0 %

Thanks a lot for being with us!
We are re-constructing our website!
Sorry for this temporary inconvenience
We are coming to you with a fresh look and design from 1 January 2022!
Till then! Stay connected!

পরিচয় সিজন-১৩

Porichoy Season 13
×
পরিচয়(৩৬১)

দুই বছর পরের কথা । তখন শরতের শেষের দিককার কথা । সোশাল মিডিয়া তখন কাশফুলের সাথে ছবিতে ভরা । সেই সময় আবিরের ঘরে এসেছে নতুন সদস্য, আবির আর চয়নিকার মেয়ে, ঋতু । এদিকে তার ঠিক এক সপ্তাহের মাথায় অয়ন আর মাইশার ঘরে আসে নতুন সদস্য, তাদের মেয়ে, মিলি । নতুন সদস্যের আগমণের খুশির সাথে আরও একটা খুশিও রয়েছে । আবিরের সেই স্বপ্নের বাড়ি তৈরি । কাল সবাই ওই বাড়িতে যেয়ে উঠবে । সবাই বলতে আবির, চয়নিকা, রাব্বি, নিশান আর ঋতু । অয়নকে অনুরোধ করেছিলো আবির সে বাড়তে সবাই মিলে একসাথে থাকতে, কিন্তু অয়ন যেতে রাজি হয় নি । সে বাবার এই বাসাতেই থাকতে চায় । আর তাছাড়া অয়ন আবিরের কোম্পানির চাকরি ছেড়ে আরেকটা চাকরিতে জয়েন করেছে, সেই অফিস এখান থেকে কাছে । তাই ওদিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত সে নাকচ করে দিলো । জামাকাপড় সব গোছাচ্ছে আবির আর চয়নিকা । আপাতত ওরা ওদের ভাড়া বাসাটাতেই আছে । জামাকাপড় গোছাতে গোছাতে আবির চয়নিকাকে বলল, “শোনো, এই বাসায় যে ফার্নিচারগুলো আছে, এগুলো সকালে নিয়ে যাবো, ও বাড়িতে সব গুছিয়ে রাখতে রাখতে তোমরা তোমার বাবার বাসায় থেকো ।” চয়নিকা বলল, “ঠিক আছে, আমরা দুপুরের খাওয়া দাওয়া করে না হয় বের হবো ।” আবির বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ, একটা কাজ কোরো, অয়ন, মাইশা আর সাবিত ভাইকেও ডেকো! কাল রাতে না হয় সবাই একসাথে ওই বাড়িতে কাটাবো!” চয়নিকা বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে ।” আবিরের বাসায় কয়েকদিনের আশ্রয়ে আসা দ্বীপ ফিরে গেছে ময়মনসিংহ তার স্ত্রীকে সাথে নিয়ে । ওর স্ত্রী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যেতেই ওরা ফিরে গেছে । আবিরের পরিবারে বোঝা হয়ে থাকতে চায় নি সে ।
পরদিন সকাল হতেই বাসা থেকে মালামাল নামাতে শুরু করলো ভ্যানওয়ালারা । আবির ওদের দিক নির্দেশনা দিতে লাগলো । “সাবধানে সাবধানে!......। ওই কার্টুনে কাচের জিনিস আছে কিন্তু…………সব ফার্নিচার বার্নিশ করিয়েছি! দেখে নামাবেন…….।” চয়নিকা ওর বাবার বাসায়, অর্থাৎ বর্তমানে অয়ন আর মাইশা যেখানে থাকছে, সেখানে গিয়ে উঠেছে । সেই বাসার বারান্দা থেকে মালামাল তুলতে দেখছে রাব্বি । নিশান এসে জিজ্ঞেস করলো, “কিরে, কি দেখছিস?” রাব্বি বলল, “আমরা কোথায় যাচ্ছি?” নিশান জবাব দিলো, “আমরা নতুন বাসায় যাচ্ছি, বড় বাড়ি! সেখানে অনেক মজা করবো আমরা!”
“সেটা কেমন বাড়ি?” জিজ্ঞেস করলো রাব্বি ।
“কেমন তা তো আমিও দেখিনি, তবে বাবা বলেছে, মুভিতে যেমন হয়, বড় একটা প্রাচীরের ভেতর মাঠের মাঝখানে একটা বিরাট বাড়ি, সেরকম ।” বলল নিশান ।
“ও আচ্ছা! ওই বাড়িটা বানাতে কতদিন লেগেছে?” জিজ্ঞেস করলো রাব্বি ।
“তা তো জানি না, কিন্তু আমি যখন তোর বয়সি ছিলাম, তখন বাবা এই বাড়ির কথা বলেছিলো আমাকে ।” বলল নিশান । রাব্বি আর তেমন কিছু জিজ্ঞেস করলো না ।
“উহ! বিরিয়ানির যা গন্ধ বেরিয়েছে না!” রান্নাঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলল অয়ন । রান্না বান্না করছে চয়নিকা আর মাইশা । অয়নের কথা শুনে মাইশা বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ, তুমি তো শুধু খাবেই, কষ্ট করে যে আমরা রান্না করছি, তার দাম আর দেবে না ।” অয়ন বলল, “আহা! কে বলেছে দাম দেই না? এই যে দ্যাখো, খাওয়া আগেই প্রসংসা করলাম!” মাইশা বলল, “বাহ! প্রসংসা দিয়েই সব হয় নাকি?” অয়ন জিজ্ঞেস করলো, “তাহলে কি করবো ম্যাডাম?” চয়নিকা বলল, “আমার ভাইটার লজ্জা শরম নাই! নিজের বোনের সামনে বউয়ের সাথে রোমান্টিক কথা বার্তা বলছে!” অয়ন বলল, “ইশ! কি যে বলো না!” চয়নিকা মাইশাকে জিজ্ঞেস করলো, “তা মাইশা, আমারও শুনতে ইচ্ছে করছে, দাম কি করে মেটাবে অয়ন?” মাইশা বলল, “কেনো? শুধু কি আমরাই রান্না করবো আর ওরা খাবে নাকি? মাঝে মাঝে ওরা রান্না করে আমাদের খাওয়াতেও তো পারে!” কথা শুনে ভয় পেলো অয়ন । বলল, “এ বাবা! এ আবার কেমন কথা! আমরা রান্না করতে যাবো কোন দুঃখে?” চয়নিকা মাইশাকে বলল, “হ্যাঁ! কথা কিন্তু তুই ভুল বলিস নি! তাহলে চল, আজই এই ছেলেগুলার একটা হেস্ত নেস্ত করি!” মাইশা জিজ্ঞেস করলো, “মানে?” চয়নিকা বলল, “তোমার ভাই, আবির, তোমাদের আজকে দাওয়াত দিয়েছে আমাদের নতুন বাড়িতে, রাতে খাবার জন্য । তা কেমন হয়, আজকের খাবার যদি তোমার ভাই আর আমার ভাই বানায়?” কথা শুনে অয়ন বলল, “না! এসব ষড়যন্ত্র চলবে না! তোমরা পুরুষদের কি অবলা পেয়েছো?” মাইশা বলল, “ঠিক আছে, অবলা না হলে একটু প্রমান করে দেখাও, তোমরাও রান্নাবান্না পারো!” অয়ন বলল, “ঠিক আছে! আবির ভাই রাজি থাকলে আমিও রাজি!”
এদিকে নিজের বড় বাড়ির সামনে বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আবির । ঠোঁটের কোণে আনন্দের হাসি । মৃদু বাতাসে চুল উড়ছে । মনে মনে নিজেই নিজেকে বলছে, “আমি সালমান খান আবির! ছোটবেলায় কোন এক দুর্ঘটনায় মা বাবার থেকে দূরে চলে যাওয়া আবির! না জানি নিজের পরিচয়, না জানি নিজের আসল অস্তিত্ব, কিন্তু তবুও কিছু মানুষের ভালোবাসা আর করুণায় আজ আমি এতো বড় একটা বাড়ির মালিক! আজ আমার সত্যিই ইচ্ছে হচ্ছে, আমার এই পথচলায় যারা আমার সাথে থেকে তাদের সবার সব ঋণ জীবন দিয়ে হলেও শোধ করতে, কিন্তু তাদের ঋণ যে কিছুতেই শোধ করা সম্ভব নয়! কিন্তু আমার জানার খুব ইচ্ছে, কি আমার আসল পরিচয় । আমি কি পারবো? জীবনের পাওয়া এতো পরিচয়ের ভিড়ে নিজের আসল পরিচয় খুজে পেতে?”

