পরিচয় ২৭৬
পরিচয়(পর্ব-২৭৬)(সিজন-৯)
গাড়ির
ভেতরে তাকিয়ে কি যেন দেখছে আর বলছে, “ল!.........মে!.........ল…………মে…………কাট……………কাট…………!”
রায়হান, “এই পাগলরে আইজকা মারাই লাগবো!” বলে এগিয়ে যেতে নিলে আবির বাধা দিলো । তারপর
আবির পাগলটার কাছে এগিয়ে গেলো । চেষ্টা করতে গাড়ির ভেতর তাকিয়ে কি দেখছে লোকটা তা খোজার
। গাড়ির ভেতরে দেখার মতো তেমন কিছু নেই, একটা লকেট ছাড়া! সেই লকেট যেটা আবির পেয়েছিলো
ইফাজের কাছে, সেই লকেট যেটা ছোটবেলা থেকে আবিরের গলায় ছিল । লোকটা বলছে ল, মে আর কাট
মে টা বাদ দিলে হয় লকাট যা প্রায় লকেট উচ্চারণের কাছাকাছি । আর মে, হ্যাঁ লকেটের ভেতর
যা আছে তার প্রথম শব্দ মে, মেমোরি কার্ড । কাট শব্দটা কিন্তু কার্ড উচ্চারণেরও কাছাকাছি
। আবির ভেতর থেকে লকেটটা বের করতেই লোকটা বলে উঠলো, “মে!......কাট!.........মে!.........কাট!”
লকেটটা খুলে আবির মেমোরি কার্ডটা বের করলো । লোকটা আরও খুশি হয়ে উঠলো । এতক্ষণ ও যেন
এটাই চাইছিল! রায়হান এগিয়ে এসে বলল, “আরে আবির! হুদাই কি করতেছো এই পাগলডার লগে?” আবির
বলল, “ভাই, উনি মনে হয় কিছু জানেন ।” আবির তখন মোবাইল থেকে রেকর্ডটা অন করে শোনালো
। লোকটা আরও খুশি হয়ে এমনভাবে মাথা নাড়তে লাগলো, যে লোকটা এটাই বোঝাতে চাইছিলো । লোকটা
বলে উঠলো, “জা……শির! সাখুরা!” আবির জিজ্ঞেস করলো, “এখানে যে দুজন কথা বলছে তাঁরা জাশির
আর সাখুরা?” জাশির ওপর নিচে মাথা নাড়ল । আবির জিজ্ঞেস করলো, “আর এই লকেট? এটা কি আপনার?”
লোকটা ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে বলল, “না! না!.........এট………এট………এটা নার্স……হোস………হোস……নে…………আরা!
নি……ক্লাস! হাস………পাটাল!” আবির চিনতে পারলো না । তারপর জিজ্ঞেস করলো, “আপনি কে?” লোকটা
বলল, “জ……জ……জাশির!” পাশ দিয়ে দুজন গ্রামবাসী হেটে যাচ্ছিলো । একজন মুখে সিগারেট নিয়ে
পাশের জনকে বলল, “গেদা আগুনডো দে ছি, এল্লা বিড়ি খাই ।” আগুন শব্দটা শুনতেই এই পাগল
অর্থাৎ জাশির “আগুন! আগুন!” বলে চেচাতে চেচাতে চলে গেলো সেখান থেকে । আবির বিড় বিড়
করে বলে উঠলো, “নিক্লাস হাসপাতাল! জাশির! সাখুরা! হোসনে আরা!” রায়হান বলল, “আইচ্ছা,
রওনা দে তাইলে, বেশি রাইত হইলে গাড়ি চালাইতে ইচ্ছা করবেনানে ।” আবির বলল, “জি ভাই,
ঠিকই বলেছেন ।” তারপর বিদায় নিয়ে আবির নিশান আর আয়রাকে নিয়ে রওনা হল ।
রাত
প্রায় ২টার দিকের কথা । আয়রা আর নিশান গাড়িতে ঘুমিয়ে পড়েছে । আবির তখন ঢাকার ভেতর ।
হঠাৎ একটা হাসপাতাল দেখে কিছুক্ষণের জন্য গাড়িটা থামাল । নাম নিউক্লিয়াস হাসপাতাল ।
নিক্লাস আর নিউক্লিয়াস, উচ্চারণ কিন্তু প্রায় একই! এই হাসপাতালের নাম আগেও শুনেছে,
যদিও তা বদনাম, তবে অনেকেই বলে তা নাকি ভুয়া । যাই হোক, আবির বাসার দিকে রওনা হল ।
৩টার
দিকে বাসায় পৌঁছল আবির বাসায় সবাই জেগে আছে । চয়নিকা, চয়নিকার বাবা, চয়নিকার ভাই অয়ন,
আর জরিনা । আবির নিশান আর আয়রাকে নিয়ে ঘরে ঢুকতেই চয়নিকা উঠে দাঁড়িয়ে খুশির সাথে ডেকে
উঠলো, “নিশান! আমার বাচ্চা!” বলে দুই হাত বাড়িয়ে দিলো । নিশান যেই মায়ের কাছে এগোতে
যাবে মায়ের কোলে ওঠার জন্য, এমন সময় আবির নিশানের হাত ধরে নিশানকে আটকালো । তারপর একরাশ
অভিমান নিয়ে আবির চয়নিকার দিকে তাকিয়ে বলল, “একবার বলো সেই কথাটা, যেটা আমাকে সেদিন
বলেছিলে, পারবে বলতে?” চয়নিকা মাথা নিচু করলো । নিশান জিজ্ঞেস করলো, “কিসের কথা বাবা?”
