0 %

Thanks a lot for being with us!
We are re-constructing our website!
Sorry for this temporary inconvenience
We are coming to you with a fresh look and design from 1 January 2022!
Till then! Stay connected!

পরিচয় পর্ব-২৫৬





পরিচয়(২৫৬)(সিজন-৯)

 

নিশান ঠিক আছে তো?

ওস্তাদজির কথার জবাবে কিছু বলল না নিশান । ওস্তাদজি বলল, “বুঝেছি, একাই বের হয়েছো, তুমি বাসায় যাও বাবা, দেশের অবস্থা কিন্তু ভালো না, তুমি বাসায় চলে যাও ।” নিশান কিছু বলল না, চুপচাপ দাড়িয়ে রইল । ওস্তাদজি আর কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, এমন সময় উনার মোবাইলে একটা কল এলো । সুরা ফাতিহার তিলাওয়াত রিং টোনে বেজে উঠলো । ওস্তাদজি ফোন ধরে থেমে থেমে কথা বললেন কিছুক্ষণ । “আসসালামু আলাইকুম!.........জি! জি! ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন! কখন হল!........................আচ্ছা, আমি এখনি আসছি ।” বলে মোবাইল পকেটে রাখল । নিশান জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে ওস্তাদজি?” ওস্তাদজি বললেন, “আমাদের মসজিদের মুয়াজ্জিনের বাবা মারা গেছেন, আমাকে যেতে হবে, তুমি কিন্তু বাসায় যেয়ো বাবা, একা একা বাইরে থেকো না ।” নিশান বলল, “আসসালামু আলাইকুম ওস্তাদজি!” ওস্তাদজি, “ওয়ালাইকুমুস সালাম” বলে বাসায় চলে গেলেন । নিশান বাসার দিকে না যেয়ে হাঁটতে লাগলো অজানার পথে, যেখানে ও কখনো যায় নি ।

“টিং টং!” দরজায় আওয়াজ শুনে এসে দরজা খুলতে যেয়ে জরিনা দেখল, দরজার ছিটকিনি খোলা, শুধু চাপিয়ে দেয়া । দরজার সামনে চিন্তার  ছাপ নিয়ে  দাড়িয়ে  থাকা চয়নিকা এক মুহূর্ত বিলম্ব না করে ভেতরে ঢুকে গেলো । জরিনা জিজ্ঞেস করলো, “একি চুনি আফা! কি হইছে!” চয়নিকা আশেপাশে তাকিয়ে নিশানকে খুজছে । জরিনা বলল, “কি হইছে আফা?” চয়নিকা জিজ্ঞেস করলো, “কল ধর নি কেন?” জরিনা বলল, “আমার ফোনডার চার্জ শ্যাষ হইয়া গেছিলোগা, তাই বন্ধ হইয়া গেছে, চার্জে  দিছি, অন করতে খেয়াল নাই । ক্যান কি হইছে?” চয়নিকা বলল, “নিশান কোথায়?” জরিনা বলল, “ছুডো ভাইয়ারে তো টিভি দেখতে দেখসিলাম, অয়ন ভাইয়ার রুমেই গেছে কি না!” চয়নিকা অয়নের রুমে গেলো । দেখল, অয়নের রুমের দরজা লাগানো । চয়নিকা বেশ অনেকবার দরজা ধাক্কিয়ে ডেকে উঠলো, “অয়ন! নিশান! কীরে দরজা খোল! কেউ নেই!” দরজায় ধাক্কানোর আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙ্গে ছুটে এলো চয়নিকার বাবা । এসে জিজ্ঞেস করলো, “কীরে মা? কি হয়েছে?” চয়নিকা জিজ্ঞেস করলো, “বাবা, নিশান কি তোমার রুমে?” চয়নিকা বলল, “না তো, আমার রুমে তো ছিল না, কেন?” চয়নিকা বলল, “নিশানকে তো পুরো ঘরের কোথাও পাচ্ছি না, আমি খবরে ছেলেধরাদের উৎপাতের কথা শুনে ছুটে এলাম নিশানের খোঁজ নিতে, আর এখন দেখি নিশান নেই । আর কি করো তুমি? কলটা ধরা যায় না?” চয়নিকার বাবা বলল, “আমি তো ঘুমাচ্ছিলাম রে মা, আর জানিসই তো ঘুমের মধ্যে কিছু শুনি না আমি । এখন ঘুম প্রায় ভেঙ্গে এসেছিল দেখে তোর দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ শুনেছি ।” একটু পর টাওয়েল আর গেঞ্জি পড়ে দরজা খুলল অয়ন । জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে? বাথরুম থেকে বলছি আমি গোসল করছি, তোমরা কি শুনতে পাও না?” জরিনা বলল, “না ভাইয়া, বাথরুম থেইকা এইহানে দরজা আটকান থাইকলে শোনা যায় না । ছুডো ভাইয়া কই?” অয়ন বলল, “ও কই তা আমি কি করে বলব?” চয়নিকা জিজ্ঞেস করল, “তার মানে?” অয়ন হালকা বিরক্তির সাথে বলল, “তোমার ছেলেটা না খুব জ্বালায়, এজন্য ওকে বের করে রুম ছিটকিনি লাগিয়ে দিয়েছিলাম ।” কথা শুনেই চয়নিকা ঠাস করে অয়নের গালে চড় লাগিয়ে দিল । অয়ন গালে হাত বুলতে লাগলো । সাথে অবাকও হয়ে গেলো । চয়নিকার চোখ ছল ছল করে উঠলো । চয়নিকা দুঃখ আর রাগ মিশিয়ে বলল, “ওকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না! তোরা বাসায় তিনটা মানুষ! আর কোথায় ও!” অয়নও হালকা ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কি!” জরিনা তখন বলল, “আফা, আপনে যহন আইলেন, তহন আমি দেখছি দরজা খোলা, ছুডো ভাইয়া ছাদে গেলো কি না ।” চয়নিকা একইভাবে বলল, “এই কথাটা আগে বলা গেলো না?” বলেই চয়নিকা বেরোল ছাদে যাবার উদ্দেশ্যে । সাথে ওর বাবা আর জরিনা-ও গেলো । অয়ন রুমে গেলো প্যান্ট পড়তে ।

