পরিচয় পর্ব - ২৫৯
পরিচয়(পর্ব-২৫৯)(সিজন-৯)
অবশ্য যেখানে মানুষ থাকেনা সেখানে এসব শয়তানদের
আখড়া বসে ।
এদিকে রাস্তা ধরে একা একা হাঁটছিল আবির । মনে ওর
কথাটা বারংবার বাজছে, যেটা চয়নিকা ওকে বলেছে । জন্ম দিলেই কি শুধু বাবা হওয়া যায়? পালন
করে কি বাবার দায়িত্বটা পালন করা যায় না? এসব ভাবছিল আবির । এদিকে রাস্তা দিয়ে কোন
পথে হাটছে ও তাও খেয়াল করছে না । মাঝে মাঝে লোকজনের সাথে ধাক্কা খাচ্ছে, লোকজন বলছে,
“ভাই দেখে চলেন!” কেউ বলছে, “পাগল নাকি?” কিন্তু কেউ আবিরের অমনোযোগিতা ভেঙ্গে দিচ্ছে
না । হঠাৎ কে যেন আবিরের হাত চেপে ধরল, আবির দাড়িয়ে গেলো । তাকিয়ে দেখল, হাটার সময়
ডান পা যে সামনে এগিয়ে দিয়েছিলো, সেখানে মাটি নেই, কন্সট্রাকশনের কাজ চলছে, তাই গর্ত
করা । লোকটা না ধরলে আবির শিওর পড়ে যেত নিচে । আবির পেছন ফিরে লোকটার দিকে তাকাতেই
লোকটা ভ্রু কুচকে হালকা রাগ দেখিয়ে বলল, “আরেকটু অইলেই তো পইড়া যাইতেন গা, ডিপ্রেচন
নিয়া বাইরে আইচেন কেলায়?” আবির কিছু বলতে চেষ্টা করলো, কিন্তু হুট করে অমনোযোগিতা ভেঙ্গে
যাওয়ায় আবির কথাটা সম্পূর্ণ করতে পারলো না । কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবির বলল, “মানিব্যাগটা
যে পকেট কেটে নিলেন, সেটা ফেরত দিন আগে ।” লোকটা অবাক হয়ে গেলো । পালাতে চেষ্টা করলেও
আবির ল্যাং মেরে ফেলে দিলো । তারপর লোকটার শার্ট টেনে ধরে বলল, “আমি অচেতন থাকলেও চেতনা
ফিরে পাওয়ার সময়ই আপনি আমাকে ধরেছিলেন, আর
শুধু হাতেই না, আমার প্যান্টের পেছনেও আমি আপনার হাতের স্পর্শ পেয়েছি । আর বোকার মতো
দাড়িয়ে না থেকে আগেই পালালে বেচে যেতেন ।” লোকটা বলল, “ভাই ভাই! মাফ কইরা দেন! আমি
মারুফ ভাই এর আন্ডারে কাম করি, ডেইলি পকেট না মারলে পেটে ভাত জোটে না ভাই, গরীব মানুষ
ভাই! মাফ কইরা দেন!” আবির হঠাৎ কিছুক্ষণ চুপ হয়ে গেলো । তারপর জিজ্ঞেস করলো, “কার আন্ডারে
কাজ করিস?” লোকটা বলল, “হ ভাই!” আবির আবার জিজ্ঞেস করলো, “ওই কমলাপুর স্টেশনের ওইদিকে
যার আস্তানা?” লোকটা বলল, “হ ভাই, আপনে চেনেন?” আবির বলল, “চিনি, খুব ভালো ভাবেই ।”
আবিরের মনে পড়লো, সেই যশোর থেকে ঢাকা আসার পর আবিরকে এই মারুফের লোকজন কিডন্যাপ করেছিলো
। আর সেই দলে ছিল দ্বীপও । আবির লোকটাকে বলল, “আমাকে ওর আস্তানায় নিয়ে যেতে পারবি?”
