অপবাদ পর্ব-৬
অপবাদ(৬)
সন্ধ্যার
সময় বাজার থেকে মোবাইলে ফ্লেক্সিলোড শেষে ঘরে বাসার দিকে যাচ্ছিলো রুমন । বিল্ডিঙে
ঢুকতেই দেখল, লিফটের দরজা চেপে যাচ্ছে । তাড়াতাড়ি যেয়ে দরজার মাঝে হাত রাখতেই লিফটের
দরজা আবার খুলে গেলো । ভেতরে হুডি পড়া একটা ছেলে । মাথায় হুডি দিয়েই মাথা নিচু করে
মোবাইল চালাচ্ছিল বলে চেহারা দেখা যাচ্ছিলো না । তবে রুমন মনে মনে একটু হাসলো । এই
গরমে হুডি কে পড়ে! যাই হোক, ভেতরে ঢুকে লিফটের ৬নং বোতামটা চেপে ডোর ক্লোজ হবার বোতামটা
চেপে দিতেই লিফট চলা শুরু করলো । ঠিক যেই মুহূর্তে লিফট ওপরে ওঠা শুরু করলো, সেই মুহূর্তেই
হুডি পড়া ছেলেটা রুমনের কাছে এগিয়ে এসে রুমনকে জাপটে ধরে রুমনের গলায় একটা ছুরি ধরে
প্রায় ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো, “শুন! তোর ভাই, জিতু, ওরে একটু সাবধান থাকতে কইস । নিজের
জানের পরোয়া যেন একটু করে । রায় ঘোষণার দিন বা তার আগে কোন বাড়াবাড়ি যদি করে, তোর ওই
জিতু ভাই আর জিন্দা থাকবো না কিন্তু!” ৬ নং ফ্লোর আসতেই হুডি পড়া ছেলেটা রুমনকে ধাক্কা
মেরে বের করে দিলো । রুমন কোনোক্রমে পেছন ফিরে তাকাতেই লিফটের দরজা বন্ধ হতে ধুরু করলো,
বন্ধ হবার একটু আগেই ভেতরের ছেলেটা হুডি খুলল । চিনতে ভুল হল না রুমনে! জদু সেন!
(ইন্ট্রো)
রাত
সাড়ে ৮টার দিকের কথা । জেলে বসে একপাশে গল্প করছিলো বজলু আর বিল্লাল । ইশাদ বাইরে ছিল,
মাত্র ভেতরে এলো । কিন্তু এসেই লিমনের কাছে এগিয়ে গেলো । খেয়াল করে দেখল, লিমন নতুন
করে আরেকটা হাতের লেখা আয়ত্ত করার চেষ্টা করছে । ইশাদ লিমনের সামনে বসে পড়লো । তারপর
জিজ্ঞেস করলো, “কি ব্যাপার? নতুন হাতের লেখা?”
লিমনঃ
হ্যাঁ, তবে শুনলে অবাক হইয়া যাবা! কার হাতের লেখা ।
ইশাদঃ
কার?
লিমনঃ
তোমারে যে অপবাদ দিছে, জদু ।
ইশাদঃ
কি! তুমি সেই খাতা পেলে কি করে?
লিমন
আশেপাশে তাকিয়ে দেখল, কেউ আছে কি না , তারপর ইশাদের দিকে একটু এগিয়ে এসে বলল, “তোমাকে
বজলু আঙ্কেল কিছু বলছে?”
ইশাদঃ
কি ব্যাপারে?
লিমনঃ
সিরিয়াস কিছু, যা আমি আর বজলু আঙ্কেল ছাড়া কেউ জানে না!
ইশাদঃ
পালানো?
লিমনঃ
হ্যাঁ হ্যাঁ! উনি স্কুলের পুরাতন খাতাপত্রের স্টোর থেইকা এই খাতা আনছেন ।
ইশাদঃ
তা জদুরই কেন আনলেন?
লিমনঃ
খারাপ না ওর হাতের লেখা, ভালোই ।
ইশাদঃ
তাও ঠিক । একটা জিনিস জানো তো, মানুষ যতই খারাপ
হোক, কিছু না কিছু একটা বিষয় থাকেই যার প্রতি সে বেশ আকৃষ্ট হয়ে থাকে ।
লিমনঃ
ও আচ্ছা ।
ইশাদঃ
ওর খাতাটা কি একটু দেখতে পারি?
লিমনঃ
অবশ্যই!
ইশাদ
জদুর খাতাটা হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো । পরিক্ষার খাতার সাধারণত যা হাল হয় এও তার ব্যাতিক্রম
নয় । শুরুর দিকে সুন্দর, শেষের দিকে অসুন্দর । তবে জদুর হাতের লেখা সুন্দর হলেও প্রশ্নের
উত্তর ভালোমতো দিতে পারে না । বাংলা দ্বিতীয় পত্র খাতা । এর মধ্যে পত্র লিখন লিখেছে
জদু । কিছুটা পড়ে যা বুঝলো পত্র লিখনের টপিক বোধ হয় এমন ছিল, তোমার মাদকাসক্ত ছোট ভাইকে
মাদকের কুফল এবং এর থেকে বেড়িয়ে আসার উপায় জানিয়ে পত্র লেখো । ইশাদ মনে মনে একটু হাসলো
। মাদকে আসক্ত একজন এই পত্র লিখেছে । তবে পত্রের চেয়ে জদুর পত্রের শেষে আকা খামটা বেশি
নজর কাড়ল ইশাদের । বোর্ড পরীক্ষায় সাধারনত প্রেরকের ঠিকানা উল্লেখ করে দেয়া থাকে ।
কিন্তু স্কুলের সাধারণ পরীক্ষায় তা থাকে না । সেখানে প্রেরকের ঠিকানার স্থলে পরীক্ষার্থী
মনমতো লিখে দেয় । অনেকে নিজের ঠিকানাই লিখে দেয় । তবে জদু লিখেছে রাহিগঞ্জ ঠিকানার
স্থলে । জায়গার নামটা শুনেই ইশাদের কেমন মনে হল কোথায় শুনেছে নামটা! তবে এখন মনে করতে
পারছে না । জিজ্ঞেস করলো, “কি ব্যাপার! জদু রাহিগঞ্জ লিখেছে কেন ঠিকানার স্থলে?”
