অপবাদ পর্ব-১
অপবাদ(১)
“হ্যালো! বের হইসিস?” কলটা কানে নিয়েই কথাটা বলল মাহিন । ফুটবল খেলতে যাবে, ওর বন্ধুরা বের হয়েছে কি না তাই জানতে কল করেছে । ফোনের ওপাশ থেকে একজন বলল, “হ্যাঁ দোস্ত! বের হইছি!” এর নাম ইমন । “তুই আসতে থাক, আমি আর পলাশ বের হইছি ।” পলাশও ওদের আরেকটা বন্ধু । সে মাহিনের বাসার কাছে থাকে বলে একসাথে রওনা হয় । ইমনকে পলাশ জিজ্ঞেস করলো, “কিরে, মাহিন ফোন দিছিলো না?” ইমন বলল, “হ!”
পলাশঃ
ওর ডেইলি কল করার কি দরকার, জানেই আমরা আসবো ।
ইমনঃ
আরে, সেইদিন আসছিলো আর পায় নাই আমাদের । আমাদের যে ওইদিন স্যার হঠাৎ কোচিং দিছিলো ।
পড়ে বেচারা অনেক রাগ করছে, তাই আসার আগে কল দেয় ।
পলাশ
বলল, “হুদাই ।”
এদিকে
বাসা থেকে, “আম্মু! আমি গেলাম বাইরে!” বলে ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো ইশাদ । তারপর
বিল্ডিং থেকে নেমে কল করলো রুমনকে । বলল, “হ্যাঁ রুমন! নাম! আমি নাইমা পড়ছি!” বলে কিছুক্ষণ
অপেক্ষা করলো । তারপর সামনের বিল্ডিং থেকে নেমে এলো রুমন । বলল, “আরে বন্ধু! কি খবর?”
ইশাদ বলল, “এইতো বন্ধু, আলহামদুলিল্লাহ ভালো । তোর কি অবস্থা?” রুমন বলল, “এইতো বন্ধু
। চল যাই ।” তারপর দুজনে হাঁটতে হাঁটতে রওনা হল মাঠের দিকে । মাঠে দিকে যাবার পথে এই
৫ বন্ধু মাঝে কোন এক ৪ রাস্তার মোড়ে এসে একত্র হয় এই ৫ বন্ধু । যার ৩ রাস্তা থেকে সবাই
এসে মিলিত হয়ে অবশিষ্ট এক রাস্তা ধরে একসাথে চলে যায় মাঠের দিকে । আজও ব্যাতিক্রম না
। সেখান থেকে যেতে খুব একটা বেশিক্ষণ লাগে না । মিনিট দশেকের রাস্তা । প্রশ্ন জাগতে
পারে ৫ জনকে দিয়ে কি করে ফুটবল খেলা । না পাচ নিয়ে নয় । মাঠে আরও অনেকে ফুটবল খেলে,
কিন্তু তাদের মধ্যে এই পাচ জনই সবচেয়ে বেশি ক্লোজ ফ্রেন্ড এবং এই পাচজনকে নিয়েই মূলত
গল্প ।
খেলা
শেষে মাগরিবের আজানের পর সবাই বাড়ির পথে রওনা হলো । তারপর মাঠে কে কি করলো সেই নিয়ে
আলোচনা ।
ইমনঃ
আরে ভাই! ওদের তাজ যা গোলকিপার! এমনেই গোল হইতো না ।
ইশাদঃ
আরে ভাই, আমাদের গোলকি প্রতীক ফাউল খেলে । ওরে বাদ দে ।
মাহিনঃ
বাদ দিতে বললেই কি বাদ দেয়া যায় । বড়োজোর ম্যাচে নেয়া যাবে না এই ।
রুমনঃ
কিন্তু ডিফেন্সে কিন্তু পলাশ আরেকটু ভালো খেলতে পারতো ।
পলাশঃ
আমি স্ট্রাইকার এ ভালো খেলি ভাই । হুট করে আজকে ডিফেন্সে রাখসিস, আমার কি দোষ ।
মাহিনঃ
আচ্ছা বাদ দে না, খেলা তো খেলাই । কারোরই দোষ নাই ।
ইমনঃ
হ ভাই, বাদ দে ।
এরকম
আরও সব কথা বলতে বলতে চলে আসে সেই চার রাস্তার মোড় । তারপর সবাই সবাইকে “আল্লাহ হাফেজ!”
জানিয়ে চলে যায় যার যার গন্তব্যে । এভাবেই চলে ওদের দিন । ওদের পরিচয় ওরা এ বছর এইচএসসি
দিয়েছে । সামনে রেজাল্ট । আর ওরা যে শহরে থাকে তার নাম নম্বরিটেক ।
(ইন্ট্রো)
৪
জুলাই ২০২০ । সেদিনও এই পাচজন খেলা শেষে বাসার দিকে যাচ্ছিলো । এমন সময় পথের ধারে একটা
ছেলেকে জোরে জোরে পায়চারী করতে এবং সেই সঙ্গে সিগারেট খেতে দেখলো ওরা সবাই । চিনতে
ভুল হল না । এই নম্বরিটেক শহরের মেয়র খগেন সেনের ছেলে জদু সেন । জদু ওদের বছর ১ ছোট
। অর্থাৎ আসছে বছর এইচএসসি দেবে সে ।
“কিছু
দেখছিস?” হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো পলাশ ।
ইমনঃ
ভাই! ওরা মেয়রের পোলাপাইন । বিড়ি খাওয়া কি, এখান দাঁড়াইয়া যদি কাউরে খুনও করে, তাইলেও
বলার কেউ নাই ।
ইশাদঃ
কে বলসে নাই, সেইদিন ওরে দিসি একদম মুখের ওপর ।
পলাশঃ
মানে?
