0 %

Thanks a lot for being with us!
We are re-constructing our website!
Sorry for this temporary inconvenience
We are coming to you with a fresh look and design from 1 January 2022!
Till then! Stay connected!

জমিদার ফ্যামিলি





জমিদার ফ্যামিলি
রাস্তা খুব একটা বড় না  কিন্তু প্রচণ্ড  উচুনিচু । যে কোন প্রকার যানবাহন এর ওপর দিয়ে গেলে লাফাতে লাফাতে যাবেই । বাজে এই রাস্তার নাম কে যে “প্রেম পিয়াসী” রেখেছিলো কে জানে । হয়তো রিকশায় চড়ে এই রাস্তায় লাফাতে লাফাতে প্রেম করতে ভালো লেগেছিল বলে এই রাস্তার নাম এটা দিয়েছিলো । লোকমুখে এসব কথাই শোনা যায় ।
তখন ১২ টা বাজে নি । আকাশ মোটামুটি মেঘলা । সেই সময় রাস্তায় খুব একটা যানবাহন চলছেও না । রিকশায় করে যাচ্ছিলেন এক বয়স্ক মহিলা । হাতে তার মিষ্টি আর দইয়ের প্যাকেট । রিকশায় লাফাচ্ছেন । ইচ্ছা করে না , রাস্তার বাজে অবস্থার কারণে
“ও মোর খোদা , এ কি রাস্তায় নিয়া আইলা আমারে ? “
মহিলার মুখে এই কথা শুনে রিকশাওয়ালা বলল
“টা কাকি এই রাস্তায় আসেন নাই এর আগে”
“না গো না । শুনসিলাম এই রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ । তাই আগে অন্য রাস্তা দিয়া গেসি । এইবার একটু তাড়াতাড়ি যাইতে হইব । ঐ জন্য এই ফালতু রাস্তায় যাওয়া আরকি ।  “
“এই রাস্তার তো ম্যালা বড় ইতিহাস আসে গো কাকিমা “
“ কিসের ইতিহাস?”
“সে ম্যালা বছর আগের কথা । এই এলাকার একজন জমিদার সিলেন । হ্যার নাম আসিল প্রেমসত্ত্ব । হ্যার বউ আসিল লাভ্লিসত্ত্ব । “
“ও মোর খোদা ! আমসত্ত্ব সুনসি । তাও খাবারের নাম ।  এই প্রেমসত্ত্ব  লাভ্লিসত্ত্ব প্রথমবার শুনলাম । “
“ টা কাকিমা গল্প  কি শুনবেন নাকি বক বক করবেন ?”
“ না গো না । বক বক করমু না । কও শুনি তুমার গল্প ।

Author
“হ  সেই প্রেমসত্ত্ব আর লাভ্লিসত্ত্ব এই উচুনিচু রাস্তা দিয়া ভালবাসা দিবসের দিন যাইতেসিলেন । অনেকে কয় ওইদিনই নাকি উনারা একজন আরেকজনরে পরপজ করসিল । “
“পরপজ কি ?
“আরে অইজে  পোলারা মাইয়াগরে প্রথমবার কয় না ? “
“কি কয় ?”
“আই লাভ ইউ ।“
“হুট সেমরা! আমার বয়স হইসে না ? আমার কোন দিক দেইখা তুমি আমারে আই লাভ ইউ কও ! তোমার সাহস তো কম না ! “
“আরে কাকি , চেইতা যান ক্যান ? আমি তো কইলাম ঐ যে পোলারা মাইয়াগরে প্রথমবার আই লাভ ইউ কয় । ঐ ডাই পরপজ । “
“হায়রে  সেমরা , ঐ ডা পরপজ না । ঐ ডা প্রপোজ “
“ঐ হইব একটা । তো সেই প্রেম আর লাভ্লির নাকি রিকশায় লাফাইতে লাফাইতে প্রেম করতে অনেক মজা লাগসিল । তাই এই রাস্তা আর ঠিক করে নাই প্রত্যেক ভালোবাসা দিবসে এই রাস্তায় প্রেমিক প্রেমিকা আর রিকশার ভীর জমে ।  সব নাকি খুব মজা পায় । ওইদিন আমাগো ম্যালা টাকা ইনকাম হয় ।“
“ম্যালা সুন্দর ইতিহাস । “
“তা কাকি যাইতেসেন কই ?
‘জমিদার বাড়ি ।“
“জমিদার বাড়ি !!”
“হ । আমার পোলার নাম জমিদার । ওর বাড়ি যাইতেসি । ২৩ বছর পর । “
‘ ও । তাই কন । “
রিকশা চলতে লাগলো । উচুনিচু রাস্তা শেষ । এরপর এলো সুন্দর সমান রাস্তা । হঠাৎ রিকশা থেকে পড়ে গেলো রিকশাওয়ালা । রিকশা যেয়ে বাড়ি  খেলো পাশের দেয়ালে । বয়স্ক মহিলা মাজায় হাত দিয়ে রিকশা থেকে নামলো ।
“ ও মোর খোদা ! আমার মাজা ডা ভাইঙ্গা দিলো রে ।“ 
রিকশাওয়ালা উঠে মহিলার কাছে এলো ।
“ঐ সেমরা? কি রিশকা চালাও ? এখন তো উচুনিচু রাস্তাও আসিল না তাইলে পইড়া গেলা ক্যান ?”
রিকশাওয়ালা খানিক দূরে ইশারা করে বলল,” ঐ দিকে দ্যাখেন কাকি “
মহিলা ওইদিকে তাকাল । দেখল , শার্ট প্যান্ট পড়া একটা মেয়ে সিগারেট খাচ্ছে ।
“ ও মোর খোদা ! এইয়া মুই কি দ্যাখলাম ? 
“এইডা দেইখা কেউ আর স্থির থাইকবার পারে ? “
“ হুট সেমরা । তুই রিশকা চালাইবার পারস না , আবার বড় বড় কথা কস । “
“ আইচ্ছা সরি । উঠেন রিকশায় । “
“আর যাইতাসি না তোর রিশকায় । এইহান থেইকা ২ মিনিটের রাস্তা হাইটাই যামু  ।“
“তাইলে ভাড়া ডা দিয়া যান ।“
“ এক্কেরে থাবড়াইয়া ৩২ তা প্যান্ট খুইলা  দিমু । রিশকা চালাইবার পারস না আবার টাকা চাস ‘
এরপর মহিলা ব্যাগ থেকে ৩০ টাকা বের করে রিকশাওয়ালার হাতে ধরিয়ে দিলো
“এই ধর । “ বলেই মহিলা  চলে গেলো । রিকশাওয়ালা  রিকশা ঘুরাতে ঘুরাতে বলতে লাগলো, “ কার পাল্লায় যে পরসিলাম !”
মহিলা হাটতে হাটতে পৌঁছে গেলো তার ছেলে, জমিদারের বিল্ডিং এর  নিচে । ১০ তলা বাড়ি ।
“কত বড় বাড়ি রে বাবা , ছেলে আমার এতো বড় বাড়িতে থাকে ! বলসিল তো ১০ তলায় থাকে । এতো উপরে উঠি ক্যামনে ? আগে নিচ তলায় আসিল , ঐ ডাই ভালো আসিল ।” ভেতরে ঢুকতেই দেখল একটা দরজা । হঠাৎ দরজা খুলে বেরিয়ে এলো এক পিচ্চি । কাঁধে ব্যাগ । অবাক হয়ে পিচ্চি টাকে বলল , “ ও মোর খোদা ! ঐ সেমরা তুমি এই দিক দিয়া আইলা ক্যামনে ? “ পিচ্চি টা বলল, “ এটাকে লিফট  বলে দাদু ।“ মহিলা হালকা রেগে বলল, “ দাদু বলতেসস ক্যান ? আমি এখনও দেখতে সালমান খানের নায়িকার মতো দেখতে । ঐ যে মুভি আসে না , কি জানি নাম , বাঘ বাইচা আসে ?” পিচ্চি টা হাসল । তারপর বলল , “ ওটা টাইগার জিন্দা হে ।“
“ঐ হইল । ওইটায় তো আমি নায়িকা হতে চাইসিলাম । তা ভাবলাম থাক কি সব ছোট ছোট কাপড় পড়ে ওরা ছ্যা ছ্যা ছ্যা ছ্যা। “ 
মহিলার কথা শুনে পিচ্চিটা অনেক হাসল । তারপর বলল, “ বাহ , আপনি তো অনেক মজার মানুষ । কোথায় জাবেন আপনি ? “
“জমিদারের বাড়ি ।“
“ও আপনিই তাইলে ঐ হিজরা ভাইয়া আর টমবয় আপুর  দাদু ?”
“অ্যাঁ ! এইসব কি কও ?”
