0 %

Thanks a lot for being with us!
We are re-constructing our website!
Sorry for this temporary inconvenience
We are coming to you with a fresh look and design from 1 January 2022!
Till then! Stay connected!

রাক্ষসের হাত

ভুতদ্ভুত(পর্ব-৩)
রাক্ষসের হাত
আমি তখন খুব ছোট । আমাদের গ্রামের পাশে তখন একটা বড় খাল ছিলো । এখন সেই খাল নেই যদিও । কথিত আছে ১২৩৪ সালের জানুয়ারি(১ নং) মাসের ২ তারিখে এক ৩চোখা রাক্ষস মরার আগে ৪বার মুখ দিয়ে প্রুটা শব্দটা উচ্চারণ করতে করতে মারা যায় । রাক্ষসটা নাকি হঠাৎই গ্রামে এসে তান্ডব চালানো শুরু করেছিলো এবং তখনকার গ্রামের সাহসী রাজপুত্র তাকে মেরেছিলো । তার এই চারবার প্রুটা শব্দ উচ্চারণের পরপরই এই জায়গার মাটি ফেটে ঘোড়া সহ সেই রাজপুত্র পড়ে যায় মাটিতে আর মাটি ফেটে পানি উঠে জন্ম হয় এই খালের । তারপর থেকে গভীর রাতে কেউ এই খালের মাঝে ঢিল ছুড়লে নাকি বিরাট বড় একটা হাত উঠে আসে খাল থেকে আর নিয়ে যায় গভীরে । যে যায়, তাকে হয় মৃত উদ্ধার করা হয়, নয়তো তার দু চোখ, দু কান, জিহবা আর কবজি পর্যন্ত দু হাত কাটা অবস্থায় পাওয়া যায় । বলা যায় পুরো অচল অবস্থায় পাওয়া যায় । কেউ আজ পর্যন্ত বলতে পারে নি কি আছে সেই পুকুরের মধ্যে আর কেমন দেখতে সেই হাত, তা আজ পর্যন্ত কেউ দেখে নি । কিন্তু আমি দেখেছি । হ্যাঁ, আমি দেখেছি, কিন্তু সেই হাত দেখে আমি অন্ধ হয়ে গিয়েছি । তবে আমি কথা বলতে পারায় আমি একমাত্র ব্যাক্তি, যে ওই হাত দেখেছি । পুরো ঘটনা খুলে বলি । ২০১৩ সালের ৫ জুলাইয়ের কথা । সেই খালের পাশেই একটা বিল্ডিং-এ আমার মামার বাড়ি ছিলো । আমার খালাতো ভাই এসব ভুয়া গল্পে বিশ্বাস করতো না । তার খুব শখ ছিলো এটা জানার আসলেই সেই খালে ঢিল মারলে কিছু হয় কিনা । বেশ কিছুবার চেষ্টা করতে চেয়ে গ্রামের লোকজনের কাছে ধরা খেয়ে যাওয়ায় তাকে পড়ে কড়া নজরদারিতে রাখা হতো যেনো সে সেদিকে যেতে না পারে । সে এ গ্রামের না, যখন বেড়াতে আসতো, তখন তাকে নজরদারিতে রাখা হতো । সেবার আমার আরেক খালাতো বোনের বিয়ের জন্য আমরা সবাই গ্রামে ছিলাম । যেহেতু বিয়ে, সেহেতু কে কোথায় আছে তার খোঁজ আর কে রাখে । তবে হ্যাঁ, বিয়ের ভীড় থাকা সত্ত্বেও কেউ সেই খালের দিকে যাবার সাহস পায় না একজন বাদে । বুঝতেই পারছেন, কে । আমার সেই অতি সাহসী খালাতো ভাই । আমার একটা ক্যামেরা ছিলো । সেটা খুঁজছিলাম আমার ব্যাগে । কিন্তু কিছুতেই পাচ্ছিলাম না । তখন এক গ্রামের বন্ধুর কাছ থেকে জানতে পারি, ক্যামেরাটা নাকি আমার খালাতো ভাই-ই নিয়ে গেছে ফটোগ্রাফি করার জন্য । আমি আশেপাশে খুঁজে আমার খালাতো ভাইকে পেলাম না । শেষে ভাবলাম তাহলে বোধ হয় ছাদে গেছে । আমি ছাদে গেলাম, কিন্তু ছাদেও কেউ নেই । এমন সময় হঠাৎ মনে হলো, খালের ভেতর কেউ ঢিল ছুড়ল । আমি ছাদের কিনারে এসে দেখি, আমার খালাতো ভাই আমার ক্যমেরা নিয়ে ভিডিও করছে আর পুকুরে ঢিল ছুড়ছে । আমি তাকে