ইশাদঃ
আরে ভাই! জুনিয়র, জুনিয়রের মতো থাক, তা না, আইসা আমারে বলে আমি নাকি হুদাই ফুটবল খেলতে
যাই, খেলতে পারি না ।
রুমনঃ
হেহ! ও নিজে খেলতে পারে? কোনদিনও তো কিছু খেলতে দেখি নাই ওরে ।
মাহিনঃ
কোন এক কালে বোধ হয় কুত কুত খেলতো ।
রুমনঃ
তা ইশাদ, পড়ে কি বললি?
ইশাদঃ
কুত্তার কাজ ঘেউ ঘেউ করা, তাকে পাত্তা দেয়া মানুষের কাজ না ।
সবাই
কথাটা শুনে হেসে উঠলো ।
পলাশঃ
আচ্ছা ভাই, বাদ দে । ওরা ওইরকমই বদমাইশ ।
মাহিনঃ
কালকে আসবি তো না?
ইমনঃ
কিরে ভাই, এমনিই ফোন দেস, আবার এখন থেকে আগের দিনও জিজ্ঞেস করে নিচ্ছিস?
মাহিনঃ
ক্যান, ওইদিনের কথা মনে নাই? আসবি বইলাও আসিস নাই!
ইমনঃ
কই! আমি ওইদিন বলছিলাম আসতে পারি! আসমু তো কই নাই!
মাহিন
পকেট থেকে মোবাইল বের করতে করতে বলল, “দাড়া আমার কাছে সব কল রেকর্ড হইয়া থাকে, তোরে
দেখাইতেছি ।” ইমন তখন ধরা পড়ে যাবে দেখে বলল, “আচ্ছা ভাই, বাদ দে । যা স্বীকার কইরা
নিলাম ।”
ইশাদঃ
এ কি রে ইমন! এইডা তুই কি করলি!
রুমনঃ
বেচারা ধরা খাইয়া গেলো!
ইমনঃ
আচ্ছা ভাই, চার রাস্তার মোড় চইলা আসছে, থাক তাইলে ।
রুমনঃ
দ্যাখ, ছেলে এখন পালাচ্ছে!
ইমনঃ
ভাই! এইডা যদি পালানো হয় তাইলে কেমন কথা! আমি বাসায় যামু না?
মাহিনঃ
ক্যান ভাই, আরেকটু দাঁড়াইয়া গল্প কইরাও তো যাইতে পারিস?
পলাশঃ
না রে, আজকে না । আমার কোচিং আছে । ইমন চল ।
তারপর
যে যার যার মতো বিদায় নিয়ে নিজেদের বাসায় পথে রওনা হল । ইমন আর পলাশ এক রাস্তায়, ইশাদ
আর রুমন এক রাস্তায়, মাহিন এক রাস্তায় ।
বাসায়
যাবার পথে হঠাৎ ইশাদ হাটা থামিয়ে বলে উঠলো, “শিট!” রুমনও হাটা থামিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“কিরে কি হইছে?” ইশাদ বলল, “আরে, আমার আব্বু অসুস্থ । আম্মু বলছিল কিছু ওষুধ আনতে ফেরার
সময়, আনতেই ভুলে গেছি ।”
রুমনঃ
সামনে দোকান আছে তো, ওখান থেকে কিনিস ।
ইশাদঃ
আরে, অনেকগুলো ওষুধ । মাঠের চার রাস্তার মোড়ের ওই পাশে একটা দোকানে প্রেসক্রিপশন রেখে
বলছিলাম রেডি করে রাখতে । আসার সময় একটু যদি খেয়াল থাকে!
রুমনঃ
আবার অতোদূর যাবি!
ইশাদঃ
যাওয়াতো লাগবেই । চল একটু দোস্ত!
রুমনঃ
আজকে মাফ কর ভাই! আমার তাড়া আছে ।
ইশাদঃ
কিয়ের তাড়া?
রুমনঃ
আব্বুর বন্ধু আসার কথা বিকালে, সন্ধ্যার পরেই আবার যাওয়ার কথা, উনার নাকি একখান মাইয়া
আছে, দেখমু না, কেমন দেখতে ।
ইশাদঃ
ওরে বাবা! কি শখ! যা ভাগ!
