্পিতা অর্ককে বলল, “দেখতো, তোর বাবার রেডি হওয়া হয়েছে কিনা ।” অর্ক মাথা হালকা ওপর নিচে নাড়িয়ে উঠে দেখতে যাবে সে সময় হাজির হলো গালিব । টকটকে লাল একটা পাঞ্জাবী, সাদা পায়জামা , আর লাল পাঞ্জাবীর ওপর সাদা কোটি । লুনা তাকিয়ে দেখে বলল, “মাই মাই গো! জামাইবাবারে কতো সুন্দর লাগতাছে!” গালিব এসে বলল, “ধুর! ছেলে মেয়ে জোড় করে কি সব পড়িয়ে দিলো! এই গরমে এই ভারী ভারী কোটি নাকি কেউ পড়ে ।” কুলসুম বলল, “হয়েছে । কটা দিন না হয় ছেলেমেয়ের ইচ্ছা পালন কর ।” গালিব বলল, “ঠিক আছে, সবাই তো এসেই পড়েছি । তাহলে আংটিবদল শুরু করা যাক?” পুস্পিতা বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ, শুরু করো ।”এরপর অনিক আংটি নিয়ে সেটা পড়িয়ে দিলো পপির অনামিকা আঙ্গুলে । সবাই হাততালি দিলো । সবাই দোয়া করলো অনিক আর পপির জন্য ।
রাতের কথা । ছাদে দাঁড়িয়ে রাফিদ আর অর্ক । রাফিদ অর্ককে জিজ্ঞেস করলো, “তোর শুক্রবার প্রোগ্রাম আছে না? বিয়ের অনুষ্ঠান করেই আবার প্রোগ্রামে যাবি?” অর্ক বলল, “কি আর করার, যেতেই হবে । কেবল দ্বিতীয় দিন বলে কথা । না গেলে বের করে দেবে একদম ।” রাফিদ জিজ্ঞেস করলো, “না না, এতো সোজা না । প্রথম দিনেই তুই যে পরিমাণ ভাইরাল হয়ে গেলি ।” অর্ক বলল, “ওরে, ভাইরাল হলেই কি আর কাজ থেকে বের করে দেয়া যায় না?” রাফিদ বলল, “তাও । সব আন্দোলন করবে দেখিস তোর জন্য ।” অর্ক বলল, “হইছে ভাই থাম, আজগুবি কথাবার্তা বলা বাদ দে ।” রাফিদ বলল, “ও ভালো কথা! কাল বাসায় একজন আসছেন । জানি না এরপর নতুন কি ঝামেলা শুরু হয়! একে বাবা কি করবে তার চিন্তায় আছি! তার ওপর নতুন ঝামেলা আসছে!” অর্ক জিজ্ঞেস করলো, “কি?” রাফিদ বলল, “আমার কাজিন, তোর বোনের বান্ধবী, জয়িতা আসছে । ওর পরিবারসহ । শেষ বার আন্টির সাথে যা ঝামেলাটাই যে হলো! আল্লাহ না করুক, এবারও উনি যদি কিছু উলটাপালটা করে বসেন তাহলে ঝামেলা!” অর্ক বলল, “হুম । ব্যাপারটা সত্যি বেশ চিন্তার । কিন্তু দেখা যাক, কি হয়ে ।”
ভিডিও কলে সাজুর সাথে কথা বলছে পুষ্পিতা । সাজু ফোনের ওপাশ থেকে বলল, “কি ব্যাপার? সেই যে তোমার বাসা থেকে তোমার বরের কাছ থেকে খারাপ লোক উপাধি পেয়ে এলাম, তারপর তো আর খোঁজ খবরই নিলে না!” পুষ্পিতা বলল, “আর বলো না, আজকে অনিকের এঙ্গেজমেন্ট ছিলো, অনেক ব্যাস্ততার মধ্যে সময় পার করেছি । আবার এই যে, কাল গায়ে হলুদ । সেগুলো নিয়েও ব্যস্ত সময় পার করছি । কাজ যদিও আমার যে অংশ সেটুকু শেষ, বাকি কাজ বাকিরা করছে । আমি একটু সুযোগ পেয়ে তোমাকে কল করলাম ।” ঠিক সে সময় আরশি এসে বলল, “হাই আঙ্কেল!” সাজু বলল, “হাই আরশি! কেমন আছো?” আরশি বলল, “অনেক ভালো । শোনো! আমার একটা কথা রাখবে?” সাজু বলল, “তোমার কোন কথা কি আমি রাখিনি আগে?” আরশি বলল, “উফফো! কি যে বলো না! আমি সেভাবে বলতে চাই নি! আচ্ছা যাই হোক, পরশু আমার ভাইয়ের বিয়ে, তুমি আসবে বিয়েতে ।” সাজু আর পুষ্পিতা দুজনেই অবাক হয়ে গেলো ।

আগামী পর্বেঃ
ময়না বলল, “আচ্ছা ভাবি, চলেন । আমরাও যাই বউকে একটু দেখে আসি ।” জয়িতার মা বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ ভাবি, চলেন । যার তার বাড়িতে না থাকাই ভালো । পুষ্পিতা তখন উঠে দাঁড়িয়ে রার দেখিয়ে বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ! কাল কিন্তু এই যার তার বাড়িতেই আসতে হবে!”
………………………………………
জয়িতার আরশির হাতে থাকা ফোনের দিকে তাকালো । তারপর বলল, “আহারে! সেই যে কয়েকবছর আগে ডে দিয়েছিলি এটা সেই ফোনটাই না! আসলে এতো বছর একটা ফোন ইউজ করতে আমার ইচ্ছে করে না । এই দ্যাখ! আমার বাবা আমাকে আইফোন কিনে দিয়েছে! দেখেছিস! একদম অরিজিনাল!”
×
বাবা(পর্ব-৯০)

“এসব কি বলছিস! ও আবার কেনো আসবে এতো ঝামেলার পর!” আরশি বলল, “সাজু আঙ্কেলকে আসতে হবেই! তা না হলে ভাইয়ের বিয়ের দিন আমিই সাজু আঙ্কেলের কাছে চলে যাবো!” বলে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো আরশি । পুষ্পিতা সাজুকে বলল, “দেখেছো! কেমন হয়েছে মেয়েটা! একটা কথা যদি ঠিকঠাকমতো শোনে!” সাজু জিজ্ঞেস করলো, “এখন কি করবো!” পুষ্পিতা বলল, “চিন্তা কোরো না । আমি ওকে বুঝিয়ে বলবো । আমি চাই তুমি সেদিন অতো মেহমানের সামনে অপমানিত হও ।” সাজু বলল, “আরে না! আমি না হয় গোপনে যাই! যদি আরশি আবার চলে আসে, তবে তোমার পরিবারের অপমান হবে! লোকে বলবে ভাইয়ের বিয়েতে বোন আসে নি!” পুষ্পিতা বলল, “গোপনে! এভাবে আবার কি করে আসবে?” সাজু বলল, “সেটা তুমি চিন্তা কোরো না । আমি সেটা ম্যানেজ করে নেবো ।” বলে সাজু আশেপাশে তাকিয়ে তারপর ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে বলল, “আচ্ছা, আমার একটু কাজ করতে হবে । রাখি!” বলে কেটে দিলো কল সাজু । পুষ্পিতা ফোন রেখে মনে মনে বলল, “সাজুকে কেমন যেনো অচেনা লাগছে আমার কাছে! ও যেনো আমার সাথে বিয়ে করার জন্য এতো বছর পর একটু বেশিই উতলা হয়ে উঠেছে! সেদিন আরশির বাবাকেও কেমন অপমান করলো । আবার এখন আমি বললাম আরশিকে ম্যানেজ করে নেবো, অথচ তাও ও যেনো নিজে থেকেই আসতে চাইছে আমার ছেলের বিয়েতে । ব্যাপার কি!” পরদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার হলো গায়ে হলুদ । বেশ জাঁকজমকভাবে পালন করা হলো গায়ে হলুদের দিন । সন্ধ্যার মধ্যেই শেষ হয়ে গেলো সকল কার্যক্রম । তবে রাতে সবাই নির্ঘুম জেগে থাকবে । কাল বিয়ে বলে কথা! সন্ধ্যার দিকের কথা । পুষ্পিতা আর ময়না বসে ছিলো পুষ্পিতাদের বাসার ডাইনিং রুমে ডাইনিং টেবিলে । ময়না বলল, “ভাবি! আপনাদের বাসাটা যে সুন্দর ডেকোরেশন করা হয়েছে না! একদম অসাধারণ! দেখে মনেই হচ্ছে না একটা বাসা!” পুষ্পিতা বলল, “বাড়ির বড় ছেলের বিয়ে বলে কথা! সুন্দর না হয়ে যায় কোথায় ।” ঠিক সেই সময় “আরে! ময়না ভাবি!” বলতে বলতে পুষ্পিতাদের ঘরে ঢুকলো জয়িতার মা । পুষ্পিতা জয়িতার মাকে দেখে রেগে গেলেও ময়না ফিসফিসিয়ে বলল, “ভাবি ধৈর্য ধরেন!” তারপর ময়না এগিয়ে গেলো জয়িতার মায়ের কাছে । জিজ্ঞেস করলো, “কেমন আছেন ভাবি?” জয়িতার মা বলল, “এইতো ভাবি, ভালো আছি । আপনি কেমন আছেন ভাবি?” ময়না বলল, “জি ভাবি, ভালো আছি । জয়িতা আসে নাই?” জয়িতার মা বলল, “এমা, আসবে না কেনো? এসেছে তো । ওই পপির সাথে কথাবার্তা বলছে আরকি ।” ময়না বলল, “আচ্ছা ভাবি, চলেন । আমরাও যাই বউকে একটু দেখে আসি ।” জয়িতার মা বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ ভাবি, চলেন । যার তার বাড়িতে না থাকাই ভালো । পুষ্পিতা তখন উঠে দাঁড়িয়ে রার দেখিয়ে বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ! কাল কিন্তু এই যার তার বাড়িতেই আসতে হবে!” জয়িতার মা রেগে গিয়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো, কিন্তু ময়না আটকে দিয়ে বলল, “ভাবি! ধৈর্য ধরেন!” জয়িতার মা থামলো । তারপর ময়না, “চলেন ভাবি!” বলে জয়িতার মাকে নিয়ে গেলো আকবর আলির বাসায় ।
সিঁড়ি ছাদে গিয়েছিলো আরশি । নিচে নেমে ঘরে ঢোকার সময় হঠাৎ কারও ডাকে দাঁড়িয়ে গেলো । “কিরে কি খবর?” পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো, জয়িতা । জয়িতা কাছে এগিয়ে আসতে আসতে বলল, “ভাবিস না তোর সাথে সব মিটমাট করতে এসেছি । তবে তোর ভাইয়ের বিয়ে তো, তোকে আর কষ্ট দিতে চাচ্ছি না আরকি ।” জয়িতা কথা বলার সময় বার বার নিজের মোবাইল দেখাচ্ছিলো । আইফোন হাতে ওর । আরশি বলল, “ভালো তো, তাহলে ঝামেলা করিস না! আর ঝামেলা না করার প্রথম শর্ত আমাকে ডাকিস না । তবে কেনো ডাকলি আমাকে?” জয়িতার আরশির হাতে থাকা ফোনের দিকে তাকালো । তারপর বলল, “আহারে! সেই যে কয়েকবছর আগে ডে দিয়েছিলি এটা সেই ফোনটাই না! আসলে এতো বছর একটা ফোন ইউজ করতে আমার ইচ্ছে করে না । এই দ্যাখ! আমার বাবা আমাকে আইফোন কিনে দিয়েছে! দেখেছিস! একদম অরিজিনাল!” আরশি বলল, “ভালো তো । আমাকে দেখানোর কি আছে তাতে?” জয়িতা বলল, “না দেখাচ্ছি কোথায় । তোর ফোন দেখে মায়া লাগলো একটু ।” আরশি তখন বলল, “এতোই মায়া যখন দে একটা কিনে! পারবি?” জয়িতা হেসে বলল, “ভাগ! একটা ভিখিরিকে কিনে দেবো তবু তোকে দেবো না ।” আরশি তখন বলল, “একদম, এই যে তুই যে আচরণগুলো করছিস না, এগুলো ভিখিরিরা দামি কিছু হাতে পেলেই করে!” বলে ঘরে চলে গেলো আরশি । জয়িতা মনে মনে বলল, “এতো বড় সাহস! আমাকে বলে ভিখিরি! অবশ্য আমিও একটু বেশিই করে ফেললাম । নাহ! এখানে যতদিন আছি, এই দশহাজার টাকার মোবাইলটার পেছনের আইফোন কেইসটা খোলা যাবে না । আরশি আবার দেখে ফেললে আমাকে অপমান করবে ।”

আগামী পর্বেঃ
রাফিদ ভিড় থেকে দূরে একটা ফাকা জায়গায় এসে কল ধরে জিজ্ঞেস করলো, “হ্যালো কে বলছেন?” ফোনের ওপাশ থেকে একটা মেয়ে কণ্ঠ বলে উঠলো, “হ্যালো, আমাকে চিনতে পারছো! আমি প্রীতি ।” হঠাৎ করে একটু বেশিই খুশি হয়ে গেলো রাফিদ ।
………………..
প্রীতি তখন গালিবকে জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা আঙ্কেল, আপনি কি আমার আর আপনার ছেলের বিয়ের কথাটা আপনার ছেলেকে বলেছেন?” গালিব বলল, “হ্যাঁ ।” প্রীতি বলল, “ও আচ্ছা আঙ্কেল । আসলে সত্যি কথা বলতে কি, রাগ কইরেন না আঙ্কেল । বিয়ের দিক থেকে মনটা আমার কেনো যেনো সরে যাচ্ছে ।”
×
বাবা(পর্ব-৯১)

ছাদে দাঁড়িয়ে অন্যান্য কাজিন বন্ধুদের সাথে মজা করছিলো রাফিদ আর অর্ক । এমন সময় রাফিদের মোবাইলে একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল এলো । রাফিদ ভিড় থেকে দূরে একটা ফাকা জায়গায় এসে কল ধরে জিজ্ঞেস করলো, “হ্যালো কে বলছেন?” ফোনের ওপাশ থেকে একটা মেয়ে কণ্ঠ বলে উঠলো, “হ্যালো, আমাকে চিনতে পারছো! আমি প্রীতি ।” হঠাৎ করে একটু বেশিই খুশি হয়ে গেলো রাফিদ । বলল, “যাক, আমাকে মনে পড়েছে তাহলে ।” প্রীতি বলল, “আসলে অফিসে বোরিং সময় পাড় করছি । ভাবলাম আপনার সাথে একটু কথা বলি ।” রাফিদ জিজ্ঞেস করলো, “”আপনি এখনও অফিসে?” প্রীতি বলল, “হ্যাঁ । অফিসের অন্যান্য যারা ওভারনাইট করছে তাদের সাথে আজ আমাকেও ওভারনাইট করতে হচ্ছে । একটা কারণে কাজ একটু বেশি তো, তার ওপর কাল তো শুক্রবার ।” রাফিদ বলল, “কাল কি কিছু করার প্ল্যান আছে?” প্রীতি বলল, “না । কেনো?” রাফিদ বলল, “আসলে কাল আমার বোনের বিয়ে । আপনি এলে খুব খুশি হতাম ।” প্রীতি বলল, “ও তাই! ঠিক আছে । আমাকে ঠিকানা দিয়ে, আমি চলে যাবো । বিয়ের জন্য না হোক অন্তত আপনাকে দেখার জন্য ।” রাফিদ হঠাৎ চমকে গেলো । পৃথিবীর সব সুখ যেনো ওর মধ্য দিয়ে বয়ে গেলো । জিজ্ঞেস করলো, “কি বললেন!” প্রীতি দাঁত দিয়ে জিভ চেপে ধরে মনে মনে বলল, “হায়রে! কি বলে ফেললাম!” তারপর রাফিদকে বলল, “না মানে কাল আসবো, সাথে আপনার সাথে দেখাও হয়ে যাবে, এই আর কি ।” রাফিদ বলল, “তাহলে এক কাজ করুন, ভোরে র‍্যান্ডম পার্কে থাকবেন, আমি আপনাকে সেখান থেকে রিসিভ করে নিয়ে আসবো ।” প্রীতি একটু ভেবে বলল, “র‍্যান্ডম পার্কে কেনো আবার?” রাফিদ বলল, “উম…। এমনি । কথা বলতাম দুজনে কিছুক্ষণ ।” প্রীতি বলল, “ঠিক আছে । আমি আসবো ।” রাফিদ বলল, “তাহলে কাল সকাল সাতটায় র‍্যান্ডম পার্কে আমাদের দেখা হচ্ছে?” প্রীতি বলল, ”ঠিক আছে । আমাকে একটু সাজেস্ট করবে, কি রঙ-এর জামা পড়বো আমি?” রাফিদ বলল, “উম…। হলুদ শাড়ি আছে?” প্রীতি বলল, “হ্যাঁ আছে ।” রাফিদ বলল, “তাহলে হলুদ শাড়ি, লাল চুরি, আর তোমার ওই মিষ্টি হাসিটা ।” একটু থেমে রাফিদ বলে উঠলো, “সরি সরি! আমি ভুল করে আপনাকে তুমি বলে ফেললাম!” প্রীতি বলল, “কাল থেকে হয়তো প্রতিদিনই বলা লাগতে পারে!” রাফিদ আবারও হতবাক । জিজ্ঞেস করলো, “মানে!” প্রীতি আবার দাঁত দিয়ে জিভ চেপে ধরে বলল, “কিছু না, কাল দেখা হবে । বাই!” বলে কল কাটলো প্রীতি । রাফিদ মোবাইলটা বুকে চেপে ধরলো । সেই সময় অর্ক এলো । জিজ্ঞেস করলো, “কিরে? কার সাথে কথা বলছিলি?” রাফিদ বলল, “আরে দোস্ত! একটা মেয়ে! জানিস ওর সাথে দেখা হয়েছিলো আমার, ফোন নাম্বার দিয়েছিলাম! আজ আমাকে কল দিয়েছে!” অর্ক হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলো, “আরিব্বাস! নাম কি?” রাফিদ বলল, “ওর নাম হলো প…” এমন সময় অর্কর মোবাইলে একটা কল এলো । অর্ক রাফিদকে, “এক মিনিট দোস্ত!” বলে চলে গেলো । রাফিদও কাজিনদের মাঝে চলে গেলো । এরপর আর রাফিদের কাছ থেকে ব্যস্ততার কারণে মেয়েটার নাম শোনা হলো না অর্কর ।
“কি ব্যাপার বেয়ান? মন খারাপ কেনো?” মিজানের কাছে এসে বলল শামসু । মিজান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “সব খালি বিয়া বিয়া করতাছে, আর আমি শুনতেছি লিয়া । কি যে কষ্ট ।” শামসু হাসতে হাসতে মিজানের পিঠে একটা আলতো করে চাপড় মেরে বলল, “আরে আমার বয়রা বেয়ান! আজ তো কষ্টে থাকবেন না! আমাদের বড় নাতির বিয়া আজ ।” মিজান ইয়ার্কির ছলে কান্না করে বলল, “আবার লিয়া!” শামসু হেসে উঠলো । তারপর মিজান জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা জামাইবাবাজি কই?” শামসু বলল, “জানেনই তো বেয়ান । অফিস ।” মিজান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “আহ! জামাইবাবা কতো কষ্ট করে!” শামসু বলল, “হ্যাঁ । ছেলেটা এতো কষ্ট করে, আর বাড়ি ফিরে মেয়ের ঝারি শোনে ।” দুজনেই চুপ করলো । কেউ কিছু বলতে পারলো না ।
“আসবো?” প্রীতির রুমের দরজায় এসে বলল গালিব । প্রীতি বলল, “জি আঙ্কেল, আসেন ।” গালিব এসে বসলো । প্রীতি জিজ্ঞেস করলো, “আজ হঠাৎ আমার সাথে দেখা করতে এলেন যে? কোন সমস্যা হয়েছে?” গালিব বলল, “না, আসলে কাল আমার বাড়িতে বিয়ে । আমার বড় ছেলের । তাই আপনাকে দাওয়াত করতে এলাম ।” বলে বিয়ের কার্ড এগিয়ে দিলো গালিব । প্রীতি কার্ডটা নিয়ে ডেস্কের একপাশে রেখে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ আঙ্কেল! কিন্তু আমি খুবই দুঃখিত । কাল আমার একজন স্পেশাল ফ্রেন্ডেরও বোনের বিয়ে । সে যেতে বলেছে ।” গালিব বলল, “ও আচ্ছা, ঠিক আছে, সমস্যা নেই ।” প্রীতি তখন গালিবকে জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা আঙ্কেল, আপনি কি আমার আর আপনার ছেলের বিয়ের কথাটা আপনার ছেলেকে বলেছেন?” গালিব বলল, “হ্যাঁ । আসলে বলতে চাই নি, কিন্তু আমার বড় ছেলে বলে দিয়েছে হুট করে ।” প্রীতি বলল, “ও আচ্ছা আঙ্কেল । আসলে সত্যি কথা বলতে কি, রাগ কইরেন না আঙ্কেল । বিয়ের দিক থেকে মনটা আমার কেনো যেনো সরে যাচ্ছে ।” গালিব হালকা হাসিমুখে বলল, “আরে আরে! এতে মন খারাপের কি আছে, আমি তোমার মন যেটা ভালো বুঝবে তুমি তো সেটাই করবে । আমার তো জোড় করার অধিকার নেই ।” প্রীতি বলল, “আচ্ছা আঙ্কেল, এবার আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি, পরশু দিনই আমি আমার শিওর মতামত আপনাকে জানাবো ।” গালিব বলল, “ঠিক আছে ।”

আগামী পর্বেঃ
পার্কের গেইট দিয়ে তখন পার্কে এলো একটা ছেলে । গায়ে আকাশী রঙের পাঞ্জাবী, কালো জিন্স প্যান্ট, কালো জুতো । পাঞ্জাবীর হাতা কনুই পর্যন্ত গোটানো । সেটার ভাজটা ঠিক করে নিলো ছেলেটা ।
………………………………………………….
পার্কের গেইট দিয়ে ঢুকলো একটা মেয়ে । গায়ে হলুদ শাড়ি, হাতে লাল চুড়ি, পায়ে লাল জুতো । চুড়িগুলো একটু ঠিক করে নিলো । তারপর বাতাসে উড়তে থাকা চুলগুলোও হাত দিয়ে একটু ঠিক করে নিলো । ঠোঁটের কোণে একটা মিষ্টি হাসি ফুটে উঠলো ।
×
বাবা(পর্ব-৯২)

ভোর ৭টা । র‍্যান্ডম পার্কে আজ লোকজন তুলনামূলক কম । কারণ আকাশ আজ আকাশ মেঘলা । তবে পেটের দ্বায়ে আসতে হয়েছে ছোট্ট ফুল বিক্রেতা মেয়ে, রূপাকে । সে বসে একটা আম গাছের নিচে । পার্কের অন্য পাশে একটা বড় কৃষ্ণচূড়া গাছ । লাল লাল ফুলে ভরে আছে । মৃদু বাতাস বইছে । বৃষ্টি আসার আগে যে ঠান্ডা বাতাস বয় সেই বাতাস । পার্কের গেইট দিয়ে তখন পার্কে এলো একটা ছেলে । গায়ে আকাশী রঙের পাঞ্জাবী, কালো জিন্স প্যান্ট, কালো জুতো । পাঞ্জাবীর হাতা কনুই পর্যন্ত গোটানো । সেটার ভাজটা ঠিক করে নিলো ছেলেটা । বাম হাতের কব্জিতে থাকা স্মার্ট ওয়াচটা একটু চেক করে নিলো, দেরি করে ফেললো কি না । চুলগুলো হেয়ার জেল দিয়ে ঊর্ধ্বমুখী করা । সেটা হাত দিয়ে একটু ঠিক করে নিলো । চোখের সানগ্লাসটাও ঠিক করে নিলো । এ আর কেউ নয়, রাফিদ । পার্কের আম গাছের নিচে আসতেই রূপা দৌড়ে গেলো রাফিদের কাছে । জিজ্ঞেস করলো, "ফুল নিবেন ভাইয়া?" রাফিদ হাঁটু গেড়ে বসলো । জিজ্ঞেস করলো, "কতো টাকা করে ফুল?" রূপা বললো, "একখান পাঁচ ট্যাকা ।" রাফিদ জিজ্ঞেস করলো, "তোমার হাতে যেকটা আছে সে কটা নিলে?" রূপা বললো, "এইহানে ১০টা আছে, তাইলে ৫০টাকা ।" রাফিদ বললো, "আচ্ছা, দাও এই দশটা ।" রাফিদ ফুলগুলো নিয়ে মেয়েটাকে দুইশো টাকা দিলো । রূপা বলল, "হায় আল্লাহ! এতো টাকা ক্যান?" রাফিদ বলল, "স্পেশাল একজনের জন্য ফুলগুলো তো, তাই আমার কাছে এর দাম বেড়ে গেছে ।" রূপা তখন আরও দশটা ফুল দিয়ে বললো, "এইগুলা রাখেন!" রাফিদ জিজ্ঞেস করলো, "একি! আবার এগুলো কেনো?" রূপা রাফিদকে বলল, "ওইডা আপনার পক্ষ থেইকা আপনার স্পেশাল মানুষের জন্য, আর এইডা আমার পক্ষ থেইকা উনার জন্য ।" রাফিদের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল । ফুলগুলো নিয়ে বললো, "থ্যান্ক ইউ!" রাফিদ ফুলগুলো নিয়ে গিয়ে বসলো কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে একটা বসার জায়গায় । অপেক্ষা করতে লাগলো ওর সেই স্পেশাল মানুষের ।
পার্কের গেইট দিয়ে ঢুকলো একটা মেয়ে । গায়ে হলুদ শাড়ি, হাতে লাল চুড়ি, পায়ে লাল জুতো । চুড়িগুলো একটু ঠিক করে নিলো । তারপর বাতাসে উড়তে থাকা চুলগুলোও হাত দিয়ে একটু ঠিক করে নিলো । ঠোঁটের কোণে একটা মিষ্টি হাসি ফুটে উঠলো । মেয়েটা আর কেউ নয়, প্রীতি । আম গাছের কাছাকাছি আসতেই প্রীতির কাছে দৌড়ে এলো রূপা । হাতের ফুলগুলো এগিয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলো, "ফুল নিবেন আপা?" প্রীতি বলল, "কত টাকা করে?" রূপা বললো, "একখান পাঁচ ট্যাকা!" প্রীতি বললো, "দশটা দে ।"মেয়েটা প্রীতিকে দশটা ফুল দিলো, আর প্রীতি মেয়েটাকে দিলো চারশো টাকা । মেয়েটা প্রীতিকে জিজ্ঞেস করলো, "চারশো ক্যান? পঞ্চাশ টাকা তো!" প্রীতি বললো, "আজ আমার দিনটা অনেক স্পেশাল তাই এই ফুলগুলোর দাম ও আমার জন্য অনেক ।" প্রীতি এরপর ফুলগুলো মেয়েটার দিকে এগিয়ে ধরে বলল, “নে, আমি তোকে এটা দিলাম ।” রুপা জিজ্ঞেস করলো, “হায় আল্লাহ! এতো ট্যাকা দিলেন, আবার ফুলগুলাও ফেরত দিতাছেন?” প্রীতি বলল, “কোথায় ফেরত দিচ্ছি? তোর কাছ থেকে কিনে আমার করে নিলাম, এরপর ফুলগুলো তোকেই গিফট করলাম ।” রুপা জিজ্ঞেস করলো, “ক্যান?” প্রীতি বলল, “প্রথমত তুই খাওয়া দাওয়া আর লেখাপড়া কর, এর দ্বিতীয়ত আমার ফুল আমার স্পেশাল মানুষের কাছে আছে ।” বলে প্রীতি মেয়েটাকে ফুল আর অফিসের কার্ড দিয়ে বলল, “এই কার্ডটাও রাখ । কোন সমস্যায় পড়লে আমাকে কল দিস ।” মেয়েটা প্রীতির কাছ থেকে ফুল আর কার্ড নিয়ে হাসিমুখে বলল, “আচ্ছা, তাইলে যান । আপনার স্পেশাল মানুষের কাছে আমার একখান জিনিস আছে আপনার জন্য ।” প্রীতি জিজ্ঞেস করলো, “মানে?” রুপা বলল, “যাইয়াই দেখতে পারবেন!” প্রীতি আর কথা না বলে মেয়েটার মাথায় আদর করে চলে এলো ।
কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে আকাশী রঙের পাঞ্জাবী পরিহিত রাফিদকে দেখলো প্রীতি । রাফিদ যেই মুহূর্তে প্রীতিকে দেখলো, চোখের সানগ্লাসটা সরিয়ে ঠোঁটের কোণে একটা স্মার্ট হাসি ফুটিয়ে তুললো । প্রীতি রাফিদের কাছে এগিয়ে এলো । দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলো । রাফিদ প্রথমে দশটা গোলাপফুল দিলো প্রীতিকে । বলল, “এটা আমার পক্ষ থেকে ।” প্রীতি সেগুলো নিলো । বললো, “থ্যাঙ্ক ইউ ।” রাফিদ বলল, “তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে ।” প্রীতি হাসিমুখে জবাব দিলো, “তোমাকেও ।” রাফিদ তখন আরও ১০টা গোলাপফুল প্রীতিকে দিয়ে বলল, “এটা যার কাছ থেকে কিনেছি, তার পক্ষ থেকে ।” প্রীতি সেগুলো নিয়ে হেসে উঠলো । বলল, “এজন্যই বলি! মেয়েটা কেনো বলছিলো আমার স্পেশাল মানুষের কাছে ও আমার জন্য কিছু দিয়েছে ।” রাফিদ প্রীতির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “সত্যি?” প্রীতি বলল, “কি সত্যি?” রাফিদ জিজ্ঞেস করলো, “এই যে, তুমি আমাকে তোমার স্পেশাল মানুষ বলেছো!” প্রীতি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করলো । ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি পড়া শুরু হয়েছে, ফলে আশেপাশে কেউ আর নেই । শুধু প্রীতি, রাফিদ, কৃষ্ণচূড়া গাছ আর বাতাস । বাতাসের বেগও বেড়েছে । সেই বাতাসে প্রীতির চুল উড়ছে । কৃষ্ণচূড়া গাছ থেকে পড়ছে কৃষ্ণচূড়া ফুলের পাপড়ি । রাফিদ হাটু গেড়ে বসে প্রীতির হাত ধরে বলল, “আমায় তোমার করে নেবে?” প্রীতি লজ্জা পেলো । রাফিদ বলল, “এই ব্যাকুল মন তোমার জবাবের অপেক্ষায় । নেবে?” প্রীতি হাসিমুখে বলল, “নেবো ।” তারপর রাফিদ “ইয়াহু!” বলে লাফিয়ে উঠলো । প্রীতি জড়িয়ে ধরলো রাফিদকে । রাফিদও জাপটে ধরলো প্রীতিকে । আর তারপর শুরু হলো ওদের প্রেমের জীবন ।