লিমনঃ
ও! যদুর দাদু বাড়ি রাহিগঞ্জ । ওখানেই ওর বাবার বেড়ে ওঠা । যদুরও ছোটবেলার অনেকটা অংশ
সেখানেই কেটেছে । তাই ভালোবেসে সে সবসময় পরিক্ষার খাতায় ঠিকানার জায়গায় ও ওর রাহিগঞ্জের
দাদুবাড়ির ঠিকানা দেয় ।
ইশাদ
শুধু, “ও!” বলল । একটু পর একজন পুলিশ এসে ইশাদকে বলল, “এই পোলা, তোমারে কেডায় জানি
দেখতে আইছে ।” ইশাদ বুঝল জিতু ভাই ।
দেখা
করার কক্ষে আসতেই জিতু ভাইয়ের একটা কল এলো । জিতু কল ধরে কথা বলল, “হ্যাঁ বন্ধু!.........পেয়েছিস!.........কি!
দেখেছিস আমি বলেছিলাম, ঘাপলা কিছু একটা আছেই!............আচ্ছা অনেক কষ্ট দিলাম রে…………আল্লাহ
হাফেজ ।” বলে মোবাইল পকেটে রাখল ।
ইশাদঃ
কি হয়েছে ভাই?
জিতুঃ
অনেক কিছু! ওই ইনস্পেক্টর মিনহাজ আর লয়ার রাইসা দুইজনকেই আমার সন্দেহ হচ্ছিলো । এখন
সন্দেহ পরিষ্কার হল এই দেখে ওরা দুজনেই একই এলাকায় বড় হওয়া এবং এখনও সে এলাকায়ই আছে
।
ইশাদঃ
ও । কিন্তু এতে কি প্রমাণ হয়?
জিতুঃ
ওই মেয়েটার পোস্টমর্টেমও ওই এলাকাতেই হয়েছে ।
ইশাদঃ
কোন এলাকায় যেনো! শুনেছিলাম মনে হয় একবার আদালতে!
জিতুঃ
রাহিগঞ্জ ।
ইশাদঃ
ও হ্যাঁ! মনে পড়েছে! এজন্যই তখন নামটা চেনা চেনা লাগছিলো ।
জিতুঃ
কখন?
ইশাদঃ
ওই, ভেতরে একটা কয়েদি আছে, সে জদুর ক্লাসমেট । সে জদুর হাতের লেখা প্র্যাকটিস করছিলো,
সেখানেই পত্রলিখনের ঠিকানার জায়গায় জদু রাহিগঞ্জ লিখেছে ।
জিতুঃ
ও । লিখতেই পারে । এ আর এমন কি ।
ইশাদঃ
না, এমনি এমনি লেখে নি । রাহিগঞ্জ ওর দাদুবাড়ি । ওর বাবার বেড়ে ওঠা ওখানেই, ওরও ছোটবেলা
ওখানে কেটেছে ।
জিতুঃ
কে বলেছে তোমায় এসব?
ইশাদ
লিমনের কথা জিতুকে জানালে ইনস্পেক্টর দেলোয়ারের সহযোগিতায় লিমনকে ইশাদের সাথে এখানে
আসতে বলল । তারপর-
জিতুঃ
তুমি কি করে জানো এগুলো?
লিমনঃ
আমার ক্লাসমেট ছিল, ক্লাসে বইলা বেড়াইতো ।
জিতুঃ
ও । আমি নিশ্চিত এদের মধ্যে কিছু একটা সম্পর্ক তো আছে! কিন্তু কি সেটা!
লিমনঃ
একজন জানতে পারে ।
জিতুঃ
কে?
লিমনঃ
জদুর দাদি । রাহিগঞ্জের পাশের এলাকা মুজাদপুরে মুজাদপুর বৃদ্ধাশ্রমে থাকেন তিনি ।
১৬
জুলাই ২০২০, বৃহস্পতিবার ।
সকাল
সকাল ঘুম থেকেই উঠেই জিতু চলে গেছে মুজাদপুর বৃদ্ধাশ্রমে । সেখানে গিয়েই আম গাছ তলায়
এক বৃদ্ধাকে দেখতে পেলো । পড়নে তার সাদা শাড়ি আর গায়ে কোন অলংকার নেই । জিতু বুঝল মহিলা
হিন্দু ঘরের বিধবা । খগেন সেন-ও তো হিন্দু, না? এই মহিলা হয় খগেন সেনের মা, নতুবা খগেন
সেনের মা-কে চেনেন ধরে নিয়ে জিতু মহিলার কাছে গেলো ।
জিতুঃ
আচ্ছা, আপনি কি নম্বরিটেক এলাকার কাউন্সিলর খগেন সেনের মাকে চেনেন?
