0 %

Thanks a lot for being with us!
We are re-constructing our website!
Sorry for this temporary inconvenience
We are coming to you with a fresh look and design from 1 January 2022!
Till then! Stay connected!

স্বপ্ন

স্বপ্ন
"আচ্ছা বলুনতো কাল রাতে আপনি কি স্বপ্ন দেখেছিলেন? মনে আছে আদৌ কোনও স্বপ্ন দেখেছিলেন কিনা? মনে আছে যে স্বপ্নটি দেখেছিলেন তার শুরু কোত্থেকে হয়েছে? আচ্ছা ভাবুনতো আপনি মাঝে মধ্যেই যে স্বপ্ন গুলো দেখেন তা ভবিষ্যতে বাস্তবে রুপ লাভ করে!! ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত তাই না? হ্যা ঠিক এমনটাই হচ্ছে আমার সাথে গত একমাস ধরে ।"
একমাস পর আমি আমার ডায়রি তে কিছু লিখলাম। এই মাস যা ঘটেছে তার মধ্যে ডায়রি লিখার কথা ভুলে ই গেছিলাম। শুনতে একটু হাস্যকর হলেও এটা সত্যি যে , আমি ভবিষ্যৎ দেখতে পারি । আমি স্বপ্নে যা ই দেখি তা রীতিমতো বাস্তব জীবনে হয় আমার সাথে।
ছোট বেলায় দুই এক বার এমন হয়েছিলো যে আমি স্বপ্নে যা দেখেছি তাই ই বাস্তবে আমার সাথে ঘটেছে। একদিন স্বপ্নে দেখি আমার আমার বড়ো ভাইয়া সিড়ি থেকে পড়ে পা ভেঙ্গে ফেলে, পরের দিন বিকালে তেমনটাই হয় তার সাথে। আবার একদিন স্বপ্নে দেখি একটা বাচ্চা নদীতে পড়ে মারা গেছে, আমি সেই স্বপ্ন দেখার পর ছোট বেলায় এত ভঁয় পেয়ে ছিলাম যে আমার জর উঠে গিয়েছিল, আমাকে তখন একটু খুশি রাখতে এবং ভয় দুর করতে গ্রামের বাড়ি তে নিয়ে যায়। তার পরের দিন আমার সামনে ই আমার ফুফাতো ভাই নদীতে পরে যায় আর ডুবতে থাকে। সেবার আব্বু সাথে ছিল বলে বড়ো কোনো দুর্ঘটনা হয় নি। এসবের কারণে আমি স্বপ্ন দেখতে ভয় পেতাম। পড়ে আর তেমন ভাবে স্বপ্ন দেখতাম না আর বাস্তবে তা আর হতো না। আমি ভেবেছিলাম আর হয়ত আমার সাথে এমন হবে না। কিন্তু..... কিন্তু আমি ভুল ছিলাম। গত একমাস পর পর আমি যে কয়টা স্বপ্ন দেখেছি তাই হয়েছে বাস্তবে।
আমি স্বপ্নে পাঁচ টা দূর্ঘটনা দেখি এবং সবগুলো আমার সামনে ঘটেছে। নিজেকে এখন অপরাধী মনে হচ্ছে, আমি স্বপ্ন দেখি বলে ই হয় তো সব ঘটনা গুলি ঘটেছে। আমি কয়েক জন কে বিপদের হাত থেকে বাঁচাতে পেরেছিলাম কিন্তু কয়েকজন গুরতর আঘাত পায় আর একজন মারা যায়, ঠিক সেভাবেই যেভাবে আমি স্বপ্নে দেখেছিলাম।
Writer আম্মু নাস্তা করার জন্যে ডাক দিলো । টেবিল থেকে উঠে হাত মুখ ধুয়ে খেতে গেলাম। কিন্তু খাবার ততক্ষণে ঠান্ডা হয়ে গেছে। আম্মু কে বললাম খাবার টা গরম করে দিতে। আম্মু তখন বলে উঠলো, "সারা দিন শুধু ঘুমাবি, তা খাবার ঠান্ডা হয়ে তো যাবে ই । সবাই ঘুমালে মুখ কত সুন্দর লাগে, তোর চোখ মুখ এমন হয়ে থাকে কেন রে? তোর যে কি হচ্ছে দিন দিন আল্লাহ ই ভালো জানে" ।