বলে
ইশাদ আবার যে পথ দিয়ে এসেছিলো, সে পথেই যাওয়া শুরু করলো । আর রুমন “বাই বন্ধু!” বলে
সামনের পথে হাটা ধরলো । ইশাদের বাবা গত পাচ বছর ধরে বিছানায় শয্যাশায়ী । নিয়মিত ওষুধ
খেতে হয় তাকে । গত কদিন ধরে জর এসেছে তার । সাথে প্রেশারও খুব হাই ।
দোকানের
নাম রেজা ফার্মেসী । এক বয়স্ক লোকের দোকানটা । নামটা নিশ্চয় আন্দাজ করা যাচ্ছে, হ্যাঁ,
রেজা উনার নাম । ইশাদ যেয়ে জিজ্ঞেস করলো, “আঙ্কেল, ওষুধগুলো রেডি?” লোকটা প্রথমটায়
কিছু শুনতে পেল না । ইশাদ আবার জিজ্ঞেস করলো, “আঙ্কেল! ওষুধগুলো রেডি ।” লোকটা এবার
শুনতে পেয়ে বলে উঠলো, “অ্যা! কিসের ওষুধ! কি ওষুধ! কে তুমি?” ইশাদ হালকা বিরক্ত হল
। সামনেই প্রেসক্রিপশনটা একটা পেপারওয়েট দিয়ে চাপা দেয়া অবস্থায় দেখতে পেল । সেটা হাতে
নিয়ে লোকটাকে দেখিয়ে বলল, “কি এটা?” লোকটা মাথা চুলকে বলল, “আহ হা! সরি বাবা! মনেই
ছিল না!” তারপর কাগজটা হাতে নিয়ে ওষুধ খুঁজতে লাগলো । অনেকক্ষণ ধরে খুজল । ইশাদ বিরক্ত
হলেও সহ্য করে যাচ্ছিলো বেচারা বয়স্ক বলে । কিন্তু সবচেয়ে বেশি বিরক্ত হল তখন, যখন
লোকটা সব ওষুধ খুজে বলল, “আমার কাছে একটা ওষুধও এখন নেই!”
বাসায়
এসে ব্যাগটা চেয়ারের ওপর রেখে ব্যাগ থেকে যখন বুট বের করতে যাবে, তখন মাহিন খেয়াল করলো,
বুট ওর ব্যাগে নেই । মনে পড়লো আজ প্রতীক খেলতে আসে নি দেখে গোলকিপার ছিল মাহিন । আর
আজ ইশাদের বুট ছিড়ে যাওয়ায় মাহিনের বুট পড়ে খেলেছিলো ইশাদ । সুতরাং বুটটাও তাহলে ইশাদের
ব্যাগে । মাহিন কল করলো ইশাদকে । এদিকে ইশাদ তখন রেজা নামক দোকানদারের হাত থেকে প্রেসক্রিপশনটা
নিয়ে লোকটাকে কথা শোনাচ্ছিল, “আপনার বয়স হইছে আঙ্কেল! দোকানে বইসা কাস্টোমার নির্যাতন
বন্ধ করেন । কিয়ের ওষুধের দোকান খুলছেন যে কিছুই পাওয়া যায় না!” রেজা লোকটা কিছুই শুনতে
পেলো না বোধ হয় । আবার যেমন বসেছিলো সেরকম বসে পড়লো । ইশাদ আর কিছু না বলেই কল ধরলো,
“হ্যা মাহিন বল ।” মাহিন কিছু একটা বলতে যাবে এমন সময় সে শুনতে পেল জদুর গলা । কারণ
হঠাৎ জদু ইশাদের কাছে এসে বলে উঠলো, “ভাই! ভাই! ম্যালা বড় ঝামেলায় পড়ছি ভাই! আমারে
বাচান ভাই!” ইশাদ যে ফোনে কথা বলছে, সেটা ভুলে গিয়ে হালকা হেসে জদুকে বলল, “বিপদে পড়ে
হঠাৎ আমার কথা মনে পড়লো না?” জদু বলল, “ভাই সরি! আমারে মাফ কইরা দেন ভাই! আমারে মাফ
করেন, আর জীবনেও করমু না! আমারে খালি বাচান!” জদুর চেহারা দেখেই মনে হচ্ছে সত্যি বিপদে
পড়ে গেছে তাই ইশাদ জিজ্ঞেস করলো, “বল কি হয়েছে?” এদিকে মাহিনের ব্যালান্স শেষ হয়ে যাওয়ায়
কলটা কেটে গেলো । তারপর মাহিন নিজেই নিজেকে বলল, “আরে! এমনে কেউ ফোন কথা বলতে বলতে
অন্য কারো সাথে কথা বলে! আমার টাকাগুলা দিলো কাইটা ।” তারপর মাহিন নিজেকের শান্তনা
দিয়ে বলল, “ব্যাপার না । বুট তো ওর কাছেই আছে । পড়ে দিয়ে দেবে । ও তো আর নষ্ট কইরা
ফেলতেছে না ।”
এদিকে
জদু রেজা দোকানদার যেন শুনতে না পায়, তাই ইশাদের কানের কাছে মুখ বাড়িয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
“ভাই! আমি নম্বরিটেক মোড়ে একখান হোটেল ভাড়া নিছিলাম গার্লফ্রেন্ডের লগে রাইত কাটামু
বইলা, গার্লফ্রেন্ড পড়ে আসার কথা আছিলো, তয় আমি রুম থেইকা বাইর হইছিলাম একখান কামে,
আর রুমে যাইয়া দেহি! একখান মাইয়ার লাশ!” ইশাদের বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো । নিজের অজান্তেই
বলে উঠলো, “লাশ!” ইশাদ বলল, “হ ভাই! লাশ! ভাই! ভাই আমি কিচ্ছু করি নাই! আমি জানি না
ক্যামনে লাশ আইলো! ভাই আমি এহন কি করমু! আমারে বাচান ভাই!” ইশাদ বলল, “আমি একা কি করবো!