“ না কিছু না । চলুন আমি আপনাকে দিয়ে আসি “
এরপর পিচ্চি টা মহিলাকে লিফটে করে জমিদারের দরজার সামনে পর্যন্ত পৌঁছে দিলো ।
“এইযে এটা জমিদার আঙ্কেলের বাড়ি । “
“তোমাকে অনেক ধন্যবাদ  বাবা । আল্লাহ তোমাকে বাচায় রাখুক ।“
“ঠিক আছে । আমি তাহলে যাই ।‘ বলেই পিচ্চি টা চলে গেলো ।

মহিলা দরজায় নক করতে যাবে অমনি দেখল কলিং বেল । কলিং বেল এ টিপ দিতেই ভেতর থেকে মহিলা কণ্ঠে আওয়াজ এলো , “আসসালামু আলাইকুম , বারাই মেহেরবানী দারওয়াজা খুলিয়ে “
“ কিরে, এদের কি দরজা খুলতে কষ্ট হয় যে আমারে দরজা খুলতে কয় ।“
মহিলা মানে জমিদারের মা দরজা খোলার চেষ্টা করে , কিন্তু দরজা খুলছেই না ।
“দরজা লাগাইয়া আমারে কয় দরজা খুলতে ।“ বলেই আরেকবার কলিং বেল চাপল । আবার সেই একই আওয়াজ । “নাহ ! আমার পোলার কি হইল ! দরজা খোলা বাদ দিয়া বউরে দিয়া  আমাকে  কওয়াচ্ছে  দরজা খোলার জন্য আর দরজা তো লাগানো । “  এবার জমিদার খুব রেগে গেলেন । রাগে যেই দরজায় থাবা মারার জন্য হাত ছুঁড়লেন , অমনি জমিদার দরজা খুলল । আর থাবা টা যেয়ে লাগলো জমিদারের মুখে । জমিদার হাত দিয়ে নাক ঘষতে ঘষতে  বলল, “ ইশ ! কি জোরে লাগলো গো ! “ জমিদারের মায়ের একটু খারাপ লাগলো । জমিদারের মুখে হাত দিয়ে বলল, “আহারে বাছা আমার , দেখি দেখি , কোথায় লেগেছে । “ জমিদার মায়ের হাত ধরে বলল, “না মা , তেমন একটা লাগেনি । তুমি এসো , ভেতরে এসো । “ জমিদারের মা জুতা খুলে ভেতরে এলো ।
ঘরটা ভালোই । ঢুকতেই ড্রইং রুম । ঘরে ঢুকে জুতো রেখে সোফার উপর বসে পড়লো জমিদারের মা । জমিদারও মায়ের পাশে বসে পড়লো । জমিদার বলল, “রাস্তায় কোন সমস্যা হয় নি তো?” জমিদারের মা শাড়ির আঁচল দিয়ে শরীর মুছতে মুছতে বলল, “পুরো রাস্তায় তো কোন সমস্যা হয় নি বাবা , কিন্তু এই তোমাদের পাশের এলাকার রাস্তাটা ...... কি জানি নাম ............ প্রেম ...... কি জানি ?”
“প্রেম পিয়াসী”
“হ , ঐ রাস্তার যে কি বাজে অবস্থা । ঐ রাস্তায় আমার মাজা ব্যাথা হয়ে বাবা ।“
“হ্যাঁ মা । ঐ রাস্তার অবস্থা একদমই ভালো না । তা তুমি মাটিকাটা হয়ে না এসে ঐ রাস্তা দিয়েই এলে কেন ?”
“আর বলিস না । আমি আবার আমার  বান্ধবীকে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম । ১২ টার আগে পৌছাবো । তাই এই রাস্তা দিয়ে আসা । আচ্ছা কয়টা বাজে ?”
“১২ টা বাজতে আর পাচ মিনিট আছে ।“
“ ইশ আমার তো কাজ আছে । দাড়া ।“
জমিদারের মা ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে একটা সেলফি তুলে ওর বান্ধবীর কাছে ছবিটা পাঠাল ।
জমিদারএকটু হতাশ হয়ে বলল, “ আচ্ছা মা , তোমার তো বয়স হয়েছে  । এসব কি এখন তোমাকে মানায় ?” জমিদারের মা হালকা রেগে বলল, “আমার বয়স হয়েছে মানে ? জানিস এখন আমি ক্যাটরিনার মতো সুন্দরি ।”  জমিদার আর কিছু বলল না । হার মেনে নিয়ে বলল, “ঠিক আছে যাও তুমি ঘরে যাও ।” জমিদারের মা ফোন টা ব্যাগে রাখতে রাখতে বলল, “তা হ্যাঁ রে , বউমার কি অবস্থা এখন  ?” জমিদার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “ ও ঘুমাচ্ছে ।” জমিদারের মায়ের মনটা একটু খারাপ হয়ে গেলো । এরপর বলল, “হ্যাঁ রে বাবা , তুই কি আমাদের ক্ষমা করেছিস ?” জমিদার হঠাৎ চমকে উঠে বল্লল, “ ছি মা , এগুলো কি  বলছ , তোমরা তো কোন দোষ ই করো নি। ”  জমিদারের মা জমিদারের মনটা ভালো করার জন্য বলল, “ আচ্ছা থাক ওসব কথা । গোসল করা লাগবে রে । আমাকে একটু বাথরুম টা কোন দিকে বল ।” জমিদার একটা রুমের দিকে ইশারা করে বল, “ঐ রুমে যাও , ওখানেই বাথরুম আছে ।” জমিদারের মা কথা না বাড়িয়ে চলে  গেলেন । জম্মিদার কেবল মাথেয় হাত  দ্দিয়ে বসে রইল । বেচারার জীবনটা খুব কষ্টে কেটেছে । ভার্সিটি পড়ার সময় পছন্দ করত মুন নামের এক্ক মেয়েকে । ৫ বছর রিলেশন থাকার পর যখন জমিদার ভালো একটা কোম্পানিতে চাকরি করে , তখন জমিদারের মা বাবা জমিদারকে না বলেই জমিদারের বিয়ে ঠিক করে ফেলে সীমা নামক এক মেয়ের সাথে । এমনকি বিয়ের ডেটও ঠিক করে ফেলে । জমিদার  ওর মা বাবা কে সব খুলে বললেও ওর মা বাবা ওর কথা  শোনে না । বাড়ি থেকে  পালিয়ে যাবে এই ভেবে ওকে বিয়ের আগের দিন পর্যন্ত ওর রুমেই আটকে রাখে । সেই সময় মোবাইলও তেমন একটা ছিল না যে জমিদার মেয়েটাকে সব বলবে । এদিকে জমিদার দেখা করে না বলে চিন্তায় পরে যায় মুন । একদ্দিন জমিদারের বাসায় আসলে মেয়েটা যখন সবটা জানতে পারে তখনই মেয়েটা ছাদ থেকে লাফ দেয় । মেয়েটার মা বাবা এসে মেয়েটাকে নিয়ে যায় । তখনও মেয়েটার মা বাবা জানত না কেন মুন আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিলো । বিয়ের রাতে জমিদার ওর বন্ধুর কাছে সবটা শোনে এবং মানসিক ভাবে  ভেঙে পরে । মুন মারা গেছে কি না কেউ বলতে পারে না । শুধু এটুকু জমিদার জানতে পেরেছিল মুনের পরিবার মুনকে নিয়ে কানাডা চলে গেছে । এরপর জমিদার কষ্ট পেলেও সীমার সাথে নিজেকে মানিয়ে নেবার চেষ্টা করে এবং এক মাসের মধ্যে মানিয়েও নেয় । সীমা খুব জরুরী ছাড়া জমিদারের সাথে কোন কথা বলত না ।  একদিন জমিদারের জমজ বাচ্চা হয় । একটা ছেলে  , আরেকটা মেয়ে । কিন্তু সন্তান হবার কিছুদিন পরেই সীমা শুরু করে অদ্ভুত আচরণ । অনেকটা পাগলের মতো । পরে জমিদারের মা বাবা আসে এবং মুনেরও মা বাবা আসে । তখন মুনের মা বাবা জানায় মুন আসলে একজন পাগল । বিয়ে দেয়ার জন্য ঔষধ খাইয়ে কোনোরকমে শান্ত রেখেছিলো । এবং ওইদিন সেই ঔষধের কার্যকারিতা শেষ হয়ে যায় । জমিদার আর কিছু বলে না । নিজের পরিবার সামলানোর দায়িত্ব নেয় । ওইবার ওর মা বাবা  সেই যে চলে গিয়েছিলো, তার পর এই আজ ওর মা এলো । জমিদার অবশ্য ছুটি পেলে দেখা করে যেত । কিন্তু একা আর ১-২ দিনের জন্য  । যা হোক , জমিদার তার ছেলেমেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতো আর ভাবত , এরা বড় হলে হয়তো আমার কষ্ট ঘুচবে । কিন্তু আফসোস । বড় হয়ে সেই ছেলে মেয়েদের মতো আচরণ করা শুরু করলো , আর সেই মেয়েটা ছেলেদের  মতো আচরণ করা শুরু করলো । ভাবতে ভাবতে চোখ আর জল আটকে রাখতে পারল না । আজ যদি মুনের সাথে জমিদারের বিয়ে হতো , তাহলে হয়তো এমনটা হতো না । তখন জমিদারে মা চুল মুছতে মুছতে রুমে ঢুকল । মাকে আসতে  দেখে জমিদার চোখ মুছল । জমিদারের মা বলল, “হ্যাঁ রে জমিদার , তোর ছেলে মেয়ে দুটো কোথায়? ” “গেছে হয়তো কোথাও। ”জমিদারের মা হালকা রেগে বলল, “আচ্ছা তুই ছেলে মেয়ে দুটোকে কোনো দিন আমার কাছে আনতি না । ফোনেও কথা বলাতি না । কেন?” ঠিক ঐ সময় এসে হাজির জমিদারের ছেলে জুল । গায়ে  সালোয়ার কামিজ  আর ওড়না । ঠোঁটে লিপস্টিক । মেয়েদের ভঙ্গিতে হাঁটাচলা কথাবার্তা ইত্যাদি করে । জমিদার রেগে গিয়ে বলল ,  “ঐ যে হতচ্ছাড়া জুল এসে গেছে । মেয়েদের ড্রেস পড়ে কি মজা পাস তুই ?” জুল মেয়েদের ভঙ্গিতে বলল “ মরি মরি । আমি হতচ্ছাড়া হবো কেন গো ? আমি তো হতচ্ছাড়ি ।“ জমিদারের মা জমিদারের মা কাণ্ড দেখে অবাক । জমিদারের মা অবাক হয়ে বললেন, “এ কি জমিদার ! এটা কি তোর ছেলে ?” জমিদার কপালে হাত ঠেকিয়ে বলল, “হ্যাঁ মা । এটাই আমার হতচ্ছাড়া ছেলে । সারাদিন মেয়েদের মতো করে ,মেয়েদের মতো ঘোরে ।” জুল ডান হাতের তর্জনী আঙ্গুল জমিদারের মায়ের থুতনিতে ঠেকিয়ে বলল , “ও মা , তুমি কে গো ?” জম্মিদারের মা আর কিছু বলতে পারে না । বেহুশ হয়ে পড়ে যায় । জ্ঞান ফিরবার পর দেখলেন বিছানায় শুয়ে  আছেন । পাশে একটা মেয়ে শার্ট প্যান্ট পড়ে গান গাচ্ছে, “তু নে মারি এনটিইয়ারে দিল মে বাজি ঘানটিইয়ারে............”