বৃদ্ধাঃ
কেন? কি দরকার তাকে?
জিতুঃ
খুব দরকার, একটা ছেলের জীবন মরণের ব্যাপার ।
বৃদ্ধাটা
একটু আক্ষেপ নিয়ে বলল, “যে ছেলে তার মা-কে দেখতে পারে না, তার পক্ষে একটা ছেলের জিবন
নষ্ট করা অস্বাভাবিক না ।”
জিতুঃ
আপনিই কি তবে খগেন সেনের মা?
বৃদ্ধাঃ
হ্যাঁ । আমিই ওই জানোয়ারের মা, মধুবালা কেষ্ট সেন । কেষ্ট আমার স্বামীর নাম ।
জিতুঃ
ও আচ্ছা । আপনার স্বামি তো মারা গেছে, না?
মধুবালা/বৃদ্ধাঃ
হ্যাঁ । তাকে সেই কবে যম এসে নিয়ে গেছে ।
জিতু
আড়ালে মোবাইল রেকর্ডার অন করলো । তারপর মধুবালাকে জিজ্ঞেস করলো, “আমি যদি আপনাকে কিছু
জিজ্ঞেস করি, আপনি আমার জবাব দেবেন?”
মধুবালাঃ
হ্যাঁ, তবে অডিও রেকর্ড কেন অন করলে, ভিডিও রেকর্ড অন করো!
জিতু
একটু লজ্জা পেল আড়ালে সে রেকর্ডার অন করেছে সেটা মধুবালা টের পেয়ে গেছে বলে ।
জেলের
ভেতর বিল্লালকে ক্ষেত পরিচর্যার কাজে সাহায্য করছিলো ইশাদ । কাজ করতে করতে বিল্লাল
জিজ্ঞেস করলো, “তোর বজলু আঙ্কেল নাকি নিজেরে প্রায় নির্দোষ প্রমাণ কইরা ফেলছে । সোমবার
নাকি রায় বইলা দিবে জজ । তোর রায় ঘোষণার পরের দিনই ।”
ইশাদঃ
হুম শুনেছি । সাথে এও শুনেছি তখন তো এই জেলের বাম পাশের অংশের লিডার তুমি হয়ে যাবা,
তারপর ওই ডান পাশের নতুন লিডার তোমার কাছ থেকে জেলের এই অংশও কেড়ে নেবে আর পুরো জেল
একাই রাজত্ব করবে ।
বিল্লাল
একটা শ্বাস ফেলে বলল, “হ, তুইও যাবিগা, বজলু আঙ্কেল ও যাবেগা, আমি একা । লিমনরে নিয়া
কদ্দুরই পারমু । ও বিচিতে মারা ছাড়া আর কিছু বোঝেই না ।”
ইশাদঃ
আমি যাবো কে বলেছে?
বিল্লালঃ
তুই কিছু করছোস, যে তুই এই জেলেই থাকবি?
ইশাদঃ
কিন্তু আমি কি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারবো?
বিল্লালঃ
পারবি ইনশাআল্লাহ ।
ইশাদঃ
তুমি এতো জোড় দিয়ে কি করে বলছো?
বিল্লাল
কথা ঘুরিয়ে বলল, “আমি দোষ না কইরাও জেলে, আর বজলু আঙ্কেল দোষ কইরাও ছাড়া পাইয়া গেলো
।”
ইশাদঃ
হুম । এটা সত্য উনি দোষ করেছেন, কিন্তু কখনও কখনও বেশি খারাপ জিনিস ঠেকাতে কম খারাপ কাজ না করে উপায় থাকে
না ।
বিল্লালঃ
হুম । উনার কাহিনি শুনছি । ম্যালা কষ্টকর । উনিও আমার মতোই নিজের ছোট ভাইরে বাঁচানোর
জন্য এই পথ বাইছা নিছে । ভালো কথা! জানিস, আমি আমার ভাইয়ের খোঁজ পাইছি!
ইশাদঃ
কোথায়?
এদিকে
বৃদ্ধাশ্রমে জিতুর ভিডিও রেকর্ডার অন করা মোবাইলের সামনে বক্তব্য প্রদান করছিলেন বৃদ্ধা
মধুবালা কেষ্ট সেন ।
“আমি
মধুবালা কেষ্ট সেন । খগেন আমার ছেলে । ছোটবেলা থেকেই ছেলে আমার বেশ ডানপিটে ছিলো ।
একটুও কথা শুনতো না । আমি ওর মা তাও কথাই শুনতো না । সে ছেলে বড় হয়ে কি হবে তা আমি
তখনই আঁচ করতে পেরেছিলাম । আমাদের পরিবারের সাথে বেশ খাতির ছিল আমার স্বামি, অর্থাৎ
কেষ্ট সেনের বন্ধু সুলেমান ইসলামের । সুলেমান ভাই ছিলেন মুসলিম । তার ছিল এক ছেলে,
এক মেয়ে । প্রথমে জন্ম হয় ছেলে মিনহাজের, আর তার ২ বছর পর জন্ম হয় তার মেয়ে রাইসার
। মিনহাজ আমার ছেলে খগেনের ২ বছরের ছোট ছিল ।”
জেলে
রুমে এসে একটা খবরের কাগজ নিয়ে তার একটা পাতা বের করে ইশাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বিল্লাল
বলল, “এই দ্যাখ! আমার ভাই! খবর পড়ার চাকরি করে!”