আম্মু কে কিভাবে বুঝাই যে এক মাস ধরে ভালো করে ঘুমাতে পারছি না আমি।
কোনোমতে খাবার খেয়ে বাস ধরার জন্যে বের হয়ে গেলাম । অনেক দেরি হয়ে গেছে ভার্সিটিতে মেঘলার সাথে তাড়াতাড়ি দেখা করতে হবে।
এমন সময় দেখি মেঘলার মেসেজ। আমার দেরি কেনো হচ্ছে তা জানতে চাচ্ছে। ওকে পড়ে বললাম বাসা থেকে বের হতে দেরি হয়ে গেছে তাই।
বাস থেকে নেমে দৌড়ে মেঘলার কাছে গেলাম। ওকে আমার স্বপ্নের ব্যাপার এ বলবো বলে ডেকেছিলাম। মেয়েটা আমাকে অনেক বিশ্বাস করে আর আমার সব কথা মন দিয়ে শুনে। ও হয় তো আমার অবস্থা টা বুঝবে ।
"নিজে বললি তাড়াতাড়ি আসতে আর তুই ই দেরি করলি।"
"সরি, সত্যি অনেক দেরি হয়ে গেছে।"
"বল, ডেকেছিলি কেন ।"
ওকে সব খুলে বললাম ।
সব শুনে ও বললো " কি বলছিস এসব তুই!"
"হ্যা, ঠিক ই বলছি"
"তারমানে তুই ভবিষ্যৎ দেখতে পারিস?"
"তাইতো মনে হচ্ছে।"
"তুই আমার মামার সাথে দেখা করে কথা বলতে পারিস। উনি অনেক বড় একজন ডাক্তার। আসলে সাইকোলজিস্ট । সে তোকে সাহায্য করতে পারে"
মেঘলার কথা শুনে ভরসা পেলাম। হয়তো ওর মামা আমাকে সত্যি সাহায্য করতে পারে, কিছু হয়তো বলতে পারবে এই বিষয়ে।
পরের দিন ওর মামার সাথে আমার দেখা করিয়ে দিল ।
মেঘলার মামা সত্যি কেমন জানি! দেখতে পাগল পাগল । আমি কেমন জানি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাই । মেঘলা বললো, "মামা এমন ই, ভয়ের কিছু নাই।"
আমি বললাম "ওহ!"
ওর মামা আমাকে কয়েকটা আজব প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলো। প্রশ্নের আগা গোড়া কিছুই নেই।
সব শেষে উনি বললেন, " আচ্ছা, তুমি এখন যেতে পারো। সাতদিন পর আমার সাথে দেখা করবে তুমি।"
আমি একটু অবাক হই। তিনি তো আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা ই করলো না। মেঘলা তখন বললো , " মামা , তুমি তো কিছু জিজ্ঞাসা করলে না ওকে" ওর মামা বললো, " আমার যা বুঝার তা আমি বুঝে গেছি , সাত দিন পর ওকে নিয়ে আসবে আবার।"
আমার বিষয়টা অনেক অদ্ভুত লাগলো । মেঘলার ও মনে হয় অদ্ভুত লেগেছে। ও আমাকে বললো, "মামা কিন্তু এমন না। উনি তোর সাথে কথা বলার পর এত গম্ভীর কেনো হয়ে গেলো বুঝলাম না"
মেঘলার মামা গম্ভীর কেনো হয়ে গিয়েছিল তার উত্তর কয়েকদিন পর পেলাম আমরা।
পাঁচদিন পর মেঘলা আমার বাসায় এসে প্রায় আমাকে তুলে নিয়ে যাবে এমন ভাবে বাসা থেকে বের করলো আর আমার সিম ফোন থেকে বের করে ফেলে দিল।
আমি ওকে জিজ্ঞাসা করলাম কেন এমন করছে ও।
ও বললো, "তুই কি কোনো স্বপ্ন দেখেছিলি যা গতকাল সত্যি হয়েছিল?"