মেয়েটাকে চিনতে খুব একটা অসুবিধা হল না জমিদারের মায়ের । এটা ছিল সেই মেয়েটা যে রাস্তায় সিগারেট খাচ্ছিল আর যাকে দেখে রিকশাওয়ালা রিকশা থেকে পড়ে গিয়েছিলেন । জমিদারের মা হন্ত দন্ত হয়ে উঠে বসে বললেন, “ঐ মাইয়া তুমি এইখানে কি করো?” মেয়েটা নিজের গলা চুলকাতে চুলকাতে বলল, “আবেয় ঐ, আমার বাড়ি আইয়া আমারেই কইতাসস এই বাড়ি আমি কি করি? পিডাইয়া চুনডি বানডি পাটটি কইরালবাম ।“ বুড়ি অবাক হয়ে উঠে বলল, “এইসব কিতা কইতাসো?” মেয়েটা বলল, “আরে বুড়ি, আমি বিজলি বিজলি । আপনার পোলার মাইয়া ।“ জমিদারের মা বলল, “তো তুমি সালোয়ার কামিজ পড়বা । এইসব কি শার্ট প্যান্ট পইড়া আসো?” বিজলি চোখটা বড় করে বলল, “ঐ, আমার স্টাইলে নজর দিবি না । এইসব স্টাইল মাইল তুই বুঝবি না । জমিদারের মা ভ্রু কুঁচকে বলল, “স্টাইল! এইসবও স্টাইল হয়?” বিজলি বলল, “হ্যাঁ রে । এইসব তো এইসময়কার স্টাইল । তুই করবি নাকি এরকম স্টাইল?” জমিদারের মা বলল, “এই এই, আছে নাকি তোর আর শার্ট প্যান্ট?” বিজলি হালকা হেসে বলল, “ওয়ে হয়ে ! তুইও পরবি? আচ্ছা যা । আমার আছে আরও । দেবনে ।” জমিদারের মা বলল, “আর বলিস না । আমার বান্ধবি কি সুন্দর ড্রেস পড়ে ফেসবুকে ছবি ছাড়ে । আমি কিছুই পারি না । বিজলি বলল, “যা, তোকে আমি সব দেবনে । ওইসব ড্রেস পইড়া পার্টিতে যাইয়া তোরে আমি ছবি তুইলা দেবনে ।“ জমিদারের মা খুশিতে আত্মহারা । চোখ বন্ধ করে চিন্তা করতে লাগলো । শার্ট প্যান্ট আর সানগ্লাস পড়ে জমিদারের মা গাড়ি থেকে নামছে । তারপর একটা ঘোরে ঢুকল । সবাই নাচ গান করছে । গান বাজছে “ডি যে ওয়ালা বাবু তেরা গানা চালা দে...............”  জমিদারের মাও নাচা শুরু করলো । চার পাঁচটা ছেলেও এলো ওর কাছে । নাচতে নাচতে হঠৎ জমিদার গেলো পড়ে । হঠাৎ কল্পনাটা জমিদারের মায়ের কাছে বাস্তব লাগতে শুরু করলো আর সেই বাস্তবতার কারণে জ্ঞান হারিয়ে আবার পড়ে গেলো জমিদারের মা । জ্ঞান ফিরলে দেখতে পেলো একজন মহিলা গান গাইছে  । বেসুরা গলার গান । মনে হচ্ছে বাম কানে কাক কাকা করছে আর ডান কানে নেড়ি কুকুর ঘেউ ঘেউ করছে । জমিদারের মা মহিলাটাকে চিনতে পারলেন । এটা তার বউমা, জমিদারের বউ । সে দিব্যি গান গাইছে । “এক দো তিন ............চার পাঁচ ছে সাত আট নে......দশ ইয়ারা.........বারা তেরা...............” জমিদারের মা উঠে বলল, “ওরে আল্লাহ! এ কি গান গাইতাস বউমা? গলার অবস্থা ভালো না আবার গান গাইতাসে। ” জমিদারের বউ গালে হাত দিয়ে বলল, “ও মা! শাশুড়ি আম্মা বলে কি! বাঘি ২ দেখসেন?” জমিদারের মা মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললেন, “বাঘ শুনসি, বাঘিনীও শুনসি । কিন্তু বাঘি তো শুনি নাই, আবার বাঘি ২! কি এ?” জমিদারের বউ বলল, “লাজে! কে যে আপনার নাম দিশা দিয়েছিলো কে জানে । জানেন, বাঘি ২ টাইগার শ্রফ এর একটা মুভির নাম । ঐ মুভির নায়িকা দিশা পাটানি ।“ জমিদারের মা চমকে উঠে বলল, “দিশা পটানি! মানে যারা দিশা  নামের মেয়েদের পটায়? এই এই, আমার নামও তো দিশা, আমাকে পটাবে না?”  জমিদারের বউ ভ্রু কুঁচকে বলল, “ ইশ! কি যে বলেন না । নাম দিশা পাটানি । পটানি না ।“ জমিদারের মা বলল, “তো কি হয়েছে?” জমিদারের বউ বলল, “আরে পরের মুভি তো  আমি করবো।“ জমিদারের মা রেগে গেলো । বলল, “ ঐ! তুই করবি মুভি?” জমিদারের বউ তখন মুখ ভেংচি দিয়ে বলল, “কি গো, মন জলছে? থাক । আর হিংসে করতে হবে না । আরে জানেন না? বাঘি থ্রি এর নায়িকা তো আমি । এইতো শুটিং চলছে । আমি খুবই ব্যাস্ত শুটিং এ ।“ জমিদারের মা এবার মাথায় হাত দিলো । আর বলতে লাগলো, “ ইশ! আমি মুভি করতে পারবো না! আমার বউমা মুভি করবে! না! এটা হতে পারে না! না না না!” সেই সময় জমিদার ঘরে ঢুকলজমিদার তার বউকে বলল, “একি? তুমি কি করছ এখানে?” জমিদারের বউ কিছু না বলে ভেংচি কেটে হাসতে হাসতে চলে গেলো । জমিদারের ওর মায়ের পাশে বসলো । জমিদারের মা জমিদারের দিকে তাকিরে বলল, “হ্যাঁ রে বাবা,  তোর বউ নাকি কি থিরি বাঘ না কি নামের মুভি করতাসে?” জমিদার  তার মাকে বলল, “আরে মা, কি যে বল না, ও করবে মুভি?” জমিদারের মা বলল, “তাইলে ও যে আমারে বলতেসিল?” জমিদার বলল, “উহ মা, সবটা ওর পাগলামো । তুমি বাদ তাও । এখন শরীর কেমন লাগছে?” জমিদারের মা বলল, “ হ বাবা, আসি মোটামুটি । আচ্ছা, তোর মাইয়া বিজলি তোরে কিছু কইসে?” জমিদার বলল, “ও তো  সারাদিনই আমাকে কত কিছুই বলে।“ “না মানে, আমারে নিয়া কিছু কইসে?” “তোমাকে নিয়ে আবার কি বলতে যাবে ও?” জমিদারের মা একটা শ্বাস ফেলে মনে মনে বলল, “ যাক তাও ভালো । আমি যে ওর কাছে শার্ট প্যান্ট চাইসি ও ওর বাপরে কয়নাই ।“ ঠিক ঐ সময় বিজলি হাতে একটা প্যাকেট নিয়ে জমিদারের মায়ের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, “এই  ধর । তোর ড্রেস ।“ জমিদারের মা ভয় পেয়ে গেলো । ছেলের সামনে কি বলবে বুঝতে পারলো না । জমিদার অবাক হয়ে গেলো । বিজলিকে জিজ্ঞাস করলো, “কিসের ড্রেস এটা?” বিজলি বলল, “আরে খুলেই দ্যাখ না, এর মধ্যে কি চিজ আছে, আর তোমার মাও ক্কি চিজ ।“ জমিদার প্যাকেট নিতে যাবে অমনি জমিদারের মা প্যাকেটটা  আবার কেড়ে নিলো । তারপর বলল, “আর বলিস না...... ঐ...... ইয়ে......... মানে.........একটা শাড়ি চাইসিলাম আরকি।“ বিজলি তখন বলল, আরে বুড়ি্‌ এতো ভয়  পাস ক্যান,  তুই আমার বাপরে জন্ম দিসিস নাকি আমার বাপ তোরে জন্ম দিসে?” জমিদার অবাক হয়ে বলল, “ভয়? কিসের ভয়?” জমিদারের মা বলল, “না রে বাবা.........” জমিদারের মাকে থামিয়ে প্যাকেট থেকে শার্ট প্যান্ট বের করে বলল, “এই যে শার্ট প্যান্ট । তোমার এই মা পড়তে চাইসিল ।“ জমিদার কিছুক্ষণ পোশাকগুলো দেখতে লাগলো । তারপর জমিদারের মায়ের দিকে তাকালো । জমিদার তারপর বলল, “মা! সত্যি তুমি এসব পড়তে চেয়েছ?” জমিদারের মা কিছু বলতে পারে না । ভয়ে কাঁপতে থাকে । মায়ের মুখের জবাব না শুনতে পেরে জমিদার বলল, “মা তুমি শেষ পর্যন্ত এরকম করছো? আজ যদি বাবা বেচে থাকতো তবে কি হতো?” জমিদারের মা বললেন, “আরে না, আমি তো শাড়ি আনতে কইসিলাম ।“ ঠিক সেই সময় আবার রুমে এলো জমিদারের মা আর জমিদারের ছেলে । জমিদারের বউ কাঁদতে কাঁদতে বলল, “এইযে তোর বাবা । তোর বাবা আমাকে  মেরেছে ।