আগামী পর্বেঃ
পুষ্পিতা বলল, “আচ্ছা শোন । বিয়ের দিন পড়ার জন্য তোর বাবাও আমাকে একটা শাড়ি কিনে দিয়েছে, আর সাজুও একটা দিয়েছে । কোনটা পড়বো বুঝতে পারছি না!” আরশি বলল, “শোনো মা, তাহলে একটা প্ল্যান বলি ।” বলে আরশি পুষ্পিতার কানে কানে কিছু কথা বলল । পুষ্পিতা বলল, “ঠিক আছে! পারফেক্ট!”
……………………………………
“একি! দোকান বন্ধ!” মোবাইল রিপেয়ারের দোকানের সামনে এসে দোকান বন্ধ দেখে মাথায় হাত পড়লো আকবর আলির । পাশে এক দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলো, “ভাই! এই দোকানদার কই?” পাশের দোকানদার বলল, “কি জানি ।”
×
বাবা(পর্ব-৯৩)

“অর্ক বাবা, তুমি কি রাফিদকে দেখেছো?” অর্ককে জিজ্ঞেস করলো উমা । অর্ক বলল, “না আন্টি, তবে ও এখানে থাকার কথা না । আমাকে বলেছিলো ওর কে একজন পরিচিত কাউকে আনতে যাবে ।” উমা বলল, “ও আচ্ছা ।” বাড়িতে বিয়ে বিয়ে ভাব । পুরো বাড়িতে মেহমান দিয়ে ভরা । পাশাপাশি বিয়ের নজির বোধ হয় খুব কমই । ড্রইং রুমে বসে আছে লুনা, শামসু, মিজান, কুলসুম, ময়না আর অন্যান্য আত্মীয় স্বজনরা । কথা বার্তা বলছে ।
নিজের রুমে বউয়ের সাজে বসে আছে পপি । ওর আশেপাশে ওর বান্ধবীরা । এক বান্ধবী পপিকে বলল, “কিরে? বিয়েটা তাহলে হচ্ছেই?” পপি বলল, “হ্যাঁ, অবশেষে আমাদের সম্পর্কটা হালাল হচ্ছে ।” আরেক মেয়ে জিজ্ঞেস করলো, “হ্যাঁ রে, শুনলাম আঙ্কেল নাকি এই বিয়েতে মত দেন নি?” পপি বলল, “শুরুতে চান নি, এখন মত দিয়েছেন । তা না হলে কি আর বিয়ে হয় নাকি ।”
এদিকে নিজের রুমে বন্ধুদের সাথে জামাইয়ের সাজে বসে অনিক । ওর এক বন্ধু বলল, “ফাইনালি তোরা বিয়া করতেছিস! এতো যে জালাইছিস তোরা!” আরেক বন্ধু বলল, “হ! একবার তো ও গেছিলো প্রেম করতে, আঙ্কেল ফোন দিয়া খোঁজ নিছিলো অনিক কই । বলা লাগছিলো এক্সট্রা ক্লাস করতেছে ।” অনিক বলল, “এখন বিয়ে করেই ফেলছি তো তাই না? এখন বাবাকে তোরাই ফোন করে জিজ্ঞেস করিস, আঙ্কেল পপির জামাই কেমন আছে!” সেখান সবাই হেসে দিলো ।
রেডি হয়ে রুম থেকে বেরোচ্ছিলো আরশি, এমন সময় পুষ্পিতা এলো রুমে । জিজ্ঞেস করলো, “কিরে কোথায় যাচ্ছিস?” আরশি বলল, “মা একটু বের হচ্ছি । কাজ আছে ।” পুষ্পিতা বলল, “সাজুকে আনতে যাচ্ছিস না ।” আরশি বলল, “জানোই যখন তখন জিজ্ঞেস করছো কেনো?” পুষ্পিতা বলল, “আচ্ছা শোন । বিয়ের দিন পড়ার জন্য তোর বাবাও আমাকে একটা শাড়ি কিনে দিয়েছে, আর সাজুও একটা দিয়েছে । কোনটা পড়বো বুঝতে পারছি না!” আরশি বলল, “এতো ভাবার কি আছে! যাকে ভালোবাসো তারটাই পড়ো!” পুষ্পিতা ভ্রু কুঁচকে বলল, “এতো বাড়াবাড়ি করিস কেনো তুই? তোর বাবার কষ্ট লাগবে না?” আরশি হেসে বলল, “ও, তাকে তুমি ভালোবাসোও?” পুষ্পিতা বলল, “ভালোবাসা না থাকলে তোরা তিনটা জন্ম নিতি না!” আরশি বলল, “শোনো মা, তাহলে একটা প্ল্যান বলি ।” বলে আরশি পুষ্পিতার কানে কানে কিছু কথা বলল । পুষ্পিতা বলল, “ঠিক আছে! পারফেক্ট!”
দরজার সামনে মেহমানদের স্বাগত জানাচ্ছিলো গালিব । একটু পরই এলো জাহিদ । গালিব জাহিদকে দেখেই বলল, “আরে আমার স্পেশাল গেস্ট! আসসালামু আলাইকুম! আসেন আসেন! ভেতরে আসেন!” জাহিদ এলো ভেতরে । গালিব জিজ্ঞেস করলো, “একি, ভাবি বাচ্চা এলো না?” জাহিদ বলল, “আর বইলেন না, আমার শ্বশুরের পায়ে আজকের দিনে একটা অপারেশনের ডেট দেয়া ছিলো । সেটার জন্যই ওরা গত পরশু বাড়িতে গেছে ।” গালিব বলল, “ইশ! উনারা আসলে আরও ভালো লাগতো ।” জাহিদ জিজ্ঞেস করলো, “জামাইবাবা কই?” গালিব বলল, “রুমে আছে ।” বলে গালিব অর্ককে বলল, “তুই একটু সবাইকে স্বাগত জানা আমি একটু তোর আঙ্কেলকে ভেতর থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসি ।” অর্ক “ঠিক আছে” বলে মেহমানদের স্বাগত জানাতে দাঁড়িয়ে গেলো ।
“একি! দোকান বন্ধ!” মোবাইল রিপেয়ারের দোকানের সামনে এসে দোকান বন্ধ দেখে মাথায় হাত পড়লো আকবর আলির । পাশে এক দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলো, “ভাই! এই দোকানদার কই?” পাশের দোকানদার বলল, “কি জানি । তয় এইরকম দেরি এই লোক করেই । চিন্তা কইরেন না । দুপুরের আগেই চইলা আইবো ।” আকবর আলি আবার চমকে উঠলো । বলল, “দুপুর!”
জাহিদকে নিয়ে অনিকের রুম থেকে বেরোলো গালিব, এমন সময় দেখলো, পুষ্পিতা । ওর কিনে দেয়া শাড়ি পড়ে এদিকেই এগিয়ে আসছে । জাহিদকে দেখে পুষ্পিতা মাথায় ঘোমটা দিলো । গালিব মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো পুষ্পিতার দিকে । পুষ্পিতা এগিয়ে এসে জাহিদকে সালাম দিলো । “আসসালামু আলাইকুম ভাই!” জাহিদ বলল, “ওয়ালাইকুমুস সালাম ভাবি । কেমন আছেন?” পুষ্পিতা বলল, “জি ভাই, আলহামদুলিল্লাহ ভালো । আপনি?” জাহিদ বলল, “জি আলহামদুলিল্লাহ, ভালো । আপনারা কথা বলেন তাহলে, আমি ওদিকে যাই ।” বলে জাহিদ সেখান থেকে চলে এলো । গালিব পুষ্পিতাকে বলল, “তোমায় দারুণ লাগছে দেখতে!” পুষ্পিতা বলল, “তোমাকেও ।” এমন সময় হঠাৎ আরশি এসে হোঁচট খেতে খেতে পড়ে যেতে নিলো আর ওর হাতে থাকা একটা বাটি ইচ্ছে করে ফেলে দিলো পুষ্পিতার শাড়িতে । গালিব আরশিকে ধরে বলল, “ঠিক আছিস?” আরশি কিছু বলল না । তারপর পুষ্পিতার শাড়ির দিকে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে বলল, “এই দ্যাখো! তোমার শাড়িতে মাংসের ঝোল লেগে গেলো!” পুষ্পিতা বলল, “তুই মাংসের ঝোল নিয়ে কি করছিস?” আরশি বলল, “না এমনি খাচ্ছিলাম । মজা লাগছিলো ।” পুষ্পিতা বলল, “তুই কি বাচ্চা? সেন্স নাই?” গালিব বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে, ছোট মানুষ ।” আরশি চলে গেলো সেখান থেকে পুষ্পিতা বলল, “আমি সরি! ভেবেছিলাম তোমার শাড়িটা পড়বো!” গালিব হাসিমুখে বলল, “ইটস ওকে । যাও, পালটে এসো ।” পুষ্পিতা ওপর নিচ মাথা নেড়ে চলে গেলো । রুমে আসতে আসতে সে মনে মনে বলতে লাগলো, “আরশি এই ঝোল ফেলে শাড়ি পাল্টানোর আইডিয়াটা দারুণ ছিলো! কিন্তু খারাপ লাগছে । আর যাই হোক, মানুষতা একদম নিষ্পাপ । ঠিক হলো মনে হয় এটা করা । আল্লাহই জানেন, উনার সাথে এমন করায় আমার কপালে দুর্ভাগ্য আছে কিনা ।”

আগামী পর্বেঃ
উমার মোবাইলেই কল এলো আকবর আলির । কল ধরে উমা বলল, “এই কোথায় তুমি? আজ তোমার মেয়ের বিয়ে, আর তুমিই বিয়ে বাড়িতে নেই? আত্মীয় স্বজনরা তোমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে!” আকবর আলি বলল, “আরে! আমি তো প্রমাণ নিতে এসেছি! কিন্তু শালার ব্যাটা দোকানদার এখনও আসে নি ।”
………………………………..
জয়িতার মা বলল, “জানেন ভাবি! আমার মেয়েটা তো আসতেই চাইছিলো না । তবু আনলাম ।” ময়না জিজ্ঞেস করলো, “সেকি কেনো?” জয়িতার মা আড়চোখে একবার পুষ্পিতার দিকে তাকিয়ে বলল, “না এমনি । অনেক মানুষজন আছে তো, বিষধর সাপের মতোন ।”
×
বাবা(পর্ব-৯৪)

হন্তদন্ত হয়ে দোকানের সামনে পায়চারী করছে আকবর আলি । অবস্থা এমন যে দেখে মনে হচ্ছে হার্ট এট্যাক করবে । পাশের দোকানদার দোকান বন্ধ করতে করতে বলল, “ভাইজান, বাড়িত যাইয়া গোসল কইরা নামাজ পইড়া খাওয়া দাওয়া করেন । এই লোক এহন আর আইবো । এক্কেবারে বিকাল ৩ডার দিকে । আইজকা আবার জুম্মাবার না ।” বলে লোকটা চলে গেলো । আকবর আলি কাঁপতে কাঁপতে নিজে নিজেকে বলল, “তাহলে আমার মেয়েটা একটা খারাপ পরিবারে বিয়ে করবে! না না! এটা হতে পারে না! আমি যাই । ওদের বলি, যতক্ষণ না আমি প্রমাণ দিতে পারবো, ততোক্ষণ যেনো বিয়ে না হয়!” বলে বাসার দিকে রওনা হতে লাগলো, এমন সময় আকবর আলি আবার মনে মনে নিজে নিজেকে বলল, “না! এভাবে প্রমাণ ছাড়া বললে আত্মীয় স্বজনের সামনে আমারই মান সম্মান যাবে । ওরা ভাববে আমি বোধ হয় ইচ্ছে করেই আমার মেয়ে আর ওই ছেলের বিয়ে আটকাতে চাইছি । তার চেয়ে বরং কল করে ওদের বলি, আমি না আসা পর্যন্ত বিয়েটা সম্পন্ন না করতে ।”
“অর্ক বাবা, তোমার আঙ্কেলকে দেখেছো? রাফিদের বাবাকে?” অর্ককে জিজ্ঞেস করলো উমা । অর্ক বলল, “না আন্টি, আঙ্কেলকে তো সকাল থেকে দেখি নি । ব্যাপার কি!” উমা বলল, “কি জানি! রাফিদও নেই, রাফিদের বাবাও নেই!” অর্ক বলল, “আচ্ছা আন্টি, আমি রাফিদকে কল করে খোঁজ নিচ্ছি । জুম্মার নামাজের সময় তো হয়ে এলো প্রায়, ওর তো এতক্ষণে চলে আসার কথা ছিলো ।” উমা বলল, “আচ্ছা দেখো ।” এমন সময় উমার মোবাইলেই কল এলো আকবর আলির । কল ধরে উমা বলল, “এই কোথায় তুমি? আজ তোমার মেয়ের বিয়ে, আর তুমিই বিয়ে বাড়িতে নেই? আত্মীয় স্বজনরা তোমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে!” আকবর আলি বলল, “আরে! আমি তো প্রমাণ নিতে এসেছি! কিন্তু শালার ব্যাটা দোকানদার এখনও আসে নি ।” উমা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, “আমার ভাইয়ের ছেলে আবার কবে দোকান দিলো?” আকবর আলি বলল, “আরে ধুর! ওটা আমি দোকানদারকে গালি দিছি!” উমা জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা যাই হোক । আত্মীয় স্বজনদের কি বলবো?” আকবর আলি বলল, “আত্মীয় স্বজন না, তুমি সবাই বলো, আমি একটা জরুরী কাজে এসেছিলাম, কিন্তু ফেরার পথে বাস নষ্ট হয়ে গেছে, তাই ফিরতে দেরি হচ্ছে, আর আমার ইচ্ছে আমি না আসা পর্যন্ত বিয়ে যেনো না হয় ।” উমা বলল, “তুমি কি এটা মামা বাড়ির আবদার পেয়েছো? তোমার জন্য কি কাজী সাহেব সারাদিন বসে থাকবেন? কাজী সাহেব বলেছিলেন ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত সময় দিতে পারবেন ।” আকবর আলি বলল, “আহহা! একটু ম্যানেজ করো না!” উমা বলল, “ঠিক আছে! কিন্তু এবারে যেনো এমন কিছু না করো যাতে আমার মেয়ের ক্ষতি হয়!” আকবর আলি বলল, “আরে আমি বলেইছি তো! এটা আমি মেয়ের ভালোর জন্যই করছি!” উমা বলল, “ঠিক আছে ।” কল রাখতেই গালিব এসে দাঁড়ালো উমার কাছে । বলল, “ভাবি, আকবর ভাইকে পাচ্ছি না সকাল থেকে, দেনমোহরের ব্যাপারে উনার সাথে একটু কথা বলতাম ।” উমা বলল, “আর বইলেন না ভাই, উনি কি একটা কাজে গেছেন, ফেরার সময় বাস নষ্ট হয়ে গেছে । তবে উনি চান উনি না আসা পর্যন্ত বিয়েটা যেনো না হয় ।” গালিব বলল, “ও । তাহলে দেনমোহরের ব্যাপারে কার সাথে কথা বলবো?” উমা বলল, “ভাই, পপির বড় চাচা আছেন, উনার সাথে কথা বলেন ।” গালিবকে নিয়ে উমা তখন পপির বড় চাচার কাছে গেলো ।
“শিট!” ঘড়ি দেখে চমকে গেলো রাফিদ । প্রীতি জিজ্ঞেস করলো, “কি হলো?” রাফিদ বলল, “আজ যে জুম্মাবার আমি ভুলেই গেছি! আধঘণ্টা পর নামাজ!” প্রীতি বলল, “ও, তাহলে কি বাসায় যাবা?” রাফিদ বলল, “এখন বাসার দিকে গেলে আবার দেরি হয়ে যাবে । ভাগ্য ভালো গোসলটা সকালে সেরেছি ।” প্রীতি বলল, “তাহলে এক কাজ করো, এখানে একটা মসজিদ আছে, তুমি সেখানে যাও ।” রাফিদ জিজ্ঞেস করলো, “তুমি?” প্রীতি বলল, “আমি তোমার জন্য এখানে অপেক্ষা করি না হয় ।” রাফিদ বলল, “সেকি! এতোক্ষণ তুমি আমার অপেক্ষায় থাকবে!” প্রীতি বলল, “সারাজীবন থাকতে পারি, এটুকু সময় তো কিছুই না ।” রাফিদ বলল, “আচ্ছা । তাহলে নামাজ শুরু মিনিট ১০ আগে যাবোনে মসজিদে ।”
বাসায় কোন পুরুষ মানুষ নেই । সবাই নামাজে গেছে । আকবর আলির বাসায় ড্রইং রুমে আর সব ভাবিদের সাথে বসে ময়না আর জয়িতার মা । পুষ্পিতাও আছে, আরশি নেই । জয়িতাও আছে এখানেই । উমাও আছে একপাশে দাঁড়িয়ে । জয়িতার মা বলল, “জানেন ভাবি! আমার মেয়েটা তো আসতেই চাইছিলো না । তবু আনলাম ।” ময়না জিজ্ঞেস করলো, “সেকি কেনো?” জয়িতার মা আড়চোখে একবার পুষ্পিতার দিকে তাকিয়ে বলল, “না এমনি । অনেক মানুষজন আছে তো, বিষধর সাপের মতোন ।” পুষ্পিতা তখন হঠাৎ ময়নাকে বলল, “আচ্ছা ভাবি, আমি একটু আমার বাসায় গেলাম ।” উমা পুষ্পিতার কষ্ট বুঝতে পেরে বলল, “হ্যাঁ ভাবি, চলেন । আমিও যাই । জামাইয়ের একটু খোঁজ নিয়ে আসি ।” পুষ্পিতা চলে যেতেই জয়িতার মা ময়নাকে ফিসফিসিয়ে বলল, “এই ভাবি, আরশি নাকি কোন লোককে নিজের বাবার চেয়েও বেশি ভালোবাসে?” ময়নাও ফিসফিসিয়ে বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ! আমিও তেমনটা শুনেছি । এমনও শুনেছি, নিজের বাপের সাথে যা-তা আচরণ করে আরশি ।” জয়িতার মা বলল, “ছি ছি! এমন পরিবারে কিভাবে আমার ভাই বিয়ে দিতে রাজি হলো! আমি হলে তো মুখের ওপর না করে দিতাম ।”

আগামী পর্বেঃ
এরপর রাফিদ আর প্রীতি বিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলো । একটা ট্যাক্সি ভাড়া করেছিলো ওরা । রাস্তা দিয়ে আসছিলো, এমন সময় এক মহিলা ফকির ওদের পথ আটকে দাঁড়ালো । ট্যাক্সি ড্রাইভার থামতে না চাইলেও প্রীতি বলল, “আঙ্কেল গাড়িটা দাঁড় করান!” ড্রাইভার গাড়ি দাঁড় করিয়ে গাড়ির জানা দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “এই কিতা চাও?” ফকিরটা বলল, “ভাইজান! আমার ছোট্ট মাইয়া, কোন গাড়ি ওরে ধাক্কা দিছে, মরা মরা অবস্থা! ওরে বাচান ভাইজান!” জানালা দিয়ে মেয়েটার দিকে তাকালো প্রীতি । বলে উঠলো, “আরে! এটা তো রুপা!”
×
বাবা(পর্ব-৯৫)

জামা পালটে এলো পুষ্পিতা । এবারে সে পড়লো সাজুর দেয়া জামাটা । রুম থেকে ড্রইং রুমে আসতেই গালিবের মুখোমুখি হলো সে । গালিব জিজ্ঞেস করলো, “দারুণ লাগছে তোমায়! কিন্তু তোমার এই জামা তো আগে দেখি নি!” পুষ্পিতা বলল, “না মানে……ওই যে! আমার বান্ধবী আছে না! গত ইদে এলো যে! ও গিফট করেছে ।” গালিব বলল, “ও আচ্ছা! উনাকে দাওয়াত করো নি বিয়েতে?” পুষ্পিতা বলল, “না, ও স্বামীর সাথে বিজনেস ট্রিপে সিঙ্গাপুর গেছে, তাই আসতে পারে নি ।” গালিব “আচ্ছা ঠিক আছে ।” বলে অন্য রুমে গেলো ।
জুম্মার নামাজ শেষে এলো রাফিদ । প্রীতি বসে আছে । রাফিদ বলল, “সরি! মসজিদে ভিড়ের মধ্যে জুতো খুঁজতে একটু দেরি হয়ে গেলো ।” প্রীতি বলল, “ইটস ওকে! চলো, আমরা যাই ।” রাফিদ বলল, “হ্যাঁ চলো ।” এরপর রাফিদ আর প্রীতি বিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলো । একটা ট্যাক্সি ভাড়া করেছিলো ওরা । রাস্তা দিয়ে আসছিলো, এমন সময় এক মহিলা ফকির ওদের পথ আটকে দাঁড়ালো । ট্যাক্সি ড্রাইভার থামতে না চাইলেও প্রীতি বলল, “আঙ্কেল গাড়িটা দাঁড় করান!” ড্রাইভার গাড়ি দাঁড় করিয়ে গাড়ির জানা দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “এই কিতা চাও?” ফকিরটা বলল, “ভাইজান! আমার ছোট্ট মাইয়া, কোন গাড়ি ওরে ধাক্কা দিছে, মরা মরা অবস্থা! ওরে বাচান ভাইজান!” জানালা দিয়ে মেয়েটার দিকে তাকালো প্রীতি । বলে উঠলো, “আরে! এটা তো রুপা!” রাফিদ বলল, “হ্যাঁ তাই তো!” প্রীতি বলল, “রাফিদ! মেয়েটাকে আমাদের সাহায্য করা উচিৎ!” রাফিদ বলল, “ঠিক বলেছো!” ট্যাক্সি ড্রাইভার তখন বলল, “ভাই! আমারে কিন্তু ভাড়া বেশি দেওয়া লাগবো তাইলে!” প্রীতি বলল, “আপনার মিটারে কতো আসে বলবেন আমি দিয়ে দেবো!” তারপর রাফিদ কোলে করে মেয়েটাকে নিয়ে এলো । রুপার মা পেছনে বসলো, আর তার কোলে রূপাকে দিয়ে সামনে ট্যাক্সি ড্রাইভারের পাশে বসলো রাফিদ । প্রীতি পেছনে রুপার একটা হাত ধরে বলছিলো, “চিন্তা করিস না! তোকে আমরা বাঁচাবোই!”
মাথায় হাত দিয়ে নিচু হয়ে বসে ছিলো আকবর আলি । নামাজ পড়ে এসে কখন থেকে বসে আছে দোকানদারের অপেক্ষায়, কিন্তু দোকানদার এখনও আসে নি । হঠাৎ দোকান খোলার আওয়াজ পেয়ে মাথা উঁচু করে তাকিয়ে দেখলো, দোকানদার এসেছে । আকবর আলি রেগে মেগে তেড়ে গেলো লোকটার দিকে আর চেঁচিয়ে বলল, “কি বলেছিলাম আমি আপনাক! সকালের মধ্যে আমার মোবাইল ঠিক হওয়া চাই বলেছিলাম না!” লোকটা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল, “মাফ কইরা দেন ভাই! পেট খারাপ হইয়া গেছিলো! কি আর করতাম!” আকবর আলি জিজ্ঞেস করলো, “মোবাইল ঠিক হয়েছে?” দোকানদার বলল, “১ ঘন্টার মধ্যে কইরা দিতাছি ভাই!” আকবর আলি ধমকের স্বরে বলল, “তাড়াতাড়ি করেন!” দোকানদার দৌড়ে দোকানে যেয়ে বসে কাজ শুরু করে দিলো । আকবর আলি পাশে থাকা একটা চেয়ারে বসলো ।
নিজের বাসায় রান্নাঘরে চিন্তিত অবস্থায় বসে আছে উমা । পুষ্পিতা এসে জিজ্ঞেস করলো, “ভাবি! কি হয়েছে? এরকম মন খারাপ করে বসে আছেন কেনো?” উমা বলল, “আর বইলেন না ভাবি! রাফিদের বাবা একটা কাজে গেছে এখনও আসে নি! আচ্ছা ও না হয় কাণ্ডজ্ঞানহীন, কিন্তু রাফিদও নেই । কোথায় যে গেছে ছেলেটা! বোনের বিয়ে, ওর বন্ধুবান্ধব ওকে খুঁজছে, আর ওর দেখা নেই ।” পুষ্পিতা বলল, “চিন্তা করবেন না ভাবি, চলে আসবেন উনারা । যতই হোক, বোনের বিয়ে, না থেকে কি পারে ।” উমা বলল, “হুম । কাজী সাহেব কি এসেছেন?” পুষ্পিতা বলল, “না তো, এখনও আসেন নি ।” উমা বলল, “কাজী সাহেবকে বলে রাফিদের বাবা আসা পর্যন্ত একটু অপেক্ষা করার জন্য অনুরোধ করতে হবে ।”
জাহিদের সাথে কথা বলছিলো গালিব, এমন সময় হঠাৎ দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো, ঘরে ঢুকছে সাজু, পাশেপাশে আরশি । উপস্থিত সকল মেহমান সাজু দেখে অবাক । ঠিক চিনতে পারছে না বলে । একটু দূরে বসে থাকা জয়িতার মা ময়নাকে বলল, “এই এই ভাবি! আরশির সাথে ওই লোকটাই কি সেই লোক?” ময়না বলল, “কি জানি ভাবি, আমি দেখি নাই । হতে পারে ।” জয়িতা বলল, “ওই হবে । নাইলে নিজের বড় চাচাদের সাথেও তো ওকে এতো ঘনিষ্ঠ দেখি নাই কখনো ।” এদিকে গালিব এগিয়ে গেলো সাজুর কাছে । সাজু বলল, “হাই ব্রাদার! নাইস টু মিট ইউ এগেইন ।” গালিব কিছু বলল না । আরশি গালিবকে বলল, “শোনো! আজকের দিনে ঝামেলা কইরো না! আমার এই বাবা আমার দাওয়াতে এসেছেন! তুমি যদি কোনো ঝামেলা করো! তাহলে আমিও কিন্তু আত্মীয় স্বজনদের সামনে ঝামেলা করতে একটুও দ্বিধা বোধ করবো না ।” গালিব হালকা হাসিমুখে বলল, “মানুষ সবাইকে নিজে মতো মনে করে এটা তোর কাছ থেকে আরও একবার শিখলাম । ঝামেলা করাটা আমার কাজ না । এটা তোর দৈনন্দিন রুটিনের অংশ । আর উনাকে আমি কিছু বলতে আসিনি । আর পাঁচটা মেহমানকে যেরকম রিসিভ করেছি, সেরকম উনাকেও রিসিভ করতে এসেছি ।” তারপর গালিব সাজুকে বলল, “হ্যাভ এ নাইস ডে ম্যান।” বলে চলে গেলো গালিব ।

আগামী পর্বেঃ
রাফিদ জিজ্ঞেস করলো, “ডাক্তার! রূপা এখন কেমন আছে?” ডাক্তার বলল, “কন্ডিশন খুব একটা ভালো না । আমরা আমদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি । কিন্তু রক্ত লাগবে ওর জন্য । রক্তের গ্রুপ এ নেগেটিভ ।” প্রীতি বলল, “ডাক্তার, আমার রক্তের গ্রুপও এ নেগেটিভ । আপনি আমার রক্ত নিন ।” প্রীতি যাবে এমন সময় রাফিদ হালকা ইতস্তত করে বলল, “তুমি!”
…………………………………….
কাজী গালিবকে জিজ্ঞেস করলো, “কি ভাইজান? এক ঘন্টা তো হয়ে গেলো, কনের বাবা কোথায়?” গালিব “জি আমি খবর নিচ্ছি ।”
×
বাবা(পর্ব-৯৬)

রূপাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ওটিতে । অপারেশন থিয়েটারের সামনে বসার জায়গায় বসে রূপার মা কাঁদছে । তার পাশে বসে তাকে শান্তনা দিচ্ছে প্রীতি । রাফিদ পাশেই দাঁড়িয়ে আছে । পাঞ্জাবীতে ওর রক্ত লেগে আছে । একটু পর ডাক্তার এলো ওটি থেকে । ওটির লাইট এখনও জ্বলছে । রাফিদ জিজ্ঞেস করলো, “ডাক্তার! রূপা এখন কেমন আছে?” ডাক্তার বলল, “কন্ডিশন খুব একটা ভালো না । অপারেশন চালাচ্ছি আমরা, অনেক ফ্র্যাকচার হয়েছে, আর অনেক জার্মস ঢুকে গেছে ওর শরীরে । সেগুলো বার করা খুব মুশকিল, আমরা আমদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি । কিন্তু রক্ত লাগবে ওর জন্য । রক্তের গ্রুপ এ নেগেটিভ ।” প্রীতি বলল, “ডাক্তার, আমার রক্তের গ্রুপও এ নেগেটিভ । আপনি আমার রক্ত নিন ।” ডাক্তার বলল, “ঠিক আছে, আসুন দেখি আপনার রক্ত ম্যাচ করে কিনা ।” প্রীতি যাবে এমন সময় রাফিদ হালকা ইতস্তত করে বলল, “তুমি!” প্রীতি বলল, “টেনশন কোরো না রাফিদ, আমি এর আগেও অনেকবার রক্ত দিয়েছি ।”
বিয়ে বাড়িতে এসে হাজির হলেন কাজী সাহেব । গালিব উনাকে দেখে এগিয়ে এসে বলল, “আসেন আসেন, ভেতরে আসেন বসেন ।” কাজী সাহেব ভেতরে যেয়ে বসলো । তারপর জিজ্ঞেস করলো, “কি, দেরি হবে বেশি?” গালিব বলল, “আসলে কন্যার বাবা কোথায় যেনো গিয়েছেন, তাই উনি চান উনি না আসা পর্যন্ত যেনো বিয়েটা যেনো না হয় ।” কাজী সাহেব বলল, “ঠিক আছে, আমি তো ৪টায়ই এলাম, এখন তো ৪টা ২বাজে । ছয়টা পর্যন্ত অপেক্ষা করবো । তার বেশি সময় দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব হবে না ।” গালিব বলল, “ঠিক আছে । সমস্যা নেই । উনারা তার আগেই চলে আসবেন ।”
“কি হলো! হয়েছে?” দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলো আকবর আলি । দোকানদার বলল, “এইতো ভাই! আরেকটু টাইম দেন!” আকবর আলি বলল, “তোমার জন্য আমার কাজ যদি না হয় আজ তোমাকে আমি ছাড়বো না!” দোকানদার বলল, “এইতো! আরেকটু ভাই!”
“অর্ক, একটু শোনো!” অর্ক গিয়েছিলো পপির রুমে, তখন অর্ককে ডাকলো পপি । জিজ্ঞেস করলো, “কাজী সাহেব এসেছে নাকি?” অর্ক বলল, “জি ভাবি, এসেছে ।” পপি জিজ্ঞেস করলো, “সকাল থেকে বাবা আর রাফিদকে দেখি নি । খেতেও তো আসেনি মনে হয়, আসলে আমার সাথে দেখা করতো । কি হয়েছে?” অর্ক জিজ্ঞেস করলো, “কি জানি আপু, আঙ্কেলের ব্যাপার তো জানি না, কিন্তু রাফিদ তো ওর কোন পরিচিত একজনকে আনতে এখনও আসে নি এটা সত্যিই চিন্তার! আচ্ছা ভাবি, আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি ।” পপি বলল, “ঠিক আছে ।”
রক্ত দিয়ে বেড়িয়ে এলো প্রীতি । রাফিদ জিজ্ঞেস করলো, “ঠিক আছো?” প্রীতি হালকা হেসে বলল, “আরে! চিন্তা কোরো না! আমি একদম ঠিক আছি ।” রাফিদ বলল, “চিন্তা তো আপনা আপনিই চলে আসে ভালোবাসার মানুষের জন্য, তাইনা?” প্রীতি কিছু না বলে রাফিদের হাতে হাত রেখে রূপার মায়ের পাশে বসলো । রূপার মা বলল, “আপনেরা আমার কতো সাহায্য করতাছেন! আপনাগো ঋণ আমি ক্যামন শোধ করমু বুইঝা পাইতেছি না!” প্রীতি বলল, “আরে আন্টি, এভাবে লজ্জা দেবেন না । একজন নাগরিক হিসেবে আরেকজন নাগরিকের বিপদে পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব ।” রূপার মা বলল, “তাও । জানি না পারমু কিনা, তোমাগো যদি কখনো কোন দরকার লাগে, আমারে কইও । আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করমু । আমি আমার মাইয়া আর স্বামীরে নিয়া লালতলি বস্তিত থাহি ।” রূপা জিজ্ঞেস করলো, “সেকি! রূপার বাবা-ও আছে! উনি আসলেন না যে এখানে?” রূপার মা কাঁদতে কাঁদতে বলল, “উনি গত দশ বছর ধইরা কোমায় আছেন । ঘরের মধ্যে শুইয়া থাকে খালি । আমার মাইয়া এইটুকু বয়সে ফুট বেইচা টাকা কামাই কইরা বাপ মা-রে খাওয়ায় ।” প্রীতি কিছু বলতে পারলো না । কি বলবে তা-ও বুঝতে পারলো না ।
আসরের নামাজ পড়ে এলো গালিব । বিকের পাঁচটা বেজে গেছে । কাজীও নামাজ পড়েছে, কিন্তু ঘরে । নামাজ শেষে কাজী গালিবকে জিজ্ঞেস করলো, “কি ভাইজান? এক ঘন্টা তো হয়ে গেলো, কনের বাবা কোথায়?” গালিব “জি আমি খবর নিচ্ছি ।” বলে রাফিদদের বাসায় এসে উমাকে ডাকল । উমা এসে জিজ্ঞেস করলো, “ভাই ডাকছিলেন?” গালিব বলল, “হ্যাঁ ভাবি । মানে আকবর ভাই আর কতোদুর? মানে কাজী সাহেব বেশীক্ষণ থাকবেন না বলেছেন । ৬টা পর্যন্ত থাকবেন বলেছেন ।” উমা বলল, “আচ্ছা ভাই, চলে আসবে সমস্যা নাই ।” গালিব বলল, “একটু কল করে জিজ্ঞেস করেন না কোথায়?” উমা বলল, “জি ভাই করছি ।” উমা কল করলো আকবর আলিকে । আকবর আলি কল ধরতেই উমা বলে উঠলো, “হ্যাঁ তুমি কতদুর?” আকবর আলি জিজ্ঞেস করলো, “কতদুর মানে? ও আচ্ছা! আশেপাশে কেউ আছে?” উমা বলল, “হ্যাঁ । কতদুরে তুমি?” আকবর আলি বলল, “শোনো, প্রায় শেষ! আরেকটু বাকি! সর্বোচ্চ আধ ঘন্টা লাগতে পারে, তারপর আমি বাসায় রওনা দিবো ।” উমা “আচ্ছা, ঠিক আছে ।” বলে কল কেটে দিলো । গালিব জিজ্ঞেস করলো, “কি বললেন?” উমা বলল, “ভাই, বললো ৬টার মধ্যেই চলে আসবে ইনশাআল্লাহ ।” গালিব, “আচ্ছা ঠিক আছে ভাবি ।” বলে চলে গেলো ।

আগামী পর্বেঃ
আরশি তখন সাজুকে বলল, “আঙ্কেল! ও হচ্ছে মিস্টার গালিবের চামচা । আর হইছেও মিস্টার গালিবের মতোই ।” অর্ক আরশিকে ধমকের স্বরে বলল, “খবরদার একটাও বাজে কথা বলবি না!” সাজু বলল, “হ্যাঁ, তাই তো দেখছি, তোমার এই ভাই তো তোমার বাবার মতোই হয়েছে ।” অর্ক এবার সাজুকে বলল, “কে আমি চিনি না জানি না, তা না হলে আপনাকে আমি ধরে ছাদ থেকে ফেলে দিতাম!
×
বাবা(পর্ব-৯৭)

রেডিও মাস্তি থেকে ইনানের কল এলো অর্কর ফোনে । বিয়ের গানবাজনা থেকে একটু দূরে কোলাহলমুক্ত জায়গায় যেয়ে কল ধরে বলল, “হ্যাঁ আসসালামু আলাইকুম ভাই! বলেন!”
“ওয়ালাইকুমুস সালাম, শোন, তোকে একটু আজকে তাড়াতাড়ি আসতে হবে । পারবি?” বলল ইনান ।
“তাড়াতাড়ি বলতে? কতো তাড়াতাড়ি ভাই?” জিজ্ঞেস করলো অর্ক ।
“এমনভাবে রওনা দিস, যেনো ৭টার মধ্যে আসতে পারিস ।” বলল ইনান ।
“আচ্ছা ঠিক আছে ভাই আমি চলে আসবো ।” জবাব দিলো অর্ক ।
“সরি রে, একটা জরুরী কাজের জন্য ডাকলাম । একে তোর ভাইয়ের বিয়ে বলে ছুটি দিতে পারলাম না, তার ওপর তোকে তাড়াতাড়ি ডাকছি ।” দুঃখ প্রকাশ করে বলল ইনান । অর্ক হালকা হেসে বলল, “আরে না ভাই! কি যে বলেন না! রাগ করবো কেনো । আমি চলে আসবো ভাই সমস্যা নেই ।” ইনান, “আচ্ছা ঠিক আছে ।” বলে কল রেখে দিলো । অর্ক মনে মনে বলল, “যেতে তো জ্যাম না থাকলে আধ ঘন্টা, আর জ্যাম থাকলে আরও পনেরো মিনিট বেশি লাগে । আর ছয়টার মধ্যেই বিয়েটা হয়ে যাবে । আমি তাহলে বিয়ে দেখে ছয়টায় বেরিয়ে যাবো ।” তারপর আবার বিয়ের আসরে চলে গেলো অর্ক ।
“রোগী এখন আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ আছেন । কিন্তু এখন রেস্ট নিচ্ছেন ।” রাফিদ, প্রীতি আর রূপার মায়ের কাছে এসে বলল ডাক্তার । প্রীতি বলল, “যাক আলহামদুলিল্লাহ ।” রাফিদ বলল, “যাক, মেয়েটা ঠিক আছে এখন! অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম ।” রূপা বলল, “আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুক্রিয়া! উনি তো আপনাগো মতো এতো ভালো দুইডা মানুষ পাঠাইছিলেন বইলা আমার মাইয়াডা বাইচা আছে । রাফিদ বলল, “ওর জন্য আমাদের দোয়া সারাজীবন থাকবে আন্টি ।” প্রীতি তখন রাফিদকে বলল, “এই, তোমার বোনের না বিয়ে!” রাফিদ বলল, “হ্যাঁ মনে আছে! কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেলো! কটা বাজে!” প্রীতি বলল, “পাঁচটা বেজে গেছে । তাড়াতাড়ি চলো!” রাফিদ আর প্রীতি রূপার মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে এলো । হাসপাতাল থেকে বেড়িয়ে প্রীতি রাফিদকে বলে উঠলো, “দাড়াও!” রাফিদ জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে?” প্রীতি বলল, “এভাবে যাবে তুমি! তোমার পাঞ্জাবীতে তো রক্ত লেগে আছে! তোমার বাসায় মেহমান দিয়ে ভরা । রক্ত দেখে ওরা ভাবতে পারে তুমি মারামারি করে এসেছে ।” রাফিদ জিজ্ঞেস করলো, “হ্যাঁ, কথা তো মন্দ বলো নি । কি করি এখন?” প্রীতি বলল, “একটা রিকুয়েস্ট করি? রাখবে?” রাফিদ জিজ্ঞেস করলো, “কি?” প্রীতি হাসপাতালের সামনে থাকা একটা শপিং মল দেখিয়ে বলল, “চলো, ওই দোকানে যাই । তারপর তোমাকে একটা পাঞ্জাবি কিনে দেই ।” রাফিদ বলল, “আরে! কি বলছো! সমস্যা নেই । আমি কিনে নিচ্ছি ।” প্রীতি বলল, “আমি কিন্তু রিকুয়েস্ট করেছি! প্লিজ না করবে না!” রাফিদ একটা শ্বাস ফেলে বলল, “ঠিক আছে । চলো ।” তারপর রাফিদ আর প্রীতি সেই শপিং মলের দিকে গেলো ।
“আরে ভাই! আর কতক্ষণ লাগবে আপনার!” প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে দোকানদারকে বলল আকবর আলি । দোকানদার বলল, “এইতো ভাই! প্রায় হইয়া গেছে!” আকবর আলি জিজ্ঞেস করলো, “সেই কখন থেকে তো একই কথা বলে যাচ্ছেন! হবেটা কখন!” দোকানদার বলল, “এই এক্কেরে শিউর কইরা কইতাছি, ১০ডা মিনিট দেন!” আকবর আলি আর কিছু না বলে জোরে একটা শ্বাস ফেলে রাগ প্রকাশ করে বসে পড়লো ।
“ধুর! ফোনই ধরছে না!” রাফিদকে কল করেছিলো অর্ক, কিন্তু কল না ধরায় কথাটা বলল অর্ক । ছাদে দাঁড়িয়ে সে । ছাদের দরজার দিকে পা বাড়ালো অর্ক, এমন সময় দেখলো, আরশি আর সাজু ছাদে উঠেছে । আরশি আশেপাশের নানা জিনিস সাজুকে দেখাচ্ছে । অর্ক ওদের পাত্তা না দিয়ে পাড় হয়ে আসতে নিলো, কিন্তু অর্ককে ডাকলো সাজু । বলল, “হেয় বয়! তুমি আরশির ভাই না?” অর্ক এক প্রকার নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধেই কথা বলতে লাগলো । বলল, “জি ।” সাজু বলল, “তোমার প্রোগ্রাম আমি শুনেছি! ওয়েলডান! অনেক দারুণ তোমার কথা বলার ধরণ!” অর্ক, “থাঙ্ক ইউ!” বলে চলে আসতে নিলো, এমন সময় আবার সাজু ওকে ডাকলো, “আরে! কোথায় যাচ্ছো! একটু কথা বলো!” অর্ক বলল, “সরি আঙ্কেল, আমার অনেক কাজ আছে ।” আরশি তখন সাজুকে বলল, “আঙ্কেল! ও হচ্ছে মিস্টার গালিবের চামচা । তার কাছ থেকে টাকা পায় তো, তাই চামচামি করে । পড়াশুনা তো করেই না, এখন হয়েছে আরজে । আর হইছেও মিস্টার গালিবের মতোই ।” অর্ক আরশিকে ধমকের স্বরে বলল, “খবরদার একটাও বাজে কথা বলবি না! তুই বাবার নামে এইযে এসব বলছিস না, একদিন দেখিস, তুই নিজেই আয়নার সামনে নিজের চেহারা দেখতে পারবি না ।” সাজু বলল, “হ্যাঁ, তাই তো দেখছি, তোমার এই ভাই তো তোমার বাবার মতোই হয়েছে ।” অর্ক এবার সাজুকে বলল, “প্রথমত আপনি কে আমি চিনি না জানি না, তাই বেশি কিছু বললাম না । তা না হলে আপনাকে আমি ধরে ছাদ থেকে ফেলে দিতাম! তাই নেক্সট টাইম আমার সামনে একটু মেপে কথা বলবেন!” বলে চলে গেলো অর্ক । সাজুকে দেখে মনে হলো, অর্কর কথায় ও হাল্কা ভয়ই পেয়েছে ।

আগামী পর্বেঃ
“একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?” ট্যাক্সিতে করে বাসার পথে আসার সময় রাফিদকে জিজ্ঞেস করলো প্রীতি । রাফিদ বলল, “জিজ্ঞেস করার কি আছে? বলে দাও ।” প্রীতি বলল, “আচ্ছা, তুমি কি আগে আমাকে দেখেছো?” রাফিদ প্রীতির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “হঠাৎ এই প্রশ্ন!” প্রীতি বলল, “না, কেনো যেনো আমার মনে হয়, তোমাকে আগে কোথাও দেখেছি আমি! কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছি না!” রাফিদ বলল, “সত্যি বলতে কি, আমারও না ওরকমই মনে হয়, তোমাকে যেনো কোথাও একটা দেখেছি! কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছি না ।”
×
বাবা(পর্ব-৯৮)

ঘুরে ঘুরে পাঞ্জাবী দেখছে প্রীতি আর রাফিদ । একটা লাল পাঞ্জাবী দেখে প্রীতি রাফিদকে জিজ্ঞেস করলো, “এটা কেমন?” রাফিদ বলল, “তুমি না গিফট করছো, তাহলে আমায় জিজ্ঞেসের কি আছে, তুমিই একটা পছন্দ করে দাও । আর তোমার সব পছন্দই আমারও পছন্দ ।” প্রীতি হালকা হেসে রাফিদের দিকে তাকালো । তারপর সেই পাঞ্জাবীটা রাফিদের হাতে দিয়ে বলল, “যাও ট্রায়াল রুম থেকে এটা পড়ে আসো ।” রাফিদ ট্রায়াল রুমের দিকে গেলো পাঞ্জাবীটা পড়তে ।
৬টা বেজে গেছে । কাজী উঠে দাঁড়িয়ে গালিবকে বলল, “মাফ করেন ভাই, আমার পক্ষে আজকে আর সম্ভব না । আমার সাতটায় আরেকটা বিয়ের কাজ আছে । আপনার এখানে খাওয়া দাওয়াও করেছি, কিন্তু আর থাকা আমার সম্ভব না ।” গালিব অনেক রিকুয়েস্ট করলো, “ভাই আরেকটু সময় প্লিজ! ভাই সমস্যাটা একটু বোঝার চেষ্টা করেন! আচ্ছা, আমি আপনার ফি একটু বাড়িয়ে দেবো না হয়! আর আপনাকে পরের বিয়ে বাড়িতে পৌঁছে দেবারও ব্যাবস্থা করবো!” কাজী বলল, “ঠিক আছে ঠিক আছে! ফি-ও দিতে হবে না আমাকে পৌঁছানোরও ব্যবস্থা করতে হবে না । আমি এমনিই থাকছি । কিন্তু মাত্র আধ ঘন্টা!” গালিব বলল, “আচ্ছা, আমি আর বিশটা মিনিট দেখবো! যদি কনের বাবা না আসে, তাহলে আমি আর অপেক্ষা করবো না ।” কাজী বলল, “ঠিক আছে ।”
“হইয়া গেছে স্যার!” আকবর আলিকে বলল দোকানদার । আকবর আলি হুড়মুড়িয়ে উঠে মোবাইলটা হাতে নিলো । তারপর দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলো, “ভেতরের কোনো ফাইল ডিলিট হয় নি তো?” দোকানদার বলল, “না স্যার! হয় নাই!” আকবর আলি বলল, “ঠিক আছে!” বলে টাকা দিয়ে বাসার পথে রওনা হলো আকবর আলি ।
ট্রায়াল রুম থেকে বেড়িয়ে এলো রাফিদ । প্রীতি ওকে দেখে বলল, “বাহ! অনেক সুন্দর লাগছে!” রাফিদ বলল, “তোমার পছন্দ বলে কথা ।” প্রীতি বলল, “হয়েছে! আর ঢং করতে হবে না । এসো বিলটা দিয়ে তাড়াতাড়ি রওনা হই! বোনের বিয়েটা বোধ হয় মিস-ই করে ফেললে!” রাফিদ বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ! তাড়াতাড়ি চলো!”
এদিকে গালিবকে অর্ক বলল, “বাবা, রেডিও থেকে আজকে আমাকে তাড়াতাড়ি যেতে বলেছে । আমাকে তাড়াতাড়ি যেতে হবে ।” গালিব জিজ্ঞেস করলো, “আল্লাহ! এ কেমন কথা!” অর্ক বলল, “বাবা! কিছু করার নেই । যেতেই হবে । আর তাছাড়া আজকে আমার শো এর দ্বিতীয় দিন । কেবল শুরু হওয়া এভাবে মিস দিলে চলবে না বাবা ।” আকবর আলি বলল, “ঠিক আছে যা । কিন্তু যাবার সময় ভাই আর ভাবির সাথে দেখা করে যা ।” অর্ক অনিক আর পপির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো ।
বাইরের রুমে উপস্থিত ভাবিদের মধ্যে হুলস্থূল বেধে গেলো । তারা একে অপরকে কানাকানি করছি । কেউ বলছে, “কি ব্যাপার? কাজী সেই চারটে থেকে বসে আছেন, বিয়ে কি হবে না?” জবাবে কেউ কেউ বলছে, “আল্লাহই জানেন বাবা! মেয়েটার বাপ নাকি বিয়েতে রাজি ছিলো না শুনেছিলাম! সে আবার কিছু ঘটালো নাকি!” আরেকজন আবার বলল, “দ্যাখো! মেয়ে তো প্রেম করে বিয়ে করেছে, আর কোন প্রেমের খবর বার হলো কিনা ।” আরেকজন আবার বলল, “শুধু মেয়ে কেনো, ছেলেরও তো হতে পারে!”
এদিকে একটা রুমে একসাথে বসে আছে মিজান, শামসু, কুলসুম, লুনা । লুনা বলল, “মাই মাই গো! বাইরে যে কি হইতাছে আল্লাহই জানেন!” মিজান বলল, “এই নাতবউয়ের বাবাটাই ঝামেলার মূল! কোথায় যে গেছে! মেয়ের বিয়ে, কোন হুশ নেই উনার যেনো!” কুলসুম বলল, “আমি আগেই ধারণা করেছিলাম বিয়ের দিন একটা না একটা গণ্ডগোল হবেই! একে তো এই লোকটা আছেই, তার ওপর আরশি আবার নিয়ে এসেছে নতুন ঝামেলা!” মিজান বলল, “ওই লোকডা যে কি চাইতাছে! ক্যামনে গালিবরে কথাগুলা কইলো!” শামসু বলল, “আসলেই! লজ্জা করে না ওই লোকের! এতো বড় বড় মিথ্যা কথা বলল!” কুলসুম বলল, “কি আর বলবো! থাপড়াতে মন চাচ্ছিলো আমার!” লুনা তখন বলল, “তয় আমরা এইহানে বইসা আছি, কেমন দেহাইতাছে না!” কুলসুম বলল, “নারে দোস্ত, বাইরের চ্যাঁচামেচি আমার মাথা ধরে গেছে । তাই তো এখানে এলাম ।” শামসু আর মিজানও একই কথা বলল ।
“একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?” ট্যাক্সিতে করে বাসার পথে আসার সময় রাফিদকে জিজ্ঞেস করলো প্রীতি । রাফিদ বলল, “জিজ্ঞেস করার কি আছে? বলে দাও ।” প্রীতি বলল, “আচ্ছা, তুমি কি আগে আমাকে দেখেছো?” রাফিদ প্রীতির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “হঠাৎ এই প্রশ্ন!” প্রীতি বলল, “না, কেনো যেনো আমার মনে হয়, তোমাকে আগে কোথাও দেখেছি আমি! কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছি না!” রাফিদ বলল, “সত্যি বলতে কি, আমারও না ওরকমই মনে হয়, তোমাকে যেনো কোথাও একটা দেখেছি! কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছি না ।” প্রীতি হালকা হেসে বলল, “তাহলে মনে হয় আগের জন্মেও আমরা একসাথে ছিলাম ।” রাফিদও হেসে উঠে বলল, “আরে না! এসব আবার হয় নাকি ।” তারপর কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ । একটু পর রাফিদ প্রীতিকে জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা, তুমি না বলেছিলে তুমি একটা কোম্পানির মালিক, তোমার কোম্পানির নাম কি?” প্রীতি কিছু একটা বলতে যাবে, এমন সময় প্রীতির মোবাইলে একটা কল এলো । প্রীতি “এক মিনিট” বলে ফোনে কথা বলতে লাগলো । রাফিদের আর প্রীতির কাছ থেকে জবাব নেয়া হলো, কারণ ওদের ট্যাক্সি বিয়ে বাড়ির সামনে পৌঁছে গেছে ।

আগামী পর্বেঃ
কাজী পপির সামনে এসে দুজন সাক্ষীর সামনে বলল, “ঢাকার সাভার নিবাসী জনাব আকবর আলী ও উমা খন্দকারের জ্যেষ্ঠ কন্যা পপির সাথে ঢাকার সাভার নিবাসী আসাদুল্লাহ গালিব ও পুষ্পিতা রহমানের বিশ লাখ এক টাকার বিনিময়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছেন । আপনি কি তাকে নিজের স্বামী হিসেবে গ্রহণ করতে রাজি? থাকলে বলেন কবুল ।” পপি যে-ই কিছু একটা বলতে যাবে এমন সময় দরজা থেকে কেউ একজন বলে উঠলো, “না কবুল বলবি না!”
×
বাবা(পর্ব-৯৯)