ওর কথা শুনে আমি আকাশ থেকে পড়লাম। সত্যি এমন হয়েছিল। ও জানলো কিভাবে?
আমি ওকে বললাম "তুই জানলি কিভাবে?"
মেঘলা বললো "মামা তোকে পরীক্ষা করার জন্যে তোর সামনে একটা অ্যাকসিডেন্ট করিয়েছিলো । তুই তোর গড গিফটেড পাওয়ার দিয়ে তা জানতে পেরেছিলি আর ওই অ্যাক্সিডেন্ট হওয়ার আগে তা থামিয়ে দিয়েছিলি । মামা এখন বুঝতে পেরেছে যে তোর মধ্যে আসলেই সুপার পাওয়ার আছে।"
আমি বললাম "তো কি হইসে?"
মেঘলা রেগে বলল, "তো কি হইছে জিজ্ঞাসা করিস আমাকে?
সে তোর ব্রেইন নিয়ে পরীক্ষা করার কথা ভাবছে। তোকে মেরে তোর ব্রেইন নিয়া সে ফিউচার দেখবে । সে সব ব্যবস্থা করে ফেলেছে। এখন ই পালাবি আমার সাথে তুই, মামার কাছে তোকে নিয়ে গিয়ে ভুল করেছিলাম।"
আমি অবাক হয় বললাম, " তুই জানলি কিভাবে এত কিছু ? "
ও কেদো কেদো হয়ে হয়ে বললো, "আমি লুকিয়ে সব শুনেছি মামার কথা। উনি নাকি এর আগে অনেক মানুষ কে মেরে তাদের ব্রেইন নিয়ে অনেক কাজ করেছে। তোর সম্পর্কে জানতে পেরে এখন সে তোকে তার এক্সপেরিমেন্ট এ ব্যাবহার করতে চায়। তোর ব্রেইন ব্যাবহার করে ফিউচার দেখবে আর পৃথিবীতে সেরা বিজ্ঞানী হবে।"
ওর কথা শুনে বুঝলাম ও নিজে ও জানত না যে ওর মামা এমন।
আর দেরি না করে পালিয়ে যাই মেঘলার সাথে।
একটা কন্সট্রাকশন বিল্ডিং এ আমরা লুকিয়ে আছি তিন দিন ধরে। এলাকায় মাইকিং শুনলাম আমাদের দুই জন নিখোঁজ হয়ে গেছি তাই নিয়ে। শুনলাম ওর মামা নাকি পাগলের মত আমাদের খুঁজছে ।
রাত হল, আজকে দুই জন না খেয়ে ঘুমাতে গেলাম। রাতে আমার ঘুম ভেংগে গেল । আমি আবার স্বপ্ন দেখেছি। মেঘলাকে ঘুম থেকে উঠলাম আর বললাম এখন ই পালাতে হবে আমাদের।
ও বললো "কেনো কি হোয়েছে?"
সাথে সাথে মাইক এর শব্দ শুনলাম, "মেঘলা, নিলয় তোমরা বের হয়ে এসো । আমরা জানি তোমরা এখানে আছো।"
আমি বললাম এখন ই পালাতে হবে।"
মেঘলা বলল, "কিভাবে?"
