আমি ক্রিকেটার হবো
আমি ক্রিকেটার হবো
“কতো
করে বললাম , ছেলেটাকে একটু বোঝাও। তা না , উল্টে আরও ছেলেকে প্রশ্রয় দাও”
বলল শায়নের মা। সায়নের বাবা বলল , “ আহা, কি হল আবার?”
-“তোমার ছেলেকে সেই কখন পাঠিয়েছি বাজার আনতে ।
এখনও আসে নি । কোথাও গিয়ে দ্যাখো আবার ক্রিকেট খেলায় মেতেছে ’’
-“ছেলে মানুষ তো খেলাধুলা করবেই।’’
-“ হ্যাঁ , দাও আরও প্রশ্রয়। সামনে ওর এস এস সি
পরীক্ষা । কোথায় পড়াশুনায় মন দেবে , তা না ।’’
ওদিকে বাজার করে নদীর ধার দিয়ে বাড়ি ফিরছিল শায়ন
। হঠাৎ দেখল , ওর বন্ধু সামি , রাফি , আর সজল নৌকায় করে কোথাও যাচ্ছে । সজল ওর সবচেয়ে
প্রিয় বন্ধু ।
শায়নঃ কীরে সজল , কোথায় যাচ্ছিস ?
সজলঃ নদীর চরে । ওখানে ক্রিকেট ম্যাচ হবে । দেখতে
যাচ্ছি । তুই যাবি ?
শায়নঃ সন্ধ্যার আগে ফিরতে পারবো তো ?
সজলঃ ধুর, সন্ধ্যার পর কেউ চরে থাকে নাকি । চল
।
সজল শায়নকে ধরে নৌকায় তুলল । নৌকার মাঝি নৌকা
চালানো শুরু করলো।
শায়নঃ রাব্বি আসে নি ?
সজলঃ না । কি নাকি সিনেমা আছে । ও সেটা দেখবেই
।
শায়নঃ ও তো সিনেমা ছাড়া আর কিছুই বঝে না ।
নৌকা চরে পৌঁছেছে । খেলা ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে
। ওরা বসে পড়লো দর্শকদের মাঝে । দুই গ্রামের মধ্যে খেলা হচ্ছে । তাই অনেকেই খেলা দেখতে
এসেছে । আকাশে মেঘ জমছে ।
এদিকে শায়নের মা চিন্তায় পরে যায় ।
শায়নের মাঃ হ্যাঁ গো , আমার না এখন খুব চিন্তা
হচ্ছে । দ্যাখো , আকাশে মেঘ জমেছে।
শায়নের বাবাঃ ধুর, তোমরা মহিলারা খালি চিন্তা
করো । কিছুই হবে না। দেখো, সন্ধ্যার পর ঠিকই ফিরে এসেছে।
শায়নের মাঃ তুমি না বাবা হবার অযোগ্য । কোথায়
ছেলেটাকে নিয়ে চিন্তা...............
হঠাৎ পাশের বাড়ির রাব্বির মায়ের কান্নার আওয়াজ
আর “ও আল্লাহ গো , এ আমার কি হল গো .........’’ চিৎকার শুনে থেমে গেল শায়নের মা।
শায়নের মাঃ কি হল আবার ?
শায়নের বাবাঃ তুমি থাকো , আমি দেখে আসছি ।
ওদিকে শায়ন ও ওর বন্ধুরা খেলা দেখায় এতই উৎফুল্ল ছিল যে ওরা দ্যাখেই নি যে আকাশে মেঘ জমেছে । কিছুক্ষণ পর খেলা বন্ধ হয়ে গেলো । শায়ন হঠাৎ এক খেলোয়াড় কে বলল ,
শায়ন “ একি , তোমরা চলে যাচ্ছ কেন , খেলবে না
?”
খেলোয়াড়ঃ আকাশে মেঘ জমেছে । ঝড় আসছে । খেলা
হবে না । যাও তোমরা ।
সবাই চলে গেলো যে যার নৌকা নিয়ে । আর কোনো নৌকা
অবশিষ্ট রইলো না ।
সজলঃ একি, আমাদের নৌকা কোথায়?
শায়নঃ তাই তো ।
সামিঃ এখন কি হবে ?
আকাশে মেঘ ডাকছে । বজ্রপাত হচ্ছে আশেপাশে কোথাও।
হঠাৎ শায়ন সজলকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো ।
সজলঃ কাঁদিস না দোস্ত , তোর কোনও ক্ষতি হতে দেব
না।
শায়নঃ আমি আমার জন্য কাঁদছি নারে , আমি মরলে মরি,
কিন্তু নৌকায় বাজারের ব্যাগ টা রেখে এসেছি, ওটা বাসায় পৌঁছে দিস । না হলে আম্মু আমার
রুমের সাকিব ভাই, মুশফিক ভাই, তামিম ভাই, সাব্বির ভাই, মোস্তাফিজ ভাই, মাশরাফি ভাইয়ের
ছবিগুলো ছিঁড়ে ফেলবে ।
সজল একটু অবাক দৃষ্টিতে তাকালো শায়নের দিকে ।
কিছুক্ষণ পরে নৌকা নিয়ে মাঝি চলে আসলো।
সজলঃ কোথায় ছিলেন আপনি ?
মাঝিঃ তোমরাই তো কইলা , মাগরিবের আগে শেষ হইব
, তাইতো একটু কামে গেসিলাম।
শায়নঃ আমার বাজারের ব্যাগ কোথায় ?
মাঝিঃ আছে নৌকায়। এইবার চলো । তমাগো ঐ পাড়ে নামাইয়া
দেই।
ওরা নৌকায় উঠলো । নৌকা চলতে শুরু করলো । এদিকে
শায়নের বাবা রাব্বিদের বাসা থেকে ফিরেছে।
শায়নের বাবাঃ এখন তো রাব্বির অবস্থা দেখে আমারও
চিন্তা হচ্ছে।
শায়নের মাঃ কেন, কি হয়েছে ?
শায়নের বাবাঃ রাব্বিকে নাকি কিছু মাস্তানরা তুলে
নিয়ে গেছে । ওকে বলেছে, কোন নায়িকার সাথে দেখা করাবে। কি জানি নাম কারিনা কাপড়
– চোপড় ।
শায়নের মাঃ তা দেখল কে ?
শায়নের বাবাঃ সজলের বড় ভাই সরল দেখেছে।
শায়নের মাঃ তা ও কিছু করতে পারল না?
শায়নের বাবাঃ কি করে করবে? প্রত্যেকটা মাস্তানের
কাছে যে বন্দুক ছিল। কাছে গেলেই মেরে ফেলত।
শায়নের মাঃ তোমার ছেলেও তো ঐ ক্রিকেটারদের পাগল।
কেউ যদি ওকেও তুলে নিয়ে যায়? মিমি আর শাওনকে হারিয়েছি। এখন শায়ন কে হারাতে চাই
না।
বলেই কাঁদতে শুরু করলো শায়নের মা । শায়নের বাবাও
চিন্তায় পরে গেলো । এমন সময় শায়ন এলো ।
শায়নের বাবাঃ কোথায় গিয়েছিলি ?
শায়নঃ এই খেলতে।
শায়নের বাবাঃ ঝড়ের মধ্যেও?
শায়ন আর কিছু বলল না ।
শায়নের বাবাঃ যাও , ঘরে যাও ।
শায়ন মায়ের কাছে গিয়ে বাজারের ব্যাগটা দিয়ে
বলল “ তোমার বাজার’’ । শায়নের মা শুধু কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো।
সেদিন সারারাত বৃষ্টি হয়েছে। রাত ৯.০০ টার দিকে
বৃষ্টি থেমে গেলো। শায়ন ওর পড়ার টেবিলে বসে ওর ক্রিকেটার ভাইদের ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে
আছে।
শায়নঃ [ কাঁদতে কাঁদতে ] তোমরা দেখো , আমি একদিন
ক্রিকেটার হবোই । অনেক বড় ক্রিকেটার । ভাগ্যে থাকলে হয়ত তোমাদের সাথেও খেলবো। হয়তো
এর জন্য আমাকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হবে । কিন্তু............[হাত দিয়ে দু চোখ মুছে
] আমি ক্রিকেটার হবো।
আড়াল থেকে দেখছিলো সব শায়নের মা ।
শায়নেব মা: মা কে হারাতেও রাজি আছিস?
শায়ন:[চোখ মুছে পেছন ফিরলো] একি মা, তুমি?
ওর মা কিছু বলল না। চলে গেলো। রাত ১১:০০ টার কথা।
টেবিলের ওপর মাথা রেখে শুয়ে আছে শায়ন। পাশের রুমে ওর বাবা মা কথা বলছিলো। হঠাৎ দরজার
কাছে যেয়ে আড়ি পেতে কথা শুনতে থাকলো।
শায়নের বাবা: সত্যি ও এসব বলছিলো?
শায়নের মা: হ্যাঁ । যদি ওর কিছু হয়ে যায়, আমি
কিন্তু বাঁচবো না।
শায়নের বাবা: ইশ্!!! তোমরা মহিলারা যে কি না ।
কথায় কথায় শুধু আলতু ফালতু কথা।
শায়নের মা: তাহলে তুমি কি করবে গো?
শায়নের বাবা: দেখি । কি করা যায়। দরকার পড়লে
ওর ব্যাটবল সব পুড়িয়ে দেবো। সাথে ঐ ছবি গুলোও। নাও ঘুমাও এখন। কাল তো আবার বিজয়
দিবস ।
সবকিছু পুড়িয়ে দেয়ার কথাটা শায়নের শরীরে কাঁটার
মতো বিঁধলো । রাত ১২ টার দিকে ওর মা বাবা যখন গভীর ঘুমে মগ্ন, তখন ও তার ব্যাগ গুছিয়ে একটা চিঠি লিখে বাবার পকেট থেকে ১০০০ টাকা নিয়ে সব ক্রিকেটার ভাইদের ছবিগুলো খুলে নিয়ে বাড়ি থেকে
বেড়িয়ে গেলো
রাস্তায় পানি । রেল লাইনের পথ ধরে হাঁটছে শায়ন।
রাত তখন ১০.০০ টা বাজে । হঠাৎ একটা ট্রেন দেখল । মালবাহী ট্রেন । কয়লা বহন করে । শায়ন
একটা কামরায় উঠে পড়লো । কিছুক্ষণ পর ট্রেন ছেড়ে দিলো ।
শায়ন: এই ট্রেন টা নিশ্চয়ই ঢাকা যাচ্ছে। যেখানে
সাকিব ভাই, মাশরাফি ভাইয়েরা ক্রিকেট খেলে............।
আরও অনেক কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লো শায়ন।
রাত তখন ৩:০০ টা। ট্রেন এসে পৌঁছলো কমলাপুর স্টেশনে।
শায়ন ট্রেন থেকে নামলো। চোখে তন্দ্রা নিয়ে হাঁটতে লাগলো রেললাইন এর পথ ধরে। হটতে হাটতে অনেক সুন্দর জায়গায় এলো।
দেখলো, ওর বামে কিছুদুর ঘাস, তারপরেই মেইন রোড। রেললাইনের উপর অন্ধকার । কিন্তু মেইন
রোডের উপর আলো আছে । আর ওর ডানে একটা পুকুর । শায়ন আবার হাঁটতে শুরু করলো।
হঠাৎ পেছনে তাকিয়ে দেখলো ট্রেন আসছে । তারপর সামনে
তাকিয়ে ট্রেনের সামনে থাকা আলোয় ওর মনে হলো কিছুদুরে কেউ একজন ট্রেন লাইনের উপর বসে
আছে। বুঝতে বাকি রইলো না, সে আত্মহত্যা করার জন্য বসে আছে । শায়ন ছুটে গেলো তাকে বাঁচাতে
। শায়ন দৌড়াতে লাগলো। ট্রেনটা কিছুক্ষণ আগে কমলাপুর থেকে ছেড়েছে বলে স্পিড কমই ছিল
। কিন্তু তাও সে ট্রেনের নিচে পড়ে মরে যাবে
।
শায়ন তাকে হাত ধরে টেনে রেললাইনের উপর থেকে সরাতেই
ট্রেন ওখন দিয়ে চলে গেলো।
শায়ন দেখলো এটা একটা মেয়ে। ঠাস করে মেয়েটা শায়নের
গালে চড় লাগিয়ে দিলো
। শায়ন
ওর দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো।
শায়ন : আমি আপনাকে বাচালাম, আর আপনি আমাকে মারলেন?