সিড়ি বেয়ে ওপরে উঠছে রাফিদ আর প্রীতি । ঘড়িতে সময় তখন ৬টা বেজে ১৫ মিনিট । দুই ঘরের দরজার মাঝে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে গালিব আর উমা । গালিব উমাকে বলল, “ভাবি, এবার আমার সত্যিই কিছু করার নেই! আমাকে ক্ষমা করবেন । আপনার কাজী সাহেব বলেছেন সাড়ে ৬টা পর্যন্ত থাকবেন তারপর চলে যাবেন, আমি উনাকে বলেছি আমি ৬টা ২০ পর্যন্ত দেখবো ।” উমা বলল, “না ঠিক আছে আছে ভাই । আসলেই পপির বাবা অনেক বড় ভুল করেছে । ও আসুক একবার বাসায় ।” ঠিক সেই সময় সেই সিঁড়ি বেয়ে উঠতে লাগলো প্রীতি আর রাফিদ । ওদের দুজনকে দেখে একই সাথে একই সময়ে উমা আর গালিব বলে উঠলো, “রাফিদ! প্রীতি!” প্রীতি চিনলো উমাকে । দেখে বলল, “আন্টি! আঙ্কেল! আপনারা!” রাফিদ ভ্রু কুঁচকে প্রীতির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “তুমি মাকে চিনলে কি করে?” উমা তখন রাফিদকে বলল, “আরে উনি তোর বাবার কোম্পানির মালিক! তোর বাবাকে উচিৎ শিক্ষা দিতে বাসায় এসেছিলো তোর মনে নেই!” প্রীতি আর রাফিদ তখন দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে একসাথে বলে উঠলো, “ও! এজন্যই আমার মনে হচ্ছিলো কেনো তোমাকে চেনা চেনা লাগে!” উমা রাফিদকে জিজ্ঞেস করলো, “কেনো, তুই উনাকে দেখিস নি?” রাফিদ বলল, “দেখেছি মা! কিন্তু আমি উনার চেহারা তো আর মুখস্ত রাখিনি, তাই খেয়াল ছিলো না আমার ।” প্রীতি বলল, “আকবর আলির মতো একজন মানুষ আমার শশুর হবে!” গালিব কথাটা শুনে অবাক হয়ে গেলো । উমা জিজ্ঞেস করলো, “মানে?” রাফিদই বলল সবটা, “মা, আমি উনাকে ভালোবেসে ফেলেছি, উনাকে আমি বিয়ে করতে চাই ।” উমা কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বলল, “আল্লাহ!! তোর ভাই কি কম ছিলো যে এখন তুইও শুরু করলি! আমাদের পরিবারের কি অবস্থা বুঝতে পারছিস! এতো টাকা খরচ করে বিয়েটা হচ্ছে, তোর বাবার যা টাকা মজুদ ছিলো সব শেষ হয়ে গেলে কি করবি?” রাফিদ বলল, “মা, ততোক্ষণে আমি ভালো চাকরি পেয়ে যাবো! চিন্তা কোরো না!” উমা আরও কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো, গালিব সে সময় বলল, “ভাবি, এগুলো কথা আমরা এখন রাখি । ৬টা পঁচিশ বেজে গেছে । বেশি দেরি করে ফেললে পড়ে কাজী সাহেব বিয়ে পড়াতে চাইবেন না ।” উমা বলল, “হ্যাঁ ভাই, আমারও তাই মনে হয় ।” তারপর উমা রাফিদকে, “আয় আমার সাথে তোর বোনের কাছে!” বলে রাফিদকে নিয়ে তাদের রুমে গেলো উমা । গালিব নিজের বাসায় যেতে নেবে, এমন সময় প্রীতি ডাকলো গালিবকে । “আঙ্কেল!” গালিব পেছন ফিরে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “হ্যাঁ বলো!” প্রীতি বলল, “আসলে অনেক কথাই বলতাম, কিন্তু আপনার তো হাতে সময় নেই, তাই সংক্ষেপেই জিজ্ঞেস করছি । আপনি কি রাগ করেছেন?” গালিব জিজ্ঞেস করলো, “কি ব্যাপারে?” প্রীতি বলল, “এই যে, রাফিদকে যে আমি ভালোবেসে ফেলেছি এই ব্যাপারে?” গালিব হাসিমুখে বলল, “আরে না না, রাগ করবো কেনো । তোমাদের বিয়ে নিয়ে তো আর পাকাপাকিভাবে কথা বলিনি । বরঞ্চ আমি আরও খুশি হয়েছি, যে তুমি এসেছো আমার ছেলের বিয়েতে । না খেয়ে যাবে না কিন্তু! তুমি বরপক্ষ আর কনেপক্ষ উভয়পক্ষেরই কিন্তু ।” প্রীতিও হাসিমুখে বলল, “আচ্ছা আঙ্কেল ।”
রিকশায় করে আসছে আকবর আলি । বারবার সময় দেখছে আর মনে মনে বলছে, “আল্লাহ! বিয়েটা যেনো না হয়!” আর মিনিট অল্পক্ষণের ভেতর পৌঁছে যাবে আকবর আলি ।
“মা-বাবা, আম্মা-আব্বা, আসেন । এখনই বিয়েটা পড়ানো হবে ।” কুলসুম, শামসু, লুনা আর মিজান যে রুমে ছিলো, সে রুমে এসে বলল গালিব । ওরাও গেলো বিয়ের কার্যক্রম দেখতে ।
প্রথমে কাজী এলো অনিকের রুমে । এখন অনিক আকবর আলির বাসায় গেছে তবে অন্য রুমে । কাজী যেয় দুজন সাক্ষীর সামনে বিয়ে পড়লো, “ঢাকার সাভার নিবাসী জনাব আকবর আলী ও উমা খন্দকারের জ্যেষ্ঠ কন্যা পপির সাথে ঢাকার সাভার নিবাসী আসাদুল্লাহ গালিব ও পুষ্পিতা রহমানের বিশ লাখ এক টাকার বিনিময়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছেন । আপনি কি তাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে রাজি? থাকলে বলেন কবুল” অনিক কিছুক্ষন মুচকি মুচকি হাসলো । লুনা বলল, “মাই মাই গো! এতো লজ্জা পাইলে ক্যামনে হইবো! কও কবুল!” অনিক বলল কবুল!” মিজান বলল, “আরে একবার না, একবার না! তিনবার কও!” অনিক বাকি দুবারও বলে দিলো । “কবুল! কবুল!” কাজী বলল, “আলহামদুলিল্লাহ!” এরপর কাজী গেলো পপির রুমে ।
“দাঁড়ান দাঁড়ান!” রিকশাওয়ালাকে কথাটা বলে নেমেই চলে যেতে নিলো আকবর আলি, এমন সময় রিকশাওয়ালা বলল, “ভাই ভাড়াডা দিবেন না?” আকবর আলি সিঁড়ি পর্যন্ত চলে গিয়েছিলো, আবার ফিরে এসে টাকা দিয়ে আবার যেয়ে নিলো, এমন সময় রিকশাওয়ালা আবার ডাকলো, “ভাই! পঞ্চাশ ট্যাকা ভাড়া তো! পাঁচশো দিলেন ক্যা!” আকবর আলি বলতে নিলো, “আরে রেখে দা……।” তারপর মনে মনে ভাবলো, “না না, টাকার অ্যামাইন্টটা বেশি ।” তারপর আকবর আলি ৫০০ টাকা ফেরত নিয়ে লোকটাকে ১০০ টাকা দিয়ে বলল, “আপনার সততার পুরস্কার ।” বলে যেই আবার ফিরতে নেবে, অমনি রিকশার হুডের সাথে বেধে গেলো আকবর আলির পাঞ্জাবী । সেটা অনেক টানাটানি করে ছাড়িয়ে তারপর বিল্ডিং-এ ঢুকলো । পাঞ্জাবীর ওই অংশটা ছিঁড়েও গেছে । মনে মনে আকবর আলি বলল, “মানে দরকারি কাজের সময় যতো বাধা এসে উপস্থিত হয়ে!” কাজী পপির সামনে এসে দুজন সাক্ষীর সামনে বলল, “ঢাকার সাভার নিবাসী জনাব আকবর আলী ও উমা খন্দকারের জ্যেষ্ঠ কন্যা পপির সাথে ঢাকার সাভার নিবাসী আসাদুল্লাহ গালিব ও পুষ্পিতা রহমানের বিশ লাখ এক টাকার বিনিময়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছেন । আপনি কি তাকে নিজের স্বামী হিসেবে গ্রহণ করতে রাজি? থাকলে বলেন কবুল ।” পপি যে-ই কিছু একটা বলতে যাবে এমন সময় দরজা থেকে কেউ একজন বলে উঠলো, “না কবুল বলবি না!” সবাই দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো, আকবর আলি দাঁড়িয়ে । ভেতরে এসে সে বলল, “এই বিয়ে হতে পারে না!”

আগামী পর্বেঃ
আকবর আলি বলল, “এই প্রমাণের জন্যই তো আমার সারাটা দিন নষ্ট হলো । হ্যাঁ আছে আমার কাছে প্রমাণ ।” এরপর আকবর আলি পকেট থেকে মোবাইল বের করে সবাইকে দেখালো ভিডিও । কিভাবে পুষ্পিতা সাজুর হাত ধরছে, কিভাবে কথাবার্তা বলছে, সব । উমা গালিব পুষ্পিতাকে জিজ্ঞেস করলো, “পুষ্পিতা, এগুলো যা দেখছি সব কি সত্যি?” পুষ্পিতা কাঁদতে থাকে কথা বলে না । গালিব আবার জিজ্ঞেস করে, “কি হলো বলো? সত্যি এগুলো!” এবার মুখ খুললো আরশি । “হ্যাঁ এগুলো সত্যি!
×
বাবা(পর্ব-১০০)

লুনা আকবর আলিকে জিজ্ঞেস করলো, “মাই মাই গো! এইবার কইলাম আমি আপনেরে থাপ্পড় মারমু! কি শুরু কইরা দিছেন এইগুলা!” আকবর আলি বলল, “শুরু হবার দেখেছেন কি আপনি খালাম্মা, এখনও তো আসল কথাই আমি বলিনি!” গালিব পপিকে বলল, “পপি, কবুল বলো!” আকবর আলি বলল, “না পপি! তুই বলবি না! এই পরিবার ভালো না! তুই এই পরিবারে এলে পড়ে মুখ দেখাতে পারবি না ।” গালিব এবার রেগে গিয়ে ভ্রু কুঁচকে আকবর আলির দিকে তাকিয়ে বলল, “কি সমস্যা আপনার! শুরু থেকে আপনি ঝামেলা করে যাচ্ছেন, এতোক্ষণ ছিলো না আর পরিবেশ কি সুন্দর ছিলো, যেই এলেন আর ঝামেলা করা শুরু করলেন । আর আপনি বলছেন আমার পরিবারের কথা, আপনার মতো শ্বশুরের হাতেই তো আমি আমার ছেলেকে দিতাম না, কেবল রাজি হয়েছি ওর একে অপরকে ভালোবাসতো বলে!” আকবর আলি বলল, “ও, সত্যি, ভালোবাসা! হ্যাঁ । ওই ভালোবাসার জন্যই আমি এ বিয়ে মানতে পারবো না। কিন্তু সেটা আমার মেয়ে আর আপনার ছেলের না । আপনার বউ আর আপনার মেয়ে আরশির নতুন বাবা, সাজুর নোংরা ভালোবাসার জন্য আমি এ বিয়ে মানতে পারছি না!” উপস্থিত সবাই অবাক । সেখানে সাজুও ছিলো, আরশিও ছিলো, পুষ্পিতাও ছিলো । পুষ্পিতার চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে ভয় পেয়েছে । গালিব পুষ্পিতার দিকে তাকালো, ভাবলো, পুষ্পিতা না বলবে, কিন্তু বলল না । গালিব বেশ ভেঙ্গে পড়লো । আকবর আলি বলল, “ওরা দুজন স্টাইলা ক্যাফে যেয়ে ডেটিং করে!” গালিব বলল, “প্লিজ আপনি চুপ করুন!” আকবর আলি তবু বলে গেলো, “হাতে হাতে ধরে একজন আরেকজনের সাথে রোম্যান্টিক কথাবার্তা বলে!” গালিব আবারও বলল, “আমি বলেছি আপনি প্লিজ চুপ করুন!” আকবর আলি তবু থামলো না । বলল, “এমনকি ওরা যায় আপনার সাথে আপনার স্ত্রীর ডিভোর্স করিয়ে একে অপরকে বিয়ে করতে!” গালিব এবার ঠাস করে চড় লাগিয়ে দিলো আকবর আলির গালে । আকবর আলি থাপ্পড়ের ধাক্কায় মাটিতে পড়ে গেলো । তারপর বলল, “অনেক হয়েছে! আর একটা কথাও বলবেন না!” গালিব তখন পপিকে বলল, “পপি, মা, তুমি কবুল বলো ।” পপি দেরি না করে তিনবার কবুল বলল । এরপর কাজী সাহেব পপির সই নিলো । অনিকের সইও নেয়া হয়েছিলো । এবার গালিব একজনকে বলল, “অনিককে এই রুমে আনুন ।” এরপর অনিককে আনা হলো এই রুমে । পপির পাশে বসানো হলো । তারপর কাজীকে বলল, “কাজী সাহেব, মোনাজাত ধরুন ।” এরপর পপি আর অনিকের সুখি দাম্পত্য জীবন কামনায় মোনাজাত ধরা হলো । এরপর গালিব উপস্থিৎ সকল মেহমানকে বলল, “আমি আপনাদের নিকট ক্ষমা চাইছি এতো ঝামেলার জন্য । আপনাদের এভাবে বলতে আমার খারাপ লাগছে, কিন্তু প্লিজ আপনারা এখন চলে যান । আমরা কিছু পারিবারিক কথাবার্তা বলবো এখন ।” মেহমানরা সবাই চলে গেলো, শুধু রয়ে গেলো গালিবের পরিবারের সবাই আর আকবর আলির পরিবারের সবাই । বাইরের লোকেদের মধ্যে রইলো শুধু সাজু আর প্রীতি তারপর আকবর আলি গালিবকে বলল, “আপনি জোড় করেই বিয়েটা দিলেন না! আমার মেয়ের এতো বড় ক্ষতি আপনি করলেন তাই না!” গালিব বলল, “ক্ষতি তো আপনি করেছেন আপনার মেয়ে, আপনার নিজের আমার পরিবারের এতোগুলো মানুষের সামনে এই বিয়েটার তামাশা বানিয়ে । আরে আপনার কোনো সমস্যা থাকলে আপনি না হয় আমাকে আলাদা করে ডেকে বলতেন!” আকবর আলি বলল, “আলাদা করে ডাকার বিষয় হলে তো হয়েই যেতো, কিন্তু এটা এমন একটা ব্যাপার, প্রমাণ ছাড়া আমি বলতে পারতাম না, মানে আপনারা বিশ্বাস করতেন না । করতেন কি বিশ্বাস যে আপনার স্ত্রী এই সাজু নামের লোকটাকে ভালোবাসে?” সাজু তখন রেগে গিয়ে আকবর আলির কাছে এগিয়ে এসে বলল, “কি বলছেন কি এসব আপনি হ্যাঁ! আপনার কাছে কি কোনও প্রমাণ আছে?” আকবর আলি বলল, “এই প্রমাণের জন্যই তো আমার সারাটা দিন নষ্ট হলো । হ্যাঁ আছে আমার কাছে প্রমাণ ।” এরপর আকবর আলি পকেট থেকে মোবাইল বের করে সবাইকে দেখালো ভিডিও । কিভাবে পুষ্পিতা সাজুর হাত ধরছে, কিভাবে কথাবার্তা বলছে, সব । উমা গালিব পুষ্পিতাকে জিজ্ঞেস করলো, “পুষ্পিতা, এগুলো যা দেখছি সব কি সত্যি?” পুষ্পিতা কাঁদতে থাকে কথা বলে না । গালিব আবার জিজ্ঞেস করে, “কি হলো বলো? সত্যি এগুলো!” এবার মুখ খুললো আরশি । “হ্যাঁ এগুলো সত্যি! আমার মাকে অনেক কষ্ট দিয়েছো তুমি! আমার মাকে নিজে থেকে টাকা দিতে না! মাকে জিনিস কিনে দিতে না, মাকে বিলাসবহুল জীবন দিতে না তুমি!” গালিব জিজ্ঞেস করলো, “এই? আর কিছু না?” আরশি আর কিছু বলল না । গালিব তখন বলল, “তোর মা রান্না তেমন পারতো না বলে আমি আলাদা কাজের লোক রেখেছি একটা মধ্যবিত্ত পরিবার হওয়া সত্ত্বেও । আজ পর্যন্ত কোনদিন তোর মাকে আমি বকিনি ওর মুখের ওপর কথা বলিনি । ভাবিস না তোর মা যে কায়দা করে তোর কোচিংএর কথা বলে আমার কাছ থেকে বাড়তি টাকা নিতো তা আমি বুঝতে পারতাম না । তবু আমি কিছু বলতাম না । যখনই টাকা চাইতো, আমি তখনই দিতাম, যতো চাইতো, ততই দিতাম, কোনদিন প্রশ্ন করতাম না কি করবে এই টাকা দিয়ে । একটা এতো অল্প টাকা আয় করা মানুষ হয়েও আমি যে দিতাম এইটাও কি বেশি না? আরও আমার নিজে থেকে দেয়া লাগে?” সাজু এবার গলা উঁচিয়ে বলল, “হ্যাঁ লাগে! নিজের বউকে বিলাসবহুল জীবন দিতে পারিস না আবার বড় বড় কথা!” গালিব সাজুকে জিজ্ঞেস করলো, “সত্যি? বিলাসিতা ছাড়া কি আর কিছু নেই পৃথিবীতে? সুখ কি বিলাসিতার অংশ?” সাজু বলল, “হ্যাঁ! সুখ বিলাসিতার অংশ ।” গালিব জিজ্ঞেস করলো, “আপনার কি মনে হয়, আপনি আপনি আপনার ভালোবাসাকে বিলাসিতা আর সুখ দুটোই দিতে পারবেন?”

আগামী পর্বেঃ
“একি! তুই ব্যাগ কেনো গোছাচ্ছিস?” রুমে এসে লুনাকে বলল কুলসুম । লুনা কাদছে আর কাপড়চোপড় ভাজ করছে আর মিজান সেগুলো ব্যাগে ভরছে । কুলসুম বলল, “দোস্ত, আমার মাইয়া যা করলো, আমার পক্ষে আর এইহানে থাকা সম্বব না! আমার জামাইবাবাজি কতো কষ্ট পাইলো!” কুলসুম জিজ্ঞেস করলো, “তাতে তোমার দোষ কি? তুমি কিছু করছো?” মিজান বলল, “না ভাবি, আমাগো মাইয়ার লজ্জা না থাকতে পারে, তয় আমাগো লজ্জা আছে । আমাদের আটকাইয়েন না ভাবি!”
×
বাবা(পর্ব-১০১)

সাজু বলল, “হ্যাঁ পারবো! আমি আমার পুষ্পকে সব দিতো পারবো!” গালিব পুষ্পিতাকে জিজ্ঞেস করলো, “তুমি কি চাও অনিকের মা?” পুষ্পিতা কিছু বলল না । গালিব আবার জিজ্ঞেস করলো, “তোমার কাছ থেকে জবাব চাইছি! কি চাও তুমি?” আরশি বলল, “মা তোমার কাছ থেকে ডিভোর্স চায় । তোমার সাথে মা আর থাকতে চায় না!” অনিক তখন বলল, “এই কি বলছি এসব তুই! মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর?” গালিব পুষ্পিতার কাছে আবারও জানতে চাইলো, “সত্যিই তুমি ডিভোর্স চাও?” পুষ্পিতার কাছ থেকে কোনো জবাব তবুও পেলো না গালিব । এরপর গালিব বলল, “ঠিক আছে, তোমার জবাব আমি পেয়ে গেছি ।” বলে চলে যেতে নিলো গালিব, এমন সময় কুলসুম বলল, “বাবা! কি করবে তুমি! আমার মেয়েকে কঠিন শাস্তি দেবে! তোমার ওপর এই শাসন আমি ন্যাস্ত করলাম!” গালিব বলল, “আম্মা, আমার বলার কিছু নাই । ওকে শাসন করার ইচ্ছাও আমার নাই । ভাবছি অধিকারটুকুও এখন হারিয়েছি । আপনারা ওর বাবা মা, আপনারা যা খুশি করেন, আমি আমার যা ভালো মনে হয়, সেটাই করবো ।” উমা গালিবকে বলল, “ভাই, আপনি এটা ঠিক করলেন না, এরকম একটা ডিভোর্স হবে পরিবারে আমাদের মেয়ে কি খুব ভালো থাকবে?” গালিব বলল, “বিয়েটা ও করেছে আমার ছেলের সাথে, ওকে সুখি রাখার দায়িত্ব আমার ছেলের, আর ডিভোর্স হলেও আমার মনে হয় না ওদের জীবনে কোন খারাপ প্রভাব আমি আসতে দেবো ।” বলে চলে গেলো গালিব । একটু পর ধীরে ধীরে জায়গাটা ফাকা হয়ে গেলো । রইলো শুধু পপি আর অনিক । পপি অনিককে বলল, “আল্লাহ! হঠাৎ করে কি থেকে কি হয়ে গেলো!” অনিক বলল, “হুম । আল্লাহ আল্লাহ করে সব যেনো ঠিক হয়ে যায় ।”
এদিকে অর্ক রেডিওর স্টুডিওতে এসে পৌঁছল । ইনানের রুমের সামনে এসে বলল, “আসবো?” ইনান বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ! আসো ।” অর্ক ইনানের রুমে যেয়ে সামনের চেয়ারে বসলো । তারপর জিজ্ঞেস করলো, “আজ এতো তাড়াতাড়ি ডাকলেন যে?” ইনান বলল, “তোমাকে যে বেতন দেবো ভেবেছিলাম, তুমি সে পরিমাণ বেতন আর পাচ্ছো না ।” অর্ক ভয় পেয়ে গেলো । জিজ্ঞেস করলো, “কেনো? হঠাৎ? আমি কি কোনো ভুল করে ফেলেছি ভাই?” ইনান ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে বলল, “উহু!” অর্ক জিজ্ঞেস করলো, “তাহলে?” ইনান বলল, “তুমি এখন থেকে আরও বেশি বেতন পাবে!” অর্কর মুখে হাসি ফুটে উঠলো । বলল, “সত্যি!” ইনান বলল, “হ্যাঁ! একটা কোম্পানি থেকে স্পন্সরশীপ এর অফার এসেছে, সেই টাকার অর্ধেক তুমি পাবে । ওরা বাইরে বসে আছে, চলো তোমাকে নিয়ে যাই ।” তারপর ইনান অর্ককে নিয়ে গেলো যারা স্পন্সর করতে এসেছে তাদের কাছে ।
“একি! তুই ব্যাগ কেনো গোছাচ্ছিস?” রুমে এসে লুনাকে বলল কুলসুম । লুনা কাদছে আর কাপড়চোপড় ভাজ করছে আর মিজান সেগুলো ব্যাগে ভরছে । কুলসুম বলল, “দোস্ত, আমার মাইয়া যা করলো, আমার পক্ষে আর এইহানে থাকা সম্বব না! আমার জামাইবাবাজি কতো কষ্ট পাইলো!” কুলসুম জিজ্ঞেস করলো, “তাতে তোমার দোষ কি? তুমি কিছু করছো?” মিজান বলল, “না ভাবি, আমাগো মাইয়ার লজ্জা না থাকতে পারে, তয় আমাগো লজ্জা আছে । আমাদের আটকাইয়েন না ভাবি!” কুলসুম বলল, “না ভাই! এভাবে বলবেন না! আপনারা কেনো এরকম করছেন!” লুনা বলল, “দোস্ত! রাগ কইরো না! আর পারলে আমারে ক্ষমা কইরা দিও!” কুলসুম বলল, “আচ্ছা, আজকে রাতটা তো থাকো!” লুনা বলল, “না রে, রাইত ক্যান? এক মুহূর্তও আমি এইহানে থাকমু না!” বলে ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে নিয়ে যেতে নিলো লুনা এমন সময় কুলসুম বলে উঠলো, “আমার ছেলে কিন্তু এমনিতেই কষ্টে আছে, তোমরা কি চাও আমার ছেলে তোমাদের চলে যাওয়া দেখে আরও কষ্ট পাক?” লুনা দাঁড়িয়ে গেলো । কুলসুম তখন কাছে এসে বলল, “ওরে, তোমার মেয়ের সাথে আমার ছেলের যাই হোক, তোমাদের আমার ছেলে অনেক ভালোবাসে । এই সময় আমার ছেলের মানসিক সমস্যা মেটাতে তোমাদের উপস্থিতি অনেক দরকার । আর তোমরা যদি এমনে চইলা যাও তাইলে ক্যামনে হবে?” লুনা কিছু বলতে পারলো না । কুলসুম বলল, “এসো, বোসো বন্ধু । ভাই, বসেন । ব্যাগ রাখেন ।”
এদিকে পুষ্পিতাকে নিয়ে সাজু আর আরশি নিচে এসেছে । সাজু পুষ্পিতাকে বলল, “পুষ্প, ভয় পেয়ো না । এখন আরও সহজ হয়ে গেলো তোমার আমার কাছে আসা । সবাই যখন জেনে গেছে, তখন ডিভোর্স নিয়ে তোমার আমার কাছে আসা কেউ আটকাতে পারবে না ।” পুষ্পিতা বলল, “কিন্তু আমার কেনো যেনো ভালো লাগছে না কিছু ।” আরশি বললো, “মা! ভয় পেয়ো না । এবার তুমি সাজু আঙ্কেলকে বিয়ে করবে, আর সব দেখবে ঠিক হয়ে গেছে । তোমার জীবনের সব সুখ দেখবে ফিরে এসেছে ।”
বারান্দা দিয়ে দাঁড়িয়ে ওদের দেখছিলো ময়না আর জয়িতার মা । জয়িতার মা বলল, “দেখছেন ভাবি! ভেতরে ভেতরে কি চলতো এই আরশির মা-র! এতো খারাপ! আবার আমাকে খারাপ বলতো!” ময়না বলল, “একদম ঠিক বলেছেন ভাবি । কালকে থেকেই দ্যাখেন না, এলাকার লোক ক্যামনে ওদের ছি ছি কইরা বেড়ায় । আমিও আর এই মহিলার সাথে মিশবো না বাবা!”
বাসর ঘরে বিছানায় শুয়ে আছে অনিক । পপি ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসে । অনিক বলল, “ভেবেছিলাম আজ রাতটা আমাদের অনেক সুন্দর কাটবে, কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেলো!” পপি কোনো কথা বলল না । অনিক বলল, “ঘুমিয়ে পড়ো পপি । অনেক ক্লান্ত তুমি ।”

আগামী পর্বেঃ
। ঘুম থেকে উঠে খাবার টেবিলে এলো পুষ্পিতা আর আরশি । ওদের দুজনকে দেখে অনিক উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “আমার খাওয়া হয়ে গেছে ।” তারপর সেখান থেকে চলে গেলো । এরপর পপিও “আমার খাওয়া হয়ে গেছে ।” বলে চলে গেলো । ধীরে ধীরে কুলসুম, শামসু, মিজান, লুনাও চলে গেলো ডাইনিং টেবিল থেকে ।
……………………
প্রীতি বলল, “কিন্তু আঙ্কেল, আমি ওই পরিবারে সুখী থাকতে পারবো তো?” গালিব জিজ্ঞেস করলো, “সেটাই যদি ভাবো, রাফিদকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখী থাকতে পারবে তো?
×
বাবা(পর্ব-১০২)

শো শেষে অনেক রাতে বাসার ফিরলো অর্ক । বাড়ির আর সবাই ঘুমিয়ে গেছে । আজ তো ও যে ঘরে ছিলো সে ঘরে অনিকের বাসর ঘর বানানো হয়েছে । অর্ক তাই ড্রইং রুমের মেঝেতে ঘুমালো । অন্যান্য দিন গালিব এখানে ঘুমায়, কিন্তু গালিবকে দেখতে পেলো না এই রুমে । ভাবলো বাবা হয়তো অন্য রুমে ঘুমাচ্ছে ।
কিন্তু গালিব আসলে ছাদে । একা একা নির্জনে সময় কাটাচ্ছে । কিছু একটা নিয়ে ভাবছে সে ।
পরদিন সকালের কথা । আজ শনিবার । সকাল হতেই অফিসে গেছে গালিব । প্রীতি গালিবকে বলেছিলো আজ না আসলেও চলবে, কিন্তু গালিব তার কাজে ফাঁকি দিতে চায় না । অফিসের কাজ করছিলো গালিব, এমন সময় দারোয়ান এসে বলল, “স্যার, আপনেরে প্রীতি ম্যাম ডাকতাছে ।” গালিব গেলো প্রীতি রুমে । অনুমতি নিয়ে ঢুকে অনুমতি নিয়ে বসলো সামনের চেয়ারে । প্রীতি বলতে গেলো, ”আঙ্কেল আসলে গতকা…।” কিন্তু প্রীতির কথা শেষ করতে না দিয়েই গালিব বলল, “দ্যাখো, আমি গতকালকের তোমার ব্যাপার কিংবা আমার ব্যাপার কোনো ব্যাপার নিয়ে এখন কথা বলতে রাজি নই ।” প্রীতি তখন বলল, “না আঙ্কেল আমি সেটা বলতে চাই নি ।” গালিব জিজ্ঞেস করলো, “তাহলে?” প্রীতি বলল, “আসলে আঙ্কেল, আমি আপনার কাছ থেকে একটু সাজেশন চাই ।” গালিব জিজ্ঞেস করলো, “কিসের?” প্রীতি বলল, “আঙ্কেল, আসলে আমি বুঝতে পারছি না কি করবো ।” গালিব বলল, “আমিও বুঝতে পারছি না তুমি কি বলছো । একটু স্পষ্ট করে বলো!” প্রীতি বলল, “আঙ্কেল, গতকাল আপনি তো জেনেই তো গেলেন আমি রাফিদকে ভালোবেসে ফেলেছি । কিন্তু ওর বাবা, আকবর আলি, ওরকম একটা লোকের ছেলের সাথে বিয়ে করা কি আমার উচিত হবে?”
সকালের খাবার খাচ্ছে লুনা, কুলসুম, মিজান, শামসু, পপি আর অনিক । মিজান পপি জিজ্ঞেস করলো, ”বউমা, রাতে ঘুম ভালো হইছে তো?” পপি বলল, “জি নানাজান হয়েছে ।” কুলসুম তখন আক্ষেপ করে বলল, “আমাদের ক্ষমা করে দিও বউমা, আজ তোমার বউভাত হবার কথা ছিলো, কিন্তু গতকাল এমন কিছু ঘটলো, আজ আর কিছুই করতে পারলাম না আমরা ।” পপি বলল, “না নানিমা, আমি বুঝতে পেরেছি । সমস্যা নেই ।” চামেলি সবার খাবার বেড়ে দিচ্ছে আর বলছে, “জানতাম তো! খালা এইসব কইরবো আগেই বুঝতে পারছিলাম । আহারে! খালু কতো কষ্ট কইরা এই পরিবারডা সামলায়, এই পরিবারের খালি অর্ক বাবাই মনে হয় খালুর খোঁজ রাখছে সবসময় । আর আপনেরা । আরশি তো কি যে হইয়া গেছে! আল্লাহ!” অর্ক তখনও ঘুমোচ্ছে । ঘুম থেকে উঠে খাবার টেবিলে এলো পুষ্পিতা আর আরশি । ওদের দুজনকে দেখে অনিক উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “আমার খাওয়া হয়ে গেছে ।” তারপর সেখান থেকে চলে গেলো । এরপর পপিও “আমার খাওয়া হয়ে গেছে ।” বলে চলে গেলো । ধীরে ধীরে কুলসুম, শামসু, মিজান, লুনাও চলে গেলো ডাইনিং টেবিল থেকে । আরশি পুষ্পিতাকে বলল, “দেখেছো মা! কেমন পরিবার তোমার! তোমার সাথে কি রকম ব্যাবহার করছে!” পুষ্পিতা বলল, “কিন্তু আমিও তো ভুল করেছি না!” আরশি বলল, “না মা! তুমি কোনো ভুল করো নি! তোমার একজন স্বাধীন নারী! তোমার যা খুশি তাই করার অধিকার আছে!” পুষ্পিতা কিছু বলল না । কিন্তু মনে মনে ভাবলো, “আসলেই কি তাই? স্বাধীন নারী মানেই কি কেবল যা খুশি তাই করে বেরানো?”
“দ্যাখো, তোমাকে আগেও বলেছি এখনও বলছি, বিবাহ বহির্ভূত প্রেম আমার পছন্দ না । কিন্তু তোমায় শাসন করার আমি কেউ নই । তবে যেহেতু করেই ফেলেছো, আমি বলবো যতো দ্রুত পারো বিয়ে করে ফেলো । একটা প্রেমের প্রথম শর্ত সামাজিক স্বীকৃতি, আর সেটা তোমাদের বিয়েই দিতে পারে । এই যেমন আমার ছেলেকে আমি বিয়ে দিয়েছি ও যাকে ভালোবেসে ফেলেছিলো তার সাথে । তারও তো শ্বশুর ওই আকবর আলি । কিন্তু তবু আমি দিয়েছি বিয়েটা । কারণ ভালো ও পপিকে বেসেছে, আকবর আলিকে না । বিয়ে ও পপিকে করবে, আকবর আলিকে না । ঠিক তেমনি ভালো তুমি রাফিদকে বেসেছো, আকবর আলিকে না, বিয়েটাও তুমি রাফিদকেই করবে, আকবর আলিকে না ।” প্রীতিকে বলল গালিব । প্রীতি সেগুলো শুনে বলল, “কিন্তু আঙ্কেল, আমি ওই পরিবারে সুখী থাকতে পারবো তো?” গালিব জিজ্ঞেস করলো, “সেটাই যদি ভাবো, রাফিদকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখী থাকতে পারবে তো?” প্রীতি ওপর নিচে মাথা নাড়ালো । তারপর বলল, “ঠিক আছে আঙ্কেল । অনেক ধন্যবাদ ।” গালিব উঠে চলে আসতে নেবে, এমন সময় প্রীতি আবার গালিবকে ডাকলো, “আঙ্কেল!” গালিব পেছন ফিরে তাকালো প্রীতির দিকে । প্রীতি বলল, “আমার যে সমস্যাটা রয়েছে সেটা আমি রাফিদকে বলিনি । যদি ও আমাকে ছেড়ে যেতে চায় সেই ভয়ে । এটা নিয়ে আমাকে কিছু সাজেশন দিতে পারবেন?” গালিব বলল, “আমি রাফিদ ছেলেটাকে যতদুর চিনি, এ কথা ওর সাথে শেয়ার করলে ও কিছুই মনে করবে না । আর যদি মনে করেও, তবে ধরে নেবে তোমার প্রতি ওর ভালোবাসাটা পরিপূর্ণ না । কিন্তু এটা আমি তোমাকে এক প্রকার বলতে পারো আদেশই করছি, বিয়ে করার আগে ওকে সব বলো । কাউকে ঠকিয়ে তার ভালোবাসা পাওয়া যায় না ।” বলে চলে গেলো গালিব । প্রীতি আর কিছু বলল না ।

