উধাও
ভুতদ্ভুত(পর্ব-৬)
উধাও
উধাও
গ্রামের নাম আক্কেলপুর । তবে গ্রামের মানুষ নিজেদের ধর্ম ঠিকমতো পালন করতো না । এক প্রকার নামে ধার্মিক কাজে না । হাতে গোনা অর্ধশত মানুষের বসবাস সেখানে । গ্রামের আয়তনও খুব একটা বেশি নয় । সবুজের সমরোহের মাঝে মানুষের বাড়িঘর, এখানে ওখানে পুকুর, সেখানে মানুষজন গোসল করা, কাপড় কাচা ইত্যাদি কাজ করে । পাখির কলরবে ভরপুর থাকে এই এলাকা । এই এলাকারই একটা ছেলে, নাম অপূর্ব । ছেলেটা দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি কর্মঠ । এই এলাকায় ছেলেটার আপন কেউ নেই । আবার বলতে গেলে সবাই ওর আপন । ওর মা বাবা কে, কোত্থেকে ও এলো, কেউ তা জানে না । তবে সবাই ওকে খুব ভালোবাসে । বাজারে কোন পণ্য কেউ বহনের সময় ও যেয়ে সাহায্য করে । কোনো কোনো বাড়ির মা কাকিমারা ওকে দিয়ে মাঝে মাঝে বাজার আনতেও পাঠায় । দুমুঠো খেতেও দেয় ওকে । ছেলেটার নির্দিষ্ট কোন খাওয়ার জায়গা নেই । যেখানে যখন খাবার পায়, তখন সেখানে খায় । ওর গুটিকতক বন্ধুও আছে । হারুন, রাশিদ, কালাম, মোখলেস আরও অনেকে । তাদের সাথে অপূর্ব ফুটবল খেলে । এভাবে দিনকাল কাটতে থাকে ।
হঠাৎ একদিন অপূর্বকে কেউ খুঁজে পায় না । ওকে এলাকার কোথাও দেখতে পাওয়া যায় না আর । বাজারে কাউকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসতে দেখা যায় না, মা কাকিমাদের বাজার করতে দেখা যায়, কারও বাসায় খেতেও দেখা যায় না, হারুন, রাশিদ, কালাম, মোখলেস এদের সাথে ফুটবল খেলতেও দেখা যায় না । এলাকার কেউ বলে ও হয়তো ওর আপনজনদের পেয়ে গেছে, কেউ বলে ওকে ছেলেধরা ধরে নিয়ে গেছে, কেউ বলে ওকে জিনে ধরে নিয়ে গেছে । কিন্তু যাই হোক, এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়, ছেলেটার নিশ্চয় কোন বিপদ হয়েছে । কারণ আপনজনদের খুঁজে পেলেও ও অন্তত একবারের জন্যও এ গ্রামের সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যেতো । গ্রামের লোকজন পুলিশে মিসিং ডায়রি করলো । স্থানীয় ওসিও অপূর্বকে চিনতো । তাই তিনি-ই দায়িত্ব নিয়ে ছেলেটাকে খোঁজার ব্যাবস্থা করলেন । কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজির পরও ছেলেটাকে কোত্থাও পাওয়া গেলো না । না জীবিত, না মৃত । এলাকার লোকজনও ধীরে ধীরে ছেলেটাকে ভুলতে থাকে ।
