0 %

Thanks a lot for being with us!
We are re-constructing our website!
Sorry for this temporary inconvenience
We are coming to you with a fresh look and design from 1 January 2022!
Till then! Stay connected!

পরিচয় ২৭১


পরিচয়(পর্ব-২৭১)

 

সবাই চুপ হয়ে গেলো ।  একটু পর লাক্সমান এলো রুমে । খাচার ভেতর বেশ কয়েকটা রুটি ছুঁড়ে মারল । সবাই ছো মেরে নিয়ে নিলো । হিসেব করেই রুটি দেয়া হলেও অন্তর ২টা রুটি নিলো । আর আয়রা ব্যাপার বুঝতে না পারায় একটা রুটিও পেল না । এদিকে পেটে ওর বেজায় খিদে । নিশান নিজের রুটিটা আয়রার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “নাও, তুমি আমারটা খাও ।” আয়রা বলল, “ইশ! মাটিতে ঢিল মেরেছে!” নিশান হালকা হেসে উঠলো । তারপর বলল, “এখন যে পরিস্থিতিতে আছি তাতে কি মনে হয় তোমায় কেউ ভালো ভাবে ভালো খাবার দেবে?” আয়রা কিছু বলল না তবে ওর চেহারা দেখে বোঝা গেলো নিশানের কথা ও বুঝেছে । নিশান রুটিটা ওর হাতে দিয়ে বলল, “নাও, না খেয়ে থাকার চেয়ে এটা খাওয়াই ভালো ।” আয়রা রুটিটা নিলো । তারপর জিজ্ঞেস করলো, “তুমি খাবে কি?” নিশান বলল, “আমার খিদে নেই । সমস্যা নেই, তুমি খাও ।” মুন্নি ভেংচি কেটে হালকা বিরক্তির সুরে বলল, “ঢং! গতকালকেও খায় নি, আজও খায়নি । এখন আবার ঢং দেখাচ্ছে!” মুন্নির কথা কানে গেলো আয়রার । নিশানকে বলল, “সেকি! খাও তুমি!” নিশান বলল, “আরে না না! খাও, সমস্যা নেই । আমি না খেয়ে থাকতে পারবো ।” আয়রা রুটির অর্ধেকটা ছিঁড়ে নিশানের হাতে দিয়ে বলল, “আচ্ছা, অর্ধেকটা খাও তাহলে! প্লিজ!” নিশান কিছু একটা বলতে গেলো, কিন্তু তা বলতে না দিয়ে আয়রা বলল, “প্লিজ!” নিশান আর কিছু বলল না । অর্ধেকটা নিলো ।

নামটা শুনেই রফিকের মুখ কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে গেলো । আবির জিজ্ঞেস করলো, “কি হল, চেনেন না?” রফিক তোতলাতে তোতলাতে বলল, “ন…না মানে, এলাকাটা ম্যালা নির্জন । জঙ্গলে ভরা, আর ওইপাড়ে ভারত । হুনছি, ওই এলাকায় কেউ গেলে আর ফিরা আসে না?” আবির বলল, “বাহ, আমি ঠিক পথেই এগোচ্ছি ।” রফিক বলল, “না না! আমি ওইখানে যামু না! মাফ কোরো!” আবির বলল, “আচ্ছা, সেখানে সবচেয়ে কাছাকাছি যে লোকালয়টা আছে, সে পর্যন্ত চলুন! প্লিজ!” রফিক কিছুক্ষণ ইতস্তত বোধ করলো । অবশেষে সে যেতে রাজি হল না । রায়হান বলল, “হায়রে! পোলাডা একটা কাম করাইতে চাইসিল তোরে দিয়া! তুই তা-ও করলি না রে!” রফিক আর কিছু না বলে আবিরের কাছে বিদায় নিয়ে চলে গেলো । আবির বলল, “ভাই, আমি তাহলে রওনা হচ্ছি ।” রায়হান জিজ্ঞেস করলো, “ক্যামনে যাবি তুই?” আবির বলল, “যেভাবে এখানে এসেছি! ম্যাপ দেখে । একজনকে চাচ্ছিলাম একটু সাহস পাওয়ার জন্য । কারণ ম্যাপে তো শুধু রাস্তা দেখা যায়, এলাকার লোকজন ভালো না খারাপ তা তো দেখা যায় না । তুমি শুধু দোয়া কোরো!” রায়হান আবারও বেশ কয়েকবার আবিরকে খাওয়ার জন্য জোর করলো, কিন্তু আবির রাজি হল না । রওনা হল বিষ্ণুপুরের উদ্দেশ্যে । ম্যাপে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, পাশেই নাথ ভারতের বর্ডারের ওপাড়ে নাথ মন্দির ।