ইশাদ
দেখল কাগজটা । হেডলাইনে লেখা, অপরকে ছোট দেখাতে গিয়ে নিজেই ছোট হলেন সাংবাদিক । তবে
এখানে যে শুধু বিল্লালের ভাই খলিলেরই ছবি ছিল না, ছবি ছিল আরও চারজনেরও । ইমন, রুমন,
পলাশ আর মাহিন । সেদিনের সেই লাইভের খবর । ইশাদ পুরো খবরটা কোনোমতে পড়লো । বিল্লাল
জিজ্ঞেস করলো, “কি হইছে?”
ইশাদঃ
তোমার ভাইকে যারা অপমান………না অপমান বললে ভুল হবে, উচিত কথা শুনিয়েছে, তাঁরা আমার বন্ধু
।
বিল্লালঃ
ও । হ্যাঁ, আমিও পুরা খবর পড়ছি । আমিও দেখলাম, আমার ভাইয়ের এমনে কওয়া উচিত হয় নাই ।
এদিকে
বৃদ্ধাশ্রমে-
মধুবালাঃ
ছেলে মেয়ে দুটো যখন ছোট, তখন একবার ওর মা বাবা তাদের দুজনকে আমাদের বাসায় কদিনের জন্য
রেখে অফিসের কি কাজে বাইরে যায় । ছেলেমেয়ে সাথে নিয়ে যায় নি, কারণ সেখানে থাকার তেমন
সুব্যাবস্থা ছিল না । নিজেরা কষ্ট করে থাকা যায়, কিন্তু ছেলেমেয়েদের কষ্টে রাখা যায়
না, মা বাবার মন বলে কথা । কিন্তু……।
বলতে
গিয়ে থেমে যায় মধুবালা । জিতু জিজ্ঞেস করে, “কিন্তু কি?”
মধুবালাঃ
সেখান থেকে কাজ করে ফেরার পথে এক ভয়ঙ্কর এক্সিডেন্টে ওর বাবা মা দুজনেরই স্পট ডেথ হয়
।
কথাটি
শেষে আবার একটু থামলেন মধুবালা । জিতু বুঝতে পারলো, মহিলার পুরনো কথা মনে পড়ে হয়তো
খারাপ লাগছে, তাই আর কিছু বলল না । খানিক পর মধুবালা আবার বলা শুরু করলেন, “ছেলে মেয়ে
দুটোকে নেবার জন্য তার আত্মীয়রা উঠে পড়ে লাগে । তার আত্মীয়েরা কেমন ছিল তা বলতে পারবো
না, তবে ছেলে মেয়ে দুটো তাদের আত্মীয়ের চেয়ে আমাদেরই বেশি ভরসা করতো । আমরাও তাদের
মনকে বেশি গুরুত্ব দেই । তারপর তাঁরা আমাদের কাছেই বড় হতে থাকে ।”
এদিকে
জেলে-
বিল্লালঃ
ইশ! আমার ভাইয়ের সাথে দেখা করার একখান উপায় যদি জানতাম! চ্যানেলে গেলেও তো আমারে সহজে
ঢুকতে দিবো না ।
ইশাদঃ
এক কাজ করতে পারো ।
বিল্লালঃ
কি?
ইশাদঃ
আমার বন্ধুরা যেহেতু এই টকশোতে ছিল, ওদের কাছে হয়তো এনার নাম্বার থাকলেও থাকতে পারে
।
বিল্লালের
চেহারায় একটা হাসি ফুটে উঠলো । জিজ্ঞেস করলো, “তাই! তোর বন্ধুদের ক না! আমারে আমার
ভাইয়ের লগে দেখা করায় দিতে!”
ইশাদঃ
অবশ্যই বলবো, এখান থেকে বেরোতে পারলে তো তোমার ভাইকে সাথে নিয়ে আমি আসবো । আর নাহলে
জিতু ভাইকে বলবো একটু জোগাড় করতে নাম্বার ।
বিল্লালঃ
না! আমার ওর লগে তুই যাওয়ার আগেই দেখা করতে হবে!
ইশাদ
ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, “কেন?”
