অপবাদ পর্ব-৮
অপবাদ(৮)
ইশাদের
গলায় ফাঁসি লাগানোর ৩সেকেন্ডের ভেতর ফাঁসির রুমের দরজায় জোরে জোরে ধাক্কানোর আওয়াজ
হয় । সাথে এই আওয়াজ হয়, “তাড়াতাড়ি দরজা খুলুন! এই ফাঁসি দেবেনে না! উপর মহলের নির্দেশ!
তাড়াতাড়ি দরজা খুলুন!” সেখানে থাকা একজন সিভিল সার্জন দরজা খুলে দিলেন । দাঁড়িয়ে ইনস্পেক্টর
দেলোয়ার ইনস্পেক্টর দেলোয়ার যেই দেখলেন ইশাদ ফাঁসিতে, এখনও পা কাঁপছে! তাড়াতাড়ি যেয়ে
ইশাদে পা ধরে ওপরের দিকে তলার চেষ্টা করলেন আর জল্লাদকে বললেন, “দড়ি কাটুন! কুইক!”
জল্লাদ তক্তা আগের মতো সমান করে দড়ি কেটে দিলেন । ইশাদের মুখ থেকে কাপড় সরানো হল ।
ইশাদ বেশ জোড়ে জোড়ে কষ্টের সাথে কেশে উঠলো । গলায় চাপ পড়ার ফলে চোখের সাদা অংশে রক্ত
চলে এসেছে!
এদিকে
হাসপাতালে ইমনকে রুমন বলল, “ভাই! আন্টিকে ডাক । বলা ছাড়া উপায় নেই ।” মাহিন বলল, “এখনই
বলা কি ঠিক হবে? আস্তে ধীরে বুঝিয়ে বলি!”
রুমনঃ
আগে আন্টির কাছে চল ।
পলাশঃ
বলতে তো হবেই এখন । আন্টি ছেলেকে দেখেন নি, স্বামীকে তো অন্তত নিজের চোখে দেখবেন শেষ
দেখাটা!
ওরা
ওয়েটিং রুমের দিকে গেলো । কিন্তু এ কি! ইশাদের মা কোথায়? ওয়েটিং রুমে এক নার্স ছিলো
। কি জানি লিখছিল । ইমন জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা, এখানে একজন মহিলা ছিলেন, উনি কোথায়?”
নার্সঃ
ও, যার স্বামী একটু আগে মারা গেলো যে, আমি উনাকে উনার স্বামীর খবর জানালাম, তারপর উনি
কাঁদতে কাঁদতে কোথায় যেন গেলেন ।
ইমন
কিছু বলতে চাইলো, কিন্তু বলল না ।
পলাশঃ
চল! তাড়াতাড়ি খুজি!
ওয়েটিং
রুম থেকে বেরোতেই সামনে থাকা এক ডাক্তারের কাছে দৌড়ে এলো এক লোক । এসেই বলল, “স্যার!
ইসটোর রুমে এক মহিলার সুইসাইড করছে কেচি দিয়া গলার রগ কাইটা!” কথা শুনে ডাক্তার আর
সেই কর্মচারী সেদিকে গেলো ইশাদ, পলাশ, রুমন আর মাহিনও গেলো । যা সন্দেহ করেছিলো ঠিক
তাই! ইশাদের মা! ডাক্তার হাতের নাড়ি পরিক্ষা করে বললেন, “উনি আর বেচে নেই ।”
(ইন্ট্রো)
২০
জুলাই ২০২০, সোমবার সকাল ১০টা । জরুরী ভিত্তিতে আদালত বসেছে । জজ এসেছে । ইমন, মাহিন,
পলাশ আর রুমনও এসেছে । আর এসেছে খগেন সেন । ইনস্পেক্টর দেলোয়ারও আছে । ইশাদ সানগ্লাস
পড়ে এসেছে, কারণ ওর চোখের সাদা অংশে রক্ত এসে যে বিদঘুটে চেহারা হয়েছে, তা অনেকের ক্ষেত্রে
আপত্তিকর হতে পারে ।
জজঃ
আমি কিছু বুঝতে পারলাম না, এক রাতের মধ্যে কি থেকে কি হয়ে গেলো?
ইনস্পেক্টর
দেলোয়ার উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “ইয়োর অনার, আমি বলছি সবটা ।” জজ বললেন, “প্লিজ, কাঠগড়ায়
এসে বলুন ।” দেলোয়ার কাঠগড়ায় এসে দাঁড়িয়ে শপথ গ্রহণ করে বলল, “ইয়োর অনার, গতকাল আমার
কাছে কল আসে যে, জদু আত্মহত্যা করেছে । আরও র সুইসাইড নোটে লিখেছে ও এই কাজের জন্য
লজ্জিত, ও ইশাদকে মিথ্যে অপবাদে ফাঁসির শাস্তি দেখে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে আর তাই
সে সুইসাইড করেছে । সে ওই মেয়েটাকে খুন করেছে এটাও সে বলেছে ।” খগেন সেন হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “না ইয়োর অনার! এইডা মিথ্যা! এইডা
সম্ভবই না!”
