পরিচয় ২৭৯
পরিচয়(পর্ব-২৭৯)(সিজন-১০)
চয়নিকা
জিজ্ঞেস করলো, “কোন জায়গায়?” আবির বলল, “এই যে, অয়নকে নিয়ে গেলে দেখা যাবে নিশান রাগ
করেছে ।” চয়নিকা বলল, “নিশানকেও নিয়ে যাও! আগের বার নিয়ে যাই নি দেখে কি রাগটাই না
করেছিলো!” অয়ন বলল, “এহ! ও গেলে আমি যাবো না!” আবির বলল, “না না, ব্যাপার তো তা না
। আমরা তো ঘুরতে যাচ্ছি না । যাচ্ছি একটা মিশনে । এখানে সাংঘাতিক কিছু যে ঘটবে না,
তার কি গ্যারান্টি?” অপু বলল, “হুম, আবির ঠিকই বলেছে, অয়ন বড় হয়েছে, কিন্তু নিশান এখনও
ছোট । আল্লাহ না করুক, কোন বিপদ যদি হয়! প্রতিপক্ষ আমাদের ওপর অ্যাটাকও তো করতে পারে
।” অয়ন একটু মন খারাপ করে বলল, “তাহলে কি আমারও যাওয়া হবে না!” চয়নিকা বলল, “না তুই
যাস!” অয়ন বলল, “নিশানকে বোঝাবে কে তাহলে?” চয়নিকা বলল, “সেটা আমার ওপর ছেড়ে দাও!”
বলে চয়নিকা মুচকি হাসল ।
রাতের
কথা । ব্যাগ গোছাচ্ছিলো আবির । নিশান পাশে বসে বাবাকে জিজ্ঞেস করলো, “কোথায় যাচ্ছো?”
আবির বলল, “কক্সবাজার যাচ্ছি সোনা, তুই যাবি?” নিশান বলল, “না” আবির তো অবাক! জিজ্ঞেস
করলো, “একি কেন?” নিশান বলল, “এমনি ।” বলে চলে গেলো । আবির জিজ্ঞেস করলো, “কিরে! কোথায়
যাচ্ছিস?” নিশান যেতে যেতে বলল, “নানার কাছে, রাতে যেতে বলেছিলো ।” একটু পর চয়নিকা
এসে আবিরের ব্যাগ গোছানোর কাজে হাত লাগালো । আবির জিজ্ঞেস করলো, “কি ব্যাপার, ছেলেকে
ম্যানেজ করতে পারলে তাহলে?” চয়নিকা বলল, “ইয়েস মিস্টার! আমি তো আপনার মতো বলদ!” আবির
জানতে চাইলো, “তা মিস্ট্রেস! কি করে করলেন শুনি!”
“বিরিয়ানি!”
বলল চয়নিকা ।
“বিরিয়ানি!”
অবাক হয়ে বলে উঠলো আবির ।
“হ্যাঁ
। ওকে বলেছি তোর বাবার তো প্রেসারের সমসতো প্রেসারের সমস্যা, তাই বিরিয়ানি খেতে পারে
না । তাই এবার তোর বাবা গেলে যতোদিন তোর আসবে না, ততদিন বাসায় বিরিয়ানি রান্না এবং
খাওয়া হবে!” আবির কষ্ট নিয়ে বলল, “আহারে! আমি অবশেষে প্রেসারের রুগী হয়ে গেলাম! আর
আমাকে ছাড়াই বিরিয়ানি খাবে! আহারে! কেউ আমার কদর করে না । মনে হয় আমি বাঙ্গী ।” চয়নিকা
আবিরের নাক ধরে নাড়িয়ে বলল, “জি মিস্টার । তবে কক্সবাজার থেকে এলে আপনি প্রেসার থেকে
একদম সুস্থ হয়ে যাবেন ।” আবির বলল, “সত্যি বলছো?” চয়নিকা বলল, “হ্যাঁ, যাও, তুমি এলেও
বিরিয়ানি খাওয়াবো তোমাকে ।” আবির চয়নিকার নাক ধরে নাড়িয়ে বলল, “আমার মিষ্টি বউ!”