“ জুল নিজের গালে হাত দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল, “মরি, মরি । ও খোদা, এই খবর শোনার আগে আমার মরন কেন আসলো না ।“ জমিদার তখনও কিছু আঁচ করতে পারেনি । জুলকে বলল, “ কিরে জুল, কি হয়েছে, তোর  মা কাদছে কেন?” জুল দু চোখ মুছে বলল, “ছি বাবা, দোষ করে বলছ কি হয়েছে?” বিজলি তখন জুলকে বলল, আবেয় জুল, কি হইসে রে? বাপে কি করসে মায়ের লগে?” জুল তখন বলল, “ ও মাই সুইট সিস্টার, আমার বাবা, আমার নিরীহ মাকে মেরেছে?” বিজলি রেগে গিয়ে বলল, “ এইডা আমারে কি কইলি তুই, আমার বাপে এই কাম করসে?” বিজলি তখন ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, “আবেয় ঐ বাপ, পিডাইয়া চুনডি বানডি পাটটি কইরালবাম । তুই আমার মায়েরে মারসস?” জমিদার তখন বলল, “সীমা, তোমার শুটিং হয়ে  গেলে  ঘরে যাও ।“ জমিদারের বউ সীমা তখন হেসে দিলো । বিজলিও তখন হাসিমুখে বলল, “আয় হায়! আম্মা! তুমি শুটিং করতাসিলা!” জমিদারের বউ, “হ্যাঁ রে হ্যাঁ । কেমন হয়েছে বলতো?” বিজলি বলল, “জব্বর হইসে । তুমি তো ফাটায় দিস ।“ জুল বলল, “হ্যাঁ মা, অনেক কিউট অভিনয় ।“ জমিদারের বউ, “ চল, তোদের আজকে আমি তোদের আরও অনেক অভিনয় করে দেখাই ।“ জুল বলল,” হ্যাঁ মা, চল ।“ জমিদারের বউ চলে গেলো । সাথে জুল আর বিজলিও গেলো । জমিদার কেবল মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়েই রইল । জমিদারের মা এবার রেগে গিয়ে বললেন, “যথেষ্ট হইসে । তোমার এই পোলারুপী মাইয়া আর মাইয়ারুপী পোলারে আমি বিয়া দিয়াই ছারুম । আইজকাই আমি অগর লাইগা পোলা আর মাইয়া দেখুম ।“ বলেই রাগে গজ গজ করতে করতে জমিদারের মা চলে গেলো । জমিদার অবাক হয়ে মায়ের চলে যাওয়া দেখল । তারপর নিজেকে বলতে লাগলো, “কে বিয়ে করবে আমার এই প্রতিবন্ধী ছেলে মেয়েকে?” ওদিকে  জমিদারের মা ফোন হাতে নিয়ে কল দিলো তার বান্ধবীকে । জমিদারের মা তার বান্ধবীকে সব ঘটনা খুলে বলল । তারপর ফোনের ওপাড় থেকে জমিদারের মায়ের বান্ধবি বলল, “হ্যাঁ রে, টা এরকম ছেলে  মেয়েকে কে বিয়ে করবে?” “আহ! সে জন্যই তো তোকে আমি ফোন দিলাম । তোর চেনা জানা এমন কেউ নেই?” “আছে বৈকি । কিন্তু তার ছেলেমেয়ের সাথে তোর ছেলে ওর ছেলেমেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি হবে কিনা কে জানে।“ “কেন? রাজি হবে না ক্কেন?” “এই ছেলেমেয়েগুলোও অরকম। ছেলেটা হিজরা, আর মেয়েটা টমবয় ।“ “বাহ!  একদম মিলে গেছে তো! আচ্ছা, ওদের মা কি পাগলি নাকি?” “না । তবে ওদের বাবা পাগল । বিয়ের পর নাকি মেয়েটা টের পেয়েছে । আগে নাকি ভালোই ছিল ।“ “তা এই পাগল ছেলে সংসার চালায় কিভাবে?” “ছেলেটা চালাবে কেন? চালায় তো মেয়েটা। ছেলেটা বাড়ি বসে পাগলামো করে, আর মেয়েটা কি একটা ব্যাংকে চাকরি করে । এককালে লন্ডনে ছিল ।“  “আচ্ছা, মেয়েটার নাম কি?” “মেয়েটার নাম তো জানিনা, তবে ছেলেটার   নাম কেরুখা ।“ “আমি কিন্তু পাগল ছেলেটার কথা বলেছি । পাগল ছেলেটার ছেলের কথা না ।“  “আরে হ্যাঁ হ্যাঁ । আমি বুঝেছি । পাগল ছেলেটারই নাম কেরুখা । ওরই দুই ছেলেমেয়ে অস্বাভাবিক । টমবয় মেয়েটার নাম শিউলি, আর হিজরা মেয়েটার নাম উল ।“ “আচ্ছা আমি ওদের সাথে  যোগাযোগ করবো কিভাবে?” “আরে তুই কষ্ট করে যোগাযোগ করবি কেন?” আমি যোগাযোগ করিয়ে দেবো । উনারা তো ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিতে এক পায়ে খাড়া ।“ “তাহলে তুই একটা কাজ কর । কাল আমার বাসায় আসতে বল উনাদের ।“ “আচ্ছা । কাল তাহলে রেডি থাকিস, আমি উনাদের আসতে বলব । জমিদারের মা “আচ্ছা” বলেই ফোনটা রেখে দিলেন । জমিদারকেও আলাদা করে কিছু বললেন না । জমিদার আজ নাইট ডিউটিতে গিয়েছে । সে ছিল একজন ডাক্তার । তেমন কোন বড় ডাক্তার না, ছুটির দিনে কিংবা মাঝে মাঝে রাতে হাসপাতালে থাকে কোন রোগী সে সময় এলে যেন তাৎক্ষণিক কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে পারে । সারারাত চাকরি করে সকাল সাড়ে ৭টায় এসে ঘরে  এসে ঘুমিয়ে যেই একটু ঘুমানোর জন্য বিছানায় শুয়ে পড়লেন, অমনি জমিদারের মা এসে হাঁক ছাড়তে শুরু  করলো । জমিদারকে হাত দিয়ে ঝাকাতে ঝাকাতে বলল, “ঐ! ঐ! উইঠা পড় ।“ জমিদার ক্লান্ত অবস্থায় বলল, “মা, মাত্র সাড়ে ৭টা বাজে তুমি যাও তো । সারারাত ডিউটি করে আমি খুব ক্লান্ত ।”  জমিদারের মা তখন বলল, “ওরে সেমরা! আইজকা তোর মাইয়ার জামাই আর পোলার বউ আইবো । তুই অগোরে দেখবি না??” কথাটা শুনেই জমিদার শোয়া অবস্থা থেকে উঠে বসলো । তারপর বলল, “কি! বিজলির জামাই আর জুলের বউ! কিভাবে কি?” “হ রে, হ । আমি তোর পোলা আর মাইয়ার বিয়ার ব্যাবস্থা কইরা দিতাসি ।” “কিন্তু মা, তুমি আমাকে কিছু না বলেই সব ব্যাবস্থা করে ফেললে?” “আরে আর কথা কইস না তো উইঠা আয় । তোর বউ তোর পোলা আর মাইয়ারে সাজাইতেসে । তুইও সাইজ্জা আয় । ভালো পাঞ্জাবী পায়জামা পইড়া আসিস ।” বলেই জমিদারের মা চলে গেলেন । জমিদার কিছুক্ষণ অবচেতনের মতো এক দৃষ্টিতে মেঝের দিকে তাকিয়ে রইল । তারপর উঠে ড্রেস চেঞ্জ করতে শুরু করলো । চেঞ্জ করে বেড়িয়ে এসে দেখল দুজন উলটো ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে । একজন শাড়ি পড়ে, আরেকজন শার্ট প্যান্ট পড়ে । জমিদার বুঝল এরা বিজলি আর জুল । বিজলির শাড়ি পড়া দেখে ভালো লাগলেও জুলকে শার্ট প্যান্ট পড়ে থাকতে দেখাটা ভালো লাগলো না । আজ ও পাত্রি দেখবে, অথচ পাঞ্জাবী কিংবা কুর্তা না পড়ে শার্ট প্যান্ট পড়ে আছে । জমিদার বলে উঠলেন, “কিরে জুল, শার্ট প্যান্ট কেন? পাঞ্জাবী পরবি না?” জমিদারের কত্থা শুনে উলটো ঘুরে তাকাল ওরা দুইজন । এরপর জমিদার যা দেখল, টা দেখার জন্য জমিদার হয়তো প্রস্তুত ছিল না । কারণ শাড়ি পড়া মানুষটা ছিল জুল আর শার্ট প্যান্ট পড়ে আছে, বিজলি । জমিদার ওদের এই পোশাকে দেখে ভয় পেয়ে গেলেন । তারপর কাপা কাপা গলায় নিজের স্ত্রীকে ডাকলেন । “এ...এ....ই সীমা? এ...এ...ই? ক...ক...কোথায় তুমি?” একটু পড় জমিদারের বউ এলো । জমিদারের বউ বলল, “কি গো কাটাপ্পা? ডাকছ কেন? বাহুবালি এসেছে নাকি?”  