অপবাদ পর্ব-৪
অপবাদ(৪)
রাহিগঞ্জে
। নম্বরিটেক থেকে ১২ কিলোমিটার দুরের এই এলাকায় ঠিক কেন লাশ নিয়ে আসা হয়েছে, সন্দেহ
জিতুর । তাইতো একাই চলে এসে দেখতে । কি চলে এখানে । সিএনজি যেখানে থামল, সেখান থেকে
লাশকাটা ঘরে যেতে পার হতে হবে বস্তি । তারপর একটা খাল পেরোতে হবে নৌকো দিয়ে । আর খালের
ওপারেই লাশকাটা ঘর । জিতু বস্তি পেড়িয়ে নৌকো পেরিয়ে গেলো লাশকাটা ঘরে । যেন একটা ঘন
জঙ্গলের ভেতরে একটাই মাত্র ঘর আর সেখানেই করা হয় পোস্টমর্টেম । মর্গ বোধ হয় আরও দূরে
। তবে জিতুকে কথা বলতে হবে ডোমের সাথে । নৌকো থেকে নেমে পাড়ে উঠে লাশকাটা ঘরের দিকে
ঘুরে তাকাল জিতু । এটা ঘরের পেছন সাইড । পাশ দিয়ে যেতে গিয়ে জিতুর নজরে এলো, একটা কুকুর
কি যেন খাচ্ছে । জিতুকে দেখে দুবার ডেকে উঠে আবার খাওয়া শুরু করলো । জিতু দেখল, কুকুরটা
মানুষের নাড়ীভুঁড়ি খাচ্ছে । সেই পচে যাওয়া নাড়ীভুঁড়ির ওপর মাছি ভন ভন করছে । কোনোরকমে
কুকুরটার পাশ ঘরটার সামনে আসতেই জিতু দেখল, ঘরটা তালা দেয়া । নিজেই নিজেকে বলে উঠলো,
“এমন সময় আসলাম! যে কেউই নাই! ধ্যাত!” কিছুক্ষণ আশেপাশে তাকাল জিতু । আশেপাশে কেউ নেই
। এখান থেকে মর্গে যাওয়ারও কোন রাস্তা তো দুরের কথা, চারিদিকে যেদিকেই তাকানো যায় শুধুই
গাছ । আশেপাশে কোন বাড়িঘরের হদিসও নেই । জিতু ভাবল তালা ভাংবে । ভেতরে যেয়ে কিছু যদি
পাওয়া যায়! মাটি থেকে একটা ইট নিয়ে তালায় জোড়ে একটা আঘাত করতেই তালা ভেঙ্গে গেলো ।
বেশ পুরনো তালা হওয়ায় এতো তাড়াতাড়ি ভেঙ্গে গেলো । জিতু রুমের দিকে এগোতে যাবে এমন সময়
কে যেন পেছন থেকে ইশাদের গলায় ছুরি ধরে বলল, “বেশি চালাকি করিস না! ফলাফল কিন্তু খুব
খারাপ হবে!”
(ইন্ট্রো)
বিকাল
৪টা । টিভিতে সাংবাদিক পড়া শুরু করলেন, “দর্শক, যে রিপোর্টটি দেখছিলেন, সেই ঘটনার ইমন
এবং তার ৩ বন্ধু আমাদের সাথে যুক্ত হচ্ছেন, আমরা সরাসরি চলে যাবো তার কাছে ।” তারপর
টিভির স্ক্রিনে ভেসে উঠলো ৪ বন্ধু । ইমন সামনে, পলাশ, রুমন, মাহিন পেছনে । সাংবাদিক
জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা আপনার কি এ বিষয়ে কিছু বলার আছে?”
ইমনঃ
অবশ্যই চুপ করে থাকার জন্য আপনারা আমাকে ডাকেন নি, তাই বলার তো অনেক কিছুই আছে ।
সংবাদ
পাঠকঃ আচ্ছা, ওই হুজুর যে আপনাকে ঢুকতে দিলো না, সেটা আপনি কীভাবে দেখছেন?
ইমনঃ
দেখুন, আপনাদের এই রিপোর্ট পুরো………।
ইমনের
কথা শেষ করতে না দিয়েই সংবাদ পাঠক বলে উঠলো, “হ্যাঁ, আমাদের কারেসপন্ডেন্স পুরো ভিডিও
করতে পারেন নি, তার ক্যামেরার ব্যাটারি শেষ হয়ে গিয়েছিলো । ইমন অবাক হয়ে গেলো । কি
কথা কোন দিকে ঘুরিয়ে দিলো এই সংবাদ পাঠক? সংবাদ পাঠক বলল, “আচ্ছা, আপনার বন্ধু একটা
মেয়েকে ধর্ষণ করেছে, আপনারা তো বলছেন মেয়েদের পোশাক আশাক এর জন্য দায়ী । কেন এই অদ্ভুত
কথা জানতে পারি? মেয়েদের কি স্বাধীনতা নেই?”