জেবা(মেয়েটা): আমাকে বাচিয়ে আপনার কী লাভ? মরতাম,
তাহলেই তো ভালো হতো । বেচে থেকে লাভ কী আমার?
শায়ন : আপনি কী শিরক বোঝেন?
- বুঝি। তো?
- জানেন, মরার ইচ্ছাপোষণ করা এক ধরণের শিরক?
মেয়েটা আর কিছু বললো না। শুধু জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস
ফেলছিল। শায়ন বুঝলো, মেয়েটা শিরকের শাস্তির ভয়ে এমন করছে।
শায়ন: নাম কী আপনার?
জেবা।
বাসা কোথায় ?
ধানমন্ডি ।
হঠাৎ মাথায় এসব কাজ করার চিন্তা এলো কেনো?
মেয়েটা কিছু বলল না। শায়ন দেখলো, রাস্তার পাশে
বসার জন্য সিট দেয়া ।
শায়ন: চলুন। ওখানে যেয়ে বসি?
আমি একটু তুলবেন , আমি উঠতে পারছি না।
শায়ন মেয়েটাকে তুলল।
আমি না খুব ক্লান্ত । আমাকে একটু ধরে নিয়ে যাবেন?
উফ্.........। আপনাকে নিয়ে বড় মুসিবতে পড়লাম।
ঠিক আছে। চলুন।
শায়ন ও কে ধরে সিটে বসালো। রোড লাইটের আলোতে দেখতে
পেলো, মেয়েটা চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। অনেক দিন ধরে ঘুমায় নি ।
আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন। আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে অনেক
দিন ধরে ঘুমান নি।
আমাকে একটু শুইয়ে দেবেন?
এটাও কি নিজে পারেন না?
শায়ন মেয়েটাকে শুইয়ে দিলো।
আপনি কোথায় ঘুমাবেন?
পাশের গাছটার নিচেই ঘুমাবো।
কথাটি বলেই শায়ন গাছের নিচে চলে গেলো। রাস্তার
পাশেই একটা মসজিদ ছিলো যার বাইরে একটা ডিজিটাল ঘড়ি ছিলো। দেখলো, 4:00 টা বাজে। দেখতে
দেখতে 4:30 বেজে গেলো । তবুও মেয়েটার ঘুম
আসছে না। মেয়েটা হঠাৎ শুনতে পেলো শায়ন ঘুমের মধ্যে কি কি সব বিড়বিড় করে বলছে
"থ্যাঙ্কস সাকিব ভাই..... ঠিক আছে মাশরাফি ভাই আমি পরের বার চেষ্টা করবো.............."
মেয়েটা একটু উঁকি দিয়ে দেখলো, শায়ন ঠান্ডায়
গুটিসুটি হয়ে ঘুমিয়ে আছে। গাছের সঙ্গে লাগানো
মাশরাফি ভাই, তামিম ভাই, মুশফিকুর ভাই, আরোও অনেক ছবি। মেয়েটা আবার শুয়ে পড়লো।
" কে এই ছেলেটা। দেখে মনে হয় যেনো কত দিনের পরিচিত ।" আরও অনেক কিছু ভাবতে
লাগলো মেয়েটা । ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে
পড়েছে, টেরও পায়নি।
ঘুম থেকে উঠে দেখে, শায়ন নেই। গাছের সঙ্গে লাগানো
ওর ক্রিকেটার ভাইদের ছবিগুলোও নেই। উঠে বসলো মেয়েটা । তারপর হাঁটতে হাঁটতে মেয়েটা
ঘাসের রাস্তা পেরিয়ে রেললাইনের উপর বসে পড়লো। রাস্তায় লোকজনের আসা যাওয়া শুরু হয়েছে।
ব্যাস্ত রাস্তা । মসজিদের ঘড়িটায় দেখলো 9:00 টা বাজে। হঠাৎ একটা ট্রেনের আগমন ঘটলো।
মেয়েটা ভাবলো, এই ট্রেনের নিচেই আত্মহত্যা করবে। কিন্তু
রাতে শায়নের বলা কথাটা মনে পড়লো। তাই মেয়ে টা
ট্রেন আসার আগেই রেললাইন থেকে উঠে পড়লো। মেয়েটা মনে মনে বলল " কে ছিল ছেলেটা?
নামটাও তো জিজ্ঞাসা করলাম না আদৌ কী ছেলেটা আছে, নাকি আমি ঘুমের ঘোরে এসব দেখেছি?"
হঠাৎ জেবা দেখলো, শায়ন আসছে । হাতে প্যাকেট আর
2.5 লিটার পানির বোতল। শায়ন ওর দিকেই আসলো
।
শায়ন: কি, আবার মরার ইচ্ছা হচ্ছিল না কি?
জেবা: না মানে........।
ঠিক আছে, বলা লাগবে না। বসবেন চলুন।
শায়ন আর জেবা বসার জায়গায় গিয়ে বসলো।
শায়ন: [প্যাকেট টা এগিয়ে দিয়ে] নিন খান। এখন
আবার বলবেন না যে আপনি এতই ক্লান্ত যে খেতেই পারবেন না।
মেয়েটা কিছু বলল না। শুধু ওর হাত টা দেখছিলো।
শায়নও দেখলো, মেয়েটার হাত কাটা।
শায়ন মেয়েটাকে খাইয়ে দিলো। খাওয়া শেষে মেয়েটা
শায়ন কে জিগ্যেস করলো
জেবা: তোমার নামটা শোনা হয়নি।
শায়ন: আমার নাম শায়ন । তোমার নাম তো জবা, তাই
না?
জেবা: না, জেবা।
শায়ন:ওও...। আচ্ছা, তোমার কি কিছু হয়েছে?
জেবা : কেন?
শায়ন: গতকাল আত্মহত্যা করছিলে যে?
ওওও.... অনেক বড় ইতিহাস । শুনবে ?
বলো, শুনি।
গতকাল রাতে ১৬ ডিসেম্বর উদযাপনের জন্য ঘর সাজানোর
সময় আমার মামা আমাকে বলে, আমি নাকি এই পরিবারের
আসল মেয়ে নই। আমাকে হাসপাতাল থেকে চুরি করা হয়েছে ।
এই?
হুমমম....।
কত বড় ইতিহাস রে বাবা।
তোমার বাসা কোথায়?
টাঙ্গাইল । যমুনা নদীর পাড়ে ।
তাহলে তুমি ঢাকায় কেনো?
বাড়ি থেকে পালিয়েছি।
কেনো?
ক্রিকেটার হবার ইচ্ছা পূরণের জন্য ।
ও । তাইতো বলি। রাতে কেনো ক্রিকেটারদের ছবি টাঙিয়ে
ঘুমাও।
হ্যা। ছোট বেলা থেকেই আমার ইচ্ছা একজন ক্রিকেটার
হবো।
জেবা: আমার বড় ভাই একটা ক্রিকেট ক্লাবের সদস্য
। ভালো খেললে ওখান থেকে বিকেএসপি তে নিয়ে যায় ।
শায়ন: সত্যি!!! কিন্তু আপনি যে বললেন ওটা আপনার
পরিবার ই নয়? রাজি হবে তো?
আমার পরিবারের কেউ জানেনই না যে আমি সব জেনে গেছি।
ওওও...।
চলুন তাহলে, যাই।
কিন্তু সারারাত যে বাইরে ছিলেন, তার কি জবাব দেবেন?
হুমম... । আগে তো যাই, তারপর দেখা যাক কী করা যায়।
কতদুর আপনার বাসা?
এখান থেকে পাঁচ মিনিটের রাস্তা ।
শায়ন আর জেবা হাটতে লাগলো। পাঁচ মিনিট পর বাড়ি
পৌঁছে গেলো। বাড়িতে জেবার বাবা, মা, ভাই , মামা, মামি, আর কাজের বুয়া রোকসানা ছিল
যদিও এরা কেউই ওর আপন নয় । ঘরে ঢুকতেই দেখলো বাবা ডাইনিং টেবিলে বসে চিন্তা করছে।
মা সোফায় বসে কাঁদছে আর রোকসানা শান্তনা দিচ্ছে । মামা ফোন টিপাটিপি করছে আর মামি
রান্নাঘরে ।
বাবা।
যেই কথাটি বলল জেবা, অমনি সবাই তাকালো জেবার দিকে।
শায়ন সামান্য ভয় পেয়েছে । তাই এখনও ভেতরে আসেনি । জেবার মা উঠে এসে জেবাকে জড়িয়ে
ধরে কাঁদতে লাগলো।
জেবার মা: কোথায় গিয়েছিলি মা তুই, তোর জন্য কি
চিন্তায় ছিলাম রে । আর কক্ষনো এরকম করবি না।
রোকসানা: ও জেবা , কই গেসিলা তুমি? তোমার লাইগা
তোমার মায়ে খায় নাই, জানো কি তা?
রনি(জেবার ভাই):ওই, তুই যা ঘরে যেয়ে রেস্ট নে
। এ ব্যাপারে পড়ে কথা হবে ।
জেবার বাবা: না। আমার কথা আছে।
রনি: বাবা এখন. ...
চৌধুরী (জেবার বাবা):তুই চুপ থাক। কোথায় ছিলি
সারারাত?
জেবা:না মানে.......।
চৌধুরী: তোর জন্য আমাদের আজকের সমস্ত প্ল্যান ভেস্তে
গেলো। কত টাকার ক্ষতি হয়েছে আমার জানিস?
কালু(জেবার মামা):[মনে মনে] এটাই তো চেয়েছিলাম
চৌধুরী: কি রে, বোবা হয়ে গেছিস না কি? বল কোথায়
গিয়েছিিল?
কালু:আহ দুলাভাই, থাক না। বাচ্চা মেয়ে । একটু
ভুল না হয় করেই ফেলেছে।
চৌধুরী: বাচ্চা মেয়ে? এবছর জেএসসি দিলো আর ও বাচ্চা
মেয়ে?
রোকসানা: ও খালু, বাদ দেন এহন । মাইয়াডা আইলো
কেবল। তাছাড়া আইজকা বিজয় দিবস । বাদ দেন ।
চৌধুরী: ঠিক আছে। এবারের মতো ছেড়ে দিলাম । কিন্তু
এরপর যেন এরকম ভুল না হয়। যা তোর ঘরে যা ।
জেবা: বাবা, আমার সাথে একটা ছেলে এসেছে ।
চৌধুরী: কে?
জেবা: একটা ছেলে।
চৌধুরী:কোথায়, ডাকো তাকে।
জেবা:ভেতরে আসুন।
শায়ন কম্পিত পায়ে ভেতরে ঢুকলো।
শায়ন: আসসালামু আলাইকুম ।
চৌধুরী:ওয়া আলাইকুমুস সালাম । নাম কি?
শায়ন: শ....শ....শায়ন।
চৌধুরী: বাসা কোথায়?
শায়ন: টা......টা.......টাঙ্গাইল।
চৌধুরী: কি, ভয় পাচ্ছ কেনো?
শায়ন: ন....ন....না...ম...ম..মানে...
চৌধুরী:(ধমকের স্বরে চিৎকার করে) হপ্......