জজঃ
আপনি বসুন! আপনার সাথে পড়ে কথা বলছি ।
খগেন
বসলো ।
দেলোয়ারঃ
ইয়োর অনার, সে মুহূর্তে আমার মনে হয়েছে এই ছেলেটাকে বিনা দোষে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে
তা মেনে নেয়া যায় না । তাই আমি ওকে আইনের অবাধ্য হয়ে ফাঁসির মঞ্চ থেকে বাঁচিয়েছি ।
আপনি চাইলে আমায় শাস্তি দিতে পারেন ।
জজঃ
না ঠিক আছে । আমি আপনাকে সমর্থন করছি । তারপর বলুন ।
দেলোয়ারঃ
ইয়োর অনার, ভাগ্যক্রমে আমি সময়মত পৌঁছেছিলাম, দেরি হলে হয় ও হাসপাতালে, নয় ও মারা-ই
যেতো । তারপর আমি জদুর সেনের লাশ ময়নাতদন্তে পাঠিয়ে দেই, কিন্তু তার শরীরে কারো কোন
হাতের স্পর্শ পাওয়া যায় নি যা তার বাবা দাবি করছিলেন যা জদু সেনকে হত্যা করা হয়েছে
। আর চিঠিও আমরা হ্যান্ডরাইটিং এক্সপার্টের কাছে পাঠিয়েছিলাম জদুর হাতের লেখা বিশিষ্ট
একটা ডায়রি সমেত । তাঁরা জানিয়েছেন এটা জদুরই হাতের লেখা । আমি যা বললাম তার সব প্রমাণ
আদালতে পেশ করেছি ।
জজঃ
ঠিক আছে আপনি বসুন ।
ইনস্পেক্টর
দেলোয়ার কাঠগড়া থেকে চলে গেলো । এবারে এলো খগেন সেন । শপথ গ্রহন শেষে সে কান্নার সাথে
সাথে বলল, “ইয়োর অনার! আমি কইতাছি! আমার পোলারে কেউ ইচ্ছা কইরা ফাঁসিত ঝুলাইছে!”
জজঃ
কিন্তু ইনস্পেক্টর দেলোয়ার তো সব দেখেছেন, এরকম কোন আভাসই তো তিনি পান নি!
খগেন
সেন এবারে প্রায় কেঁদেই দিলো । বলল, “ইয়োর অনার! মুই আর পাললাম না নিজেরে বাঁচাইতে!
ওই মাইয়ারে মুই মারছি! আমার পোলা মারে নাই! তাইলে আপনেই কন, আমার পোলা কিসের জইন্যে
অনুতপ্ত হবে?”
জজঃ
আপনি কেন মেরেছিলেন মেয়েটাকে?
খগেনঃ
স্যার, আমার বিয়ার আগে এক গালফ্রেন্ড ছিল । তার লগে আমার এতো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছিল যে
তার গর্ভে জন্ম হয় আমার বাচ্চার । আমি ভয় পাই! লোকে আমারে কুকথা শোনাইবো । আমি মাইয়াডারে
কই বাচ্চাডারে মাইরা ফেলতে । কিন্তু মাইয়াডা শোনে না । ওর এক বান্ধবীর কাছে লুকাইয়া
রাখে । আমি রাগে মাইয়াডারে মাইরা ফেলি । এমনভাবে মারি, পুলিশ আমারে ধরতে পারে না ।
হাতে হ্যান্ড গ্লাভস পইড়া, মুখ ঢাইকা । তারপর বহুত বছর পর ওই বাচ্চা, যে ১৮ বয়সের মাইয়া
হইয়া গেছে, সে একদিন আমারে কল করে । আমার কাছে ও জবাব চায়, কেন আমি ওর মারে কইছিলাম
বাচ্চাডারে মারতে । আমি এলাকার কাউন্সিলর! মাইয়ার মুখে এইসব শুনলে লোকে আমারে কি কইবো!
তাই আমি মাইয়ারে হোটেলে আইতে কই । গত ৪ জুলাই দুপুরে আমার মাইয়া আসে নম্বরিটেক হোটেলে
। ও ঢুকার পর হোটেলের লোকেদের কই, সিসি ক্যামেরা বন্ধ রাখতে । তারপর আমি রুমে যাইয়া
মাইয়ারে খুন করি । য্যামনে ওর মারে খুন করছিলাম । তারপর আমার ভয় জাগে । এই লাশ এহন
কি করমু! আমি আমার পোলা জদুরে সন্ধ্যার দিকে সব জানাই । ও চিন্তায় পইড়া যায় । বিড়ি
খাইতে খাইতে ভাবতে থাকে । একটু পর অয় ইশাদরে দ্যাহে, আরও র মাথায় একখান বুদ্ধি আসে,
ইশাদের নামে মিথ্যা অপবাদ দেয়ার । ও ইশাদরে ক্যামনে নিয়া গেছে তা তো জানেনই । ওরে অজ্ঞান
করার পর ইশাদরে টাইনা ইশাদের হাত মেয়েটার গায়ে ছোঁয়ায় দেয়, শেষে ইশাদের হাতে ছুড়িডা
ঢুকাইয়া দিয়া চইলা যায়, যাতে সহজে প্রমাণ হয় ইশাদ এই কাম করছে ।
জজঃ
ও মাই গড! এটা তো সাঙ্ঘাতিক এক ক্রাইম!