এদিকে
বৃদ্ধাশ্রমে-
মধুবালাঃ
মুসলমানের ছেলে মেয়ে, আমাদের বাসায় থাকতে সমস্যা একটু হইলেও ম্যানেজ করে নিতাম । যেমন
পুজোর সময় ওদের ধর্মে সেখানে থাকা নিষেধ, তখন ওদেরকে ওদের বন্ধুর বাসায় পাঠিয়ে দিতাম
। আবার ওদের তো গরুর মাংস খাওয়া জায়েজ, আমাদের তো গরু দেবতাতুল্য । ওদের হয়তো গরুর
মাংস খাওয়ার ইচ্ছে হতো, কিন্তু আমাদের কথা জেনে কখনও বলত না । আর কুরবানি করার মতো
অর্থও কিন্তু বয়সও তখন ওদের ছিল না । যাই হোক, ওরা খুব ভালো ছিল, অথচ সেই তুলনায় আমার
নিজের পেটের খগেন, সে যে কি বদমাইশ ছিল । মিনহাজ আর রাইসাকে আদর করতাম দেখে খগেন বেশ
হিংসে করতো । কলেজে ওঠবার পর আমার ছেলে এলাকার সব নেতাদের সাথে ঘুরে বেড়ানো শুরু করে
। কখন যে সে রাজনীতিতে নেমে পড়ে আমি নিজেও বুঝতে পারিনি । সেই রাহিগঞ্জ থেকে নম্বরিটেক
যেত । বছর ২৪-এ থাকাকালীন খগেন নাকি নম্বরিটেক এলাকার লোকদের নাকি খুব উপকার করেছিলো,
সেই উপকারিতার ফলস্বরূপ খগেন হয়ে যায় এলাকার কাউন্সিলর । তখনও আমাদের সাথে খগেনের যোগাযোগ
ছিল । খগেন বিয়ে করে, ওর বাচ্চা হয় । জদু । জদু আমাকে খুব ভালোবাসতো । এদিকে রাইসা
আর মিনহাজও নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে সেখানেই আলাদা ফ্ল্যাটে থাকা শুরু করে । ওদের বলেছিলাম
আমাদের সাথেই থাকতে, কিন্তু ওরা বলেছিল, আমাদের আর কষ্ট দিতে চায় না। কিন্তু আমাদের
ঋণ ওরা শোধ করতে পারবে না । মিনহাজ যোগ দেয় পুলিশে, আর রাইসা ল নিয়ে পড়াশোনা কয়ে হয়ে
যায় লয়ার । খগেনকে ওরা ভালোই বাসতো । এখন আসি আজ থেকে প্রায় ৫ বছর আগে । আমার স্বামীর
তখন মুমূর্ষু অবস্থা । বিছানায় শুয়ে সম্পত্তি ভাগ করার সময় যখন খগেন দেখল, আমার স্বামি
রাইসা আর মিনহাজের প্রত্যেককে খগেনের সমান সম্পত্তি দিয়েছে, তখনই খগেনের রাগ উঠে যায়
। রাইসা আর মিনহাজ সে সম্পত্তি নিতে চায় নি, এমনকি নেয়ও নি । খগেন এসে প্রতিদিনই বাড়িতে
এসে ঝগড়া করত । রাইসা আর মিনহাজ বেচারা দুটোকে বেশ অপমান করত । আমার স্বামি মারা যায়
যেদিন, সেদিনও অপমান করা ছাড়ে নি । পড়ে একদিন রাইসা আর মিনহাজ নিজেদের অংশ দিয়ে দেয়
খগেনকে । খগেন তা নির্লজ্জের মতো নেয়ও । আমি খগেনের ওপর রাগ করে যে ছোট একটা অংশ আমার
নামে ছিল, সেটাও খগেনকে দিয়ে চলে আসি বৃদ্ধাশ্রম । রাইসা আর মিনহাজ আমাকে তাদের কাছে
রাখতে চাই, কিন্তু আমি যাইনি । রাইসা আর মিনহাজ আমাকে প্রায়ই দেখতে এলেও খগেন আমাকে
একদিনও দেখতে আসে না ।”
এদিকে
জেলে ইশাদের কথার জবাবে বিল্লাল বলল, “কাজ আছে ।”
ইশাদঃ
কি কাজ?
বিল্লালঃ
তুই বুঝবি না ।
ইশাদঃ
ভাই, তুমি আমাকে বলতে পারো । সমস্যা নাই ।
বিল্লালঃ
দ্যাখ! ভালো হইয়া গেছি মানে কিন্তু এই না এখনও তোরে মারমু না! বেশি কথা না কইয়া আমার
ভাইয়ের নাম্বার জোগাড়ের চেষ্টা কর ।
বলে
বিল্লাল টয়লেটের দিকে গেলো । ইশাদ কিছু বলতে যেয়েও বলল না ।
এদিকে
বৃদ্ধাশ্রমে মধুবালার এ পর্যন্ত কথা শেষ হতেই জিতু জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা, আপনি কি জানেন,
আমি কেন এসেছি আপনার কাছে?”
মধুবালাঃ
হ্যাঁ জানি, একটা মেয়ের খুনের অপবাদ একটা ছেলের ওপর দেয়া হয়েছে ।
জিতুঃ
খুনটা আপনার নাতি করেছে, তা কি জানেন?
মধুবালাঃ
সেকি তাই! তা তো জানি না! শুধু এটুকু জানি ওই ছেলেটাকে এই খুনের দ্বায়ে না জড়ালে খগেনের
বেশ ক্ষতি হয়ে যাবে ।
জিতুঃ
মিনহাজ আর রাইসা তো ভালো, তবু কেন তাঁরা একটা ছেলেকে এভাবে ফাসাচ্ছে?
মধুবালা
একটু হাসলো । জিতু জিজ্ঞেস করলো, “আপনি হাসছেন কেন?”
