0 %

Thanks a lot for being with us!
We are re-constructing our website!
Sorry for this temporary inconvenience
We are coming to you with a fresh look and design from 1 January 2022!
Till then! Stay connected!

অপবাদ পর্ব-৫

 অপবাদ (৫)

 

জিতুঃ ইশাদ, কেমন আছো?

ইশাদঃ খুব ভালো। স্বাভাবিক জীবনের চেয়ে এই জীবনটাই আপন মনে হচ্ছে ।

জিতুঃ ভেতরে কয়েদিরা ভালো ব্যবহার করে তো?

ইশাদঃ মাহিন, ইমন, পলাশ কিংবা রুমনের মতো না হলেও জদুর চেয়ে বহুগুণ ভালো ।

জিতুঃ যাক, ভালো হলেই ভালো ।

ইশাদঃ আমার বাবা মা কেমন আছে?

জিতুঃ আগের মতই ।

ইশাদঃ বাবা না হয় অসুস্থ, কিন্তু মা একবারও দেখতে এলো না আমায়!

জিতুঃ উনি অভিমান করেছেন বেশ ।

ইশাদঃ আর বন্ধুরা?

জিতুঃ তুমি তো জানোই, ওরা সুযোগ পায় না । তবুও মাঝে মাঝে ওরা চেষ্টা করে । দেখি সুযোগ পেলে, আমি ওদের আনতে পারি কি না ।

কিছুক্ষণ দুজনে চুপ । তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইশাদ জিজ্ঞেস করলো, "আচ্ছা, আমার কি শাস্তি হতে পারে বলে আপনার মনে হয়?

জিতুঃ সেটা বিচারকের ওপর ডিপেন্ড করছে ।

ইশাদঃ যেমন?

জিতুঃ যেমন, আমাদের দেয়া প্রমাণের ভিত্তিতে বিচারকের যদি মনে হয় তুমি নির্দোষ, তবে তুমি ছাড়া পাবে, আর আসল আসামি দেশের আইন অনুসারে শাস্তি পাবে ।

ইশাদঃ আর প্রমাণ আমার বিপক্ষে গেলে?

জিতুঃ ইশাদ, তুমি তো জানোই, তুমি দোষী নও!

ইশাদঃ ধরুন আমার বিরুদ্ধে সাজানো মিথ্যা প্রমাণ!

জিতুঃ তাহলে আইন অনুসারে তুমি শাস্তি পাবে, আসল দোষী ছাড়া পাবে ।

ইশাদঃ আমার কি মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে?

জিতু কোনো কথা বলল না ।

ইশাদঃ কি হলো? জবাব দিন?

জিতুঃ মৃত্যুদণ্ড হলেও হতে পারে ।

ইশাদ যেনো আরো হতাশ হয়ে পড়লো ।

(ইন্ট্রো)

১৪ জুলাই, ২০২০ মঙ্গলবার ।

সকালে রান্নাঘরে থালাবাসন মাজছিল বুয়া । মা গেছেন পাশের বাসার ভাবির সাথে গল্প করতে । পলাশ সেই সুযোগে রান্নাঘরে এলো । গলা খাখরে বুয়ার এটেনশন পাওয়ার চেষ্টা করলেও, প্রথম চেষ্টায় ব্যর্থ হল পলাশ । তারপর ডেকে উঠলো, “খালা!” বুয়া তাও শুনতে পেল না । পলাশ আবার ডাকলো, “খালা!” বুয়া শুনতে পেয়ে পেছন ফিরে জিজ্ঞেস করলো, “জি বাইয়ে! কিছু কইবেন?”

পলাশঃ বলছিলাম যে, আপনাকে খুব সুন্দর লাগছে! পুরা কারিনা কাপুরের মতো!

বুয়াঃ ও মা তাই! তয় আমার কারিনা কাপুররে ভাল্লাগে না । তয় আমার হিরো আলমরে খুব ভালা লাগে, অনেকটা তোমার মতোই দেখতে!

পলাশঃ **!

বুয়াঃ কিছু কইলা?

পলাশঃ ঝাল! মানে আম্মুর রান্নাটা আজকে একটু ঝাল হয়েছে । সকালের নাস্তায় ঝাল কি ভালো লাগে বলেন!

বুয়াঃ ও আইচ্ছা । আমারও তো ঝালে সমস্যা হয়, ক্যামন জানি মাথা হুই হুই হুই হুই করে!

পলাশঃ ওওও!

এমন সময় পলাশের মায়ের আওয়াজ । “আর ভাল্লাগে না!” বলে ঘরে ঢুকল পলাশের মা । পলাশ মায়ের ঘরে আসা টের পেয়ে নিজের রুমে যেয়ে পড়ার টেবিলে বসলো । পলাশের মা এসে বুয়াকে বলল, “কি খালা, কাম কদ্দুর হইলো?”

বুয়াঃ এইতো খালা, থালাবাসন প্রায় মাজা হইয়া গেছে, এরপর ঘর মুছমু ।

পলাশের মাঃ ও । খাওয়া দাওয়া করছো নাকি?

বুয়াঃ হ খালা, হালকা পাতলা কাউন্সিলরের বাড়ি খাইসি ।

পলাশের মাঃ ও, তা আমার বাসায়েও একটু খাও!

