0 %

Thanks a lot for being with us!
We are re-constructing our website!
Sorry for this temporary inconvenience
We are coming to you with a fresh look and design from 1 January 2022!
Till then! Stay connected!

কালো সাহাবী


ইসলামিক গল্প
কালো সাহাবী

রাসূল (সাঃ)-এর সাহাবীদের মধ্যে সবচেয়ে অখ্যাতদের একজন তিনি। মুসলিমদের অনেকেই তাঁর কথা হয়তো কখনো শোনেইনি। তাঁকে ডাকা হতো 'জুলাইবিব' নামে। জুলাইবিব আসলে কোনো নাম নয়। আরবিতে এই শব্দের অর্থ ‘ক্ষুদ্র পূর্ণতাপ্রাপ্ত’। এই নাম দিয়ে মূলত জুলাইবিবের বামনতাকে বোঝানো হতো, কেননা তিনি ছিলেন উচ্চতায় অনেক ছোট।
এছাড়া তাকে অনেকে ‘দামিম’ বলেও ডাকত, যার অর্থ কুশ্রী, বিকৃত অথবা দেখতে বিরক্তিকর। যে সমাজে তিনি বাস করতেন, সেখানে তার প্রকৃত নাম-বংশ পরিচয় কেউ জানত না। তিনি যে কোন গোত্রের ছিলেন, তাও সবার অজানা ছিল। তৎকালীন সমাজে এটা ছিল এক চরম অসম্মানের বিষয়। তিনি কোনো বিপদে কারও সাহায্য পাওয়ার কথা চিন্তাও করতে পারতেন না, কেননা সেই সমাজে কাউকে গুরুত্ব দেওয়া হতো তার বংশ পরিচয়ের ভিত্তিতে।
মহানবী (সা.) এর নবুয়্যতের শুরুর দিকে তিনি ছিলেন একজন আনসার, যার একমাত্র পরিচয় ছিল তিনি একজন আরব। খুব সম্ভবত তিনি ছিলেন মদিনা সীমান্ত এলাকার কোনো ক্ষুদ্র গোত্রের সদস্য, যিনি কিনা আনসারদের শহরে স্থানান্তরিত হয়েছেন, অথবা তিনি আনসারদেরই একজন। সেই সমাজে অনেকেই তাকে নিয়ে হাসি তামাশা করত, এমনকি আসলাম গোত্রের আবু বারযাহ নামে এক ব্যক্তি তার বাড়িতে জুলাইবিবের প্রবেশ পর্যন্ত নিষিদ্ধ করেছিলেন। কোনো মেয়ে জুলাইবিবকে বিয়ে করার কথা চিন্তাও করত না। সেই সমাজের মানুষের কাছে তিনি সামান্য সাহায্য, সহানুভূতিও পেতেন না।
কিন্তু মহানবী (সা.) এর দৃষ্টিতে জুলাইবিবের অবস্থান ছিল অনেক ওপরে। তিনি তার এই অনুগত সাহাবীর প্রয়োজন, আবেগ, ভাললাগা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। তিনি জুলাইবিবের কথা চিন্তা করে একদিন এক আনসারের কাছে গিয়ে বললেন, “আমি তোমার মেয়েকে চাই, বিয়ের জন্য।” আনসার লোকটি খুবই খুশি হলেন এবং বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল (সা.), এতো খুবই দারুণ ব্যাপার।”। রাসূল (সা.) বললেন, “আমি ওকে নিজের জন্য চাই না”। ওই লোকটি কিছুটা হতাশ হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “হে আল্লাহর রাসূল (সা.), তাহলে কার জন্য?” “জুলাইবিবের জন্য”, রাসূল (সা.) উত্তর দিলেন। এ কথা শুনে আনসার মনে একটা ধাক্কা খেলেন এবং নিচু গলায় বললেন, “আমি এ ব্যাপারে মেয়ের মায়ের সাথে আলোচনা করব”। এই বলে লোকটি তার স্ত্রীর কাছে চলে গেলেন এবং সব খুলে বললেন। তার স্ত্রীও তার মতই জুলাইবিবের সাথে মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব শুনে স্তব্ধ হয়ে বললেন, “জুলাইবিবের সাথে?! না, কখনোই জুলাইবিবের সাথে না! নাহ, আল্লাহর শপথ, আমরা আমাদের মেয়েকে তার (জুলাইবিবের) সাথে বিয়ে দেব না”। তখন সেই আনসার তার স্ত্রীর অমতের কথা রাসূলকে (সা.) জানাতে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলেন, কিন্তু তার মেয়ে যিনি কিনা আড়াল থেকে সব শুনছিলেন, এসে জিজ্ঞেস করলেন, “কে তোমাদের আমাকে বিয়ে দিতে বলেছেন?” উত্তরে তার মা তাকে বললেন, রাসূল (সা.) তাকে জুলাইবিবের সাথে বিয়ে দিতে অনুরোধ করেছেন।