মধুবালাঃ
হাসছি কারণ এর জবাব আমার কাছেও নেই । হয় ওরা পাল্টে গেছে, নয়তো ভাইকে বাঁচাচ্ছে । আবার
ওদের বিভিন্ন মিথ্যে কথা বলিয়েও কাজটা করাতে পারে ।
জিতু
কিছু একটা বলতে যাবে, এমন সময় মধুবালা বললেন, “ওইতো! আমার ছেলে আর মেয়ে এসে গেছে, মিনহাজ
আর রাইসা ।” জিতুর বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো । পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো, অবাক দৃষ্টিতে
তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মিনহাজ আর রাইসা ।
সেদিন
দুপুরের কথা । লাইনে দাঁড়িয়ে খাবার নেয়ার পর খেতে যাবার সময় হঠাৎ ডান পাশের অংশের নতুন
সর্দার রানা এসে ইশাদের খাবার কেড়ে নিলো । তারপর চলে যাওয়ার জন্য পেছন ফিরতেই দেখল,
বিল্লাল দাঁড়িয়ে । কশে একটা ঘুশি মারল বিল্লাল রানার গালে । রানা মাটির ওপর ইশাদের
পায়ের কাছে শুয়ে পড়লো । বিল্লাল রাগ নিয়ে বলল, “ডান পাশের তুই, ডান পাশের কারো ওপর
জোড় দেখাইতে আসবি না, হাত পা ভাইঙ্গা গুড়া গুড়া কইরা দিমু! আর আমার ভাই ইশাদের ওপর
তো আরও না!” ইশাদের মনে একটা অজানা আনন্দ ধরা দিলো । সেই প্রথম দিনের বিল্লাল ভাই,
আর আজকের বিল্লাল ভাই, দুজনের মধ্যে বেশ তফাত । কিন্তু এসব ভাবতে ভাবতে খেয়ালই করেনি
রানা উঠে দাঁড়িয়েছে আর বিল্লালের সাথে রানার একটা মারামারি লেগে গেছে । পাশেই বসে খাচ্ছিলো
লিমন । সকালে ঘুম থেকে দেরিতে ওঠায় খেতে পারে নি । তাই এখন একটু বেশি করে খাবার নিয়েছে পেট ভরানর জন্য । প্রথম লোকমাটা যেই না মুখে নিতে
যাবে, অমনি মারামারির এক ফাঁকে রানার পা লেগে লিমনের খাবারের থালাটা পড়ে তো যায়ই, সাথে
হাতের লোকমাটাও পড়ে যায় এক পাশে । লিমনের প্রচণ্ড রাগ উঠলো । মেঝে থেকে প্লেটটা তুলে রাগ নিয়ে বলে উঠলো, “বিল্লাল ভাই সইরা
যাও!” বিল্লাল সরে গেলো, আর প্লেটটা এমনভাবে ছুঁড়ে মারল, তা আঘাত করলো রানার অণ্ডকোষ
বরাবর । আর এতোটাই জোড়ে আঘাত করলো যে, প্লেটটা ভেঙ্গে তারপর মাটিতে পড়লো ।
বিকেলের
কথা । মাহিন, রুমন, ইমন আর পলাশ ইশাদদের বাসায় বসে ছিল । জিতু ভাই আসার কথা থাকলেও
এখানে আসার পর রুমনের কাছে জানতে পারলো জিতু আসবে না ।
ইমনঃ
কি বলছে জিতু ভাই?
রুমনঃ
জানি না রে, সকালে তো বলল মুজাদপুরে গেছে । কি করতে তার বলে নাই, কিন্তু পড়ে আর কিছুই
বলল না । শুধু বলল বিকেলে আসতে পারবে না আমাদের সাথে দেখা করতে ।
মাহিনঃ
আর মাত্র দুইদিন, জানি না কি হবে ।
পলাশঃ
সব ঠিক হয়ে যাবে দেখিস ।
ইমনঃ
তুই তো ঝামেলা একটা বাধায় দিছিলিই!
পলাশঃ
ভাই! আমার উদ্দেশ্যটা কিন্তু খারাপ ছিল না!
রুমনঃ
পদ্ধতিটা খারাপ ছিল । তোর আমাদের সাথে পরামর্শ করা উচিৎ ছিল ।
পলাশঃ
আচ্ছা ভাই, মাফ তো চাইসি-ই, নাকি?
মাহিনঃ
বাদ দে ভাই, পুরনো কথা তুইলা লাভ নাই । রুমন,
গতকাল তুই মেসেজে কি জানি বলতেছিলি, জদু কি নাকি করছে?
রুমনঃ
ও হ্যাঁ, ওইটাই ভাবতেছিলাম এতক্ষণ যে তোদের কিছু বলতে চাইছিলাম ।
ইমনঃ
কি?
রুমনঃ
গতকাল জদু আমারে হুমকি দিয়া গেছে । জিতু ভাই যেন আর কিছু প্রমাণের চেষ্টা না করে ।
পলাশঃ
হেহ! সাহস কত্ত বড় । ওরে ভয় পাই নাকি । তুইলা আছাড় মারবো সামনে পাইলে!
ইমনঃ
তুই কিছু বললি না?
রুমনঃ
না । সুযোগ পাইনাই । আমারে কথা বইলা লিফটে কইরা চইলা গেছিলো । আর ওর কাছে ছুরি ছিল
।
এদিকে
জিতু এসেছে মিনহাজের বাসায় । সাথে রাইসাও আছে । সকালে মিনহাজ সেই বৃদ্ধাশ্রমে জিতুকে
বলেছিল, ভিডিও কাউকে না দিতে এবং এই ব্যাপারে কাউকে কিছু না বলতে । কারণটা বিকেলে মিনহাজের
বাসায় এসে জানতে । তাই জিতুর এখানে আসা ।
মিনহাজঃ
আমার বউ একটু ওর বাবার বাড়ি গেছে, ওর বাবা অসুস্থ তো, তাই দুঃখিত, আপ্যায়নের কিছু আয়োজন
করতে পারলাম না ।
রাইসাঃ
আমি চেয়েছিলাম কিছু করতে, কিন্তু আমি একটু ব্যাস্ত হয়ে গিয়েছিলাম । আমাদের এজন্য ক্ষমা
করবেন ।
জিতুঃ
আমি এখানে আপনাদের আপ্যায়ন পেতেও আসি নি । আমি জানতে এসেছি! প্রশ্নের জবাবা পেতে এসেছি!
