পরিচয় ২৭৩
পরিচয়(পর্ব-২৭৩)
পাশেই
একটা কাপড়ের টুকরো নজরে এলো । সেটায় লেখা, “Nishaaner Nishaan 1” আবির মনের অজান্তেই
বিড়বিড় করে বলে উঠলো, “নিশান! আমার নিশান!” পাশে থাকা তিনজন পালাতে চেষ্টা করতে নিলো
আবিরের এই অমনোযোগিতার সুযোগ নিয়ে । কিন্তু আবির নিজের দুর্বলতাকে আর পাত্তা না দিয়ে
তিনজনের দিকেই গুলি ছুঁড়ে মারল । একজন একই পায়ে আবার লাগলো গুলি । সবাই ভয়ে তটস্থ হয়ে
পড়লো । আবির এবার মোবাইল বের করে কল করলো অপুকে । “হ্যালো! এক্ষুনি আপনি এই বিষ্ণুপুর
থানার পুলিশকে বলুন বিষ্ণুপুর জঙ্গলে আসতে । আমি তিন মাস্তানকে ধরেছি । কোনোরকমে গুলি
তাক করে ওদের ধরে আছি । আমি জানি না আমি কতক্ষণ সেইফ থাকবো আরেকটা কথা, পারলে ভারতে
যোগাযোগ করুন, নাথ মন্দির ভারতের যে এলাকায়, সেখানকার পুলিশের সাথে । সেখানে বোধহয়
কোন সুড়ঙ্গ আছে যেটা বাংলাদেশের এই বিষ্ণুপুর থেকেই গিয়েছে । আমার নিশান হয় সেই এলাকায়
নয় এই এলাকায় কোথাও একটা আছে!” কিছুক্ষণ থেমে আবির বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে ।” বলে কল কেটে
দিলো আবির । এরপর মাস্তানদের কাছে বেশ জোর জবরদস্তী করে কথা বের করার চেষ্টা করলো আবির
। কিন্তু এরা একটা কোথাও বলল না । আরেকজনের ঠিক হাত বরাবর গুলি করলো আবির । ও আগেই
বুঝেছে এরা সত্যি বলছে এরা কিছু জানে না, তবু ভয় দেখানোর জন্য এটা করেছে আবির । কিছুক্ষণের
মধ্যে জঙ্গলে এলো পুলিশ । মাস্তানদের গ্রেফতার করে আবিরকে ইনস্পেক্টর মুরশিদ আবিরের
কাছে এসে বলল, “আপনি অনেক বড় একটা কাজ করেছেন!” আবির হালকা রাগ দেখিয়ে মুখের ওপর বলে
দিলো, “যেটা আপনারা এই এলাকার পুলিশ হয়েও করতে পারেন নি, তাই তো?” ইনস্পেক্টর মুরশিদ
মাথা নিচু করে বলল, “সরি ।” আবির বলল, “আপনি প্লিজ আমার ছেলেকে খুজে দিন! আমার ছেলে
এখানেই অথবা ওই নাথ মন্দিরের আশেপাশের এলাকায়েই আছে! আমাকে সাহায্য করুন ।” ইনস্পেক্টর
মুরশিদ বলল, “জি অবশ্যই! যে দায়িত্ব আমি পালন করতে পারিনি, সেখানে এসে আরেকটা দায়িত্ব
আমি যথাযথভাবে পালন করবো । অপু স্যার বললেন নাথ মন্দির নাকি বর্ডারের ওপাশেই আছে ।
আমি কিছু পুলিশ পাঠিয়েছি বিএসএফের সাথে যোগাযোগ করতে ।” আবির বলল, “থাঙ্ক ইউ সো মাচ
স্যার!” মুরশিদ বলল, “আপনি সাহস রাখুন!” এমন সময় এক কন্সটেবল অনেকটা দূর থেকে বলল,
“স্যার! এইখানে একটা কবরস্থান মতো মনে হচ্ছে! আর একটা কাপড় পাইছি! এতে লিখা, নিশানের
নিশান টু ।” আবির কথা শুনে অবাক হল । বিড়বিড় করে বলে উঠলো, “নিশানের নিশান টু!” তারপর
ইনস্পেক্টর মুরশিদকে বলল, “স্যার, নিশান আমার ছেলের নাম, ও নিশ্চয়ই বুদ্ধি করে এটা
করেছে । এখানে একটা সুড়ঙ্গ আছে, এখানে একটা কাপড় পেয়েছি! আমার মনে হয় ওখানে আরেকটা সুড়ঙ্গ আছে!” ইনস্পেক্টর মুরশিদ বলল, “তাই! চলুন তো, দেখি ।” সবাই মিলে গেলো সেখানে ।
অনেক খোঁজাখুঁজি করা হল । অবশেষে পাওয়া গেলো আরেকটা সুড়ঙ্গ । এই সুড়ঙ্গ ইতোমধ্যে কিছু
পুলিশ ঢুকে দেখে এসেছে । ওটাতেও ঢুকেছে । কিছুদুর যেয়ে আবার ফিরে এসে বলল, “স্যার,