সাথে সাথে জ্ঞান হারিয়ে মাটির ওপর পড়ে গেলো শায়ন।
জ্ঞান ফিরতেই দেখলো শায়ন বিছানায় শুয়ে আছে। ওর মাথার কাছে বসে মুখে পানি ছিটাচ্ছে
রনি । আর ওর আশেপাশে বাড়ির অন্যান্য সদস্য ।
শায়ন: (হঠাৎ উঠে বসে) সরি সরি সরি.......আমাকে
ক্ষমা করে দিন..।
চৌধুরী: কি দোষ করেছো তুমি?
শায়ন: তাইতো, আচ্ছা জেবা, আমি কি করেছি?
বাড়ির সবাই হেসে উঠলো।
চৌধুরী: আরে, এতো হাসলে ক্রিকেটার হবে কি করে।
তোমার সাথে তো মজা করেছিলাম আমি।
শায়ন:ওওওও....। কিন্তু ক্রিকেটার হওয়ার কথাটা
জানলেন কি করে?
জেবা আমাদের সব বলেছে।
রনি: কালই তোমায় নিয়ে যাবো ক্লাবে। পারবে তো?
শায়ন: ইনশাআল্লাহ ।
রোকসানা: ও খালা, সবাইরে নিয়া আসেন। রান্না হইয়া
গেসে, জানেন কি তা?
রুনা(জেবার মা) : হ্যাঁ চলো সবাই । দুপুরের খাবার টা খেয়ে নেই।
ডাইনিং
টেবিলে সবাই গিয়ে বসলো। শায়ন যেন নিজের পরিবারেই খাচ্ছে ।
জেবা: শায়ন, আমাদের রোকসু আপু না অনেক ভালো রান্না
করে , জানেন কি তা?
রোকসানা : অ মা, আমার ডাইলোগ দেন কেন ।
শায়ন: আসলেই, অনেক টেস্ট হয়েছে ।
রোকসানা: কই জানি শুনছোলাম । টাঙ্গাইলের মানুষরা
সবসময় সত্যি কথা কয়। জানেন কি তা?
রনি: রোকসু আপু, শায়ন যদি বলতো রান্না ভালো হয়েছে
তাহলে তুমি বলতে, টাঙ্গাইলের মানুষরা সবসময় মিথ্যা কথা কয়। জানেন কি তা?
বাড়ির সবাই হেসে দিলো।
সেদিন রাতের কথা। রনি শায়নকে ওর ঘরে নিয়ে এলো।
রনি:এসো শায়ন, ভেতরে এসো।
শায়ন ভেতরে এলো। দেখলো, রুম ভর্তি ক্রেস্ট আর ট্রফি । দেয়ালের একপাশে ঝোলানো শ'খানেক মেডেল ।
শায়ন: এগুলোর সবই কি আপনি ক্রিকেট খেলে পেয়েছেন?
রনি: হ্যাঁ ।
শায়ন: আচ্ছা, আপনার কি কোনো ঝামেলা হবে আমায়
ক্লাবে নিলে?
রনি: এমন করে বলছো কেনো? তুমি আমার বোনকে বাচিয়েছো
অ্যাকসিডেন্টের হাত থেকে ।
শায়ন বুঝলো, জেবা ওর বাবার কাছে মিথ্যা বলেছে।
রনি: কি ভাবছো?
শায়ন: না, কিছু না।
ওই রাতটা শায়ন রনির ঘরে ঘুমায়।
পরদিদিন ক্লাবে চলে আসে শায়ন আর রনি। ভেতরে ঢুকে
সবার সাথে পরিচয় শায়নের পরিচয় করিয়ে দিলো । ওদের মধ্যে জামির প্রসংশা বেশি করলো।
এরপর বিকেএসপি থেকে ডাক আসে তবে জামি আগে যাবে।
যাই হোক, ব্যাট বল নিয়ে মাঠে চলে এলো রনি। শায়নকে
ব্যাটটা দিলো এবং রনি বোলিং করার জন্য দাঁড়ালো।
রনি: রেডি শায়ন?
শায়ন: হ্যাঁ রেডি।
জামি: বস, এই পুচকে আপনার বল কি খেলবে? লাগাতেই
তো পারবে না।
রনি: দেখা যাক কি হয়।
প্রথম বল ছুড়লো রনি।
বল উড়ে গেলো মাঠের বাইরে । ২য় বলও একই অবস্থা
। ২৮ টা বল করলো রনি । ১৭ টা ৬ আর ৬টা ৪ রান করলো । পরে দুর্দান্ত বোলিংও করলো শায়ন।
সবাই এগিয়ে
এলো শায়নের কাছে।
কাফি: বস, এ তো ভালোই খেলে। ওকে টিমে রাখলে তো
ভালোই হয়।
সাদ: হ্যাঁ বস, ও ছোট হলেও দুর্দান্ত ।
জামি: কিন্তু বস,ও তো খুব ছোট আমাদের তুলনায়,
তাছাড়া তো ও বিকেএসপি যেতে পারবে না।
সাদ :কেনো পারবে না?
জামি:ওর বয়স দেখেছিস?
রউফ: তাই কি, অনুর্ধ ১৯ এ খেলবে ।
রনি: হুমম...। ভালো বুদ্ধি । বিকেএসপি তে যাওয়ার
সিরিয়ালে জামির নামটা বাদ দিয়ে শায়নের নামটা দিতে হবে। তবে তার আগে একটা কাজ করতে
হবে। শায়ন, আগামী সোমবার আমাদের ম্যাচ আছে
মানিকগঞ্জে । তুমি সেখানে খেলবে।
শায়ন: আমি খেলবো?
রনি: হ্যাঁ, খেলবে ।
শায়ন:আচ্ছা, ওখানে কি সাকিব ভাই, মুশফিকুর ভাই,
মাশরাফি ভাইও খেলবে?
রনি: ধুর পাগল, ওখানে ওরা থাকতে যাবে কেনো। তুই
যদি বিকেএসপি তে চান্স পাস, তবে হয়তো দেখা পাবি, কিন্তু খেলতে পারবি না।
শায়ন: কেনো?
রনি: আরে, বয়স তো ১৯ পার হতে হবে না কি?
শায়ন: ওওও...।
রনি: কিন্তু একটা ঝামেলা আছে। তোর জন্মনিবন্ধন
লাগবে।
শায়ন:নতুন একটা বানাবো।
রনি: যদি বলে তাহলে এতদিন পড়াশোনা করেছে কোন সার্টিফিকেট
দিয়ে?.
শায়ন: বলবে আগেরটা হারিয়ে গেছে ।
রনি: হুমমম...।
তারপর ঐ বাড়িতে ভালোই কাটতে থাকে শায়নের দিনকাল
। রবিবারের রাতের কথা। বারান্দায় দাড়িয়ে
শায়ন আর জেবা।
জেবা: কি, কালতো চলে যাবে।
শায়ন: হুমমম...
আমার জন্য কষ্ট লাগবে না?
তোমার জন্য আবার কষ্টের কি আছে?
উমম...ঢং।
আমি ঢং করি না তুমি?
আমি ঢং করি? মোটেও না।
বাদ দাও । ভালো লাগছে না এখন।
কেন? শরীর খারাপ করছে?
না।
তাহলে?
রোকসানা আপুর জন্য কষ্ট লাগছে । আপুকে অনেক মিস
করবো।
আবার ঢং করছো। ঢেঙা ছেলে কোথাকার ।
হুমম....।
সত্যি করে বলো না কি হয়েছে?
মা বাবার কথা খুব মনে পড়ছে।
ওওও....।
আমার জন্য খুব চিন্তা করতেন।
কিন্তু তুমি তাদের জন্য চিন্তা করো না।
মানে?
যদি চিন্তা করতে তাহলে কি এভাবে চলে আসতে তাদের
ছেড়ে?
বাবার পকেট থেকে আসার সময় টাকা এনেছিলাম । তার
মাত্র ১২৫ টাকা খরচ করেছি। বাকিটা স্মৃতি হিসেবে রেখে দিয়েছি।
খুব ঘুম পাচ্ছে । যাও ঘুমাও। কাল তো আবার ভোরে
উঠতে হবে।
তুমি যাও আমি পরে আসছি।
আচ্ছা ।
জেবা চলে গেলো। আকাশের তারার দিকে তাকিয়ে রইলো
শায়ন।
পরদিন সকালের কথা।
গাড়ি চলা শুরু করলো। ১২ জন প্লেয়ার একটা বড়
মাইক্রোতে করে যাচ্ছে । তার আগে জামি ড্রাইভার বাদে প্রত্যেককে একটা আপেল খাইয়েছে।
যাতে ছিল সামান্য ঘুমের ঔষধ । চলতে শুরু করলো মাইক্রো । ড্রাইভার কে আগে থেকেই ঠিক
করে রেখেছিল জামি। বলেছিলো, কোন এক নির্জন জায়গায় থামতে।গাড়ি থেমে আছে। অন্যান্যরা ঘুমাচ্ছে ।
জামি: এই সুযোগ ।
জামি শায়নের নাকের ওপর জ্ঞান হারানোর মলম মাখানো
রুমাল টা চেপে ধরে। শায়ন এবার জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।
জামি শায়নকে একটা বস্তায় ভরে। তারপর ব্যাট দিয়ে
অনেক মারে । তারপর বস্তায় কিছু ইট বেধে ফেলে দেয় পাশের পুকুরে ।
জামি: ব্যাস। এবার বিকেএসপি যাওয়ার থেকে কেউ আমাকে
আটকাতে পারবে না।
জামি মাইক্রোতে উঠলো ৷ মাইক্রো মানিকগঞ্জ পৌঁছে
গেছে। সবাই নামলো।
রনি: একি, ১১ জন কেন? কে বাকি?
যুবায়ের: বস, শায়ন বাকি।
রনি: চলো তো বাসে খুঁজে দেখি।
এদিকে রুমে বসে বই পড়ছে জেবা ৷ রোকসানা ঘর মুছতে
মুছতে রুমে ঢুকলো ৷
জেবা: আচ্ছা রোকসু আপু, তুমি আমাদের বাসায় কবে
থেকে কাজ করো?
রোকসানা: তোমার মা বাপের যহন বিয়া হয় তহন থেইকাই
কাজ করি ৷ তহন যদিও মেলা ছোট আছিলাম তয় এহন বড় হইসি জানো কী তা?
জেবা: তাহলে সত্যি করে একটা কথা বলবে?
রোকসানা: আমি আবার মিথ্যা কই না ৷ কও দেহি কী কইবা
৷
জেবা: [বইটা বন্ধ করে] আমি কী আসলেই এ বাড়ির মেয়ে?
রোকসানা কাজ থামিয়ে বসে থাকে ৷ কিছু বলে না ৷
জেবা: কী হলে বলো ৷
রোকসানা একটু আতঙ্ক নিয়ে জেবার দিকে তাকিয়ে থাকে
৷
হঠাৎ জেবার বাবা, চৌধুরী সবাইকে ডাকে ৷"জেবা,
রুনা, কালু, রোকসানা, সবাই কোথায়, তাড়াতাড়ি
এসো ৷"
সবাই গেলো চৌধুরীর কাছে ৷ দেখলো, চৌধুরীর সাথে
বোরখা পড়া একজন মহিলা, তার সাথে প্যান্ট আর
ঢিলা টিশার্ট পড়া একজন লোক ৷
রুনা(জেবার মা): কারা এরা?
কালু(জেবার মামা):[মনে মনে] এই আপদ গুলো এত বছর
পর আবার কী করতে এলো ৷
জেবা: বাবা এরা কারা?
চৌধুরী: এরা শায়নের বাবা মা ৷
শায়নের মা: শায়নকে একটু ফোন দাও না ৷ আমি একটু
কথা বলবো ৷
রুনা: শায়ন ক্রিকেট খেলতে মানিকগঞ্জ গেছে জানেন
আপনারা?