অয়ন বলতে যাচ্ছিলো, “জানিস! আপু আবির ভাইকে………………।” আবির থামিয়ে দিয়ে বলল, “কিছু না,
এটা আমার আর তোমার মায়ের মধ্যকার ব্যাপার । যাও, মায়ের কাছে যাও ।” নিশান চয়নিকার কাছে
গেলো । চয়নিকা নিশানকে কোলে নিয়ে আদর করলো, চুমু খেলো । আয়রাও সাথে ছিল । আবির অয়নকে
বলল, “অয়ন, ওকে একটু আজকের জন্য তোর আখি আপুর রুমে রেখে আয়, বেচারি সারারাত জেগেছে
।” অয়নের সাথে আয়রা গেলো । নিশানকে চয়নিকার বাবা আদর করলো, শিউলিও আদর করলো । অয়নও
আয়রাকে রেখে এসে আদর করলো নিশানকে । বলল, “সরি রে! ওইদিন তোর সাথে আমি অনেক খারাপ ব্যাবহার
করেছি!” নিশান বলল, “না ভাইয়া, আমিও ওইদিন তোমাকে অনেক ডিস্টার্ব করেছি!”
সকালে
আয়রাকে নিয়ে আয়রার বাবা, মোহন শেখের বাড়ি এলো আবির । বাড়িতে ঢোকার সময় কিছু মদের বোতল
নজরে পড়েছিল আবিরের । ভেতরে ঢুকে লোকটার রুমে গেলো । লোকটা তখন মাথায় হাত দিয়ে চিন্তিত
অবস্থায় বসে ছিল । আবির আয়রাকে নিঃশব্দে ইশারা করে বাবার কাছে যেতে বলল । আয়রা বাবার
সামনে যেয়ে দাঁড়ালো । যে-ই মুহূর্তে মোহন শেখ নিজের মেয়েকে দেখল, অমনি মেয়েকে জড়িয়ে
ধরে চুমু খাওয়া শুরু । আর বলতে লাগলো, “আর কোনদিন তোকে চোখের আড়াল হতে দেব না মা রে!
আর কোনদিন তোকে একা রাখবো না! আমি সবসময় তোর সাথে থাকবো!” আয়রা বলল, “হ্যাঁ, আমি তোমার
কথা বিশ্বাস করেছি, কারণ আমি দেখেছি, তুমি মদের বোতল ফেলে দিয়েছো ।” মোহন শেখ বলল,
“হ্যাঁ রে মা, আমি তোর কথা শুনেছি । এখন থেকে যখনই আমার মন খারাপ থাকবে, আমি তোর সাথে
আমার সব কথা শেয়ার করবো!” আয়রা জিজ্ঞেস করলো, “প্রমিস?” মোহন শেখ বলল, “পাক্কা প্রমিস!”
মোহন শেখ এরপর মেয়েকে বলল, “যাও, তুমি তোমার রুমে যাও, আমি একটু তোমার আবির আঙ্কেলের
সাথে কথা বলি ।” আয়রা, “ওকে!” বলে নিজের রুমে চলে গেলো ।
আগামী
পর্বেঃ
বাসায় ঢুকেই আবির গেলো রান্নাঘরে । আবির দেখল আখি বসে আছে । আবির বলল, “আরে আখি আপু! কখন এলে?” আখি বলল, “এইতো, এসেছি, ১০টার দিকেই । তোমার সাবিত ভাইও এসেছে । বাসা এখন ফাকা । এখন আমি, আর জরিনাই আছি ।” আবির তখন বলল, “ভালো কথা, বাসা ফাকা বলতে, চুনি কোথায়?” আঁখি বলল, “ওর মনটা খারাপ ছিল দেখলাম । তাই তোমার বাসায় ফিরে গেছে ।” । মন খারাপ করে একাকী থাকলে যদি সাংঘাতিক কিছু ঘটিয়ে ফেলে!