আগামী পর্বেঃ
জানালা দিয়ে তাকালে বড় মাঠ, মাঠের ওপাশে প্রাচীরের মাঝের ছোট গেইট দিয়ে কখনও গাড়ি, কখনও রিকশার আনাগোনা চোখে পড়ছে । এমন সময় হঠাৎ রাব্বির মনে হলো, বয়স্ক করে একটা লোক যেনো দাঁড়িয়ে আছে না? উকি দিয়ে কি যেনো দেখছে । রাব্বি পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো, সবাই কাজে ব্যাস্ত । এই ফাঁকে সবার চোখের আড়ালে বেড়িয়ে গেলো সে । দারোয়ান কাল থেকে আসবে বলে আজ দারোয়ান নেই । রাব্বি গেইটের সামনে এসে বয়স্ক লোকটাকে আর খুজে পেলো না । কেনো যেনো বয়স্ক লোকটাকে দেখার ওর খুব ইচ্ছে হয়েছিলো ।
×
পরিচয়(৩৬২)

ঘরের মালামাল সব এনে গুছিয়ে রাখা হয়েছে । এখন ছোটখাটো জিনিস কিংবা সোকেসের জিনিসগুলো গুছিয়ে রাখছে চয়নিকা, মাইশা, নিশান আর সাবিত । রাব্বির জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে নতুন জায়গা দেখছে । জানালা দিয়ে তাকালে বড় মাঠ, মাঠের ওপাশে প্রাচীরের মাঝের ছোট গেইট দিয়ে কখনও গাড়ি, কখনও রিকশার আনাগোনা চোখে পড়ছে । এমন সময় হঠাৎ রাব্বির মনে হলো, বয়স্ক করে একটা লোক যেনো দাঁড়িয়ে আছে না? উকি দিয়ে কি যেনো দেখছে । রাব্বি পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো, সবাই কাজে ব্যাস্ত । এই ফাঁকে সবার চোখের আড়ালে বেড়িয়ে গেলো সে । দারোয়ান কাল থেকে আসবে বলে আজ দারোয়ান নেই । রাব্বি গেইটের সামনে এসে বয়স্ক লোকটাকে আর খুজে পেলো না । কেনো যেনো বয়স্ক লোকটাকে দেখার ওর খুব ইচ্ছে হয়েছিলো ।
“আপু! সামনের যে মাঠটা আছে না! এখানে গাছ লাগাবা । ফুলের গাছ স্পেশালি! অনেক সুন্দর লাগবে দেইখো!” শোকেসে জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখতে রাখতে চয়নিকাকে কথাগুলো বলছিলো মাইশা । চয়নিকা বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ! ঠিক বলেছিস । আমিও তাই ভাবছিলাম ।” সাবিত বলল, “এহ! এতো বড় মাঠ টা! ক্রিকেট খেলা যাবে, এখানে ফুলের গাছ লাগানোর কি দরকার? হ্যাঁ যত্ন নিলে তাও একটা কথা ছিলো, দুদিন পর দেখা যাবে গাছের আর কোনো যত্ন কেউ নিচ্ছে না ।” চয়নিকা বলল, “হইছে! থামেন । যত্ন নেই কি নেই না দেইখেন । আপনাকেও পাঠানো উচিৎ ছিলো আবির আর অয়নের সাথে!” আবির আর অয়ন রান্নাঘরে রান্না বান্না করছে । চয়নিকা আর মাইশার কথা অনুযায়ী । সাবিত বলল, “আচ্ছা চুনি! অনেক বড় ভুল করে ফেললে ।” চয়নিকা জিজ্ঞেস করলো, “কি ভুল?” সাবিত বলল, “এই যে, কাজ টাজ করে হাফিয়ে যাবো, তখন বেশ খিদে পাবে, ওই আবির আর অয়নের খাবার মুখে ঢুকবে তো? না মানে স্বাদের একটা ব্যাপার আছে না?” মাইশা বলল, “সেই ব্যাবস্থাও আমরা করে রাখছি ভাই!” সাবিত জিজ্ঞেস করলো, “কি?” সোফার আড়াল থেকে কিছু খাবারের প্যাকেট বের করে মাইশা সবাইকে দেখিয়ে বলল, “এই যে! ওই খাবার মুখে না তুলতে পারলে এগুলো খাবো আমরা! যদিও হ্যাঁ, চুনি আপু একটু বেশিই করে ফেলেছে, এখানে আবির ভাই আর আমার ওর খাবার নেই ।” চয়নিকা টিপ্পনি কেটে বলল, “আরে বাবা! উনার ওর খাবার নেই বলে কি কষ্ট হচ্ছে!” সাবিত বলল, “আচ্ছা আচ্ছা! কষ্টের কিছু নাই । ওদের খাবার ওরা মুখে তুলতে পারবে ।” এদিকে রাব্বি এসে ঢুকল ঘরে । রাব্বিকে দেখে সাবিত কাছে ডাকলো । “এদিকে এসো রাব্বি!” রাব্বি সাবিতের কাছে গেলো । সাবিত ওকে কোলে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কি ব্যাপার? নতুন জায়গা ভালো লাগে নি?” রাব্বি বলল, “হ্যাঁ! ভালো লেগেছে । লাগবে না কেনো?” সাবিত জিজ্ঞেস করলো, “তাহলে এতো চুপচাপ যে?” রাব্বি বলল, “এমনিই ।” চয়নিকা বলল, “ও এরকমই । তবে ভাইয়ের সাথে থাকলে ওর মতো চঞ্চল আর দুইটা থাকে না!” সাবিত হেসে বলল, “সমস্যা নেই, বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে!” রাব্বি উঠে আবার জানালার কাছে গেলো । জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকাতেই দেখলো, সেই বয়স্ক লোকটা এবার গেইটের ভেতরে এসেছে । রাব্বি উঠে আবার বাইরে গেলো । কিন্তু বাইরে এসে লোকটা আবার উধাও । রাব্বির গেইটের কাছে যেয়ে এপাশ ওপাশ তাকিয়ে খুজলো, কিন্তু পেলো না । এরপর ঘরে ফেরার জন্য যে-ই উল্টো দিকে ঘুরতে যাবে, এমন সময় রাব্বি চমকে উঠলো । দেখলো, বয়স্ক লোকটা ওর সামনে দাঁড়িয়ে । ঘেঁষা গলায় বয়স্ক লোকটা জিজ্ঞেস করলো, “তোমার নাম কি বাবা?”
“তুই! এই তুই একমাত্র দায়ী আমার এই হালের জন্য!” রান্না করতে করতে কথাটা অয়নকে বলল আবির । “যা বাবা! এতে আমার কি দোষ? দোষ আমার ওর, আর তোমার ওর ।” বলল অয়ন । আবির বলল, “হইছে, তোরে খুব ভালো কইরা চিনি আমি । নিশ্চয়ই তুই ওরা রান্না করার সময় ভাব নিতে গেছোস, আর ওরা তোরে এই চ্যালেঞ্জ দিছে । সাথে আমারেও ফাসাইছে ।” অয়ন কথা এড়িয়ে যাবার জন্য বলল, “ভাই, এই গরুর মাংসের তরকারিটা চেখে দ্যাখো তো ।” আবির একটা চামচ নিয়ে চেখে দেখে বমি করার ভাব ধরে বলল, “ছাতার মাথা কি যে রেঁধেছি! বেচারা গরু মরেও শান্তি পাইলো না!” অয়ন জিজ্ঞেস করলো, “এবার কি হবে? ওরা না খেতে পারলে আমাদের ঝাড়বে!” আবির কিছুক্ষণ ভেবে বলল, “একটা বুদ্ধি পেয়েছি!” অয়ন জিজ্ঞেস করলো, “কি?” আবির বলল, “আমার, তোর, আর বাচ্চাদের জন্য বাইরে থেকে অর্ডার করি, আর ওরা এই খাবার খাক! কেমন হবে?” অয়ন বলল, “পারফেক্ট! ওরা এই ফালতু খাবার খেয়ে থাকুক, আর আমরা আরামসে থাকি!” আবির বলল, “ঠিক! আমি তাহলে খাবার অর্ডার করি ।” বলে মোবাইল হাতে নিয়ে খাবার অর্ডার দেয়া শুরু করলো আবির ।
“আমার নাম রাব্বি । তোমার নাম?” বয়স্ক লোকটার কথার জবাবে বলল রাব্বি । বয়স্ক লোকটা বলল, “আমার নাম হইলো মিন্টু মিয়া । এইহানেই ভিক্ষা করি ।” রাব্বি জিজ্ঞেস করলো, “কিন্তু আমাদের বাসার এখানে কি করছো?” মিন্টু নামক বয়স্ক লোকটা বলল, “তোমরা যহন আছিলা না, মানে এই বাড়িডা যহন হইতেছিলো, তহন মাঝে মাঝে ঝর বাদলার সময় আমি এইহানে আইসা এল্লা আশ্রয়ে থাকছি । আইজকা দেখি তোমরা উইঠা পড়ছো, এহন মনে হয় না আর আসা হইবো ।”

