পরিচয় পর্ব-২৬৬
পরিচয়(পর্ব-২৬৬)
নিশানের বুঝতে অসুবিধে হল না, এটাই সেই মোহন শেখের মেয়ে । মেয়েটা দেখতে বেশ সুন্দর । এতোটুকুর মেয়ের মাথায় ঘন কালো চুল । গায়ের জামা দেখেই বোঝা যায় সেলিব্রেটির মেয়ে । তবে এখন তার জ্ঞান নেই । গুন্ডা দুটি মেয়েটাকে ওদের খাচার ভেতর রেখে দিয়ে চলে গেলো । তার ঠিক কিছুক্ষণ পর ঘর আবার অন্ধকার । লাইট অফ হয়ে গেলো ।
“তোর এতো বড় সাহস!” অপু কথার জবাবে ক্ষিপ্ত হয়ে অপুর কলার চেপে ধাক্কা দিয়ে অপুকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরল মোহন শেখ । আবির ঠেকাতে এগিয়ে এলে অপু ইশারা করে আবিরকে থামিয়ে মোহন শেখকে এমন এক ধাক্কা দিলো যে মোহন শেখ বিছানায় শুয়ে পড়লো । অবশ্য নেশাগ্রস্থ অবস্থায় তার শরীরে তেমন শক্তিও ছিল না । অপু যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব মোহন শেখ এর দু হাত পেছনে এক করে হাতখড়া পড়িয়ে দিলো । অপু বলল, “দেখান সাহস এবার । যা জিজ্ঞাসা করছি তার জবাব দিন!” লোকটা হাত ছাড়াবার চেষ্টা করতে করতে বলতে লাগলো, “কেন! কেন! আমার মেয়েকে ও ছিনিয়ে নিয়েছে! ও!” অপু জিজ্ঞেস করলো, “ও? কে এই ও?” মোহন শেখ বলল, “ও আমার বউ! ও ডিভোর্স নেয়ার পর থেকে আমার পরিবার ভেঙ্গেছে, এখন আমার মেয়েকেও কেড়ে নিতে চায়! কেন! কেন!” আরও নানা উলটাপাল্টা কথা বলতে লাগলো মোহন শেখ । অপু কত চেষ্টা করলো তবু মোহন শেখ মেয়ে শেষ কোথায় ছিল, মেয়ে শেষ কদিন কি করছিলো, এসব কিছুরই জবাব ঠিকঠাক মতো দিলো না । আবির এদিকে ঘরটা ঘুরে ঘুরে দেখছিল । বুকশেলফের নিচে একটা ড্রয়ারে একটা খবরের কাগজের পাতার একটু অংশ বেড়িয়ে আছে । বোধ হয় আটকানোর সময় পাতাটা একটু অংশ বাইরে বেড়িয়ে গেছে । ঠিক মতো লাগানোর জন্য ড্রয়ারটা খুলতেই আবির দেখল, খবরের কাগজগুলো কলকাতার । আবির একটা কাগজ হাতে নিলো । বেশ কয়েকটা দেখার পর একটা কাগজের একটা পাতায় আবিরের চোখ আটকে গেলো । সেই পাতা ছিঁড়ে আবির পকেটে রেখে খবরের কাগজটা আবার ড্রয়ারে রেখে দিয়ে মোহন শেখ আর অপুর দিকে নজর দিতেই দেখল, অপু এখনও কিছুই প্রয়োজনীয় কথা বের করতে পারে নি মোহন শেখের মুখ থেকে । আবিরকে অপু বলল, “কিছুই তো বলছে না এই লোকটা!” আবির কাছে এগিয়ে যেয়ে বলল, “আমি একটু উনার সাথে কথা বলতে পারি?” অপু কিছুক্ষণ ভেবে হালকা ডানে মাথা কাত করলো । আবির লোকটার সামনে যেয়ে বসলো । লোকটা আবিরকে দেখে বলে উঠলো, “এই! কে রে তুই! ও! ওর বাপের বাড়ির লোক না! আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দে! দে!” আবির হালকা হেসে বলল, “আমি আপনার পরিচিত কেউ নই, কিন্তু বলতে পারেন আমার আর আপনার ভাগ্য একই ।” মোহন শেখ ভ্রু-কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, “মানে?” অপু বলল, “আমার