এইটাই মনে হয় ভারতে যাওয়ার সুড়ঙ্গ, আগের সুরঙ্গের মতো এই সুড়ঙ্গ সীমিত না, মনে হয় এইটা
অনেক লম্বা!” ইনস্পেক্টর মুরশিদ বলল, “ওকে, টর্চ নিয়ে এসেছো তোমরা?” একজন কনস্টেবল
বলল, “জি স্যার, সুরঙ্গের কথা শুনে আমরা এনেছি টর্চ ।” ইনস্পেক্টর মুরশিদ কিছু একটা
বলতে যাচ্ছিলেন, এমন সময় উনার মোবাইলে একটা কল এলো । কল ধরে বললেন, “হ্যালো!.........কি!.........ও
মাই গড!.........আচ্ছা!” বলে কল কেটে আবিরকে বলল, “আপনার সন্দেহ একদম ঠিক, ওই মন্দিরে
একটা স্বরসতীর মূর্তি রয়েছে, সেই মূর্তির নিচেই এই সুরঙ্গের শেষ মাথা । ওখানকার পুরোহিতও
এই চক্রের সাথে জরিত । তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে । সেই মন্দিরের মূর্তি সরিয়ে সুড়ঙ্গ
থেকে লোক তুলতে সাহায্য করত । সে জানিয়েছে………” থেমে গেলো ইনস্পেক্টর মুরশিদ । আবির
জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে ইনস্পেক্টর? কি জানিয়েছে?” ইনস্পেক্টর মুরশিদ বলল, “এখন সুরঙ্গের
ভেতর কিছু বাচ্চা সহ এই চক্রের কিছু লোক আছে । তারা এখন ইন্ডিয়ার পথেই আছে । সুড়ঙ্গটা
একটা আকা বাকা করে কাটা । তাই পুরো সুড়ঙ্গ পাড় হতে প্রায় ৪ঘণ্টা মতো লাগে ।” আবির বলল,
“এখন কি করবেন আপনারা? ওপাড়ে ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন, নাকি এই সুরঙ্গের ভেতরে যাবেন?”
ইনস্পেক্ট মুরশিদ বলল, “আমরা ভেতরে যাবো । কারণ ওপাড়ে পৌঁছে গেলে এবং ওরা ইন্ডিয়ার
পুলিশের হেফাজতে চলে গেলে ফিরিয়ে আনা অনেক ঝামেলা হবে ।” আবির বলল, “ঠিক আছে! আমি যাবো
আপনাদের সাথে ।” ইনস্পেক্টর মুরশিদ একটু ভেবে বলল, “ঠিক আছে, চলুন ।” আবির আর ইনস্পেক্টর
মুরশিদ ঢুকে গেলো সুরঙ্গের ভেতর । এরপর প্রায় এক দেড় ঘণ্টা কেটে গেলো । বিমল বলল,
“লাগতাহে হাম লোক প্রায় পৌঁছে গেছি । সামনে লাইট না বের হওয়ার?” লাক্সমান এমন সময় বলে
উঠলো, “১ মিনিট রুকো! হাম কিস রাস্তে পে যা রাহে হে!” প্রকাশ বলল, “ক্যান কি হইছে?”
লাক্সমান বলল, “সামনে আলো কিসের আইতাছে?” লাক্সমানের সাথে সাথে ক্ষণিকের মধ্যে প্রকাশও
আলো দেখতে পেল । বলে উঠলো, “উও! উও কেয়া হে! ভুত!” লাক্সমান তখন বলল, “আরে ভুত নেহি!
ইয়ে লোগ কোন হে!” আলো আরও কাছে আসতে লাগলো । প্রকাশ বলল, “এ! উও তো পুলিশ! ভাগ! উলটা
যাও!” সবাই উলটো ঘুরে দৌড়ানো শুরু করলো । বাচ্চারা সব মাঝখানে ছিল সামনে ছিল লাক্সমান
আর প্রকাশ, আর পেছনে ছিল বিমল । এখন উলটো দৌড়নো শুরু করায় সামনে গেলো বিমল আর পেছনে
প্রকাশ । মাঝে বাচ্চারা না বুঝেই ওদের সাথে দৌড়তে লাগলো ।
আগামী
পর্বেঃ
ওপাশের
পুলিশ আরও কাছাকাছি চলে এসেছে । প্রকাশ আর লাক্সমান বাচ্চাদের জন্য এপাশে আস্তে পারছে
না । এদিকে বিমল এপাশে, কি করবে ভেবে পাচ্ছে না । পুলিশ যখন প্রায় আরও কাছে চলে এলো,
এমন সময় বিমল একটা ছুরি বের করে নিশানের গলায় ধরল । তারপর বলল, “আর মাত সামনে আনা অফিসার!”
পুলিশ এগিয়ে আসা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে গেলো । বিমল বলল, “আপ লোগ পিছিয়ে, নেহি তো ইয়ে বাচ্চা
মার যায়েগি!”