আগামী পর্বেঃ
বাবার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “বাবা! কি করছো?” আবির রাব্বির দিকে তাকিয়ে রাব্বির মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “কষ্ট হচ্ছিলো, বুঝলি । তাই এখানে এসে দাড়িয়ে আছি । এই যে এতোগুলো খাবার আমরা নষ্ট করছি, আর এই পৃথিবীতে কতো মানুষ না খেয়ে থাকে । এজন্যই খারাপ লাগছে । এতোগুলো খাবার অপচয় করলাম আমরা ।”
×
পরিচয়(৩৬৩)

“কেনো আসা হবে না? আপনি আমাদের সিড়িঘরে থাকবেন!” বলল রাব্বি । মিন্টু রাব্বির মাথায় হাত রেখে বলল, “তুমি দেইখা তাও সিড়িঘরে যাইতে কইলা, অন্য কেউ হইলে এই যে গেইটডা এইহান দিয়াই ঢুকতে দিতো না ।” রাব্বি জিজ্ঞেস করলো, “কেনো?” মিন্টু বলল, “বড় হও তাইলে বুঝবা, এই দুনিয়ার মাইনসে যে কত্ত খারাপ! সব দেখবা তুমি! সব ।” এমন সময় একজন ডেলিভারি বয় গেইটের সামনে এসে জিজ্ঞেস করলো, “এক্সকিউজমি, আপনি কি সালমান খান?” বৃদ্ধ লোকটা বলল, “না তো ।” রাব্বি বলল, “সালমান খান আমার বাবা!” ডেলিভারি বয় তখন কল করলো আবিরকে । রাব্বি বয়স্ক লোকটার দিকে ঘুরে তাকাতেই তাকে দেখতে পেলো না । চলে গেছে । এদিকে ডেলিভারি বয় এর কল পেয়ে ছুটে এলো আবির । এসে রাব্বিকে দেখে জিজ্ঞেস করলো, “রাব্বি! তুমি এখানে কি করছো?” রাব্বি বলল, “কই নাতো! কিছু না!” আবির বলল, “যাও! ঘরে যাও!” রাব্বি ঘরে গেলো । আবির ডেলিভারি বয়ের কাছ থেকে খাবারগুলো নিয়ে ডেলিভারি বয়কে টাকা দিয়ে ভেতরে গেলো ।
এক ঘন্টা পর সবার সামনে খাবার এনে হাজির করলো আবির । আর বলে উঠলো, “রাতের খাবার রেডি!” আবিরের কথা শুনে চয়নিকা ফিসফিসিয়ে মাইশাকে বলল, “খাওয়া গেলে হয় ।” প্লেটে প্লেটে খাবার বেড়ে দেয়া হলো । কেউই শুরু করতে সাহস পাচ্ছে না । অবশেসে সাহস করে মাইশা মুখে নিলো, তারপর বমি করার ভাব ধরে বলে উঠলো, “এটা কি!” আবির বলল, “কি ব্যাপার, খাওয়া যাচ্ছে না?” চয়নিকাও তখন সাহস করে একটু মুখে দিয়ে মাইশার মতোই বমি করার মতো করে বলল, “আসলেই! কি রান্না করছো এইটা! খাওয়ার মতোই হয় নাই!” আবির বলল, “ইশ! এখন কি হবে! তোমরা কি খাবে?” কথাটা বলে আবির আর অয়ন একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো, কারণ ওরা অর্ডার করে আনা খাবার খেয়েছে । মাইশা এদিকে ওদের আনা খাবার বের করে বলল, “লাগবে না! এইযে! আমাদের খাবার বাই দা ওয়ে, এখানে কিন্তু অনলি আমাদের খাবার আছে, তোমাদের নাই!” আবির বলল, “ওরে চিটার! আমাদের না দিয়ে খাওয়া ধান্দা! চয়নিকা বলল, “শোনো! একদিন কাজ করেই এসব বলছো, আর আমরা প্রতিদিন এভাবে রান্না করি, আমাদের কষ্টটা একটু বোঝো!” অয়ন বলল, “তাই বলে আমাদের না খাইয়ে রেখে?” মাইশা বলল, “এটা কিন্তু আমার প্ল্যান ছিলো না! চুনি আপুর ছিলো!” চয়নিকা বলল, “তোমাদের জন্য আনিনি ঠিকই, কিন্তু বাচ্চাদের জন্য এনেছি!” আবির কিছু একটা বলতে যাবে, এমন সময় অয়ন আবিরকে বলল, “ভাই! কিছু বইলো না আর! আমরাও কিন্তু ওদের না দেয়ার প্ল্যান করে খাবার এনেছি!” মাইশা হেসে উঠে বলল, “এইযে! আমি কিন্তু শুনে ফেলেছি!” অয়ন জিজ্ঞেস করলো, “কি শুনছো তুমি?” মাইশা বলল, “তোমরাও খাবার খেয়েছো! তাও আমাদের না দেবার হিসেব করে!” আবির অয়নকে বলল, “তুই একটু চুপ থাকতে পারিস না!” চয়নিকা আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল, “ওরে চিটার! ওরে বাটপার!” আবির বলল,”আচ্ছা, যা হওয়ার হইছে, আমরা সবাই তো খাইছি, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, বাচ্চাদের জন্য তোমরাও আনছ, আমরা আনছি, তার ওপর আমাদের এতোগুলো খাবার তো খাওয়াই যাচ্ছে না, এগুলো কি করবো?” চয়নিয়া বলল, “খাওয়া দাওয়া শেষে বাকিগুলো রান্নাঘরে রেখে এসো, সকাল হলে ফেলে দিও । ফ্রিজেও ফাকা জায়গা নেই রাখার জন্য ।”
রাত তখন বারোটা মতো বাজে । বাকিরা যার যার বাসায় চলে গেছে । চয়নিকা, নিশান ঘুমিয়ে গেছে । রাব্বিও চয়নিকার পাশেই ঘুমিয়ে ছিলো, কিন্তু হঠাৎ ঘুমটা ওর ভেঙ্গে গেলো । পাশে তাকিয়ে দেখলো, ওর বাবা নেই । উঠে বসলো, রুমের কোথাও ওর বাবা নেই । টয়লেটের দরজাটাও খোলা, তার মানে ওর বাবা টয়লেটের যায় নি । রাব্বি রুম থেকে বেরোলো বাবাকে খুজতে । এতো বড় বাড়ি, খোজা আসলেই মুশকিল । তবে রান্নাঘরে গিয়ে রাব্বি আবিরকে দেখলো । বাবার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “বাবা! কি করছো?” আবির রাব্বির দিকে তাকিয়ে রাব্বির মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “একি, তুই ঘুমোস নি?” রাব্বি বলল, “ঘুমিয়েছিলাম, কিন্তু ঘুম ভেঙ্গে গেছে, তারপর তোমাকে খুজে না পেয়ে খুঁজতে খুঁজতে দেখি তুমি এখানে ।” আবির বলল, “কষ্ট হচ্ছিলো, বুঝলি । তাই এখানে এসে দাড়িয়ে আছি ।” রাব্বি জিজ্ঞেস করলো, “কষ্ট? কিসের জন্য?” আবির সামনের দিকে তাকিয়ে বলল, “দ্যাখ!” রাব্বিও সামনের দিকে তাকালো । আজকের সব বাড়তি খাবার । রাব্বি জিজ্ঞেস করলো, “এগুলো দেখে কষ্টের কি আছে?” আবির বলল, “অনেক কিছু বাবা, অনেক কিছু । এই যে এতোগুলো খাবার আমরা নষ্ট করছি, আর এই পৃথিবীতে কতো মানুষ না খেয়ে থাকে । এজন্যই খারাপ লাগছে । এতোগুলো খাবার অপচয় করলাম আমরা ।” রাব্বি জিজ্ঞেস করলো, “এই খাবারগুলো তো আমরা সকালেও খেতে পারি!” আবির বলল, “ফ্রিজ থাকলে ফ্রিজে রাখা যেতো, কিন্তু ফ্রিজে অনেক কিছু দিয়ে ভরা । আর যে গরম পড়েছে, সকাল হতে হতে সব খাবার নষ্ট হয়ে যাবে ।” রাব্বি বলল, “ও আচ্ছা!” আবির তখন সেখান থেকে রুমে ফিরতে ফিরতে বলল, “আয়, ঘুমোতে আয় ।” রাব্বি কিছুক্ষণ রান্নাঘরে থাকা খাবারগুলো দিকে তাকিয়ে তারপর হাটা শুরু করলো । আসার সময় একটা জানালা দিয়ে ওর চোখ গেলো বাইরের দিকে । সেই বৃদ্ধ লোকটা দাঁড়িয়ে আছে । মিন্টু যার নাম । রাব্বি মনে মনে বলল, “এই খাবারগুলো উনাকে দিলে কেমন হয়?”