আমি বললাম "ছাদ এ চল"
আমরা দুই জন ছাদ এ গেলাম। ছাদ থেকে লাফ দিতে বললাম ওকে , আমি ভেবেছিলাম ও আমাকে জিজ্ঞাসা করবে কেনো আমি এটা বললাম । কিন্তু ও কিছু না বলে আমাকে বললো "আচ্ছা"
আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম ওর কথা শুনে , ওকে নিয়ে লাফ দিলাম ছাদ থেকে আর একটা নেট এ আটকে গেলাম। মেঘলা নিশ্চই অনেক ভয় পেয়েছে। আমার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে ও। আমরা পরে নেট থেকে সাবধানে নেমে আসলাম।
লুকিয়ে কোনোমতে রাস্তার কাছে চলে আসলাম । ভাগ্যিস রাস্তায় কাছে মেঘলার মামার লোকজন ছিল না। আমি মেঘলাকে বললাম, "বাতাস হচ্ছে না কেনো! বাতাস হওয়ার কথা ছিল তো।" মেঘলা আমকে উত্তর দিল "তুই স্বপ্নে দেখছিস কি হবে আমাদের সাথে তাইনা?"
আমি একটু হেসে বললাম,"হ্যা।"
হাসার কারণ কিছু ছিল না কিন্তু ও আমার সাথে আছে বলে সাহস পেয়েছি তাই হয়তো হাসি চলে এসেছে।
এমন সময় বাতাস আসল আর আমি মেঘলা কে বললাম তুই তোর ব্যাগ থেকে লাল ওরনা টা বের করে দে। ও ওর জামা কাপড় নিয়ে বের হয়ছিলো , মেয়ে বলে কথা।
ওর ওরনা টা উচু করে একটা গাড়ি কে থামালাম আর বললাম একটু দাড়ান সামনে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।" এমন সময় আমাদের কয়েক্ হাত পিছনে থাকা গাছ টা রাস্তায় পরে গেলো। গাড়ি থেকে একটা মহিলা নেমে বললো, "তুমি আমাকে না থামালে গাড়ির নিচে পড়ে মারা যেতে হতো। অনেক ধন্যবাদ তোমাদের। তোমরা কোথাও যাবে নাকি? মানে তোমাদের কোথায় নামিয়ে দেবো?"
মেঘলা বললো "আমাদের রাঙামাটি নামিয়ে দিন । "
আমি অবাক হয়ে গেলাম মেঘলা কি বলছে । মহিলা বলল,"কি বলছ তুমি"। মেঘলা বললো, "জি ঠিক ই বলছি" মহিলা সত্যি সত্যি আমাদের রাঙামাটি পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব নিলেন।
১মাস পর মেঘলাকে ওর বাসায় ফিরে যেতে বললাম । ও কিছুতেই যেতে রাজি ছিলনা। কিন্তু ওকে নিয়ে এভাবে পালিয়ে বেড়ানোর কোনো মানে নেই। তাই ওকে মিথ্যা বলেছিলাম যে, আমি স্বপ্নে দেখেছি আমরা একসাথে থাকলে মারা যাবো, তাই ওকে ফিরে যেতেই হবে। ও পরে আমার কথা শুনে ফিরে গেলো। আর আমাকে কথা দিয়েছিল, আমি কোথায় আছি তা কখনো কাউকে বলবে না। আমি ওকে সাথে বলেছিলাম আমার মাকে যেনো বলে আমি ভালই আছি আর আমাকে নিয়ে চিন্তা না করতে ।
গত তিন বছর ধরে রাঙ্গামাটি তে আছি। এখানে ভালই আছি এখন। এখনো নাকি মেঘলার মামা আমাকে খুজে বেড়াচ্ছে। মেঘলা চিঠিতে বলেছিল ওর মামা ওকে অনেক মেরেছিল ওকে আমি কোথায় আছি তা জানতে, কিন্তু ও বলে নি। মেয়েটা সত্যি অনেক ভালো।
এখন নিজের ভবিষ্যৎ দেখার ক্ষমতা কে কাজে লাগাচ্ছি। কোনো বিপদ হবে বুঝতে পারলে লুকিয়ে মাইকিং করে সবার কে সচেতন করে দিচ্ছি ,নইলে নিজে কিছু করে বিপদ থেকে বাঁচার কিছু করছি।
আল্লাহ আমাকে যে ক্ষমতা দিয়েছে তা হয়তো মানুষের পাশে থেকে তাদের সাহায্য করার জন্যে।এখন এভাবে মানিয়ে নিচ্ছি সবকিছু।