পরিচয় পর্ব-২৬০
পরিচয়(২৬০)(সিজন-৯)
নিশান আর আকাশকেও সেখানে বন্দি করে রাখা হল ।
মারুফের আস্তানায় ঢুকল আবির, যার আন্ডারে এক সময়
কাজ করতো দ্বিপ । সেই আস্তানা, সেই মারুফ । ছোটোখাটো পরিবর্তন রয়েছে যদিও, সেগুলোও
তেমন চোখে বাধে না । লোকজন তো তেমন একটা দেখেনি আবির, তবে সেবার যাদের দেখেছিল, তাদের
কাউকে দেখল আবির । মারুফের সামনে আসতেই আবিরকে যে লোকটা ধরে এনেছে, সে লোকটা বলল,
“বস, এ আপনেরে চিনবার পারচে, আপনের লগে কতা কইতে চাই ।” মারুফ আগের চেয়ে অনেক বয়স্ক
হয়ে গেছে । এতক্ষণ চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল । চোখ মেলে একবার আবিরের দিকে তাকিয়ে উঠে
বসলো । তারপর হাত উচিয়ে আশেপাশে থাকা অন্যান্য লোকেদের সেখান থেকে চলে যেতে বলল । আবিরকে
যে লোক নিয়ে এসেছে, সে দাড়িয়ে ছিল । মারুফ তার দিকে তাকিয়ে বলল, “তুই দাড়ায় আছোস ক্যা?”
লোকটা চলে গেলো । মারুফ বলল, “বসে পড়েন আবির সাহেব । পেছনে একখান চেয়ার আছে ।” আবির
পেছনে থাকা একটা চেয়ার টেনে বসলো । আবির বলতে গেলো, “আমাকে চিনতে পার………” কিন্তু শেষ
করার আগেই মারুফ বলল, “দ্যা ইনভেস্টিগেশন শো এর হোস্ট সালমান খান আবির । চয়বির কোম্পানির
আবির । সবচেয়ে বড় কথা, আমাগো এইখানে কাম করা দ্বিপের ভাই, থুক্কু সৎ ভাই আবির ।” আবির
বলল, “জি, আমি সেই আবির । যার কোন পরিচয় নেই ।” মারুফ হালকা হাসতে গিয়ে কেশে উঠলো ।
তারপর বলল, “তা, গোয়েন্দা আবার চোরের লগে কি কাম?” আবির বলল, “কাজ না থাকলে নিশ্চয়
আমি আসি না, একটা বিপদে পড়েছি, ভেবেছি সমাধান এর কিছু ক্লু আপনার কাছে পেলেও পেতে পারি,
তাই আসা । পাবো কি না সেটা আমি জানি না ।” মারুফ বলল, “আইচ্ছা, ক, হুনি, কি বিপদ ।”
আবির বলল, “আমার ছেলেকে………।” আবারও আবিরকে থামিয়ে দিয়ে মারুফ বলল, “উহু! ছেলে না, ক
তোর বউয়ের ছেলে । আরে খবর রাখি, মাস্তান হইছি বইলা কি খোঁজ নিমু না, খবরের কাগজে হেডিং
দিলো, বিয়ার দিন দ্যা ইনভেস্টিগেশন শো এর আবিরের
বউয়ের বাচ্চা হাজির, কি মনে করসোস, পড়ি নাই? যাউকগা, মেলা আগের কথা, যা ধইরা নিলাম
ওইডা তোর বাচ্চা । এইবার কি সাহায্য করুম ।” আবির মারুফের কথা শুনে হালকা রেগে গিয়েছিলো,
হাত মুষ্টিবদ্ধ করে কোনোক্রমে সে রাগ চেপে রাখল । তারপর বলল, “আমার ছেলেকে কেউ কিডন্যাপ
করেছে । আর ইদানীং ঢাকা শহরেও কিডন্যাপিং বেড়েছে । তাই আমার সন্দেহ ভুল না হলে যারা
অন্যান্য বাচ্চাদের কিডন্যাপ করেছে, তারা আমার বাচ্চাকেও কিডন্যাপ করেছে । আপনি যেহেতু
এরকম দলেই একটা লোক, একজন গ্যাংস্টার, তাই আপনার কাছে কোনো ক্লু পেতে পারি সেই বিশ্বাসে
আমি এসেছি ।” মারুফ একটা নড়ে চড়ে বসতে বসতে জামা উঠিয়ে পেট চুলকে নিলো । তারপর বলল,
“হুম, সাহায্য তোর করতেই পারি, বিনিময়ে কি দিবি?” আবির বলল, “আপনি যা চান সব ।” মারুফ
বলল, “যদি কই, তোর রক্ত দিয়া গোসল করতে চাই?” আবির হালকা রেগে গেলো । তারপর বলল, “আপনার
কি মনে হয়! আমি এখানে ইয়ারকি করতে এসেছি!” মারুফ হেসে বলল, “যা, অল্পেতেই দেহি রাইগা
গেলি! আরে ট্যাকা ছাড়া দুনিয়ায় কিছু হয় নাকি হ্যাঁ!” আবির বলল, “দেখুন, আমার আপনাকে
ভালো হওয়ার উপদেশ দেয়ার কথা, কিন্তু আমি পারছি না, কারণ বললেও আপনি হবেন না । কিন্তু
আপনি তো এরকম ছিলেন না, আপনি তো বলেছিলেন আপনি পেটের দায়ে এসব করতেন? তবে এখন কি হল
আপনার? আমি তো বলেছিই আপনি যা চাবেন দেবো? তাহলে হেয়ালি করছেন কেন?” মারুফ বলল, “আরে
পেটের দায় তো পূরণ হইয়াই গেছে, এহন যা আছে
তা হইলো লোভ লোভ! আর লোভ মানুষরে কত কিছু বানাইতে পারে । তয় তোর কাছে আমি লোভ দেহাইয়া
কিছু চাইতেছি না, প্রতিশোধ দেহাইয়া চাইতেসি, নাইলে বুঝোস না, ক্যান তোর রক্ত দিয়া আমি
গোসল করতে চাই?” আবির ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো, “প্রতিশোধ? কিসের প্রতিশোধ?” মারুফ
বলল, “তোর দ্যা ইনভেস্টিগেশন শো এর ৪২ নাম্বার এপিসোডে আমার যে ক্ষতি কইরা দিলি, সেইডা!”
আবির অবাক হয়ে গেলো । জিজ্ঞেস করলো, “মানে?”
আগামী পর্বেঃ
আবির একটা বিরক্তির দম ফেলে উঠে দাড়িয়ে বলল, “আপনার
কাছে আসাটাই আমার ভুল হয়েছে, আমার মূল্যবান সময় নষ্ট খালি খালি ।” বলে আবির যাবার সময়
একবার দাড়িয়ে বলে গেলো, “গুলিটা পেটের ওই যায়গায় লেগেছে বলে কিন্তু বেচে গেছেন, একদম
হৃদয় বরাবর লাগলে আর বাচতে পারতেন না । ভালো হয়ে যান, মরার ভয় করেন, আল্লাহর ইবাদাত
করেন ।” বলে আবির আবার বেরোনোর জন্য যে-ই না দরজার দিকে হাত বাড়াল, অমনি মারুফ বলে
উঠলো, “সব না জানলেও অনেক কিছুই জানি এই ছেলেধরাদের ব্যাপারে ।” আবির দরজা না খুলে
দাড়িয়ে গেলো । তারপর পেছন ফিরে মারুফের দিকে তাকাল । মারুফ ওপর নিচ মাথা নাড়ল ।