এরপর আরও কয়েক বছর বেড়ে যায়, এলাকার মুরুব্বীরা চলে যান পৃথিবী ছেড়ে, এলাকার বাচ্চারা মুরুব্বী হয়, নতুন প্রজন্মের আগমন হয় । হারুন, রাশিদ, কালাম, মোখলেস এরাও একেকজন ৩-৪টা বউকে বিয়ে করে ১-১২টা বাচ্চার বাপ । এরকম একটা সময় ঘটে একটা অদ্ভুত ঘটনা । হঠাৎ-ই এলাকায় আগমন ঘটে অপূর্বর । হারিয়ে যাবার আগে যেমন ছিলো, এখনও হুবহু একই আছে । এলাকার যেসব মুরুব্বী সেকালে ছিলো এবং এখনও আছে, এবং অন্যান্য যারা এখনও আছে, অপূর্বর বন্ধুরা সহ, সবাই অবাক এই কান্ড দেখে । কিন্তু এবারের অপূর্ব আগের মতোন না । বেশ রগচটা, মানুষের কাজে সাহায্য করে না, মানুষের কথা শোনে না, এমনকি সারাদিন নেশা করে বেড়ায় । অপূর্ব ফিরে আসার পর থেকে এলাকায় আরেক ঘটনা ঘটা শুরু হয় । এলাকায় বাচ্চা হারানো শুরু হয় । কোনো বাচ্চার লাশও পাওয়া যায় না, কোথাও খুজেও পাওয়া যায় না । সবাই অপূর্বকে সন্দেহ করে ৩দিন ঘরবন্দি করে রেখেছিলো, কিন্তু তবু এই ঘটনা থাকে দেখে সবাই ওকে ছেড়ে দেয় । এর কোনো ব্যাখ্যা কিংবা এর থেকে বাচার উপায় কিছুতেই পাওয়া যায় না । এক সময় গ্রামে আঠারো এবং তার নিচের বয়সের একটা মানুষও আর খুঁজে পাওয়া যায় না । সবাই যেনো উধাও । এবারে শুরু হয় মেয়ে মানুষ উধাও হওয়া । একে একে গ্রামে সব মানুষ উধাও হওয়া শুরু করে । এসব দেখে অনেকে গ্রাম ছেড়ে পালাবার চেষ্টা করলেও, খবর আসে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যাবার পরদিনই নাকি তাদের নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় । এমন একটা সময় আসে, গ্রামের সকল নারী উধাও হয়ে যায় । একটা কথা, অপূর্বকে একবার এলাকাবাসীরা জিজ্ঞেস করেছিলো, সে এতোদিন কোথায় উধাও হয়ে ছিলো, জবাবে সে বলেছিলো, সে নাকি নদীতে গোসল করতে যেয়ে ডুব দিয়েছিলো পানির নিচে, আর পানির ওপরে উঠে দ্যাখে এলাকা একদম পালটে গেছে এমনকি নিজের মাঝেও পরিবর্তন দেখতে পায় সে নিজেও । যাই হোক, মহিলা উধাও হবার পর এলাকায় পুরুষরা ভেবেছিলো এবার তাদের পালা । কিন্তু না, তাদের সাথে আবার ঘটলো অদ্ভুত ঘটনা । এলাকার সব পুরুষ মানুষ ধীরে ধীরে দেখতে অপূর্বর মতো হওয়া শুরু করলো । এমনকি সবাই নিজেদের অপূর্ব বলা শুরু করলো । এভাবে গ্রামের সব পুরুষ মানুষ অপূর্ব হয়ে গেলো । আচার আচরণ, চালচলন, ভাব ভঙ্গি এক কথায় সবাই যেনো একদম অপূর্বর ক্লোন কপি । এলাকায় ঘুরতে আসা এক ভ্রমনপিপাসু একবার এসেছিলো এই এলাকায়, তখনও সব পুরুষ অপূর্বর ক্লোন হয় নেই । তাদেরই একজনের কাছ থেকে এলাকার এই সব কথা সেই ভ্রমণপিপাসু জানতে পারেন । তিনি এই গ্রামের কথা লেখে পত্রিকায় । সারা দেশ তোলপাড় হয়ে যায় এই ঘটনা শুনে । গ্রামে কিছু মানুষ দেখতে আসে আসলেই ঘটনা সত্য কিনা, কিন্তু এসে দেখে, গ্রামে একটা মানুষও নেই । সব মানুষ উধাও । এরপর অনেক মানুষ গ্রামে থাকতে এসেছিলো, কিন্তু সবাই উধাও হয়ে গেছে । এই ঘটনার কোনো ব্যাখ্যা আজও কেউ দিতে পারে নি । কথিত আছে, কেউ যদি মাঝরাতে ওই গ্রামে যায়, তাহলে নাকি শোনা যায় কয়েক হাজার হাজার লোক যেনো একসাথে বলে “নোস এস্কারাভোস দে সাতানাস” যার বাংলা “আমরা শয়তানের দাস ।”
