পরিচয় ২৭৪
পরিচয়(পর্ব-২৭৪)
মাঝে
বাচ্চারা না বুঝেই ওদের সাথে দৌড়তে লাগলো । সত্যি কথা বলতে ওরাও বুঝতে পারছে না সামনে
কারা, তাই ওরাও প্রকাশের মতো ভুত ভেবে দৌড়তে লাগলো । প্রকাশ যদিও বলেছে, এটা পুলিশ,
কিন্তু ওরা আর কেউ প্রকাশের কথা না বুঝতে পারলেও দৌড়তে দৌড়তে নিশান আয়রাকে বলল, “আচ্ছা,
এই লাক্সমান লোকটা বলল না সামনে পুলিশ!” আয়রা বলল, “কি জানি, আমি তো শুনতে পাই নি!”
নিশান বলল, “পুলিশ হলে আমরা কেন দৌড়চ্ছি?” আয়রা বলল, “পুলিশ না হয়ে যদি অন্য কোন খারাপ
লোক হয়!” নিশান আর আয়রা বিমলের কাছাকাছি হওয়ায় বিমল ওদের বলল, “আরে, উও লোক হামসে ভি
খারাপ । তুম জানা চাহতেহো তো যা সাকতেহো । হাম তো তমাদের তাও বাচিয়ে রাখি, ওরা তো মেরে
হামারি শরীর কা অঙ্গ বেচ দেয় ।” নিশান আর কিছু বলল না । বিমল মনে মনে বলল, “ইসকি মনের
সন্দেহ হাটানেকা এটাই এক রাস্তা ছিল! যাক মুঝে ইয়ে ইয়াকিন করে নিয়েছে ।” পেছনের পুলিশ
বেশ কয়েকবার গুলি চালালেও গুলি একটাও কারো গায়ে লাগলো না । এদিকে পেছনে থাকা প্রকাশ
আর লাক্সমানও বেশ কয়েকটা গুলি চালানোর পর থেমে গেলো । লাক্সমান বলে উঠলো, “মেরা সাব
গলি খাতাম!” প্রকাশ বলল, “মেরা ভি! বিমল! তেরে পাস পিস্তল হেয়?” বিমল বলল, “নেহি!” নিশান এবার সবাই দাঁড়াতে বলতেই
দাঁড়িয়ে গেলো আকাশ, আয়রা, মুন্নি, স্বর্ণা আর অন্তর । নিশান বলল, “এখন আর ভয় নেই, এদের
গুলি শেষ, এই বিমল লোকটা ভেবেছিলো আমাকে মিথ্যা বোকা বানাবে! হেহ! আমি আগেই বুঝেছি
উনারা পুলিশ, কিন্তু আমাদের গুলি করতে পারে ভয়ে আমি বলিনি ।” এমন সময় বিমলের পিছে থেকে
আরেকটা টর্চের আলো দেখতে পেলো বাকি সব বাচ্চারা, প্রকাশ, লাক্সমান আর ইন্ডিয়ার পুলিশরা
। সেই আলোর মধ্য থেকে এক লোক দৌড়ে এসে বিমলের মাথায় একটা বন্দুক ধরল । পেছন দিকে টর্চের
আলো থাকায় লোকটাকে বোঝাই যাচ্ছে না । লোকটা বলল, “ছুরিটা ফেলে দে!” বিমল আগে টের পায়
নি কে আসছে । তাই হঠাৎ অপ্রস্তুত হয়ে ফেলে দিলো ছুরি । কণ্ঠটা চিনতে পারলো নিশান ।
বলে উঠলো, “বাবা!” বিমলকে সরিয়ে নিশানকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলো আবির । বলল, “ঠিক আছিস
তুই?” নিশান বলল, “একদম! আমি না তোমার ছেলে, তাহলে আমি তো ঠিক থাকবোই!” নিশানের কথা
শুনে আবিরের ভালো লাগার কথা, কিন্তু সে সময় চয়নিকার সেদিনের সেই কথাটা মনে পড়ে বুকটা
ছ্যাঁত করে উঠলো । “ভুলে যেও না, ও কিন্তু তোমার সন্তান না! ও আমার আর রাজের…………।”
যাই হোক, তবু ছেলের সামনে খুশি হবার অভিনয় করে জোর করে ঠোঁটে হাসি ফোটাল । এদিকে ইন্ডিয়ার
পুলিশ তিন মাস্তানকে ধরে ফেলেছে । বাংলাদেশের ইনস্পেক্টর মুরশিদ এগিয়ে গেলো ইন্ডিয়ার
ইন্সপেক্টরের কাছে । তারপর বলল, “থাঙ্কস এ লট! আপনারা আমাদের অনেক সাহায্য করেছেন!”