জমিদার হালকা রেগে বললেন, “ওদের কিভাবে সাজিয়েছ তুমি?” সীমা নিজের চুল নাড়াতে নাড়াতে বলল, “ও মা, শাড়ি পড়াটা পদ্মাবতি, আর পাশেরটা ডন ।” জমিদার এবার পুরোদমে রেগে গেলো । সিমাকে বলল, “রাখতো তোমার পাগলামি । আর যাও ওদের ঠিকঠাকভাবে সাজিয়ে দিয়ে এসো । সীমা কাঁদতে কাঁদতে চলে  গেলো । জুল আর বিজলি তখন জমিদারের কাছে এলো । জুল বলল, “ছি বাবা, তুমি মাকে অকারণে বকলে!” বিজলি বলল, “আবেয় ঐ! পিডাইয়া চুনডি বানডি পাটটি কইরালবাম । আমাগো এই সাজ তোর পছন্দ না কইলেই পারতি । মায়রে বকলি ক্যান? চল জুল । আমরা সাজ বদলাইয়া আসি । আমরা চাইনা আমাগো সাজের জন্য আমাগো মায়ে কষ্ট পাক ।” বলেই জুল আর বিজলি চলে গেলো । ঠিক তখন দরজা থেকে কেউ বলে উঠলো, “আসতে পারি?” জমিদার বললেন, “জী আপনি.........?” জমিদারের কথা শেষ না হতেই লোকটা বললেন, “আরে আমি কেরুখা । আমার মেয়ে আর ছেলের পাত্র পাত্রি দেখতে এসেছি ।”  জমিদার বলল, “ও আচ্ছা, আসুন আসুন ।” কেরুখা ভেতরে ঢুকল । জমিদার বলল,” বসুন ।“ কেরুখা তখন গালে হাত দিয়ে বলল, এই এই, ট্রেন ট্রেন ।“ জমিদার অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করলো, “ট্রেন!” লোকটা তখন একটা অদ্ভুত হাসি দিয়ে বলল, “বোকা বানিয়েছ, খুব মজা পেয়েছি ।” জমিদারের মা ঐ সময়ই রুমে ঢুকেছিলেন । জমিদার কিছু বলার আগেই জমিদারের মা জমিদারকে কানে কানে বলে দিলো, “লোকটা পাগল । কিন্তু ওর বউ ভালো ।”  তারপর জমিদারের মা বলল, কি ব্যাপার, আপনার ছেলে মেয়ে কই?” কেরুখা বলল, “ওরা নিচে একটু কাজ করছে ।”  জমিদার দরজা দিয়ে দূর থেকেই দরজার দিকে তাকাল কেরুখার বউ এসেছে কি না সেটা দেখতে । দরজার আশেপাশে খুজে না পেয়ে বলল, “আপনার বউকে তো দেখছি না, উনি কি আসেন নি?” কেরুখা বলল, “না না, একটু লজ্জা পাচ্ছে । কই গো, ভেতরে এসো কাক্ পাখি।“ জমিদার অবাক হয়ে বলল, “কাক পাখি!” কেরুখা দাঁত বের করে হেসে বলল, “সবাই বলে ময়না  পাখি, টিয়া পাখি । আমি exceptional তো, তাই ডাকি কাক পাখি । কই গো, এসো ।“ কেরুখার বউ তখন ভেতরে ঢুকল । চেহারা দেখে দাঁড়িয়ে গেলো জমিদার । কারণ এটা ছিল জমিদারের সেই গার্ল ফ্রেন্ড মুন । জমিদার অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল মুনের দিকে । বুঝতে পারলো মুনও চিনতে পেরেছে জমিদারযে । কারণ সেও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে জমিদারের দিকে  । জমিদার ক্ষীণ স্বরে বলল, “বসুন ।” জমিদারের বউ হঠাৎ হাসতে শুরু করলো । তারপর বলল, “এই জমিদার, এদের বলো আমি বাঘি ২ মুভি করছি ।” জমিদার সীমাকে কিছু বলতে যেবে সেই সময় হঠাৎ  কেরুখা কথা বলে উঠলো, “ও বাবা, তাই নাকি? আমিও তো নাটক করব জানেন, খুব ইচ্ছা আমার নাটক করার কিন্তু আমার কাক পাখি আমাকে নাটক করতেই দেয় না ।” সীমা তখন বলল, “আমি আপনাকে নাটক করা শেখাবো । তখন দেইখেন, সবাই আপনার অনেক বড় ফান হয়ে যাবে ।” জমিদারের বলল, “ওটা ফান না, ফ্যান ।” সীমা বলল, “ঐ হল ।” জমিদারের মা তখন বলল, “আচ্ছা, পাত্রপাত্রির ব্যাপারে একটু কথা বলি আমরা ।” কেরুখা একটু ভ্রু কুঁচকে বলল, “উহ! পাত্রপাত্রীগুলা কেমন যেন........................” মুন এতক্ষন চুপ করে জমিদারের দিকে তাকিয়ে ছিল । এতক্ষণে সে মুখ খুলল । কেরুখার কথা শেষ না হতেই বলল, “পছন্দ হয়েছে । খুব পছন্দ হয়েছে ।” জমিদার আর মুন দুজন দুজনকেই দেখার পর থেকে মুখে হাসি নেই । কেমন মনমরা হয়ে আছে । মুনের জবাব শুনে জমিদারের মা বলল, “আলহামদুলিল্লাহ, তাহলে তো হয়েই গেলো । তাহলে জুল, তুমি শিউলিকে নিয়ে তোমার রুমে যাও । আর বিজলি, তুমি উলকে নিয়ে তোমার ঘরে যাও । তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হও আর কেমন লেগেছে তারপর বোলো ।” এরপর জুল শিউলিকে নিয়ে আর বিজলি উলকে নিয়ে গেলো নিজেদের রুমে ।” জমিদার তখন সোফা থেকে উঠে তার মাকে বলল, “মা তুমি এনাদের সাথে কথা বলো, আমি আসছি ।” জমিদারের মা, “কোথায় যাবি বাবা?” জমিদার মুনের দিকে তাকিয়ে বলল, “ছাদে ।” বলেই জমিদার চলে গেলো । মুন তখন জমিদারের মাকে বলল, “আনটি, আমিও একটু আসছি ।” জমিদারের মা, “তুমি আবার কই যাবা?” মুন বলল, “একটু বাহির দিয়ে ঘুরে আসি ।” বলে মুনও ছাদে চলে গেলো । জমিদারের মা মুনকে কখনো দেখেননি । সীমা তখন কেরুখার কাছে এসে বলল, আপনি আমার সাথে চলুন । আমি আপনাকে নাটক করা শেখাই ।” কেরুখা “হ্যাঁ হ্যাঁ, চলুন ।”  বলেই চলে গেলো । আকাশ তখন হালকা মেঘলা । সমুদ্রে নাকি ফনি ঘূর্ণিঝড় শুরু হয়েছে । তাই আকাশ হালকা মেঘলা । জমিদার ছাদে এসে ছেদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে কিছু চিন্তা করতে লাগলো । মনটা একটুও ভালো নেই ওর । একটু পড় মুনও এসে জমিদারের পাশে দাঁড়ালো । জমিদার বুঝতে পারলেও মুনকে কিছু বলল না । মুনের দিকে তাকালও না । মুনও জমিদারের দিকে তাকাল না । কিছুক্ষণ চুপ থাকার পড় মুন বলল, “সেদিন আমি তোমাকে ঠকিয়েছিলাম নাকি তুমি আমাকে ঠকিয়েছিলে?” জমিদার কিছু বলল না । কিছুক্ষণ পর মুন আবার বলল, “সেদিন তো প্রায় মরতেই বসেছিলাম । শুধু তোমাকে না পাবার জন্য আর আজ তুমি.........” মুনের কথা শেষ না হতেই জমিদার রেগে গিয়ে বলল, “মরলেই ভালো হতো । আজ হয়তো নতুন করে পুরনো কষ্ট জেগে উঠতো না ।” কথাটি বলেই জমিদার রাগে ফোঁসতে লাগলো । মুন তখন বলল, “আজ রাগ দেখাচ্ছ? কিন্তু বেচে ওঠার পড় লন্ডনে যখন গিয়েছিলাম তারপর কি হয়েছিলো সেসব কি জানো?” কথাটি শুনেই রাগ কমে গেলো জমিদারের । আর ভাবতে লাগলো, “সত্যিই তো, ব্যাপারটা তো আগে কখন ভাবিনি ।” এরপর জমিদার মুনের দিকে তাকাল । মুনও জমিদারের দিকে তাকাল । কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর জমিদার বলল, “কি হয়েছিলো?” মুন ওর গল্প বলা শুরু করলো ।”
সেই যে মুন লন্ডন চলে গেলো, অদরকারি কোন কারণে নয় । মুনের চিকিৎসা করাতে । সেদিন আত্মহত্যা করার চেষ্টা ওর বৃথা হয়ে যায় । মরার বদলে উলটো কোমায় চলে যায় । মুনের বাবা লন্ডনেই চাকরি করতেন আর লন্ডনেই বসবাস করতেন । তখন লন্ডনে মোবাইল ফোন থাকলেও বাংলাদেশে তখন সবার কাছে খুব একটা মোবাইল ফোন ছিল না । আল্লাহর রহমতে অপারেশনের পর মুন সুস্থ হয়ে যায় । ধীরে ধীরে পুরনো স্মৃতি ভুলে যেয়ে নতুন করে বাচার চেষ্টা করে । মুনের বাবার একজন বন্ধু ছিলেন । সেই বন্ধুর ছেলের সাথে মুনের বিয়ে ঠিক হয় । মুনের বাবার বন্ধুও বাংলাদেশী । তাই বিয়ে হয় বাংলাদেশেই । মুন তখন ভেবেছিল জমিদারের সাথে দেখা করবে । কিন্তু আর দেখা করলো না । কারণ জমিদারের তো বিয়েই হয়ে গেছে । তাই আবার পুরনো স্মৃতি নতুন করে মনে করার ইচ্ছা ছিল না মুনের । যেদিন বিয়ে হয়। ওইদিন রাতে কমিউনিটি সেন্টার থেকে ফেরার পথে একটা ভাঙ্গা ব্রিজ থেকে পড়ে গাড়ি পড়ে যায় পানিতে । অন্ধকারে ড্রাইভার খেয়াল করে নি ব্রিজ ভাঙ্গা । মারা  যায় মুন ও কেরুখার পরিবারের সবাই । শুধু বেচে যায় মুন ও কেরুখা কিন্তু কেরুখা মানসিকভাবে আঘাত পেয়ে পাগল হয়ে যায় । এরপর মুন নিজেই একটা ব্যাঙ্কে চাকরি করা শুরু করে ।