ইমনঃ
আমাদের বন্ধু ধর্ষণ আদৌ করেছে কি না এটা এখনও প্রমাণিত হয় নি । তাই আপনি আগেই এ কথা
বলতে পারেন না । হ্যাঁ, আপনি যদি মেয়েদের পোশাক দায়ী করার ব্যাপারে যদি কিছু জানতে
চান, তবে আমি এটুকুই বলবো, ধর্ষণের ক্ষেত্রে মেয়েদের পোশাক প্রধান কারণ হয়, তবে এটি
ধর্ষণের একটা কারণ । আমি একটা উপমা দিয়ে বোঝাই । ধরুন আপনি একটা হীরে নিয়ে হাঁটছেন
। সেটা হাতে নিয়ে খোলা অবস্থায় । হঠাৎ কেউ এসে আপনার হীরে চুরি করে নিয়ে গেলো । তখন
লোকে কি বলবে আপনাকে? যে এভাবে দেখিয়ে দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন দেখেই তো চোরের লোলুপ
দৃষ্টি পড়েছে এর ওপর । তেমনি মেয়েরা হীরের চাইতেও দামি । তাদের দিকে কিছু হিংস্র পুরুশের
লোলুপ দৃষ্টি থাকে । আমরা এটা পুরোপুরি বন্ধ করতে না পারলেও তাদের পর্দার আওতায় এনে
ধর্ষণ কমাতে পারি । লুকিয়ে রাখা সত্ত্বেও হীরে যদি চুরি হয়ে যায়, তাহলে দোষ নিরাপত্তার
নয়, দোষ চোরের । ধর্ষণের ব্যাপারও একই ।
সংবাদ
পাঠকঃ তার মানে কি আপনি বলতে চাইছেন মেয়েদের স্বাধীনতা নেই? তাদের সবসময় পর্দা করে
থাকতে হবে?
ইমনঃ
কে বলেছে নেই? পর্দার মধ্যে থেকেও অনেক স্বাধীনতা রয়েছে । তবে আমরা তাকে জোড় করতে পারি
না । বোঝাতে পারি । সে যদি কথা গায়ে না মেখে পাপে লিপ্ত হতে চায়, তারপর আর আল্লাহর
কাছে তার হিদায়াতের জন্য দোয়া করা ছাড়া কিছু বলার থাকে না । তার বাবা মাই তাকে শাসন
করার ক্ষমতা রাখে । বাইরের কেউ না ।
সংবাদ
পাঠকঃ দেখুন আপনি যা বলছেন তা কিন্তু বাঙালি সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অবমাননাকর, বোরখা কিন্তু
বাঙালি সংস্কৃতির আওতায় পড়ে না!
ইমনঃ
দেখুন আমি বুঝতে পারছি না এসব অদ্ভুদ প্রশ্ন কেন আপনারা করছেন আমাকে! আমাকে তো ডেকেছেন
অন্য কারণে! আর আমার সংস্কৃতিকে আমি অবশ্যই শ্রদ্ধা করি, তার মানে এই না বাঙালি সংস্কৃতির
বাইরে কিছু করলে তা অবমাননাকর হয়! আর আপনি এ কথা বলছেন, আপনিই যে কোট প্যান্ট পড়ে ক্যামেরার
সামনে বসে আছেন, এটা কি বাঙালি সংস্কৃতি? যান না, লুঙ্গি পাঞ্জাবি পড়ে আসুন!
সংবাদ
পাঠক ইচ্ছে করে সুইচ অফ করে সামনের দিকে তাকিয়ে বলল, “দুঃখিত দর্শক, লাইনটি বোধহয় কেটে
গেছে, আমরা পরের সংবাদে যাবো, তার আগে নিয়ে নিচ্ছি একটা বিরতি । ফিরে আসছি বিরতির পর
।”
যেসব
ক্যামেরাম্যানরা এসেছিলো, তাদের বিদায় দিয়ে রুমে এসে বসলো ইমন । মাহিন বলল, “ওহ ভাই!
কি দিলি তুই!”
রুমনঃ
আমার কি মনে হয় জানিস? ওই ব্যাটা ইচ্ছা কইরা লাইন কাইটা দিছে ।
মাহিনঃ
য্যামনে পচাইসে বেচারা এখন মনে হয় কানতেছে বইসা বইসা!
পলাশঃ
আচ্ছা, জিতু ভাই এলো না?
রুমনঃ
না, ভাই নাকি কি একটা কাজে রাহিগঞ্জ গেছেন ।
পলাশঃ
বলে যান নি কি কাজ?
রুমনঃ
না তো! কেন?
পলাশঃ
না এমনি ।
রাতের
কথা । ঘুমাবার জন্য শুয়ে ছিল ইশাদ, এমন সময় বিল্লাল এলো । বলল, “ওই! ওঠ!” ইশাদ উঠলো
। বিল্লাল জিজ্ঞেস করলো, “সকালে তুই ওই বজলুর লগে কথা কইতেছিলি! ক কি কইলো তোরে?”
ইশাদঃ
তেমন কিছু না ।
বিল্লালঃ
তেমন কিছু না মানে! যা কইছে তাই-ই ক ।
ইশাদঃ
শুইনা আপনার লাভ নাই ।
বিল্লালঃ
কিয়ের লাভ নাই! তরে যা কইছি তাই কর! তাড়াতাড়ি ক!
ইশাদঃ
শুনতে চান কি বলছে?
বিল্লালঃ
হ!
ইশাদঃ
উনি বলেছেন, উনার পাতলা পায়খানা হইছে ।
বিল্লালঃ
ওর হাগা হয় তা তোরে কয় ক্যা?
ইশাদঃ
চিকিৎসার উপায় জানার জন্য ।
বিল্লালঃ
কি কইলি তুই?
ইশাদঃ
ক্যান, আপনারও কি হাগা হইছে?
বিল্লালঃ
তুই কইলাম! বেশি বাড় বাইড়া গেছোস!