ধারণা করা হয়, সেই গ্রামের সব মানুষকে শয়তান তার দাস বানিয়ে ফেলেছে তাদের ধর্মীয় অনুশাসন পালনের প্রতি অবহেলা দেখে । আর এই কাজে শয়তান সাহায্য নিয়েছে অপূর্বর দেহের । আর তাই বেধে রাখলেও অপূর্ব শয়তানি শক্তি দ্বারা মেরে ফেলতে পারতো সবাইকে ।
[এই গল্পটি কেবলই বিনোদনের জন্য নির্মিত । কোন প্রকার কুসংস্কারকে প্রশ্রয় দেবার জন্য নয় ।]
হঠাৎ একদিন অপূর্বকে কেউ খুঁজে পায় না । ওকে এলাকার কোথাও দেখতে পাওয়া যায় না আর । বাজারে কাউকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসতে দেখা যায় না, মা কাকিমাদের বাজার করতে দেখা যায়, কারও বাসায় খেতেও দেখা যায় না, হারুন, রাশিদ, কালাম, মোখলেস এদের সাথে ফুটবল খেলতেও দেখা যায় না । এলাকার কেউ বলে ও হয়তো ওর আপনজনদের পেয়ে গেছে, কেউ বলে ওকে ছেলেধরা ধরে নিয়ে গেছে, কেউ বলে ওকে জিনে ধরে নিয়ে গেছে । কিন্তু যাই হোক, এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়, ছেলেটার নিশ্চয় কোন বিপদ হয়েছে । কারণ আপনজনদের খুঁজে পেলেও ও অন্তত একবারের জন্যও এ গ্রামের সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যেতো । গ্রামের লোকজন পুলিশে মিসিং ডায়রি করলো । স্থানীয় ওসিও অপূর্বকে চিনতো । তাই তিনি-ই দায়িত্ব নিয়ে ছেলেটাকে খোঁজার ব্যাবস্থা করলেন । কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজির পরও ছেলেটাকে কোত্থাও পাওয়া গেলো না । না জীবিত, না মৃত । এলাকার লোকজনও ধীরে ধীরে ছেলেটাকে ভুলতে থাকে ।
এরপর আরও কয়েক বছর বেড়ে যায়, এলাকার মুরুব্বীরা চলে যান পৃথিবী ছেড়ে, এলাকার বাচ্চারা মুরুব্বী হয়, নতুন প্রজন্মের আগমন হয় । হারুন, রাশিদ, কালাম, মোখলেস এরাও একেকজন ৩-৪টা বউকে বিয়ে করে ১-১২টা বাচ্চার বাপ । এরকম একটা সময় ঘটে একটা অদ্ভুত ঘটনা । হঠাৎ-ই এলাকায় আগমন ঘটে অপূর্বর । হারিয়ে যাবার আগে যেমন ছিলো, এখনও হুবহু একই আছে । এলাকার যেসব মুরুব্বী সেকালে ছিলো এবং এখনও আছে, এবং অন্যান্য যারা এখনও আছে, অপূর্বর বন্ধুরা সহ, সবাই অবাক এই কান্ড দেখে । কিন্তু এবারের অপূর্ব আগের মতোন না । বেশ রগচটা, মানুষের কাজে সাহায্য করে না, মানুষের কথা শোনে না, এমনকি সারাদিন নেশা করে বেড়ায় । অপূর্ব ফিরে আসার পর থেকে এলাকায় আরেক ঘটনা ঘটা শুরু হয় । এলাকায় বাচ্চা হারানো শুরু হয় । কোনো বাচ্চার লাশও পাওয়া যায় না, কোথাও খুজেও পাওয়া যায় না । সবাই