যখন মেয়েটি শুনলেন যে প্রস্তাবটি রাসূল (সা.) এর কাছ থেকে এসেছে এবং তার মা সেটা প্রত্যাখ্যান করছেন, তিনি অবিচল হয়ে বললেন, “মা! তুমি কি জানো না একজন মুমিনের পক্ষে উচিত নয় যে যখন আল্লাহ ও তার রাসুল কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তখন সে ব্যাপারে তাদের কোনো মতামত থাকে? তোমরা কি আল্লাহর রাসূল (সা.) এর অনুরোধ অমান্য করছ? কত উন্নত জুলাইবিবের মর্যাদা যে, আল্লাহর রাসূল নিজেই তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের মেয়ের ব্যাপারে প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন। তোমরা কি জানো না যে, ফেরেশতারা রাসূলের আশেকের পায়ের ধূলাকেও ঈর্ষা করে? আমাকে রাসূলুল্লাহর (সাঃ) কাছে নিয়ে যাও, তিনি নিশ্চয়ই আমার জন্য ধ্বংস ডেকে আনবেন না”। তিনি আরও বললেন, “আমি খুবই খুশি মনে নিজেকে নিবেদন করব তাতে, যাতে আল্লাহর রাসূল (সা.) আমার জন্য ভালো মনে করেন”।
আল্লাহর রাসূল (সা.) বিয়ের ব্যাপারে মেয়েটির প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে শুনলেন এবং তার সহজ ও সুন্দর জীবনের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন।
বলা হয়ে থাকে, তখন আনসারদের স্ত্রীদের মধ্যে তাঁর (ওই মেয়ে) চেয়ে বেশি উপযুক্ত স্ত্রী আর কেউ ছিল না। বিয়ের পর জুলাইবিবের শাহাদাতের আগ পর্যন্ত তাঁরা এক সাথেই ছিলেন।
একদিন এক অভিযানে যাওয়ার প্রস্তুতিকালে জুলাইবিবের শ্বশুর তাঁকে বললেনঃ "শোনো জুলাইবিব। এটাতো কোনো আবশ্যিক জেহাদ নয়। এটা কেবলই একটা অভিযান। তোমাদেরতো মাত্র বিয়ে হলো, তাই তুমি বরং তোমার স্ত্রীর সাথেই সময় কাটাও।"
জুলাইবিব, যিনি কিনা সারাজীবন দুঃখ-গঞ্জনা সয়ে এসে অবশেষে একজন ভালোবাসার মানুষকে পেয়েছেন, তিনি সেই সুখময় নবজীবনের কথা না ভেবেই দ্বিধাহীন চিত্তে শ্বশুরমশাইকে জবাব দিলেনঃ "আব্বাজান! একি আশ্চর্যের কথা বললেন আপনি! আল্লাহর রাসূল (সাঃ) যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুর মোকাবিলা করবেন আর আমি স্ত্রীর সাথে সময় কাটাবো? তিনি এতো কষ্ট করবেন আর আমি নিজের জানমাল কোরবানি না করে আরামসে ঘরে বসে থাকবো?"
এই বলে জুলাইবিব রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-র সাথে সমর অভিযানে বের হয়ে যান। সেই অভিযানে তুমুল রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয় শত্রুপক্ষের সাথে। যুদ্ধশেষে রাসূল (সাঃ) সাহাবীদের আদেশ দিলেন তাঁদের পরিবার-পরিজনদের মধ্যে কাকে কাকে পাওয়া যাচ্ছেনা খোঁজ নিয়ে দেখতে। সকলেই যার যার হতাহত আত্মীয়-স্বজনদের খুঁজে বের করে নবীজীর কাছে আসলো। তখন নবীজী অশ্রুসিক্ত নয়নে বললেন,"কিন্তু আমি যে আমার প্রাণপ্রিয় জুলাইবিবকে পাচ্ছিনা। যাও! তাকে খুঁজে বের করো।" তাঁরা জুলাইবিবের ছিন্নবিচ্ছিন্ন ছোটখাটো দেহটাকে সাতজন শত্রুসৈন্যের লাশের পাশে খুঁজে পেল যাদের সে কতল করেছে। রাসূল (সাঃ) কবর খুঁড়তে বললেন। জুলাইবিবের দেহটাকে নবীজি নিজের হাতে তুলে নিলেন, তারপর বললেনঃ "হে আল্লাহ! আমি তার হতে, সে আমা হতে।" তিনি এই একই কথা তিনবার বললেন। অনতিদূরে সাহাবীরা দাঁড়িয়ে অঝোরনয়নে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছিল আর বলছিলঃ "আমাদের পিতামাতা তোমার জন্য কোরবান হউক হে জুলাইবিব, কত উচ্চ তোমার মর্যাদা!" কিছুক্ষণ পর রাসূল (সাঃ) হাসলেন এবং সাহাবিরা কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি দেখছি আল্লাহ জান্নাতে জুলাইবিবকে একটি ঘর দিলেন এবং সেখানে একজন হুরাইন তার সামনে হাটাহাটি করছে ।“ (লেখাঃ সংগৃহীত)