ডাকলাম, কিন্তু বিয়ে বাড়ির গান বাজনার আওয়াজে আমার কথা তার কানে গেলো না । হঠাৎ মনে হলো, পুকুরের মাঝের অংশ কেপে উঠছে । ধীরে ধীরে সে অংশের পানি ফুলে উঠলো এবং বেড়িয়ে এলো একটা দৈত্যাকার হাত । হাতগুলো লোমশ । লোমগুলো মোটা মোটা । হাত ফেটে জখম হয়ে আছে । নখগুলো কেউ মনে হয় উপড়ে দিয়েছে । এমনকি হাতের কোথাও কোথাও মাংসও নেই । হাড় দেখা যাচ্ছে । আমি দেখলাম, আমার খালাতো ভাই দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলো, কিন্তু সে ব্যর্থ হলো । সেই হাত তাকে ধরে টেনে নিয়ে গেলো পুকুরের ভেতর । তার চিৎকার কেউ শুনতে পেলো না বিয়ে বাড়ির গান বাজনার আওয়াজে । আমিও কেনো যেনো সে দৃশ্য দেখে মাথায় ব্যাথা অনুভব শুরু করলাম । খানিক পর চোখে ব্যাথা শুরু হলো, এবং পড়ে জ্ঞান হারালাম । জ্ঞান ফিরতেই আমি চারপাশ অন্ধকার দেখতে লাগলাম । আমি যে অন্ধ হয়ে গেছি তা বুঝতে আমার প্রায় দু ঘন্টা সময় লেগেছে ।
আমার কাছ থেকে হাতের বর্ণনা শুনলো সবাই । ভাগ্য ভালো, আমার খালাতো ভাইকে জীবিত উদ্ধার করা গেছে কিন্তু চোখ, কান, জিহ্বা আর হাত কবজি পর্যন্ত কাটা অবস্থায় । আমার মনে একটা প্রশ্ন জেগেছিলো । রাজপুত্র তো ভালো, খালে পড়েছিলো রাজপুত্র । তবে কেনো সে মানুষের এমন ক্ষতি করে? এক শতোর্ধো বৃদ্ধার কাছ থেকে জানতে পেরেছিলাম, সে সময়ের সেই রাজকুমার আর রাজা-ই ছিলো ছদ্মবেশধারী রাক্ষস । আর তারা রাক্ষসবিদ্যায় আসল রাজা আর রাজকুমারকে একত্রে যুক্ত করে রাক্ষস বানিয়ে রাক্ষসপুরীতে আটকে রেখেছিলো । রাক্ষসপুরীতে কিছু রাক্ষসবিদ্যা গোপনে রপ্ত করে নেয় সেই রাক্ষস যার মাঝে আছে রাজা আর রাজকুমারের আত্মা । পরে সেই বিদ্যা দিয়ে সে বেড়িয়ে এসে গ্রামবাসীকে বাচাতে আসে । সেখানে রাক্ষস রাজপুত্র তাদের হারিয়ে ফেললেও চারবার প্রুটা শব্দটা উচ্চারণ করে যার অর্থ রাক্ষস ভাষায় খাল হও! চারবার বলার ফলে সেই খাল তৈরি হয়ে সেখানে রাজপুত্র মারা যায় । দুর্ভাগ্যক্রমে সেই রাজা বেঁচে থাকে এবং ছড়িয়ে দেয় রাজকুমার বীরত্বের পরিচয় দিয়েছে । সেই রাক্ষসরূপী রাজা তার রাক্ষসরূপী ছেলেকে বাচাতে রাক্ষসবিদ্যা দিয়ে পুকুরের আত্মাকে জাগিয়ে তোলে । কিন্তু সে একটা মন্ত্র ভুল উচ্চারণ করায় তার ছেলের হাতটাই জেগে ওঠে । সে তার ভুলের কারণে ক্ষোভে পুকুরে ঢিল ছোড়ে আর তার ছেলে পুরোপুরি জাগতে না পারায় ক্ষোভে হাত বের করে বাবাকেই টেনে নিয়ে যায় খালের গভীরে । তারপর থেকে শুরু হয় এই পুকুরে ঢিল মারলে মানুষ মরার ঘটনা । অবশ্য এটা দিনের বেলায় কেনো হয় না তা মানুষের অজানা । হয়তো রাক্ষসবিদ্যা দিনে কাজ করে না । পরবর্তীতে এই খাল একটা বেসরকারি সংস্থা দাঁড়া খনন করে তৈরি করা হয় একটা কোম্পানি । অবাক করা কথা, ওই কোম্পানি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও বন্ধ হয়ে যায় কারণ এতো জনপ্রিয় হবার পরও তারা একবারও লাভের মুখ দেখে নি । সেখানে গেলে পরিত্যাক্ত একটা কারখানা দেখা যায় কেবল ।