বুয়াঃ না খালা, আপনের বাসায় খাইলে আমার মাথা হুই হুই হুই হুই করবেনে ।

পলাশের মাঃ ক্যান?

বুয়াঃ আপনে যে খাবারে ঝাল দিছেন খুব!

পলাশ একটু ভয় পেল ।

পলাশের মাঃ মানে! কে বলসে তোমারে?

বুয়াঃ ওই যে আপনের পোলা!

পলাশের মাঃ ও ঝাল পাইলো কই? ওয় তো সকালে সেমাই দিয়া পরোটা খাইছে ।

পলাশ রুম থেকে বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো, “ধ্যাত!”

“বাতাবী লেবুর ফলন ভালো হওয়ার খুশির বাতাসে লুঙ্গি আকাশে উত্তরবঙ্গের চাষিদের । গেলো বছরের থেকে এ বছর ভালো ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা ।”

টিভি দেখছিলো মাহিন । তখন কল করলো রুমন ।

রুমনঃ হ্যালো দোস্ত, কি অবস্থা?

মাহিনঃ কিছু হইছে নাকি?

রুমনঃ না, এমনি, ভাল্লাগতেছিলো না, তাই কল দিলাম ।

মাহিনঃ ও, আচ্ছা ।

রুমনঃ কি করতেছিস?

মাহিনঃ এই, বাতাবি লেবুর ভালো ফলনের সংবাদ শুনি ।

রুমনঃ ও হ! আমিও তো একই চ্যানেল ছাইড়া দিয়া বইসা আছি । এইডা সেই সাংবাদিক না! আমাদের ইন্টারভিউ নিলো যে?

মাহিনঃ হ ।

রুমনঃ বেচারা আর কোন খবর না পাইয়া এই খবর পড়তেছে মনে হয় ।

মাহিনঃ হ । তবে উনার খবর শুনতে ভালোই লাগতেছে । এখন তো ভাইরাল টপিক ইশাদ । যেখানে যাই ইশাদের মিথ্যা অপবাদের ব্যাপারে কত যে উপন্যাস বানানো হইছে । তার চেয়ে বাতাবি লেবুর খবরই ভালো ।

রুমনঃ কি আর কমু । কথা ঠিক বলসোস, হাসির কথা, কিন্তু যে ব্যাপারে বলসোস, সেটা কষ্টদায়ক তাই হাসতেও পারতেছি না শান্তিমতো ।

এদিকে, পলাশের মা পলাশের কাছে এসে বলল, “কিরে, বুয়ারে কি বলছোস?”

পলাশঃ কই, কিছু না তো!

পলাশের মাঃ হুম । বিশ্বাস করলাম । তুই তো আবার বুয়ার ব্যাপরে কথা বলতেই পছন্দ করোস না!

পলাশঃ  মা! বলছি কি! তোমার এই বুয়াটা ভালো! কিন্তু বাদ টাদ দিয়ো না এরে!

পলাশের মাঃ ক্যান! তুই এই চিন্তা করোস ক্যান?

পলাশঃ আরে বোঝো না! কাউন্সিলরের বাড়ি কাজ করে!

পলাশের মাঃ অ্যাঁহ! আমি ওই কাউন্সিলরের ট্যাকায় খাই না পড়ালেখা করি!

বলে পলাশের মা নিজের রুমে চলে গেলো । পলাশ নিজের টেবিলে বসে পড়লো । একটু পর ওর মা দরজায় এসে বলল, “শোন! আমি একটু বাজারে যাইতেছি! তুই বাইরে যাইস না! খালার কাজ শেষ হইলে যাইস!” সোহানের চেহারায় একটা আনন্দের হাসি ফুটে উঠলো । মনে মনে বলল, “পাইছি এইবার বুয়ারে একা ।”

সকালের খাওয়া শেষে বাগানে গেলো ইশাদ । একা একা বসে আছে বিল্লাল । কাছে যেয়ে বসলো ইশাদ ।

বিল্লালঃ কিরে! তুই এইহানে কি করোস!

ইশাদঃ এমনি, তুমি এখানে কি করো ভাই!

বিল্লালঃ ** ছিড়তেছি!

ইশাদঃ আরে ভাই! রাগ করো কেন!

বিল্লালের কাছ থেকে কোন জবাব পেল না ইশাদ, তাই ইশাদও চুপ করে রইলো । ইশাদ হয়তো রাগ করেছে ভেবে একটু পর বিল্লাল ইশাদকে বলল, “সরি!”

ইশাদঃ ইটস ওকে ভাই! ব্যাপার না ।

বিল্লালঃ আচ্ছা তোর কি এই জেল ভাল্লাগে!

ইশাদঃ হঠাৎ এই প্রশ্ন?

বিল্লালঃ এমনিই জিগাইতেছি । ভাল্লাগে?

ইশাদঃ জানিনা । তবে হ্যাঁ, তুমি, লিমন, বা বজলু আঙ্কেলকে ভালো লাগে ।

বিল্লালঃ ও ।

ইশাদঃ কেন? তোমার? ভাল্লাগে নাকি?

বিল্লালঃ ভাল্লাগে কিনা জানি না, কিন্তু খারাপও লাগে না । তবে তোর জন্য খারাপ লাগে খুব ।

ইশাদঃ কেন?