ইশাদঃ
যা উনি বলেছে তা বললাম, বিশ্বাস না হইলে উনার কাছে যাইয়া জিজ্ঞাস করতে পারেন ।
বলে
শুয়ে পড়লো ইশাদ । বিল্লাল কিছুক্ষণ রাগি দৃষ্টিতে ইশাদের দিকে তাকিয়ে রইলো । তারপর
জানালা দিয়ে ওপাশের জেলের জানালার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল, “কিছু তো কইছে, এই এক কথা
তো এতক্ষণ ধইরা বলার কথা না!”
পরদিন
সকালের কথা । ১২ জুলাই ২০২০, রবিবার । আজ আদালতে ইশাদের কেসের শুনানি হবে । আদালতে
সবাই এসেছে । জজ আসার সময় হল, অথচ এখনও হাজির হয় নি জিতু । মাহিন, ইমন, পলাশ, আর রুমন
একসাথে বসেছিল । মাহিন রুমনকে জিজ্ঞেস করলো, “কিরে? জিতু ভাই কই?”
রুমনঃ
জানি না রে, আমি গতকাল রাতে কল দিছিলাম, কিন্তু পাইনাই উনারে । এখানে আসার আগেও দিছিলাম,
সুইচড অফ আসছে ।
ইমনঃ
ভাই কোন সমস্যায় পড়ে নাই তো?
পলাশঃ
রুমন, তুই না বললি, গতকাল ভাই রাহিগঞ্জ গেছে?
রুমনঃ
কি জানি । আমি কিছুই বলতে পারতেছি না ।
একটু
পর জজ এলে সবাই দাঁড়িয়ে সম্মান জানালো । তারপর সবাই বসলো ।
পলাশঃ
আল্লাহ! এখন কি হবে!
ইমনঃ
ধৈর্য ধর, ইনশাআল্লাহ সবকিছু ভালো হবে ।
শুনানি
শুরু হলে রাইসা বলল, “ইয়োর অনার, শুনানি আর কি শুরু করবেন, আমার বিপক্ষের বন্ধু জিতু
তো এখনও হাজির হন নি । আমার তো মনে হয় উনি ভয় পেয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন ।”
জজঃ
আপনি কি এই কেসের পক্ষে কিছু বলতে চান?
রাইসাঃ
অবশ্যই ইয়োর অনার! আপনি অনুমতি দিলে আমি সত্যটা সবার সামনে আনতে চাই ।
জজঃ
অনুমতি দেয়া হল ।
রাইসাঃ
ইয়োর অনার, আমি চাই আমার মক্কেল, অর্থাৎ জদুকে সামনে আনতে ।
তারপর
জজের অনুমতিতে জদুকে সামনে আনা হল । তারপর পড়ানো হল শপথ বাক্য ।
রাইসাঃ
আপনি একটু আমাদের বলবেন, আসলে সেদিন রাতে কি হয়েছিলো?
জদুঃ
আমি আগেও বলছি ম্যাডাম, আমার বন্ধুদের থাকার জন্য হোটেলে রুম নেয়ার জন্য আমি নম্বরিটেক
হোটেলে গেছিলাম, এহন আমি যদি ওইরকমভাবে ওই মাইয়ারে দেইখাই থাকি, তার মানে কি আমি খুন
করছি?
রাইসাঃ
আপনি যখন গিয়েছিলেন, তখন কি আপনি ইশাদকে দেখেছিলেন?
জদুঃ
না, তার আগেই হালায় ভাইগা গেছে!
রাইসা
একটু গলা খাখরে বলল, “প্লিজ, একটু ভাষা সংযত করুন । এটা আদালত ।”
জদু
একটু হেসে বলল, “ও, সরি সরি, আসলে আমরা ঢাকাইয়া পোলাপাইন তো, হইয়া যায় ।”
রাইসাঃ
আচ্ছা, আপনি এখন আসুন তাহলে ।
তারপর
রাইসা জজকে বলল, “ইয়োর অনার, আপনি অনুমতি দিলে আমি এখন ইনস্পেক্টর মিনহাজকে ডেকে নিতে
চাই ।”
জজঃ
অনুমতি দেয়া হল ।
একটু
পর ইনস্পেক্টর মিনহাজ এসে হাজির হল । শপথবাক্য পাঠ করানোর পর রাইসা জিজ্ঞেস করলো,
“এই কেস নিয়ে শুরু থেকেই তো আপনি লড়ছেন, তাইনা?”
মিনহাজঃ
হ্যাঁ! একদম মেয়েটার লাশ থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত সবসময় আমি ছিলাম এই কেসের সাথে ।
আর অপরাধী শাস্তি না পাওয়া পর্যন্ত আমি থাকবোও!
রাইসাঃ
এ পর্যন্ত আসামী ইশাদের খুন করা এবং ধর্ষণ করার ব্যাপারে কি কি প্রমাণ পেয়েছেন তা কি
আদালতে এখন বলা যাবে?
মিনহাজঃ
অবশ্যই! প্রথমত ছুরি থেকে শুরু করে মেয়েটার দেহ সবখানে এই ইশাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাওয়া
গেছে । মেয়েটার শরীরে ধর্ষণের আঘাতও পাওয়া গেছে, এবং সেখানে এই ইশাদেরই ডিএনএ পাওয়া
গেছে ।
রাইসাঃ
আমি আদালতে পরিষ্কার করার জন্য একটা প্রশ্ন করতে চাই । ইশাদের ডিএনএ কি করে পেলেন আপনারা?
