0 %

Thanks a lot for being with us!
We are re-constructing our website!
Sorry for this temporary inconvenience
We are coming to you with a fresh look and design from 1 January 2022!
Till then! Stay connected!

তাওবা


ইসলামিক গল্প
তাওবা

এক দুঃস্বপ্ন মহান দরবেশ মালিক ইবনে দিনার রহঃ কে তাওবার দিকে নিয়ে যায়। তাঁকে তাঁর তাওবার পিছনের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আমি ছিলাম পুলিশের লোক এবং মদ্যপায়ী। আমার এক দাসী ছিল যে আমার সাথে খুব ভালো আচরণ করতো। তাঁর গর্ভে আমার এক মেয়ে হয়, যার প্রতি আমার তীব্র অনুরাগ ছিল। যখন সে হাঁটতে শিখলো তখন তাঁর প্রতি আমার ভালোবাসা আরো বেড়ে যায়। আমি যখন মদ খেতে যেতাম তখন সে এসে আমার মদের গ্লাস ধরে টান দিত আর সব আমার কাপড়ের উপর গড়িয়ে পড়ত। আমার মেয়ের বয়স যখন দুই বছর , তখন সে মারা যায়। আমি অত্যন্ত ভেঙ্গে পড়লাম। সেই বছর এক শুক্রবারে ১৫ই শাবান* এলো। আমি নামায না পড়েই মাতাল হয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। আমি স্বপ্নে দেখলাম কিয়ামত এসে গেছে, শিংগায় ফুঁ দেয়া হয়েছে, কবরগুলোর পুনরুত্থান ঘটেছে। আরো দেখলাম মানুষদের একত্রিত করা হলো। আমিও ছিলাম তাদের মাঝে। আমি আমার পিছনে হিস হিস শব্দ শুনতে পেলাম। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি একটা নীল কালো বিশাল সাপ আমার দিকে তেড়ে আসছে। আমি ভয়ে আতংকে প্রাণপণে দৌড়াতে লাগলাম। আমি তখন একজন বুড়ো মানুষের মুখোমুখি হলাম। তাঁর পরনে ছিল সুন্দর পোশাক, গায়ে সুগন্ধি। আমি তাঁকে সালাম দিয়ে আমাকে সাহায্য করতে বললাম। তিনি কেঁদে উঠে বললেন তিনি অনেক দুর্বল আর সাপটি তাঁর চাইতে অনেক বেশী শক্তিশালী। তিনি আমাকে বললেন দৌড়াতে। হয়তো সামনে এমন কাউকে পাব যে আমাকে সাহায্য করতে পারবে। আমি দৌড়ে একটা উঁচু জায়গায় পৌঁছে গেলাম। খেলায় করে দেখি আমি আগুনের উপত্যকার শীর্ষে বসে আছি। আগুন দেখে এতটা ভয় পেলাম যে আমার মনে হলো আমি আগুনে প্রায় পড়েই যাচ্ছি। তখন আমি একটা আওয়াজ শুনতে পেলাম। কে যেন বলছে,এখান থেকে চলে যাও। তুমি এখানকার নও। আমি সেই চিৎকার শুনে কিছুটা স্বস্তি বোধ করলাম। আমি আরো দৌড়াতে লাগলাম। সাপটি তখন আমার পায়ের গোড়ালির সাথে ছিল। আমি সেই বুড়োকে আবার দেখতে পেয়ে আমাকে সাহায্য করতে বললাম। তিনি পুনরায় একই জবাব দিলেন। এরপর তিনি আমাকে একটি পাহাড় দেখিয়ে দিলেন। বললেন, আমি সেখানে নিজের কিছু সঞ্চয় পেতে পারি যা হয়তো আমাকে সাহায্য করবে। আমি পাহাড়টার দিকে তাকিয়ে দেখলাম, এটি বৃত্তাকার এবং রুপার তৈরি। পাহাড়ে ছিল অনেকগুলো ছিদ্র করা জানালা ও ঝুলন্ত পর্দা। প্রতিটি জানালায় ছিল দুইটা সোনার কপাট। প্রতিটা কপাট রেশমী পর্দা দিয়ে সাজানো। আমি দ্রুত সেই পাহাড়ের দিকে দৌড়ে গেলাম। একজন ফেরেশতা বলে উঠলেন, পর্দা উঠাও। কপাট খুলে দেখো। হয়তো এখানে এই দুর্দশাগ্রস্ত মানুষটির কোন সঞ্চয় আছে যা তাঁকে সাহায্য করবে। আমি তখন অনেকগুলো ছোট শিশুকে দেখতে পেলাম যাদের চেহারা জানালার ফাঁক দিয়ে ছোট চাঁদের মত উকি দিচ্ছে। তখন তাদের একজন বলে উঠল, তোমাদের কি হলো? জলদি আসো, তাঁর শত্রু তাঁকে প্রায় ধরে ফেলেছে। তাঁরা এগিয়ে এলো এবং তাদের জানালার ফাঁক দিয়ে উকি দিয়ে তাকালো। তাঁরা সংখ্যায় শত শত। আমি তখন আমার মৃত মেয়েটির চেহারা দেখতে পেলাম। সে যখন আমাকে দেখলো, তখন সে কেঁদে উঠে বললো, খোদার শপথ! উনি আমার বাবা। এরপর সে জানালা দিয়ে এত দ্রুত বেরিয়ে নূরের পুকুরে লাফ দিল, ঠিক যেন ধনুক থেকে বের হওয়া তীর। তারপর সে আমার দিকে তাঁর হাত বাড়ালো। আমি তাঁর হাত আঁকড়ে ধরে ঝুলে রইলাম। সে তাঁর আরেকটি হাত দিয়ে সাপটিকে তাড়িয়ে দিল। এরপর সে আমাকে বসালো। আমার কোলের উপর বসে আমার দাড়িতে হাত বুলিয়ে বললো, ‘আব্বা! যারা মুমিন তাদের জন্য কি আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য অবতীর্ণ হয়েছে তার কারণে হৃদয় বিগলিত হবার সময় আসেনি?’ (সূরা আল-হাদীদ, আয়াত ১৬)
আমি কাঁদতে শুরু করলাম। তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম সে কোথা থেকে কুরআন শিখলো। সে বললো এখানকার শিশুরা পৃথিবীতে যা জানতো তাঁর চাইতে বেশী জানে। আমি তখন আমার পিছনে আসা সাপটি সম্পর্কে জানতে চাইলাম। সে জানালো, সেটি হলো আমার খারাপ আমল যা আমাকে দোযখে নিয়ে যেত। আমি তখন সেই বুড়ো লোকটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। আমার মেয়ে বললো, সে হলো আমার ভালো আমল যা এত দুর্বল যে আমাকে সাপটি থেকে রক্ষা করতে পারলো না।
আমি এরপর জানতে চাইলাম, তাঁরা (শিশুরা) পাহাড়ের ভিতরে কি করছে? সে জানালো, এরা সবাই হলো মুসলিমদের মৃত সন্তান। এরা তাদের বাবা মায়ের সাথে দেখা হবার জন্য অপেক্ষা করছে। তাঁরা কিয়ামতের দিন তাদের বাবা মায়ের জন্য শাফায়াত করবে। মালিক বলেন, আমি আতংকে ঘুম থেকে জেগে উঠলাম। আমি আমার মদের সব বোতল ভেঙ্গে ফেললাম আর আল্লাহর কাছে তাওবা করলাম। এই হচ্ছে আমার তাওবার কাহিনী। (লেখাঃ সংগৃহীত)