বেনিংটন ট্রায়াঙ্গল
বেনিংটন ট্রায়াঙ্গল
সাল ১৯৪৫, তারিখ ২ নভেম্বর
রিভার্স নামক ৭৫ বছর বয়সী একজন গাইড ৪জন শিকারিকে সঙ্গে করে পাহাড়ে গেলেন শিকার করবার উদ্দেশ্যে । শিকার শেষে ফিরে আসবার সময় লং ট্রেইল রোড ও ৯ নম্বর রুটের কাছে এসে ৪জন শিকারির থেকে সামান্য সামনে এগিয়ে যান । আর তারপর, গায়েব । শত খোজার পরও শিকারি দল খুজে পান না রিভার্সকে । স্থানীয় পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবী দল নিয়ে পুরো এলাকা তন্ন তন্ন করে খুজেও পাওয়া যায় না রিভার্সকে, এমনকি তার দেহও খুজে পাওয়া যায় না কোথাও ।
সাল ১৯৪৬, তারিখ ১ডিসেম্বর
বেনিংটন কলেজের একজন ছাত্রী, নাম পলা ওয়েল্ডেন । ১৮ বছর বয়সী এই তরুণীর ছিল ভ্রমণ নেশা । সেই নেশা থেকেই হয়তো কোন একদিন তিনি প্রবেশ করেন এই বনের ভেতর । তারপর সে নিখোঁজ । তার পরিচিত অনেকেই তাকে এই জঙ্গলে প্রবেশ করতে দেখেছে । যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত সংস্থা এফবিআই এর সাহায্য নিয়েও মেয়েটির কোন খোঁজ পাওয়া যায় নি । যদিও গুজব ছড়ানো হয়েছিলো মেয়েটি তার প্রেমিকের সাথে কানাডা চলে গিয়েছে । আবার অনেকে ধারণা করেছিলো মেয়েটি হয়তো প্রকৃতির সাথে একাকী নিরিবিলি জীবনযাপনের জন্য গিয়েছে, কিন্তু এদুটো ধারণা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কারণ এর স্বপক্ষে কোন প্রমান পাওয়া যায় নি ।
সাল ১৯৪৯, তারিখ ১ ডিসেম্বর
সেইন্ট এলবান থেকে বেনিংটন যাবার জন্য যাত্রা শুরু করে একটি বাস । কিন্তু বেনিংটন পৌছাতেই হঠাৎ বাসের এক যাত্রী উধাও । অথচ বাস কোন যাত্রাবিরতই নেয় নি । যে যাত্রী উধাও হয়েছে তার নাম জেমস ই টেটফোর্ড । তিনি একজন প্রবীণ সামরিক ব্যাক্তি যিনি আত্মীয়ের সাথে দেখা করার জন্য যাত্রা করেছিলেন । বাসে যাত্রী এবং ড্রাইভাররা জেমসকে তার সিটে বসে থাকতে দেখেছে । অনেকে তাকে শেষ স্টপেজের আগের স্টেশনেও নাকি দেখেছে । অনেকে জেমসকে ঘুমিয়ে থাকতেও দেখেছে । কিন্তু তাহলে কোথায় গেল জেমস? অদ্ভুত বেপার তার ওয়ালেট, লাগেজ সবই তার সিটে ছিল ।
সাল ১৯৫০, তারিখ ১২ অক্টোবর
পল জেপসন নামের আট বছর বয়সী এক বালক সেদিন সকালে বাড়ির চারপাশে ছুটোছুটি করছিলো । তার মা তখন শুকরছানাদের খাওয়াচ্ছিলেন । কাজ শেষে পলের মা যখন ছেলের খোঁজ করেন, তখন তিনি ঘরের আশেপাশে তার ছেলের কোন অস্তিত্ব খুজে পান না । পলের গায়ে ছিল লাল রঙের জ্যাকেট, যা হয়তো সবুজ অভয়ারণ্যের মাঝে খুব সহজেই নজরে পড়ার কথা, কিন্তু অনুসন্ধানী টিম পলের কোন হদিসই খুজে পান না ।
সাল ১৯৫০, তারিখ ২৮ অক্টোবর
৫৩ বছর বয়সী ফ্রিডা ল্যাঙ্গার ও তার চাচাতো ভাই হার্বার্ট এলসনার সমারসেট রিজার্ভার এর কাছে ক্যাম্পিং এর জন্য রওনা হন । ছোট স্রোতের একটি নদী পার হতে গিয়ে ফ্রিডা পড়ে যান এবং তার গায়ের জামা ভিজে যায় । ফ্রিডা তখন হার্বার্টকে অপেক্ষা করতে বলে ভিজে জামা পাল্টাতে ফিরে যান ক্যাম্পে । অনেক্ষণ হয়ে গেলেও ফিরে আসে না ফ্রিডা । হার্বার্ট ক্যাম্পে ফিরে সেখানেও খুজে পান না ফ্রিডাকে । এলাকাটি ফ্রিডার বেশ পরিচিত, তাই দিনের আলোয় হারিয়ে যাবার সম্ভাবনা মোটেই ছিল না ফ্রিডার । দুই সপ্তাহ ধরে ৩০০ জন অনুসন্ধানকারীর সমন্বয়ে গঠিত ৫টি অনুসন্ধান টিম হেলিকপ্টার, এয়ারক্রাফট থেকে শুরু করে বিভিন্নভাবে তন্নতন্ন করে অনুসন্ধান চালিয়েও ফ্রিডার অস্তিত্ব কোথাও খুঁজে পায়নি । তবে উপরের ৪টি ঘটনার থেকে এটি একটু ভিন্ন কারণ ১৯৫১ সালের ১২ই মে সমারসেট রিজার্ভের কাছাকাছি এক জায়গায় খুজে পাওয়া যায় ফ্রিডার মৃতদেহ । পোস্টমর্টেম করেও ফ্রিডার মৃত্যুর কোন কারণ খুজে পান নি কেউ ।
উপরের সব ঘটনা যেখানে ঘটেছে সেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিম ভারমন্টে অবস্থিত রহস্যজনক এক স্থান যার নাম প্যারানরমাল গল্প লেখক জোসেফ এ সিত্রো পরবর্তীতে দেন বেনিংটন ট্রায়াঙ্গল । স্থানীয় অনেকে মনে করেন অশুভ শক্তির উপস্থিতি আছে এই এলাকায় যার জন্য এরকম হারিয়ে যাওয়া কিংবা মারা যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটে এখানে । ১৯৩৭ সালের আগে এটি বেশ জনবহুল এলাকা ছিল কিন্তু ১৯৩৭ সালের পর দুর্যোগ ও মহামারীর কারণে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটে । ২০১০ সালের একটি আদমশুমারীর তথ্য অনুযায়ী এলাকায় মাত্র ৮জন মানুষের বসবাস । বর্তমানে এটি ভুতুড়ে এলাকা নামেই পরিচিত ।