সকাল সেখানে যেতে আবিরের প্রায় দেড় ঘণ্টা লেগে গেলো । আরও আগে হয়তো পৌঁছতে পারতো, কিন্তু মাঝে গাড়িতে একটু সমস্যা হওয়ায় দেরি হয়ে গেছে । বিষ্ণুপুর গ্রামের প্রবেশ পথেই একটা সতর্কবার্তা লেখা । “জঙ্গলে ঢুকবেন না । আপনার জীবনের দাম অনেক ।” আবির বেশ চমকে গেলো এই সতর্কবার্তাটা দেখে । এখানে বাড়িগুলোও বেশ দূরে দূরে । আর হাতে গোণা কয়েকটা বাড়ি দেখা যাচ্ছে । আবির গাড়ি নিয়ে আর বেশি না এগিয়ে একপাশে রেখে দিলো । তারপর, সেই জঙ্গলের দিকে পা বাড়াল । ধীরে ধীরে আবির যতই জঙ্গলটার দিকে এগোচ্ছে, ততই আবিরের হ্রিদস্পন্দন বেড়েই চলেছে । প্রায় জঙ্গলে এসে পড়েছে ও । আর এক পা বাড়ালের জঙ্গলের রাস্তায় ঢুকে যাবে এমন সময় কে যেন আবিরকে ধরে টেনে জঙ্গলের বাইরে ফেলে দিলো ।

সকলের চোখ মুখ বাধা হল । নিশান, আয়রা, আকাশ, অন্তর, মুন্নি ও স্বর্ণা কেউই এখন চোখে দেখছে না । হাত দুটো বাধা হলেই পা খোলা । ওদের হাটিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে । চোখ বাধা কারণ ওরা কোন পথ দিয়ে যাবে তা যেন ওরা নিজেরাও টের না পায় । আর মুখ বাধা কারণ হুট করে কেউ যেন হঠাৎ চিৎকার না করে । এরপর ওদের গর্তের ভেতর থেকে বাইরে আনা হল । গর্তের ভেতরে একটা দম বন্ধ হওয়া পরিবেশ থেকে বেড়িয়ে ওদের ভালো লাগলো । জোড়ে জোড়ে প্রাণ খুলে শাস নিতে লাগলো ওরা । নিশান আয়রার ঠিক সামনেই ছিল । নিশান কি যেন একটা ইশারা করতেই আয়রা হঠাৎ পা মচকে পড়ে গেলো । ঠিক পড়ে গেলো না, পড়ে যাবার অভিনয় করলো । আর ঠিক তখনই নিশান একটা কাপড়ের টুকরো একপাশে ছুঁড়ে মারল । প্রকাশ আয়রার কাছে এসে বলল, “এ! উঠ! ভালো মতো হাট! অ্যাইসে কই হাটতাহে কেয়া!” আয়রা উঠে দাঁড়ালো । তারপর আবার হাটা শুরু । একটু পর ওদের লাক্সমান বলল, “এ শুন! হাম এখন আরেকটা গোর্তে ঢুকবো, যার ওপাশেই ইন্ডিয়া । তারপর তোরা বিক্রি হো যায়েগী! আব ধিয়ানসে গোর্তে নেমে যা!” প্রথমে স্বর্ণা, তারপর মুন্নি । তারপরই ছিল আয়রার পালা কিন্তু আয়রা ঢুকতে গিয়েই আবার পড়ে যাবার অভিনয় করলো ।  ঠিক তখন নিশান আরেকটা কাপড়ের টুকরো একপাশে ছুঁড়ে মারল । লাক্সমান আয়রাকে পড়ে যেতে দেখে বলল, “আরে কেয়া হে! তু না বড় নায়কের মেয়ে, হিল পড়ে হাটিস আর এইসে নাঙ্গা পায়ে হাটতে পারছিস না!” আয়রা আবার উঠে দাঁড়ালো । তারপর গর্তে ঢুকে গেলো । এরপর নিশান আর একে একে বাকিরাও গর্তে ঢুকে গেলো । যে কাপড়ের দুটো টুকরো নিশান ফেলেছে, সেটা ওরই গায়ের গেঞ্জির টুকরো । সেটা ওরই প্ল্যান ।

 

আগামী পর্বেঃ

লোকটা আবিরকে বলল, “বাপুরে, ওইহানে ক্যান যাইতেআছো? ওই জায়গা ভালা না বাপুরে, ওইহানে ভুত আছে! ভুত! ভিতরে একখান পুরান কবরস্থান আছে! কবর এহন বুঝা যায় না, তয় সেই কবরগুলার ভেতরে থেইকা রাইতে লাশ উইঠা আসে, কিন্তু কোন গর্তই থাকে না ওইহানে! আমি নিজের চোখে দেখছি!” আবির বলল, “ওই ভুতগুলোই যে আমার ছেলেকে ধরে এখানে……………………!” পুরো কথা বলতে গিয়ে আবিরের মাথা ঘুরে গেলো আবির মাটিতে পড়ে গেলো । আবির চোখ বন্ধ করলো, জ্ঞান হারাল ।