তুই তোর বাপকে বল! তুই তো কিছু করিসই নাই!” জদু কাদতে কাদতে বলল, “ভাই! করি নাই! কিন্তু
করছি ট্যাগ লাগাইতে কতক্ষণ! ভাই! আমার ভবিষ্যৎ নষ্ট হইয়া যাইবো ভাই!” ইশাদ হালকা বিরক্তির সাথে বলল, “কিন্তু আমি একা
কি করবো তুইই বল!” জদু বলল, “ভাই! আগে চলো! সিচিউয়েশন দ্যাখো! তারপরই বুঝতে পারবা ভাই!
আমারে বাঁচাও ভাই!” কিছুক্ষণ ভাবল ইশাদ । তারপর বলল, “ঠিক আছে চল ।”
নম্বরিটেক
হোটেলের সাত তলায় একদম কোণার রুমটার দিকে ইশাদকে নিয়ে গেলো জদু । রুমে দিকে যেতে যেতে
জদু ইশাদকে সিসিটিভি ক্যামেরার দিকে দেখিয়ে বলতে লাগলো, “দেখছো ভাই! ক্যামনে আমারে
ফাসাইসে! কত বড় একখান চক্র আছে এর পিছনে! ক্যামেরা অফ কইরা কাম কইরা গেছে!” জদু দেখল,
আসলেই ব্যাপারটা সত্য । সিসি ক্যামেরা অন থাকলে তার লেন্সে একটা লাল আভা দেখা যায় সেটা
দেখা যাচ্ছে না । এতক্ষণ খেয়াল করে নি ইশাদ, কিন্তু মাত্র খেয়াল করলো, জদুর হাতে হ্যান্ড
গ্লাভস পরা । ইশাদ জিজ্ঞেস করলো, “কিরে? তোর হাতে হ্যান্ড গ্লাভস ক্যান!” জদু বলল,
“ভাই, আমি ভেতরে আমার ফিঙ্গারপ্রিন্ট লাগাইনাই! যদি লোকে সন্দেহ করে! আমার কাছে একখানই
আছে । তুমি ভেতরে কিচ্ছু ধইরো না! নাইলে তোমারও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেখা যাইবো!” ইশাদ কিছু
বলল না । দরজা খুলতেই রক্তের একটা মটকা গন্ধ এসে নাকে লাগলো । তারপর ভেতরে ঢুকতেই যা
দেখল ইশাদ, তা আর কারো বোধ না দেখাই ভালো । বিছানায় পড়ে আছে, গলাকাটা এক মেয়ের লাশ
। গলার ভেতর খুনি ছুরিটাও গেথে দিয়ে গেছে । পুরো বিছানা আর মেঝে রক্তে রক্তাক্ত হয়ে
গেছে । ইশাদ নিজের অজান্তেই চোখ বন্ধ করলো । এমন সময় ইশাদের হঠাৎ একটা কথা মাথায় এলো
। এলাকার মেয়র খগেন সেন যে বিল্ডিং-এ থাকেন, তার নিচতলায় । মাঝে সব ভাড়াটিয়া । তারপর
একদম উপরের বাসাটায় অর্থাৎ এগারো তলায় থাকে জদু । সুতরাং গার্লফ্রেন্ড নিয়ে সে চাইলেই
পরিবারের চোখের আড়ালে সেখানে রাত্রিযাপন করতে পারে । কিন্তু তাহলে সে কেন হোটেলে রুম
ভাড়া নিলো । প্রশ্নটা করার জন্য যেই না ইশাদ জদুর দিকে তাকাল, অমনি জদু ইশাদের মুখে
একটা স্প্রে ছুঁড়ে মারল । সেই স্প্রে নাকে যেতেই কেমন যেন নিজেকে দুর্বল লাগতে শুরু
করল ইশাদের । ধিরে ধিরে ওর চোখ বন্ধ হতে লাগলো । মাটিতে লুতিয়ে পড়লো সে । তারপর ধীরে
ধীরে চোখ বন্ধ করল । চোখ বন্ধ হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তার কানে এসেছিলো জদুর এক পৈশাচিক
হাসি ।
জ্ঞান
যখন ফিরল, ইশাদ তখন নিজেকে হোটেলের রুমে আবিষ্কার করল । দরজা চাপানো । ভেতরে জদু নেই
। ইশাদ একা-ই শুয়ে, আর পাশে সেই লাশ । ওর হাতে ছুরি কি করে এল! এটা ত লাশের গলায় ছিল!