কথা শেষ করলো মুন । মুনের কথা শুনে জমিদার কিছু বলল না । দুজনেই কিছুক্ষণ চুপ করে রইল । তারপর জমিদার বলল, “তোমাকে তো আমার জীবনে পেলাম না ।” মুন বলল, “সম্পর্কটাতো ভেঙে গেছে । কিন্তু অন্যভাবে সম্পর্কটা আবার গড়ে উঠবে ।” জমিদার মুনের দিকে তাকিয়ে বলল, “অন্নভাবে মানে?” মুন বলল, “এই যে, তখন হলে   স্বামি স্ত্রীর সম্পর্ক, আর এখন, তোমার ছেলে মেয়ের শাশুড়ি আমি, আর আমার ছেলে মেয়ের শশুর তুমি ।” জমিদার কিছু বলল না । হেসে দিলো ।
এদিকে বিজলি উলের সাথে রুমে কথা বলছে । বিজলি বিছানায় পায়ের উপর পা তুলে শুয়ে আছে । উল মাটির উপর পা ছড়িয়ে বসে আছে  । বিজলি পা ঝাকাতে ঝাকাতে বলল, “আবে, পছন্দ হইসে আমাকে?” উল গালেহাত দিয়ে বলল, “আই আই ও, তুমি কি কিউট গো । আমার না অনেক পছন্দ হইসে ।” বিজলি উঠে বসে বলল, “ যাক । তো, কাজ কাম কি করস?” উল বলল, “ আমি একটা পার্লারে কাজ করি ।” বিজলি চমকে উঠে বলল, “আরিব্বাস! তুই আমার মায়ের মেকাপ-তেকাপ কি সব করে পার্লারে ওইসব কইরা দিতে পারবি?” উল বলল, “ হ্যাঁ গো হ্যাঁ। ১০০ বার পারবো । যখন বলবে, তখনই করে দেবো ।” বিজলি বলল, “ যা, আমিও তোরে পছন্দ কইরা  ফেলসি ।”
ওদিকে জুলের সাথে কথা বলছিল শিউলি । শিউলি জুলের দিকে তাকিয়ে বলল, “কিতা করস তুই ফইন্নি? জিম টিম করস না?” জুল হালকা ভয় পেয়ে বলল, “না গো । আমি না ওসব জিম করতে ভয় পাই ।” শিউলি কপালে হাত রেখে বলল, “ওরে ফইন্নির বাচ্চার বাপ, তোরে ক্যামনে আমি সবাইরে দেখামু? শরীরের পাঁজরা পুঁজরা বাইর হইয়া গেসে । শরীর হইয়া গেসে শলার কাঠির নাহাল চিকনা । টা কাজকাম কিতা করস?” জুল বলল, “এখনও কিছুই করি না ।” শিউলি হালকা রেগে গিয়ে বলল, “ওরে তুই তো দেখি আসলেই ফইন্নির বাচ্চার বাপ! তোরে লইয়া যে আমি কি করি । আমারে পছন্দ হইসে?” জুল এবার মিষ্টি হেসে বলল, “খুব ।” শিউলি এবার জুলের মুখের হাসি দেখে বলল, “যা, তোরে আমার পছন্দ হইসে । তোরে বিয়া করতে আমি রাজি ।” এদিকে ছাদে দাঁড়িয়ে কথা বলতে বলতে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো । জমিদার তাড়াতাড়ি করে মুনকে নিয়ে সিঁড়ি ঘরে এলো । তারপর জমিদার বলল, “চল, নিচে যাওয়া যাক । বেশিক্ষন ছাদে দাঁড়ালে লোকজন খারাপ ভাববে ।” মুন কিছু না বললেও মুখের ভাব ভঙ্গি দেখে বোঝা গেলো সেও জমিদারের সাথে একমত । এরপর ওরা নিচে নেমে এলো । জমিদার ঘরে ঢুকে দেখে মেঝের ওপর পড়ে আছে সীমা । আর মেঝে রক্তে ভেসে গেছে । জমিদার তাড়াতাড়ি করে সীমার পাশে বসে ওকে ডাকতে লাগলো, “কি হয়েছে সীমা তোমার? এই সীমা?” মুন তখন সীমার হাতের তালু ঘষে দিচ্ছিল জ্ঞান ফেরানর জন্য । একটু পড়েই সীমা চোখ খোলে । এরপর সীমার দিকে ইশারা করে মুমূর্ষু গলায় বলল, “ওরা আমাদের ঠকিয়েছে । ওরা আমাদের মারতে এসেছে ।” বলেই সীমার মাথাটা মেঝের ওপর পরে যায় আর সীমা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে । জমিদার কিছুক্ষণ সীমার দিকে তাকিয়ে থাকে । ওর বুকটা যেন মটরের মতো জোরে ঢিপ  ঢিপ করছে । কাঁপা কাঁপা হাতে সীমার গালে হাত দিলো । মনে মনে একটু আগে মুনের সাথে যে ভালোবাসাটা আবার অন্যরূপে ফিরে এসেছিলো, সেটা যেন আবার নষ্ট হয়ে গেলো । জমিদার সীমার দিকে ঘৃণার চোখে তাক্কিয়ে বলল, “ছি! তোমরা এরকমটা কেন করলে?” মুন ভয় পেয়ে বলল, “না তো! আমি কিছুই জানি না । বিশ্বাস করো ।” “কিন্তু আমি সব জানি ।” কথাটি বলেই একটা রক্ত মাখা ছুরি হাতে ঐ রুমে এলো কেরুখা । মুন তখন কেরুখাকে বলল, “কেন এমন করছ তুমি? হঠাৎ কি হল তোমার? কেরুখা তখন বলল, “কি? ভয় পাচ্ছ? ভয় পেয়ে কি হবে । বলে দাও সব কথা । চুপ করে কি লাভ । বলেই দাও না, এদের মারতে এসেছি আমরা ।” জমিদার উঠে দাঁড়ালো । তারপর মুনের দিকে তাকিয়ে রাগ করে বলল, “ভুল হয়েছিলো । তোমাকে বিশ্বাস করা । অনেক বড় ভুল হয়েছিলো আমার...............।” হঠাৎ সীমা উঠে বসে বলল, “ও......হ! এই কেরুখা ভাই, আপনাকে না বলসিলাম এই সময় জমিদারের মাকে এনে গলায় ছুরি ধরার জন্য । কেরুখা মাথা চুলকোতে চুলকোতে বলল, “ইশ! একটু যদি মনে থাকে । আমি এখনই আনছি ।” সীমা উঠতে উঠতে বলল, “হইসে থাক । নাটকই তো নষ্ট হয়ে গেলো ।” জমিদার আর মুন মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে হ্যাঁ করে কাহিনী দেখতে থাকে । কি হচ্ছে বুঝতে পারছে না ।” সীমা বলল, “ও কি! তুমি হা করে কি দেখছ?” জমিদার কিছু বলে না । শুধু মুনকে “সরি” বলে অন্য রুমের দিকে যেই যেতে গেলো, অমনি জুল, শিউলি, উল, বিজলি এসে দাঁড়ালো । চারজন একসাথে বলল, “আমরা রাজি বিয়ে করতে ।” জমিদার খুব খুশি । এরপর সবাই একসাথে বসলো বিয়ের দিন ঠিক করতে । মাকে দেখতে না পেয়ে জমিদার বলল, “কি ব্যাপার, মা কোথায়?” কেরুখা মাথায় হাত দিয়ে বলল, “ইশ! নানুমনিকে যে শুটিঙের জন্য  চেয়ারে বেধে রেখে এসেছিলাম আর খোলা হয় নি।” এরপর জমিদারের মাকে নিয়ে আসা হল । জমিদারের  মা বললেন, “সামনের মাসের শুরুর দিকে বিয়ের দিন ধার্য করলে ভালো হয় ।” মুন হঠাৎ মাথা নিচু করলো । কেরুখা তখন বলল, না না, সামনের শুক্রবারই  বিয়ের দিন ঠিক করুন ।” জমিদার অবাক হয়ে বলল, “সেকি! এতো আগে কেন? বিয়ের জন্য সবাইকে দাওয়াত দেবার ব্যাপার আছে, আরও বিভিন্ন ডেকোরেশনের কাজ আছে, এসব কিভাবে এতো তাড়াতাড়ি করবো? শুক্রবার আসতে আর মাত্র ৫ দিন বাকি।” কেরুখা তখন বুড়ো আঙ্গুল কামরাতে কামরাতে বলল,  “কিন্তু এই শুক্রবার না হলে আমি খেলবো না ।” জমিদার বিচলিত হয়ে বলল, কিন্তু কেন?”  