মিনহাজঃ
আমরা এর জন্য ইশাদের বাসায় যেয়ে তার পড়নের একটা সাদা শার্ট এনেছিলাম । সেটা থেকেই পেয়েছি
।
রাইসাঃ
ঠিক আছে, আপনি আসতে পারেন ।
ইনস্পেক্টর
মিনহাজ নিজের জায়গায় যেয়ে বসলো । রাইসা জজকে বলল, “ইয়োর অনার, আমার আর কিছু জিজ্ঞেস
করার নেই । বোধ হয় আমি যথাযথ প্রমাণ দিতে পেরেছি । এবার আপনার কাছে রায় ঘোষণার অনুরোধ
করছি ।”
ইশাদ
বেশ হতাশ হয়ে পড়লো । মাহিন বলল, “আল্লাহ! এবার কি হবে!”
পলাশঃ
ধৈর্য ধর!
এমন
সময় হাজির হল জিতু ।
জিতুঃ
আমি অত্যন্ত দুঃখিত ইয়োর অনার দেরি করার জন্য! কিন্তু আমি ইচ্ছে করে দেরি করিনি!
জজঃ
কিন্তু আপনি দেরি করেছেন কেন?
জিতুঃ
ইয়োর অনার! অনুমতি দিলে যার কারণে আমি দেরি করেছি, তাকে কাঠগড়ায় হাজির করাতে চাই ।
জজঃ
অনুমতি দেয়া হল ।
একটু
পর ইনস্পেক্টর দেলোয়ার একজন কালো করে লুঙ্গি আর স্যান্ডো গেঞ্জি পড়া এক লোককে কাঠগড়ায়
এনে হাজির করলো । তারপর তার শপথ নেয়া হল ।
জিতুঃ
ইয়োর অনার, এই লোকটা সেই ডোম যে মেয়েটার ময়না তদন্ত করেছে । বাকিটা আপনি বলুন ইনস্পেক্টর
দেলোয়ার!
দেলোয়ারঃ
ইয়োর অনার! আমাকে জিতু গতকাল বলেছিলো সে যেখানে লাশ কাটা হয়েছে, সেখানে যেতে চায় ।
সে আমার সাহায্য নেয়, কিন্তু সে চেয়েছিল আমি যেন এমনভাবে তার সাথে যাই, যেন কেউ বুঝতে
না পারে আমি তার সাথে গিয়েছি । লাশ কাটা ঘরের কাছে যেতেই উনাকে এক লোক ছুরি দিয়ে আটকে
ধরে । ইয়োর অনার, আমি সমস্তটা ভিডিও করেছি আড়াল থেকে । তারপর আমি সুযোগ বুঝে এই ডোমকে
আটক করি । সকালে এই ডোম পালাতে চেষ্টা করেছিলো, কিন্তু আমরা তাকে ধরে ফেলেছি । তাকে
ধরতে গিয়েই আমাদের দেরি হয়ে গেলো ইয়োর অনার ।
জিতুঃ
সবটা তো শুনলেনই ইয়োর অনার, আর ধর্ষণের ব্যাপারে আমি একটু কথা বলতে চাই । গতকাল আমি
ইশাদের ফেসবুক ঘেটেছিলাম, তখন ওর একটা ছবিতে ওকে ওর বাবার সাথে দেখেছিলাম । সেই ছবিতে
ওর বাবা একটা সাদা শার্ট দেখেছিলাম । সেই সাদা শার্টই এরা নিয়ে গিয়ে নাকি প্রমাণ করেছে
ইশাদ নাকি ধর্ষণ করেছে ওই মেয়েটাকে । অথচ ইশাদের বাবা গত ৫ বছর ধরে বিছানায় শয্যাশায়ী
। আমি নিশ্চিত ইয়োর অনার! এটা উদ্দেশ্য প্রণীত!
জজঃ
আমি পুনরায় শার্টটি ঢাকা মেডিকেলে পরীক্ষার জন্য পাঠাচ্ছি সেখানে আসামী ইশাদের শরীরের
কোন ডিএনএ সেখানে পাওয়া যায় কি না জানার জন্য ।
তারপর
জজ রাইসার দিকে তাকিয়ে বললেন, “আপনি কিছু বলবেন?”
রাইসাঃ
না ইয়োর অনার, কিছু বলার নেই আমার ।
জজ
জিতুকে বললেন, “আপনি কিছু বলবেন?”
জিতুঃ
অবশ্যই ইয়োর অনার! আমি এই মিথ্যেবাদী ডোমের কাছে জানতে চাই কার কথায় সে এসব করেছে!
জিতু
ডোমের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “বলুন! কার কথায় আপনি এ কাজ করেছেন!”
ডোম
কিছু বলে না । শুধু ভয়ে কাপে ।
জিতুঃ
কি হল! বলুন! কার কথায় এ কাজ করেছেন!
ডোম
তবুও চুপ । জিতু আবার জিজ্ঞেস করলো, “আদালতের সময় নষ্ট করবেন না! বলুন! কার কথায় এসব
আপনি করেছেন!”
ডোম
তখন আঙ্গুল তুলে সামনে বসে থাকা একজনের দিকে ইশারা করে । আঙ্গুল সোজা সেদিকে তাকিয়ে
দেখা গেলো সে মাহিন । মাহিন উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো, “মিথ্যে কথা ইয়োর অনার! আমি কিছুই
করিনি!”
ডোমঃ
ওই! তুই কস নাই মানে! তুই-ই তো কইছিলি! লাশের পায়ে বুটের আঘাত তোর বুটের ছিল তা লুকাইতে!
আর তুই-ই তো পুলিশরে সাদা শার্টের কথা কইছিলি! কেউ জেলের ওইদিকে আইলে তুই-ই তো কইছিলি
তারে আটকাইতে! গতকাইল ৪টার দিকে এই লোক আসার আগে তুই-ই তো কইলি! এই লয়ার আইতেছে!