আগামী পর্বেঃ
ডাইনিং টেবিলে এসেছে সবাই নাস্তা করতে । চয়নিকা খাবারের প্যাকেট রান্নাঘরে নিয়ে গেছে প্লেটে সেগুলো বেড়ে আনার জন্য । সে সময় ওর মনে পড়লো গতকালকের খাবারগুলোর কথা । “দেখিতো! সেগুলো এখনও সতেজ আছে কিনা!” বলে দেখতে যেয়ে দেখলো, খালি থালা । খাবারগুলো নেই ।
×
পরিচয়(৩৬৪)

“নানু!” মিন্টুর সামনে এসে কথাটা বলল রাব্বি । হাতে ওর খাবারের থালা । এতো খাবার তাতে । আবির চলে যাবার পরই সেগুলো এনেছে রাব্বি, মিন্টুকে দেবে বলে । মাথা নিচু করে বসে ছিলো মিন্টু, রাব্বিকে দেখে জিজ্ঞেস করলো, “তুমি! এতো রাইতে কি করো বাবু?” রাব্বি খাবারের থালাটা এগিয়ে দিয়ে বলল, “খাবার!” মিন্টু জিজ্ঞেস করলো, “আয় হায়! তুমি এইগুলা বাসা থেইকা ক্যান নিয়া আইছো! তারপর কতো খাবার! তোমারে তো বকা দিবে! যাও নিয়া যাও!” রাব্বি বলল, “না না, কেনো বকা দেবে, এই খাবারগুলো এমনিতেই ফেলে দিতো, অপচয় হতো । তাই আমি তোমার জন্য আনলাম ।” মিন্টু বলল, “ও আইচ্ছা! তয় তাও, সত্যি বলতাছো তো? তোমারে বকা দিবে না তো?” রাব্বি বলল, “না না! সেটা নিয়ে তুমি চিন্তা কোরো না!” মিন্টু খাবারের থালাটা হাতে নিয়ে বলল, “আইচ্ছা!” রাব্বি বলল, “তবে থালাটা পড়ে ফেরত দিও, এটা না দেখলে আমাকে বকা দেবে ।” মিন্টু বলল, “খাঁড়াও!” তারপর মিন্টুর কাছে থাকা একটা পলিথিন নিয়ে তাতে খাবারগুলো ঢেলে থালাটা রাব্বির হাতে দিয়ে বলল, “নেও!” বলে মিন্টু উঠে দাঁড়ালো । রাব্বি জিজ্ঞেস করলো, “চলে যাচ্ছেন কোথায়?” মিন্টু বলল, “আমার কিছু পরিচিত বাচ্চা কাচ্চা আছে, ওরাও না খাইয়া থাকে, এতো তো আমি একা খাইতে পারমু না, ওদের দিয়া খামু ।” রাব্বি বলল, “ঠিক আছে! আমি যাই!” বলে মিন্টুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলো রাব্বি । দরজাটা লাগাতেই আবির নেমে এলো । জিজ্ঞেস করলো, “রাব্বি! তুমি দরজার কাছে কি করছো?” রাব্বি বলল, “কিছু না বাবা, দরজাটা খোলা মনে হলো, তাই দেখতে এসেছিলাম ।” আবির বলল, “ও! চলো! আমি অনেকক্ষণ তোমাকে আসতে না দেখে আবার চলে এলাম । চলো! সকালে স্কুল আছে না!” রাব্বি বলল, “হ্যাঁ বাবা! চলো ।” তারপর আবিরের সাথে রাব্বি উপরে চলে গেলো । রাব্বি দরজা লাগানোর সময় হাতের থালাটা এমন জায়গায় রেখেছিলো, যেখানে আবিরের দৃষ্টি পৌঁছতে পারবে না, কারন সেটার সামনে আরেকটা ফার্নিচার ছিলো । ফলে এ যাত্রায় রাব্বি বেঁচে গেলেও আবির চলে আসায় থালাটা সেখান থেকে রান্নাঘরে রেখে আসতে ভুলে গেলো ।
সকালে ঘুম থেকে উঠলো চয়নিকা । উঠে বসলো । দেখলো, আবির উঠে বসে আছে । অগোছালো যা আছে, সেগুলো গোচ্ছাচ্ছে । চয়নিকা জিজ্ঞেস করলো, “একি! এতো সকালেই উঠে গেছো?” আবির বলল, “আমি তো তাড়াতাড়িই উঠি! ফজরের নামাজ পড়তে হয় তো! তুমি আজ মিস করলে ।” চয়নিকা বলল, “হ্যাঁ! গতকাল এতোকিছু করে প্রচুর টায়ার্ড ছিলাম, উঠতে পারলাম না!” আবির বলল, “আমি ডেকেওছিলাম তোমাকে, তুমি কি বলেছো জানো? আজ স্কুলে যাবো না!” চয়নিকা আর আবির দুজনেই হেসে উঠলো । চয়নিকা বলল, “আসলে