শায়নের বাবা: হ্যা ৷ চৌধুরী সাহেব আমাদের সব বলেছেন
৷
জেবা: আচ্ছা আমি ভাইয়া কে ফোন করছি ৷
ওদিকে সারা বাসে শায়নকে খঁুজে না পেয়ে চিন্তায় পড়ে গেলো সবাই ৷
সাদ: বস্, কী হলো এটা ৷
রনি: আমিও তো বুঝতে পারছি না ৷
জামী: দেখ,
হেরে যাওয়ার ভয়ে পালাইসে ৷
রউফ: জামি
তোর উল্টা পাল্টা কথাগুলো বাদ দে তো ৷
জামী: হ্যা, এখন তো আমিই সব ভুল বলি ৷
হঠাৎ রনির মোবাইলে ফোন এলো ৷ জেবা ফোন করেছে ৷
রনি:[ফোন ধরে] হ্যা জেবা, বল ৷
জেবা: ভাইয়া তোরা পৌছেছিস?
রনি: হ্যা পৌছেছি ৷
জেবা:শায়ন কোথায় ভাইয়া?
রনি ভাবলো, শায়ন হারিয়ে গেছে কথাটা শুনলে হয়তো
বাড়ির সবাই কষ্ট পাবে ৷
রনি: আছে ৷ ও খেলার জন্য রেডি হচ্ছে ৷
জেবা: ও বেরোলে একটু ফোন দিও ৷ কথা আছে ৷
রনি: না মানে ও বের হয়েই মাঠে নামবে ৷ আর খেলা
নিয়ে সবাই ব্যাস্ত থাকবো তো আজ বোধ হয় কথা না ও বলতে পারিস ৷
জেবা: (ইয়ার্কির স্বরে) ধুর, এ খেলতে গেছে না
কি মৌনব্রত পালন করতে গেছে বলতো?
রনি জেবাকে ইয়ার্কি করতে দেখে খারাপ লাগলো ৷ শায়নকে
খুঁজে না পেলে বাড়ি ফিরে কী বলবে সবাইকে? জেবারও তো খুব খারাপ লাগবে শুনে ৷
জেবা: কী রে ভাইয়া, চুপ করে আছিস কেন?
কষ্টে রনির গলাটা একটু অন্যরকম হয়ে গেল ৷
রনি: না না ৷ এমনিই ৷
জেবা:(চমকে গিয়ে) এ কি ভাইয়া, তোর গলাটা এমন লাগছে কেন?
রনি: (একটু কেশে) এমনিই৷ ওই বাসের মধ্যে ঠান্ডা
বাতাস লেগেছিল তো তাই একটু ঠান্ডা লেগেছে ৷
জেবা: ধুর, তুইও না কি যে করিস জানালাটা লাগিয়ে
রাখবি না ৷
রনি: আচ্ছা রাখি রে বোন ৷ ম্যাচ শুরু হয়ে যাবে
৷
জেবা: আচ্ছা অল দা বেস্ট ৷ ট্রফি টা নিতেই হবে
কিন্তু ৷
রনি কিছু না বলেই ফোনটা কেটে দিলো ৷
জেবা: যা! লাইনটা বোধ হয় কেটে গেলো ৷
জেবার মা: কী রে, কী বলল রনি?
জেবা: বলল শায়ন মাঠে নামার জন্য রেডি হচ্ছে ৷
আর এটাও বলল আজ শায়নের সাথে কথা নাও হতে পারে ৷
শায়নের বাবা: ধুর ৷ ছেলেটার মাথায় কি ক্রিকেট
খেলার ভুত চেপেছিলো ৷
শায়নের মা: সেটা তো সমস্যা না, সমস্যা হলো আমরা
এখন থাকবো কোথায় ৷
জেবার মা: আপনার ছেলে না আসা পর্যন্ত আমাদের বাড়িতেই
থাকেন ৷
শায়ন: এমা, আপনাদের কোনো সমস্যা হবে না তো?
জেবার মা: ধুর, সমস্যা হবে ৷ আপনি যতদিন খুশি আমাদের বাড়ি থাকতে
পারেন ৷ আসলে শায়ন ছেলেটা আমাদের নিজেদের ছেলের মতোই হয়ে গেছে ৷ আপনারা ওর বাবা মা
৷ তাহলে আপনারা আমার বাসায় থাকতে সমস্যা কীসের?
শায়নের বাবা: সত্যি! আপনারা খুব ভালো মানুষ ৷
সবাই যদি আপনাদের মতো হতো ৷
জেবার মা: রোকসু?
রোকসানা:
জী আপা কন ৷
জেবার মা: যা তো মা এনাদের গেস্ট রুমে নিয়ে যা
তো ৷
রোকসানা:
আইচ্ছা আপা ৷
শায়নের মা: একটা কথা বলবো?
জেবার মা: জী বলুন ৷
শায়নের মা: আসলে বলতে একটু লজ্জা করছে ৷ আসলে
শায়নকে হারানোর পর আমি আর শায়নের বাবা কেবল শায়নকেই খুঁজে বেড়িয়েছি ৷ ঠিক মতো
খাওয়া দাওয়া করা হয়নি ৷ যদি আমাদের একটু খেতে দিতেন……………
জেবার মা: আরে, এটা বলতে লজ্জা কীসের ঈস, আমারই
তো ভাবা উচিৎ ছিলো আপনারা ক্লান্ত ৷ লজ্জা তো আমার পাবার কথা ৷ ঠিক আছে, আপনারা রুমে যান, আমি রোকসুকে দিয়ে খাবার পাঠিয়ে
দিচ্ছি ৷
রোকসানা শায়নের বাবা মাকে গেস্ট রুমে নিয়ে গেল
৷ জেবাও তার নিজের রুমে চলে গেল ৷ জেবার মা রান্নাঘরে গেল আর জেবার বাবা ড্রইং রুমে
গেল টিভি দেখতে ৷ কেবল ছিলো জেবার মামা ৷ শায়নের বাবা মা আসার পর থেকেই তিনি কেন যেন
তাদের আড়ালে থাকার চেষ্টা করছে ৷
জেবার মামা: থাকাচ্ছি আপনাদের এখানে ৷
বলেই তার রুমের দিকে গেল ৷ রুমে বসে আয়নার সামনে
বসে রুপচর্চা করছিলেন জেবার মামি আর গানও গাচ্ছিলেন
৷
জেবার মামি:রুপ মেরা মাস্তানা, পেয়ার মেরা দিওয়ানা
, হুম হুমম……
ওই সময় ফোনে কথা বলতে জেবার মামা ঐ রুমে ঢুকলে
গান থামিয়ে রুপচর্চা চালিয়ে যায় জেবার মামি ৷
জেবার মামা:(ফোনে) হ্যালো…
…… তুমি কোথায় আছো………শোনো তাড়াতাড়ি করে শাওনদের বাসায় যাও………আরে
শাওনকে চেনো না?………মিমি, শাওন আর শায়ন তিন ভাই বোন……হ্যা………তুমি ওদের বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খাড়
করে দাও………আরে পড়ে না এখনই পুড়িয়ে দাও ৷ পাঁচ হাজার দেব
৷ ………হুর পাঁ হাজার কম?………আচ্ছা যাও দশ হাজার পাবে ৷
……ঠিক আছে ৷ রাখি ৷
জেবার মামি তখন আয়নার সামনে থেকে উঠে তার স্বামীর
কাছে এলো ৷
জেবার মামি: পুতু পুতু! কার সাথে কথা বললে গো ৷
জেবার মামা:(বিরক্তি নিয়ে) পুতুপুতু!! আর কিছু
পারো না ৷ আমি আছি আমার টেনশনে আর উনি পুতুপুতু মারাচ্ছে ৷
জেবার মামি: (মন খারাপ করে) তুমি আমাকে এভাবে বলতে
পারলে? তুমি তো জানোই পুতুপুতু, এটা আমার পাঞ্চ ডাইলোগ ৷ ওই যে দেখ না, রোকসু যমন বলে,"জানেন
কী তা"
জেবার মামা: ওর টা তাও শোনার মতো আছে ৷ আর তোমার
শুনলে শরীর অপবিত্র হয়ে যায় ৷
জেবার মামি: বাদ দাও পুতু পুতু ৷ আগে বলো কী হয়েছে ৷
জেবার মামা: তুমি তো রূপচর্চা করছো ৷ আর ওদিকে
কী ঘটেছে জানো?
জেবার মামি: কি ঘটেছে?
জেবার মামা সব ঘটনা বলল জেবার মামিকে ৷ ওদিকে রনি
সিদ্ধান্ত নিলো ম্যাচ ক্যান্সেল করার ৷
রউফ: হ্যা বস, আমাদেরও মুড অফ ৷ আমাদেরও খেলার ইচ্ছে নেই ৷
জামি: কেন? শায়ন গেছে তাতে কী হয়েছে? আমাদের
এক্সট্রা প্লেয়ার তো আছেই ৷
রনি: আমি যেটা বলেছি সেটাই হবে ৷ তোমরা বাসে ওঠো
৷ আমি মানিকগঞ্জের প্লেয়ারদের বলে আসি আর
স্থানীয় পুলিশের কাছে একটা খবর দিয়ে আসি ৷
দুপুরে বারান্দায় বসে কথা বলছিলেন জেবার বাবা
আর শায়নের বাবা ৷
শায়নের বাবা: বুঝছেন ভাই, আমাদের ছোটবেলার সোনালী
দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ে ৷ কত সুন্দরই না ছিলো সময়গুলো ৷
জেবার বাবা: আসলেই ভাই ৷ ছোটবেলায় কত মজাই না
করতাম ৷ সকালে উঠে রান্নাঘরের ধোয়া ওঠা চুলোর পাশে বসে ছাই দিয়ে দাঁত মাজতাম , পুকুরে
ঝাপাঝাপি করতাম আর কত যে মাছ ধরতাম ৷
শায়নের বাবা: আপনার মাছ ধরার কথা শুনতেই আমার
একটা কথা মনে পড়ে গেল ৷ আমার একটা ছেলে ছিলো ৷ ওর নাম ছিলো শাওন ৷ শায়ন আর শাওন জমজ ভাই ৷ আমার পৈতৃক বাড়ি
রাজবাড়ী ৷ বাবার একটা টিনের ঘর ছিলো ৷ আমার একটা বোন আছে ৷ ওর নাম রেবা ৷ বাবার কাছে
এখন রেবাই থাকেন ৷ গত বছর বিয়ে হয়েছে মেয়েটার তাই এখন নতুন ঘর তোলা হচ্ছে ৷ যা হোক
আগে আমি যকন বাড়ি বেড়াতে যেতাম, তখন বাবা মা থাকতেন এক রুমে, আমি, আমার স্ত্রী আর
শাওন থাকতাম আরেক রুমে ৷ রেবা ঐ কয়েকটা দিন ওর বান্ধবীর বাসায় থাকতো ৷ আমার শাওন
তখনও ছোট ৷ খালি গায়ে হাফ প্যান্ট পড়ে উঠোনে লাফিয়ে বেড়াতো ৷ শায়ন আবার এত ছুটে
বেড়াতো না ৷ ও খালি ক্রিকেট খেলতে যেত ৷ একদিন
বাজার থেকে বাবা বিশাল বড় কাতল মাছ আনলেন ৷ আমার শাওন আমার মাছ খুব পছন্দ করতো ৷ আর
কাতল মাছ হলে তো কথাই ছিলো না ৷ মা সেই কাতল মাছ পেঁয়াজ দিয়ে ভুনা করলেন ৷ মা রান্না
করলেন ১৪ টুকরো ৷ অথচ দুপুরের খাবারের সময়
দেখি ১০ টুকরো ৷ এদিকে শাওনও রান্না ঘরে নেই খুঁজতে খুঁজতে যেয়ে দেখি, রান্না
ঘরের এক কোণায় বসে লুকিয়ে লুকিয়ে মাছ খাচ্ছে ৷ আমাদের দেখে ভয়ে কি যে কান্না শুরু
করেছিলো, বলে বোঝানো যাবে না ৷
দুজনেই
হালকা হাসলেন ৷
জেবার বাবা: আসলেই ৷ ছোটবেলায় আমরা কী কম ছেলেমানুষি
করতাম না কি ৷
শায়নের বাবা: জী ৷
জেবার বাবা: তা আপনার শাওন এখন কী করে?