জিতু
হেসে উঠলো । তারপর বলল, “সরি ইয়োর অনার! আমি হাসতে বাধ্য হলাম । মিথ্যে কথা বলাটাও
উনি শেখেন নি । গতকাল ৪টার দিকে মাহিন ওর বন্ধুদের সাথে একটা টিভি চ্যানেলের সাক্ষাৎকারের
জন্য ঘরেই ছিলো । এতেই বোঝা যাচ্ছে, উনি মিথ্যে বলছেন ।”
জজঃ
হ্যাঁ, আমিও সেই লাইভ দেখেছি ।
তারপর
জজ ডোমের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আপনি সত্যি কথা বলুন! নয়তো আপনাকে কিন্তু সাজা ভোগ করতে
হবে!”
ডোম
তো জিতুর কথা শোনার পর থেকেই ভয় পেয়ে গিয়েছিলো । এবার প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,
“আমারে মাফ কইরা দেন ইয়োর অনার! সত্যি কথা কইলে আমারে মাইরা ফেলবো কইছিল দেইখা আমি
মিথ্যা কইছি!”
জজঃ
আপনার কিচ্ছু হবে না, আপনি সত্যিটা বলুন ।
ডোমঃ
ইয়োর অনার! ওই কাউন্সিলর খগেন সেনের পোলা আমারে এই কাম করতে কইছে ইয়োর অনার! নাইলে
আমারে মাইরা ফেলবো কইছিল ।
জিতুঃ
তাহলেই বুঝুন ইয়োর অনার! কেসে এই জিতুর ভুমিকা কতোটুকু ছিল, আমি নিশ্চিত, আরও প্রমাণ
পেলে ধীরে ধীরে প্রমাণিত হয়ে যাবে, খুনটা ওই জদুই করেছে । আর মাইয়াডারে ধর্ষণই করা
হয় নাই ।
জদু
ভয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “ইয়োর অনার! এইডা মিথ্যা কথা! আমি এরে চিনিই না!”
রাইসাঃ
ইয়োর অনার! এই ডোম একটা কথা বলে দিলো আর সেটা সত্য প্রমাণিত হয়ে গেলো? প্রমাণ ছাড়া
এই ডোমের মুখের কথা ভিত্তিহীন ইয়োর অনার!
জিতুঃ
আপনি কি প্রমাণ করতে পারবেন উনি মিথ্যে বলছেন?
রাইসাঃ
আপনি কি প্রমাণ করতে পারবেন, যে এই লোকটা আপনার কাছ থেকে টাকা খেয়ে মিথ্যে বলছে না?
জিতুঃ
দেখুন যদি তাই হতো, তাহলে প্রথমে এই লোকটা প্রথমে মাহিনকে দোষারোপ করতে পারতো না!
রাইসাঃ
কে বলতে পারে এটা আপনার সাজানো নাটক না? ভিডিও করে এনে মিথ্যে গল্প বানিয়ে এইটুকু টুইস্ট
তো রাখতেই পারেন ব্যাপারটা ফুটিয়ে তোলার জন্য!
জজঃ
অর্ডার অর্ডার! আপনারা শান্ত হোন! আজকে শুনানির পর জদু সেনের দিকে সন্দেহের তীরটা আরও
বেশি ঘুরে গেছে । তবু এখনও কিন্তু কিছুই ভালোমতো প্রমাণিত হয় নি । তবে এটুকু প্রমাণিত
হয়েছে মেয়েটাকে ধর্ষণই করা হয় নি । তবু আমি শার্টটা পরিক্ষার জন্য পাঠাবো । এই কেসের
পরবর্তী শুনানি আগামী ১৫ জুলাই হবে । আজকের মতো কোট এখানেই মুলতবী ।
কোট
থেকে বের হবার সময় ইশাদের সাথে দেখা করতে এগিয়ে এলো ওর বাকি চার বন্ধু ।
ইশাদঃ
আমার বাবা কেমন আছে?
মাহিনঃ
ভালো না রে । আগের মতোই খারাপ ।
ইশাদঃ
আর মা?
রুমনঃ
আগের মতই ডিপ্রেশনে আছেন আন্টি । তবে চিন্তা করিস না, সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ ।
ইশাদ
আর কিছু বলল না ।
জেলে
এসে ইশাদ দেখল, বেশিরভাগ কয়েদি কিংবা হাজতি জেলের ভেতর নেই । জেলের ভেতরে থাকা একজনকে
জিজ্ঞেস করলো, “কি ব্যাপার? বাকিরা কথায়?” লোকটা বলল, “আরে! ডান পাশের লিডার বিল্লালের
লগে আরেক কয়েদীর লড়াই হইতাছে! লিডার হওয়ার লড়াই ।” ইশাদ জিজ্ঞেস করলো, “কি! কোথায়?”
লোকটা বলল, “বাগানে ।” বাগানের দিকে যাবার জন্য পা বাড়াল ইশাদ, কিন্তু এমন সময় ভেতরে
এলো নতুন কয়েদি, রানা কুদ্দুস । মুখের হাসি দেখেই বোঝা যাচ্ছে, সে জিতেছে । আশেপাশে
ডান পাশের কয়েদীরা জয়ধ্বনি দিচ্ছে, “রানা ভাই! রানা ভাই! তোমার আমার সবার ভাই! রানা
ভাই! রানা ভাই!” ইশাদ একজনকে জিজ্ঞেস করলো, “বিল্লাল ভাই কোথায়?” সেই লোকটা বলল, “ধুরু!