ছোটোবেলার একটা স্বপ্ন দেখছিলাম । স্কুলে যেতে মা ডাকছে এরকম মনে হলো । সেটাই হয়তো তোমাকে বলে ফেলেছি ।” এরপর চয়নিকা উঠে মাথার চুল খোপা করে বলল, “যাই, রান্না করি । তোমাকে তো কোম্পানিতে যেতে হবে ।” আবির বলল, “আজ নাস্তা বানাতে হবে না, আমি অর্ডার করে এনেছি খাবার ।” চয়নিকা বলল, “ও! তাহলে তো ভালোই হলো । বলে বাথরুমের দিকে ফ্রেশ হতে গেলো আবির ।” আবির চয়নিকাকে আবার কিছু একটা বলতে গেলো, কিন্তু চয়নিকা ততোক্ষণে বাথরুমে ঢুকে গেছে । আবির মনে মনে বলল, “না, চয়নিকা পরে হয়তো এক সময় খাবারগুলো ফেলে হয়তো থালাটা ওখানে রেখে দিয়েছিলো! তাই হবে । এজন্যই থালাটা ওখানে ছিলো বোধ হয় ।” এ যাত্রায়ও বেঁচে গেলো রাব্বি ।
ডাইনিং টেবিলে এসেছে সবাই নাস্তা করতে । চয়নিকা খাবারের প্যাকেট রান্নাঘরে নিয়ে গেছে প্লেটে সেগুলো বেড়ে আনার জন্য । সে সময় ওর মনে পড়লো গতকালকের খাবারগুলোর কথা । “দেখিতো! সেগুলো এখনও সতেজ আছে কিনা!” বলে দেখতে যেয়ে দেখলো, খালি থালা । খাবারগুলো নেই । মনে মনে বলল, “মনে হয় খাবারগুলো নষ্ট হয়ে গেছে দেখে সকালে আবির সেগুলো ফেলে দিয়েছে ।” তারপর প্লেটে খাবার বাড়া শুরু করলো ।
স্কুলে রাব্বি বাবার সাথে গাড়িতে করে গেলেও আসার সময় একা আসে । আগে চয়নিকা আসতো, কিন্তু এখন সে একাই আসার অভ্যেস করে ফেলেছে । এই রাস্তা নতুন যেহেতু তাই চয়নিকা আসতে চেয়েছিলো, কিন্তু স্কুল এই বাসা থেকে খুব একটা বেশি দূরে না হওয়ায় রাব্বি বলল সে পারবে । স্কুলে যাবার সময় বাবার গাড়ির জানালার কাচ দিয়ে সেই মিন্টু মিয়াকে দেখতে পেলো রাব্বি । একটা বস্তির পাশে বসে ভিক্ষে করছে । তাই ভাবলো স্কুল থেকে ফেরার পথে দেখা করবে । রাব্বির ভাগ্য ভালো, স্কুল থেকে ফেরার পথে মিন্টুকে দেখলো সে সেখানে যেতেই মিন্টু জিজ্ঞেস করলো, “আরে বাবু! তুমি এইহানে!” রাব্বি বলল, “হ্যাঁ, আপনাকে দেখলাম, তাই চলে এলাম ।” মিন্টুর পাশে একটা উচু পাটাতন মতো ছিলো । সেটা পরিষ্কার করে দিয়ে মিন্টু বলল, “বইসো এইহানে!” রাব্বি বসলো । জিজ্ঞেস করলো, “আপনি এখানে ভিক্ষে করেন?” মিন্টু বলল, “শুধু এইহানে ক্যান, যহন যেইহানে পারি! আইজকা এইহানে আইতে মন চাইলো, তাই আইলাম ।” রাব্বি বলল, “ও! আর রাতে আমাদের বাসার ওদিকে যান কেনো?” মিন্টু বলল, “কইসিলাম না আগে ওইহানে থাকতাম, তাই এহনও ওই সামনে থাহি ।” রাব্বি ওপর নিচ মাথা নাড়লো । মিন্টু তখন বলল, “একখান কথা কমু?” রাব্বি জিজ্ঞেস করলো, “কি?” মিন্টু বলল, “তুমি আমার কাছে আইসো না ।” রাব্বি জিজ্ঞেস করলো, “কেনো?” মিন্টু বলল, “তোমার বাপ মা তোমারে বকা দেবে ।”

আগামী পর্বেঃ
রাব্বি মিন্টুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসার পথে হাটা শুরু করলো । কিছুর আসার পর সামনে এসে দাঁড়ালো নিশান । চেহারায় বিরক্তির ছাপ । রাব্বির কান টেনে ধরে নিশান জিজ্ঞেস করলো, “কই গেছিলি তুই! বাসায় আসতে এতক্ষণ লাগে কেনো?” রাব্বি বলল, “তোমার কি তাতে? আমি তো ফিরছিই, না এলেই পারতে!”
×
পরিচয়(৩৬৫)সিজন-১