আগামী পর্বেঃ
“শোনো! তুমি এবার যে করেই হোক ডিভোর্সের ব্যাপারে নিজেকে এগিয়ে নাও! এমন কিছু করো, যেনো গালিব তোমাকে ডিভোর্স দিতে বাধ্য হয়!” পুষ্পিতাকে কলে বলছিলো সাজু । পুষ্পিতা বলল, “কিন্তু আমার খুব ভয় লাগছে!” সাজু বলল, “আরে! ভয়ের কি আছে! ওই ব্যাটা তোমার সাথে কিছুই করতে পারবে না! আর যদি কিছু করেও, তাহলে ওরে নারী কেলেঙ্কারি মামলায় ফাসিয়ে দেবো!”
×
বাবা(পর্ব-১০৩)

ঘুম থেকে উঠে অর্ক দেখলো, রাফিদের মেসেজ । লেখা, “দোস্ত, ঘুম ভাংলে আমাকে কল করে ছাদে আসিস । অনেক জরুরী কিছু কথা বলবো । যদিও হয়তো এতক্ষণে জেনেও গেছিস ।” অর্ক ভ্রু কুঁচকে মোবাইলের দিকে তাকালো । কি এমন জরুরী কথা রাফিদ বলবে? অর্ক কল করলো রাফিদকে । কল ধরতেই রাফিদ বলল, “হ্যাঁ দোস্ত, ঘুম ভেঙ্গেছে?” অর্ক বলল, “হ্যাঁ দোস্ত । বল কি হয়েছে?” রাফিদ বলল, “গতকাল বিয়েতে কি হয়েছে কিছু শুনেছিস?” অর্ক বলল, “বিয়েতে! কি হয়েছে? কই আমি কিছু জানি না তো!” রাফিদ বলল, “আচ্ছা, তাহলে ছাদে আয়!” অর্ক “আচ্ছা আসছি!” বলে উঠে দাঁড়ালো । সে সময় অনিক এলো ড্রইং রুমে । অর্ককে ডাকলো । “কিরে অর্ক? কোথায় যাচ্ছিস?” অর্ক জবাব না দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “গতকাল কি হয়েছে ভাইয়া?” অনিক জিজ্ঞেস করলো, “অনেক কিছু হয়েছে । তুই দেরি করে এসেছিলি আর সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিলো বলে হয়তো কেউ তোকে কিছু বলে নি ।” অর্ক বলল, “আমার বাসায় কিছু ঘটলো আর আমিই জানলাম না! রাফিদের কাছ থেকে শোনা লাগছে আমার!” অনিক বলল, “রাফিদ তোকে সব বলেছে?” অর্ক বলল, “না, আমাকে সব বলতে ছাদে ডাকলো ।” অনিক বলল, “আচ্ছা, রাফিদের কাছ থেকেই সবটা শোন তাহলে । তবে তোকে অন্য একটা কথা বলি ।” অর্ক জিজ্ঞেস করলো, “কি?” অনিক বলল, “মনে আছে, তোর সাথে একটা মেয়ের বিয়ের কথা উঠেছিলো?” অর্ক বলল, “হ্যাঁ, বাবা ঠিক করেছিলো বিয়ে, মনে থাকবে না কেনো । কিন্তু কি হয়েছে?” অনিক বলল, “সে আর বিয়েটা করবে না । সে অন্য একজনকে ভালোবাসে ।” অর্ক বলল, “ধুর! এটা শুনে আমার কি, ওই মেয়েকে আমি কখনো দেখিই নি ।” অনিক বলল, “দেখেছিস । বাবার কোম্পানির হেডকে দেখিস নি? প্রীতি?” অর্ক বলল, “ও আচ্ছাম উনি? কিন্তু তাতে কি হয়েছে । বিয়ে হলেই কি না হলেই কি ।” অনিক বলল, “ওই মেয়ে রাফিদকে ভালোবেসে ফেলেছে ।” অর্ক বলল, “ভালো, আমি তো বললাম! ওই মেয়ে কাকে ভালোবাসলো না বাসলো আমার কিছু যায় আসে না!” অনিক বলল, “ঠিক আছে । তোকে বলে রাখলাম জাস্ট ।” অর্ক বলল, “আচ্ছা, আমি ছাদে গেলাম ।” বলে অর্ক ছাদে গেলো ।
কাজের ফাকে জাহিদ গালিবের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো, “ভাই, আপনার পার্সোনাল জীবনে আমার ইন্টারফেয়ার করা উচিত না, তবু জিজ্ঞেস করছি, এতোকিছুর পরও আপনি কি করবেন?” গালিব বলল, “আরে না না, এভাবে বলবেন । আর আপনি তো আমার পার্সোনাল লাইফের সব জানেনই, এমনকি আপনাকে আমি আমার পরিবারেরই একজন ভাবি ।” জাহিদ জিজ্ঞেস করলো, “তাহলে বলুন, কি করবেন এখন?” গালিব বলল, “আমার মাথায় কিছু আসছে না । কিন্তু এতোটুকু আমি শিওর । ওকে হয় আমি সাজুর থেকে দূরে সরিয়ে দেবো, নয়তো আমি ডিভোর্স দেবো । কিন্তু কি করবো আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না!” জাহিদ বলল, “দ্যাখেন ভেবে, আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন, নিশ্চয়ই ভালো কিছুই ঘটবে ইনশাআল্লাহ ।” গালিব ওপর নিচ মাথা নাড়িয়ে বলল, “হুম, ঠিক বলেছেন ।”
“কিরে? কি হয়েছে?” ছাদে এসে রাফিদকে জিজ্ঞেস করলো অর্ক । রাফিদ বলল, “তোকে তোর বাসার কেউ কিচ্ছু বলে নি?” অর্ক বলল, “না, আসলে গতকাল আমি দেরি করে ফিরেছিলাম তো, বাসার সবাই তখন ঘুমাচ্ছিলো । রাফিদ তখন গতকাল কি হয়েছে সবটা খুলে বলল অর্ককে । সবটা শুনে অর্ক একদম মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে গেলো । রাফিদ অর্কর কাধ ধরে অর্ককে ঝাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কিরে? ঠিক আছিস?” অর্ক ছাদের ওপর বসে পড়লো । তারপর কাঁদতে কাঁদতে বলল, “আমি জানতাম মা বাবাকে তেমন পছন্দ করতো না । আর আরশিতো বাবাকে বাদ দিয়ে ওই লোকটাকে নিজের বাবা-ই ধরে নিয়েছে । কিন্তু ঘটনা যে এতোটা দূর গড়াবে আমি ভাবতেও পারিনি!” রাফিদ বলল, “ঠিক আছে দোস্ত, এখন আমাদের ভেঙ্গে পড়া যাবে না । নিজেদের শক্ত রাখতে হবে । আর আঙ্কেলকেও শক্ত রাখতে সহায়তা করতে হবে ।” অর্ক আর কিছু বলল না ।
“শোনো! তুমি এবার যে করেই হোক ডিভোর্সের ব্যাপারে নিজেকে এগিয়ে নাও! এমন কিছু করো, যেনো গালিব তোমাকে ডিভোর্স দিতে বাধ্য হয়!” পুষ্পিতাকে কলে বলছিলো সাজু । পুষ্পিতা বলল, “কিন্তু আমার খুব ভয় লাগছে!” সাজু বলল, “আরে! ভয়ের কি আছে! ওই ব্যাটা তোমার সাথে কিছুই করতে পারবে না! আর যদি কিছু করেও, তাহলে ওরে নারী কেলেঙ্কারি মামলায় ফাসিয়ে দেবো!” পুষ্পিতা বলল, “না না না! এরকম কিছু কোরো না! এটা ঠিক না । মিথ্যা মামলায় কেনো ফাঁসাতে যাবো ।” সাজু বলল, “ওই তো, তাহলে তুমি দ্যাখো কি করতে পারো ।” পুষ্পিতা বলল, “আমি করবো টা কি সেটাই তো বুঝতে পারছি না!” সাজু বলল, “দাড়াও, একটু ভাবি ।” তারপর কিছুক্ষন ভেবে বলল, “হ্যাঁ, তুমি জেদ ধরো । বলো, তোমাকে যেনো তাড়াতাড়ি ডিভোর্স দিয়ে দেয় । তা না হলে তুমি ডিভোর্স ছাড়াই আমাকে বিয়ে করে ফেলবে!” পুষ্পিতা অবাক হয়ে বলল, “সাজু! এসব তুমি কি বলছো! আমি এতোটা নিচে নামবো!” সাজু বলল, “আরে! তুমি কি আমাকে পেতে চাও না!” পুষ্পিতা বলল, “হ্যাঁ, কিন্তু তোমাকে পাওয়ার বিনিময়ে কি আমি এতোটা নোংরা হয়ে যাবো?” সাজু বলল, “এটা নোংরা না, এটা তুমি চেয়ে নিচ্ছো! বললাম না তোমাকে!” পুষ্পিতা বলল, “কিন্তু তুমি যে বলছো ডিভোর্স ছাড়াই বিয়ে করতে?” সাজু বলল, “আরে! এটা তো কথার কথা! তোমার বরকে ইমোশোনাল ব্ল্যাকমেইল করার জন্য!” পুষ্পিতা আর কিছু বলল না । সাজু বলল, “ঠিক আছে, আমি রাখছি ।” তারপর কল কেটে দিলো সাজু ।

আগামী পর্বেঃ
গালিব যখনই রুমের দরজা খুলতে যাবে, এমন সময় পুষ্পিতা বলল, “আমি তোমাকে ডিভোর্স দিতে চাই ।” গালিবের পুরো শরীর কেঁপে উঠলো । দরজার হাতলের দিকে বাড়ানো হাত কাঁপতে লাগলো গালিবের ।
…………………………………………………
“তুমি কিছু ভাবলে?” ফোন কলে প্রীতিকে জিজ্ঞেস করলো রাফিদ । । প্রীতি বলল, “হ্যাঁ, ভেবেছি । আমি আর তোমার প্রেমিকা হয়ে থাকতে চাই না ।” রাফিদ চোখ মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেলো । চোখ দুটো ছলছল করতে লাগলো ।
×
বাবা(পর্ব-১০৪)

অফিস থেকে ফিরে গালিব গেলো অর্কর রুমে । অর্ক তখন রুমে নেই । বাইরে গেছে । জামাকাপড় পালটে গোসল করে নিলো । তারপর টেবিলের দিকে আসতে নেবে খাওয়া দাওয়া করার জন্য, এমন সময় পুষ্পিতা ওকে ডাকলো, “শোনো! তোমার সাথে আমার কথা আছে ।” গালিব কিছু বলল না । পুষ্পিতার দিকে ফিরে তাকালো । পুষ্পিতা গালিবকে বলল, “এখানে না, আমার রুমে চলো । আরশি রুমে নেই, কোচিং-এ গেছে । তোমার সাথে একান্তে আমি কথা বলতে চাই ।” গালিব তবুও কিছু বলল না । চুপচাপ পুষ্পিতার সাথে গেলো পুষ্পিতার রুমে । তারপর পুষ্পিতা দরজা আটকে গালিবকে বলল, “আমি গতকালকের ওসবের জন্য অনেক দুঃখিত! আসলে আমি এভাবে কিছু করতে চাই নি!” গালিব তাও চুপ করে আছে । পুষ্পিতা বলল, “এটা সত্য সাজু আমার কলেজ লাইফের ভালোবাসা ছিলো, এটাও সত্য এখনও আমার হৃদয় ওর জন্য কম্পিত হয় । কিন্তু তার বিনিময়ে তোমাকে আমি কষ্ট দিতে চাই নি । কিন্তু………” থেমে গেলো পুষ্পিতা । এবারেও গালিব তার নীরবতার ধারা বজায় রাখলো । পুষ্পিতা এবারে হালকা রেগে জিজ্ঞেস করলো, “কি হলো! কিছু বলছো না কেনো!” গালিব এবার মুখ খুললো । বলল, “গতকালকে আমার করা প্রশ্নের জবাবেও তুমি নীরব ছিলে ।” পুষ্পিতা এবার নীরব হয়ে গেলো । গালিব জিজ্ঞেস করলো, “আর কিছু বলতে চাও?” পুষ্পিতা আমতা আমতা করলেও কিছু বলতে পারলো না । গালিব রুম থেকে বেরোনোর জন্য পা বাড়ালো । পুষ্পিতার তখন মনে পড়লো সাজুর কথা, সাজু ওকে বলেছিলো, গালিবকে বাধ্য করতে পুষ্পিতাকে ডিভোর্স দিতে । গালিব যখনই রুমের দরজা খুলতে যাবে, এমন সময় পুষ্পিতা বলল, “আমি তোমাকে ডিভোর্স দিতে চাই ।” গালিবের পুরো শরীর কেঁপে উঠলো । দরজার হাতলের দিকে বাড়ানো হাত কাঁপতে লাগলো গালিবের । পুষ্পিতা বলল, “হ্যাঁ, আমি তোমাকে ডিভোর্স দিতে চাই! আর যদি তুমি আমাকে ডিভোর্স না দাও, তাহলে আমি ডিভোর্স ছাড়াই সাজুর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবো ।” গালিব শুধু জিজ্ঞেস করলো, “আর কিছু?” পুষ্পিতা বলল, “না, শুধু এটাই বলার ছিলো ।” গালিব দরজা খুলল আর দরজা খুলে সামনের দিকে তাকাতেই দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে দেখে ভয় পেয়ে গেলো গালিব আর পুষ্পিতা দুজনেই ।
“তুমি কিছু ভাবলে?” ফোন কলে প্রীতিকে জিজ্ঞেস করলো রাফিদ । গতকাল থেকেই বেশ শঙ্কায় রাফিদ, বাবার কারণে যদি সে প্রীতিকে হারিয়ে ফেলে । প্রীতি ফোনের ওপাশ থেকে বলল, “হ্যাঁ, ভেবেছি ।” রাফিদ জিজ্ঞেস করলো, “কি ভাবলে?” প্রীতি বলল, “আমি আর তোমার প্রেমিকা হয়ে থাকতে চাই না ।” রাফিদ চোখ মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেলো । চোখ দুটো ছলছল করতে লাগলো । তবে কি সব মিথ্যা? মিথ্যা সেদিনের ওদের র‍্যান্ডম পার্কের ভালোবাসা? মিথ্যা সেদিন রূপার দেয়া ফুল? রাফিদ আবারও জিজ্ঞেস করলো, “তুমি ভেবে বলছো তো?” প্রীতি বলল, “হ্যাঁ আমি ভেবেই বলছি, আমি আর তোমার প্রেমিকা হয়ে থাকতে চাই না ।” এবারে রাফিদের গাল বেয়ে জল পড়া শুরু হলো । প্রীতি বলল, “শোনো, আমি এবার থেকে তোমার বউ হয়ে থাকতে চাই ।” রাফিদ মুহূর্তের মধ্যে যেনো চমকে গেলো । ভালো করে চোখ মুখ মুছে নাকের পানি টেনে জিজ্ঞেস করলো, “মানে!” প্রীতি বলল, “দ্যাখো, এরকম বিবাহবহির্ভূত প্রেমের থেকে বিয়ে করাটাই বেটার আমার মনে হয় । কারণ এসব প্রেম ভাঙলে জোড়া না-ও লাগতে পারে, কিন্তু বিয়ে ভাঙ্গা এতো সহজ না ।” রাফিদের চোখে মুখে হাসি ফুটে উঠলো । বলল, “তুমি একদম আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছো!” প্রীতি ওপাশ থেকে হেসে বলল, “আরে না বোকা ছেলে! তুমিই ভয় পেয়েছো । দুবার বললাম প্রেমিকা হয়ে থাকতে চাইনা, একবারও কি মাথায় এলো না কেনো আমি বার বার প্রেমিকা ওয়ার্ডটা ইউজ করছি?” রাফিদ বলল, “না এলো না ।” প্রীতি জিজ্ঞেস করলো, “তা কেনো আসবে!” রাফিদ বলল, “কারণ আমার মনে যে শুধুই তুমি!” কথা শুনে লজ্জা পেলো প্রীতি । দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রাফিদের কথা শুনছিলো আকবর আলি । শুনে মনে মনে বলল, “যাক! আমার ছেলেটা এবারে একটা কাজে কাজ করেছে! এবার যদি আমার একটা চাকরি হয়! বসের হাত ধরে না হোক, বউমার হাত ধরে তো হতেই হবে!”
“আম্মা আপনি!” দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লুনাকেই কথাটা বলল গালিব । লুনা এতোক্ষন দরজায় দাঁড়িয়ে গালিব আর পুষ্পিতার কথাবার্তা শুনছিল । লুনা কাঁদছে । গালিবের সামনে হাতজোড় করে কাঁদতে কাঁদতে লুনা বলল, “আমারে মাফ কইরা দিয়ো বাবা!” তারপর লুনা চলে গেলো । গালিব ডাকতে গেলো লুনাকে, কিন্তু লুনা শুনলো না । গালিব রুম থেকে বের হয়ে অর্কর রুমে গেলো । তারপর মেঝেতে বসে খাটের সাথে হেলান নিয়ে দুই পা ভাজ করে পা দুটো জাপটে ধরে হাটুর ওপর থুতনি ঠেকিয়ে কাঁদতে শুরু করলো আর বলতে লাগলো, “আল্লাহ! আমাকে ধৈর্য দিন! আমার পরিবারকে ধৈর্য দিন!”
একটু পর গালিবকে ডাকলো কুলসুম । বলল, “এই গালিব! দ্যাখ তোর শ্বশুর শাশুড়ি চলে যাচ্ছেন!” গালিব উঠে গেলো ড্রইং রুমে । ড্রইং রুমে তখন সবাই এলো, পুষ্পিতা, অনিক, পপি, কুলসুম শামসু । লুনা আর মিজান দরজায় দাঁড়িয়ে । পুষ্পিতা বলল, “মা! বাবা! তোমরা……।” পুষ্পিতার কথা শেষ করতে না দিয়ে লুনা বলল, “একখান কতাও কবি না! আমাগো কাছে তুই মইরা গেছোস!” পুষ্পিতা মাথা নিচু করে কান্নাকাটি শুরু করলো । গালিব রিকুয়েস্ট করলো, “আম্মা! আব্বা! প্লিজ এভাবে যাবেন না!” অনিক রিকুয়েস্ট করলো, “নানা! নানি! প্লিজ! আপনারা চলে যাবেন না!” পপি বলল, “নানা! নানি! আপনারা আর দাদাদাদিরাই তো আমাকে সংসারের সবকিছু শেখাবেন! কিন্তু আপনারা চলে গেলে নতুন সংসারের সব আমি কি করে শিখবো ।” মিজান বলল, “শিখা যাবা বউমা, সব শিখা যাবা । আর তোমাগো জন্য দোয়া সবসময় থাকবো ।” লুনা কুলসুমের কাছ থেকেও বিদায় নিলো, “দোস্তো! আসি!” অবশেষে সবাইকে কাঁদিয়ে এবং নিজেরাও কাঁদতে কাঁদতে বিদায় নিলো গালিবের বাসা থেকে ।

আগামী পর্বেঃ
দুপুর সাড়ে বারোটার দিকের কথা । পানি খেতে ডাইনিং রুমে এসেছিলো পুষ্পিতা, কিন্তু দেখলো, ব্যাগ নিয়ে চলে যাচ্ছে কুলসুম আর শামসু । পুষ্পিতা এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো, “একি! আম্মা! আব্বা! কোথায় যাচ্ছেন আপনারা?” কুলসুম চলে যাচ্ছি বউ………না, শুধু মা । তুমি মনে হয় আমাদের বউমা হয়ে থাকতে চাও না”
×
বাবা(পর্ব-১০৫)

পরদিনের কথা । আজ রবিবার । সকাল হতেই অফিস গেছে গালিব, আরশি স্কুলে, অনিক আর পপি ভার্সিটিতে, অর্ক রাফিদের সাথে একটু বাইরে গেছে । নিজের রুমে একা একা শুয়ে আছে পুষ্পিতা । সে নিজেও বুঝতে পারছে না সে যা করে যাচ্ছে তা কি আসলেই ঠিক হচ্ছে নাকি ঠিক হচ্ছে না । অন্য রুমে বসে শামসু আর কুলসুম । কুলসুম শামসুকে বলল, “নাহ! বান্ধবিটা চলে যাবার পর থেকে আর ভাল্লাগছে না । কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে বাড়িটা ।” শামসু বলল, “আমারও মনে হচ্ছে ছেলেটার এখন অনেক চাপের মুখে আছে । আর ওর পারিবারিক ঝামেলার মধ্যে আমাদের দেখলে ভাববে আমরা হয়তো টেনশন করছি, এতে ছেলেটার মানসিক চাপ আরও বাড়বে । তার চেয়ে বরং চলো, আমরাও ফিরে যাই ।” কুলসুম জিজ্ঞেস করলো, “ভেবে বলছো?” শামসু বলল, “হ্যাঁ, ভেবেই বলছি । হ্যাঁ এটা সত্যি, ছেলেটাকে সামলানো আমাদের বাবা মা হিসেবে দায়িত্ব, কিন্তু আমরা এখন এখানে থাকলে ছেলেটার ওপর এই চাপের সাথে সাথে টাকা পয়সা খরচের ব্যাপারটাও থাকবে । এমনিতে অনিক আর পপির বিয়েতে প্রচুর ধার করা হয়ে গেছে ছেলেটার । এখন দিনেও কাজ করে, রাতেও ওভারনাইট করে । ছেলেটাকে বাড়তি চাপ আর দেয়া মনে হয় ঠিক হবে না ।” কুলসুম একটু ভেবে বলল, “হ্যাঁ চলো! এখনই যাই!” শামসু জিজ্ঞেস করলো, “এখনই! ছেলে আসুক আগে!” কুলসুম জিজ্ঞেস করলো, “তোমার কি মনে হয়, ছেলে আমাদের যেতে দেবে?” শামসু আর কিছু বলল না ।
দুপুর সাড়ে বারোটার দিকের কথা । পানি খেতে ডাইনিং রুমে এসেছিলো পুষ্পিতা, কিন্তু দেখলো, ব্যাগ নিয়ে চলে যাচ্ছে কুলসুম আর শামসু । পুষ্পিতা এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো, “একি! আম্মা! আব্বা! কোথায় যাচ্ছেন আপনারা?” কুলসুম চলে যাচ্ছি বউ………না, শুধু মা । তুমি মনে হয় আমাদের বউমা হয়ে থাকতে চাও না” পুষ্পিতা বলল, “আপনারা আমার সাথে এভাবে কেনো কথা বলছেন!” শামসু বলল, “মা তুমিই বলো, তুমি যেটা করেছো তার পর কি আর অন্যভাবে কিছু বলা যায়?” পুষ্পিতা কাঁদতে কাঁদতে বলল, “প্লিজ আম্মা আব্বা! আপনারা যাবেন না! আপনাদের অভিশাপ আমাকে শেষ করে দেবে!” শামসু বলল, “না মা, অভিশাপ কেউ মন থেকে কখনোই দেয় না । তোমার জন্য দোয়া করি, সুখী থাকো ।” পুষ্পিতা তবুও থামানো চেষ্টা করলো, “প্লিজ! যাবেন না আপনারা! আপনাদের ছেলেকে আমি কি জবাব দেবো!” কুলসুম আর শামসু ততোক্ষণে চলে গেছে । পুষ্পিতা কান্নাকাটি শুরু করে দিলো ।
“আসবো?” গালিবকে রুমে ডেকেছে প্রীতি তাই এসে দরজায় কথাটা জিজ্ঞেস করলো গালিব । প্রীতি বলল, “জি আঙ্কেল আসেন!” গালিব এলো । প্রীতি বসতে বললে গালিব বসলো । প্রীতি জিজ্ঞেস করলো, “আজ অন্যান্য কথাবার্তার আগে কোম্পানির কথা বলেন, আমাদের সানরাইজ কোম্পানির কি খবর?” গালিব বলল, “জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো । গত মাসের তুলনায় এই মাসে আমাদের লাভ অনেক হয়েছে । কিন্তু তার আগের মাসে লাভের পরিমাণ একদমই নেই বললেই চলে ধরণের ছিলো । তবে ভাগ্য ভালো ক্ষতি হয় নি ।” প্রীতি বলল, “হ্যাঁ, আমাদের কোম্পানির নতুন লোগো দর্শকদের আকৃষ্ট করেছে বেশ । আপনার কলিগ, জাহিদ আঙ্কেল, উনি অনেক সুন্দর ডিজাইন করেন ।” গালিব বলল, “হ্যাঁ! অসাধারণ কাজ করেন উনি । দারুণ লাগে উনার কাজগুলো । প্রীতি তখন জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা আঙ্কেল, আপনি রাগ না করলে একটা প্রশ্ন করতে পারি?” গালিব জিজ্ঞেস করলো, “হ্যাঁ করো কি প্রশ্ন ।” প্রীতি বলল, “আচ্ছা আপনি বিবাহবহির্ভূত প্রেম সাপোর্ট করেন না কেনো?” গালিব বলল, “দ্যাখো প্রথমত অবশ্যই আমি আমার ধর্ম ইসলামকে মেনে চলি সেটা প্রধান কারণ । আর তুমি যদি ধর্মের দিকটা না-ও ধরো, তবুও দেখো, যতো প্রেম হয় তার বেশিরভাগই কখনো পূর্ণতা পায় না । কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায় ছেলে মেয়েরা একে অপরকে হারিয়ে ফেললে আত্মহনন করে, অথচ বিয়ে করে নিলে সেটা হতো না । আবার এই বিবাহবহির্ভূত প্রেমের কারণে আজকাল ধর্ষণ বেড়ে যাচ্ছে । দেখা যাচ্ছে বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ডকে ধর্ষণ করছে । কিংবা বাচ্চা এবোর্শোন এর মতো সাঙ্ঘাতিক ঘটনাও ঘটছে ।” প্রীতি বলল, “হুম । আপনি ঠিকই বলেছেন ।” গালিব বলল, “একটা জিনিস জানোতো, আমাদের সমাজে সবাই মুসলমান, কিন্তু ধর্ম পালনে সবার অনীহা । পাচ ওয়াক্ত নামাজটাই কেউ পড়ে না । দিন দিন মানুষের এমন হয়ে যাচ্ছে, কোনটা হারাম কোনটা হালাল তাই-ই বুঝতে পারছে না ।” প্রীতি বলল, “ঠিক বলেছেন আঙ্কেল ।”
দুপুরে অফিস থেকে বাসায় ফিরলো গালিব । দরজার কাছে বসে জুতো পড়ছিলো, সেই সময় স্কুল থেকে ফিরলো আরশি দরজায় বাবাকে দেখে একটা বিরক্তিসূচক ভঙ্গিতে গালিবের দিকে তাকিয়ে ঘরে ঢুকলো । গালিব মনে মনে ভাবলো, “নিজের বাবার মতো সত্যিই কি অন্য বাবারা ভালোবাসে?”
ঘরে ঢুকে গালিব দেখলো, রুম কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে । গালিব মা বাবার ঘরটায় যেয়ে দেখলো, ওর বাবা মা রুমে নেই । গালিব ভাবলো অন্যান্য রুমে থাকতে পারে, কিন্তু তাও পেলো না । গালিব ডাকলো, “অনিক! বউমা! অর্ক!” কেউ এলো না, এলো পুষ্পিতা । বলল, “ওরা কেউ ঘরে নেই, এখনও ফেরেনি ।” গালিব জিজ্ঞেস করলো, “মা বাবা কোথায়?” পুষ্পিতা বলল, “চলে গেলেন । আমি আটকালাম অনেক কিন্তু থাকলেন না ।” গালিব পুষ্পিতার পুরো কথা শোনার আগেই চলে গেলো অন্য রুমে । তারপর কল করলো লুনাকে ।

