পরিচয় ২৭৮
পরিচয়(পর্ব-২৭৮)(সিজন-১০)
চায়ের
কাপের শেষ চুমুকটা দিয়ে আবির উঠে দাঁড়ালো । বারান্দায় আবির, অপু আর অয়ন । নিশান গেছে
ওর নানুর বাসায় । চয়নিকা রান্নাঘরে । ইন্সপেক্টর অপুকে একটা কেস সল্ভ করতে কক্সবাজার
যেতে হবে, তাই তিনি ভাবছিলেন আবিরও যদি যায়, তবে তার সুবিধা হয় একটু । অবশ্য আবিরকে
নিয়ে যাওয়ার আরও একটা কারণ আছে । যে হোটেল ঘটনাটা ঘটেছে সেখানকার মালিকেরও আবদার ছিল
আবিরকে যেন নিয়ে আসে, কারণ ১মাস হয়ে গেলেও সেখানকার স্থানীয় পুলিশ ঘটনার কোন কূল কিনারা
না করতে পারায় পুলিশের ওপর থেকে তাদের ভরসা উঠে গেছে । অপু বলল, “ভাই, তুই না বলিস
না প্লিজ! তুই গেলে আমারও একটু ভালো লাগবে ।” আবির বলল, “আচ্ছা, বুঝলাম কিন্তু এবার
ঘটনার বিস্তারিতটা তো বল! চা-ই শেষ হয়ে গেলো!” অপু বলল, “দ্যাখ, সত্যি বলতে কি, উনারা
কি যে বলছেন, আমিও ঠিক স্পষ্টভাবে বুঝতে পারছি না সেটা ।” আবির জিজ্ঞেস করল, “মানে?”
-“মানে……আচ্ছা
শোন তাহলে । যেটুকু বুঝেছি সেটুকু বলছি । আজ থেকে ১মাস ১০দিন আগে, অর্থাৎ ২২ এপ্রিল,
কক্সবাজার ডলফিন মোড়ে হোটেল মারমেইড, নতুন খুলেছে, ইভেন এখনও কাজ চলছে । তখন দোতলা
পর্যন্ত হয়েছিলো, এখন বোধ তিনতলাও হয়ে গেছে, যদ্দুর শুনেছি সাত তলা করবে । একেকটা তলায়
সিঁড়ি বেয়ে উঠলে লম্বা গলি, আর সেই গলিতেই বা দিকে সারি সারি রুম, ডান দিকে খোলা গ্রিল,
সামনে শহর দেখা যায় । হোটেলের ভাড়াও তেমন বেশী না, আবার হোটেলের মান ফাইভ স্টার হোটেলের
মতো না হলেও তেমন খারাপও না । মূলত মধ্যবিত্তদের জন্য পারফেক্ট একটা হোটেল । সেখানেই
দোতলায় একদম শেষের রুমটায় উঠেছিলো রিও ফারনেন্দো নামের এক বছর ২০ এর আমেরিকান তরুণ
তাকে দেখে বেশ পয়সাওয়ালাও মনে হলেও ও কেন যে ওই কমদামি হোটেলে উঠেছিলো আল্লাহই জানেন
।”
এই
মুহূর্তে হঠাৎ আবির বলে উঠলো, “আসলে কি, আমাদের চোখে কোন বিদেশী দেখলেই আমরা ভাবি সে
বোধ হয় কতো বড়োলোক, তবে আমি কিন্তু এটা এমনি বললাম, সে বড়োলোক কি গরীব, তা এখনই আমি
বলতে পারব না ।” অপু বলল, “এই ছেলেটা ৩ দিন ওই রেস্টুরেন্টে ছিল, অথচ একদিনও সে হোটেল
থেকে বের হয় নি । রুম ঝাড়ু দিতে একবার বুয়া গিয়েছিলো, সে নাকি দেখেছিলো ছেলেটা মোবাইল
আর ল্যাপটপেই বসে আছে । ৩ দিন পর ছেলেটাকে রুমে দেখা যায় না, রুমে দরজা খোলা ছিল ।
ওর সব জিনিসপত্রই ঘরের ভেতরে আছে । কিন্তু সপ্তাহখানেক হয়ে ছেলেটা হোটেলে ফিরে না এলে
ওরা পুলিশে জানায় আজ থেকে এক মাস আগে, ১ মে তে । সেই থেকে পুলিশ তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে,
অথচ ঘটনার কোন কিনারা করতে পারে নি ।” আবির চায়ের কাপে শেষ চুমুকটা দিয়ে বলল, “সবই
তো বুঝলাম, এটাও বুঝলাম তুই কি বুঝেছিস, এবার তুই কি বুঝিস নি সেটা একটু বলুন তো!”
