সাইফুল্লাহ
ইসলামিক গল্প (পর্ব-৯)
সাইফুল্লাহ
মৃত্যুশয্যায় সাহাবী খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ)। দূর্বল কন্ঠে তাঁর স্ত্রীকে বিছানায় পাশে বসতে বললেন। খুব প্রয়োজনীয় একটি প্রশ্নের উত্তর জানা যে বাকি রয়ে গেছে! এই সেই মহাবীর খালিদ যিনি সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সেনাপ্রধান। যার নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী ১০০ টিরও বেশি যুদ্ধে অংশ নিয়েছে এবং কোনোটাতেই পরাজয় বরণ করেনি। তার রণকৌশল আজও বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনীতে প্রশিক্ষণের সময় পাঠ্য হিসাবে শিখানো হয়! তাঁর নামে মুসলিম দেশগুলোতে আজও অনেক ব্রিগেড, যুদ্ধবিমান ও নৌযানের নামকরণ করা হয়।
এই সেই খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) যাকে স্বয়ং রাসূল মুহাম্মদ (সা.) ‘সাইফুল্লাহ’ উপাধি দিয়েছিলেন, যার মানে আল্লাহর তরবারি। এই সেই খালিদ যিনি মুসলিম বাহিনীর সেনাপ্রধান হিসেবে তুখোড় বিজয়ী আর ক্যারিয়ারের তুঙ্গে থাকা অবস্থায় তৎকালীন খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর নির্দেশে বিনা বাক্য ব্যয়ে সেনাপ্রধানের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে সাধারণ সৈনিক হিসেবে লড়াই করা শুরু করেন। নেতার নেতৃত্ব মানতে হবে, এতো ইসলামে ভীষণ জোড় দিয়ে বলা। নেতার নির্দেশের প্রতি আনুগত্য একজন সত্যিকার বীরের মহত্ব।
স্ত্রীকে খালিদ (রাঃ) বললেন, ‘প্রিয়তমা স্ত্রী, আমি বেশিক্ষণ বাঁচবো বলে মনে হচ্ছেনা। একটা আফসোস এই বিদায় বেলায় ভীষণ কষ্ট দিচ্ছে, তুমি কি উত্তর দিতে পারো’? খালিদ বিন (রাঃ) কে স্ত্রী বিনয়ের সাথে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে মহাবীর, কি প্রশ্ন আপনার মনে’? ৫৭ বছরের খালিদ বললেন, ‘তুমি আমার সারাটা শরীর পরীক্ষা করে দেখো, এমন কোনো স্থান কি আমার শরীরে আছে যেখানে শত্রুর তরবারীর আঘাত নেই’? দীর্ঘক্ষণ পরীক্ষা করে স্ত্রী উত্তর দিলেন, ‘না, আল্লাহর রাস্তায় আপনি এতো বেশি যুদ্ধ করেছেন যে শত্রুর আঘাত আপনার সারাটা শরীরেই আছে’। খালিদ বিন ওয়ালিদ(রাঃ) তখন দুঃখ নিয়ে বললেন, ‘আল্লাহর কসম, প্রতিটা জিহাদে আমার নিয়ত থাকতো যেনো আমি ময়দানে শত্রুর আঘাতে মারা যাই, তাতে যেনো শহীদের মর্যাদা পাই। কিন্তু আফসোস, দেখো আজ যুদ্ধের ময়দানে মৃত্যু না হয়ে আমার মৃত্যু হচ্ছে আমারই বিছানায়! আমায় কি আল্লাহ শহীদদের মাঝে রাখতে চাননা’? স্বামীর আফসোস দেখে স্ত্রী কিছুক্ষণ মৌন রইলেন। এরপর করলেন সেই বিখ্যাত উক্তি, ‘আপনার নাম স্বয়ং রাসূল (সা.) রেখেছিলেন ‘সাইফুল্লাহ’- এমন কোনো তরবারী কি দুনিয়ায় আছে যেটা আল্লাহর তরবারীর মোকাবেলা করতে পারে? তাইতো ময়দানে আপনার মৃত্যু হয়নি কারন আল্লাহ তাঁর তরবারী মাটিতে লুটিয়ে যেতে দেননি’। ভীষণ খুশি হলেন খালিদ বিন ওয়ালিদ(রাঃ), বুঝতে পারলেন আল্লাহর ইচ্ছা এবং কিছুক্ষণ পরে শান্তিতে বেহেস্তের রাস্তায় চলে গেলেন।
আমরা অনেকেই সম্রাট জুলিয়াস সিজারের গুনগান করি, আলেকজান্ডারের ঘটনা মন দিয়ে শুনি, নেপোলিয়ানকে শ্রেষ্ঠ বলি। অথচ নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে গবেষণা করলে সবাই একবাক্যে স্বীকার করবে যে জেনারেল খালিদ বিন ওয়ালিদের নেতৃত্বগুণ, বীরত্ব আর রণকৌশলের সামনে অন্য যেকোনো সেনানায়কই তুচ্ছ। খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) মূলত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ যোদ্ধা।
(লেখা এবং ছবি সংগৃহীত)
ছবিঃ হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) এর যুদ্ধে ব্যাবহিত পোশাক
