পরিচয় পর্ব-২৬৩
পরিচয়(২৬৩)(সিজন-৯)
সাথে এটাও বুঝল, এরা এতো সহজে ওদের মারতে পারবে না ।
মারুফের নীরবতা দেখে আবির বুঝল, মারুফ জানে না সেই সব ছেলেধরা মাস্তানদের ঠিকানা । আবির তবুও অনুনয়ের সাথে জিজ্ঞেস করলো, “কিচ্ছুই কি জানেন না? মানে যা বললেন সব তো শিওর না হয়েই, আস্তানাটাও কি শিওর না হয়ে লোকমুখে শোনেন নি?” মারুফ বলল, “আছে, কিন্তু সেটাও বোধ হয় ভিত্তিহীন ।” আবির জিজ্ঞেস করলো, “কি?” মারুফ বলল, “আমাগো পরিচিত আরেকখান গ্যাং তাদের এক সদস্য মাদক পাচারে গেছিল । ঠিক কোথায়, তা কেউ জানত না । সেখান থেইকা আহত হইয়া ফিরছিল । সেখানে সে কিছু একটা দেখছিলো যা বলা হয়তো জরুরী ছিল । কিন্তু সে এসে যেই না পৌঁছাইল, সে-ই কেউ একজন তার ঠিক গলা বরাবর গুলি কইরা পালায় গেলো, হয়তো এই লোকের পিছু নিয়া আইছিল, রাস্তায় হয়তো গুলি করার সুযোগ পায় নাই । মরার আগে সে একখান কথা ম্যালা কষ্টে কইছিলো । সেইডা হইলো বিষ্ণুনাথ । সব ধারণা করে এইডা কোন ওই ছেলেধরা গ্যাং-এর লিডার বা মাস্তানের নাম । তয় এইডা আমরা কেউ শিওর না । এই নামে কাউরে পাওয়াও যায় নাই ।” আবির উঠে দাঁড়ালো । তারপর মারুফের দুহাত ধরে বলল, “আপনাকে যে কি করে ধন্যবাদ জানাবো আমি বলতে পারবো না ।” মারুফ লোকটা বলল, “আগে তর বাচ্চারে লইয়া আয় । আর কোন দরকার হইলে জানাইস । আমার ফোন নাম্বারটা লেখ ।” আবির মারুফের ফোন নাম্বারটা নিলো । তারপর পকেট থেকে একটা কার্ড বের করে সেটা মারুফের হাতে দিয়ে বলল, “আমি আপনাকে ভালো হতে বললে আপনি ভালো হবেন কি না জানি না, তবে এই কার্ড রাখুন, কখনো ভালো হতে চাইলে পেটের দ্বায় তাতে বাধা দিলে চয়বির কোম্পানির চাকরি আপনার জন্য খোলা থাকবে ।” বলে আবির বিদায় নিয়ে সেখান থেকে চলে এলো ।
প্রকাশ বলল, “চাল, বাহার যাকে ঘুরে আসি থোরা ।” বিমল বলল, “হ্যাঁ, চাল, বিরিয়ানি খাতে খাতে চালতেহে ।” প্রকাশ তখন জিজ্ঞেস করলো, “ইন লোগো কো খানে দিয়েছিস?” বিমল, “ওহ হো! ভুল হি গায়া!” বলে আরেকটা যে প্যাকেট এনেছিল, সেটা খুলে ভেতর থেকে তিনটে রুটি বের করে ছুড়ে মারল খাঁচার ভেতর মাটির ওপর । সাথে সাথে মেয়ে দুটো আর ওদের সাথে থাকা ছেলেটা ঝাপিয়ে পড়লো সেই রুটির ওপর । কাড়াকাড়ি শুরু করে দিল । আকাশও ওদের দেখে ঝাপিয়ে পড়লো । নিশান পারলো না । এই অবস্থা দেখে মনের ভেতরটা কেমন শিহরণ জাগিয়ে তুলল ওর । প্রকাশ বলল, “ইয়ে খা কে