দাসী ক্রয়
ইসলামিক গল্প
দাসী ক্রয়
দাসী ক্রয়
মালেক ইবনে দিনার রহ. ইরাকের কূফা নগরে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। মালেক ইবনে দিনার রহ. ভারতীয় উপমহাদেশে এসেছিলেন ইসলাম প্রচারের জন্য। দুনিয়া বিমুখতা, আল্লাহ ভীরুতা তার অন্তরের জায়গা করে নিয়েছিল। আল্লাহ তায়ালার ইবাদাত-বন্দেগী করে তাঁর জীবন অতিবাহিত করেছেন।
সেই মালেক ইবনে দিনার রহ. একবার এক বাজারের উপর দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি দেখেন বিক্রির জন্য নিয়ে আসা একটি অসাধারণ সুন্দর দাসীকে। তখনকার সময়ে হাটে বাজারে দাস-দাসী বেচাকেনা হত। দাস দাসী বেচা কেনা করা তখন স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। বিত্তশালীরা শখ করে এসব দাস দাসী ক্রয় করতো। এসব দাস দাসীদের কারো কারো মূল্য ১ লক্ষ দিরহামও হত।
মালিক ইবনে দিনার রহ. সেই দাসীর মালিকের সামনে গিয়ে সরাসরি দাসীকে বললেন, ”আমি তোমাকে কিনে নিতে চাই।” মালেক ইবনে দিনার রহ. কথা শুনে দাসী হেসে ফেলল। এরপর বলল আপনার মত গরিব লোক আমাকে কি করে কিনবেন?
পরে অবশ্য দাসীর মালিকের কাছে মালেক বিন দীনার রহ. এবং দাসীকে নিয়ে যাওয়া হল। মালেক ইবনে দিনার রহ. দাসীর মালিককে বললেন, ”জনাব, আমি আপনার এই দাসীকে কিনে নিতে চাই।” এ কথা শুনে সেখানে উপস্থিত সবাই হাসাহাসি করতে লাগল। মালিক ঠাট্টাচ্ছলে বলল, ”এ দাসীর মূল্য আপনি কত দিতে পারবেন?
মালেক বিন দীনার রহ. বললেন, ”কত দাম দেব। আমি খুব সস্তায় কিনতে চাই।” দাসীর মালিক বলল, ”বলুন কত দাম দেবেন?” মালেক বিন দীনার রহ. বললেন, ”আমার কাছে এ দাসীর মূল্য হচ্ছে খেজুরের চুষে খাওয়া দুটি দানা।” এই উত্তর শুনে দাসীর মালিক ও উপস্থিত সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। দাসীর মালিক বলল কি বলছেন আপনি? এটা কি কোনো দাম হল?
মালেক ইবনে দিনার রহ. বললেন যদি এই দাসী সুগন্ধি না মাখে তাহলে ঘামের গন্ধ তার শরীর দুর্গন্ধ হয়ে যায়। প্রতিদিন যদি দাঁত পরিষ্কার না করে তাহলে কাছে বসা যায় না। প্রতিদিন যদি মাথা না আঁচড়ায় তাহলে তার মাথায় উকুন অন্যদের মাথায় ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কয়েক বছর কেটে যাওয়ার পর সে বৃদ্ধ হয়ে যাবে। তখন সে আর কোন কাজ করতে সক্ষম থাকবে না। একদম অকেজো হয়ে যাবে। এছাড়াও তার রয়েছে দুঃখ, কষ্ট, দুশ্চিন্তা। তার মনে রয়েছে হিংসা, ঘৃণা, ক্রোধের মিশ্রণ। সে নিজের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার জন্য তোমাকে মোহাব্বত করে । তার এই ভালোবাসা অকৃত্রিম নয় । বলা যায় সে ভালোবাসার অভিনয় করে মাত্র।
তারপর মালিক ইবনে দিনার রহ. বলল আমার কাছে এক দাসী আছে তাকে খরিদ করবে? দাসীর মালিক বলল কোথায় সে দাসী? মালেক ইবনে দিনার রহ. বললেন সে দাসী মাটির তৈরি নয় বরং মেশক, আম্বর, জাফরান এবং কাফুরের তৈরি। তার চেহারায় যে নূর রয়েছে সে আল্লাহর নূরের অংশ। হাদিসে বলা হয়েছে তার চেহারা যদি দুনিয়ার অন্ধকারে দেখানো হয় তাহলে গোটা পৃথিবী আলোকিত হয়ে যাবে। তার চেহারার সামনে সূর্যের আলো ম্লান হয়ে যাবে। সে যদি সমুদ্রে থুতু নিক্ষেপ করে তাহলে সমুদ্রের সব পানি মিঠা হয়ে যাবে। সে যদি নিজের আঁচলের দোলা দেয় তাহলে গোটা