বিল্লালঃ এই যে, আমরা দোষ কইরা জেল খাটতাছি! আর তুই দোষ না কইরা!

ইশাদঃ ওয়াও! আজকে তোমাকে অন্যরকম লাগতেছে ভাই!

বিল্লাল হালকা হেসে উঠলো ।

ইশাদঃ আচ্ছা ভাই, ১০ জনকে খুন করেছো তুমি একই পরিবারের, তবু তোমার ফাসি হল না কেন?

বিল্লালঃ দ্বায় নিছি বইলা!

ইশাদঃ দ্বায় নিছো বইলা মানে!

বিল্লাল ইশাদের দিকে তাকাল । জিজ্ঞেস করলো, “শুনবি কাহিনী!”

ঘর মোছা শেষ করে বুয়া যখন ঘর থেকে বেরোতে যাবে, এমন সময় পলাশ এসে বুয়াকে পেছন থেকে কম্পিত কণ্ঠে ডেকে উঠলো, “খালা! একটা কথা ছিল!” বুয়া দাঁড়িয়ে পলাশের দিকে ঘুরে তাকাল । তারপর জিজ্ঞেস করলো, “হ কও! কিতা কইবা!” পলাশ নিজেকে কন্ট্রোল করে বলল, “খালা আপনি কাউন্সিলর খগেন সেনের বাসায় কাজ করেন না!”

বুয়াঃ হ ক্যান?

পলাশঃ আমাকে একটা সাহায্য করে দেবেন খালা?

বুয়াঃ কি সাহায্য কও!

পলাশ তখন ইশাদের সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা খুলে বলল ।

বুয়াঃ আল্লাহ আল্লাহ আল্লাহ! এইয়া কি হুনাইলা! তয় আমি এহন কি সাহায্য করমু?

পলাশঃ খালা! আপনাকে তেমন কিছু করতে হবে না! আমি আপনাকে একটা মোবাইল দিচ্ছি! এটার রেকর্ডার অন করা আছে! এটা জাস্ট আজকে ওই জদুর রুমে আড়ালে রেখে আসবেন, কাল এসে আমাকে দেবেন ।

বুয়াঃ তোমাগো খুব ভালা বন্ধু ইশাদ, না?

পলাশঃ হ্যাঁ খালা, শুধু ইশাদ কেন, রুমন, ইমন, মাহিন সবাই আমার ভালো বন্ধু, আমরা সবাই চাই জদু দোষী প্রমাণিত হোক ।

বুয়াঃ আমারে খালা কইছো, মায়ের বুইন মানে খালা, ধইরা নাও কাম হইয়া গেছে । হেইয়া লইয়া তুমি চিন্তা কইরো না! জদু আমি ধরাইয়া দিমুই!

পলাশঃ অনেক অনেক ধন্যবাদ খালা! আমি জানি না বিনিময়ে আপনাকে কি দেবো! এখন কিছু নেই আমার কাছে কিছু দেয়ার মতো । কিন্তু আমি কথা দিচ্ছি, আমি চাকরি যখন করবো, তখন আপনাকে কিছু না কিছু দেবোই!

বুয়াঃ আইচ্ছা ।

পলাশঃ কাল সকালে ১০টার দিকে মনে হয় আদালতে শুনানি শুরু হবে, আপনি কাল কাজে আসার সময় মোবাইলটা আনবেন প্লিজ! যেন আমি আদালতে সব প্রমাণ করতে পারি ।

বুয়াঃ আইচ্ছা । আমি আসি ।

বলে বুয়া মোবাইল নিয়ে চলে গেলো । পুরনো বাটন মোবাইল । রেকর্ডের জন্য ভালো । আগে ইউজ করা হতো এখন হয় না, তাই সাহস করে দিলো পলাশ ।

এদিকে জেলে বিল্লালের প্রশ্নের জবাবে ইশাদ বলল, “জি বলো ভাই, শুনি ।”

বিল্লালঃ আমি তহন মানিকগঞ্জ থাকতাম । এক যৌথ পরিবারে কাম করতাম, সেই বাড়িত ছিল দুই বুড়া বুড়ি, তাগো ছিল তিন পোলা এক মাইয়া, তিন পোলার বউও ছিল । এর মধ্যে বড় দুই পোলার প্রত্যেকের একখান কইরা বাচ্চাও ছিল । উনাগো মাইয়া ছিল সবচেয়ে ছোট । ঘটনা ঘটার কালে ওই মাইয়ার বয়স ছিল উনিশ । আমার লগে কাম করতো আমার ছোট ভাই খলিল । তহন কেলাশ টুতে পড়তো । পরিবারটা ম্যালা ক্ষমতাওয়ালা ছিল । ওই বুড়া নাকি এককালে নামকড়া আইনজীবী আছিল । তয় ওর ছোট মাইয়াডা একটু অসুস্থ ছিল । মানসিকভাবে অসুস্থ । বিড়ি সিগারেট! গাঞ্জা! এইসব খাইয়া বেড়াইতো । পরিবারে ওরে শাসনও তাই কম ছিল না । একদিন আমি ভাইরে ইশকুলে দিয়া ঘরে আইসা দেহি, ওই মাইয়া বাড়ির সবাইরে খুন করছে! ওর বাপ মা, ওর তিন ভাই, তিন ভাইয়ের বউ! এমনকি বড় দুই ভাইয়ের পোলারেও! ওই পোলাগুলা তেমন বড়ও ছিল না! নিষ্পাপ বাচ্চাগুলারেও মাইয়াডা মারছে! আমারে যহন মাইয়াডা দেখল, তহন ওর হুশ আইছে । কাইন্দা কাইন্দা আমারে রিকুয়েস্ট করলো আমি যেন ওর খুনের দ্বায় নিজের ঘাড়ে লই! তাইলে অয় আমার ভাইয়ের ভবিষ্যতের দায়িত্ব নিবো । আমি প্রথম প্রথম রাজি হই নাই, তয় পড়ে রাজি হইয়া যাই । অরই অনুরোধে আদালত আমারে ফাসি না দিয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিছে ।

