পরিচয় ২৭০
পরিচয়(পর্ব-২৭০)
এবার
আবির কল করলো রায়হান ভাইকে, “হ্যালো ভাই!.........হ্যাঁ আমি এসে গেছি!.........হ্যাঁ!......আচ্ছা
।” বলে ফোনটা কেটে দিলো । রায়হান ভাই বলেছে বাজারে আসতে তার ১০ মিনিট মতো লাগবে । আবির
দাঁড়িয়ে রইলো । ঘড়িতে সময় রায়হান ভাইয়ের কল কাটা থেকেই দেখছিলো আবির । দশ মিনিট প্রায়
হতেই আবিরের কাছে এলো এক লোক । বেশভূষা আর চেহারা দেখে মনে হয় পাগল হবে । গায়ে একটা
ছেড়া ময়লা লুঙ্গি, আর ছেড়া পাঞ্জাবি । মাথা ভরা চুল, মুখ ভরা দাড়ি গোফ । সেগুলোও উসকো
খুসকো আর ময়লা । চেহারা দেখে মনে হচ্ছে বেশ বাজে ভাবে পুড়ে গিয়েছিলো তার চেহারা । তবে
লোকটার বয়স আন্দাজ করা বেশ মুশকিল । কারণ মুখের আর শরীরের চামড়া এমনভাবে ঝুলে গেছে,
দেখে মনে হয় সেঞ্চুরী করেছে । কিন্তু হাটাচলা, কথা-বার্তা আর ভাবভঙ্গি দেখে মনে হয়না
এতোটাও বয়স । লোকটা কখন থেকে আবিরের সামনে এসে “ল……!মে……!ল……!মে…….কাট……কাট……মে………কাট……!”
এসব বলে যাচ্ছে । আবির লোকটার কথার কোন মানে বুঝতে না পারলেও টাকা দিলে চলে যাবে ভেবে
পকেট থেকে পঞ্চাশটা টাকা দিলেও লোকটা সেই টাকা নিলো না । হাত ঝাকিয়ে ইশারায় বোঝাল টাকা
তার লাগবে না । আবার সে বলতে লাগলো একই শব্দ । “মে………!ল………কাট…………!” এমন সময় রায়হান
ভাই এসে পাগল লোকটাকে চড় দেখিয়ে বলল, “ওই! তুই এইহানে কি করোস! ভাগ! মারমু কিন্তু!”
লোকটা কিন্তু মোটেও ভয় পেল না । রায়হান বলল, “আগুন আনমু কিন্তু! আগুন!” আগুন শব্দটা
শোনার সাথে সাথেই লোকটা ভয়ে “আগুন!আগুন!” বলে চেচাতে চেচাতে দৌড়ে চলে গেলো সেখান থেকে
। আবির জিজ্ঞেস করলো, “কে এ ভাই?” রায়হান বলল, “আরে পাগল । এর কথা বাদ দে । তয়………!”
থেমে গেলো রায়হান । আবির জিজ্ঞেস করলো, “তবে কি?” রায়হান আবিরের কানের কাছে মুখ এনে
ফিসফিসিয়ে বলল, “কলিমা বলছিলো, এই লোক সেইদিন আইছিলো, যেইদিন জয়নাল ভাই আর জামেনা আফা
গেরাম থেইকা চইলা গেছিলো ।” আবির বলল, “ও ।” রায়হান বলল, “শুন, বাড়ি চল, তোর কলিমা
আপু কহন থেইকা বইসা আছে ।” আবির বলল, “না ভাই, এখন না । আগে আমি আমার ছেলেকে খুঁজতে
যাবো । আমি শুধু এমন কাউকে চাওয়ার জন্য তোমাকে ডেকেছি যে পুরো ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা
চেনে!” রায়হান বলল, “আইচ্ছা, সকালে খাবার তো খাইয়া যা!” আবির বলল, “না ভাই, প্লিজ আমাকে
জোড় কোরো না!” রায়হান একটু থেমে বলল, “তোরে আমিই নিয়া যাইতে পারতাম, কিন্তু আমারই ঢাকায়
থাকা লাগছে কত বছর! তয় একখান পোলা আছে আমাগো পরিচিত । দাড়া!” বলে রায়হান ভাই একটা ছোটোখাটো
খাবারের দোকানের পাশ দিয়ে বাজারের অন্য পাশে চলে গেলো । কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর রায়হান
একটা ছেলেকে নিয়ে এলো । সে রায়হানের চেয়ে লম্বায় প্রায় সমান হলেও সে যখন রায়হানকে ভাই
বলল তখনই বোঝা গেলো সে বয়সে রায়হানের ছোট । তবে বয়সের পার্থক্য খুব বেশি বড় না । সে
আসা থেকেই মুখে অবাক চাহনি আর মুখে হাসি । আবিরের কাছাকাছি আসতেই সে রায়হানকে বলে উঠলো,
“ভাই! এই সেই আবির! আমাগো জয়নাল ভাই আর জামেনা বুর পোলা!” রায়হান ছেলেটাকে বলল, “আস্তে
কথা ক! আশেপাশে লোকে শুনলে বিপদ আছে!” রায়হান তখন আবিরকে বলল, “আবির, এ হইলো রফিক!”