পৃথিবী সুবাসিত হয়ে যাবে। সাতটি সমুদ্র যদি সে থুতু নিক্ষেপ করে তাহলে সব সমুদ্রের পানি মিঠা হয়ে যাবে। সে জাফরান এবং মেশকের বাগানে প্রতিপালিত হয়েছে। তাসনিম ঝরনার পানি পান করেছে । তার ভালবাসা খাঁটি। সে ভালোবাসায় কোনো কৃত্রিমতা নেই। সে একান্ত অনুগত। তার অনুগত আনুগত্য কোনো ফাঁকি নেই। তার মনে কোন হিংসা, অহংকার, ক্রোধ নেই। তার বয়স বাড়বে না, সে সব সময় থাকবে সুন্দরী এবং যুবতী । সে সবসময় সাথে সাথে থাকবে। তার কখনো মৃত্যু হবে না।
এবার বল আমার দাসী উত্তম নাকি তোমারে দাসী উত্তম। দাসীর মালিক বলল আপনি যে দাসীর কথা বলেছেন নিঃসন্দেহে সে অতি উত্তম। কিন্তু তার মূল্য কত? মালেক ইবনে দিনার রহ. বললেন তার মূল্য বেশি নয়! তাকে পেতে হলে কেবল আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করতে হবে।
এসব কথা শোনার পর দাসীর মালিকের অন্তরে পরিবর্তন আসলো। দাসীর মালিক দাসীকে বলল শুনলে তো উনি কি বলেছেন? যাও আমি তোমাকে আল্লাহর নামে আজাদ করে দিলাম? তুমি ছাড়া আমার যত দাস-দাসী রয়েছে আমি সবাইকে এখনই আজাদ করে দিলাম। আর আমার সমুদয় ধন-সম্পদ গরিব-দুঃখীদের মধ্যে বিতরণ করে দেব। দাসীর মালিকের সব দামি দামি পোশাক দান করে দিয়ে, ঘরের দরজা জানালার পর্দা খুলে নিয়ে সে পর্দা দিয়ে নিজের জামা তৈরি করল। দারিদ্র্যতার জীবনকে বেছে নিলো। কেননা যায়েদ বিন সাবেত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
যে ব্যক্তির প্রধান চিন্তা (লক্ষ্য) ইহলৌকিক সুখভোগ (দুনিয়াদারীই) হয়, আল্লাহ তার প্রচেষ্টাকে তার প্রতিকূলে বিক্ষিপ্ত করে দেন, তার দারিদ্রকে তার দুই চক্ষুর সামনে করে দেন, আর দুনিয়ার সুখসামগ্ৰী তার ততটুকুই লাভ হয় যতটুকু তার ভাগ্যে লিখা থাকে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তির উদ্দেশ্য (ও পরম লক্ষ্য) পারলৌকিক সুখভোগ (আখেরাতই) হয়, আল্লাহ তার প্রচেষ্টাকে তার অনুকূলে ঐকান্তিক করে দেন। তার অন্তরে অমুখাপেক্ষীতা (ধনবত্তা) ভরে দেন।আর অনিচ্ছা সত্ত্বেও দুনিয়ার (সুখসামগ্রী) তার নিকট এসে উপস্থিত হয়। (ইবনে মাজাহ ৪১০৫, সিলসিলাহ সহীহাহ ৯৫০ নং)
তাইতো দাসীর সেই মালিক আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার কাজে বেরিয়ে পড়লেন। মালেক ইবনে দিনার রহ. দাসীর সাথে সেই মালিকের বিয়ে দিলেন। এরপর তারা দুজন ইবাদাত বন্দেগী করার দ্বারা আল্লাহর ওলীতে পরিণত হল। পরবর্তীতে বহুদূর থেকে মানুষ তাদের কাছে দোয়া নিতে আসতো।
(সূত্র: তাজা ঈমানের সত্য কাহিনী: মাওলানা তারিক জামিল)
সেই মালেক ইবনে দিনার রহ. একবার এক বাজারের উপর দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি দেখেন বিক্রির জন্য নিয়ে আসা একটি অসাধারণ সুন্দর দাসীকে। তখনকার সময়ে হাটে বাজারে দাস-দাসী বেচাকেনা হত। দাস দাসী বেচা কেনা করা তখন স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। বিত্তশালীরা শখ করে এসব দাস দাসী ক্রয় করতো। এসব দাস দাসীদের কারো কারো মূল্য ১ লক্ষ দিরহামও হত।
মালিক ইবনে দিনার রহ. সেই দাসীর মালিকের সামনে গিয়ে সরাসরি দাসীকে বললেন, ”আমি তোমাকে কিনে নিতে চাই।” মালেক ইবনে দিনার রহ. কথা শুনে দাসী হেসে ফেলল। এরপর বলল আপনার মত গরিব লোক আমাকে কি করে কিনবেন?
