হত্যার বিচার
ইসলামিক গল্প
হত্যার বিচার
হত্যার বিচার
হযরত উমর (রা.)-এর দরবার। দাড়ি-মোচ হীন এক যুবকের লাশ উপস্থিত করা হলো দরবারে। নিহত যুবকের লাশ রাস্তা থেকে কুড়িয়ে এনেছে পুলিশের লোকেরা। হত্যা করা হয়েছে তাকে। আমীরুল মুমিনীন পেরেশান। বহু তত্ত্ব-তালাশ ও অনুসন্ধানের পরও হত্যার কোনো ক্লু খুঁজে পেলেন না। বিষয়টি নিয়ে অনেক চিন্তিত তিনি। কোনো উপায়ন্তর না দেখে দ্বারস্ত হলেন দরবারে এলাহিতে। দোয়া করলেন, হে প্রভু! এই যুবকের হত্যা রহস্যকে তুমি আমার সামনে উদ্ঘাটন করে দাও।
এক বছর পর। যে স্থানে যুবকের লাশ পাওয়া গিয়েছিলো, ঠিক সেখানেই পাওয়া গেলো একটি সদ্য ভুমিষ্ট নবজাতক। শিশুটিকে উপস্থিত করা হলো দরবারে। তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠলো হযরত উমর (রা)-এর চোখে মুখে । বললেন, ইনশাআল্লাহ এবার সে যুবকের হত্যা রহস্য উদ্ঘাটিত হবে। শিশুটিকে তিনি একজন মহিলার হাতে অর্পণ করে বললেন, তুমি তাকে যত্নের সাথে লালন করবে এবং তার যাবতীয় খরচাদি আমার কাছ থেকে মাস শেষে নিয়ে যাবে। অতঃপর বললেন, শিশুটিকে লালন-পালন করার মধ্যবর্তী সময়ে লক্ষ্য রাখবে কোনো মহিলা শিশুটিকে নিতে আসে কি না। অথবা কেউ তাকে আদর সোহাগ করে চুমো দেয় কি না। যদি এমন কিছু ঘটে তাহলে সাথে সাথে আমাকে খবর দিবে এবং তার ঠিকানা সম্পর্কে আমাকে অবহিত করবে।
কেটে গেলো কয়েক বছর। শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পদার্পণ করেছে ছেলেটি। একদিন একজন দাসী এসে মহিলাকে বললো, আমার মুনিবা আমাকে আপনার নিকট পাঠিয়েছেন ছেলেটিকে আমার সাথে পাঠানোর জন্য। তিনি তাকে একটু দেখতে চান। মহিলা বললো, ঠিক আছে চলো, আমিও যাবো সাথে। ছেলেটিকে নিয়ে যখন তারা সে বাড়িতে পৌঁছল তখন কৃতদাসীর মুনিবা তাকে কোলে তুলে নিলো, বুকে জড়িয়ে আদর-সোহাগ করতে লাগলো। চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দিলো তাকে।
খবর নিয়ে জানা গেলো উক্ত মুনিবা একজন আনসারী সাহাবীর মেয়ে। এবার সেই মহিলা কালবিলম্ব না করে হযরত উমরের দরবারে উপস্থিত হয়ে ঘটনার সবিস্তার বর্ণনা দিলো। হযরত উমর রা. ঘটনা শুনামাত্র তলোয়ার হাতে রওয়ানা হলেন আনসারী মহিলার বাড়িতে। পৌঁছলেন। মহিলার পিতা তখন দরজায় হেলান দিয়ে বসা ছিলেন। হযরত উমর রা. তাকে বললেন, হে অমুক! তোমার অমুক মেয়ের হালাত কী ? মহিলার পিতা বললো, হে আমীরুল মুমিনীন ! আস’আদাকাল্লাহ ! আমার মেয়ে আল্লাহর হক, মানুষের হক, পিতামাতা ও আত্মীয়-স্বজনের হক, মানুষের সাথে আচার-আচরণ, চাল-চলন, নামায-রোযা দ্বীনদারী ইত্যাদি সর্ববিষয়ে বেশ যত্নশীল।
হযরত উমর বললেন, আমি তোমার মেয়ের সাথে সাক্ষাত করতে চাই। আমি তাকে নেক কাজে আরো উৎসাহিত করবো। অতঃপর মহিলার পিতাসহ হযরত উমর মহিলার ঘরে প্রবেশ করলেন। গৃহে প্রবেশের পর হযরত উমর মহিলার পিতাকে বললেন, তুমি ঘর থেকে বেরিয়ে যাও। মহিলার পিতা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে উমর রা. তরবারী কোষমুক্ত করে বললেন, যা ঘটেছে সব সত্য সত্য বলো, না হয় তোমার গর্দান উড়িয়ে দিবো।