খগেনঃ
ইশাদ বাইর হওয়ার আগেই সিসি ক্যামেরা অন করতে কইছিলাম, যাতে ইশাদ রুম থেইকা বাইর হইছে
দেহা যায় ।
জজঃ
আপনার ছেলে সাংঘাতিক অপরাধ করেছে, কিন্তু সে যখন মারা-ই গেছে, আমার বলার কিছু নেই ।
কিন্তু আপনাকে আমি ফাঁসিতে ঝোলাবো!
খগেনঃ
ঝোলান স্যার! আমার সমস্যা নাই! তয় আমার পোলারে যারা খুন করছে! তাদেরও ধরেন স্যার!
জজঃ
আপনার কাদের ওপর সন্দেহ হয়?
খগেনঃ
কেন! এই ইশাদ আরও র বন্ধুরা, ওরাই এই কাম করছে!
জজঃ
ঠিক আছে । ইশাদ মৃত্যুদণ্ড থেকে মুক্তি পেলেও এখনও ওকে ছাড়া হবে না । সাথে ওর বন্ধুদেরও
কড়া নজরদারিতে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হল । আগামী একমাস ওরা যেন দূরে কোথাও না যায় ।
এমন
সময় আদালতের পেছন থেকে আওয়াজ এলো, “জদুকে খুন আমি করেছি ইয়োর অনার!” আর ভেতরে এলো বজলু
।
জজঃ
একি! আপনি না একজন খুনি! আজ আপনার রায় হবার কথা ছিল কিন্তু পিছিয়ে গেছে! আপনি জেল থেকে
এসে এখানে কি করছেন! ইনস্পেক্টর দেলোয়ার! একে গ্রেফতার করুন!
“ও
আমার সাথে এসেছে ইয়োর অনার!” কথাটি বলে ইউনিফর্ম পড়ে আদালতে হাজির হল ইনস্পেক্টর মিনহাজ
।
জজঃ
আপনি! কোথায় ছিলেন আপনি এতদিন!
মিনহাজঃ
বলবো ইয়োর অনার, তবে আমার সাথে আরও চারজন আছে ।
জজঃ
কারা তাঁরা?
ভেতরে
এলো জিতু, রাইসা, খলিল আর কাশেম ।
জজঃ
আমি কিছু বুঝতে পারছি না । আপনারা প্লিজ শৃঙ্খলা বজায় রেখে বসুন!
জিতুঃ
অবশ্যই ইয়োর অনার । এতদিন যা যা হয়েছে সবটা প্রমাণ সহ আপনাকে জানাতে চাই আমরা । আর
আজ মিসেস রাইসাও আমার সাথে, আমার মক্কেলের সাথে ।
জজঃ
এবার প্লিজ সবটা খুলে বলুন ।
তারপর
রাইসা, জিতু, সামনে এসে, এবং বাকিরা কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে এতদিন কি হয়েছে তা বর্ণনা করতে
লাগলো । প্রথমে রাইসা আর মিনহাজ কেন জদুর পক্ষ হয় এবং ইশাদের বিপক্ষে কথা বলেছে সে
ব্যাপারে জানালো । তারপর জদু কীভাবে তাদের ধরে নিয়ে গেছে সে ব্যাপারে জানালো । তারপর-
মিনহাজঃ
ইয়োর অনার, গতকালকের আগের রাতে জদু আমার সেন্সলেস করে রাহিগঞ্জ থেকে নিয়ে যায় চুনারিডাঙ্গা
গ্রামে । তাই হয়তো ইনস্পেক্টর দেলোয়ার আমাদের খুজে পান নি । কিন্তু গতকাল রাত ৩টার
দিকে যখন আমরা ইশাদের ফাঁসির খবর শুনে উদ্বিগ্ন হয়ে ঘুমহীন বসে ছিলাম, দুজন মাস্তান
পাশেই সিগারেট খেতে খেতে ধোয়া ওড়াচ্ছিল ঠিক তখন দরজায় নক পড়ে । একজন মাস্তান যেয়ে দরজা
খুলতেই তাকে কুপোকাত করে ভেতরে ঢুকে আসে ৪ জন, বজলু, বিল্লাল, কাশেম, খলিল ।
জজঃ
বজলু, খলিল আর কাশেমকে তো দেখলাম, কিন্তু বিল্লাল কোথায়?
মিনহাজঃ
তিনি এখানে আসতে পারেন নি ইয়োর অনার । কেন তা বলছি । তবে আর আগে উনাদের এ পর্যন্ত আসার
ঘটনা শুনে নিন ।
এরপর
বজলু এলো কাঠগড়ায় ।
বজলুঃ
ইয়োর অনার, আমাকে আপনি চেনেন, কেন আমি জেলে তাও আপনি জানেন, আমি স্বীকার করে নিচ্ছি
সেই খুন আমি করেছি, কেন করেছি সে প্রসঙ্গে আমি আপনাকে পড়ে জানাবো । আগে জানাচ্ছি কি
করে আমি জেল থেকে বেড়িয়েছি ।
বজলু
তখন এই জেল থেকে বেরোনোর সব ইতিহাস জানালো । কথাটি শুনতেই জজ ইনস্পেক্টর দেলোয়ারকে
বললেন, “ইনস্পেক্টর দেলোয়ার! আপনি এই মুহূর্তে সেই সুড়ঙ্গ বন্ধের ব্যাবস্থা করুন!”