পরে অবশ্য দাসীর মালিকের কাছে মালেক বিন দীনার রহ. এবং দাসীকে নিয়ে যাওয়া হল। মালেক ইবনে দিনার রহ. দাসীর মালিককে বললেন, ”জনাব, আমি আপনার এই দাসীকে কিনে নিতে চাই।” এ কথা শুনে সেখানে উপস্থিত সবাই হাসাহাসি করতে লাগল। মালিক ঠাট্টাচ্ছলে বলল, ”এ দাসীর মূল্য আপনি কত দিতে পারবেন?
মালেক বিন দীনার রহ. বললেন, ”কত দাম দেব। আমি খুব সস্তায় কিনতে চাই।” দাসীর মালিক বলল, ”বলুন কত দাম দেবেন?” মালেক বিন দীনার রহ. বললেন, ”আমার কাছে এ দাসীর মূল্য হচ্ছে খেজুরের চুষে খাওয়া দুটি দানা।” এই উত্তর শুনে দাসীর মালিক ও উপস্থিত সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। দাসীর মালিক বলল কি বলছেন আপনি? এটা কি কোনো দাম হল?
মালেক ইবনে দিনার রহ. বললেন যদি এই দাসী সুগন্ধি না মাখে তাহলে ঘামের গন্ধ তার শরীর দুর্গন্ধ হয়ে যায়। প্রতিদিন যদি দাঁত পরিষ্কার না করে তাহলে কাছে বসা যায় না। প্রতিদিন যদি মাথা না আঁচড়ায় তাহলে তার মাথায় উকুন অন্যদের মাথায় ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কয়েক বছর কেটে যাওয়ার পর সে বৃদ্ধ হয়ে যাবে। তখন সে আর কোন কাজ করতে সক্ষম থাকবে না। একদম অকেজো হয়ে যাবে। এছাড়াও তার রয়েছে দুঃখ, কষ্ট, দুশ্চিন্তা। তার মনে রয়েছে হিংসা, ঘৃণা, ক্রোধের মিশ্রণ। সে নিজের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার জন্য তোমাকে মোহাব্বত করে । তার এই ভালোবাসা অকৃত্রিম নয় । বলা যায় সে ভালোবাসার অভিনয় করে মাত্র।
তারপর মালিক ইবনে দিনার রহ. বলল আমার কাছে এক দাসী আছে তাকে খরিদ করবে? দাসীর মালিক বলল কোথায় সে দাসী? মালেক ইবনে দিনার রহ. বললেন সে দাসী মাটির তৈরি নয় বরং মেশক, আম্বর, জাফরান এবং কাফুরের তৈরি। তার চেহারায় যে নূর রয়েছে সে আল্লাহর নূরের অংশ। হাদিসে বলা হয়েছে তার চেহারা যদি দুনিয়ার অন্ধকারে দেখানো হয় তাহলে গোটা পৃথিবী আলোকিত হয়ে যাবে। তার চেহারার সামনে সূর্যের আলো ম্লান হয়ে যাবে। সে যদি সমুদ্রে থুতু নিক্ষেপ করে তাহলে সমুদ্রের সব পানি মিঠা হয়ে যাবে। সে যদি নিজের আঁচলের দোলা দেয় তাহলে গোটা পৃথিবী সুবাসিত হয়ে যাবে। সাতটি সমুদ্র যদি সে থুতু নিক্ষেপ করে তাহলে সব সমুদ্রের পানি মিঠা হয়ে যাবে। সে জাফরান এবং মেশকের বাগানে প্রতিপালিত হয়েছে। তাসনিম ঝরনার পানি পান করেছে । তার ভালবাসা খাঁটি। সে ভালোবাসায় কোনো কৃত্রিমতা নেই। সে একান্ত অনুগত। তার অনুগত আনুগত্য কোনো ফাঁকি নেই। তার মনে কোন হিংসা, অহংকার, ক্রোধ নেই। তার বয়স বাড়বে না, সে সব সময় থাকবে সুন্দরী এবং যুবতী । সে সবসময় সাথে সাথে থাকবে। তার কখনো মৃত্যু হবে না।