হেরে কেউ গোণে নি! হেয় পইড়া আছে মাটিতে । আমাগো নতুন লিডার রানা ভাই!” ইশাদ গেলো বাগানে
। বিল্লালের ক্ষেতের অবস্থা খারাপ । সব গাছ তুলে ফেলেছে বোধ হয় এই রানা-ই । একপাশে
পড়ে আছে বিল্লালের রক্তাক্ত দেহ । একা পড়ে আছে । ইশাদ গেলো বিল্লালের কাছে । ডাকলো,
“ভাই! ভাই ওঠেন! ভাই!” সাড়া এলো না বিল্লালের মুখ থেকে । ইশাদ কাঁধে একটা হাতের স্পর্শ
অনুভব করলো । পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো, বজলু দাঁড়িয়ে ।
দুপুরের
খাওয়া দাওয়া শেষে নিজের রুমে গেলো পলাশ । এমন সময় ওর মা এসে বলল, “ওরে জমিদার! খাইয়া
প্লেটটা ধুবি না!”
পলাশঃ
কেন? বুয়া নাই?
পলাশের
মাঃ বুয়া কইছি না ফাঁকিবাজ! বাদ দিয়া দিছি ১২ দিনের টাকা দিয়া । কাইল নতুন বুয়া আসার
কথা । যদি না আসে!
পলাশঃ
আসবে মা!
পলাশের
মাঃ যদি না আসে!
পলাশঃ
যদির কথা নদীতে!
পলাশের
মাঃ না আসলে তোর কপালে ভাত নাই ।
পলাশঃ
আচ্ছা যাও! না আসলে আমি কাল সব থালাবাসন ধুয়ে দেবো । খুশি?
পলাশের
মাঃ হ্যাঁ, এইবার ঠিক আছে । আরে শোন! ওই ইশাদের জন্য তুই এতো জেলে যাস ক্যান?
পলাশঃ
কেন মা? ভুল করছি কি?
পলাশের
মাঃ ওরে আমার দরদি পোলা রে! বন্ধুর জন্য উনার সে কি মায়া! শোন! এই পোলার ভবিষ্যৎ গেছে
ভালো! ওর জন্য যেন তোর ভবিষ্যৎ নষ্ট না হয়!
পলাশঃ
মা! আজ আমার এমন হলে ইশাদ আমার পাশে থাকতো!
পলাশের
মাঃ থাকতো না ।
পলাশঃ
যদি থাকতো!
পলাশের
মাঃ যদির কথা নদীতে! তোরে আমি জন্ম দিছি না তুই আমারে জন্ম দিছোস যে এতো বেশি বোঝোস?
বেশি পাকনামি করলে কিন্তু তোরে বাড়ি থেইকা বাইর কইরা দিমু বইলা রাখলাম!
বলে
পলাশের মা চলে গেলো । পলাশ আর কিছু বলল না ।
বিকেলের
দিকের কথা । মাহিন রুমন আর ইমন ছাদে বসে আছে ।
ইমনঃ
ভাই, ফুটবল খেলতে যাস কেউ?
মাহিনঃ
না রে ।
রুমনঃ
আমিও না । ইশাদ জেলে যাওয়ার পর থেকে ওই মাঠের কাছেও যাই নাই ।
মাহিনঃ
তুই যাস নাই ইমন? তুই তো ফুটবল ভালবাসিস ।
ইমনঃ
গতকাল গেছিলাম বইলাই জিজ্ঞেস করলাম । ওরা আমারে নিলো, তাও কেমন যে আচরণ করলো! যেন আমিই
দোষী ।
মাহিনঃ
কেমন আচরণ করলো মানে?
ইমনঃ
বল পাস দেয় নাই ঠিকমতো, আমার থেকে দূরে দূরে থাকছে । আবার কথাও বলে নাই ঠিকমতো ।
মাহিনঃ
ভাই, ওরা খুব সেলফিস । ওদের কথা বইলা লাভ নাই ভাই ।
ইমনঃ
আমাদের সাথেই এমন করতেছে, ইশাদের সাথে কি করবে বোঝ!
রুমনঃ
হুম । তবে ইশাদ নির্দোষ প্রমাণিত হলে মনে হয় না ওদের বলার কিছু থাকবে ।
ইমনঃ
নির্দোষ প্রমাণিত হবে তো?
রুমনঃ
জিতু ভাই তো চেষ্টা করতেছেই ।
মাহিনঃ
ইমন, তুইও কি তাই ভাবতেছিস আমি যেইটা ভাবতেছি?
ইমনঃ
কি?
মাহিনঃ
ওরা সেদিন জিতু ভাইয়ের ওপর আক্রমণ করছিলো! পড়েও যদি করার চেষ্টা করে!
ইমনঃ
একদম! আমিও এটাই ভাবতেছি!
রুমনঃ
সমস্যা নাই । ভাই অনেক সাহসি । দেখলি না, ঝুকি নিয়া ওই লাশ কাটা ঘরে গেছিলো! ইনশাআল্লাহ
কিছুই হবে না ।
ইমনঃ
হুম ।
রুমনঃ
আচ্ছা, সেই সাংবাদিক কি কিছু বলছিল পড়ে তোরে?
ইমনঃ
না, কিছু বলে নাই ।
রুমনঃ
যে লোক তোরে আটকাইছিলো, ওই লোক উনার ছেলের ফেসবুকে লাইভে আইসা নিজের দোষ স্বীকার করছে,
দেখছিস?