পরদিন
সকাল ১০টায় ফ্লাইট । আবির অয়ন আর ইনস্পেক্টর অপু প্লেনে উঠলো । জানালার পাশের সিটটা
আবিরের হলেও আবির অয়নকে সে সিটটা দিল । ইনস্পেক্টর অপু পেছনের সিটে বসেছে । বিমানে
জানালা দিয়ে বাইরে তাকানোর চেয়ে অয়ন বিমানের ভেতরেই একটা লোকের দিকে তাকিয়ে রইল । মাথায়
চকচকে টাক, গায়ে কোট প্যান্ট, ঠোঁটের চারপাশ জুড়ে দাড়ি মোচ । লোকটার তাকিয়ে থাকার কারণটা
অবশ্য অন্য, লোকটা বারবারই আবিরের দিকে তাকাচ্ছিল । কক্সবাজার এয়ারপোর্টে বিমান ল্যান্ড
করলে নামার পর লোকটা আগে আগেই নেমে যায় । আবির আর অয়নও আস্তে ধীরে নামতে থাকে । ইনস্পেক্টর
অপু আরও আগে নেমে গেছে এয়ারপোর্টে তার কিছু কাজ আছে তা করতে । অয়ন যখন লোকটাকে আশেপাশে
তাকিয়ে খুজে বেড়াচ্ছিল, আবির তখন অয়নকে বলল, “কিরে, সেই চকচকে টাকওয়ালা লোকটাকে খুঁজছিস?”
অয়ন বলল, “তুমি বুঝলে কি করে?”
“তোর
পাশেই বসেছিলাম, লোকটা বার বার আমার দিকে আর তুই বার বার লোকটার দিকে তাকিয়ে ছিলি,
সেটা আমি টের পেয়েছি ।” অয়ন জিজ্ঞেস করলো, “কি অদ্ভুত না! লোকটা বোধ হয় তোমাকে চিনতে
পেরেছিল যে তুমি দ্যা ইনভেস্টিগেশন শো এর হোস্ট ছিলে । কিন্তু তোমার চেহারা আগের থেকে
অনেকটা পাল্টে যাওয়ায় তিনি কিছু বলেন নি সন্দেহের বশে ।” আবির বলল, “ঠিক ধরেছিস, তবে
অবাক করা ব্যাপার কি জানিস? একটু পর ওই লোক আমাদের কাছেই আসবেন ।” অয়ন অবাক হয়ে গেলো
। জিজ্ঞেস করলো, “মানে?” আবির বলল, “দেখতে থাক ।” এয়ারপোর্ট থেকে বেরোতেই লোকটার সাথে
দেখা হয়ে গেলো আবির আর অয়নের । এবার যদিও লোকটা একা না, সাথে ইনস্পেক্টর অপুও আছে ।
আগে খেয়াল করে নি অয়ন, তবে এখন খেয়াল করলো, লোকটার কোর্টের সাথে কিসের একটা লোগো ।
কিছু লেখা আছে হয়তো কিন্তু তা ঠিকমতো বুঝতে পারলো না অয়ন । লোকটা এগিয়ে এসে বলল, “হ্যালো
মিস্টার! আমি আশিকুল হাসান সায়েম!” বলে লোকটা আবিরের দিকে হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত
বাড়িয়ে দিলো । আবির হ্যান্ড শেক করে বলল, “আমি সালমান খান আবির ।” তারপর আবির অয়নকে
দেখিয়ে বলল, “ও আমার শ্যালক, অয়ন ।” সায়েম লোকটা অয়নের সাথেও হ্যান্ডশেক করলো । তারপর
আবিরকে বলল, “আমি-ই ইনস্পেক্টর অপুকে বলেছিলাম আপনাকে আনতে । গতকাল আমি একটা কাজে ঢাকা
গিয়েছিলাম, আজই ফিরে এলাম, কিন্তু এটা ভাবিনি একই বিমানে আসবো আমরা ।” অয়ন নিজের হাতটা
নাকের কাছে নিতেই খেয়াল করলো, কিসের যেন গন্ধ । অনেকটা আতরের মতো ।
আগামী
পর্বেঃ
ফ্ল্যাশ
ট্যাংক-এর বাটন চাপার পর যখন ফ্ল্যাশ ট্যাংক আবার ভেতর থেকে পানি দিয়ে পূর্ণ হওয়া শুরু
করলো, তখন আরও একটা আওয়াজ পেল অয়ন । পলিথিনের ওপর পানি পড়লে যেমন আওয়াজ হয় ঠিক সেরকম
।