“হ্যালো!” চয়নিকার কল এলো আবিরের মোবাইলে, কলটা ধরে কথাটা চয়নিকাকে বলল আবির । জবাবে ওপাশ থেকে চয়নিকা বলল, “হ্যালো আবির! তুমি কি ফ্রি আছো?” আবির বলল, “না একটু পর মিটিং আছে, কেনো?” চয়নিকা বলল, “না, আসলে রাব্বি এখনও বাসায় ফেরে নি ।” আবির জিজ্ঞেস করলো, “সেকি! ওর স্কুল থেকে ফিরতে তো বেশিক্ষণ লাগেনা, পনেরো বিশ মিনিট লাগে, আর ওর স্কুল তো ঘন্টা খানেক আগেই শেষ হয়েছে!” চয়নিকা বলল, “সেটাই তো! ভয় হচ্ছে আমার ।” আবির বলল, “না না, শুধু শুধু ভয় করছো কেনো!” চয়নিকা বলল, “কেনো করবো না বলো? নিশানের সাথে কি হয়েছিলো মনে নেই?” আবির বলল, “আচ্ছা! নিশানকে তাহলে পাঠিয়ে দেখো । আর ভয়ের কিছু নেই, ওই এলাকায় এরকম কিছুর রেকর্ড নেই । হ্যাঁ, মাঝে একটা বস্তি আছে যদিও কিন্তু সেটাও সেইফ । তো, ভয় কোরো না । বড়জোড় ও হয়তো রাস্তা ভুলে গেছে বা স্কুলে বোধ হয় কোনো কাজ করছে ।” চয়নিকা বলল, “ঠিক আছে, আমি নিশানকে পাঠাচ্ছি ।” আবির বলল, “ঠিক আছে, আমাকে মেসেজ কোরো ও ফিরলে, মিটিং এ ফোন সাইলেন্ট থাকবে, কথাও বলতে পারবো না ।” চয়নিকা “আচ্ছা ।” বলে কল কাটলো । তারপর চয়নিকা নিশানকে ডাকলো, “নিশান! এই নিশান!” কথা শুনলো না নিশান । চয়নিকা নিশানের রুমের দিকে যেতে যেতে নিজেই নিজেকে বলল, “নিশ্চয়ই কানে হেডফোন দিয়ে গেম খেলছে! কলেজ তো গেলোই না, পড়াশুনার প ও করে না!”
“আচ্ছা! অনেকক্ষণ হয়েছে, আমার এখন বাসায় যাওয়া লাগবে!” মিন্টুকে কথাটা বলে উঠে দাড়ালো রাব্বি । মিন্টু বলল, “হ, তাড়াতাড়ি যাও! তোমার আব্বা আম্মা টেনশন করবেনে ।” রাব্বি মিন্টুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসার পথে হাটা শুরু করলো । কিছুর আসার পর সামনে এসে দাঁড়ালো নিশান । চেহারায় বিরক্তির ছাপ । রাব্বির কান টেনে ধরে নিশান জিজ্ঞেস করলো, “কই গেছিলি তুই! বাসায় আসতে এতক্ষণ লাগে কেনো?” রাব্বি বলল, “তোমার কি তাতে? আমি তো ফিরছিই, না এলেই পারতে!” নিশান বলল, “হুহ! তোর জন্য আমি আসবো কোন দুঃখে! আম্মু পাঠাইছে । তাই আসছি!” রাব্বি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো, “কেনো?” নিশান ধমকের স্বরে বলল, “গাধা! নাকি কানে কম শুনিশ? শুরুতেই তো বললাম বাসায় আসতে এতক্ষণ লাগে কেনো!” রাব্বি বলল, “ও! ওই আর কি । বড় বড় দেশে এরকম ছোট ছোট ঘটনা ঘটেই থাকে ।” নিশান বলল, “বক বক না কইরা চল, তোর জন্য আমি গেমটা হারলাম!” রাব্বি একটু নিচু গলায় বলল, “কখনও জিতেছো কিনা সন্দেহ ।” নিশান জিজ্ঞেস করলো, “কি বললি?” রাব্বি নিশানের দিকে তাকিয়ে বলল, “না কিছু না ।”
ঘরে এসে নিশান বলল চয়নিকাকে বলল, “এইযে আম্মু, পাইছি ওরে ।” চয়নিকা এসে জিজ্ঞেস করলো, “কোথায় ছিলো ও?” নিশান বলল, “জানি না, কিন্তু কোথাও একটা মনে তো হচ্ছে গিয়েছিলো, কথাবার্তায় কেমন ভেজাল লাগছে । আমাকে তো বলছে না, তুমি একটু জিজ্ঞেস করে দ্যাখো, মুখ খোলে কিনা ।” চয়নিকা রাব্বিকে জিজ্ঞেস করলো, “কিরে! কোথায় গিয়েছিলি তুই?” রাব্বি বলল, “কোথায়? কোথাও না তো!” চয়নিকা বলল, “তাহলে ফিরতে এতো দেরি হলো কেনো?” রাব্বি বলল, “ওই, আসার সময় নতুন জায়গা ভালো মতো দেখতে দেখতে আসছিলাম ।” চয়নিকা বলল, “এতো ভালো করে দেখতে দেখতে আসার কি আছে? বাসায় সবাই চিন্তা করবে এটা মাথায় নেই?” রাব্বি বলল, “হ্যাঁ! প্রথম দিন এরকম হতেই পারে! এমন করছো কেনো?” চয়নিকা রাব্বির গালে হাত রেখে শান্ত গলায় বলল, “চিন্তা হয় বাবা! এই যে তোমার ভাই, একদিন হারিয়ে গিয়েছিলো আমাদের থেকে, কেউ একজন তোমার ভাইকে কিডন্যাপ করেছিলো । এখনও সেই দিনের কথা ভাবলে আমার ভয় লাগে । সেরকম কিছু যদি তোর সাথেই হয় আমাদের কি ভয় লাগে না!” রাব্বি বলল, “চিন্তা কোরো না মা! কিডন্যাপাররা আমাকে দেখে ভয় পাবে ।” নিশান ইয়ার্কি করে বলল, “হ্যাঁ, তুই ওদের যে পরিমান জ্বালাবি, তাতে সত্যিই ওরা তোকে ভয় পাওয়া শুরু করবে ।” চয়নিকা রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে বলল, “হয়েছে! থাম দুজনে । রাব্বি, ঘরে যেয়ে ড্রেস পাল্টে ফ্রেশ হয়ে নে । আর নিশান, আমার মোবাইল থেকে বাবকে একটু মেসেজ দে যে রাব্বি ফিরেছে ।” রাব্বি নিজের রুমে গেলো । নিশান চয়নিকার মোবাইলটা হাতে নিয়ে আবিরকে মেসেজ দিলো, “বাঁদরটা ফিরেছে ।” মেসেজটা ও পাঠিয়েছে সেটা যেনো আবির বুঝতে পারে তার জন্য ব্র্যাকেটে লিখলো “নিশান”
“স্যার, আমাদের কারখানার এই জায়গায় আরও কিছু শ্রমিক বাড়ানো দরকার । তাছাড়া……।” আবিরের কোম্পানীর মিটিং-এ প্রেজেন্টেশনে কথাগুলো বলছিলো এক লোক । এমন সময় আবিরের মোবাইলের আলো জলে উঠলো আর ভাইব্রেট করে উঠলো । আবির লোকটার পাশে থাকার লোকটার চোখ আবিরের মোবাইলের দিকে গেলো । মেসেজ এসেছে, বাঁদরটা ফিরেছে । আবির মেসেজ দেখে ফোনের পাওয়ার বাটন চেপে ফোনের আলো নিভিয়ে দিলো । লোকটা কন্টিনিউ করতে লাগলো, “আর স্যার, এই জেলায় প্রোডাক্টের বাঁদরটা ফিরেছে…………সরি স্যার! দাম বেড়েছে!” উপস্থিত সবাই হেসে উঠলো । আবিরও হাসলো । লোকটা আবিরকে বলল, “সরি স্যার!” আবির বলল, “ইটস ওকে, আপনি কন্টিনিউ করুন ।”

আগামী পর্বেঃ
“ময়লা ফেলার জায়গা কোথায়? কতদিনের ময়লা জমে আছে!” আবিরকে জিজ্ঞেস করলো চয়নিকা । আবির বলল, “আমিও তো খেয়াল করিনি, ভেবেছিলাম এই এলাকায়ও ময়লা নিতে আসে, তা তো আসে না দেখি ।” চয়নিকা বলল, “আরে! তুমি তাহলে সেদিনের নষ্ট হওয়া খাবারগুলো ফেলেছিলে কোথায়?” আবির ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো, “আমি! ওগুলো না তুমি ফেললে?” চয়নিকা বলল, “কই না তো!”
×
পরিচয়(৩৬৬)