আগামী পর্বেঃ
পুষ্পিতা বলল, “তুমি কি চাও সমাজে আমি আমার সম্মান হারাই?” সাজু বলল, “আরে! তুমি একজন স্বাধীন নারী! তুমি যা খুশি তাই করবে!” পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “সত্যিই কি তাই? স্বাধীন নারী মানেই কি যা খুশি তাই করা?” সাজু বলল, “হ্যাঁ সত্যিই তাই!” পুষ্পিতা তখন বলল, “তাহলে তুমি আমাকে জোড় করছো কেনো ডিভোর্স নিতে? আমাকে স্বাধীনভাবে ডিসিশন নিতে দাও!” সাজু তখন বলল, “আরে কিছু ক্ষেত্রে তো তোমাকে বোঝাতে হবে নাকি! সব ডিসিশন তো আর ঠিক না!” পুষ্পিতা বলল, “তাহলে তো এটাও হতে পারে, গালিবকে ডিভোর্স দিয়ে তোমাকে বিয়ে করার ডিসিশনও ঠিক হবে না, তাই না?”
×
বাবা(পর্ব-১০৬)

“গালিবকে কিছু বলেছো?” পুষ্পিতাকে ভিডিও কলে জিজ্ঞেস করলো সাজু । পুষ্পিতা বলল, “অন্তত নাম ধরে ডেকো না, তোমার বড় হন উনি ।” সাজু বলল, “হয়েছে হয়েছে! থামো! তা তোমার উনি ডিভোর্স নিয়ে কিছু করলেন?” পুষ্পিতা বলল, “এখনও তো কিছু বলে নি, কিন্তু দেখি কি করে ।” সাজু বলল, “শোনো, আমার মনে হয় ওই লোকটা তোমাকে ডিভোর্স দেবে না । তোমাকেই এখন কিছু একটা করতে হবে ।” পুষ্পিতা বলল, “ওর ডিভোর্স না দিতে চাওয়াটা স্বাভাবিক নয় কি? তিন সন্তানের মা আমি, এখনও একটা ছেলেও নিজেদের সেটেল করতে পারে নি, আর আরশি তো স্কুলের গন্ডিই পার করে নি এখনও ।” সাজু বলল, “তাতে কি হয়েছে! তুমি এতো কষ্ট ডিজার্ভ করো না! তুমি একটা বিলাসি জীবন সুখি জীবন ডিজার্ভ করো ।” পুষ্পিতা তখন হালকা বিরক্ত হয়ে বললো, “আচ্ছা, ডিভোর্স হচ্ছে আমার আর অনিকের বাবার, তোমার এতো মাথা ব্যাথা কেনো?” সাজু হালকা হেসে বলল, “তুমি মাথাব্যাথার কথা বলছো? তুমি বুঝতে পারছো না কেনো? আমি তোমাকে চাই! তোমাকে ভালোবাসতে চাই ।” পুষ্পিতা বলল, “কই এতোদিন তো তুমি আমাকে খোঁজো নি? হঠাৎ ফেসবুকে আমাদের পরিচয় হয়ে গেলো আর তুমি একদম আমায় পাবার জন্য এতোই পাগল হয়ে গেলে যে আমার আর আমার স্বামীর ডিভোর্স পর্যন্ত করিয়ে ছাড়লে?” সাজু বলল, “দ্যাখো পুষ্প, না আমি এসবে রাজি ছিলাম, না আমি এগুলো করতে চেয়েছিলাম । আমি তো চেয়েছিলাম তোমাকে সুখী দেখতে । কিন্তু তোমার মেয়ে আরশিই তো আমাকে বলল তোমার সুখ আছে আমার কাছে ।” পুষ্পিতা বলল, “আরশি তো বাচ্চা মেয়ে, তুমি কি বাচ্চা?” সাজু হালকা হেসে বলল, “ভালোবাসা মানুষকে পাগল করে দেয়, আমি তো কেবল বাচ্চা হয়েছি ।” পুষ্পিতা একটা দম ফেলে বলল, “ঠিক আছে, তুমি তাহলে আমাকে কি করতে বলছো?” সাজু বলল, “তুমি ওকে আইনি নোটিশ পাঠাবে ।” পুষ্পিতা ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো, “কি!” সাজু বলল, “হা, শোনো, এখন অনেক কিছুই ঘটে গেছে, এটা ওইসব ঘটনার তুলনায় একদম সামান্য ।” পুষ্পিতা বলল, “তুমি কি চাও সমাজে আমি আমার সম্মান হারাই?” সাজু বলল, “আরে! তুমি একজন স্বাধীন নারী! তুমি যা খুশি তাই করবে!” পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “সত্যিই কি তাই? স্বাধীন নারী মানেই কি যা খুশি তাই করা?” সাজু বলল, “হ্যাঁ সত্যিই তাই!” পুষ্পিতা তখন বলল, “তাহলে তুমি আমাকে জোড় করছো কেনো ডিভোর্স নিতে? আমাকে স্বাধীনভাবে ডিসিশন নিতে দাও!” সাজু তখন বলল, “আরে কিছু ক্ষেত্রে তো তোমাকে বোঝাতে হবে নাকি! সব ডিসিশন তো আর ঠিক না!” পুষ্পিতা বলল, “তাহলে তো এটাও হতে পারে, গালিবকে ডিভোর্স দিয়ে তোমাকে বিয়ে করার ডিসিশনও ঠিক হবে না, তাই না?” সাজু এবার কান্নাকাটি করতে করতে বলল, “বুঝেছি! তুমি আর আমাকে ভালোবাসো না! ঠিক আছে, তুমি থাকো । আমাকে আর খুঁজো না । আমি না হয় একতরফাই তোমাকে ভালোবেসে গেলাম ।” বলে কল কেটে দিলো সাজু । পুষ্পিতা কিছু বলতে গিয়েও পারলো না ।
“কেনো? এই বাড়ির ভাড়া তো আমিই দেই, আর তোমরা আমার ভাড়া করা বাসায় থাকতে পারবে না এটা কেমন কথা মা?” ফোনে কুলসুমকে বলল গালিব । কুলসুম বলল, “না রে বাবা, তোর পরিবারে অনেক ঝামেলা এখন, আমাদের মনে হয়েছে তোদের পারিবারিক ব্যাপারে আমাদের না যাওয়াই ভালো । আর তাছাড়া তোর এতো চাপের মধ্যে আমরাও একটা চাপ হয়ে থাকবো এটা হয় না । তাছাড়া অনিক বাবার বিয়ে তো হয়েই গেছে ।” গালিব বলল, “মা! এসব কেনো বলছো! যাই হোক । তোমরা থাকাকালীন আমি থাকলে মোটেও তোমাদের যেতে দিতাম না । এখন চলে গেছো, কিছু করারও নেই আমার ।” কুলসুম বলল, “আচ্ছা বাবা, ভালো থাকিস । আর নিজের খেয়াল রাখিস ।” গালিব কল কাটলো । সেই সময় গালিব ড্রইংরুমেই ছিলো । দরজায় কলিংবেলের আওয়াজ শুনতেই গিয়ে দরজা খুলল গালিব । দেখলো আকবর আলি দাঁড়িয়ে । আকবর আলি জিজ্ঞেস করলো, “কি বেয়ান সাব, আসবো?” গালিব বলল, “জি জি, আসেন ।” আকবর আলি ভেতরে এলো । সোফায় বসলো সে । গালিব বলল, “দাঁড়ান, আমি চামেলি খালাকে বলি আপনাকে একটু নাস্তা দিতে ।” আকবর আলি বলল, “না না, ব্যস্ত হবেন না । আমি আপনার সাথে কিছু কথা বলতেই এসেছি । বসেন আপনি আমার পাশে ।” গালিব আকবর আলির পাশে বসলো । আকবর আলি তখন বলল, “আসলে আমি নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছি । আমার মনে হয় আমার মেয়ে আপনার ছেলের সাথেই সুখী থাকবে । আসলে আমার একটা বন্ধু ছিলো, বিরাট এক কোম্পানির মালিক । তার ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে করিয়ে বন্ধুর বদৌলতে তার কোম্পানিতে যেতে চেয়েছিলাম । কিন্তু পড়ে আমার মেয়ে আর আপনার ছেলের মাঝে সম্পর্ক দেখে আমার বেশ রাগ হয়েছিলো । পড়ে যখন চাকরিটা চলে গেলো, তখন তো আরও উঠেপড়ে লাগলাম বিয়ে ভাঙতে । কিন্তু আমি চেয়েছিলাম এমন কিছু করতে যেনো আমার মেয়েই আপনার ছেলের সাথে বিয়েটা ভেঙ্গে দেয় । যাক, সেসব তো সফল হলো না আমার, কিন্তু আমি এখন আমার ভুল বুঝতে পেরেছি ।” গালিব বলল, “যাক, আপনি যে আপনার ভুল বুঝতে পেরেছেন এটাই অনেক ।” আকবর আলি তখন বলল, “গতকাল যে আপনাকে ভিডিওটা দেখালাম, এর জন্য আমি দুঃখিত ।” গালিব বলল, “না না, ঠিক আছে । তবে পরিবারের সবার না না বললেই পারতেন । আর সেটা না জানলে হয়তো আরও বড় কিছু হতে পারতো ।” আরও কিছুক্ষন কথা বলে আকবর আলি উঠলো, “আচ্ছা, আমি যাই তাহলে ।” গালিবও বিদায় দিলো, “ঠিক আছে, আবার আসবেন ।” গালিবের বাসার দরজা থেকে বেড়িয়ে নিজের বাসার দিকে যেতে যেতে মনে মনে বলল, “এমনি এমনি তো আর এ বিয়েটা মেনে নেই নি, কারণ মেয়েকে দিয়ে আর কোনো কাজ নেই । যদিও ওটা বড় কোম্পানি ছিলো, কিন্তু এখন আমার একটা হলেই হবে । আর সেটার পথ করে দেবে আমার ছেলে, প্রীতির সাহায্যে ।”

আগামী পর্বেঃ
খামের এপিঠ ওপিঠ দেখে বলল, “কারও নামও তো লেখা দেখছি না ।” জাহিদ বলল, “কি জানি, যে পাঠিয়েছে, তাকেও দারোয়ান চেনে না, সেও কিছু বলে নি ।” গালিব আর কিছু না ভেবে খুলল খামটা । কিন্তু খুলে যা দেখলো, তা দেখার জন্য গালিব মোটেও প্রস্তুত ছিলো না । ডিভোর্সের আইনি নোটিশ! তাও পাঠিয়েছে পুষ্পিতা!
×
বাবা(পর্ব-১০৭)

পরদিনের কথা । আজ সোমবার । সকালে অফিসে এসেছে গালিব । কাজ করছিলো । গালিবের কলিগ জাহিদ কি একটা কাজে বাইরে গেছে । হঠাৎ কোত্থেকে যেনো জাহিদ হাতে করে একটা বড় খাম নিয়ে এলো । তারপর সেটা গালিবের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “দারোয়ান আমাকে এটা দিয়ে বলল এটা নাকি কেউ আপনাকে দিতে বলেছে ।” গালিব সেটা হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কি এটা?” খামের এপিঠ ওপিঠ দেখে বলল, “কারও নামও তো লেখা দেখছি না ।” জাহিদ বলল, “কি জানি, যে পাঠিয়েছে, তাকেও দারোয়ান চেনে না, সেও কিছু বলে নি ।” গালিব আর কিছু না ভেবে খুলল খামটা । কিন্তু খুলে যা দেখলো, তা দেখার জন্য গালিব মোটেও প্রস্তুত ছিলো না । ডিভোর্সের আইনি নোটিশ! তাও পাঠিয়েছে পুষ্পিতা! গালিব এক মুহূর্তের মধ্যে নিস্তব্ধ হয়ে গেলো । পাশেই জাহিদ ছিলো । গালিবকে বলল, “এটা আপনাদের পারিবারিক ব্যাপার, আমার এর ভেতর ঢোকার অধিকার নেই, তবু দেখে ফেলেছি যখন, একটা কথা বলি, আপনার স্ত্রী যখন এতোই চাইছে, দিয়ে দিন ডিভোর্স । তারপর সে বুঝবে, এতো ভালো একজন স্বামীকে হারাবার সুযোগ ।”
“কি! কি করেছো তুমি এটা?” সাজুকে ভিডিও কলে বলল পুষ্পিতা । আসলে গালিবকে যে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে, সেটা পুষ্পিতা পাঠায় নি, পাঠিয়েছে সাজু, পুষ্পিতার নাম করে, উকিলকে বেশি টাকা পয়সা খাইয়ে । সাজু পুষ্পিতার কথার জবাবে বলল, “পুষ্প! তুমি এমনিতেই তো কিছু করছিলে না! তাই তো আমি ভাবলাম এটা হয়তো একটা ভালো সিদ্ধান্ত হবে!” পুষ্পিতা বলল, “তুমি বুঝতে পারছো না! এটা অনেক বড় ঝামেলা করতে পারে!” সাজু বলল, “সে ঝামেলা কি সেদিন রাতের ঝামেলার মতোই ভয়াবহ হবে?” পুষ্পিতা বিরক্ত হয়ে বলল, “একই কথা বার বার বোলো না তো!” সাজু বলল, “শোনো! আমি তোমাকে বিয়ে করবোই! তোমার ওই গালিব সাহেব এসে কি জবাব দেয় জানিয়ো, কিন্তু প্লিজ, বাড়াবাড়ি করে আবার এটা বলার দরকার নেই যে আমি তোমার নাম করে ওটা দিয়েছি । এখন আমি রাখছি ।” বলে কল কেটে দিলো পুষ্পিতা । এই প্রথমবার পুষ্পিতার সাজুর ওপর একটু সন্দেহ হলো । মানুষ মানুষকে কি এতোটাই ভালোবাসে যে বিয়ের জন্য অন্যের ডিভোর্স করিয়ে দেয়?
গোসল করে তয়লা দিয়ে মাথা মাথা মুছতে মুছতে বাথরুম থেকে বেড়িয়ে এলো আকবর আলি । দরজার ওপর তয়লাটা রেখে আকবর আলি মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখলো, অচেনা একটা নাম্বার থেকে বারোটা মিসকল । আকবর আলি মোবাইল হাতে নিয়ে কল ব্যাক করলো । ফোন ধরতেই ফোনের ওপাশ থেকে একজন জিজ্ঞেস করলো, “হ্যালো! আসসালামু আলাইকুম! কে বলছেন?” আকবর বলল, “ওয়ালাইকুমুস সালাম, আপনার এই নাম্বার থেকে বারোবার মিসকল এসেছে!” লোকটা তখন বলল, “ও হ্যাঁ! আসলে আমি নামার ঠিকমতো খেয়াল করিনি, তাই বুঝতে পারিনি, আপনি কি আকবর আলি?” আকবর বলল, “জি, আমি আকবর আলি, কেনো?” লোকটা বলল, “আমি কেবিডি ব্যাংক থেকে বলছি! আমাদের ব্যাংককে আপনার একটা আকাউন্ট আছে এবং আপনার কাছেও মনে হয় আমাদের ব্যাংক এর মাস্টার কার্ড আছে ।” আকবর আলি বলল, “ও হ্যাঁ হ্যাঁ! আমি ওই ব্যাংক-এরই গ্রাহক ।” ফোনের ওপাশ থেকে লোকটা বলল, “জি স্যার, আসলে আপনি অনেক আগে আমাদের কাছে একটা বড় অংকের টাকা ধার নিয়েছিলেন, সে টাকার পাঁচ পার্সেন্ট প্রতি মাসে শোধ হচ্ছে । এতোদিন সব ঠিকঠাক ছিলো, কিন্তু গত ৩-৪ দিন আগে আপনার কার্ডের টাকা বেশ কমে গেছে ।” আকবর আলি বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ, আসলে আমার মেয়ের বিয়ে ছিলো তো ।” ফোনের ওপাশে থাকা লোকটা বলল, “জি স্যার, আপনার সেই লোনের এখনও ছয় মাস বাকি আছে, কিন্তু আপনার অ্যাকাউন্টে বর্তমানে যে পরিমাণ টাকা আছে, তাতে চার মাস কিস্তি শোধ নেবার পরই আপনার টাকা শেষ হয়ে যাবে । আপনি কি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাকি দু মাসের কিস্তির টাকা ক্যাশ-ইন করাতে পারবেন?” আকবর আলি একটা ঢোক গিললো । তারপর মনে মনে নিজেই নিজেকে বলল, “সেরেছে! আমার জমা টাকা শেষের পথে! তার ওপর এখন আবার ঋণের বোঝা! কি করবো এখন আমি! আমার তো চাকরিটাও এখন নেই!” ফোনের ওপাশের লোকটা তখন বলল, “স্যার, আপনি কি লাইনে আছেন?” আকবর বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ! আছি আছি!” লোকটা জিজ্ঞেস করলো, “তাহলে স্যার, আপনি কি পারবেন শোধ করতে?” আকবর আলি বলল, “হ্যাঁ পারবো!” ফোনের ওপাশে থাকা লোকটা বলল, “ঠিক আছে স্যার, থ্যাঙ্ক ইউ । তবে মনে রাখবেন, আপনি যদি সময় মতো ক্যাশইন করাতে না পারেন, তাহলে কিন্তু আপনার কার্ডটি আমরা ব্লক করে দেবো ।” আকবর আলি বলল, “না না, ঠিক আছে । আমি শোধ করে দেবো ।” ফোনের ওপাশে থাকা লোকটা “থ্যাঙ্ক ইউ স্যার! সময় দেবার জন্যেও অনেক ধন্যবাদ ।” বলে কল কেটে দিলো । আকবর আলি তখন মনে মনে বলল, “এখন কি করি! পেয়েছি এক জামাই, এখন পড়াশোনাও শেষ করে নাই! কি টিউশনি করায়, তা দিয়ে কি করে শ্বশুরবাড়ির ভাড় নেবে সে? আমার চাকরিটাও গেলো ওই প্রীতি……” হঠাৎ প্রীতি নামটা মনে করতেই আকবর আলির চেহারায় একটা আশার আলো ফুটে উঠলো । ঠোঁটের কোণে হাসি এনে সে মনে মনে বলল, “এবার তাহলে আমার ছোটো ছেলের সাথে প্রীতির বিয়ে দেয়াটাই আমার পরবর্তী লক্ষ্য হতে চলেছে!”

আগামী পর্বেঃ
“আমি ভাবিনি তুমি ব্যাপারটা এতোটাই সিরিয়াস নেবে যে তুমি লিগ্যাল নোটিশ পর্যন্ত আমাকে পাঠাবে!” পুষ্পিতাকে কথাটা বলল গালিব । পুষ্পিতা বলল, “আচ্ছা গালিব! তুমি শান্ত হও! এটা আমি পাঠাইনি!” গালিব ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো, “পাঠাওনি মানে?” পুষ্পিতা সাজুর কথাটা বলতে যাবে, এমন সময় মনে মনে বলল, “না না, এখন যদি সাজুর কথা বলি, আর এই লোকটা যদি সাজুর বিরুদ্ধে আইনি ব্যাবস্থা নেয়!” গালিব জিজ্ঞেস করলো, “কি হলো বলো, তুমি পাঠাও নি মানে কি?” পুষ্পিতা বলল, “না, আমিই পাঠিয়েছি ।”
×
বাবা(পর্ব-১০৮)

“ভাই! একটা কাজ টাজ করা দরকার!” রাস্তার পাশ দিয়ে একসাথে হাটতে হাটতে কথাটা অর্ককে বলছিলো রাফিদ । তার সাথে আরও যুক্ত করলো, “তুই তো তাও একটা ভালো চাকরি টাকরি পেয়ে গেলি, একটু দেখিস ভাই! আমার জন্য ছোট খাটো কোনো চাকরি যদি পাওয়া যায়!” অর্ক বললো, “আরে ভাই! এভাবে বলছিস কেনো! দেখিস, একদিন আমার চেয়েও বড়ো কোনো চাকরি পেয়ে যাবি তুই!” রাফিদ বলল, “বড় দরকার নেই, একটা হলেই হয় আমার । বাপেরও তো চাকরি নেই, এখন হাতখরচও তেমন দেয় না ।” অর্ক জিজ্ঞেস করলো, “বলছিলাম কি, আঙ্কেলের চাকরি নেই অনেকদিন হলো, আঙ্কেলের সংসার চালাচ্ছেন কি করে?” রাফিদ বলল, “এতোদিন অনেক জমিয়েছে, সেগুলোই এখন বসে বসে খাচ্ছে, নতুন কোথাও চেষ্টাও তো চালাচ্ছে না ।” অর্ক আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না ।
“আসবো?” প্রীতির রুমের সামনে এসে কথাটা বললো আকবর আলি । প্রীতি আকবর আলিকে দেখে হালকা হেসে বলল, “আরে আরে আরে! এ আমি কাকে দেখছি! আসেন!” আকবর আলি এলো । প্রীতি বলল, “বসেন শ্বশুর আব্বা!” আকবর আলি বসলো । তারপর প্রীতি জিজ্ঞেস করলো, “কি, চাকরি ফেরত চাইতে এসেছেন, তাই তো?” আকবর আলি বলল, “জি, আসলে বুঝতেই তো পারছো, টাকাপয়সার অভাব, শ্বশুর মশাই হিসেবে এটুকু তো চাইতেই পারি!” প্রীতি বলল, “আপনার কি মনে হয়, আপনাকে কি ক্ষমা করা উচিৎ?” আকবর আলি হালকা হেসে বলল, “সেটা তো তোমাকে আমি জিজ্ঞেস করবো, তোমার কি মনে হয়, করা উচিৎ? কারণ আমাকে ক্ষমা না করে চাকরিটা না দিলে আমিও আমার ছেলেকে তোমার হাতে তুলে দেবো না ।” প্রীতি কথা শুনে হো হো করে অট্টহাসি হেসে উঠলো । আকবর আলি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, “এতে এতো হাসির কি হলো?” প্রীতি বলল, “আমি জানতাম আপনি এরকম কিছু বলবেন, কিন্তু আকবর সাহেব, আপনাকে তাহলে আমি চাকরিটা না-ই দেই, তারপর দেখি, কি করে আপনার ছেলের সাথে আমার বিয়েটা আটকান!” আকবর আলি মনে মনে বলল, “ধুর! আবার ভুল পদক্ষেপে পা ফেললাম! এর চোখে ভালো নজরে থাকলে তাও চাকরিটা ফেরত পেতে পারতাম! শুধু শুধু আমি একে ওই কথাটা বলে নিজেকে খারাপ বানালাম!” প্রীতি জিজ্ঞেস করলো, “কি ব্যাপার, নতুন কোনো ষড়যন্ত্র করছেন নাকি?” আকবর আলি হালকা হেসে বলল, “আরে না না! ষড়যন্ত্র কেনো, আর আগেরটাও এসব কিছুই ছিলো না, মজা করছিলাম একটু!” প্রীতি বলল, “ও আচ্ছা, তাই নাকি!” আকবর আলি বলল, “দেখুন না! সব ঝামেলা তো মিটে গেছে! গালিব সাহেবের ছেলের সাথেও আমার মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছি, এবার তো আমাকে ক্ষমা করে চাকরিটা ফিরিয়ে দিন ।” প্রীতি কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইলো । তারপর একটা ফাইল আকবর আলির হাতে দিয়ে বলল, “কাল থেকে আবার ওই শাখাটা আপনি চালাবেন!” আকবর আলি খুশিতে আটখানা । বার বার বলছে, “থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ! থ্যাঙ্ক ইউ!” প্রীতি বলল, “ঠিক আছে! ঠিক আছে! কিন্তু মাথায় থাকে যেনো, এবারে অন্য কোনো কর্মচারীর সাথে খারাপ ব্যাবহার করলে আপনি কিন্তু আবার চাকরিটা হারাবেন ।” আকবর আলি, “না না! এবারে আমি সবটা মেনে চলবো!” বলে বেড়িয়ে গেলো ।
দুপুরে অফিস থেকে ফেরার সময় গ্যারেজে গালিবের সাথে মোটরসাইকেল খুলছিলো জাহিদ । জাহিদ গালিবকে বলল, “খবর টবর কিছু শুনেছেন?” গালিব জিজ্ঞেস করলো, “কি খবর?” জাহিদ বলল, “আপনার বেয়ান মশাই, আকবর আলি তো আগের চাকরি ফিরে পেয়েছে!” গালিব হালকা হেসে বলল, “ভালো তো, সবাই ভালো থাকুক, এটাই তো চাই ।” জাহিদ বলল, “সে তো বুঝলাম, কিন্তু হঠাৎ তার চাকরির দরকার হলো কেনো! এতোদিন তো অন্য চাকরিরও খোজ করতো না!” গালিব বলল, “হবে হয়তো, টাকার অভাবে পড়েছে, মেয়ের বিয়ে দিয়েছে, সেখানেও তো বেশ খরচ হয়েছে!” জাহিদ বলল, “হ্যাঁ সেটাই! যার যা ইচ্ছে করুগগা । আচ্ছা, থাকেন তাইলে । আল্লাহ হাফিজ!” গালিবও জাহিদকে, “আল্লাহ হাফিজ!” জানিয়ে বাসার পথে রওনা হলো ।
বাসায় এসেই পুষ্পিতার রুমে এলো গালিব । দরজার সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো, “আসবো?” পুষ্পিতা শুয়ে শুয়ে মোবাইল চালাচ্ছিলো । উঠে বসে বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ! এসো এসো ।” গালিব ভেতরে ঢুকলো । গায়ের শার্ট ঘামা । পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “একি! এখন ফ্রেশ হও নি! তুমি তো কখনও এভাবে আসো না!” গালিব বলল, “তুমি শান্তিতে থাকতে দিলে তবেই তো ফ্রেশ থাকবো, তাই না?” পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “মানে!” “আমি ভাবিনি তুমি ব্যাপারটা এতোটাই সিরিয়াস নেবে যে তুমি লিগ্যাল নোটিশ পর্যন্ত আমাকে পাঠাবে!” পুষ্পিতাকে কথাটা বলল গালিব । পুষ্পিতা বলল, “আচ্ছা গালিব! তুমি শান্ত হও! এটা আমি পাঠাইনি!” গালিব ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো, “পাঠাওনি মানে?” পুষ্পিতা সাজুর কথাটা বলতে যাবে, এমন সময় মনে মনে বলল, “না না, এখন যদি সাজুর কথা বলি, আর এই লোকটা যদি সাজুর বিরুদ্ধে আইনি ব্যাবস্থা নেয়!” গালিব জিজ্ঞেস করলো, “কি হলো বলো, তুমি পাঠাও নি মানে কি?” পুষ্পিতা বলল, “না, আমিই পাঠিয়েছি ।” গালিব আর কিছু বলল না । ওপর নিচ মাথা নেড়ে বলল, “এটুকুই জানতে চাইছিলাম । বিকেলে তৈরি থেকো, আমি তোমার সাথে যাবো, উকিলের সাথে কথা বলতে ।” বলে সেখান থেকে চলে গেলো গালিব । উকিলের কথা শুনতেই বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো পুষ্পিতার ।

আগামী পর্বেঃ
উকিল ডানে বামে মাথা নেড়ে বলল, “না, কেবল দাম্পত্য কলহের জেরেই তো ডিভোর্সটা হতে পারে না, কলহ তো সব দম্পতির মাঝেই বিরাজমান, রাগের বশেই সবাই এই সিদ্ধান্ত নেন বটে, তবে সেটাও নববিবাহিত দম্পতিরা । আর আপনাদের এতোদিনের সংসার, প্রায় ত্রিশ বছরের হবে, এখন আপনারা যদি এগুলো ভাবেন, তাহলে কি করে হয় বলুন?” পুষ্পিতা ভয় পেয়ে গেলো । মনে মনে বললো, “হায় হায়! এখন যদি এই মুহূর্তে এসে ডিভোর্স না হয় আমাদের!” গালিব কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো, কিন্তু তার আগেই পুষ্পিতা বলে উঠলো, “আসলে স্যার! আমার স্বামি আরেকটা মহিলাকে ভালোবাসে! তাই আমি এই ডিভোর্সটা চাই!” গালিব ভ্রু কুঁচকে পুষ্পিতার দিকে তাকালো ।
×
বাবা(পর্ব-১০৯)

