0 %

Thanks a lot for being with us!
We are re-constructing our website!
Sorry for this temporary inconvenience
We are coming to you with a fresh look and design from 1 January 2022!
Till then! Stay connected!

লাভ ডট কম (পর্ব-১)

লাভ ডট কম (পর্ব-১)
“বিশাল এই মহাবিশ্ব । এ যে কতো বড় তার কোন ধারণা নেই কারো । এরই মাঝে ছোট একটা গ্যালাক্সি, নাম যার মিল্কিওয়ে । এই গ্যালাক্সিরই মাঝে একটা ছোট কক্ষপথ, নাম যার সৌরজগৎ । সেই সুবিশাল সৌরজগৎ-এরই মাঝে ছোট একটি গ্রহ, নাম পৃথিবী । মহাবিশ্বের সাথে তুলনা করলে কতো ছোট, তাইনা! আরও ছোট হই । এরই মাঝে একটা ছোট দেশ, বাংলাদেশ । ম্যাপে তো দেখাই যায় না । কিন্তু তবুও, এদেশের একজন নাগরিক হয়ে আমি গর্বিত । এই বাংলাদেশেরই একটা জেলা, নাম ঢাকা । জনবহুল একটা জেলা । সেই জেলারই ছোট একটা ক্যাম্পাস, ঢাকা ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস । সেই ক্যাম্পাসের ছোট একটা হলের কোন একটা রুমে বসে লিখছি আমি সোহান । তাহলে কতোটা ছোট আমি এই মহাবিশ্বের তুলনায়? শুধু আমি কেন, আমি আপনি সবাই । এতোটা ছোট হবার পরেও আমরা কিসের এতো বড়াই করি! আমরা কেন এতো মারামারা কাটাকাটি করি!” থেমে গেলো সোহানের কলম । না, কালি শেষ হয় নি, শেষ হয়েছে ওর কাহিনী । ঠিক শেষ হয় নি তা না, এরপর কি লিখবে, তাই নিয়ে ভাবছে সোহান । আর কি লিখবে? কি শুরু করছিলো? লেখার বিষয়টা কি হবে? লেখার নাম কি হবে? লেখাটা কি মানুষের মন কাড়বে? জানা নেই সোহানের । খাতা থেকে পেইজটা ছিঁড়ে ময়লার ঝুড়িতে রেখে টেবিল ল্যাম্পটা অফ করে শুয়ে পড়লো । ওর রুমমেট ইকবাল আর সাকিব ঘুমিয়ে পড়েছে । সোহানই জেগে ছিল ।
সোহান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্র । নিজের বাড়ি বগুড়া । এখানে বিশ্ববিদ্যালয় হলে থাকে । লেখালেখির প্রতি বেশ ঝোঁক সোহানের । ছোটবেলা থেকে যা পারতো, লিখে যেতো সোহান । অথচ কি লিখছে, কেউ পড়তো না । একদিন নিজের লেখা নিজেই পড়ে কিছুই বুঝতে পারলো না ঠিক কি লিখেছে । তখন থেকেই লেখার প্রতি ওর ঝোঁকটা উঠে যায় । এই ঘটনাটা ঘটেছিল যখন ও ক্লাস সেভেনে পড়ে । সোহান তখন ভেবেছিলো, এবার ও বাংলা নিয়ে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে এবং আরও অনেক কিছু জেনে তারপর আবার লেখালেখি শুরু করবে । ক্লাসের বাংলা সাবজেক্টে ও যে খারাপ লিখত তা কিন্তু না, সবটা ছিল মুখস্ত বিদ্যার বহিঃপ্রকাশ । সেটাই তো ছেলেমেয়েদের সৃজনশীলতাকে খেয়ে ফেলল । যাই হোক, অনেক চড়াই উতরাই পেড়িয়ে সোহান অবশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগ নিয়ে ভর্তি হতে পারলো । সোহানের বাবা মা-র যদিও আপত্তি ছিল । এখনকার যুগে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারদের দাম বেশি, তার ওপর সোহানের মা চায় সোহান ডাক্তার হবে, বাবা চায় ইঞ্জিনিয়ার হবে । কিন্তু সোহান বাংলা নিয়ে পড়বে, এটাই শুধু জানে । কি হবে তা জানে না । লেখক? হবে হয়তো । টিচার? খারাপ না । মুভির স্ক্রিপ্ট রাইটার? এটার ভালোই কদর পাবে হয়তো । গত এক সপ্তাহ ধরে সোহান প্রায় অনেকগুলো মুভি দেখেছে আর কিছু লিখতে চেষ্টা করেছে যা যেন একটা মুভির মতোই কাহিনী হয় । কিন্তু এত বছর পর লেখা শুরু করায় কেমন যেন লেখার প্রতি আগ্রহটা কমে গেছে । নিজের একটা লেখাও পছন্দ হয় না । এক সপ্তাহ হল লেখা শুরু হয়েছে, আর আজ খাতার সাত নাম্বার পাতাটাও ছেঁড়া হল ।