মহিলা বললো, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনি শান্ত হোন। অবশ্যই আমি সত্য খুলে বলবো। এই বলে সে বলতে শুরু করলো, জনাব! আমাদের গৃহে এক বৃদ্ধা মহিলা আসা যাওয়া করতো। এক পর্যায়ে তার সাথে আমার এমন ঘনিষ্টতা হয় যে, আমি তাকে স্বীয় মায়ের মতো শ্রদ্ধা করতাম। কারণ, তিনিও আমাকে মায়ের মতো আদর-যত্ন করতো। মহব্বত করতো। এভাবে দীর্ঘদিন কেটে যায়। একদিন সে আমাকে বললো, বেটী! আমি সফরে যাওয়ার ইচ্ছে করেছি। ঘরে আমার এক মেয়ে আছে। তার ব্যাপারে খুব শংকিত। তাকে কোথায় রেখে যাবো। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত করেছি তাকে তোমার নিকট রেখে যাবো। আমি সফর থেকে ফেরা পর্যন্ত সে তোমার কাছে অবস্থান করবে। একথা বলে তিনি তার ছেলেকে মেয়ের সাজে সজ্জিত করে আমার নিকট রেখে গেলেন।
তার চাল-চলন বেশ-ভূষা সবকিছু মেয়েদের মতো। সে মেয়ে হওয়ার ব্যাপারে আমার মনে সামান্যতম সন্দেহের উদয় হয়নি। সুতরাং দুইজন মেয়ে এক সাথে সাধারণতঃ যেভাবে চলা-ফেরা, উঠা-বসা করে, আমিও তার সাথে সেভাবে কাটাতে লাগলাম। এভাবে বেশ ক‘দিন অতিবাহিত হলো।
একদিন আমি ঘুমিয়ে আছি। সুযোগ বুঝে সে আমার উপর চড়ে বসে এবং আমি কিছু অনুমান করার আগেই সে আমার সতীত্ব হরণ করে নেয়। অবস্থা বুঝে উঠার পর আমার হাতের কাছে ছিলো একটা ছুরি, সেটা দিয়ে তাকে খুন করি। এরপর খাদেমাকে নির্দেশ দেই তাকে সেখানে ফেলে আসতে যেখানে আপনি তার লাশ পেয়েছিলেন। তার থেকেই আমার গর্ভে সন্তান আসে। সেই সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর তাকেও সেই স্থানে ফেলে আসার নির্দেশ দেই, যেখানে তার পিতাকে ফেলে আসা হয়েছিলো। আল্লাহর শপথ ! এই হলো সত্য ঘটনা।
হযরত উমর রা. বললেন, বেটী ! তুমি সত্য বলেছো। এরপর হযরত উমর রা. মহিলার জন্য দোয়া করে বেরিয়ে আসলেন। আসার সময় তার পিতাকে বললেন, তোমার মেয়েটা বড়োই বুদ্ধিমান ও নেককার।
(লেখাঃ সংগৃহীত)
এক বছর পর। যে স্থানে যুবকের লাশ পাওয়া গিয়েছিলো, ঠিক সেখানেই পাওয়া গেলো একটি সদ্য ভুমিষ্ট নবজাতক। শিশুটিকে উপস্থিত করা হলো দরবারে। তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠলো হযরত উমর (রা)-এর চোখে মুখে । বললেন, ইনশাআল্লাহ এবার সে যুবকের হত্যা রহস্য উদ্ঘাটিত হবে। শিশুটিকে তিনি একজন মহিলার হাতে অর্পণ করে বললেন, তুমি তাকে যত্নের সাথে লালন করবে এবং তার যাবতীয় খরচাদি আমার কাছ থেকে মাস শেষে নিয়ে যাবে। অতঃপর বললেন, শিশুটিকে লালন-পালন করার মধ্যবর্তী সময়ে লক্ষ্য রাখবে কোনো মহিলা শিশুটিকে নিতে আসে কি না। অথবা কেউ তাকে আদর সোহাগ করে চুমো দেয় কি না। যদি এমন কিছু ঘটে তাহলে সাথে সাথে আমাকে খবর দিবে এবং তার ঠিকানা সম্পর্কে আমাকে অবহিত করবে।
কেটে গেলো কয়েক বছর। শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পদার্পণ করেছে ছেলেটি। একদিন একজন দাসী এসে মহিলাকে বললো, আমার মুনিবা আমাকে আপনার নিকট পাঠিয়েছেন ছেলেটিকে আমার সাথে পাঠানোর জন্য। তিনি তাকে একটু দেখতে চান। মহিলা বললো, ঠিক আছে চলো, আমিও যাবো সাথে। ছেলেটিকে নিয়ে যখন তারা সে বাড়িতে পৌঁছল তখন কৃতদাসীর মুনিবা তাকে কোলে তুলে নিলো, বুকে জড়িয়ে আদর-সোহাগ করতে লাগলো। চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দিলো তাকে।