দুপুরের কথা । নিজের রুমেই শুয়ে শুয়ে গেমস খেলছিলো রাব্বি । এমন সময় মোবাইলে একটা কল এলো । চয়নিকার মোবাইল, কল এসেছে চয়নিকার এক বান্ধবীর । রাব্বি দৌরে এসে মা-কে মোবাইলটা দিলো । চয়নিকা কল ধরে বান্ধবীর সাথে কথা বলল, “হ্যালো! কেমন আছিস!.........ও তাই!......হ্যাঁ হ্যাঁ! অবশ্যই!.........ঠিক আছে!.........বাসার সবাই ভালো আছেন তো?.........।“ লম্বা আড্ডা জুড়ে দিলো চয়নিকা । রাব্বি বুঝলো, আজ আর বাকি গেমস খেলা সম্ভব হবে না । তারপর নিজের রুমে চলে গেলো ।
রাব্বি আর নিশান তাড়াতাড়িই খেয়ে উঠেছে, চয়নিকা আবিরের অপেক্ষায় থাকে । দুপুর সাড়ে তিনটের দিকে আবির ফিরলে তারপর একসাথে খায় । আজও ব্যতিক্রম নয় । একসাথে ডাইনিং টেবিলের বসে খাওয়া দাওয়া করছিলো দুজনে । তখন চয়নিকা আবিরকে বলল, “আমার একটা বান্ধবী একটু কাজে ঢাকা আসছে, ও একটু আমাদের বাসায় দুদিন থাকতে চাইছে!” আবির বলল, “হ্যাঁ আসতে বলো উনাকে!” চয়নিকা বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ, বলেছি । কিন্তু বাজার টাজার করা দরকার, ওকে তো ভালো মন্দ খাওয়ানো উচিৎ ।” আবির বলল, “ঠিক আছে, আমির বাজার করে নিয়ে আসবো, সমস্যা নেই । কবে আসবে?” চয়নিকা বলল, “এইতো, পরশু আসবে, দুদিন থেকেই চলে যাবে ।” আবির বলল, “ঠিক আছে, গেস্ট রুমটা পরিষ্কার কোরো ।” চয়নিকা বলল, “আচ্ছা, একটা কাজের লোক দরকার!” আবির কথাটা শুনে হালকা কষ্ট পেলো । আবিরের চেহারায় কষ্টটা দেখে চয়নিকা বুঝতে পেরে নিজেও কষ্ট পেলো । বলল, “জরিনা আপুর কথা আমার এখনও মনে পড়ে । উনি যতদিন ছিলেন, মায়ের মতো খেয়াল রেখেছেন ।” আবির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “ঠিক আছে, আমি দেখছি, কোনো কাজের লোক খুজে পাওয়া যায় কিনা ।” খাওয়া শেষ হয়ে গেছে চয়নিকার । উঠে রান্নাঘরে গেলো । ভরা ময়লার ঝুড়িতে প্লেটের ময়লা ফেলছিলো সে । “ময়লা ফেলার জায়গা কোথায়? কতদিনের ময়লা জমে আছে!” আবিরকে জিজ্ঞেস করলো চয়নিকা । আবির বলল, “আমিও তো খেয়াল করিনি, ভেবেছিলাম এই এলাকায়ও ময়লা নিতে আসে, তা তো আসে না দেখি ।” চয়নিকা বলল, “আরে! তুমি তাহলে সেদিনের নষ্ট হওয়া খাবারগুলো ফেলেছিলে কোথায়?” আবির ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো, “আমি! ওগুলো না তুমি ফেললে?” চয়নিকা বলল, “কই না তো!” আবির ভ্রু কুঁচকে তাকালো । “রাব্বি! নিশান! এদিকে আয়!” রাব্বি আর নিশানকে ডাকলো আবির । দুজনে এসে জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে বাবা?” আবির জিজ্ঞেস করলো, “সেদিনের নষ্ট হওয়া খাবার ফেলে দিয়েছে কে?” রাব্বি কথা শুনে ঘাবড়ে গেলেও সে সত্য কথা বলতে পারবে না । তা হলে ওকে মিন্টুর কথা বলতে হতে পারে আর অচেনা লোকের সাথে মেশার কথা শুনলে বকা খেতে হতে পারে । বলল, “কি জানি! আমি তো জানি না!” নিশান বলল, “তোমাদের বিশ্বাস হয় আমি ঘরের কাজ করবো?” চয়নিকা বলল, “তাহলে কে ফেললো! খাবারগুলোর তো আর হাত পা গজিয়ে নিজে নিজে চলে যায়নি! এ বাড়িতে কোনো ভুতের সমস্যা টমস্যা নেই তো!” নিশান বলল, “আরে নাহ! কি সব যে বলছো! বোধ হয়ে সাবিত ভাই, বা অয়ন মামা বা মাইশা আপু কেউ যাবার আগে ফেলে দিয়ে গিয়েছিলো ।” আবির ডানে বামে মাথা নেড়ে বলল, “না তো, আমি তো সেদিন রাত ১২টা দিকেও খাবারগুলো দেখেছিলাম! সে সময় রাব্বিও ছিলো! রাব্বি! তোর কাজ না তো? সেদিন তুই রুমে আসতেও দেরি করেছিলি!” রাব্বি আমতা আমতা করা শুরু করলো । নিশান বলল, “আমারও মনে হয়ে ওর কাজ!” রাব্বি তখন হালকা নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, “ইয়ে…আসলে…রাস্তার ওপাশে একটা কুকুর দেখেছিলাম, তাই ওখানে খাবারগুলো রেখে এসেছিলাম, ওরা খেয়ে ফেললে খাবারগুলো আর নষ্ট হবে না তাই ।” আবির বলল, “ঠিক আছে, কিন্তু আমাকে সাথে নিয়ে গেলেই পারতি! এতো রাতে একা একা কেনো বের হয়েছিলি!” রাব্বি বলল, “এমনি! ভাবলাম যদি বকা দাও!” আবির বলল, “না না, ভালো করেছিস । খাবারগুলো কেউ তো খেলো ।”
সেদিন রাতের কথা । ঘরের জানালা দিয়ে মিন্টুকে দেখলো রাব্বি । গেইটের পাশে বসে আছে রাব্বি চুপি চুপি নিচে নেমে গেলো মিন্টুর কাছে । মিন্টু ওকে দেখে বলল, “আরে! রাব্বি বাবা! কেমন আছো?” রাব্বি বলল, “আছি, আলহামদুলিল্লাহ ভালো । তুমি?” মিন্টু বলল, “আছি ভালাই । তুমি এইহানে কি করো! তোমার বাসার লোকজন তোমারে দেখলে বকা দিবো তো!” রাব্বি বলল, “সমস্যা নেই, আমি লুকিয়ে লুকিয়ে এসেছি ।” মিন্টু জিজ্ঞেস করলো, “আইচ্ছা, তুমি আমার কাছে আসো ক্যান এমনে?” রাব্বি বলল, “আমি না দেখেছি, আমার সব বন্ধুর নানা বা দাদা আছেন । কিন্তু জানোতো, আমার নানা বা দাদা কেউ নেই । তোমাকে দেখলে কেনো যেনো মনে হয় আমার নানা বা দাদা ।” মিন্টু হালকা হেসে বলল, “কি যে কও, তয় নিজের আপন নানা বা দাদার মতোন কেউ হয় না ।”
“আমার স্কেলটা কোথায় গেলো! নিশ্চয়ই রাব্বি নিয়েছে! না বলে আমার জিনিস নেয়ার স্বভাব এখনও গেলো না!” বলে পড়ার টেবিল থেকে উঠে রাব্বির রুমে গেলো নিশান । যেয়ে দেখলো, রাব্বির টেবিলেই স্কেলটা । স্কেলটা হাতে নিয়ে আসতে যাবে, এমন সময় জানালা দিয়ে তাকিয়ে রাব্বিকে দেখলো মিন্টুর সাথে কথা বলতে । নিশান মনে মনে বলল, “একি! রাব্বি না! ও কার সাথে কথা বলছে!”

আগামী পর্বেঃ
ফেসবুক চালাচ্ছিলো নিশান । ফ্রেন্ডস সাজেশনে চেনা অচেনা অনেক মুখ দেখছিলো সে । এমন সময় একটা নাম দেখে সে হঠাৎ থেমে গেলো । চেহারা যদিও এখন অনেক পালটে গেছে, আর যাবার তো কথাই, ওকে নিশান দেখেছে সেই ছোটবেলায় । নাম, আয়রা শেখ । সেই যে কিডন্যাপ হয়ে একসাথে কিছুদিন কাটিয়েছিলো, সেলিব্রেটি মোহন শেখের মেয়ে আর আরও ছেলেমেয়েদের সাথে, সেই আয়রা ।
×
পরিচয়(৩৬৭)