এবার বল আমার দাসী উত্তম নাকি তোমারে দাসী উত্তম। দাসীর মালিক বলল আপনি যে দাসীর কথা বলেছেন নিঃসন্দেহে সে অতি উত্তম। কিন্তু তার মূল্য কত? মালেক ইবনে দিনার রহ. বললেন তার মূল্য বেশি নয়! তাকে পেতে হলে কেবল আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করতে হবে।
এসব কথা শোনার পর দাসীর মালিকের অন্তরে পরিবর্তন আসলো। দাসীর মালিক দাসীকে বলল শুনলে তো উনি কি বলেছেন? যাও আমি তোমাকে আল্লাহর নামে আজাদ করে দিলাম? তুমি ছাড়া আমার যত দাস-দাসী রয়েছে আমি সবাইকে এখনই আজাদ করে দিলাম। আর আমার সমুদয় ধন-সম্পদ গরিব-দুঃখীদের মধ্যে বিতরণ করে দেব। দাসীর মালিকের সব দামি দামি পোশাক দান করে দিয়ে, ঘরের দরজা জানালার পর্দা খুলে নিয়ে সে পর্দা দিয়ে নিজের জামা তৈরি করল। দারিদ্র্যতার জীবনকে বেছে নিলো। কেননা যায়েদ বিন সাবেত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
যে ব্যক্তির প্রধান চিন্তা (লক্ষ্য) ইহলৌকিক সুখভোগ (দুনিয়াদারীই) হয়, আল্লাহ তার প্রচেষ্টাকে তার প্রতিকূলে বিক্ষিপ্ত করে দেন, তার দারিদ্রকে তার দুই চক্ষুর সামনে করে দেন, আর দুনিয়ার সুখসামগ্ৰী তার ততটুকুই লাভ হয় যতটুকু তার ভাগ্যে লিখা থাকে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তির উদ্দেশ্য (ও পরম লক্ষ্য) পারলৌকিক সুখভোগ (আখেরাতই) হয়, আল্লাহ তার প্রচেষ্টাকে তার অনুকূলে ঐকান্তিক করে দেন। তার অন্তরে অমুখাপেক্ষীতা (ধনবত্তা) ভরে দেন।আর অনিচ্ছা সত্ত্বেও দুনিয়ার (সুখসামগ্রী) তার নিকট এসে উপস্থিত হয়। (ইবনে মাজাহ ৪১০৫, সিলসিলাহ সহীহাহ ৯৫০ নং)
তাইতো দাসীর সেই মালিক আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার কাজে বেরিয়ে পড়লেন। মালেক ইবনে দিনার রহ. দাসীর সাথে সেই মালিকের বিয়ে দিলেন। এরপর তারা দুজন ইবাদাত বন্দেগী করার দ্বারা আল্লাহর ওলীতে পরিণত হল। পরবর্তীতে বহুদূর থেকে মানুষ তাদের কাছে দোয়া নিতে আসতো।
(সূত্র: তাজা ঈমানের সত্য কাহিনী: মাওলানা তারিক জামিল)