কথাটি শুনেই মনটা ভেঙে গেলো শায়নের বাবার ৷ একটা
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো
শায়নের বাবা: সে অনেক কাহিনী ৷
জেবার বাবা: আমি বুঝতে পারছি আপনার কাহিনী খুব
কষ্টের ৷ আমার সাথে শেয়ার করে নিজেকে হালকা করতে পারেন ৷
শায়নের বাবা: বলি তাহলে ৷ আমার একটা মেয়ে হয়েছিলো
৷ জন্মের আগেই ওর নাম রেখেছিলাম মিমি ৷ আমার শাওন ৪ বছরের ছেলে ৷ ২ দিন হয়েছিলো সেদিন আমার মেয়ের শাওনকে মিমির পাশে রেখে আমি শায়ন আমার স্ত্রীর
সাথে বাইরে গিয়েছিলাম ৷ ফিরে এসে দেখি একটা লোক আমার ছেলে আর মেয়েকে কিডন্যাপ করে
নিয়ে যাচ্ছে ৷ আমি উনাদের ধরতে পারিনি ৷ কারণ আমি যখন আসি ওরা তাড়াতাড়ি গাড়িতে
উঠে গাড়ি ছেড়ে দেয় ৷
ওদিকে
ডাইনিং টেবিলে বসে কথা বলছিলো রোকসানা আর শায়নের মা ৷ ঠিক সে সময় ঘরে ঢুকলো
রনি ৷
রোকসানা:
ওই তো রনি ভাই আইসে, কই সবাই, রনি ভাইয়া
আইসে, জানেন কি তা?
সবাই কথা শুনে এলো ডাইনিং রুমে ৷ জেবা রনির কাছে
গেল ৷
জেবা: ভাইয়া, শায়ন কোথায়?আর তোরা এত তাড়াতাড়ি
এলি কেন?
রনি কিছুই বলে না ৷ কেবল মাথানিচু করে থাকে ৷
জেবা: কী হলো ভাইয়া বল শায়ন কোথায়?
রনির মুখ দিয়ে কথা বেরোয় না ৷
চৌধুরী: চুপ করে থাকিস না রনি, বল শায়ন কোথায়?
এবার রনি আর নিজের চোখের জল আটকাতে পারলো না ৷
শায়নের মা: (আতঙ্কিত হয়ে) একি বাবা, তুমি কাঁদছো
কেন? আমার শায়নের কিছু হয়নি তো?
রনি: শায়নকে…………
জেবার বাবা: কীরে, কী হয়েছে শায়নের?
রনি কিছু বলে না ৷
জেবার মা: কীরে বল, কী হয়েছে?
শায়নের মা:(কাঁদতে কাঁদতে) বাবা বলো, কী হয়েছে
আমার ছেলের?
রনি: শায়নকে……খুঁজে পাওয় যাচ্ছে না ৷
কথাটা শুনেই মুখে হাত দিয়ে আর্তনাদ শুরু করল জেবা
৷ শায়নের মা ওখানেই জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলেন ৷
রোকসানা আর জেবার মা শায়নের মা কে ধরলো ৷
জেবার মা: রোকসু, পানি নিয়ে আয় তাড়াতাড়ি ৷
রোকসানা 'আনতাসি' বলে উঠে গেল ৷ কান্না ধরে রাখলে
পারলেন না শায়নের বাবাও ৷ জেবার বাবা শায়নের বাবা কাধে হাত রেখে দাড়িয়ে রইলেন ৷
কিছু বলতে পারলেন না ৷ রোকসানা কিছুক্ষণ পর পানি নিয়ে এলো ৷
রোকসানা:
(গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে) এই যে আপা ৷ পানি ৷
জেবার মা:
(গ্লাসটা নিতে নিতে) দে ৷
এরপর জেবার মা শায়নের মায়ের মুখের ওপর পানি ছিটালেন
৷ তিন চারবার ছেটানোর পর জ্ঞান ফিরলো শায়নের মা ৷ চোখ ঠিক মতো খুলতে পারছেন না ৷ মিটমিট
করে তাকিয়ে আছেন আর বার বার শায়নের নাম বলছেন ৷
জেবার মা: রনি ডাক্তার কে একটা ফোন দে ৷
রনি: আচ্ছা ৷
রনি ডাক্তারকে ফোন দিল ৷
জেবার মা: রোকসু, চল উনাকে ধরে নিয়ে উনার রুমে নিয়ে যাই ৷
জেবার মা আর রোকসানা শায়নের মা কে ধরে রুমে নিয়ে
গেল ৷ ঠিক তখন শায়নের বাবার ফোনে একটা কল এলো ৷
শায়নের বাবা: হ্যালো?
ফোনের ওপার থেকে কেউ কিছু বলল ৷
শায়নের বাবা: কী?
জেবার বাবা: কী হয়েছে ভাই?
শায়নের বাবা: আমাদের বাড়িঘর নাকি পুড়ে ধ্বংস
স্তুপে পরিণত হয়েছে ৷
জেবার বাবা : কী?
শায়নের বাবা: (কাঁদতে কাঁদতে) ভাই এ কেমন বিপদ! আমি এখন কি করবো বুঝতে পারছি না ৷
জেবার বাবা: একটা কাজ করুন ৷ আপনি চলে যান ৷ গিয়ে
অবস্থা দেখুন ৷ আপনার স্ত্রী যেহেতু অসুস্থ,
উনি আমাদের বাসায় থাক ৷ আমরা শায়নকে খোঁজার ব্যবস্থা করছি ৷
শায়নের বাবা তখন চলে গেলেন ৷
জেবার বাবা: হে আল্লাহ, আপনি আবার সব আগের মতো করে দিন ৷
বলেই জেবার দিকে তাকালেন ৷ তারপর জেবার কাছে গেলেন
৷
জেবার বাবা:
চল মা ৷ ঘরে চল আর দোয়া কর ৷ দেখিস, শায়ন ঠিক ফিরে আসবে ৷
জেবা কিছুই বলতে পারে না কেবল বাবার বুকে মাথা
রেখে কাঁদতে থাকে ৷ জেবার বাবা জেবাকে ঘরে নিয়ে গেলেন ৷ রুমে ছিলো কেবল জেবার মামি
আর আড়ালে ছিলো জেবার মামা ৷ জেবার মামা আড়াল থেকে বেড়িয়ে এলেন ৷
জেবার মামি: পুতুপুতু, আহারে ৷ বেচারা শায়নদের
কি বিপদ হয়েছে ৷
জেবার মামা: বিপদ তো হলো আমার ৷
জেবার মামি: কেন গো?
জেবার মামা: ছেলে হারাবার কষ্টে মা অসুস্থ হয়ে
বাড়িতেই থেকে গেল ৷ আমায় একবার দেখলেই তো সব প্ল্যান ভেস্তে যাবে ৷
জেবার মামি: পুতুপুতু! তোমার দোষেই তো হয়েছে ৷
জেবার মামা: আমার দোষে মানে? তোমার সোনার গয়না
লাগবে না?
জেবার মামি: সে তো লাগবে ৷ কিন্তু আমি তো কারও
ক্ষতি করে এসব নিতে চাইনি ৷
জেবার মামা: ক্ষতি তো আমার হয়েছে আর তা হয়েছে
আমার বাবা , আর আমার বোনের জন্য ৷
জেবার মামি: মানে?
জেবার মামা: এই যে বিরাট বাড়ি আর জমি, আমার বাবার
ছিলো ৷ সব আমার বাবা আমাকে না দিয়ে আমার বোনের নামে লিখে দেন ৷ আমাকে কিছুই দেননা শুধুমাত্র আমি অভদ্র ছিলাম
বলে আর দায়িত্বজ্ঞানহীন ছিলাম বলে ৷
জেবার মামি: তাহলে শায়নের বোন জেবা আর শায়নের
ভাই শাওনকে তুলে এনেছিলে কেন?
জেবার মামা: শাওনকে তো আমি তুলে আনতে চাই নি ৷
আমার বোনের যে মেয়ে হবার কথা ছিলো, ডাক্তার কে ঘুষ দিয়ে সেই মেয়েটাকে মেরে ওর জায়গায়
জেবাকে ওদের মেয়ে সাজাই ৷ পরবর্তীতে এই ব্যাপারটা নিয়ে পরিবারে একটা অশান্তি সৃষ্টি
করবো বলে ৷
জেবার মামি: আর শাওনকে কি করেছিলে?
জেবার মামা: ওকে মাস্তানরা নিয়ে গিয়েছিলো ৷ হয়তো
মেরে দিয়েছে ৷
জেবার মামি: তাহলে বিজয় দিবসের দিন জেবাকে সব
বলেছিলে কেন?
জেবার মামা: শুধু এটাই বলিনি, আরও অনেক কিছুই বলেছি ৷ যেন ও হতাশ হয়ে কিছু একটা
করে আর চৌধুরী সাহেবের সব আয়োজন নষ্ট হয়ে যায় ৷ আর তাই কিন্তু হয়েছিলো ৷ কিন্তু
বাড়ি ফিরে জেবা কাউকে কিছু বলেনি কেন সেটাই বুঝতে পারছি না ৷
জেবার মামি: আজ কিছুই হতো না তুমি এসব না করলে
৷
জেবার মামা: সমস্যা তো আরও আছে ৷ রোকসানা সব আড়াল
থেকে জেনে গিয়েছিলো ৷
ঠিক তখন বাড়ির দরজায় পুলিশ এলো ৷ একজন অফিসার
সাথে দুজন হাবিলদার ৷
অফিসার: আসতে পারি?
জেবার মামা: একি? অফিসার আপনারা??
অফিসার: আমাকে মানিকগঞ্জের থানা থেকে শায়ন নামের
একটা ছেলের নিখোজের ব্যাপারে খবর পাঠানো হয়েছে ৷
জেবার মামা বাড়ির সকলকে ডাকলো ৷ জেবা আর জেবার
মা শায়নের মায়ের কাছে রইলো ৷ এলো রোকসানা, জেবার বাবা, আর রনি ৷
রনি: অারে অফিসার?
অফিসার: আপনিই কী রনি?
রনি: জী বলুন ৷
পুলিশ অফিসার: আপনারা যে মহাসড়ক দিয়ে গিয়েছেন
সেখানকার একটা এলাকায়………
রনি: সেখানকার একটা এলাকায় কী অফিসার ৷
অফিসার বলতে একটু ইতস্তত বোধ করছিল ৷
জেবার বাবা: অফিসার চুপ করে থাকবেন না ৷ বলুন কী
হয়েছে ৷
পুলিশ অফিসার: একটা ডেড বডি পাওয়া গেছে ৷
রনি: কী!
অফিসার হ্যা ৷ তবে লাশটার মুখের এতো বাজে অবস্থা,
যে বোঝাই যাচ্ছে না এটা কার লাশ ৷
রনিঃ কি?
জেবার বাবাঃ এখন কি করব অফিসার ?
অফিসারঃ আমাদের সাথে একবার ঐ এলাকার হাসপাতালে
চলুন
রনিঃ (জেবার বাবাকে) শায়নের মা কে বলব বাবা?
জেবার বাবাঃ না! এমনি মহিলার শরীরের Condition
ভালো না, এর ওপর এ কথা শুনলে তো উনার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাবে । তার চেয়ে বরং আমি
আর তুই যেয়ে লাশ টা দেখে আসি । আল্লাহ না করুক
ঐ লাশটা শায়নের হলে তারপর না হয় ভেবে দেখবো কি করা যায় ।
রনিঃ ঠিক আছে বাবা । চলুন অফিসার ।
রনি আর
ওর বাবা গেলো অফিসারের সাথে । একটা হাসপাতালের সামনে থামানো হল পুলিশের জিপ
। রনি আর ওর বাবা পুলিশের সাথে হাসপাতালে গেলো । মর্গে গেলো ওরা ।
মর্গের দারোয়ানঃ স্যার আপনে?