এদিকে অনেক্ষন ধরে হাঁটতে হাঁটতে নিশান অনেক দূর চলে এসেছে । এখানে এর আগে ও কখনো আসে নি । তবে ওর খুব বিরক্ত লাগছে । কারণ চারপাশে অনেক মানুষ, আর বেশিরভাগ মানুষ ওর দিকে তাকিয়ে । অনেকে একে অপরকে বলছে, “এই বাচ্চা এখানে একা একা কি করে?” অনেকে বলছে, “দেখে তো মনে হচ্ছে ভদ্র বাড়ির ছেলে ।” নিশান একটা গলি দেখল, যেখানে কোন মানুষই নজরে এলো না । সেদিক পানে যেয়ে গলিতে ঢুকল নিশান । নির্জন গলি এদকে কেউ থাকেও কি না  সন্দেহ । দুপাশের বাড়িগুলো কোনটারই কোন জানালা কিংবা বারান্দা এপাশমুখি নেই । কেবল রয়েছে টয়েলেটের ভেন্টিলেটর । বাহির থেকে নিশান ভেবেছিল গলিটা বোধ হয় ছোট, কিন্তু ভেতরে ঢুকে দেখল ভালোই বড় । অনেকদুর হাঁটলেও শেষ মাথা এখনও নজরে পড়ছে না । তারওপর একটা মানুষও নেই । নিশানের যেই না ভয় ধরতে লাগলো, অমনি দেখল, সামনে থেকে কেউ এদিকে আসছে । আরেক্তু কাছে আসতেই নিশান দেখল, হালকা লাল রঙের ছেড়া শার্ট আর নীল প্যান্ট পড়ে এক বছর বিশের লোক সিগারেট খেতে খেতে আসছে । নিশানের পাশ দিয়ে যাবার সময় লোকটা প্রতিটা ক্ষণ নিশানের দিকেই তাকিয়ে ছিল । নিশান সেটা বুঝতে পারলেও খুব একটা লোকটার দিকে তাকাচ্ছিল না । কিছুদূর যাবার পর হঠাৎ কে যেন নিশানের কাধে হাত রাখলো । নিশান চমকে পেছন ফিরে তাকাতেই দেখল সেই লোকটা মুখে একটা কুৎসিত হাসি নিয়ে দাড়িয়ে আছে । নিশান কিছু বলার আগেই লোকটা নিশানের মুখে রুমাল চেপে ধরল । কিছুক্ষণের মধ্যে নিশান জ্ঞান হারাল ।

 

আগামী পর্বেঃ

মসজিদের কাছে এসে চয়নিকা বসে পড়ল । তারপর কাঁদতে লাগলো । অয়ন আর ওর বাবা-ও চলে এলো চয়নিকার কাছে । মসজিদের হাফেজরা তাদের পড়া শেষ করে বেরোচ্ছিলো, চয়নিকাকে দেখে সবাই দাড়িয়ে গেলো ।

……………………………

জ্ঞান ফিরতেই চোখ সহ এই অংশের চারপাশটা কেমন চাপা চাপা মনে হল নিশানের । চোখ বাধা হয়তো, কিচ্ছু দেখতে পারছে না । হাত দিয়ে দেখতে চাইলেও পারলো না, হাতও বাধা । ও দুলছে । খুব সম্ভবত গাড়িতে । নিশানের আরও কানে এলো কারও কান্নার আওয়াজ । টের পেলো ভেতরে ওর সাথে আরও কেউ আছে ।