ইমনঃ
হ । দেখছি । উনি তো এখন ভাইরাল ।
মাহিনঃ
ওই চ্যানেলের একটা খবর দেখলাম । ফেসবুকে লিঙ্ক দিছে । হেডলাইন দেয়া, দীপিকার ঘরের কলিংবেল
চাপলে হাজির হন কারিনা কাপুর ।
ইমনঃ
হুহ! সাংবাদিক না অন্য কিছু এরা । দেশের কত জায়গায় কত মানুষের কত কষ্ট এসব তুলে ধরা
বাদ দিয়ে যা পায় তাই নিয়েই সংবাদ বানিয়ে দেয় । কত ভালো সাংবাদিক আছে আমাদের দেশে, এসব
কিছু খারাপ সাংবাদিকের জন্য তাদেরও অপমানিত হতে হয় ।
মাগরিবের
একটু পরের কথা । সে সময় জ্ঞান ফিরলো বিল্লালের । চোখ খুলেই সামনে ইশাদ আর লিমনকে দেখল
। বিল্লালের শরীরের এখানে ওখানে ব্যান্ডেজ ।
বিল্লাল,
“ভাই? ঠিক আছো?”
বিল্লাল
উঠে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসলো ।
লিমনঃ
কেমন লাগতেছে এখন আপনার?
বিল্লাল
কথার জবাব না দিয়ে বলল, “আমি কই?”
ইশাদঃ
ভাই, তুমি এখন বামপাশের জেলে ।
বিল্লালঃ
কি! আমি ডানপাশের লিডার! আমি ক্যান এইখানে!
ইশাদঃ
ভাই শান্ত হও!
বিল্লালঃ
ওই! তুই আমারে তুমি কইরা ডাকোস ক্যান! *** দিমু এক্কেরে!
ইশাদঃ
আচ্ছা, শান্ত হন!
বিল্লালঃ
আমারে উঠতে দে!
বলে
ওঠার চেষ্টা করলো বিল্লাল, কিন্তু পারল না । শরীরে ব্যাথা করছে ।
ইশাদঃ
যে পর্যন্ত শরীরে শক্তি না আসে, সে পর্যন্ত তো রেস্ট নিন!
বিল্লালঃ
আমারে সেবা করছে কে?
লিমনঃ
এই যে ইশাদ! আর আমাদের লিডার, বজলু ওস্তাদ!
বজলু
কিছুক্ষণ বিল্লালের সামনে এসে দাঁড়ালো । কিছু বলল না । বিল্লাল ও কিছু বলল না ।
ইশাদঃ
ভাই, আপনি রেস্ট নিন প্লিজ!
বিল্লাল
এবারেও কিছু বলল না ।
ইশাদঃ
শুয়ে পড়ুন!
বিল্লাল
এবার বিরক্ত হয়ে বলল, “চুপ থাক! আমার ভালো আমি বুঝমু না তো কি তুই বুঝবি?”
ইশাদ
কিছু বলল না ।
বিল্লালঃ
তোরা যা! আমারে একা থাকতে দে!
ইশাদ
আর লিমন চলে গেলো সেখান থেকে । বিল্লাল হেলান দিয়ে বসেই রইলো । জানালার ধার থেকে আওয়াজ
এলো । কেউ বোধ হয় বলছে, “আরে! ওইসব বিল্লালরে গোণার টাইম আছে নাকি! রানা ভাই বেস্ট!
ওই ব্যাটা ভাগছে ভালো হইছে!” কথাটা শুনে অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি চলে এলো বিল্লালের
।
রাতে
খাবার সময় ইশাদ বিল্লালের জন্য খাবার নিয়ে এলেও বিল্লাল খেল না । সকালের মতো বিরক্তি
দেখালো, “আমার খিদা আমি বুঝমু! তুই এতো বেশি বুঝোস ক্যান!” ইশাদ আর কিছু বলে নি ।
১৩
জুলাই ২০২০, সোমবার
সকালেও
একই ঘটনা । ইশাদের আনা গুড় আর রুটি খায় নি বিল্লাল । তবে দুপুরে আর নিজের খিদে আটকে
রাখতে পারে নি । শরীরে ব্যাথা হওয়া সত্ত্বেও গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছে বিল্লাল । তারপর
নিজের খাবার নিয়ে ওখানেই একপাশে বসে খাওয়া শুরু করলো । বিল্লালকে দেখে পাশে এসে বসলো
ইশাদ ।
বিল্লালঃ
তুই আমার পিছে পিছে ঘুরতাছোস ক্যান?
ইশাদঃ
ও তাই! আপনার তাই মনে হয়?
বিল্লালঃ
হ!
ইশাদঃ
আচ্ছা, ইচ্ছা হইলে তাই ভাবেন । তবে আমি আছি আপনি অসস্থ বইলা । সুস্থ হইলে আপনার সাথে
কথাই বলতাম না ।
বিল্লালঃ
আমার জায়গায় যদি তোর ওই বন্ধুডা, সকালে যে তোর লগে ছিল!
ইশাদঃ
ওর নাম লিমন ।
বিল্লালঃ
হ, ও যদি থাকতো, তুই কি একি কাম করতি?
ইশাদঃ
হ্যাঁ, কারণ আমি আপনার মতো খুন বিদ্যায় বিশ্বাসী নই, পরোপকারিতায় বিশ্বাসী ।
বিল্লাল
আর কিছু বলল না । ইশাদ আসার আগে মাত্র একটা ভাতের লোকমা মুখে নিয়েছিলো । এখন দ্বিতীয়
লোকমাটা নিতে যাবে, এমন সময় হঠাৎ সামনে এলো রানা । এসে বিল্লালের প্লেট কেড়ে নিয়ে বলল,
“কিরে! এই খাবার তুই খাবি! তা ক্যামনে হয়! আমি নতুন লিডার, একটু দিয়া তো খাবি, পল্টি
খাইছোস বইলা কি দিয়া খাবি না!” বলে বিল্লালের খাবার নিয়ে চলে গেলো । বিল্লাল মাথা নিচু
করলো । ইশাদ নিজের প্লেটটা এগিয়ে দিয়ে বলল, “ভাই, আপনি আমার খাবারটা খান!”