অফিসারঃ হ্যাঁ । একটু আগে যে লাশটা এনেছিলে সেটা
উনাদের দেখাতে নিয়ে এসেছি ।
মর্গের দারোয়ানঃ কিন্তু স্যার লাশটা তো ডোম নিয়ে
গেছে ।
অফিসারঃ কি? তোমাকে না বারন করেছিলাম লাশ টা না
সরানোর জন্য ?
মর্গের দারোয়ানঃ স্যার আমি ডোম কে বলেছিলাম কিন্তু
উনি জোর করে লাশটা নিয়ে গেলেন । সাথে আরও একটা ছেলে ছিলেন ।
অফিসারঃ লাশ কাটা ঘর কোথায় ?
মর্গের দারোয়ানঃ হাসপাতালের পেছনে স্যার ।
অফিসারঃ চলুন আপনারা । লাশ টা না কাটলেই হল ।
অফিসার তার সাথে দুজন হাবিলদার এবং রনি ও ওর বাবা
লাশ কাটা ঘরের দিকে যাচ্ছিলেন। কেউ কোন কথা
বলছিল না । হঠাৎ লাশ কাটা ঘরের কাছাকাছি আসতেই রনি সবাই ইশারায় দাঁড়াতে ও চুপ থাকতে
বলল । এরপর সে লাশ কাটা ঘরের দরজার কাছে গেলো । দরাজাটা লাগানো ছিল । দরজার বাইরে দুই
জোড়া জুতো ছিল । রনি বসে একজোড়া জুতো হাতে নিল ।
রনিঃ (মনে মনে) এটা তো জামির জুতো ।
এরপর রনি দরজায় কান পাতলো । শুনল ভেতরে জামির গলা
আর ডোমের সাথে জামি কথা বলছে ।
জামিঃ আরও ভালো করে করুন । যেন ডি এন এ টেস্ট করেও আমাকে ধরতে না পারে ।
ডোমঃ কেন যে আপনারা এসব খুন করেন।
জামিঃ আরে এ না মরলে আমার তো জাতীয় দলে খেলা হতো
না । আমার আগেই একে নেয়ার কথা ছিল ।
ডোমঃ সে যাই হোক , ৪০ হাজার যেন আমার হাতে আসে
। না হলে কিন্তু আপনার খবর আছে ।
রনি এরপর অফিসারের কাছে যেয়ে সব বলল । এরপর অফিসার
ও দরজায় কান পেতে সব শুনল । তারপর দরজায় লাথি মেরে দরজা ভেঙে গুলি হাতে ভেতরে ঢুকে
বলল
অফিসারঃ হ্যান্ডস আপ । পুলিশ আপনাদের চারদিক থেকে
ঘিরে ফেলেছে ।
পুলিশ দেখে ডোম লাশটা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিলো । এরপর
জামি আর ডোম দুজনেই দু হাত উচু করল । তখন রনি আর ওর বাবা ভেতরে এলো ।
জামিঃ রনি তুই ?
রনিঃ তুই সামান্য জাতীয় দলে খেলার জন্য শায়ন কে
মেরেই ফেললি?
জামি আর কিছু বলতে পারে না ।
অফিসারঃ এদের দুজনকে জিপে তোল । এরপর হাবিলদার
এসে জামি আর ডোমকে জিপে তুলল । কিছুক্ষণ পর আরেকজন ডোম এলো ।
ডোমঃ কি হয়েছে অফিসার?
অফিসার সব খুলে বলল ।
ডোম এরপর লাশের ওপর থেকে কাপড়টা সরাল ।
ডোমঃ দেখুন তো , এটা ওর লাশ কিনা ।
রনিঃ (চিৎকার করে) না!
অফিসারঃ কি হয়েছে?
রনিঃ এটা শায়নের লাশ ।
অফিসারঃ কিভাবে বুঝলেন ?
রনিঃ যাবার সময় শায়ন এই জামাটাই পড়ে ছিল ।
এরপর সেখানকার
পরিবেশ চুপচাপ হয়ে যায় । কেউ কোন কথা বলে না । লাশটা এনে কবর দেয়া হয় । বাড়ির পরিস্থিতিও
একভাবে সামাল দেয়া হয় ।
কেটে গেলো ৩ টি মাস । রোকসানা আর জেবার মা রান্নাঘরে
ছিলেন । রোকসানা সবজি কাটছিল আর জেবার মা চুলায় ভাত বসাচ্ছিলেন ।
জেবার মাঃ হ্যাঁ রে রোকসু , শায়নের মা কে ঔষধ খাইয়েছিলি
?
রোকসানাঃ হ আপা ।
জেবার মাঃ আর জেবা স্কুল থেকে ফিরেছে ?
রোকসানাঃ না আপা । এহন ফিরা আসে নাই ।
জেবার মাঃ তোর খালু কি করছে?
রোকসানাঃ উনি তো অফিসের কি সব কাজের ব্যাপারে ফোনে
কথা বলছেন ।
জেবার মাঃ তোর সবজিটা কাটা হল ?
রোকসানাঃ এইতো আপা । প্রায় হইয়া গেসে ।
জেবার মাঃ তাড়াতাড়ি করো । আমি হলুদ মরিচ গুড়ো বের
করছি ।
রোকসানাঃ আইচ্ছা আপা, শায়ন পোলাটা আইসা আমাগো পরিবারের
কেমন একটা পরিবর্তন কইরা দিসে । পোলাটা আমাগো
মেলা মায়া দিয়া গেলগা ।
জেবার মাঃ
হুম । কেন, ওর মাও তো সেই দিন থেকেই প্যারালাইজড ।
রোকসানাঃ হ । আর আমাগো জেবা । অয়ও তো কম কষ্ট পায়
নাই । সেই দিন থেইকা আইজ পর্যন্ত মাইয়াডার মুখে হাসি নাই ।
ওদিকে
বান্ধবীর সাথে বাড়ি ফিরছিল জেবা । বান্ধবীর নাম নিপা ।
নিপাঃ তুই তো সেই শায়নের মৃত্যুর পর থেকে একটুও
হাসিস না ।
জেবাঃ প্লিজ এসব কথা বাদ দে ।
নিপাঃ না সেজন্য না । এরকম থাকলে লোকেও তো ভালো
বলে না ।
জেবাঃ লোককে কি বলল তা আমার শোনার দরকার নেই ।
নিপাঃ তাও ঠিক । আচ্ছা তুই এখানে দাড়া । আমি একটু
চকলেট নিয়ে আসি ।
নিপা চলে গেলো রাস্তার ওপারে একটা দোকানে। হঠাৎ
একটা লোক জেবার মুখে রুমাল ধরে অজ্ঞান করে নিয়ে গেলো । নিপা ফিরে এসে জেবাকে পেল না
।
নিপাঃ কি ব্যাপার ? জেবা কি চলে গেলো ?
নিপা কিছুক্ষণ আশেপাশে তাকিয়ে তারপর চলে গেলো ।
এদিকে ভাত নামিয়ে রেখে সবজি গুলো চুলোয় তুলে দিতে
দিতে রোকসানার সাথে কথা বলছিলেন ।
রোকসানাঃ আইচ্ছা আপা আইজকা না শায়নের বাপের আসার
কথা ?
জেবার মাঃ ওহহো আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম । যাও তো
ফ্রিজ থেকে গরুর মাংসের প্যাকেট টা আনো তো ।
রোকসানাঃ আইচ্ছা আপা ।
রোকসানা যখনি রান্না ঘরের দরজা দিয়ে বেরোতে নেবে অমনি সামনে এসে দাঁড়ালো জেবার
মামা । পরে সাইড দিয়ে রোকসানাকে যেতে বলেন তিনি ।
জেবার মাঃ কিরে, ছিলি কোথায় ?
জেবার মামাঃ বারান্দায় ।
জেবার মাঃ ও । কিছু বলবি?
জেবার মামাঃ একটা খারাপ খবর আছে ।
জেবার মাঃ তুই তো আমাকে খারাপ খবর ছাড়া ভালো খবর
কোনোদিন পাইনি ।
জেবার মামাঃ আজিব তো , তুমি এমন ভাবে কেন কথা বল
যেন আমি সব খারাপ কাজের জন্য দায়ী ।
জেবার মাঃ হুম । চোরের মন পুলিশ পুলিশ ।
জেবার মামাঃ এবার কিন্তু তুমি আমাকে সরাসরি দোষারোপ
করলে ।
জেবার মাঃ বাজে না বকে বল কি হয়েছে ।
জেবার মামাঃ বোন , একদল লোক তোমার জেবাকে অপহরণ
করেছে । আর বলেছে জমিজমা ওদের নামে করে দিতে । টা নাহলে ওরা ওকে মেরে ফেলবে ।
জেবার মাঃ না। এটা হতে পারে না । তুই ওকে নিয়ে
আয় । যেভাবে পারিস ।
জেবার মামাঃ উপায় তো একটাই।
জেবার মাঃ
কি উপায় আমাকে বল । আমি জেবার জন্য
সব করবো ।
জেবার মামাঃ জমি জমা ঐ মাস্তানটার নামে করে দাও
। (মনে মনে) আর ঐ মাস্তান টা তো আমি ।
রোকসানা তখন মাংসের প্যাকেট নিয়ে জেবার মায়ের কাছে
এলো ।
রোকসানাঃ এইযে আপা । মাংস ।
জেবার মাঃ সর্বনাশ হয়ে গেছে রকসু । জেবাকে কারা
যেন তুলে নিয়ে যেয়ে মুক্তিপণ হিসেবে জমি নিজের নামে করে নিতে চাইছে ।
ওদিকে জ্ঞান ফেরার পর জেবা নিজেকে একটা চেয়ারে
হাত পা বাধা অবস্থায় দেখতে পেলো । ভালো ভাবে জ্ঞান ফেরার পর দেখল দুজন মাস্তান ওর সামনে
মদ খাচ্ছে । ওরা মাতাল ছিল । হঠাৎ প্রথম মাস্তানটা
ভাত আর কাতল মাছের তরকারি প্লেটে নিয়ে জেবার
সামনে এলো ।
১ম মাস্তানঃ এ, খাবার টা খা ।
জেবাঃ তোমরা কারা, আমাকে কেন ধরে এনেছ ?
১য় মাস্তানঃ এ বেশি বক বক করিস না । মদ খেয়ে মাথাটা
ঘুরচ্ছে । বেশি বক বক করলে কিন্তু একদম খুন করে দেব ।
জেবাঃ আমি খাব না ।
১ম মাস্তানঃ ভালোয় ভালোয় বলছি খেয়ে নে । নাহলে
কিন্তু পস্তাবি ।
জেবাঃ বললাম তো খাব না ।
বলেই জেবা মাস্তানটার হাতের ওপর থুথু ছিটিয়ে দিলো
। ১ম মাস্তান হাত টা মুছে প্লেট টা ২য় মাস্তানের
কাছে রেখে বলল
১ম মাস্তানঃ এ , তোর চিকনি চামেলি তো আমার কাছ
থেকে খাবার খেল না । এবার তুই খাওয়া ।
২য় মাস্তানঃ দ্যাখ । আমি গেলে কি সুন্দর করে খাবে ।
এরপর দ্বিতীয় মাস্তান ওর কাছে গেলো ।
২য় মাস্তানঃ মামনি, খাবার টা খেয়ে নাও । তারপরে
আমরা কুতকুত খেলবো ।
জেবা কিছু বলে না । কেবল ভয় পায় । হঠাৎ ঐ মাস্তান জেবার দিকে হাত বাড়াতে নেয় অমনি
একটা লোক এসে ঐ মাস্তান লোকটা হাত ধরে হাত ভেঙে দিয়ে মারে একটা আছাড় ।
এরপর লোকটা জেবার দিকে তাকাল । জেবা লোকটাকে দেখে
অবাক । গায়ে সাদা পাঞ্জাবী , চোখে সানগ্লাস আর মুখে হালকা দাড়ি । কিন্তু এ কি ? এটা তো হুবহু শায়ন !!!!!