তারপর বজলুকে বললেন, “হ্যাঁ, এবার আপনি শুরু করুন ।”
বজলুঃ
ইয়োর অনার, এই খগেন সেনের দুধে ধোঁয়া তুলসি পাতা আচরণের আড়ালে থাকা চিরতা মাখা তেঁতো
আচরণ আমাদের জানা জদুরই এক ক্লাসমেট লিমনের কাছ থেকে । সে হাতের লেখা সুন্দর করার লক্ষে
ভালো কারো হাতের লেখা দেখে তা সুন্দর করার প্রচেষ্টায় ছিল । ইশাদ যদি রেহাই না পায়
তবে ইশাদকে বাঁচানোর একটা প্ল্যান আসে আমার । সেই অনুযায়ীই একদিন-
(ফ্ল্যাশব্যাক)
বজলুঃ
আচ্ছা, জদুর হাতের লেখা কেমন রে?
লিমনঃ
খারাপ না, ভালোই । ক্যান?
বজলুঃ
ওর হাতের লেখা আয়ত্ত করবি?
লিমনঃ
এহ! ওই বদমাইশের হাতের লেখা নকলের ইচ্ছা আমার নাই । ওর বিচি ফাটাইতে বলেন, আমি রাজি
।
বজলুঃ
না, কারণেই বলছি । পারবি?
লিমনঃ
আপনে যখন বললেন কারণ আছে, তাহলে ঠিক আছে । কিন্তু ওর খাতা যে লাগবে?
বজলুঃ
আমি কাশেমকে দিয়ে আনিয়ে দেবো । কোথায় পাবো ওর খাতা?
লিমনঃ
স্কুলের স্টোর রুমে প্রচুর পুরান পরীক্ষার খাতা পইড়া থাকে । সেইখানেই পাবেন ।
(আদালতে)
বজলুঃ
ওকে দিয়ে জদুর হাতের লেখা আয়ত্ত করাই । গতকাল যখন কাশেমের মাধ্যমে জানতে পারি, ইশাদের
ফাঁসি হয়েছে, তখন আমি প্ল্যান অনুযায়ী চলা শুরু করি । লিমনকে বলি-
(ফ্ল্যাশব্যাক)
“শোন!
একটা চিঠি লিখবি!”
লিমনঃ
আপনি আমাকে লেখতে বলতেছেন! ইশাদের কথা শুইনা কি খারাপ লাগতেছে জানেন!
বজলুঃ
আরে! ওকে বাঁচানোর জন্যই লিখতে হবে তোকে!
বজলু
সব প্ল্যান খুলে বলল লিমনকে ।
লিমনঃ
আচ্ছা! আমি রাজি! কি লিখবো চিঠিতে?
বজলুঃ
সুইসাইড নোট! জদু ওই মেয়েটাকে খুন করেছে আর ইশাদকে ফাঁসির শাস্তি দেয়া দেখে সে অনুতপ্ত!
(আদালতে)
বজলুঃ
লেখা শেষ হলে আমরা কাশেমের মাধ্যমে বের হই জেল থেকে । রাত ১০টার দিকে । বৃষ্টি ছিল,
তাই কাজটা কষ্টকর ছিল । বিল্লাল জেলের পোশাক পাল্টে পড়ে নিলো সাধারণ পোশাক । কাশেম আগে থেকে সংবাদ পাঠক খলিলের নাম্বার ইমনের
ভিডিও যে কারেস্পন্ডেন্স করেছিলো তার কাছ থেকে সংগ্রহ করে সংবাদ পাঠক খলিলকে আস্তে
বলেছিল রেজা ফার্মেসীর সামনে । সেখানেই বহুর বছর পর দেখা হয় দুই ভাইয়ের! বিল্লাল আর
খলিলের ।
(ফ্ল্যাশব্যাক)
বিল্লালঃ
খলিল!
খলিলঃ
ভাইয়া! তুমি সত্যি আমার ভাইয়া! ভাইয়া! কতদিন পর!
বিল্লালঃ
তোরে দেইখা যে আমার কত যে ভালো লাগতেছে! আমি বইলা বুঝাইতে পারমু না!
খলিলঃ
ভাই! কেমন আছো!
বিল্লালঃ
ভালো! তয় কথা পড়ে হবে । আগে শোন, কাম আছে!
(আদালতে)
কাঠগড়ায়
এসে দাঁড়িয়েছে খলিল ।
খলিলঃ
ভাইকে দেখে আমার আনন্দ হয় খুব । কিন্তু তারপর আমাকে ভাই কাজের কথা বলে । খগেন সেনের
বিল্ডিঙে সহজে ঢোকা সম্ভব হবে না, আমার জদুর রুমে অন্য কেউ থাকতেও পারে, তাই সাবধানতার
জন্য ওরা আমাকে ব্যাবহার করে । সাংবাদিক পরিচয়ে আমি যাই, ডকুমেন্টারি বানাবো বলে রুমে
যাই প্রায় রাত ১২টার দিকে । আর বেড়িয়ে আসি ১টা ১৫এর একটু আগে । ওদের জানাই, ও রুমে
একা । ওরা বলতে বজলু আঙ্কেল, আর আমার ভাই,
বিল্লাল । আমরা ডেলিভারি ম্যানের ড্রেস সংগ্রহ করেছিলাম কাশেম ভাইয়ের কাছ থেকে ।
(ফ্ল্যাশব্যাক)
জদুঃ
একি! এতো তাড়াতাড়ি পিজ্জা চলে এলো!