ইশাদ ছুরিটা দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিল । কিন্তু এ কি! ইশাদের ব্যাগ একপাশে পড়ে আছে! ব্যাগের
চেইন খোলা । ইশাদের মাথা কেমন ভারি ভারি লাগছিলো । কোনোরকমে উঠে দাঁড়ালো । তারপর ব্যাগের
কাছে যেয়ে দেখল, ব্যাগে একটা বুট-ও নেই । আশেপাশে খোঁজাখুঁজির পর ওর বুটজোড়া লাশে এক
পাশে, আর মাহিনের বুটজোড়া লাশের পায়ের ওপর । আর তাতে রক্তও লেগে আছে । ইশাদ মাহিনের
বুটজোড়া নিয়ে নিজের ব্যাগে রাখল । আর নিজের বুটজোড়াও । তবে একটা ব্যাপার ইশাদ লক্ষ
করে দেখলো, লাশের পুরো শরীরে কেমন দাগ । ঠিক কেউ যদি বুট দিয়ে গায়ের জোড় দিয়ে কাউকে
আঘাত করে, সেরকম । কিন্তু কি করে হল এমন! জদুই কি এমন করেছে! কিন্তু কেন! ইশাদ তাড়াতাড়ি
নিজের ব্যাগ গুছিয়ে সেখান থেকে বেড়িয়ে পড়ল । ভাগ্যিস আজ সারাদিন সিসিটিভি অফ ছিল ।
তা না হলে তো লাশটার ব্যাপারে অনুসন্ধান করতে গেলে ইশাদকে সন্দেহ করত । কিন্তু এ কি
হচ্ছে এসব! রুম থেকে বেরোতেই ইশাদ দেখল, সবকটা সিসি ক্যামেরা অন! ইশাদের পুরো শরীর
শিউরে উঠলো! মাথা নিচু করে তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে বাসার পথে দৌড় দিলো ইশাদ । বাসায় এসে সোজা
নিজের রুমে । খেয়াল হল, বাবার ওষুধ আনা হয় নি । কিন্তু যা হল তা কি হল, কিভাবে হল,
কেন হল এবং কার এতে বেশ উপকার হল তা বুঝতে পারল না ইশাদ । চেয়ারের ওপর বসে আছে । অস্থির
অস্থির লাগছে কেমন । একে এক অদ্ভুত একটা লাশ দেখেছে, তার ওপর সেই লাশের সাথে নাকি সে
কিছু সময় থেকেও এসেছে! কিছু সময় বলতে কতক্ষণ? মোবাইলটা হাতে নিল ইশাদ । সাড়ে ৯টা বাজে!
এদিকে সে সেখানে গিয়েছিল প্রায় সাড়ে সাতটার দিকে । ২ ঘণ্টা সে একটা লাশের সাথে নির্জন
ঘরে ছিল । ভাবল বন্ধুদের সবটা খুলে বলবে, কিন্তু আবার কেন যেন বলল না । রাতটা কোনোরকমে
কেটে যায় জদুর । বকা যদিও খেয়েছে মায়ের কাছে, বাবার ওষুধ আনে নি, তার ওপর প্রেসক্রিপশনটাও
হারিয়ে এসেছে ।
৫
জুলাই, ২০২০ । পরদিন সকালের কথা । ঘুম এখনও ভাঙ্গে নি পলাশের । সেই কখন থেকে ফোন বেজেই
যাচ্ছে, ধরার নাম নেই । সারারাত ধরে চ্যাটিং করেছে, ঘুম কি আর এতো সহজে ভাঙ্গে ।
তবে পলাশের মা সে সময় রুমে এসে পলাশকে ডেকে বলল, “কিরে, তুই কি উঠবিনা? কেডা জানি কল
দিতাছে, ধরস না ক্যান?” পলাশ ঘুম ঘুম চোখে উঠে ফোনটা ধরতে গেলেই কেটে গেল কলটা । পলাশের
মা বলল, “কখন থেইকা কল দিতাছে । কি দরকার একটু দেখবি না?” পলাশ মোবাইলে দেখল, ইমন ২৩টা
এবং মাহিন ৩২টা কল করেছে । পলাশ নিজেই নিজেকে বলল, “আরে! ইমন চাইলে তো আমাকে ডাকতেই
পারতো, এতবার কল করেছে কেন!” পলাশ উঠে বসে
কল দিলো মাহিনকে । পলাশের মা তখন দরজার সামনে দাড়িয়ে বলছিল, “হায়রে ফাকিবাজ বুয়া! ঘর
একটু ভালমতো যদি মোছে! চিপায় চাপায় ময়লা পইড়াই আছে! এই বুয়া বাদ দেয়া লাগবো!” পলাশ
হালকা বিরক্তি নিয়ে বলল, “আম্মু! তুমি রুমে যেয়ে বুয়ার গল্প করো!” পলাশের মা তখন,
“উহ! ঢং!” বলে নিজের রুমে চলে গেল । মাহিনের কল কেটে গেল । ধরল না মাহিন । পলাশ তখন
কল লাগালো ইমনকে । কল ধরতেই ইমনের আশেপাশে বেশ শোরগোলের আওয়াজ শুনতে পেলো তার মধ্যেই
ইমন বলল, “হ্যাঁ পলাশ, কোথায় তুই?” পলাশ বলল, “বাসায়, কিছু হইছে?” ইমন বলল, “ভাই আমি
নম্বরিটেক পুলিশ স্টেশনে আছি! তুই তাড়াতাড়ি চলে আয়!” পলাশ জিজ্ঞেস করলো, “কেনো? কার
কি হইছে?” ইমন বলল, “আরে তুই তাড়াতাড়ি আয়! আমি বিজি আছি!” এমন সময় ইমন অন্য কাকে যেন
বলে উঠলো, “আরে! কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন ।” যাকে ইমন জিজ্ঞেস করলো, সে রিপ্লাই দিলো, “আদালতে!”