মিনহাজঃ
ভাই! শোনেন, আমি নিজের ইচ্ছায় এটা করছি না, আমিও চাই না বেচারা ছেলেটা এমনি কষ্ট পাক
। কিন্তু ওকে না ফাসালে আমরা আমাদের মা-কে হারাবো ।
জিতুঃ
মানে?
রাইসাঃ
খগেন সেন আমাদের বলে দিয়েছে ওই ছেলেটাকে ফাঁসানোর যেকোনো একটা ব্যাবস্থা করতে । আমরা
বারণ করলে ওরা আমাদের মা-কে মেরে দেবে ।
জিতুঃ
এতো খারাপ কেন খগেন সেন! নিজের মা-কে মেরে ফেলবার হুমকি কেউ দেয়?
মিনহাজঃ
খুব খারাপ ও! আপনি জানেন না, মা-ও নিশ্চয়ই লজ্জায় বলেন নি । বিয়ের আগেই আরেক মেয়ের
সাথে সম্পর্ক করেছিলো খগেন সেন । সেই মেয়েটার
গর্ভে জন্ম নেয়া এক বাচ্চার বাবাও হয়েছিলো । সেই বাচ্চাটাকে মেরে ফেলার কথা বলেছিল
খগেন, কিন্তু মেয়েটা বাচ্চাটাকে না মেরে কোথায় পাঠিয়ে দিয়েছিলো কেউ জানতো না । তারপর
রাগে খগেন সেই মেয়েটার শরীরে ইনজেকশন দিয়ে এসিড পুশ করে মেরে ফেলেছিল!
কথাগুলো
শুনে বুক কেপে উঠছিলো জিতুর । এতো ভয়ানক একটা মানুষ খগেন সেন!
জিতুঃ
আমি কিছু বুঝতে পারছি না, এতো খারাপ একটা লোকের জন্য কেন আপনারা লড়ছেন? আর আপনি তো
পুলিশ, আপনার মাকে নিরাপত্তা দিতে পারেন তো!
মিনহাজঃ
লাভ নেই, আমার উপর মহলের লোকেদের সাথেও যে ওর যোগাযোগ আছে । আমি করতে চাইলে ও হয়তো
আগেই জেনে যাবে ।
জিতুঃ
তাহলে ডেকেছিলেন কেন?
রাইসাঃ
ওইযে বললাম, প্লিজ এই ভিডিও কাউকে দেবেন না, তাহলে ওরা মাকে ছাড়বে না! আমি তো মায়ের
সাথে কথা বলেছেন, দেখেছেনই তো, মা কত সহজ সরল মানুষ!
জিতুঃ
তা বলে ওই ছেলেটা শাস্তি পাবে? ও কি দোষ করেছে!
মিনহাজঃ
আর আমাদের মা কি দোষ করেছে!
জিতু
কিছু বলতে পারলো না । মনে মনে প্রায় কেদে দিলো । কারণ বেচারি বৃদ্ধার জন্য যে ওর কষ্ট
হচ্ছে না, তাও না । কিন্তু ইশাদ! সে বেচারা কেন শাস্তি পাবে! জিতু রাগ করে উঠে দাঁড়িয়ে
কান্না মাখা স্বরে বলল, “আমি জানি না! আমি আমার মক্কেলের হয়ে লড়বো! আমার মক্কেলকেও
বাঁচাবো! আমাকে ক্ষমা করবেন!” বলে সেখান থেকে বেড়িয়ে এলো ।
মাগরিবের
একটু পরের কথা । জেলে বিল্লালের পাশে বসেছিলো ইশাদ আর লিমন । বজলু রুমের বাইরে তখন
। বিল্লালের পায়ে আঘাত লেগেছে, তাই শুয়ে আছে ।
ইশাদঃ
লিমন! ভাই! আজকে তুমি যা করলা!
লিমনঃ
তেমন কিছু না, রাগের বহিঃপ্রকাশ মাত্র ।
বিল্লালঃ
ভালো করছিস, ওই বদমাইশ মরলে বাচি!
একটু
পর বজলু এলো ভেতরে । তারপর বলল, “এই! তোমরা জানো কি হয়েছে?”
ইশাদঃ
কি?
বজলুঃ
আরে রানা মারা গেছে!
লিমনঃ
আচ্ছা, বুঝতেছি না, কষ্ট পাবো, নাকি হাসবো?
ইশাদঃ
আহ লিমন! যাই হোক, মানুষ তো । মরে গেছে, এখন আর কিছু বলার দরকার নাই ।
বজলুঃ
আমি ভাবছি অন্য কথা ।
ইশাদঃ
কি?
বজলুঃ
বিল্লালকে ওর লিডারশিপ ফিরিয়ে দেবার কথা ।
ইশাদঃ
হ্যাঁ তাই তো! ভাবিই নি এটা!
লিমনঃ
আরে ওইটার প্যারা নাই । সকাল হইলে ওই পাশের কয়েদীরাই আইসা দেইখো বিল্লাল ভাইরে নিয়া
যাবেনে ।
বিল্লালঃ
আমি অন্য কিছু চাই ।
ইশাদঃ
কি?
বিল্লালঃ
এইবাড় ডান বাম না, পুরা জেলেরই সবাইরে লিড দিবো বজলু আঙ্কেল, আর আমি উনার সহযোগী হমু
।
বজলুঃ
না না, এ কেমন কথা?