ভার্সিটি থেকে ফিরলো অনিক আর পপি । দুজনে যেই ঘরে ঢুকলো, সেই সময় ঘর থেকে উকিলের কাছে যাবার উদ্দেশ্যে বেরোচ্ছিলো পুষ্পিতা আর গালিব । অনিক জিজ্ঞেস করলো, “কি ব্যাপার, তোমরা কোথাও যাচ্ছো?” গালিব একটুও চিন্তা না করে ছেলে আর ছেলের বউকে বলল, “হ্যাঁ, ওকে ডিভোর্স দিতে ।” অনিক আর পপি কথা শুনে অবাক । পপি জিজ্ঞেস করলো, “সেকি! এখনই ডিভোর্স নিচ্ছেন আপনারা! কারো সাথে কথা বা পরামর্শ না করেই? অন্তত অনিকের সাথে তো কথা বলে নিতেন ।” পুষ্পিতা তখন হুট করে বলল, “কি করবো বলো! তোমাদের বাবা ডিভোর্সের জন্য এতোই পাগল হয়েছেন যে আমাকে লিগ্যাল নোটিশও পাঠিয়েছেন!” গালিব অবাক হয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকালো পুষ্পিতার দিকে, অনিক অবাক হয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকালো গালিবের দিকে । জিজ্ঞেস করলো, “বাবা! তুমি! তুমি এটা করতে পারলে?” গালিব অনিকের কথার জবাব না দিয়ে পুষ্পিতাকে বলল, “মিথ্যে কেনো বলছো? ছেলেমেয়েদের সামনে ছোটো হতে চাও না তাই তো? যদি সে চিন্তা তোমার আগেই থাকতো, তাহলে একজন পর পুরুষের সাথে সম্পর্কে জড়ানোর আগে দশবার ভাবতে ।” পুষ্পিতা কিছু না বলে সেখানে থেকে বেড়িয়ে গেলো । গালিবও অনিক আর পপিকে, “আসছি আমরা!” বলে বেড়িয়ে গেলো । অনিক আটকাতে চাইলো, কিন্তু পারলো না । পপি জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা কি থেকে কি হয়ে গেলো এসব বলোতো!” অনিক বলল, “আমি তো এটাই বুঝতে পারছি না বাবা কি করে মাকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠায়!” পপি বলল, “আরে আন্টি মিথ্যা বলেছে, দেখলে না, আঙ্কেল বললো, মিথ্যা কথা কেনো বললে ।” অনিক বলল, “হুম । কিন্তু তাহলে লিগ্যাল নোটিশ কি মা বাবাকে পাঠিয়েছে?” পপি বলল, “যাই হোক, দেখা যাক, উনারা আসুক, উনার সাথে কথা বলতে হবে ।” অনিক বলল, “কিন্তু একেবারে যদি ডিভোর্স করিয়ে আসে!” পপি বলল, “আরে এখনই ডিভোর্স হয়ে যায় নাকি! বড়জোড় কিছু পেপারসে সাইন করাবে, আর সময় দেবে ভেবে দেখার । উকিলেরও তো সময় লাগবে ডিভোর্সের কাগজপত্র কালেক্ট করতে!” অনিক জিজ্ঞেস করলো, “এখন কি করি, বাবা মায়ের ডিভোর্সটা কি করে আটকাই!” পপি কিছুক্ষণ ভেবে বলল ,”একটা বুদ্ধি পেয়েছি!” অনিক জিজ্ঞেস করলো, “কি?”
“আসবো?” উকিলের অফিসের দরজার সামনে এসে বলল গালিব । উকিল বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ, আসুন ।” গালিব আর পুষ্পিতা ভেতরে গেলো । উকিল ওদের বসতে বললে ওরা বসলো । উকিল গালিবকে বলল, “গালিব ভাইয়ের সাথে আমার ফোনেই কথা হয়েছে, আপনারা ডিভোর্স নিতে চান । এই ডিভোর্সে কি আপনাদের দুজনেরই সম্মতি আছে?” গালিব বলল, “জি ভাই, আমাদের দুজনেরই সম্মতি আছে ।” পুষ্পিতা বলল, “জি, আমারও আছে!” উকিল ওপর নিচ মাথা নেড়ে বলল, “আচ্ছা । তা কি এমন কারণে আপনারা ডিভোর্স নিতে চাইছেন, জানতে পারি? আপনাদের তিন তিনটে ছেলে মেয়ে আছে, যাদের একজনের বিয়েও হয়েছে, তারপরও কেনো আপনারা ডিভোর্স নিতে চাইছেন?” গালিব একবার পুষ্পিতার দিকে তাকালো । বুঝলো, পুষ্পিতা ভয় পাচ্ছে, আসল কারণ উকিলের সামনে প্রকাশ করতে । গালিব বলল, “আসলে আমাদের মাঝে দাম্পত্য কলহ লেগেই আছে, কোনোক্রমেই পিছু ছাড়ছে না । এজন্য আমরা দুজনে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি ।” উকিল ডানে বামে মাথা নেড়ে বলল, “না, কেবল দাম্পত্য কলহের জেরেই তো ডিভোর্সটা হতে পারে না, কলহ তো সব দম্পতির মাঝেই বিরাজমান, রাগের বশেই সবাই এই সিদ্ধান্ত নেন বটে, তবে সেটাও নববিবাহিত দম্পতিরা । আর আপনাদের এতোদিনের সংসার, প্রায় ত্রিশ বছরের হবে, এখন আপনারা যদি এগুলো ভাবেন, তাহলে কি করে হয় বলুন?” পুষ্পিতা ভয় পেয়ে গেলো । মনে মনে বললো, “হায় হায়! এখন যদি এই মুহূর্তে এসে ডিভোর্স না হয় আমাদের!” গালিব কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো, কিন্তু তার আগেই পুষ্পিতা বলে উঠলো, “আসলে স্যার! আমার স্বামি আরেকটা মহিলাকে ভালোবাসে! তাই আমি এই ডিভোর্সটা চাই!” গালিব ভ্রু কুঁচকে পুষ্পিতার দিকে তাকালো । উকিল অবাক হয়ে বলল, “সেকি গালিব ভাই! আপনাকে আমি ভালো জানতাম, আর আপনিই কিনা………! ছি ছি! ভাবি, আপনি চাইলে গালিবের বিরুদ্ধে আইনি ব্যাবস্থা নিতে পারেন তো!” পুষ্পিতা বলল, “না না, আমি শুধু ডিভোর্সই চাই, আর কিছু না ।” গালিব পুষ্পিতার দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমাকে বাচাতে আমি সত্যিটা বললাম না, আর তুমি আমার ওপর অপবাদ দিয়ে দিলে? এতোটা নিচে নামবে তুমি আমি ভাবতে পারিনি ।” তারপর গালিব উকিলের দিকে তাকিয়ে বলল, “ভাই, আপনি ডিভোর্সের সবকিছু প্রস্তুত করুন, তবে হ্যাঁ, ও যে কারণটা বলল, সেটা আসল কারণ নয় , আসল কারণ আমি জানাতেও চাই না । তবে আমাদের এই কথোপকথনের মাধ্যমে নিশ্চয়ই আপনি বুঝে গেছেন, আমাদের মাঝে ডিভোর্সটা কতোটা দরকার!” উকিল বলল, “হ্যাঁ, তা বুঝতে পেরেছি । ঠিক আছে, আপনারা আজ আসুন, আমি সব কিছু প্রস্তুত রেখে পরশু আপনাদের ডাকবো । আর সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে পরশুই আপনাদের ডিভোর্স হবে ।” গালিব “ধন্যবাদ, আসসালামু আলাইকুম ।” বলে উঠে বেড়িয়ে আসতে লাগলো । লোকটা সালামের জবাব দিলো । পুষ্পিতাও সাথে বেরোলো । বেরোনোর সময় পুষ্পিতা গালিবকে বলল, “সরি! আমি আসলে ওভাবে বলতে চাই নি!” গালিব পুষ্পিতার কথার কোনো জবাব দিলো না ।

আগামী পর্বেঃ
মনে মনে গালিব নিজে নিজেকে বলল, “এতো সকালে আবার কে এলো!” এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলতেই গালিব অবাক । দেখলো, দাঁড়িয়ে লুনা, কুলসুম, শামসু আর মিজান । গালিব জিজ্ঞেস করলো, “মা! বাবা! আম্মা! আব্বা! আপনারা?” কুলসুম জিজ্ঞেস করলো, “এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নিচ্ছিস আমাদের না জানিয়েই?” লুনা বলল, “আমাগোরে এল্লা জানাইবানা জামাইবাবাজি?”
×
বাবা(পর্ব-১১০)

পরদিন মঙ্গলবার । সকালে অফিসে যাবার জন্য রেডি হচ্ছিলো গালিব, এমন সময় দরজায় কলিংবেলের আওয়াজ । মনে মনে গালিব নিজে নিজেকে বলল, “এতো সকালে আবার কে এলো!” এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলতেই গালিব অবাক । দেখলো, দাঁড়িয়ে লুনা, কুলসুম, শামসু আর মিজান । গালিব জিজ্ঞেস করলো, “মা! বাবা! আম্মা! আব্বা! আপনারা?” কুলসুম জিজ্ঞেস করলো, “এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নিচ্ছিস আমাদের না জানিয়েই?” লুনা বলল, “আমাগোরে এল্লা জানাইবানা জামাইবাবাজি?” গালিব জিজ্ঞেস করলো, “না, এখনও কিছু হয় নি তাই বলিনি ।” মিজান বলল, “হওয়ার দেরি কি আছে জামাই? কই? আমার হতচ্ছাড়ি কই?” বলে ভেতরে গেলো লুনা আর মিজান । কুলসুম আর শামসু গালিবকে নিয়ে ড্রইং রুমে বসলো । কুলসুম জিজ্ঞেস করলো, “তুই যা করছিস সব ভেবে চিনতে করছিস তো?” গালিব বলল, “হ্যাঁ মা, সব ভেবে চিনতেই করছি ।” শামসু বলল, “শোন বাবা! তোর বড় ছেলের বিয়ে হয়েছে, আরেক ছেলের বিয়ের সময় এসেছে, আরেক মেয়ের পুরো জীবনই তো এখনও পড়ে আছে, তোদের কি মনে হয় এখন এরকম একটা সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে?” গালিব বলল, “বাবা, আমিও ওদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেছি, আমারও ইচ্ছে ছিলো না এই ডিভোর্সটা নেবার । কিন্তু………” কুলসুম জিজ্ঞেস করলো, “কিন্তু? কিন্তু কি?” গালিব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “তোমরা তো মা বাবা, তোমাদের কাছে বলাই যায় । আসলে ওই, মানে পুষ্পিতাই, ডিভোর্সের জন্য এতো পাগল হয়ে গেছে, যে গতকাল অফিসে দারোয়ানের কাছে ডিভোর্সের লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়ে গেছে ।” কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো শামসু আর কুলসুম দুজনেই । কুলসুম বলল, “বউমাকে একটু বুঝা! তাহলেই তো হয়!” গালিব মায়ের হাত ধরে বলল, “অনেক বুঝিয়েছি মা, কোনো লাভ হয় নি । যতোই হোক, উলুবনে মুক্তো ছড়িয়ে তো লাভ নেই, আমি ভাবলাম ডিভোর্সটাই দুজনের জন্যই ভালো হবে ।”
“তুই এইডাকি ঠিক করতাছোস?” পুষ্পিতার পাশে এসে কথাটা বলল লুনা । পুষ্পিতা বলল, “হ্যাঁ মা, আমি একদম ঠিক করছি ।” মিজান বলল, “ভালো কইরা ভাইবা দ্যাখ মা! তোর পোলাপাইনদের কথাটাও তো ভাব!” পুষ্পিতা বলল, “দ্যাখো বাবা, এই রিলেশনটা আমার আর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়!” লুনা বলল, “তাই বইলা ডিভোর্স কতো বড় আর খারাপ একখান সিদ্ধান্ত জানোস? শয়তানে সবচেয়ে বেশি খুশি হয় একখান দম্পতির মধ্যে ডিভোর্স করাইয়া! তোদের দিয়াও শয়তান তাই করাইতেছে!” পুষ্পিতা বলল, “দ্যাখো মা, এখন আমি এতো জ্ঞান শুনতে চাই না । আমি একজন স্বাধীন নারী, আমি যা খুশি তাই করতে পারি!” কথা শুনে হাসলো মিজান । পুষ্পিতা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, “তুমি আমার কথায় হাসছো?” মিজান বলল, “মা রে, একজন স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিকরেও দেশের কিছু নিয়ম কানুন মানতে হয় । একজন দেশের মালিক, রাষ্ট্রপতি, তারেও কিছু নিয়মকানুন মাইনা চলতে হয় । একজন বাড়িওয়ালা, পুরা বাড়িই যার, তারেও বাড়িতে থাকতে কিছু নিয়ম কানুন মাইনা চলতে হয়ে । তেমনি একজন নারী, অবশ্যই সে স্বাধীন, তার যা খুশি করার অধিকার আছে, কিন্তু তাই বইলা এমন কিছু করার অধিকার তার নাই, যেইটা নিয়ম বহির্ভূত । তুই এহন নিয়ম বহির্ভূত একখান কাম করতাছোস, আমি আর তোর মা তোরে মানা করছি, আর কিছু করার আমাগো সামর্থ্য নাই । তুই আর ছোট নাই যে তোরে মাইরা পিটাইয়া বুঝামু । তোর এহন নিজের বোঝার ক্ষমতা হইছে, ভালো কইরা ভাইবা কাম করিস ।” এরপর মিজান লুনাকে বলল, “চলো যাই, আমাগো এইহানে আইসা কোনো লাভই হয় নাই ।” বলে উঠে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো লুনা আর মিজান ।
“মা! বাবা! পড়ে কথা হবে এ নিয়ে, আমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে, আমি যাচ্ছি ।” বলে উঠে অফিসের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে গেলো গালিব । কুলসুম আর শামসু হতাশ হয়ে বসে পড়লো । লুনা আর মিজান এলো সেখানে । লুনা কুলসুমকে বলল, “দোস্ত, যাইগা । আমার মনে হয় না কোনো লাভ হইবো ।” কুলসুম বলল, “আরে! তাই বলে চলে যাবি! এতো কষ্ট করে এসেছিস, এখানে দু-একটা দিন থেকে যা!” মিজান বলল, “না ভাবি, পোলাপাইনগুলা বড় হইছে, আমাগো কথা কি আর হোনে?” শামসু বলল, “ভাই, ভাবি, ডিভোর্স পর্যন্ত অন্তত থেকে যান, এখনও তো ডিভোর্স হয় নি, হয়তো তার আগে আমরা ওদের বোঝাতে পারবো আর মন ডিভোর্স থেকে সরিয়ে আনতে পারবো!” লুনা আর মিজান কিছু বলল না । তবে শামসু আর কুলসুমের কথাটা শুনে খানিকটা আশ্বস্ত হলো ।
“শোনো! তোমার মা বাবা, শ্বশুর শাশুড়ি তোমাকে অনেক জোড় করবে, এই ডিভোর্সটা না নিতে, কিন্তু তুমি ওদের মিষ্টি মিষ্টি কথায় মন ঘোরাবে না! বুঝেছো?” ভিডিও কলে পুষ্পিতাকে কথাটা বলল সাজু । পুষ্পিতা বলল, “আমি না হয় মন ঘোরালাম না, কিন্তু অনিকের বাবা? ও যদি মন ঘোরায়?” সাজু বলল, “তাকে নিয়ে আমার ভয় নাই । তুমি মন না ঘোরালে আমার মনে হয় না উনিও মন ঘোরাবে । আর তাও যদি মন উনার ঘুরে যায়, তাহলে………।” থেমে গেলো সাজু । পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “তাহলে? তাহলে কি?” সাজু বলল, “তাহলে ডিভোর্স ছাড়াই তোমাকে আমি বিয়ে করে ফেলবো!” পুষ্পিতা বলল, “সাজু! কি আজেবাজে কথা বলছো!” সাজু বলল, “আরে! হয়তো, হয় না? এই যে নাসির তামিমার হলো, না হয় সেরকম আরেকটা ঘটনা ঘটলোই, তোমার আমার বিয়ে!” সাজুর কথাগুলো অবাক হতে লাগলো পুষ্পিতা । ভয় করতে শুরু করলো । কোনো বিপদে পড়তে যাচ্ছে না তো সে?

আগামী পর্বেঃ
নিজের ঘরে একাকি বসে আছে পুষ্পিতা । নিজে নিজেকে বলছে, “সাজুকে আমি অনেক ভালোবাসি । আর গালিব আমার সন্তানদের বাবা । ওর প্রতি একটু হলেও আমার ভালোবাসা ছিলো । এতোদিন সাজুকে পাবার খুশিতো বেশ ছিলো, কিন্তু এখন ওদের বাবাকে ছাড়তে আমার কেমন লাগছে ।”
……………………………
রাস্তায় তাকিয়ে দেখলো, এক লোক আর তার স্ত্রী তাদের ছেলের হাত ধরে হাসতে হাসতে নিয়ে যাচ্ছে । সেটা দেখে গালিব নিজে নিজেকে বলল, “অনিক যখন প্রথম হলো, আমি আর অনিকের মা-ও এরকম একসাথে হেটেছি । আমার এক হাত অনিকের এক হাতে, অনিকের মায়ের এক হাত অনিকের অন্য হাতে । আর আজ আমার আর অনিকের মায়ের ডিভোর্স হতে চলেছে ।”
×
বাবা(পর্ব-১১১)

সন্ধ্যার কথা । ছাদে বসে অর্ক আর রাফিদ । অর্কর খুব খারাপ লাগছে । রাফিদকে কষ্টের সাথে বলল, “ভাই! বিশ্বাস কর! ডিপ্রেশন আমাকে চেপে ধরছে! বাসার এসব আর ভালো লাগছে না! কাল নাকি মা বাবার ডিভোর্স হবে । ভাবা যায়?” রাফিদ বলল, “ব্যাপারটা সত্যিই দুঃখজনক । কিন্তু করার কি আছে বল? দুজন অ্যাডাল্ট মানুষের ডিসিশন!” অর্ক বলল, “তাতে কি হয়েছে? উনারা আমাদের মা বাবা । ছেলে মেয়েদের আবদার শুনতে উনারা বাধ্য । কিন্তু আমি উনাদের কাছে কোনো আবদার করবো না । কারণ মা যেটা করলো, তারপর আমার আর মনে হয় না বাবা মায়ের সাথে সুখে থাকবে ।” রাফিদ বলল, “আসলেই । আন্টি এমন কিছু একটা করবে ভাবতেই পারিনি!” অর্ক বলল, “খুব খারাপ লাগছে রে! এজন্যই বলি, মা বাবা ডিভোর্স হয়ে যাওয়া ছেলেমেয়ে গুলো নষ্ট হয়ে যায় কেনো ।” রাফিদ অর্কর হাত ধরে বলল, “কন্ট্রোল ভাই! সব ঠিক হয়ে যাবে দেখিস! আর আঙ্কেল আন্টি আলাদা হচ্ছেন, তোরা তো সারাজীবনই উনাদের ছেলেমেয়েই থাকবি ।” অর্ক একটা হতাশার শ্বাস ফেললো । কিছু বলল না । রাফিদ বলল, “এই যে, তোর মতো অনিক ভাই, আরশি, ওদেরও কষ্ট হচ্ছে………।” রাফিদের কথা শেষ হওয়ার আগেই অর্ক বলল, “আরশির কথা বলিস না ভাই! বাবা মায়ের ডিভোর্স-এর পেছনে ওর অনেক অবদান আছে । ও কষ্টে না, আনন্দে আছে । নতুন বাবা পাবে, বড়োলোক বাবা ।” রাফিদ বলল, “আচ্ছা, ঠিক আছে! তুই তো শান্ত হ!” অর্ক আর কিছু বলল না ।
“কেমন যেনো লাগছে বুঝছো! ইচ্ছে করছে মা বাবাকে আটকাই, কিন্তু পারছি না ।” পপিকে বলল অনিক । পপি অনিকের কাধে হাত রেখে বলল, “শোনো, আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন, হয়তো এর মধ্যে কোনো কিছু ভালো হবে ।” অনিক বলল, “কি ভালো হতে পারে! আমি তো সেটাই বুঝতে পারছি না!” পপি বলল, “সব কিছুর ভালো খারাপ তো আগে থেকেই বোঝা যায় না, সময় হলে প্রকাশ পায় । তো ধৈর্য ধরো!” অনিক ওপর নিচে মাথা নেড়ে বলল, “হুম! ঠিক বলেছো! আমার এখন ধৈর্য ধরা উচিৎ!”
“উফ! আমি এখন ড্যাডিস প্রিন্সেস হবো!” নিজের ঘরে আনন্দের সাথে নিজেই নিজেকে কথাগুলো বলছিলো আরশি । “সাজু বাবা নিশ্চয়ই আমাকে অনেক ভালোবাসবে! আমাকে সব কিনে দেবে! আমি সেগুলো আমার বান্ধবীদের দেখাবো! উফ! কি যে ভালো লাগছে! কাল একবার মা বাবার ডিভোর্সটা হয়ে যাক! তারপর সাজু আঙ্কেলের সাথে মায়ের বিয়ে হয়ে যাক! তারপর আমার বিলাসবহুল জিবনযাপন শুরু!” বলে বিছানায় ঠোঁটের কোণে বিরাট আনন্দের হাসি নিয়ে শুয়ে পড়লো আরশি ।
“নাহ! আমরা আর কিছু করতে পারলাম না!” কথাটা বলল লুনা । একটা রুমে লুনা, মিজান, কুলসুম আর শামসু বসে আছে । লুনার কথা শুনে কুলসুম বলল, “দোস্ত! যাই হয়ে যাক! আমাদের বন্ধুত্ব কিন্তু অটুট থাকবে!” মিজান বলল, “আল্লাহ! এইরহম একখান দিনযে দেখতে হইবো, আমি কল্পনাও করি নাই!” শামসু বলল, “এখন আমাদের ধৈর্য ধরা ছাড়া আর কিচ্ছু করার নেই ।”
নিজের ঘরে একাকি বসে আছে পুষ্পিতা । নিজে নিজেকে বলছে, “সাজুকে আমি অনেক ভালোবাসি । আর গালিব আমার সন্তানদের বাবা । ওর প্রতি একটু হলেও আমার ভালোবাসা ছিলো । এতোদিন সাজুকে পাবার খুশিতো বেশ ছিলো, কিন্তু এখন ওদের বাবাকে ছাড়তে আমার কেমন লাগছে । আমার কি এখন নিজের ডিসিশন ঘুরিয়ে নেয়া উচিৎ?” কিছুক্ষণ ভাবলো পুষ্পিতা । তারপর মনে পড়ে গেলো সাজুর কথা । সাজু পুষ্পিতাকে যাই ঘটুক না কেনো মন ঘোরাতে মানা করেছে । পুষ্পিতা মনে মনে বলল, “না, কাল ডিভোর্সটা হয়ে যাক, তারপর যা হবার হবে ।”
নিজের ঘরের বারান্দায় বসে আছে গালিব । রাস্তায় তাকিয়ে দেখলো, এক লোক আর তার স্ত্রী তাদের ছেলের হাত ধরে হাসতে হাসতে নিয়ে যাচ্ছে । সেটা দেখে গালিব নিজে নিজেকে বলল, “অনিক যখন প্রথম হলো, আমি আর অনিকের মা-ও এরকম একসাথে হেটেছি । আমার এক হাত অনিকের এক হাতে, অনিকের মায়ের এক হাত অনিকের অন্য হাতে । আর আজ আমার আর অনিকের মায়ের ডিভোর্স হতে চলেছে । পুষ্পিতা যদি এতোটাই নাছোড়বান্দা না হতো, আমি হয়তো ওকে কোনোভাবে মানিয়ে নিতাম । কিন্তু এতো জোড়াজুড়ি করছে, আমি আর পারছি না । তার ওপর ও যদি সাজু নামের ছেলেটার সাথে ডিভোর্স ছাড়াই বিয়ে করে ফেলে!” কথাটা ভাবতেই বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো গালিবের । তারপর ঘরে ঢুকে বিছানায় শুয়ে পড়লো । তারপর নিজে নিজেকে বলল, “না না, সেরকম কিছু যদি ও করে ফেলে, তাহলে ও, আমাদের কারও মান সম্মান থাকবে না । তার চেয়ে না হয় ওকে ডিভোর্স দিয়ে দেই । এরপর ও যা খুশি করুক, আমার ছেলে মেয়েদের ওপর তার কোনো প্রভাব পড়বে না । তবে কেনো যেনো খুব কষ্ট হচ্ছে । যতই হোক, ত্রিশ বছরের সংসার এক রাতেই কি ভুলে যাওয়া যায়?”

আগামী পর্বেঃ
গালিব ডাকলো, “কি হলো এসো?” পুষ্পিতা গালিবের কথা শুনেও উঠলো না । গালিব আবার নিচে নেমে এলো জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে?” পুষ্পিতা বলল, “জানি না, কিন্তু আমার মন একটা দোটানায় পড়ে গেছে ।” গালিব জিজ্ঞেস করলো, “কি ব্যাপারে?” পুষ্পিতা বলল, “তোমায় ডিভোর্স দেবো কি দেবো না এই ব্যাপারে ।” গালিব বলল, “পুষ্পিতা, এখনও তোমাকে আমি বলছি, এই ডিভোর্সটা দেবে কি দেবে না! আরেকবার ভেবে নাও!” পুষ্পিতা বলল, “হ্যাঁ! আমি এই ডিভোর্স দিতে চাই না! আমি তোমার সাথেই বাকি জীবন কাটাতে চাই!” গালিবের চোখে মুখে হাসি ফুটে উঠলো । পুষ্পিতার চোখে মুখেও হাসি ফুটে উঠেছে । গালিব পুষ্পিতা একে অপরকে জড়িয়ে ধরলো ।
×
বাবা(পর্ব-১১২)

পরদিনের কথা । আজ বুধবার । সকাল ১০টায় উকিল ওদের অফিসে যেতে বলেছে । ডিভোর্সের সব পেপার রেডি । সাইন হলেও অফিসিয়ালি ওদের ডিভোর্স হয়ে যাবে । গালিব আর পুষ্পিতা ৮টা বাজতেই উঠে পড়েছে । সকালের নাস্তা করার জন্য টেবিলের বসলো । পুষ্পিতা খাবার বেড়ে দিতে চাইলেও গালিব নিলো না । নিজে নিজেই নিলো । ডালের পাতিলটা একটু দূরে থাকায় গালিব নিতে পারছিলো না । পুষ্পিতা সেটা এগিয়ে দিলো । গালিব সেটা নিয়ে বলল, “আমার জন্য ত্রিশটা বছর যা করেছো, এর জন্য অনেক ধন্যবাদ । কিন্তু এখন করার কোনো দরকার নেই । একটু পর থেকে এমনিতেও আমার সব কাজ নিজেকে করতে হবে ।” পুষ্পিতা আর কিছু বললো না । খাওয়া দাওয়া শেষে বেরোনোর সময় লুনা ডেকে উঠলো । “দাড়াও!” গালিব আর পুষ্পিতা দাঁড়িয়ে গেলো । পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো, বাড়ির সবাই দাড়িয়ে । যতদুর ওদের মনে হয়, রাতে কারও ঘুম হয় নি । তাছাড়া এতো সকালে কেউ ওঠে না । লুনা বলল, “জামাইবাবা! আমার মাইয়া যা করছে, এর পরে তোমারে এই কামে বাধা দেয়ার মতো সাহস আমার নাই । তবু তুমি ওরে তালাক দাও নাই, ও নিজে থেইকা তোমারে তালাক দিতেছে, এরপর তো আমি আরও তোমারে কিছু কইতে পারি না । তয় তাও, নিজের লজ্জা খুন কইরা বলতাছি! পারলে আরেকবার ভাইবো!” গালিব লুনার হাত ধরে বললো, “আম্মা! আপনার মেয়ে আমার স্ত্রী থাকুক, আর না থাকুক, আপনি আমার আম্মা সারাজীবন থাকবেন ।” লুনা কিছু বলল না । অনিক বলল, “মা! বাবা! আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আরেকবার ভেবে দেখো! প্লিজ!” গালিব আর পুষ্পিতা আলতো করে মাথাটা ডানে কাত করলো, মুখে কিছু বলল না । অর্কর চোখে জল । কিন্তু এদিকে আরশির ঠোঁটের কোণ হাসি । সে পুষ্পিতাকে বলল, “ডিভোর্স হয়ে আসার সাথে সাথে তোমাকে আমি এক জায়গায় নিয়ে যাবো!” পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “কোথায়?” আরশি বলল, “আসো তো আগে! তারপর দেইখো!” পুষ্পিতা কিছু বলল না । গালিব বলল, “মা! বাবা! আম্মা! আব্বা! আসি!” লুনা, কুলসুম, শামসু, মিজান একসাথে বলল, “সাবধানে যাইও বাবা!” এরপর পুষ্পিতাও বলল, “আমিও আসি!” কেউ ওর কথার কোনো জবাব দিলো না ।
নিচে নেমে গালিব ট্যাক্সি ডাকলো । পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “ট্যাক্সি ডাকলে কেনো, মোটরসাইকেলেই তো যেতে পারতাম!” গালিব বলল, “মোটরসাইকেলে যেতে পারলেও আসতে পারতাম না । আর তাছাড়া আসার সময় তুমি আলাদা ট্যাক্সিতে, আমি আলাদা ট্যাক্সিতে ।” বলে ট্যাক্সিতে উঠে বসলো গালিব । পুষ্পিতা মনে মনে বলল, “আল্লাহ! আমার প্রচণ্ড অস্থির লাগছে! কি করবো আমি!”
ট্যাক্সিতে করে দুজনে যেতে লাগলো । গালিব ওর পাশের জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে । একবারের জন্যও পুষ্পিতার দিকে তাকাচ্ছে না । পুষ্পিতা মাঝে মাঝেই আড়চোখে গালিবের দিকে তাকাচ্ছে । মনে মনে সে বলল, “মানুষটা কখনও ভুল ছিলো না । আমার বাড়ির বউ হিসেবে যেসব দায়িত্ব পালনের কথা ছিলো, সেগুলোও করতাম না, সব তো চামেলি করতো । এখনও তাই করে । নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী যা আয় করতো, মানুষটা আমাকে তাই-ই দিতো । এমনকি আমার ওর পকেট থেকে টাকা চুরি করতাম জেনেও মানুষটা আমাকে কিছু বলে নি । আর আমি মানুষটাকে এতো বড় একটা কষ্ট দিতে যাচ্ছি!”
কিছুক্ষণের মধ্যেই ট্যাক্সি এসে দাঁড়ালো উকিলের অফিসের সামনে । গালিব ভাড়াটা দিয়ে নামলো । পুষ্পিতাও নামলো । সিড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে লাগলো গালিব । কিছুদূর ওঠার পর টের পেলো, পুষ্পিতা উঠছে না । পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো, পুষ্পিতা নিচে দাড়িয়েই রয়েছে । গালিব ডাকলো, “কি হলো এসো?” পুষ্পিতা গালিবের কথা শুনেও উঠলো না । গালিব আবার নিচে নেমে এলো জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে?” পুষ্পিতা বলল, “জানি না, কিন্তু আমার মন একটা দোটানায় পড়ে গেছে ।” গালিব জিজ্ঞেস করলো, “কি ব্যাপারে?” পুষ্পিতা বলল, “তোমায় ডিভোর্স দেবো কি দেবো না এই ব্যাপারে ।” গালিব বলল, “পুষ্পিতা, এখনও তোমাকে আমি বলছি, এই ডিভোর্সটা দেবে কি দেবে না! আরেকবার ভেবে নাও!” পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “যদি না দেই, তবে তুমি আমায় আবার আপন করে নেবে তো?” গালিব বলল, “আমি তোমাকে কখনই পর করিনি পুষ্পিতা! পর তুমি আমাকে করেছো! তুমি তোমায় সুযোগ দিচ্ছি, তুমি কি ডিভোর্সটা বাতিল করতে চাও?” পুষ্পিতা বলল, “হ্যাঁ! আমি এই ডিভোর্স দিতে চাই না! আমি তোমার সাথেই বাকি জীবন কাটাতে চাই!” গালিবের চোখে মুখে হাসি ফুটে উঠলো । পুষ্পিতার চোখে মুখেও হাসি ফুটে উঠেছে । গালিব পুষ্পিতা একে অপরকে জড়িয়ে ধরলো । এ যেনো কত আনন্দের একটা মুহূর্ত । কিন্তু এমন সময় হঠাৎ, “কি হলো!” শব্দ শুনে হুঁশ ফিরলো পুষ্পিতার । দেখলো, সে এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসব কল্পনা করছিলো । আর শব্দটা এসেছে সিঁড়ি থেকে, গালিব ওকে ডেকেছে । তারপর “তাড়াতাড়ি আসো!” বলে গালিব ওপরে উঠে গেলো । পুষ্পিতাও আর কিছু না ভেবে ওপরে উঠে গেলো ।
উকিলের অফিসে এসে পাশাপাশি বসলো দুজনে । বেশ কিছু কাগজপত্র সামনে দিয়ে বলল, “এখানে গালিব ভাই, আর এখানে পুষ্পিতা আপা, আপনাদের সই করিয়ে দিন ।” প্রথমে গালিব সই করলো । হাতে ওর কলম কাঁপছিল, কিন্তু কি করে যেনো নিজেকে সে সামলে নিয়েছে । সব কটা কাগজে সই হয়ে গেলে কাগজটা পুষ্পিতার কাছে দিলো গালিব । পুষ্পিতা কাগজ নিলো, কলমটা নিয়ে গিয়ে পড়ে গেলো । কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইলো । তারপর উঠে কলমটা হাতে নিলো । জায়গা মতো কলমের নিবটা রাখলেও সই সে করতে পারছে না । উকিল বলল, “আপা প্লিজ তাড়াতাড়ি করুন! আমার আরও অনেক কাজ আছে, আদালতে যেতে হবে আবার! তাড়াতাড়ি করুন!” অবশেষে পুষ্পিতা সই করলো । একে একে সব কাগজে সই করার পর এবার শেষ কাগজ । এটাতে সই হলেই সব সম্পর্ক শেষ । একটা কাগজের কলমের আঁচড় এভাবেই শেষ করে দেয় একটা সম্পর্ক ভাবতেই অবাক লাগলো পুষ্পিতার । অনেক মনের জোড় নিয়ে সে করলো সইটা । তারপর উকিল বলল, “আজ থেকে অফিশিয়ালি আপনাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে, আজ থেকে আপনারা স্বামী স্ত্রী নন!” গালিব আর পুষ্পিতা শেষবারের মতো দুজন দুজনের দিকে তাকালো ।