দরজার
সামনে ১জন হলেও, আড়ালে আরও একজন ছিল । সে বিল্লাল । আর পিজ্জা হাতে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা
বজলু । বিল্লাল বজলু দুজনের হাতেই হ্যান্ডগ্লাভস । বিল্লাল জদুকে পেছন থেকে এক হাত
দিয়ে জদুর দু হাত চেপে ধরে অন্য হাত দিয়ে জদুর গলায় চাকু ধরল । তারপর জিজ্ঞেস করলো,
“বল! লয়ার জিতুরে কইর রাখছোস!”
জদুঃ
আপনারা কারা!
বিল্লালঃ
তাড়াতাড়ি বল! নাইলে মাইরা ফেলমু!
জদুঃ
বলতেছি! ওরা চুনাড়িডাঙ্গা ভাঙ্গা মন্দিরের পেছনে এক পুরনো গুদাম ঘরে!
কথা
শোনার পর পরই বজলু জদুর মুখে একটা স্প্রে করতেই জদু জ্ঞান হারায় । বিল্লাল তারপর বলে
উঠলো, “তুই না বললেও মরতি!”
তারপর
বজলু পকেট থেকে লিমনের লেখা চিঠি টেবিলে পেপারওয়েট দিয়ে চাপ দিয়ে রেখে জদুকে ফ্যানের
সাথে ঝুলিয়ে দিয়ে চলে এলো ।
(আদালতে)
ততোক্ষণে
কাঠগড়ায় এসে দাঁড়ালো কাশেম ।
কাশেমঃ
জদুকে মারা পর খবর তাড়াতাড়ি পুলিশরে জানানোর দরকার ছিল । তাই আমি পড়ে ডেলিভারি ম্যান
সাইজা খগেন সেনের দরজায় নক করি । যেন উনি নিজের চোখে দ্যাখে জদু ঝুলতেছে ।
(ফ্ল্যাশব্যাক)
খগেনঃ
না খাড়াও । আমিও যামু । গেঞ্জি লইয়া আসি । দেহি, এতো রাইতে ক্যান ওর পিজ্জা খাওয়ার
শখ জাগলো!
বলে
রুমে যেয়ে একটা গেঞ্জি গায়ে দিয়ে বাইরে এলো খগেন সেন । লিফটে করে জদু যে তলায় থাকে
সেখানে যেয়ে খগেন দেখল, দরজা খোলা । খগেন সেন ভেতরে ঢুকতেই গগনবিদারী চিৎকার!
খগেনঃ
আয় হায়! আয় হায় হায় হায় হায়! ও জদু! তুই এইডা কি করছোস! ক্যান করছোস! সাথে সাথে লোকেদের
আগমন ঘটে জদুর রুমে সামনে । একজন লোককে দেখিয়ে কাশেম বলে, “ওই দ্যাখেন, একটা চিঠি না?”
খগেন দেখে রাগে ছিঁড়ে ফেলতে পারে, তাই লোকটাকে পাঠাল কাশেম । লোকটা চিঠি এনে পড়লো,
কাশেম বলল, “এটা আপনার কাছে রাখেন! পুলিশরে দিয়েন ।” বলে কাশেম আড়ালে যেয়ে কল করলো
ইনস্পেক্টর দেলোয়ারকে ।
,
“স্যার! জদু সেন সুইসাইড করেছে! আর সুইসাইড নোটে নম্বরিটেক হোটেলের মেয়েক ও খুন করেছে
তা স্বীকার করেছে স্যার! আপনি তাড়াতাড়ি পারলে আসুন! আর পারলে ইশাদের ফাঁসি ঠেকান”
বলে
কাশেম বাইরে চলে যায় । একটু দুরেই ছিল বিল্লাল, বজলু আর খলিল ।
বিল্লালঃ
কাম হইছে?
কাশেমঃ
হ্যাঁ! হইছে!
বজলুঃ
এবার চল! চুনারিডাঙ্গা গ্রামে ।
(আদালতে)
এবার
লয়ার রাইসা সামনে এলো ।
রাইসাঃ
ইয়োর অনার, ইনস্পেক্টর মিনহাজ যেখানে শেষ করেছেন সেখান থেকে শুরু করি । এই ৪জন আমাদের
সেই কক্ষে ঢুকে একজনকে কুপোকাত করে ঠিকই, কিন্তু আরেকজন গুলি তুলে নেয় । আর-
(ফ্ল্যাশব্যাক)
মাস্তানঃ
মাইরা ফেলমু বুড়িরে! কাছে আগাইবি না!
বজলুঃ
দ্যাখ! তোকে কিন্তু ছাড়বো না!
মাস্তানঃ
কাছে আগাইবি না!
এমন
সময় হঠাৎ এক পড়ে পাওয়া রড নিয়ে সেই মাস্তানের দিকে এগিয়ে এলো কাশেম! কিন্তু সেটা মাস্তান
নিজের মাথায় লাগার আগেয় করে দেয় গুলি!