ইমন “তুই আদালতে আয় আমি রাখছি!” বলে কল কেটে দিলো ইমন । পলাশ ফোনের মেসেঞ্জার ওপেন
করে দেখল, রুমনের লম্বা একটা মেসেজ । “দোস্ত! অনেক ঝামেলা হইছে! ইশাদ গতকাল ঘটনাক্রমে
খুনের দ্বায়ে ফেসে গেছে । ও নিজেও নাকি জানে না কিভাবে কি হয়েছে! সকালে পুলিশ এসে ওকে
ধরে নিয়ে গেছে । ঘটনা শুনে আঙ্কেল হার্ট আট্যাক করেছেন । আন্টিকে নিয়ে আমি আর মাহিন
হসপিটালে যাচ্ছি, তুই তাড়াতাড়ি ইমনের সাথে পুলিশি ঝামেলার দিকটা সামলা প্লিজ!” মেসেজটা
আরও একঘণ্টা আগে দেয়া । পলাশ বলে উঠলো, “আল্লাহ! কি থেকে কি হইলো এইসব!” তারপর বিছানা
থেকে উঠে জামাকাপড় পাল্টে বেড়িয়ে পড়লো । ওর মা জিজ্ঞেস করলো একবার, “কিরে? খাইয়া যাবি
না?” পলাশ ইশাদের কথা শুনে এতোটাই টেনশন করছিলো যে মায়ের কথা ওর কানেই যায় নি ।
কোর্টে
পৌঁছতেই পলাশের দেখা ইমনের সাথে । জিজ্ঞেস করলো, “কিরে? ইশাদ কোথায়?” ইমন বলল, “ও পুলিশের
গাড়িতে করে আসছে । মনে হয় জ্যামে পড়েছে । আমি কোনোরকমে আব্বুর বাইক নিয়ে চলে আসছি ।”
আদালত যেহেতু আরেকটা ভয়াবহ খুনের ঘটনা যেহেতু ঘটেছে, সেহেতু সাংবাদিক থাকবে না, এটা
তো হতেই পারে না! সব সাংবাদিকরা দাঁড়িয়ে আছে আসামী এলে তাকে প্রশ্ন করার জন্য । যেই
মুহূর্তে পুলিশের জিপ এসে হাজির হল, এবং সেখান থেকে রুমাল দিয়ে মুখ ঢেকে ইশাদ নামলো,
অমনি সব সাংবাদিক ছুটে গেলো সেদিকে । পুলিশ দূরে সরানোর চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হচ্ছিল
না কোনোক্রমে । সবার নানান প্রশ্ন । কিন্তু সামনে থাকা ইনস্পেক্টর বললেন, “দেখুন! আমরা
এখন কোন প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি নই! আপনারা প্লিজ পড়ে আসুন!” কোনোরকমে সাংবাদিকদের
ভিড় ঠেলে ইশাদকে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হল । পলাশ আর ইমনের প্রায় কাছেই একজন সাংবাদিক দাঁড়িয়ে
ছিল । সে লাইভ ক্যামেরার সামনে বক্তব্য রাখছে, “আমি এখান থেকে সর্বশেষ এটাই জানাতে
পেরেছি! কি নির্মম ভাবে একটা মেয়েকে খুন করা হয়েছে, পুলিশ কিন্তু এটাও সন্দেহ করছে
মেয়েটাকে ধর্ষণ করা হয়েছে! আর এই ইশাদ নামের ছেলেটার বিচার যেন যথাযথভাবে হয় কি না
সেটাই এখন দেখার পালা! এই ছিল আমার কাছে এই খবর সম্পর্কে সর্বশেষ আপডেট ।” পলাশ অবাক
হয়ে গেলো । ইমনকে বলল, “আন্দাজে এসব সাংবাদিক কি বলছে! পুলিশ একবারও বলে নি ধর্ষণের
কথা!” ইমন বলল, “ভাই, ভেতরে চল । সাংবাদিক তো বুঝিসই, দুই লাইন বাড়িয়ে বলে ।” ইমন আর
পলাশ ভেতরে গেলো ।
ভেতরে
যেতেই ওদের দেখা সেই ইন্সপেক্টরের সাথে, যিনি একটু আগে ইশাদকে নামালেন । নাম, ইনস্পেক্টর
মিনহাজ । মিনহাজ এসে জিজ্ঞেস করলো, “উনাদের জানোয়ারটার মা বাপ কোথায়, কখন থেকে দেখছি
তোমরা এখানে?” ইমন জানালো হার্ট অ্যাটাকের কথা । মিনহাজ বললেন, “কি লেভেলের জানোয়ার!
বাপ অসুস্থ তার কথা না ভেবেই…………………। আচ্ছা লয়ার লাগবে । একঘণ্টার মধ্যে ওকে কাঠগড়ায়
দাঁড় করানো হবে । আশা করি লয়ার হায়ার করার মতো অর্থ তোমাদের নেই?” বলে সেখান থেকে চলে
গেলেন ইনস্পেক্টর মিনহাজ । সে সময় ইমনকে কল করলো রুমন । কল ধরতেই রুমন জিজ্ঞেস করলো,
“কিরে দোস্ত, কি অবস্থা ওইদিকের?” ইমন বলল, “ভাই, খুব খারাপ! লয়ার লাগবে! আমরা টাকা
পামু কই?” রুমন বলল, “আগে জানাবি না! আমার একটা বড় ভাই আছে! অনেক ভালো লয়ার! আমি উনাকে
কল করি! আশা করি উনি টাকা চাইবেন না ।” ইমন বলল, “আচ্ছা কল কর । আঙ্কেলের কি অবস্থা?”
রুমনঃ
“ভালো না রে, ডাক্তার বলেছে অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে ।”
ইমনঃ
আল্লাহ! কি যে হচ্ছে! আর আন্টি কি একবারও ছেলের কাছে আসবেন না? অন্তত আজ উনার আসা উচিত!