মুন মাথা নিচু করা অবস্থায়েই বলল, “কারণ পরের সপ্তাহের সোমবার আমরা লন্ডনে যাব ।” এরপর পরিবেশ একদম চুপচাপ । কারো মুখে কোন কথা নেই । জমিদারের মনটাও একটু খারাপ হয়ে গেলো । অনেকদিন পর পুরনো একটা কিছু এসেছিলো, সে আবার চলে যাবে । কিছু দিয়ে যাবে, কিছু নিয়ে যাবে । নিয়ে যাবে জমিদারের মেয়েকে । আর দিয়ে যাবে নিজের মেয়েকে । অবশেষে বাধ্য হয়ে বিয়ের দিন সামনের শুক্রবারেই ধার্য করা হল । শুক্রবারের কথা । জমিদারদের বিল্ডিং এর ছাদে আয়োজন করা হয় বিয়ের । । আকাশ মেঘলা । ঘূর্ণিঝড় ফনি নাকি ভারত পার করে বাংলাদেশের দিকে আসছে । বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা আছে  । তবে তাতে বিয়ের অনুষ্ঠানের  কোন ব্যাঘাত ঘটবে না । কারণ ছাদের ওপর রেইনপ্রুফ কাপড় দিয়ে শামিয়ানা টাঙানো হয়েছে ।   বিজলি, জুল, শিউলি, উল আর সবার থেকে ভিন্ন হওয়ায় ওদের সাথে কেউ মিশতে চাইতো না । যার জন্য বিয়ের দাওয়াতে নেই ওদের কোন বন্ধু । আবার জমিদার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়ায় ওর পরিবারের আর কেউই নেই । মামামামি, খালাখালু, কাকাকাকি, ফুফাফুফু কেউ বেচে নেই । মামাতো, খালাতো, ফুফাতো, কাকাতো ভাইবোনেরা নিজেদের নিয়েই ব্যাস্ত থাকে । কেউ খোঁজ খবর নেয় না । যার ফলে ওদেরও দাওয়াত দেয়া  সম্ভব হয় নি । মুনের পরিবারের সবাইতো মারা গেছে । ফলে ওদের পরিবারেরও কেউ নেই । কেবল বিল্ডিঙের এবং এলাকার আশেপাশের কয়েকজন লোককে দাওয়াত দিলো জমিদার । সকাল থেকেই গান বাজনা । “মালক্কা ভানুর দ্যাশেতে............” ছাদের একপাশে রান্নাবান্না দেখাশুনা করছে  জমিদারের মা । বাবুর্চিদের খালি এই আদেশ দেয়, ঐ আদেশ দেয় । এদিকে জমিদার সব লোকজনদের আপ্যায়ন করায় ব্যাস্ত । সীমা আর ছাদের অন্য পাশে চারটি আসনে বসে আছে জুল, তার পাশে বিজলি,  তার পাশে উল, তার পাশে শিউলি । কেরুখা আর সীমা ওদের আসনের পেছনে ডায়ালগ মুখস্থ করায় ব্যাস্ত । অনুষ্ঠানে ওরা নাটক করবে । মুন কখনও রান্নাবান্নার দিকটা দেখছে, কখনো মেহমানদের  সাথে কথাবার্তা বলছে । এদিকে স্টেজের ওপর গানের তালে তালে নাচছে  বিল্ডিঙের সব ছোট সদস্যরা । ছাদের মাঝখানে খাওয়া দাওয়ার জন্য টেবিল চেয়ার রাখা হয়েছে । কিছুক্ষণ পড়  কাজি সাহেব এলেন । জমিদার সবাই বললেন, “সবাই আসুন আসুন  । বিয়ে শুরু হবে এখনই ।” সাবই যে যেখানে ছিল চলে এলো বিয়ের মণ্ডপে । চারজনের সামনে একটা চেয়ার দিয়ে বসতে দেয়া হল   কাজি সাহেবকে । কাজি সাহেব বিয়ের সময় যা যা বলার সব বললেন । পরিশেষে নিয়ম অনুযায়ি বললেন, “বলো মা, কবুল ।” এরকমটা সবাইকেই জিজ্ঞাস করলেন । জুল আর উলতো কান্নাকাটি করে অস্থির । কিন্তু বিজলি আর শিউলির কোন রকম কান্নাকাটি কিছুই নেই । কাজি সাহেব এরপর বললেন, “বিবাহ সম্পন্ন............” কাজি সাহেবের কথা শেষ না হতেই হঠাৎ গুলির আওয়াজে সবাই চমকে উঠলেন । তাকিয়ে দেখলেন, মুখোশ পড়া একটা লোক হাতে গুলি আকাশের দিকে তাক করে দাঁড়িয়ে আছে । এরপর গুলি নামিয়ে বলল, “এ বিয়ে হতে পারে না ।” জমিদারের মা ভয়ে সুরা পড়তে লাগলেন । মুখোশ পড়ে থাকায় জমিদার ভাবলেন এটা হয়তো কেরুখা, আবার শুটিং করার ধান্দায় মেতেছে । মান সম্মান বাঁচাতে কাছে যেয়ে কানে কানে বললেন, “এই কেরুখা! প্লিজ পাগলামিটা থামান । বিয়েটা শেষ হলে আমি নিজে আপনাকে সত্যি সত্যি একটা মুভিতে শুটিং করার সুযোগ করে দেব ।” মুন তখন জমিদারের কাছে যেয়ে জমিদারের কানে কানে বলল, “আরে এটা কেরুখা না । কেরুখা তো ওইখানে ।” জমিদারের বিয়ের মণ্ডপের দিকে ইশারা করে কথাটা বলল মুন । সত্যি সত্যিই কেরুখা ওখানে বসে কলা খাচ্ছে । এরপর জমিদার ভয় পেয়ে বলল, “তাহলে এটা কে?” মুখোশ পরিহিত লোকটা তখন জমিদারের দিকে তাকিয়ে বলল, “কিরে জমিদার আর মুন, তোদের ছেলেমেয়ের বিয়েতে আমাকে দাওয়াত দিলি না?” জমিদার আর মুন কিছু বুঝল না । লোকটা তখন বলল, “না আমি ভালভাবে তোর বিয়ের দাওয়াত খেতে পেরেছি, না মুনের বিয়ের দাওয়াত খেতে পেরেছি ।” জমিদার বলল, “দেখুন আপনার কথা না আমি কিছুই বুঝতে পারছি না । কে আপনি?” লোকটা তখন ওর মুখোশ খুলে ফেলল । জমিদার দেখল, এটা ওর সেই বন্ধু, যে ওর বিয়ের দিন জমিদারকে মুনের ব্যাপারে সব খোঁজ খবর জানিয়েছিল । ওর বন্ধুর নাম ছিল সোহান । জমিদার একটা হাসি দিয়ে বলল, “সোহান তুই?” তারপর জমিদার সোহানকে জড়িয়ে ধরলো । তারপর বলল, “ওরে ফাজিল, তোরে দাওয়াত দেয়া লাগে নাকি, সেই যে আমার বিয়ের পড় চলে গিয়েছিলি, তারপর আর তোর দেখা পাই নি ।“ এরপর সোহান বলল, “আমি একা আসিনি । তোর ভাবিও এসেছে ।” এরপর সোহানের স্ত্রীও এলো । পাশে একটা বছর ১৭র ছেলে । ওকে দেখিয়ে সোহান বলল, “এইযে আমার ছেলে, সাইফ ।” সাইফ জমিদারকে সালাম দিলো । জমিদারও সাইফকে সালামের জবাব দিলো । এরপর ওদের ভেতরে আসতে বলল । এরপর কাজি মোনাজাত পড়া শুরু করলেন । এরপর কাজি মোনাজাত পড়া শুরু করলেন । তারপর আরও নানা অনুষ্ঠান, খাওয়াদাওয়া  ইত্যাদি দিয়ে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হল । সন্ধ্যা তখনও হয় নি । নিয়ম অনুযায়ী এখন উল আর বিজলিকে নিয়ে যাবে মুন ও কেরুখা । এদিকে শিউলি ও জুল থেকে যাবে জমিদারের বাড়ি । তাই গাড়ি সাজান হল । গাড়িতে উঠেই বিজলির কোন কান্নাকাটি নেই । যেমন আছে, তেমনি । আরও বলছে, “উহ! এইসব শাড়ি গয়না পইড়া যে কতক্ষন থাকা লাগবো । এদিকে কোন কান্নাকাটি নেই শিউলিরও । সে তো ইতোমধ্যে গয়না খুলে শাড়ির আঁচল দিয়ে বাতাস খাচ্ছে । অথচ বোনকে ছেড়ে থাকতে না মন চাচ্ছে উলের, না মন চাচ্ছে জুলের । দুজনেই বোনের জন্য কান্নাকাটি করে অস্থির । যা হোক একটু পড় গাড়িটা ছেড়ে দিলো । ভালো লাগছে না জমিদারের, ভালো লাগছে না সীমার, ভালো লাগছে না মুনের, ভালো লাগছে মা কেরুখার । নিজেদের মেয়েদের ছাড়া থাকতে আর কারই বা ভালো লাগে । ছেলেদের আবার সে সমস্যা নেই । ছেলেরা মা বাবার সাথেই থাকে । মেঘলা আকাশের নিচে  গুড়িগুড়ি বৃষ্টির মাঝে ভেজা রাস্তার ওপর দিয়ে গাড়িটিকে যতদুর দেখা যায় ততদুর পর্যন্ত চেয়ে থাকল জমিদার, সীমা, জমিদারের মা, সোহান, আর বিল্ডিঙের অন্যান্য সবাই ।