ইশাদ নিশ্চুপ । বিল্লাল আর বজলু দুজনেরই অতীত ভাইয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে । খানিক কি ভেবে ইশাদ প্রশ্ন করলো, “আচ্ছা ভাই, তোমার কি মনে হয়, ওই মেয়ে তোমার ছোট ভাইয়ের ভবিষ্যৎ নিয়া ভাববে?”

বিল্লালঃ আমি দুইডা কথা ভাইবা আমার ভাইরে ওর ভরসায় রাইখা আইছি । এক, ওর ভবিষ্যৎ ভালো করার লাইগা । ওই মাইয়া অসুস্থ হইলেও ভালো ছিল । আমার ট্যাকা লাগলে ওই মাইয়ার কাছে চাইতাম, দিতো আমারে, পড়ে আর ফেরত নিতো না । আর দুই, ওই মাইয়া যদি কোনদিনও ওর হাতে খুন হয় ওর অসুস্থতার কারণে, তাও আমার আক্ষেপ নাই । আপনার গরীব মানুষ একেকটা জিন্দা লাশ ছাড়া আর কিছুই না!

বলতে বলতে শেষটায় কেদে উঠলো বিল্লাল । ইশাদ কিছু বলল না । শুধু মনে মনে ভাবল, দুনিয়াটা কতো বড়! সেই সাথে কত অদ্ভুত! বজলু কিংবা বিল্লালের অতীতের কাছে ইশাদের অপবাদ যেন একটা শিশু ।

 

রাতের কথা । ইনস্পেক্টর দেলোয়ারের কাছে এলো জিতু ।

দেলোয়ারঃ আরে বন্ধু! কি খবর?

জিতুঃ এইতো, আলহামদুলিল্লাহ । ভালো । আজকে তোর কাছে একটা রিকুয়েস্ট করতে এসেছি ।

দেলোয়ারঃ আরে অবশ্যই! বল কেয়া কারনা পারে গা দোস্ত! তেরে লিয়ে চান্দ ভি হাজির কার দুঙ্গি!

জিতুঃ চাঁদ লাগবে না আমার, শুধু আমার মক্কেলের চার বন্ধুকে ওর সাথে একটু দেখা করিয়ে দিতে হবে ।

দেলোয়ার একটু ভাবল । তারপর একটু গম্ভীরভাবে জিজ্ঞেস করলো, “কই ওরা?”

জিতুঃ বাইরে দাঁড়িয়ে আছে ।

দেলোয়ারঃ তোর সাহস তো কম না! এরকম রিকুয়েস্ট কি করে করিস!

জিতু একটা লজ্জা পেয়ে বলল, “ও, আচ্ছা । সরি রে!”

দেলোয়ারঃ নেক্সট টাইম এরকম ভুল যেন না হয়! বন্ধুকে এসে সরাসরি বলবি, দোস্ত ওরা দেখা করবে নিয়ে গেলাম, আবার রিকুয়েস্টের কি আছে?

জিতু দেলোয়ারের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল, “এই ইয়ারকিটা জোস ছিল!”

খাচার এপাশে ইশাদ, ওপাশে রুমন, ইমন, মাহিন, পলাশ ।

ইশাদঃ কিরে? কেমন আছিস?

মাহিনঃ আজকে তোকে দেখে ভালো লাগতেছে দোস্ত, তোর কি খবর?

ইশাদঃ আছি, ভালো খারাপ মিলিয়ে ।

ইমনঃ কেন রে? জেলের ভেতরে সবার সাথে মানিয়ে নিতে পারছিস তো?

ইশাদঃ পারছি । তবে তাদের একেকজনের জেলে আসার গল্পগুলো আমাকে ভাবাচ্ছে খুব ।

পলাশঃ তোর গল্পটাওতো অদ্ভুত, তাই না?

ইশাদ কিছু বলল না ।

রুমনঃ চিন্তা করিস না বন্ধু! সব ঠিক হয়ে যাবে ।

ইশাদঃ ইনশাআল্লাহ । আচ্ছা, আমার মা বাবা কেমন আছেন রে?

ইমনঃ আঙ্কেলের অবস্থা আগের মতোই খারাপ, কোন উন্নতি নেই । তবে আন্টি সেদিন তোর কথা জিজ্ঞেস করছিলো ।

ইশাদঃ যাক, তাও ভালো । আমার কথা জিজ্ঞেস করছিলো ।

পলাশঃ আন্টির সাথে দেখা করবি?

