পরিচয় ২৬৯
পরিচয়(পর্ব-২৬৯)
আবির
রায়হানকে জিজ্ঞেস করলো, “কেন?” রায়হান তখন সবটা খুলে বলল ।
ঘটনাটি
জেজেএ রেস্টুরেন্টের বিস্ফোরণের সপ্তাহ কয়েক পরের । কলিমা আর রায়হান তাদের বাপের ভিটায়
ফিরে এসেছিলো বেশ কয়েকদিন হয়েছে তখন । কোন এক বিকেলে ওদের প্রতিবেশী জামিলা আসে ওদের
বাসায় । জামিলার বিয়ে হয়েছে, বাপের বাড়ি বেড়াতে এসেছিলো তখন । যদিও বাড়িতে ওর ভাই ছাড়া
কেউ নেই, ওর মা মারা গেছে আরও বেশ কয়েক বছর আগে । কথা প্রসঙ্গে উঠে আসে জয়নাল আর জামেনার
কথা । যেহেতু জয়নাল আর জামেনার সাথে কলিমাদের দেখা হয়েছিলো, তাই ওরা সবটা জানতো যদিও
এটুকু আগে জানতো না বাচ্চাটা জয়নাল আর জামেনার আসল মা বাবা না-ও হতে পারে, তবে পড়ে
সেটা ইফাজের কাছ থেকে বুঝতে পেরেছিলো । জয়নাল আর জামেনার সব কথা বলতেই জামিলা বলল,
“আমি জানতাম, আমাগো জামেনা আফা আর জয়নাল ভাই এইসব কিচ্ছু করতে পারে না । তয় আমার মা,
প্যাঁচ বাধায় খালি, হেয় প্যাঁচ বাঁধাইয়া জয়নাল ভাই আর জামেনা আফারে দোষী বানাইসে ।
আর ফয়সাল চেয়ারম্যান তো তহন কইসিলই জয়নাল ভাই বা জামেনা আফা বা উনার বাচ্চাডা, সালমান
খান আবির, হেয় যদি এই গেরামে কখনও আসে, তাইলে তারে বাইর কইরা দেয়া হইবো ।” রায়হান পাশে
বসে ঘরের ভাঙ্গা কিছু আসবাবপত্র মেরামত করছিলো । এই কথা শুনে অবাক হয়ে বলল, “আয় হায়!
কও কি!” জামিলা বলল, “হ! আমার তো খুব খারাপ লাগছিলো । তয় আরও খারাপ লাগতেছে উনাগো মরার
কথা শুইনা । আল্লাহর রহমতে বাচ্চাডা বাইচা আছে, এইডাই আলহামদুলিল্লাহ ।” কলিমা তখন
বলল, “আবিরের ছবি আছে তো আমাগো কাছে, দেখবা?” জামিলা উৎফুল্লের সাথে বলল, “আগে কইবানা!
কই দেহি!” রায়হান তখন মোবাইলে আবিরের ছবি বের করে দেখায় জামিলাকে । জামিলা সেই ছবি
দেখে প্রায় কেদে দেয় । আর বলে, “হায়রে দুনিয়া! এই পোলাডা নাকি এইটুকু পিচ্চি ছিল! আল্লাহ!
সুস্থ রাইখো বাচ্চাডারে ।”
রায়হানের
মুখে সবটা শুনে অবাক হয়ে যায় আবির । বলে, “এসব আমাকে আগে বলো নি কেন ভাই?” রায়হান বলল,
“তোর লগে মোবাইলে কথা তো কমই হয় । পড়ে দেহা হইল সেই তোর বিয়ার সময়, তয় তহন যা ঘটল,
তারপর কি এইসব কথা বলার সুযোগ আছিলো তুই-ই বল?” আবির তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“আমার জন্মটাই তো বড় একটা রহস্য ভাই, আমি আর কি বলবো । তবে ঠিক আছে, আমি আমার পরিচয়
গোপন করেই যাবো সেখানে । কিন্তু আপনি আমাকে সাহায্য করবেন প্লিজ!” রায়হান বলল, “তুই
কি ভাবোস, আমি তরে সাহায্য করমু না! আয় আগে, তারপর দেহিস । আচ্ছা শুন, তোর মোবাইলে
ম্যাপ আছে না?” আবির বলল, “হ্যাঁ ভাই, আমি তো ম্যাপ দেখেই আসছি ।” রায়হান বলল, “আইচ্ছা,
ওইহানে দ্যাখ ফকিরাপুল বাজার পাবি, সেইহানে আইসা কল করিস । আমি তোরে আমার কাছে আনবোনে
।” আবির বলল, “আচ্ছা ভাই । রাখি । আমি ড্রাইভিং করছি তো ।” রায়হান বলল, “হ! অবশ্যই!