(আদালতে)
জজঃ
ইশ! বয়স্ক মহিলাটা এভাবে মারা গেলেন!
রাইসাঃ
না ইয়োর অনার, আমাদের মা মারা যান নি । কিন্তু হ্যাঁ, একজন মরেছে, আমাদের মা-কে বাচাতে
গিয়ে!
জজঃ
কে?
ইশাদের
বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো । আন্দাজ করতে পারছিল, কে হতে পারে! তবু মনে মনে দোয়া করছিলো,
সে যেন না হয়! এমন সময় আদালতে এন্ট্রি হয় মধুবালা কেষ্ট সেনের ।
মধুবালাঃ
আমি ক্ষমা চাইছি ইয়োর অনার দেরি করে আসার জন্য ।
মধুবালাকে
এক পুলিশ সাথে করে আনছে ।
রাইসাঃ
মা তুমি এলে কেন?
মধুবালাঃ
ঠিক সময়েই এসেছি । তোরা তো আমাকে আসতে বারণ করলি, কিন্তু যে ছেলেটা আমার জন্য নিজের
জীবন দিলো, তার কথা আমি নিজে জজকে বলতে চাই!
জজঃ
আপনি প্লিজ কাঠগড়ায় এসে দাড়ান ।
মধুবালা
কাঠগড়ায় এসে দাঁড়ালেন । তারপর শপথ গ্রহন ।
মধুবালাঃ
ইয়োর অনার, যে মুহূর্তে ওই মাস্তানটা আমার দিকে বন্দুক তাক করেছিলো, আমার তখন মনে হয়েছিলো
যমরাজ বোধহয় আশেপাশেই আছে । কিন্তু না, আমার মতো এক সামান্য বৃদ্ধা বাচাতে গিয়ে প্রাণ
দিলো এক ছেলে । কি যেন নাম! কি যেন নাম! হ্যাঁ, বিল্লাল!
(ফ্ল্যাশ
ব্যাক)
গুলি
ছুড়বার আগেই বিল্লাল প্রস্তুত ছিল । তাই তো সময়মতো মধুবালার সামনে চলে আসে । আর গুলিটা
যেয়ে লাগে বিল্লালের একদম হৃদপিণ্ড বরাবর । মাটিতে লুটিয়ে পড়ে বিল্লাল । রডের আঘাতে
এই মাস্তানটাও কুপোকাত হলেও, সবাই ছুটে আসে বিল্লালের দিকে । রক্তাক্ত হয়ে যায় মেঝে
। এদিকে এর মধ্যে কাশেম বাকিদের সব বাধন খুলে ফেলে । শেষ নিঃশ্বাস ফেলবার আগে তারপর
খলিলের গালে হাত রাখে বিল্লাল । বলে, “আমারে মাফ করিস, বড় ভাই হইয়াও আমি তোর কোন দায়িত্ব
পালন করি নাই!” তারপর বজলুর দিকে তাকিয়ে বলে, “ইশাদরে বইলেন! ও খলিলের মতো আমার আরেকখান
ভাই!” তারপর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে বিল্লাল!
(আদালতে)
এই
পর্যন্ত বলে কেদে দেন মধুবালা । ইশাদের চোখ দিয়েই জন পড়তে থাকে । মনে পড়তে থাকে স্মৃতিগুলো
।
মধুবালা
কান্না কন্ট্রোল করে বললেন, “সেই ছেলেটা চলে যাবার পর এই বজলু সিদ্ধান্ত নেয়, আদালতে
আত্মসমর্পণ করবে । সবটা বলে দেবে ।প্ল্যান ওদের যে উদ্দেশ্য, তা পুরণ করেছে ঠিকই, কিন্তু
একটা মূল্যবান মানুষকে কেড়ে নিয়েছে ওদের কাছ থেকে । আমার জন্য ওই বিল্লাল নামের ছেলেটা
মরে নি! ও এখনও আমার মাঝে বেচে আছে ইয়োর অনার! ও এখনও আমার হৃদয়ে বেচে আছে ।”
জজ
কিছুক্ষণ চুপ । বোধ হয় আগেবে তার বুক কাঁপছে । কথা বলতে গেলে কথাও হয়তো কেপে উঠবে ।
কিছুক্ষণ পর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মধুবালাকে বললেন, “আপনি প্লিজ আসন গ্রহন করুন!”