খবর নিয়ে জানা গেলো উক্ত মুনিবা একজন আনসারী সাহাবীর মেয়ে। এবার সেই মহিলা কালবিলম্ব না করে হযরত উমরের দরবারে উপস্থিত হয়ে ঘটনার সবিস্তার বর্ণনা দিলো। হযরত উমর রা. ঘটনা শুনামাত্র তলোয়ার হাতে রওয়ানা হলেন আনসারী মহিলার বাড়িতে। পৌঁছলেন। মহিলার পিতা তখন দরজায় হেলান দিয়ে বসা ছিলেন। হযরত উমর রা. তাকে বললেন, হে অমুক! তোমার অমুক মেয়ের হালাত কী ? মহিলার পিতা বললো, হে আমীরুল মুমিনীন ! আস’আদাকাল্লাহ ! আমার মেয়ে আল্লাহর হক, মানুষের হক, পিতামাতা ও আত্মীয়-স্বজনের হক, মানুষের সাথে আচার-আচরণ, চাল-চলন, নামায-রোযা দ্বীনদারী ইত্যাদি সর্ববিষয়ে বেশ যত্নশীল।
হযরত উমর বললেন, আমি তোমার মেয়ের সাথে সাক্ষাত করতে চাই। আমি তাকে নেক কাজে আরো উৎসাহিত করবো। অতঃপর মহিলার পিতাসহ হযরত উমর মহিলার ঘরে প্রবেশ করলেন। গৃহে প্রবেশের পর হযরত উমর মহিলার পিতাকে বললেন, তুমি ঘর থেকে বেরিয়ে যাও। মহিলার পিতা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে উমর রা. তরবারী কোষমুক্ত করে বললেন, যা ঘটেছে সব সত্য সত্য বলো, না হয় তোমার গর্দান উড়িয়ে দিবো।
মহিলা বললো, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনি শান্ত হোন। অবশ্যই আমি সত্য খুলে বলবো। এই বলে সে বলতে শুরু করলো, জনাব! আমাদের গৃহে এক বৃদ্ধা মহিলা আসা যাওয়া করতো। এক পর্যায়ে তার সাথে আমার এমন ঘনিষ্টতা হয় যে, আমি তাকে স্বীয় মায়ের মতো শ্রদ্ধা করতাম। কারণ, তিনিও আমাকে মায়ের মতো আদর-যত্ন করতো। মহব্বত করতো। এভাবে দীর্ঘদিন কেটে যায়। একদিন সে আমাকে বললো, বেটী! আমি সফরে যাওয়ার ইচ্ছে করেছি। ঘরে আমার এক মেয়ে আছে। তার ব্যাপারে খুব শংকিত। তাকে কোথায় রেখে যাবো। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত করেছি তাকে তোমার নিকট রেখে যাবো। আমি সফর থেকে ফেরা পর্যন্ত সে তোমার কাছে অবস্থান করবে। একথা বলে তিনি তার ছেলেকে মেয়ের সাজে সজ্জিত করে আমার নিকট রেখে গেলেন।
তার চাল-চলন বেশ-ভূষা সবকিছু মেয়েদের মতো। সে মেয়ে হওয়ার ব্যাপারে আমার মনে সামান্যতম সন্দেহের উদয় হয়নি। সুতরাং দুইজন মেয়ে এক সাথে সাধারণতঃ যেভাবে চলা-ফেরা, উঠা-বসা করে, আমিও তার সাথে সেভাবে কাটাতে লাগলাম। এভাবে বেশ ক‘দিন অতিবাহিত হলো।
একদিন আমি ঘুমিয়ে আছি। সুযোগ বুঝে সে আমার উপর চড়ে বসে এবং আমি কিছু অনুমান করার আগেই সে আমার সতীত্ব হরণ করে নেয়। অবস্থা বুঝে উঠার পর আমার হাতের কাছে ছিলো একটা ছুরি, সেটা দিয়ে তাকে খুন করি। এরপর খাদেমাকে নির্দেশ দেই তাকে সেখানে ফেলে আসতে যেখানে আপনি তার লাশ পেয়েছিলেন। তার থেকেই আমার গর্ভে সন্তান আসে। সেই সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর তাকেও সেই স্থানে ফেলে আসার নির্দেশ দেই, যেখানে তার পিতাকে ফেলে আসা হয়েছিলো। আল্লাহর শপথ ! এই হলো সত্য ঘটনা।
হযরত উমর রা. বললেন, বেটী ! তুমি সত্য বলেছো। এরপর হযরত উমর রা. মহিলার জন্য দোয়া করে বেরিয়ে আসলেন। আসার সময় তার পিতাকে বললেন, তোমার মেয়েটা বড়োই বুদ্ধিমান ও নেককার।
(লেখাঃ সংগৃহীত)