বিল্লাল
ইশাদের দিকে তাকাল ।
ইশাদঃ
কি হলো! নেন?
বিল্লালঃ
তুই খাবি না?
ইশাদঃ
আমি তো খেয়েছি, গতকাল দুপুর, রাত, এবং আজকে সকালেও । কিন্তু আপনি তো খান নি, তাই দিচ্ছি
। আমি এক বেলা না খেলে কিছু হবে না ।
বিল্লাল
ইশাদের কাছ থেকে খাবারের প্লেটটা নিলো । তারপর খেতে খেতে বলল, “সরি রে। খুব খিদা পাইছে
। তাই নিলাম ।”
ইশাদঃ
ধুর! ব্যাপার না!
বিল্লালঃ
তুই যেদিন আইছিলি সেদিনও নিছিলাম, তয় সেইদিন খিদা ছিলো না, সেইদিন অহংকার ছিল বেশি
। আইজকা খিদাও আছে, অহংকারও নাই । তুই চাইলেই আমার ওপর অহংকার দেখাইতে পারতি! কিন্তু
তুই তা না কইরা তুই আমারে খাইতে দিলি!
ইশাদঃ
আরে ভাই বাদ দাও না!............উপসস…! সরি ভাই, আবার তুমি কইরা বইলা ফেললাম । আসলে
পাড়ার বড় ভাইদের তুমি কইরা বলা অভ্যাস তো ।
বিল্লালঃ
থাক, তুমি কইরাই বলিস ।
ইশাদঃ
ওকে ।
কিছুক্ষণ
বিল্লাল খেলো । দুজনেই চুপ থাকলো । তারপর হঠাৎ বিল্লাল বলল, “আমি কত খারাপ, না?”
ইশাদঃ
আমরা সবাই খারাপ, কেউ কম, কেউ বেশি । একেবারে পাপমুক্ত আমরা কেউ না । এই যুগে তা হয়
সম্ভবও না, তবে আমরা চাইলেই নিজেদের পাপ কমাইতে পারি । আল্লাহ আমাদের বহু সুযোগ দেয়
। ধরুন এখন আপনাকে দিয়েছেন, নিজেকে ভালো করে গড়ে তোলার!
বিল্লাল
কিছু বলল না । ইশাদের কথাগুলোই হয়তো ভাবতে লাগলো ।
“খালা!
ভালো কইরা মুইছো!” নতুন বুয়াকে বলল পলাশের মা । সে সময় বাসায় এলো পলাশ । পলাশের মা
বলল, “যাক বাইচা গেছোস! বুয়া আসছে, নাইলে তোরেই থালাবাসন ধোয়া লাগতো!”
পলাশঃ
আচ্ছা মা! বুয়ার কথা তুমি আমাকে বলো কেন বলতো!
পলাশের
মাঃ আচ্ছা যা! আর কমুনা, খুশি?
পলাশ
কিছু না বলে পাশে সোফায় বসে মোবাইল চালাতে লাগলো । বুয়া ঘর মোছা শেষে কাছে এসে বলল,
“ও খালা, ঘর মুছা হইয়ে গেছ, থালাবাসনও ধুইয়া থুইসি ।”
পলাশের
মাঃ আচ্ছা খালা, আর আইজকা কিন্তু অনেক দেরি কইরা ফেলছো! ৩টা বাইজা গেছে, পরের দিন দেরি
করবা না কিন্তু!
বুয়াঃ
আইচ্ছা খালা, করমু না, হেইয়া মোর মাথায় থাকবেনে ।
পলাশের
মাঃ তা খালা কিছু খাবা নাকি?
বুয়াঃ
না খালা, এহন কিছু খামু না ।
পলাশের
মাঃ কয় বাসায় কাজ কইরা আসলা?
বুয়াঃ
দুই বাসায় করছি খালা, আর একটা বাসায় আছে । তাইলেই শেষ ।
পলাশের
মাঃ ও । তাইলে তো খুব কষ্ট!
পলাশ
একটু বিরক্ত হয়ে মনে মনে বলল, “হায়রে! বুয়ার সাথে আড্ডা জুড়ে দিছে ।” তারপর পলাশ উঠে
নিজের ঘরের দিকে যেতে লাগলো ।
বুয়াঃ
না খালা, তেমন কষ্ট হয় না সব বাসায়, খালি এক বাসায়ই কষ্ট হয় ।
পলাশের
মাঃ কোন বাসায়?
বুয়াঃ
ওই যে, কাউন্সিলর ব্যাটা, খগেন সেন, হেইয়ার বাসায়!
পলাশ
নিজের রুমে দরজার কাছে প্রায় চলে এসেছিলো, বুয়ার কথা শুনে দাঁড়িয়ে গেলো এবং শুনতে লাগলো
।
বুয়াঃ
হেই লোকের পোলা, জদু, তার রুম আবার ১০ তলা না কয় তলায়, মানে হের আর হের বউয়ের রুম তিন
তলায়, আর হের পোলা রুম আরও ৬-৭ তলা উপরে । তাই হের কাম করতে বেশি দেরি হইয়া যায়!
পলাশ
মনে মনে বলল, “তবে কি এটাই আমার সুযোগ! ইশাদের জন্য কিছু করার!”