জেবাঃ শায়ন তুমি ?
লোকটাঃ আমি হাসিব । শায়ন নই ।
১ম মাস্তানটা একটা লাঠি নিয়ে লোকটার দিকে আসছিলো
।
জেবাঃ শায়ন তোমার পেছনে দেখো ।
লোকটা ১ম মাস্তানের হাত থেকে লাঠিটা টেনে মারল
একটা আছাড় । দুজনেই আর উঠবার মতো অবস্থায় নেই ।
লোকটাঃ বলেছি না আমি হাসিব ।
জেবাঃ (হালকা হাসিমুখে) মজা কেন করছ শায়ন ?
লোকটা জেবার কাছে এসে চোখে চোখ রেখে বলল
লোকটাঃ ভালো করে দেখো । মনে হয় আমি মজা করছি ?
জেবা আর কিছু বলে না । কেবল ওর দিকে তাকিয়ে থাকে
। লোকটা তখন জেবার হাত পায়ের বাধন খুলে দিয়ে ১ম মাস্তানের বুকের ওপর পা রেখে বলল,
লোকটাঃ বল
কার কথায় তোরা এই কাজ করেছিস?
১ম মাস্তানঃ ব...বলছি...বলছি । কালু শেখ ।
জেবাঃ (অবাক হয়ে ) কালু শেখ ? উনি তো আমার মামা
।
১ম মাস্তানঃ হ্যাঁ । উনি চে...চেয়েছিল তোমাকে কিডন্যাপ
করে তোমার মায়ের জমি জমা সব তার নামে করে নিতে
।
ওদিকে জেবার মা চিন্তায় পরে গেলো । তখন রোকসানা
জেবার বাবাকে নিয়ে এলো ।
রোকসানাঃ এইযে আপা । খালুরে নিয়াইসি ।
জেবার মাঃ এবার কি করবে গো ?
জেবার বাবাঃ থানায় চল ।
জেবার মামাঃ ওরা বলেছে পুলিশ নিয়ে গেলে খুন করে
দেবে ।
জেবার বাবাঃ আপনার এত কথা না বললেও চলবে ।
জেবার মামাঃ আরে , জেবা আমার ভাগ্নি । ওর কথা আমি
বলতে পারবো না?
জেবার বাবাঃ আমি জেবার বাবা আর জেবা আমার মেয়ে
। তাই ওর ব্যাপারে চিন্তা করার অধিকার তোমার আপনার চেয়ে আমাদের বেশি ।
জেবার মাঃ হ্যাঁ গো , যদি সত্যি মেরে দেয় ?
জেবার বাবাঃ আরে বাবা চল তো পুলিশের কাছে অন্তত
ব্যাপার টা শেয়ার করি । এটা কোন কিডন্যাপ না । মনে হয় কোন চক্রান্ত ।
জেবার মাঃ কিভাবে বুঝলে?
জেবার বাবাঃ ভেবে দেখো । আজ পর্যন্ত কাউকে কেউ
কিডন্যাপ করলে কখন জমির দলিল চায় ? ওরা তো
টাকা চায় ।
জেবার মাঃ হ্যাঁ । কথাটা কিন্তু ভুল বল নি ।
জেবার মামাঃ (মনে মনে ) না । যতোটা সোজা ভেবেছিলাম ব্যাপারটা দেখছি ততটা
সোজা না । এবার মনে হয় আমাকে আসল রুপটা দেখাতেই হবে ।
জেবার বাবাঃ এ কাজ টা আমার অফিস বা আত্মীয় স্বজনদের
কেউ করেছে ।
জেবার মামাঃ (পকেট থেকে পিস্তল বের করে জেবার মায়ের
দিকে তাক করে ) যদি বলি আমি করেছি ?
জেবার মাঃ কালু!!!!!
জেবার মামাঃ হ্যাঁ আমি । তাড়াতাড়ি এই দলিলে সই
করো। তা না হলে আমি জেবাকে মেরেই ফেলব ।
জেবার মাঃ ছি ! শেষ মেষ তুই এ কাজ করলি ? তুই এত
নিচ হতে পারলি ?
জেবার মামাঃ নিচ তোমরা হও নি ? জমির দলিল তুমি
সব নাও নি ? বাবা কেন আমাকে জমির ভাগ দিলো
না ?
জেবার মাঃ তুই দায়িত্ব নিতে পারিস না বলেই তো বাবা
তোকে জমির ভাগ দেয় নি । কিন্তু তুই কি জানিস , বাবা আমাকে বলে গিয়েছিল তোকে সারাজীবন
এই বাড়িতে সসম্মানে রাখতে ?
জেবার মামাঃ ওসব আমি বুঝি না । আমাকে জমির ভাগ
দাও । (জেবার মায়ের হাতে দলিল আর কলম ধরিয়ে দিয়ে ) এই নে কাগজ আর এই নে কলম । এবার
সইটা কর । তা নাহলে তুই, তোর স্বামী , তোর মেয়ে কেউ বাচবে না ।
জেবার মা যেই কলম টা নিতে যাবে অমনি কেউ একজন জেবার
মামার হাত থেকে পিস্তলটা নিল কেড়ে । জেবার বাবা মা তাকিয়ে দেখল শায়নের বাবা এসেছে ।
জেবার বাবা তখন জেবার মামার দু হাত ধরল ।
জেবার বাবাঃ শায়নের বাবা , শক্ত দড়ি আনুন তো ।
রোকসানাঃ দারান খালুজান । আমি আনতেসি । রোকসানা
যেয়ে শক্ত দড়ি আনল । এরপর জেবার মামার হাত পা
বেধে রাখল ।
জেবার বাবাঃ একদম ঠিক সময়ে এসেছেন ভাই । আপনাকে
অসংখ্য ধন্যবাদ ।
শায়নের বাবাঃ ধন্যবাদ না দিয়ে তাড়াতাড়ি যেয়ে জেবাকে
উদ্ধার করে আনুন ।
জেবার মাঃ চল ।
জেবার বাবাঃ হ্যাঁ চল ।
যখনি বেরোনোর
জন্য এক কদম পা রাখল , অমনি দরজা দিয়ে ভেতরে এলো জেবা । লোকটা তখনও ভেতরে ঢোকেনি।
জেবার বাবাঃ জেবা!
জেবাঃ আরেকজন আছে ।
জেবার বাবাঃ কে ?
জেবাঃ আসুন ভেতরে ।
লোকটা ভেতরে এলো । লোকটার চেহারা দেখে সবাই অবাক ।
শায়নের বাবাঃ বাবা শায়ন , তুই ?
লোকটাঃ অদ্ভুত তো , আপনারা আমাকে শায়ন বলছেন কেন
? আমি হাসিব ।
জেবার বাবাঃ ও যেই হোক , শায়নের মা কে সুস্থ করার
জন্য ওকে কাজে লাগানো যাবে ।
জেবার মাঃ হ্যাঁ । ডাক্তার তো বলেছিলেন শায়নকে
দেখলে শায়নের মা সুস্থ হয়ে যাবে ।
জেবার বাবাঃ কিন্তু ওর সাজগোজ তো শায়নের মতো না
।
জেবাঃ তাহলে
আমি আর আঙ্কেল ওকে শায়নের মতো করে সাজিয়ে নিয়ে আসি ।
জেবার বাবাঃ হ্যাঁ যা , আমি ততক্ষনে ডাক্তার ডাকি
। আল্লাহ না করুন , যদি উনার কিছু হয় ।
এরপর জেবা আর শায়নের বাবা লোকটাকে শায়নের মতো সাজাল
। শায়নকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জার্সি পড়িয়ে দিলো দাড়ি মোচ কেটে দিলো । এরপর শায়নের মায়ের
কাছে নিয়ে গেল । নিয়ে যাবার আগে শায়নের কিছু বৈশিষ্ট্য লোকটাকে বলল ।
জেবাঃ আনটি , দেখুন শায়নকে এনেছি । ও মারা যায়
নি ।
জেবার বাবাঃ দেখুন ভাবি । আপনার ছেলে । ফিরে এসেছে
।
শায়নের মা আঙ্গুল নাড়াল ।
শায়নের বাবাঃ দেখো শায়নের মা দেখো । শায়ন ফিরে
এসেছে । আমাদের নতুন বাড়িও হয়ে গেছে । আমরা আবার আগের মতো সুখে শান্তিতে সংসার করবো
।
জেবার মাঃ দ্যাখো ভাবি । তোমার ছেলে আবার এসে ।
তুমি ওকে আদর করবে না ?
শায়নের মায়ের ঠোঁট নড়ে উঠলো ।
রোকসানাঃ ও আফা, আপনার পোলা এল্লা আপনার আদর নিবার
চায় জানেন কি তা ?
রনিঃ আনটি , দেখুন আপনার ছেলে । ও এবার জাতীয় দলে
খেলবেই । কিন্তু আপনি একবার চোখটা খুলুন ।
এরপর শায়নের
মা চোখ খুলে বলে উঠলো ‘’শায়ন!’’
এরপর উঠে বসে শায়নকে জড়িয়ে ধরল । সবাই খুব খুশি
। হঠাৎ শায়নের মায়ের হাসি থেমে গেলো ।
শায়নের মাঃ একি , এটা তো শায়ন না । এটা তো শাওন
।
জেবাঃ এটা শাওন ? কিন্তু আপনি কিভাবে বুঝলেন ?
শায়নের ঘাড়ে একটা কালো দাগ ছিল । আর শায়নের ঘাড়ে
একটা আঁচিল ছিল । আমি ওর ঘাড়ে কালো আঁচিল দেখতে পাচ্ছি ।
লোকটাঃ যথেষ্ট হয়েছে । একবার বলছেন শায়ন একবার
বলছেন শাওন।
জেবার বাবাঃ কিন্তু তোমার বাবা মা কোথায় ?
লোকটাঃ আমার মা নেই বাবা আছে ।
জেবার বাবাঃ তাহলে ডাক উনাকে ।
লোকটা আর কিছু বলল না । ওর বাবাকে ফোনে সব বলল
। এরপর ওর বাবা এল । লোকটার বয়স হয়েছে ।
শাওনঃ এই যে আমার বাবা । উনার নাম রতন ।
রতনঃ না রে হাসিব । আমি তোর বাবা নই । আর তোর নাম
ও হাসিব নয় । তুই উনাদেরই ছেলে শাওন ।
শাওনঃ বাবা?
রতনঃ হ্যাঁ । (জেবার মামার দিকে ইশারা করে) ঐ লোকটার
সাথে একদিন (জেবার দিকে ইশারা করে) ঐ মেয়েটাকে আর তোকে আমি হাসপাতালের থেকে তুলে এনেছিলাম
। টাকার লোভে । আজ সেই লোভ আমার আর নাই । তাই তোকে তোর আসল বাবা মার কাছে তুলে দিলাম
।
শায়নের
মাঃ তাহলে এটা আমার ছেলে শাওন ! আর জেবা আসলে আমার মেয়ে মিমি ?