ঘরের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল চয়নিকার বাবা । জরিনা
এসে জিজ্ঞেস করলো, “খালুজান, কুনো খোঁজ পাইলেন?” চয়নিকার বাবা মাথা নিচু করে ডানে বামে
মাথা নাড়লেন । জরিনা বলল, “হায় আল্লাহ! এইটুক একখান বাচ্চা! কই আছে! কেমন আছে! আল্লাহ! ওরে তুমি ফিরায় দাও!” একটু পর চয়নিকা ঢুকল
। চয়নিকার কান্না থামলেও চেহারায় বিষণ্ণতার ছাপ স্পষ্ট । বাবার সামনে এসে দাড়িয়ে কষ্ট
মাখা কণ্ঠে বলল, “এখন আমি কোথায় পাবো আমার ছেলেকে!” এমন সময় চয়নিকার বাবা একটা কাজ
করে বসলেন । হঠাৎ উঠে দাড়িয়ে চয়নিকার গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলেন । চয়নিকা অবাক
হয়ে বাবার দিকে তাকাল । চয়নিকার বাবা বলল, “এটাই তোর পাওনা! ছি!
ওই সন্তান তোর কুকর্মের কারণে জন্ম নিয়েছে ভুলে যাস না! আর এখন আবির একটু কষ্টের বশে
কিছু বলে ফেলেছে বলে তুই এতো বড় কথাটা কি করে বললি! তুই জানিসই আবিরের জেদটা একটু বেশি,
অল্পেতেই রেগে যায়! তা সত্ত্বেও এতো বড় একটা কথা কি করে বললি! ছি!” বলে নিজের রুমে
চলে গেলো । চয়নিকা এবার কাদল না । তবে মানসিকভাবে অনেক ভেঙ্গে পড়লো ।
প্রায় ১২ কিলোমিটার পথ যাবার পর ছেলেধরার দল থামলো
। নিশান দেখল, আকাশের পা কাঁপছে । এর আগে কোনোদিন হয়তো এতো হাটে নি । এমন সময় একজন
ছেলেধরা মাটি থেকে একটা কার্পেটের মতো কিছু তুললো, কার্পেটের ওপর ঘাসের মতো কিছু থাকায়
আগে থেকে না দেখলে বোঝাই সম্ভব না, এখানে একটা কার্পেট রয়েছে । এরই নিচে মাটির তৈরি
গোল ঢাকনা । সেই ঢাকনাটা খুলতেই একটা সিড়ি মাটির নিচে চলে গেছে । ছেলেধরারা নিশান আর
আকাশকে ভেতরে ঢুকতে বলল । ওরা ভেতরে গেলো । প্রচুর বাজে গন্ধ ভেতরে । নিশান গায়ের জামা
দিয়ে নাম চেপে ধরল । আকাশ বমি প্রায় করে করে অবস্থা । এক লোক ওদের দুজনের এই হাল দেখে
হাসতে হাসতে বলল, “আইয়াই এই অবস্থা, আর এইহানে যে তোগো সামনের এক সপ্তাহ রাখা হইবো,
ততদিন ক্যামনে থাকবি?” নিশান কিংবা আকাশ কেউই কোন জবাব দিল না । গর্তে ঢুকতেই অন্ধকার
মনে হলেও দূরে একটা হালকা আলো দেখা যাচ্ছিলো । সেই আলোর কাছাকাছি আসতেই ওরা বুঝতে পারলো,
এটা ওদের আস্তানা । ঢুকতেই ওরা তিনজনকে দেখতে পেলো । তিনজনই ওদের সমবয়সী, দেখে সেরকমই
লাগছে । এই আস্তানারই একটা কোণে একটা বড় খাচার মতো, সেখানে ওদের আটকে রাখা হয়েছে ।
দুজন মেয়ে, একজন ছেলে । নিশান আর আকাশকেও সেখানে বন্দি করে রাখা হল ।
আগামী পর্বেঃ
আবির বলল, “কাজ না থাকলে নিশ্চয় আমি আসি না, একটা
বিপদে পড়েছি, ভেবেছি সমাধান এর কিছু ক্লু আপনার কাছে পেলেও পেতে পারি, তাই আসা । পাবো
কি না সেটা আমি জানি না ।” মারুফ বলল, “আইচ্ছা, ক, হুনি, কি বিপদ ।” আবির বলল, “আমার
ছেলেকে………।” আবারও আবিরকে থামিয়ে দিয়ে মারুফ বলল, “উহু! ছেলে না, ক তোর বউয়ের ছেলে
। আরে খবর রাখি, মাস্তান হইছি বইলা কি খোঁজ নিমু না, খবরের কাগজে হেডিং দিলো, বিয়ার
দিন দ্যা ইনভেস্টিগেশন শো এর আবিরের বউয়ের
বাচ্চা হাজির, কি মনে করসোস, পড়ি নাই? যাউকগা, মেলা আগের কথা, যা ধইরা নিলাম ওইডা তোর
বাচ্চা । এইবার কি সাহায্য করুম ।”