আগামী পর্বেঃ
সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলো গালিব । পেছন পেছন পুষ্পিতা । নিচে নেমে পুষ্পিতা গালিবকে ডাকলো, “অনিকের বাবা!” গালিব পুষ্পিতার দিকে না তাকিয়ে বলল, “ভাবি, জি আমি অনিকের বাবা, কিন্তু আপনি আমাকে ভাই করে ডাকলে খুশি হবো, ওভাবে আমার স্ত্রী ডাকে তো!” পুষ্পিতা হালকা রাগ দেখিয়ে বলল, “প্লিজ এখন ন্যাকামি কোরো না! এখন আমাদের দুজনেরই মনের অবস্থা ভালো নেই!” গালিব বলল, “মন খারাপ করালেন আপনি, আর যখন আপনার উদ্দেশ্য সফল হলো, তখন ন্যাকামি করছি আমি! বাহ!”
×
বাবা(পর্ব-১১৩)

“আল্লাহ! আমার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না!” কথাটা বলল কুলসুম । বাসার সবাই একসাথে ড্রইং রুমে বসে টেনশন করছে । পপি বলল, “দাদি, টেনশন করবেন না! আর এখন টেনশন করেই কোনো লাভ নেই ।” অনিক বলল, “হ্যাঁ, সেটাই, হয়তো এতোক্ষনে যা হবার সব হয়ে গেছে ।” অর্ক বলল, “আজ মায়ের জন্য আমাদের সবার এই হাল ।” আরশি অন্য রুমে ছিলো । হঠাৎ হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে ড্রইং রুমের দিকে আসায় অর্কর কথা শুনে ফেললো সে । বলল, “শোন! শোন! আমার মায়ের কোনো দোষ নেই! সে একটা স্বাধীন জীবন ডিজার্ভ করে!” অর্ক জিজ্ঞেস করলো, “তুই-ই বল! এই পরিবারে মায়ের কোন স্বাধীনতাটা ছিলো না!” আরশি বলল, “এই শোন! বেশি বাবা ঘেঁষা হোস না! বাবা আয় করে তো, এজন্যই তো তুই বাবার সঙ্গ দিবি!” অনিক তখন বলে উঠলো, “আর ওই সাজু নামের লোকটা বাবার চেয়ে বেশি টাকার মালিক বলে তুই তার সাথে মায়ের বিয়ে দিবি, তাই তো!” আরশি তখন প্রচণ্ড রেগে গেলো । একটা শোপিসের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো আরশি, সেটা হাতে নিয়ে একটা আছাড় দিয়ে বলল, “বাজে কথা বলবি না আমার নামে!” অনিক চোখ বড়ো বড়ো করে রাগান্বিত স্বরে বলল, “এই তুই চুপ কর! বাজে কাজ তুই করেছিস তাই বাজে কথা তোকে বলেছি!” আরশি তখন, “বেশ করেছি! শ্রীময়ি দেখিস নি! রোহিত সেনকে বিয়ে করেছে! আমার মা-ও তেমনি সাজু আঙ্কেলকে বিয়ে করবে! বুঝেছিস! বিলাসবহুল জীবনযাপন করবে! আর আমি হবো উনাদের মেয়ে! মিস্টার গালিবের মেয়ে হয়ে আমি থাকতে চাই না!” বলে বেড়িয়ে গেলো বাসা থেকে । মিজান বলল, “আল্লাহ! আমার মাইয়ারে আমিই সাপোর্ট করতাছি না! আর এই মাইয়া ওর মারে ক্যামনে সাপোর্ট করতাছে!” অর্ক বলল, “সাপোর্ট কি বলছেন নানা! আমার তো মনে হয় ওই মাকে ভড়কে দিয়েছে!” পপি বলল, “আর সিরিয়ালগুলো এ দুজনকে ভড়কে দিয়েছে । এই হলো বিনোদনকে কেবল বিনোদন হিসেবে না দেখে খারাপভাবে দেখার ফল ।” লুনা বলল, “কোনো কল টল তো দিলো না ওরা! অর্ক বাবা! তুমি এল্লা কল দিয়া দ্যাহো না!” অর্ক বলল, “জি নানি, আমি কল করছি ।”
সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলো গালিব । পেছন পেছন পুষ্পিতা । নিচে নেমে পুষ্পিতা গালিবকে ডাকলো, “অনিকের বাবা!” গালিব পুষ্পিতার দিকে না তাকিয়ে বলল, “ভাবি, জি আমি অনিকের বাবা, কিন্তু আপনি আমাকে ভাই করে ডাকলে খুশি হবো, ওভাবে আমার স্ত্রী ডাকে তো!” পুষ্পিতা হালকা রাগ দেখিয়ে বলল, “প্লিজ এখন ন্যাকামি কোরো না! এখন আমাদের দুজনেরই মনের অবস্থা ভালো নেই!” গালিব বলল, “মন খারাপ করালেন আপনি, আর যখন আপনার উদ্দেশ্য সফল হলো, তখন ন্যাকামি করছি আমি! বাহ!” আর কিছু না বলে গালিব একটা ট্যাক্সি ডেকে চলে গেলো । পুষ্পিতা মনে মনে বলল, “আল্লাহ! কেমন যে লাগছে আমার!” এমন সময় আরশির ডাক শুনলো পুষ্পিতা, “মা!” পেছন ফিরে তাকিয়ে আরশিকে দেখলো সে । আরশি কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো, “মিস্টার গালিবের সাথে সম্পর্ক শেষ?” পুষ্পিতা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে ধমকের স্বরে বলল, “ভালোভাবে কথা বল! উনি তোর বাবা! আর আমার সাথে সম্পর্ক শেষ হলেই তোর সাথে উনার সম্পর্ক কিন্তু নষ্ট হয় নি!” আরশি বলল, “ওসব বাদ দাও! এবার চলো আমার সাথে!” পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “কোথায়?” আরশি বলল, “আরে! চলোই তো! তোমাকে তো আগেই বলেছিলাম, যে তোমাকে এক জায়গায় নিয়ে যাবো ।” পুষ্পিতা বলল, “ঠিক আছে চল ।” তারপর পুষ্পিতা আর আরশি ট্যাক্সি নিয়ে চলে গেলো ।
“হ্যা অর্ক বল!” ট্যাক্সিতে থাকাকালীন অর্কর কল এলো গালিবের ফোনে । কল ধরে অর্ককে কথাটা বলল গালিব । অর্ক জিজ্ঞেস করলো, “বাবা! ওদিকের কি অবস্থা!” গালিব বলল, “শেষ, মিসেস পুষ্পিতার সাথে আমার বিবাহবিচ্ছেদ সম্পন্ন হয়েছে ।” কথাটা শুনে অর্কর হ্রিদস্পন্দন বেড়ে গেলো । প্রচণ্ড ভয় পেলো সে । কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো, তার এমন লাগছে, বাবার না জানি কেমন লাগছে । জিজ্ঞেস করলো, “বাবা! তুমি ফিরছো তো? কতক্ষণ লাগবে বাসায় ফিরতে?” গালিব বলল, “আমি আপাতত ফিরছি না, অফিসে যাচ্ছি ।” অর্ক জিজ্ঞেস করলো, “আজও অফিস করবে?” গালিব বলল, “হ্যাঁ, কাজের ভেতর থাকলে নিজেকে কষ্ট থেকে দূরে রাখতে পারবো ।” অর্ক বলল, “যাক, তাহলে স্বীকার করলে তুমিও কষ্টে আছো!” গালিব কিছুক্ষণ চুপ থেকে “আচ্ছা! আমি রাখছি!” বলে কল কেটে দিলো । অর্ক “হ্যালো! বাবা!” করে ডাকলো, কিন্তু কল ততোক্ষণে কেটে গেছে । লুনা জিজ্ঞেস করলো, “কি হইছে?” অর্ক চুপ । অনিক জিজ্ঞেস করলো, “কিরে? কি হয়েছে বল?” অর্ক বলল, “সব শেষ! সম্পর্ক! বিয়ে! সব শেষ! মা বাবা আর একে অপরের স্বামী স্ত্রী নন ।” কথাটা শুনে বেশ কষ্ট পেলো সবাই । লুনা আর কুলসুম কেঁদেই ফেললো । শামসু দুজনকে শান্তনা দিয়ে বলল, “কেঁদো না কেঁদো না! দেখতে থাকো! আল্লাহ ওদের নতুন জীবনে কি রহমত দেন! এখনও ৯০ দিন আছে! হয়তো আবার এই ৯০ দিনে ওরা এক হতে পারবে!”

আগামী পর্বেঃ
এদিকে সিকিউরিটি গার্ড-ও যখন ওদের পথ আটকালো, আরশি শুধু বলল, “কোড জিরো জিরো নাইন ফোর!” সিকিউরিটি এই শুনেই ওদের ভেতরে ঢুকতে দিলো । পুষ্পিতা অবাক দৃষ্টিতে আরশির দিকে তাকিয়ে রইলো । তারপর লিফটের দিকে যেতে যেতে জিজ্ঞেস করলো, “কিরে! বাড়ির মালিক কি তুই নাকি? কোড বললি আর ঢুকে গেলি?”
×
বাবা(পর্ব-১১৪)

একটা বড় বিল্ডিং- এর সামনে আরশি আর পুষ্পিতার ট্যাক্সি এসে দাড়ালো । আরশি বলল, “মা নামো!” পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “এই জায়গায় কি করবি তুই?” আরশি বলল, “এতক্ষণ যখন জানালাম না, তখন এইটুকু না জেনে আমার সাথে চলো!” পুষ্পিতা আর কিছু বলল না । শুধু ডানে বামে মাথা নেড়ে “কি যে করছিস তুই!” বলে ট্যাক্সি থেকে নামলো । সামনের একটা বিল্ডিং-এ এসে দাড়ালো বিল্ডিংটা দেখেই বোঝা গেলো, ভিআইপি কারো বিল্ডিং । চারপাশে সিসি ক্যামেরা, সিকিউরিটি-ও বেশ জোড়দার । পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “এ কার বাড়ি নিয়ে এলি তুই আমাকে!” আরশি বলল, “আহ! চলোই না!’ পুষ্পিতা দেখলো, গেইটের পাশেই বাড়িওয়ালার নাম লেখা আছে কিন্তু কেনো যেনো সেটা কাগজ দিয়ে ঢাকা । পুষ্পিতা বেশ ঘাবড়ে যেতে লাগলো । এদিকে সিকিউরিটি গার্ড-ও যখন ওদের পথ আটকালো, আরশি শুধু বলল, “কোড জিরো জিরো নাইন ফোর!” সিকিউরিটি এই শুনেই ওদের ভেতরে ঢুকতে দিলো । পুষ্পিতা অবাক দৃষ্টিতে আরশির দিকে তাকিয়ে রইলো । তারপর লিফটের দিকে যেতে যেতে জিজ্ঞেস করলো, “কিরে! বাড়ির মালিক কি তুই নাকি? কোড বললি আর ঢুকে গেলি?” আরশি বলল, “আহ মা! কিসব যে বলো না! আমার বাড়ি হতে যাবে কি করতে! চলোই তো আগে! পৌঁছেই তো গেছি প্রায়!” লিফটে উঠলো আরশি আর পুষ্পিতা । পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “হ্যাঁ রে, সামনের ওই নেমপ্লেটে বাড়িওয়ালার নাম ঢাকা কেনো?” আরশি বলল, “আমার সাথে চলো! তারপর বুঝতে পারবে!” পুষ্পিতা ভ্রু কুচকে বলল, “ও! তার মানে আমার জন্যই ওটা ঢাকা! কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস আমাকে বল!” আরশি একটু থতমত খেয়ে বলল, “ইয়ে…মানে…যেখানে যাচ্ছি সেখানে যেয়ে তাকে জিজ্ঞেস করবো কেনো ঢাকা, খুশি?” পুষ্পিতা কিছু বলল না । তবে সে যে আরশির আচরণে সন্তুষ্ট নয় তা বোঝা যাচ্ছে । এতক্ষণ খেয়াল করে নি, কেবল খেয়াল করলো আরশি লিফটের আট নং বোতামে চেপেছে । অর্থাৎ ৯ তলা বা আট নং ফ্লোর । শীঘ্রই লিফটের আট নং ফ্লোরে পৌঁছে গেলো । দরজা খুলে যেতেই একটা পুরুষ কন্ঠের আওয়াজ, “সারপ্রাইজ!” লিফটের সামনে ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়ে দাড়িয়ে এক লোক । চিনতে ভুল হলো না পুষ্পিতার । এ তো সাজু!
“স্যার, প্রীতি ম্যাম আপনেরে ডাকতেছে ।” গালিবকে এসে বলল প্রীতির দারোয়ান । গালিব উঠে দাড়িয়ে প্রীতির রুমে গেলো । দরজার সামনে দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো, “আসবো?” প্রীতি বলল, “জি আঙ্কেল, আসেন!” গালিব ভেতরে ঢুকলো । তারপর প্রীতির অনুমতিতে বসলো । প্রীতি বলল, “আঙ্কেল আপনি ঠিক আছেন?” গালিব জিজ্ঞেস করলো, “সত্যি কথা বলতে কি, না । একটু খারাপই আছি । তবে অন্য সবার ডিপ্রেশনে আমি বলি, সব ঠিক হয়ে যাবে, শুধু ধৈর্য ধরতে হবে, তেমনি আমিও ধৈর্য ধরেই আছি । কিন্তু হঠাৎ এই কথা?” প্রীতি বলল, “না আসলে আঙ্কেল, গত কয়েকদিন আপনি ওভারনাইটে আসেন নি, তারপর আজও দেরি করে এলেন । কিছু হয়েছে?” গালিব চুপ হয়ে গেলো । প্রীতি বলল, “আঙ্কেল! আমি যখন ডিপ্রেশনে ছিলাম, আপনি তখন আমাকে ভালো থাকার পথ দেখিয়েছেন, আজ আপনি ডিপ্রেশনে আছেন, আমাকে বলুন, কি হয়েছে! আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো আপনাকে এই ডিপ্রেশন থেকে বের করার ।” গালিব মুচকি হেসে বলল, “অনেক ধন্যবাদ । তোমাকে আমি আমার কষ্টের কথা বলছি, কিন্তু আমার মনে হয়ে না সেই কষ্ট তুমি ঠিক করতে পারবে । হ্যাঁ, কমাতে পারবে, ঠিক করতে পারবে না ।” প্রীতি জিজ্ঞেস করলো, “এমন কি হয়েছে আঙ্কেল?” গালিব বলল, “আমার আর আমার স্ত্রীর আজ ডিভোর্স সম্পন্ন হয়েছে ।” কথা শুনে প্রীতির চোখ মুখ বড় বড় হয়ে গেলো ।
“তুমি!” চমকে উঠে পুষ্পিতা কথাটা বলে উঠলো । সাজু বলল, “হ্যাঁ আমি! কেমন লাগলো সারপ্রাইজটা?” পুষ্পিতা পুরো শরীর কাঁপছে । দেখেই বোঝা যাচ্ছে । সাজু জিজ্ঞেস করলো, “আরে তুমি নার্ভাস হচ্ছো কেনো! আমার সামনে দাঁড়িয়ে তুমি! তোমার ভালোবাসার সামনে দাঁড়িয়ে তুমি!” পুষ্পিতা কিছুক্ষণ জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামনে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “তার মানে তুমিই এই বাড়ির মালিক?” সাজু মাথা চুলকে বলল, “ইয়ে হ্যাঁ! আসলে তোমাকে সারপ্রাইজ দেবার জন্যই ওই নেমপ্লেট ঢেকে রেখেছিলাম, আর দারোয়ানের সামনে আরশি যেনো আমার নাম না নেয়, সেজন্য কোডের সাহায্যে তোমাদের আনলাম ।” পুষ্পিতা বলল, “কি যে করো না তুমি!” সাজু বলল, “সব কিছু আরশির জন্য সম্ভব হয়েছে, ওকে অনেক ধন্যবাদ!” আরশি বলল, “ইটস ওকে আঙ্কেল!” সাজু পুষ্পিতাকে বলল, “তোমার জন্য আরেকটা সারপ্রাইজ আছে!” পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “কি?” সাজু বলল, “আজ তোমার সাথে আমার এঙ্গেজমেন্ট ।” এবার যেনো সবচেয়ে বেশি চমকে গেলো পুষ্পিতা ।
গালিবের কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো প্রীতি তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “আপনাদের পারিবারিক ব্যাপার, আমার এখানে বলার বা করার কিছু নেই । শুধু আপনার কথাই আপনাকে বলবো, সব ঠিক হয়ে যাবে, ধৈর্য ধরুন ।” গালিব হাসিমুখে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ । আর কিছু বলবে কি?” প্রীতি আমতা আমতা করে বলল, “হ্যাঁ…মানে…আপনি অনেক দিন অভারনাইট মিস দিয়েছেন তো, তাই আপনার বেতন খানিকটা কেটে নেয়া হবে আমাদের কোম্পানীর রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনের খাতিরে । তবে আপনি যদি বলেন, আমি আপনার জন্য ব্যাপারটা ম্যানেজ করে নেবো!” গালিব ডানে বামে মাথা নেড়ে বলল, “ধন্যবাদ, কিন্তু আমি যেটুকু আমার প্রাপ্য, সেটুকুই নেবো । বেশিও নেবো না, কমও নেবো না ।”

আগামী পর্বেঃ
“মাথা খারাপ! আজ কেবল আমার ডিভোর্স হয়েছে, এখন ৯০ দিনের ইদ্দত পালন করতে হবে! তার আগেই তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাইছো!” সাজুকে বলল পুষ্পিতা । সাজু বলল, “আহহা! বিয়ে করবো কখন বললাম? বলেছি এঙ্গেজমেন্ট হবে! আর বিয়ে হবে নব্বই দিন পরেই ।” পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা তুমি এতো তাড়াহুড়া কেনো করছো!” সাজু বলল, “পুষ্প! আমার ভয় হয় । যদি এই নব্বই দিনে তুমি তোমার মত পালটে ফেলো!”
×
বাবা(পর্ব-১১৫)


“মাথা খারাপ! আজ কেবল আমার ডিভোর্স হয়েছে, এখন ৯০ দিনের ইদ্দত পালন করতে হবে! তার আগেই তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাইছো!” সাজুকে বলল পুষ্পিতা । সাজু বলল, “আহহা! বিয়ে করবো কখন বললাম? বলেছি এঙ্গেজমেন্ট হবে! আর বিয়ে হবে নব্বই দিন পরেই ।” পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা তুমি এতো তাড়াহুড়া কেনো করছো!” সাজু বলল, “পুষ্প! আমার ভয় হয় । যদি এই নব্বই দিনে তুমি তোমার মত পালটে ফেলো!” পুষ্পিতা বলল, “এতোদিন নিতে কষ্ট হচ্ছিলো, এখন যখন নিয়েছি, আশা করি নব্বই দিনে মত পাল্টাবার মতো কিছু হবে না ।” সাজু বলল, “তাও! আচ্ছা, এখানে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে, এসো । ঘরে এসো ।” পুষ্পিতা আর আরশি সাজুর সাথে সাজুর ঘরে গেলো । বাহিরের মতো ভেতরটাও বিলাসিতায় পরিপূর্ণ । রাজকীয় সব ফার্নিচার, দামী ফ্রিজ, দামী টিভি । পুষ্পিতা মনে মনে ভাবলো, “এতোদিন আমার বান্ধবীদের বাসায় এসব দামী দামী জিনিস দেখেছি । শীঘ্রই আমারও হতে চলেছে এরকম একটা সংসার!” পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “এতো বড় বাড়িতে তুমি একা থাকো?” সাজু বলল, “না তো! বাড়িতে আমার মা বাবা থাকে ।” পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “কোথায় উনারা?” সাজু বলল, “এসো আমার সাথে ।” পুষ্পিতাকে সাজু একটা রুমে নিয়ে গেলো । রুমটার দরজা খুলতেই দম বন্ধ করে আসা একটা গন্ধ বেড়িয়ে এলো । সাজু বলল, “আমি দুঃখিত, আসলে উনারা প্যারালাইজড, এজন্য উনারা বিছানাতেই খাওয়া দাওয়া, মলমূত্র ত্যাগ এসব করেন ।” ভেতরে একটা খাটের ওপর পাশাপাশি শুয়ে আছে দুজন বয়স্ক মানুষ । একজন পুরুষ, একজন মহিলা । চেহারা দেখেই বোঝা যায় তাদের বয়স কম করে হলেও নব্বই হবে । পুষ্পিতা যখন সাজুর সাথে প্রেম করতো, তখন ওর মাকে একবার দেখেছিলো, কিন্তু পুষ্পিতার মনে নেই তখন তারা কেমন দেখতে ছিলেন । পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “কিন্তু এরকম অপরিষ্কার করিয়ে রেখেছো কেনো! তোমার এতো টাকা, কিছু কাজের লোক নিয়ে এলেও তো হয় ।” সাজু বলল, “কাজের লোকের ওপর আমার ভরসা হয় না । তারা এসব কাজ করতেও চায় না । একজন ছিলো জানো, কিন্তু কিছুদিন পরই কাজ ছেড়ে দিয়েছে ।” পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “কেনো?” সাজু বলল, “তার নাকি এ কাজ করতে খুব খারাপ লাগতো, বমি পেতো ।” এখানে দাঁড়াতে খারাপ পুষ্পিতারও লাগছে, বমিও পাচ্ছে । তাই বলে তো আর বলা যায় না । আরশি তো বাইরে থেকেই গন্ধ পেয়ে ভেতরে ঢোকে নি । একটু পর সাজু-ই বলল, “চলো চলো, এখান থেকে বাইরে যাই, তোমারও ভালো লাগছে না হয়তো ।” কথাটা শুনতেই এক মুহূর্ত বিলম্ব না করে পুষ্পিতা, “হ্যাঁ চলো!” বলে বেড়িয়ে এলো । এরপর পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো, “কিন্তু এঙ্গেজমেন্ট কি শুধু আমাদের দুজনের উপস্থিতিতেই হবে?” সাজু বলল, “হ্যাঁ, আর কাউকে ডাকতে চাইলাম না । যেহেতু তোমার ইদ্দত চলছে, এজন্য ।” পুষ্পিতা আর কিছু বলল না । সাজু পুষ্পিতার হাত ধরে সোফার ওপর বসালো । তারপর আরশি আংটি আনলো । তারপর সাজু সেটা পড়িয়ে দিলো পুষ্পিতার অনামিকা আঙ্গুলে ।
দুপুরের কথা । অফিস থেকে বাসায় ফিরলো আকবর আলি । ওকে দেখে উমা বলল, “এসেছো! ড্রেস পালটে গোসল করে নাও, আমি খাবার বাড়ছি ।” আকবর জিজ্ঞেস করলো, “রাফিদ বাসায় আছে?” উমা বলল, “হ্যাঁ আছে তো । কেনো?” আকবর বলল, “না ওর সাথে কথাবার্তা বলতাম একটু ।” উমা বলল, “রুমেই আছে, যাও ।” আকবর উঠে রাফিদের রুমে গেলো । শুয়ে ছিলো রাফিদ । বাবাকে দেখে উঠে বসলো । আকবর পাশে যেয়ে বসলো রাফিদের । বলল, “তোকে কিছু বলতে চাই ।” রাফিদ জিজ্ঞেস করলো, “কি বাবা?” আকবর বলল, “দ্যাখ, তোর আর প্রীতির বিয়েটা আমি শীঘ্রই দিয়ে দিতে চাচ্ছি ।” রাফিদ একটু লজ্জা পেয়ে বলল, “ঠিক আছে, কিন্তু তুমি চাইলে পড়েও করতে পারতে, মানে এইতো কেবল আপুর বিয়ে দিলে, কতো টাকা পয়সা খরচ হয়েছে, আবার এখন আমার বিয়ে দেবে, তোমার ওপর চাপ পড়ে যাবে না!” আকবর আলি বলল, “চিন্তা করিস না, আমি তো তোর বাবা, ভালো বাবা-ই হই কি খারাপ বাবা, টাকা পয়সা এক দিক থেকে জোগাড় করেই ফেলি ।” বাবার কথা শুনে হালকা হাসলো রাফিদ । তারপর বলল, “তাহলে কবে দিতে চাচ্ছো বিয়েটা?” আকবর আলি বলল, “এইতো, সামনের মাসেই!” রাফিদ আর কিছু বলল না ।

আগামী পর্বেঃ
অর্ক বলল, “উফ! ভাই! এরকম প্রত্যেক মাসে মাসে যদি বিয়ের দাওয়াত খেতে পারি তাহলে তো জোস হয়!” রাফিদ বলল, “হ, তারপরের মাসে তুই বিয়া করিস ।” অর্ক বলল, “হইছে! কিন্তু তোর চেহারা দেখে মনে হচ্ছে তুই কিছু একটা নিয়ে চিন্তিত!” রাফিদ বলল, “চিন্তা করছি, চাকরি বাকরি তো কিছুই করলাম না, প্রীতি চাকরি করে মেয়ে মানুষ হয়ে, আর আমি ছেলে মানুষ হয়ে এখনও কিছু করতে পারলাম না । বিয়ের পর লোকে বলবে দ্যাখো, জামাই বউয়ের টাকায় খায় ।”
×