ছেলে, নিশান । আপনার মেয়েরই সমান হবে । ও রাগ করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেছে । এখন আর খুজে পাচ্ছি না ওকে । আমার ধারণা ঢাকায় যে ছেলেধরার উৎপাত বেড়েছে তারা হয়তো ওকে ধরে নিয়ে গেছে । এবং আমাদের এও ধারণা, আপনার মেয়েকেও একই ছেলেধরার দল ধরে নিয়ে গেছে । তাই আপনি আমাদের সাহায্য করলে আমি আমার ছেলেকে এবং আপনি আপনার মেয়েকে খুজে পাবেন । কারন মেয়ে হারানোর একটু আগ মুহূর্তেও আপনি মেয়ের কাছাকাছি ছিলেন, আমি ছিলাম না ।” মোহন শেখ, “আমিও……। আমিও……।” বলতে বলতে জ্ঞান হারাল । অপু লোকটার হাতের নাড়ি দেখে বলল, “লোকটার প্রেসার তো অনেক বেড়েছে । এই অবস্থায় কেন যে নেশা করতে গেছেন!” আবির বলল, “এক কাজ করুন, উনাকে কোন ডাক্তারের আন্ডারে রেখে যান, আমরা বাইরে যাই । জ্ঞান ফিরলে হয়তো উনার নেশার ভাব কেটে যাবে এবং তখন না হয় জিজ্ঞাসা করা যাবে ।” অপু আবিরের কথা মতো বাইরে এলো । তারপর কাজের লোক আব্বাসকে বলল, “শুনুন, উনার প্রেসার হয়তো বেড়েছে । উনাকে ডাক্তার দেখানোর ব্যাবস্থা করুন ।” আবির সে সময় জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা, একটা কথা, উনার ড্রয়ারে কলকাতার খবরের কাগজ এলো কি করে?” আব্বাস বলল, “যে, কাগজগুলা বহুত কামে লাগে তো, মোহন খালু তো পড়ে না, খালাম্মা কলকাতা থাকে, উনি পড়ে । উনি মাঝে মাঝে এই বাসায় আইতো, তাই উনারে কইতাম, পারলে আনতে । তাই আইনা রাখতো ।” আবির বলল, “ও আচ্ছা । ঠিক আছে, আপনি ডাক্তার ডাকুন ।” বলতেই আব্বাস চলে গেলো । বাইরে মিডিয়ার লোক ধরলেও অপু তাদের কিছু না বলে পুলিশ স্টেশনে চলে এলো । নিজের চেয়ারে বসে আবিরকে সামনে বসতে বলে বলল, “আ’ম সো সরি আবির, এমনিতেই তোর একটা টেনশন, তার ওপর আমি তকে সে বাড়িতে নিয়ে গেলাম ।” আবির বলল, “না, বিপদে শক্তি রেখে ঠাণ্ডা মাথায় কাজ করতে হয় । আর সেখানে গিয়ে বোধ হয় আমি ব্যর্থ হই নি । আমি একটা গুরুত্বপূর্ণ ক্লু পেয়েছি । আল্লাহ আমাকে পথ দেখাচ্ছেন ।” অপু জিজ্ঞেস করলো, “কি ক্লু?”
“আহ! আমি কোথায়? এতো অন্ধকার কেন? কেউ আছেন!” হঠাৎ-ই দুর্বল মেয়ে কণ্ঠের আওয়াজে চমকে উঠলো নিশান । তবে বুঝতে পারলো, এটা মোহন শেখের মেয়ে । বলল, “আছি, আমি নিশান ।” মেয়েটা জিজ্ঞেস করলো, “কে নিশান? কি চাও তুমি?”
আগামী পর্বেঃ
“এই হেডলাইনটা একবার পড় ।” পকেট থেকে কাগজের পাতার ছেড়া অংশটা বের করে দেখিয়ে বলল আবির । অপু সেটা বিড়বিড় করে পড়লো, “বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিষ্ণুপুর হতে ভারতের নাথ মন্দিরের পেছন পর্যন্ত গোপন সুড়ঙ্গ বন্ধ করে দেয়া হল বিজিবি ও বি এস এফ এর সহায়তায় ।” তারপর আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল, “কিন্তু এতে কি প্রমান হয়?”