পরিচয় ২৭৭
পরিচয়(পর্ব-২৭৭)(সিজন-৯ এর অন্তিম পর্ব)
আয়রা,
“ওকে!” বলে নিজের রুমে চলে গেলো । মোহন শেখ আবিরের কাছে যেয়ে আবিরের সামনে দু হাত তুলে
বলল, “আপনাকে কি করে ধন্যবাদ দেবো আমি বুঝতে পারছি না!” আবির বলল, “আরে না, এমনি বলতে
গেলে আমার কাজই এটা । আর তাছাড়া এক্ষেত্রে আমার ছেলেও কিন্তু আপনার মেয়ের মতো কিডন্যাপ
হয়েছিলো ।” মোহন শেখ বলল, “তবুও! আমি আপনাকে কিছু দিতে চাই!” আবির হালকা হেসে বলল,
“কি যে বলেন না, দোয়া করুন, সেটা আমার জন্য যেকোনো কিছুর থেকেও দামি হবে!” মোহন শেখ
বলল, “ঠিক আছে, তাহলে দুপুরের খাওয়া দাওয়াটা আমাদের সাথে করে যান!” আবির বলল, “সরি,
আমি এ কথাটাও রাখতে পারলাম না, আসলে আমার ছেলেটাও বহুদিন পর এলো তো, আমাদের বাসায়ও
ভালো ভালো রান্না করছে তাই আজ না, অন্য কোনদিন ।” মোহন শেষ বলল, “ঠিক আছে, এক কাপ চা?”
আবির বলল, “হ্যাঁ, সেটা খাওয়া যায় ।”
১২টার
কিছুক্ষণ আগেই চয়নিকার বাবার বাসায় পৌঁছে গেলো আবির । বাসায় ঢুকেই আবির গেলো রান্নাঘরে
। রান্নাবান্না হচ্ছে, সুগন্ধ বের হয়েছে । আবির দেখল আখি বসে আছে । আবির বলল, “আরে
আখি আপু! কখন এলে?” আখি বলল, “এইতো, এসেছি, ১০টার দিকেই । তোমার সাবিত ভাইও এসেছে ।”
আবির জিজ্ঞেস করলো, “ও তাই! কোথায় উনারা?” আখি বলল, “সাবিত তো ওর শ্বশুর, অয়ন আর নিশানের
সাথে ছাদে গেছে । বাসা এখন ফাকা । এখন আমি, আর জরিনাই আছি ।” জরিনা বলল, “আফারে আমি
বলছিলাম, যাইতে ছাদে । লিফটে কইরা যাইতে তো সমস্যা হইতো না । তা গেলো না ।” আবির বলল,
“ও ভালো কথা, রাস্তার মোড় থেকে তোমার বিরিয়ানির গন্ধ পাচ্ছিলাম জরিনা আপু! আজ তো মনে
হচ্ছে সেই খাওয়া দাওয়া হবে!” জরিনা বলল, “ইশ! কি যে কয়, আমার লজ্জা লাগে না?” আখি বলল,
“বা! বা! তোমার আবার লজ্জাও লাগে?” জরিনা বলল, “তা লাগে না, সেই আমার সোয়ামি আমার কানে
একখান জবা ফুল দিয়া কি কইছে জানেন?” আবির আর আঁখি একসাথে বলে উঠলো, “কি?” জরিনা বলল,
“আমারে কইছে, ও বিউটিপুল, তোমার লাইগা মুই আসমানের চান্দ হইয়া যামু, যেন আমি যেইহানেই
যাই, তোমারে দেখতে পাই!” আবির আর আঁখি দুজনেই জরিনার কথা শুনে আনন্দ আর জরিনাকে হালকা
ইয়ার্কির সহিত লজ্জা দিয়ে চেচিয়ে উঠলো, “ওওওও………!” জরিনা বলল, “ইশ! ক্যামনে আমারে লজ্জা
দেয়!” আবির তখন বলল, “ভালো কথা, বাসা ফাকা বলতে, চুনি কোথায়?” আঁখি বলল, “ওর মনটা খারাপ
ছিল দেখলাম । তাই তোমার বাসায় ফিরে গেছে । আমি শুনেছি আবির, ও কি বলেছে, তাই ওর হয়ে
আমি ক্ষমা চাইছি তোমার কাছে ।” আবির কিছু বলল না । কিন্তু চয়নিকার জন্য দুশ্চিন্তা
হল । মন খারাপ করে একাকী থাকলে যদি সাংঘাতিক কিছু ঘটিয়ে ফেলে!