রতনঃ জি । আপনারা আমায় চাইলে শাস্তি দিতে পারেন । আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি
।
জেবার বাবাঃ
না না । আপনি যখন ভুল বুঝেছেন , শাস্তি আপনার হবে না । শাস্তি হবে এই কালু জোচ্চোর
টার ।
রতনঃ ঐ বদমাইশটার ব্যাপার আমার হাতে ছেড়ে দিন ।
আমি ওকে দেখছি । জেলেও পাঠাবো ।
ঠিক তখন জেবার মামি এলো ।
জেবার মামাঃ ওগো পুতুপুতু দ্যাখো এরা আমায় ধরে
নিয়ে যাচ্ছে ।
জেবার মামিঃ
বেশ করেছে । ( রতনকে) পুতুপুতু আঙ্কেল , ওকে নিয়ে ইচ্ছা মতো মারবেন । যেন আর
কোনোদিন সোজা হয়ে দাঁড়াতে না পারে । রতন এরপর শাওনকে একবার জড়িয়ে ধরল । তারপর কপালে
চুমু খেয়ে বলল, আমি কিন্তু তোকে দেখতে আসবো
।
শায়নের বাবাঃ অবশ্যই আসবেন । আমাদের বাড়ির দরজা
আপনার জন্য সবসময় খোলা থাকবে ।
রতনঃ আমি তাহলে এবার আসি । এই , ওকে গাড়িতে তোল
তো ।
এরপর দুজন লোক এসে জেবার মামা কে তুলে নিয়ে গেলো । রতনও চলে গেলো । শায়নের মা জেবা আর শায়ন কে বুকে
নিয়ে বলল
শায়নের মাঃ আজ আমার দুই ছেলে মেয়ে আমার কাছে । শায়নের জন্যই তোদের
পেলাম । শায়ন যদি আজ থাকতো তাহলে কত খুশি হতো ।
শায়নের বাবাঃ থাক ওসব কথা । চল বাসায় যাই ।
জেবার মাঃ যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা বলব?
শায়নের মাঃ জি বলুন ।
জেবার মাঃ জেবা বা মিমি , যাই বলি । ওকে আমি অনেক
ভালবাসি । আপনি আমাদের পরিবারে ওদের নিয়ে বাকি জীবন কাটাতে পারেন ?
শায়নের মাঃ এটা কিভাবে হয় আপনাদের পরিবারের ঝামেলা
হবে না ?
জেবার বাবাঃ ছি ছি , ঝামেলা কিসের । আমরা খুব ই
খুশি হবো যদি আপনারা আমাদের পরিবারের একজন হন ।
শায়নের মাঃ তুমি কি বল শায়নের বাবা?
শায়নের বাবাঃ উনারা যখন এত করে বলছেন তাহলে থাক
। আমি না হয় যাই ।
সবাই খুব খুশি ।
জেবার মাঃ একি আপনি দুপুরের খাবার টা অন্তত খেয়ে
যান ?
শায়নের বাবাঃ না না । আমার আবার আজ দুপুর থেকে অফিস শুরু । আমাকে যেতে
হবে । তবে কথা দিচ্ছি । মাঝে মাঝে আসবো ।
এরপর শায়নের বাবা চলে গেলো । সুখে শান্তিতে ওদের
দিন কাটতে লাগলো ।
দেখতে দেখতে কেটে গেলো ৩ টা বছর। সেদিন বাংলাদেশ আর অস্ট্রেলিয়ার টি টুয়েন্টি
ম্যাচ । গত দু দিনের ম্যাচ এ একদিন জিতেছে বাংলাদেশ , আরেকদিন জিতেছে অস্ট্রেলিয়া ।
আজ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই । জিতলেই বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন । হারলে অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়ন । বাংলাদেশের ৯ উইকেট পড়ে
গেছে । সাকিব আল হাসান ইনজুরিতে থাকায় আজ একজন
নতুন প্লেয়ার এসেছে । নাম আলী আহসান নাইম । দুই বলে ১২ রান বাকি । সবার মতো টিভির সামনে
বসে চিন্তায় আছেন জেবা , রনি , জেবার মা, জেবার বাবা , জেবার মামি , শাওন , শাওনের মা আর রোকসানা ।
শাওনের মাঃ ইশ বাংলাদেশ না জিতলে যে কি খুশি হবো
।
রনিঃ না । আজ মনে হয় বাংলাদেশ জিততে পারল না ।
শাওনঃ ২ বলে ১২ রান লাগে । জিতবে কিভাবে । তার
ওপর নামলো নতুন খেলোয়াড় । এ আউট হলেই খেলা শেষ ।
ক্যামেরা তখন জুম করে নতুন খেলোয়াড়ের সামনে ধরল
। নতুন প্লেয়ার হেলমেট ভালো ভাবে পড়ার জন্য হেলমেট খুলল । এবার ওর চেহারা দেখে শাওন
মিমি আর রনি অবাক ।
শাওনঃ একি ! এ তো হুবহু আমি !
জেবাঃ তবে কি এটা শায়ন ?
রনিঃ কিন্তু শায়ন কে না আমরা কবর দিয়ে এলাম ?
জেবাঃ ত্তাহলে এটা কে ?
সবাই অবাক হয়ে গেলো । একদম হুবহু দুজন মানুষ কিভাবে
হয় ? যা হোক ওরা খেলা দেখতে বসে গেলো । ১ম
বলেই একটা ৬ মারল নতুন প্লেয়ার ।
শাওনঃ যাক একটা আশার আলো দেখা গেলো ।
রনিঃ ধুর সব ঝড়ে বক । এবারও যে মারবে তার কি কোন
গ্যারান্টি আসে ?
জেবাঃ দেখা যাক কি হয় ।
এরপর সবার মনে টান টান উত্তেজনা । কে যে জিতবে
আর কে যে হারবে তার কোন ঠিক ঠিকানা নেই । সবার বুকের ভেতর টা ঢিপ ঢিপ করছে । নতুন প্লেয়ারও
হাতে ব্যাট নিয়ে মাটিতে ঠুকল । বোলের ও প্যান্টের সাথে বল ঘষল । এরপর শুরু করলো বোলিং
করার জন্য দৌড় । নতুন প্লেয়ার ও বোলের এর দিকে তাকাল । সবার মনে খুবই চিন্তা । জেবা
চিন্তায় দাঁত দিয়ে নখ কাটছে ।
রনিঃ নখ দিয়ে দাঁত কাটিস না ।
জেবাঃ ধুর বোকা , আমি দাঁত দিয়ে নখ কাটছি ।
এরপর বোলের
ছুঁড়ে মারল বল । ভয়ে জেবা চোখ বন্ধ করলো । নতুন প্লেয়ার শক্ত করে ব্যাট ধরল
। এরপর জোরে মারল আরেকটা ৬ । সবাই আনন্দে লাফিয়ে উঠলো । সবার মনে আনন্দ । জেবার পরিবারেও
আনন্দের কমতি নেই । হঠাৎ শাওনের মা হাসি থামিয়ে দিলো ।
শাওনেরঃ কিন্তু আমার শায়ন ও তো এতো ভালো খেলত ।
জেবাঃ হ্যাঁ মা । তুমি কিন্তু ভুল কিছু বলনি ।
রনিঃ আমি কালই এই ছেলের খোজ করছি ।
পরদিন রনি খোজ নিয়ে জানতে পারে এই ছেলে মাশরাফি ভাইয়ের বাড়ির পাশেই এক মহিলার বাড়ি থাকে । ভালো
খেলতে পারে বলে মাশরাফি ভাই ওকে খেলার জন্য বি কে এস পি তে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে । রনি
গেলো নরাইল । খোজ নিয়ে চলে গেলো সেই মহিলার বাড়ি । বাড়িটা টিনের বাড়ি । খুব দরিদ্র
পরিবারের । দরজায় নক করতে গিয়ে গলার আওয়াজ শুনে থেমে যায় রনি । তারপর আড়ি পেতে শুনতে
থাকে সব । ভেতর থেকে ঐ মহিলা প্লেয়ারটার সাথে কথা বলছে ।
মহিলাঃ তরে কিন্তু চুরি করার লাইগা তুইলা লইয়া
আইসি । চুরি তো করস ই নাই উল্টা পাড়ায় পাড়ায় ক্রিকেট খেইলা মাশরাফি ভাইয়ের নজরে পইড়া
জাতীয় টিমে গেসস । এহন যদি কস আমারে তোর ক্রিকেট
খেলার টাকা আমারে দিবি না তাইলে কিন্তু তরে পুইত্তালামু ।
প্লেয়ারটাঃ কিন্তু আপনি আমার সাথে কেন করছেন এরকম
? আমাকে আমার আসল পরিচয় কি ?
মহিলাঃ তোর আসল পরিচয় কি টা আমি কেমনে কমু । তরে
যেইদিন পাইলাম । তোর গায়ের পোশাক দেইখা আমি বুঝসিলাম তুই বড়লোক ঘরের পোলা । তারপর তোর
জামা কাপড় আমার পোলারে পড়াইয়া আমার পোলার জামা
কাপড় তরে পড়াইয়া দিসিলাম । পোলা আমার একদিন
কি কামে বাইরে গেলো আইজ ও খুইজা পাইলাম না । বাইচা আসে না মইরা গেসে তাও জানি না ।
রনিঃ ও তাহলে এটাই শায়ন ? আর ঐ লাশ টা এই মহিলার
ছেলের ছিল ।
এরপর রনি আর কিছুই না বলে ভেতরে ঢুকল । এরপর বলল,
রনিঃ তুমি আমাদের বাড়ির ছেলে ।
শায়ন(প্লেয়ার) : কিন্তু আপনি কে?
রনিঃ আমি তোমার বস । তোমার মনে হয় স্মৃতি ভ্রম হয়েছে তাই কিছু মনে
নেই ।
শায়নঃ আপনি আমায় আমার বাড়ি নিয়ে চলুন না ।
মহিলাঃ ঐ , কনতে উইরা আইসা জুইরা বইসে । কেডায়
আপনে ? কনতে আইসেন ?
রনিঃ আমি ওর বস । আর তাই ওকে নিতে এসেছি । বলতে
গেলে আমাকে আপনি ওর ভাই বলতে পারেন ।
মহিলাঃ ঐ বস ! খাইয়া সস , গেট লস্ট !
রনিঃ বাবা ! আপনি দেখছি ইংলিশ ও পারেন ।
মহিলাঃ আপনে যাবেন নাকি আমি পাড়ার লোক ডাকবো ।
শায়নঃ ডাকুন না পাড়ার লোক । আমিও সবাইকে সব বলে
দেব আপনি কি কি খারাপ কাজ করে অর্থ উপার্জন করেন ।
মহিলাঃ ও । তুইও ওর লগে যাইতে চাইতাসস?
রনিঃ শুধু ও কেন, আমিও কিন্তু আসার সম্ময় এলাকার
থানার ও সি এর নাম্বার এনেছি । দেব নাকি কল
?
মহিলা পুলিশের কথা শুনে খুব ঘাবড়ে গেলেন ।
মহিলাঃ না বাবা , থাক । তুমি অরে নিয়া যাও।
রনি এরপর শায়ন কে নিয়া গেলো । রাস্তায় হাটতে হাটতে শায়ন রনির সাথে কথা বলছিল
।
শায়নঃ কিছু মনে করবেন না । আমি আপনাকে কিভাবে বুঝবো আমি আপনার কেউ হই ?
রনি শায়ন কে ওর ছবি দেখাল । রাস্তায় আসতে গিয়েও কম ঝামেলা হয় নি ওদের । সবাই কেবল ওর
সাথে সেলফি তুলতে চায় , অটোগ্রাফ নিতে চায় । যা হোক ,অবশেষে ওরা বাড়ি ফিরল । সবাইকে
কিছুক্ষণ দেখেই শায়ন জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলো
। জ্ঞান ফিরতেই দেখল ওর সব মনে পড়ে গেছে । সবাই খুব খুশি । শায়নের বাবাও এসেছে এই খবর
শুনে ।
ওইদিন বিকেলে সবাই একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিল ।
জেবাঃ মা, তুমি না আগে খুব ভালো জ্ঞান করতে ?
রনির মাঃ হ্যাঁ । তা তো করতাম । কেন ?
জেবাঃ একটা গান শোনাও না আজ ।
রোকসানাঃ আমাগো আপার গলা মেলা ভালো । জানেন কি
তা ?
রনির মাঃ এত করে যখন বলছ তখন গাই ।
রনির মা গান ধরলঃ
“প্রেমের
জোয়ারে , ভাসাবে দোঁহারে ,
বাঁধন খুলে দাও , দাও দাও দাও
ভুলিব ভাবনা, পিছনে চাব না , পাল তুলে দাও , দাও দাও দাও
.....................”
(সমাপ্ত)