ইশাদঃ ইচ্ছে তো করেই, কিন্তু আবার মনে হয়, আমাকে দেখলে আম্মু হয়তো আরও রাগ করবেন ।

রুমনঃ আরে না! রাগ করবে কেন?

ইশাদঃ মনে হয় করবে । জানি না ।

মাহিনঃ আচ্ছা, তুই যেদিন নির্দোষ প্রমাণিত হবি, সেদিন দেখিস, আন্টি আর আঙ্কেল নিজে আসবে তোকে নিয়ে যেতে ।

ইশাদঃ আমি আদৌ নির্দোষ প্রমাণিত হবো তো?

“সেটাই তো! ওকে নির্দোষ প্রমাণটাই করবি কি করে?” চেম্বারে জিতুর সাথে কথা বলার সময় জিতু কোন কথার জবাবে এ জবাব দিলো ইনস্পেক্টর দেলোয়ার । সে আরও বলল, “এতোদিন যা করেছিস, তা বিপক্ষের কথার প্রমাণগুলো মিথ্যে প্রমানিত করেছিস । কিন্তু ওইদিন সেই ছুরিতে, মেয়েটার শরীরে কিংবা বুটের আঘাত, এগুলো যে ইশাদ দেয় নি, সেটা কি করে প্রমাণ করবি তুই?”

জিতুঃ দ্যাখ, ব্যাপারটা যতোটুকু ধারণা করতে পারছি, তাতে মনে হচ্ছে, ওই যদু ইশাদকে অজ্ঞান করার পর ইশাদকে টেনে নিয়ে যেয়ে ইশাদের হাত দিয়ে মেয়েটার বডি স্পর্শ করেছে । তারপর ইশাদকে মাটিতে শুইয়ে ওর হাতে ছুরিটা ধরিয়ে দিয়েছে । এরপর ইশাদের ব্যাগ থেকে বুটজোড়া বের করে সেটা দিয়ে আঘাত করেছে । আর সমস্তটা জদু গ্লাভস পড়ে করায় জদুর কোন ফিঙ্গার প্রিন্ট সেখানে পাওয়া যায় নি ।

দেলোয়ারঃ বুঝলাম, কিন্তু কথা হল, প্রায় ২ ঘণ্টা মতো ইশাদ ওখানে পড়ে ছিল । এর মধ্যে কেউ কি দেখে নি? কেউ কি ওই রুমে যায় নি? আর সিসিটিভি হুট করে অন হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটাও অদ্ভুত ।

জিতুঃ কিছুই অদ্ভুত না । সবটাই জদুর পূর্বপরিকল্পনা । ওর বাপ যে এলাকার কাউন্সিলর । তাই ওর বাপ সবটা হয়তো টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেছে!

দেলোয়ারঃ ওর বাপ?

জিতুঃ হ্যাঁ । তোর কি মনে হয়, টাকা ছাড়া এতো কিছু করা সম্ভব? আর জদুর কাছে কি এতো টাকা আছে? ওর বাপ ভালো মানুষ হলেও নিজের ইমেজ যেন নষ্ট না হয়, তার স্বার্থে অন্তত ছেলেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে চাইবে ।

এমন সময় কিছু একটার দিকে চোখ আটকে যায় জিতুর । একটা কাগজ । একটা বার্থ সার্টিফিকেট । যে টেবিলে জিতু বসে ছিল তার নিচেই ছিল । একটা কোণা বেড়িয়ে আছে সেই কাগজের । সেখানে নামটা স্পষ্ট দেখতে পেল জিতু । ইনস্পেক্টর মিনহাজ!

“অবশ্যই! তুই নির্দোষ প্রমাণিত হবিই!” ইশাদের কথার জবাবে বলল পলাশ ।

ইশাদঃ তুই এতো কনফিডেন্স নিয়ে কি করে বলছিস?

পলাশঃ এমনি, আমরা জানি, সত্যের জয় আর মিথ্যের ক্ষয় হবেই!

সবার কাছে পলাশ বুয়ার ব্যাপারটা হাইড করে গেলো ।

রুমনঃ হ্যাঁ রে, পলাশ ঠিকই বলেছে । তুই টেনশন করিস না ।

ইশাদঃ ফুটবল খেলিস এখনও?

ইমনঃ একবার গিয়েছিলাম, কিন্তু সেদিন যেয়েই আর যেতে ইচ্ছে করে না ।

রুমনঃ হ্যাঁ রে । ওরা সবাই আমাদেরকে কেমন এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে ।

ইশাদঃ আমার জন্য তোদেরকে ভুগতে হচ্ছে!

মাহিনঃ আরে না! ধুর । এটা তোর দোষ না । এটা তাদের দোষ, যারা অবুঝ ।

ইশাদঃ তবুও!

আর কেউ কিছু বলল না তারপর ।

টেবিলের নিচ থেকে বার্থ সার্টিফিকেটটা বের করলো জিতু । দেলোয়ারকে জিজ্ঞেস করলো, “একি! ইন্সপেক্টর মিনহাজের বার্থ সার্টিফিকেট এখানে কেন?”