রুমনঃ
ভাই আন্টি ইশাদের ওপর খুব খেপেছেন । উনি স্বীকার করে নিচ্ছেন উনার ছেলেই হয়তো এটা করেছে!
ইমন
কিছু বলতে পারলো না । চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো । রুমন তখন বলল, “আচ্ছা! আমি আর মাহিন একটু
পর আমার ওই ভাইকে নিয়ে আসছি!” ইমন তখন কিছু বলল না । কল কেটে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো
। পলাশ জিজ্ঞেস করলো, “কিরে, কি হয়েছে?” ইমন বলল, “আন্টি রাগের বশে সব স্বীকার করে
নিয়েছে ।”
পলাশঃ
কি! না এটা কিন্তু ঠিক হবে না!
ইমনঃ
হুম । কিন্তু স্বীকার না করেও ইশাদকে যে শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে!
পলাশঃ
কি শাস্তি! আর হ্যাঁ, ভালো কথা, ওর আঙ্গুলে একটা ব্যান্ডেজ দেখলাম, ওটা কিসের?
ইমন
বলল, “কিসের শুনবি?”
পলাশঃ
কিসের?
ইশাদঃ
টর্চার সেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো ওকে । সেখান থেকে বেড়িয়ে এখানে আসার আগে আমাকে ও সব
বলেছিল ।
পুলিশঃ
বল! তুই কি করেছিস!
ইশাদঃ
স্যার সত্যি বলছি! আমি কিচ্ছু করি নি!
পুলিশঃ
শালা! কিচ্ছু করিস নি না! বুটের ছাপ তো ভুতে দিয়েছে! সিসিটিভি ফুটেজ তো ভুতে দেখিয়েছে
না!
ইশাদঃ
বিশ্বাস করুন স্যার! আমাকে জদু সেখানে নিয়ে গিয়েছিলো! আমি আর কিচ্ছু জানি না!
পুলিশঃ
তাই! এই দ্যাখ তোর কি করি!
বলে
সামনে থাকা পুলিশ একটা প্লাস নিয়ে ইশাদের অনামিকা আঙ্গুলের নখ চেপে ধরল ।
পুলিশঃ
বল! তুই করেছিস!
ইশাদঃ
আমি করিনি কিছু!
পুলিশঃ
শেষবার বলছি! স্বীকার কর!
ইশাদ
তবুও স্বীকার করলো না । সামনের পুলিশ ইশাদের হাতের নখ ধরে মারল এক টান । ইশাদ চিৎকার
করে উঠলো ।
কথা
শুনে গা শিউরে উঠলো পলাশের ।
দুপুর
১২টার দিকে বিচার শুরু হবে হবে প্রায় মুহূর্ত । রুমন এখনও লয়ার এনে হাজির করাতে পারে
নি । ইনস্পেক্টর মিনহাজ তখন ইমনের কাছে এসে বলল, “কি? লয়ার আসে নি । ইমন কিছু বলতে
পারল না ।” মিনহাজ তখন বলল, “জানতাম । তোমরা পারবে না । যদি টাকা থাকতো তাও পারতে না
। কারণ কোন লয়ারই একজন খুনির হয়ে লড়তে চাইবে না যেখানে সে যে খুনি তা প্রায় প্রমাণ
হয়েই আছে । আর লোভী লয়ার হলে আলাদা ব্যাপার, তবে ওদের লালসা মেটাবার মতো অর্থও যে তোমাদের
কাছে নেই ।” পলাশ হালকা ক্ষেপে বলল, “আপনি খুশি তো! তাহলে থাকুন খুশি! আল্লাহ এর বিচার
করবেন! দেখবেন, সত্যের জয় হবে, মিথ্যে অপবাদের জয় হবে না।” ইনস্পেক্টর মিনহাজ বললেন,
“অবশ্যই খুশি আমি । আর জয় তো সত্যেরই হবে সেটাও আমি জানি । কিন্তু তোমার আর আমার কাছে
সত্যিটা ভিন্ন । তোমার আমার কাছে সত্য ইশাদ খুনি, তোমার কাছে সত্য ইশাদ খুনি না । দেখা
যাক কোন সত্যের জয় হয়! একটা নিরীহ মেয়েকে যে খুন করেছে! তাকে এতো সহজে আমি ছাড়ছি না!”
বলে সেখান থেকে চলে গেলেন ইনস্পেক্টর মিনহাজ । পলাশ বলে উঠলো, “ওই ইন্সপেক্টরের সমস্যা
কি!” ইমন বলল, “ভাই ধৈর্য ধর! উনার দোষ কি, উনি তো জানেন না আসল সত্য কি!” একটু পরই
জজ এসে হাজির হলেন আদালতে । সবাই উঠে দাঁড়ালেন । জজ বসবার পর বিচার কার্যক্রম শুরু
হল । ইনস্পেক্টর মিনহাজ বললেন, “ইয়োর অনার! এই যে ছেলেটাকে দেখছেন, এই ছেলেটা একটা
মেয়েকে হত্যা করেছে । যদিও সে কিছুতেই স্বীকার করছে না । কি কারণে করেছে, কেন করেছে,
তা আমরা জানি না । তবে সে যে খুন করেছে এটার অনেক প্রমাণ আমরা পেয়েছি । আর এই ছেলে
এতোটাই হতভাগা, যে এর পক্ষ হয়ে লড়াই করবার মতো কোন উকিলই পাওয়া যায় নি!”