বিল্লালঃ
না, আমি ভালো লিডার না । জেইল একখান সংশোধনাগার । এইখানে ভালো নেতা পাইলে সংশোধনও ভালো
হবে ।
ইশাদঃ
কথা ভুল না, তবে আমার মনে হয় ভাই, তুমিও এখন একটা ভালো লিডার হবার যোগ্যতা অর্জন করেছো
।
বিল্লাল
একটু লজ্জা পেলো কথাটা শুনে, কিন্তু জবাবে কিছু বলল না ।
রাত
প্রায় ৯টা । নিজের রুমের বারান্দায় বসে ছিল জিতু । ভাবছিল । একবার বৃদ্ধার কথা, একবার
ইশাদের কথা । ভাবছিল কি করবে! এমন সময় ওর মোবাইলে একটা কল এলো । নাম ভেসে উঠলো, ইনস্পেক্টর
মিনহাজ ।
কল
ধরতেই মিনহাজ বলল, “আপনি একবার আমার বাসায় আসতে পারবেন?”
জিতুঃ
কেন? আবার আমাকে অনুরোধ করার জন্য ভিডিওটা না দিতে?
মিনহাজঃ
না! প্লিজ আপনি একবার আসুননা আমার বাসায়!
জিতুঃ
দেখুন, আপনাকে অনেকবার বলেছি, আমার পক্ষে সম্ভব না । আপনাদের মায়ের জন্য কষ্ট আমারও
হচ্ছে । কিন্তু আমি কিছু করতে পারবো না, আমাকে মাফ করবেন!
মিনহাজঃ
আরে আমার কথা তো শুনুন! আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে, তাতে ইশাদও রক্ষা পাবে, আমাদের
মা-ও রক্ষা পাবে ।
জিতুঃ
বাহ! হঠাৎ এতো রাতে আপনার মাথায় একটা সুন্দর ফন্দি চলে এলো?
মিনহাজঃ
প্লিজ! আপনি আসুন না! আপনার কাছে হাত জোড় করছি! প্লিজ!
জিতুঃ
আচ্ছা, বুঝলাম, কিন্তু এখনি যেতে হবে? কাল গেলে হয় না?
মিনহাজঃ
না, কাল সম্ভব না! সবটা কলে বলা সম্ভব না! আপনি প্লিজ আসুন!
জিতুঃ
ঠিক আছে, আমি আসছি ।
সন্ধ্যা
থেকে ইশাদ অপেক্ষা করে ছিল আজ জিতু ভাই দেখা করতে আসবে কি না । কিন্তু আসবার কোন লক্ষনই
দেখা যাচ্ছে না । বোধ হয় আজ আসবে না । বিল্লালের ভাই খলিলের ফোন নাম্বার নেবার খুব
ইচ্ছে ছিল । সেটাই বলতে চেয়েছিল ইশাদ জিতুকে । কিন্তু জিতু যে আসছে না! অবশ্য জিতু
সবদিনই আসে তাও নয় । তবুও, আসতে পারে আশা নিয়ে রুমের সামনে দাঁড়িয়ে রইলো ইশাদ । রুমের
ভেতর একটু দূরে ছিল বিল্লাল । ইশাদকে দেখছিল । বজলু এসে জিজ্ঞেস করলো, “লয়ার জিতুর
অপেক্ষা করছে না, তোমার ভাই খলিলের নাম্বার আনার জন্য?”
বিল্লালঃ
জানি না, কিন্তু সেইরকমই মনে হইতাছে ।
বজলুঃ
চিন্তা কোরো না, কাশেমকেও বলেছি, ও জোগাড় করতে পারবে ।
বিল্লাল
কিছু বলল না । বজলুর ওপর ওর ভরসা আছে ।
রাতে
রিকশা পাওয়া কষ্টকর । তাই উবার থেকে গাড়ি নিয়ে জিতু এসেছে রাহিগঞ্জে । ড্রাইভারকে টাকা
দিতেই ড্রাইভার জিজ্ঞেস করলো, “ভাই, যাইতাছেন কই?”
জিতুঃ
এদিকেই, বাজারের ওপাশে । কেন?
ড্রাইভারঃ
আমি মানা করুম না, তয় আপনেরে সাজেশন দিতাছি, যাইয়েন না, এই জায়গাটা ভালা না!
জিতুঃ
জানি না, তয় দেখতাছেন না, কেমন শুনশান!
জিতু
তাকিয়ে দেখল, আসলেই এলাকাটা শুনশান, আশেপাশে কাউকে দেখা যাচ্ছে না, একটা মানুষও নেই
। জিতু ড্রাইভারকে বলল, “সমস্যা নেই, আমি কাজে একজন পুলিশেরই বাসায় যাচ্ছি ।”
অদ্ভুত
নির্জনতা পেরিয়ে মিনহাজের বাসায় এসে পৌঁছল জিতু । দরজায় নক করতেই একটু পর দরজা খুলে
গেলো এক মুহূর্তের জন্য জিতু অবাক! ভেতরে রাইসা আর মিনহাজ দুজনেই হাত পা মুখ বাধা অবস্থায়
এবং গুণ্ডারা তাদের ঘিরে আছে । জিতুর দিকে এক গুন্ডা গুলি তাক করায় জিতু পালাতে পারলো
না । হ্যান্ডস আপ করে ভেতরে ঢুকল । খেয়াল করে দেখল, ভেতরে আরও একজন আছেন । খগেন সেনের
মা, জদু সেনের দাদি, মিনহাজ আর রাইসা পালক, বৃদ্ধা মধুবালা কেষ্ট সেন হাত পা মুখ বাধা
অবস্থায়!