ইন্ডিয়ার ইনস্পেক্টর বলল, “ধন্যবাদ আপনাদেরও প্রাপ্য । আপনাদের জন্য আমরা এরকম একটা
খারাপ চক্রকে ধরতে পেরেছি । আপনারা আপনার দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মদের নিয়ে যান, আর আমরা
আমাদের দেশের এ প্রজন্মের জানোয়ারদের নিয়ে যাই!” ইনস্পেক্টর মুরশিদ আবারও লোকটাকে ধন্যবাদ
জানিয়ে বিদায় নিলো । এদিকে নিশান সবার সাথে আবিরের পরিচয় করিয়ে দিলো । আবির আয়রাকে
বলল, “তোমার বাবার সাথে আমার কথা হয়েছে । তিনি অনেক কষ্টে আছেন তোমার জন্য ।” আবিরের
কথা শুনে আয়রা বলল, “নিশ্চয় আমার জন্য কষ্টে বাবা বেশি নেশা করছে, তাই না?” আবির জবাব
দিতে পারল না । নিশান বলল, “জানো বাবা, আয়রাও আমার মতো বাড়ি থেকে রাগ করে বেড়িয়ে পরেছে
।” আবির অবাক হয়ে নিশানের দিকে তাকাল । ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, “তোর মতো মানে! তুই
রাগ করে বাড়ি থেকে বেড়িয়েছিস!” নিশান একটু ইতস্তত বোধ করলো হুট করে মুখ ফসকে কথাটা
বলে দেয়ার জন্য । আবির আবার জিজ্ঞেস করলো, “কিরে, কেন রাগ করে বেড়িয়েছিলি?” নিশান কি
জবাব দেবে ভাবতে লাগলো, কিন্তু বেশিক্ষণ আর ভাবতে হল না । কারণ ইনস্পেক্টর মুরশিদ বলল,
“আবির ভাই, চলুন, বেরোতে হবে তাড়াতাড়ি । অনেকটা পথ আবার হাঁটতে হবে । তারপর আবার এই
সুড়ঙ্গ ভরাট করে দিতে হবে ।” আবির উঠে দাঁড়ালো । সবাই একসাথে সুড়ঙ্গ দিয়ে বেড়িয়ে আসার
জন্য রওনা হল । প্রায় ২ ঘণ্টা লাগলো আবিরের উঠে আসতে । সুড়ঙ্গ দিয়ে উঠতেই দেখল, দূরে
রায়হান ভাই, রফিক আর কলিমা আপু । আবির দূর থেকেই রফিককে চিনতে পেরে ইনস্পেক্টর মুরশিদকে
বলল, “স্যার, আপনি ধীরে ধীরে ওই হলুদ শার্ট পড়া ছেলেটার কাছে যাবেন, স্বাভাবিক ভাবেই
হেটে হেটে । তারপর হুট করে ওকে গ্রেফতার করবেন ।” রফিকের গায়ে হলুদ শার্ট ছিল, সেটা
দেখেই বলল আবির । ইনস্পেক্টর মুরশিদ জিজ্ঞেস করলো, “কেন?”
আগামী
পর্বেঃ
হুট
করে এরই মধ্যে হঠাৎ ইনস্পেক্টর মুরশিদ রফিককে ধরে হাতে হাতখরা পড়িয়ে দিলো । রফিক বলে
উঠলো, “আরে! কি করতাছেন! আমারে ধরেন ক্যান!” রায়হানও অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “আরে!
আপনে ওরে অ্যারেস্ট করলেন ক্যান! আবির! তুই কিছু ক!” আবির রায়হানের কথার জবাব না দিয়ে
রফিককে বলল, “হুট করে একজন অটো ড্রাইভার বাস ড্রাইভার হয়ে গেলো, আবার হুট করে বাস চালানো
ছেড়ে বাজারে ব্যাবসা করা শুরু করলো? কারণটা কি?”