তারপর আবার কানের কাছে এসে বলল, “তোর বড় কিন্তু! তুই জামেনা আফা আর জয়নাল ভাই এই গেরামে
প্রথম তোরে নিয়া আসে, তখন ওই সবার আগে তোরে দেখছিলো!” আবির রফিককে সালাম দিলো । রফিক
সালামের জবাব দিয়ে বলল, “আল্লাহ! আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারতেছি না!” রায়হান তারপর
রফিককে বলল, “শুন, আবির তোরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কোথায় নিয়া যাইতে কইলে পারবি নিয়া যাইতে?
ওর গাড়িতে কইরাই কিন্তু যাবি!” রফিক বলল, “হ! নিশ্চয় পারমু! এই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা
পুরা আমার চেনা! এসএসসি ফেইল করার পর থেইকা অটো চালাইসি! পড়ে বাস চালাইসি! কই যাইবা
কও!” আবির বলল, “বিষ্ণুপুর ।” নামটা শুনেই রফিকের মুখ কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে গেলো ।
খানিক
পরই ঘুম ভাঙল আয়রার । বাকিরাও নিশান ওঠার কিছুক্ষণ পরই উঠেছে যদিও, আয়রার উঠতেই দেরি
হয়ে গেলো । আয়রা সবাইকে দেখে কনফিউসড হয়ে গেলো কোনটা নিশান । তিনটে ছেলে সামনে । একজন
আকাশ, আরেকজন অন্তর এবং আরেকজন তো নিশানই । আয়রা জিজ্ঞেস করলো, “তোমাদের মধে নিশানকে?”
আকাশ ইশারা করে দেখিয়ে দিলো আয়রাকে আর মুখে বলল, “ছেলেটা!” আয়রা বলল, “ও, আমিও ওকেই
আন্দাজ করেছিলাম ।” নিশান বাকি সবার সাথে আয়রার এবং আয়রার সাথে বাকি সবার পরিচয় করিয়ে
দিলো । আয়রার মুখে হাসি ছিল যখন সবার সাথে পরিচিত হচ্ছিলো । পরিচয় পর্ব শেষে মুন্নি
বলল, “অ্যাই! তুমি হাসছো কেন? এখানে খুব ভালো লাগছে বুঝি!” নিশান মুন্নিকে বলল, “আহ!
থামো না! ওর ইচ্ছে হয়েছে হেসেছে!” মুন্নি স্বর্ণাকে বলল, “দেখেছিস স্বর্ণা! নতুন বন্ধু
পেয়ে নিশান কেমন দল পালটে নিলো!” স্বর্ণা বলল, “পাল্টাবে না! সেলিব্রেটির মেয়ে বলে
কথা ।” নিশান বিরক্ত হয়ে বলল, “আচ্ছা! এখানে দলের কি আছে? আমরা সবাই এখন বিপদে । তোমরা
এসব কি বলছো!”ওদের কথা শুনে রুমে থাকা প্রকাশ রেগে গিয়ে বলল, “এ! থামো তুম লোগো! কেয়া
লাগা রাখা হে!” সবাই চুপ হয়ে গেলো ।
আগামী
পর্বেঃ
আবির
জিজ্ঞেস করলো, “কি হল, চেনেন না?” রফিক তোতলাতে তোতলাতে বলল, “ন…না মানে, এলাকাটা ম্যালা
নির্জন । জঙ্গলে ভরা, আর ওইপাড়ে ভারত । হুনছি, ওই এলাকায় কেউ গেলে আর ফিরা আসে না?”
আবির বলল, “বাহ, আমি ঠিক পথেই এগোচ্ছি ।” রফিক বলল, “না না! আমি ওইখানে যামু না! মাফ
কোরো!”