পরিচয় পর্ব-২৬৮
পরিচয়(পর্ব-২৬৮)
নিশানের কথা শুনে একগাল হেসে উঠলো আয়রা । “শসস…! এখানে আমি একা নই, আরও অনেকে আছে, ওরা ঘুমোচ্ছে ।” আয়রাকে বলল নিশান । আয়রা হাসি থামিয়ে বলল, “ও! সরি!” এরপর আয়রা আর নিশান দুজনেই চুপ হয়ে গেলো । দুজনের ভেতর আর কোন কথা হল না ।
এদিকে আবির পৌঁছে গেছে বাসায় । নিজের ঘরে ঢুকে ব্যাগ গুছিয়ে গাড়ি বের করতে গিয়ে খেয়াল হল, গাড়ির চাবি চয়নিকার বাবার বাড়িতে । সকালে খবর পেয়ে আবির আগে চয়নিকার বাবার বাড়ি গিয়েছিলো, তারপর সেখান থেকে গিয়েছিলো চয়নিকাদের কাছে দোকানে । আবির চয়নিকার বাবার বাসায় এসে নক করতেই দরজা খুলল জরিনা । আবির দেখল, সব ঘরের লাইট জলে আছে । জরিনা জিজ্ঞেস করলো, “ভাইয়া, ঠিক আছেন? আবির বলল, “হ্যাঁ আপু । আমি গাড়ির চাবিটা বোধ হয় রেখে গিয়েছিলাম সেটা দাও । নিশানের খোঁজে আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাবো ।” জরিনা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, “ব্রাহ্মণবাড়িয়া!” সে সময় রুমে আসছিলো অয়ন । কথা শুনে চমকে উঠে বলল, “ভাই! তুমি এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাচ্ছো?” আবির বলল, “হ্যাঁ ।” নিশান সবাইকে ডাকলো, “বাবা! আপু! আবির ভাই এসেছে!” একটু পরই চয়নিকার বাবা আর চয়নিকা এলো । চয়নিকার বাবাকে দেখে আবির বলল, “একি বাবা! রাত তো অনেক হয়েছে, আপনি এখনও জেগে আছেন?” চয়নিকার বাবা বলল, “আমার নাতি হারিয়ে গেছে, আমার কি ঘুম হয় বাবা?” অয়ন ওর বাবাকে বলল, “বাবা, আবির ভাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাচ্ছে ।” শুনে অয়নের বাবা জিজ্ঞেস করলো, “সেকি, কেন?” আবির সমস্ত ঘটনা খুলে বলল সবাইকে । সব শুনে চয়নিকা বলল, “কি! মাথা ঠিক আছে তোমার? কোন সন্ত্রাসী কি বলল আর তুমি সেই কথার ওপর ভিত্তি করে চলে যাচ্ছো ব্রাহ্মণবাড়িয়া?” আবির বলল, “দ্যাখো, ওয়ি লোকটাকে আমি চিনি, তাই কে সত্য বলতে পারে আর কে মিথ্যে তা আমি ভালো করেই জানি ।” চয়নিকা রেগে গিয়ে বলল, “হ্যাঁ তাইতো । সম্পর্কও মানুষ চেনে । নিজের ছেলে আর পরের ছেলে কখনও কেউ এক করতে পারে না ।” চয়নিকার কথা শুনে আবির আবার ভ্রু কুঁচকে চয়নিকার দিকে তাকাল । অয়ন তখন রেগে গিয়ে চয়নিকাকে বলল, “আপু প্লিজ! স্টপ ইট! এসব ফালতু নেকামি এখন করিস না!” চয়নিকা রেগে গিয়ে অয়নকে বলল, “ভুলে যাস না আমি তোর বড়! মুখে মুখে কথা বলিস না!” অয়ন বলল, “আমি মুখে মুখে কথা বলিনি! আমি তোমার ভুল ধরিয়ে দিয়েছি!” চয়নিকা আর অয়নের বাবা তখন বিরক্ত হয়ে বলল, “আহ! থামবি তোরা! আর আমার মনে হয়ে অয়ন ঠিকই বলেছে! চুনি, তুই এসব উল্টাপাল্টা কথা বলা বন্ধ কর, অন্তত যতক্ষণ না পর্যন্ত নিশানকে খুজে না পাওয়া