অপু বলল, “ওই হোটেলের মালিক বলছেন এক ওয়েটার নাকি ঘটনার পরদিনই পাশের রুমেই থাকা এক
লোককে দরজা দিয়ে উঁকি দিতে দেখেছে । সেই লোকের ক্রেডিট কার্ড নাকি হাত ফসকে পড়ে দরজার
নিচ দিয়ে ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল । ওয়েটার পড়ে চাবি দিয়ে দরজা খুলে লোকটার ক্রেডিট কার্ড
বের করে দিয়েছে । আগের ঘটনার সাথে এই ঘটনার সম্পর্ক কি সেটাই বুঝতে পারছি না ।” “সিসিটিভি
ফুটেজে কিছু ধরা পড়েনি?” জিজ্ঞেস করলো আবির । অপু বলল, “না, বললাম না, নতুন বানাচ্ছে,
তাই এখনও সিসিক্যামেরা লাগান হয় নি ।” আবির কিছুক্ষণ ভাবল । তারপর বলল, “কবে যাওয়া
হচ্ছে তাহলে?” অপুর ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো । বলল, “যাক, যাচ্ছিস তাহলে!” আবির বলল,
“হ্যাঁ, ফেলুদা, ব্যোমকেশ বক্সী আর শার্লক হোমস থেকে অনুপ্রাণিত এই সালমান খান আবির
এতো সুন্দর একটা কেস কি করে হাতছাড়া করে বল তো!” অপু বলল, “কালই যাওয়া যাক?” আবির বলল,
“ঠিক আছে, আমি তাহলে বিকেলে কোম্পানির লোকদের সাথে মিটিং করে রাতে সব গুছিয়ে নেবো ।”
অপু বলল, “ঠিক আছে ।” অয়ন তখন আবিরকে বলল, “ভাই! আমিও যাবো!” আবির জিজ্ঞেস করলো, “কেন,
তুই যেয়ে কি করবি?” অয়ন বলল, “বাড়ে! আমার বুঝি একটু ঘুরতে ইচ্ছে করে না? আর একটু আগেই
তো ফেলুদার কথাটা বললে, ধরে নাও আমি তোমার তোপসে!” অপু তখন ইয়ার্কি করে বলল, “এ বাবা!
আমি কিন্তু গল্প টল্প লিখতে পারি না! তাই আমাকে আবার জটায়ু বানিয়ে ফেলো না!” সবাই হেসে
উঠলো । চয়নিকা তখন তিন বাটি পায়েস এনে আবির, অপু আর অয়নকে দিতে দিতে আবিরকে বলল, “যখন
বলছে, যাও না নিয়ে ।” আবির বলল, “ওকে নিয়ে যাওয়া যায়, কিন্তু ঝামেলা তো অন্য জায়গায়
।” চয়নিকা জিজ্ঞেস করলো, “কোন জায়গায়?”
আগামী
পর্বেঃ
আবির
জিজ্ঞেস করলো, “কি ব্যাপার, ছেলেকে ম্যানেজ করতে পারলে তাহলে?” চয়নিকা বলল, “ইয়েস মিস্টার!
আমি তো আপনার মতো বলদ!” আবির জানতে চাইলো, “তা মিস্ট্রেস! কি করে করলেন শুনি!”
“বিরিয়ানি!”
বলল চয়নিকা ।
“বিরিয়ানি!”
অবাক হয়ে বলে উঠলো আবির ।
……………………
আবির
অয়নকে বলল, “কিরে, সেই চকচকে টাকওয়ালা লোকটাকে খুঁজছিস?”
অয়ন
জিজ্ঞেস করলো, “কি অদ্ভুত না! লোকটা বোধ হয় তোমাকে চিনতে পেরেছিল যে তুমি দ্যা ইনভেস্টিগেশন
শো এর হোস্ট ছিলে ।” আবির বলল, “ঠিক ধরেছিস, তবে অবাক করা ব্যাপার কি জানিস? একটু পর
ওই লোক আমাদের কাছেই আসবেন ।”