হি রেহলো । তিন লোগ ছিলে তো, রাত মে পাচ পাবি । আর আনেকে বাত পানি দিয়ে যাউঙ্গা । অর যাদা পিয়াস লাগে তো নিজেদের পেশাব খা লে না ।” বলে অট্টহাসি হাসতে হাসতে সেখান থেকে বেরিয়ে গেলো লোক বিমল আর প্রকাশ । ওরা চলে যাওয়ার অনেক্ষন পর মেয়েদুটোর একজন বলল, “হাই, আমি স্বর্ণা । অন্য জন বলল, “হাই, আমি মুন্নি । ছেলেটা বলল, “হাই, আমি অন্তর ।” নিশানও ওদের দিকে তাকিয়ে বলল, “হ্যালো, আমি নিশান ।” আকাশ কাঁদতে কাঁদতে, “হাই! আমি আকাশ!” বলতে গিয়ে একেবারে কেঁদে দিল । নিশান জিজ্ঞেস করলো, “ওরা আমাদের ধরে এনেছে কেন?” স্বর্ণা বলল, “এরা আমাদের ভারতে নিয়ে যাবে, তারপর আমাদের দিয়ে ওরা যতোভাবে টাকা আয় করা যায় সেটা করবে, তারপর যখন আমরা অচল হয়ে যাবো, তখন আমাদের মেরে ফেলে দেবে ।” আকাশ এই শুনে আরও জোরে জোরে কাঁদতে শুরু করলো । নিশান জিজ্ঞেস করলো, “তোমরা কবে এসেছো?” অন্তর বলল, “আমি গত পরশু এসেছি ।” স্বর্ণা আর মুন্নি বলল, “আর আমরা গতকাল ।” অন্তর বলল, “আমি এখানে এসে একটা ছেলেকে পেয়েছিলাম । ওর ক্যান্সার ছিল, লাস্ট এজ । ও খেতে চেয়েছিল বলে গতকাল রাতে ওকে এভাবে মুখ থেকে খাবার বের করে খেতে বলেছিল । ও খায় নি বলে গুলি করে মেরে ফেলেছে । স্বর্ণা আর মুন্নিও দেখেছে সেটা ।” স্বর্ণা বলল, “হ্যাঁ, তাই আমরা তোমাকেও চুপ করতে বলেছিলাম ।” অন্তর তখন তার হাতের রুটি অর্ধেক ছিঁড়ে নিশানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “তুমি তো কিছুই নিলে না, এটুকু খাও ।” নিশানের চোখের সামনে তখন ছেলেটার বিমলের বিরিয়ানির দিকে তাকিয়ে থাকার দৃশ্যটা ভেসে উঠলো । বলল, “থ্যাঙ্কস, কিন্তু আমার তেমন খিদে নেই, তুমি-ই খাও ।” অন্তর আর দ্বিতীয়বার সাধল না । নিজেই পুরোটা খেলো ।
আগামী পর্বেঃ
একটু পর হঠাৎ রুমে এলো প্রকাশ । এসেই বিমলকে ডাকতে ডাকতে বলল, “হেয়! শুন! বহত আচ্ছে এক খবর হেয়! লাক্সমান সেলিব্রেটির মেয়েকে কিডন্যাপ করেছে ।”
………………………..
হঠাৎ ফোনে কল এলো অপুর । কল ধরতেই বলল, “স্যার! জি স্যার!............হোয়াট!.........ওকে স্যার!............ওকে স্যার, আমি তারাতারি পৌঁছে যাচ্ছি!” আবির জিজ্ঞেস করল, “কি হয়েছে?” অপু বলল, “জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত অভিনেতা মোহন শেখ এর মেয়ে দুপুর থেকে নিখোঁজ! আমি না করতাম, কিন্তু ভাবলাম একই চক্রের কাজ হতে পারে, তাই আমি যেতে চাই!”