তয় গারিটা থামাইয়া তোর কথা কওয়া উচিত ছিল । রাখ তাইলে ।” বলে কল কাটল রায়হান । ঘরে
ঢুকতেই মিতা বলল, “অ্যাই! তোমার সাহস কি কইরা হয় ওরে আনার! ওর জন্য যদি গেরামবাসী আমাগো
তাড়াইয়া দেয়!” রায়হান বলল, “কি কইতাসো তুমি! আজাইরা কথা বলা বন্ধ করো ।” মিতা বলল,
“আমি কিছু জানি না বাবা, এইটুকু কইয়া দিতাছি! সকালে আমি বাপের বাড়ি চইলা যামু! তুমি একাই থাইকো তোমার বোনরে নিয়া ।” বলে
বিছানায় শুয়ে পড়লো মিতা । রায়হান কিছুই বলল না কিন্তু মিতার ওপর বিরক্ত হল । ওদের বাসায়
দুটো রুম । পাশের রুমেই থাকে কলিমা । সেই যে মোখলেসের কুকীর্তির জন্য মোখলেসকে ছেড়ে
এসেছিলো, তারপর আর বিয়ে করে নি । একাই বাপের বাড়িতে বাকি জীবন কাটাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে
। এখনও পাশের রুমেই আছে সে । ঘুমোচ্ছে ।
সকালটা
ঠিক কিভাবে হয় তা বোঝা যায় না গর্তের ভেতর । কারণ সকাল হোক বা রাত, গর্তের ভেতরটা সবসময়েই
অন্ধকার । তবু সকাল হতেই গর্তের ভেতরের লাইট জ্বলে উঠলো । ঢুকল প্রকাশ । খাচার ভেতর
তখন ঘুম ভাঙ্গে নিশানের । তাকিয়ে দেখল বাকিরা এখনও ঘুমোচ্ছে । ঘুমোচ্ছে আয়রাও । নিশানকে
দেখে প্রকাশ বলল, “কিরে, তু কিউ উঠে গেলো হা? শুয়ে যা, আজ তুম লোগোকো ইন্ডিয়া যানা
হেয় । বহত দূর হাটনা হেয় । তাই আগেই রেস্ট লে লো । বারনা তাব হাফিয়ে যাবে ।” নিশান
কিছু বলল না ।
এদিকে
বাজারে রাতেই পৌঁছে গিয়েছিলো আবির । কিন্তু সারারাত ড্রাইভিং করে প্রচণ্ড ঘুম চলে আসায়
গাড়ির ভেতরেই ঘুমিয়ে পড়েছিল । এতো রাতে রায়হান ভাইকে ডাকা উচিৎ হবে না বলে কল করে নি
। সকালের আলো চোখে পড়তেই আবির গাড়ি থেকে বেরোল । রাত ছিল নির্জন । সকাল কোলাহল ভরা,
বাজারে যেরকম থাকে সেরকম । প্রায় সব লোকই আবির ও ওর গাড়ি দেখে দেখে যাচ্ছে । বোধ হয়
অচেনা এক লোককে গ্রামে দেখে সবাই অবাক হয়ে গেছে । ঘড়িতে দেখল, সকাল আটটা বাজে । মোবাইলে
অয়নের কল দেখল । সকাল সাতটার দিকে ২বার কল করেছিলো । তাই কল করে আবির অয়নকে জানিয়ে
দিলো পৌঁছে গেছে । সেই সাথে পুলিশ অফিসার অপুকেও জানিয়ে দিলো পৌঁছনোর কথা । অপু এও
বলল, সে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ফকিরাপুল থানার ওসিকে বলেছে আবিরের কথা, তাই যেকোনো প্রয়োজনে
যেন আবির সেখানে যায় । এবার আবির কল করলো রায়হান ভাইকে ।
আগামী
পর্বেঃ
দশ
মিনিট প্রায় হতেই আবিরের কাছে এলো এক লোক । লোকটা কখন থেকে আবিরের সামনে এসে “ল……!মে……!ল……!মে…….কাট……কাট……মে………কাট……!”
এসব বলে যাচ্ছে । আবির লোকটার কথার কোন মানে বুঝতে না পারলেও টাকা দিলে চলে যাবে ভেবে
পকেট থেকে পঞ্চাশটা টাকা দিলেও লোকটা সেই টাকা নিলো না । হাত ঝাকিয়ে ইশারায় বোঝাল টাকা
তার লাগবে না । আবার সে বলতে লাগলো একই শব্দ । “মে………!ল………কাট…………!”