দেলোয়ারঃ ও, উনি তো আসে এখানে কাজ করতেন । বোধ হয় তখনই কোনোভাবে এনেছিলেন, ভুলে রেখে গেছেন ।

জিতু দেখল, ইনস্পেক্টর মিনহাজের জন্মস্থান দেয়া রাহিগঞ্জ ।

জিতুঃ আরে! ইনস্পেক্টর মিনহাজ রাহিগঞ্জ জন্মগ্রহণ করেছেন?

দেলোয়ারঃ হ্যাঁ? কেন?

জিতুঃ না এমনি ।

দেলোয়ারঃ শুধু জন্ম কেন, উনি তো এখনও রাহিগঞ্জেই থাকেন ।

জিতু ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, “কি!”

দেলোয়ারঃ কেন? কি হয়েছে?

জিতুঃ খেয়াল করে দেখ, মেয়েটার পোস্টমর্টেমও কিন্তু রাহিগঞ্জ হয়েছে!

দেলোয়ারঃ তো? হতে পারে উনার পরিচিত ডোম ছিল বলেই সেখানে গিয়েছেন ।

জিতুঃ ভাই, তুই পুলিশে চাকরি করিস! তুই তো জানিসই! কিছু কিছু পুলিশ কেমন হয়!

দেলোয়ারঃ শোন, সব কিছুতেই ভালো খারাপ আছেই । তেমনি পুলিশও ব্যাতিক্রম না । আর তাছাড়া আমি ইনস্পেক্টর মিনহাজকে চিনতাম, উনি সেরকম মানুষ না ।

জিতুঃ চিনতি, কিন্তু এখন তো আর চিনিস না!

দেলোয়ারঃ আচ্ছা, আমি আর কিছু বলবো না ।

জিতুঃ কালই আদালতে শুনানি আবার! কিন্তু আমি এখন পেলাম কিছু প্রমাণ করার উপায়!

দেলোয়ারঃ আমি জানি না তুই কি প্রমাণ করার উপায় পেয়েছিস, কিন্তু তুই কাল মাননীয় বিচারকের কাছে এক্সট্রা সময় চেয়ে নিতে পারিস ।

জিতু কিছু বলল না ।

 

১৫ জুলাই, ২০২০, বুধবার

আজ বেশ তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠেছে পলাশ । রাতে ঠিকমতো ঘুম হয় নি । সকালে বুয়া কখন আসবে, আর কখন ওর হাতে মোবাইলটা দেবে তার জন্য অপেক্ষা করেছে । ৮টা নাগাদ বুয়ার আসার কথা, কিন্তু ৯টা বাজলেও এখনও বুয়া এলো না । পলাশ মায়ের কাছে যেয়ে জিজ্ঞেস করলো, “মা, আজকে কি খালা আসবে না?” পলাশের মা তো অবাক । জিজ্ঞেস করলো, “বা! বা! তুই নিচ্ছিস বুয়ার খোঁজ!”

পলাশঃ আহ মা! বলো না!

পলাশের মাঃ কি জানি, ওই তোর বুবলি আন্টির বাসায়ও কাজ করে । কল দিলাম উনারে, বলল তো আসে নাই! তা তুই হঠাৎ এই খবর জানতে চাইলি?

পলাশ কথার জবাব না দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো । তারপর সাড়ে ৯টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও যখন বুয়া আর এলো না, পলাশ চলে গেলো আদালতে ।

১০টার দিকের কথা । সবাই আদালতে হাজির । জজ আসার অপেক্ষায় আর সবার মতো বসে আছে মাহিন, রুমন, ইমন আর পলাশ ।

পলাশঃ ভাই! আজকে যে কি হবে!

রুমনঃ আল্লাহই জানেন!

পলাশঃ আজকে কি রায় ঘোষণা করবে?

রুমনঃ না মনে হয় । আর করলেও জিতু ভাই বলল আর কয়েকটা দিন চাইয়া নেবে ।

ইমনঃ জিতু ভাই কিন্তু অনেক কিছু প্রমাণ কইরা ফেলছে!

রুমনঃ হ! আসলেই!

পলাশঃ ওইযে, জজ এসেছেন, চুপ কর এখন সব ।

জজ আদালতে হাজির হল । কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হল ইশাদকে । শুরুতেই লয়ার রাইসা উঠে এসে বলল, “ইয়োর অনার! গত কদিন ধরে এই কেসে যতোটা প্যাঁচ আমার বিপক্ষের বন্ধু বাঁধিয়েছেন তার কিন্তু কোন দরকারই ছিল না । কারণ শুরু থেকেই কিন্তু সব প্রমাণিত হয়ে আছে । মেয়েটার শরীরে ইশাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট, মেয়েটার পায়ে ইশাদের ওর নিজের এবং বন্ধুর বুট দিয়ে আঘাত করার করার দাগ, এমনকি যে ছুরি দিয়ে মারা হয়েছে, সেটাতেও ইশাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট আছে । তাই উনি অযথা আদালতের সময় নষ্ট করে কি প্রমাণের চেষ্টা করছেন, আমি সত্যি কিন্তু বুঝতে পারছি না ।”

জিতু উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “ইয়োর অনার, আমি কি প্রমাণের চেষ্টা করছি না করছি সেটা উনার জানার ব্যাপার না!”