যাচ্ছে!” জরিনা আবিরকে বলল, “ভাইয়া, কইতেছি কি, কিছু খাইয়া যাব! সারারাত না খাইয়া থাকবেন?” আবির বলল, “সমস্যা নেই জরিনা আপু । আসলে ছেলে হারাবার কষ্ট খিদের জ্বালাটা ভুলিয়ে রেখেছে ।” তারপর চয়নিকাকে উদ্দেশ্য করে বলল, “সবাই তো সেটা বোঝে না ।” তারপর জরিনাকে বলল, “তুমি আমার গাড়ির চাবিটা এনে দাও ।” জরিনা আর কিছু বলল না । চাবি এনে আবিরের হাতে দিলো । অয়ন একবার বলল, “ভাই, আমি যাবো তোমার সাথে?” আবির বলল, “না রে । আমি কোথায় যাচ্ছি আমি নিজেও জানি না । আমি নিজের রিস্ক নিতে পারি, অন্যের না ।” বলে আবির বেড়িয়ে গেলো । বেরোনোর সময় আবিরকে অয়নের বাবা বলল, “সাবধানে যেও বাবা!” আবির শুধু “আচ্ছা ।” বলল । গাড়ি নিয়ে রওনা হল ব্রাহ্মণবাড়িয়া ।
ঘরে তখন ঘুমিয়ে আছে রায়হান আর ওর স্ত্রী মিতা । এমন সময় একটা কল এলো রায়হানের মোবাইলে । কলের আওয়াজে ঘুম ভাংল মিতার । রায়হান ঘুমোচ্ছেই । মিতা উঠে রায়হানকে ডেকে বলল, “অ্যাই! দ্যাখো তো কেডা কল করেছে তোমারে!” রায়হান উঠলো ধীরে ধীরে । তারপর ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল, আবির । বলে উঠলো, “কি ব্যাপার? হঠাৎ এতো রাইতে আবিরের কল!” মিতা বলল, “দ্যাখো! ট্যাকা পয়সার দরকার পড়েছে কিনা!” রায়হান বলল, “বাজে কথা বইলো না তো ।” বলে কল ধরল রায়হান । “হ্যালো আবির! কিরে ঠিক আছোস?” আবির বলল, “না ভাই! কিচ্ছু ঠিক নেই!” রায়হান বিছানা থেকে উঠে উঠোনের দিকে যেতে যেতে বলল, “ক্যান রে? কি হইছে?” আবির সব ঘটনা খুলে বলল রায়হানকে । সব শুনে রায়হান বলল, “হায় আল্লাহ! কি বলতেছিস! এহন কই তুই?” আবির বলল, “ভাই, আমি তোমাদের এলাকায় আসছি ।” রায়হানের চেহারায় একটা ভয়ের ছাপ ফুটে উঠলো । চুপ হয়ে গেলো ও । রায়হান তখন উঠোনে, আর মিতা ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে । রায়হানের চেহারায় ভয়ের ছাপ দেখে অবাক দৃষ্টিতে রায়হানের দিকে তাকাল । আবির জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে ভাই? চুপ কেন তুমি?” রায়হান বলল, “না না, শোন! একখান কথা । তুই আসবি, খুব ভালো, তয় তোর পরিচয় যে তুই জয়নাল জামেনার পোলা, তা কিন্ত খবরদার এখানকার কাউকে বলবি না!” আবির জিজ্ঞেস করলো, “কেন?” রায়হানের মুখে আবিরের আসার কথা শুনে চেহারায় রাগ নিয়ে ঘরে ঢুকে পড়লো মিতা । আবির রায়হানকে জিজ্ঞেস করলো, “কেন?”
আগামী পর্বেঃ
ঘরে ঢুকতেই মিতা বলল, “অ্যাই! তোমার সাহস কি কইরা হয় ওরে আনার! ওর জন্য যদি গেরামবাসী আমাগো তাড়াইয়া দেয়!” রায়হান বলল, “কি কইতাসো তুমি! আজাইরা কথা বলা বন্ধ করো ।” মিতা বলল, “আমি কিছু জানি না বাবা, এইটুকু কইয়া দিতাছি! সকালে আমি বাপের বাড়ি চইলা যামু! তুমি একাই থাইকো তোমার বোনরে নিয়া ।”