মধুবালা
সিটে যেয়ে বসলো ।
জজঃ
এরকম একটা ঘটনা আমার জিবনে এই প্রথম ঘটলো, আমার মনে হল আমি যেন একটা মুভি দেখছি! যাই
হোক । এতো ঘটনা, এতো সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত এই দিচ্ছে যে, আসামী বজলু আগের
খুনের দ্বায়ে যে দোষী ছিল, এবং গতকালকের খুনের দ্বায়ে যে দোষ করেছে তা মিলিয়ে তাকে
১ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হল । অবশ্যই তার শাস্তি আমি এতো কম দিলাম এই কারণে, সে
বেশি খারাপকে ঠেকাতে গিয়ে কম খারাপ কাজ করেছে । আর আসামী খগেন সেনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া
হল । সেই সাথে যার ওপর মিথ্যে অপবাদ দেয়া হয়েছে, আসামী ইশাদকে বেকসুর খালাস প্রদান
করা হল । আজকের মতো আদালত এখানেই মুলতবী ।
ইশাদ
কিন্তু রায় শুনেও খুশি হল না । বিল্লালের কথা মনে পড়লো বেশ ।
জেল
থেকে জিনিসপত্র নিয়ে লিমনের সাথে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে আসার সময় ইশাদ দেখলো, বজলু আঙ্কেল
সাদাকালো আসামীর পোশাক পড়ে জেলে যাচ্ছে , একবারটি বজলু আঙ্কেল দাঁড়িয়ে ইশাদের কাছ হাত
রাখল, কিছু বলল না ।
বাসায়
এসেও দায়িত্বে শেষ হয় না ওর । প্রথমে মা বাবার লাশ দাফন, তারপর বিল্লাল ভাইয়ের লাশ
দাফন । পুরোটা সময় জিতু ভাই ওদের সাথে ছিল । সব কাজ শেষে কবরস্থান থেকে বেরোনোর সময়
জিতু বলল, “হ্যাঁ, শোনো, আমাকে যেতে হবে এখন, আসলে কি, (একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে) এতদিন
যা হয়েছে তারপর আমি খুব ক্লান্ত! একটু বিশ্রাম দরকার আমার ।”
রুমনঃ
ভাই! তুমি এতোদিন অনেক সাহায্য করছো আমাদের, তোমাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না ।
ইমনঃ
ইশাদ, তুই ভাইকে থ্যাঙ্কস দিবি না?
জিতুঃ
থাক, ওকে কিছু বোলো না । কতোটা ভেঙ্গে পড়েছে ও! এতগুলো মানুষকে হারালো । ও এখন কিছু
বলার মতো পরিস্থিতিতেও নেই ।
পলাশঃ
ভাই, তোমার সাথে আমাদের দেখা হলেও ভালো লাগছে অনেক, একজন আদর্শ লয়ারকে যেন আমরা দেখেছি
।
মাহিনঃ
হ্যাঁ ভাই! সত্যি বলছি! আমাদের কাছে দেবার মতো কিছুই নেই, ভালোবাসা ছাড়া ।
জিতুঃ
সেটাই যথেষ্ট । কোটি কোটি টাকা পয়সার চেয়েও ভালোবাসা বেশি দামি । কিন্তু এখন আমি এ
নিয়ে কিছু বলবো না ।
জিতু
ইশাদের কাঁধে হাত রেখে বলল, “ভেঙ্গে পড়োনা ইশাদ, ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে ।”
ইশাদ
হঠাৎ এমন সময় চোখের পানি মুছে বলল, “না, আমি ভেঙ্গে পড়িনি ভাই । আপনি একদিন বলেছিলেন
না, আমাদের মনটা একটা অদ্ভুত পদার্থ, কখনও কাচের মতো ভেঙ্গে যায়, কখনও পানির মতো গলে
যায়, কখনও বরফের মতো শক্ত থাকতে হয়, আমি নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করছি । নিজেকে সামনে
এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে তো । এই কষ্টের মাঝে থমকে থাকলে চলবে না । আমাকে এগিয়ে যেতে হবে
। নিজের জন্য না হলেও সবার জন্য ।”
পলাশঃ
হ্যাঁ, মনে সাহস রাখ, আর আল্লাহর কাছে দোয়া কর । কান্নাকাটি করে কিছু হবে না ।
ইশাদঃ
কাদতাম, আমিও কাদতাম, খুব কাদতাম, হাউমাউ করে কাঁদতাম! কিন্তু কি জানিস তো, আমি জেলে
গিয়ে, গতকাল প্রায় মারা গিয়ে যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি, তারপর আর কাদার মতো মনোবল
আমার নেই । তবে আমি কাঁদছি, ভেতর থেকে, আমার মা বাবার জন্য, বিল্লাল ভাইয়ের জন্য ।
কিছুক্ষণ
পরিবেশ চুপচাপ । তারপর জিতু বলল, “ঠিক আছে, আমি তাহলে যাই, ভালো থেকো তোমরা, আল্লাহ
হাফেজ!” বলে চলে যায় জিতু ।
রাত
৮টা । অন্ধকার রাতে তারাভরা আকাশের নিচে বসে আছে ইশাদ, পলাশ, রুমন, মাহিন আর ইমন ।
ভালো লাগছিলো না, তাই এসে ওরা একটু গল্প করে সময় পার করার চেষ্টা করছে । আর তাছাড়া
ইশাদ এখন একা, যতই বলুক শক্ত আছে, ওকে একটু সঙ্গ দেয়া এখন খুবই জরুরী ।
ইমনঃ
হাহ! কি দিন ছিল! এইতো কয়টা দিন পার হল? সেই ৪ জুলাইয়ের কথা, আর আজ ২০ জুলাই । মাত্র
১৬টা দিনের মধ্যে এতো কিছুযে ঘটে গেলো!
পলাশঃ
আসলেই! টেরও মনে তো হল কত বছর ধরে এতো কিছু ঘটছে, মাত্র ১৬টা দিন যে কেটেছে তা ভাবতেই
পারিনি ।
রুমনঃ
ওই যে, বিপদের সময় একেকটা মিনিট মনে হয় একেকটা ঘণ্টা, আমাদের কাছেই পুরো ব্যাপারটা
এতো দীর্ঘ, মনে হচ্ছে, তাহলে বোঝ, ইশাদের কি মনে হচ্ছে!