জজঃ হ্যাঁ, তবে আমি কিন্তু আপনাকে আরেকটা কথা বলতে চাই, আপনি কিন্তু এখনও এ ব্যাপারে কিছু প্রমাণ করতে পারেন নি, যে আপনার মক্কেল ইশাদের ফিঙ্গার প্রিন্ট মিথ্যে!

জিতুঃ ইয়োর অনার! আমি সবটা প্রমাণ করে দেবো! আমার আর দুদিন সময় চাই!

জজঃ কেন? আজও তো শুনানি হচ্ছে, এতদিন কি করেছেন আপনি?

জিতুঃ ইয়োর অনার! আমি আপনাকে রিকুয়েস্ট করছি! আর দুদিন সময়!

জজ জিতুর কথার কোন জবাব না দিয়ে রাইসাকে বলল, “আপনি কি আজ কিছু প্রমাণ করতে চান!”

রাইসাঃ অবশ্যই ইয়োর অনার!

জজঃ শুরু করুন আপনি ।

তারপর জজ জিতুকে বলল, “আপনি প্লিজ এখন বসুন ।”

জিতু বসে পড়লো । রাইসা বলল, “ইয়োর অনার, আমি এখন একজন মহিলাকে ডেকে নিতে চাই, যার নাম শিউলি বানু ।” জজ বলল, “অনুমতি দেয়া হল ।”

কাঠগড়ায় এসে হাজির হল এক মহিলা । তাকে দেখে অবাক হয়ে গেলো পলাশ । এতো ওদের বাসার বুয়া! যাকে গতকাল ও প্রমাণ আনতে বলেছিল । সে এখানে কি করছে! পলাশের হ্রিদস্পন্দন বেড়ে উঠলো ।

বুয়ার শপথ গ্রহন শেষে রাইসা এসে জিজ্ঞেস করলো, “আপনার নামটা আরেকবার বলবেন প্লিজ?”

শিউলি/বুয়াঃ শিউলি বানু ।

রাইসাঃ আপনি কতদিন ধরে কাউন্সিলরের বাড়িতে কাজ করেন?

শিউলিঃ হে তো ৫-৬বছর হইয়া যাইবে ।

রাইসাঃ আপনার কি মনে হয়, জদু এমন কাজ করতে পারে?

শিউলিঃ না! কিছুতেই না! জদুরে আমি পোলার মতো পালছি! ও কখনই হেইয়া কাম করতে পারে না!

রাইসাঃ আজ তাহলে আপনার আদালতে আসার উদ্দেশ্যটা একটু জানান ।

পলাশের ভয় আরও বেড়ে গেলো ।

রাইসাঃ আমি কাউন্সিলরের বাড়ি সহ আরও পাঁচ বাড়ি কাম করি । হেইয়ার মধ্যে এই ইশাদের বন্ধু পলাশের বাড়িতও কাম করি । গতকাইল এই পোলা আমারে মোবাইল দিয়া কইছে, জদুর বাড়িত রাইখা আইতে, যেন জদুরা নিজেগো নির্দোষ প্রমাণের লাইগা কিছু করলে ওরা টের পাইয়া যায় ।

পলাশের দিকে সবাই তাকিয়ে রইলো অবাক দৃষ্টিতে । পলাশ দাঁড়িয়ে যেয়ে বলল, “মিথ্যে কথা ইয়োর অনার! উনি মিথ্যে বলছেন! আমার উদ্দেশ্য ঠিক এমন ছিল না!”

শিউলিঃ জজো সাহেব, আমি রেকর্ড করতে পারমু কিনা তাই ও আমারে রেকর্ডার অন কইরাই মোবাইলডা দিছিলো । হেইয়ার মধ্যেই সব প্রমাণ আছে । আপনে শুইনা দ্যাখেন!

শিউলি মোবাইলটা জজের কাছে দিলো জজ রেকর্ডটা শুনল । সেখানে পলাশের কণ্ঠ কাটছাট করে এডিট করে এমন হয়েছে যে পলাশ সত্যি এমন করেছে প্রমাণ হয় ।

রাইসাঃ ইয়োর অনার, আপনি তো দেখলেনই, আমার বিপক্ষের বন্ধুর মক্কেলের বন্ধু কি করে এই খুনের দ্বায়টা আমার মক্কেল জদুর ঘাড়ে চাপাতে চাইছে । আমার তো মনে হয় এটা আমার বিপক্ষের বন্ধুরই চক্রান্ত ।

জিতুঃ না ইয়োর অনার! আমি জানি না কি করে কি হয়েছে! পলাশের উদ্দেশ্য কি ছিল আমি জানি না ইয়োর অনার, তবে আমি ওকে কিচ্ছুই করতে বলিনি এসব!

জজঃ আমি কিন্তু আপনার এভিডেন্স দেখে শুরুর দিকে বেশ আশা করেছিলাম আপনি এই কেস জিততে পারবেন, কিন্তু আমি এখন বেশ হতাশ হচ্ছি । তবুও! আমি আপনাকে আরও তিনটা দিন সময় দিচ্ছি । বৃহস্পতি, শুক্র এবং শনি । আজকের দুপুর বিকেল আর রাতটাও সাথে বোনাস ধরে নিন । আগামী রবিবার এই কেসের শেষ শুনানি হবে । তারপর আমি এর রায় ঘোষণা করবো । আজকের মতো কোর্ট এখানেই মুলতবী ।

কোর্ট থেকে ইশাদ আজ ইচ্ছে করেই তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে গেলো পুলিশের সাথে । ওর মেজাজ একটু খারাপ হয়ে গেছে পলাশের কর্মকাণ্ডে । এদিকে পলাশকে সবাই নানান কথা শোনালো ।

ইমনঃ ভাই! তুই কিন্তু ঠিক করোস নাই কাজটা?