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখল ইকবাল নিজের গার্ল ফ্রেন্ড রাইসার কথা বলছে । “হ্যাঁ বাবু……, খেয়েছো! না সোনা,……হ্যাঁ ময়না, এখনই হলে যাবো ।” ইকবালও বাংলা বিভাগের ছাত্র । তবে এখানে এসে সাবজেক্টটা যেন ওর প্রেম হয়ে গেছে । সারাটাদিন গার্ল ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলে । এ পর্যন্ত সোনা, ময়না, বাবু, বেবি, জান, পাখি, লায়লি, সিমরান, নাতাশা, বিপাশা কতো নামে ডেকেছে তার হিসেব নেই । কথায় কথায় একেক নামে ডাকে গার্ল ফ্রেন্ডকে । আর এতোটা প্রেম, মানে বলার মতো না । লোকে যেটাকে বলে আলগা পিরিত । চোখটা সরিয়ে সোহান সাকিবের দিকে তাকাল । খুব সম্ভবত ইতিহাসের বই পড়ছে । সাকিব কিন্তু বেশ ব্রিলিয়ান্ট । ওর যদিও ইঞ্জিনিয়ার হবার শখ ছিল, কিন্তু কি একটা কারণে ও বাংলা সাহিত্য বিভাগে চলে আসে । এতে কিন্তু ওর মাঝে মোটেও আক্ষেপ নেই । কিন্তু ওর মেধা দেখলে লোকজন অবাক হয়ে যায় । বাংলা ইতিহাসের হয়তো এমন কোন বিষয় নেই, যা ওর অজানা হবে । টিচাররাও পর্যন্ত ওকে দেখে অবাক । যদিও এর মাঝেও সাকিবের প্রেম করা থেমে নেই । সাকিবেরও একটা গার্ল ফ্রেন্ড জুটেছে । নাম সুমি । সাকিবের প্রেমটাও বলতে গেলে ইকবালের মতোই আলগা পিরিত । যদিও সবার সামনে ইকবালের মতো লজ্জাহীনভাবে সাকিব প্রেম করে না । ফোন এলে সাকিব একটু আড়ালে যেয়েই কথা বলে । সাকিব বই পড়তে পড়তেই সোহানকে বলল, “গুড মর্নিং ।” সোহান চোখ রগড়ে উঠে বসে ঘুম ঘুম কণ্ঠেই বলল, “গুড মর্নিং ।” দুহাত টান টান করে শরীরের আরমোড়া ভেঙ্গে উঠে বসলো সোহান । সাকিব আর কিছুই বলল না । নিজের ইতিহাসের বই পড়ায় মনোনিবেশ করলো । সোহান ওয়াশরুমের দিকে গেলো ।
ওরা তিনজনই প্রথম বর্ষের ছাত্র আজ ওদের সেকেন্ড সেমিস্টারের দ্বিতীয় ক্লাস । প্রথম সেমিস্টারে সোহান, সাকিব আর ইকবাল একই সেকশনে ছিল, দ্বিতীয় সেমিস্টারে সোহান আলাদা সেকশনে চলে যায় । সাকিব আর ইকবালের ১২টায় ক্লাস, আর সোহানের ১০টায় । তাই সাকিব আর ইকবালের চেয়ে সোহানের তাড়া এখন বেশি । বাজে সকাল ৯টা ।

আগামী পর্বেঃ
এমন সময় একটা মেয়ে এসে সোহানকে বলল, “ও হাই! কেমন আছো!” সোহান চিনলো মেয়েটাকে । নাম জেসি । গত সেমিস্টারে বেশ জালিয়েছে । মেয়েটা নাকি সোহানকে পছন্দ করে । কিন্তু সোহানের তো এসব প্রেমে জড়াবার ইচ্ছেই নেই । যদিও মেয়েটা নিজে থেকে কোনদিন বলে নি, ইকবাল একবার এসে বলেছিল । এই মেয়ে নাকি সোহানের জন্য ইকবালের গার্লফ্রেন্ড রাইসার সাথে ভাব জমিয়েছে । শুধু তাই নয়, আজকাল নাকি সাকিবের গার্লফ্রেন্ড সুমির সাথেও ঘুর ঘুর করে ।