“একখান কাম করবা?” রাব্বিকে বলল মিন্টু । রাব্বি জিজ্ঞেস করলো, “কি?” মিন্টু বলল, “আমার জন্য এক গ্লাস পানি নিয়া আসতে পারবা?” রাব্বি, “এখনই যাচ্ছি!” বলে রাব্বি ঘরে এলো । দরজার কাছে আসতেই নিশানের মুখোমুখি হলো সে । নিশান জিজ্ঞেস করলো, “কিরে, কার সাথে কথা বলছিলি?” রাব্বি পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো, মিন্টু চলে গেছে । নিশান জিজ্ঞেস করলো, “পেছন ফিরে কি দেখছিস? কে ছিলো উনি?” রাব্বি বলল, “আমি উনাকে চিনি না!” নিশান ভ্রু কুঁচকে রাব্বির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “চিনিস না মানে! তাহলে কথা বলছিলি কেনো?” রাব্বি বলল, “উনিই আমার নাম জিজ্ঞেস করছিলেন, এলাকার মুরুব্বী তো!” নিশান জিজ্ঞেস করলো, “কথা তো তুই একজন মুরুব্বীর সাথে যেভাবে বলা উচিৎ সেভাবে বলছিলি না! মনে হচ্ছিলো উনাকে তুই কতদিন ধরে চিনিস! বাট এতো রাতে তুই এখানে কি করছিলি?” রাব্বি বলল, “এমনি, হাটতে এসেছিলাম!” নিশান ওপর নিচ মাথা নেড়ে বলল, “হুম! তোর চলাফেরা আমার কাছে সন্দেহের লাগছে, আজ থেকে তোর ওপর আমার নজর থাকবে!’ রাব্বি বলল, “ওকে, নজর রেখে কি ফলাফল পেলে আমাকে একটু জানিয়ো!” বলে চলে গেলো রাব্বি । নিশান মনে মনে বলল, “হুম! কিছু একটা গোলমাল তো আছেই!”
পরদিন সকালে কথা । রাব্বিকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে আবির বলল, “আজকে কিন্তু মোটেও দেরি করে ফিরবি না! স্কুল শেষে সোজা বাড়ি ফিরবি । তা না হলে কিন্তু আমি এরপর থেকে তোকে নিতে আসবো কিন্তু!” রাব্বি, “ওকে! বলে স্কুলে চলে গেলো ।”
স্কুল শেষে বাসার দিকে ফেরার পথে আজ আর সেখানে মিন্টুকে দেখলো না রাব্বি । বুঝলো, আজ মিন্টু অন্য কোথাও ভিক্ষে করতে গেছে ।
বাসায় এসে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো রাব্বি । নিজের রুমে ব্যাগ রেখে মাকে খোঁজা শুরু করলো । পেলো গেস্ট রুমে । দেখলো, মা রুমটা গোছাচ্ছে । রাব্বি জিজ্ঞেস করলো, “মা! কেউ কি আসছে?” চয়নিকা বলল, “হ্যাঁ সোনা! কাল একজন গেস্ট আসছে ।” রাব্বি জিজ্ঞেস করলো, “কে আসছে?” চয়নিকা বলল, “আমার এক বান্ধবী আসছে বাবা । দুদিন থাকবে । কাল আসছে, আসলে তোর সাথেও পরিচয় করিয়ে দেবো । এখন যা! আর জামাকাপড় পালটে নে!” রাব্বি “ওকে!” বলে নিজের রুমে চলে গেলো ।
ফেসবুক চালাচ্ছিলো নিশান । ফ্রেন্ডস সাজেশনে চেনা অচেনা অনেক মুখ দেখছিলো সে । এমন সময় একটা নাম দেখে সে হঠাৎ থেমে গেলো । চেহারা যদিও এখন অনেক পালটে গেছে, আর যাবার তো কথাই, ওকে নিশান দেখেছে সেই ছোটবেলায় । নাম, আয়রা শেখ । সেই যে কিডন্যাপ হয়ে একসাথে কিছুদিন কাটিয়েছিলো, সেলিব্রেটি মোহন শেখের মেয়ে আর আরও ছেলেমেয়েদের সাথে, সেই আয়রা । আইডিতে ঢুকলো নিশান । মেয়েটা কতো বড় হয়ে গেছে! তবে সে বাবার মতো চলচ্চিত্রের জগত বেছে নেয় নি । সে একজন পশু চিকিৎসক হয়েছে । নিশান মাউসটা অ্যাড ফ্রেন্ড এর ওপর নিয়ে গেলো । মাউসে যেই ক্লিক করতে যাবে, ভয়ে মাউস সরিয়ে ফেললো । কি না কি মনে করে মেয়েটা । কিন্তু আবার ভাবলো, কি আবার মনে করবে, আর করলেও হাইয়েস্ট রিকুয়েস্ট ডিলিট করে দেবে । সাহস করে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠালো আয়রাকে ।
দুপুরের দিকের কথা । কলিংবেলের আওয়াজে এসে দরজা খুললো রাব্বি । দেখলো, দাঁড়িয়ে আছে একটা মেয়ে, গায়ে ময়লা জামা, চেহারায়ও দারিদ্রতার ছাপ । রাব্বি জিজ্ঞেস করলো, “কে আপনি?’ মেয়েটা বলল, “মুই সখিনা!” রাব্বি জিজ্ঞেস করলো, “কি চান?” সখিনা বলল, “এইডা আবির স্যার এর বাড়ি না?” রাব্বি বলল, “জি!” সখিনা বলল, “আবির স্যার আমারে পাঠাইছে, এই বাড়িত কাম করার জন্য ।” রাব্বি “১ মিনিট!” বলে চয়নিকাকে ডেকে নিয়ে এলো । চয়নিকা এসে জিজ্ঞেস করলো, “তুমি সখিনা?” মেয়েটা বলল, “হ আফা!” চয়নিকা বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ! আবির বলেছে আমাকে । তুমি তো ওর অফিসের একজন কর্মচারীর মেয়ে, তাই না?” সখিনা বলল, “হ আফা!” চয়নিকা বলল, “ঠিক আছে, এসো, ভেতরে এসো ।” সখিনা ভেতরে এলো । দুপুরে আবির এলে সখিনাকে দেখলো সে । সখিনা তখন ঘর মুছছিল । আবির জিজ্ঞেস করলো, “তুমিই সখিনা?” সখিনা বলল, “জি খালু! আপনে?” আবির বলল, “আমি আবির, আমিই তোমার বাবাকে বলেছিলাম, তোমাদের বাসা কাছেই তো, সেজন্য ।” সখিনা বলল, “ও! তাইলে আপনেরে তো স্যার কওয়া লাগবো! আব্বায় কইছে!” আবির হালকা হেসে বলল, “আরে না না! তোমার যা খুশি বলতে মন চায়, আমাকে ডেকো ।” তখন চয়নিকা এসে আবিরকে দেখে বলল, “তুমি এসে গেছো!” আবির বলল, “হ্যাঁ এলাম । ওকে কেমন লেগেছে? কাজ করতে পারছে তো?” চয়নিকা বলল, “হ্যাঁ! মাশাআল্লাহ, ভালোই কাজ করছে ।” আবির বলল, “যাক, তাহলে তো ভালোই, যাই আমি ফ্রেশ হয়ে আসি ।” বলে আবির নিজের রুমে চলে গেলো ।

আগামী পর্বেঃ
হঠাৎ-ই ফেসবুকে ঢুকতেই চোখ ছানাবড়া নিশানের । মেসেঞ্জারে একটা আইডি লেখা ফেসবুক ইউজার । ভেতরে ঢুকে কথোপকথন দেখে বুঝতে পারলো, আয়রার আইডি । কিন্তু ওর সাথে নিশান কথা বলেছে! কি করে সম্ভব! কথোপকথন সংক্ষেপে বললে এমন হয় আয়রা ওকে বলেছে ও তো আয়রাকে প্রায় ভুলেই গেছে, তারপর ও এমন একটা ডাইলোগ মেরেছে যে আয়রা ওকে একটা গালি দিয়ে ব্লক করে দিয়েছে । ডাইলোগটা হলো “যে আমার চেহারা নাম রাখছে পেয়ায়া আবার ভুলে যাওয়া কথা বলে হেহ!” নিশান বুঝতে পারলো এটা নির্ঘাত রাব্বির বদমাইশি!