মাহিনঃ তুই আমাদের জিজ্ঞেস তো করে নিতে পারতি!

রুমনঃ এই রিস্কটা কেন নিতে গেলি তুই?

পলাশ লজ্জিত । কিছু বলতে পারল না ।

জিতুঃ পলাশ, আমি জানি তুমি বন্ধুর জন্য কিছু করতে চেয়েছিলে, উদ্দেশ্য তোমার ভালো ছিল, কিন্তু তুই আমাদের একটু বলতে পারতে! অন্তত আমার সাথে পরামর্শ করতে পারতে!

পলাশঃ সরি ভাই । আমি আসলে বুঝতে পারিনি! এরকম কিছু হবে!

জিতুঃ ইটস ওকে । কিন্তু হাতে আজকের দিন, সাথে আর তিন দিন আছে । এর মধ্যেই যা করার করতে হবে ।

ইমনঃ কি করবেন ভাই?

জিতুঃ সেটা আমি তোমাদের এখনই বলবো না । তবে একটাই অনুরোধ! প্লিজ! তোমরা এখন আর কিচ্ছু কোরো না পলাশের মতো! প্লিজ! কিছু হলে জাস্ট আমাকে জানাবা!

বলে কোর্ট থেকে বেড়িয়ে গেলো জিতু ।

বাসায় এসেই রাগ নিয়ে মা কে ডাকলো পলাশ, “আম্মু! কোথায় তুমি! আম্মু!”

পলাশের মা রান্না করছিলেন, সেই সময়েই হাতে খুন্তি নিয়ে এসে বলল, “কিরে কি হইছে?”

পলাশঃ শোনো! আজাইরা বুয়া আর কাজে রাখবা না!

বলে পলাশ রুমে চলে গেলো । পলাশের মা অবার হয়ে নিজেই নিজেকে বলল, “যাহ! আজাইরা বুয়া মানে?”

বিকেলের কথা । রাহিগঞ্জের সাথে কিছু একটা রহস্য ইনস্পেক্টর মিনহাজের আছে, সেটা জিতু বুঝেছে । তাই সেই রহস্যভেদ করতে জিতু বাসা থেকে বেরোলো রাহিগঞ্জের উদ্দেশ্যে । এখান থেকে ইজিবাইকে করে যাওয়া যায় । ইজিবাইক স্ট্যান্ডের কাছে আসতেই জিতু দেখল, ওর বিপক্ষের লয়ার রাইসা দাঁড়িয়ে । কাছে যেয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কেমন আছেন?” রাইসা একবার কথা শুনে জিতুর দিকে তাকাল । তারপর আবার সামনের দিকে তাকিয়ে বলল, “হঠাৎ শত্রুর খোঁজ নিচ্ছেন?”

জিতুঃ সেকি! তাই? আমি আপনার শত্রু?

রাইসাঃ আদালতে লড়ছেন? শত্রু না?

জিতুঃ না তা কি করে হয়? লড়ছি আমরা মক্কেলের হয়ে । এতে আমরা তো শত্রু না?

রাইসাঃ হয়েছে, আর কথা বলতে হবে না । ভালো আছি ।

কিছুক্ষণ দুজনে চুপচাপ । তারপ রাইসা একটু বিরক্তির সাথে বলল, “আজব! আজ একটাও ইজিবাইক দেখছি না কেন!”

জিতুঃ কোথায় যাচ্ছেন?

রাইসাঃ তা জেনে আপনি কি করবেন?

জিতুঃ না এমনি । বললাম আর কি ।

রাইসাঃ দেখুন! বেশি ওভারস্মার্ট সাজবেন না প্লিজ! আপনার উদ্দেশ্য আমার জানা আছে ।

জিতুঃ মানে?

রাইসাঃ মানে আপনি এখন আমাকে ইম্প্রেস করার চেষ্টা করবেন আর আপনার মক্কেলকে বাঁচানোর অনুরোধ করবেন তাই-তো?

জিতুঃ বাহ! কি বুদ্ধি আপনার! এতো সহজে বুঝে গেলেন?

রাইসাঃ ঢং করবেন না প্লিজ!

সে সময় একটা ইজিবাইক এলো । রাইসা ডাকলো, “দাড়ান ভাই!” তারপর রাইসা ইজিবাইকে উঠে বসলো । তারপর জিতুকে বলল, “আমি শিওরলি বলে দিচ্ছি, আপনি এই কেস হারবেন ।” জিতু কিছু বলল না । মুচকি হাসলো । রাইসা তখন ইজিবাইকওয়ালাকে বলল, “রাহিগঞ্জ চলুন!” জিতু মুচকি হাসিটা চলে গেলো । চেহারায় ফুটে উঠলো চিন্তার চাপ । এই লয়ার রাহিগঞ্জ যাচ্ছে!