একটু পড়েই সন্ধ্যা হয়ে গেলো । জুলের রুমেই বাসর ঘরের আয়োজন করা হয়েছে । বাসর ঘরে শার্ট প্যান্ট পড়ে বসে আছে শিউলি । আর বোনের জন্য কান্নাকাটি করছে জুল । সীমার রুমে শুয়ে শুয়ে সীমা নিজের মেয়ের জন্য কান্নাকাটি করছে । জমিদারের মায়ের রুমে বসে জমিদারের মায়ের সাথে গল্প করছেন সোহানের স্ত্রী । পাশেই সোহানের ছেলে সাইফ বসে বসে মোবাইল চালাচ্ছে । ড্রইংরুমে বসে গল্প করছে জমিদার ও সোহান । সোহান বলল, “আজকের আবহাওয়াটা কেমন যেন অদ্ভুত । খুব বাতাস, কিন্তু বৃষ্টি সেরকম নেই ।” জমিদার একটু মাথা চুলকে বলল, “আসলেই রে । আকাশটা খুবই মেঘলা । রাতে বড়সড় একটা ঝড় আসতে পারে ।” সোহান একটু নড়েচড়ে বলল, “ সে অস্বাভাবিক কিছু না ঘূর্ণিঝড় ফনি আসছে । ফণীর আয়তন নাকি বাংলাদেশের থেকেও বড় । ঝড় হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না ।” জমিদার একটু ইয়ার্কির ছলে  বললেন, “যাক, ঝড়ই তো হচ্ছে । ভুমিকম্প তো আর না ।” সোহান একটু ভয় পেয়ে বলল, “অমন কথা বলিস না । কখন যে কি হয়, বলা যায় না ।” এরপর কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ থাকল । সোহান বলল, “তুই জোর করলি বলে থাকতাম । নাহলে আমি বাসায় চলে যেতাম এতক্ষণে ।”
 জমিদার ভ্রু কুঁচকে বলল। “বদমাইশ রে, একটা দিন আমার বাসায় তোকে থাকতে বললাম, আর তুই এতো কথা বলতেসিস?” সোহান একটু হেসে বলল, “আছি রে বাবা, আছি । টা চাকরি বাকরি কি করা হয়?” “এইতো, হাসপাতালে ডাক্তারি করি ।” সোহান খুশি হয়ে বলল, “তুই ডাক্তার!” “আরে না । ডাক্তার না ।”  “তবে?”  “হাসপাতালে ছুটির দিনে আর মাঝে মাঝে রাতে থাকতে হয় । হঠাৎ কোন রোগী এলে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেবার জন্য ।” “ও আচ্ছা ।” হঠাৎ সে সময় দরজায় কেউ কড়া নাড়ল । জমিদার জোর গলায় বললেন, “দরজা খোলা আছে ।” দরজা খুলে ভেতরে এলো মুন, কেরুখা, বিজলি আর উল  হালকা ভেজা অবস্থায় । ওদের দেখে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো জমিদার আর সোহান । জমিদার বলল, “তোমরা! যাও নি তোমরা?” মুউন তখন বলল, “জমিদার, আমরা গিয়েছিলাম ঠিকই কিন্তু কিছুদুর যাবার পর আকাশে বজ্রপাত আমার একটা কথা মনে পড়ে । জমিদার জিজ্ঞাস করলো, “কি কথা?” মুন বলল, “আসলে জমিদার, আমার বিয়ের দিনও একই আবহাওয়া ছিলো । বজ্রপাত ছিল, আর তার পরেই দুর্ঘটনাটা ঘটেছিলো । শুধু আমার বিয়েতেই নয় । আমার মা, আমার নানি, এমনকি আমার নানির মায়েরও এই ঘটনা ঘটেছিলো  । তাই আমি এবার আর রিস্ক নিতে চাই না ।” ওদের আসতে দেখে জমিদারের বাসার দরজার সামনে বিল্ডিঙের লোকজনের ছোটোখাটো ভীর জমে যায় । ওদের মধ্যে বাড়িওয়ালাও ছিলেন জমিদার মুনকে বললেন, “কিন্তু ওরা থাকবে কোথায়? সবাই তো আর একসাথে থাকতে পারবো না, ওদের তো আজকের দিনটা একসাথে থাকতে হবে ।” বাহির থেকে বাড়িওয়ালা বললেন, “জমিদার, তুমি কোন চিন্তা করো না । আমরা দেখছি ব্যাপারটা ।” জমিদার বলল, “না, সেটা কিভাবে হয়, আপনারা সারাদিন এতো কষ্ট করলেন, আবার কি করবেন?” “কোন কথা নয় ।” বলেই জমিদারের বাড়ির দরজা আটকে দিলেন বাড়িওয়ালা । জমিদার কিছু বলতে গিয়েও পারলো না । প্রায় ঘণ্টা খানেক অপেক্ষা করার পর দরজা খোলা হল । এরপর বাড়িওয়ালা জমিদারকে নিয়ে গেলেন জমিদারদের বাসার পাশের বাসায় । ওটা খালিই ছিল । জমিদার দেখল, বাড়িওয়ালা দুটো খাট দুটো রুমে এনেছেন । বিল্ডিঙের আর সবাই যে যা পারে, বালিশ, চাদর এনেছে । আর ফুল দিয়ে বিছানা দিয়ে সাজিয়েছে । আর লাইটের ব্যাবস্থা করা হয়েছে । জমিদার খুশিতে কান্না করে দিলো ।
যা হোক, সেই রাতে ওদের থাকার ব্যাবস্থা হয়ে গেলো । জমিদারের মা জুলের রুমে, সোহান ও তার পরিবার গেস্ট রুমে । মুন ও কেরুখা বিজলির রুমে, জমিদার ও সীমা জমিদারের রুমে থাকার ব্যাবস্থা করলো । রাতে মুন জমিদারের রুমে এসে বসে ছিল । কারণ সীমা আর কেরুখা বিজলির রুমে অভিনয় করছে । জমিদার গেস্ট রুম থেকে সোহানের সাথে একটু গল্প করে এসে রুমে মুনকে দেখে বলল, “একি, তুমি এই রুমে?” মুন হালকা হেসে বলল, “আপনার স্ত্রী তো আমার স্বামীর সাথে বাঘি ৩ এর শুটিঙের প্র্যাকটিস করায় ব্যাস্ত ।” জমিদার বসতে বসতে হালকা হেসে বলল, “ওর পাগলামোর কথা আর বোলো না সারাদিনই এই করে বেড়ায় ।” মুন বলল, “আমার স্বামিও কি কম নাকি ।” ওদিকে বাসর ঘরে চলছে অদ্ভুত কাণ্ডকারখানা । একরুমে বিজলি উলকে বাধ্য করে জিম করাচ্ছে । আর বলছে, “তোর বডি বানানো লাগবো । নাইলে তোর নাহাল শুটকি বর লইয়া আমি বাইরে যাইবার পারমু না ।” পাশের রুমে  শিউলি জুলকে দিয়ে পা টেপাচ্ছে । আর বলছে, “বেকার হইয়া ভালোই করসস । সারাদিন বাসায় থাকবি, আর আমার সেবা যত্ন করবি । রাত হয়ে গেছে । সবাই যে যার রুমে ঘুমিয়ে পড়েছে । আকাশে প্রচুর মেঘ । রাত ২টা ৩০ এর দিকে প্রচুর ঝড় আর বজ্রপাত । কিন্তু সবাই গভীর ঘুমে নিমগ্ন । একটু পরেই কাক ডেকে উঠলো । আর তারই একটু পড়ে কেঁপে উঠলো সারা বাংলাদেশ । তুমুল ভুমিকম্প । উৎপত্তিস্থল সিলেটে । রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ৮.২ ।
“রাতে কি হয়েছিলো কিছুই জানি না । সকালে অল্প সময়ের জন্য জ্ঞান এসেছিলো । শুধু দেখেছিলাম আমার স্ত্রী ও ছেলে কোনভাবে বেচে গেছে । একটু আহত হয়েছে । কিন্তু আমার বন্ধু জমিদার আর ওর স্ত্রী সীমার দেহ পড়ে আছে একপাশে । হয়তো উদ্ধারকর্মীরা ওদের আলাদা করেছিলো । মুন আর কেরুখা তো আরও বাজেভাবে মারা গেছে । ওদের মুখ এমনভাবে নষ্ট হয়ে গেছে যে চেনার উপায় মুখ দেখে বোঝাই যায় না । পোশাকটা দেখে চিনতে পেরেছিলাম । আরেকপাশে দেখলাম বিজলি, জুল, শিউলি, উল । আহত হয়ে পড়ে আছে । তারপরেই আমার জ্ঞান চলে যায় । জ্ঞান ফিরলে নিজেকে আমি বাসায় দেখি । এরপর যতদুর শুনেছিলাম, বিজলি, জুল, শিউলি, উল ওদের নাকি একটা মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে । আমি ঠিক জানতাম না বলে কিছুই খোঁজ খবর নিতে পারিনি । তবে অবাক করা বিষয়, ঐ ভুমিকম্পে  ঐ বিল্ডিঙের কেউ মারা যায় নি । শুধু মারা গেছে, মুন, কেরুখা, জমিদার, সীমা, জমিদারের মা । জানিনা, মুনের ঐ ঘটনার সাথে কি অভিশাপ আছে, তবে ঐ দিনটা আমার জন্য ছিল খুবই কষ্টের । আজ সেই দিনটার ৫০ বছর পূর্ণ হল ।” “কিগো, তুমি ঘুমাবে না?” বিছানা থেকে স্ত্রীর ডাক শুনে, ডায়রিটা লেখা বন্ধ করে চেয়ার থেকে উঠলো সোহান । তারপর জানলার কাছে যেতে যেতে বলল, “ঘুম আসছে না ।” সোহানের স্ত্রী আর কিছু বলল না । সোহান কেবল জানালার দিকে চোখ বাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে । সেদিন আকাশটা মেঘলা ছিল, আর ৫০ বছর পর আজ আকাশে কোটি কোটি তারা মিটমিট করছে ।