“আমি
লড়াই করবো এর হয়ে ইয়োর অনার!” এমন সময় আদালতের পেছন ঠেলে আওয়াজ এলো । লয়ারের পোশাক
পরিহিত এক লোক ভেতরে ঢুকল । তারপর বলল, “ইয়োর অনার, আমি আহমেদ ফয়সাল জিতু, এবং আমি
এই কেসে এই ছেলের হয়ে লড়তে চাই ।” ইনস্পেক্টর মিনহাজ জিতুকে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি তো
কেবলই এই কেইস লড়া শুরু করলেন, আপনি কি করে এর হয়ে লড়বেন?” জিতু মিনহাজের দিকে না তাকিয়েই
জজকে বলল, “আমাকে এ প্রশ্ন অধিকার নিশ্চয় উনার নেই ইয়োর অনার ।” জজ বললেন, “আপনি কি
এই বিচারের জন্য সময় চান? আপনি কি পারবেন ইনস্পেক্টর মিনহাজের সব সাক্ষ্য মিথ্যে বলে
প্রমাণ করতে?” জিতু প্রবল আত্মবিশ্বাসের সাথে জবাব দিলো, “ইনশাআল্লাহ ইয়োর অনার! আমি
পারবো!” মিনহাজ বলল, “ইয়োর অনার, ততদিন তাকে পুলিশি হেফাজতে রাখা হোক!” জিতু সাথে সাথে
আওয়াজ তুললো, “নো ইয়োর অনার! পুলিশি হেফাজতে রেখে আমার মক্কেলের কি অবস্থা হয়েছে তা
ওর হাত দেখলেই বোঝা যাচ্ছে! বিচার শুরুর আগেই যদি এরকম নির্যাতনের স্বীকার হয়! তাহলে
কি বলবো আপনিই বলুন! আর ক দিন থাকলে না জানি মিথ্যে স্বীকারোক্তি চাইতে গিয়ে আমার মক্কেলকে
কত নির্যাতন সহ্য করতে হবে! তাই আমি আপনাকে অনুরোধ করবো, আমার মক্কেলকে পুলিশি হেফাজতে
না রেখে বিচারিক হেফাজতে রাখা হোক!” মিনহাজ কিছু বলতে চাইলেন, “কিন্তু স্যার!.........”
তার কথা শেষ করতে না দিয়েই জজ বললেন, “এই কেসের পরবর্তী কার্যক্রম আগামী ৯ জুলাইকরা
হবে । ততদিন আপনারা এর পক্ষে বিপক্ষে যা যা প্রমাণ জোগাড়ের দরকার সেগুলো জোগাড় করুন!”
তারপর
কোর্টের সবাই বেড়িয়ে গেলো । ইশাদও পুলিশের সাথে বাইরে এলো । পলাশ আর ইমন ভেতরেই ছিল,
বাইরে আসতেই রুমন আর মাহিনকে দেখতে পেল । ইশাদ মাহিন আর রুমনকে জিজ্ঞেস করলো, “কিরে,
আমার বাবা কেমন আছে?” মাহিন বলল, “তোর কাছে লুকবো না । খুব একটা ভালো না ।”ইশাদের মন
খারাপ হয়ে গেলো । রুমন বলল, “তার চেয়েও খারাপ ব্যাপার হল, তোর মা তোকে দোষী বলছেন সবকিছুর
জন্য ।” ইশাদ আর কিছু বলল না । জিতু তখন ইশাদের কাছে এসে বলল, “শোনো জিতু, ভয়ের কিছু
নেই, আর তোমাকে বিচারিক হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সেখানে পুলিশ তোমার ওপর টর্চার করতে
পারবে না অন্তত ।” ইশাদ বলল, “স্যার, আমি সত্যি কিচ্ছু করিনি!”
জিতুঃ
আমি জানি, তোমার বন্ধু রুমন এতো করে যখন আমাকে বলেছে আমারও বিশ্বাস তুমি কিছু করোনি
। যাই হোক, শোনো, এখন আমার টাইম হবে না, তুমি ওখানে যাও, আমি দেখা করতে আসবো তখন সব শুনবো তোমার মুখ থেকে ।” মাহিন তখন এসে একটা
ব্যাগ ইশাদের হাতে ধরিয়ে বলল, “দোস্ত, এখানে কিছু জামাকাপড় আর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র
আছে । জিতু স্যারই আমাদের বলেছিলেন এগুলো তোর বাসা থেকে আনতে ।” ব্যাগটা ইশাদ হাতে
নিয়ে রওনা হল পুলিশের সাথে । জিতুকে কেমন চিন্তিত দেখা গেলো । পলাশ জিজ্ঞেস করলো,
“ভাই, আপনাকে কেমন চিন্তিত দেখাচ্ছে?” জিতু বলল, “ভাবছি, পুলিশের টর্চার থেকে বাঁচানোর
জন্য ওকে বিচারিক হেফাজতে পাঠালাম । কিন্তু সেখানে ও টিকতে পারবে তো?” ইমন জিজ্ঞেস
করলো, “কেন?” জবাবে জিতু বলল, “সেটা তো একটা কারাগার । সব তো সেখানে আসামী । ও যে পরিমাণ
সিধাসাদা দেখছি, ওইসব আসামীদের মাঝে টিকতে পারলে হয় ।”