অপূর্বকে সন্দেহ করে ৩দিন ঘরবন্দি করে রেখেছিলো, কিন্তু তবু এই ঘটনা থাকে দেখে সবাই ওকে ছেড়ে দেয় । এর কোনো ব্যাখ্যা কিংবা এর থেকে বাচার উপায় কিছুতেই পাওয়া যায় না । এক সময় গ্রামে আঠারো এবং তার নিচের বয়সের একটা মানুষও আর খুঁজে পাওয়া যায় না । সবাই যেনো উধাও । এবারে শুরু হয় মেয়ে মানুষ উধাও হওয়া । একে একে গ্রামে সব মানুষ উধাও হওয়া শুরু করে । এসব দেখে অনেকে গ্রাম ছেড়ে পালাবার চেষ্টা করলেও, খবর আসে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যাবার পরদিনই নাকি তাদের নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় । এমন একটা সময় আসে, গ্রামের সকল নারী উধাও হয়ে যায় । একটা কথা, অপূর্বকে একবার এলাকাবাসীরা জিজ্ঞেস করেছিলো, সে এতোদিন কোথায় উধাও হয়ে ছিলো, জবাবে সে বলেছিলো, সে নাকি নদীতে গোসল করতে যেয়ে ডুব দিয়েছিলো পানির নিচে, আর পানির ওপরে উঠে দ্যাখে এলাকা একদম পালটে গেছে এমনকি নিজের মাঝেও পরিবর্তন দেখতে পায় সে নিজেও । যাই হোক, মহিলা উধাও হবার পর এলাকায় পুরুষরা ভেবেছিলো এবার তাদের পালা । কিন্তু না, তাদের সাথে আবার ঘটলো অদ্ভুত ঘটনা । এলাকার সব পুরুষ মানুষ ধীরে ধীরে দেখতে অপূর্বর মতো হওয়া শুরু করলো । এমনকি সবাই নিজেদের অপূর্ব বলা শুরু করলো । এভাবে গ্রামের সব পুরুষ মানুষ অপূর্ব হয়ে গেলো । আচার আচরণ, চালচলন, ভাব ভঙ্গি এক কথায় সবাই যেনো একদম অপূর্বর ক্লোন কপি । এলাকায় ঘুরতে আসা এক ভ্রমনপিপাসু একবার এসেছিলো এই এলাকায়, তখনও সব পুরুষ অপূর্বর ক্লোন হয় নেই । তাদেরই একজনের কাছ থেকে এলাকার এই সব কথা সেই ভ্রমণপিপাসু জানতে পারেন । তিনি এই গ্রামের কথা লেখে পত্রিকায় । সারা দেশ তোলপাড় হয়ে যায় এই ঘটনা শুনে । গ্রামে কিছু মানুষ দেখতে আসে আসলেই ঘটনা সত্য কিনা, কিন্তু এসে দেখে, গ্রামে একটা মানুষও নেই । সব মানুষ উধাও । এরপর অনেক মানুষ গ্রামে থাকতে এসেছিলো, কিন্তু সবাই উধাও হয়ে গেছে । এই ঘটনার কোনো ব্যাখ্যা আজও কেউ দিতে পারে নি । কথিত আছে, কেউ যদি মাঝরাতে ওই গ্রামে যায়, তাহলে নাকি শোনা যায় কয়েক হাজার হাজার লোক যেনো একসাথে বলে “নোস এস্কারাভোস দে সাতানাস” যার বাংলা “আমরা শয়তানের দাস ।”
ধারণা করা হয়, সেই গ্রামের সব মানুষকে শয়তান তার দাস বানিয়ে ফেলেছে তাদের ধর্মীয় অনুশাসন পালনের প্রতি অবহেলা দেখে । আর এই কাজে শয়তান সাহায্য নিয়েছে অপূর্বর দেহের । আর তাই বেধে রাখলেও অপূর্ব শয়তানি শক্তি দ্বারা মেরে ফেলতে পারতো সবাইকে ।
[এই গল্পটি কেবলই বিনোদনের জন্য নির্মিত । কোন প্রকার কুসংস্কারকে প্রশ্রয় দেবার জন্য নয় ।]