মাহিনঃ
কিরে ইশাদ, তুই কিছু বলছিস না যে?
ইশাদ
কোন জবাব দিলো না ।
মাহিনঃ
কিরে? ইশাদ, কিছু তো বল, চুপচাপ থাকলে তোরই খারাপ লাগবে ।
ইশাদঃ
হ্যাঁ, আমারও অনেক খারাপ লেগেছে জানিস তো, এই কটা দিন সময় যেমন খুব খারাপ গেছে, তেমনি
অনেক ভালোও গেছে । যেমন আমি অনেক কিছু হারিয়েছি, তেমনি অনেক কিছু পেয়েছি । অনেক কিছু
দেখেছি আমি, অনেক কিছু শিখেছি ।
ইমনঃ
আজকে যদি তোর ওপর এই অপবাদটা না পড়ত, কিংবা তুই যদি সেদিন না যেতি জদুর সাথে, ঘটনাটা
কিন্তু অন্যরকম হতে পারতো ।
মাহিনঃ
হয়তো তুই তোর বাবা-মাকে হারাতি না, হয়তো তোর সেই বিল্লাল ভাই মারা যেত না, হয়তো আমাদের
সাথে জিতু ভাইয়ের পরিচয় হতো না, আরও কত কি ।
পলাশঃ
সেগুলো বলে কি লাভ, যা হয়েছে, তা তো হয়েই গেছে, এটা হলে কি হতো, ওটা হলে কি হতো, বললে
তো আর অতীত ফিরে পাওয়া যায় না ।
ইশাদ
সানগ্লাসটা খুলল । চোখের সাদা অংশের একটু এখনও লাল হয়ে আছে । তারপর বলল, “গতকাল যখন
আমি ফাঁসিতে ঝুলছিলাম, মনে হচ্ছিলো, এই বুঝি মৃত্যু হাজির হয়েছে! মনে হচ্ছিলো আর আমি
তোদের দেখতে পাবো না! আমার মা বাবাকে দেখতে পাবো না! কিন্তু আজ দ্যাখ, আমি বেচে আছি
। সে মুহূর্তে আমি ভাবতেই পারিনি আমি আজ বেচে থাকবো!”
ইমনঃ
কখন যে কি হয় তা কি কেউ বলতে পারে?
ইশাদঃ
আচ্ছা, আমার জন্য তোদের অনেক কষ্ট আর অপমান হল, না?
রুমনঃ
আরে না! কিসব বলিস! আমাদের কেন অপমান হবে, আর কষ্ট, ওইটুকু যদি করতে না পারি, তাহলে
আমরা কিসের বন্ধু?
ইশাদঃ
লোকে কত কি বলবে তোদের! আমি তোদের বন্ধু বলে!
পলাশঃ
লোকের কোথায় আমাদের কি? লোকের টাকায় খাই, নাকি আমাদের জন্য লোকের খুব ক্ষতি হচ্ছে?
ইমনঃ
লোকের কথা গায়ে মাইখা লাভ নাই । আর ইশাদ, এইসব আজাইরা কথা বাদ দে । ভালো কথা বল ।
ইশাদঃ
নাইরে! মুড নাই! ভালো কিছু বলার মুড নাই, ভালো রেজাল্ট হয়েছে, পড়াশুনার চাপ নেই, তোদের
সাথে প্রচুর সময় কাটানোর সুযোগ, কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে ইনজয় করার ব্যাপারটা কোথায়
যেন হারিয়ে গেছে । ইচ্ছে করে না আর ।
মাহিনঃ
আচ্ছা ভাই, আমাকে বাসায় যেতে হবে রে!
ইমনঃ
হ্যাঁ! চল, আমাকেও যেতে হবে ।
বলে
ওরা রওনা দিলো বাসার পথে , মাঝে সেই রেজা ফার্মেসীর সামনে দাঁড়ালো । এখন আর এটা রেজা
ফার্মেসী না । একটা মুদি দোকান হয়ে গেছে । দোকানদাঁড়ও রেজা নয় । এক বছর চল্লিশের লোক
বসে আছে দোকানে । এক পাশে টিভি, বসে বসে টিভি দেখছে । ওরা ৫ বন্ধু বেশিক্ষন সেখানে
দাঁড়ালো না । আবার হাঁটা শুরু করলো বাসার পথে । দ্রুত ৪ রাস্তার মোড় চলে এলো ।
ইমনঃ
আল্লাহ হাফেজ!
পলাশঃ
আল্লাহ হাফেজ!
মাহিনঃ
আল্লাহ হাফেজ! রুমন, তুই পারলে আজকে ইশাদের সাথে থাকিস ।
রুমনঃ
আচ্ছা, আমিও তাই ভাবছি, আল্লাহ হাফেজ ।
ইশাদঃ
আল্লাহ হাফেজ ।
তারপর
পলাশ আর ইমন এক রাস্তায়, মাহিন এক রাস্তায় এবং ইশাদ আর রুমন আরেক রাস্তায় চলে গেলো
।
(সমাপ্ত)