সাইফুল্লাহ
মৃত্যুশয্যায় সাহাবী খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ)। দূর্বল কন্ঠে তাঁর স্ত্রীকে বিছানায় পাশে বসতে বললেন। খুব প্রয়োজনীয় একটি প্রশ্নের উত্তর জানা যে বাকি রয়ে গেছে! এই সেই মহাবীর খালিদ যিনি সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সেনাপ্রধান। যার নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী ১০০ টিরও বেশি যুদ্ধে অংশ নিয়েছে এবং কোনোটাতেই পরাজয় বরণ করেনি। তার রণকৌশল আজও বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনীতে প্রশিক্ষণের সময় পাঠ্য হিসাবে শিখানো হয়! তাঁর নামে মুসলিম দেশগুলোতে আজও অনেক ব্রিগেড, যুদ্ধবিমান ও নৌযানের নামকরণ করা হয়।
এই সেই খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) যাকে স্বয়ং রাসূল মুহাম্মদ (সা.) ‘সাইফুল্লাহ’ উপাধি দিয়েছিলেন, যার মানে আল্লাহর তরবারি। এই সেই খালিদ যিনি মুসলিম বাহিনীর সেনাপ্রধান হিসেবে তুখোড় বিজয়ী আর ক্যারিয়ারের তুঙ্গে থাকা অবস্থায় তৎকালীন খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর নির্দেশে বিনা বাক্য ব্যয়ে সেনাপ্রধানের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে সাধারণ সৈনিক হিসেবে লড়াই করা শুরু করেন। নেতার নেতৃত্ব মানতে হবে, এতো ইসলামে ভীষণ জোড় দিয়ে বলা। নেতার নির্দেশের প্রতি আনুগত্য একজন সত্যিকার বীরের মহত্ব।
স্ত্রীকে খালিদ (রাঃ) বললেন, ‘প্রিয়তমা স্ত্রী, আমি বেশিক্ষণ বাঁচবো বলে মনে হচ্ছেনা। একটা আফসোস এই বিদায় বেলায় ভীষণ কষ্ট দিচ্ছে, তুমি কি উত্তর দিতে পারো’? খালিদ বিন (রাঃ) কে স্ত্রী বিনয়ের সাথে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে মহাবীর, কি প্রশ্ন আপনার মনে’? ৫৭ বছরের খালিদ বললেন, ‘তুমি আমার সারাটা শরীর পরীক্ষা করে দেখো, এমন কোনো স্থান কি আমার শরীরে আছে যেখানে শত্রুর তরবারীর আঘাত নেই’? দীর্ঘক্ষণ পরীক্ষা করে স্ত্রী উত্তর দিলেন, ‘না, আল্লাহর রাস্তায় আপনি এতো বেশি যুদ্ধ করেছেন যে শত্রুর আঘাত আপনার সারাটা শরীরেই আছে’। খালিদ বিন ওয়ালিদ(রাঃ) তখন দুঃখ নিয়ে বললেন, ‘আল্লাহর কসম, প্রতিটা জিহাদে আমার নিয়ত থাকতো যেনো আমি ময়দানে শত্রুর আঘাতে মারা যাই, তাতে যেনো শহীদের মর্যাদা পাই। কিন্তু আফসোস, দেখো আজ যুদ্ধের ময়দানে মৃত্যু না হয়ে আমার মৃত্যু হচ্ছে আমারই বিছানায়! আমায় কি আল্লাহ শহীদদের মাঝে রাখতে চাননা’? স্বামীর আফসোস দেখে স্ত্রী কিছুক্ষণ মৌন রইলেন। এরপর করলেন সেই বিখ্যাত উক্তি, ‘আপনার নাম স্বয়ং রাসূল (সা.) রেখেছিলেন ‘সাইফুল্লাহ’- এমন কোনো তরবারী কি দুনিয়ায় আছে যেটা আল্লাহর তরবারীর মোকাবেলা করতে পারে? তাইতো ময়দানে আপনার মৃত্যু হয়নি কারন আল্লাহ তাঁর তরবারী মাটিতে লুটিয়ে যেতে দেননি’। ভীষণ খুশি হলেন খালিদ বিন ওয়ালিদ(রাঃ), বুঝতে পারলেন আল্লাহর ইচ্ছা এবং কিছুক্ষণ পরে শান্তিতে বেহেস্তের রাস্তায় চলে গেলেন।
আমরা অনেকেই সম্রাট জুলিয়াস সিজারের গুনগান করি, আলেকজান্ডারের ঘটনা মন দিয়ে শুনি, নেপোলিয়ানকে শ্রেষ্ঠ বলি। অথচ নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে গবেষণা করলে সবাই একবাক্যে স্বীকার করবে যে জেনারেল খালিদ বিন ওয়ালিদের নেতৃত্বগুণ, বীরত্ব আর রণকৌশলের সামনে অন্য যেকোনো সেনানায়কই তুচ্ছ। খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) মূলত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ যোদ্ধা।
(লেখা এবং ছবি সংগৃহীত)
ছবিঃ হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) এর যুদ্ধে ব্যাবহিত পোশাক