বিছানায়
শুয়ে শুয়ে সাউন্ড বক্সে জ্ঞান শুনছিল চয়নিকা । “নির্ঘুম চোখ জানালায় আমি নিজেকে শোনাই
নিজের গান……………।” আবির দরজায় এসে দেখল, দরজা লাগাতে হয়তো ভুলে গেছে চয়নিকা । ভেতরে
ঢুকে চয়নিকার রুমে গেলো । দরজার ওপর পাশে মুখ করে শুয়ে ছিল বলে আবিরকে দেখতে পায় নি
চয়নিকা । আবির গানটা বন্ধ করে দিয়ে নিজে গান ধরলো, “ও আমার, বন্ধুগো! চিরসাথী…………।”
চয়নিকা আবিরের জ্ঞান শুনে উঠে বসলো । একবার আবিরের দিকে তাকাল, তারপর মাথা নিচু করলো
। আবির গান গাইতে গাইতে চয়নিকাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল । তারপর বলল, “কি হয়েছে? সবাই
ওখানে, আর তুমি এখানে একা কি করছো?” চয়নিকা মন খারাপ করে বলল, “আবির! আমি অনেক বড়ো
ভুল করে ফেলেছি । তোমাকে কথাটা বলা আমার উচিৎ হয় নি ।” আবির জিজ্ঞেস করলো, “কোন কথাটা?”
চয়নিকা বলল, “ওই যে, আমি যে বললাম…………” আবির “শশশ…।” আওয়াজ করে চয়নিকার ঠোটের সামনে
তর্জনী আঙ্গুল রেখে বলল, “ভুলে গেছি, মনে করিয়ে দিয়ো না ।” চয়নিকা বলল, “আমি সরি আবির!”
আবির বলল, “আরে! স্বামী স্ত্রীর মাঝে এরকম ঝগড়া ঝাটি হয়েই থাকে । এর জন্য মন খারাপের
কি আছে? চিল থাকো ।” চয়নিকার মন তবুও খারাপ । আবির বলল, “এখনও মন খারাপ করে থাকবে?”
চয়নিকার তবুও মন খারাপ । আবির বলল, “নাহ! শাঁকচুন্নির মুখটা হাসি ছাড়া মানাচ্ছে না!”
চয়নিকা এবার হাসি আর হালকা বিরক্তি নিয়ে বলল, “আবির! কি যে বলো না, ধ্যাত!” আবির বলল,
“যাক, হাসি ফুটেছে ।” চয়নিকা বলল, “চলো, ও বাড়িতে যাই ।” আবির বলল, “যাবো, তার আগে
চলো, একটু প্রেম করি ।” চয়নিকা জিজ্ঞেস করলো, “মানে?” আবির সাউন্ড বক্সে জ্ঞান ছাড়লো,
“আমি ডানা ছাড়া পাখি তোমার আশায়, আশায় থাকি, আমি……………………।” ছুয়ে দিলে মন গানটা ছাড়ল
আবির, আর সেই গানের তালে তালে বাসার মধ্যে একে অপরের কাছাকাছি এসে দুজনে নাচল । বহুদিন
পর এই চয়বির জুটি একত্র হয়েছে, অনেক বাধার পর আজ ওদের মাঝে ভালোবাসা এসেছে ।